বংগবন্ধুর সাথে আমার সরাসরি পরিচয় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান অবজারভারে কাজ শুরু করার পর। কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই পারিবারিক। আমাদের জেনারেশনের অনেকের সাথেই তাঁর খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি পরিচিতজনকে খুব আদর যত্ন করতেন। সে সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিক ছিলেন মাওলানা ভাসানী। শেখ সাহেব কোলকাতা থেকেই সোহরাওয়ার্দীর সাহেবের ভক্ত বা অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ঢাকর মুসলীম লীগ নেতারা আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি মাওলানা সাহেবকে কোন গুরুত্বই দিলেন না। একই ভাবে মুসলীম লীগের কোলকাতার নামজাদা কর্মী শেখ সাহেবও অবহেকিত। ফলে দুজনই মুসলীম লীগের ঢাকার রাজনীতিতে অপাংতেয় হয়ে গেলেন।
অখন্ড বাংলাদেশের(সাবেক ) শেষ প্রধানমন্ত্রী মুসলীম লীগের সোহরাওয়ার্দী সা্হেব। মুসলীম লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের ফলে সোহরাওয়ার্দী সাহের ঢাকা ফিরতে বিলম্ব হলো। অনেকেই বলেন তাঁকে ফিরতে দেয়া হয়নি। পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন ঢাকা নবাব বাড়ির নাজিম উদ্দিন সাহেব। অখন্ড বাংলাদেশের প্রথম তিনজন প্রধান মন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা, স্যার নাজিমউদ্দিন ও সোহরাওয়ার্দী। এর কারণ, অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানরা ছিল মেজরিটি।
ফলে বাধ্য হয়ে মাওলানা সাহেব বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩শ জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করলেন। শেখ সাহেব ছিলেন নতুন দলের যুগ্ম সম্পাদক। শুরু হলো মুসলীম লীগ বিরোধী রাজনীতি। মাওলানা সাহেব আর শেখ সাহেব ছিলেন শক্তিশালী সংগঠক ও বাগ্মী। ৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগের কবর হয়ে গেল। শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা সাহেব এক জোট হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেছিলেন। সকলেই ছিলেন মুসলীম লীগ নেতা এবং সকলেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার আওয়ামী মুসলীম লীগ। রক্ষণশীল গণবিরোধী মুসলীম লীগ নেতাদের অদূরদর্শিতার কারণেই মুসলীম লীগ ভেংগে নতুন মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছিল।কিন্তু মাওলানা সাহেব বেশীদিন নিজের প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারলান। ফলে শেখ সাহেব কালক্রমে আওয়ামী লীগের মূল ও একচ্ছত্র নেতা হয়ে গেলেন। এবং পূর্ব পাকিস্তান রাজনীতির ধারক বাহক হয়ে গেলেন। তিনি বাংগালী অবাংগালী ইস্যুটাকে জনপ্রিয় করে সামনে নিয়ে এলেন। মাওলানা ব্যস্ত থাকলেন বিদেশনীতি নিয়ে।
পাকিস্তানের বিদেশনীতির প্রশ্নে ৫৭ সালেই আওয়ামী লীগ ভেংগে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাপের জন্ম হয়। রাজনীতিতে শেখ সাহেব এবং মাওলানা সাহেব আলাদা হয়ে গেলেন। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মাওলানা সাহেব ছিলেন আমেরিকা ও সাম্রজ্যবাদ বিরোধী। আর শেখ সাহেব ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব ছিলেন আমেরিকা পন্থী। শেখ সাহেব রাজনৈতিক ভাবে মাওলানা সাহেবকে ছাড়লেও ব্যক্তিগত ভাবে প্রকাশ্যে বা গোপনে তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখতেন সে সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। সাংবাদিক হিসাবে আমারও সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাওলানা সাহেবের সাথে শেখ সাহেবের ছিল অন্তরের সম্পর্ক। মাওলানা সাহেব ক্ষমতার রাজনীতি না করলেও ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমি নিজেও ক্ষমতার সাথে জড়িত থাকা বা জড়িয়ে পড়া কখনই পছন্দ করিনা। আমি মনে করি ক্ষমতার সাথে জড়িত হলে চিন্তার স্বাধীনতা থাকেনা। এখন সাংবাদিকেরা সরকারের একাংশ। আওয়ামী ক্ষমতায় থাকলে তার একদল সাংবাদিক থাকে, আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তারও একদল সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী তাকে। ৭২ এ আগে এ অবস্থা এত নগ্ন ছিলনা। তাবেদার বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক থাকলে দল ও সরকার খুশী হয়। শেখ সাহেবের সাথে বেশ কিছু বামপন্থী সাংবাদিক ও ছিলেন। এরা মুখে বলতেন আমরা মাওলানা সাহেবের লোক। এই বামপন্থীরা এখন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বামপন্থী বা প্রগতিশীল মনে করে। এরা মনে করেন ভারত বাংলাদেশে বামপন্থী বিকাশে সাহাহ্য করবে। এদের মতে ভারতকে সমর্থন করা, রবীন্দ্রনাথকে পূজা করা, হিন্দূ সংস্কৃতিকে বাংগালী বলে চালানো প্রগতিশীলতা।
পাকিস্তানকে ভেংগে ফেলার জন্যে ভারত ৪৭ সাল থেকে কাজ করে গেছে। বাংগালী অবাংগালী প্রশ্নে শেখ সাহেবের নেতৃত্বকে ভারত সমর্থন দিয়েছে। ফলে শেখ সাহেব পূর্ববাংলার একচ্ছত্র একক নেতায় পরিণত হলেন। পাকিস্তানী নেতা ও সামরিক জান্তা ছিল অন্ধ ও একগুয়ে। ফলে পাকিস্তান ভেংগে গেল ৭১ সালে। শেখ সাহেব হয়ে গেলেন নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও পিতা। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে ১০ই জানিয়ারী তিনি বললেন, আমি মুসলমান, আমি বাংগালী। আমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম রাষ্ট্রের নেতা। বর্তমান আওয়ামী লীগ বা তাঁর কন্যা শেখ সাহেবের এই নীতি থেকে এখন হাজার মাইল দূরে। শেখ সাহেবের আত্মজীবনী পড়লেই বুঝতে পারবেন তিনি মনে প্রাণে একজন মুসলমান ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের জন্যে লড়াই করেছেন। আগেই বলেছি তিনি মুসলীম লীগ ত্যাগ করেছেন দলের শীর্য নেতাদের অবহেলার কারণে। তিনি কখনই ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ছিলেন না। এ কথা আমি দৃঢ ভাবে বিশ্বাস করি। ৭৪সালে ওআইসি সম্মেলনে যাওয়ার আগে তিনি কঠোর মনোভাব নিয়ে ভারতের চাপকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তাঁর কেবিনেটের কিছুলোক তাঁকে না যাওয়ার জন্যে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ভারতীয় হাই কমিশনার বিমান বন্দরে রানওয়ে পর্যন্ত গিয়েছিলেন শেষ অনুরোধ জানাবার জন্যে। কিন্তু তিনি শোনেননি। তিনি মনে করতেন তিনি স্বাধীন দেশের নেতা ও রাষ্ট্রপতি। স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। আমি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে ঘটনাটা দেখেছি। শেখ হাসিনা এখন শেখ সাহেবের মতো স্বাধীন নন। বংগবন্ধুর নিহত হওয়ার পেছনে তাঁর স্বাধীন মনোভাব কাজ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী বাংগালী মুসলমান নেতা। এমন স্বাধীন মনেভাবের নেতাকে ভারত প্রতিবেশী দেশের নেতা হিসাবে দেখতে চায়না। একই কারণে জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করা হয়েছে। ভারত চায় বাংলাদেশ একটি অনুগত বাধ্য রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকে থাকুক। যার নমুনা আমরা দেখেছি ২০০৬ সালের লাগিবৈঠার আন্দোলন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন নাগাদ। তখন পিনাক রঞ্জন ছিলেন বাংলাদেশে দিল্লীর সুবেদার। তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তাঁরই অবদান হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচন তার ফলাফল। যার ধারাবাহিকতা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়াকে বাধ্য করা হয়েছিল নির্বাচনে যেতে। তাঁর দুই ছেলেকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়েছিল নির্বাচনে না গেলে। ভারতের জনগণ ও মিডিয়া জানে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা হচ্ছেন সিকিমের লেনদুপ দর্জি।
বংগবন্ধু এ কাজটি কখনই করতেন পারতেন না। ফলে তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বংগবন্ধুর অবস্থা থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। তিনি ৭৫ থেকে ৮০ সাল নাগাদ ভারতের মেহমান হিসাবে দিল্লীতে ছিলেন। এখন তিনি ঢাকায় দিল্লীর একজন সুবেদার। দিল্লীর কাজ হচ্ছে যেমন করেই হোক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা। এবং তাঁর মাধ্যমেই দিল্লীর আকাংখা বাস্তবায়িত করা। ৪৮ সাল থেকে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ খুঁজছিলো। এখন সে সুযোগ তারা পেয়েছে। ছোটখাট ,কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীন বন্দর গুলোও তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে। সীমান্তে নিয়মিত মানুষ মারছে, ফসল কেটে নিচ্ছে, গরু ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি আটকে দিচ্ছে। সীমান্তে বহু যায়গা দখল করে নিয়েছে।
অপরদিকে রাজনীতির মাঠ থেকে থেকে খালেদা জিয়া বা ইসলামী ভাবধারাকে মুছে দেয়ার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। শেখ হাসিনার এক কথা আমাকে ক্ষমতায় না রাখলে জংগীবাদের উত্থান হবে। শেখ হাসিনার কেবিনেট মন্ত্রীরা ২৪ ঘন্টা গলাবাজি করছেন, খালেদা জিয়া সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, বাস পোড়ানোের জংগী নেত্রী। শেখ হাসিনা পশ্চিমা দেশগুলোকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন যে খালেদা জিয়া মানেই আইএস জংগী। তিনি বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ আগে উন্নয়ন চায়, পরে গণতন্ত্র। নির্বাচন কোন বড় বিষয় নয়।
শেখ হাসিনা বংগবন্ধুর নাম ব্যবহার করছেন। জনগণের কাছে তাঁর ভুল ইমেজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। রামায়নের ভরতের খড়ম সিংহাসনে রেখে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন। আমাদের সংবিধান তাঁকে মোগল, পারস্য , জার ও রোম সম্রাটদের ক্ষমতা ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে।তিনি একজন সিভিল ডিক্টেটর। তিনি মনে করেন, ‘সি ইজ দা ল’।
বংগবন্ধুও মনে করতেন তিনিই গণতন্ত্র,দেশের স্বার্থে তিনি ভাববেন সেটাই আইন। তিনি বাহিনী দিয়ে দেশ চালাবার চেষ্টা করেছেন, তিনি সামরিক বাহিনীকে অবজ্ঞা করে রক্ষী বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহা বিশ্বস্ত তোফায়েল সাহেবকে রক্ষী বাহিনীর প্রধান করেছিলেন। বংগবন্ধু ভাবতেন, তিনিই বাংলাদেশ, তিনিতো সবকিছুই দেশবাসীর কল্যানে করছেন। এ চিন্তা থেকেই তিনি একদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভিন্ন মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সকল পত্রিকা ও দল বন্ধ করে দিয়েছিলে। রাশিয়া তাঁকে অন্ধভাবে সমর্থন করেছে। কিন্তু বিপদের দিনে রাশিয়া বা ভারত কেউ সাহায্যে এগিয়া আসেনি। তাজউদ্দিন সাহেবকে কেবিনেট থেকে বিদায় করে তিনি ভারতের বিরাগ ভাজন হয়েছেন এবং পশ্চিমা দেশ গুলোকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। তাজ উদ্দিন সাহেব সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিছুদিন তিনি সমাজতান্ত্রিক নেতার অভিনয় করেছেন রাশিয়া ও ভারতকে খুশী করার জন্যে।
বংগবন্ধু কোন কূট কৌশলে বিশ্বাস করতেন না। তিনি যা করেছেন সরল বিশ্বাসেই করেছেন। তাতে দেশবাসীর অকল্যাণ হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ক্ষতি হয়েছে। দেশ দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আমলা ও কিছু সমাজতন্ত্রী তাঁকে ভুল বুঝিয়েছিল। তাঁর ভিতর শাসকের গুণ ছিলনা। তিনি সব কিছুই আবেগ ও হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করতেন, মাথা বা বুদ্ধি দিয়ে নয়। তিনি চাটুকার পরিবেষ্টিত থাকতে ভালবাসতেন। শেখ মণি লিখেছিলেন, আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসণ চাই। চাটুকারদের শ্লোগাণ ছিল, এক নেতা এক দেশ, বংগবন্ধু বাংলাদেশ। বড়ই দু:খের বিষয় হলো,তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চাটুকার ও ভক্তরা সব পালিয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অনেক পাকা। তিনি কেবিনেটে অর্ধেকের বেশী ভারতপন্থীকে রেখেছেন ভারতকে খুশী রাখার জন্যে। কিছুলোককে তিনি মন্ত্রী বানিয়ে রেখেছেন যেন তাঁরা ২০০৭-৮ এর মতো ষড়যন্ত্র করতে না পারেন। ভারতের নীতি হলো দমন করো, আরও কঠোর ভাবে দমন করো এবং ক্ষমতায় থাকো। আর জংগীবাদের মাতম করে সবার সমর্থন আদায় করো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রমান করেছে নির্বাচনে ভোট লাগেনা। মিশরের আল সিসি এক ধাক্কায় নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করেছে। কেউ টু শব্দ করেনি। এমন নির্বাচন বাংলাদেশে কখনই হয়নি। এমন নির্বাচনকে আমাদের সংবিধান ও ভারত কঠোর ভাবে সমর্থন করেছে। তাই এখন শেখ ক্ষমতায় আছে এবং ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়।
২০১৩-১৪ সালের জানুয়ারী নাগাদ বাংলাদেশে ৪/৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। এমন রাজনৈতিক দমন এদেশে আর কখনই হয়নি। এখনতো বিরোধী দলের আন্দোলনকে জংগী সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমান করার জন্যে জ্বালাও পোড়াও চলছে। স্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। বিরোধী দলের মত প্রকাশের কোন সুযোগই এখন নেই। প্রধানমন্ত্রী দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা বলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন জংগীদের আন্দোলন। এর শাথে আলকায়েদা বা আইএস জড়িত আছে। সরকারী দল নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মহীন প্রমান করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে
আল্লাহর নাম বাদ দিয়েছে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ বাদ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছেন মাদ্রাসা ও মসজিদ গুলো থেকে জংগীবাদের জন্ম হয়। জেহাদের বই এর নামে মূল্যবান ধর্মীয় গ্রন্থ বাজেয়াপত্ করা হচ্ছে। এর দ্বারা ভারত ও পশ্চিমাদেশ গুলো খুশী হয়।
বংগবন্ধু জীবিত থাকলে কখনই তথাকথিত সেক্যুলারিজমের নামে শেখ হাসিনা যা করছেন তা করতে পারতেন না। বংগবন্ধুই বাংলাদেশ হওয়ার পর ইসলামিক একাডেমীকে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে আল্লামা আবুল হাসেম সাহেবকে ডিজি করেছিলেন। আবুল হাসেম সাহেব ছিলেন অখন্ড বাংলাদেশ মুসলীম লীগের সাধারন সম্পাদক। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করেছে। সউদী আরব ও চীন ছাড়া বেশীর ভাগ দেশ স্বীকৃতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে।
আমরা যারা ঘনিষ্ঠ ভাবে বংবন্ধুর নৈকট্য লাভ করেছি তারা সকলেই জানি তিনি নরম হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। রাজনীতি বাদ দিলে তিনি ছিলেন শাহজাহানের বড়ছেলে দারাশিকোহর মতো। গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন রাখাল রাজা পদবী দিয়েছিলেন। মোঘল বাদশাহদের সাথে তুলনা করলে তাঁকে কিছুটা সাথে তুলনা করা যায় আর জিয়াউর রহমানকে ঔরংজেবের সাথে তুলনা করা যায়। শাসক হিসাবে তিনি সফল ছিলেন না। এদিক থেকে বিচার করতে গেলে শেখ হাসিনা একশ’ভাগ সফল। তিনি তাঁর লক্ষ্যের ব্যাপারে একেবারেই স্থির। সেনা সমর্থিত সরকারটি তাঁরই ছিল। সে সরকারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতীয় দূত পিনাক রঞ্জণ। ফলে তিনি আজও ক্ষমতায় আছেন। আরও থাকার ইচ্ছা আছে। তাঁর আমলে যত রাজনৈতিক গুম খুন হয়েছে বাংলাদেশের ৪৪ বছরে আর কারও আমলে। শাসক হিসাবে তিনি কঠোর হাতে এসব মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। তাঁর আরেকটি বড় সাফল্য তিনি এক দংগল বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিককে পৃষ্ঠপোষকতা দেন যাঁদের কোন বিবেক নেই। তিনি তাঁর পিতার কঠোর সমালোচক ও হত্যার প্রচেষ্টাকারীদের পারিষদ করেছেন। দিনরাত তাঁরা এখন হাসিনা হু আকবর বলে জিকির করে যাচ্ছে। দেশে চরম অশান্তি সৃষ্টি করে তিনি খুব সফলতার সাথে দেশ শাসন করছেন।আন্তর্জাতিক মতামতকে তিনি কোন তোয়াক্কা করেন না। সেটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব ভারতের। তিনি হাসতে হাসতে প্রতিপক্ষকে দমন করে যাচ্ছেন। রাজনীতিকে তিনি নাটক ও কৌতুক মনে করেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
You must be logged in to post a comment.