Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘Articles’ Category


বংগবন্ধুর সাথে আমার সরাসরি পরিচয় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান অবজারভারে  কাজ শুরু করার পর। কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই পারিবারিক। আমাদের জেনারেশনের অনেকের সাথেই তাঁর খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি পরিচিতজনকে খুব আদর যত্ন করতেন। সে সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিক ছিলেন মাওলানা ভাসানী। শেখ সাহেব কোলকাতা থেকেই সোহরাওয়ার্দীর সাহেবের ভক্ত বা অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ঢাকর মুসলীম লীগ নেতারা আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি মাওলানা সাহেবকে কোন গুরুত্বই দিলেন না। একই ভাবে মুসলীম লীগের কোলকাতার নামজাদা কর্মী শেখ সাহেবও অবহেকিত। ফলে দুজনই মুসলীম লীগের ঢাকার রাজনীতিতে অপাংতেয় হয়ে গেলেন।
অখন্ড বাংলাদেশের(সাবেক ) শেষ প্রধানমন্ত্রী মুসলীম লীগের সোহরাওয়ার্দী সা্হেব। মুসলীম লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের ফলে সোহরাওয়ার্দী সাহের ঢাকা ফিরতে বিলম্ব হলো। অনেকেই বলেন তাঁকে ফিরতে দেয়া হয়নি। পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন ঢাকা নবাব বাড়ির নাজিম উদ্দিন সাহেব। অখন্ড বাংলাদেশের প্রথম তিনজন প্রধান মন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা, স্যার নাজিমউদ্দিন ও সোহরাওয়ার্দী। এর কারণ, অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানরা ছিল মেজরিটি।
ফলে বাধ্য হয়ে মাওলানা সাহেব বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩শ জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করলেন। শেখ সাহেব ছিলেন নতুন দলের যুগ্ম সম্পাদক। শুরু হলো মুসলীম লীগ বিরোধী রাজনীতি। মাওলানা সাহেব আর শেখ সাহেব ছিলেন শক্তিশালী সংগঠক ও বাগ্মী। ৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগের কবর হয়ে গেল। শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা সাহেব এক জোট হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেছিলেন। সকলেই ছিলেন মুসলীম লীগ নেতা এবং সকলেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার আওয়ামী মুসলীম লীগ। রক্ষণশীল গণবিরোধী মুসলীম লীগ নেতাদের অদূরদর্শিতার কারণেই মুসলীম লীগ ভেংগে নতুন মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছিল।কিন্তু মাওলানা সাহেব বেশীদিন নিজের প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারলান। ফলে শেখ সাহেব কালক্রমে আওয়ামী লীগের মূল ও একচ্ছত্র নেতা হয়ে গেলেন। এবং পূর্ব পাকিস্তান রাজনীতির ধারক বাহক হয়ে গেলেন। তিনি বাংগালী অবাংগালী ইস্যুটাকে জনপ্রিয় করে সামনে নিয়ে এলেন। মাওলানা ব্যস্ত থাকলেন বিদেশনীতি নিয়ে।

পাকিস্তানের বিদেশনীতির প্রশ্নে ৫৭ সালেই আওয়ামী লীগ ভেংগে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাপের জন্ম হয়। রাজনীতিতে শেখ সাহেব এবং মাওলানা সাহেব আলাদা হয়ে গেলেন। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মাওলানা সাহেব ছিলেন আমেরিকা ও সাম্রজ্যবাদ বিরোধী। আর শেখ সাহেব ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব ছিলেন আমেরিকা পন্থী। শেখ সাহেব  রাজনৈতিক ভাবে মাওলানা সাহেবকে ছাড়লেও ব্যক্তিগত ভাবে প্রকাশ্যে বা গোপনে তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখতেন সে সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। সাংবাদিক হিসাবে আমারও সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাওলানা সাহেবের সাথে শেখ সাহেবের ছিল অন্তরের সম্পর্ক। মাওলানা সাহেব ক্ষমতার রাজনীতি না করলেও ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমি নিজেও ক্ষমতার সাথে জড়িত থাকা বা জড়িয়ে পড়া কখনই পছন্দ করিনা। আমি মনে করি ক্ষমতার সাথে জড়িত হলে চিন্তার স্বাধীনতা থাকেনা। এখন সাংবাদিকেরা সরকারের একাংশ। আওয়ামী ক্ষমতায় থাকলে তার একদল সাংবাদিক থাকে, আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তারও একদল সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী তাকে। ৭২ এ আগে এ অবস্থা এত নগ্ন ছিলনা। তাবেদার বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক থাকলে দল ও সরকার খুশী হয়। শেখ সাহেবের সাথে বেশ কিছু বামপন্থী সাংবাদিক ও ছিলেন। এরা মুখে বলতেন আমরা মাওলানা সাহেবের লোক। এই বামপন্থীরা এখন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বামপন্থী বা প্রগতিশীল মনে করে। এরা মনে করেন ভারত বাংলাদেশে বামপন্থী বিকাশে সাহাহ্য করবে। এদের মতে ভারতকে সমর্থন করা, রবীন্দ্রনাথকে পূজা করা, হিন্দূ সংস্কৃতিকে বাংগালী বলে চালানো প্রগতিশীলতা।
পাকিস্তানকে ভেংগে ফেলার জন্যে ভারত ৪৭ সাল থেকে কাজ করে গেছে। বাংগালী অবাংগালী প্রশ্নে শেখ সাহেবের নেতৃত্বকে ভারত সমর্থন দিয়েছে। ফলে শেখ সাহেব পূর্ববাংলার একচ্ছত্র একক নেতায় পরিণত হলেন। পাকিস্তানী নেতা ও সামরিক জান্তা ছিল অন্ধ ও একগুয়ে। ফলে পাকিস্তান ভেংগে গেল ৭১ সালে। শেখ সাহেব হয়ে গেলেন নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও পিতা। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে ১০ই জানিয়ারী তিনি বললেন, আমি মুসলমান, আমি বাংগালী। আমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম রাষ্ট্রের নেতা। বর্তমান আওয়ামী লীগ বা তাঁর কন্যা শেখ সাহেবের এই নীতি থেকে এখন হাজার মাইল দূরে। শেখ সাহেবের আত্মজীবনী পড়লেই বুঝতে পারবেন তিনি মনে প্রাণে একজন মুসলমান ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের জন্যে লড়াই করেছেন। আগেই বলেছি তিনি মুসলীম লীগ ত্যাগ করেছেন দলের শীর্য নেতাদের অবহেলার কারণে। তিনি কখনই ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ছিলেন না। এ কথা আমি দৃঢ ভাবে বিশ্বাস করি। ৭৪সালে ওআইসি সম্মেলনে যাওয়ার আগে তিনি কঠোর মনোভাব নিয়ে ভারতের চাপকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তাঁর কেবিনেটের কিছুলোক তাঁকে না যাওয়ার জন্যে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ভারতীয় হাই কমিশনার বিমান বন্দরে রানওয়ে পর্যন্ত গিয়েছিলেন শেষ অনুরোধ জানাবার জন্যে। কিন্তু তিনি শোনেননি। তিনি মনে করতেন তিনি স্বাধীন দেশের নেতা ও রাষ্ট্রপতি। স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। আমি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে ঘটনাটা দেখেছি। শেখ হাসিনা এখন শেখ সাহেবের মতো স্বাধীন নন। বংগবন্ধুর নিহত হওয়ার পেছনে তাঁর স্বাধীন মনোভাব কাজ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী বাংগালী মুসলমান নেতা। এমন স্বাধীন মনেভাবের নেতাকে ভারত প্রতিবেশী দেশের নেতা হিসাবে দেখতে চায়না। একই কারণে জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করা হয়েছে। ভারত চায় বাংলাদেশ একটি অনুগত বাধ্য রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকে থাকুক। যার নমুনা আমরা দেখেছি ২০০৬ সালের লাগিবৈঠার আন্দোলন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন নাগাদ। তখন পিনাক রঞ্জন ছিলেন বাংলাদেশে দিল্লীর সুবেদার। তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তাঁরই অবদান হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচন তার ফলাফল। যার ধারাবাহিকতা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়াকে বাধ্য করা হয়েছিল নির্বাচনে যেতে। তাঁর দুই ছেলেকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়েছিল নির্বাচনে না গেলে। ভারতের জনগণ ও মিডিয়া জানে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা হচ্ছেন সিকিমের লেনদুপ দর্জি।
বংগবন্ধু এ কাজটি কখনই করতেন পারতেন না। ফলে তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বংগবন্ধুর অবস্থা থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। তিনি ৭৫ থেকে ৮০ সাল নাগাদ ভারতের মেহমান হিসাবে দিল্লীতে ছিলেন। এখন তিনি ঢাকায় দিল্লীর একজন সুবেদার। দিল্লীর কাজ হচ্ছে যেমন করেই হোক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা। এবং তাঁর মাধ্যমেই দিল্লীর আকাংখা বাস্তবায়িত করা। ৪৮ সাল থেকে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ খুঁজছিলো। এখন সে সুযোগ তারা পেয়েছে। ছোটখাট ,কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীন বন্দর গুলোও তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে। সীমান্তে নিয়মিত মানুষ মারছে, ফসল কেটে নিচ্ছে, গরু ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি আটকে দিচ্ছে। সীমান্তে বহু যায়গা দখল করে নিয়েছে।
অপরদিকে রাজনীতির মাঠ থেকে থেকে খালেদা জিয়া বা ইসলামী ভাবধারাকে মুছে দেয়ার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। শেখ হাসিনার এক কথা আমাকে ক্ষমতায় না রাখলে জংগীবাদের উত্থান হবে। শেখ হাসিনার কেবিনেট মন্ত্রীরা ২৪ ঘন্টা গলাবাজি করছেন, খালেদা জিয়া সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, বাস পোড়ানোের জংগী নেত্রী। শেখ হাসিনা পশ্চিমা দেশগুলোকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন যে খালেদা জিয়া মানেই আইএস জংগী। তিনি বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ আগে উন্নয়ন চায়, পরে গণতন্ত্র। নির্বাচন কোন বড় বিষয় নয়।
শেখ হাসিনা বংগবন্ধুর নাম ব্যবহার করছেন। জনগণের কাছে তাঁর ভুল ইমেজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। রামায়নের ভরতের খড়ম সিংহাসনে রেখে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন। আমাদের সংবিধান তাঁকে মোগল, পারস্য , জার ও রোম সম্রাটদের ক্ষমতা ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে।তিনি একজন সিভিল ডিক্টেটর। তিনি মনে করেন, ‘সি ইজ দা ল’।
বংগবন্ধুও মনে করতেন তিনিই গণতন্ত্র,দেশের স্বার্থে তিনি ভাববেন সেটাই আইন। তিনি বাহিনী দিয়ে দেশ চালাবার চেষ্টা করেছেন, তিনি সামরিক বাহিনীকে অবজ্ঞা করে রক্ষী বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহা বিশ্বস্ত তোফায়েল সাহেবকে রক্ষী বাহিনীর প্রধান করেছিলেন। বংগবন্ধু ভাবতেন, তিনিই বাংলাদেশ, তিনিতো সবকিছুই দেশবাসীর কল্যানে করছেন। এ চিন্তা থেকেই তিনি একদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভিন্ন মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সকল পত্রিকা ও দল বন্ধ করে দিয়েছিলে। রাশিয়া তাঁকে অন্ধভাবে সমর্থন করেছে। কিন্তু বিপদের দিনে রাশিয়া বা ভারত কেউ সাহায্যে এগিয়া আসেনি। তাজউদ্দিন সাহেবকে কেবিনেট থেকে বিদায় করে তিনি ভারতের বিরাগ ভাজন হয়েছেন এবং পশ্চিমা দেশ গুলোকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। তাজ উদ্দিন সাহেব সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিছুদিন তিনি সমাজতান্ত্রিক নেতার অভিনয় করেছেন রাশিয়া ও ভারতকে খুশী করার জন্যে।
বংগবন্ধু কোন কূট কৌশলে বিশ্বাস করতেন না। তিনি যা করেছেন সরল বিশ্বাসেই করেছেন। তাতে দেশবাসীর অকল্যাণ হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ক্ষতি হয়েছে। দেশ দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আমলা ও কিছু সমাজতন্ত্রী তাঁকে ভুল বুঝিয়েছিল। তাঁর ভিতর শাসকের গুণ ছিলনা। তিনি সব কিছুই আবেগ ও হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করতেন, মাথা বা বুদ্ধি দিয়ে নয়। তিনি চাটুকার পরিবেষ্টিত থাকতে ভালবাসতেন। শেখ মণি লিখেছিলেন, আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসণ চাই। চাটুকারদের শ্লোগাণ ছিল, এক নেতা এক দেশ, বংগবন্ধু বাংলাদেশ। বড়ই দু:খের বিষয় হলো,তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চাটুকার ও ভক্তরা সব পালিয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অনেক পাকা। তিনি কেবিনেটে অর্ধেকের বেশী ভারতপন্থীকে রেখেছেন ভারতকে খুশী রাখার জন্যে। কিছুলোককে তিনি মন্ত্রী বানিয়ে রেখেছেন যেন তাঁরা ২০০৭-৮ এর মতো ষড়যন্ত্র করতে না পারেন। ভারতের নীতি হলো দমন করো, আরও কঠোর ভাবে দমন করো এবং ক্ষমতায় থাকো। আর জংগীবাদের মাতম করে সবার সমর্থন আদায় করো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রমান করেছে নির্বাচনে ভোট লাগেনা। মিশরের আল সিসি এক ধাক্কায় নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করেছে। কেউ টু শব্দ করেনি। এমন নির্বাচন বাংলাদেশে কখনই হয়নি। এমন নির্বাচনকে আমাদের সংবিধান ও ভারত কঠোর ভাবে সমর্থন করেছে। তাই এখন শেখ ক্ষমতায় আছে এবং ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়।
২০১৩-১৪ সালের জানুয়ারী নাগাদ বাংলাদেশে ৪/৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। এমন রাজনৈতিক দমন এদেশে আর কখনই হয়নি। এখনতো বিরোধী দলের আন্দোলনকে জংগী সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমান করার জন্যে জ্বালাও পোড়াও চলছে। স্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। বিরোধী দলের মত প্রকাশের কোন সুযোগই এখন নেই। প্রধানমন্ত্রী দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা বলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন জংগীদের আন্দোলন। এর শাথে আলকায়েদা বা আইএস জড়িত আছে। সরকারী দল নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মহীন প্রমান করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে
আল্লাহর নাম বাদ দিয়েছে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ বাদ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছেন মাদ্রাসা ও মসজিদ গুলো থেকে জংগীবাদের জন্ম হয়। জেহাদের বই এর নামে মূল্যবান ধর্মীয় গ্রন্থ বাজেয়াপত্ করা হচ্ছে। এর দ্বারা ভারত ও পশ্চিমাদেশ গুলো খুশী হয়।
বংগবন্ধু জীবিত থাকলে কখনই তথাকথিত সেক্যুলারিজমের নামে শেখ হাসিনা যা করছেন তা করতে পারতেন না। বংগবন্ধুই বাংলাদেশ হওয়ার পর ইসলামিক একাডেমীকে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে আল্লামা আবুল হাসেম সাহেবকে ডিজি করেছিলেন। আবুল হাসেম সাহেব ছিলেন অখন্ড বাংলাদেশ মুসলীম লীগের সাধারন সম্পাদক। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করেছে। সউদী আরব ও চীন ছাড়া বেশীর ভাগ দেশ স্বীকৃতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে।
আমরা যারা ঘনিষ্ঠ ভাবে বংবন্ধুর নৈকট্য লাভ করেছি তারা সকলেই জানি তিনি নরম হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। রাজনীতি বাদ দিলে তিনি ছিলেন শাহজাহানের বড়ছেলে দারাশিকোহর মতো। গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন রাখাল রাজা পদবী দিয়েছিলেন। মোঘল বাদশাহদের সাথে তুলনা করলে তাঁকে কিছুটা সাথে তুলনা করা যায় আর জিয়াউর রহমানকে ঔরংজেবের সাথে তুলনা করা যায়। শাসক হিসাবে তিনি সফল ছিলেন না। এদিক থেকে বিচার করতে গেলে শেখ হাসিনা একশ’ভাগ সফল। তিনি তাঁর লক্ষ্যের ব্যাপারে একেবারেই স্থির। সেনা সমর্থিত সরকারটি তাঁরই ছিল। সে সরকারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতীয় দূত পিনাক রঞ্জণ। ফলে তিনি আজও ক্ষমতায় আছেন। আরও থাকার ইচ্ছা আছে। তাঁর আমলে যত রাজনৈতিক গুম খুন হয়েছে বাংলাদেশের ৪৪ বছরে আর কারও আমলে। শাসক হিসাবে তিনি কঠোর হাতে এসব মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। তাঁর আরেকটি বড় সাফল্য তিনি এক দংগল বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিককে পৃষ্ঠপোষকতা দেন যাঁদের কোন বিবেক নেই। তিনি তাঁর পিতার কঠোর সমালোচক ও হত্যার প্রচেষ্টাকারীদের পারিষদ করেছেন। দিনরাত তাঁরা এখন হাসিনা হু আকবর বলে জিকির করে যাচ্ছে। দেশে চরম অশান্তি সৃষ্টি করে তিনি খুব সফলতার সাথে দেশ শাসন করছেন।আন্তর্জাতিক মতামতকে তিনি কোন তোয়াক্কা করেন না। সেটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব ভারতের। তিনি হাসতে হাসতে প্রতিপক্ষকে দমন করে যাচ্ছেন। রাজনীতিকে তিনি নাটক ও কৌতুক মনে করেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

Read Full Post »


অচেনা এক রাস্ট্রের ভিতর জীবন যাপন / এরশাদ মজুমদার

ছাত্র বয়স থেকেই রাস্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এখন বৃদ্ধকালে এসেছি। জানিনা দুনিয়া থেকে চলে যাবার আগে রাস্ট্র ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবো। সারা জীবন মানবতার জন্যে লড়াই করেছি। ক্ষুধা,দারিদ্র,অশিক্ষা,চিকত্‍সাহীনতা থেকে মুক্ত একটা সমাজ ও দেশ চেয়েছিলাম। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল বিশেষ ভাবে বাংলার নির্যাতিত মুসলমানের মুক্তি জন্যে। জিন্নাহ সাহেব নিজেই বলেছিলেন, শুধু পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মুক্তির জন্যে হলেও পাকিস্তান অপরিহার্য। ৭১ সালে পূর্ব বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান নিজেই ভেংগে গেছে। পাকিস্তান কর্তৃক শোষিত ও নির্যাতিত সেই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ আজ স্বাধীন। কোন বিদেশী শাসক বা শোষক নেই।
পৃথিবীর যে কোন রাস্ট্রের অস্তিত্ব নির্ভর করে সে রাস্ট্রের পরিচালন ব্যবস্থার উপর। পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে উঠে সংবিধানকে কেন্দ্র করে। স্বাধিনতার ৪২ বছর আজ আমরা কি দেখছি? দেখছি, আমাদের রাস্ট্রটি এক অত্যাচারী রাস্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাস্ট্রের ম্যানেজার বা নায়েব যাকে আধুনিক ভাষায় সরকার বলে অভিহিত করি। সেই সরকার এখন দেশের নাগরিক বা মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে রক্ষা করার জন্যে রাস্ট্রের আছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেব, পুলিশ ও আনসার। রাস্ট্রকে রক্ষা করার জন্যেই সেনা বাহিনী তৈয়ার করা হয়। সেই সেনাবাহিনীর বিপথগামী বলে পরিচিত কিছু লোক ইতোমধ্যই দুজন রাস্ট্রপতিকে হত্যা করেছে। একজন সেনাপতি জোর করে ক্ষমতা দখল করে নিজের তার গ্রুপের ইচ্ছা মত নয় বছর শক্তি দিয়ে দেশ চালিয়েছে। আরেক জন সেনাপতি অভ্যুত্থান করতে গিয়ে চাকুরী হারিয়েছেন। রাটজনৈতিক দলের মারামারি হানাহানির সুযোগ নিয়ে ২০০৭ সালে সেনাপতি মইন ইউ আহমদ ক্ষমতা দখল করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। তখন আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,১/১১র দেশদ্রোহী মইন ইউ আহমদের সরকার তাদের দাংগা হাংগামার ফসল। নির্বাচিত হলে সেই অবৈধ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকে তিনি বৈধ করে দিবেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে সেনাপতি মইন ইউ আহমদ শেখ হাসিনাকে পুর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য হাসিলের জন্যে ক্ষমতায় বসিয়ে দেশত্যাগ করে চলে যান। তিনি এখনও নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। আমার বিশ্বাস,দেশবাসী বা পাঠক সমাজ ১/১১র সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক গোষ্ঠি কি করেছিল তা ভুলে যাননি। ২৮শে অক্টোবরের লগিবৈঠার হত্যা কান্ড টিভির মাধ্যমে সারা বিশ্ব দেখেছে। এর আগেও ৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগ সারা দেশে তান্ডব চালায়। ফেব্রুয়ারীর এক তরফা নির্বাচনের দিন রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল কারফিউ ঘোষণা করে। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি সরকার একদিন বা দুইদিন স্থায়ী সংসদে কেয়ারটেকার সরকারের আইন পাশ করে। সেই আইন আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে শেখ হাসিনার সরকার বাতিল করে দেয় গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে। আর বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট এখন আন্দোলন করছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পূণ:প্রতিষ্ঠা করার জন্যে।
বাংলাদেশের চলমান বেদনাদায়ক ও দু:খজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনার সরকার ও তার সহযোগীরা। দেশবাসী সবাই জানেন যে, কেয়ারটেকার ব্যবস্থার দাবী মেনে নিলে চলমান অবস্থার সৃষ্টি হতোনা। এখন পাঠক সমাজ ও দেশবাসীকে ভাবতে হবে কেন শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। শেখ হাসিনা নিজেই বলেন তাঁরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চান। ইতোমধ্যেই তিনি সরকারী খরচে জনসভা করে ভোট চাইতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই তাঁর সরকার যদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশকে মুসলীম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অস্বচ্ছ,আন্তর্জাতিক ভাবে বৈধ নয় এমন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত নিন্দা জানিয়ে বিচার বন্ধ করার দাবী তুলেছে। শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থানের প্রতি একমাত্র ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে। ভারতের মিডিয়া গুলো ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে যে শা্হবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি ভারত সরকারের সমর্থন রয়েছে। ভারত এবং সে দেশের রাজনৈতিক দল ও মিডিয়া গুলো ভারতের স্বার্থেই কাজ করে। তাই তারা দলবেঁধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশের প্রশ্নে এক। বুঝে হোক না বুঝে হোক বাংলাদেশের ৯০ ভাগ রাজনৈতিক দল ও মিডিয়া ভারতের স্বার্থে কাজ করে। কিছুদিন আগেই ভারতের মিডিয়া গুলো বলেছে এবার হাসিনার কিছু হলে ভারত চুপ করে থাকবেনা।
অনেকের কাছেই প্রশ্ন, শেখ হাসিনা এক সাথে বড় দুটো ঝুঁকি নিলেন কেন? তিনি কি জানতেন না বিরোধী দল তাঁর সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবেনা? যুদ্ধাপরাধীর বিচারে মাওলানা সাঈদীর বিচারের রায় বের হলে দেশে বিদেশে কি প্রতিক্রিয়া হবে? সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে ব্রিফ করেছেন। তাহলে কেন তিনি শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন বা ধ্বংস করতে চাইছেন। কেনইবা তিনি বার বার বলছেন তিনি ২০২১ সাল পর্ক্ষন্ত ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন। এটা কি শুধুই ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা না অন্যকিছু? পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করছেন তাঁর অন্য কোন এজেন্ডা আছে,যা প্রকাশ্য নয়। ইতোমধ্যেই দেশবাসীর মনে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে,আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটা ধর্মহীন বা সেক্যুলার রাস্ট্রে পরিণত করতে চায়। যার জন্যে সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম তুলে দিয়েছেন বা তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে বলা হয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। যে কোরণে হোক, বিএনপিও এ বিষয়টার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। সে সুযোগটা এখন আওয়ামী লীগ নিচ্ছে। কাগজে কলমে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানার দরকার নেই। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে অপমান করার জন্যে সরকার নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেছে। পাঠ্য পুস্তকে ইসলাম ও আল্লার বিরুদ্ধে পাঠদান করা হচ্ছে। ব্লগে আল্লাহ, রাসুল(সা) ও কোরআনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করার পরও সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং একজন ব্লগার নিহত হওয়ার পর সেই ব্লগারকে শহীদ ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদে সেই ব্লগারের নামে গুণ গাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্লাগারের বাড়িতে গিয়ে তাকে মহিমান্বিত করেছেন। আল্লাহদ্রোহী অন্যান্য ব্লগাররা গণ জাগরণ নামে শাহবাগের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। নানা বিষয়ে শাহবাগীরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে চলেছে। সরকারের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে শাহবাগীরাই আসল সরকার ।তাদের শ্লোগান হলো জয় বাংলা। যদিও বাংলা বলে জগতে কোন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নাই। তাহলে কোন বাংলার নামে তারা জয়গাণ গাইছে? পশ্চিম বাংলাতো ভারতের একটি রাজ্য বা প্রদেশ। যেখানে গেলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তারা মুখ্যমন্ত্রী বলে। তারা শ্লোগান দেয় আমি কে তুমি কে? বাংগালী বাংগালী। তাই দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে শাহবাগীদের দৃশ্যমান গুরু সরকার হলেও অদৃশ্য গুরু কে বা কারা। ৪২ বছর পর বাংলাদেশের সব অর্জনকে কারা নস্যাত করতে চাইছে। কারা আমাদের জাতিসত্তার মূলে আঘাত করে চলেছে। তারা ৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করে পাকিস্তানকে ভেংগেছে। এখন বাংলাদেশকে নিয়ে করতে চায়? দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে তারা এদেশে একশ্রেণীর মানূষ তৈরি করেছে যারা শুধু মাত্র খাঁটি বাংগালী হওয়ার জন্যে নিজেদের আসল পরিচয় মুসলমানিত্ব,ঐতিহ্য, ভাষা, কৃষ্টি, ধর্ম ,সাহিত্য সবকিছু ত্যাগ করতে চায়।
কোলকাতার পাক্ষিক দেশ ম্যাগাজিন শাহবাগের উপর একটি গল্প প্রকাশ করেছে। ওই লেখাটিকে রিপোর্ট বলা যায়না। কল্পনা মিশ্রিত আবেগের বহি:প্রকাশ। লেখক সুমন সেনগুপ্ত শাহবাগে এসেছিলেন কিনা জানিনা। হয়ত কারো কাছ থেকে এর বর্ণনা শুনেছেন। যেমন,‘’লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখ কয়েক হাজার’। এক জায়গায় লিখেছেন,কিন্তু ব্রহ্মের শক্তি ধরে আছে এই জনতা।লেখক বিরোধী দলকে মৌলবাদী বলেছেন। খালেদা জিয়াকেও এক হাত নিয়েছেন। অথচ, দেশ ম্যগাজিনটি একটি মৌলবাদী আনন্দবাজার গ্রুপের কাগজ। যে গ্রুপ ভারতের নিপীড়িত মানুষের কথা বলেনা। এক সময় রাজস্থানে আনন্দবাজারের অশোক সরকারের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তখন গফুর সাহেব ছিলেন রাজ্য সরকারের গভর্নর বা রাজ্যপাল। একটা অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। তখন কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম তিনি কত উচ্চ মার্গের সাম্প্রদায়িক ছিলেন। সময়টা ছিল ৭৩ সাল। তিনি জানতে চাইলেন মাওলানা ভাসানী কেন ভারতের বিরোধীতা করছেন। মাত্র ক’দিন আগেইতো তোমাদের ভারত স্বাধীন করে দিয়েছে। এত অল্প সময়ে সব ভুলে গেলে? রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাংগালী শিক্ষকও একই প্রশ্ন করেছিলেন। এখনও ভারতীয় বাংগালী অবাংগালী সবাই মনে করে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে,আর সেই দেশের মানুষ কেমন করে ভারতের বিরোধিতা করে? ভারতীয়দের এ চিন্তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ভুল মনে করিনা। কেউ উপকার করলে তার প্রতি সকলেরই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ক’দিন আগে ভারতের ডিফেন্স রিভিউ ওয়েব সাইতে দেখলাম,অরজিত সিং নামে এক ভদ্রলোক বাংলাদেশকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সমর্থন ও সাহায্য না করলে এক লক্ষ বছর যুদ্ধ করেও বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতেনা। এর অবস্থা কাশ্মীরের মতো হতো।
আমার প্রশ্ন হলো, ভারত সরকার ও ভারতবাসী বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণের কাছে কি চায়?ভরত নিশ্চয়ই জানতো পাকিস্তান ভাংলে বা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে দেশটাতো আর সিকিমের মতো হয়ে যাবেনা। ভা এখানকার মানুষ ইসলাম বা মুসলমানিত্ব ছেড়ে দিয়ে ধর্মহীন হয়ে যাবেনা। যে কারণে এদেশের অতি সাধারন নির্যাতিত অপমানিত লাঞ্ছিত মানুষ বর্ণবাদী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেছিল সে কারণ গুলোতে এখনও বিরাজমান। ভারতে এখনও ৩০ কোটি অচ্যুত বা হরিজন রয়েছে যাদের সেদেশের ধর্ম ও সংবিধান মানুষ মনে করেনা। এর সাথে রয়েছে আরও ৩০ কোটি মুসলমান যারা অধিকার বঞ্চিত দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক। ৪২ বছর ধরেইতো ভারত বাংলাদেশকে তার অনুগত বন্ধু দেশ হিসাবে দেখতে চাইছে। একবার ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশে সব সময় একটি বন্ধু সরকার দেখতে চান। মানে শুধু বন্ধু রাস্ট্র হলে চলবেনা। পাকিস্তান রাস্ট্রের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, কিন্তু বন্ধুত্ব নাই। বাংলাদেশকেও ভারত খুবই ঘনিষ্ট বন্ধুদেশ হিসাবে দেখতে চায়। থা্লে এর মানে কি দাঁড়ালো?
মানে হচ্ছে ভারত চায় যেভাবেই হোক বাংলাদেশে ভারতপন্থীরা ক্ষমতায় থাকবে। দেশের মানুষ ষোলয়ানা বাংগালী হবে। ইতিহাস ,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাষা সবকিছুই বদলে নিতে হবে। বাংলাদেশের ভারতপন্থী একটি কাগজের শ্লোগান হলো বদলে দিতে হবে ,বদলে যেতে হবে। এ কাগজের সম্পাদক নবীজীকে(সা) ব্যাংগ করে কার্টুন ছাপে। কাগজের যুগ্ম সম্পাদক কোরআনের আয়াতকে ব্যাংগ বই প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান। তাহলেই ভারতের মিশন বাস্তবায়িত হবে। শুধু একবার ইসলামকে গৃহধর্ম বা ব্যক্তিগত ধর্মে পরিণত করতে পারলেই হলো। ভারতের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, আওয়ামী পুঁজিপতি, আওয়ামী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই তাঁরা মরণ কামড় দিয়েছে বাংলাদেশের উপর। দেশের মানুষকে দমনের জন্যে শত শত লোককে হত্যা করছে। মাত্র দুয়েকটি মিডিয়া ছাড়া বাকি সব মিডিয়া ভারতের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। শাহবাগের গণজাগরণের জন্ম হয়েছে ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক চিন্তা ভাবনা , কৌশল ও পরিকল্পনা থেকে। শাহবাগের তরুণরা হয়ত বিষয়টা একেবারেই জানেনা। তারা ভাবছে তাদের চিন্তা চেতনা সঠিক। তাই তারা মাঠে নেমেছে। তারা মনে করছে তারা স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে কাজ করছে। এমনটি ১৭৫৭ সালে হয়েছিল। তার খেসারত এদেশের হিন্দু মুসলমান সবাই দিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার মুসলমান।
বাংলাদেশের মানুষের জাতিসত্তার পরিচয় যদি সুস্পষ্ট না হয় তাহলে আপনদের মুসলমান পরিচয় অবিলম্বেই মুছে যাবে। তাই বাংলাদেশের মানুষের , বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজকে গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠতে হবে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক।
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


সরকার পাগল হয়ে গেছে,একটা রায় চাই / এরশাদ মজুমদার

শিরোনামের বাক্যটি আমার রচিত নয়। এটি বলেছেন,যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্যে গঠিত সরকারী ট্রাইবুনালের বিচারপতি নিজামুল হক সাহেব। সম্প্রতি দেশী বিদেশী মিডিয়ায় একটি খুবই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশে ইউটিউবে নাকি নিজাম সাহেবের সাথে জনৈক জিয়া উদ্দিন সাহেবের ট্রাইবুনালের বিচার নিয়ে যেসব আলোচনা বা কথাবার্তা স্কাইপের মাধ্যমে হয়েছে তা প্রচার করা হচ্ছে। ওই স্কাইপ আলোচনাতেই নিজাম বলেছেন, ‘সরকার পাগল হয়ে গেছে’। সরকার নাকি খুব দ্রুত গতিতে একটা রায় চায়। সেজন্যে দেন দরবার শুরু করেছে। সম্মানিত বিচারক নিজাম সাহেব ইতোমধ্যেই বিলেতের ম্যাগাজিন ইকনমিস্টকে নোটিশ জারী করেছেন স্কাইপের ব্যক্তিগত আলাপচারিতা প্রকাশ না করার জন্যে। তিনি অস্বীকার করেছেন বিচার নিয়ে কোথাও কোন কথা বলেননি। অথচ দেশবাসী কি আলোচনা হয়েছে সব জেনে গেছে। এখন নিজাম সাহেব কি বলবেন জানিনা। দেশের কয়েকজন নামজাদা আিনজীবী বলেছেন,নিজাম সাহেব বিচারক হিসাবে তাঁর অধিকার হারিয়েছেন। স্বেচ্ছায় তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। জানিনা নিজাম সাহেব পদত্যাগ করবেন কিনা। এর বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী সা্েবকে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। তারও প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাহেবকে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। তিনিও পদত্যাগ করেননি। এসব একেবারেই নৈতিকতার ব্যাপার। যাঁরা যে কোন পদ লাভের জন্যে তদবির করেন তাঁরা কখনও পদত্যাগ করেন না।
যেমন ধরুন,চোর ডাকাত, ঘুষখোর বেআইনী ও মন্দ কাজ করে বাড়তি আয় বা জীবীকার জন্যে। ধনী হয়ে গেলেও তরা এ কাজ ত্যাগ করেন না। তখন বেআইনী ভাবে অর্জিত টাকা বা সম্পদ তাদের মর্জাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থায় ঘুষ প্রকাশ্যে লেনদেনের বিষয়। ঘুষখোরের ছেলে মেয়েরা বিচারপতি সচিব সেনাপ্রধান হতে পারে। নামী দামী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিও হতে পারে। এখন ঘুষ কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়। বরং বেশী টকা হয়ে গেলে তিনি সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। বিচারপতিরাও খান। কারণ আমাদের সমাজে এখন বিত্তের হিসাবে মর্যাদা নির্ধারিত হয়। এখন একজন ধনী লোক বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে তার চেয়ারম্যান বা চ্যান্সেলরও হতে পারেন। যেমন ধরুন, ১/১১র কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান দুই ব্যক্তি এখন বিদেশে নির্বাসিত নিন্দনীয় জীবন যাপন করছেন। কিন্তু তাঁদের সাথী সহযোগী উপদেস্টারা বহাল তবিয়তে আছে সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে। নামের পাশে সাবেক উপদেস্টা লিখেন। ভিজিটিং কার্ডেও লেখা থাকে। টকশোতে যেয়ে জাতিকে উপদেশ দেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হন। যে বৃটিশ সরকার এ দেশকে ১৯০ বছর শোষন করেছে সেই বৃটিশের কাছ থেকে এখনো অনেকে টাইটেল গ্রহণ করে সম্মানিত বোধ করেন। বিয়েশাদীতে বৃটিশের দেয়া টাইটেল খুবই কদর পেয়ে থাকে। আমাদের মানসিকতা এখনও দাসের মানসিকতা। অমুক জমিদারের দাস ছিলাম বলতে আনন্দ বোধ করি। বাড়ির নাম দারোগা বাড়ি, চৌকিদার বাড়ি ইত্যাদি। প্রসংগক্রমেই এসব কথা বলছি।
আগের জামানায় শুনেছি, রাস্ট্র বনাম ব্যক্তির মামলার কথা শুনেছি। রাস্ট্র নাকি সব মামলায় হেরে যায়। ব্যক্তিরা টাকা পয়সা খরচ করে মামলা জিতে যায়। আবার সরকার যখন রাজনৈতিক কারণে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করে তখন নাগরিকের জিতার কোন সম্ভাবনা থাকেনা। সরকারকে জিততেই হবে। কারণ বিচারকগণ সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সরকার যেভাবে বলবেন সেভাবেই রায় হবে। স্কাইপে নিজামুল হক সাহেবের আলাপচারিতায় বুঝা গেল তিনি খুব চাপের মুখে আছেন। আিন প্রতিমন্ত্রী গোপনে তাঁর সাথে দেখা করেছেন। সরকার ডিসেম্বর মাসেই একটা রায় চান। বিচারপতি নিজামুল হক সাহেবের আলাপচারিতায় প্রমান হয়ে গেছে ট্রাইবুনালের কার্যক্রম বিদেশে অবস্থানরত কিছু লোকের নির্দেশনায় চলছে। এসব মানুষ বিদেশে থাকেন এবং দেশের ব্যাপারে তাঁদের কোন দায় দায়িত্ব নেই। প্রসংগক্রমে ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার(রা)কথা মনে পড়েছে। খলিফা মনসুর বিল্লাহ হানাফী মাজহাবের ইমাম আবু হানিফাকে (রা)প্রধান বিচারপতি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইমাম সাহেব রাজী হননি। ফলে ইমাম সাহেবকে জেলে পাঠানো হয়। তিনি আট বছর জেলে থাকেন এবং জেলেই মারা যান। এই ছিল একজন ইমামের চরিত্র। আর এখন বাংলাদেশ বিচারপতি হওয়ার জন্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করেন। সোজা কথায় বলতে হবে দলীয় আনুগত্য ছাড়া বিচারপতি হওয়ার জন্যে আর কোন গুণের প্রয়োজন নেই।
ক’দিন আগে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বিচারপতি মারক্যান্ডি কাটজু বলেছে,৯০ শতাংশ ভারতীয়ই নির্বোধ। ধর্মের নামে খুব সহজেই তাদের বিপথগামী করা যায়। তিনি বলেন,ভারতীয়দের মাথায় কোন মগজ নেই। খুব সহজেই তাদের বল্গাহীন ভাবে চালানো যায়। বিচারপতি কাটজু বলেন, ১৮৫৭ সালের আগে ভারতে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা। এখন দেশের ৮০ ভাগ মানুষই সাম্প্রদায়িক। ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,আপনারা ১৫০ বছর পেছনে পড়ে আছে। ইংরেজরা আপনাদের মাথায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশের কোন বিচারপতি বা বুদ্ধিজীবী এ রকম একট সত্যকথা কি বলতে পারবেন। যদি বলতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা আজ এ রকম হতোনা। ইদানিং সাংবাদিকদের মুরুব্বী ও আমার শিক্ষক মুসা সাহেব কিছু সত্য বাস্তব কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে কিছু আশার সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহপাক তাঁকে হায়াত দারাজ করুন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিচার আর মামলা নিয়ে আছে। দেশের মানুষ নাকি এখন শুধু মামলা আর হামলা চায়। দেশবাসীকে নাকি গ্লাণি থেকে মুক্তি দিতেই সরকার নানা ধরণের মামলা নিয়ে ব্যস্ত আছে। দেশের প্রবৃদ্ধি এখন নিম্নমুখি। কৃষক সমাজ তাঁদের উত্‍পাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেনা। লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানী কমে গেছে। অনেকেই বলছেন মুসলীম দেশ গুলো বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান নীতিকে সমর্থন করছেনা। সংসদে দাঁড়িয়ে সরকার দামীনামী মন্ত্রীরা আমেরিকাকে গালাগাল করছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিশ্বব্যান্কের দূর্ণীতির বিচার করবেন। অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যান্কের ঢাকা অফিসের বিবৃতিকে রাবিশ বলে প্রত্যাখ্যান করছেন। দূর্ণীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যান্কের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যান্ক দূর্ণীতির প্রমানাদি জমা দেয়ার পরেও সরকারের অনুগত দূর্ণীতি দমন কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী হয়নি। সরকারের নির্দেশেই শুধুমাত্র সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনকে বাঁচাবার জন্যেই নাকি দুদক নানা ধরণের বাহানা করছে। ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) দূর্ণীতির যে সূচক প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে দূর্ণীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বেশী অবনতি হয়েছে। এর আগে টিআইবি সংসদ সদস্যদের দূর্ণীতির উপরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল।
ভারতের সাথে বর্তমান সরকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার ত্যাগ করে, দেশের স্বার্থকে নস্যাত্‍ করে অন্তরংগ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেস্ট করেছিল। কিন্তু তেমন কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি দেশের মানুষ ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সজাগ থাকার নীতি অবলম্বনের পক্ষপাতি। কিন্তু সরকার তা করেনি। বরং সরকারের নেতারা বলেছেন ভারত আমাদের পরম বন্ধু , তার কাছে ইচ্ছা করলেই সবকিছু চাওয়া যায়না। ওটা নাকি ভদ্রতার বাইরে। ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মগত মানসিকতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এর আগে আমি বেশ কয়েকবার লিখেছি। ধর্মীয়ভাবেই ভারত একটি সাম্প্রদায়িক রাস্ট্র। তবে এর নেতাদের সাফল্য হলো তাঁরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নামাবলী গায়ে দিয়ে ভাল অভিনয় করতে পারছে এবং বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করতে পেরেছে। বাংলাদেশেও বহু বুদ্ধিজীবী মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ভারত একটি স্যেকুলার বা ধর্মহীন রাস্ট্র। সারা ভারতে ব্রাহ্মণের সংখ্যা হয়ত এক কোটি। আর ব্রাহ্মণদের সমর্থনে রয়েছে আরও কয়েক কোটি ক্ষত্রিয়। সব মিলিয়ে হয়ত দশ কোটি হবে । এরাই ভারত শাসন করেন। এ পর্যন্ত দিল্লী শাসন করে আসছেন ব্রাহ্মণরা। ভারতে ৩০ কোটি শুদ্র আর ৩০ কোটি মুসলমান অবহেলিত ও দলিত। ভারত ১৯৪৮ সালেই ইহুদী রাস্ট্র ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে ধর্মীয় কারণে। সেই ভারতের নেতাদের সাথে শেখ হাসিনার কোলাকুলি ও মাখামাখি। এর একটা গভীর রহস্য রয়েছে। বংগবন্ধু থাকলে এ অবস্থা হতোনা।
আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ তথাকথিত আল্লার আইন চালু হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবেনা , উন্নতিও হবেনা। আমি তথাকথিত সৈয়দ সাহেবের কথায় আমি অবাক হইনি। তিনি এর আগে তিনি বলেছিলেন,‘আমি হিন্দুও নই,মুসলমানও নই’। সোজা সাফটা সরল কথা। কোন রাখঢাক নেই। সেই সৈয়দই এখন বললেন তিনি আল্লাহর আইনও মানেন না। তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব খুবই বিনীত মানুষ ছিলেন। শুনেছি বংগবন্ধুও তাঁকে সম্মান করতেন। সেই সৈয়দ নজরুল সাহেবের ছেলে বলছেন,তিনি ধর্মে বিশ্বাস করেন না। লোকে বলে তিনি নাকি সারাদিন চুর হয়ে পড়ে থাকেন। সহজে অফিসে যান না। তাঁর স্ত্রীও নাকি একজন বিদেশিনী। আওয়ামী লীগের জন্যে এমন একজন সাধারন সম্পাদকই অপরিহার্য ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা নাকি নিয়মিত নামাজ রোজা করেন। পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। মাঝে মাঝে হিজাবও পরেন। কিসাসের কথা বলেন। তিনি জানেন তাঁকে এসব করতে হবে,কারণ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। রাজনৈতিক কারণেই দেশের মানুষকে খুশী রাখতে হবে,তাঁদের ভোট পেতে হবে।
বংগবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ। তিনি পাকিস্তানকে একটি কনফেডারেশন হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে তেমন সাথী সহযোগী পাননি। তিনি পেয়েছিলেন চাটার দল, কম্বলচোর, চোরের খনি। ফলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা তিনি গঠণ করতে পারেননি। তাঁর আত্ম জীবনী পড়লেই বুঝা যাবে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে কি অপরিসীম ত্যাগই না করেছেন। এই ত্যাগ ছিল সাধারন মানুষের ভালবাসার কারণে। সেই স্বপ্নের পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। পরোক্ষ ভাবে ভারত সমর্থন দিয়েছে। এসব কথা আমি আরও অনেকবার বলেছি। ভারত বাংলাদেশকে তার প্রভাব প্রতিপত্তিতে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই ৭১ সাল থেকে। বংগবন্ধু ভারতের দাদাগিরি কখনই মেনে নেননি। তিনি ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ভারত তখন থেকেই বংগবন্ধুর উপর নাখোশ ছিলো। অনেকেই মনে করেন, ফলে বংগবন্ধুর পতন হয়েছে। তখন শেখ হাসিনা বিদেশেই ছিলেন এবং এক সময়ে ভারতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বেশ দীর্ঘ কয়েক বছর ভারতের দিল্লীতে তিনি ভারত সরকারের প্রিয় মেহমান হিসাবে দিল্লীতে অবস্থান করেছেন। জিয়া সাহেবই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন ১৯৮০ সালের মে মাসে। ওই মাসের ৩০ তারিখে জিয়া সাহেব শহীদ হন। লোকে মনে করে জিয়া সাহেবের হত্যার সাথে ভারত ও তত্‍কালীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেই এসব হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়না। এইতো দেখুন না শেখ হাসিনা বংগবন্ধুকে যারা হত্যা করেছেন তাদের বিচার করেছেন। কিন্তু হত্যার কারণ ও রহস্য উদঘাটনের জন্যে কোন কমিশন গঠন করেননি। কারণ এর সাথে শক্তিশালী দেশগুলো জড়িত। সেই দেশ গুলোর সাথেই এখন শেখ হাসিনার খাতির ও গলাগলি চলছে। আসলে বিচার আচার গুলো হচ্ছে রাজনীতি এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে প্রভাবে রাখার একটি কৌশল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তেমনি একটি রাজনৈতিক কৌশল। লক্ষ্য মুসলমান ও ইসলামকে ধ্বংশ করা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পৃথিবীর কোথাও নিষিদ্ধ নয়। এমন কি ভারত পাকিস্তানেও নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। আসলে এটাও এক ধরণের রাজনীতি। জামাতের কয়েকজন নেতাকে ফাঁসী বা শাস্তি দিলে কি ইসলামী রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। জামাতের ৮০ ভাগ নেতার বয়স এখন ৫০ এর নীচে। ৭১ সালে তাঁরা কোন মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলনা। জামাতে ইসলামী নামটি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ কথা আওয়ামী লীগ ভাল করেই জানে। তবুও কেন তারা এ বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করছেন? কারণ একটি আর তা হলো ভারতের ইচ্ছা পূরণ করা। ভারত বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির বিকাশ চায়না। কিন্তু নিজদেশে বিজেপি, শিবসেনা, আরএসএস এর বিকাশ চায়। এতা হচ্ছে ভারতের চাণক্যনীতি। ভারতের রাস্ট্রীয় রাজনীতির মূলনীতি হলো হিন্দুত্ব বা হিন্দুদভা। ভারতবাসী সকলেই হিন্দূ। হিন্দু ছাড়া বাকিরা বিদেশী। বাল থেকারে সাহেব এই নীতিই প্রচার করতেন। ভারতের সকল রাজনীতিকই এই আদর্শের অনুসারী। তাই ভারত চায় বাংলাদেশের জনগণের মনে ধর্মীয় চেতনা দুর্বল হয়ে যাক। রাস্ট্র ধর্ম থেকে দূরে থাকবে। ধর্ম কালক্রমে ব্যক্তিগত ও গৃহের বিষয়ে পরিণত হবে। ভারতে বহু মসজিদ আছে যেগুলো এখন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। কারণ ওসব এলাকায় এখন কোন মুসলমান নেই। রাশিয়া চীনেও এক সময় মসজিদ গুলোতে তালা ঝুলতো । এখন তালা খুলে দেয়া হয়েছে। মুসলমানেরা আবার ধর্ম চর্চা শুরু করেছে।
অখন্ড বংগদেশ বা বাংলাদেশ একটি মুসলীম মেজরিটি দেশ। রাজনৈতিক কারণে সেই দেশ এখন খন্ডিত। হিন্দু প্রধান বলে পশ্চিম বাংলা ভারতের অধীনে। মুসলীম মেজরিটি বলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশে পরিণত হয়। পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা জান দিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই পূর্ব পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশ। কারণ এ অঞ্চল একটি মুসলীম মেজরিটি এলাকা। যদি এই এলাকা হিন্দু মেজরিটি হতো তাহলে ভারতেই থাকতো। এখনকার বহু নামী দামী তথাকথিত স্যেকুলার মুসলমান নামধারী বুদ্ধিজীবী ৪৭ এ ভারত ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছেন। কারণ তাঁদের মুরুব্বীরা বা পিতা বা দাদা মুসলমান ছিলেন। এখন তাঁরা ভারতের দালালী করেন হিনমন্যতার কারণে। মাওলানা ভাসানী বংগবন্ধু প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ এখন মুসলমান বিরোধী ভারতীয় দালালে পরিণত হয়েছে জেনে বা না জেনে। আমি মনে করি শেখ হাসিনা না জেনেই এ কাজটি করছেন।
বিচারপতি নিজামুল হক নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। আবার সেই প্রসংগে ফিরে আসি। কি রায় হবে, রায় কিভাবে ড্রাফট হবে তা নিয়ে নিজাম সাহেব জিয়া উদ্দিন সাহেবের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। মনে হচ্ছে জিয়াউদ্দিন সাহেব রায়টা ড্রাফট করে কয়েকদিনের মধ্যেই নপাঠাবেন। সমস্যা হলো কোন রায়টা আগে লিখবেন। সাঈদী সাহেবেরটা না গোলাম আজম সাহেবেরটা। কোনটা সহজ হবে সেটা নিয়েও তাঁরা আলাপ করেছেন। আলাপে বুঝা গেল সাঈদী সাহেবের রায়টা লিখতে সহজ হবে। সেখানে আইনের তেমন বালাই নেই। খুব তাড়াতাড়ি রায় লিখতে হবে। সরকারের চাপ আছে। একটা রায় অবশ্যই দিতে হবে। আমিতো মনে করি রায় দিয়ে আওয়ামী লীগের কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক লাভ হবেনা। কারো মনে যদি কোন প্রতিহিংসা থাকে তবে তা বাস্তবায়িত হতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি কোনদিনও বিলুপ্ত হবেনা। কারণ তা স্বাভাবিক অবস্থান নয়। কমিউনিষ্টরা রাজনীতি নকরতে পারলে ধর্মীয় দলগুলো রাজনীতি করতে পারবেনা কেন? বামপন্থী মোর্চা জামাতের রাজনীতি বন্ধ করার দাবীতে হরতাল ডেকেছে। অথচ তাদের কোন জন সমর্থন নেই। জাতীয় সংসদে একটি সীটও নেই। সারা দেশে তাদের এক লাখ ভোটও নেই। ।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে আগমন হয়েছে ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। এর আগে ১৯৭১ এর ২৬/২৭শে মার্চ আমরা প্রথম জিয়া সাহেবের নাম শুনি। তখন তিনি ছিলেন মেজর জিয়া। কালুরঘাট রেডিও থেকে দেশ ও বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন,‘আমি মেজর জিয়া বলছি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন দানের জন্যে আমি বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ঘোষণাটি হু বহু এ রকম ছিলনা, তবে মর্মার্থ এ রকমই ছিল। বিশ্ববাসী জিয়া সাহেবের এই ঘোষনা শুনতে পায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভুট্টোর সাথে যড়যন্ত্র করে ২৪শে মার্চের আলোচনা ভেংগে দিয়ে ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশের মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বংগবন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রায় সকলেই পালিয়ে যান। অনেকেই ভিতরের গোপন বিষয় জানতে পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু বংগবন্ধু নিজে ভারত যেতে রাজী হননি। এমন কি স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে রাজী হননি। এ ব্যাপারে পাঠক সমাজ তাজউদ্দিন সাহেবের সাক্ষাত্‍কার পড়তে পারেন। স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করাতে চাইলে বংগবন্ধু রেগে গিয়ে বলেছিলেন,তোরা কি আমাকে রাস্ট্রদ্রোহী বানাতে চাস। বংগবন্ধু জানতেন,পাকিস্তানী সেনা বাহিনী অভিযান চালাবার শুরুতেই তাঁকে গ্রেফতার করতে আসবে। তাই তিনি ৩২ নাম্বার রোডের নিজ বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ওই মূহুর্তের ঘটনা গুলো ডক্টর ওয়াজেদের বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের মানুষ এখনও জানেনা জেনারেল ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সাথে বংগবন্ধু ২৪শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত কি ডায়ালগ করেছেন এবং তার ফলাফল কি ছিল। আমরাতো শুনেছি,২৫শে মার্চ সারাদিন তিনি অপেক্ষা করেছেন সমঝোতাপত্র বা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে। তাহলে একটা সমঝোতা নিশ্চয়ই হয়েছিল। ভুট্টোই নাকি সেই সমঝোতা ভন্ডুল করে দিয়েছিল। সেই সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া ছিল ভুট্টো ও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতের পুতুল।
ভারত একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেটা হলো পাকিস্তানকে আক্রমনকারী বা এগ্রেসর হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। ভারতকে সে সুযোগ করে দিয়েছে পাকিস্তানের তত্‍কালীন বিমান বাহিনী প্রধান। এই ভদ্রলোক আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই ভারতের বিভিন্ন শহরে বোমা বর্ষন করেন। ঠিক ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন কোলকাতায়। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত দিল্লী ফিরে যান এবং ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান আক্রমণ করার আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান পরবর্তীতে তার বেঈমানীর জন্যে এক মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন। তিনি দেশ ত্যাগ করে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ৪ঠা ডিসেম্বর। ৭১ সালটি ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম ষড়যন্ত্রের বছর। আর এই ষড়যন্ত্রের প্রধান নায়ক ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ও ভুট্টো। বংবন্ধু সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলেন। তাই তিনি শেষ মূ্হুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর বেলা বংগবন্ধু নির্মম ভাবে নিহত হন তাঁর ৩২ নাম্বারের বাড়িতে। ফলে তাঁর সরকারের পতন হয় এবং এক দলীয় শাসন ব্যবস্থারও অবসান হয়। এরপর ক্ষমতা দখল করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ। তিনি রাস্ট্রপতি হয়ে সামরিক আইন জারী করে নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। তিনিই জেনারেল রাস্ট্রদূত নিয়োগ দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন এবং জেনারেল জিয়াকে সেনা বাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩রা নভেম্বর আরেকটি অভ্যুত্থান জেনারেল জিয়াকে তাঁর নিজ ভবনেই বন্দী করে রাখা হয়। জেনারেল খালেদ নিজেকে সেনা বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেন। ৪ঠা নভেম্বর জেনারেল খালেদের সমর্থনে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ একটি মিছিল বের করে। ফলে সাধারন সৈনিকদের ভিতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট হয়। তারই ফলে ৭ই নভেম্বর জেনারেল জিয়ার সমর্থনে সৈনিক জনতার বিপ্লব সাধিত হয়। খোন্দকার মোশতাক প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেবের কাছে রাস্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেন। বিচারপতি সায়েম জেনারেল জিয়াকে আবার সেনাবাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন।
জিয়া সাহেবের রাজনীতি শুরু করার প্রথম লগ্নে আমরা জড়িত ছিলাম জিয়া সাহেবের সমর্থনে আমরাই গঠন করেছিলাম ‘সিটিজেনস রে্লী কমিটি’ বা নাগরিক কমিটি। আমার বন্ধু সাংবাদিক আহমদ নজিরকে অনুরোধ করেছিলাম সে সময়ের কথা গুলো লিখার জন্যে। ওই সময়ের কথাগুলো বলার জন্যে পরে আর লোক পাওয়া যাবেনা। অনেক বার মনে করিয়ে দেয়ার পর তিনি একটি লেখা তৈরি করেছেন যার শুরুতে তিনি আমার প্রশংসা করে অনেক কথা বলেছেন, যা আমার মনে হয়েছে বেশী বলা হয়ে গেছে। আহমদ নাজিরের সে লেখাকে ভিত্তি করেই আমি এ লেখাটি তৈরি করার উত্‍সাহ পেয়েছি। এক বছর পাঁচ মাস ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৭৭ সালের ২২শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম অবসরে গেলে জিয়া সাহেব রাস্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশ পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের তাঁর উপর আস্থা আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে একই বছর ৩০শে এপ্রিল দেশব্যাপী আস্থা ভোটের আয়োজন করেন তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে। ১৯ দফা ছিল জিয়া সাহেবের রাজনৈতিক দর্শন। একই বছরের ১৫ই ডিসেম্বর তিনি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠণের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ‘জনগণই ক্ষমতার উত্‍স’।দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক শূণ্যতা বিরাজ করছে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যমেই এই রাজনৈতিক শূণ্যতার অবসান সম্ভব।ধর্ম বর্ণ গোত্র,নির্বিশেষে সব বাংলাদেশী এই ফ্রন্টে যোগ দিতে পারবেন। তবে তাঁদের সকলকেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হতে হবে।
পরে অবশ্য জিয়া সাহেব তাঁর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। আমরা যারা কোন রাজনৈতিক দলে ছিলামনা তারা নাগরিক কমিটি গঠণ করেছিলাম চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক এহতেশামের নেতৃত্বে। তাঁর বাসায় বেশ কয়েকটি সভা হয়। আমি আহমদ নজির ও মানু মুন্সী ছিলাম নিয়মিত কর্মী। পরে হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান ,শামসুল হুদা চৌধুরী আমাদের সাথে এসেছিলেন। আরও অনেকেই ছিলেন, তাঁদের সকলের নাম এখন মনে নেই। বংগবন্ধুর সমর্থক ও ভক্ত ঢাকার মাজেদ সর্দার সাহেবের সাথে এহতেশাম সাহেবের খাতির ছিল। তাঁরই অনুরোধে সর্দার সাহেব প্রথম ঘরোয়া সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেই সভাতেই সর্দার সাহেবকে সভাপতি ও এহতেশাম সাহেবকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠণ করা হয় জিয়া সাহেবের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার জন্যে। আহমদ নজির কমিটির প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ওই কমিটি জিয়া সাহেবের সমর্থনে খবরের কাগজে একটি বিবৃতিও দিয়েছিল।
প্রচারপত্র ও পোস্টার তৈরির দায়িত্ব পড়লো নজির আমি ও মানু মুন্সীর উপর। নজির খুব দ্রুত গতিতে একটি লিফলেটের খসড়া তৈরি করলেন। লীফলেট ছাপার জন্যে টাকা দিয়েছিলেন মাজেদ সর্দার সাহেব। ছাপার আগে সর্দার সাহেবকে লীফলেট দেখাতে হবে এটা আমরা ভাবিনি। ছাপানো লীফলেট তিনি যখন পড়লেন তখন একেবারেই ক্ষাপে গেলেন। সোজা বলে দিলেন ওই লীফলেট বিলি করা যাবেনা। আগেই বলেছি, সর্দার সাহেব ছিলেন শেখ সাহেবের একজন ভক্ত। তিনি জিয়া সাহেবকে সমর্থন করলেও বংগবন্ধুর কোন সমালোচনা করতে চাননা। ফলে নতুন লীফলেট ছাপতে হলো। আমি নিজেও সর্দার সাহেবের সাথে একমত ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য হলো জিয়া সাহেবের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করা। নাগরিক কমিটির পক্ষে আমরা স্টেডিয়ামের সামনে যে সভা আহবান করেছিলাম তাতে মাজেদ সর্দার সাহেব সভাপতিত্ব করেছিলেন। সর্দার সাহেবের সমর্থন ছিল বলেই আমরা রাজধানীতে পোস্টার লাগাতে ও লীফলেট বিলি করতে পেরেছি। মাজেদ সর্দার সাহেবের সমর্থন জিয়া সাহেবের জন্যে বিরাট অর্জন ছিল।
আমরা পুরাণো শহরে অনেকগুলো সভা করেছি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লালকুঠির সভা। এ সভার আয়োজন করেছিলেন মানু মুন্সী। মুন্সীর মতো এমন সত্‍ ও ত্যাগী মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। এক পর্যায়ে আমরা ঢাকা যুব সমাজ নামে একটি যুব সংগঠন করি। আমি ছিলাম এর সভাপতি ও মানু ছিলেন সম্পাদক। এই যুব সমাজের পক্ষ থেকে জিয়া সাহেবের ক্যাবিনেটের মন্ত্রীদের পুরাণো ঢাকায় সম্বর্ধনা দিয়েছিলাম। সে সময়ে চক বাজার ও লক্ষ্মী বাজারের অনেক যুবকের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সবাই ছিল খুবই ত্যাগী মানুষ। ওরাই লালকুঠির সভা আয়োজনে আমাদের সাহায্য করেছিল। ছাত্র যুবকের উপস্থিতিতে লালকুঠির হল ভরে গিয়েছিল। পুরাণো ঢাকার ওই যুবকরা ছিলো ঢাকা যুব সমাজের সদস্য। লালকুঠির সভায় আমি আহমদ নজির ছিলাম অতিথি বক্তা। রাজধানীতে যুব সমাজের কর্মীরাই জিয়া সাহেবের নির্বাচনের কর্মী ছিল। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাস্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জিয়া সাহেব মোট এক কোটি চুয়ান্ন লাখ ১৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেনারেল ওসমানী পেয়েছিলেন ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ভোট। জিয়া সাহেব ছিলেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও জেনারেল ওসমানী ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিচালিত গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে জেনারেল ওসমানী বলেছিলেন,দেশে রাজনৈতিক শূণ্যতা বিরাজ করছে। নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কর্মীরা গণতান্ত্রিক জোট প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্যে কাজ করেনি। অতীতের ব্যর্থতার কারণে কর্মীরা সাধারন মানুষের কাছে যেতে সাহস করেনি। যদিও নৌকাই ছিল জোটের প্রতীক। ১৯৫৪ বসালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীকও ছিল নৌকা। সে সময়ে মানুষের শ্লোগান ছিল ‘মুসলীম লীগের ভাংগা লণ্ঠন দে নিবাইয়া দে’। এবারের নির্বাচনে শ্লোগান ছিল, ‘কম্বল কেটে মুজিব কোট,আর দেবোনা নীকায় ভোট’। নির্বাচন সম্পর্কে গণতান্ত্রিক জোটের শরীক মোন্যাপের সভাপতি প্রফেসর মোজাফফর বলেছিলেন,সেশের গরীব মানুষ কেউ নৌকায় ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে জিয়াউর রহমানকে। জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচীতে গরীবের ভাত কাপড়ের কথা আছে। গরীবের উন্নয়নের কথা আছে। জিয়া যদি এই কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে আমি জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁকে সহযোগিতা করবো।
আগেই বলেছি আমরা জিয়া সাহেবের নাম প্রথম শুনেছি ৭১ সালের ২৬/২৭শে মার্চ। এই নাম নাজানা মানুষটাই কালুঘাট রেডিও থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যে সারা বাংলাদেশের মানুষ শুনেছে। শুধু হীনমন্যতার কারণে আওয়ামী লীগ এই মহাসত্যটি মানতে রাজী নয়। যদিও জিয়া সাহেবের ঘোষণার দ্বারা বংগবন্ধুর অবস্থান ও মর্যাদার কোন কমতি হয়নি। জিয়া সাহেব জীবীত থাকতেও বংগবন্ধুকে কখনও অমর্যাদা করেননি। আল্লাহপাকের কুদরত হলো এই মানুষটার নাম আমরা আবার শুনলাম ৭ই নভেম্বর। তিনি সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্যে রেডিও মাধ্যমে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। সৈনিকরা তাঁর নির্দেশ মেনে আবার ফিরে গেছে। সে সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে অনেক বই প্রবন্ধ/নিবন্ধ আছে। এর মধ্যে শাফাত জামিল লিখেছেন, কর্ণেল তাহের তাঁর গণবাহিনী নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। তাহের জিয়ার ইমেজ ব্যবহারের চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু জিয়া সাহেব তাতে রাজী হননি। তাহের সাহেব একজন ভাল মানুষ এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি হয়ত ভাবতেন বাংদেশ সেনা বাহিনীকে সমাজতান্ত্রিক সেনা বাহিনীতে পরিণত করবেন। তিনি সাধারন সৈনিক ভুল বুঝিয়ে অনেক অফিসারকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু সৈনিকরা যখন বুঝতে পেরেছিল এই বিপ্লবের সাথে জিয়া সাহেব নেই তখনি তাঁরা জাসদ এবং তথাকথিত গণবাহিনীর বিরুদ্ধে চলে গেল এবং জিয়া আহবানেই তারা ব্যারাকে ফিরে গেছেন।
গবেষকরা একদিন নিশ্চয়ই বের করতে পারবেন, সে সময়ে কর্ণেল তাহের সত্যিই কি করতে চেয়েছিলেন। অনেকেই বলেন, তাহের ভারতের ষড়যন্ত্রের খপ্পরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে দূর্বল করতে চেয়েছিলেন। বংগবন্ধুর আমলেও তাঁরা এই প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁরা ভারতীয় দূতাবাসে আক্রমণ করে দূতকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। আজ অনেকেই কর্ণেল তাহেরকে জাতীয় বীর বানাবার চেষ্টা করছেন। সে সময়ের একজন নায়ক ইনু সাহেব এখন নৌকার যাত্রী এবং শেখ হাসিনার সেবা করছেন। কৌশলগত কারণে বা ভারতের পরামর্শে শেখ হাসিনাও বংগবন্ধুর শত্রুদের নিয়ে রাজনীতি করছেন।
জিয়া সাহেব বাংলাদেশে যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি চালু করে গেছেন তা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অপরিসীম অবদান রাখছে। যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধারার সূচনা না হতো তাহলে বাংলাদেশ নেপাল সিকিমের ভাগ্য বরণ করতো। ১/১১র সরকার ভারতেরই নির্দেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে ভারতের সকল চাহিদা পূরণ করার জন্যে। শুধু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতি। এই ধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতি যর বেশী শক্তিশালী হবে ততই ভারতপন্থী ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী রাজনীতি দূর্বল হবে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ইসলামী রাজনীতিতেও নানা ধরনের দূর্বলতা ঢুকে পড়েছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী রাজনীতির এমন বিকাশ কখনই বিশ্বাস করা যায়না। কোথায় গলদ তা খুঁজে বের করার সময় এসে গেছে।

Read Full Post »


কবিতাপত্রের দশম বর্ষ পুর্তি

জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য কবিদের মাসিক প্রকাশনা কবিতাপত্রের দশ বছর পুর্তি হয়ে এগার বছরে পড়েছে। ২০০২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কবিতাপত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। যতদূর মনে পড়ে প্রথম সংখ্যার নাম ছিল আড্ডা। প্রকাশিত হয়েছিল ফসল অফিস থেকে। সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন কেজি ভাই,মানে প্রখ্যাত গীতিকার ও কবি কেজি মোস্তফা। কেজি ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে। এক সাথে কাজ করেছি দৈনিক জনপদে ১৯৭৩ সালে। ওই সময় থেকে প্রায় এক সাথেই আছি। কেজি ভাই সম্পর্কে বেশী বলতে গেলেও কম বলা হয়ে যাবে। সময় সুযোগ মতো অন্য সময় অন্য কোন জায়গায় বলবো।
২০০২ সালে আমি আমি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব পয়েটস কর্তৃক সম্মানিত হই ডিভাইন পয়েট হিসাবে আমার কবিতা প্রিডিলেকশান এর জন্যে। কবিতাটি ছাপা হয়েছে আমেরিকার একটি পয়েট্রি সংকলনে। ২০০২ সালর আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন ডিসির হিলটন হোটেলে কবিতা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে জাতীয় প্রেসক্লাব ভিত্তিক একটি কবিতা সংগঠনের চিন্তা ভাবনা শুরু করে বন্ধুদের সাথে আলাপ করি। এ ধরনের আলাপ আলোচনায় সবাই উত্‍সাহ দেয়। বলতে পারেন একশ’তে একশ’। সবাই রাজী যখন কাজটা শুরু করা যাক। কাজ মানে সময়,কাজ মানে অর্থ। এ ব্যাপারে একশ’তে পাঁচ জন। আসলে পাঁচ জনেই একশ’জনের কাজ করে। বাকিরা উত্‍সাহ দেন। সেটাই বা কম কি। সিদ্ধান্ত হলো আমরা কবিতা আন্দোলন শুরু করবো। ২০০২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর প্রথম কবিতা বৈঠক শুরু হলো। সকলের মত নিয়ে মাসিক প্রকাশনার নাম কবিতাপত্র ঠিক করা হলো। সেই থেকে মাসিক কবিতাপত্রের যাত্রা শুরু হলো। প্রতি মাসেই মাসিক কবিতাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেজি ভাইয়ের অবদান একশ’ ভাগ। নিরলস চেস্টায় প্রতি মাসেই লেখা সংগ্রহ করছেন, দিনের পর দিন লেখার জন্যে সবাইকে তাগিদ দিতে থাকেন। লেখা সংগ্রহ করে প্রেসে পাঠিয়ে, সে লেখার প্রুফ দেখে,সম্পাদনা করে ঠিক সময়ে কবিতাপত্র প্রকাশ করে যাচ্ছেন কেজি ভাই। প্রুপ বা অন্য কোন ভুল হলে সমালোচনার শেষ নেই। সে সব সমালো্চনাকে তিনি হাসি মুখে মোকাবিলা করেন।
অনেকেই বলেছেন, কবিদের সংগঠন হয়না। কবিরা এ কাজটা পারেন না। কবিরা খুবই আবেগ প্রবণ, সংবেদনশীল। অনেকেই বলেন, কবিরা খুবই আত্ম কেন্দ্রিক। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন। কবিরা প্রচন্ড প্রশংসায় ডুবে থাকতে ভালবাসেন। তাঁরা একাই পথ চলেন। তাঁরা সম্মানিত হতে ভালবাসেন। এমনিই হচ্ছে কবিদের জগত। এমনি একটি জগতে একটি কবিতা সংগঠনের দশ বছর টিকে থাকা কম কথা নয়। প্রতি মাসে কবিতা পাঠের আসর, প্রতি মাসেই ম্যাগাজিন প্রকাশ,বছরে দুটো বড় সম্মেলন করা,দ্বিভাষিক কাব্য সংকলন প্রকাশ করা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু কবিতাপত্র তা নিয়মিত করে যাচ্ছে। কবিতাপত্রের আরেকটি বিশেষ দিক হলো এখানে সকল মত ও পথের কবিরা এক সাথে আছেন এবং কবিতা প্রকাশ করে থাকেন। কবিতাপত্রের মাসিক অনুষ্ঠানে অতিথি কবিরাও নিয়মিত অংস গ্রহন করে থাকেন। বার্ষিক সম্মেলন ও বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনেক অতিথি কবিও কবিতা পাঠে অংশ গ্রহন করেন। ২০১২ সালের বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানকে একক ভাবে সহযোগিতা করেছিল মোবাইল কোম্পানী সিটিসেল। আমরা সিটিসেল কর্তৃপক্ষ ও এর সিইও মেহবুব চৌধুরীর কাছে ঋণী।
কবিতাপত্র টিকে থাকার ব্যাপারে জাতীয় প্রেসক্লবের অবদান সীমাহীন। আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করছি তাঁরা আগামীতেও কবিতাপত্রকে নিরলস সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। তবে এ কথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, কবিতাপত্র জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে একমত।
কবিতা হচ্ছে মানব মনের গভীরতম জগতের প্রকাশ। কবিতার জন্ম হাজার হাজার বছর আগে। এক সময় মানব জাতি কবিতাতেই মনের ভাব প্রকাশ করতো। গদ্যের জন্ম কবিতার বহু বছর পরে। বিশ্বের ধর্মগ্রন্থ গুলো প্রকাশিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। জগতের সব মূল্যবান কথা গুলো প্রচারিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। আলকোরাণ আল্লাহতায়ালার নিজস্ব ভাষা। এ ভাষাও নবীজীর(সা:) কাছে প্রেরিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। ফলে আলকোরাণ মুখস্ত বা হেফজ করতে হাফেজদের অসুবিধা হয়নি। পৃথিবীতে লাখ লাখ হাফেজ আছেন বর্তমানে যাঁরা পুরো আলকোরাণ মুখস্ত করে রেখেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে আলকোরাণের কাব্যিক গুণে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের যে কোন সদস্য কবিতাপত্রে কবিতা প্রকাশ করতে পারেন। কবিতার গুণ বা মান আমরা বিচার করিনা। সকলের কবিতাই প্রকাশ করা হয়। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা স্কুল জীবনে কবিতা লেখেছেন কিন্তু পরে আর লিখেননি। এখন উত্‍সাহিত হয়ে অনেকেই আবার কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে অনেকের কবিতার বই বেরিয়েছে এবং তাঁরা নিয়মিত কবিতার চর্চা করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সকল সদস্যই কবিতাপত্রের সদস্য। কেউ কবিতা লিখছেন, আর কেউ অপেক্ষা করছেন কখন লিখবেন। তাই আমরা সকল সদস্যকেই আমন্ত্রণ জানাই,আসুন কবিতার জগতে প্রবেশ করুন এবং নিয়মিত কবিতার চর্চা করুন।

এরশাদ মজুমদার
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
কবিতাপত্র পরিষদ
জাতীয় প্রেসক্লাব

Read Full Post »


মাওলানা ভাসানী ও আজকের বাংলাদেশ / এরশাদ মজুমদার

উনিশ’শ তেশটটি সালের দিকে আমি সংবাদে কাজ করি। অবজারভার ছেড়ে সংবাদে এসেছি রাজনৈতিক কারণে।তখন আমি যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তার সাথে সংবাদের সাথে মিল ছিল। আমি মাওলানা সাহেবের অনুসারী ও ভক্ত ছিলাম। কথা উঠেছিল আমি মাওলানা সাহেবের ব্যক্তিগত সচিব হবো। আমার বাবা তখন ক্যানসারের রুগী। একথা শুনে মাওলানা সাহেব রাজী হলেন না। শেষ পর্যন্ত আমি সংবাদ ছেড়ে ফেণী চলে গেলাম কৃষক রাজনীতি করার জন্যে চৌষট্টি সালের শেষের দিকে। মাওলানা সাহেবের পরামর্শেই আমি সাপ্তাহিক ফসল সম্পাদনার কাজ শুরু করি।

একটা সময় আমার মনে হয়েছিল রাজনীতি আমার জন্যে নয়। রাজনীতি নাকি কৌশলের বিষয়। অন্তরে যা আছে মুখে বলা যাবেনা। যা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। উনসত্তুর সালে ঢাকায় ফিরে আসার আগে আমি পশ্চিম পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলাম।

 

উনিশ’শো উনসত্তুর সালে সরকারী আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম পাকিস্তান সফরে। আমার সাথে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের আরও কয়েকজন সাংবাদিক। সম্ভবত মুলতানের একজন সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মাওলানা ভাসানী আর শেখ মুজিবের মধ্যে ফারাক কি? তখন আমার বয়স উনত্রিশ। পুরো ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম মাওলানা সাহেবের একজন ভক্ত। মাওলানা সাহেবের কাছেই আমি প্রথম হজরত আবু জর গিফারী (রা) নাম শুনতে পাই। মাওলানা সাহেব হজরত গিফারীর একজন অনুসারী ছিলেন। কথা উঠলেই মাওলানা সাহেব হজরত গিফারীর ( রা ) নাম বলতেন। রাজধানীতে আবু জর গিফারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাওলানা সাহেবের পরামর্শ ও সমর্থনে। প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান আজরফ সাহেব ওই কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়েছিলেন। মাওলানা সাহেব ইসলামের বিপ্লবী চেতনার অনুসারী ছিলেন।
মুলতানের ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম, মাওলানা সাহেবের সংসদ বা পার্লামেন্ট হচ্ছে ধানক্ষেত আর কল কারখানা। এই সংসদের সদস্যরা হচ্ছেন কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতা। আর শেখ সাহেবের লক্ষ্য হচ্ছে বুর্জোয়া তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতা হওয়া। যে গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করবে পাকিস্তানের ধনী বাইশ পরিবার। সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল,তাহলে মাওলানা সাহেব কমিউনিস্ট পার্টি করেন না কেন? আমার উত্তর ছিল মাওলানা সাহেব ইসলামী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তিনি খোদা, খোদার কালাম আল কোরাণ ও বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত আল্লাহপাকের রাসুল হজরত মোহাম্মদকে সা: বিশ্বাস করেন। ১৯৬৪ সালে গণচীন থেকে ফিরে এসে মাওলানা সাহেব ইসলামী সমাজতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁর দল ন্যাপের কমিউনিস্ট সদস্যরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। গণচীন থেকে মাওলানা সাহেব সরাসরি চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে নেমেছিলেন। তখন আমি তাঁর একটি বড় সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। যা সংবাদে ছাপা হয়েছিল। আমি ৬২ থেকে ৬৪ সালের শেষ নাগাদ সংবাদে চাকুরী করেছি। ওই সময়েই বাম রাজনীতির ধারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সংবাদ বা রাশিয়া মাওলানা সাহেবের চীন সফরকে ভাল চোখে দেখেনি। ফলে বাম রাজনৈতিক দল গুলো চীনপন্থী ও রুশপন্থী হিসাবে পরিচিত হতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধকে ভারত রাশিয়া সমর্থন করেছে। ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বংগবন্ধুর সরকারের উপর ভারত রাশিয়ার প্রভাব সীমাহীন ভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশে রুশপন্থী দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক কবিদের দাপট বা প্রভাব বংগবন্ধুকে সরকার পরিচালনায় বিব্রত করে তোলে। এক পর্যায়ে বংবন্ধু বলতে বাধ্য হয়েছিলেন বি টীম হিসাবে না থাকে সাইন বোর্ড তুলে চলে আসুন। এক সময় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমরা বংগবন্ধু টাইটেল প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরী, মেনন, ইনু নাহিদ সবাই তখন বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন। এখন তাঁরা সবাই বংগবন্ধুর কন্যা হাসিনার পতাকার ছায়ায় একত্রিত হয়েছেন।
ভারতের অনুরোধ উপেক্ষা করে বংগবন্ধু চুয়াত্তর সালে পাকিস্তানের লাহোর গিয়েছিলেন ওআইসির সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্যে। বংগবন্ধু নিজেই বলতেন, ‘আমি বাংগালী, আমি মুসলমান।’ বাংগালী হওয়ার জন্যে তিনি কখনই ইসলাম ত্যাগে রাজি হননি। দশই জানুয়ারী দেশে ফিরে এসে বংগবন্ধু দেখলেন, সরকারের কোন স্বাধীনতা নেই, সব ব্যাপারেই ভারত নাক গলায়। লাহোর যাওয়ার আগে বংগবন্ধুকে খুবই বিচলিত দেখেছি। বংগবন্ধুকে লাহোর নেয়ার জন্যে আলজিরিয়ার বিশেষ বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছে। ওআইসির দুই জন নেতা ইয়াসির আরাফাত ও বেন বেল্লা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বংগবন্ধুকে সাথে নিয়ে যাবার জন্যে। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করেছে। কিন্তু তাঁর কন্যা হলে হয়ত যেতেন না। যেমন শেখ হাসিনা মুসলীম দেশ গুলোর জোট ডি৮ সম্মেলনে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি কাদের খুশী করার জন্যে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা দেশের মানুষ ভাল করেই জানে। ৬২ সালে মাওলানা সাহেব চীন গিয়েছিলেন সরকারের অনুরোধে। জেনারেল আইউব মাওলানা সাহেবের কাছে ওয়াদা করেছিলেন চীনের সাথে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। ওই সময়েই পূর্ব পাকিস্তানের সকল বামপন্থি নেতা মুক্তি লাভ করেন। যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে বা পলাতক ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে জারি করা হুলিয়া তুলে নেয়া হলো। ৫৮ সাল থেকে ৬২ সাল নাগাদ মাওলানা সাহেব ধানমন্ডীর একটি বাড়িতে নজরবন্দী ছিলেন। মাওলানা সাহেবের উদ্যোগেই চীনের সাথে পাকিস্তানের সু সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বাংলাদেশ হওয়ার পরেও অব্যাহত থাকে। বংগবন্ধুর আমলে সম্পর্কটা একটু শীতল ছিল ভারত ও রাশিয়ার চাপের কারণে। জিয়া সাহেবের আমল থেকে এ সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে। ৭১ সালে গণচীন পাকিস্তানের অখন্ডতাকে সমর্থন করেছিল এবং বিবৃতি দিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে। ৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনের বক্তব্য ছিল যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশী সৈন্য থাকবে ততদিন বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ নয়।
৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের উপর ভারতের প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্যে বংগবন্ধু মাওলানা সাহেবের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মাওলানা সাহেব ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানলেন। তাঁর সাপ্তাহিক পত্রিকা হক কথার মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেন। মাওলানা সাহেব ছিলেন শেখ সাহেবের পিতৃতূল্য ব্যক্তিত্ব। ৭৪ সালে শেখ সাহেব যখন সন্তোষ যখন তখন প্রখ্যাত চিত্র সাংবাদিক রশীদ তালুকদার একটি এতিহাসিক ছবি তুলেছিলেন,যা ছিল পিতাপুত্রের সম্পর্কের ছবি। ছবিটি ছিল একটি আবেগঘন মূহুর্তের। শেখ সাহেব মাওলানা সাহেবের বুকের ভিতর মাথা লুকিয়ে রেখেছিলেন। মাওলানা সাহেব মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। ঠিক ওই সময়ে খবর আসে শেখ সাহেবের পিতা অসুস্থ। মাওলানা সাহেব বললেন, তুমি এখনই হেলিকপ্টারে করে তোমার বাবাকে দেখতে যাও। অন্য সব প্রোগ্রাম বাতিল করো। শেখ সাহেব তখনি গোপালগঞ্জ রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন। কোলকাতায় শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সাগরেদ থাকলেও পাকিস্তান সৃষ্টির পর মাওলানা সাহেবের নেতৃত্বেই রাজনীতি শুরু করেন। ৪৯ সালে মাওলানা সাহেবের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে শেখ সাহেব নতুন দলের যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। আসলে শেখ সাহেবই ছিলেন প্রধান সংগঠক। ৫৪ সালের নির্বাচনের জন্যে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে আওয়ামী মুসলীম লীগ ছিল প্রধান দল। তার সাথে শেরে বাংলার কৃষক প্রজা পার্টি সহ আরও বহু ইসলামিক ছোটখাট দল ছিল। শেখ সাহেব সাধারন মানুষের জন্যে রাজনীতি করতেন এটা ঠিক। কিন্তু টার্গেট ছিল ক্ষমতায় যাওয়া এবং তার মাধ্যমেই জনগণের খেদমত করা। মাওলানা সাহেব ছিলেন তার উল্টো। তাঁর কাছে লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল শুধুই জনগণের খেদমত করা এবং জনগণকে অধিকার সচেতন করে তোলা। আসামে থাকতেও তিনি আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। স্যার সাদুল্লাহ ছিলেন তাঁরই দলের প্রধানমন্ত্রী। আগেই বলেছি মাওলানা ছিলেন হজরত আবু জর গিফারীর(রা) একজন অনুসারী। নিজ জীবনে গিফারী সাহেবের আদর্শ বাস্তবায়নের চেস্টা করেছেন সারা জীবন। তিনি বিশ্বাস করতেন সত্যিকারের ইসলাম বাস্তবায়িত হলে সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের কোন প্রয়োজন নেই। এখন পৃথিবীতে কোথাও সত্যিকারের ইসলাম নেই। ইসলাম এখন আচার সর্বস্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশেও ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও এখানে ইসলাম কায়েম করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে সরকার এবং এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ইচ্ছা হলো নামাজ রোজা করো। অর্থ থাকলে হজ্ব পালন করো আর জাকাত দাও। রাস্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে কোন কথা বলোনা। খুব বেশী যদি চাও তাহলে সুফী দরবেশ হয়ে যাও। রাজনীতি আর সরকার নিয়ে মাথা ঘামিওনা। এটা রাজনীতিবিদদের কাজ। যাদের কোন ধর্ম থাকবেনা বা আদর্শ থাকবেনা। মাওলানা ভাসানী ও শেখ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ এখন ধর্মকে মসজিদ মাদ্রাসা আর বাড়ির ড্রয়িং রুম ও বৈঠক খানায় আটকিয়ে রাখতে চায়। দুদি তৃতীয়াংশেরও বেশী সিট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা এখন বামপন্থীদের চাপের পড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরে তিনি ইসলামী দল গ্রুপ গুলোকে সন্ত্রাসী হিসাবে গালাগালি করে চলেছেন। ইসলামকে পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারত সন্ত্রাসী ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করে ইসলাম ও মুসলমানদের দমনের কাজে নেমেছে। শেখ হাসিনার সরকার পশ্চিমাদের এ নীতি সমর্থন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যদিও শেখ হাসিনা কথায় কথায় বলেন,তিনি নিয়মিত ছয় ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন। ভোটের আগে হিজাব পরে ভোটারদের কাছে যান। তিনিই শ্লোগান তুলেছেন,ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এর মানে হচ্ছে, এদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি বলে রাস্ট্রের কাছে বিশেষ কোন মর্যাদা পাবেনা। বাংলাদেশকে ভারত কিভাবে এবং কোন চোখে তা জানতে হলে ‘ইন্ডিয়া ডক্ট্রিন’ বইটি পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্দ চলাকালে মুজিব নগর সরকার ইন্দিরা গান্ধীর চাপে পড়ে যে সাত দফা গোপন চুক্তি করেছিল তাও পাঠকদের জানা দরকার। ভারত দীর্ঘদিন থেকে ওই সাত দফা বাস্তবায়নের চেষ্ট করে যাচ্ছে। সময় যতই লাগুক ভারতের লক্ষ্য সে সাত দফা বাস্তবায়ন করা। এজন্যে ভারত সিকিমের লেনদুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনাকে একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু মনে করে। শেখ হাসিনা জানেন তাঁর পিতাকে কারা হত্যা করেছে। তাই তিনি সব সময় ভয়ে থাকেন। একই শক্তি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। নিজেকে ভারতের মহা বিশ্বস্ত বন্ধু প্রমান করার জন্যে বিগত ৬/৭ মাসে কয়েকশ’ মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়েছেন।
মাওলানা সাহেবকে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, গবেষক কেউই মাওলানা সাহেবকে মুল্যায়ন করতে পারেননি। দেশের ইসলামপন্থীরা তাঁকে কমিউনিস্ট মনে করতেন। তাই তাঁকে তাঁরা ইসলামের বাইরে মনে করতেন। বিদেশীরা বলতেন,‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ বা ‘মাও অব ইস্ট ইনডিজগাইজ অব এ প্রিস্ট’। অন্যদিকে তিনি হক্কুল এবাদ নামে সংগঠণও করেছেন। তিনি বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে বিশ্ববাসীকে বলে এসেছেন, আমার ধর্ম শান্তির ধর্ম, আমার রাজনীতি শান্তি, আমি শান্তির মাঝেই বাস করি এবং শান্তিই আমার অভিবাদন। তিনি মাও সে তুংকে বলেছিলেন,আপনাদের সমাজতন্ত্রে খোদাকে জায়গা করে দিন আমি আপনাদের সাথে আছি।
ষাটের দশকে মাওলানা সাহেব সারা ইসলামিক নেতাদের আহবান করেছিলেন,কমিউনিস্ট বিরোধী অন্দোলনে সাম্রজ্যবাদী শক্তির নেতা আমেরিকাকে সমর্থন না করার জন্যে। তিনি বলেছিলেন আমেরিকা কখনই ইসলামের বন্ধু হতে পারেনা। আমেরিকা এবং পশ্চিমা নেতারা ইহুদীদের বন্ধু। এমন কি ভারতও ইহুদীদের পরম বন্ধু। সে সময় ইসলামিক নেতারা মাওলানা সাহেবকে কমিউনিস্ট বলে গালাগাল করেছেন। মাওলানা সাহেবকে আমি অতি ঘনিস্ট ভাবে চিনি। এক সময় আমি তাঁর একান্ত সচিব হতে চেয়েছিলাম। তিনি বললেন,শুনেছি তোমার বাবা অসুস্থ। তুমি বাপের বড় ছেলে। এ সময়ে তুমি তোমার মা বাবার খেদমত করো। তখন আমি মহানবীর(সা) জীবনী তেমন ভাল করে পড়িনি। এখন জানি। এক সাহাবী জেহাদে যাওয়ার জন্যে নবীজীর কাছে আবেদন জানালে তিনি প্রশ্ন করলেন,ঘরে তোমার আর কে কে আছেন। উত্তরে সাহাবী বলেছিলেন বৃদ্ধ মা বাবা।নবীজী(সা) বললেন যাও,ঘরে গিয়া মা বাবার খেদমত করো। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের মাওলানা সাহেব সম্পর্কে তেমন জ্ঞান ছিলনা বা এখনও নেই। এমন কি আমাদের আলেম সমাজ ও পশ্চিমা জগতের ও তেমন সঠিক ধারনা বা তথ্য জানা ছিলনা তাঁর সম্পর্কে। ফলে সকলেই তাঁকে বামপন্থী বা কমিউনিষ্ট বলে আখ্যায়িত করতো। মাওলানা সাহেব আসলেই মনে প্রাণে একজন রেডিকেল ইসলামিস্ট ছিলেন। কার্ল মার্কস এবং এম এন রায় ইসলামকে রেডিকেল ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের চর্চা বা অনুশীলনে যে ইসলাম বিরাজ করছে তা আসলে শোষণমুখি ইসলাম। যাঁরা মনে করেন তাঁরা ইসলামের জন্যে কাজ করছেন তাঁরাও চলমান বিশ্বের মুসলমান আর ইসলামের ভিতর ফারাক করতে পারেন না। লাখ লাখ মসজিদ আছে, প্রতিদিন লাখ লাখ মুসলমান সেজদা দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ক’জন ইসলামিস্ট আছেন। বর্তমান বিশ্বে একটি ইসলামী রাস্ট্রও নেই। কোন ইসলামী সমাজ নেই। মাওলানা ভাসানী একটি শোষন মুক্ত ইসলামী সমাজ চেয়েছিলেন। তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। মুসলমানদের দেশ গুলো এখন ডিক্টেটর বা বাদশাহরা শাসন করছেন। যা একেবারেই রাসুলের(সা) ইসলাম নয়।
নিরহংকার নির্লোভ এই মানুষটি সারাটা জীবন সাধারন মানুষের সাথে ছিলেন। মজলুম জননেতা বললে সবার চোখে মাওলানা সাহেবের চেহারা ভেসে উঠে। যখন তাঁর দল আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় তখনও তিনি কাগমারীতে কুড়ে ঘরে থাকতেন। খুবই নামী দামী বা সরকারী উচ্চ পর্যায়ের মেহমান গেলে বসাবার জন্যে মাত্র একখানা চেয়ার ছিল। ঢাকায় আসলে ভক্তদের বাসায় থাকতেন। এক সময় ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের বাসায় বা চা বাগানের মালিক সাইদুল হাসান সাহেবের বাসায়ও থাকতেন। ৭১ সালে পাক বাহিনী হাসান সাহেবকে হত্যা করে। ঢাকায় মাওলানা সাহেবের কোন বাড়ি ছিলনা। বড় বড় কোম্পানী ও ভক্তরা চেস্টা করেও ঢাকায় বাড়ি করার ব্যাপারে মাওলানা সাহেবকে রাজী করাতে পারেননি। পাঠক সমাজ হয়ত ভুলে গেছেন জনপ্রিয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতাও হচ্ছেন মাওলানা ভাসানী। তাঁর ভক্তরাই চাঁদা দিয়ে কাগজটি বের করেছেন। এখন কিন্তু এই কাগজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সাহেব। মাওলানা সাহেব কখনও ক্ষমতায় ছিলেন না। তবুও তিনি এ দেশের বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। সন্তোষের বিশ্ব বিদ্যালয় তাঁর একটি বড় প্রমান। এমন কি আসামের একটি জায়গার নাম হচ্ছে ভাসানীর চর। ওই এলাকাটা মাওলানা সাহেবই আবাদ করেছিলেন। সন্তোষের তত্‍কালীন জমিদার ইংরেজদের সহযোগিতায় মাওলানা সাহেবকে বৃটিশ শাসিত পূর্ববাংলা থেকে বহিস্কার করেছিলেন। এর পরেই মাওলানা সাহেব আসাম চলে যান। সেখানেই রাজনীতি শুরু করেন। এক সময় আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। খোদ জিন্নাহ সাহেব মাওলানা সাহেবের সাংগঠনিক ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এই প্রথম শ্রেণীর মুসলীম লীগ নেতা পূর্ব পাকিস্তানে এসে দলে কোন স্থান পেলেন না। বরং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান মাওলানা সাহেবকে ‘হিন্দুস্তান কি লেলায়া হুয়া কুত্তা’ বলে গালাগাল দিয়েছেন। এক সময় লিয়াকত আলী সাহেব ‘শের কুচাল দেংগা’ বলেও ধমক দিয়েছেন। মাওলানা সাহেবের ইউরোপ সফর নিয়ে সময় সুযোগ মতো অন্য কোন সময় লিখার আশা রাখি। সে এক বড় ইতিহাস। এর আগে অনেকবার লিখেছি মুসলীম লীগের নেতাদের গণবিরোধী ভুমিকার কারণেই মাওলানা সাহেব নতুন দল আওয়ামী মুসলীম গঠণে বাধ্য হন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করলো তখন তিনি আর দলে থাকতে পারলেন না। সরকারের বিদেশ নীতির প্রশ্নে দ্বিমত হওয়ার কারণে তিনি দল ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। সে সময়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেব থিওরী দিলেন ‘জিরো প্লাস জিরো’। মানে পাকিস্তান একা জিরো। তাই আমেরিকার সাথে থাকতে হবে। মাওলানা সাহেব সব সময়েই আমেরিকার সাথে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে ছিলেন। সেই সময়েই পাকিস্তান সেন্টো সিয়াটোর সামরিক জোটে যোগদান করে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে মাওলানা সাহেব ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠণ করেছিলেন।
ভারত এবং রাশিয়ার পরামর্শে শেখ সাহেব যখন এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর জন্যে বাকশাল গঠণ করেছিলেন মাওলানা তাকে সমর্থন করেননি। তখন আমাদের সাংবাদিক নেতা ও বন্ধুরা দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। আগস্ট মাসের শুরুতে আমি সন্তোষে মাওলানা সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম জানতে কি করবো। তিনি আমাকে বলেছিলেন, কয়েকদিন অপেক্ষা করো। দেখো কি হয়। তখন বুঝতে পারিনি মাওলানা সাহেব কি ইংগিত করেছিলেন। বাকশাল গঠণের পর শেখ সাহেব নাকি মনসুর আলী সাহেবকে পাঠিয়েছিলেন মাওলানা সাহেবের কাছে দোয়ার জন্যে। শুনেছি, মাওলানা সাহেব নাকি বলেছিলেন, দেখো মনসুর দোয়াতো করবোই,মুজিবর আমার প্রাণের মানুষ। মনসুর,তুমি কি হাড়গিলা পাখি চেনো? হুজুর পাখির নাম শুনেছি। তোমাদের জন্যে হাড়গিলা পাখি হলো মণী সিং। শকুন খাইয়া যা থাকে সেই হাড়গোড় খায় হাড়গিলা পাখি। মুজিবরকে হাড়গিলা পাখি ধরেছে। আর ছাড়বেনা। শুনেছি ১৪ই আগস্ট রাতে নাকি মাওলানা সাহেব ঘুমাতে পারেননি। পুত্রবত্‍ শেখ সাহেবের চিন্তায় তিনি অস্থির ছিলেন। ভারত রাশিয়া এবং আমেরিকা নাকি ১৪ই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলো। কিন্তু কেউ শেখ সাহেবকে তা জানায়নি। তিনি তখন একেবারেই বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিলেন। এমন কি পরবর্তী পর্যায়ে বংগবন্ধুর হত্যা রহস্য তদন্তের জন্যে আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকার কোন কমিশন গঠণ করেনি। এমন কি শেখ হাসিনাও সাথে সাথে দেশে ফিরে আসেননি। তিনি তখন দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। দিল্লী সরকার তাঁকে দেশে ফিরতে নিরুত্‍সাহিত করতো। জিয়া সাহেব অনেক দেন দরবার করে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসার জন্যে উত্‍সাহিত করেছেন।
বাংলাদেশ এখন খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে নিপতিত। ভারত চায় এদেশে কখনই যেন জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পরে। তাই ভারত এবার মরণ কামড় দিয়ে বাংলাদেশকে ধরেছে। যে কোন ভাবেই হোক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০২১ সাল নাগাদ শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে ভারতের লক্ষ্য অর্জিত হবে। ভারতের ৭১ সালের গোপন চুক্তিও বাস্তবায়িত হবে। ক’দিন এ ব্যাপারে রাহুল গান্ধী একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


আমরা খবরের কাগজ এবং টিভিতে দেখলাম জামাতের মিছিলের ভিতর থেকে এক লোক পুলিশের কাছে থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। বলা হচ্ছে লোকটা জামাতের। কারণ সে জামাতের মিছিলের ভিতরএই ছিল। এটা একটি সাদামাটা খবর। এখন লোকটা কোথায়? সে কী ধরা পড়েছে? না খালাস হয়ে গেছে। পুলিশের গায়ে হাত তোলা মানে রাস্ট্র ও সরকারের গায়ে হাত তোলা। ওই লোকটা একটা রাস্ট্রদ্রোহী। তার বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। কে এই পাষন্ড যে রাস্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীর গায়ে হাত তোলে। দেশবাসী লোকটাকে দেখতে চায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও দাবী করি ওই পাষন্ডের দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। পুলিশের আহত সেই ভদ্রলোকই বা কোথায় গেলেন? তিনি কি হাসপাতালে আছেন? কই তাঁকে দেখতেতো কেউ গেলেন না। আমরাতো সব সময়ই দেখি সরকারী দল বা পুলিশের কেউ আহত হলে মন্ত্রী শান্ত্রীরা হাসপাতালে তাঁকে বা তাঁদের দেখতে যান। হতে পারে হয়ত সবই হয়েছে আমি জানতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি।
পুলিশ নিয়মিত অষুধের ডোজের মতো রাস্তায় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এটা আমরা নিয়মিত টিভি ও পত্রিকার সংবাদে দেখতে পাই। যেন একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। পুলিশ শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের পিটায়না, রিকশাওয়ালা, পথযাত্রী সহ আরো অনেককেই পিটায়। মাঝে বিচারপতিদেরও হেনস্থা করে। সাংবাদিকদের পিটানোটাতো পুলিশের নিয়মিত ডিউটিতে পরিণত হয়েছে। এক সময় চৌকিদার ছিল সরকার বা রাস্ট্রের প্রতীক। চৌকিদারের গায়ে হাত দিলেই রাস্ট্রদ্রোহিতা। সংগে সংগেই চৌকিদারের রশি কোমরে লেগে যাবে। সে সময়ে বৃটিশ রাজের প্রতীক চৌকিদারকে দেখলেই সাধারন মানুষ ভয় পেতো। গ্রামে গেলে এখনও অনেক চৌকিদার দফাদার বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। নামী দামী দারোগা বাড়িও আছে। এখন দেশের মানুষ নিত্যদিন পুলিশ দারোগা, সরকারী গোয়েন্দা, রেবের ভয়ে অসহায় থাকে। তার উপর রয়েছে আয়কর বিভাগ, পানি বিদ্যুত গ্যাস খাজনা অফিস ও সিটি কর্পোরেশনের জ্বালাতন। এসব সরকারী বা আধা সরকারী অফিসের লোকেরা কিছু বাড়তি টকা না পেলে ন্যায্য কাজটা করে দেয়না।
পুলিশ আর জামাতের মারামারির দৃশ্য এখন প্রতিদিন টিভি ও খবরের কাগজে দেখা যায়। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরাও পুলিশকে পিটাচ্ছে। পুলিশমন্ত্রী মখা আলমগীর বলেছেন, ছাত্রলীগ যুবলীগ ও পুলিশ দল বেঁধে জামাত আর শিবিরকে প্রতিহত করবে। যুবলীগ নেতারা বলছেন,ওটা আমাদের কাজ নয়,পুলিশের কাজ। মখা আলমগীর একজন সাবেক আমলা। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর ডক্টরাল থিচিচ ডেডিকেট করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। এক সময় তিনি ছিলেন জিয়া সাহেবের ভক্ত। মাওলানা সাহেবের ভক্ত ছিলেন এমন বহু আমলা পরে বংগবন্ধু ও এরশাদের ভক্ত হয়ে গেছেন। মখা আলমগীর নাম করেছেন জনতার মঞ্চ করে। কি কারণে তিনি বেগম জিয়ার উপর গোস্বা হয়েছিলেন তা অবশ্য আমরা জানিনা। যা হোক তিনি এখন পুলিশের মন্ত্রী। বৃটিশরাতো পুলিশ তৈরি করেছিল পরাধীন ভারতবাসীকে পিটাবার জন্যে, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলাবার জন্যে। পুলিশের বৃটিশ তৈরি আইন এখনও বলবত আছে। একজন পুলিশ সিপা্ী যে কোন সময় রাস্তায় যে কোন নাগরিককে পিটাতে পারে,হাতে হ্যান্ড কাফ লাগাতে পারে। এতে আিনের কোন বরখেলাফ হবেনা। ববৃটিশদের তৈরি ওই পুলিশ আইন দিয়ে পাকিস্তান চলেছে, এখন বাংলাদেশও চলছে। আমাদের মহা গণতান্ত্রিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ওই আইন বদলাতে চায়না। তাতে নাকি সরকার বা রাস্ট্র চলেনা। রাস্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান যাকে জনগণের হাত রক্ষা করার জন্যে সেনা বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রেব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ লাগে। এই যন্ত্র আজ পুলিশ মন্ত্রীকে সালাম দিচ্ছে,পাহারা দিচ্ছে আবার কাল লাঠি পেটা করছে। আজ যাকে দেশপ্রেমিক বলছে কাল তাকে রাস্ট্রদ্রোহী বলছে। বংগবন্ধু বৃটিশ পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, পাকিস্তানী পুলিশের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি রাস্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে জেলে দিয়েছেন, অত্যাচার করেছেন, হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করেছেন। ক্ষমতায় আসার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র আর ভাল লাগেনি। একদলীয় রাজনীতি চালু করেছিলেন। নিজের অনুগত রক্ষীবাহিনী চালু করেছিলেন। তিনি সবকিছুই করেছিলেন রাস্ট্র বা সরকারকে রক্ষা করার জন্যে। সব সরকারই এ কাজটা করে থাকে। এর মানে হচ্ছে রাস্ট্র বা সরকার জনগণের চেয়ে অনেক বেশী বড় ও দেশপ্রেমিক। সরকারকে রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজনে লাখ লাখ নাগরিককেও হত্যা করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বলে থাকেন আইন আদালত মেনে দেশ স্বাধীন করিনি, প্রয়োজনে আইন আদালত না মেনেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো। প্রসংগটা হচ্ছে পুলিশকে রাস্তায় কিছু লোক পিটাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখতে টিভি দর্শকরা অভ্যস্ত নন। সবাই সময় দেখেন পুলিশ পাবলিককে পিটাচ্ছে। এই পিটানোটাকেই স্বাভাবিক মনে করা হয়। হঠাত্‍ দেখা গেলো পুলিশকে পিটাচ্ছে। এর আগে প্রকাশ্য রাস্তায় টিভি ক্যামেরার সামনে পাবলিক পুলিশকে পিটায়নি। তবে বংগবন্ধুর আমলে কিছুলোক থানা লুট করেছে, পুলিশের অস্ত্র লুট করেছে,পুলিশকেও হ্ত্যা করেছে। সে সময় ব্যান্কও লুট হয়েছে। ৭১ সালেও নানা ধরণের লুট হয়েছে। বংগবন্ধুর আমলে জাসদ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল। থানা আক্রমন করেছে। পুলিশ মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমন করেছে, ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছে। এক সময় জাসদ নিষিদ্ধ হতে চলেছিল। জাসদের হাজার কর্মীকে রক্ষী বাহিনী হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে আর নেতাদের গ্রেফতার করেছে।
৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। জিয়া সাহেব ক্ষমতা গ্রহন করে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এই উপ মহাদেশের কোন দেশেই ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধ নয়। ৭২ এর আগে পাকিস্তান আমলে ধর্ম বিরোধী রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি গুলো নিষিদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নতুন কোন ঘটনা নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশ গুলোতে ইসলামিক রাজনৈতিক দল গুলো যুগের পর যুগ ধরে নিষিদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক গণ বিক্ষোভের ফলে বহুদেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এমন কি অনেক দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। যারা ধর্মীয় দল গুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন তাঁরাও মুসলমান নেতা। কিন্তু ইসলামিক শক্তিকে ভয় পেতেন। এক সময় পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশ গুলোতে কমিউনিস্ট পার্টি গুলো নিষিদ্ধ ছিল। আবার বহু কমিউনিস্ট দেশে কমিউনিজমের পতন হয়েছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও পুরাণো ঘুণে ধরা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলোর নেতা সোভিয়েত রাশিয়া এখন আর নেই। সেখানে এখন অনেক গুলো দেশের সৃষ্টি হয়েছে। গণচীনেও খোলা বাজার ও মুক্ত অর্থনীতি চালু হতে চলেছে। রাজনীতির ইতিহাসে কোন কিছুই স্থবির হয়ে থাকেনা। মুসলীম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলীম লীগ। তারপরে শুধুই আওয়ামী লীগ। নামের অর্ধেক উর্দু আর বাকি অর্ধেক ইমরেজী। মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢাকর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ আর আওয়ামী মুসলীম লীগ ও শুধু আওয়ামী প্রতিষ্ঠা করেছেন মাওলানা ভাসানী। শুধু আওয়ামী লীগ দ্বারা চলছেনা বলে বংগবন্ধু একদলীয় রাজনীতির জন্যে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাকশাল ত্যাগ করে জিয়ার আমলে আবার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশালের সমাজতান্ত্রিক নীতি ত্যাগ করে ধনতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করেন। সাথে আমেরিকার সাথেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্ত৬মান আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মনে হয় খুবই বিভ্রান্তির মাঝে দিনাতিপাত করছে। যে বংগবন্ধুর মাঝে ছিলনা। বংগবন্ধু খুবই সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,তিনি বাংগালী এবং মুসলমান। আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্যে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিস্থিতি সম্পুর্ণ। তিনি সিপিবি সহ অন্যান্য বাম চিন্তাধারার জনবিচ্ছিন্ন কিছু লোক ও গোষ্ঠির চক্করে পড়ে গেছেন। সরকারে এখন ওদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেশী। তিনি বুঝতে পারছেন না তিনি কোন পথে চলছেন। ফলে তিনি দিন দিন মুসলমান বিরোধী কাজকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর ১০ ভাগ মানুষ হয়ত জামাতকে সমর্থন করে বা ভোট দেয়। জামাত ইসলামের রক্ষকও নয় সোল এজেন্টও নয়। জামাত বিরোধী বহু ইসলামী দল বাংলাদেশে আছে। তারাও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেনা। কারণ তারা আওয়ামী লীগকে ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী রাজনৈতিক দল মনে করে। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা দিনরাত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ও কলম ধরে চলেছেন।
এখনতো বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিরোধী একটা জজবা চলছে। সেই জজবার নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। ইসলামকে জংগী ধর্ম বানাবার জন্যে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী টাকা খরচ করছে। আমেরিকার এই ইসলাম বিরোধী যুদ্ধের আওতায় বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকা লাদেন তৈরি করেছে সহযোগী হিসাবে পরে তাঁকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা জামাতের সাথে লেনদেন করেছেন। গোলাম আজম সাহেবকে মুরুব্বী বলে সম্মান করেছেন। এখন সেই মুরুব্বীকে আইনের আওতায় হত্যা করার জন্যে দিনরাত জিকির করছেন। শেখ হাসিনা হয়ত মনে করছেন, জামাত নেতাদের ফাঁসি দিলেই দলটি দূর্বল হয়ে যাবে,অথবা এই দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। আসলে আদর্শবাদী দল কি কখনও মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায়? যায়না, ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত আছে। সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রায় শত বছর ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদ গুলোতে তালা লাগানো ছিল। এখন সেখানে ধর্মচর্চা আবার শুরু হয়েছে। ভারতে এখনও বহু মসজিদে তালা ঝুলছে। এসব মসজিদে সরকার তালা লাগায়নি। মসজিদ এলাকায় মুসলমান নেই। তাই নামাজ পড়ার লোক নেই। এক সময় ছিল। স্পেনে বহু মসজিদ শরাবখানা হয়ে গেছে। এক সময় মুসলমানেরা স্পেন শাসন করেছে সাত শত বছর ধরে। মুসলমান হত্যা কর্মসূচীর কারণে সেখানে এখন মুসলমান নেই। ভারতেও প্রায় এক হাজার বছর মুসলমানদের রাজনৈতিক উপস্থিতি ছিল। এখন নেই। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একমাত্র ধর্ম ইসলাম যার বিস্তৃতি ঘটছে অবিরাম ভাবে। হয়ত এ কারণেই আমেরিকা এবং এর বন্ধুরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্যে এখনই অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দুই তিনশ’ হলেও আমেরিকা ও তার বন্ধুদের কোন আপত্তি নেই। যদি তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তার করতে চায়। ইসলামকে তারা পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে মানতে রাজী নয়। আওয়ামি লীগ ও ইসলামকে পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে মানতে রাজী নয়। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ইসলাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে চায়না। জামাতের জন্ম হয়েছে ৭২ বছর আগে। এখন পর্যন্ত উপ মহাদেশের কোন দেশ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। জনগণই জামাতকে এখনও রাজনৈতিক ক্ষমতা হিসাবে গ্রহণ করেনি। সাধারন মানুষ তামাশা করেই বলে জামাত আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, না থাকলে রাজাকার। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করলেও চলবে।
ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামাত রাজনৈতিক দল হিসাবে আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আরও বহু ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে, তারা তেমন শক্তিশালী নয়। সংসদে তাদের কোন প্রতিনিধি নেই। বাম ডান ও মধ্যপন্থী গ্রুপেও বহু রাজনৈতিক দল আছে যাদের সংসদে কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। তাদের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে খবরের কাগজের পাতায় দেখা যায়। ইনু মিনু বড়ুয়াদের কোন সিট নেই। তারা এবার বহু বছর পরে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁদের সারাজীবন কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে চারটি রাজনৈতিক দল আছে যাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। যাদের লাখ লাখ ভোটার আছে। তন্মধ্যে জামাত একটি। শুনেছি জামাতের ৯০ লাখ ভোটার আছে। জামাত ৭০ সাল থেকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে আসছে। ৭১ সালে মুসলীম লীগ সহ ধর্মীয় দলগুলো অখন্ড পাকিস্তানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেছে। ৪৭ সালেও বহু মুসলমান রাজনৈতিক দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু পরে তাঁরা পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং পাকিস্তানে এসে রাজনীতি করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখ লাখ মুসলমান হিন্দু প্রাণ দিয়েছে বৃটিশদের হাতে। সেই বৃটিশ এখন ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধু। ১৯০ বছর বৃটিশরা এদেশকে লুণ্ঠন করেছে। লোখ লাখ মুক্তিকামী দেশ প্রেমিককে হত্যা করেছে। ভারতের সম্পদেই বৃটেন ধনী হয়েছে।১৯০ বছরের শোষণ শাসন লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৃটেন আজও কারো কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং এখন আমরা বৃটেনের কাছ থেকে সাহায্যের জন্যে তাদের দুয়ারে ধর্ণা দেই। বৃটেন স্যার বা ওবিই দিলে খুশীতে নাচতে থাকি। এখনও অনেকের জন্ম বৃত্তান্তে দেখি তিনি বা তাঁরা অমুক খান বাহাদুর, নবাব বা জমিদারের নাতি বা পুতি। এসব গৌরব আমাদের মগজে স্থায়ী হয়ে গেছে। অনেকেই আনন্দের সাথে বলে থাকেন কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধানতম সমস্যা দেশ বা রাস্ট্রের চেয়ে দলকে এবং দলীয় সরকারকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। ৭৪ সালেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেছেন বংগবন্ধুর আমন্ত্রনে। বংগবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক সহতাপন করতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশের চিরস্থায়ী শত্রয় হতে পারেনা। আমেরিকা ৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন দিলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কোন রাস্ট্রই চিরস্থায়ী ভাবে অন্য কোন রাস্ট্রের সাথে বৈরিতা পোষন করতে পারেন।
জামাত আর পুলিশের ভিতর মারামারিটা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। হঠাত্‍ করে জামাত পুলিশকে পিটাচ্ছে কেন? আগেই বলেছি, যে ছেলেটা পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশকে পিটাচ্ছে সেই ছেলেটা এখন কোথায়? আমাদের মিডিয়া ওই ছেলেটার কোন হদিস দেশবাসীকে দিতে পারেনি। ছেলেটা কি জীবিত আছে? পুলিশটাই বা কোথায়? তিনি কি কোন হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন আছেন? ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এখন প্রতিদিন জামাত ও শিবির কর্মীদের আতক করছে, রিমান্ডে নিচ্ছে। সারা দেশে এখন জামাত ও শিবির পাকড়াও করো কর্মসূচীতে ইতোমধ্যেই কয়েক ঝাজার কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। জামাত নামে বা জামাত বলে পরিচিত কর্মীদের মিছিল অব্যাহত রয়েছে, পুলিশও নিয়মিত মার খাচ্ছে আর কর্মীদের আতক করছে।
জামাত পুলিশ লাঠালাঠি বা মারামারির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্পস্ট হতে শুরু করেছে।সংসদে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবী তুলেছে আওয়ামী সদস্যরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। দেশের মানুষ মনে করছে জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্যেই রাস্তায় জামাত-পুলিশ লাঠালাঠির নাটক সাজানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জামাত নিষিদ্ধ হলে জামাতের রাজনীতি কি বন্ধ হয়ে যাবে? ইসলামে বিশ্বাসী তরুনরা যদি নতুন নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে তাহলে সরকার কি করবেন? আরব বসন্ত যারাই শুরু করুন না কেন এর বেনিফিট সুবিধা পেয়েছে ইসলামী দলগুলো। যারা জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানাচ্ছেন তাঁরা কিন্তু শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মিত্র নয়। জামাত নিষিদ্ধ হলেও বামপন্থী বা তথাকথিত স্যেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীরা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে নানা কথা ও মত কাগজে ও সেমিনারে আলোচিত হচ্ছে। অভ্যাস মোতাবেক আওয়ামী লীগ নেতারা খুব বেশী কথা বলছেন। খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন তাঁর ভারত সফর খুবই ফলপ্রসু হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীরা বলে যাচ্ছেন , এ সফরের কোন মূল্য নেই। আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হলে আওয়ামী লীগ নেতারা সফরকে সফল বলতেন। ভারত সরকার বেগম জিয়াকে একজন বড় মাপের নেতা মনে করেই খাস মেহমান হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারত সফরে গিয়েছেন। ভারতের সকল শ্রেণীর নেতাই বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেছেন এবং কুশল বিনিময় করে দুই দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছেন। উভয় পক্ষই মন খুলে কথা বলেছেন এবং সমস্যা গুলো চিহ্নিত করার চেস্টা করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বিষয়টা কোন ব্যক্তি বা দলের নয়। বিষয়টা হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ভারত চাইবে ষোলয়ানা তার স্বার্থ রক্ষা ও আদায় করতে। ৪৭ সাল থেকেই আমরা দেখে আসছি ভারত নিজেদের স্বার্থ ষোলয়ানা রক্ষা করতে গিয়ে কিভাবে অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করেছে।৪৭ সালের ভারত ভাগকে মেনে নিতে পারেননি ভারতীয় নেতারা। তাঁরা চেয়েছিলেন ভারত একটি অখন্ড দেশ থাকবে এবং সেটা তাঁরা শাসন করবেন।স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মুসলমানদের স্বার্থ কিভাবে রক্ষা পাবে। মুসলমানদের স্বার্থের বিষয়টাকে ভারতের হিন্দু নেতারা তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। তাঁরা শুধু গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের নিয়ম হলো যাঁরা মেজরিটি তাঁরা দেশ, রাস্ট্র বা সরকার চালাবেন। এ পদ্ধতিতে ভারতের মুসলমানরা কোটি বছর ধরে মাইনরিটি থাকবেন। এ ব্যবস্থা মুসলমান নেতারা মেনে নিতে রাজি হননি। তাঁরা চেয়েছিলেন ভারত একটি কনফেডারেশন হোক। সকল জাতি গোষ্ঠিই নিজেদের অধিকার বুঝে নিক।কিন্তু কংগ্রেস নেতারা কিছুতেই তা মানতে রাজি হলেননা।ফলে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী উঠলো।ভারতের নেতারা এখনও মনে করেন ভারত একটি হিন্দু রাস্ট্র,শুধু হিন্দুরাই এদেশে থাকবে। তাঁরা মনে ভারতের সকল অধিবাসীই হিন্দু নামে পরিচিত হবে। হিন্দুত্বই হবে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ভারতের অনেক গবেষক মনে করেন আদি ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।আর আদি ভারতবর্ষ হলো কম্পুচিয়া থেকে আফগানিস্তান(কম্বোজ)। চাণক্য নীতিই হবে ভারতের মূলনীতি।বিজেপি সদস্য ভগবান গিদওয়ানী তাঁর গবেষণা পুস্তক ‘রিটার্ণ অব দি এরিয়ানস’এ লিখেছেন আর্যদের আদি বাসস্থান ভারত।এখন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে আর্যরা বিশ্ব বিজয়ে বেরিয়েছিলেন। আধুনিক ইরাণী ও জার্মানরা ভারতীয় আর্যদেরই বংশধর। এটা ছিল ভগবান গিদওয়ানীর ত্বত্ত। এর সাথে ইতিহাসে কোন সম্পর্ক নেই। ৭১১ সাল থেকে ভারতে আংশিক ভাবে মুসলমান শাসনের যাত্রা শুরু হয়। ১২শ’ সালের দিকে শুরু হয় দিল্লীতে মুসলমান শাসন। ১৭৫৭ সালে বেঈমানী ও ষড়যন্ত্রের ফলাফল হচ্ছে পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতন হয়।ইংরেজ বণিকেরা বংগদেশ দখল করে নেয়।এভাবেই ইংরেজরা হিন্দুদের সহযোগিতায় সারা ভারত দখল করে নেয় ১৯৫৮ সাল নাগাদ।
শুধুমাত্র নতুন প্রজন্ম বা জেনারেশন বা সচেতন নন এমন মানুষদের জন্যেই বার বার ইতিহাসের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ হঠাত্‍ করে রাতারাতি মুসলীম মেজরিটির দেশে পরিণত হয়নি। এতে হাজার বছর সময় লেগেছে।বিদেশ থেকে বহু মুসলমান সুফী সাধক ও ধর্ম প্রচারক এসেছেন এদেশে সাধারন মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে। যাঁরা বিদেশ থেকে এসে এদেশে বসতি স্থাপন করেছেন তাঁদের কথা বাদ দিলে বাকি জনগোষ্ঠি ছিলেন শূদ্র,অচ্যুত বা হরিজন।এদের কারোরই কোন মানবিক অধিকার ছিলনা। মনু সংহিতায় এদের অর্ধ মানব বলা হয়েছে। ব্রহ্মা নাকি এই অচ্যুতজনকে সৃষ্টি করেছেন বর্ণবাদী ভারতীয় সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ক্ষমতাবান মানুষদের সেবা করার জন্যে।ফলে এ অঞ্চলের নির্যাতিত হাজার হাজার মানুষ নিজ অচ্যুতের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। যদি কেউ কোথাও জবরদস্তি করতো তাহলে আজকের ভারতে হিন্দু ধর্ম খুঁজে পাওয়া যেতনা। যেমনটি হয়েছে স্পেনে। সেখানে যুগের যুগ ধরে ক্রুসেড চলেছে মুসলমান নিধনের জন্যে। ১৪৯২ সালের পহেলা এপ্রিল মুসলমানদের বলা হলো মসজিদে আশ্রয় নিলে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। মুসলমানদের মসজিদে একত্রিত করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। সেজন্যে পহেলা এপ্রিলকে বোকা বানানোর দিন হিসাবে খৃস্টানরা পালন করে। এইতো কিছুদিন আগেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এইদিনটি আমরা পালন করেছি। কত বোকা হলে একটি জাতি বা সমাজ এ রকম আত্মঘাতি কাজ করতে পারে। এখন আমরা পশ্চিমা এবং হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির অনেক কিছুই পালন করি কোন খোঁজ খবর না নিয়ে।
মহাজ্ঞানী মহামতি আলবেরুনী তাঁর ‘ভারত তত্ব’বইতে বলেছেন,ভারতীয়দের জাতীয় চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট হলো নির্বুদ্ধিতা। নির্বুদ্ধিতা এমন একটি রোগ যার কোন চিকিত্‍সা বা ঔষধ নেই।ভারতীয়রা বিশ্বাস করে পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র তাদের দেশই শ্রেষ্ঠ।মানব জাতির মধ্যে একমাত্র তারাই সর্বোত্তম,তাদের রাজাই জগতের শ্রেষ্ঠ রাজা,তাদের ধর্মই জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, তাদের জ্ঞানই জগতের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। মুর্খের মতো নিজেদের বড় ঘোষণা করে বা জাহির করে ওরা পরম তৃপ্তি পায়। জ্ঞান বিতরেনে কার্পন্য করা ওদের স্বভাব।ভারতীয় হিন্দুদের কাছে তাদের বিশ্বাসই সবচেয়ে বড়। তাঁরা জ্ঞান বিজ্ঞান আর সাক্ষ্য প্রমানে বিশ্বাস করেনা। আলবিরুণী এসব কথা লিখে রেখে গেছেন ১০৫০ বছর আগে। ভারতবর্ষ সম্পর্কে এটাই প্রথম বিদেশীদের রচিত পুস্তক। দার্শনিক সক্রেটিসের সময় গ্রীস বা ইউনানের অবসহতাও ভারতীয়দের মতো ছিল। সেখানকার শাসকরা জনসাধারনকে শিক্ষিত করে তোলায় বিশ্বাস করতোনা। ফলে গ্রীসের সাধারন মানুষ সক্রেটিসকে চিনতে পারেনি। শাসক গোষ্ঠিও সাধারন মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যে সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সক্রেটিস গ্রহ নক্ষত্রকে ভগবান বলতে নারাজ ছিলেন। তিনি অন্ধভাবে মুর্তিপুজার বিরোধিতা করেছিলেন। তাই সক্রেটিসের বিচার হয়েছিল এবং বিচারকরা সবাই জনসাধারনের পক্ষেই ছিলেন। বিচারের রায় ছিল সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ড। ভারতে তেমন জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়নি। যদি হতো তাহলে তাকেও মৃত্যু বরণ করতে হতো। জ্ঞান অর্জন ভারতের সাধারন মানুষের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল ধর্মীয় ভাবেই।ভারতের ৩০ কোটি অচ্যুত বা হরিজন এখনও জ্ঞানার্জন বা চর্চা থেকে বঞ্চিত। ভারতীয় সংবিধানে অচ্যুতদের কোন ধরণের অধিকারই স্বীকৃত নয়। এই অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়েই নেহেরুজীর সাথে সংবিধান রচয়িতা বাবা অম্বেদকারের মতদ্বৈততা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত বাবা অম্বেদদকার হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।আসলে নেহেরুজী ছিলেন একজন মহারাজনীতিবিদ। তিনি জানতেন ও বুঝতেন চলমান ভারতীয় সমাজের বিরুদ্ধে গেলে তাঁর রাজনীতির কি হতে পারে। তাই তিনি বাবা অম্বেদকারের কথায় কান দেননি। অম্বেদকার হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করলে নেহেরুজীর কিছুই আসে যায়না। সত্যি কথা বলতে কি,নেহেরূজী তেমন ধর্ম কর্ম করতেন না ব্যক্তিগত জীবনে। জন সাধারন যেটুকুতে খুশী সেটুকু ধর্মই তিনি করতেন।বাপুজী মানে গান্ধীজী শূদ্র বা অচ্যুতদের আদর করে হরিজন নাম দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে হরিজনরা ভগবানের লোক। ভগবানই তাদের দেখাশুনা করবেন। অপরদিকে ব্রহ্মা স্বীয় মস্তক থেকে ব্রাহ্মণ সমাজের সৃষ্টি করেছেন। আর ব্রাহ্মণের পদযুগল থেকে অচ্যুতদের সৃষ্টি করেছেন। বাপুজী ঠিকই বলেছেন। ওরা সত্যিই হরিজন। আমাদের দেশেও অনেকেই মানত করে গরূ ছাগল ছেড়ে দেয়া হয়। সাধারন মানুষ ওইসব গরু ছাগলকে খোদার ছাগল বা গরু বলে থাকে। মানে যার কোন মালিকানা থাকেনা সেই খোদার।তেমনি হরিজনরাও ভগবানের সন্তান। রাস্ট্র আর রাজনীতি আজও হরিজনদের মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।হাজার হাজার বছর ধরে এই বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্থা চলে আসছে। আধুনিক রাস্ট্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হরিজনদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি।
নবীন প্রবীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠক সমাজকে একটু ধারণা দেয়ার জন্যেই এতক্ষন এত কথা বলেছি। ভারতের রাজনীতি সমাজনীতি ও কূটনীতি বুঝতে হলে ভারতকে গভীর ভাবে জানতে হবে। আমাদের দেশের রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিকরা এ বিষয়টাকে কখনই তেমন গুরুত্ব দেননি। আজও ভারত চাণক্যের রণনীতি ও কূটনীতিকে অনুসরন করে চেলেছে।বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তাঁরা চাণক্যপুরী বলেন। মৌর্য রাজনীতির প্রধান পুরুষ ও চরিত্র হচ্ছে চলমান আধুনিক ভারতের দর্শন ও আদর্শ। বাংলাদেশের পররাস্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা সরকারের নীতি কি তা আমরা আজও ভাল করে জানিনা।আওয়ামী লীগ সরকার ৭২ সাল থেকেই ভারতকেই পরম ও চরম বন্ধু হিসাবে মেনে আসছে। বিগত ৪০ বছরে বিশ্ব রাজনীতিতে বহু পরিবর্তন এসেছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেংগে গেছে। অনেক গুলো নতুন রাস্ট্রের জন্ম হয়েছে। এক সময় আমেরিকা সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম ও সমাজবাদকে প্রতিহত করার জন্যে জগতব্যাপী যুদ্ধ করে বেড়িয়েছে। আর সোভিয়েত রাশিয়া জোর করে কমিউনিজম রফতানী করার জন্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এ যুদ্ধে আমেরিকার জয় হয়েছে। রাশিয়া এখন আর বৃহত্‍ শক্তি নয়। অপরদিকে গণচীন তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে। সে দেশে নতুন নেতা হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিলেন দেং শিয়াও পিং। চীনারা এখন স্যুট পরে, কোকা কোলা পান করে, রাতে হোটেলে পশ্চিমা ধাঁচের নাচ গাণ করে। আমেরিকা চীনের সবচেয়ে বড় বিজনেস পার্টনার। চীনের জিনিষ না হলে আমেরিকার চলেনা। এখন আমেরিকা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকা লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করেছে। আমেরিকার এই মুসলমান বিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশও শরীক হয়েছে। চলমান বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে এত পরিবর্তন চলছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ভারতের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেনা।ভারতকে সমর্থন করার জন্যে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী আর মিডিয়ার অভাব নেই। ভারতের তাবেদারী করাকে অনেকেই পেশা ও আদর্শ হিসাবে নিয়েছেন।
বিগত ৪০ বছরে ভারত বাংলাদেশের কাছে যত ওয়াদা করেছে তার একটিও রক্ষা করেনি। ভারত সবচেয়ে বড় বেঈমানী করেছে বংগবন্ধুর সাথে। ওয়াদা মতো বংগবন্ধু বেরুবাড়ি ভারতকে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু ভারত আজও নানা টাল বাহানায় তিনবিঘা হস্তান্তর করেনি।সীমান্তে বাংলাদেশের বহু জমি দখল করে রেখেছে। কথায় কথায় সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। জোর করে ফসল কেটে নিচ্ছে। আইনী ও বেআইনী ভাবে ভারত বাংলাদেশে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার মাল বিক্রি করছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কোটি টাকার মালও নেয়না। বাণিজ্যের ব্যাপারে দিল্লীর সাথে চুক্তি থাকলেও নানা বাহানায় বাংলাদেশী পণ্য সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেনা।ভারতীয় চ্যানেল গুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অধিকার পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ভারতে প্রবেশ করতে পারেনা। শহরুখ খান এসে একরাতে ১০ কোটি টাকা কামিয়ে চলে যায়। ভারতীয় বই বাংলাদেশে অবাধে বিক্রি হয়, কিন্তু বাংলাদেশের বই সহজে ভারতে বিক্রি হয়না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদ মারা গেলে ভারতীয় কাগজে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। অথচ সুনীল মারা গেলে বাংলাদেশে কান্নার রোল পড়ে যায়। সুনীল বাবু নিজেই আমাকে বলেছেন, ‘দেখো এরশাদ, বাংলাদেশের লোকেরা আমায় পুজা করলে আমি কি করতে পারি’। সত্যিইতো, এতে সুনীলের দোষ কোথায়? আমাদের বড় বড় বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন,আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির সদর দফতর এখনও কোলকাতায়। ইংরেজদের আনুকুল্য পেয়ে কোলকাতা গ্রাম থেকে শহরে পরিণত হয়েছে, তারপর রাজধানী হয়েছে। ১৬০৮ সালে ঢাকা যখন রাজধানী ছিল তখন কোলকাতা ছিল একটি অতি সাধারন গ্রাম। ১৯৮৫ সালে আমি যখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পালনের জন্যে সেমিনারের আয়োজন করি তখন আমার এক মুরুব্বী বললেন,ঢাকাতো বাংগালীদের শহর নয়,এটা বিদেশী মুসলমানদের শহর।আমার এই মুরুব্বীকে বন্ধুরা অনেকেই মসকরা করে ওয়াহেদন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতো। মানুষ হিসাবে তিনি উচ্চমানের ছিলেন। কিন্তু চিন্তার জগতটা আলোকিত ছিলনা। চিন্তার জগতের বৈকল্যের কারণে আমরা আজও ঠিক করে উঠতে পারিনি আমাদের পরিচয় বাংগালী হবে না বাংলাদেশী হবে। এ নিয়ে দেশে এখন তুমুল রাজনীতি।ভারতীয় রাজ্য পশ্চিম বাংলার ডাক সাইটে রাজনীতিক শ্রদ্ধেয় জ্যোতি বাবু একবার আমাকে বলেছিলেন,‘তোমরাতো ঠিক করতে পারছোনা,বাংগালী হবে না মুসলমান হবে। এখনও তোমরা বলতে পারোনা তোমাদের পরিচয় বাংগালী না বাংলাদেশী’। আমি কোন উত্তর দিইনি,চুপ করে ছিলাম। আরেকজন বিখ্যাত ভারতীয় রাজনীতিক বলেছিলেন, ৭১ সালে তোমরা বাংগালী হওয়ার জন্যে যুদ্ধ করেছো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে,তাই আমরা তোমাদের সমর্থন দিয়েছি,সাহায্য করেছি। এখন বলছো, মুসলমান হতে চাও।এ প্রসংগে আমি বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কাছে ফিরে যেতে চাই। তিনি কেন পাকিস্তান চেয়েছিলেন তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে তাঁর আত্মজীবনীতে। সত্যি কথা বলতে কি তখনকার সকল মুসলমান নেতাই পাকিস্তান চেয়েছিলেন নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির জন্যে। ইংরেজ এবং হিন্দু জমিদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যৌথভাবে শোষণ করেছে মুসলমানদের। জিন্নাহ সাহেব নিজেই বলেছিলেন,পূর্ববাংলার নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত মুসলমানদের জন্যে পাকিস্তান বা স্বাধীনতা অপরিহার্য।একথা কখনই ভুলে যাওয়া যাবেনা যে,কতিপয় বেঈমান মুসলমান ও হিন্দু জমিদার ও বণিকের ষড়যন্ত্রের ফলেই ইংরেজরা অখন্ড বংগদেশ দখল করেছে। বাংলা ছিল সম্পদে ভরা। তাই বাংলায় লুন্ঠণ হয়েছে সবচেয়ে বেশী। এই লুন্ঠণের ফলেই বাংলা বিরাণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে। উইলিয়াম হান্টারের বইটি এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।এ কারণেই এক সময়ে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলমানদের রক্ষা করার জন্যে ঋণ সালিশী বোর্ড গঠণ করেছিলেন।
এ কথা মহাসত্য যে, পাকিস্তানী নেতাদের অদূরদর্শিতা ও গণবিরোধী ভুমিকার কারণেই পাকিস্তান টিকেনি এবং বাংগালী মুসলমানেরা আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয়েছে। যে বংগবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে জীবন বিপন্ন করে লড়াই করেছেন তিনিই বাংগালী মুসলমানের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। ভারতের অনুরোধকে উপেক্ষা করে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এতে ভারত তাঁর উপর খুবই নাখোশ ছিল। ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্তু লারমার দলকে ট্রেনিং দিয়েছে। শ্রীলংকার তামিলদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র লড়াইতে সমর্থন দিয়েছে।নেপালের রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে গোলযোগ বাঁধিয়ে রেখেছে। সিকিম দখল করে নিয়েছে। ভুটানকে করদ রাজ্যে পরিণত করেছে।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সব সময় মারমুখি হয়ে থাকে।চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ বাঁধিয়ে রেখেছে।
সুতরাং বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর এই অঞ্চলের ভূ রাজনীতিতে তেমন পরিণত আসবে বলে আমার মনে হয়না।ভারত বাংলাদেশে বন্ধু সরকার চায়। ভারত তার সুদীর্ঘ কালের বন্ধু রাশিয়াকে ত্যাগ করে আমেরিকাকে বন্ধু বানিয়েছে। আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহারের চেস্টা করছে। আওয়ামী লীগ ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। সমঝোতা হয়েছে ৭১ সালে,যখন বাংলাদেশের তথা আওয়ামী নেতাদের ভারতের নির্দেশ মানা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। বংগবন্ধু ভারতে যাননি ইচ্ছা করেই। আর যাননি বলেই তিনি মুজিব নগর সরকারের সই করা সকল চুক্তি মানতে রাজী হননি। হতে পারে ভারত বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিতানো যাবেনা। তাই ভারত হয়ত নিজেদের কল্যাণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মিত্র খুঁজছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়া বহুদিন ধরে খালেদা জিয়া ও তাঁর দলকে ভারত বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে আসছে। ভারত বাংলাদেশের কাছে থেকে সব সময় তার স্বার্থ আদায় করতে চাইবে। এতে আমি কোন অন্যায় দেখিনা। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশ বন্ধুত্বের দ্বারা নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে কিনা। শক্তভাবে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গেলেই মিডিয়া গুলো মিডিয়া গুলো বলতে শুরু করবে বাংলাদেশ ভারত বিরোধী হয়ে গেছে। ভারতের সমালোচক লেখক কবি সাংবাদিকদের ভারত মৌলবাদী আখ্যায়িত করে, ভারত সফরের জন্যে ভিসা দেয়না। ভিসা পাওয়ার জন্যে আমরা অনেক সময় ভারতপন্থী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতা গ্রহন করে থাকি। স্যেকুলারিজমের নামে বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক অন্ধ ভাবে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে। ভারত কখনই স্যেকুলার দেশ বা রাস্ট্র ছিলনা। হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই। হাবভাব দেখে মনে হয় মুসলমান বা ইসলামিস্টরা কখনই স্যেকুলার হতে পারেনা।
আওয়ামী লীগ ও তার নেতারা খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে সতীনের দৃষ্টিতে দেখছে। হাবভাব হলো আমরাতো ভারতের জন্যে ৪০ বছর ধরেই কাজ করছি।এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর কোথায় পাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে, ভারত বিএনপির সাথে বন্ধুত্ব করলো আওয়ামী লীগের সাথে বেঈমানী করবে। দুয়েক জন বলেই ফেলেছেন,খালেদা জিয়া মুখে বললেও অন্তরে কখনই ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চায়না।

Read Full Post »


১৬ই অক্টোবর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর / এরশাদ মজুমদার

আমাদের প্রিয়তম কবি রবীন্দ্রনাথ ১৬ই অক্টোবরকে রাখী বন্ধন দিবস ঘোষণা করেছিলেন। কারণ,১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বৃটিশ সরকার তার প্রশাসনিক সুবিধার জন্যে পূর্ববংগ ও আসামকে নিয়ে নতুন প্রদেশ পূর্ববংগ আসাম প্রদেশ ঘোষণা করেছিলেন। রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক,যে কোন কারণেই হোক বৃটিশ সরকার নতুন প্রদেশ গঠণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এতে মুসলমানদের কোন চেস্টা তদবীর ছিলনা। নতুন প্রদেশের রাজধানী হয়েছিল ঢাকা। উল্লেখ্য যে,১৬০৮ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে সুবেহ বাংলার( অখন্ড বংগদেশ, বিহার ও উড়িষ্যা) রাজধানী করেছিল দিল্লীর মোঘল সরকার। প্রথম সুবেদার ইসলাম খান। সুবেদার মুর্শিদ কুলী খান বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যান। রাজধানী স্থানান্তরের বিষয়টাকে রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও নিরাপত্তার দিক থেকে সমীচীন মনে করেননি। কিন্তু মুর্শিদ কুলী খান ঢাকার দেওয়ান বা নবাবের কাছ থেকে হুমকি অনুভব করছিলেন। তাই তিনি দিল্লীর দরবারকে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রাজধানীকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যান। অনেকেই মনে করেন, রাজধানী যদি ঢাকায় থেকে যেতো তাহলে ১৭৫৭ সালে ইমরেজদের কাছে বাংলার পতন হতোনা।
কবিগুরু রাখী বন্ধন দিবসটি চালু করেছিলেন বংগভংগের প্রতিবাদে। হয়ত তাঁর জমিদারীর ৮০ ভাগই পূর্ববংগে থাকায় তিনি নতুন প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করেছিলেন। শুধু কবিগুরুর নাম উল্লেখ করছি এ কারণে যে , তিনি আমাদের কাছে বহুল পরিচিত একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। ১৭৫৭ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪৮ বছরে পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা নির্যাতিত ও শোষিত হতে হতে প্রায় সর্বহারায় পরিণত হয়েছিল। ইমরেজ শাসনে সরকারী ভাষা ফার্সীর পরিবর্তে ইংরেজী হওয়ার ফলে মুসলমানেরা সরকারী চাকুরি থেকে বহিষ্কৃত হয়। কিন্তু হিন্দু সমাজপতিরা ইমরেজদের সহযোগিতা করতে শুরু করে মুসলমানদের জমিদারী গুলো আস্তে দখল করে নেয়। এ প্রসংগে আমি উইলিয়াম হান্টারের ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস’বইটির কথা উল্লেখ করছি। এছাড়া বহু বৃটিশ লেখক ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেছেন যে, ইংরেজ শাসনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার মুসলমানেরা। ইংরেজ আমলে মুসলমানেরা ইংরেজ ও হিন্দু জমিদার সমাজপতিদের দ্বিমুখী শোষণের কবলে পড়েছিল। ১৯৩৬ সালে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববংগের মুসলমানদের অবস্থা দেখে বলেছিলেন, বাঁচার জন্যে, শোষণ মুক্তির জন্যে পুর্ববংগের মুসলমানদের জন্যে স্বাধীনতা অপরিহার্য। পূর্ববংগ ও আসাম প্রদেশ সৃষ্টি ছিল এ অঞ্চলের মুসলমানদের শোষণের অফিসিয়াল স্বীকৃতি। কিন্তু বড়ই দু:খ ও পরিতাপের বিষয় হিন্দু সমাজপতিরা মুসলমানদের এ নতুন অগ্রযাত্রাকে মেনে নিতে পারেনি এবং মুসলমানের স্বার্থ বিরোধী বংগভংগ আন্দোলন শুরু করলো। সকল হিন্দু জমিদার ও সমাজপতিরা এ আন্দোলনে অংস গ্রহণ করেছে। এ সময়ে তাঁরা সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুরু করেন, যে আন্দোলনকে তাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়েছে। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনটি তখনও ছিল বংগভংগ বিরোধী আন্দোলন। কবিগুরু ঘোষণা দিয়েছিলেন, যতদিন বংগভংগ বাতিল না করা হবে ততদিন ১৬ই অক্টোবর রাখী বন্ধন দিবস হিসাবে পালিত হবে। বংগভংগ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনার জন্যে যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন,মহারাজা সূর্যকান্ত, মহারাজা মণীন্দ্র নন্দী, মহারাজা টি পালিত, মহারাজা জানকী রায়, গজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সন্তোষ ব্রাদার্স, দিঘাপতিয়ার মহারাজা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নাটোরের মহারাজা। ঠিক এই সময়ে জমিদারদের উসকানীতে পূর্ববংগের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু মুসলমান দাংগা বাঁধানো হয় ঈস্বরগঞ্জ, কুমিল্লা, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জে। অনুশীলন ও যুগান্তরের সন্ত্রাসীরা এই দাংগায় অংস গ্রহন করে। ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন,১৯০৭ সালের ময়মনসিংহের জামালপুরের দাংগার সময় যুগান্তর দলের ইন্দ্রনাথ নন্দী, শ্রীশ ঘোষ, বিপিন গাংগুলী, সুধীর সরকার যখন বন্দী হয় সেখানকার জেল সুপার আমাদের দলের লোক ছিলেন। আমি জামালপুর গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাত করি। তিনি বল্লেন, মশাই দেশের কাজ ও সরকারী চাকুরী একই সংগে রাখা যায়না। জেলখানায় সহযোগীদের সাথে দেখা করতে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে আসুন। আমি ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি এনে দিলাম এবং বন্ধুদের সাথে দেখা করলাম। এই সন্ত্রাসবাদী ও দাংগাবাদী আন্দোলনকে তখন ভারতীয় কংগ্রেস সমর্থন করেছিল।

১৬ই অক্টোবরের মাধ্যমেই পূর্ববংগের আলাদা অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের জন্যে বিশেষ করে পূর্ববংগের মুক্তির জন্যে একটি আলাদা ভৌগলিক এলাকার প্রয়োজন তা স্বীকৃতি লাভ করলো। তারই ফলশ্রুতি হলো ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট এবং ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর আর ৭১এর ১৬ই ডিসেম্বর একই সূত্রে গাঁথা। ইতিহাসের প্রয়োজনেই উল্লেখ করা দরকার যে, ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত এই একশ’ বছর ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একক স্বাধীনতা যুদ্ধ। যা হিন্দু এবং ইংরেজরা যৌথভাবে মোকাবিলা করেছে। ভারতের একজন বড়লাটকে হত্যা করেছেন একজন মুসলমান শের আলী খান। এ তথ্য এবং সত্যটা এ দেশের বহু শিক্ষত লোক জানেননা। আমরা সবাই জানি বড়লাটকে হত্যা করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম ফাঁসীতে গিয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় এ রকম আরও বহু তথ্য আছে একেবারেই সত্য নয়। আমি নিজেই বাল্যকালে শুনেছি মুসলমানেরা ভারতের স্বাধীনতায় তেমন ভুমিকা পালন করেনি বরং অনেক ক্ষেত্রে ইংরেজদের তাবেদারী করেছে। ১৮৫৮ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রধান ভুমিকা পালন করেছে মুসলমানেরা। এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। ধরা পড়ে তিনি রেংগুনে নির্বাসনে যান এবং সেখানেই নি:সংগ বন্দী অবস্থায় মারা যান। সুভাষ বসুর সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাকে সবচেয়ে বেশী সাড়া দিয়েছে মুসলমানেরা। হিন্দুদের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের কারণে ১৯১২ সালে বংগভংগের আদেশ রহিত হয়। ঢাকা আবার বিভাগীয় শহরে পরিণত হয়। ১৯০৫ সালের লাল বিল্ডিং গুলো এখনও প্রাদেশিক রাজধানীর স্মৃতি হয়ে পড়ে আছে। কার্জন হল তার প্রধান ফলক। আমাদের প্রিয় ঢাকা তিনবার রাজধানী হয়। প্রথমবার ১৬০৮ সাডে যখন কোলকাতা ছিল একটি গ্রাম। ১৯০৫ সালে দ্বিতীয় বার প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে তৃতীয়বার পাকিস্তানের প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয়। ১৯৭১ সালে শেষবারের মতো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাস্ট্রের রাজধানী হয়।

পূর্ব বাংলার বাংগালী মুসলমানদের স্বাধীন জাতিসত্তা গড়ার বা বিকাশের বিরোধীতা হিন্দু সমাজপতিরা সব সময় করে এসেছেন। বংগভংগের পর ১৯১২ সালে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব এলে কবিগুরু আবারও এর বিরোধীতা করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আমি নিজেও সত্যিই ভেবে পাইনা কবিগুরুর মতো একজন মানুষ কেমন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করতে পারেন। তিনি বেঁচে থাকলে এর ব্যাখ্যা দিতেন জানিনা। যদি তাঁকে কবি হিসাবে না দেখে যদি একজন জমিদার হিসাবে দেখি তাহলে হয়ত একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে। কারণ সকল জমিদারই চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষ লেখাপড়া না করে অশিক্ষিত থেকে যাক এবং শত শত বছর ধরে জমিদারদের খেদমত করুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় সময় বলা হয়েছিল এতা মক্কা ইউনিভার্সিটি হবে। হিন্দু জমিদার ও প্রভাবশালীদের বিরোধীতা সত্তেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জমিদার রবীন্দ্রনাথ সম্বর্ধনা গ্রহণ করেছেন। অখন্ড বংগদেশে মুসলমানরা ছিল মেজরিটি। কিন্তু ইংরেজদের ষহযোগিতায় হিন্দুরা ছিল ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী। এ যেন এক সাউথ আফ্রিকা। মাত্র ১৫ ভাগ সাদারা শাসন করতো ৮৫ ভাগ কালোদের। সেই স্বাধিকার আন্দোলনেই বিশ্ব মানব নেলসন ম্যান্ডেলা ২৬ বছর জেল খেটেছেন। শোষণ শাসনের আগ্রহ থেকেই বংগদেশের হিন্দু সমাজপতিরা মেজরিটি মুসলমানকে নিজেদের অধীনে দাস হিসাবে রাখতে চেয়েছিল। এক ধরনের ভোটাধিকার নির্বাচন শুরু হলে সংসদে মুসলমানরাই মেজরিটি ছিল এবং সরকার গঠন করে। প্রথম তিনজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

অবাক বিস্ময়ের বিষয় হলো,১৯০৫ সালে যে হিন্দুরা বংগভংগ আদেশ বাতিলের জন্যে যে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন করেছিল তারাই ১৯৪৭ সালে বংগভংগ করার জন্যে উঠে পড়ে লাগলো। কারণ একই,অবিভক্ত বা অখন্ড বাংলাদেশে তারা মুসলমানদের অধীনে হয়ে যাবে। স্বাধীন সার্বভৌম অখন্ড বাংলাদেশের প্রস্তাবকে হিন্দুরা সমর্থন করেনি। বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগ করার জন্যে হিন্দু নেতারা টু নেশন থিউরী বা দ্বিজাতি তত্বের সমর্থক হয়ে গেল। বাপুজী আর নেহেরুজী বলেই দিলেন কোলকাতা ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা তাঁরা মেনে নিবেন না। ১৯৪৬ সালের ২৭শে এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী সাহেব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তাব যৌথভাবে পেশ করেন শরত্‍ বসু,কিরণ শংকর রায় ও সোহরাওয়ার্দী। প্রস্তাবটি ছিল নিম্নরূপ:
১। বংগদেশ একটা স্বাধীন রাজ্য হবে যা ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যের সংগে নিজের সম্পর্ক স্থির করবে। বিধান সভার ভোট গণনায় দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা না পেলে তার ভারত বা পাকিস্তান কারো সংগে যোগ দেয়া উচিত হবেনা।
২। প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের ভিত্তিতে বিধানসভায় নির্বাচন হবে। বিধান সভায় দুই সম্প্রদায়ের জন্য রক্ষিত আসনের সংখ্যা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার হিসাবে স্থিরিকৃত হবে,কিন্তু নির্বাচক মন্ডলী যুক্ত হবে। কিন্তু গান্ধীজী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন পরোক্ষ ভাবে। জিন্নাহ সাহেব বলেছিলেন,বাংলার হিন্দু মুসলমান যদি রাজী থাকে তাঁর কোন আপত্তি নেই। গান্ধীজী বললেন, বাংলার দুই তৃতীয়াংশ হিন্দু অখন্ড বংগদেশে রাজী থাকতে হবে।
তাই আজও সবার প্রশ্ন, ১৯০৫ সালে কবিগুরু সহ হিন্দু নেতারা কেন বংগভংগ বিরোধী ছিলেন? আবার ৪৭ সালে কেন বংগভংগ করতে রাজী হয়ে গেলেন? আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কি এ বিষয়ে কখনও চিন্তা করেছেন? না, করেননি। কেমন করে করবেন? তাঁদের কাছেতো ৭১ এর আগের বাংগালী মুসলমানের কোন ইতিহাস নেই। আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পেছনে মুসলমানদের এক হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। এক হাজার বছরেই তিল তিল করে মুসলমানরা নিজেদের ইতিহাস ঈতিহ্য ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। এর আগে এই ভৌগলিক এলাকাটি ছিল অচ্যুত নির্যাতিত ও শোষিত মানব জাতির দেশ। মহাভারত, রামায়ন ও মনু সংহিতা পাঠ করলেই বুঝা যাবে এখানে কারা বাস করতো। এই অঞ্চলে বাংলা ভাষাকেও প্রতিষ্ঠিত করেছে মুসলমানেরা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টিভিতে মধ্যরাতে যে টকশো হয় হয় তাতে নাকি আওয়ামী লীগের গলাকাটা হয়। টিভিতেও দেখলাম,প্রধানমন্ত্রী হাত দিয়ে নিজের গলা দেখিয়ে গলাকাটার কথা বললেন। টকশো প্রসংগে কিছু বলার আগে তিনি খালেদা জিয়ার প্রসংগ নিয়েও দুটো কথা বলেছেন। খালেদা জিয়া আর বিএনপি সম্পর্কে কিছু বলতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর কথায় জোশ আসেনা। বিষয়টা এক ধরণের ভিটামিন বা এলিক্জারের মতো। এ প্রসংগে একটি কৌতুক বা জোকের কথা মনে পড়ে গেল। পাকিস্তানের এক সেনা শাসকের চুল কাটার সময় তাঁর নাপিত বা নরসুন্দর বিরোধীদলের প্রসংগ তুললেই ওই শাসকের মাথার চুল খাড়া হয়ে যেতো আর নাপিতের চুল কাটতে সুবিধা হতো। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরও হয়ত মনো জগতে তেমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি হয়ত বিরোধী দলের কথা ভাবলেই ভালো ভাষণ দেয়ার জন্যে বেশ শক্তি পান। সেদিক থেকে ভাবলে আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই অধিকার বা স্বাধীনতা থাকা দরকার। আমি মধ্যরাতের টকশো দেখার বা শোনার কোন সুযোগ পাইনা। মধ্যরাত পর্যন্ত আমি এখন আর জেগে থাকতে পারিনা। প্রতিরাতে যথা সময়ে শুতে চলে যাই। কারণ, আমাকে খুব ভোরে উঠতে হয়। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য মসকরা করে বলেছেন, মধ্যরাতে ঘর থেকে কারা বের হয় তা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। অনেকেই বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা কম বললে তাঁর নিজের এবং দলের জন্যে ভাল হতো। তাঁর উপদেস্টারা বলেন, আমরা নিয়মিতই তাঁকে কম কথা বলার জন্যে পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু তিনি কথা না বলে থাকতে পারেননা। ছোট খাট অতি তুচ্ছ বিষয়েও তিনি কথা বলেন। মধ্যরাতের টকশো নিয়ে তিনি অনেক কথা বলে ফেলেছেন। মিডিয়ার মালিকরা এখন বড়ই ধনী। ব্যবসার স্বার্থে তাঁরা অনেক কিছু চাইতে আসেন, না দিলে গোস্বা হয়ে যান। হয়ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুবই সরল,মনে কোন রাগ পুষে রাখেননা, তাই মনে খুলে সব কথা বলে ফেলেন। কোনটা তাঁর জন্যে ভাল,আর কোনটা মন্দ তা ভেবে হয়ত তিনি কথা বলেননা। হয়ত এসব কথার কথা, তিনি তেমন গুরুত্ব দেননা।
এখন মিডিয়ার মালিকদের ৮০ ভাগই প্রধানমন্ত্রীর দলের বা পছন্দের লোক। তাঁরা সকলেই আওয়ামী লীগের আনুকুল্যে বা ভালবাসা পেয়ে ধনী হয়েছেন। আর ধনী হয়েছেন বলেই তাঁরা বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং আগামীতেও করবেন। রাজনীতিতে, সমাজনীতি, অর্থনীতিতে নাকি এখন মিডিয়ার গুরুত্ব খুবই বেশী। তাই এত পত্রিকা, এত টেলিভিশন,এত অনলাইন বা ইন্টারনেট পত্রিকা। এইতো দেখুন না, বাংলাদেশের অজানা অচেনা অনলাইন পত্রিকা ব্লিত্‍স পাকিস্তানের পররাস্ট্র মন্ত্রী হিনা রাব্বানী ও বিলাওয়াল ভুট্টোর জবরদস্ত প্রেম কাহিনী প্রকাশ ও প্রচার করে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। ভারত বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া গুলো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোন মিডিয়া ব্লিত্‍সে বা এর মালিক সম্পাদকের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। কে ব্লিত্‍সে এর মালিক? কই, কেউ এ ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি। সাগর-রুনি হত্যার ব্যাপারে সরকার কেন এতো বিলম্ব করছে, কেনইবা এত নাটক? এতে সরকারের কি স্বার্থ থাকতে পারে? এটা যদি আর দশটা খুনের ঘটনা হয়ে থাকে তাহলেতো রাখ ঢাকের কোন কিছুই নেই। রাখ ঢাক করাতেই দেশের মানুষ মনে করছে এই খুনের সাথে রুই কাতলা রাঘব বোয়ালরা জড়িত আছেন। যাদের সাথে সরকারের ও মিল মহব্বত আছে। দেশের রাজনীতি নিয়েও কেউ কথা বললে প্রধানমন্ত্রী তাঁর চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করেন। তাঁকে ব্যাক্তিগত ভাবে আক্রমণ করেন। আমরা অতীতেও দেখেছি যখন কোন সরকার বা সরকার প্রধান স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন তখন তিনি বা তাঁহারা মিডিয়া, কথা বলার অধিকারকে সহ্য করতে পারেন না। এইসব স্বৈরাচার কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, নির্বাচনের কথা বলেন। সিভিল ডিক্টেটর গণ সামরিক ডিক্টেটরদের চেয়েও অনেক বেশী অত্যাচারী হয়ে উঠেন। ফিলিপাইনের মার্কোস, ভারতের নেহেরু এবং বাংলাদেশের বংগবন্ধু। নির্বাচনের নামে নেহেরুজী ২০ বছর ভারত শাসন করেছেন। মার্কোস তিরিশ বছরের মতো দেশ শাসন করেছেন। পরে অন্দোলনের মুখে মার্কোস দেশ ত্যাগ করেছিলেন। বংগবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন করেছেন। সেই সাড়ে তিন বছরে তিনি প্রমান করেছেন যে, তিনি সুশাসক নন। সত্যি কথা বলতে কি তিনি কখনই নিজেকে কখনই একজন সুশাসক হিসাবে গড়ে তুলেননি। এ কথা সত্যি যে, তিনি মানুষকে ভালবাসতেন এবং মানুষের সমস্যায়,বেদনায় ও দু:খে তাঁর মন কাঁদতো। কিন্তু সমস্যা সমাধানের পথ জানতেন না। ফলে আমলা ও দলের দুষ্ট লোকেরা তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। তিনি তাঁর আশে পাশের লোকজনকে অতি আপন জন মনে করতেন। ফলে তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসন আমল একেবারেই সুখের ছিলনা। তিনি সংবাদপত্রের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে তা বন্ধ করেছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের কবর রচনা করে এক দলীয় আসন জারী করেছিলেন। অথচ এই গণতন্ত্রের জন্যে সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তাঁর আমলেই দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। তাঁর আমলেই হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছে। সরকারী আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর নির্ভর করতে না পেরে রক্ষী বাহিনী তৈরি করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক সচীব তোফায়েল সাহেবকে সেই বাহিনীর প্রধান করেছেন। এখন বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা মিডিয়ার উপর চটে গেছেন। মিডিয়াকে তিনি আর ষহ্য করতে পারছেন না। সংসদের দুই তৃতিয়াংশ মেজরিটি থাকার কারণে তিনি অনেক গুলো ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন। বংগবন্ধুও এ কাজ করেছিলেন। আমরা যারা লিখি কেউই বংগবন্ধু বা তাঁর কন্যার শত্রু নই। আমরা শুধু ঘটনা বা পরিস্থিতি বা পরিবেশের বিশ্লেষণ করি। আমাদের দৃষ্টভংগী ভুলও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন,তাঁর সরকার অনেক ভাল কাজ করেছেন। নিশ্চয়ই তাঁর সরকার অনেক ভাল কাজ করেছেন। ভাল কাজ করাইতো সরকারের কাজ। জনগণ ভোট দিয়েছেন ভাল কাজ করার জন্যে। জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করা সরকারের কর্তব্য। ভাল কাজ করার ওয়াদা করেই রাজনৈতিক দল গুলো ক্ষমতায় আসে। আসার পর কি সব কাজ করতে পারে? না পারেনা। আমাদের মতো দেশে নানা সমস্যা আছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কাজ করা যায়না। নিয়মিত কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন ভাল কাজ নয়। সেজন্যেতো সরকার জনগণের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। সরকার মানেতো জমিদারীর নায়েব। খাজনা আদায় করবে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করবে। ষে সরকার এ কাজটা ভাল ভাবে করতে পারেনা সে সরকার ভাল সরকার নয়।
আমরাতো বলছি, মানবাধিকারের কথা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা, সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচনের কথা। সর্বোপরি সীমাহীন দূর্ণীতির কথা। সারা বিশ্বই জানে বাংলাদেশে দূর্ণীতি হয়, কম আর বেশী। এদেশে পুলিশ, শুল্ক ও কর বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ঘুষ নেয়। এটা দেশের মানুষ প্রায়ই মেনে নিয়েছে। পুলিশ ঘুষ খায় এটা এখন আর কোন খবর নয়। বরং একজন পুলিশ খায়না সেটাই খবর। ইদানিং বাজারে জোর গুজব এক শ্রেণীর সাংবাদিক পুলিশের কাছ থেকে নানা ধরণের গিফট নেয়। তবে আমি এটা বিশ্বাস করিনি। হতে পারে সাংবাদিক ও পুলিশরা সামাজিক সুযোগ সুবিধা শেয়ার করে নিচ্ছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় ‘শেয়ারিং স্যোসাল অপরচুনিটিজ ইজ অলসো এ কনসেপ্ট’। ইদানিং ‘কর্পোরেট স্যোসাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর ) সরকারের বিরাট হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।পাঠক সমাজ নিশ্চয়ই খবরের কাগজে নিয়মিত পড়ে থাকেন অমুক ব্যান্ক বা অমুক গ্রুপ প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জনসেবার জন্যে কোটি টাকা দান করছেন। কিন্তু কোন দরিদ্র মানুষ যদি কোন রকমে তাদের দুয়ারে যায় মেয়ে বিয়ে বা ছেলের পড়ার খরচের জন্যে তাদের ভাগ্যে তেমন কিছু জোটেনা। কারণ,ওসব ছোট খাট সাহায্যের ছবি কাগজে ছাপা বা টিভিতে দেখানো হয়না। এছাড়া ওই গরীব মানুষতো ধনী সাহায্যদাতার কোন উপকার করতে পারবেনা। যেমন ধরুণ,হলমার্ক গ্রুপের কেলেংকারীর ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার আগে এ রকম বহু সিএসআর এর কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে। বিনিময়ে গ্রুপ বা কর্পোরেট হাউজ গুলো সরকারের কাছে থেকে সীমাহীন সাহাযা বা সমর্থন আদায় করে নেয়। ডেসটিনি বা যুবকের ঘটনাও একই রকম। সামান্য একটু পার্থক্য আছে। যুবকের চেয়ারম্যান সেনাবাহিনী প্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। যুবকের সবচেয়ে বড় দোষ ছিল তারা নাকি ইসলামপন্থী ছিলো। তাই বাংলাদেশ ব্যান্কের বামপন্থী চিন্তাধারার অফিসারেরা যুবকের কল্লা কাটার কাজে নেম পড়েছিলেন। তাঁরা ভাবতে পারেননি যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ডেসটিনির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সেনাপতিকে হাতে লোহার বেড়ি পরতে হবে। আমাদের দেশের সেনাপতিরা প্রায়ই বড় বড় গর্হিত কাজ করে ফেলেন। যেমন মুক্তিযোদ্ধা সেনাপতি নাসিম বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ক্যূ করতে গিয়ে চাকুরী হারিয়েছিলেন। অবসর প্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তাজুল সাহেবও একই দোষে দোষী ছিলেন। তাই এখন তিনি মন্ত্রীর পদ লাভ করে পুরষ্কৃত হয়েছেন। কোন এক অদৃশ্য শক্তির পরামর্শে সেনাপতি মঈনও ক্ষমতা দখল করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করে দেশ ত্যাগ করেছেন। তিনি আজও দেশে ফিরে আসতে পারছেননা। একইভাবে আমেরিকার নাগরিক ফখরুদ্দিন সাহেবও প্রধান উপদেষ্টার চাকুরী করে বিদেশে পালিয়ে আছেন। সকল শাসকই যখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তখন আর মিডিয়াকে সহ্য করতে পারেননা। এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা চৌধুরী সা্হেব বলেছেন, মিডিয়া সরকারের ভাল কাজ গুলো নিয়ে লিখছেনা। পদ্মাসেতুর মতো একটি ভাল কাজও প্রধানমন্ত্রী শুরু করতে পারেননি। তার আগেই দেশে বিদেশে নানা কেলেংকারী। জনগণের দোর গোড়ায় বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া একটি ভাল কাজ, কিন্তু কুইক রেন্টালের দূর্ণীতিতে সে কাজটাও মন্দ হয়ে গেছে। সারা দেশে গ্যাসের দূর্ভিক্ষ। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে মানুষ গ্যাস ও বিদ্যুত পাচ্ছেনা। এরকম গ্যাস-বিদ্যুত দুর্ভিক্ষ এর আগে কখনই ছিলনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিনই বলছেন তাঁর সরকার গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ বাড়িয়েছেন। প্রতিদিন লোক বাড়ছে, সকল বিষয়েই চাহিদা বাড়ছে। সরকার ঢোল পিটাচ্ছেন বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে সাথে কিন্তু মুদ্রা স্ফিতি, জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে জিডিপি সাত পারসেন্ট হলেও তার সুফল পাওয়া যায়না।

Read Full Post »

Older Posts »