Feeds:
Posts
Comments

Archive for July, 2012


চলমান রাজনীতি বা ঘটনা নিয়ে অনেকদিন লিখিনি আমি। চলমান ঘটনা আমাদের মতো দেশের রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও শিক্ষ ব্যবস্থায় ঘটতেই থাকবে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আমি অনেকদিন থেকেই লিখে যাচ্ছি। আমি মনে করি সে বিষয় গুলোর কুল কিনারা বা সুরাহা হয়ে গেলে রাস্ট্রটা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে পারতো। আমার মনে বহুদিন থেকে একটা প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে। বিষয়টা হলো রাস্ট্র বড় না মানুষ বড়? রাস্ট্র স্বাধীন না মানুষ স্বাধীন।কোন কোন রাজনীতিক প্রায়ই শ্লোগান দেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমি এ শ্লোগানে বিশ্বাস করিনা। এটা একটা ভাওতাবাজী। শুনতে খুবই ভাল লাগে। আসলে এটা একটা ভুয়া শ্লোগান। আমি মনে করি মানুষের চেয়ে জগতে কোন কিছুই বড় নয়। মানুষের জন্যেই জগত সৃস্টি হয়েছে। মানুষই হচ্ছে সৃস্টির সেরা সৃস্টি। জগতের সকল সৃস্টিই নিবেদিত রয়েছে মানুষের সেবার জন্যে। আইন আদালত, সংসদ, সংবিধান ও ধর্ম কোন কিছুই মানুষের চেয়ে বড় নয়। আমাদের দেশে মহান শব্দটি অকাতরে ব্যবহার করা হয়। যেমন মহান সংসদ, মহান সেনা বাহিনী। মহামান্য শব্দটিও কম ব্যবহৃত হয়না। যেমন মহামান্য রাস্ট্রপতি, মহামান্য আদালত। মানুষ শব্দটির আগে কখনই মহামান্য, মহান বা মাননীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়না। আমাদের ভাষাতেও বহু শব্দ আছে মানুষের জন্যে অবমাননাকর। আমাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক ও সাধারন মানুষের জন্যে তুমি বা তুই শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। যেমন বলা হয় চাষাভুষা, কুলি কামিন, মুচি মেথর সহ এমন আরও বহু শব্দ আছে। রাজধানীর রিকশাওয়ালাকে আমরা কখনই আপনি বলিনা। কে যেন বলেছিলেন, রাজনীতি হচ্ছে গুন্ডা বদমায়েশদের শেষ আশ্রয় স্থল। রাজনীতিতে নাকি সব কিছুই জায়েজ। রাজনীতি সব কিছু করতে পারে, শুধু পারেনা নরকে নারী করতে আর নারীকে নর করতে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে কথা গুলো সত্য। পাঁচশ’ ভোট পায়না এমন লোকও বর্তমান ক্যাবিনেটের সদস্য আছেন। দলে পাঁচশ’ লোক নাই এমন লোকও রাজনীতি করে বেশ সুখে আছেন। মিলিটারী সরকার এলেই এসব লোকের দাম বাড়ে। যে ভাবেই হোক না কেন, একবার মন্ত্রী বা উপদেস্টা হতে পারলেই ভিজিটিং কার্ডে সাবেক মন্ত্রী বা উপদেস্টা লিখতে পারেন। বাড়ির সামনে নেমপ্লেটেও লিখতে পারেন সাবেক মন্ত্রী। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এখন বেশ নিন্দিত। দেশে আসতে পরেন না। কিন্তু তাঁদের উপদেস্টারা বেশ উপদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মনে হয় ১/১১ সরকারের আমলে তাঁরা কিছুই করেননি। এইসব সাবেক উপদেস্টাদের কথামৃত না শুনলে সাংবাদিকদের ভাত হজম হয়না।

আবুল শব্দটি এখন বাংলাদেশে বেশ কৌতুকে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় খাদা খন্দক দেখলেই বাস কন্ডাক্টরগণ বলেন, ডাইনে বা বাঁয়ে আবুল আছে। এই আবুল আগেও প্রধানমন্ত্রীর ক্যাবিনেটে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিলেন। এবার পুরো মন্ত্রী হয়েই ক্যাবিনেটে স্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু এবারও শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না। অনেকেই বলছেন, বেচারা আবুল বলির খাঁসি। কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করেন। মুখ ফুটে সবকথা বলতে পারেন না। তাই একা একাই সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছেন। হয়ত রাজনীতিতে এমন সহ্য শক্তি থাকলে আখেরে ভাল ফল পাওয়া যায়। সত্যিই আবুল তা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আবুল বড় কপাল নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন।চলমান রাজনীতিতে তিনি একজন বড় গাজী। কানাডাতে যে কোম্পানীর স্টাফরা ঘুষ দিয়েছেন তাঁরা এখন জেলে আছেন। বাংলাদেশে যাঁরা ঘুষ খেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী উল্টো বিশ্ব ব্যান্ককে গালমন্দ করছেন। লন্ডনে বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্ব ব্যান্কের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। কিন্তু বিশ্বব্যান্কের জাদুকরী খেলাতে আমাদের দুর্ণীতি দমন কমিশন বেশ ভাল অভিনয় করে চলেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান আজ এক কথা বলতেনতো আগামীকাল আরেক কথা বলেন। বেচারার কোন দোষ নেই। তিনি হচ্ছেন যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ। কয়েকজনকে আতক করার পরও বিশ্বব্যান্ক শান্ত হয়নি। তারা অপেক্ষা করছেন কখন দুই আবুল আতক হবেন।

পদ্মাবতীর কাহিনীর মতো পদ্মাসেতুর কাহিনীও মহাকাব্যে পরিণত হতে চলেছে। চিতোরের রাণী পদ্মাবতীর কাহিনীও ট্রেজেডীর মহাকাব্য। বাংগালী কবি আলাওল ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলায় পদ্মাবতীর কাহিনী লিখে অমর হয়ে আছেন। মূল কাব্যটি রচনা করেছেন মালিক মোহাম্মদ জয়সী। তিনি হিন্দী ভাষায় এটি রচনা করেছিলেন। পদ্মাবতী কাহিনীর সাথে রাজা উজির আমির উমরারা জড়িত ছিলেন। সেখানেও রাজনীতি ছিল। আমাদের সলমান মহাকাব্য হচ্ছে পদ্মাসেতু। এই মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র হচ্ছেন আবুল। বাকি হচ্ছেন রাজনীতিক, মন্ত্রী মন্ডলী। এই কাব্যের রচয়িতা হচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুকে ড্রামা বা নাটক বলে অভিহিত করেছেন খবরের কাগজের কলামিস্টরা। পদ্মাবতী আর পদ্মাসেতুর কাহিনী স্থান কাল পাত্র সবই আলাদা। একটি প্রেম নিয়ে, আরেকটি টাকা নিয়ে। প্রেম নিয়ে হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সকল দেশে সকল সময়ে মহাকাব্য তৈরি হয়েছে। অনেক রাজা প্রেমিকার জন্যে রাজ্য ত্যাগ করেছেন। প্রেমের সমাধি তাজমহল তৈরি হয়েছে। সেই তাজমহল দেখার জন্যে শত শত বছর ধরে লাখ লাখ মানুষ তাজমহলের কাছে যাচ্ছে। টাকা নিয়েও পৃথিবীতে কম কেলেংকারী হচ্ছেনা। এইতো দেখুন না, টাকার জন্যে হলমার্ক কোম্পানী কি না করেছে। টাকার জন্যে আমাদের সাবেক প্রধান সেনাপতি এখন কেমন বদনামের ভাগিদার হয়েছেন। অথচ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ক’দিন আগেও তাঁর মুখে আমরা অনেক মূল্যবান কথা শুনেছি।প্রধান সেনাপতি মইনউদ্দিন সাহেবও দেশের উপকারের কথা বলে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। নির্বাচনী গণতন্ত্রের ভেলকি দেখিয়ে নিজের পছন্দের দলকে ক্ষমতা বসিয়ে এখন নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। সেই দল তাঁকে আর দেশে ফিরিয়ে আনেননি। অথচ দলটির প্রধান বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে ১/১১ সরকারের সকল কাজের বৈধতা দিবেন। এই সেনাপতি ভদ্রলোক আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে আগের প্রধানমন্ত্রীর আমলে আট জনকে ডিঙিয়ে প্রধান সেনাপতি হয়েছিলেন। আরেক সেনাপতি ১/১১ সরকারের আমলে দুদকের চেয়ার ম্যান হয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতেন আর রাজনীতিবিদদের শিক্ষা দিয়েছেন। ১/১১র আমলের সরকার দেশকে দূর্ণিতিমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেশের বারোট বাজিয়ে বিদায় নিয়েছেন। মাঝখানে স্বপ্নেপ্রাপ্ত ঘটনাবলী নিয়ে এক পুস্তক লিখেছিলেন। একজন ঔপন্যাসিক সেই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন। ওই ঔপন্যাসিক ভদ্রলোক এখন এক বাংলা কাগজের সম্পাদক। পাকিস্তান আমলেও প্রধান সেনাপতিরা নানা ধরনের ভেলকিবাজী দেখিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানকে ভেংগে দিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায়। অথচ এই সেনাপতিরাই নাকি পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশী দেশপ্রেমিক ছিলেন। শহীদ জিয়ার পরে নির্বাচিত সরকারকে উত্‍খাত করে এক প্রধান সেনাপতি ক্ষমতা দখল করে নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ক্ষমতা দখল করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন তিনি দিল্লীর সাথে আলাপ করেই ক্ষমতা নিয়েছেন। তাঁর ক্ষমতা দখলের পরে কোলকাতার এক কাগজে লিখেছিল ‘বন্দুকের নলে প্রজাপতি’। বাংলাদেশের একটি দৈনিকে সম্পাদকীয়তে বলেছিল, এক ফোটা রক্তও ঝরেনি। আরেক জন সেনাপতি বিদ্রোহ করে চাকুরী হারিয়েছেন। সেই সেনাপতিকে সহযোগিতা করে এক ক্যাপ্টেন এখন প্রতিমন্ত্রী। বংগবন্ধুর সেনাপতি জেনারেল সফিউল্লাহ দায়িত্বে অবহেলা করার জন্যে যার শাস্ত হওয়ার কথা ছিল তিনি এখন আওয়ামী লীগের এমপি। জেনারেল হারুণের কথা বলতে গিয়ে এতসব জেনারেলের কথা বললাম। আজকের কলামের এটা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে পদ্মাসেতু। এই সেতু এখন মহাকাব্য, একটি মহা নাটক।প্রতিদিন পদ্মাকে নিয়ে নানা কথা। কখনও প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কখনও অর্থমন্ত্রী বলছেন। কখনও যোগাযোগ মন্ত্রী বলছেন, এইতো আমরা মালয়েশিয়ার সাথে চুক্তি করে ফেলবো এই সপ্তাহে বা এই মাসে। বিশ্ব ব্যান্ক বলছে পরামর্শক নিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও সচিবরা উত্‍কোচ গ্রহণ করেছেন। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু সরকার পাল্টা অভিযোগ এনে বলেছে যে, বিশ্বব্যান্কের লোকেরা ঘুষখোর। তাদের দুর্ণীতির তদন্ত হওয়া দরকার। বিশ্বব্যান্ক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে লিখিত অনেক গুলো চিঠি জনসাধারনের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করেছে। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যান্ক ঋণচুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছে। সাথে সাথে অন্যান্য দাতারাও ঋণচুক্তি স্থগিত করেছে। তারপরেই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রী ও দলের লোকেরা বিশ্বব্যান্ককে গালাগাল শুরু করে দিলেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, বিশ্বব্যান্কের সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করার জন্যে আবেদন জানানো হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। এর আগে আবুল পত্রিকার প্রথম পাতায় কয়েক লাখ টাকা খরচ করে তিনি যে নির্দোষ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবুও বলেছেন, দেশের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করতে রাজী আছেন। তারপর মিডিয়া বললো তিনি পদত্যাগ করেছেন। এ ব্যাপারে সরকার কোন ঘোষণা দেয়নি।

এবার নতুন নাটক শুরু হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আবুল দেশপ্রেমিক তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। সাথে সাথে হুক্কা হুয়া শুরু হয়ে গেল। আর মিডিয়াতে নানা ধরনের কার্টুন প্রকাশিত হতে লাগলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের কোন হুঁশ নেই তারা বলেই চলেছেন আবুল একজন দেশপ্রেমিক। এমন কি দুদকও এ ব্যাপারে সাফাই গাইতে শুরু করলো। দুদকের চেয়ারম্যান সচিব থাকা কালে লোকে তাঁর প্রশংসা করতো। কিন্তু দুদকের চেয়ারম্যান হয়ে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা বলতে শুরু করেছেন। আমরা জানি তিনি আওয়ামী ঘরানার জামাই। কিন্তু এতদিন লোকে তাঁর ঘরানা নিয়ে কোন কথা বলেনি। ফলে চেয়ারম্যান সাহেবের নিরপেক্ষতা নিয়েও কথা উঠেছে। এতো গেল দুদক নাটক। অর্থমন্ত্রী বলছেন, বিশ্বব্যান্ক যা চেয়েছে তা বাংলাদেশ সরকার করেছে। এখন আর ঋণচুক্তি বহাল করতে কোন অসুবিধা নেই। পদত্যাগ নিয়েও অনেক নাটক চলছে। সত্তুর বস্তা কাঁঠাল বা সত্তুর লাখ টাকার বস্তা নিয়ে সুরন্জিত বাবু পদত্যাগ করলেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকলেন। তারপর শুনা গেল তিনি তিনি মন্ত্রী আছেন, দফতার নাই। পাকিস্তান বা ভারতে এ ধরনের মন্ত্রীদের বলা হয় উজিরে খামাখা। মিনিস্টার উইথ আউট পোর্টফোলিও। এর মানে তিনি সরকারের জন্যে কোন কাজ করবেন না। কিন্তু বেতন ভাতা সবই পাবেন। বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারবেন। এবং সুরন্জিত বাবু বেশ নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছেন। আবুল সাহেবও হয়ত তেমন উজিরে খামাখা থাকবেন। নিয়মিত বেতন ভাতা পাবেন। প্রশ্ন হলো রেলের সেই ড্রাইভার কোথায় গেল। আবুল সাহেবের টাকা নেয়ার অভিযোগেরই বা কি হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যান্কতো টাকাই দেয়নি দূর্ণীতি কোথ্থেকে হলো? তাহলে কানাডায় লাভালিনের কর্মচারীদের বিচার হচ্ছে কি জন্যে? বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী আবুলকে এতো প্রটেকশন দিচ্ছেন কেন? এখানে অন্যকোন রহস্য আছে নাকি?পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে বাজারে বহু গল্প চালু হয়ে গেছে । সে সব গল্পের কথা প্রধানমন্ত্রীর কানে যায় কিনা জানিনা। একই রকম গল্প গুজব ৭২-৭৫ সালেও চালু ছিল। এমন কি খবেরের কাগজেও নানা ধরনের কার্টুন ছাপা হতো। সরকার ও রাজনীতিতে সব সময় নানা ধরনের গল্প চালু হয় ও থাকে। লোকে যদি এসব বিশ্বাস করে তাহলেতো সরকারের জন্যে একটা লাল সংকেত।

পদ্মা নিয়ে আরেকটি বড় নাটক হচ্ছে দেশী টাকায় দেশের মানুষের টাকায় সেতু বানানো হবে। আর যায় কোথায় সাথে টাকা উঠতে লাগলো। কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেতুর জন্যে চাঁদা তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগের একনেতা ভাগ বাটোয়ারার যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। কোন এক ছাত্র তার টিফনের টাকা পদ্মা সেতুর জন্যে দান করেছে।অফিসে আদালতে একদিনের বেতন উঠতে শুরু করলো। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে প্রবাসীদের বলেছেন, বেশী বেশী করে অর্থ পাঠাবার জন্যে। তিনি বলেছেন, যে জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারে সেই জাতি নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতুও বানাতে পারবে। আর যায় কোথায় পদ্মাসেতুর জন্যে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা যুক্ত আরেকটি যুদ্ধ  শুরু হয়ে গেল। এই যুদ্ধে ৭১ এর চেতনা নিয়ে ভারত এখনও ঝাপিয়ে পড়েনি। এই সেতুতো ভারত-বাংলাদেশ প্রেমের সেতু হিসাবেও ইতিহাসে নাম রাখতে পারে। ৭১এ গণচীন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নাকি সমর্থন করেনি। সেই চীন বন্ধুত্বের চেতনায় ইতোমধ্যে অনেক সেতু বানিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মাসেতু বানিয়ে দেয়ার ওয়াদা করেছে। চীনের এসব কান্ড কারখানা দেখে মনে পড়েছে, আমারই বঁধুয়া আন বাড়ি যায় আমারই আঙিনা দিয়া। ভারত প্রমেকের সামনে দিয়া চীনের এমন আনাগোনা কার সহ্য হয় বলুন। ভারত কেমন করে  এসব সহ্য করছে বুঝতে পারছিনা। ভারত বাংলাদেশের আশেকী মাশুকীর কথা ভেবে ভারতের উচিত হবে এখনি ঘোষণা করা আমরা পদ্মাসেতুর মহাকাব্য আমরাই রচনা করবো। পদ্মাবতীর কাহিনীও রচনা করেছেন ভারতের মালিক মোহাম্মদ জয়সী আর বাংলাদেশের আলাওল।কবি আলাওলের বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ও ফরিদপুরে। আলাওলের বাবাকে হত্যা করেছে একদল হার্মাদ। প্রধানমন্ত্রীর বাবাকেও হত্যা করেছে একদল সৈনিক। পদ্মাসেতু নাটকটি ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে অবশই মঞ্চস্থ হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে গেলে ভারত নিশ্চয়ই মুখ ফিরিয়ে নিবেনা। তাহলেতো বিশ্বব্যান্কের ঘ্যানর ঘ্যানর শুনতে হয়না। খুব সহজেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীতো বহু বছর দিল্লতে ছিলেন। দিল্লীর হৃদয় কেমন তাঁর চেয়ে ভাল আর কে জানবে। তিনি বরং দেশবাসীকে আহবান করতে পারেন, হে দেশবাসী আপনারা প্রেমিক ভারতকে পদ্মাসেতুর স্বার্থে প্রেম নিবেদন করুন। ভারত নিশ্চয়ই তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবেনা। ৭১ সালে শুধুমাত্র প্রেমের কারণেই জানমাল সবই ত্যাগ করেছে। আমরাও শুধুমাত্র প্রেমের কারণেই ভারতকে রাস্তাঘাট, বন্দর, আবাসন সবই দিচ্ছি।

এই নাটকের খলনায়কে পরিণত হয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদগণ। তাঁরা বলছেন, চাঁদা তুলে এই ব্রিজ করা যাবেনা। তাঁরা শুধু দেশী আর বিদেশী টাকার দিকটাই দেখেছেন। দেশবাসীর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখেননি। তবে একথা সত্যি যে বেশী শিক্ষিত মানুষের প্রেমের আবেগ কম থাকেনা। তাই মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁরা অনেকেই কোলকাতা দিল্লী যাননি। মুক্তি যুদ্ধের মতো বড় বড় কাজ করতে হলে প্রেম ভালবাসা থাকতে হবে। এই সব বেশী শিক্ষিত লোকেরা হয়ত প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ের কথা এবারও ভাবেননি। ৭১ সালে বা ৭০ সালে এ দেশে বহু উচ্চ শিক্ষিত লোক ছিলেন। শুধুমাত্র প্রেম ভালবাসার কারণেই বংগবন্ধু সবার আগে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি যার যা আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার কথা বলে পাকিস্তানী কারাগারে চলে গিয়েছিলেন। নিজের স্মৃতিকথায় বংগবন্ধু বলেছেননি আন্ডারগ্রাউন্ডে বা পালিয়ে থাকতে পারেন না। তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা এলেই সারেন্ডার করতেন। তিনি জানতেন বাংলাদেশের মানুষ প্রেমের ব্যাপারে অত অংক কষে চলেনা। বংগবন্ধু জেলে গেলেও ভারত বাংলাদেশ প্রেমের কারণে আমরা স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছি। প্রধানমন্ত্রীকে শুধু বুঝতে হবে ৭১ সালে দেশের মানুষ একাট্টা ছিল। কঠোর মনোবল ছিল স্বাধীনতার জন্যে। এখন সে অবস্থা আছে কিনা? তিনি ডাক দিলে সব মানুষ ঝাপিয়ে পড়বে কিনা? সে সময় কোন দূর্ণীতির কথা উঠেনি। এখনতো চারিদিকে দূর্ণীতির গর্কি শুরু হয়ে গেছে। এক আবুলের দূর্ণীতির সামালও তিনি দিতে পারেননি। তিনি বহু ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করেছেন। একমাত্র ভারত ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন প্রেমিক দৃশ্যমান নয়। গত নির্বাচনে ভারত, বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স আর ইইউ দলবেঁধে তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। সবার লক্ষ্য ছিল তাঁকে ২৫০ সিট দিয়ে জিতানো। তাহলে সবার স্বার্থ ও লক্ষ্য আদায় হবে।কিন্তু না, তাদের স্বার্থ আদায় হচ্ছেনা। তারাতো চায় চীনের বিরুদ্ধে আমরা কাছা খুলে ভারতকে সমর্থন করি। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তা চায়না। প্রধানমন্ত্রীর মনে নিশ্চয়ই আছে যে, চীন ও সউদী আরব ৭৫ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোন মুসলমান দেশ এখন আর প্রধানমন্ত্রী সরকারকে অন্তরে সমর্থন করেনা। তার নানা ইংগিত আমরা দেখতে পাচ্ছি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


যাঁদের আগ্রহ আছে এ ধরণের স্মৃতিকথা পড়ার তাঁরা সকলেই বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়বেন আমার বিশ্বাস।

Read Full Post »


 

 

তিন পয়সার পোস্ট কার্ড ও মোবাইল ফোনের মাজেজা      / এরশাদ মজুমদার

 

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁকে ফোন করে দূর্ণীতি বিষয়ে জেনে নিতে। তিনি তাঁর মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস জানসাধারনকে জানিয়ে দিয়েছেন।খুবই চমত্‍কার একটা ব্যবস্থা। দেশের যে কোন নাগরিক ইচ্ছা করলেই মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে পারবেন। শুনেছি ইতোমধ্যে অনেকেই নাকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। একজন গণতান্ত্রিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে একদিন পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী এমনিতেই সারাদিন কথা বলেন। আমরা তা দেখতে পাই খবরের কাগজে আর টিভিতে। বর্তমানে যতগুলো টিভি চ্যানেল আছে তার ৯০ ভাগই সরকারের গুণগান করে। মাঝে মধ্যে দুয়েক চ্যানেল সমালোচনা মুলক খবর প্রচার করে যখন তাদের স্বার্থের হানি  হয়। পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের বড় বড় সাংবাদিকরা প্রায় সবাই আওয়ামী ঘরাণার লোক। মালিকরা রিক্রুট করার সময় সেভাবে দেখেই নিয়োগ দেন। যাদের মতামত প্রকাশ হয় তাঁরাও আওয়ামী ঘরাণার লোক। ধরুন, আমি যদি কোন কাগজে কলাম লিখতে চাই তাঁরা প্রকাশ করবেনা। কারণ আমি তাঁদের ঘরাণার লোক নই। এর মানে হচ্ছে তৃতীয় মত প্রকাশে কোন সুযোগ নেই। এমন কি একই ঘরাণার ভিতরেও নানা গ্রুপ। এসবতো হাল সময়ের কথা। পুরাণো যুগেও রাজা বাদশাহরা সাধারন মানুষের সাথে কথা বলার জন্যে দেওয়ানী আম ও দেওয়ানী খাস এর ব্যবস্থা রেখেছেন। এমন ব্যবস্থাতেও কি সাধারন মানুষ কি কখনও রাজা বাদশাহদের সাথে দেখা করতে পারতো ?  না পারতোনা। সাধারন মানুষের মধ্যে কারা দেখা করবেন তা কোতোয়াল বা আমলারা ঠিক করে দিতেন। আপনারা হর হামেশাই টিভি ও খবরের কাগজে দেখেন রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা ইদের দিন সাধারন মানুষের দেখা করেন এবং সেমাই হালুয়া ও মিস্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যাদের সাথে দেখা করেন তাঁরা কেউই সাধারন মানুষ নন। তাঁরাও সবাই সমাজের নামী দামী লোক। বিরোধী দলের নেতা বা নেত্রী যাঁদের দাওয়াত করেন তাঁদের আবার প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত করেন না। এর মানে কবি সাহিত্যিক শিল্পীদেরও ঘরাণার লেবেল লেগে গেছে। এই লেবেলের মাধ্যমেই চেনা যায় কে কোন দিকে আছে। স্বাধীনতা পদক, একুশের পদক ও এ ধরণের বহু পদক লেবেল দেখে দেওয়া হয়। কে কাকে কখন দাওয়াত করবেন তাঁর আলাদা তালিকা আছে। এখনতো গণতান্ত্রিক যুগ। এখনকার রাজা বাদশাহ, আমির অমাত্য, কোতোয়াল সেনাপতিরা নাকি জনগণের খাদেম। জনগণের পয়সায় নাকি তাঁদের মাসোয়ারা হয়। নেতারা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ভোট সংগ্রহ করে গণতান্ত্রিক রাজা বাদশাহ হন। রাজা বাদশাহর দরবারের জায়গায় এখন মন্ত্রী পরিষদ, সচিব পরিষদ ও সংসদ আছে। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী চার কোটি লোকের ভোট পেয়ে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। বিরাধী দল বা নেত্রী পৌনে চার কোটি ভোট পেয়ে কারোরই প্রতিনিধিত্ব করেন না। এটা মহান গণতন্ত্রের নিয়ম। শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই গণতন্ত্রের এমন চেহারা। বিশে্বের বৃহত্‍ এবং মহান গণতান্ত্রিক দেশ হলো ভারত। এদেশে ৩০ কোটি লোক অচ্যুত, একশ’কোটি দরিদ্র, ৩০ কোটি নির্যাতিত ও নিস্পেষিত। এ দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ লোক অভাবে আত্মহত্যা করে। অচ্যুতদের পুড়িয়ে মারে। সে দেশে সামরিক ব্যয় জিডিপির বিশ ভাগ। ভারতে সেনাপতিরা পেছনে থেকে দেশ চালায়। সামনে থাকে গণতন্ত্র, গান্ধী টুপি ও ধুতি। কোথাও গান্ধীজীর চরকাও আছে।ভাতের গণতন্ত্রের সহায়ক শক্তি হলো বড় বড় ধনীরা। এই ধনীরাই সকল মিডিয়ার মালিক।তাঁরাই গণতন্ত্রের পথা দেখায়।

বিদেশী শাসক ইংরেজদের কাছ থেকে  রক্ষা পাওয়ার জন্যে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের মুসলমানেরা স্বাধীনতার জন্যে ১৯০ বছর লড়াই করেছে। হিন্দুরা করেছে ৯০ বছর। ১৭৫৭ সাল থেকেই হিন্দুরা ইংরেজদের সমর্থন দিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। ইংরেজরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যাবার কথা ঘোষণা করলো তখনই হিন্দুরা উঠে পড়ে লেগে গেল কিভাবে পুরো ভারতের ক্ষমতাটা কুক্ষিগত করা যায়। মুসলমানরা বললো, আসো দুই ভাই এক সাথে মিলে মিশে থাকি। আমরাতো হাজার বছর ধরে মিলে মিশেই আছি। তোমরা দিল্লীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করো তাহলেতো আমরা লক্ষ বছর মাইনরিটি হয়ে থাকবো। আসো আমরা মোঘল আমলের মতো কনফেডারেশন করি। সবাই মিলে দেশ চালাই। কিন্তু হিন্দুরা রাজী হলো না। ফলে ভারত ভাগ হলো। সেই থেকে বিদেশীরা আর ইংরেজদের খালাত ভাইয়েরা দেশ দুটোকে নিয়ে খেলছে। ৭১ সালে ভারত আর ভুট্টো মিলে পাকিস্তানকে ভেংগে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রের জন্ম দিলো। আর আমরা বাংগালী মুসলমানেরা একটি স্বাধীন দেশ পেলাম। স্বাধীন দেশের পতাকা পেলাম, জাতীয় সংগীত পেলাম, জাতিসংঘের সদস্য পদ পেলাম। এখন আমাদের সবকিছুই স্বাধীন। পাকিস্তানী, হিন্দুস্তানী বা বিদেশী কেউ নেই আমাদের শোষণ করার জন্যে। আমরা এখন স্বাধিন ভাবেই নিজেদের শোষণ করতে পারছি। ভেবেছিলাম পাকিস্তানীদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়ে একটু শান্তিতে থাকবো। না আর হলোনা। আমাদের কারো মাথায় ভারতের ভুত আর কারো মাথায় পাকিস্তানের ভুত স্থায়ী ভাবে বাসা বেঁধে বসেছে।ফলে ৪০ বছরেও আমাদের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। আমাদের কোটি কোটি মানুষ গরীব, অশিক্ষিত। তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, চিকিত্‍সার জন্যে কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমরা স্বাধীন। আমাদের নেতারা বলেছিলেন, স্বাধীন হলে তোমরা সবকিছু পাবে। স্বাধীন হতে গিয়ে আমাদের ৩০ লাখ( সংখ্যা নিয়ে নানা মত আছে) শহীদ হয়েছে, দুই লাখ মা বোন ইজ্জত হারিয়েছেন আর কোটি কোটি টকার সম্পদ নস্ট হয়েছে। চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে এ দেশের সাধারন আম জনতা তেমন কিছুই পায়নি। দূর্ণীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ধনী থেকে ধনী হয়ে চলেছে। বিদেশের কাছে দেশের দেনা বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর ২০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করতে হয়। শুধু দূর্ণীতির কারণে দাতা দেশ গুলো সাহা্য্য ও ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ব ব্যান্ক বলেছিল পদ্মা সেতুতে শুরুতেই যে দূর্ণীতি হয়েছে তার বিচার করো। সরকার বিচার করতে রাজী নয়। এখন সরকার বিশ্ব ব্যান্কের বিরুদ্ধে নানা ধরণের কথা বলে বেড়াচ্ছে। এতে দেশের ক্ষতি হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। পদ্মা সেতুতে দুই বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ লাগবে। সরকার বলছে বিদেশীদের কাছে থেকে আর কোন সাহায্য নেয়া হবেনা।

প্রধানমন্ত্রীর বাবা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট আমলে কিছুদিন দূর্ণীতি দমন মন্ত্রী ছিলেন। তখন এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, আপনারা আমার কাছে তিন পয়সার পোস্ট কার্ড কিনে চিঠি দিবেন আর আমি দূর্ণীতিকে খতম করবো। বংগবন্ধু সরল মনেই কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু তিনি দূর্ণীতি দমন করতে পারেননি। বরং পরে তাঁর বিরুদ্ধেই দূর্ণীতির অভি্যোগ আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বংগবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উন্নয়নের জন্যে মহিলাদেরকে তাঁদের অলংকার দিতে বলেছিলেন। এই আবেদনে তেমন কোন ফল পাওয়া যায়নি। তখন তিনি একবার বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হলে মানুষ পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। আর একবার বলেছিলেন রিলিফ হিসাবে সাড়ে সাতকোটি কম্বল এসেছিলো। তিনি তাঁর কম্বলটি পাননি।বংগবন্ধুর আমলেও দেশ থেকে দূর্ণীতি যায়নি। বরং সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশটিকে লুটে পুটে খেয়েছিল। ওই সময়েই এস মুজিবুল্লাহ নামক এক ব্যবসায়ীর একটি কলামইত্তেফাকে ছাপা হয়েছিল, যার হেডিং ছিল,‘দে মা তবিলদারি লুটে পুটে খাই। বংগবন্ধু সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর দেশের মানুষ সুখে থাকবে। আশা করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি মানুষকে সুখী করতে পারবেন। কিন্তু তিনি তা পারেননি। তাঁর চারিদিকে চাটার দল তাঁকে ঘিরে ফেলেছিল। শত চেস্টা করেও তিনি ওই চাটার দল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। সে সময়ে বংগবন্ধুর পরিবারকে নিয়ে নানা ধরণের জোকস বা কৌতুক বেরিয়েছিল। দূর্ণীতি দমন ও দেশের উন্নতির জন্যে তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন ভিন্ন মত বন্ধ করতে পারলে তিনি নিজের মতো করে দেশের উন্নতি করতে পারবেন। আওয়ামী লীগ মনে করে তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত পারতেন। অসমাজতান্ত্রিক একটি দল দিয়ে তিনি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দুইবার ক্ষমতায় এসেও আর সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চাননি। তিনি এখন ইসলাম মুক্ত সেকুলার সমাজ কায়েম করতে চান। তাই দিনরাত জংগীবাদ শব্দটি উচ্চারন করে ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন। এ ব্যাপারে তিনি আমেরিকা যা বলছে তাই করছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে বললেই আমেরিকা ও তাঁর বন্ধুরা নানা ধরণের অর্থ সাহায্য দেয়। এমন কি এ ব্যাপারে আমেরিকাকে সউদী আরব ও সাহায্য করে।

গত শুক্রবারেও আমি লিখেছি বর্তমান রাস্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের ভাগ্যের কখনই পরিবর্তন মানে উন্নতি হবেনা। বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে দেখলাম, তিনি দু:খ করে বলেছেন, দেশের মানুষ পাকিস্তান চেয়েছিল নিজেদের মুক্তির জন্যে। দীর্ঘকাল ধরে তারা হিন্দু জমিদার ও ইংরেজদের দ্বারা শোষিত হয়েছে। তাই জীবন বাজি রেখেই তাঁরা পাকিস্তান প্রতিস্ঠা করেছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর দেখা গেল খাজা গজা ও নবাবরা তাদের শোষণ করতে শুরু করেছে। ফলে খাঁটি মুসলীম লীগ কর্মীদের স্বাধীন পাকিস্তানের কোন সুফলই পায়নি। বাধ্য হয়েই তাঁরা নতুন দল আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠা করেন। ৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হলে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। এক পর্যায়ে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রদেশে ও কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। আতাউর রহমান সাহেব প্রদেশের চীফ মিনিস্টার ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই বুঝা যায় মুসলীম লীগের পতনের একমাত্র কারণ সংগঠনের জন বিচ্ছিনতা। পূর্ববাংলার সমাজ ব্যবস্থা ছিল মধ্যবিত্ত শিক্ষতদের সংস্কৃতির। সমাজের আশির ভাগ মানুষই ছিল কৃষিজীবী। তেমন কোন বড় জমিদার এ দেশে ছিলনা। মুসলমানদের স্বাধীনতার আশায় এ দেশের সাধারন মানুষ জানপ্রাণ দিয়ে পাকিস্তান সমর্থন করেছিলেন। ইংরেজ আমলে পূর্ববাংলার মানুষই সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে। জমিদারদের শোষণ থেকে কৃষক সমাজকে রক্ষা করার জন্যেই শেরে বাংলা ঋণ সালিশী বোর্ড করেছিলেন। মুসলমানদের মুক্তির জন্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার পর খাজা গজা, নবাব নবাবজাদারা পাকিস্তান দখল করে নিল। পুরো পাকিস্তানের সাধারন মানুষ আবার শোষণের যাঁতাকলে পতিত হলো। শেখ সাহেবের আত্মজীবনীতে এসব কথা খুবই স্পস্ট হয়ে এসেছে। ধনী মুসলীম লীগার,  তাদের চামচা ও আমলাদের কারণেই মুসলীম লীগের পতন হয়েছে পূর্ব বাংলায়। আওয়ামী মুসলীম গঠিত হয়েছিল পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ও সাধারন মানুষের জন্যে। এই নতুন মুসলীম লীগের যোগ দিয়েছিলেন শেরা বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব। দুজনই ছিলেন অখন্ড বাংলার প্রধানমন্ত্রী। মাওলানা ভাসানী ছিলেন আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি। মুসলীম লীগের নেতরা   নতুন মুসলীম লীগের নেতাদের সাথে সমঝোতা না করে তাঁদের উপর নানা অজুহাতে অত্যাচার শুরু করলেন। এই অত্যাচারের ফসলই ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট। ব্যাস, আর যায় কৈ? মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগের কবর হয়ে গেল। এটা ছিল পূর্ববাংলার মধ্যবিত্ত মুসলমানদের প্রথম ক্ষমতায়ন। পাকিস্তানের কাঠামোতে পূর্ব বাংলার নেতারা প্রদেশের সমস্যাদি সমাধানের আপ্রাণ চেস্টা করেছেন। মুসলীম লীগের এক গুঁয়েমীর জন্যে তা হয়নি। এমনি এক সময়েই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সামরিক আইন জারী করে ক্ষমতা দখল করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর শোষনকে আরও কঠিন ভাবে অব্যাহত রাখে। মুসলীম লীগাররা তখনও আইউব খানকে সমর্থন দিয়ে গেছে। মুসলীম লীগ এবং ওই মার্কা দলগুলোকে সাথে নিয়ে আইউব খান দশ বছর এ দেশটাকে শাসন করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানী এবং পূর্ব পাকিস্তানের আইউব পন্থী নেতাদের আস্থা একেবারেই হারিয়ে ফেলে।

ভারতের নেতারা বহু দিন যাবত প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানকে ভেংগে দেয়ার। ঠিক এ সময়েই শেখ সাহেবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বাংগালীদের একমাত্র দল হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। বাকি সব রাজনৈতিক দল বানের জলের মতো ভেসে গেল ৭০ এর নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে ভোটাররা চোখ বন্ধ করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে বাংগালীদের একমাত্র দল হিসাবে। শেখ সাহেবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে জেনারেল ইয়াহিয়ার কিছুটা আগ্রহ থাকলেও পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও ভুট্টো একাট্টা হয়ে আওয়াজ তুললো এক দেশ দুই প্রধানমন্ত্রী। শেখ সাহেব ভুট্টো ও সামরিক বাহিনীর এই খোলাটা বুঝতে পারেননি। আলোচনার নামে তারা শেখ সাহেবকে ধোকা দিয়েছে। শেখ সাহেব ভেবেছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও সামরিক জান্তা তাঁর ফর্মূলা মেনে নিয়েছে। না, শেখ সাহেবের চিন্তা ছিল একেবারেই ভুল।  অপরদিকে  ভারতের  ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছে পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হোক। যেটা ভারতের সকল রাজনৈতিক দল ৪৭ সাল থেকেই চেস্টা করে আসছিল। শেখ সাহেবের অগোচরেই আওয়ামী লীগের একাংশকে ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদন মোতাবেক ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী হাত করে নিয়েছিল। তাই তাজউদ্দিন সাহেব আপ্রাণ চেস্টা করেও শেখ সাহেবকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেননি। শেখ সাহেব তখনও ভাবছিলেন সবকিছু শান্ত হয়ে গেলে তিনি চুক্তি মোতাবেক ক্ষমতায় যেতে পারবেন। ভারত পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কিছু অফিসারকে দিয়ে বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে আগ্রাসী ও প্রথম হামলাকারী দেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর চিহ্নিত করে আত্মরক্ষার কথা বলে পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালায়।ভারত আশা করেছিল ওই অবস্থায় শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিবেন। মেজর জিয়া যে বংবন্ধু নাম করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিবেন এ কথা ভারত ও  পাকিস্তানের কোন গোয়েন্দা বাহিনী ভাবতেও পারেনি। এ কারণেই ভারত ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়া সাহেবকে ভাল চোখে দেখেনি। এমন কি বাংলাদেশ হওয়ার পরেও বাংলাদেশ সরকার এবং শেখ সাহেব জিয়া সাহেবকে সেনা বাহিনীর প্রধান করেননি। ফলে জিয়া সাহেব হয়ে গেলেন পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের কাছে  বিদ্রোহী।

মূল বিষয়ে দূর্ণীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি প্রাসংগিক অনেক কথা বলে ফেলেছি। বাংলাদেশে দূর্ণীতি এখন জাতীয় চরিত্রের মূলে প্রোথিত হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদরাতো দিনরাত একে অন্যের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ করে যাচ্ছেন। ক্ষমতায় এসে নিজেদের দূর্ণীতির মামলা গুলো প্রত্যাহার করে নেন। বিরোধী দলের সব মামলা ঝুলতে থাকে। মন্ত্রীরা বুক ফুলিয়ে বলেন, আমরা কি ক্ষমতায় এসেছি বিরোধী দলের মামলা প্রত্যাহার করার জন্যে? এতো এক ধরণের বেলেল্লাপনা। পদ্মাসেতুর দূর্ণীতি  নিয়ে যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে তাতে সরকার মোটেই বিব্রত নয়। এর মানে সরকারের শরম একেবারেই চলে গেছে। তাঁরা হয়ত বলবেন সরকার চালাতে শরম থাকলে চলেনা। এক আবুলকে বাঁচাতে গিয়ে সারা জাতি কি কেলেংকারীতেই পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কিছুতেই আবুলকে সরাতে রাজী হলেন না। বরং তিনি বিশ্বব্যান্কের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ এনেছেন।এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নানা অভিযোগে আবুলকে প্রতিমন্ত্রীত্ব থেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন। এবার কেন পারছেন না তা বড়ই রহস্যজনক।পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পারিষদ দল দিনরাত কথা বলেছেন। যত বলছেন ততই দেশের ভাবমুর্তি নস্ট হচ্ছে। আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতাদের ভাবখানা যেনো বাংলাদেশের আর বিশ্ব ব্যান্কের প্রয়োজ নেই। আরও অনেক বিষয়ে নানা কথা বলে সরকার দেশের ইতি বাচক ইমেজকে  একেবারেই মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে।

গণতন্ত্র আর বাংগালী মুসলমানদের মুক্তির জন্যে বংগবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমি তাঁর আত্মীয় জীবনী পাঠ করে জানতে পেরেছি তাঁর সারা জীবনের সংগ্রামের কথা। মানুষের মুক্তির জন্যে নিজের সংসারের প্রতি তেমন খেয়াল করতে পারেননি। কিন্তু অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সেই মানুষটাই কি কারণে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তা আজও আমাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে। কেন যে , তিনি তাঁর আমলে দেশকে দূর্ণীতি মুক্ত করতে পারলেন না সেটাও বোধগম্য নয়। কেন যে তিনি নিজ আত্মীয় স্বজনকে রাস্ট্রীয় সম্পদ বিলি করেছিলেন তাও বুঝতে পারছিনা। দারিদ্রের ভিতর থেকেও তিনি দেশের মানুষের জন্যে নিজেকে উত্‍সর্গ করেছেন। ক্ষমতা পেয়ে তিনি বিরোধী দলের কর্মীদের উপর স্টীম রোলার চালিয়েছেন। তাঁর আমলে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এমন কি তিনি তাঁর নেতা মাওলানা ভাসানীকেও অন্তরীন করে রেখেছিলেন। আইউব খানও ক্ষমতায় এসে মাওলানা সাহেবকে দীর্ঘ চার বছর অন্তরীন করে রেখেছিলেন।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


বেশ কিছুদিন হলো আমি রাজধানীর ফাইভ স্টার হাসপাতাল নিয়ে দুই কিস্তিতে কিছু কথা বলেছিলাম। আমাদের রাস্ট্রীয় চিকিত্‍সা ব্যবস্থা নিয়ে বহু প্রবন্ধ নিবন্ধ তৈরি হয়েছে এবং পত্র পত্রিকায় তা ছাপা হয়েছে। দেশের সাধারন মানুষের পক্ষে চিকিত্‍সা পাও য়া খুবই কঠিন। পাবলিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মানে সরকারী কলেজ ও হাসপাতাল গুলোতে চিকিত্‍সা ব্যয় এখনও বেশ কম। কিন্তু চিকিত্‍সার মান খুবই নিম্নমানের। জেলা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোর অবস্থা খুবই করুণ। শুনেছি সেখানে বিদ্যুতের অভাবে মাঝে মাঝে হারিকেন ব্য মোমবাতির আলোতে চিকিত্‍সা করতে হয়। এমন এমন আলোতে অপরেশনও চলে। এসব আসলে বাংলাদেশেই সম্ভব।বড় বড় অনেক গুলো হাসপাতাল হয়েছে। যেখানে ডাক্তার দেখাতে ফি নেয়া হয় ৮শ’ থেকে হাজার টাকা। ডাক্তারের সাথে দেখা বা এপয়েন্টমেন্ট করতে ১৫ দিন থেকে এক মাস আগে।আপনি যদি সরাসরি ফোন বা ইমেইলে এপয়েন্টমেন্ট করে থাকেন তাহলে নির্ধারিত তারিখে আপনি যখন গেলেন তখন ডাক্তার সাহেবের সহকারী বলবেন, আমার খাতায় নাম নেই। স্যার আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। আপনি বসুন, আমি স্যারের সাথে কথা বলে নিই। কথা বলতেই হয়ত এক ঘন্টা পার হয়ে গেল। আমার ডাক্তার হলেন, বরেন চক্রবর্তী ও খালেদ মহসিন। বরেন বসেন ল্যাব এইডে, আর মহসিন বসেন স্কয়ারে। এপয়েন্টমেন্টের পরেও সহকারী আপনাকে এক ঘন্টা বসিয়ে রাখবেন। এক সময় আমি বা আমার স্ত্রী বি চৌধুরী সাহেব ও নুরুল ইসলামকে দেখাতাম। নুরুল ইসলাম সাহেবের ওখানে তাঁর সহকারী ব্যবহার ভাল ছিলনা। নুরুল ইসলামের কখনই হাসিমুখ ছিলনা। মনে হতো তিনি নিজেই অসুস্থ। কিন্তু তিনি খুবই ভাল ডাক্তার। বি চৌধুরী সাহেব ছিলেন একেবারেই উল্টো। তিনি সদা হাস্য। রুগীরা তাঁর কথায় অর্ধেক ভাল হয়ে যেতেন। দুই জায়গাতেই সহকারীদের ম্যানেজ করতে হতো। সহকারীদের হাত করে নিতে হতো আতিকুল হক সাহেব ও নুরুল ইসলাম সাহেবের ওখানে। একবার আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম বি চৌধুরী সাহেবের চেম্বারে। তিনি আমার স্ত্রীকে দেখলেন এবং বললেন কোন রোগ নেই, একদম ভালো আছেন। তবুও দুয়েকটি অসুধ দিলাম, না দিলে বলবেন ডাক্তার ভাল নয়। ফি’জ নিলেন, কিন্তু আমার স্ত্রী চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলে আমাকে ডেকে টাকাটা ফেরত দিয়ে বললেন, টাকা না নিলে রুগীরা মনে করেন ভাল করে দেখা হয়নি। এটা এক ধরণের মনস্তাত্বিক ব্যাপার। বি চৌধুরী সা্েবের বাবার সাথেও আমার পরিচয় ছিল। তিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন। খুবই সামাজিক মানুষ ছিলেন। করাচীতে পূর্ব পাকিস্তান সমিতির সদস্যরা তাঁর প্রচুর সাহায্য সহানুভুতি পেয়েছেন।

আমাদের এই রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলা হয় বর্তমানে এই রাজধানীতে প্রায় দেড় কোটি লোক বাস করে। গ্রাম ছেড়ে মানুষ নগরে আসছে জীবিকার অন্বেষণে। এর মানে হচ্ছে গ্রামের আয় দিয়ে সংসাে চলেনা। তাই সবাই শহরের দিকে ছুটে চলেছে। প্রতি বছর নাকি ৪/৫ লোক গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসছে। যারা ছিন্নমূল হয়ে রাজধানীতে আসছে তাদের আশ্রয় জোটে বস্তিতে। তাই রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আরও কয়েক লাখ লোক ফুটপাত, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদর ঘাটে রাত কাটায়। লোকে বলে বস্তি গুলোতেই বেআইনী অসামাজিক কাজ সংঘটিত হয়। এরাই রাজনৈতিক দলের মিছিলে অংশ নেয়। সেদিক থেকে বিচার করলে রাজনীতিতে এদের বেশ কদর আছে। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনা বাহিনী প্রথমেই বস্তি আক্রমন করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওরা ভেবেছিল ওখান থেকেই প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে।পাকিস্তানের ২৩ বছর সহ বাংলাদেশের ৪১ বছর সহ ৬৪ বছর পার হতে চলেছে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কোন উন্নতি হয়নি। যাদের থাকার জায়গা নেই, শিক্ষা নেই , তাদের আবার স্বাস্থ্য রক্ষা লাগে বলে রাস্ট্র মনে করেনা। তাদের কোন খোঁজ খবর রাস্ট্র রাখেনা। কাগজে কলমে রাস্ট্র বহু কথা বলে। ওসব হচ্ছে কথার কথা। ধোকা বাজির কথা। রাজনীতির কথা। আসল কথা নয়। ৪৭ সালে এখানে লোক সংখ্যা ছিল চার কোটির মতো। ৭১ সালে ছিল সাড়ে সাত কোটি। আর এখন নাকি প্রায় ১৬ কোটির মতো। এর মধ্যে ১০ কোটি লোক গরীব। বাকি ৬ কোটির মধ্যে মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত। এক কোটি লোক  ধনী। এরাই রাস্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। রাস্ট্র আর ধনীরা মাসতুতো ভাই।

Read Full Post »