কানেক্টিভিটি নিয়ে ২৭শে জুন বিকেলের দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ইকনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ( ইআরএফ ) একটি আলোচনা সভা আয়োজন করেছিল। আলোচনায় অংশ গ্রহনকারীরা সবাই ছিলেন ইআরএফ এর সদস্য। কানেক্টিভিটির পক্ষে জোর যুক্তি প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রির বিদেশ বিষয়ক উপদেস্টা ড: গওহর রিজভী, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মজিবুর রহমান ও বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক ড: কে এ এস মুর্শিদ। অতি অল্প সংখ্যক ইআরএফ সদস্য প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আলোচনাটা শুনে আমার মনে হয়েছে সরকারের পক্ষে তিনজন উকিল ছিলেন যাঁরা কানেক্টিভিটির পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। ভিন্নমত পেশের জন্যে সেখানে কেউ ছিলেন না। আয়োজকরা অনুস্ঠানটাকে সেভাবেই সাজিয়েছেন। সোজা কথায় বলা যায়, কানেক্টিভিটি সম্পর্কে এক তরফা সরকারী মত প্রচারের জন্যে একটা সুযোগ করে দেয়া। চলমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কানেক্টিভিটি নিয়ে নিয়মিত প্রচুর কথা হচ্ছে। সরকারী দল, মন্ত্রীসভা, সরকারি বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সবাই মিলে একটা ড্রিম মেশিন তৈরী করেছেন। ওই মেশিনের ভিতর আপনি ঢুকুন, দেখতে পাবেন একটা স্বপ্নের জগত। ভাবতে থাকবেন এটা কোনদেশ? বাংলাদেশ না ইউরোপের অন্যকোন দেশ। বাল্যকালে আমরা একটা বাক্সের ভিতর মুখ ঢুকিয়ে নানা রংয়ের ছবি দেখতাম আর বাক্সওয়ালা সেই ছবির ধারা বিবরনী দিতো। এখন বড় হয়ে আওয়ামী লীগের ড্রিম মেশিন দেখার সুযোগ পাচ্ছি।
ড্রিম মেশিন সিনেমার পরিচালক জনাব গওহর রিজভী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ বিষয়ক উপদেস্টা। খুবই বিদ্বান ব্যক্তি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। বহুদিন কাজ করেছেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের হয়ে দিল্লীতে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন ভারতের বুদ্ধিজীবীদের জন্যে। সাংবাদিক বন্ধুদের যাকেই জিজ্ঞাসা করি জনাব রিজভী সম্পর্কে সবাই বলেন তিনি একজন জ্ঞানী গুণী মানুষ। অবাক হয়ে জানতে পারলাম সাংবাদিক বন্ধুরা কেউ তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তিনি বাংলাদেশের লোক কিনা, কোথায় লেখাপড়া করেছেন, কার ছেলে , কার নাতি। আমিতো মনে করি এসব জানা সাংবাদিকদের জন্যে অপরিহার্য। কারণ তিনি আমাদের দেশের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী মর্যাদার উপদেস্টা। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ভাল করে চিনেন। অথবা প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসী পুত্র জয় না হয় বোন শেখ রেহানা তাঁকে চিনেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘকাল দিল্লীতে কাজ করেছেন নিশ্চয়ই দিল্লী জনাব রিজভীকে ভাল করে চিনেন। দিল্লীর সুপারিশেও তিনি একজন এক্সপার্ট হিসবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। তাছাড়া নিশ্চয়ই বাংলাদেশে জনাব রিজভীর কোন কানেকশন আছে। ইন্টারনেট সার্চ করে যা জানা গেছে তা হলো তিনি একজন আন্তর্জাতিক সমস্যা নিরাময়কারী। বিশ্বব্যাপী ঘুরে ঘুরে গণতন্ত্রের জন্যে কাজ করেন। কিছুদিন আগে কাজ করেছেন আফগানিস্তানে। সেখানে আমাদের দেশের স্যার আবেদ সাহেবের ব্র্যাকও কাজ করে।এর আগেও আমাদের দেশে অনেক বিদেশী নাগরিক মন্ত্রী মর্যাদায় কাজ করে গেছেন। এমন কি কেয়ার টেকার সরকারের প্রধান ফখরুদ্দিন সাহেবও বিদেশে থাকতেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব ফখরুদ্দিন ও মির্জা আজিজকে দেশে এনে চাকুরী দিয়েছিলেন বিশ্বব্যান্ক ও আইএমএফ এর অনুরোধে। এরা দুজন ছিলেন ১/১১ সরকারের হর্তাকর্তা ও কলকাঠিওয়ালা। এদের মূল আনুগত্য হলো বিদেশে। তবে এরা দুজনই দেশে খুবই পরিচিত। প্রায় সবাই তাঁদের চিনেন। ফখরুদ্দিন বিদেশে চলে গেছেন, যেমন আগেও তিনি বিদেশে থাকতেন। মির্জা সাহেব এখনও আছেন। রিজভী সা্হেবের সমস্যা হলো তাঁকে ভাল করে কেউ জানেনা। তিনি হঠাত্ করে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে সরাসরি গদিনশীন হয়ে উপদেশ দিতে শুরু করেছেন। তাঁর সবকিছু একজন প্রচারকের মতো। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর। কথা বলে খুবই সুন্দর। যুক্তিশক্তিও খুব ভাল। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। রিজভী সাহেবের ড্রিম মেশিন জাতিকে ইতোমধ্যে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন, একেবারে হিসেব নিকেশ করে কড়ায় গন্ডায়। সোজা ভাষায় বলতে হবে রিজভী সাহেবের কথা শুনলে বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলা হবেই হবে। প্রসংগত মনে পড়ে গেল ৭২ বা ৭৩ সালের দিকে টিসিবি কর্তৃক ভারত থেকে আমদানীকৃত সুন্দরী/সোনার বাংলা ( অন্যকোন নামও হতে পারে ) শাডী নিয়ে জাতীয় সংসদে রসালো আলোচনা হয়েছিল। তখন কামারুজ্জামান(হেনা সাহেব) ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।তিনি খুব রসিকলোক ছিলেন। মুখে সব সময় পান থাকতো। খুব রসিয়ে রসিয়ে কথা বলতে পারতেন। ওই শাড়ী লম্বায় ছিল দশ হাত। ধোয়ার পর হয়ে গিয়েছিল নয় হাত। শাড়ীটি ছিল খুবই স্বচ্ছ বা ট্রান্সপারেন্ট। সবকিছুই দেখা যেতো। ভারত বন্ধুদেশ হিসাবে ভালবেসে বাংলাদেশকে ওই শাড়ী দিয়েছিল। সংসদে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন নোয়াখালীর কচি ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি খুবই সুন্দরী ছিলেন। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে হেনা সাহেব বলেছিলেন, ধন্যবাদ মাননীয়া সংসদ সদস্যা, আমি এখনও সুন্দরীদের পরখ করে দেখিনি। মাননীয় স্পীকার, পরখ করে দেখার পর আমি এই মহান সংসদকে জানাবো। হেনা সাহেবের এই উত্তরে সংসদে হারির রোল পড়ে গিয়েছিল। ভারতের এই সুন্দরী নাটক সম্পর্কে জনাব রিজভী হয়ত জানেন না। প্রাচীন ভারত , মধ্য যুগের ভারত এবং আধূনিক ভারত সম্পর্কে নিশ্চয়ই রিজভী সা্হেবের প্রচুর লেখাপড়া আছে বলে আমি মনে করি। ভারততো ৬০ বছর ধরেই প্রতিবেশীর ঘরে জোর করে ঢুকেই সাহায্য ও সহযোগিতা করতে চাইছে। কি কারণে যে , প্রতিবেশীরা এসব সাহায্য সহযোগিতা নিতে পারছেনা তা হয়ত রিজভী সাহেব জানেন। বাংলাদেশ না হয় এখন ১৪ কোটি মুসলমান মাইনরিটির দেশ।রাজনৈতিক কারণে এখানে এখন এক কোটি লোক মেজরিটি হয়ে গেছে। সরকার তাদের কথা মতোই চলছে আর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নেপাল ভুটান শ্রীলংকাতো মুসলমানের দেশ নয়। তাদের সাথে ভারতের বনিবনা হচ্ছেনা কেন? রিজভী সাহেব কি ব্যাপারটা নিয়ে কখনও ভেবেছেন। তিনি হয়ত বলবেন, আমার ভাবার কি আছে? আমি একটা এসাইনমেন্ট/মিশন নিয়ে এসেছি। মিশন সফল বা ব্যর্থ হয়ে গেলে আবার বিদেশে চলে যাবো। এমনটা হতে পারে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাউথ আফ্রিকা তার বড় প্রমান। ১৫ ভাগ সাদা মানূষ ৮৫ ভাগ কালো মানুষকে কয়েকশ’ বছর শাসন করেছে। বর্তমান বিশ্বের শ্রেস্ঠ সন্তান নেলসন ম্যান্ডেলা সাদাদের কারাগারে ২৬ বছর ছিলেন। জেলখানা থেকে বেরিয়ে তিনি বললেন, সাদারাও দেশের সন্তান। একথা বলে তিনি সাদা কালোর সমঝোতা প্রতিস্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশে আমরা তা করতে পারিনি। কয়েক লাখ বিহারী গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের জন্যে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারেনি। তাদের সামাজিক বা রাজনৈতিক কোন মর্যাদা নেই। ৪০ বছর ধরে আমরা মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তি যোদ্ধা ইস্যুটাকে জিঁইয়ে রেখেছি রাজনৈতিক কারণে। দেশে এখন কতজন মুক্তিযোদ্ধা আছে তার কোন হিসাব কোথাও নেই। নতুন কথা উঠে এসেছে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলেই হবে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে তারাই দেশপ্রেমিক।কিন্তু চেতনাটি কি তা আমরা জানতে পারলাম না। তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় বাংলাদেশের সকল হিন্দুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। সাথে সাথে দিল্লী সরকারের ও এই চেতনা আছে। ফলে দেশ মনোজগতে দুভাগ হয়ে আছে। হিন্দুরা মোট জন সংখ্যার আট ভাগ বা পারসেন্ট হবে। কিন্তু সরকারী চাকুরীতে আছে প্রায় ৩০ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে চলমান ক্ষমতাসীন সরকারের উপর তাদের প্রভাব ১০০ ভাগ। হিন্দুরা সব সময়ে নানা কৌশলে সরকারের উপর চাপ তৈরী করে রাখে। হিন্দুরা বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বৈষম্য ও অত্যাচারের কাহিনী প্রচার করে থাকে। আর আমরা যারা এসব নিয়ে লিখি বা বলি আমাদের বলা হয় সাম্প্রদায়িক/ কমিউনাল, মৌলবাদী।
কানেক্টিভিটি নিয়ে সেদিন কথা বলেছেন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মুজিবুর রহমান। উপসচিব থাকাকালে রাজনীতিতে অংশ গ্রহনের কারনে ভদ্রলোকের চাকুরি চলে গিয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক কারনে তাঁকে চাকুরীতে পূণর্বহাল করা হয়। একদিনেই উপসচিব থেকে সচিব পদে প্রমোশন নিয়ে অবসরে যান। এখন তিনি চুক্তিভিত্তিতে চাকুরীতে আছেন এবং ট্যারিফ কমিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশী ও ভারতীয় পণ্যের শুল্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। কিভাবে বন্ধুদেশ ভারতের ব্যবসা বাণিজ্য বিনা শুল্কে বা কম শুল্কে বাংলাদেশে আসতে পারে এবং ট্যারিফ ব্যারিয়ারের দেয়াল কিভাবে সরানো যায় তজ্জন্য কাজ করছেন। ড: মুজিবকে দেশের মানুষ চিনে। তিনি একজন নিবেদিত রাজনৈতিক সরকারী নির্বাহী। সরকারের দফতরে কাজ করেন দলের হয়ে। বিআইডিএস এর ড: মোর্শেদও একজন পরিচিত অর্থনীতিবিদ। সরকারী প্রতিস্ঠানে গবেষণার কাজ করেন। ভারতের সাথে কানেক্টিভিটি হলে বাংলাদেশের কি কি লাভ হবে তার হিসাব তাঁর ঠোটস্থ। একেবারে রেডী রেকনার। এ বিষয়ে তাঁর কোন ক্যালকুলেটর লাগেনা। সেদিক থেকে ইআরএফ খুব ভাল কাজ করেছেন। কাজীর গরু গোয়ালে আছে, কিতাবে নাই, এটাইতো অর্থনীতির মারপ্যাঁচ।
এতদিন আমরা শুনে এসেছি, করিডোর ট্রানজিট ট্রান্সশীফমেন্ট থার্ড কান্ট্রি বিজনেস ইত্যাদি। হঠাত্ করে কয়েক বছর ধরে শুনতে পাচ্ছি কানেকটিভিটি। এধরনের শব্দের জন্মদাতা হচ্ছে বিশ্বব্যান্ক আইএমএফ এডিবি ইত্যাদি। এসব শব্দ ব্যবহারে এসব প্রতিস্ঠানকে সাহায্য করেন রিজভী সাহেবদের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী বা আমলারা। রিজভী সাহেব একজন জ্ঞানী মানুষ। তাঁর জ্ঞানের মালিক এখন সারা বিশ্ব। তাই তিনি বিশ্ব ঘুরে ঘুরে বিশ্ব নেতাদের পক্ষ হয়ে জ্ঞানের কাজ করেন। কিন্তু তিনি হয়ত জানেন না, ১৯৪৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে পাকিস্তানের প্রতিস্ঠাতা জিন্নাহ সাহেবকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জিন্নাহ সাহেব নেহেরুর প্রস্তাবটি সাথে সাথেই গ্রহন করেছিলেন আর অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্থলপথে করাচী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি করিডোর দেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর নেহেরুজী ওই বিষয়ে আর কখনও কোন কথা বলেননি। সেই থেকে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ইনসার্জেন্সী চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর সন্তু লারমা ও তার বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে ট্রেনিং দিয়েছে। ভারতের উসকানীতেই সন্তু লারমার বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজার হাজার বাংগালীকে হত্যা করেছে। প্রসংগত উল্লেখ করতে হয় যে, সন্তু লারমার বড়ভাই মানবেন্দ্র লারমা ৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বংগবন্ধু সংসদে যখন বললেন, ‘পাহাড়ীরা তোরা সবাই বাংগালী হয়ে যা’। মানবেন্দ্র লারমা তখনই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, পাহাড়ীরা বাংগালী নয়। এরপরে এক সময়ে মানবেন্দ্র ভারতে চলে যান এবং সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত মানবেন্দ্র ট্রেনিং ক্যাম্পে ভারতীয়দের হাতে নিহত হন। আজও বাংলাদেশের এই পাহাড়ী এলাকা শান্ত হয়নি। ওই অঞ্চলের কৃষি ও অন্যান্য উত্পাদন বৃদ্ধির জন্যে পাকিস্তান আমলেই সমতল এলাকা থেকে কৃষকদের জমি জমা দিয়ে আবাসন গড়ে দেয়া হয়। জিয়া সাহেবও সেই নীতি অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে এখন সেখানে সমতলবাসীর সংখ্যা চার লাখেরও বেশী। যাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ীরা আন্দোলন করছে। পাহাড়ীদের সাথে হাত মিলিয়েছে দেশী বিদেশী ও ভারতীয় চক্রান্তকারীরা। ৪৭ সালের পর থেকেই ভারত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতই রাজ্যের উপর জবরদস্তি শাসন চালাচ্ছে। ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে আসছে। চীন তাদের সমর্থন করে। বাংলাদেশ চীনের বন্ধু হিসাবে স্বাধীনতাকামীদের নেতিক সমর্থন দিতো গোপনে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ওই সমর্থন প্রত্যাহার করে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত উলফানেতদের আটক করে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। উলফা নেতরা বাংলাদেশের মানুষকে ৭১ সালে সমর্থন দিয়েছিল। উলফা নেতারা এখন বাংলাদেশকে তাদের শত্রু মনে করে। দশ ট্রাক অস্ত্র আটক করে নানা ধরনের মামলা রুজু করার ফলে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কও এখন তেমন উষ্ণ নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রতিস্ঠা করতে গিয়ে দেশের বিদেশনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্যে মোটেই কল্যাণকর নয়। শুধুমাত্র নেপাল ভুটানের সাথে কানেক্টিভিটির বলে ভারত বাংলাদেশকে তথকাথিত অনুগত বন্ধুত্বের বেড়াজালে আটক করতে চায়। কাশ্মীরের প্রশ্নেও বাংলাদেশের নীতি কখনই স্পস্ট নয়। বরং বলা যেতে পারে বাংলাদেশ সব সময় ভারতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ভারতকে একমাত্র বন্ধু করার কারণে ওআইসি সদস্যদের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। জনাব গওহর রিজভী সাহেব কানেক্টিভিটির নামে স্থলপথ, জলপথ, রেলপথ আকাশ পথ সবই দিতে চান। বাংলাদেশ নাকি এর বিনিময়ে সোনার দেশে পরিণত হবে।
আমি এতে ভারতের কোন দোষ বা অপরাধ দেখিনা। ভারত তার নিজের স্বার্থতো দেখবেই। আর ওটাই দেশপ্রেমের পরিচয়। ৪৮ সাল থেকে তারা এই চেস্ট করে আসছে। এখন সফল হতে চলেছে। শুধু এই সূযোগ পাওয়ার জন্যেই ভারত ১/১১ ঘটিয়েছে এবং তথকথিত ও বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুলভোটে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। ভারতের এই উদ্যোগকে আমেরিকা ও ইউরোপ সমর্থন করেছিল। ভারত চায়, এই সরকার আরও কয়েক বছর ক্ষমতায় টিকে থাক। তাই আওয়ামী লীগ এখন দেশের রাজনৈতিক অংগন অশান্ত করে তোলার জন্যে নানা ধরনের কর্মসূচী নিয়েছে। এটা ভারতেরই একটা প্ল্যান। তাইতো মনমোহনজী বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পট পরিবর্তন হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে রেখে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যেই মনমোহনজী ওই কথাটি বলেছেন।
কিন্তু রিজভী সাহেব ৪০ বছর ধরে ভারতের বাংলাদেশ নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েও কানেকটিভিটি নিয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। আমি কসম খেয়ে বলতে পারি বংবন্ধু বেঁচে থাকলে ভারত এ ধরনের সাহস কখনই করতোনা। আমরা সেই সময়ে দেখেছি তিনি অনেক বিষয়ে ভারতের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশ। তিনি বলেছিলেন আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। তিনিই বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার ভারতকে বাধ্য করেছিলেন। তিনিই চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন। তিনিই পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিলেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে। অনেকেই মনে করেন, ভারতঘেঁষা নীতির জন্যে তিনি তাঁর প্রিয় মানুষ তাজউদ্দিনকে কেবিনেট থেকে বাদ দিয়েছিলেন। ভাবতেও অবাক লাগে বংগবন্ধুর কন্যা দিল্লীর অনুগত বন্ধু হওয়ার জন্যে দেশের মৌলিক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে শুরু করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক নিজ করুণা বলে বংবন্ধুর কণ্যাকে হেফাজত ও হেদায়েত করবেন।( নয়া দিগন্ত, ১৫ই জুলাই,২০১১, দৈনিক দিনকাল ২১শে জুলাই, ২০১১ )
লেখক: কবি ও সাংবাদিক