Feeds:
Posts
Comments

Archive for March, 2013


অচেনা এক রাস্ট্রের ভিতর জীবন যাপন / এরশাদ মজুমদার

ছাত্র বয়স থেকেই রাস্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এখন বৃদ্ধকালে এসেছি। জানিনা দুনিয়া থেকে চলে যাবার আগে রাস্ট্র ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবো। সারা জীবন মানবতার জন্যে লড়াই করেছি। ক্ষুধা,দারিদ্র,অশিক্ষা,চিকত্‍সাহীনতা থেকে মুক্ত একটা সমাজ ও দেশ চেয়েছিলাম। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল বিশেষ ভাবে বাংলার নির্যাতিত মুসলমানের মুক্তি জন্যে। জিন্নাহ সাহেব নিজেই বলেছিলেন, শুধু পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মুক্তির জন্যে হলেও পাকিস্তান অপরিহার্য। ৭১ সালে পূর্ব বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান নিজেই ভেংগে গেছে। পাকিস্তান কর্তৃক শোষিত ও নির্যাতিত সেই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ আজ স্বাধীন। কোন বিদেশী শাসক বা শোষক নেই।
পৃথিবীর যে কোন রাস্ট্রের অস্তিত্ব নির্ভর করে সে রাস্ট্রের পরিচালন ব্যবস্থার উপর। পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে উঠে সংবিধানকে কেন্দ্র করে। স্বাধিনতার ৪২ বছর আজ আমরা কি দেখছি? দেখছি, আমাদের রাস্ট্রটি এক অত্যাচারী রাস্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাস্ট্রের ম্যানেজার বা নায়েব যাকে আধুনিক ভাষায় সরকার বলে অভিহিত করি। সেই সরকার এখন দেশের নাগরিক বা মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে রক্ষা করার জন্যে রাস্ট্রের আছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেব, পুলিশ ও আনসার। রাস্ট্রকে রক্ষা করার জন্যেই সেনা বাহিনী তৈয়ার করা হয়। সেই সেনাবাহিনীর বিপথগামী বলে পরিচিত কিছু লোক ইতোমধ্যই দুজন রাস্ট্রপতিকে হত্যা করেছে। একজন সেনাপতি জোর করে ক্ষমতা দখল করে নিজের তার গ্রুপের ইচ্ছা মত নয় বছর শক্তি দিয়ে দেশ চালিয়েছে। আরেক জন সেনাপতি অভ্যুত্থান করতে গিয়ে চাকুরী হারিয়েছেন। রাটজনৈতিক দলের মারামারি হানাহানির সুযোগ নিয়ে ২০০৭ সালে সেনাপতি মইন ইউ আহমদ ক্ষমতা দখল করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। তখন আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,১/১১র দেশদ্রোহী মইন ইউ আহমদের সরকার তাদের দাংগা হাংগামার ফসল। নির্বাচিত হলে সেই অবৈধ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকে তিনি বৈধ করে দিবেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে সেনাপতি মইন ইউ আহমদ শেখ হাসিনাকে পুর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য হাসিলের জন্যে ক্ষমতায় বসিয়ে দেশত্যাগ করে চলে যান। তিনি এখনও নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। আমার বিশ্বাস,দেশবাসী বা পাঠক সমাজ ১/১১র সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক গোষ্ঠি কি করেছিল তা ভুলে যাননি। ২৮শে অক্টোবরের লগিবৈঠার হত্যা কান্ড টিভির মাধ্যমে সারা বিশ্ব দেখেছে। এর আগেও ৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগ সারা দেশে তান্ডব চালায়। ফেব্রুয়ারীর এক তরফা নির্বাচনের দিন রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল কারফিউ ঘোষণা করে। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি সরকার একদিন বা দুইদিন স্থায়ী সংসদে কেয়ারটেকার সরকারের আইন পাশ করে। সেই আইন আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে শেখ হাসিনার সরকার বাতিল করে দেয় গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে। আর বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট এখন আন্দোলন করছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পূণ:প্রতিষ্ঠা করার জন্যে।
বাংলাদেশের চলমান বেদনাদায়ক ও দু:খজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনার সরকার ও তার সহযোগীরা। দেশবাসী সবাই জানেন যে, কেয়ারটেকার ব্যবস্থার দাবী মেনে নিলে চলমান অবস্থার সৃষ্টি হতোনা। এখন পাঠক সমাজ ও দেশবাসীকে ভাবতে হবে কেন শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। শেখ হাসিনা নিজেই বলেন তাঁরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চান। ইতোমধ্যেই তিনি সরকারী খরচে জনসভা করে ভোট চাইতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই তাঁর সরকার যদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশকে মুসলীম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অস্বচ্ছ,আন্তর্জাতিক ভাবে বৈধ নয় এমন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত নিন্দা জানিয়ে বিচার বন্ধ করার দাবী তুলেছে। শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থানের প্রতি একমাত্র ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে। ভারতের মিডিয়া গুলো ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে যে শা্হবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি ভারত সরকারের সমর্থন রয়েছে। ভারত এবং সে দেশের রাজনৈতিক দল ও মিডিয়া গুলো ভারতের স্বার্থেই কাজ করে। তাই তারা দলবেঁধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশের প্রশ্নে এক। বুঝে হোক না বুঝে হোক বাংলাদেশের ৯০ ভাগ রাজনৈতিক দল ও মিডিয়া ভারতের স্বার্থে কাজ করে। কিছুদিন আগেই ভারতের মিডিয়া গুলো বলেছে এবার হাসিনার কিছু হলে ভারত চুপ করে থাকবেনা।
অনেকের কাছেই প্রশ্ন, শেখ হাসিনা এক সাথে বড় দুটো ঝুঁকি নিলেন কেন? তিনি কি জানতেন না বিরোধী দল তাঁর সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবেনা? যুদ্ধাপরাধীর বিচারে মাওলানা সাঈদীর বিচারের রায় বের হলে দেশে বিদেশে কি প্রতিক্রিয়া হবে? সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে ব্রিফ করেছেন। তাহলে কেন তিনি শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন বা ধ্বংস করতে চাইছেন। কেনইবা তিনি বার বার বলছেন তিনি ২০২১ সাল পর্ক্ষন্ত ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন। এটা কি শুধুই ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা না অন্যকিছু? পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করছেন তাঁর অন্য কোন এজেন্ডা আছে,যা প্রকাশ্য নয়। ইতোমধ্যেই দেশবাসীর মনে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে,আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটা ধর্মহীন বা সেক্যুলার রাস্ট্রে পরিণত করতে চায়। যার জন্যে সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম তুলে দিয়েছেন বা তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে বলা হয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। যে কোরণে হোক, বিএনপিও এ বিষয়টার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। সে সুযোগটা এখন আওয়ামী লীগ নিচ্ছে। কাগজে কলমে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানার দরকার নেই। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে অপমান করার জন্যে সরকার নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেছে। পাঠ্য পুস্তকে ইসলাম ও আল্লার বিরুদ্ধে পাঠদান করা হচ্ছে। ব্লগে আল্লাহ, রাসুল(সা) ও কোরআনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করার পরও সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং একজন ব্লগার নিহত হওয়ার পর সেই ব্লগারকে শহীদ ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদে সেই ব্লগারের নামে গুণ গাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্লাগারের বাড়িতে গিয়ে তাকে মহিমান্বিত করেছেন। আল্লাহদ্রোহী অন্যান্য ব্লগাররা গণ জাগরণ নামে শাহবাগের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। নানা বিষয়ে শাহবাগীরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে চলেছে। সরকারের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে শাহবাগীরাই আসল সরকার ।তাদের শ্লোগান হলো জয় বাংলা। যদিও বাংলা বলে জগতে কোন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নাই। তাহলে কোন বাংলার নামে তারা জয়গাণ গাইছে? পশ্চিম বাংলাতো ভারতের একটি রাজ্য বা প্রদেশ। যেখানে গেলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তারা মুখ্যমন্ত্রী বলে। তারা শ্লোগান দেয় আমি কে তুমি কে? বাংগালী বাংগালী। তাই দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে শাহবাগীদের দৃশ্যমান গুরু সরকার হলেও অদৃশ্য গুরু কে বা কারা। ৪২ বছর পর বাংলাদেশের সব অর্জনকে কারা নস্যাত করতে চাইছে। কারা আমাদের জাতিসত্তার মূলে আঘাত করে চলেছে। তারা ৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করে পাকিস্তানকে ভেংগেছে। এখন বাংলাদেশকে নিয়ে করতে চায়? দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে তারা এদেশে একশ্রেণীর মানূষ তৈরি করেছে যারা শুধু মাত্র খাঁটি বাংগালী হওয়ার জন্যে নিজেদের আসল পরিচয় মুসলমানিত্ব,ঐতিহ্য, ভাষা, কৃষ্টি, ধর্ম ,সাহিত্য সবকিছু ত্যাগ করতে চায়।
কোলকাতার পাক্ষিক দেশ ম্যাগাজিন শাহবাগের উপর একটি গল্প প্রকাশ করেছে। ওই লেখাটিকে রিপোর্ট বলা যায়না। কল্পনা মিশ্রিত আবেগের বহি:প্রকাশ। লেখক সুমন সেনগুপ্ত শাহবাগে এসেছিলেন কিনা জানিনা। হয়ত কারো কাছ থেকে এর বর্ণনা শুনেছেন। যেমন,‘’লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখ কয়েক হাজার’। এক জায়গায় লিখেছেন,কিন্তু ব্রহ্মের শক্তি ধরে আছে এই জনতা।লেখক বিরোধী দলকে মৌলবাদী বলেছেন। খালেদা জিয়াকেও এক হাত নিয়েছেন। অথচ, দেশ ম্যগাজিনটি একটি মৌলবাদী আনন্দবাজার গ্রুপের কাগজ। যে গ্রুপ ভারতের নিপীড়িত মানুষের কথা বলেনা। এক সময় রাজস্থানে আনন্দবাজারের অশোক সরকারের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তখন গফুর সাহেব ছিলেন রাজ্য সরকারের গভর্নর বা রাজ্যপাল। একটা অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। তখন কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম তিনি কত উচ্চ মার্গের সাম্প্রদায়িক ছিলেন। সময়টা ছিল ৭৩ সাল। তিনি জানতে চাইলেন মাওলানা ভাসানী কেন ভারতের বিরোধীতা করছেন। মাত্র ক’দিন আগেইতো তোমাদের ভারত স্বাধীন করে দিয়েছে। এত অল্প সময়ে সব ভুলে গেলে? রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাংগালী শিক্ষকও একই প্রশ্ন করেছিলেন। এখনও ভারতীয় বাংগালী অবাংগালী সবাই মনে করে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে,আর সেই দেশের মানুষ কেমন করে ভারতের বিরোধিতা করে? ভারতীয়দের এ চিন্তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ভুল মনে করিনা। কেউ উপকার করলে তার প্রতি সকলেরই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ক’দিন আগে ভারতের ডিফেন্স রিভিউ ওয়েব সাইতে দেখলাম,অরজিত সিং নামে এক ভদ্রলোক বাংলাদেশকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সমর্থন ও সাহায্য না করলে এক লক্ষ বছর যুদ্ধ করেও বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতেনা। এর অবস্থা কাশ্মীরের মতো হতো।
আমার প্রশ্ন হলো, ভারত সরকার ও ভারতবাসী বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণের কাছে কি চায়?ভরত নিশ্চয়ই জানতো পাকিস্তান ভাংলে বা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে দেশটাতো আর সিকিমের মতো হয়ে যাবেনা। ভা এখানকার মানুষ ইসলাম বা মুসলমানিত্ব ছেড়ে দিয়ে ধর্মহীন হয়ে যাবেনা। যে কারণে এদেশের অতি সাধারন নির্যাতিত অপমানিত লাঞ্ছিত মানুষ বর্ণবাদী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেছিল সে কারণ গুলোতে এখনও বিরাজমান। ভারতে এখনও ৩০ কোটি অচ্যুত বা হরিজন রয়েছে যাদের সেদেশের ধর্ম ও সংবিধান মানুষ মনে করেনা। এর সাথে রয়েছে আরও ৩০ কোটি মুসলমান যারা অধিকার বঞ্চিত দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক। ৪২ বছর ধরেইতো ভারত বাংলাদেশকে তার অনুগত বন্ধু দেশ হিসাবে দেখতে চাইছে। একবার ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশে সব সময় একটি বন্ধু সরকার দেখতে চান। মানে শুধু বন্ধু রাস্ট্র হলে চলবেনা। পাকিস্তান রাস্ট্রের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, কিন্তু বন্ধুত্ব নাই। বাংলাদেশকেও ভারত খুবই ঘনিষ্ট বন্ধুদেশ হিসাবে দেখতে চায়। থা্লে এর মানে কি দাঁড়ালো?
মানে হচ্ছে ভারত চায় যেভাবেই হোক বাংলাদেশে ভারতপন্থীরা ক্ষমতায় থাকবে। দেশের মানুষ ষোলয়ানা বাংগালী হবে। ইতিহাস ,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাষা সবকিছুই বদলে নিতে হবে। বাংলাদেশের ভারতপন্থী একটি কাগজের শ্লোগান হলো বদলে দিতে হবে ,বদলে যেতে হবে। এ কাগজের সম্পাদক নবীজীকে(সা) ব্যাংগ করে কার্টুন ছাপে। কাগজের যুগ্ম সম্পাদক কোরআনের আয়াতকে ব্যাংগ বই প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান। তাহলেই ভারতের মিশন বাস্তবায়িত হবে। শুধু একবার ইসলামকে গৃহধর্ম বা ব্যক্তিগত ধর্মে পরিণত করতে পারলেই হলো। ভারতের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, আওয়ামী পুঁজিপতি, আওয়ামী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই তাঁরা মরণ কামড় দিয়েছে বাংলাদেশের উপর। দেশের মানুষকে দমনের জন্যে শত শত লোককে হত্যা করছে। মাত্র দুয়েকটি মিডিয়া ছাড়া বাকি সব মিডিয়া ভারতের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। শাহবাগের গণজাগরণের জন্ম হয়েছে ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক চিন্তা ভাবনা , কৌশল ও পরিকল্পনা থেকে। শাহবাগের তরুণরা হয়ত বিষয়টা একেবারেই জানেনা। তারা ভাবছে তাদের চিন্তা চেতনা সঠিক। তাই তারা মাঠে নেমেছে। তারা মনে করছে তারা স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে কাজ করছে। এমনটি ১৭৫৭ সালে হয়েছিল। তার খেসারত এদেশের হিন্দু মুসলমান সবাই দিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার মুসলমান।
বাংলাদেশের মানুষের জাতিসত্তার পরিচয় যদি সুস্পষ্ট না হয় তাহলে আপনদের মুসলমান পরিচয় অবিলম্বেই মুছে যাবে। তাই বাংলাদেশের মানুষের , বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজকে গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠতে হবে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক।
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


আমাদের জাতিসত্তার প্রধান উপাদান কি? এরশাদ মজুমদার

কেমন করে একটা রাস্ট্র হয়, কেমন করে একটা জাতি হয় তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলো বিভক্ত। একই কারণে দল কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরাও বিভক্ত। এই বিভক্তি দিনে দিনে আমাদের তরুণ সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। কোন পরিবার বিভক্ত হয়ে গেলে যেমন পিতামাতার কথা কেউ শোনেনা তেমনি আজ বাংলাদেশের অবস্হা। কবি আহমদ ছফা নাকি বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা, তেমনি এখন বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবেনা।
আমাদের জাতিসত্তার উপাদান গুলো স্পষ্ট হওয়ার দরকার বলে আমি মনে করি। এ জন্যে ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরতে চাই। আমাদের আগ্রহী তরুণরা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারবেন বলে মনে করি। ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী গবেষক আমাদের বন্ধু গোলাম কিবরিয়া তাঁর ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপট’ বইতে উল্লেখ করেছেন,প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবী ইতিহাস রচনার জন্যে কিছু সুপারিশ রেখে গেছেন। ১। সংকীর্ণ জাতীয় ও গোষ্ঠীস্বার্থ বাদ দিয়ে নিজেদের দেখা দরকার বৃহত্তর মানব জাতির একটি অংশ হিসাবে। ২।ইতিহাসকে রাস্ট্রীয় দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে সমাজের দৃষ্টিকোন থেকে দেখাই উত্তম। কেননা রাস্ট্রের উত্থান পতন হয়। কিন্তু মানব সমাজ গুলো অমর। গ্রেট বৃটেন কিংবা এথেন্স এর ইতিহাস রাস্ট্র হিসাবেও লেখা যেতে পারে,তবে এদের সবচেয়ে বড় পরিচয় এরা মানব সমাজের এক একটি অংশ। ৩। কোন সমাজই গোটা মানব জাতি নয় এবং নিজেকে সেরকম ভেবে আলাদা থাকতে গেলে তাদের বিনাস অনিবার্য। ৪। যদিও একই দেশের ইতিহাসের এক অধ্যায়ের সংগে অন্য অধ্যায়ের যত মিল ভিন্ন দেশের ইতিহাসের সংগে তত মিল নেই তথাপি হেলেনিক এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে কালগত ব্যবধান সত্বেও কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
‘প্রাচীনকালে বা জেমস মিল-এর যুগ বিভাগ অনিযায়ী হিন্দু আমলে ভারতবাসীর মধ্যে ইতিহাস চেতনা ছিলনা এবং স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা ইতিহাস রচনার চেষ্টাও করেননি। বস্তুত মধ্য বা মুসলমান যুগের পূর্বে,যে কোন কারণেই হোক, ইতিহাস রচনা ও ঐতিহাসিক সাহিত্যের ভুমিকা ছিল নগন্য। যেসব প্রাচীন ভারতীয় দলিল আজও টিকে আছে তার বৃহদাংশই ধর্ম ও ধর্মাচার সংক্রান্ত।
বিষয়টা এতই বিশাল যে, স্বল্প মপরিসরে কিছু বলা খুবই কঠিন ।প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমিলা থাপার বলেছেন,একক ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বলে কখনই কিছি ছিলনা।যা ছিল তা হিন্দু মুসলমানের ভেদ ঐতিহ্য চেতনা। রমিলা মনে করেন,দ্বিজাতি-তত্ত্বের ঐতিহাসিক ধারণা প্রথম এসেছে জেমস মিলের লেখায়। ভারতীয় হিন্দু নেতৃত্বের সংকীর্ণতার বদৌলতে দ্বিজাতি-তত্বের ধারণা উপমহাদেশের হিন্দু মানসে স্থায়ী ভাবে আসন গেড়ে বসেছিল এবং উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভারতবর্ষের হিন্দু নেতারা মনে করতেন এবং এখনও মনে করেন মুসলমানরা বহিরাগত। তারা বিশ্বাস গত দিক থেকেই মনে করতেন ভারত হিন্দুর দেশ।
ধর্ম নিরপেক্ষতা ভারতের একটি শ্লোগান মাত্র। একথা একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে গেছে এ আর দেশাইয়ের লেখাতে। এমন কি ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তাঁর ‘আওয়ার হেরিটেজ’ বইতে বিভিন্ন ভারতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুসলমানদের অবদান নিয়ে একটি কথাও বলেননি। সোজা কথায় বলতে হবে বিভক্ত হয়েছে হিন্দু নেতাদের হিন্দুয়ানী মানসিকতার কারণে। ঐক্যবদ্ধ অখন্ড ভারত রাখার জন্যে ভারতীয় হিন্দু নেতারা কিছুই করেননি। যা করেছেন তা হলো তথকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার ভন্ডামী। জিন্নাহ সাহেব শুরুতে অখন্ড ভারতই চেয়েছিলেন। বিশাল হিন্দু ভারতে মুসলীম জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অবস্থা কি হবে তা হিন্দু নেতারা বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তখনি জিন্নাহ সাহেব হিন্দুদের দ্বিজাতি তত্ত্বকেই সমর্থন জানালেন এবং দাবী করলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ভারত ভাগ হবে।
হিন্দু নেতাদের ধারণা ছিল মাইনরিটি মুসলমানেরা তাঁদের অখন্ড ভারতের দাবী মেনে নিবে। না, মুসলমানেরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই আলাদা রাস্ট্রের প্রস্তাব পেশ করেছে ১৯৪০ সালে। ঠিক ওই সময়েই অখন্ড বংগদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র করার প্রস্তাবও নেহেরু ও গান্ধীজী গ্রহণ করেননি। কারণ, অখন্ড বংগদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি ছিল। ৩৭ সাল থেকে ৪৬ সাল পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মুসলমান। তাঁরা হলেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, স্যার নাজিমুদ্দিন ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব। ৪৭ সালে হিন্দু নেতারাই বংগ ভংগের প্রাস্তাব দিয়েছেন। যদিও ১৯০৫ সালের বংগভংগের বিরুদ্ধে তাঁরা তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন। এমন কি তাঁরা ১৯১২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছেন। সোজা কথায় বলা যেতে পারে তাঁরা কখনই বাংগালী মুসলমানের বিকাশ চাননি। হিন্দু জমিদারদের শোষন ও অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্যেই শেরেবাংলা ও খাজা নাজিমুদ্দিন ঋণ সালিশী বোর্ড গঠণ করেছিলেন। এ কারণেই মুসলমান প্রধান পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয় একটি প্রদেশ হিসাবে।
কেন অখন্ড ভারত খন্ডিত হলো সেই ইতিহাসের ছিটেফোটা কিছু এখানে উল্লেখ করেছি। শুরুতেই বলেছি,ইতিহাস থেরির বিষয়টা খুবই জটিল। কারণ ঐতিহাসিকও একজন সাধারন মানুষ,তিনি নিজ গোত্র,সম্প্রদায়, ধর্মীয় চেতনা ও জাতি স্বার্থের বাইরে গিয়ে স্বাধীন ভাবে সহজে কিছু লিখতে পারেন না।সমকালীন ইতিহাস কোন কালেই নিরপেক্ষ ভাবে লিখা সহজ নয়। সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী মহল সে ইতিহাস রচনায় বাধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের বহু বুদ্ধিজীবী,শিক্ষক,সাংবাদিক, কবি,রাজনীতিক ও নীতি নির্ধারকরা আজ বিভ্রান্ত না হয় মোনাফেকে পরিণত হয়েছে। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কখনই ইসলাম বা মুসলমান বিরোধী ছিলনা। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে যারা আজ জাতিকে বিভক্ত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। কিন্তু দেখতে মনে হবে এরাই বুঝি স্বাধীনতার পক্ষের আসল শক্তি। এরা বাংলাদেশের জাতিসত্তার মূলে কুঠারাঘাত করে চলেছে। তারা বাংলাদেশকে দূর্বল ভিত্তিহীন রাস্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাই বিদেশী শক্তি,বিশেষ করে ভারতের পরামর্শে তারা তথকথিত গণজাগরণ, চেতনা, সেক্যুলারিজম, অসাম্প্রদায়িকতা মন ভুলানো কথা বলে খুবই সুক্ষ চাল দিয়েছে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর। হঠাত্‍ করে গণজাগরণের জন্ম কেন হয়েছে, কিভাবে হয়েছে, কে বা কারা এর অর্থের জোগান দিচ্ছে তা দেশবাসীর জানার অধিকার আছে। শেখ হাসিনার সরকারই বা শাহবাগীদের চোখ বন্ধ করে সাপোর্ট দিচ্ছে তাও দেশবাসীকে বুঝতে হবে। জানতে হবে, জানার আগ্রহ থাকতে হবে। কোন মানুষ মুসলমান হবে আর অজ্ঞ থাকবে তা আল্লাহর রাসুল(সা) ও আল্লাহর(সু) কিতাব কখনই অনুমোদন করেনা।
প্রসংগত আমি আওয়ামী লীগ রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসংগে দুয়েকটি বলতে চাই। শুরুতে দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ।প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পূর্বপাকিস্তান বা পূর্ব বাংলায় আসার আগে তিনি আসাম প্রদেশ মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। সেখানে তাঁর দল সরকারও গঠণ করেছিল। তিনি আসাম চলে গিয়েছিলেন বৃটিশ সরকার তাঁকে পূর্ব বংগ থেকে বহিষ্কার করেছিল। পূর্ব বংগে ফিরে আসার পর তাঁর সাথে সরকারী মুসলীম লীগের বনিবনা হচ্ছিলনা। বাধ্য হয়েই তিনি ১৯৪৯ সালেই নতুন দল গঠণ করেন। যারা নতুন দলে সামিল হয়েছিলেন সবাই ছিলেন তরুণ মুসলীম লীগ কর্মী। তিনি তখন জনগণকে বুঝাবার জন্যে বলতেন, ওটা সরকারী মুসলীম লীগ, আর এটা জনগণের মুসলীম লীগ। তখন পর্যন্ত মুসলীগই ছিল এ দেশের মানুষের একমাত্র রাজনৈতিক দল। কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। কংগ্রেস খুবই দূর্বল ছিল। ৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মাওলানা সাহেব মুসলীম লীগ বিরোধী ছোট খাট সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচনী মোর্চা যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেন। অখন্ড বাংলার দুই প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্টে যোগ দেন। ওই নির্বাচনেই মুসলীম লীগ চিরতরে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়। যদিও সামরিক শাসকরা মৃত মুসলীম লীগকে আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল। নির্বাচনে জয়লাভের পর মুসলীম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে তথাকথিত স্যেকুলার দলে পরিণত করার দ্বার খুলে দেয়া হয়। তখনি কংগ্রেস সহ অন্যান্য নিষিদ্ধ দল গুলি আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ও কেন্দ্রে মন্ত্রীসভা গঠণ করে। সোহরাওয়ার্দী হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আতাউর রহমান সাহেব হলেন প্রাদেশিক চীফ মিনিষ্টার। দলের সাথে মাওলানা সাহেবের চিন্তা চেতনার দুরত্ব বাড়তে লাগলো। শেষ পর্যন্ত ৫৭ সালে নিরপেক্ষ পররাস্ট্রনীতি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রশ্নে দল ত্যাগ করলেন। বেশ কিছু বামপন্থী ও কংগ্রেসী আওয়ামী লীগে রয়ে গেল। তখনি ভারত এই দলটির উপর ভর করে। আওয়ামী লীগে এখন ভারতপন্থীরা খুবই শক্তিশালী। বংগবন্ধুকেও তারা তাদের মতো করে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি।
শেখ হাসিনাকে এখন ষোলয়ানা তাদের কব্জায় নিয়ে ফেলেছে। ফলে শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশ কি, এদেশের মানুষ কি চায় এসব প্রশ্নের কোন দাম নেই। দামী হচ্ছে ভারতের এজেন্ডা। ভার চায় বাংলাদেশ চিরদিন ভারতের তাবেদার হয়ে থাকুক। এদেশের আলাদা পতাকা থাকবে, আলাদা জাতীয় সংগীত থাকবে, বাংগালীরা এক থাকবে, বাংলাদেশী কথাটা মুছে ফেলতে হবে, বাংগালী সংস্কেতি থাকবে( মানে পহেলা বৈশাখে পশুর মিছিল হবে, শহীদ মিনারে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে হবে,নজরুল চলবেনা, জয় বাংলা বলা যাবে, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলা যাবেনা, আল্লাহ মহান বলা যাবেনা, বলতে হবে জনগণ মহান,আল্লাহু আকবর বলা যাবেনা, বলতে হবে আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, বিসমিল্লাহ বলা যাবেনা, বলতে হবে পরম করুণাময়ের নামে। বলতে হবে দূর্গা পূজা ও দোল বা হোলি খেলা বাংগালীর সংস্কৃতি। নবীজীর জন্মদিন শুধু মুসলমানদের উত্‍সব, জাতীয় উত্‍সব নয়। দুই ইদের দিন শুধুই মুসলমানদের উত্‍সব, জাতীয় উত্‍সব নয়। বিয়ে বাড়িতে ভারতীয় গান বাজাতে হবে, ভারতীয় পোষাক পরতে হবে।
এইতো ক’দিন আগে খবরের কাগজে বেরিয়েছে,এক থানার মুসলমান ওসি তার এলাকার মসজিদ,মাদ্রাসা, মক্তব ও দোকান পাঠ বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, এলাকায় নাকি জংগী প্রশিক্ষণ হচ্ছে বা হতে পারে। ওসি বেচারার কোন দোষ নেই। তিনি জানেন, বর্তমান সরকার মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী। এ রকম ঘটনা ৪৭ সালের আগে পূর্ব বাংলার বহু অঞ্চলে ঘটেছে। ৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পিএ নাজির সাহেব নাটোরের মহকুমা হাকিম ছিলেন। তিনিই সেখানে প্রথম পাকিস্তানের পতাকা তুলে বৃটিশ পতাকা নামিয়েছেন। শুনেছি তাঁর স্মৃতিকথায় তিনি লেখেছেন, কোবাণির ঈদ এলে মুসলমানেরা গরু কোরবাণীর জন্যে হাকিমের অনুমতির জন্যে গিয়েছিলেন। তিনিতো শুনে অবাক! জানতে চাইলেন, কেন অনুমতি লাগবে। মুসলমানেরা জানালেন,জমিদারের অনুমতি ছাড়া নাটোরে কুরবাণী করা যায়না। পিএ নাজির সাহেব জানালেন,এখন থেকে কুরবাণীর জন্যে বা ধর্মীয় কোন কাজের হাকিম বা কোন জমিদারের কাছে যাওয়া লাগবেনা। শহরের মাঝখানে যে কুরবাণী হবে সেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে কুরবাণীর ব্যবস্থা করলেন।
আমার সাংবাদিক বন্ধু বহু বছর আগে আমাকে বলেছিলেন,তিনি ঢাকায় এসে ১৯৬০ সালে প্রথম গরুর গোশত খেয়েছেন। এর আগে তাঁদের এলাকায় গরু জবাই হতোনা। নদীয়ার মহারাজা মুসলমানদের দাড়ীর উপর ট্যাক্স বসিয়েছিলেন। যার বিরুদ্ধে তিতুমীর যুদ্ধ করেছিলেন। দূর্গা পূজার সময় মুসলমানদের উপর বাধ্যতামুলক ট্যাক্স বসানো হতো। প্রতিবাদ করলে জেলে পাঠানো হতো। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এদেশে নাকি একদিন হিন্দু আর থাকবেনা। কারণ, হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আর আমরা দেখছি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্যে সরকার সাম্প্রদায়িক দাংগা করাচ্ছে। আর ড.মিজান মুসলমান/জামাত/বিএনপিকে দোষারোপ করছেন দাংগার জন্যে। জাতির সামনে আজ একটাই প্রশ্ন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানেরা নিজেদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে কিনা? ভারত এবং শেখ হাসিনা চায় ইসলাম মুসলমানদের গৃহধর্ম হয়ে থাকুক। তাহলে এত মসজিদ মক্তব মাদ্রাসার প্রয়োজন হবেনা। এদেশের মুসলমানরা শুধুই বাংগালী পরিচয়ে বাংলাদেশে থাকবে। ধর্মীয় পরিচয়কে সাংবিধানিক ভাবে মুছে দিতে হবে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


জয়বাংলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী শ্লোগান /এরশাদ মজুমদার

ইতোমধ্য অনেকেই আমাকে সাম্প্রদায়িক,ডানপন্থী,প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করেছেন। অনেকেই বলছেন জামাতপন্থী। ছাত্রাবস্থায় বন্ধুরা বলতো বামপন্থী,নাখোদা, ইসলাম বিরোধী। এমন কি পাকিস্তান সরকারও মনে করতো আমি একজন বামপন্থী নাস্তিক।আসলে আমি কখনই নাস্তিক ছিলাম না। আমি ছিলাম ও আছি একজন মানবতাবাদী মানুষ। সে সময়ে গণমানুষের পক্ষে কথা বললেই সাধারনত বামপন্থী নাস্তিক মনে করা হতো। বাংলাদেশ হওয়ার পরও এই ঝামেলা ছিল। ৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী বংগবন্ধু ফিরে এসেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি তিনি চলে এলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেয়ার জন্যে। ওই জনসভার রিপোর্ট করার জন্যে আমার নামে পাশ ইস্যু করার জন্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পিআইডিতে পাঠানো হয়। কিন্তু আমাকে পাশ না দিয়ে দেয়া হলো একজন জুনিয়ার রিপোর্টারকে। বিষয়টা জানার জন্যে আমি পিআইডিতে গেলাম।তাঁরা বললেন গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স হয়নি। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম,‘গোয়েন্দারা বলেছেন,হি ইজ এ্যা প্রো পিকিং ন্যাপ ওয়ার্কার।ভেরি ক্রিটিকেল অবদি প্রেজেন্ট গভার্ণমেন্ট।’আসলে গোয়েন্দা ফাইলের ওই নোটটি ছিল আইউব আমলের। সেই পুরাণো নোটটাই বাংলাদেশ হওয়ার পর ব্যবহার করা হয়। অতি চালাক কিছু গোয়েন্দা নিজেরাই এ কাজটি করেছেন।
আরেকবার বংগবন্ধু এক জনসভায় বলেছিলেন,নক্সাল দেখা মাত্র গুলি করো। মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, কারো গায়ে নক্সাল লেখা নেই। ওই ঘোষণার ভিকটিম হয়েছিলাম আমি। তখন আমি পূর্বদেশে কাজ করি। অবজারভার ছিলো মালিক বিহীন কাগজ।ফলে ওই হাউজে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কে বা কারা আমার নামে অভিযোগ করেছিল, আমি নাকি নক্সাল। ৭২ সালে বাংলাদেশের অবস্থা ও রকমই ছিল। আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা বশত: চিত্‍কার করলো রাজাকার রাজাকার। আর যায় কোথায়। অমনি একদল লোক আপনাকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। যা হোক,আল্লাহপাক আমাকে ওইসব সময় অতিক্রম করতে সাহায্য করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের লম্বা কথা সুযোগ সময় হলে কখনও বলবো। এখন ছোট্ট একটি তথ্য আপনাদের সাথে শোয়ার করি। আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং আমার লাশ ফেনী নদীতে দেখা গেছে। এই খবর আমার স্ত্রীর কানে গেছে। আমার কানেও এসেছে। আমার লাশ দেখার খবরটি ভারতে অবস্থানরত আমার পরম মুরুব্বী খাজা আহমদ সাহেবের কাছেও চলে গিয়েছিল। তিনি খুব বিচলিত হয়ে আমার খবর জানার জন্যে। আমি চেয়েছিলাম আমার মৃত্যুর খবরটি চালু থাকুক।
পুরাণোর সময়ের কিছু ঘটনা আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমিও বদলে গেছি। সে সময়ে আমার কাছে গুরুত্পূর্ণ ছিল মাওয়ের লাল কিতাব। লাল কিতাবের জন্যে বহুবার গোয়েন্দাদের ধাওয়া খেয়েছি। এখন নাকি কোরাণ হাদিস সাথে থাকলেই পুলিশ জেহাদী বই পাওয়া গেছে বলে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। তারপর জামাত শিবির বলে চালিয়ে দেয়। পাকিস্তানী পুলিশ যা করতো বাংলাদেশের পুলিশও তাই করছে। তারা করতো পাকিস্তান রক্ষা করার জন্যে। কিন্তু পাকিস্তান টিকেনি। মানুষের মন ভেংগে গেলে কোন রাস্ট্রের স্বাধীনতা টিকেনা। পাকিস্তান নিজ দেশবাসীর ঐক্য রক্ষা করতে পারেনি। নির্যাতিত হতদরিদ্র মজলুমের কান্নার আওয়াজে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। মজলুমের কথা জগতের কোন সরকারই শুনতে চায়না। চলমান দুনিয়ায় আমেরিকা শক্তির জোরে সারা বিশ্বকে পদানত করতে চায়। জাতিসংঘের কোন নিয়ম নীতি আমেরিকা আর বন্ধুরা মানতে চায়না। আমেরিকা বিগত ৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। উদ্দেশ্য পৃথিবীটাকে পদানত করে রাখা। মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া। নানুষ যেন ভাবতে শুরু করে আমেরিকার কোন পরাজয় নাই। অথচ আমেরিকাতে লাখ লাখ মানুষ ফুটপাতে রাত কাটায়। লাখ লাখ মানুষ দুই বেলা খেতে পায়না। যুদ্ধের জন্যে আমেরিকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে চলেছে। আল কায়েদা নামের একটি সংগঠণ নাকি আমেরিকার মর্যাদার প্রতীক টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেছে। যা আজও প্রমানিত হয়নি। জগতবাসী বিশ্বাসও করেনি। আল কায়েদা নামক প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার জন্যে আমেরিকা পণ করেছে। বিশ্বব্যাপী শ্লোগান তুলেছে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে আমেরিকার সাথে থাকতে হবে। না থাকলে ধরে নেয়া হবে সেই দেশ বা দেশের জনগণ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা এবং সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী দেশের নামের তালিকায় নাম উঠলে আর কোন রকম সাহায্য পাওয়া যাবেনা। অবরোধ জারী হবে। সন্ত্রাস বিরোধী অভি্যানের নামে আমেরিকা সারা বিশ্বের মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ আমেরিকার তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী জোটের সদস্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জামাত বিরোধী একটি অভিযান শুরু করেছে। একই সময়ে যুদ্ধাপরাদীদের বিচারের নামে আরেকটি রাজনৈতিক কর্মসূচী শুরু করেছে। দেশের ভিতরে এবং বাইরে সবাই বলছে, বিচার স্বচ্ছ হচ্ছেনা। আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন মানা হচ্ছেনা। মুসলীম বিশ্ব ছাড়াও পশ্চিমের দেশগুলোও এ বিচারের স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলে বর্তমান চলমান প্রক্রিয়াকে স্হগিত করতে বলেছে। সত্যি কথা বলতে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কেউ বিরোধিতা করছেনা। বিরোধিতা করছে বিচার প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা নিয়ে।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা,আন্দোলন দমন করার জন্যে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক শক্তি প্রয়োগ করার ফলে শতাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সরকার বলছে সন্ত্রাসী জামাত ও শিবির কর্মীরা নিহত হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেনি। বরং বলছে প্রয়োজনে সরকার আরও কঠোর হবে। হোম মিনিষ্টার সহ কয়েক জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ভাষা একশ’ ভাগ শিষ্টাচার বর্জিত। অনেকেই বলেন,এরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আবার অনেকেই বলেন,প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাষার ঠিক নেই। এ কারণে তাঁকে আদালত একবার ‘রং হেডেড’ বলে রায় দিয়েছিল। বিরোধী দলের প্রধানতম দাবী হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এ সমস্যাটা তৈরি করেছে সরকার। এর ি মধ্যে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের কথা বলে যুদ্দাপরাধের বিচারের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে সরকার। সরকার অবশ্যই দুটো বিষয়ই খুবই স্পর্শ কাতর। ইতোমধ্যে ভারতের দুজন নামজাদা কলামিষ্ট কুলদীপ নায়ার ও সুনন্দা কে দত্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মত প্রকাশ করেছেন। দুজনের কলামের সুর এক। তাহলো বাংলাদেশকে ইসলাম বর্জিত বাংগালীর রাস্ট্রে পরিণত করা। বেশ কয়েক বছর আগে ভারতের তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব বাবুর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। কথা প্রসংগে তিনি বলেছিলেন,৭১এ তোমরা যুদ্ধ করেছিলে বাংগালী হওয়ার জন্যে,তাই আমরা তোমাদের সমর্থন করেছিলাম। এজন্যে আমরা পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আর তোমরাও স্বাধীনতা পেয়েছিলে। এখন বলছো তোমরা মুসলমান হতে চাও। তাহলে আলাদা স্বাধীন রাস্ট্রের কি প্রয়োজন ছিল, পাকিস্তানের সাথেই থাকতে পারতে। তখন আমি কথাগুলো কাগজে প্রকাশ করিনি। তিনিও বলেছিলেন অফ দি রেকর্ড। এখন সুনন্দা কে দত্ত আর কুলদীপ নায়ার একই কথা বলছেন। তাঁরা দুজনই মনে করছেন, বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন হচ্ছে বাংগালীর অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। বাংলাদেশকে ষোলয়ানা বাংগালীর রাস্ট্র বানাবার আন্দোলন। শেখ হাসিনা সে কাজটিই করে চলেছেন। শাহবাগের তরুণদের গণ জাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সেই উদ্দশ্যেই পরিচালিত। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান বাংগালীকে খাঁটি বাংগালী বানাবের রাজনৈতিক লড়াইয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতের অবশ্যই সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়া দরকার।
বাংলাদেশের মানুষকেও বুঝতে হবে শেখ হাসিনা কেন মরিয়া হয়ে এত লোককে হত্যা করছেন। হত্যা করেও তিনি হুংকার দিচ্ছেন তিনি আরও কঠোর হবেন। তিনি আসলে যুদ্ধ শুরু করেছে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে। দেশবাসীকে অবশ্যই পোষ মানতে হবে। ষোলয়ানা বাংগালী হতে হবে। বাংগালী হওয়ার জন্যে ইসলামকে গৃহধর্মে পরিণত করতে হবে। যেমন হিন্দুদের গৃহদেবতা আছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম তুলে দিতে হবে। বিসমিল্লাহ শব্দ ফেলে দিতে হবে। দূর্গা পূজাকে বাংগালীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মনে করতে হবে। আনন্দের নামে পহেলা বৈশাখে দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে মিছিল করতে হবে। বসন্ত উত্‍সবের নামে পহেলা ফাল্গুণ হলুদ শাড়ি ও রং পড়তে হবে। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দের মিশাল দিতে হবে। মোম্বাই সিনেমা সংস্কৃতির অনুকরণে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হবে। বর কনের পোষাক মোম্বাই থেকে ডিজাইন করে আনতে হবে। উত্তরীয় সংস্কৃতি চালু করতে হবে। মংগল প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শহীদ মিনারে মৃতদেহ নিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে হবে। মিনারে নাকি জানাজা পড়া যাবেনা। তাহলে নাকি শহীদ মিনারের অবমাননা করা হয়। যারা নাস্তিক তাঁরা বলে যান,তাঁর লাশ যেন দাফন করা না হয়। দেখা সাক্ষাতে সালাম বিনিময় না করে বলতে হবে জয়বাংলা, নমস্কার বা আদাব।
কোন রাজনৈতিক দল আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করতে পারবেনা। বিশ্বাস করলে নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা হয়। এ নিয়ে এখন আদালতে মামলা চলছে। সংবিধান অনুযায়ী আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নয় মানুষর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করতে হবে। চলমান সময়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্যে একটা বিরাট সংকটময় অবস্থা বিরাজ করছে। আপনি যদি কোরাণে বিশ্বাস করেন তাহলে সকল অবস্থায় আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করতে হবে। আর যদি সংবিধানে বিশ্বাস করেন তাহলে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করতে হবে। শুধু একবার ভাবুন একজন মুসলমান হিসাবে আপনি কিভাবে নিজের ঈমান রক্ষা করবেন। সংবিধানকে অস্বীকার করলে সরকার আপনার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহী ও স্বাধীনতা বিরোধী বলে মামলা করবে। তখন শাহবাগীদের ভক্তরা আপনার ফাঁসী চাইবে। শুরুতেই বলেছি, পাকিস্তান আমলে মানবতাবাদী ও স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম বলে পাকিস্তানী শাসক ও জামাতীরা হত্যা করতে চেয়েছিল। আর এখন নিজে একজন মুসলমান দাবী করছি বলে সরকার ও সরকার পন্থীরা স্বাধীনতা বিরোধী বলছে।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও আমাদের জাতিসত্তার উপাদান গুলো নির্ধারিত হয়নি। আমি বলছি আমি একজন বাংলাদেশী। আমার ধর্ম ইসলাম। সরকার,আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ঘরাণার বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, আমরা বাংগালী,জয়বাংলা আমাদের শ্লোগান ও পরিচিতি। বাংলাদেশ নামক একটি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,কারণ এই ভৌগলিক এলাকার মানুষেরা নিজেদের আলাদা পরিচিতি ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এই জাতিসত্তার মূল উপাদানই হচ্ছে ধর্ম, ভাষা ও ভৌগলিক এলাকা। ধর্মীয় চেতনাই নতুন জাতিসত্তার প্রধানতম উপাদান। পৃথিবীর অন্য বাংগালীদের কোন স্বাধীন ভৌগলিক এলাকা নেই। একটি আলাদা স্বাধীন রাস্ট্র গঠণের দৃঢ চেতনা বা লড়াকু মনোভাব তাদের নেই। ফলে তারা রাস্ট্র গঠণে ব্যর্থ হয়েছে। রাস্ট্রীয় চেতনার দিক থেকে পৃথিবীতে এখন বাংলা বলে কোন দেশ বা রাস্ট্র নেই। তাই জয়বাংলা শ্লোগানটি একটি স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার বহি:প্রকাশ। আওয়ামী লীগ ও এই ঘরাণার বুদ্ধিজীবীরা বুঝে যদি জয়বাংলা দিয়ে যাচ্ছেন তাহলে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। না বুঝে যদি এই পথে থাকেন তাহলে মত ও পথ বদলাবার এখনি আসল সময়। তবে তাঁরা এ কাজটি করতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। এক্ষেত্রে আমি ভারতীয় চিন্তাধারার সাথে আওয়ামী চিন্তাধারার মিল রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়বাংলা শ্লোগানটি এসেছিল ভারতের দিক থেকে জয়হিন্দ শ্লোগানের আদলে। যদিও এই শ্লোগান আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল। তখন আমাদের কোন স্বাধীন দেশ বা রাস্ট্র ছিলনা। রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ওই শ্লোগান আর সার্বভৌমত্বের চেতনা ও পরিচিতি বহন করেনা। ক’দিন আগে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, যারা জয় বাংলা বলেনা তাঁরা স্বাধীনতা বিরোধী। জয় বাংলা এখন একটি দলীয় শ্লোগান।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ তার ঘরাণার বুদ্ধিজীবীরা চেতনা শব্দটি আমদানী করেছে। শুনেছি কবীর চৌধুরী সাহেব ও তাঁর বন্ধুরা শব্দটি চালু করেছেন। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি তাঁদের জব্যে এই শব্দটি বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আওয়ামী ঘরাণায় শব্দটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু এই চেতনাটি কি? আপনি কি কখনও নিজেকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন? আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের মতে এই চেতনা হচ্ছে ধর্মহীনতার চেতনা। এই চেতনা হচ্ছে বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষের ধর্মীয় চেতনা ও চর্চার অধিকারকে অস্বীকার করার চেতনা। এই ঘরাণার লোকেরা সব সময় বলবে,আমরা অসাম্প্রদায়িক ও সেক্যুলার। ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার। এই চেতনাকে যদি আপনি সমর্থন না করেন তাহলেই আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা বিরোধী। শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণকে যদি আপনি সমর্থন না করেন তাহলেও আপনি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী। শাহবাগকে যাঁরা সমর্থন করেননি তাঁদের নাকি ভারতীয় হাই কমিশন ভিসা দেয়নি। সংবাদপত্রে এ ধরণের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও ভারতীয় হাই কমিশন থেকে কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি। ভারতীয় কাগজ গুলো অবশ্য বলেছে, ভারত সরকার শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন করে। জামাত, শিবির,বিএনপি দমন এত তীব্র হয়েছে, কারণ এই দল দুটি ও ১৮ দলীয় জোট বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঈমানী দায়িত্ব পালন করছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


হিন্দু সংস্কৃতির আগ্রাসনের কবলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা / এরশাদ মজুমদার

চলমান সময়কে অনেকেই জাতির বিপদের সময় বলে আখ্যায়িত করেছেন। সময়টাকে বিশ্লেষণ করে অনেকেই খবরের কাগজে মতামত দিচ্ছেন। আমি তা মনে করিনা। আমার মনে হয় জাতির সামনে উত্থাপিত গুরুত্পূর্ণ বিতর্কিত বিষয় গুলো নিষ্পন্ন হওয়া দরকার। চলমান সময়টা সেজন্যে খুবই গুরুত্পূর্ণ। তাই আমার আবেদন সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে সময়ের মুখোমুখি হওয়া খুবই জরুরী। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমি খবরের কাগজে লিখছি। কখনও রিপোর্টার হিসাবে,কখনও সম্পাদক হিসাবে। এখন লিখছি কলামিষ্ট হিসাবে।স্কুল জীবন থেকেই মানবতার পক্ষে ছিলাম,এখনও আছি। সমাজের দারিদ্র দেখে সীমাহীন ব্যথিত হয়েছি, কান্নায় ভেংগে পড়েছি। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছি। কখনও মনে হয়েছে লেনিনের পথ সঠিক, কখনও মনে হয়েছে মাওয়ের পথ সঠিক।
আমাদের বাপদাদারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নির্যাতিত,পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের উন্নতির জন্যে। আমরা মুসলমান বাংগালীরা পাকিস্তানের সাথে থাকলাম মুক্তির জন্যে। বাপদাদারা নিজেদের শুধু বাংগালী ভাবলে পশ্চিম বাংলার হিন্দু বাংগালীদের সাথে থাকতে পারতেন। ভারত বা দিল্লী চালায় হিন্দীভাষী অবাংগালীরা। বিশাল ভারতে বাংগালীদের করার মতো তেমন কিছু নাই। বাংগালী হিসাবে সেখানে তারা মাইনরিটি। এখন তাদের ভাষা হিন্দী। কেন আমাদের বাপদাদারা পাকিস্তানের সাথে থাকলেন? কারণ,তাঁরা নিজেদের প্রথমে মুসলমান ,পরে বাংগালী মনে করেছেন। পাকিস্তানে আমরা মুসলমান বাংগালীরা মেজরিটি ছিলাম। আমাদের আশা ভরসাও ছিল বেশী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে আমাদের ত্যাগও ছিল সবার চেয়ে বেশী।খন্ডিত ভারতে বর্তমানে বাংগালীদের যে অবস্থান তার চেয়ে শত গুন ভাল অবস্থা ছিল আমাদের পাকিস্তানের ভিতর। কিন্তু আমরা আমদের ন্যায্য হিস্যা পাইনি। পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় বেশীর ভাগ সময়েই ছিলেন আমলা ও সামরিক নেতারা। ৫৬ সাল পর্যন্ত রাজনীতিকরাই পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন।ভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানের কেন্দ্রের সাথে বাংগালীদের বিরোধ বেঁধে যায় ৪৭ সালেই। আন্দোলন শুরু হয় ৪৮ সালের মার্চ থেকে।এর শেষ পরিনতি হয় ৫২ সালের একুশে মার্চ। ৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাস্ট্র ভাষা বা কেন্দ্রীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও ততদিনে পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের তরুণদের আন্দোলন ইতোমধ্যেই মুরুব্বীদের চিন্তা চেতনার বাইরে চলে গেছে। তরুণদের আন্দোলনের রশি চলে গেছে অদৃশ্য শক্তির হাতে। যে শক্তি পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে। ফলে তরুণদের চেতনায় ইসলাম ও মুসলমানিত্ব বিষয়টি ঝাপসা হতে শুরু করে এবং শুধু বাংগালী চেতনা মূল ও প্রধান হয়ে উপস্থিত হয়। ফলে তরুণদের মনোজগতে সেক্যুলারিজম, ধর্মহীনতা,নাস্তিকতা স্থান করে নিতে শুরু করে। রাজনীতি থেকে মুরুব্বী, পিতামাতারা নির্বাসনে চলে গেলেন। ৪৭ সালের তরুণরা পরবর্তী পর্যায়ে দেশের নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ,কবি সাহিত্যিক শিল্পী ও ব্যবসায়ী হলেন। একথা মহা সত্যি যে, মুসলমান বাংগালীরা পাকিস্তানের কাঠামোতে তাদের ন্যায্য শেয়ার ও অধিকার পায়নি। পাকিস্তান ছিল বহুজাতিক একটি মুসলমান দেশ। এক সময় জিন্নাহ নিজেই বলেছিলেন,পূর্ব বাংলার নির্যাতিত মুসলমানদের জন্যেই পাকিস্তান দরকার। কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার পর জিন্নাহ সাহেবের এই কথা রক্ষিত হয়নি।
চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য,শিল্প কারখানা সবখানেই মুসলমান বাংগালীরা শোষিত হতে লাগলো। এই শোষণের ফলাফল কি হতে পারে তা পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি ও তাদের তাবেদাররা আন্দাজ করতে পারেনি। অপরদিকে ভারতীয় গোয়েন্দার ৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট থেকেই পাকিস্তানকে ভেংগে দেয়ার কাজ শুরু করে দেয়। তাদের কাজের প্রধানতম উপাদান ছিল পূর্ববাংলার মুসলমানদের ভিতর শক্তিশালী ভাবে বাংগালীয়ানা উস্কে দেয়া। এটা ছিল খুবই স্পর্শ কাতর আবেগপূর্ণ একটা বিষয়। আমাদের ভাষা বাংলা। এ বিষয়টাকে গভীর ভাবে বুঝবার কোন চেষ্টাই কেন্দ্রীয় নেতারা করেননি। মেজরিটি মানুষের মন মানসিকতা বুঝতে না পারা বা বুঝবার চেষ্টা না করাটাই ছিল পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্নকারী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্ব বাংলার ব্যবসায়ীরা নিজদের ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে প্যারিটি আন্দোলনটাকে শক্তিশালী করার জন্যে রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদদের অর্থায়ন করতে শুরু করেন। একজন অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসাবে তখন আমার প্রধান কাজ ছিল পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে জন সাধারণের মধ্যে তুলে ধরা। এ ব্যাপারে হামিদুল হক চৌধুরী সাহেবের পত্রিকা অবজারভার ও পূর্বদেশের ভুমিকা প্রধান। অর্থনৈতিক বৈষম্য বিশ্লেষনের ব্যাপারে প্রধানতম ভুমিকা পালন করেছে অবজারভার হাউজ। বংগবন্ধু পূর্বদেশ ও অবজারভারে প্রকাশিত বৈষম্যের তথ্যগুলো নিয়মিত তাঁর ভাষণে ব্যবহার করতেন। বলা যেতে পারে অবজারভার হাউজ ছিল পুর্ববাংলার মুখপাত্র। পাকিস্তান জাতীয় সংসদের
সিংহ পুরুষ মাহবুবুল হক ছিলেন অবজারভার গ্রুপের ম্যানেজিং এডিটর ও পুর্বদেশের সম্পাদক। পুর্ব ও পশ্চিমের বৈষম্যের উপর মাহবুবুল হক ছিলেন প্রধান বক্তা। ওইসব ভাষন ছাপা হতো অবজারভার আর পুর্বদেশে। ৭০ সালের নির্বাচনটি ছিল বাংগালী আর অবাংগালীর মধ্যে। পুর্ব বাংলা আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। আওয়ামী লীগ শেখ সাহেবের অজান্তেই বাংগালীদের একমাত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয় বাংগালীদের বিজয় হিসা্বে চিহ্নিত হলো। মাওলানা সাহেবের দল ন্যাপ অংশ নিলে কিছু সীট পেতো। কিন্তু মাওলানা সাহেব চেয়েছিলেন শেখ সাহেবকে একক ক্ষমতার অধিকারী করতে। পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই শেখ সাহেব একটা সমাধান চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি সমঝোতার সর্বশেষ চেষ্টা পরি্হার করে ২৫শে মার্চ রাতে শক্তি প্রয়োগের পথ অবলম্বন করে। ভুট্টো আর ইন্দিরা গান্ধীর ভিতর এ ব্যাপারে একটা সমঝোতা ছিল। ঢাকায় আলোচনা শুরুর আগেই ভুট্টো বলেছিলেন, একদেশ দুই প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর একাংশের সাথেও ভুট্টোর সমঝোতা হয়ে ছিল। বরং আলোচনার কথা বলে সামরিক জান্তা ও ভুট্টো শেখ সাহেবকে ধোকা দিয়েছেন।
প্রশ্ন হলো ৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদাও ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা ও পাকিস্তানী শাসকদের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায় করা। মূলত: অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণেই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের সাথে কেন্দ্রের বিরোধ ও বিবাদ তৈরি হয়। বংগবন্ধুর ছয় দফাও ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার কর্মসূচী। শেখ সাহেব ছয় দফার বাস্তবায়নই চেয়েছিলেন। ছয় দফা তৈরিও করেছিলেন পূর্ব বাংলার অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। ছয় দফা মানলে পাকিস্তান হয়ত কনফেডারেশন হিসাবে টিকতে পারতো। ততক্ষণে ৭১এর মার্চের আন্দোলন শেখ সাহেবের প্রভাব বলয়ের বাইরে চলে গেছে। দেশী বিদেশী শক্তি এর সাথে জড়িত হয়ে যায়। ইতিহাস একদিন বলে দেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অদৃশ্য অজানা কাহিনী। শেখ সাহেবকে না জানিয়েই স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। দলীয় ভাবে আওয়ামী লীগ ও এমপিরা স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল নেতা কে জানতোনা। তাজউদ্দিন সাহেব ২৫শে রাত ১১টায় স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে শেখ সাহেবের কাছে গিয়েছিলেন রেকর্ড করার জব্যে। কিন্তু শেখ সাহেব রাজী হননি। ভারত কিন্তু শুরু থেকেই বিষয়টা পুরোপুরিই জানতো এবং ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারির সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।।
যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের পুর্ পরিকল্পনা যদি থাকতে তাহলে শেখ সাহেব তাজউদ্দিন সাহেবের কথা মতো ঘোষণা রেকর্ড করতেন। মুজিব নগর সরকার রাস্ট্রের যে রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন তাতে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কথা ছিলনা। বরং ৭০ এর নির্বাচনী ওয়াদায় ছিল কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবেনা। এমন কি রাস্ট্রের মূলনীতিতে যে ধারা গুলো সংযোজিত হয়েছিল তা ছিল ভারতের ইচ্ছা পূরণ। শেখ সাহেব বাংলাদেশকে কখনই ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী রাস্ট্র হিসাবে দেখতে চাননি। ৭৪ সালে ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহন করে তিনি বিশ্বকে বাংলাদেশের পরিচিতি জানিয়ে দিয়েছেন। ওই সময়েই পাকিস্তান বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। এটা ছিল বংগবন্ধুর বিরাট কূটনৈতিক বিজয়। এটা ছিল দিল্লীর আবদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ঘোষণা। দিল্লীর বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর অবস্থানও ছিল বংগবন্ধুর ইচ্ছার প্রতিফলন।
এখন বলা হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্ম বিরোধী খাঁটি বাংগালীয়ানা। বাংলাদেশকে ধর্মীয় চেতনাহীন একটি পৌত্তলিক সংস্কৃতির দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। এর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থিত ভারতপন্থী একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও পৌত্তলিক সংস্কৃতির ধারক বাহক একশ্রেণীর কালচারেল একটিভিষ্ট। ৭১ সালেই ভারত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কর্মসূচী হাতে নেয়। অনেকেই বলেন,ভারত বাংলাদেশে ধর্মহীন জীবনযাত্রা ও নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংগঠিত করার জন্যে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা করে। ওই খরচের ফল এখন পেতে শুরু করেছে। যেমন রাস্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেবকে প্রয়াত বলা হয়েছে। আমরা কখনও এটা বলিনা। আমরা বলি মরহুম,মানে যিনি মারা গেছেন তাঁর উপর আল্লাহপাকের রহমত বর্ষিত হোক। আমরা মরদেহ বলিনা, বলি লাশ, সত্‍কার বা অন্তেষ্টিক্রিয়া বলিনা, বলি দাফন ও জানাজা। নামাজকে কখনই প্রার্থনা বলিনা। রোজাকে কখনই উপবাস বলিনা। আমরা উত্তরীয় বলিনা, চাদর বলি। মোম্বাই সিনেমা দেখে দেখে আমাদের বিয়ে গুলোতে এখন ৩০/৪০ রকমের অনুষ্ঠান করে ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা। অনেক ধার্মিক মুসলমানকে দেখেছি এ রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। জানতে চাইলে বলেন, কি করবো? ছেলে মেয়েদের আবদারের কাছে নতি স্বীকার করেছি। বিয়ের যাবতীয় সাজ সরঞ্জাম আসে ভারত থেকে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় কাপড়ের দোকান ঢাকায় চালু হয়েছে। ক’দিন আগে নায়িকা জুহি চাওলাকে এনে দোকান উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায়ই ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের বাংলাদেশে এনে অশালীন নাচ দেখানো হয়। এতে মন্ত্রী এমপি সহ নামীদামী লোকেরা উপস্থিত থাকেন। এখন বাংলাদেশে শিশুরাও হিন্দী কথা বলে। বিয়ে বাড়িতে ভারতীয় শিল্পী এনে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। যারা গরীব তাঁরা হিন্দী গাণ পরিবেশন করেন।
সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা ছিল এর শক্তিশালী সাংগঠনিক রূপ। অতি অল্প ক’জন ব্লগার ভারতের সমর্থন নিয়ে শাহবাগে আত্মপ্রকাশ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার বুঝে হোক না বুঝে হোক বিভ্রান্ত দেশ বিরোধী তরুণ শাহবাগীদের উদ্যোগকে বুক ফুলিয়ে সমর্থন সমর্থন জানিয়েছেন। ভারত সরকার ও মিডিয়া গুলো খুবই শক্তিশালী ভাবে বিভ্রান্ত তরুণদের সমর্থন দিয়ে গেছে পুরো সময়টা। এদের অর্থ সমর্থন দিয়েছে ভারতপন্থী কিছু ব্যবসায়ী,যারা আরবী নামধারী বাংগালী। দেশ প্রেমিক হাক্কানী আলেমগণ জেহাদী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে না এলে এতদিনে হাসিনা সরকারকে উত্‍খাতের জন্যে অদৃশ্য তৃতীয় দেশী বিদেশী শক্তির সাথে আঁতাত করতো শাহবাগীরা। বিনা কারণে হঠাত্‍ করে শাহবাগী তরুণরা এমন এক সময় মাঠে নেছে যখন ভাষা ও স্বাধীনতার মাস একসাথে পড়েছে। এ বাংলাদেশের মানুষ খুবই আবেগে আপ্লুত থাকে। ঠিক এই সময়ে যুদ্ধাপরাধের আদালত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। এই রায়কে কেন্দ্র করেই শাহবাগীদের মাঠে নামানো হয়। দাবী হলো কাদের মোল্লার ফাঁসী দিতে হবে। ফাঁসী ছাড়া আর কিছু মানা হবেনা। শাহবাগীরা দাবী জানালো তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে সমর্থন করতে হবে। যারা সমর্থন করবে তারা হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আর তা না হলে স্বাধীনতা বিরোধী। কোন এক অদৃশ্য কারণে সরকার যেন শাহবাগীদের কথায় উঠতে বসতে লাগলো। তাদের দাবী অনুযায়ী সংসদে আইন পাশ হয়ে গেল। শাহবাগীরা ঘোষণা করে দিলো তারা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী। এই ঘোষণার পর সরকারের ভাবা উচিত ছিল শাহবাগীদের শক্তির উত্‍স কোথায়। না, এতেও সরকারের হুঁশ হয়নি। বরং একজন নাস্তিক ব্লগার নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে শহীদ ঘোষণা করলেন। প্রাধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা সারা জাতির ধর্মীয় চেতনাকে দলিত মথিত করেছে। তখনি দেশ প্রেমিক বাংলাদেশের মুসলমানেরা বুঝতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রী ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সরকারের শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রীগণ সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করেন।ফলে পাঠ্য পুস্তকে কি ছাপা হচ্ছে তার খোঁজ খবর রাখেন না। ফলে, ইসলাম ও মুসলমানদের আকীদা ও বিশ্বাসে বিরুদ্ধে পাঠ্যক্রম তৈরি করে পড়ানো হচ্ছে। ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে গেলেই বলা হয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্লগার রা আল্লাহ রাসুল(সা) ও আল কোরাণের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই লিখে যাচ্ছে। সরকার বলছে জামাত শিবির লিখে তরুণ দেশপ্রেমিকদের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার এবং শেখ হাসিনা এখন বাধ্য ব্লগারদের কথা শুনতে। কারণ,তাদের সরাসরি যারা পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা আন্তর্জাতিক ভাবে শেখ হাসিনারও প্রভু।

Read Full Post »


মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানদের অবদান ৯৮ ভাগ / এরশাদ মজুমদার

আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইউবের দিনকাল ভাল যাচ্ছিল না। চীনের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি করার জন্যে তাই এক সময়ে আইউব খান মাওলানা ভাসানীর দ্বারস্থ হলেন।মাত্র কিছুদিন আগেই মাওলানা সাহেব চার বছরের গৃহ বন্দীত্ব জীবন থেকে মুক্তি লাভ করেছেন।মুক্ত মাওলানার ক্ষমতা ও শক্তি সম্পর্কে জেনারেল আইউব সজাগ ছিলেন। তাই তিনি মাওলানা সাহেবের সহযোগিতার পাওয়ার জন্যে হাত বাড়িয়েছিলেন।। আইউব জানতেন, মাওলানা সাহেব ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও তার মিত্রদের বিরোধী ছিলেন। ভারত ও আমেরিকার বিপরীতে চীনের সাথে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। আমেরিকা কোনদিনও কারো বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলনা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তান আমেরিকার সাথে গাঁটছড়া বেধেছিল। তখন ছিল রাশিয়া ছিল ভারতের ঘনিষ্ট বন্ধু। অপরদিকে ইজরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালেই ভারত তাকে স্বীকৃতি দেয়। ওই বছরই ইজরায়েল দিল্লীতে দূতাবাস খোলে। তখন কোন মুসলমান দেশই ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। যেমন বাংলাদেশও এখন পর্যন্ত ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। বরং বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের দূতাবাস রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ একটি মুসলমান রাস্ট্র। ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি কারণ এই ইহুদী রাস্ট্রের সৃষ্টি করা হয়েছে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে। এতে ইন্দন রয়েছে ভারত সহ পশ্চিমা দেশগুলোর। বাংলাদেশ মুসলমান রাস্ট্র বলেই ওআইসি ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যান্কের(আইডিবি) সদস্য। সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুসলীম রাস্ট্র। মুসলীম রাস্ট্র বলেই মুসলমান দেশ গুলো থেকে বিশেষ ভাবে সহযোগিতা লাভ করে থাকে।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে ১০ই জানুয়ারীর ঐতিহাসিক ভাষণে বংগবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি বাংগালী, আমি মুসলমান’। ৭৪ সালে দিল্লীর অনুরোধকে উপেক্ষা করেই বংগবন্ধু লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময়ে বংগবন্ধু পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিলেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে। এটা ছিল বংগবন্ধুর কূটনৈতিক বিজয়।
বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করলেও জানা যাবে তিনি একজন মুসলমান নেতা ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের একটি সমৃদ্ধশালী মুসলীম ঐতিহ্য ছিল। স্কুল জীবন থেকেই তিনি মুসলমান ছাত্রদের স্বর্থ রক্ষার জন্যে কাজ করেছেন। হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলমানরা কিভাবে অপদস্থ হতেন তার বর্ণনা তাঁর আত্মজীবনী পড়লেই জানা যায়। পাকিস্তান হওয়ার পরপরই বামপন্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাইলে তিনি রাজী হননি। তখনি বামপন্থীরা শ্লোগান দিয়েছিলেন,‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়,লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।
শুরু করেছিলাম গণচীনের সাথে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর অবদানের কথা দিয়ে। তখনও বামপন্থী রাজনৈতিক দলে কোন বিভক্তি আসেনি। আইুবের কাছে মাওলানা সাহেবের শর্ত ছিলবামপন্থী সহ সকল রাজনৈতিক রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং যাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া আছে তাও তুলে নিতে হবে। আইউব খান মাওলানা সাহেবের শর্ত মেনে সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং হুলিয়াও তুলে নিয়েছিলেন। ভারতের সাথে চীনের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল ৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর। এক সময় শ্লোগান ছিল চীনী-হিন্দী ভাই ভাই। কিন্তু ৬২র যুদ্ধের পর ভারত আরও বেশী করে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ইজরায়েলের মাধ্যমে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যায়। ইজরায়েল ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু বলেই ভারত এই ইসলাম বিদ্বেষী দেশের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। মাওলানা সাহেবই চীনের সাথে পাকিস্তানের সুসম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। সেই সুবাদে তত্‍কালীন বামপন্থীরা আইুবের কাছ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থীদের হাতে রাখার জন্যে আইউব নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রেস ট্রাষ্টের মাধ্যমেই দৈনিক পাকিস্তান নামক একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এই পত্রিকায় যে সব সাংবাদিক চাকুরী পেয়েছিলেন তাঁদের বেশীর ভাগই ছিলেন বাম চিন্তাধারার। এছাড়াও ফিচার সিন্ডিকেট নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল আইউব সরকারের পক্ষে লিখার জন্যে। আমাদের বন্ধু ও বাম বলে অতি পরিচিত চেহারার লোকজন সিন্ডিকেটে চাকুরী পেয়েছিলেন। বামবিশ্ব বা সমাজতান্ত্রিক ভাগ হয়ে দুই ধারা তৈরী হলে দৈনিক পাকিস্তান সরকারের নীতি মোতাবেক চীনের পথকে সমর্থন করতে থাকে। অপরদিকে দৈনিক সংবাদ রাশিয়ার পথকে সমর্থন জানায়। ওই সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন ভাগ হয়ে দুই গ্রুপ হয়ে যায়। চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী। চীনপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসেন রাশেদ খান মেনন ও মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসেন মতিয়া চৌধূরী। একই ভাবে বাম রাজনৈতিক দল গুলোর ভিতর বিভাজন তৈরী হয়। বাম দল গুলো কখনই কোন ধর্মের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করতোনা। বিশেষ করে চীনপন্থী ন্যাপের নেতা মাওলানা ভাসানী নিজে একজন মহা জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। চীনপন্থী চিন্তাধারার সকলেই কৌশলগত কারণে মাওলানা সাহেবের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে, মাওলানা ভাসানী ৪৭ সালের আগে আসাম প্রদেশ মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। স্যার সাদুল্লাহ ছিলেন প্রাদেশিক সরকারের মূখ্যমন্ত্রী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মাওলানা সাহেব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং দলীয় রাজনীতি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুসলীম লীগ সরকারের সাথে তাঁর বনিবনা না হওয়ায় তিনি নতুন দল আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এখানে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। সেই মেরুকরণের অদৃশ্য নেতা ছিল ভারত। ভারত সমর্থিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও যুদ্ধে চীন ও আমেরিকা সমর্থন দেয়নি। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হয়ে গেল ভারত ও রাশিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও বিষয়টা প্রকাশ্য ও খোলাসা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারত সরকার ও কংগ্রেস নির্বাচিত সংসদ সদস্য,আওয়ামী লীগ ও তার অংগ সংগঠণের লোকজনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। চীনপন্থী রাজনীতিক ও ছাত্র যুবক যারা ভারতে গিয়েছিলেন তারা সকলেই ছিলেন নজরদারীতে। তাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে ভারত সরকারের নানা ধরনের বাধা বিপত্তি ছিল। মাওলানা সাহেবকে দিল্লীর অদূরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। কারণ, মাওলানা সাহেবকে দিল্লী বিশ্বাস করতোনা। এ কারণেই ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরতে মাওলানা সাহেবের দেরী হয়েছিল। অপরদিকে শেখ সাহেবও দেশে ছিলেন না।
আগেই বলেছি, স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে চীনপন্থী ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের জন্যে সুদিন ছিলনা। পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় জামাত, মুসলীম লীগ সহ ইসলামী দল গুলো নিষিদ্ধ ছিল। সুদিন যাচ্ছিল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, সিপিবি ও মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের। ভারত ও রাশিয়া ছিল নতুন স্বাধীন দেশের পরামর্শক ও অভিবাবক। ব্যবসা বাণিজ্য সব চলে যায় ভারত,রাশিয়া ও রাশিয়ান ব্লকের দেশ গুলোর কাছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্যে বংগবন্ধুর বন্ধুরূপী শত্রুরা একদলীয় শাসন জারীর পরামর্শ দেয়। যা ছিল বংগবন্ধুর জন্যে এক ধরণের আত্মহত্যা। অনেকেরই ধারণা বংগবন্ধুর হত্যার পেছনে ভারতের হাত ছিল বা ভারত বিষয়টা আগে থেকে জেনেও বন্ধু হিসাবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যারা গোপনে বংগবন্ধুর শত্রু বা বৈরী ছিল এখন তারাই হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বেশী প্রিয়।
আমাদের বন্ধুদের অনেকেই যারা চীনপন্থী বলে পরিচিত ছিলেন বা চীনপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন করতেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের বন্ধু। তারা এখন ভারতপন্থী। টিভি চ্যানেল, পত্রিকা, অনলাইন নিউজ সবখানেই তাদের বিচরন। কিছু কিছু পত্রিকা আছে যারা প্রকাশ্যে ভারতের আগ্রাসী নীতিকে সমর্থন করে। এসব পত্রিকা ১/১১র সরকারকে উলংগ ভাবে সমর্থন করেছে ভারতের নির্দেশে। ১/১১র সরকারেরই ফসল হচ্ছে হাসিনা সরকার। ২৮শে অক্টোবরের লগিবৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ১/১১র সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করার পথ তৈরি করেছে।
রাজনীতির এমন গোলক ধাঁধাঁ যেখানে মেনন ইনু মতিয়া একই মঞ্চে বসে দেশ চালাচ্ছেন। কি কারণে তাঁরা সবাই আজ এক তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। জাসদের হাজার হাজার তরুণকে বংগবন্ধুর রক্ষীবাহিনী হত্যা করেছে। গণবাহিনী দিয়ে ইনুরা দেশপ্রেমিক বহু সৈনিককে হত্যা করেছে। কোন সে যাদু যা তাদের এক করেছে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন জীবন বাজি রেখে যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই জিয়াউর রহমান। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি বা অংশ গ্রহণ করেনি তারা বলছেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দালাল। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জিয়ার পরিবারের কি হতে পারে সকলেই একবার ভাবুন। একই ভাবে বংগবন্ধুর পরিবারও ধানমন্ডীর একটি বাড়িতে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। আরেকটা কথা এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার। তাহলো বংগবন্ধু জীবিত থাকতে তিনি কোনদিনও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোন কথা বলেন নি। মেজর জিয়াতো তাঁর নামেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বংগবন্ধু শহীদ হওয়ার পরেই আওয়ামী লীগ এই বিতর্কের জন্ম দেয় খুবই সফল ভাবে। আরেকটি শব্দ চালু করেছে আওয়ামী ঘরাণা বা ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা,তাহলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অনেকেই বলেন শব্দটি চালু করেছেন কবীর চৌধুরী সাহেব। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সংহতির নেতা। এখন সর্বত্র চেতনার খেলা চলছে। সেই চেতনা হলো মুক্তিযুদ্ধে কোন ধর্মীয় বিষয় ছিলনা। এটা নাকি ছিল শুধু বাংগালীদের যুদ্ধ। এখানে কোন দলমত ছিলনা। শুধু ছিল জয় বাংলা শ্লোগান। আমিতো দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা নামাজ পড়েছে নিয়মিত। এমন কি মুজিব নগর সরকারের অনেক মন্ত্রীও নিয়মিত নামাজ রোজা করতেন। অনেক এমপি নামাজ রোজা করতেন। দেশের ভিতরে বহু মানুষ বংগবন্ধুর জন্যে নফল রোজা রেখেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মহীন,সেক্যুলার বা অসাম্প্রদায়িক ছিল বলে অনেকেই রংতুলি দিয়ে ছবি আনকার চেষ্টা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ভিতর বহু মুসল্লী কারফিউর ভিতরেও মসজিদে গিয়েছে। অনেকেই এ ধরণের পরিস্থিতিতে অনেকেই পাকিস্তানের সৈনিকদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন এদেশের সন্তান কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পুলিশ বিডিআর, আনসার ও সৈনিক ও সেনা অফিসাররা। তেমন কোন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নেতা,সাংবাদিক, কবি শিল্পী অস্ত্র হাতে নুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেননি। সরাসরি যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৯৮ ভাগ ছিলেন মুসলমান। তবে প্রাণের ভয়ে যাঁরা দেশ ত্যাগ পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিলে তাঁদের মধ্যে ৯৫ ভাগ ছিলেন হিন্দু। কবীর চৌধুরী আবিষ্কৃত চেতনা শব্দটি আনা হয়েছে নতুন ববিতর্ক তুলে মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানদের অবদানকে অস্বীকার করার জন্যে । এটা একটা ষড়যন্ত্র। যেমন ষড়যন্ত্র তৈরি হয়েছে ভারত স্বাধীনতার ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে। মুল ইতিহাসকে মাটি চাপা দিয়ে নকল ইতিহাস তৈরি করেছে ইংরেজ ও হিন্দু ঐতিহাসিকরা। অথচ প্রথম ১০০ বছর ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এদেশের আলেম ওলামারা। বাংলাদেশের ইতিহাস তৈরিতে যারা এখন ভুমিকা রাখছেন বলে দাবী করছেন তাঁদের সকলেই মুসলমান বিদ্বেষী, দিল্লীর তাবেদার ও নকল ইতিহাস প্রণেতা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


বাংলাদেশ মুসলমান দেশ হিসাবে টিকে থাকবে কিনা ? এরশাদ মজুমদার

বিদেশী মুসলমানরা বাংলাদেশের ভৌগলিক এলাকায় শাসনকর্তা হিসাবে উপস্থিত হয়েছে ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে। এর আগে এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন পাল ও সেনেরা। তাঁরাও এসেছেন ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে এই অঞ্চলে মুসলীম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ইসলাম ভারতে এসেছে এক হাজার বচরেরও আগে পীর ফকির আউলিয়া ও আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।। যে কথা ইন্দিরা গান্ধী স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ৭১ সালে পাকিস্তানের পতনের পর। তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে কিসের বদলা আর কিসের হাজার বছর। যাঁরা ইতিহাস ও নিজেদের ঐতিহ্য সচেতন তাঁরা জানেন মুসলমানরা ৭১১ সালে ভারতে প্রথম শাসন প্রতিষ্ঠা করে মোহাম্মদ বিন কাসিমের মাধ্যমে। পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইন্দিরাজী সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এক হাজার বছর পরে হলেও হিন্দুরা সে প্রতিশোধ নিয়েছেন। পাকিস্তানকে পরাজিত করে ইন্দিরা ভারতের আগামী দিনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় থাকবেন। পাকিস্তানের পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণেও আমরা বাংলাদেশীরাও ভারত এবং ইন্দিরাজীর কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। ভারততো ৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানকে ভেংগে দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। সে সুযোগ এসেছে ৭১ সালে ভুট্টো ও পাকিস্তানের সামরিক জান্তার কারণে।১৭৫৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত মুসলীম শাসন অব্যাহত থাকে অখন্ড বংগদেশে। তখন এই ভৌগলিক এলাকায় মুসলমানরা ছিল মাইনরিটি। শাসকরা দেশ শাসনে বেশী আগ্রহী ছিলেন। প্রজাদের বেশীর ভাগই ছিলেন পৌত্তলিক ও অচ্যুত। অচ্যুতদের বিষয়ে আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যেতে চাইনা। এ কারণেই বলি নিজের অস্তিত্ব আর জাতির বায়া দলিল জানাটা আপনাদের জন্যে অবশ্য কর্তব্য। এখন বাংলাদেশে যে বিভ্রান্তি চলছে তার একমাত্র কারণ নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা। আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এ নিয়ে একেবারেই ভাবেন না। ভাবার প্রয়োজনও মনে করেন না। যারা একটু ভাবেন তাঁদের বেশী ভাগই বিভ্রান্ত। প্রসংগত একটি পুরাণো বহুল আলোচিত গল্প বলতে চাই। শুনেছি ৪০ বা ৫০ দশকের দিকে গ্রামের গরীব কৃষক বাবা আসতেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বসবাসকারী নিজের সন্তানের সাথে দেখা করতে। পিতার পোষাক বেশভুষা কখনই নিজ সন্তানের মতো ছিলনা। হয়ত সন্তান আগেই বন্ধু বান্ধবকে বলেছে তার বাবা বিত্তবান মানুষ। ছেলেকে শিক্ষিত করার জন্যে বাবা নিজের জীবনের সব সুখ ত্যাগ করে প্রতি মাসেই টাকা পাঠায়। গরীব বাবা যখন হলে এসে উপস্থিত হন তখন ছেলেকে বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলতে হয়। তাই বাবাকে বন্ধুদের কাছে পরিচয় করে দিতো বাড়ির চাকর হিসাবে। বাবা যেন না বুঝে সেজন্যে ইংরেজীতে বলতো সারভেন্ট। এসব ছাত্ররা আসলে হীনমন্যতায় ভুগতো। গরীব কৃষকদের অনেকের ছেলে একদিন সরকারী বড় চাকুরীতে প্রবেশ করেছে। বিয়ে করেছে জজ, ব্যারিস্টার আর আমলাদের মেয়ে। ফলে ক্ষমতাবান সন্তানদের সাথে গরীব র্কষক বাবার আর কখনই দেখা হতোনা। খুবই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছেলেরাই শুধু উচ্চ পদে আসীন হয়েও মা বাবার সাথে সম্পর্ক রাখতে পেরেছিল। হীনমন্যতার রোগে বিপর্যস্ত ছেলেদের বেশীর ভাগই বুঝে বা না বুঝেই পরবর্তী কালে সেক্যুলার হয়েছে। ৩০ থেকে ৫০ দশক অবধি আমাদের দেশে হিন্দু শিক্ষকদের প্রভাব ছিল। তখন তাঁরাই ছিলেন ছাত্রদের মডেল বা আদর্শ। এসব শিক্ষকই ছাত্রদের সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতা শিখিয়েছেন। ধর্ম নাকি জগতের অনিষ্টের মূল কারণ। ধর্মকে পরিহার করেই সমাজের পরিবর্তন করতে হবে।
আমি নিজেও ছাত্রাবস্থায় বাম চিন্তাধারার অনুসারী ছিলাম। মূলত: আমি ছিলাম একজন মানবতাবাদী। মানুষের মুক্তিই ছিল আমার স্বপ্ন। দারিদ্রকে,অশিক্ষাকে আমি সব সময় ঘৃণা করে এসেছি। আজও করি। তখন মনে হয়েছিল কার্লমার্কস, লেনিন, মাওয়ের মতবাদ মানুষের মুক্তি আনতে পারবে। বাল্যকালে মা এবং মৌলবী সাহেব কোরাণ পড়াবার পর আর পড়িনি।শিক্ষা জীবন শেষ করার পরেই সাংবাদিকতায় এসে পরিচিত হই দেশের নামজাদা সব বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের সাথে। এক সময় মাওলানা ভাসানী সাহেবের অনুসারী হয়ে গেলাম। মাওলানা সাহেব একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন। অকল্পনীয় বাগ্মিতার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন হজরত আবুজর গিফারীর(রা) অনুসারী। হজরত গিফারী ছিলেন রাসুলের(সা)প্রিয় সাহাবী ও বিপ্লবী ইসলামের প্রবক্তা। মাওলানা ভাসানীও ছিলেন ইসলামী সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনিও মাও জে দংকে বলেছিলেন,তুমি তোমার সমাজতন্ত্রের সাথে খোদাকে যোগ করো, আমি তোমার অনুসারী হয়ে যাব। মাওলানা সাহেবের একজন সত্যিকারের অনুসারী হিসাবে আমিও ইসলামী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সত্যিকথা বলতে কি পূর্ণাংগ ইসলামী সমাজব্যবস্থা কোথাও কখনই প্রতিষ্ঠা হয়নি। সকল মত ও পথের সহ অবস্থানের কথা জগতে প্রথম বলেছে ইসলাম। ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলো সারা বিশ্বে একই রকম। ইসলামের ভাষা একটি। আর তা হলো আরবী। পৃথিবীর সকল মুসলমানই প্রয়োজনীয় আরবী শিখে থাকেন। না শিখলে কারো পক্ষেই ধর্ম চর্চা করা বা মুসলমান থাকা সম্ভব নয়।
আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।
এর আগে লিখেছি ও বার বার বলেছি,ভৌগলিক কারণে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। ফলে স্থানীয় কিছু আচার আচরন আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছে। এটা ইসলাম অনুমোদন করে। আরেকটি বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, সেটা হলো, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন সৃষ্টির মৌলিক নীতির বাইরে যেতে পারবেন না। স্রষ্টার অবারিত দান গুলো আপনি গ্রহণ করতে বাধ্য। এমন কি আপনি অবিশ্বাসী নাস্তিক হলেও প্রকৃতিরই অধীন। একজন অবিশ্বাসী কি বলতে পারবেন, আমি যেহেতু নাস্তিক সেহেতু প্রকৃতির বাতাস গ্রহণ করবোনা। জগতে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সবাই প্রকৃতির নিয়মাধীন। ধর্ম মানা না মানা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী আপনি কারো ধর্মীয় বিশ্বাস ও অধিকারে বাধা দিতে পারেন না। একই ভাবে বাংলাদেশের সংবিধান ও আপনাকে সে অধিকার দেয়না। কিন্তু আপনি বা আপনারা যদি নিজেকে একজন মুসলমান বলে দাবী করেন তাহলে কোরআন ও সুন্নাহর বিধি বিধান আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এর বিরোধিতা করার কোন অধিকার আপনাকে রাস্ট্র বা সমাজ দেয়নি। এমন কি আপনি ধর্ম ত্যাগ করলেও আপনার কোন অধিকার নেই কারো ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করা।
আপনি যদি একজন আধুনিক প্রগতিশীল উদার মনের মানুষ হন তাহলে অবশ্যই আপনাকে শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানে বিশ্বাস করতে হবে।
বাংলাদেশে হয়ত অনেক নাস্তিক আছেন। তাঁরা কেউই অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন না। নাস্তিকতা যেমন সুপ্রাচীন, তেমনি ধর্ম বিশ্বাসও অনেক প্রাচীন। জগতটাই ধর্মীয় নিয়ম কানুন ও বিধি বিধান মেনে চলে। যদি তা না হতো তাহলে বিশ্বে এত মসজিদ, গীর্জা, মন্দির, প্যাগোডা,সাইনাগগ,ফায়ার টেম্পল থাকতোনা। আমাদের তরুণদের মাত্র কয়েকজন ইসলাম, রাসুল(সা) ও আল্লাহর বিরুদ্ধে কুত্‍সা রটনা করছে,ব্লগ বা ইন্টারনেটে তা প্রচার করছে। এটা আমরা জানতে পেরেছি ব্লাগার রাজীব খুন হওয়ার পর। বিষয়টা জটিল হয়ে গেছে যখন প্রধানমন্ত্রী নাস্তিক বলে পরিচিত রাজীবের বাসায় গিয়ে তাঁকে শহীদ ঘোষণা করলেন। এ কাজটি করে প্রধানমন্ত্রী ১৫ কোটি মানুষের মনে আঘাত দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সরকার বা ব্লগাররা কেউ এ ব্যাপারে দু:খ প্রকাশ করেনি। গণজাগরণের মঞ্চ থেকে শাহবাগী নেতারা উল্টো ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা লোক দেখানো জানাজার ব্যবস্থা করে প্রহসনের নাটক করেছে। তাদের ইমাম ভুল নামাজ পড়িয়েছেন। অজু না করে হিন্দু মুসলমান নাস্তিক আস্তিক সবাই জানাজার নামাজে অংশ গ্রহণ করে ইসলামকে, জানাজার নামাজকে ব্যংগ করেছে। সংসদে কয়েকজন সদস্যতো ফতোয়াই দিলেন যে, রাসুল(সা) ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন। এরা কত বড় মোনাফেক কল্পনাও করা যায়না। আমার অন্তরে একটা বিরাট আস্থা ছিল প্রধানমন্ত্রী বিষয়টার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান অবশই করবেন। না, তিনি সমাধান করেননি। বরং পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করেছেন নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে। শাহবাগীরা মাঠে নেমেছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবী নিয়ে। ওই শাহবাগে দাঁড়িয়ে তারা সরকার ও আদালত নির্দেশ দিতে শুরু করে। শাহবাগের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সরকার আইন পরিবর্তন করে।
আরেকটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করে্‌ছি,তা্হলো শাহবাগীদের ব্যাপারে ভারতের মিডিয়া ও সরকারের সীমাহীন আগ্রহ। প্রনব বাবু নাকি শাহবাগে যেতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় মিডিয়াই প্রথম জানান দিয়েছিল রাজীব একজন নাস্তিক ধর্মদ্রোহী ব্লাগার। এরপরে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে,শাহবাগের প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। শুরুতে শাহবাগীদের শুধু একটি দাবী ছিল। পরে সরকার ও নানা ধরনের ধর্মহীন(সেক্যুলার)গ্রুপের সমর্থন পেয়ে নানা ধরনের দাবী তুলতে থাকে। এখন তারা বিভ্রান্তিকর এক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। এখন বলছে জামাতের সদস্যদের বাড়ি ভাড়া দিওনা, জামাতের নানা প্রকাশনা, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। এ তালিকা দিন দিন বাড়তে থাকবে। সরকারও, আমার মনে হয়,ওদের নিয়ে কি করবে সরকার বুঝে উঠতে পারছেনা।
সরকার হয়ত ভেবেছিল, একটু কঠোর হলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা যাবে। না, সরকারের ভাবনা একেবারেই ভুল প্রমানিত হয়েছে। তরুণরা কি সত্যিই এখন সরকারের কথা শুনবে? নিশ্চয়ই তারা কারো কথা মতো চলছে। তরুণদের উচ্ছাস ও আবেগকে আমি সম্মান করি। আমিতো মনে করি তাদের আবেগকে কোন স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে ব্যবহার করছে। সবাই বলছে ,দেশ আজ নীতিগত ভাবে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারী-মার্চের গণ বিষ্ফোরণ দমনের জন্যে সরকার যেভাবে গুলি করে সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে তাতে জন সাধারনের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মেছে যে সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের ৪২ বছর আর পাকিস্তানের ২৩ বছর মিলিয়ে মোট ৬৫ বছরে কোন সরকারই গুলি করে একদিনে এত মানুষ হত্যা করেনি। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার কোন ধরনের দু:খ প্রকাশ করেনি। বরং সরকারের মন্ত্রীরা গণহত্যাকে ন্যায় সংগত বলে দাবী করেছে।
সরকারের নীতির কারণে দেশের মানুষ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। বিভক্তি একেবারেই সুস্পষ্ট। সরকার দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে আর দেশবাসী মানে দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান নাগরিক তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। আজ সময় এসেছে নিজেকে চেনার এবং নিজের জাতি ও দেশকে চেনার। আল্লাহপাক বাংলাদেশের মুসলমানদের এ সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি বার বার বলেছি আমাদের তরুণ সমাজের কাছে,তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে কেন আমরা ৪৭এ পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলাম এবং কেনইবা ৭১এ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই স্বাধীনতার মানে শুধু এক খন্ড ভুগোল বা জমি নয়। এই স্বাধীনতার মানে আমাদের বাপদাদা পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য রক্ষা করা। এই ঐতিহ্যের মুল সূত্র হচ্ছে আল্লাহপাক ও তাঁর কিতাব, রাসুলের জীবন ব্যবস্থা ও সুন্নত। এর বাইরে এক চুল যাওয়ার কোন ক্ষমতা মুসলমানের নেই। আল কোরআন হচ্ছে জগতের সকল জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের বিপ্লবের কিতাব,আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্ব মেনে জনগণতান্ত্রিক কল্যাণমুখী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আজ আমাদের সংবিধান থেকে আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বকে তুলে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে মানুষই সার্বভৌম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ(নাউজুবিল্লাহ)। জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আল্লাহর রাসুল হজরত মোহাম্মদ(সা) ঘোষণা দিয়েছিলেন, যতদিন আমার উম্মত আল কোরআন ও আমার সুন্নত বুকে ধারণ করবে ততদিন পৃথিবীর নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবে। জগতে মুসলমানরা আজ নির্যাতিত,নিগৃহিত ও লাঞ্চিত। কারণ তারা কোরআন ও সুন্নাহ থেকে বহু দুরে সরে গেছে বা ভুলে গেছে।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান.এদেশ হলো পীর আউলিয়ার দেশ।লাখ লাখ মসজিদ,মক্তব, মাদ্রাসা আর জগতখ্যাত আলেম উলামা মাশায়েখ রয়েছেন এদেশে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো দেশের নেতৃত্ব চলে গেছে অজ্ঞ আরবী নামধারী নামধারী তথাকথিত কিছু সেক্যুলার বা ধর্মহীন লোকের কাছে। এই রাজনীতির ধারা চালু হয়েছে বৃটিশ আমলে।যা অব্যাহত ছিল পাকিস্তান আমলে এবং এখনও জারী রয়েছে। ফলে আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থায় অফিস আদালতে ইসলামের কিছুই নাই। বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রটি এখন আরবী নামধারী ইসলাম বিরোধী কিছুলোকের হাতে বন্দী হয়ে গেছে। আদালতে মামলা হয় সংবিধান থেকে আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার জন্যে। আবার মামলাও করেন আলেম নামে পরিচিত কিছুলোক। সেই মামলা পরিচলনা করেন আরবী নামধারী কিছু মানুষ যারা অন্তরে মোনাফেক। রাসুলের(সা) জামানায়ও এ ধরণের মোনাফেক ছিল। মোনাফেকদের অবস্থা কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। ৫৪ সালের যক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে বলা হচ্ছে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবেনা। এখনও রাজনৈতিক দল গুলো ওয়াদা করে চলেছে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী আইন করা হবেনা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশের সাধারন মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ও চোখে ধুলা দিয়ে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশ করা হচ্ছে। সরকারের মোনাফেকির চেহারা ও আবু জেহেলের রুপ খোলামেলা হয়ে গেছে চলমান সরকারের সময়ে। এ সরকারের কাঁধে ভর করেছে সেক্যুলার বা ধর্মহীন নামে পরিচিত আরবী নামধারী কিছু লোক। তারা এদেশে মুসলমানদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। অপরদিকে শেখ হাসিনার একমাত্র ইচ্ছা যে কোন প্রকারে ক্ষমতায় থাকা। ফলে দেশে ইসলাম বা মুসলমান থাকবে কি থাকবেনা তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামাবার সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি শুধু চান ক্ষমতায় টিকে থাকতে তা যেভাবেই হোক। তাই বাংলাদেশের মানুষের সামনে এখন দুটো পথ খোলা। একটি হলো ঈমান হারিয়ে,দেশের সার্বভৌমত্বকে ত্যাগ করে পরাজিত মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকা। অপরটি হলো হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্যে ঈমানের পরীক্ষা দেয়া। আমি গভীর ভাবে বিশ্বাস করি মহান রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের মজলুমের সাথেই আছেন। আসুন সবাই মাতৃভুমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঈমানের পরীক্ষা দিই।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


রাস্ট্র ও নাগরিকদের মুখোমুখি দাঁড় করাবার ষড়যন্ত্রের নায়ক কারা ? এরশাদ মজুমদার

পাকিস্তান টিকে নাই। কারণ, সরকার মানুষ, নাগরিক বা জনগণের চেয়ে রাস্ট্র রক্ষা বা বাঁচাবার কথা বলে মানুষের বিরুদ্ধে রাস্ট্রকে মুখোমুখি করেছে। পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার অস্বীকার করেছে। এভাবেই পাকিস্তান গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অস্বীকার করেছে। ফলে, মানুষ টিকে আছে ,পাকিস্তান টিকে নাই। ক্ষতি হয়েছে দেশের বা রাস্ট্রের। ক্ষতি করেছে কে? সরকার। কারণ, রাস্ট্রের নাম ব্যবহার করে বা রাস্ট্র রক্ষার কথা বলে সরকার জনগণের স্বার্থকে পদদলিত করে নিজেদের হীন স্বার্থকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। আজ আর ৪৭ এর পাকিস্তান নেই। ভারত কখনই পাকিস্তানের সৃষ্টিকে মেনে নেয়নি। পাকিস্তানের সামরিক সরকার বুঝতে পারেনি ৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে বা সামরিক অভিযান চালালে ভারতের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাংখা বাস্তবায়িত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে। প্রসংগত একটি বিষয় স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসে, তা হলো ৭১ এর ৯ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে কি হয়েছে সে সম্পর্কে বংগবন্ধুর সরাসরি ভাবে লব্ধ কোন তথ্যজ্ঞান ছিলনা। ফলে তিনি আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ সম্পর্কে নিজদলের অতি আপনজন থেকে যে ব্রিফিং পেয়েছেন তাই ধারণ করেছেন। এর কারণ ছিল তিনি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ্যে ২৫শে মার্চ রাত বারোটা পর্যন্ত স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দেননি। বরং তিনি শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত একটি সমঝোতা চেয়েছিলেন। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা সে সমঝোতা চায়নি। তারা আলোচনার কথা বলে বংগবন্ধুর সাথে বেঈমানী করেছে। নিজ জনগণের আশা আকাংখা পূরণ করতে না পারলে কোন রাস্ট্রই টিকে থাকতে পারেনা। যেমন অখন্ড ভারতের আকাংখা টিকেনি কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতার কারণে। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠি মুসলমানদের দাবী না শুনেই কংগ্রেস অখন্ড ভারত চেয়েছিল। এর ফলে, ভারত ভেংগে গিয়েছে আর পাকিস্তান নামক আরেকটি রাস্ট্রের জন্ম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে যুদ্ধের মাধ্যমে, লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানী, সম্পদ ধ্বংসের বিনিময়ে । অথচ, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে। ১৯০৬ সালে মুসলীম লীগের জন্ম ঢাকাতেই হয়েছে। লাহোর প্রস্তাবও পেশ করেছেন শেরে বাংলা বা বাংলার বাঘ একে ফজলুল হক। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অংশ হওয়ার একমাত্র কারণ ছিল ধর্ম। কিন্তু জাতি হিসাবে ভৌগলিক কারণে এখানকার অধিবাসীরা বাংগালী বলে পরিচিত। এদের ভাষা বাংলা। সংস্কৃতি বাংগালী মুসলমানের সংস্কৃতি। পাকিস্তানের শাসকরা বাংগালী মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেই শুরু থেকেই বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্যে বিদেশ থেকে বহু ফকির দরবেশরা এসেছেন। তাঁরা এখানে বসতি স্থাপন করে এখানেই রয়ে গেছেন। ব্রাহ্মণ্যবাদের অত্যচারে বাংলার নিম্নবর্ণের লাখ লাখ মানুষ বিপ্লবী সাম্যবাদের নতুন ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফলে বাংলার মুসলমানদের সংস্কৃতিতে স্হানীয় সনাতনী ভৌগলিক আচার আচরনের প্রভাব রয়ে গেছে। ইসলাম যেখানেই গেছে সেখানকার আদি সংস্কৃতিকে ষোলয়ানা পরিহার করেনি। এটা ছিল ইসলামের উদারতা। ফলে সারা মুসলমানেরা মীলিক বিশ্বসে এক হলেও আচার আচরন, পোষাক আসাকে,ভাষায় রংয়ে এক নয়। সারা বিশ্বের মুসলমানের শ্লোগান হলো, নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাহ, মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ(সা)। এটাই এক্যের একমাত্র রশি। এর ব্যতিক্রম হলেই কোন ব্যক্তি বা জাতি ইসলামের অধীনে থাকেনা। শুধু আরবী বা ফার্সী থাকলেই কেউ মুসলমান থাকেনা বা মুসলমান হয়না। আরবী হচ্ছে মুসলমানদের ল্যাংগুয়াফ্রাংকা, ধর্মীয় ভাষা। আরবী ভাষাতেই নামাজ আদায় করতে হবে। বিসমিল্লাহকে অনুবাদ করে নামাজ পড়া যাবেনা। বিশ্বব্যাপী সকল মুসলমানকেই এ নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো মুজিব নগর সরকার দিল্লীকে ওয়াদা করে এসেছে একটি সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। বংগবন্ধু ভিতরের বিষয় গুলো অত বিস্তারিত জানতেন না বা তাঁকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বুঝানো হয়নি। বা তিনি বুঝতে চাননি। ফলে শুরুতেই আপন ভাগিনা শেখ মনি ও মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাথে নীতিগত দ্বন্ধ শুরু হয়ে যায়।সেই দ্বন্ধ প্রকাশ্য রূপ নেয় ৭৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনের সময়। বংগবন্ধু সম্মেলনে যাবেন, কিন্তু ভারত শেখ মনি, তাজউদ্দিন ও ড.কামাল তা চাননি। দিল্লীর কথা হলো,তুমিতো সেক্যুলার বাংগালী, ইসলামী সম্মেলনে যাবে কেন? তোমার সংবিধানেও সেক্যুলারিজম রয়েছে। নিজেকে মুসলমান দেশ হিসাবে চিহ্নিত করলে সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তখন বাংলাদেশ রাস্ট্রের আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। প্রধানতম বন্ধু ছিল ভারত আর রাশিয়া। বংগবন্ধু ভারত ও রাশিয়ার চাপকে উপেক্ষা করে বংগবন্ধু পাকিস্তানের লাহোর গিয়েছিলেন। তার আগেই তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিলেন। জানিনা, আপনারা ভুলে গেছেন কিনা? পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে ১০ই জানুয়ারীর বিশাল জনসভায় বংগবন্ধু বলেছিলেন,আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। আমি দ্বিতীয় মুসলীম প্রধান দেশের নেতা। আমি বিশ্বাস করি তিনি জীবিত থাকলে মুসলীম বিশ্বের নেতা হতে পারতেন। জিয়াউর রহমান সাহেব মুসলীম বিশ্বের নেতা হতে পেরেছিলেন।
ভারত আবার বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসেছে খুবই কঠিন কঠোর ভাবে। উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে তথাকথিত সেক্যুলার(ধর্মহীন )রাস্ট্রে পরিণত করা। ভারতীয় পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে শাহবাগের আন্দোলনকে ভারত সরকার সমর্থন করছে। এর সাথে রয়েছে বুঝে হোক না বুঝে হোক বাংলাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। ধর্মহীনতা যাদের একটা ফ্যাশান। তরুণ প্রজন্মও ভারতের খপ্পরে পড়েছে। সুযোগটা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু। কাদের মোল্লার আজীবন কারাদন্ডকে পুঁজি করে শাহবাগের নতুন প্রজন্ম নামক একটা আন্দোলন চালু করে দিয়েছে ভারত। শেখ হাসিনার সরকার না বুঝেই শাহবাগের ট্র্যাপে পড়ে গেছে। সরকার, সংসদ , সেক্যুলার নামে পরিচিত গায়ক, নাচিয়ে, আঁকিয়ে, বিজ্ঞাপনী সংস্থা তরুণদের সমর্থন দিয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছি মোম্বাইয়ের কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিচ্ছে। এখন শাহবাগে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। উদ্দেশ্য সরকারকে চাপের মুখে রাখা। বিচার ব্যবস্থাও শাহবাগীদের চাপের মুখে পড়ে গেছে। অনেকেই মনে করেন, শাহবাগ তৈরি না হলে সরকার আপিল করার আইন সংশোধন করতোনা। কাদের মো্লাকে আন্দোলন শুরু হলেও এখন শাহবাগ থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন ফরমান জারী হচ্ছে। ৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে নির্দেশ জারী হতো। সেই নির্দেশ দেশবাসী মেনেছে। ওই নির্দেশের নেতা ছিলেন বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন নির্বাচিত মেজরিটি দলের নেতা। কিন্তু সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা: ইমরান কে? তিনিতো সরকারকেও নির্দেশ দিচ্ছেন। সরকার পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে শাহবাগ চত্বরকে চালিয়ে যাচ্ছেন। ডা: ইমরান নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তাঁদের আর টাকা পয়সা লাগবেনা। শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার মতো অর্থ এখন তাঁদের আছে।
মাওলানা সাঈদী একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কোরআনের তাফসীরকারক বা মোফাস্সীর। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো তেমন ভাবে প্রমানিত হয়নি। তিনি বার বার বলেছেন যে, দেল্লা রাজাকার নন। ৭১ সালে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না। দেল্লা রাজাকার আর মাওলানা সাঈদী যে এক ব্যক্তি নন তা প্রমান করার কোন সুযোগই আসামী পক্ষকে দেয়া হয়নি। মাওলানা সাহেবের ফাঁসীর আদেশ হওয়ার পর দেশে বিদেশে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাও সরকার অনুধাবন করে পারেননি। গত কয়েকদিনে ১০০শ’র সাঈদী ভক্ত,জামাত-শিবির কর্মী ও সাধারন মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে শত শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে। সরকারও মনে করছে যে, শক্তি দিয়ে তাঁরা এ বিক্ষোভ দমন করতে পারবেন। মন্ত্রীরা বলেই চলেছেন, সরকার কঠোর হস্তে এই বিক্ষোভ দমন করবেন। সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন সরকার নাকি এখনও কঠোর হননি।
৪৭ সালে মুসলমান বা ইসলামের নামে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হলেও শাসকরা ছিলেন সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদী। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরি করতেই লেগে গেছে নয় বছর। আর যা তৈরি হয়েছিল তাও টিকতে পারেনি সামরিক শাসনের কারণে। পাকিস্তানী শাসকরা মুখে কথায় কথায় ইসলামের কথা বলতো,বাস্তবে তারা সকলেই ছিলেন ইসলাম বিরোধী। জনগণের সেন্টিমেন্ট বা আবেগকে কাজে লাগাবার জন্যেই তারা ইসলামের কথা বলতো। জেনারেল ইয়াহিয়া ছিলেন একজন মদ্যপ। বেশীর ভাগ সময়েই এই জেনারেল হুঁশে থাকতো না। বহু বাংগালী বুদ্ধিজীবী এই মদ্যপ ব্যক্তির তাবেদার ছিলেন। এক কথায় বলা যেতে পারে পাকিস্তান কখনই ইসলামিক দেশ ছিলনা।
একই অবস্থা আজ বাংলাদেশের। মৌলিক বিষয় গুলো সুরাহা না হওয়ায় রাস্ট্রটির অস্তিত্বই আজ হুমকির সম্মুখীন। অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জাতিকে সীমাহীন অস্থিরতায় নিমজ্বিত করে ফেলেছে। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে ৭১ সালে বাংলাদেশ কিভাবে কি কারণে স্বাধীন হয়েছিল। আপনারা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করুন। দেখুন,উত্তর পান কিনা। এ ব্যাপারে কোন ধরনের ঐক্যবদ্ধ ঐক্যমত্যের উত্তর নেই। কেউ বলেন মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক ধর্ম নিরপেক্ষ। তাই ধর্মের ব্যাপারে রাস্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। মুজিব নগর সরকার ঢাকায় ফিরে আসার সময় চারটি বিষয় সাথে করে নিয়ে এসেছেন। ধর্ম নিরপেক্ষতা,সমাজতন্ত্র,গণতন্ত্র ও সকল নাগরিকের সমান অধিকার। সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণই সার্বভৌম এবং সকল ক্ষমতার অধিকারী। ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা শুনতে খুবই আকর্ষণীয়। একথাটা ব্যাখ্যা হলো রাস্ট্র ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী থাজবেনা। শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। মানে ৯০ ভাগ মুসলমান নাগরিকের যে অধিকার ১০ ভাগ ভিন্ন ধর্মীদেরও একই অধিকার। এই চিন্তা বা শ্লোগান গণতান্ত্রিক চেতনা বিরোধী। ৯০ ভাগ মুসলমান নাগরিকের অধিকারকে অস্বীকার করা। বাংলাদেশ রাস্ট্রটি এখন সাংবিধানিক ভাবে গোঁজামিল ও ঠগবাজি ব্যবস্থায় আছে। বলা হচ্ছে রাস্ট্রের নীতি ধর্ম নিরপেক্ষ। অপরদিকে বলছে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম। এতা হচ্ছে রাজনীতিকদের জুয়াচুরি। সাধারন ভোটারদের ঠকাবার জন্যে একটি কৌশল। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র আর ধনবাদী গণতন্ত্র এক নয়। তবুও জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্যেই সংবিধানে এই নীতি সংযোজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে ফিরে এসে এখন বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। কিন্তু তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর সাথে জোটে আটকা পড়ে আছে। বাংলাদেশে তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দল গুলোর দুই লাখ ভোটো নেই। এখন মন্ত্রীসভায় এমন লোকও আছেন যিনি নির্বাচনে নিজদল থেকে দাঁড়িয়ে পাঁচশ’ভোটও পাননি। ভোটহীন রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মহীন রাস্ট্রে পরিণত করতে চায়। ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোও বাংলাদেশকে ধর্মহীন রাস্ট্র হিসাবে দেখতে চায়। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, লক্ষ্য ও নীতি কি ছিল? যাঁরা যুদ্ধ করেছেন তাঁরা কি বলেছেন তাঁরা একটি ধর্মহীন বা ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্র বা সমাজ ব্যবস্থা চান? যুদ্ধটা ছিল পাকিস্তানী সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে। দুই ভাইয়ের মধ্যে অধিকার নিয়ে যুদ্ধ। পাকিস্তানী শাসকরা যদি বংগবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী মানতো তাহলে কি যুদ্ধটা হতো? আলাপ আলোচনার মাধ্যমেও বাংলাদেশ স্বাধিন হতে পারতো। যেমন ভারত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে দুটি স্বাধীন রাস্ট্রে বিভক্ত হয়েছে। ইংরেজের শোষণ শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্যেই ভারতবাসী স্বাধীনতা চেয়েছে। ঠিক একই ভাবে মুসলমানেরা হিন্দু শাসণ ও শোষণ থেকে মুক্তিলাভের জন্যেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে। ৪৭ সালেই অখন্ড বংগদেশ একটি আলাদা রাস্ট্র হতে পারতো। অখন্ড বংগদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি হওয়ার কারণে বাংগালী হিন্দুরা আলাদা স্বাধীন রাস্ট্র চায়নি। ফলে অর্ধেক বাংলা মানে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের সাথে আসে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ ছিল পূর্ববাংলায়। পাকিস্তানের দুই অংশের এক থাকার প্রধান উপাদান ছিল ইসলাম বা মুসলমানিত্ব। বাস্তবে দেখা গেল মাইনরিটি মুসলমানরা সকল ক্ষেত্রেই শক্তিশালী এবং সবদিক থেকে মেজরিটি মুসলমানকে অবহেলা করতে শুরু করেছে। এমন কি অনেকেই পূর্ববাংলার মুসলমানদের বিশ্বাস নিয়েও কটক্তি করতে শুরু করে। এর উপরে ছিল প্রচন্ড অর্থনৈতিক শোষণ। এর ফলে উভয় অঞ্চলের ভিতর বিরাট বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেও বৈষম্য দূর করা যায়নি। বাংলা ভাষার ব্যাপারেও জিন্নাহ সাহেব বা মুসলীম লীগ নেতাদের চিন্তা ও ভুমিকা সঠিক ছিলনা। ৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংগালী মুসলমান নিজেদের সেন্টিমেনট ও আবেগের বহিপ্রকাশ ঘটায়। জাতীয় সংসদের মেজরিটি দলের নেতা হয়েও বংগবন্ধু একটা সমঝোতা চেয়েছিলেন শুধুমাত্র শান্তির জন্যে। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া ও ভুট্টো বংগবন্ধুর সরলতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ২৫শে রাতে সামরিক অভিযান চালিয়ে।
তাহলে খুবই ন্যায্য ভাবেই প্রশ্ন উঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি শুধুই বাংগালী হওয়ার চেতনা? ইসলাম ও মুসলমানিত্ব ত্যাগের চেতনা? এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও বাম চেতনার নাগরিক ৭২ সাল থেকেই আমাদের বুঝাতে চাইছে ৭১এর চেতনা হলো অসাম্প্রদায়িক ধর্মহীন চেতনা। এই চেতনা হচ্ছে শুধুই বাংগালী হওয়ার চেতনা। তাই তারা ৭৪ সালে বংগবন্ধুর পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বংগবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বের তারা হার মেনেছে। ৭২ এর ১০ই জানুয়ারী দেশে ফিরেই বংগবন্ধু ঘোষণা দিলেন তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশের নেতা। তিনি বলেছিলেন, আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। সুতরাং এ ব্যাপারে আর কোন বিতর্ক থাকতে পারেনা। কিন্তু বিতর্ক যাচ্ছেনা। কারন ৯০ ভাগ মুসলমানের অধিকারকে অস্বীকার করার জন্যেই তথাকথিত চেতনার কথা বলা হচ্ছে। আমরা মসজিদে বলি আল্লাহু আকবার,মানে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহই সার্বভৌম, আর সংসদের ভিতরে বলি মানুষহু আকবার, মানে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ বা সার্বভৌম। এটা এক ধরনের মোনাফেকী। মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। এই মানুষ বা খলিফার কাজ হচ্ছে সৃষ্টি জগতের খেদমত করা। আমাদের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থা দ্বিমুখী। মানুষ কখনই সার্বভৌম নয়। মানুষের সার্বভৌমত্ব মানা মানেই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা। মাত্র কয়েক হাজার মানুষ স্বাধীনতার শত্রু, স্বাধিনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বাংলাদেশকে একটি তথাকথিত প্রগতিশীল ধর্মহীন রাস্ট্রে পরিণত রাখতে চায়। এর পেছনে রয়েছে ইসলাম বিরোধী ইজরায়েল,ভারত ও পশ্চিমা শক্তি
বাংলাদেশের চলমান রাস্ট্র বনাল নাগরিক সংঘর্ষের পেছনে একটি শক্তি রয়েছে যে শক্তি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি ও নাগরিক ঐক্যের উপাদানকে মুছে দিতে চায়। এখনি মৌলিক বিষয় গুলো সমাধানের সময়। এজন্যে আজ কঠোর জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। আমরা আমাদের ঈমানী ঐক্যকে বিসর্জন দিতে পারিনা। কয়েক হাজার যড়যন্ত্রকারীর কৌশল ও শয়তানীর কাছে আমরা আত্ম সমর্পন করতে পারিনা।

লেখক:এরশাদ মজুমদার
কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

Read Full Post »