বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত প্রায়ই সব নদী এসেছে ভারত চীন ও নেপাল থেকে। প্রাকৃতিক এই নদী গুলো তিনটি দেশকে মায়ার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে। কিন্তু এই তিন দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দল গুলোকে তেমন মায়ার বন্ধনে বাঁধতে পারেনি। চীনের সরকার ও রাজনৈতিক দলের সাথে ভারতের তেমন সুসম্পর্ক নেই। চীন ভারত সম্পর্ক দিনের আলোর মতো স্পস্ট ও পরিস্কার। সবাই জানে এই দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক কি রকম। ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত বিরোধ সহ আরও বিরাট সমস্যা রয়েছে। এক সময়ের রাশিয়াপন্থী ভারত রাতারাতি মার্কিনপন্থী হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য চীনকে মোকাবিলা করা। ১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধের আগে ভারতবাসীর শ্লোগান ছিল ‘চীনি-ভারত ভাই ভাই’। ৬২ সালের যুদ্ধের পর এখন সম্পর্ক শীতল। কিন্তু চীন বড় ও শক্তিশালী দেশ বলে ভারত চীনকে তেমন ঘাটাতে চায়না।চীন ভারত সম্পর্ক এখনও ৬২ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়নি। ভারত চীনের বহু জায়গা দখল করে রেখেছে। চীন ইংরেজদের তৈরী করা সীমান্ত রেখা মানেনা। আর ভারত ইংরেজদের দেয়া মানচিত্র নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।
এইতে ক’দিন আগেই চীনের রাস্ট্রদূত জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, চীন আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি চায়। ভারতও নাকি তা চায়। তবে ভারতের কানেক্টিভিটি হলো নেপাল ভুটান আর বাংলাদেশকে নিয়ে। ছিনের কানেক্টিভিটি হলো মায়ানমার ও চীন সহ। চীনের রাস্ট্রদূত আরও বলেছেন বাংলাদেশের করিডোর বা ট্রানজিট ভারত কর্তৃক ‘শান্তিপূর্ণ’ কাজে ব্যবহার করতে হবে। শান্তিপূর্ণ কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও রাস্ট্রদূত আরও বলেছেন যে, ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। চীন কেন এ সব কথা বলেছে তা বাংলাদেশের মানুষকে বুঝতে হবে। চলমান বাংলাদেশ সরকার ও ক্ষমতাসীন দল ভারতের পরম বন্ধু। ভারতের নেতারা এই বন্ধুত্বের কথা প্রায়ই বলে থাকেন। সোজা কথা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ভারতের সকল ধরণের স্বার্থ রক্ষা হয়। সুতরাং ভারত নিজের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ বা এ জাতীয় রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে। এমন কি এরশাদ ক্ষমতায় থাকলেও ভারত খুশী হয়। ভারত নিজের স্বার্থেই এসব করে থাকে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ভারতীয় নেতারা দেশ প্রেমিক ও খাঁটি জাতীয়তাবাদী। তারা সত্যিকারেই একশ’ভাগ ভারতপন্থী।
বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য হলো এদেশে খাঁটি বাংলাদেশপন্থী দল ও নেতা পাওয়া যাচ্ছেনা। এখানে কেউ বাংগালী , আর কেউ বাংলাদেশী। আওয়ামী লীগ নিজেকে আদর্শগত ভাবে বাংগালী মনে করে। বাংলাদেশী মনে করেনা। দেশে বিদেশে নানা গোস্ঠি আছে যারা নিজেদের বিশ্ব বাংগালী মনে করে। এর মানে হলো দেশ বা রাস্ট্র বিহীন ৩০ কোটি বিশ্ব বাংগালী। বিশ্ব বাংগালী শ্লোগানটি ভারতীয় বাংগালীদের শ্লোগান। তার সাথে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশের কিছু হিন্দু ও মুসলমান। এরা নিজেদের বাংলাদেশী মনে করেনা। যদিও এদের সবার পাসপোর্টে লেখা রয়েছে জাতীয়তা বাংলাদেশী। তারা বাংলাদেশী, কারণ তাদের একটি স্বাধীন দেশ, রাস্ট্র, পতাকা ও জাতীয় সংগীত রয়েছে। শুধু বাংগালী যারা তাদের কোন স্বাধীন দেশ নেই। পশ্চিম বাংলার হিন্দু বা মুসলমানরা সবাই ভারতীয়। ইংরেজদের দেয়া মানচিত্র নিয়ে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ নেপাল ভুটান সবাইকে শাসিয়ে যাচ্ছে। চীন ছাড়া বাকি সব প্রতিবেশী ভারতের ভয়ে অস্থির থাকে। ভারত চাপ সৃস্টি করে, চোখ রাংগিয়ে ক্ষমতা দিখিয়ে প্রতিবেশীদের অনুগত রাখতে চায়। শ্রীলংকাকে কয়েক যুগ অশান্ত করে রেখেছিল। তামিল বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে ভারত। ভারতের সাথে হাত মিলিয়েছিল জাতিসংগ, পুরো পশ্চিমা জগত। চীনের সাথে গভীর বন্ধুত্ব প্রতিস্ঠা করে শ্রীলংকা সবার চোখ রাংগানিকে সামাল দিয়েছে। ভারতের কূটনীতি সম্পর্কে আমি আমার এর আগের লেখায় স্পস্ট করে কিছু কথা বলতে চেয়েছি। বারতের কূটনীতির মূলমন্ত্র হাজার বছরের পুরাণো চাণক্যনীতি। এই নীতিতে কোন ন্যায়নীতি বা মানবতা নেই। এই নীতিতে কোন ধরনের বন্ধুত্বের ব্যাপার নেই। লক্ষ্য একটাই, তা হলো আইনী বেআইনী যেমন করেই হোক ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা। ভারত তার স্বার্থ রক্ষা করবে এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ কি আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছি বা পারবো? যে জাতি মনো জগতে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে শক্তিশালী নয় সে জাতি কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা। ছিনারা ৬০ সাল থেকেই আমেরিকাকে পেপার টাইগার বা কাগুজে বাঘ বলে প্রচার করে আসছে। এখন সত্যিই আমেরিকা কাগুজে বাঘে পরিণত হতে চলেছে। চীন আমেরিক বিশ্ব ব্যান্ক আই এম এফ সহ আন্তর্জাতিক বা আমেরিকার তাবেদার কারো সাহযোগিতা না নিয়েই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। চীন জনগণের রাস্ট্রে পরিণত হয়েছে ১৯৪৯ সালে। আমরা মুসলমান হিসাবে স্বাধীন হয়েছি ১৯৪৭ সালে। ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে আবার স্বাধিন হয়েছি ১৯৭১ সালে। ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পাকিস্তান ভাংগার, সেটা ভারত পূরন করেছে ১৯৭১ সালে। ভারতের সহযোগিতা না পেলে আমরা নয় মাসে স্বাধীন হতে পারতাম না। তবে আমরা স্বাধীন হতামই। চলমান সরকারের আমলে ভারত বাংলাদেশের জানের জান। ভারত সরকার নিজেই বলে বাংলাদেশে এখন তাদের বন্ধু সরকার আছে। ভারতের মিডিয়াও জানে হাসিনা সরকার তাদের জানের জান। বংবন্ধুর কন্যাও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন দিল্লী তাঁর এক নম্বর বন্ধু। ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্যে যে অর্থ ও শক্তি খরচ করেছে তার হাজার গুণ সে আদায় করে নিয়েছে বিগত ৪০ বছরে। দিল্লী এ সুযোগ চিরদিনের জন্যে পেতে চায়। তাই সে নানা চুক্তি করে সুযোগ আদায়ের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চায়।
পাকিস্তানের সাথে ভারতের পানি সমস্যা বহু আগেই সমাধান হয়েছে। বিশ্ব ব্যান্ক এ সমস্যা সমাধানে অর্থ সহ অন্যান্য সহযোগিতা দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ও পরিবেশ অন্য রকম। পাকিস্তান আনবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ। পাকিস্তানের দরদী বন্ধু গণচীন। এইতো ক’দিন আগেই চীন বলেছে, পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চীন সম্মান করে। পাকিস্তানের চরম বিপদে চীন তার পাশে থাকবে। আমেরিকা যেকোন সময়ে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে এই আশংকাতেই চীন ওসব কথা বলেছে। আগেই বলেছি ভারত আমাদের চলমান হাসিনা সরকারের জানের জান। তাই আমরা ভারতের নানা আবদারের কথা শুনতে পাই। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, আমরা একই ঐতিহ্যের দেশ। দিল্লীও একথা বলে। শুধু পাকিস্তান চীন শ্রীলংকা নেপাল এ কথা বলেনা। নেপাল হিন্দু রাস্ট্র বা দেশ হয়েও ভারতের প্রতিবেশী হিসাবে শান্তিতে নেই। আওয়ামী লীগ মনেই করে বাংলাদেশ মুসলীম ঐতিহ্যের দেশ নয়। তাই জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতি তত্ব ভুল। জিন্নাহ সাহেবতো ভারতে দুই জাতির কথা বলেছেন ধর্মীয় কারণে। ভারতে আসলে জাতি কৃস্টি ও ধর্মীয় ভাবে বহুজাতির দেশ। কিন্তু কংগ্রেস ও বিজেপি এক জাতি তত্ব হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে ভারতকে একদেশ হিসাবে রাখতে চেয়েছিল। হিন্দুত্ব ছাড়া ভারতের এক রাস্ট্র বা এক দেশ থাকার আর কোন কারণ বা উপাদান নেই। ভারতের উত্তর আর দক্ষিণে আজও কোন মিল নেই। এমন কি ধর্মীয় ভাবেও। ভারতের দক্ষিণে রাবণকে জাতীয় বীর হিসাবে সম্মান করা হয়। উত্তরে আর্যপুত্র রাম হচ্ছেন দেবতা ও রাজা। ভুমিপুত্র ও রাজা রাবণকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করেই রাম দেবতায় পরিণত হয়েছে। রাবণকে করা হয়েছে অসুর। একই ভাবে বাংলার স্থানীয় রাজা মহিষকে দেবী দূর্গা পরাজিত করে অসুর আখ্যা দিয়েছে। একই ভাবে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে পরাজিত করে নানা কল্প কাহিনী প্রচার করেছে হিন্দু ও ইংরেজ লেখকরা। ওই বছরই শোভা বাজারের মহারাজার বাড়িতে দুর্গোত্সবে ক্লাইভকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে মদোত্সব পালন করা হয়। অতীতে দূর্গা পূজা কখনই সার্বজনীন ছিলনা। দুর্গা ছিলেন বাংলার একজন গৃহদেবী। মোঘল আমলেই দূর্গাপূজাকে সার্বজনীন করা হয়। ইংরেজ আমলের আগে দূর্গার গায়ের রং কালোই ছিল। শুধু ইংরেজদের বা ক্লাইভকে খুশী করার দেবীর গায়ের রং ফর্সা করা হয়। ভারত আজও শাসিত হচ্ছে আর্য ব্রাহ্মণ দ্বারা। কালে ভদ্রে দক্ষিণের দুয়েকজন ব্রাহ্মণও সুযোগ পান। শিব বা আর্যপুত্র না হয়েও আর্য দ্রাবিড় বা অনার্যের সমঝোতার ভিত্তিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হিসাবে সম্মানিত। বাংলাভাষী হিন্দুরা দূর্গাকে সবচেয়ে বড় দেবী হিসাবে পুজা করে থাকে। দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের আর কোথাও দূর্গা পূজা তেমন ভাবে হয়না।ভারত কখনও একদেশ বা এক রাস্ট্র ছিলনা। ভারতের বহু ভাষা ও বহু জাতির ভিতর কখনও সমঝোতা বা সম্মিলন ছিলনা। ভারত বলে নামটাও বেশীদিনের পুরাণো নয়। এক সময় নাম ছিল আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্য। উত্তর ছিল আর্যদের দখলে। আর দাক্ষিণাত্য ছিল ভুমিপুত্র বা স্থানীয় শাসকদের দখলে। মোঘলরাই ভারত বা হিন্দুস্তানকে একটি দেশ বা রাস্ট্রে পরিণত করেছে। ইংরেজরা মোঘলদের রেখে যাওয়া ভৌগলিক এলাকাকেই একটি দেশ হিসাবে শাসন করেছে। ইংরেজরা বিদায় নেবার সময় প্রশ্ন উঠলো তারা কার কাছে ক্ষমতা দিয়ে যাবে। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ১০০ বছর মুসলমানরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা প্রতিরোধ যুদ্ধ ও লড়াই করেছে। ওই পুরো সময়টা হিন্দু রাজা মহারাজা কবি বুদ্ধিজীবীরা দলবেঁধে ইংরেজ শাসনকে সমর্থন করে অভিনন্দন জানিয়েছে। ইংরেজ শাসনকে ভগবানের আশীর্বাদ বলে অভিহিত করেছে। কবি ও বাদশাহ বাহাদুর শাহের পতনের পর বৃটেনের রাণী আনিস্ঠানিকভাবে সরাসরি ভারত শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বৃটিশ সরকারের শাসন স্থায়ী ছিল ৯০ বছর। মুসলমানরা কখনই একটি খন্ডিত ভারত হিসাবে চিন্তা করেনি। একটি ভারতেই মুসলমানরা হিন্দুদের সাথে এক রাজনৈতিক জাতি হিসাবে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ইংরেজ প্রতিস্ঠিত কংগ্রেস শুরু থেকেই মুসলমানদের অধিকার অস্বীকার করে এসেছে। অখন্ডিত ভারতে মুসলমানদের অবস্থা ও অধিকার কি হবে তা কংগ্রেস নেতারা কখনই সু স্পস্ট করতে পারেনি। বলা যেতে পারে তারা মুসলমানদের বিশেষ কোন মর্যাদা দিতে রাজী হয়নি। ফলে মুসলমানরা নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্যে ১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠা করে। অখন্ড ভারতে বাংলার মুসলমানরা ছিল সবচেয়ে বেশী নিস্ঠুর ভাবে শোষিত। বাংগালী মুসলমানের জন্যে স্বাধীনতা ছিল অপরিহার্য। পাকিস্তান না হলেও বাংগালী মুসলমানরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতোই। সেটা ৪৭ সালেই প্রমানিত হয়েছে। অখন্ড বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ করার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন গান্ধী, নেহেরু ও প্যাটেল। নেহেরু ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোর বিরোধী। যদি নেহেরুজী বিরোধীতা না করতেন তাহলে ৪৭ সালেই স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ প্রতিস্ঠিত হতো। পশ্চিম বাংলার হিন্দু নেতারা চেয়েছিলেন দিল্লীর অধীনে স্বাধীনতা। বাংগালী মুসলমানের সাথে স্বাধীন থাকার চাইতে তারা দিল্লীর অবাংগালীর অধীনে স্বাধীন থাকাকে অধিকতর কল্যাণময় মনে করেছেন।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক কারণে বনিবনা না হওয়াতে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে এ অঞ্চলের মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববংগকে স্বাধীন দেশ হিসাবে প্রতিস্ঠা করে। এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশী। ভারত বা হিন্দুস্তানের বাংগালীরা ভারতীয় বাংগালী হিসাবে পরিচিত। কংগ্রেস নেতারা হিন্দু ভারত বা হিন্দুস্তান প্রতিস্ঠার জেদ না ধরলে ভারত এখন অখন্ড ভারতই থাকতো। অথচ কিছু বাংলাদেশের কিছু জ্ঞানপাপী বলে বেড়ান মুসলমানরা দ্বিজাতি তত্ব দিয়ে ভারতকে ভাগ করেছে। তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে হিন্দুস্তানের পক্ষে কথা বলে বা দালালী করে। ভারতের দর্শন নিয়ে এর আগেও আমি একটি কলাম লিখেছি। আজকের কলামেও অনেক পুরাণো কথার পুণরাবৃত্তি করেছি। এর আগেও স্থল সীমান্ত বিরোধ , পানির হিস্যা বন্টন, ব্যবসা বাণিজ্য, সীমান্ত হত্যা ও মুদ্র বিরোধ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। বার বার বলছি কারণ বিষয় বা তথ্যগুলো আপনাদের মনে থাকেনা। ভারতের সাথে আমাদের নানা ধরণের বিরোধ রয়েছে। সীমান্ত হত্যা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ভারত বলছে এসব হত্যা নয়। এ গুলো সাধারন মৃত্যু। আজ পর্যন্ত ভারত সীমান্ত হত্যার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। ভারত জোর তালপট্টি দখল করে রেখেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় জোর করে ঢুকে পড়ছে। বাংলাদেশের সীমাকে নিজেদের সীমা বলে দাবী করে চলেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হয়েছে। ভারত এখন অবাধে বাংলাদেশের স্থল ও জল বন্দর ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এ তথ্য গুলো
পেশ করলাম শুধুমাত্র ভারত ও এর নীতি বুঝার জন্যে। তিস্তার পানি নিয়ে ভারত যে চাণক্যনীতি নিয়েছে তার সাথে বাংলাদেশ কখনই পারবেনা। চলমান সরকারতো ভারতের বন্ধু সরকার। তাই এখন ভারতের আবদার অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। এ সরকারের আমলেই ভারত সবকিছু আদায় করে নিতে চায়, কিন্তু কিছুই দিতে চায়না। চুক্তি করেও তা বাস্তবায়ন করতে চায়না। ৭২ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশ অনেক চুক্তি হয়েছে, কিন্তু ভারত তা বাস্তবায়ন করেনি। মুজিব ইন্দিরা চুক্তি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বেরুবাড়ি নিয়ে গেছে, কিন্তু দহগ্রাম আংগরপোতা ফেরত দেয়নি। দেবার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। ভারত অনায়াসে চুক্তি করে, পরে মামলা করে, না হয় বলে পার্লামেন্টে পাশ করতে হবে। তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে নাটক আপনারা দেখতে শুরু করেছেন। মমতা বাণার্জি এখন বলছেন, তিস্তার পানি বন্টনের ব্যাপারে সিকিমের সাথে কথা বলতে হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশের ভারতবন্ধু সরকার নিয়মিত অসত্য ভাষন দিয়ে যাচ্ছে। বারত ফেণী নদীর পানি জোর করে তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশ কিছুই বলছেনা। ফেণী নদী বাংলাদেশের নিজস্ব নদী। টিপাই মুখে বাঁধ দেয়ার কাজ ভারত চালু রেখেছে, কিন্তু মিথ্যা ভাষন দিয়ে বাংলাদেশকে বোকা বানাচ্ছে। মিথ্যা কথা বলে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছে। যে পরিমাণ পানি বাংলাদেশকে দেয়ার কথা তা কখনই দেয়নি। দিল্লী বলে বাংলাদেশকে ৪৬টি পণ্য অবাধে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাতে বাধা দান করে। এতকিছু দেখেও বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে কেমন করে বন্ধু হিসবে ভাববে তা বুঝতে পারছিনা। ভারত এখন প্রতিবেশীদের বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেয়না। তার বন্ধু এখন আমেরিকা ইজরায়েল রাশিয়া ও ইউরোপ। এমন কি ভারত গোপনে অনেক বেঈমান মুসলমান নামধারী দেশের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলেছে।
ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ অত্র অঞ্চলে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই সুযোগ দেশের কল্যাণে ব্যবহার করার মতো মেধা সম্পন্ন কোন সরকার আজও আমরা পাইনি। মানসিকভাবে বাংলাদেশের সরকার , মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা খুবই দূর্বল। নিজের স্বার্থের কথাও আমাদের দেশের সরকার আমলা মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা ভাল করে বলতে পারেনা। আমাদের রাজনীতিকরাও এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে নেই। এমন কি মায়ানমারের সাথেও আমরা সঠিক ন্যায্য সমঝোতা বা দর কষাকষি করতে পারিনা। ফলে প্রতিবেশীরা মনে করে বাংলাদেশকে বোকা বানানো বা দেশের নেতাদের বাগিয়ে নেওয়া খুবই সহজ। আমাদের বিদেশমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে চিত্কার বলেছেন ৪০ বছরে কোন সরকার ভারতের সাথে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেনি। শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই সমস্যা সমাধানের জন্যে এগিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। এ ব্যাপারে দেশের মানুষই ভাল জানেন ও বলতে পারবেন।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক