Feeds:
Posts
Comments

Archive for June, 2011


কানেক্টিভিটি নিয়ে ২৭শে জুন বিকেলের দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ইকনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ( ইআরএফ ) একটি আলোচনা সভা আয়োজন করেছিল। আলোচনায় অংশ গ্রহনকারীরা সবাই ছিলেন ইআরএফ এর সদস্য। কানেক্টিভিটির পক্ষে জোর যুক্তি প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রির বিদেশ বিষয়ক উপদেস্টা ড: গওহর রিজভী,  ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মজিবুর রহমান ও বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক ড: কে এ এস মুর্শিদ। অতি অল্প সংখ্যক  ইআরএফ সদস্য প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আলোচনাটা শুনে আমার মনে হয়েছে সরকারের পক্ষে তিনজন উকিল ছিলেন যাঁরা কানেক্টিভিটির পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। ভিন্নমত পেশের জন্যে সেখানে কেউ ছিলেন না। আয়োজকরা অনুস্ঠানটাকে সেভাবেই সাজিয়েছেন। সোজা কথায় বলা যায়, কানেক্টিভিটি সম্পর্কে এক তরফা  সরকারী মত প্রচারের জন্যে একটা সুযোগ করে দেয়া। চলমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কানেক্টিভিটি নিয়ে নিয়মিত প্রচুর কথা হচ্ছে। সরকারী দল, মন্ত্রীসভা, সরকারি বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সবাই মিলে একটা ড্রিম মেশিন তৈরী করেছেন। ওই মেশিনের ভিতর আপনি ঢুকুন, দেখতে পাবেন একটা স্বপ্নের জগত। ভাবতে থাকবেন এটা কোনদেশ? বাংলাদেশ না ইউরোপের অন্যকোন দেশ। বাল্যকালে আমরা একটা বাক্সের ভিতর মুখ ঢুকিয়ে নানা রংয়ের ছবি দেখতাম আর বাক্সওয়ালা সেই ছবির ধারা বিবরনী দিতো। এখন বড় হয়ে আওয়ামী লীগের ড্রিম মেশিন দেখার সুযোগ পাচ্ছি।

ড্রিম মেশিন সিনেমার পরিচালক জনাব গওহর রিজভী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ বিষয়ক উপদেস্টা। খুবই বিদ্বান ব্যক্তি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। বহুদিন কাজ করেছেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের হয়ে দিল্লীতে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন ভারতের বুদ্ধিজীবীদের জন্যে। সাংবাদিক বন্ধুদের যাকেই জিজ্ঞাসা করি জনাব রিজভী সম্পর্কে সবাই বলেন তিনি একজন জ্ঞানী গুণী মানুষ। অবাক হয়ে জানতে পারলাম সাংবাদিক বন্ধুরা কেউ তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তিনি বাংলাদেশের লোক কিনা, কোথায় লেখাপড়া করেছেন, কার ছেলে , কার নাতি। আমিতো মনে করি এসব জানা সাংবাদিকদের জন্যে অপরিহার্য। কারণ তিনি আমাদের দেশের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী মর্যাদার উপদেস্টা। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ভাল করে চিনেন। অথবা প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসী পুত্র জয় না হয় বোন শেখ রেহানা তাঁকে চিনেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘকাল দিল্লীতে কাজ করেছেন  নিশ্চয়ই দিল্লী জনাব রিজভীকে ভাল করে চিনেন। দিল্লীর সুপারিশেও তিনি একজন এক্সপার্ট হিসবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। তাছাড়া নিশ্চয়ই বাংলাদেশে জনাব রিজভীর কোন কানেকশন আছে। ইন্টারনেট সার্চ করে যা জানা গেছে তা হলো তিনি  একজন আন্তর্জাতিক সমস্যা নিরাময়কারী। বিশ্বব্যাপী ঘুরে ঘুরে গণতন্ত্রের জন্যে কাজ করেন। কিছুদিন আগে কাজ করেছেন আফগানিস্তানে। সেখানে আমাদের দেশের স্যার আবেদ সাহেবের ব্র্যাকও কাজ করে।এর আগেও আমাদের দেশে অনেক বিদেশী নাগরিক মন্ত্রী মর্যাদায় কাজ করে গেছেন। এমন কি কেয়ার টেকার সরকারের প্রধান ফখরুদ্দিন সাহেবও বিদেশে থাকতেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব  ফখরুদ্দিন ও মির্জা আজিজকে দেশে এনে চাকুরী দিয়েছিলেন বিশ্বব্যান্ক ও আইএমএফ এর অনুরোধে। এরা দুজন ছিলেন ১/১১ সরকারের হর্তাকর্তা ও কলকাঠিওয়ালা। এদের মূল আনুগত্য হলো বিদেশে। তবে এরা দুজনই দেশে খুবই পরিচিত। প্রায় সবাই তাঁদের চিনেন। ফখরুদ্দিন বিদেশে চলে গেছেন, যেমন আগেও তিনি বিদেশে থাকতেন। মির্জা সাহেব এখনও আছেন। রিজভী সা্হেবের সমস্যা  হলো তাঁকে  ভাল করে কেউ জানেনা। তিনি হঠাত্‍ করে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে সরাসরি গদিনশীন হয়ে উপদেশ দিতে শুরু করেছেন। তাঁর সবকিছু একজন প্রচারকের মতো। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর। কথা বলে খুবই সুন্দর। যুক্তিশক্তিও খুব ভাল। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। রিজভী সাহেবের ড্রিম মেশিন  জাতিকে ইতোমধ্যে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন, একেবারে হিসেব নিকেশ করে কড়ায় গন্ডায়। সোজা ভাষায় বলতে হবে রিজভী সাহেবের কথা শুনলে বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলা হবেই হবে। প্রসংগত মনে পড়ে গেল ৭২ বা ৭৩ সালের দিকে টিসিবি কর্তৃক ভারত থেকে আমদানীকৃত সুন্দরী/সোনার বাংলা ( অন্যকোন নামও হতে পারে ) শাডী নিয়ে জাতীয় সংসদে রসালো আলোচনা হয়েছিল। তখন কামারুজ্জামান(হেনা সাহেব) ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।তিনি খুব রসিকলোক ছিলেন। মুখে সব সময় পান থাকতো। খুব রসিয়ে রসিয়ে কথা বলতে পারতেন। ওই শাড়ী লম্বায় ছিল দশ হাত। ধোয়ার পর হয়ে গিয়েছিল নয় হাত। শাড়ীটি ছিল খুবই স্বচ্ছ বা ট্রান্সপারেন্ট। সবকিছুই দেখা যেতো। ভারত বন্ধুদেশ হিসাবে ভালবেসে  বাংলাদেশকে ওই শাড়ী দিয়েছিল। সংসদে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন নোয়াখালীর কচি ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি খুবই সুন্দরী ছিলেন। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে হেনা সাহেব বলেছিলেন, ধন্যবাদ মাননীয়া সংসদ সদস্যা, আমি এখনও সুন্দরীদের পরখ করে দেখিনি। মাননীয় স্পীকার, পরখ করে দেখার পর আমি এই মহান সংসদকে জানাবো। হেনা সাহেবের এই উত্তরে সংসদে হারির রোল পড়ে গিয়েছিল। ভারতের এই সুন্দরী নাটক সম্পর্কে জনাব রিজভী হয়ত জানেন না। প্রাচীন ভারত , মধ্য যুগের ভারত এবং আধূনিক ভারত সম্পর্কে নিশ্চয়ই রিজভী সা্হেবের প্রচুর লেখাপড়া আছে বলে আমি মনে করি। ভারততো ৬০ বছর ধরেই প্রতিবেশীর ঘরে জোর করে ঢুকেই সাহায্য ও সহযোগিতা করতে চাইছে। কি কারণে যে , প্রতিবেশীরা এসব সাহায্য সহযোগিতা নিতে পারছেনা তা হয়ত রিজভী সাহেব জানেন। বাংলাদেশ না হয় এখন  ১৪ কোটি মুসলমান মাইনরিটির দেশ।রাজনৈতিক কারণে  এখানে এখন এক কোটি লোক মেজরিটি  হয়ে গেছে। সরকার তাদের কথা মতোই চলছে আর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নেপাল ভুটান শ্রীলংকাতো মুসলমানের দেশ নয়। তাদের সাথে ভারতের বনিবনা হচ্ছেনা কেন? রিজভী সাহেব কি ব্যাপারটা নিয়ে  কখনও ভেবেছেন। তিনি হয়ত বলবেন, আমার ভাবার কি আছে? আমি একটা এসাইনমেন্ট/মিশন  নিয়ে এসেছি। মিশন সফল বা ব্যর্থ হয়ে গেলে আবার বিদেশে চলে যাবো। এমনটা হতে পারে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাউথ আফ্রিকা তার বড় প্রমান। ১৫ ভাগ সাদা মানূষ ৮৫ ভাগ কালো মানুষকে কয়েকশ’ বছর শাসন করেছে। বর্তমান বিশ্বের শ্রেস্ঠ সন্তান নেলসন ম্যান্ডেলা সাদাদের কারাগারে ২৬ বছর ছিলেন। জেলখানা থেকে বেরিয়ে তিনি বললেন, সাদারাও দেশের সন্তান। একথা বলে তিনি সাদা কালোর সমঝোতা প্রতিস্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশে আমরা তা করতে পারিনি। কয়েক লাখ বিহারী গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের জন্যে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারেনি। তাদের সামাজিক বা রাজনৈতিক কোন মর্যাদা নেই। ৪০ বছর ধরে আমরা মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তি যোদ্ধা ইস্যুটাকে জিঁইয়ে রেখেছি রাজনৈতিক কারণে। দেশে এখন কতজন মুক্তিযোদ্ধা আছে তার কোন হিসাব কোথাও নেই। নতুন কথা উঠে এসেছে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলেই হবে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে তারাই দেশপ্রেমিক।কিন্তু চেতনাটি কি তা আমরা জানতে পারলাম না। তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় বাংলাদেশের সকল হিন্দুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। সাথে সাথে দিল্লী সরকারের ও এই চেতনা আছে। ফলে দেশ মনোজগতে দুভাগ হয়ে আছে।  হিন্দুরা  মোট জন সংখ্যার  আট  ভাগ বা পারসেন্ট হবে। কিন্তু সরকারী চাকুরীতে আছে প্রায় ৩০ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে চলমান ক্ষমতাসীন সরকারের উপর তাদের প্রভাব ১০০ ভাগ। হিন্দুরা সব সময়ে নানা কৌশলে সরকারের উপর চাপ তৈরী করে রাখে। হিন্দুরা বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে  সংখ্যালঘু বৈষম্য ও অত্যাচারের কাহিনী প্রচার করে থাকে। আর আমরা যারা এসব নিয়ে লিখি বা বলি আমাদের বলা হয় সাম্প্রদায়িক/ কমিউনাল, মৌলবাদী।

কানেক্টিভিটি নিয়ে সেদিন কথা বলেছেন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মুজিবুর রহমান। উপসচিব থাকাকালে রাজনীতিতে  অংশ গ্রহনের কারনে ভদ্রলোকের চাকুরি চলে গিয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক কারনে তাঁকে চাকুরীতে পূণর্বহাল করা হয়। একদিনেই উপসচিব থেকে সচিব পদে প্রমোশন  নিয়ে অবসরে যান। এখন তিনি চুক্তিভিত্তিতে চাকুরীতে আছেন এবং ট্যারিফ কমিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশী ও ভারতীয় পণ্যের শুল্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। কিভাবে  বন্ধুদেশ ভারতের ব্যবসা বাণিজ্য বিনা শুল্কে বা কম শুল্কে বাংলাদেশে আসতে পারে এবং ট্যারিফ ব্যারিয়ারের দেয়াল কিভাবে সরানো যায় তজ্জন্য কাজ করছেন। ড: মুজিবকে দেশের মানুষ চিনে। তিনি একজন নিবেদিত রাজনৈতিক সরকারী নির্বাহী। সরকারের দফতরে কাজ করেন দলের হয়ে। বিআইডিএস এর ড: মোর্শেদও একজন পরিচিত অর্থনীতিবিদ। সরকারী প্রতিস্ঠানে গবেষণার কাজ করেন। ভারতের সাথে কানেক্টিভিটি হলে বাংলাদেশের কি কি লাভ হবে তার হিসাব তাঁর ঠোটস্থ। একেবারে রেডী রেকনার। এ বিষয়ে তাঁর কোন ক্যালকুলেটর লাগেনা। সেদিক থেকে ইআরএফ খুব ভাল কাজ করেছেন। কাজীর গরু গোয়ালে আছে, কিতাবে নাই, এটাইতো অর্থনীতির মারপ্যাঁচ।

এতদিন আমরা শুনে এসেছি, করিডোর ট্রানজিট ট্রান্সশীফমেন্ট থার্ড কান্ট্রি বিজনেস ইত্যাদি। হঠাত্‍ করে কয়েক বছর ধরে শুনতে পাচ্ছি কানেকটিভিটি। এধরনের শব্দের জন্মদাতা হচ্ছে বিশ্বব্যান্ক আইএমএফ এডিবি ইত্যাদি। এসব শব্দ ব্যবহারে এসব প্রতিস্ঠানকে সাহায্য করেন রিজভী সাহেবদের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী বা আমলারা। রিজভী সাহেব একজন জ্ঞানী মানুষ। তাঁর জ্ঞানের মালিক এখন সারা বিশ্ব। তাই তিনি বিশ্ব ঘুরে ঘুরে বিশ্ব নেতাদের পক্ষ হয়ে জ্ঞানের কাজ করেন। কিন্তু তিনি হয়ত জানেন না, ১৯৪৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে পাকিস্তানের প্রতিস্ঠাতা জিন্নাহ সাহেবকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জিন্নাহ সাহেব নেহেরুর প্রস্তাবটি সাথে সাথেই গ্রহন করেছিলেন  আর অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্থলপথে করাচী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি করিডোর দেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর নেহেরুজী  ওই বিষয়ে আর কখনও কোন কথা বলেননি। সেই থেকে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ইনসার্জেন্সী চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর সন্তু লারমা ও তার বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে ট্রেনিং দিয়েছে। ভারতের উসকানীতেই সন্তু লারমার বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের  হাজার হাজার বাংগালীকে  হত্যা করেছে। প্রসংগত উল্লেখ করতে হয় যে, সন্তু লারমার বড়ভাই মানবেন্দ্র লারমা ৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বংগবন্ধু সংসদে যখন বললেন, ‘পাহাড়ীরা তোরা সবাই বাংগালী হয়ে যা’। মানবেন্দ্র লারমা তখনই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, পাহাড়ীরা বাংগালী নয়। এরপরে এক সময়ে মানবেন্দ্র ভারতে চলে যান এবং সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত মানবেন্দ্র ট্রেনিং ক্যাম্পে ভারতীয়দের হাতে নিহত হন। আজও বাংলাদেশের এই পাহাড়ী এলাকা শান্ত হয়নি। ওই অঞ্চলের কৃষি ও অন্যান্য উত্‍পাদন বৃদ্ধির জন্যে পাকিস্তান আমলেই সমতল এলাকা থেকে কৃষকদের জমি জমা দিয়ে আবাসন গড়ে দেয়া হয়। জিয়া সাহেবও   সেই নীতি অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে এখন সেখানে সমতলবাসীর সংখ্যা চার লাখেরও বেশী। যাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ীরা আন্দোলন করছে। পাহাড়ীদের সাথে হাত মিলিয়েছে দেশী বিদেশী ও ভারতীয় চক্রান্তকারীরা। ৪৭ সালের পর থেকেই ভারত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতই রাজ্যের উপর জবরদস্তি শাসন চালাচ্ছে। ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে আসছে। চীন তাদের সমর্থন করে। বাংলাদেশ চীনের বন্ধু হিসাবে স্বাধীনতাকামীদের নেতিক সমর্থন দিতো গোপনে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ওই সমর্থন প্রত্যাহার করে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত উলফানেতদের আটক করে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। উলফা নেতরা বাংলাদেশের মানুষকে  ৭১ সালে সমর্থন দিয়েছিল। উলফা নেতারা এখন বাংলাদেশকে তাদের শত্রু মনে করে। দশ ট্রাক অস্ত্র আটক করে নানা ধরনের মামলা রুজু করার ফলে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কও এখন তেমন উষ্ণ নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রতিস্ঠা করতে গিয়ে দেশের বিদেশনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্যে মোটেই কল্যাণকর নয়। শুধুমাত্র নেপাল ভুটানের সাথে কানেক্টিভিটির বলে ভারত বাংলাদেশকে তথকাথিত অনুগত বন্ধুত্বের বেড়াজালে আটক করতে চায়। কাশ্মীরের প্রশ্নেও বাংলাদেশের নীতি কখনই স্পস্ট নয়। বরং বলা যেতে পারে বাংলাদেশ সব সময় ভারতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ভারতকে একমাত্র বন্ধু করার কারণে ওআইসি সদস্যদের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। জনাব গওহর রিজভী সাহেব কানেক্টিভিটির নামে স্থলপথ, জলপথ, রেলপথ আকাশ পথ সবই দিতে চান। বাংলাদেশ নাকি এর বিনিময়ে সোনার দেশে পরিণত হবে।

আমি এতে ভারতের কোন দোষ বা অপরাধ দেখিনা। ভারত তার নিজের স্বার্থতো দেখবেই। আর ওটাই দেশপ্রেমের পরিচয়। ৪৮ সাল থেকে তারা এই চেস্ট করে আসছে। এখন সফল হতে চলেছে। শুধু এই সূযোগ পাওয়ার জন্যেই ভারত ১/১১ ঘটিয়েছে এবং তথকথিত ও বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুলভোটে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। ভারতের এই উদ্যোগকে আমেরিকা ও ইউরোপ সমর্থন করেছিল। ভারত চায়, এই সরকার আরও কয়েক বছর ক্ষমতায় টিকে থাক। তাই আওয়ামী লীগ এখন দেশের রাজনৈতিক অংগন অশান্ত করে তোলার জন্যে নানা ধরনের কর্মসূচী নিয়েছে। এটা ভারতেরই একটা প্ল্যান। তাইতো মনমোহনজী বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পট পরিবর্তন হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে রেখে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যেই মনমোহনজী ওই কথাটি বলেছেন।

কিন্তু রিজভী সাহেব ৪০ বছর ধরে ভারতের বাংলাদেশ নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েও কানেকটিভিটি নিয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। আমি কসম খেয়ে বলতে পারি বংবন্ধু  বেঁচে থাকলে ভারত এ ধরনের সাহস কখনই করতোনা। আমরা সেই সময়ে দেখেছি তিনি অনেক বিষয়ে ভারতের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশ। তিনি বলেছিলেন আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। তিনিই বাংলাদেশ থেকে  সৈন্য প্রত্যাহার করার ভারতকে  বাধ্য করেছিলেন। তিনিই চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন। তিনিই পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিলেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে। অনেকেই মনে করেন, ভারতঘেঁষা নীতির জন্যে তিনি  তাঁর প্রিয় মানুষ তাজউদ্দিনকে কেবিনেট থেকে বাদ দিয়েছিলেন। ভাবতেও অবাক লাগে বংগবন্ধুর কন্যা  দিল্লীর অনুগত বন্ধু হওয়ার জন্যে  দেশের মৌলিক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে শুরু করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক নিজ করুণা বলে বংবন্ধুর কণ্যাকে হেফাজত ও হেদায়েত করবেন।( নয়া দিগন্ত, ১৫ই জুলাই,২০১১,  দৈনিক দিনকাল ২১শে জুলাই, ২০১১ )

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমার একটি লেখা ক’দিন আগেই ছাপা হয়েছে নয়া দিগন্তে। এর বেশ কিছু প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি ইতোমধ্যে। আমি এখন নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র পুরাণো হয়ে গেছে। ফলে এর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র যারা চালু করেছেন তারা নিজেরাও এখন এর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত ও শংকিত। যোলয়ানা বা একশ’ভাগ গণতন্ত্র এখন কোথাও আছে বলে মনে হয়না। তাহলে কি মাজুর এই গণতন্ত্রকে নতুন করে সাজানো যাবে?  ২০১১ সালের মানুষের মেধা জ্ঞান ও মননশীলতা মোতাবেক গণতন্ত্র সেভাবে নিজেকে সাজাতে পারেনি। মাঝখানে কিছুদিন সমাজতন্ত্র ও একদলীয় শাসন পৃথিবীকে কিছু দেবার চেস্টা করেছিল। কিন্তু একশ’ বছরের মাথায় ও ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সত্যিকথা বলতে কি মানুষ একদলীয় শাসনে হাঁপিয়ে উঠেছিল। দেখা গেল একদলীয় একমতের শাসন মানুষের সৃস্টিনীতির বিরুদ্ধে। মানুষ এমন এক প্রাণী যা জগতে স্বাধীন থাকতে চায় এবং স্বাধীনভাবে নিজের মত ও বিশ্বাসকে প্রকাশ করতে চায়। এ ব্যাপারে মানুষ পরাধীন থাকতে চায়না। তাই স্বাধীন মানুষের সাথে স্বাধীন চিন্তার বিরোধ বাধে রাজা মহারাজা বাদশাহ রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে। রাস্ট্র ব্যবস্থার সাথেও স্বাধীন মানুষের চিন্তা চেতনার বিরোধ বাধে।

এমন কি স্বাধীনতা শব্দটার সাথেও মানুষের মৃত্যু জড়িয়ে আছে। কারণ ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার সাথে সমাজ বা রাস্ট্রের সমন্বয় বা সমঝোতা সব সময় নাও হতে পারে। যখন রাস্ট্র মানুষের স্বাধীনতার চেয়ে নিজের স্বাধীনতাকে বড় মনে করে তখনই সংঘাত বাধে। মানুষের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেই রাস্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম হতে চায়। নিজের নাগরিককে দমন করার রাস্ট্র নানা ধরনের আইন রাখে। এমন এক সময় আসে যখন রাস্ট্র নিজের নাগরিককেই শত্রু ভাবতে শুরু করে। তখন  নাগরিকরা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নিজদের পরাধীন ভাবতে শুরু করে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে  সে রাস্ট্রের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। আর বাইরের শত্রু তার সুযোগ নেয়। যেমন ঘটেছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। পাকিস্তানের শাসকগণ কখনই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনের কথা জানতে বা শুনতে চায়নি। ফলে ২৩ বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী মুসলমানরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। ভারত নিজের স্বার্থেই সেই সুযোগ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমেই ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। জাতিসংঘের ১৯৩তম সদস্য দক্ষিণ সুদানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। খৃস্টান আর মুসলমানরা একসাথে থাকতে পারেনি বলেই সেখানে জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা দেশগুলো জড়িত হয়ে গৃহযুদ্ধের সুচনা করে। দীর্ঘ ৫০ বছর এই গৃহযুদ্ধ চলে। কাশ্মীরের মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্যে প্রাণ দিচ্ছে ৬০ বছর ধরে। এখানে পশ্চিমা গণতন্ত্রী ও মানবতাবাদীরা কিছু বলেনা। ফিলিস্তিনেও একই অবস্থা চলছে। ওই এলাকায় জবরদস্তি এক ধর্মীয় রাস্ট্র ইজরায়েল বানানো হয়েছে এবং বিপুল অস্ত্র দিয়ে তাকে শক্তিশালী করা হয়েছে আরবদেশ গুলোতে অশান্তি সৃস্টি করার জন্যে। পশ্চিমা গণতন্ত্রের মালিক মুরুব্বীরা যারা গরীব,সাহায্যের জন্যে সব সময় হাত পেতে থাকে তাদেরকে নানা ধরনের সবক শিক্ষা দেয়। ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বে ও ওসব সনক নিতে হয়। তাদের মতো করে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে, তাদের মতো করে মানবতা বোধের শিক্ষা নিয়ে হবে, সম অধিকারের নামে নারীদের বাজারের পণ্যে পরিণত করতে হবে, নারীদের স্বাধীনতার নামে সমকামিতা বা ইকোয়াল সেক্সের অধিকার দিতে হবে। এসব না করলে সাহায্য পাওয়া যাবেনা। সভ্য বলে পরিগণিত হবেনা। এর মানে হচ্ছে আমরা যদি সাহায্য গ্রহন না করি তাহলে আমাদের উপর ওসব চাপিয়ে দিতে পারবেনা। আরব দেশগুলোতে পশ্চিমারা  ডিক্টেটর বা রাজা বাদশাহদের সমর্থন করে। সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা না হলেও চলবে। মায়ানমারে গণতন্ত্র নেই, হাজার চাপ সৃস্টি করেও পশ্চিমারা মায়ানমারকে বাগে আনতে পারেনি। উত্তর কোরিয়াকে অনেকদিন ধরে নানান হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। চীনকে কিছু বললেই চীন সোজা ভাষায় বলে দেয়, তেমরা ওসব বিষয়ে কোন কথা বলো। এসব আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয়। তাছেড়া তোমাদের গণতন্ত্র ও মানবতার ধারনা আমাদের সাথে মিলবেনা। এটা সত্যি যে, চীন নিজেদের মতো করেই উন্নতির শিখরে পৌঁছার চেস্টা করছে। মালয়েশিয়াও নিজেদের মতো দেশের সকল মানুষের উন্নতির চেস্টা করছে। এমন দিন বেশী দূরে নয় বলে মনে হচ্ছে, যেদিন বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষ পশ্চিমা পুরাণো পঁচা বাসি গণতন্ত্রকে আর চর্চা করবেনা।

পঁচা এই গণতন্ত্র ও ঘুণেধরা পুঁজিবাদী  মানুষখেকো ব্যবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে কার্ল মার্কস, মাও জে দং লেনিন এ জগতে এসেছিলেন। জগতের মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। বেশ কয়েক যুগ ধরে জগতকে আলোড়িত করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, আমরা নির্যাতিত নিরী্ কৃষক শ্রমিক সর্বহারাকে মুক্তি দিতে এসেছি। আর এজন্যেই দেশে দেশে মানুষ বিপ্লন বিদ্রোহ করেছে। কোটি কোটি মানুষ জীবনদান করেছে। ওই বিপ্লবের ডাক আমাদের দেশেও এসেছিল। আমরাও মোহিত হয়েছিলাম। আমাদের ছাত্র জীবন ওই নেশাতেই কেটেছে। আমরাও মাও জে দং আর লেনিনের পদ্ধতিতে বিপ্লব করতে চেয়েছিলাম। কাস্তে হাতুড়ীর ছবি আমাদের শহর বন্দরের দেয়াল আর স্কুল কলেজ ভরে উঠেছিল। আমাদের হাতে ছিল মাও জে দং  আর লেনিন এর লাল বই। আমাদের বেশীর ভাগ হিন্দু শিক্ষক আর কিছু মুসলমান শিক্ষক বিপ্লবের শিক্ষা দিতেন। এমনি এক পরিবেশে আমাদের কৈশোর ও যৌবন কেটেছে। আমাদের মুরুব্বীরা মুসলীম লীগের উপর নাখোশ হয়ে ৪৯ সালে ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠা করলেন। যাঁরা ৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগকে পরাজিত করে প্রদেশের ক্ষমতা দখল করে। পরে দলটির নতুন নামকরণ হয় শুধু আওয়ামী লীগ। বলা হলো এটা খাজা গজা, জমিদার নবাব, খান সাহেব বা খান বাহাদুরদের দল নয়। একেবারেই সাধারন মানুষের দল। দেখা গেল কথাটা সত্যি নয়। দলটির নেতারা শেরওয়ানী আর জিন্নাহ টুপি ছেড়ে পাজামা পাঞ্জাবী আর কোট প্যান্ট পরেছেন। আজকের আওয়ামী লীগ তাঁদেরও উত্তরসূরী নয়।কারণ, দলটি নিজের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে সাহস করে আসল কথা বলতে চায়না। দলের প্রতিস্ঠাতা মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের কথা বলতে সাহস করেনা।  দলটি এখন দিন দিন  ধর্মহীন হওয়ার পথে ছুটে চলেছে। ধর্মহীনতার আড়ালে কিছু মহা সুবিধাবাদী এই দলের কর্তৃত্ব দখলের চেস্টা করছে।

৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে শেখ সাহেব গনতন্ত্র ফেলে দিয়ে সমাজতন্র চালু করতে চেয়েছিলেন। আসলে শেখ সাহেব কখনই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু নানামুখী চাপের ফলে তিনি একদলীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তাঁর দলও কখনই  সমাজতন্ত্র প্রতিস্ঠার জন্যে প্রস্তুত ছিলনা। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশে যখন সমাজতন্ত্র কায়েমের চেস্টা করছিলেন তখন পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের পতন ঘন্টা বেজে গেছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভাংতে শুরু করেছে। সেখানে মানুষ একদলীয় নির্দয় শাসন বাতি করে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার লড়াই শুরু করেছে। এখন সমাজতন্ত্র বা কমিনিজম নাম মাত্র কয়েকটি দেশে আছে। সবখানেই পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। চীনে একদলীয় শাসন আছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ প্রবেশ চালু হয়েছে। ব্যক্তি সম্পদ মালিকানার স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। রাশিয়াতেও ব্যক্তি পুঁজির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সোজা কথায় বলা যেতে পারে পুরাণো বস্তাপঁচা পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। যা আমেরিকা ও তার মিত্ররা চায় এবং কোথাও কোথাও চাপিয়ে দিতে চায়। এক সময় বলা হতো পুঁজিবাদী প্রথম বিশ্ব, সমাজতান্ত্রিক দ্বিতীয় বিশ্ব ও গরীব তৃতীয় বিশ্ব। আমরা বিগত ৬৪ বছর ধরেই তৃতীয় বিশ্বে আছি।  বিশ্ব আবার দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগ ধনী, আরেকভাগ ধনী। তবুও বিশ্বটা ইউনিপোলার বা এক কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এই এক কেন্দ্রিক বিশ্বের একমাত্র মাতবর আমেরিকা। শান্তি মানবতা গণতন্ত্রের নামে আমেরিকা বিশ্বটাকে অশান্ত করে ফেলেছে।

তৃতীয় মত ও পথের বিকাশ উদ্বোধনের এখনি আসল সময় বলে আমি মনে করি। দেড় হাজার বছর আগে এই মত ও পথের দিশা দিয়েছেন মানবতার নেতা হজরত মোহাম্মদ(সা)। তিনিই বলেছেন, মানুষই প্রথম ও প্রধান। মানুষের জন্যেই সবকিছুর সৃস্টি। মানুষ না হলে জগত বৃথা। মানুষ না হলে সৃস্টির লক্ষ্যই বৃথা। মানুষের কল্যাণের জন্যই জগতের অন্য সব সৃস্টি নিয়োজিত। সেই মানুষকে যারা পদানত অপমানিত লাঞ্চিত করতে চায় তারা মানবতার শত্রু, আল্লাহ বা সৃস্টিকর্তার শত্রু। সোজা কথায় বুঝতে হবে মানুষের শত্রুই আল্লাহর শত্রু। তাই মানবতা ও আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জেহাদ করা বা বিপ্লব করা অবশ্য কর্তব্য। হজরত আদম(আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী, শিক্ষক , দার্শনিক , রাস্ট্রনায়ক , সেনাপতি মোহাম্মদ(সা) পর্যন্ত সকল নবী রাসুল অলি আল্লাহ মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। মানুষের মান ইজ্জতকে অস্বীকার করেছে, ভুলুণ্ঠিত করেছে নমরুদ ফেরাউন সাদ্দাদ  হামান কারুন আবু লাহাব আবু জেহেল। চলমান সময়ে আমেরিকা বৃটেন ফ্রান্স ও তাদের মিত্ররা। তেমনি রয়েছে আরব বিশ্বের বাদশাহ ও ডিক্টেটরগণ। আল্লাহর এই দুনিয়াতে ৭শ’ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কিছু দেশ ও মানুষ তাবত সম্পদ দখল করে রেখেছে। এসব দখলদারদের রাস্ট্র ও তার নেতারা  লালন পালন করে । এ বিশ্বের শত শত কোটি মানুষ আজ নিরক্ষর দরিদ্র। তবু বলা হচ্ছে আধুনিক ও অতি আধুনিক বিশ্ব। এই আধুনিক বিশ্বের প্রবক্তারা মা বোন কণ্যা ও স্ত্রীকে পতিতালয়ে রেখে সভ্যতার জয়গাণ গায়। তথাকথিত আধুনিক ও মানবিক বিশ্বের  ফেরাউন নমরুদ আমেরিকা ও তার দোসররা  প্রতিদিন সারাবিশ্বে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে।  এই মূহুর্তের আমেরিকায় লাখ লাখ লোক ফুটপাতে শুয়ে আছে, এদের কোন চাকুরী নেই। প্রতি ঘন্টায় শত শত কুমারী মেয়ে মা হচ্ছে। এটাই নাকি আমেরিকার স্বাধীনতা মানবতা ও গণতন্ত্রের নমুনা। নিউইয়র্কে এখন আনন্দ উত্‍সব চলছে সমকামী বিয়ের আইন পাশ হওয়ায়।আমেরিকার পতন ও পৃথিবীর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা দিয়ে মানুষ আর মানুষের মতো বাঁচতে পারবেনা। তাই মানুষের সার্বিক মুক্তিও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বড় বড় দার্শনিক ও চিন্তাবিদরা নিশ্চয়ই নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কোন পথে হবে তা নিয়ে ভাবছেন। যদি তারা কোন কারণে বন্ধ্যা হয়ে থাকেন তাহলেও মানুষের মুক্তি ও পৃথিবীর পরিবর্তন দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কোথায় এখন আদ সামুদ তুব্বা জাতি। আর কোথায় রামান পারস্য গ্রীক আর্যরা। কেউ কোথাও নেই। এখন যত জালিম  হার্মাদ জাতি ও নেতা মাতৃ পৃথিবীর বুকের উপর বসে আছে তারাও একদিন থাকবেনা। জগতে এখনও বহু মানুষ আছে যারা কোন ধর্ম বা খোদায় বিশ্বাস করেনা। আবার কিছু মানুষ আছে যারা খোদা বা আল্লা্হতে বিশ্বাস করে, কিন্তু আল্লাহর আইনে বিশ্বাস করেনা। কিছু মানুষ আছে যারা ধর্ম বা খোদাকে ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে। তারা মনে করে ধর্ম আর খোদা সমাজ সমিতি বা রাস্ট্রের বিষয় নয়। এই জগতে বিভিন্ন ধর্মের নামে বিভক্ত কোটি কোটি মানুষ আছে যারা নিজ নিজ ধর্মকেও ষোলয়ানা মানেনা বা বিশ্বাস করেনা। হাজরত ঈসা নবীর তথাকথিত বিশ্বাসীরা দিন দিন ধর্মহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বুক ফুলিয়ে বড় গলায় বলে, আমার কোন ধর্ম নেই। এরা সংসার ধর্ম বা বিয়েতে বিশ্বাস করেনা। এরা নারী পুরুষ একসাথে থাকে, সন্তান জন্ম দেয়, আবার ফেলে চলে যায়। এখন শুরু হয়েছে সমকামী সংসার। নারী নারীকে বিয়ে করবে। পুরুষ পুরুষকে বিয়ে করবে। সোজা কথায় বলা যায়, মানব জাতির মহত্তম প্রতিস্ঠান বিয়ে ও সংসারকে ভেংগে চুরমার করা। এতে কোথাও কোথাও রাস্ট্রও সায় দিচ্ছে। এর সবকিছুই হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে।

যেখানে মানব জাতির মৌলিক নৈতিকতা গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেখানে গণতন্ত্র নির্বাচন নিয়ে কি কথা বলবো। আমেরিকা, যে দেশটি এখন গণতন্ত্র  মানবতা অধিকার ইত্যাদির মুরুব্বী ও নেতা সেজে বসে আছে, সেই দেশটি আরও তাবেদার ও সাঙপাঙ নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলমানরা নাকি গণতন্ত্র ও মানবতা বিরোধী। মুসলমানরা নাকি টেররিস্ট বা সন্ত্রাসী। ইসলাম ও মুসলীম বিদ্বেষী পশ্চিমা মহাজোটের সাথে রয়েছে আরব বিশ্বের বহু মুসলমান দেশ। এমন কি দুই পবিত্র স্থানের খাদেম বলে পরিচিত সউদী বাদশাহ এই জোটের একজন মহা সমর্থক। ১৪/১৫ কোটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের চলমান সরকারও  সন্ত্রাস দমনের নামে খোদাদ্রোহী মহাজোটকে সমর্থন দিয়ে নানা ধরনের অর্থ সাহায্য নিয়ে দেশের আলেম সমাজের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের চলমান সরকার মনে করে ধার্মিক সকল মুসলমানই সন্ত্রাসী। আরবী পাঠ্যপুস্তক হাতে বহু ছাত্রকে  পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ ধরে নিয়ে টর্চার করছে। এইতো ক’দিন আগেইতো নারীনীতি নিয়ে সরকার আলেম সমাজের উপর চড়াও হয়েছে। যে নারীনীতি তৈরী করে দিয়েছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমারা। যা বেশীর ভাগ মুসলমান দেশ গ্রহন করেনি।

আওয়ামী লীগ সরকার নিজেকে প্রভুদের কাছে ধর্মহীন বা তথাকথিত সেকুলার প্রমান করার জন্যে সংবিধান থেখে আল্লাহর উপর বিশ্বাস কথাটা তুলে দিয়েছে। দেশের মানুষ যখন এর প্রতিবাদ করা শুরু করেছে তখন আবার আলেম সমাজের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন।শেখ হাসিনার সমর্থকরা প্রায়ই  সাফাই গান,তাদের নেত্রী নিয়মিত নামাজ রোজা করেন। আমার প্রশ্ন হলো একজন মুসলমান কিভাবে সেকুলার হন। তারা কিভাবে বলেন রাস্ট্র ধর্মহীন থাকবে। কিন্তু মুসলমানদের রাস্ট্র কখনই ধত্মহীন হতে পারেনা। মুসলমানদের রাস্ট্র সরকার ও দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা ইসলামের সাথে জড়িত। ইসলামে রাস্ট্রকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবেনা। আমি মনে করি, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ ব্যর্থ হওয়ার পর ইসলামী রাস্ট্র কায়েম বা প্রতিস্ঠা করার সময় এসে গেছে। ইসলামী রাস্ট্র ব্যবস্থায় সকল মানুষের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত। মদিনার রাস্ট্র এর প্রধান উদাহরণ। সে রাস্ট্রে মুসলমানরা ছিল মাইনরিটি। মেজরিটি মানুষ বা নাগরিক ছিল খৃস্টান ও ইহুদী। সকলের নাগরিক অধিকারই ছিল স্বীকৃত । তারা শুধু আল্লাহর রাসুলের(সা) নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল। সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতো। আইন সকলের জন্যে সমান ছিল। চলমান বিশ্বের ধারনা হচ্ছে, ইসলাম বা ইসলামী ব্যবস্থা শুধু মুসলমানদের জন্যে। এই ধারনা একশ’ভাগই ভুল। সত্যি কথা হচ্ছে, ইসলাম  জগতের সকল নির্যাতিত অপমানিত নিগৃহীত শোষিত মানুষের মুক্তির সনদ। ইসলাম বলেছে, মানুষে  মানুষে কোন ফারাক বা ব্যবধান নেই। সকল মানুষই এক পিতা মাতার(আদম- হাওয়া) সন্তান।( নয়া দিগন্ত, ২২শে জুলাই, ২০১১ )

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


সত্তুর সালে বংগবন্ধু ছিলেন বাংগালীদের অবিসম্বাদিত নেতা। নির্বচনে তিনি প্রমান করেছিলেন তিনিই তত্‍কালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র নির্বাচিত নেতা যাঁর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। যদিও ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামাত ছাড়া অন্যকোন দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া বংগবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  হিসাবে সম্বোধনও করেছিলেন। কিন্তু ভুট্টো ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর  ষড়যন্ত্রের ফলে বংবন্ধু আর আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। বরং তারা উল্টো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে দিল। প্রথমে তারা ঢাকা আক্রমন করে এবং হাজার মানুষকে হত্যা করে। তার আগেই সেনা বাহিনী বংগবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যায়। ২৫শে মার্চ রাতের আক্রমনের খবর বংগবন্ধু  হয়ত তিনি জানতে পারেননি। বংগবন্ধু নাকি জানতেন তাঁকে সেনা বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করতে আসবে। তাই তিনি বাসা ছেড়ে কোথাও যাননি এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন সোনা বাহিনীর কাছে ধরা দেওয়ার জন্যে। পরে শুনেছি, তিনি নাকি বলেছিলেন ধরা না দিলে পাকিস্তান সেনা বাহিনী  জনগণের উপর সীমাহীন অত্যাচার করবে এবং লাখ লাখ লোককে হত্যা করবে। তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু করবে। বাস্তবতা হলো পাকিস্তানীরা লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু করেছিল। সুতরাং তাঁর ভাবনা চিন্তা সঠিক ছিলনা। যাবার আগে বা ধরা দেওয়ার আগে তিনি নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন যা আওয়ামী নেতারা ছাড়া আর কেউ শুনতে পায়নি।

সবচেয়ে বড় রহস্য হলো ২৫শে মার্চ সকাল পর্যন্ত তিনি জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার সহযোগীদের সাথে এক সপ্তা্ পর্যন্ত কি আলোচন করেছিলেন, আজও তা প্রকাশ করা হয়নি এবং দেশবাসীও জানেনা সেই আলোনার ফলাফল কি ছিল। সে সময়ে খবরের কাগজে প্রেস রিলিজ দিয়ে বলা হয়েছিল আলোচনায় অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। সে অগ্রগতির কথা কখনই দেশবাসীকে জানানো হয়নি। এবং আজও কেউ জানেনা। ৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালীন সময় নিয়ে বংবন্ধুর ভক্তরা নানা ধরনের গল্প বানিয়েছেন। তেমনি গল্প হলো তাঁর ফাঁসির ব্যবস্থা করে জেলের পাশেই কবর খোঁড়া। জেলখানায় তাঁর উপর অত্যাচার করা। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ধারায় এত নেতিবাচকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি এদেশের কিংবদন্তীর নায়ক। তাঁকে নিয়ে বহু মীথ তৈরী হয়েছে। আরও বহু মীথ তেরী হবে। মীথ তৈরি হয় জনগণের কল্পনা থেকে। ধরুন, একশ বছর পরে  বলা হলো শেখ মুজিব নয় ফুট লম্বা ছিলেন, তিনি পানির উপর দিয়ে হেটে যেতেন। যেমন রাম না থাকলেও রামায়ন তৈরী করেছেন কবিরা। কল্পনা জগতের সেই রামকে ধর্মাবতার বলে মান্যগণ্য করেন ভারতের কোটি কোটি মানুষ। এমন কি বংবন্ধুর মকবরা বা মাজার টুংগীপাড়া হলেও মর্মর পাথরে ছবি বানিয়ে জেলায় জেলায় ছবিতে ফুলের মালা দেওয়া শুরু হতে পারে। এখন যেমন সম্মান দেখাবার জন্যে অফিস আদালতে তাঁর ছবি টাংগানো হয়। এমনও হতে পারে বংগবন্ধুর কোন  ওলামা ভক্ত স্বপ্নে আদিস্ট হয়ে  কোন পাহাড় পর্বতে মাজার বানিয়ে লাল সালু লাগিয়ে বসে যেতে পারেন। মীথ কখনও সত্য নির্ভর নয়। মীথ ভালবাসা ও কল্পনার বিষয়। বেশ কিছুদিন আগে বংগবন্ধুর ভক্ত এক সাংবাদিক লিখেছিলেন, বংগবন্ধুর পূর্ব পুরুষ মাহী সওয়ার হয়ে এদেশে এসেছেন। কেউ বলেছেন, তাঁর পূর্ব পুরুষ বাঘের পিঠে করে ইরাক থেকে এদেশে এসেছেন ইসলাম প্রচারের জন্যে এবং বসতি স্থাপন করেন ফরিদপুরের হিন্দু প্রধান এলাকায়। বংবন্ধুর পূর্ব পুরুষ এ অঞ্চলে বহু যুগ ধরে ইসলাম প্রচার করেছিলেন এবং  ব্রাহ্মন্যবাদের অত্যাচারের বহু গরীব হরিজন ইসলাম গ্রহন করেছিলেন।

কোলকাতায় বংগবন্ধু মুসলীম ছাত্র ফেডারেশনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারপর এক পর্যায়ে তিনি মুসলীম লীগে যোগদান করেন এবং পাকিস্তান আন্দোনে ঝাপিয়ে পড়েন। ৪৬ সালের ১৬ই অক্টোবর মুসলীম লীগ আহুত ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনিও মুসলীম লীগের প্রতিনিধি ছিলেন।  মুসলীম লীগের কর্মী হিসাবে মাহমুদ নুরুল হুদা , ফজলুল কাদের চৌধুরী ও শাহ আজিজুর রহমানও ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’র সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তান হওয়ার পর এরা সকলেই পূর্ব পাকিস্তান চলে আসেন এবং মুসলীম লীগের কর্মী  হিসাবে কাজ শুরু করেন। মাওলানা  আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি। তিনিও দেশ স্বাধীন হলে আসাম ত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তান চলে আসেন। প্রায় দেড় বছর মুসলীম লীগ ও নুরুল আমিন সরকারের কার্য কলাপ দেখে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ৪৯ সালের  ২৩শে জুন রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলীম গঠণের আগে মাওলানা সাহেবকে সারা দেশে মুসলীম লীগের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলার জন্যে জনগণের কাছে যেতে হয়েছে। তখন সরাসরি মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা ছিল খুবই কঠিন। মাওলানা সাহেব বলতেন, আমাদের দল হচ্ছে জনগণের মুসলীম লীগ। আর তাদেরটা হচ্ছে খাজা গজার মুসলীম লীগ। আমরা এসেছি সাধারন মানুষের কথা বলতে। শেখ সাহেব তখন মাওলানা সাহেবের সাথে সারা দেশে সভা সমিতি করে জনগণের কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটা ছিল শেখ জন্যে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করার হাতে খড়ি। বলা যায় মাওলানা সাহেবের রাজনীতির গুরু।

পারিবারিক ভাবেও শেখ সাহেব গোপালগঞ্জের টুংগী পাড়ার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান। তাঁর বাবা শেখ লুত্‍ফর রহমান জেলা বা মহকুমা শহরে সরকারী চাকুরী করতেন। তাঁর আত্মীয় স্বজন সবাই শিক্ষিত। রাজনীতি তাঁর জন্মগত। তিনি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে  লড়াই করেছেন সারা জীবন। তিনি জীবনে বহু বছর জেল খেটেছেন। সাথে সাথে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও নানা ধরনের কস্টের শিকার হয়েছেন। যদিও তাঁর বন্ধু পাকিস্তানের হারুণ পরিবার ও বাংলাদেশের ইস্পাহানী পরিবার তাঁকে সব সময় সহযোগিতা করেছন। মন্ত্রী এমপি আগেগো তিনি টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ইস্পাহানীদের সহযোগিতায়। তিনি আলফা ইন্সুরেন্সের উপদেস্টাও ছিলেন। তাঁর ৩২ নম্বরের বাড়িটাও গড়ে উঠেছে বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায়। তখনকার দিনে রাজনীতিকদের কারোরই তেমন অর্থ বিত্ত ছিলনা। এদিকে তাঁদের খোয়ালও ছিলনা। তাঁদের পুরো জীবনই ছিল মানুষের জন্য নিবেদিত। তাছাড়া শেখ সাহেব  উকিল ছিলেন না বলে তাঁর কোন স্বাধীন পেশা ছিলা না। তারপরেও তিনি রাজনীতির নানা চড়াই উত্‍রাই পেরিয়ে  বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধানতম ব্যক্তিত্বের সীটে আসন গ্রহণ করেছেন। পক্ষ বিপক্ষের নানা আলোচনা বা সমালোচনার মুখেও কেউ তাঁকে তাঁর এ আসন থেকে কখনও সরাতে পারবেনা। এখন তিনি কিংবদন্তীর নায়ক। আলোচকরা কেউ তাঁকে রাম বলবেন, আবার কেউ রাবণ বলবেন। কবিদের কাছে রাম ছিলেন বিজয়ী আর রাবণ ছিলেন এবং এখনও আছেন পরাজিত হয়ে। আমাদের ইতিহাসে শেখ সাহেব দুই অবস্থানেই বিরাজ করছেন। যেমন পলাশীর ইতিহাসে  সিরাজ উদ দৌলা, মীর জাফর ও ক্লাইভ এক সাথেই পঠিত ও উচ্চারিত হয়। বংগবন্ধু আজ যে অবস্থানে আছেন তা তিনি নিজ গুণে বা নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন। তাঁর সময়কালে তাঁর চেয়ে অনেক যোগ্য নেতা ছিলেন যাঁরা  রাজনীতির মাঠে তাঁর সাথে পেরে উঠেননি। সকলেই যে কোন কারনেই অনেক পিছনে পড়ে যান। ৭০ নির্বাচনে তিনি নিজেকে একচ্ছত্র নেতা হিসাবে প্রতিস্ঠিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সমস্যা হলো তারা কাল্পনিক বা বাস্তব, ছায়া বা প্রতিচ্ছবি হিসাবে  নিজেদের প্রতিপক্ষ না দেখলে রাজনীতি করতে পারেন না। অনেক সময় নিজের ছায়াকেও প্রতিপক্ষ মনে করে। ৫৪ সালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো মুসলীম লীগ। পরে আইউব খান ও ইয়াহিয়া খান। দুই সামরিক শাসককেই তারা নেতিবাচক মনোভাব নিয়েই বিশ্লেষণ করেছে এবং মোকাবিলা করেছে। ৭১এর মার্চে জনঘণের পক্ষে দর কষাকষিতে ব্যর্থ হয়ে  ঘরে বসেছিলেন বংগবন্ধু। সেনাবাহিনী এসে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে যায়। তাঁর ভক্তরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়েছিলেন বংগবন্ধু তাঁদের সাথেই রয়েছেন। এপ্রিল মাসের ৪/৫ তারিখের দিকে পাকিস্তান সরকার বংগবন্ধুর গ্রেফতারকৃত ছবি কাগজে প্রকাশ করে। ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তানীদের সশস্ত্র আক্রমনকে মোকাবিলা করার জন্যে লড়াই করা ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর কোন পথ খোলা ছিলনা। জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামই ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। ভারত এক কোটি শরণার্থীর বোঝা বইতে পারবেনা বলে ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান আক্রমন করে। যদিও বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানই ভারতকে আক্রমণ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর বংগবন্ধুর মুক্তির ব্যবস্থা করেন। বংগবন্ধু তখনও জানতেন না তাঁর বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা। পাকিস্তান থেকে লন্ডন পৌঁছে তিনি বিবিসির সিরাজুর রহমান সাহেবের কাছে প্রথম জানতে পারেন স্বাধিন সার্ভভৌম বাংলাদেশের কথা। না জানার বিষয়টা কোন দোষের নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিষয়টা স্বীকার করতে চায়না। কারণ আগেই তাঁরা প্রচার করে ফেলেছেন যে, বংগবন্ধু ২৫শে মার্চ রাতেই স্বাধীনতা ঘোষণা করে তারপর জেলে গিয়েছে। সবাই নিরাপদ যাওয়ার কথা বলে তিনি নিজে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর কাছে ধরা দিলেন।

মেজর জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের অলৌকিক ঘটনা। তিনি একজন অজানা অচেনা  বাংগালী সেনা অফিসার। বাড়ি বগুড়া  হলেও বড় হয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের বাইরে। ৭১ সালের ২৬/২৭শে মার্চের আগে এই মানুষটির নাম দেশের সাধারন মানুষ কখনই শোনেনি। শোনার কোন কারণও ছিলনা। তিনি সেনা বাহিনীর কঠোর শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতা মেনেই তিনি জীবন যাপন করতেন। রাজনীতিতো দূরের কথা স্বল্পভাষী এই মানুষটি  সহজে জন সাধারনের সাথে তেমন মিশতেননা। জীবনে  কখনও রাজনীতি করবেন এমন ধারনা বা চিন্তা কখনও মনে আসেনি। আমারতো মনে হয় একমাত্র ভাগ্যই তাঁকে টেনে পর্দার পেছন থেকে মঞ্চে নিয়ে এসেছে। ঠিক ফ্রান্সের দ্য গলের মতো। ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বা সারা পূর্ব পাকিস্তানে অনেক সিনিয়ার বাংগালী অফিসার ছিলেন। জাতির মহা সমকটের সময়  ভাগ্য  কিন্তু কাউকে টেনে সামনে নিয়ে আসেনি। আল্লাহতায়ালার পরম করুণা বা দয়ায় তখনকার চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরা কোন ধরনের ঘোষনা না দিয়ে মেজর জিয়াকে খুঁজে বের করে  কালুর ঘাট রেডিওতে নিয়ে যান। মেজর জিয়া এর আগেই পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রো্হ ঘোষনা করে ক্যান্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, এই সময় ও মূহুর্ত গুলো কেমন ছিল? এখন এই মূহুর্তে আমরা  কি অনুভব করতে পারবো ওইসব বাংগালী সেনা অফিসারদের মনে অবস্থা ? না পারবোনা। না, পারা সম্ভব নয়। কিন্তু যে অফিসারটি জীবন বাজি রেখে পরিবার পরিজনের কথা ভুলে গিয়ে কালুরঘাট রেডিওতে গিয়েছিল স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার জন্যে তার কথা আওয়ামী লীগ নেতারা কোনভাবেই অফিসারের নাম নিতে চায়না। যাঁর ঘোষণা এক মূহুর্তে মধ্যে  সকল মানুষের মনে সাহস এনেছে  এবং সবাইকে উজ্জীবিত করেছে। দেশে বিদেশে  সব মানুষ মেজর জিয়ার ওই ঘোষণা শুনেছে। বিশ্বের সকল মিডিয়া ওই ঘোষনা  টিভি ও রেডিওতে প্রচার করেছে। এমন কি দিল্লীর ইন্দিরা সরকার ওই ঘোষনা শুনেছে এবং বিশ্ব কূটনীতিকদের অবহিত করেছে। রাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগ ও তার অন্ধ সমর্থক ও ভক্তরা ওই ঘোষণা শুনতে পায়নি।

আওয়ামী লীগ ও তার অন্ধ সমর্থক  ভক্তরা অত্যন্ত দু:খজনক ভাবে বংবন্ধু ও জেনারেল জিয়াকে রাজনীতির মঞ্চে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যার কোন প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করিনা। বংবন্ধু জীবিত থাকা কালে এ বিষয় নিয়ে কখনই কোন ধরনের বিতর্ক তৈরী হয়নি। এখন এসব হচ্ছে আওয়ামী নেতাদের হীনমন্যতার জন্যে। আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশে যত ভাল কাজ হয়েছে এবং হবে তার সবকিছুই হবে বংগবন্ধুর অবদান। জেনারেল জিয়া নিজের জীবদ্দশায় কখনই বংবন্ধুর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। আমি নিজেও একবার সূযোগ পেয়ে জিয়া সাহেবকে বংগবন্ধুর অবস্থান সম্পর্কে জিগ্যেস করেছিলাম। তিনি এক সেকেন্ডও দেরী না করে উত্তর দিলেন, ‘ইতিহাস তাঁ অবস্থান নির্ধারন করে দিয়েছে। আমি কে তাঁর অবস্থান নির্ধারন করার।’ জিয়া সাহেব কালুরঘাট রেডিওতে দুবার স্বাধীনতার ঘোণা দিয়েছিলেন। প্রথমবার নিজের নামেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, ‘অন বি হাফ অব আোয়ার গ্রেট লিডার বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে। আমরা সত্যিই বড়ই হতভাগ্য যে, ইতিহাসের পাতা থেকে ওই ঘোষনার কথা এবং জিয়ার নাম মুছে ফেলার জন্যে আওয়ামী লীগ প্রতিদিন হাজার হাজার মিথ্যা কথা বলে চলেছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সেনা বাহিনীতে তাঁর চাকুরীতে যোগ দেন এবং পোস্টিং নিয়ে কুমিল্লা চলে যান। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর পরামর্শে জিয়া সাহেবকে ঢাকায় রাখা হয়নি। ভারত বুঝতে পেরেছিল এমন স্বাধীনচেতা সেনা অফিসারকে রাজধানীতে রাখা ঠিক হবেনা। জেনারেল জিয়া সিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও বংবন্ধু  তাঁকে সেনা বাহিনী প্রধান না করে জেনারেল ষফিউল্লাহকে সেনা বাহিনী প্রধান করেছিলেন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের নির্মম ঘটনার সময় জেনারেল সফিউল্লাহ কিছু করতে পারেননি। বরং খোন্দকার মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। কিছুদিন পর খোন্দকার মোশতাক জেনারেল জিয়াকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। ৩রা নভেম্বর সেনাহিনীতে জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান  হলে জিয়া গৃহবন্দী হন। ৭ই নভেম্বর সৈনিক জনতার বিপ্লব সংগঠিত হলে জিয়া মুক্ত হন এবং তাঁরই  আহবানে সৈনিকরা ব্যারাকে ফিরে যান। এই সময়ে দেশবাসী রেডিও টেলিভিশনে জিয়ার আহবান শুনতে পান। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে সামরিক আইন জারী হয়েছিল ১৫ই আগস্টে এবং অব্যাহত থাকে পরবর্তী পর্যায়ে।

খোন্দকার মোশতাক ও বিচারপতি সায়েমের বিদায়ের পর জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এটা ছিল জিয়ার জীবনে এক নতুন যাত্রা। তাঁর সাথে আমার যত আলোচনা হয়েছে তাতে কখনও মনে হয়নি যে, ৭১ সাল থেকে শুরু করে ৭৬ সাল নাগাদ তাঁর কোন রাজনৈতিক আকাংখা বা ইচ্ছা ছিল। পরিস্থিতি পরিবেশ ও সময়ের চাহিদা তাঁকে বার বার পর্দার পেছন থেকে সামনে টেনে নিয়ে এসেছে। দেশের এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দায়িত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন কিভাবে এদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়। এই ভাবনা নিয়েই তিনি দেশের গণ্যমান্য বরেণ্য সন্তানদের নিয়ে তাঁর উপদেস্টা পরিষধ গঠন করেন। তিনিই  ড: ইউনুসের গ্রামীন ব্যান্কের ধারণাকে বাস্তবায়নের জন্যে বাংলাদেশ ব্যান্ককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বংবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশ। তিনিই দিল্লীর অনুরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তানে অনুস্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তিনিই মদের দোকান ও ঘোড় দৌড়ের জুয়া বন্ধ করেছিলেন। জিয়া সাহেবও মুসলীম দেশগুলোর সাথে  ঘনিস্ট সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জিয়াই নিকট প্রতিবেশী ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে সমস্যার ন্যায্য সমাধানের অবস্থান তৈরি করেন। যা ভারত সহজে মানতে পারেনি। আরব চীন  ও পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ফলেই  ভারত বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে। কিন্তু গোপন লক্ষ্য ছিল জিয়াকে ক্ষমতা থেকে অপসারন করা। বংগবন্ধুর সাথেও ভারতের সম্পর্ক তেমন উষ্ণ ছিলনা। বংগবন্ধুর পতনের পর ইন্দিরা গান্ধী নিজেই বলেছিলেন, আমরা বাংলাদেশের নতুন সরকারের আগের মতোই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। ঠিক ওই সময়েই চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। জিয়ার আমলে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানকে ভারত কখনই মেনে নেয়নি। ফলে ৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গুটি কতক সেনা অফিসারের বিদ্রোহে জিয়া সাহেব শহীদ হন। ওই বিদ্রোহের কলকাঠি ছিল ঢাকায়। কিন্তু সকল অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবন দিতে হয়েছে জেনারেল মঞ্জুর ও অন্যান্য অফিসারকে।

কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই জিয়ার বিরুদ্ধে লেগে গেলো। দেশের বাইরে থেকে যারা আওয়ামী লীগের মগজ ধোলাই করে তারা বুঝিয়েছে যে , জিয়া বিরোধিতা অবিরাম অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ জিয়াই স্বাধীন সার্ভভৌম বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। যা বংগবন্ধু জীবিত থাকলে করতেন। প্রবাস জীবনে শেখ হাসিনা দীর্ঘকাল ভারতে ছিলেন এবং ভারতের অন্নজলে জীবন রক্ষা করেছেন।  শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কয়েকদিন পরেই জিয়া চট্টগ্রামে শহীদ হন। ওই সময়ে প্রাণের ভয়ে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের চেস্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। জিয়া সাহেবের জানাজায় ৩০ লক্ষ মানুষের অংশ গ্রহণ ভারত ও আওয়ামী লীগকে বিচলিত করে তুলেছিল। জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি দেশে একটি নতুন ধারার রাজনীতি চালু করেছিলেন। যার মূল মন্ত্র হচ্ছে ইসলাম ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এরই ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদী দল। এখন এই দলের তিন কোটি ভোটার ও চারকোটি সমর্থক ও সহানুভুতিশীল নাগরিক রয়েছে। আওয়ামী লীগের মতিভ্রম হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দার ছলনায়। জিয়াউর রহমান কখনই বংবন্ধুর স্থান ও মর্যাদা  দখল করতে চাননি। তিনি জানতেন, তা কখনই সম্ভব নয়। জিয়া সাহেব ছিলেন বাংলাদেশের মহাথীর। তিনি চীনের দেং জিয়াও পিং এর মতো। তিনি চেয়েছিলেন বংবন্ধুর রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে একটি আধুনিক সার্বভৌম রাস্ট্রে পরিণত করতে। এমন কি তিনি চেয়েছিলেন, বংবন্ধুর ভুল গুলোকে শুধরিয়ে নিতে। যেমন আজকের চীন মাও জে দংয়ের ভুল গুলোকে শুধরিয়ে নেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাও জে দং চীনের জনক হলেও দেং জিয়াও পিং হচ্ছেন আধুনিক চীনের প্রতিস্ঠাতা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

 

Read Full Post »


এ জগতে কোথাও কোন মানুষ সেকুলার হতে পারেনা। এটা আমার অনুভুতি ও বিশ্বাস। কেউ ধর্ম পালন করবে বা ধর্মে বিশ্বাস করবে আর সেকুলারও থাকবে এটা একটা অলীক চিন্তা। সোনার পিতলা কলস। পরধর্মকে সম্মান করা একজন মানুষের সত্যিকারের  ধর্ম। একজন মানুষ যেন নিজধর্ম শান্তির সাথে পালন করতে পারে সেজন্যে তাঁকে সাহায্য ও সহযোগিতা করাও একজন ধার্মিকের কাজ। বাস্তবে হয়ত আমরা এসব দেখতে পাইনা। সেটা কোন ধর্মের দোষ নয়। সমাজ ও রাস্ট্রের দায়িত্বও মানুষকে ধর্ম পালনে সাহায্য করা। এ নীতি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। পৃথিবীর সকল মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকৃত। ধর্ম না মানার অধিকারও একজন মানুষের থাকতে পারে। ধর্মমুক্ত সমাজ বা রাস্ট্র প্রতিস্ঠার চেস্টা এ জগতে কম হয়নি। ধর্মকে আফিম বলা হয়েছে। যাঁরা বলেছেন তাঁরা এখন জগতে নেই। মানুষের জন্যে যা কিছু কল্যাণকর তাই ধর্ম। কল্যাণ কামনা ও বাস্তবায়ন করার পথ আলাদা হতে পারে। আলাদা পথ নিয়ে জগতে বহু দাংগা হাংগামা হয়েছে অতীতে এবং এখনও হচ্ছে। এর সবকিছুই হচ্ছে অধর্মের কাজ। অধার্মিকের কাজ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো পৃথিবী এখনও এসব দেখছে। ধর্মীহীনরাই পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলেছে।

সেকুলারিজম বা ফান্ডামেন্টালিজম শব্দ দুটো এসেছে পশ্চিম থেকে খৃস্টবাদের ঝগড়া ফ্যাসাদ থেকে। খৃস্টবাদের হুজুরগণ ধর্মের নামে মানুষের উপর যখন  অত্যাচার শুরু করেছে তখনি  প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিছু বুদ্ধিজীবী সেকুলারিজমের বক্তব্য সামনে নিয়ে আসেন। একদল খৃস্ট বুদ্ধিজীবী ধর্মমুক্ত জীবন তত্ব প্রচার করতে লাগলেন। তখনি ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট ধারনার জন্ম হলো। এখন বিশ্ব ক্যাথলিকের কেন্দ্র হলো ইটালীর ভ্যাটিকান শহরে। আর প্রটেস্ট্যান্টদের কেন্দ্র হলো বৃটেনে। ইংল্যান্ডের রাজা বা রাজপুত্র গীর্জার প্রধান মনোনীত হন। এখন ষড়যন্ত্রকারীরা মুসলমানদের ফান্ডামেন্টালিস্ট বা মৌলবাদী বলে গালাগাল করে। আমাদের বাংলাদেশেও এদের উত্‍পাত কম নয়। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ধর্মহীন সমাজ বা রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। এদের গলা বড় উঁচা। বেশীর ভাগ মিডিয়া এদের দখলে। বাংলাদেশের চলমান সরকার ও  তথাকথিত সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের খপ্পরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকার এখন দিকভ্রান্ত। কোনদিকে যাবে? ভারতের বিরোধিতা স্বত্তেও বংগবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে যাওয়ায় ভারত তাঁর উপর নাখোশ ছিল। ৭২ সালে তাজউদ্দিন সাহেবরাই সংবিধানে সেকুলার শব্দটি যোগ করেছিলেন। এখন ভারত আবার হাসিনা সরকারকে ষোলয়ানা সেকুলার বা ধর্মহীন করার জন্যে আদাজল খেয়ে লেগেছে। সরকারের মুল জায়গা গুলোতে সিপিবির লোকেরা বসে আছে। এরাই বংগবন্ধুর কণ্যার জন্যে নানা ধরনের বিপদ ডেকে আনছে। সেকুলারিস্টরা আবার গণতন্ত্র বিরোধী। তারা উপরে গণতন্ত্রের কথা বলে। ভিতরে চায় মাইনরিটি শাসন। সরকার যদি পাক্কা সেকুলার হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মাইনরিটি হয়ে পড়বে। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে একদিন আওয়ামী লীগ হয়ত বলে বসবে যারা সেকুলার শুধু তারাই দেশ চালাবে। এখনি তারা বলছে ধর্ম ব্যক্তিগত এবং একান্তই গৃহের বিষয়। জনজীবনে এর কোন প্রয়োজন নেই। পশ্চিমে বহুদেশে ধর্র্মভিত্তিক  রাজনৈতিক দল আছে। আমেরিকা , বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী  কোন দেশই ধর্মকে ত্যাগ করেনি।বরং জগতব্যাপী ধর্মের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও ধর্মের কমতি দেখা যাচ্ছেনা। জগতব্যাপী কিছু জ্ঞানপাপী  সেকুলারিজম ও ধর্মহীনতা নিয়ে বুদ্ধিজীবী সেজে নাটক করছে। পশ্চিমারা পূর্বকে ভুল পথে পরিচালনার নাটক মঞ্চস্থ করছে। ওই নাটকের ফাঁদে পড়েছে পূর্বের বেশ কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক। বাংলাদেশের সেকুলারিস্টদের কোন ভোট নেই। এবার তাঁরা নৌকায় চড়ে কয়েকটা সিট পেয়েছে। তাদের দাপটে  একন আওয়ামী লীগের বারোটা বাজতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ধর্ম বিরোধী দল নয়। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তাঁরা ধর্মহীন আর সেকুলারিস্টদের তোষণ করে চলেছে। হয়ত ভারতকে খুশী করার জন্যে আওয়ামী লীগ এসব করছে। এতে দলোর কোন উপকার হবেনা। ভারত নিজেই সেকুলারিজমের জোব্বা পরে বছরে ছোট খাট একহাজার দাংগা বাধায়। এসব দাংগায় প্রাণ হারায় মুসলমান ও অচ্যুতরা। বাংলাদেশে এমন কোন ঘটনা ঘটেনা।

সেকুলারিজম সম্পর্কে নেবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ধর্ম মানুষকে স্বাভাবিক জীবন গড়তে সাহায্য করেনা। তাই তিনি একজন সেকুলারিস্ট হিসাবে জীবন যাপন করেন। অমর্ত্য সেনের নানা বা মাতামহ পন্ডিত ক্ষিতি মোহন সেন বলেছেন, হিন্দুবাদ কোন ধর্ম নয়। একটা ভারতবাসীর সংস্কৃতি। হাজার বছর ধরে এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাই এক সংস্কৃতি বহু আচার আচরন। বহু দেবতা। বহু ধরনের হিন্দু। আবার বিজেপি, হিন্দু মহাসভা, আর এস এস, শিবসেনা বলছে, ভারতে যারা বাস করে তারা সবাই হিন্দু। হিন্দুত্বই ভারতবাসীর পরিচয়। সকল ধর্মের মানুষই এখানে  হিন্দু। ভারতে ৩০ কোট অচ্যুত আছে। এরা ইতরজন। এদের কোন মানবিক মর্যাদা নেই। ইশ্বর নাকি তাদের মানুষের মতো করে তৈরী করেছেন।আসলে তারা মানুষ নয়। গান্ধীজী আদর করে নাম দিয়েছেন হরিজন। মানে তারা ইশ্বরের সন্তান। তবুও তারা মানুষের মর্যাদা পায়নি। ভারতের সংবিধান প্রণেতা পন্ডিত অম্বেদকার একজন অচ্যুত ছিলেন। তিনি অচ্যুতদের মানবিক অধিকার প্রতিস্ঠার সংগ্রাম করেছেন। ব্যর্থ হয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন নিজের এখন কোন ধর্ম নেই। তিনি এক বিদেশীনীকে বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী এখনও জীবিত। ধর্মহীন জীবন যাপন করলেও  তিনি  ভারতের অচ্যুতদের অধিকার নিয়ে কখনও কোন কথা বলেননি। তিনি পুঁজিবাদী অর্থনীতির পুজারী। পুঁজিবাদী অর্থনীতির জন্যেই তিনি নোবেল পেয়েছেন। ধর্মে  শক্তিশালী কোন বিশ্বাসী আজ পর্যন্ত নোবেল পাননি। যারা ধর্মকে অবজ্ঞা করেন তারাই নোবেল লাভ করেছেন। ম্যাগসেসে পুরস্কারের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। এ যাবত বাংলাদেশে যারা এ পুরস্কার পেয়েছেন তারা সবাই সেকুলারিস্ট। কথায় ধর্মবাদীদের গালাগাল করতে হয়। বাংলাদেশে  এমন মানুষকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় যিনি সেকুলার বা ধর্ম পালন করেননা। বিভিন্ন অনুস্ঠানে তারা বক ধার্মিকের ভুমিকা পালন করেন।

স্বর্গীয় বলবো না মরহুম বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। ড: আহমদ শরীফ আমাদের দেশের একজন মহান বুদ্ধিজীবী। তিনি নাকি ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। শুনেছি মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ দান করা হয়েছিল মেডিকেল কলেজের জন্যে। খুবই ভাল কাজ। কিন্তু জানাজা হয়েছে কিনা জানিনা। ড: শরীফ তাঁর জাগতিক ধর্ম সেকুলারিজম কতটুকু বিস্তার করতে পেরেছিলেন তা দেশবাসী তেমন জানেনা। ড; শরীফ তাঁর লেখায় বলেছেন, সেকুলার রাস্ট্র মানুষের মর্ত্য জীবনের চাহিদা মিটায়, তাকে স্বর্গে প্রেরণের দায়িত্ব বা অভিভাবকত্ব নেয়না। সেকুলারিজম মানুষকে শুধু মানুষ হিসাবে বিচার করে। ড: শরীফ কোন জাত তা জানা খুবই কস্টকর। কারণ তাঁর নাম মনে করিয়ে দেয় তিনি একজন মুসলমান। তাঁর  মা বাবা মুসলমান হিসাবেই এ নাম রেখেছিলেন। তিনি নাম পরিবর্তন করেননি। ফলে  একটা বিভ্রান্তি রয়ে গেছে।বাংলাদেশে ড শরীফের মতো আরও অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন এবং ছিলেন যাঁরা নিজেদের সেকুলার বা ধর্মহীন মনে করতেন। সমস্যা দেখা দিতে তাঁরা মারা যাওয়ার পর। কিভাবে তাঁদের দাফন বা সত্‍কার করা হবে। এমন সমস্যা হয়েছিল সিপিবি’র সম্পাদক ফরহাদ সাহেবের দাফনকে কেন্দ্র করে। তিনি একজন কমিউনিস্ট। কমিউনিজমে দাফন বা সত্‍কারের কোন নির্দেশনা নেই। পরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ফরহাদ সাহেবকে ইসলামী মতে দাফন করার জন্যে। ফলে তাঁর জানাজা হয়েছিল।

সম্প্রতি ইত্তেফাকে সেকুলার বা ধর্মহীনদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টার বাশারকে ধন্যবাদ। এমন একটি বিষয় আমরা এর আগে জানতামনা। সরকার সেকুলার বা ধর্মহীনদের বিয়ের ইচ্ছা পুরণের জন্যে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যারা সকল ধর্মের বাইরে গিয়ে বা ধর্ম বিবর্জিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাদের জন্যে সরকার একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বা কাজী  নিয়োগ করেছেন। কাজী সাহেবের নাম প্রানেশ সমাদ্দার। তাঁকে সংস্কৃতি জগতের অনেকেই চিনেন। তিনি কাজী অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। কাজী সাহেবের হিসাবে এ পর্যন্ত নাকি পাঁচশ’ দম্পতি এই নিয়মে বিয়ে নিবন্ধন করেছেন। আইনমন্ত্রী শফিক সাহেব বলেছেন,  স্বাধীন দেশে সকল মানুষের স্বাধীনতা আছে। সেই স্বাধীনতাই তারা ভোগ করছেন।১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইন সংশোধন করে আই বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধরনের বিয়েতে ধর্ম বিষয়টা গৌণ। প্রচলিত পদ্ধতিতে ধর্মের বিষয় উল্লেখ করতে হয়। কোর্টে গেলেও ধর্ম উল্লেখ করতে হয়, কাজীর কাছে গেলেও লাগে। সমকামী বিয়ের আইন বা পদ্ধতি এখনও ঠিক হয়নি। ভারতে সমকামী বিয়ে স্বীকৃত হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ স্বাধীন, ষে যার ইচ্ছা মতো  বসবাস করতে পারে। শুধু বিয়ে করতে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ ব্যবস্থা ভাল। তবে ভাল লাগলে এক সাথে থাকতে অসুবিধা কোথায়? চলমান আইনে ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী দুইজনের বিয়ে অনুমোদন করেনা। তাই একজনকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু প্রাণেশ সমাদ্দার বাবু/সাহেবের কাজী অফিসে  ধর্ম কোন বাধা নয়। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধর্মমুক্ত বিবাহ উদার মনের পরিচয়। শুধু সমস্যা দিতে পারে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পিতামাতাকেও হতে হবে উদারপন্থী ধর্মমুক্ত মনের অধিকারী। তাহলেই তাদের সন্তানেরা ওয়ারিশানা অধিকার পাবে। ধর্মমুক্ত দম্পতির  সন্তানদের সামাজিক সমস্যা দিতে পারে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ধর্মীয় পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আগেই উল্লেখ করেছি ধর্মমুক্ত দম্পতির সংখ্যা এখনও মাত্র পাঁচশ’। এদের বেশীর ভাগই শিক্ষিত। অনেকেই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। প্রাণেশ সমাদ্দার বাবু/সাহেব নিয়োগ লাভের আগে দুই ধর্মের যুগলের বিয়ে হতো আইনগত ভাবে একধর্মে রূপান্তরিত হয়ে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে বা মেয়েকে মুসলমান হতে হতো। বিখ্যাত দম্পতি রামেন্দু ও ফেরদৌসী। এঁরা দুজনই নোয়াখালীর বিখ্যাত পরিবারের সন্তান। শুনেছি, রামেন্দু কাগজে কলমে মুসলমান হয়ে ফেরদৌসীকে বিয়ে করেছিলেন। রামেন্দু-ফেরদৌসী দম্পতির সন্তান ত্রপা। পিতার পারিবারিক পদবী মজুমদার ব্যবহার করেন। ত্রপার অনুভুতিও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ত্রপা বলেছেন, তিনি মায়ের ধর্ম পালন করেন। ত্রপার পিতামাতা বলেছেন, ধর্মহীন জীবন যাপনের সংগ্রাম খুবই কঠিন।ধর্ম বলেছেন ধর্মটা ব্যক্তিগত বিষয়। রাস্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারেনা। আমার মনের শক্তি তেমন নেই বলে আমি একটা ধর্মের আশ্রয় নিয়েছি। অনেকেই বলেছেন ধর্ম পরিবর্তন না করে তাঁরা একসাথে থাকেন। এমন একটি দম্পতি যাঁরা এগার বছর  ধরে সংসার করছেন। এতদিন পর প্রানেশ বাবু/ সাহেবের কাছে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন।প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। সন্তানেরা কোন ধর্ম পালন করবে এমন প্রশ্নে তাঁরা বলেছেন, তাঁরা বড় হয়ে নিজেদের ধর্ম ঠিক করবে। এ ব্যাপারে আমরা কোন ধরনের চাপ বা প্রভাব বিস্তার করবোনা। অনেকেই বলেছেন, তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন। একজন পুজা করেন, আরেকজন নামাজ পড়েন।

সম্প্রতি নরওয়েতে যে ঘটনা ঘটেছে তা বিশ্ববাসীকে মর্মাহত করেছে। সবাই এর নিন্দা করেছে। দু:খ  প্রকাশ করেছে। এখন প্রতিদিন ওই ঘটনাকে নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। নানা ধরনের তদন্ত হচ্ছে। হত্যাকারী যুবক ব্রেইভিকের পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেছেন। তিনি খুবই লজ্জিত ও মর্মাহত হয়েছেন। প্রথমেতো সবাই মনে করেছিলেন, এটা মুসলমানের কাজ। এখন দেখা গেলো ওই যুবক খৃস্টধর্মে বিশ্বাসী। সে প্রকাশ্যেই বলেছে, সে ইউরোপকে ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে মুক্ত রাখতে চায়। সে চায় সমগ্র ইউরোপ হবে একটি খৃস্ট মহাদেশ। তার রাজনৈতিক দল অভিবাসন বিরোধী আইন পাশের জন্যে আন্দোলন করছে। ওই যুবক যা চায় তা নবী  ইসার (আ) শিক্ষা নয়। সম্মানিত আল্লাহর নবী  ইসা  ছিলেন একজন সন্যাসী। শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। তিনি হচ্ছেন রুহুল্লাহ। পিতা  ছাড়া মহান আল্লাহপাক তাঁকে পবিত্র মাতা মরিয়মের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছেন। ফেসবুকে ইতোমধ্যে আমি আমার প্রতিক্রিয়ায় বলেছি, নবী ইসা ওই যুবককে ত্যাগ করেছেন। সেই যুবক শয়তান কবলিত হয়ে পড়েছে। শয়তান তাকে বিপথে পরিচালিত করছে। যুবক ব্রেইভিক হিংসা ও ঘৃণা থেকে  গণহত্যা করেছে। জগতের কোন ধর্মই হিংসা আর ঘৃণায় বিশ্বাস করেনা। ধর্মের নামে জগতে যত অশান্তি হচ্ছে সবই হচ্ছে মানুষের শত্রু শয়তানের কাজ। আর বদনাম হচ্ছে ধর্ম ও মানুষের।নরওয়ের মতো একটা দেশে এমন ঘটনা ঘটায় জগতের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। নরওয়ে শান্তিকামী দেশ হিসাবে পরিচিত। যদিও কিছু উগ্রবাদীর কারণে দেশটার ইমেজ নস্ট হয়। কিছুদিন আগে সেই দেশের এক কার্টুনিস্ট নবী মোহাম্মদের (সা ) কাটুন চাপিয়ে দেশটার জন্যে নানা ধরনের বিপদ ডেকে এনেছিল। বিশ্বব্যাপী মুসলমানেরা ওই কার্টুন ও কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আমাদের দেশেও এক পত্রিকার সম্পাদক নবীজীর (সা )কার্টুন ছাপিয়ে  তোলপাড় সৃস্টি করেছিলেন। পরে তিনি তৌবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। নরওয়ের যুবক এখনও বলছে সে ঠিক কাজটি করেছে।  ইউরোপ আমেরিকায় এখন ধর্মের মরন হতে চলেছে। ফলে সেখানে অধর্ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেখানে সকল ধরনের সমকামীতা আইন ও রাস্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছে। নিউইয়র্কে সমকামীদের বিয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। নরওয়ের ঘটনা প্রমান করেছে ইউরোপ আমেরিকায় সন্ত্রাসী আছে। প্রমান করেছে  খৃস্টবাদের নামেও সন্ত্রাসী আছে। ভারতেও ধর্মীয় সন্ত্রাসী আছে। ইহুদীরাতো জাতি হিসাবে নিজেদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রতিস্ঠিত করেছে। তাদের রাস্ট্রটিও সন্ত্রাসী রাস্ট্র।ভারতের স্বরাস্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম বলেছেন, ভারতে আভ্যন্তরীন সন্ত্রাসবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি মোম্বাইতে যে সন্ত্রাসী আক্রমন হয়েছে তা ভারতের সন্ত্রাসীরা করেছে বলে চিদাম্বরম স্বীকার করেছেন।

সেকুলার জোব্বা পরা ভারতেও সমকামীরা সামাজিক স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে। মোম্বাইতে ক্লাব খুলেছে। বুলেটিন প্রকাশ করে। বেশ্যাবৃত্তিকে রাস্ট্র স্বীকার করে নিচ্ছে। সেখানে বেশ্যাদের যৌনকর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের প্রাচীন সনাতন ধর্মে নারী পুরুষের অবাধ মিলনকে নিরুত্‍সাহিত করা হয়নি। বরং দেবতারা যেখানে সেখানে যৌনকর্ম করে বেড়াতেন। এ ব্যাপারে  সনাতন ধর্মের প্রাচীন বইগুলোতে নানা রেফারেন্স রয়েছে। বাংলাদেশেও যৌনকর্মীদের সংগঠন আছে। মাঝে মাঝে তারা সংবাদ সম্মেলনও করে। আগে বেশ্যা বা যৌনকর্মীদের পাড়া, বাজার বা জোটবদ্ধ আবাস ছিল। সমাজ এসবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে বেশ্যারা ভাসমান। সরকার এ পেশাকে এখনও নিষিদ্ধ করেনি। এরা নানা ধরনের যৌনরোগ সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা অর্থে লালিত এনজিওরা যৌন ব্যবসাটাকে সমর্থন দিয়ে চলেছে। আমাদের দেশের সেকুলার বুদ্ধিজীবীরাও এদের সমর্থন করে।

নোবেল বিজয়ী সম্মানিত অমর্ত্য সেন এখন এমন এক পর্যায়ের মানুষ, তিনি যা বলবেন তাই মিডিয়ায় বড় করে প্রকাশিত হবে। সম্প্রতি তিনি সেকুলারিজম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলেছেন তা কোন মতেই কোন বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারেননা। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে কোথাও কোন দাংগা হয়না। এমন কি পাকিস্তান আমলেও তেমন কোন দাংগা হয়নি। ছোটখাট যে সব দাংগা হয়েছে তা সরকারী উসকানীতে হয়েছে, বা ভারতের দাংগার প্রতিক্রিয়া হিসাবে হয়েছে। সোজা কথায় বলা যেতে পারে সেকুলারিজম কোন মতবাদ নয় বলে ইতোমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে। সেকুলারিজম একটা সামাজিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। ধর্মের নামে অত্যাচার বা গোঁড়ামী সেকুলারিজমের  জন্ম দিয়েছে। ধর্মের নামে মানুষের উপর অত্যাচার করে বা দাংগা বাধায় তারা কখনই ধার্মিক নয়। তারা  ধর্মের শত্রু, মানবতার শত্রু, সমাজ ও রাস্ট্রের শত্রু। কায়েমী স্বার্থবাদীরাই ধর্মের নামে হানাহানি সৃস্টি করে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সন্ত্রাসী  আখ্যায়িত করে আমেরিকা ও তাঁর বন্ধুরা পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই অভিযান আমেরিকা ও ইউরোপকেও অশান্ত করে তুলবে। আমেরিকার কথা শুনতে গিয়ে বাংলাদেশের চলমান সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে ধর্মীয় মানুষ ও মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। এতে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তথকথিত সেকুলারিজম ও ধর্মহিনতার বিরুদ্ধে দেশের সকল মানুষকে সজাগ থাকতে হবে।( ১২ই আগস্ট, ২০১১, নয়া দিগন্ত )

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


গণতন্ত্র মূলত একটি ধারনা। হয়ত ২৫/২৬শ বছর আগে কিছু লোক সমাজ পরিচলনার জন্যে এ রকম একটি ধারণা নিয়ে ভেবেছেন। ইতিহাসবিদরা বলেছেন এথেনিয়ান গণতন্ত্রই পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্র। তখন ছিল নগর রাস্ট্র। পৃথিবীতে তখন বড় বড় রাজা মহারাজা সম্রাটরা দেশ চালাচ্ছেন। রাজারাই আইন বানাতেন। সেই আইন দিয়ে নিজদেশ বা রাজ্য চলাতেন। প্রজারা জানতোনা তাদের অধিকার কি? রাজা জোর জবরদস্তি খাজনা আদায় করতো রাজ্য চালাবার জন্যে। রাজার মূল কাজ ছিল পররাজ্য দখল করা। নিজের প্রভাব বা শক্তির প্রদর্শন করা। সাধারন ভাবে প্রজারা রাজাকে তেমন মাথা ঘামাতোনা। এক সময় শক্তিই ছিল রাজ্য বা প্রজা শাসনের প্রধান হাতিয়ার। যার শক্তি নাই সে দেশ চালাতে পারতোনা। দেশ জয় করাই ছিল রাজার প্রধান কাজ। আমরা দিগ্বিজয়ী আলেজান্ডার দি গ্রেট এর নাম শুনেছি। তিনি দেশ জয় করতে করতে মেসিডোনিয়া থেকে ভারতের সীমান্তে এসে পৌঁছেছিলেন। তাঁ আগমনের ছাপ এখনও আমাদের ভাষা সাহিত্য ও ইতিহাসে দেখা যায়। তিনি বিজয়ী বলে বিশ্ববাসী সম্মানের সাথে তারঁ নাম স্মরণ করে। আমরা হালাকু খাঁ  চেংগিজ খাঁর নাম শুনেছি। এসব হচ্ছে মহা ক্ষমতাধর বিজয়ীদের কাহিনী। ঠিক এ সময়েই এথেনিয়ানরা নগর রাস্ট্র চালাবার জন্যে গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করেছেন এবং সেই গণতন্ত্রের মাধ্যমে নগর রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করেছিলেন।এসব নগর রাস্ট্রের নাগরিকরাই রাস্ট্র চালাতেন এবং তারাই সংসদ বা পার্লামেন্টের সদস্য। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ ছিল দাস। দাসদের কোন অধিকার ছিলনা। এথেনিয়ান গণতন্ত্রের পর পৃথিবী ২৬শ বছর পার করেছে। কিন্তু সেই বুড়া মাজুর গণতন্ত্র নানারা রূপে  নানাবর্ণে নানা পোষাকে এখনও বিশ্বব্যাপী জারী আছে। তারপরে কিছুটা মানবিক রূপ ধরে সপ্তদশ শতাব্দীতে এলো নতুন গণতন্ত্র ও মানুষের মানবিক অধিকারের ধারণা। একেই বলা হলো ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসি। সারা পশ্চিমা জগত হুমড়ি খেয়ে পড়লো নতুন গণতন্ত্রের স্বাদ গ্রহণ করার জন্যে। ইউরোপীয়রা সামরিক শক্তির বলে এশিয়া আফ্রিকায় বিভিন্ন দেশে কলোনী স্থাপন করলো। সাথে নিয়ে  এলো তাদের বৈধ ও অবৈধ জ্ঞান বিজ্ঞান।

এর ফাঁকে সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ বা ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইসলামের বিজয়ের কথা উল্লেখ না করলে  নিবন্ধ/কলামটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ওই সময়ে ইসলাম ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়ায়র বিভিন্ন দেশে রাজ্য/ রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করে। সাথে নিয়ে যায়  জ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন ভান্ডার। ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়া পরিচিত হয় নতুন শাসন ব্যবস্থা ও  জ্ঞানের সাথে। ইউরোপের বড় বড় ইতিহাসবিদরা অকপটে স্বীকার করেছেন ইউরোপের নব জাগরনে ইসলামের অবদান। তখনও ইউরোপ ভাল করে জানেনা আধুনিক শিক্ষা  ও শাসন ব্যবস্থা কি? ইসলাম ইউরোপকে আধুনিক হতে শিখিয়েছে। স্পেনের মুসলমান শাসকগণ সারা ইউরোপে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছে। তারপরে এসেছে ক্রুসেডের শতাব্দী। মুসলমানদের নিশ্চিন্ন করার শাতাব্দী। শুধু টিকে ছিল তুরস্কের উসমানিয়া খেলাফত ও ভারতের মুঘল শাসন ব্যবস্থা। এক সময়ে উসমানিয়া  খেলাফত ও মোঘল সাম্রজ্যেরও পতন হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আরবদেশের ছোট ছোট দেশ গুলো পশ্চিমীদের তাবেদারে পরিণত হয়। যা এখনও জারি রয়েছে। বৃটেনের সওদাগরী কোম্পানী ইস্ট ইন্ডিয়া ব্যবসার জন্যে বাংলায় এসে হিন্দু মহাজন ও বণিকদের সহযোগিতায়  বাংলা দখল করে নেয়। সেই দখলদারিত্ব বজায় থেকে ১৯৪৭ সাল  পর্যন্ত। এই ১৯০ বছর শাসনকালে বৃটিশরা ভারতে কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৮ পর্যন্ত এই একশ’ বছর ভারতীয় মুসলমানরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ইংরেজ শাসনে ভারতের মুলমানরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই শাসন আমলকেই হিন্দুরা এবং কিছু মুসলমান নেতা  আধুনিক ভারতের ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিজয়ীর ভাষা ইতিহাস ঐতিহ্য ধর্ম চালু হয় ভারতে। হিন্দুরা এই পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বলেছে , ইংরেজদের আগমন ঈশ্বরের অনুগ্রহ। ভারতের সম্পদ লুন্ঠন করে ইংরেজরা শক্তি অর্জন করে আফ্রিকা ও আরবদেশে অধিপত্য বিস্তার করেছে। ভিনদেশ লুন্ঠন করে নিজদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। বৃটেনের সকল উন্নতিতে বাংলাদেশের বিশাল অবদান রয়েছে। এখনও সাম্রাজ্যবাদী বৃটেন নানাভাবে আমাদের শোষন করেছে। সেসব দেশেও কিছুলোক ইংরেজ শাসন ও শোষণকে অভিনন্দিত করেছে। পরাধীনতা শোষণ অত্যাচারকে যারা  রেনেসাঁ প্রগতি বলে  আখ্যায়িত করে তাদের কাদের সন্তান জানিনা।

বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহুদেশে এখন যে গণতন্ত্র জারী বা বহাল রয়েছে তা এসেছে বৃটেন থেকে। তারাই সপ্তদশ শতকের দিকে এ ধরণের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে ভারত থেকে বিদায়ের আগে  ইংরেজরা ভারতে সীমিত গণতন্ত্র চর্চা চালু করে যায়। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলাদেশ দখল করে তখন এখানে নবাবের শাসন ছিল। ক্ষমতায় ছিলেন মহান দেশপ্রেমিক তরুণ নবাব সিরাজ উদ দৌলা। দিল্লীতে ক্ষমতায় ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু মোঘল সম্রাটরা। সিরাজের সাথে ইংরেজদের  রাজস্ব ও ব্যবসা বাণিজ্য বিষয়ে। ইংরেজরা বিনা শুল্কে সুবেহ বাংলায় ব্যবসা করতে চাইলো। এমন কি  তারা বাংলার হাটে বাজারে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা করার  অনুমতি পাওয়ার জন্যে নবাব দরবারে লবী করতে শুরু করে। কিন্তু দেশপ্রেমিক নবাব দেশী পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বিনা শুল্কে এই ব্যবসা দিতে রাজী হননি। কোম্পানী এই ক্ষমতা লাভের জন্যে মরিয়া হয়ে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় তরুণ নবাবের বিরোধী আত্মীয় স্বজন ও বড় বড় হিন্দু ব্যবসায়ীরা। গঠিত হলো একটি মহাজোট। এই জোটের শরীক ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, হিন্দু বড় ব্যবসায়ী ও ব্যান্কার ও নবাবের কিছু আত্মীয়। ইংরেজদের স্বার্থ ছিল বিনা শুল্কে অবাধে ব্যবসা করা। হিন্দু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ছিল ইংরেজদের সাথে ব্যবসা করে দু’পয়সা কামিয়ে নেয়া। নবাবের আত্মীয়দের স্বার্থ ছিল নবাবী দখল করা। ইংরেজরা এই ষড়যন্ত্রে সফল হয়েছিল। আর আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের স্বাধীনতা। এভাবেই ইংরেজরা পুরো ভারত দখল করে নিয়েছিল। ইংরেজদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত স্বাধীন করার জন্যে পুরো ১৯০ বছরই লড়াই করেছে এদেশের মুসলমান ওলামা মাশায়েক গণ। হিন্দুরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ১৯০০ সালের দিকে। উইলিয়াম হান্টারের  বই পড়লেই পাঠক সমাজ জানতে পারবেন, ইংরেজ শোষণের করুণ ইতিহাস। এই শোষণের সবচেয়ে বড় টার্গেট ছিল মুসলমান সমাজ। দিল্লী দখলের সময় কারফিউ দিয়ে মুসলমানদের  কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে  সর্ব ভারতীয় সুফী কবি মির্জা গালিবের স্মৃতিকথায়। এরপরেও আপনারা কি বলবেন ইংরেজ শাসন বাংলা বা ভারতকে আধুনিকতা গণতন্ত্র জ্ঞান বিজ্ঞান ও মানবাধিকার দিয়েছে। তবে একথা মহাসত্য যে, ইংরেজ শাসন ভারতের হিন্দুদের অনেক কিছু দিয়েছে। তার উজ্জ্বল প্রমান হলো জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবার। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, প্রশান্ত পাল দুজনই হচ্ছেন কবিগুরুর জীবনীকার। তাঁরাই বলেছেন, ঠাকুর পরিবারের প্রধান ব্যক্তি নীল রতন ঠাকুর ১৭৬৫ সালে উড়িষ্যার দেওয়ানীতে আমিনগিরির চাকুরী পেয়ে দু’পয়সা কামিয়ে নিয়েছেন। ওই সালেই ইংরেজরা বিহার ও উড়িষ্যা দখল করে। আরও বহু হিন্দু পরিবার আছে যারা  ইংরেজ সমর্থনে রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আমার আলোচনাকে অনেক সেকুলার বন্ধু সাম্প্রদায়িক বলে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কিন্তু এসবইতো হচ্ছে ইতিহাসের উপাদান। ওই একই সালে আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের পূর্ব পুরুষ বিহারের হাজীপুরের কাজীবাড়ির লোকেরা আসান সোলে এসে আত্মগোপন করেন।

ইংরেজদের যারা আধুনিক ভারত বা বাংলাদেশের ত্রাতা বা পিতা বলেন তাঁদের  পরিবারের কোন বায়াদলিল নেই। তাঁদের যাত্রা শুরু ইংরেজ আমলেই। তাঁরা পরাধীনতার ইতিহাসকেই গৌরবের ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করেছে। এ সময়ে মুসলমানরা সর্বদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা হারিয়েছে তাদের  ইতিহাস ঐতিহ্য। তারা পরিণত হয়েছে এক নি:স্ব জাতিতে। হারিয়েছে নিজেদের সকল গৌরব। ইংরেজদের দেয়া গণতন্ত্র  ও নির্বাচন পদ্ধতি এখন আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর দেশে প্রচলিত আছে। কিন্তু সবদেশে এর রূপ ও রং এক রকম নয়। প্রত্যেক দেশই চেস্টা করেছে নিজ নিজ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির আলোকে গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে সাজিয়ে নিয়েছে। এই পুরাণো ঘুণেধরা মাজুর গণতন্ত্র এখন খোদ বৃটেনেই সঠিক ভাবে চলছেনা। এমন কি  আমেরিকায় নির্বাচনে জালিয়াতি  হচ্ছে বলে অভিযোগ  উঠেছে। ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন হুমকির সম্মুখে। বিশেষ করে গনতন্ত্র নামক এক পুরাণো নাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনে আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে আওয়ামী ও জামাত সারাদেশে এক অরাজক অবস্থার সৃস্টি করেছিল। ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা চালু করে নির্বাচন করার জন্যে। সে সময়ে আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ সরকারী অফিস আদালতে আগুন লাগিয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগ এখন সময় সুযোগ বুঝে বলছে, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেই। আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে বলছে এ ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। যে রায় আদালত দিয়েছে তার নিজেদের পছন্দ মতো ব্যাখ্যা করছে। দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বংবন্ধু নিজেও ২৯৩ সিটের সুযোগ ও সুবিধা পেয়ে সংবিধানকে পুরো বদলিয়ে ফেলেছিলেন। সংসদে কেউ টু শব্দ করেনি। শুধু জেনারেল ওসমানী ও ব্যারিস্টার মইনুল হুসেন সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। রাস্ট্রপতি নির্বাচনের কোন ব্যবস্থা রাখেননি। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর সরকারের আচার ব্যবহারের কারণে দেশে ৯২ক ধারা জারী হয়েছিল। ৫৬ সালে আোয়ামী লীগ পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। তখন মাওলানা ভাসানীর স্বায়ত্বশাসন আন্দোলনের মুখে সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন ৯৮ ভাগ স্বায়ত্ব শাসন হয়ে গেছে। সেই বক্তব্যকে শেখ সাহেবও সমর্থন করেছিলেন। এক সময়ে শেখ সাহেব ও আওয়ামী লীগ স্বায়ত্ব শাসন দাবীর সোল এজেন্ট হয়ে গেলেন। গণতান্ত্রিক বাবস্থায় অসহিষ্ণুতার সুযোগে ওঁত পেতে থাকা পাকিস্তান সেনা বাহিনী প্রধান আইউব খান  ৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারী  করেন। এর আগে প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার শাহেদ আলী সাহেবকে  পরিষদের সেশন চলাকালেই আঘাত করা হয়। সেই আঘাতের কারণেই তিনি হাসপাতালে মারা যান।৬২ সালে জেনারেল আইউব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের উপর বিধি নিষেধ তুলে নিলেন তখন শেখ সাহেব কারো সাথে আলোচনা না করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দিলেন। তখন  মাওলানা ভাসানী সহ বড় বড় আইউব বিরোধী আন্দোলনের জন্যে মোর্চা বা ফ্রন্ট গঠনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।  ঠিক একই ভাবে শেখ সাহেব সকল দল ও নেতার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে  জেনারেল ইয়াহিয়ার  সামরিক শাসন ও এলএফওর  অধীনে  ৭০ সালের নির্বাচনে মেজরিটি সীট পেয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠনে জনগণের ম্যান্ডেট পান, কিন্তু ইয়াহিয়ার যে সমঝোতা হয়েছিল তা রক্ষা করতে পারেনি। এই নির্বাচন জামাত আর আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সবদল বয়কট করেছিল। এলএফও অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার জন্যে মাওলানা ভাসানী  বিশেষ ভাবে শেখ সাহেবকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ সাহেব সেই অনুরোধ রাখেননি। ৭০ এর নির্বাচন মূলত: বাংগালী অবাংগালীর নির্বাচন ছিলো। আওয়ামী লীগ ৬ দফার মাধ্যমে পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশের অটোনমি( স্বায়ত্বশাসন ) চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ বা শেখ সাহেব গণতান্ত্রিক কোন ইস্যুতেই কখনও দর কষাকষি বা নেগোসিয়েট করতে পারতেন না। ফলে সংঘাত সংঘর্ষ সারা জীবন তাঁর সাথী হয়েছিল। ৩রা মার্চ পূর্বাণী হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে এক তরফা স্বাধীনতার ঘোষনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি হেসে ওই প্রশ্নটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।আজ আওয়ামী লীগ বলছে ৭ই মার্চ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। তাহলে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সাথে কিসের আলোচনা চলেছে তা আওয়ামী লীগ কখনই জনগণের কাছে খোলাসা করতে পারেনি। ৭২ সালের ৯ বা ১০ ই জানুয়ারী লন্ডনের ক্ল্যারিজ হোটেলে  বংগবন্ধু বিবিসির সিরাজুর রহমানকে যা বলেছিলেন তাতে বুঝা যায় তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন আসার আগে ভুট্টোর সাথে বংবন্ধূর কিছু একটা সমঝোতা হয়েছিল। সে ব্যাপারে তিনি তাঁর ১০ ই মার্চের ভাষণে কিছুটা ইংগিত দিয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে যে, বংগবন্ধু কনফেডারেশন চেয়েছিলেন। একই ভাবে আওয়ামী লীগ এক সময় বলেছিল আগরতলা মামলা বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন বংগবন্ধু এ ধরনের কোন যড়যন্ত্র করেননি। এটা একটি মিথ্যা মামলা। এখন বলছে আগরতলা ষড়যন্ত্র সত্য ছিল। মাওলানা ভাসানী আদালত আক্রমন করে জাস্টিস রহমানের সেই আদালত ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন।

১/১১র সরকার প্রতিস্ঠার পূর্বে আওয়ামী লীগ যা ঘটিয়েছে তার কথা দেশবাসী আশা করি ভুলে যাননি। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরের হত্যা যজ্ঞের কথা একবার ভাবুন। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এর আগে কেউ দেখেছেন কিনা জানিনা। মনে হয়েছিল আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যের দাঙা। আসলে সে সময়েই বাংলাদেশ বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রের বিদেশী প্রধান হোতা ছিল ভারত এবং তাকে সহযোগিতা করেছিল বৃটেন আমেরিকা  ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ষড়যন্ত্রের প্রথম ধাপ ছিল  কিছু জেনারেল ও অফিসারকে দিয়ে জেনারেল মইন ও সাবেক আমলা ফখরুদ্দিনের সরকার প্রতিস্ঠা করা। দেশবাসী জানে জেনারেল মইনের সরকার দেশের কি ক্ষতি করেছিল। অর্থনীতিকে তচনচ করে দিয়েছিল। দুর্ণীতির অভিযোগে দেশের অর্ধেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিকে জেলে পুরে দেয়া হয়েছিল। বাকী অর্ধেক দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। যাক শেষ পর্যন্ত  জেনারেল মইনের সরকার দেশে একটা নির্বাচন দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্যে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসাটা ছিল অবধারিত ও পূর্ব নির্ধারিত। বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টা জানতেন। তাঁকে বলা হয়েছিল তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করলে দেশে সামরিক শাসন জারী  হবে এবং তাঁর দুই ছেলেকে ফাঁসীতে ঝুলানো হবে। সামরিক শাসন জারীর সব দায় দায়িত্ব তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হবে। ঠিক এমনি এক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। ১/১১র সরকার  ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার যে কর্মসূচী নিয়েছিল তা আওয়ামী লীগ আমলেও জারী রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা নিজেও বলেছেন, ১/১১র সরকার তাঁরই আন্দোলনের ফসল। সেই ফসলের ফসল হচ্ছে চলমান আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে আনীত মামলা তুলে নেয়ার জন্যে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসেনি। ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা সুস্পস্ট যে ১/১১র সরকার আর আওয়ামী লীগের সরকারের মাঝে কোন ফারাক নেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় প্রায়ই বলে থাকেন বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দল। সরকারে গেলেও আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ভুমিকা ছাড়েনা। এজন্যেই এখন দেশে দুটি আওয়ামী লীগ পাশাপাশি কাজ করছে। ফলে এখন ছাত্রলীগ যুবলীগ শ্রমিক লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সব দুই ভাগে বিভক্ত। একদল  সরকারী অফিস আদালত ও সচিবালয়ে তদবীর করে আরেকদল চাপাতি লাঠি বৈঠা পিস্তল বন্দুক নিয়ে রাস্তায় ঘুরে। ২৮শে অক্টোবর যারা ঘটিয়েছেন তারা এখন ক্ষমতায়। আর যারা রাস্তায় আছেন তারা হয়ত লগিবৈঠা নিয়ে আগামী দিনের সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। আগেই বলেছি সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ না করলে আওয়ামী লীগ বাঁচতে পারেনা। যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিস্ঠার জন্যে আওয়ামী দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নস্ট করেছে, মানুষ হত্যা করেছে সেই কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্যে  দেশে আবার একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরী করেছে। এখন বলছে, কেয়ারটেকার ব্যবস্থা সংবিধান অনুযায়ী অগণতান্ত্রিক। আদালত এটা বাতিল করে দিয়েছে। ৯৬ সালে আোয়ামী লীগের এই বোধ কোথায় ছিল ? কয়েকদিন আগে গাফফার ভাই আওয়ামী লীগের ৬২ বছর জীবনের কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন ঘড়ির প্যান্ডুলামের মতো একবার বামে আরেকবার ডানে দুলছে। সোজা কথায় বলা যেতে বলা যেতে পারে প্রবীন এই দলটির এখন কোন আদর্শ নেই। যখন যেমন তখন তেমন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ কেন কেয়ারটেকার  সরকার ব্যবস্থার জন্যে যুদ্ধ করেছিল আর এখন আদলতের দোহাই দিয়ে  কেন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা জাতির কাছে সুস্পস্ট নয়। বংগবন্ধু নিজেও গণতন্ত্র আর সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সব সময় দোটানায় থাকতেন। প্রথমে কিছুদিন রাস্ট্রপতি থাকলেন, ভাল লাগলোনা হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। বহুদল ভাল লাগলোনা, চালু করে দিলেন বহুদল। আবার হয়ে গেলেন রাস্ট্রপতি। দেশবাসী জানেনা  আওয়ামী লীগের মাথায় এখন ভাবনা কাজ করছে। গণতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ৬২ বছর ধরে এ ধরনের খেলা খেলে যাচ্ছে। মনো জগতে থিতু হতে পারছেনা। অপরদিকে ভারত নিজেদের জাতীয় ও রাস্ট্রীয় স্বার্থে আওয়ামী লীগকে যখন যেমন তেমন করে ব্যবহার করে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বার বার করে ব্যাহত হচ্ছে। রাজনৈতিক দল গুলোর অগণতান্ত্রিক ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছে নানা ধরনের দেশী বিদেশী শক্তি।

বেশ কিছুদিন আগে এশিয়ার অন্যতম প্রধান নেতা ড: মহাথির বলেছেন, পশ্চিমা গণতন্ত্র এশিয়ার জন্যে গ্রহণযোগ্য নয়। এশিয়া  কোনদিক থেকে কখনই ইউরোপের মত নয়। স্যামুয়েল পি হান্টিংটন তাঁর ‘ ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন ’ পুস্তকে সুস্পস্ট ভাষায় বলেছেন, দুই সভ্যতার সংঘর্ষ অনিবার্য। রাস্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের আদর্শ উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশ কোন ধরনের রাস্ট্র হিসাবে বিকশিত হতে চায় তা দেশের রাজনীতিকরা নিশ্চিত নন বা  এ ব্যাপারে তাঁদের কোন ধারনাও নেই। ১৯০ বছরের বৃটিশ শাসনের ফলে আমরা প্রজা বা পরাধীন নাগরিক হিসাবে এক ধরনের রাজনীতি গণতন্ত্র ও নির্বাচন পেয়েছি যা এখন অচল হতে চলেছে। আমাদের রাজনীতিতে পশ্চিমের উপর নির্ভরশীলতা থাকার ফলে আমরা কখনই স্বনির্ভর হতে পারিনি। আমাদের চোখের সামনেই চীন কোরিয়া মালয়েশিয়া সিংগাপুর ও তাইওয়ান সকল দিক থেকেই অগ্রগতি লাভ করেছে। ৪৭ থেকে ২০১১ সাল প্রায় ৬৪ বছর পার হতে চলেছে আমরা অশিক্ষা ও দারিদ্র থেকে মুক্তি লাভ করতে পারিনি। নগর রাস্ট্র সিংগাপুরে নানা দেশের মানুষ বাস করে। নিজেদের তেমন কোন সম্পদ নেই, তবুও তারা সেখানে অনায়াসে গণতন্ত্রের চর্চা করছে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মালয়েশিয়াতেও বহু ধর্মের বহু সংস্কৃতির মানুষ বাস করে। দেশের উন্নতির ব্যাপারে তারা সকলেই মহাথিরকে নেতা  মেনে নিয়েছিল। পশ্চিমারা মালয়েশিয়ার অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্যে বহু ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সত্যিই খুবই একটা সুন্দর দেশ। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলে ও লেখে। দেশের অর্ধেক মানুষ গরীব ও নিরক্ষর। ভোটের সময় পয়সায় বা বিনে পয়সায় ভোট দেয় প্রভাবশালীদের নির্দেশে। আগেও বলেছি  এখনও বলছি, আমাদের নেতারা মনোজগতে দূর্বল বলে সব সময় পশ্চিমা নেতাদের খপ্পরে থাকে। কথায় কথায়  পশ্চিমাদের কাছে হাত পাতে।ফলে আমাদের গণতন্ত্র  রাস্ট্র ব্যবস্থা   আইন আদালত  মানবতা  দৈনন্দিন জীবন সবকিছু পশ্চিমী ধ্যান ধারণার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমাদের রাজনৈতিক দূর্বলতার সুযোগে নানা রকম ধুয়া তুলে আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয়ে অবিরত বাধা সৃস্টি করে যাচ্ছে। এখন আমাদের  দেশে যা কিছু ্চ্ছে তার সবকিছুর পেছনে পশ্চিমাদের হাত আছে বলে জন সাধারন মনে করে। এমন কি শিক্ষিত  মানুষরাও মনে করে সবকিছু করছে আমেরিকা ও তার বন্ধুরা। এখন সেই তালিকায় নতুন নাম যুক্ত হয়েছে ভারতের। মাজুর গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ থেকে মুক্তির পথা খোঁজার সময় এসে গেছে। ( নয়া দিগন্ত, ৯ই জুলাই, ২০১১ )

লেখক; কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


নারী মুক্তি , নারীর মর্যাদা , নারীর অধিকার , নারীশিক্ষার কথা বলেছে ইসলাম আজ থেকে ১৪৩২ বছর আগে। কিন্তু বিশ্ববাসী তা শুনতে পায়নি। শুনলেও কান দেয়ার সময় পায়নি। এমন কি মুসলমানরাও বিষয়টা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেনি। ওলামা মাশায়েক ও ইসলামিক স্কলারগণ হয়ত শত শত বছর ধরে বলে যাচ্ছেন। কিন্তু তার প্রভাব মুসলমানদের উপর পড়েনি। ভারতে মুসলমানরা এসেছে প্রায় ১৩০০ বছর আগে ৭১১ সালে। সুফী সাধক ও ইসলাম প্রচারকরা এসেছেন প্রায় সাথে সাথেই । এই উপমহাদেশের লোক সংখ্যা এখন যদি ১৬০ কোটি হয়ে থাকে তন্মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ৬০ কোটির মতো। অখন্ড ভারত  শাসন করেছে মুসলমানরা প্রায় ৭০০ বছর। কিন্তু শাসকরা কোথাও  ইসলাম প্রচার নিয়ে জবরদস্তি করেননি। এ কাজটা করতেন সুফী সাধক ও ইসলামের জ্ঞানী মানুষগণ। ভারতীয়রা এখনও প্রকৃতি পুজা করে। তারা এখনও বর্ণবাদী অমানবিক সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। ভারতের শাসন ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের প্রভাব এখনও ৯০ ভাগ। সম্প্রতি ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধুতী রায় বলেছেন, ভারত নিজের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করে। সেখানে সীমাহীন দারিদ্র বিরাজ করছে এবং তার সাথে যোগ হয়েছে বর্ণ বৈষম্যবাদ। ভারতের কমিউনিস্টরাও এই বর্ণবাদের বিশ্বাস করে।

সোজা ভাষায় এবং সোজা কথায় বলতে হবে ভারতে ইসলাম প্রচারে মুসলমানরা কোন জবরদস্তি করেনি। আমাদের আজকের বাংলাদেশ এক সময় প্রকৃতি পূজক ও বৌদ্ধদের আবাস স্থল ছিল হাজার হাজার বছর  ধরে। সাধারন মানুষ নির্যাতিত ও নিষ্পেশিত হয়ে এক সময় ইসলামী জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ইসলামে কোন ধরণের বর্ন বা শ্রেণী বৈষম্য নেই। ফলে এখানে এখন ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। ইংরেজ আমলের ১৯০ বছর মুসলমানদের উপর সীমাহীন নির্যাতন হয়েছে। দুর্ভিক্ষের সময় মুসলমানদের  খৃস্টবাদে দীক্ষিত হওয়ার আহবান জানানো হয়েছিল। তারা খাদ্যাভাবে মৃত্যু বরণ করেছে, কিন্তু ধর্ম ত্যাগ করেনি। ইসলাম একটি সর্বাধুনিক ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা। তবুও দেশে দেশে নারীরা পুরুষদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এর কারণ সমাজ ও দেশের পরিচালক গন ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার সম্পর্কে সজাগ নন। অথবা সজাগ থেকেও নারীদের সে অধিকার দিতে চাননি বা অধিকার প্রতিস্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করেছেন। সমাজপতিদের বার্থতার কারণে  জনগণ মনে করেছে এটা ইসলামের ব্যর্থতা। আমাদের ধর্মগুরুরাও নারী অধিকার, নারীর মর্যাদা ও নারী শিক্ষার ব্যাপারে গণজাগরন সৃস্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনও ধর্মগুরুরা  নারী অধিকারের ব্যাপারে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পারছেননা।

বাংলাদেশের চলমান সমাজ ব্যবস্থায় ৮০ ভাগ লোকই চরম দরিদ্র বা দরিদ্র। বিগত ৬৩ বছরে দরিদ্রদের ভিতর থেকে শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষ  নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উত্তরন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাতেও দেশে দরিদ্রের সংখ্যা কমেনি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির কারণে বহু প্রান্তিক কৃষক জমিজমা ও হালের বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এই শ্রেণী কিছু কাল গ্রামে কৃষি শ্রমিক হিসাবে জীবন যাপন করতে না পেরে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের প্রায় সবাই যুগের পর যুগ ধরে সর্বহারা হিসাবে জীবন যাপন করছে। এক সময় তারা যে কৃষক ছিল সেকথা তাদের সন্তানেরা ভুলে গেছে। এদের কারণেই রাজধানী সব বড় বড় শহর গুলোতে স্লামস বা বস্তি গড়ে উঠেছে। পুরো  পরিবার রাজধানীতে দিনমুজুর হিসাবে কাজ করে। এখানেই মাস্তান সন্ত্রাসীদের জন্ম হয়।এখানেই অবাধ ব্যভিচারের জন্ম হয়। এদেরকেই রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করে। এদের পুলিশও ব্যবহার করে। এই শ্রেণীর লোকদের নারী পুরুষ সবাই বহু বিবাহ করে থাকে। এসব বিয়ের কোন রেকর্ড থাকেনা। এখানে তালাক বা ডিভোর্সেরও কোন রেকর্ড থাকেনা। এরা কেউই নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। অবস্থা দেখে মনে হয় এ ব্যাপারে সরকারেরও তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। দু:খ হলো আমাদের রাস্ট্রের কোন লক্ষ্য বা আদর্শ নেই। ফলে দেশের অর্ধেক মানুষকেই মানবেতর জীবন করতে হয়। নারী শোষণের আরেক বিরাট চারণ  ভুমি হলো গ্রাম বাংলা। গরীব নিরক্ষর নারীরা এখানে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত ও নির্যাতিত। এর একমাত্র কারণ শিক্ষার অভাব  ও নিজ অধিকার সম্পর্কে অচেতন। ফলে গ্রামে মেয়েদের বিয়ে নিবন্ধন হয়না। কথায় কথায় তালাক হয়। বিয়ের বিয়ের ধর্মীয় বিষয় গুলো সম্পন্ন করেন গ্রামের মতবর ও এলাকার ধর্মীয় গুরুরা। এইসব ধর্মীয় গুরুদের অধিকাংশই তেমন লেখাপড়া জানেন না এবং গরীব। এরা নামাজ  ও মিলাদ পড়ায়। খাওয়ার বিনিময়ে শিশুদের  আলিফ বা  সা পড়ায়। আমি মনে করি এটাও রাস্ট্রের বিরাট ব্যর্থতা। সেকুলার শিক্ষার প্রতীক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এ ব্যাপারে  উদাসীন। এলাকার  চেয়ারম্যান মেম্বারগণ ও  সব সময় দুর্বৃত্তদের পক্ষে অবস্থান নেয়। থানা পুলিশ দুর্বৃত্তদের পক্ষেই থাকে। অবৈধ যৌন মিলনের কারণে মেয়েদের দোররা মারা হয়, মাথার চুল কামিয়ে দেয়া হয়, প্রকাশ্য হাটে বাজারে মেয়ে এবং তার বাবা মাকে অপরাধী  সাব্যস্ত করা হয়। এখানেই ফতোয়ার অপব্যবহারের বিষয়টা আসে। যারা ফতোয়া দেয়ার অধিকারী নয় তারাই ফতোয়া দেয়। ফতোয়া নাটকে একজন লম্বা জুব্বাওয়ালা হুজুরও থাকেন। সাথে থাকেন এলাকার মাতবর ও থানা পুলিশ। শেষ পর্যন্ত দোষ বা অপরাধ গিয়ে পড়লো ফতোয়া নামক শব্দের উপর। ফতোয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন এক শ্রেণীর এনজিও নেতা/নেত্রী, সেকুলার বড় বড় উকিল, যাদের কারোই ফতোয়া বিষয়ে জ্ঞান নেই। যাঁরা ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দেন তাঁদেরও ফতোয়া বিষয়ে কোন  ধারনা বা জ্ঞান নেই। ফতোয়া কি বিষয়, কি তার উত্‍স তা না জেনে ইসলাম বিরোধী শক্তির খপ্পরে পড়ে কিছু এনজিও আর কিছু বুদ্ধিজীবী রাস্তায় মিছিল বা মানব বন্ধন করে ফতোয়ার বিরুদ্ধে।

নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে এখন  সেকুলার সরকার প্রতিস্ঠিত। ২৬৩ সিটের জোরে সংবিধান থেকে ইসলাম আল্লাহ বিসমিল্লাহ বাদ দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। আমি ভাবতেও পারিনা বংগবন্ধুর কন্যা হাসিনা এমন একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। রাস্ট্রকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে দায়িত্ব দিয়েছেন সুরঞ্জিত বাবুকে। এই সুরঞ্জিত বাবুই এক সময় বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘বাঘে ধরলে ছেড়ে দেয়, হাসিনা দরলে ছাড়েনা’। এই বাক্যটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে না বিপক্ষে তা জনসাধারনের বোধগম্য নয়। বংগবন্ধু নিজেও ক্ষমতায় থাকা কালে এমন অনেক ভুল করেছিলেন। সারা জীবন বহু দলীয় গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রাম লড়াই  করে  এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। চারটি ছাড়া সব কাগজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আগেই বলেছি ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অবস্থান অন্য যেকোন ধর্ম বা দর্শন থেকে অনেক অধুনিক ও প্রগতিশীল। কিছু কিছু ধর্মে নারীকে এখনও মানুষ হিসাবেই গণ্য করা হয়না। চলমান বা বিকৃত তৌরাতে নারীদের পাপের প্রতীক বলা হয়েছে। তারা মনে করে  মানব জাতির মা বিবি হাওয়া পিতা হজরত আদমকে ফুসলিয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাইয়েছে। সুতরাং সকল অপরাধ বিবি হাওয়ার। খৃস্টধর্মে বিশ্বাসী নকল বাইবেল পন্থীরা মনে করে বিবি হাওয়া অপরাধী। কিছু কিছু মুসলমান না জেনে বা অজ্ঞতার কারণে ও রকমই মনে করে। আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে তাঁরা দুজনই ছিলেন পবিত্র। অভিশপ্ত শয়তান তাঁদের কিছুক্ষনের জন্যে বিভ্রান্ত করেছিল। পরে তাঁরা আল্লাহপাকের ক্ষমা লাভ করেন।

ইসলামে নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে বিদ্যার্জন ফরজ করা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের প্রশ্নে ইসলামে নারী পুরুষে কোন ভেদাভেদ বা ফারাক নেই। কিন্তু সমাজপতি ও রাস্ট্র নারীদের বঞ্চিত করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় , সারাবিশ্বেই এমনটি ঘটেছে। এখনও বহুদেশে নারীদের কেন্দ্র করে বহু ভুল ধারনা বিরাজ করে। বাংলাদেশে নারী স্বাধীনতার যে ঢেউ লেগেছে তা এসেছে পশ্চিম থেকে সরাসরি এবং কোথাও কোথাও জাতিসংঘ থেকে। জাতিসংঘ বা পশ্চিমের নারী স্বাধীনতার কন্সেপ্ট বা ধারনার সাথে ইসলামী আইন ও নীতির সাথে কোন মিল নেই। পশ্চিম নারীকে মা বোন কন্যা ও স্ত্রীর মর্যাদা থেকে টেনে হিচড়ে নামি পণ্যে পরিণত করেছে এবং করছে। তারা নারীকে বেআব্রু করে ফেলেছে। নারীর উলংগপনাকেই তারা স্বাধীনতা বলে চালাবার চেস্টা করছে। তারা স্বাধীনতার নামে নারী ও পুরুষের সমকামিতায় বিশ্বাস করে এবং সেভাবে আন্দোলন করছে এবং আইন পাশ করছে। তারা হাজার বছরের পুরাণো পরিবার বাবস্থা ও প্রতিস্ঠানটকে ভেংগে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে। পশ্চিমে এখন বিয়ে বিষয়টা আর থাকছেনা। কোন কোন দেশে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী সমকামী বলে বড় গলায় প্রচার করছে। কুমারী মাতৃত্বকে তারা উত্‍সাহিত করছে। এমন কি স্কুলের মেয়েরা মা হয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমের ধারনা ও বিশ্বাস গুলোকে আমাদের বাংলাদেশে চালান দেয়ার জন্য জাতিসংঘ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। পশ্চিম ও জাতিসংঘের এসব বেলেল্লাপনাকে সমর্থন করছে আমাদের দেশের একশ্রেণীর নারী ও পুরুষ। তারা নাকি উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চ মর্যাদার  এবং প্রভাবশালী। তারা সরকারের ভিতরেও আছে বাইরেও আছে। তারা উচ্চ আদালতে আছে এবং নিম্ন আদালতেও আছে। তারা নামজাদা আইনজীবী। এদের প্রায় সবারই আরবী নাম । এরা কখনও কখনও নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে। দাবী করে আমাদের বাপ দাদারা খান সাহেব বা খান বাহাদুর ছিলেন। এদের ছেলে মেয়েরা উকিল ব্যারিস্টার বা বিচারক হয়ে আদালতে আসা যাওয়া করেন। এদের ক্লাব আছে। সেখানে মদ্যপান করে নারী পুরুষ মিলে। এসবই হচ্ছে তাদের সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। এরাই ফতোয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে। না  জেনে নারী অধিকার নিয়ে কথা বলে। নারীর সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে সেমিনার করে, মিথ্যা বিবৃতি দেয়, রাস্তায় মানব বন্ধন করে। জাতিসংগ ও পশ্চিমা দূতাবাস  গুলো তাদের অর্থের জোগান দেয়। এরা যখন  তখন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে। এরা মনে করে ইসলাম আধুনিক নয়। এরা  ইসলামের সংস্কার চায়। হতভাগা এই দেশে ধর্মমন্ত্রী হয় এমন  সব ব্যক্তি  যারা মোটেই ধর্ম মানেনা। এটা হলো ধর্মের ব্যাপারে সরকারের তামাশা।

নারীনীতি নিয়ে এরা দলবেধে সরকারের সাথে গলাবাজি করেছে। দেশের সাধারন সহজ সরল  মানুষের সাথে প্রতারণা   করেছে। সরকার  নারীনীতির যে খসড়া প্রাকাশ ও প্রচার করেছে তার ভিতর লুকিয়ে রাখা হয়েছে ইসলামের বিরোধিতা এবং ইসলামকে ধ্বংস করার পশ্চিমা যড়যন্ত্র। আমি অবাক ও বিশ্বিত হয়েছি যখন দেখলাম প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা ওই নারীনীতির পক্ষে গলাবাজি করেছেন। আরও অবাক হয়েছি যখন দেখলাম সরকার দেশের আলেম সমাজ ও ওলামা মাশায়েকদের অজ্ঞ ও অশিক্ষিত মনে করেছেন। প্রস্তাবিত নারীনীতি গ্রহণ বা বাস্তবায়নের আগেই আমাদের দেশের শিক্ষিত পরিবার গুলো ভাংতে শুরু করেছে নারী স্বাধীনতার নামে। আপনারা  যে কেউ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অফিসের বিয়ে সংক্রান্ত সালিশী আদালত ও ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে যেয়ে  একবার খোঁজ নিন। দেখবেন,  একশ’ তালাকের দরখাস্তের ভিতর মেয়েদের দরখাস্তের  পরিমাণ  ৭০ থেকে ৯০ ভাগ। ছোটখাট বিষয়ে তর্ক বা ঝগড়া করে মেয়েরা তালাকের আবেদন করছে বা তালাক নিবন্ধন করছে। কিছু কিছু শিক্ষিত মেয়ে পাওয়া গেছে যারা বার বিয়ে করছে এবং তালাক দিচ্ছে। বেনিফিট হচ্ছে মোহরের টাকা ও স্বর্ণালংকার। কোন কোন ক্ষেত্রে বিয়ের এক মাসের ভিতরেই তালাক হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর বহু বড় বড় পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন, তাদের  ছেলে মেয়েদের কারোরই বিয়ে টিকছেনা। বিয়ে ভেংগে যাওয়ার ব্যাপারটা তাদের কাছে কোন বিষয়ই নয়। তারা দিব্যি আরামে আছে। নিজেদের বাড়ি গাড়ী আছে। কেউ কেই চাকুরী করছে। কেউ সমকামী হয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি নারীনীতি বিষয়ক এক সেমিনারে নামজাদা পরিবারের এক তরুণী ব্যারিস্টারের সাথে আমার কথা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম আপনারা যারা অতি আধুনিক এবং স্বাধীনচেতা তারা ইসলামী শরীয়ত মেতাবেক বিয়ে না করে কোর্টে গিয়ে সিভিল ম্যারেজ করতে পারেন। সেখানে কোন ধরণের কাবিন বা মোহরের প্রশ্ন উঠবেনা। কোর্ট রেজিস্ট্রেশনের পরে পাবলিক রিসেপশন করতে পারেন। চলামান বা প্রচলিত কাবিন ব্যবস্থায় ছেলেকে মেয়ের কাছে যাবতীয় ওয়াদা করতে হয়। মোহর দিতে হয় লাখ লাখ টাকার। মেয়েকে কোন ধরণের ওয়াদা করতে হয়না। বলেছিলাম, আপনারা যারা ধনী উচ্চ শিক্ষিত অভিজাত পরিবারের মেয়েরা তারাতো নতুন ধরণের কাবিন বানিয়ে ছেলের ভরন পোষনের ওয়াদা ও মোহর দিয়ে ঘরে তুলে নিতে পারেন। বলতে পারেন এটা হবে এক ধরনের সিভিল কন্ট্রাক্ট। ছেলে হবে  হাউজ হাজব্যান্ড। ঘর দেখাশোনা করবেন। বাচ্চাদের লালন পালন করবেন। ওদের স্কুলে নেওয়া আনা করবেন। শুনে তরুণী ব্যারিস্টার হাসলেন এবং বললেন, হলেতো ভাল হয়, কিন্তু আপনাদের জন্যে পারবোনা। প্রসংগত, আমি তাঁকে সিংগাপুরের একটি মামলার কথা বললাম। মামলাটি ছিল, এক চীনা মহিলা ২০ বছর সংসার করার পর  তার স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন। চীনা মহিলা ব্যবসা করতেন এবং সকালে বেরিয়ে গিয়ে বিকালে ফিরতেন। ভদ্রলোক সংসার দেখতেন। তালাকের পর তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন। তার থাকা খাওয়ার জায়গা নেই। আয়ের কোন পথ নেই। জমা কোন অর্থ নেই। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের আশ্রয় নিলেন। আদালত তাকে হাউজ হাজব্যান্ড হিসাবে ঘোষণা দিলেন এবং ওই মহিলাকে নির্দেশ দেয়া হলো তার সাবেক স্বামীকে আজীবন খোরপোষের ব্যবস্থা করতে। ওই রায়ে মাসিক নগদ ভাতার ও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

আমাদের সমাজে  যারা ইসলামী শরিয়তকে পছন্দ করেন না তারা সিংগাপুরের এই ঘটনাকে কাজে লাগাতে পারেন। যাদের একটি মাত্র কন্যা তারাও পুরাণো ঘরজামাই ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন। সোজা কথায় বলা যেতে পারে  ইসলামী শরীয়তে  স্ত্রীর ভরণ পোষনের  দায়িত্ব স্বামীর। চলমান নারী অধিকার আইনের অপব্যবহার করে আদালতে  ৮০  ভাগ মিথ্যা ও ভুয়া মামলা হচ্ছে শুধু মাত্র ছেলেদের শাস্তি দেয়ার জন্যে অথবা আক্রোশ বা রাগ মিটাবার জন্যে। এই সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানার জন্যে গিয়েছিলাম  ড: কামাল সাহেবের ব্লাস্টে। এই প্রতিস্ঠানটি নারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে কাজ করেন। ব্লাস্টের একজন ডেপুটি  ডাইরেক্টর যিনি হিজাব পরিহিত ছিলেন, আমাকে জানালেন তাঁরা অসহায় মহিলাদের জন্যে কাজ করেন। মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা ধনী নারীদের বিষয়ে কাজ করেন না। তবে তিনি একটি মন্তব্য করেছিলেন, তাহলো ‘ নারী অধিকার আন্দোলনের এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েরা নিজেদের শোষিত মনে করে বলেই এ রকম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। (১০ জুলাই, ২০১১, আমার দেশ )

লেখক : কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


প্রাক আধুনিক, আধুনিক বা উত্তরাধুনিক সময় বা কালের ধারণাটি এসেছে পশ্চিমের দেশ থেকে। একই ভাবে বিশ্বায়নের থিওরীও এসেছে পশ্চিমের দেশ থেকে। পূর্বের মানুষ ও দেশ গুলো হচ্ছে এসব ধারণার প্রধান লক্ষ্য। এসব ধারণার শিকার আমাদের বাংলাদেশও। আধুনিক কাল কখন শুরু হলো আর কখন শেষ হলো সেটাইতো জানেনা জগতের মানুষ। এর মাঝেই শুরু হয়ে গেল উত্তরাধুনিকতা নিয়ে নানা জনের নানা মত। বলা হচ্ছে এসব মধ্যবিত্ত কবি সাহিত্যিক শিল্পী দার্শনিক মিডিয়া মালিক  কর্মী  আর ইতিহাসবিদদের কথা। সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করছে  মিডিয়া নেতা ও কর্মীরা। চলমান সময়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিশাল প্রভাব। আমি মনে করি, উত্তরাধুনিকতা ও বিশ্বায়ন একটি পশ্চিমী ধারনা। যা আধুনিকতা বা উত্তরাধুনিকতার নামে তাবত্‍ পৃথিবীতে মানুষের মৌলিক মূল্যবোধের উপর আঘাত হেনেছে। যা আমাদের নিজস্ব ধর্ম দর্শন সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করার একটা কূট কৌশল। ভৌগলিক সাম্রজ্যবাদী ব্যবস্থা  শেষ হতে না হতেই পশ্চিমারা আমাদের উপর নতুন আগ্রসান শুরু করেছে। একটা হলো চিন্তার জগতে আঘাত করা, অন্যটা হলো অর্থনীতিতে আঘাত করা। পশ্চিমা নেতারা জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যান্ক, আইএমএফ, আইএফসি সহ আরও বহু ধরনের সংগঠন তৈরি করেছে, যা সুকৌশলে আমাদের আমাদের রাস্ট্রীয় ও পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করেছে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে হাজার রকমের প্রেসক্রিপশন আসছে রাস্ট্র এনজিও মিডিয়া শিক্ষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে।

অখন্ড বাংলাদেশে ৬০ ভাগ অধিবাসী ছিল মুসলমান। হাজার বছর আগে থেকে এখানে মুসলমানদের আগমন শুরু হয়েছে। এসেছেন বিখ্যাত সুফী সাধকগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে। চোখ ও মন খুলে দেখলে এবং ভাবলে যে কেউ বুঝতে পারবেন কেন এই অঞ্চলে এত মুসলমানের আগমন। এই অঞ্চলের সাধারন কৃষক শ্রমিকদের উপর ছিল অবর্ণণীয় সামাজিক ও ধর্মীয় অত্যাচার। ঠিক এমনি অবস্থাতেই মুসলমান সূফী সাধকগণ ইসলামের মানবিক বিষয়ের প্রতি জনগণের দৃস্টি আকর্ষন করেন।ফলে বাংলার কোটি কোটি মানুষ সাম্যবাদী ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করেন। ১২০৪ সালেই মুসলমান শাসকগণ বাংলাদেশ বিজয় করেন। সেই থেকে এই অঞ্চলে মুসলমানরা শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। ১৭৫৭ সালে ইংরেজ বণিকরা এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলা দখল করে নেয়। সেই দখলদারিত্ব বজায় রাখে ১৯৪৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১৯০ বছর। ইতিহাসের এই কালটি ছিল সীমাহীন শোষনের ইতিহাস। ভারতবাসী , বিশেষ করে অখন্ড বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে। হান্টার সাহেব তাঁর বইতে এ শোষণের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। ইংরেজদের এই শোষণের প্রধান টার্গেট ছিল বাংলার মুসলমান। ১৭৫৭ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত একশ’ বছর ইংরেজ বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল ভারতের মুসলমান। মাতৃভুমিকে বিদেশীদের দখল থেকে মুক্ত করা ছিল মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। এ সময়ে মুসলমান  স্বাধীনতাকামীরা  ছিল সন্ত্রাসী। আর হিন্দুরা ছিল দেশপ্রেমিক ও ইংরেজদের বন্ধু। হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা ইংরেজ শাসনামলকে পূণর্জাগরন বা রেনেসাঁ বলে অভিহিত করেছেন। এমন কি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , রাজা রাম মোহন রায় ও বন্কিমচন্দ্র ইংরেজ আগমন ও শাসনকে আশীর্বাদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ভারতের কোন মুসলমানই বিদেশী শাসনকে রেনেসাঁ বা পুণর্জাগরন বলে অভিহিত করেনি। কারণ পরাধীনতা কখনও আশীর্বাদ হতে পারেনা। পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করা ইসলামের নির্দেশ ও শিক্ষা। যে মুসলমান পরাধীনতা, অধীনতা  বা স্বাধীনতার পার্থক্য বুঝতে পারেনা সে ইসলামের মর্মবাণীই বুঝতে পারেনি। মুক্ত স্বাধীন মানুষের জন্যই ইসলাম এসেছে জগতে। ইসলামই প্রথম জগতের মানুষের কাছে মুক্তির বাণী শুনিয়েছে। পরাধীনতা আর দাসত্বের অবসানের ঘোষণা করেছে।

পরাধীনতার যুগে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠি এদেশে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে বলে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি দাবী করে গেছেন। এখনও অনেকেই দাবী করেন। এটা হচ্ছে চিন্তা জীবন দর্শনের বিষয়। বিদেশী শাসক তার প্রজাদের কি দিতে পারে। একদিকে আমরা বিদেশী শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করছি  প্রাণ দিচ্ছি,  অপরদিকে বলছি, তারা আমাদের জন্যে আশীর্বাদ। একদিকে বলছি তারা ভারতীয়দের জীবনে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মালিকানা আল্লাহতায়ালার। যারাই চেস্টা করবে তাদের জন্যে এ জ্ঞানের দরজা খোলা, তারাই এ জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এক সময়ে পশ্চিমা জগতে জ্ঞান- বিজ্ঞান বিতরন করেছে মুসলমানরা। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, তোমরা যতদিন আল্লাহর এই কিতাব ও আমার সুন্নাহ  বুকে ধারন করবে ততদিন জগতের ইমামতি তোমাদের হাতেই থাকবে।এর মানে হচ্ছে যতদিন তোমরা জ্ঞান চর্চা করবে ততদিন পৃথিবীর নেতৃত্ব তোমাদের কাছে থাকবে। মুসলমানেরা রাসুলের(সা) সেই নির্দেশ মান্য করেনি। তাই তারা আজ অপমানিত, লাঞ্চিত ও নির্যাতিত। পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করছে। পৃথিবীকে কব্জা করে রেখেছে। আর মুসলমানেরা মসজিদে মসজিদে দুই হাত উপরের দিকে কান্নাকাটি করছে। যারা ঘরে বসে কাঁদে আর  মহান করুণাময় আল্লাহপাকের রহমত ও বরকত চায় তাদের জন্যে  আল্লাহপাক কি রেখেছেন তিনিই ভাল জানেন।

পশ্চিমের  আধুনিকতা বা উত্তর আধুনিকতা একটা ধোকা মাত্র। এটা একটা বিভ্রান্তি মাত্র। আমরা গরীব আর মধ্যবিত্তরা না বুঝে এর পিছনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছি। উত্তর আধুনিকতা নিয়ে কবিতা প্রবন্ধ গল্প গাণ চিত্রাংকন ও ছবি বানাচ্ছি। উত্তর  আধুনিকতা মানে  অস্বচ্ছতা অবস্কিউরিটি ধোঁয়াশা। এই না বুঝা না দেখার বিষয়টা সবাইকে মাতোয়ারা করে তুলেছে। অপরদিকে কালের দাবী বা চলমান সময়ের চাহিদা  বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম আবিস্কারকে আধুনিকতা বলে চালানো হয়েছে। পুরাণো যুগ থেকে শুরু অগ্রসরমান সকল সময়ই আগের সময়ের তুলনায় আধুনিক। আকাশের খবর, পাতালের খবর, বাতাসের খবর সবইতো আধূনিক। এসব খবর কখনও পূর্ব থেকে এসেছে , কখনও বা পশ্চিম থেকে এসেছে। গ্রহটা এখন পশ্চিমের দখলে তাই তাদের জয় জয়াকার। মানুষ পুরাণো দিনের কথা ভুলে গেছে।  পশ্চিমের উত্তর আধুনিকতা আমাদের তেমন কিছুই দিতে পারেনি। বরং অনেক বেশী বিভ্রান্তির ভিতর ফেলে দিয়েছে। আমাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবীরা সেই বিভ্রান্তির জালে ফেঁসে গেছে। চোখ আর মন খুলে পাঠক যদি একবার চলমান বাংলাদেশের চিত্রের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন তথাকথিত সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের গিলে খাচ্ছে। এইতো ক’দিন আগে ভেটিকান সিটির পোপ আহবান জানিয়েছেন, সেকুলারিজম পরিহার করার জন্যে। সেকুলারিজম যে পশ্চিমের সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা বিলম্বে হলেও পোপ বুঝতে পরেছেন। তিনি খৃস্ট জগতকে আহবান করেছেন সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্যে।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার সামান্য কয়েকজন লোকের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার কথাটি তুলে দিচ্ছে। রাস্ট্র ধর্ম ইসলাম কথাটি ফেলে দিয়ে সেখানে ধর্ম নিরপেক্ষতা কথাটি সংবিধানে যোগ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। পশ্চিম বাংলায় মমতা বানার্জির সরকার দশ হাজার মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ছাত্রদের দাবী মোতাবেক কোলকাতা আলীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দিয়েছেন মমতা। অপরদিকে  শেখ হাসিনার সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করেছেন। দাঁড়ি টুপিওয়ালা ছাত্র ও বোরখা বা হিজাব পরা ছাত্রীদের পুলিশ  ও রেব হেনস্থা করছে। শেখ হাসিনার সরকার এখন যা করছে তা পাকিস্তান বা বৃটিশ আমলেও ঘটেনি। সব হচ্ছে সেকুলারিজমের নামে। শুনেছি, সরকার এসব করছে আমেরিকা ও তার মিত্র ভারতের নির্দেশে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার হয়ত ধারনা হয়েছে ভারত ও আমেরিকাকে হাতে রাখতে পারলে তাঁরা  নিজেদের ইচ্ছামত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এবং প্রভুদের অথবা মিত্রদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ যিনি  মোটামুটি সুন্দরভাবে কথা বলেন তিনি বলেছেন বিগত ৬০ বছরে আওয়ামী লীগ কখনও পরাজিত হয়নি। আমার ধারনা ছিল তিনি কখনই ফালতু কথা বলবেন না। তাঁর বাবা মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম যিনি মুজিব নগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাস্ট্রপতি ছিলেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিল্পমন্ত্রী ছিলেন তিনি কখনই অশালীন অশ্লীল বা উচ্চকণ্ঠে কথা বলতেন না। বংবন্ধুর গলা বা কণ্ঠস্বর নকল করতে গিয়ে আওয়ামী নেতা ও কর্মীরা যাত্রার বিবেকের ভুমিকায় অভিনয় করতে শুরু করেছেন। শুনেছি, সত্য কি মিথ্যা জানিনা, ফালতু বা অবান্তর কথা না বললে আওয়ামী লীগে টিকে থাকা যায়না। তা না হলে সুরণ্জিত বাবুর মতো একজন সিনিয়ার নেতা বলে ফেললেন, ‘বাঘে ধরলে ছেড়ে দেয়, হাসিনা ধরলে ছাড়েনা।’ এ ধরণের বাক্য শুনলে নাকি নেত্রী খুশী হন। সুরণ্জিত বাবুর বাক্যটি এখন বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে  চায়ের স্টলে আলোচিত ও কথিত। জানিনা, আগামীদিনে থেকে ৫০/১০০ বছর পরে মায়েরা হাসিনার কথা বলে শিশুদের ঘুম পাড়াবে কিনা।

আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন  আধুনিক বা উত্তর আধুনিক কালে বা যুগে  আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান কি। আমি বলবো আমরা কিছুই পাইনি,  কিন্তু হারিয়েছি অনেক কিছু। বর্ণিত কাল বা যুগ বাংলাদেশকে কিছুই দিতে পারেনি। বরং কেড়ে নিয়েছে  অনেক কিছু। উত্তর আধুনিকতা পশ্চিমের সমাজ ও সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে এখন পরিবার বলে কিছু নেই। আর এসব হয়েছে নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে। সম্প্রতি জাতিসংঘ ইউএন ওমেন(UN Woman) নামে জাতিসংঘের একটি সংগঠণ প্রতিস্ঠিত হয়েছে। এই সংগঠনের লক্ষ্য ও আদর্শ  হচ্ছে সদস্য দেশগুলোতে নারীদের অধিকার প্রতিস্ঠা করা। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও নীতি ও আদর্শ ভ্রস্ট পশ্চিমা দেশের চাপে পড়ে আমাদের জনগণের বিশ্বাস ও আদর্শের বিরুদ্ধে এক সেকুলার নারীনীতি চাপিয়ে দেয়ার চেস্টা করছে। সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা , মানবতা , মানবাধিকার , গণতন্ত্র ও বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের পঁচে যাওয়া আদর্শগুলো আমাদের উপর দিচ্ছে এবং চাপিয়ে দেয়ার অবিরাম চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রচেস্টার লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস , দর্শন , নৈতিকতা ও ধর্ম থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করা। বিশ্বের বড় সব মিডিয়াই এখন জুডিও খৃস্টবাদীদের দখলে। জায়নবাদীদের  মূলকথা হলো বিশ্বের সবধর্ম বিশ্বাসকে ধ্বংস করা। খৃস্টবাদীরাতো তাদের ধর্মকে প্রায় ভুলতে বসেছে। তারা তথকথিত সেকুলারিজম মত প্রকাশের অধিকারের  ধুয়া তুলে নবী ইসার নামে(আ) আজে বাজে ছবি বানায় ও গল্প বানায়। জগতের রহমত বিশ্বনবী হাজরত মোহাম্মদের কার্টুন বানায়, তাঁকে যুদ্ধবাজ হিসাবে চিহ্নিত করতে চায়।

আমদের দেশেও বড় বড় বহু জ্ঞানী গুণী আছেন যারা ধর্মকর্ম করেন না। ধর্মহীনতা প্রচার করেন। যারা ধর্ম পালন করেন বা করতে চান মৌলবাদী, প্রগতি বিরোধী, বিজ্ঞান বিরোধী বলে পরিহাস করে। ধর্মহীনতা তাদের কাছে এক ধরনের ফ্যাশান। তারা জেনেও না জানার ভান করেন যে, এক সময় সারা বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রচার ও প্রসার করেছে মুসলমান দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা। পশ্চিমা নিজেরাও একথা স্বীকার করেছে। কার্ল মার্কস নিজেই বলেছেন , ইসলাম একটি রেডিকেল রিলিজিয়ন। কার্ল মার্কস যদি ইসলাম ভাল করে পড়তেন বা জানতেন তাহলে তাহলে তিনি মানকল্যাণের জন্যে কমিউনিজম বা স্যোসালিজমের কথা বলতেন না। তাছাড়া ইউরোপে ধর্মের নামে শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করেছেন। সাধারন মানুষ তাঁর বক্তব্যকে গ্রহণ করেছেন এবং সেই আদর্শ মোতাবেক রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করেছে। প্রখ্যাত সমাজবাদী নেতা এম এন রয় নিজেও ইসলামকে রেডিকেল ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই দুই মণীষী ঠিকই বলেছেন। ইসলাম সত্যিই একটি বিপ্লবী ধর্ম। নির্যাতিত অবহেলিত ও নিস্পেষিত মানুষের মুক্তির জন্যেই ইসলাম জগতে এসেছে। ইসলাম বলিস্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছে, এ জগতে মানুষই প্রধান, মানুষই শ্রেস্ঠ এবং মানুষই শেষ কথা।‘ সাবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। মানুষের জন্যেই এ জগত সৃস্টি হয়েছে। মানুষের কল্যাণের জন্যই জগতে নবী রাসুল , ঋষি মণীষী, দার্শনিক কবিরা এসেছেন। আল্লাহপাক মানুষ সৃস্টি না করলে জগত সৃস্টি করতেন না। সেই মানুষকে পদ দলিত করে দাস করার জন্যে জগতে সকল যুগ ও শতাব্দীতে শয়তানের উম্মতেরা সমাজ ও দেশকে গ্রাস করেছে। তাদের কথাও আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন। তারা হচ্ছে ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাদ। চলমান ইতিহাসের হিটলার মুসোলিনী। আজকের দিনের বুশ ব্লেয়ার ওবামা ও তাদের পোষ্য তাবেদাররা। এক সময় ইসলামের নেতারা  নব্য ফেরাউনদের খপ্পরে পড়ে কমিউনিজমের বিরোধিতা করেছেন। আমেরিকা ও তার বন্ধুদের সহযোগিতা করেছেন। আজ ইসলাম ও মুসলমানরা  আমরিকা ও তার বন্ধুদের হাতে অপমানিত ও লাণ্ছিত। বিশ্বব্যাপী মানবতা বিরোধী শক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। চলমান বাংলাদেশ সরকার সেই যুদ্ধে আমেরিকার সহযোগী। এমন কি আগের সরকার গুলোও এ ব্যাপারে আমেরিকাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বিশ্বায়নের কথা বলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে নিচ্ছে। অবাধে তাদের সবকিছু আমাদের দেশে আসা যাওয়া করবে। কিন্তু আমরা যেতে পারবোনা। বিগত ৬৩ বছরে আমরা তাদের কাছ বহু ধার করজ করেছি। কিন্তু আমাদের দারিদ্র ও অশিক্ষা যায়নি। আমাদের মানুষ এখনও চরম দরিদ্র ও নিরক্ষর।কারণ দারিদ্র ও অশিক্ষা থেকে মুক্তির জন্যে আমরা পশ্চিমকে গুরু মেনে নিয়েছি। অথচ ইসলামে দারিদ্র ও অশিক্ষা হারাম। দারিদ্র ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ইসলামের মূল নীতি ও শিক্ষা।

সময় এসেছে চোখ মেলে নিজের প্রতি তাকাবার। সময় এসেছে ইসলামকে গভীর ভাবে বুঝার ও অনুধাবন করার। সময় এসেছে দারিদ্র ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে বিপ্লব করার। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, ‘ মান আরাফা নাফসা, ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা’। নিজেকে জানতে পারলেই তোমার প্রভুকে জানতে পারবে। নিজেকে জানার শিক্ষার চেস্টা আমাদের নাই। জ্ঞানের চর্চা যে জাতি করেনা ইসলাম সে জাতি থেকে বহু দূরে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে এখন বিভ্রান্তির যুগ অরিবাহিত হচ্ছে। আমরা আসল আর নকল চিনতে পারছিনা। কল্যাণ অকল্যাণ বুঝতে পারছিনা। জাতিসংঘ আর তার নেতারা যা বলছে তার পিছনেই অন্ধের মতো দৌঁড়াচ্ছি। সরকার বলছে, তোমাদের কোরাণ শরীফকে ঘরে রাখো, বাইরে এনোনা। রাস্ট্র ধর্মহীন থাকবে। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধর্ম মসজিদে হুজুরদের কাছে থাকবে। আল্লাহর সাথে রাস্ট্রকে মিশিয়ে ফেলনা। সরকার ও তার সরকারের মুরুব্বীরা জানে বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও তারা এখনও ইসলাম কি তা ভাল করে জানেনা। ফলে তারা বিদ্রোহ বা বিপ্লব করবেনা। এখনি মোক্ষম সময় তাদের উপর পশ্চিমী সকল ধ্যান ধারনা চাপিয়ে দেয়ার।( নয়া দিগন্ত, ২৫শে জুন,২০১১)

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

 

 

Read Full Post »


মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের বাংলাদেশ বিরোধী তথাকথিত সরকারের আমলে নয়া দিগন্ত সাহস করে আমার বেশ কিছু লেখা প্রকাশ করেছে। সে সময়ে বন্ধুরা বলেছিল, তোমার এত সাহস করা ঠিক হচ্ছেনা। তোমার কি দরকার  দু:সাহস দেখিয়ে এতসব লেখার। তুমিতো আর রাজনীতি করনা। তুমি শোন নাই সাংবাদিকদের একদল গিয়ে জেনারেল মইনের সাথে দেখা করেছেন। এখন দেখবে বেশ কিছু  জনপ্রিয় সাংবাদিক  সরকারের পক্ষে লিখবে। এছাড়া এই সরকার কাউকেই ছাড়বেনা। ওই সময় আমার প্রিয় মানুষ ড. ফেরদৌস কোরেশী নতুন দল গঠন করে  সাদা পোষাক পরা ওই সামরিক সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কোরেশী সাহেব একজন মেধাবী মানুষ। তাঁর উচিত ছিল শিক্ষকতা করা বা খবরের কাগজে কলাম লেখা। যদি শিক্ষকতা করতেন তাহলে একদিন ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে অবসর নিতে পারতেন। তিনি বিএনপির প্রতিস্ঠা লগ্নের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু দলে বেশী থাকতে পারলেন না। একজন চিন্তাবিদের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে থাকা খুবই কঠিন। সে সময়ে প্রেসক্লাবে আমাদের বেশ কিছু বন্ধু বলেছিলেন, দুই নেত্রীর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। এর কিছু দিন পরেই মইনুদ্দিনের সরকার দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করে জেলখানায় পুরলেন। ফলে সারাদেশে প্রচন্ড রকম ভয় ভীতি সৃস্টি হলো। রাজনৈতিক বহুনেতা গ্রেফতারী থেকে বাঁচার জন্যে গোপনে বা প্রকাশ্যে সরকারের তথকথিত সংস্কারের পক্ষে মত দিতে লাগলেন। ব্যবসা বাণিজ্য, রাজনীতি , স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যলয় সহ সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হলো। ফলে মইনুদ্দিনের সাদা পোষাক পরা সামরিক সরকারের প্রতি জনগণের কোন ধরনের সমর্থন থাকলোনা।

যে সকল বিদেশী সরকার মাইনাস টু থিউরী বাস্তবায়নের জন্যে দায়িত্ব দিয়েছিল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের উপর তাঁরা আস্তে আস্তে পিছে সরতে লাগলো। আর তখনি সিদ্ধান্ত হলো আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তারা চলে যাবেন। সেভাবেই ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুস্ঠিত হলো। খালেদা জিয়াও বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেন। ভয় দেখানো হলো অংশ গ্রহণ না করলে দেশে পূর্ণ সামরিক শাসন জারী হবে এবং এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২৮শে অক্টোবরের লগিবৈঠার মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল ১/১১ র উত্থানের জন্যে। আওয়ামী লীগ নেত্রী অবশ্য প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ১/১১ সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। ক্ষমতায় আসলে তাঁরা সরকারের সকল কর্মকান্ডকে বৈধতা দিবেন। জনগনের দাবী থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারের বিচারের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। যেসব বুদ্ধিজীবী সে সময়ে মাইনাস টু ফর্মুলার পক্ষে ওকালতি করেছেন তারা এখন দুই নেত্রীর পিছনে বা আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন কি যারা মইনুদ্দিনের মেহমান হয়ে দাওয়াত খেয়েছেন তাঁরা সকলেই এখন আবার দল বা গ্রুপ বেছে নিয়ে জেহাদে নেমে  পড়েছেন।

ক্ষমতাধরদের তখন ব্যক্তিগত পর্যায়েও বলেছিলাম, দুই নেত্রীকে বাদ দিলে কি হবে ? দলতো থেকে যাবে। ভোটাররাতো দুই  মার্কায় বিভক্ত। এই  ভোটারদের নিয়ে সরকার ক কি করবে? তখন তারা বলেছিল দল ভেংগে দেয়া হবে। ভোটরদের ট্রেনিং দেয়া হবে। এমন তখন সরকারের চামচারা জেলায় জেলায় নির্বচনের জন্যে প্রার্থী খুঁজে বেড়াচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন তাদের অশূব চিন্তা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনি। বিদেশী দূতাবাসের পরামর্শে তারা দুই নেত্রীকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। সেই নির্বাচনের ফলাফল আগেই নির্ধারিত ছিল। পুরাণো প্রসংগটি এখন আবার সামনে নিয়ে এসেছি চলমান পরিস্থিতির কারণে। বিগত আড়াই বছরে আওয়ামী সরকারের অর্জন নিয়ে ভাবলে দেখা যাবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ৭২-৭৫ এর মতো হয়ে গেছে। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, তুলে নিয়ে গুম করে দিচ্ছে। বিনা বিচারে হাজার হাজার মানুষকে জেলখানায় ফেলে রেখেছে। সংবাদপত্রের উপর নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। পুলিশ আনসার রেব ও বর্ডার গার্ড দলীয় বাহিনী  হিসাবে কাজ করছে বলে মনে হয়। দেশবাসীর কাছে থেকে লক্ষকোটি টকার খাজনা আদায় করে উন্নয়নের কাজ না করে সরকার হামলা আর  মামলা নিয়ে ব্যস্ত। শুধু বিরোধি দলের বিরুদ্ধেই রয়েছে হাজার  হাজার মামলা। দেশে কোন বিদেশী বিনিয়োগ নেই। আভ্যন্তরীন বিনিয়োগও নেই। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। বিদেশী মুদ্রার রেমিট্যান্স ও কমে গেছে। বিদেশে থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ফিরে আসছে সরকারের বিদেশ নীতিতে বিভ্রান্তির কারণে। বেদনার বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজের বেয়াইকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে চুপচাপ বসে আসেন। তিনি বেয়াই সাহেবের পারফর্মেন্স নিয়ে কখনও ভাবছেন বলে মনে হয়না। সরকারের  এজেন্ডা বা প্রায়োরিটি যদি  বিচারের নামে অবিচার , হামলা , প্রতিপক্ষকে জব্দ করা হয় তাহলে আর কি বলার আছে। এসব করেতো আর ক্ষমতায় থাকা যায়না। চারিদিকে এখন যা ঘটছে তা হচ্ছে তামাশা। ফুটবল খেলার মাঠে গেলে জানতে পারবেন মানুষ কি নিয়ে তামাশা করছে। প্রধানমন্ত্রীর তিন ভাইয়ের নামে তিনিটি টীম  মাঠে লড়াই  করছে।  রাসেল কামালকে হারাচ্ছেতো, কামাল জামালকে হারাচ্ছে। দর্শকরা হাত তালি দিচ্ছেন। তামাশ করছেন। বলাবলি করছেন, ভালই হলো শেষ পর্যন্ত এক ভাই অন্য ভাইকে মারছেন আর প্রধানমন্ত্রী হয়ত টিভিতে এসব তামাশা দেখছেন। চামচা ,  মোসাহেব আর  তাবেদাররা যে এসব করছেন তা প্রধানমন্ত্রী হয়ত কখনও চিন্তাও করেন নি। তিনি হয়ত ভাবছেন, ভালোই হলো তিন ভাই মিলে ফুটবলের উন্নতি করছেন। আসলে এসব হচ্ছে চাঁদাবাজির খেলা।

বংবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনার চলমান আমলে মাত্র আড়াই বছরে দেশবাসীর মনে  ভয় ভীতি ঢুকে গেছে। কখন কার কি অবস্থা হয় কে জানে। জন নিরাপত্তা বাহিনী দেশ এবং সরকারের নিরাপত্তার নামে হাজার মানুষকে গ্রেফতার করছে বিভিন্ন মামলা দিয়ে। রিমান্ডে নিয়ে লোকজনের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এসব নির্যাতনে বহুলোক পংগু হয়ে গেছে। অন্যদিকে ধর্মভিরু ছাত্র জনতা আছে সন্ত্রস্ত অবস্থায়। কখন কাকে গ্রেফতার করা হয় সন্ত্রাসী বলে। এই সরকারের আমলে ডাকাত চোরকে ফেলে রেখে ধর্মীয় লোক যাদের দাঁড়ি টুপি আছে তাদের সন্ত্রাসী বলে ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে। আর এসব করাচ্ছে আমেরিকা ও তার  বন্ধুরা নব্য মিত্র ভারতের মাধ্যমে। দেশের মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিস্ঠান গুলো আজ বিরাট হুমকির সন্মুখীন। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এ রকম  অবস্থা সৃস্টি হতে পারে কিনা তা ভেবে পাচ্ছিনা। দেশের সাধারন মানুষ আজ খুবই শংকিত। কিন্তু দেশবাসীর কথা  ভাববে কে? এমনি একটি পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষণা দিয়েছে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা  থাকবেনা। দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন হবে। আদালতের দোহাই দিয়ে সরকার দেশকে সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও নৌকার অন্যান্য যাত্রীরা (  যাদের কাছে খেয়া পারাপারের ভাড়া নেই ) সকাল বিকাল গলা ফাটিয়ে  বলছেন, আদালত  রায় দিয়েছে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা অবৈধ। সুতরাং আদালতের উপর কোন কথা নেই। আজ আওয়ামী লীগ এসব কথা বলছে তার সাঙ পাঙদের সাথে নিয়ে। আশা করি পাঠকের স্মৃতি এখনও ঝাপসা বা মলিন হয়ে যায়নি।সে সময়ের কাগজের ফাইল গুলো আপনারা পড়তে পারেন। দৈনিক আমার দেশ  পুরাণো সেসব খবর কিছু কিছু  এখন আবার ছেপে আপনাদের মনে করিয়ে দেয়ার চেস্টা করছে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ জামাতে ইসলাম ও জাতীয় পার্ট। এই দাবীতে তখন সারা দেশে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী বন্ধুরা। এখন তাঁরা আবার কেয়ারটকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেগেছেন।

পাঠক সমাজকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আওয়ামী লীগ তার নিজের বায়া দলিল খতিয়ান দাগ জমা খারিজ সব মুছে ফেলেছে। ফলে এই দলের প্রতিস্ঠাতা কারা  সেকথা আজকের নেতারা ভুলে গেছেন। আওয়ামী লীগ কখনই ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুনকে স্মরণ করতে চায়না। আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি  টাঙাইলের  মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কেন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠা করেছিলেন সেকথা আজকের বাকশাল পন্থী আোয়ামী লীগ নেতারা হয়ত জানেন না। জানলেও সে ইতিহাস  গোপন করতে চান। সেজন্যেই বলেছি আওয়ামী লীগের কাছে তার বায়া দলিল নেই। সোজা কথায় বলা যেতে পারে, আওয়ামী লীগ বাপ দাদার ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চায়। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৪৯ সাল থেকে ৫৭ সাল পর্যন্ত এই দলের সভাপতি ছিলেন। প্রথম সাধারন সম্পাদক ছিলেন টাঙাইলের শামসুল হক সাহেব। এক সময় শামসুল হক সাহেব নিখোঁজ হয়ে গেলেন । সেই রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। কেন শামসুল হক সাহেবের ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে আমরা জানিনা।  ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলীম লীগেত পতন ঘটিয়েছিলেন  শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ( হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দী ) ফ্রন্ট। মার্কা ছিল নৌকা। যখন ভাসানীর দল পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন তখন তিনি দল ছেড়ে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি করলেন? এর কারণ ছিল পাকিস্তানের পররাস্ট্র নীতি কি হবে তা নিয়ে তাঁ নিজের দলের সরকারের সাথেই মত বিরোধ দেখা দেয়। মাওলানা সাহেব ছিলেন সাম্রজ্যবাদী আমেরিকার বিরুদ্ধে। আর সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও এসখ সাহেব ছিলেন আমেরিকার পক্ষে। সোহরাওয়ার্দী সাহেব  দিলেন জিরো + জিরো থিউরী। এর মানে হলো আমেরিকা এক এবং বাকী সবদেশ শূণ্য। পাকিস্তান শূণ্য। তার সাথে তাও সোহরাওয়ার্ধী সাহেব এক যোগ করলেন। সেই থেকে ৭১ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ ছিল  আমেরিকার সমর্থক একটি রাজনৈতিক দল।দল। পাকিস্তান আমলে জামাতে ইসলামী ও কমিউনিস্ট বিরোধী হওয়ার কারণে আমেরিকার পররাস্ট্র নীতিকে সমর্থন করতো।  স্বাধীনতার পর ৭২ সাল থেকে কোন এক যাদুর চেরাগ পেয়ে  রাতারাতি আওয়ামী লীগ হয়ে গেল সমজতন্ত্রী দল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ছিল রাশিয়ান ব্লকের সমর্থক। বাংলাদেশের প্রশ্নে রাশিয়া ভারতকে সমর্থন দিয়েছিল। ফলে রাশিয়ান ব্লকে যত দেশ ছিল সবাই ভারতকে সমর্থন দিয়েছিল। তখন আমেরিকা চীন ও মুসলমান দেশ গুলো পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল। এমন কি চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে ৭৫ এর পরে।

পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের দাবীও প্রথমে তুলেছিলেন মাওলানা ভাসানী। এই স্বায়ত্ব শাসনের দাবীর প্রশ্নে কাগমারী সম্মেলনে পাকিস্তানকে বিদায়ী সালাম জানিয়েছিলেন। তখনও আওয়ামী লীগ মাওলানা সাহেবের বিরোধীতা করেছিলেন। মাওলানা সাহেবের প্রতিস্ঠিত কাগজ ইত্তেফাক মাওলানা সাহেবকে লাল মাওলানা ও লুংগী মাওলানা বলে গালাগাল দিতো। পুরাণো কাগজ বের করে দেখুন , দেখবেন লেখা আছে প্রতিস্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। যদি কাগজ খুঁজে বের করতে না পারলে  শ্রদ্ধেয় মুজাফফর আহমদ সাহেবের সাথে কথা বলুন। তখন ইত্তেফাকও আমেরিকার ঘোর অন্ধ সমর্থক ছিল এবং আজও আছে। পাকিস্তান আমলে ইসলামিক দল গুলো প্রায়ই সবাই আমেরিকাকে সমর্থন করতো। অনেকক্ষেত্রে আমেরিকা ইসলামিক দলগুলোকে ব্যবহার করেছে। একমাত্র মাওলানা ভাসানীই ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও মাওলানা ভাসানী আমেরিকার বিরুদ্ধে ছিলেন। এজন্যেই মাওলানা সাহেবকে তৃতীয় বিশ্বের মজলুম জনতার নেতা বলা হতো। তিনি ছিলেন ক্যাস্ট্রো, জামাল নাসের, মাও সে তুং ও লুমুম্বার বন্ধু।

আওয়ামী লীগ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অসহায় অবস্থায় ভারত ও  রাশিয়ার বিদেশ নীতির সাথে নিজেকে বেঁধে ফেলেছে। তাই সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাস না করেও ওই ব্লকে আটকা পড়ে যায়। কিন্তু ভারতের বিদেশনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগও গোপনে তার বিদেশনীতি পরিবর্তন করে। ভারতের সাথে এখন আমেরিকা সহ পশ্চিমের দেশগুলোর বেডরুম বন্ধুত্ব চলছে। এ যাত্রায় বাংলাদেশ স্বাধীন বিদেশনীতির কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ভারত চায় বাংলাদেশের বিদেশনীতি নিয়ন্ত্রন করতে। যা বংগবন্ধুর আমলে চেস্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের অনুরোধ উপেক্ষা করেই বংগবন্ধু পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসির সম্মেলনে গিয়েছিলেন। এবং বলেছিলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশ। সম্প্রতি আমেরিকা সফর কালে বিরাধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা আমেরিকার সাথে সরাসরি সম্পর্কে বিশ্বাস করি।

রাস্ট্র যখন এমন কিছু লোকের খপ্পরে পড়ে  ্যারা মনে করে ” Nothing is more usefull to a nation that lies and nothing is more dangerous to nation than truth” তখন মনে করতে হবে ওই রাস্ট্র চোর বাটপারদের দখলে চলে গেছে। রাস্ট্রের আদর্শ বলতে আর কিছু। এ ধরনের সময়ে সরকারের অত্যাচারের ভয়ে নাগরিকরা যদি চুপ চাপ থাকে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা আর থাকেনা। গ্রীস যখন কিছুদিনের জন্যে৪ কিছু বাটপারের দখলে চলে গিয়েছিল তখনই সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ড হয়েছিল।  আমাদের রাজনীতিতে মিথ্যা এখন আদর্শে পরিণত হয়েছে। রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি জনগণকে  যাদুকরের মতো ভুলিয়ে ভালিয়ে ভোট আদায় করা হয় তাহলে আমাদের রাজনীতিকরা একশ’ভাগ সফল। আমাদের রাজনীতিতে এখন যাদুকরি খেলা চলছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান যাদুকর। যেকোন মঞ্চে যেকোন সময়ে যেকোন রং ধারন করে আওয়ামী লীগ খেলতে যানে। আগেই বলেছি যেহেতু এই দলের কোন বায়া দলিল বা খতিয়ান নেই , বা থাকলেও তাকে লুকিয়ে রাখতে চায়। ফলে দলটির সুবিধা হলো  যে কোন ভুমিকায় খেলতে পারে। যেমন বংগবন্ধু এক সময় মুসলীম লীগ , তারপরে আওয়ামী মুসলীম লীগ, আওয়ামী লীগ, পুঁজিবাদী  মার্কিন তাবেদার আওয়ামী লীগ, সমাজতন্রী বিপ্লবী আওয়ামী লীগ এবং শেষ পর্যন্ত এক দলীয় রাস্ট্র ব্যবস্থার বাকশালে ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী লীগও এখন দেশের সংবিধান আদালত প্রশাসন সহ সকল রাস্ট্রযন্ত্রকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। সামান্য কয়েকজন লোকের কথায় দেশকে ধর্মহিনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। তারা সবই করছে তথাকথিত সেকুলারিজমের নামে। অথচ দলের নেত্রী মাঝে মাঝেই হিজাব পরেন। দলের নেতাদের দিয়ে দেশের মানুষকে বুঝাতে চেস্টা করেন তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং কোরাণ তেলাওয়াত করেন। মানে হলো যিনি যে দেশ চালাবেন তা থাকবে ধর্মহীন এবং তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে ধার্মিক থাকবেন।

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব প্রথমে করেছিল জামায়াতে ইসলাম। পরে সেই প্রস্তাব সমর্থন করে আওয়ামী লীগ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দেশকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে তত্‍কালীন বিএনপি সরকার বাধ্য হয়ে সংসদে কেয়ারটেকার সরকার প্রস্তাব পাশ করে। এখন আবার আদালতের কথা বলে কেয়ারটেকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আদালতের রায়কে ভুল ব্যাখ্যা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। আদালতের পুর্ণাংগ রায় কিন্তু জনগন এখনও জানেনা। আদালত বলেছেন, কেয়ারটেকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক এবং বাতিল। কিন্তু  রাস্ট্র ও জনগনের নিরাপত্তা, আইন শৃংখলার কথা বিবেচনা করে এই ব্যবস্থা আরও দুই টার্মের জন্যে বহাল রাখা যেতে পারে। আমিতো মনে করি আদালতের পুরো রায়টিই এক ধরনের সুপারিশ ও মতামত। সরকার ও জাতীয় সংসদ যেন আদালতের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা যে অসাংবিধানিক তা তখন বিএনপি বললেও আওয়ামী লীগ মানেনি। যাক, শেষ পর্যন্ত ডক্ট্রিন অব নেসেসিটিতে এই অসাংবিধানিক ব্যবস্থা গৃহীত হয়। বাংবন্ধু নিজেও দশ মিনিটের ভিতর সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় ব্যবস্থা চালু করেন এবং নিজে আজীবনের জন্যে রাস্ট্রপতি হন। সুরণ্জিত বাবু তখন বংগবন্ধুর বিপক্ষে ছিলেন। আওয়ামী লীগ এখন আর বংবন্ধুর আদর্শের একদলীয় ব্যবস্থা চালু করতে চায়না। আওয়ামী দিল্লীতে বাসর করে পবিত্র ক্বাবা ঘরেও তাওয়াফ করতে চায়। আওয়ামী লীগ বাদশাহ আকবরের  দ্বীনে ইলা্হী চালু করতে চায়। প্রাসাদে পুজার প্রতিমা আর জায়নামাজ থাকবে। বাদশাহ আকবরের ছিলেন  একজন মাইনরিটি শাসক। ফলে তিনি কৌশলগত কারণে  হিন্দু নারী বিয়ে করেছেন এবং হিন্দু সেনাপতি নিয়োগ করেছেন। তবে  বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহী কেউই গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমান। দশ ভাগ নাগরিককে তুষ্ট  করার জন্যে সরকারের  তথাকথিত সাজার চেস্টা অগনতান্ত্রিক। সংসদে সীটের জোরে এখন হয়ত অনেক কিছুই করা যাবে। বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে ভাবতে হবে তিনি কোন পথে যাচ্ছেন। কারো কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই। কারো কথায় প্রভাবান্বিত হওয়ার দরকার নেই। আমি বলবো আপনি একবার  সেজদায় গিয়ে সরল পথে চলার জন্যে আল্লাহপাকের পানাহর জন্যে মুনাজাত করুন।( নয়া দিগন্ত, ১৭ ই জুন, ২০১১ )

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »