Feeds:
Posts
Comments

Archive for April, 2014


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

আশি, আমি সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কিছু লিখতে চাই। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি? আমিতো মনে করি বাংলাদেশে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নেই। আমি তোমার মতের সাথে এক মত। তবুও এখানে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি বার বার সামনে আসছে কেন? ওটা আসলে রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে গেছে। এতে ফায়দা লুটা যায়। পাকিস্তান আমল থেকেই রাজনীতির এ খেলা দেখে এসেছি। দাংগা বা মারামারি শুধু হিন্দু মুসলমানে হয়নি, বাংগালী অবাংগালীতেও হয়েছে। আবার নোয়াখালীর শ্রমিক আর অন্য জেলার শ্রমিকের মধ্যেও দাংগা হয়েছে।দাংগা হয় স্বার্থের কারণে। সাধারন মানুষ কখনই দাংগা করেনা রাজনীতিক ও ক্ষমতাবানদের উসকানি ছাড়া। আমেরিকা যখন ভিনদেশে গিয়ে মানুষ হত্যা করে তাকে কি নামে অভিহিত করবে? আমেরিকায় কালো ধলোর মারামারি বা খুনাখুনিকে তুমি কি বলবে। শুধু ধর্মীয় কারণে সাধারন মানুষ কোন করেনা। ক্রুসেডকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে? শাসক আর ক্ষমতাবানরা সাধারন মানুষ গুলোকে লেলিয়ে দিয়েছে। শিয়া সুন্নীর দাংগা কারা বাধায়?ইসলামে এত ফেরকা কারা সৃষ্টি করেছে? এসব ফেরকায় মৌলিক তফাতটা কি? আমিতো মনে করি মুসলমানদের সহনশীলতা জগতে সবার চেয়ে বেশী হওয়া দরকার বা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে মুসলমানেরা নামাজ রোজা করে, হজ্ব পালন করে। শুক্রবারে মসজিদের সবচেয়ে বেশী ভিড় হয়। কিন্তু কোনটাই শুদ্ধ বা পূর্ণাংগ হয়না। আল্লাহপাক তাদের ক্ষমা করুন। বাংলাদেশে হক্কুল এবাদ একেবারেই পালন হয়না। অপরদিকে শাসক সমাজ নামে মুসলমান হলেও কামে ইসলাম বিদ্ধেষী। ইসলামে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নাই। যারা দাংগা লাগায় তারা কোন ভাবেই মুসলমান নয়।
মক্কা বিজয়ের দিন বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর(সা)একটি বক্তৃতা বা বাণী শোন। বিজয়ের জন্যে তিনি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করলেন। তারপর তিনি কোরেশদের প্রশ্ন করলেন, আজ তোমরা আমরা কাছে কিরূপ ব্যবহার আসা কর। তারা বলেছি, মহান ভ্রাতা যেমন ভ্রাতার সাথে ব্যবহার করে তেমন ব্যবহার। এই কোরেশরা রাসুল(সা) এবং তাঁর সাহাবীদের কি ব্যবহার করেছে তা পাঠক সমাজ জানেন। তাই উল্লেখ করলামনা। পুরো ভাষনটাই উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল। সুযোগ পেলে পরে কখনও উল্লেখ করবো। বিজয়ের দিন নবীজী(সা) অতীতের সব দু:খ বেদনা, অত্যাচারের কথা ভুলে গেলেন। তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই,করুণাময় তোমাদের ক্ষমা করুন। আজ তোমরা সকলেই মুক্ত,যার ইচ্ছা ইসলাম কবুল করতে পারো, যার ইচ্ছা নিজেদের পূর্ব ধর্ম পালন করতে পারো। তখনি হাজার হাজার মানুষ গগণ বিদারী আওয়াজ তুলে বললো,‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। এই রাসুলই(সা) বলেছেন, প্রতিবেশীকে অভুক্ত বা ক্ষুধার্থ রেখে তোমরা খাদ্য গ্রহণ করোনা। প্রতিবেশী বলতে কোন ধর্মের লোক বুঝানো হয়নি। এমন কি ভিনধর্মীকে জাকাত দিতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ফকিহগণ একমত নন। আমি বলি জাকাত দিতে না পারলে সাদাকা দিন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, এক মিনিটের জন্যে ভাবুন আমরা কি ধরণের মুসলমান। আমাদের চরিত্র থেকে ক্ষমা আর দয়া জিনিষটা একেবারেই নাই হয়ে গেছে। মুসলমান আর ইসলাম মানে সত্যের অনুসারী ও সত্যপথ। নিজের বুকে হাত দিয়ে একবার নিজেকেই প্রশ্ন করুন আমরা কি সত্য পথ অনুসরণ করি?
আমাদের বাংলাদেশ আজ সুস্পষ্ট ভাবেই দ্বীধা বিভক্ত। কিন্তু কেন? এদেশের ৯০ ভাগ মানুষই মুসলমান বলে দাবী করে। যদি তাই হয় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা রাজনীতি নিয়ে ধর্ম, রাজনীতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করা, আল্লাহ বা ঈশ্বরকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্যে কারা উথে পড়ে লেগেছে। রাজনীতি আর ধর্মের বিরোধ কোথায়? কোনটা ভাল? যেটা মন্দ সেটা ত্যাগ করুন। ভন্ডামী আর মোনাফিকির কোন প্রয়োজন নেই। এক শ্রেণীর লোক বাংলাদেশে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে। বাংলাদেশে খোদা, ভগবান , গড বা আল্লাহকে সার্বভৌম বলা যাবেনা। কারণ, আমাদের সংবিধান বলে মানুষ সার্বভৌম(নাউজুবিল্লাহ)।নামাজে, মসজিদে, কোরাণ, বেদ, উপনিষদ, বাইবেল, তৌরাতে বলবো আল্লাহ সার্বভৌম, রাস্ট্রের আইন বলবে মানুষ সার্বভৌম। আপনারা ভাবুন এমন কুতর্ক কোন দেশে আছে। সংসদে দাঁড়িয়ে যদি বলেন, আল্লাহু আকবর তাহলে আপনি সংবিধান লংঘন করবেন। এ জগতে এমন একটি ধর্ম নেই যা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানেনা।
যেমন ধরুন,ঋকবেদ বলছে, বিশ্ববিধাতার আইন পরিবর্তন হয়না। আলকোরআন বলছে ‘আল্লাহর কথায় কোন পরিবর্তন নেই(সুরা ইউনুস-৬৪)। অন্তর্যামী বিধাতার আইনকে কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা(ঋকবেদ ৫-১-১৮)। ‘তুমি আল্লাহর এই বিধানে কোন পরিবর্তন পাবেনা।(সুরা’ আল ফাতাহ ২৩)।‘হে পরম করুণাময়,অজান্তে যদি আমাদের কোন পাপ হয়ে যায়, তার জন্যে আমাদের ত্যাগ করোনা(ঋকবেদ ৫-৮৯-৭)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক,যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করোনা’( সুরা আল বাকারা ২৮৬)। ‘ঐ পরমেশ্বরের কোন মুর্তি হতে পারেনা, তাঁর কোন মুর্তি বানানো যায়না’(অথর্ব বেদ ৩-৩২)। ‘কোন জিনিষই এমন নেই যা তাঁর মতো’(সুরা আস শূরা ১১)। আমার দৃষ্টিতে সকল ধর্মের মূল মন্ত্র বা রূপ এক। রাজা-পুরোহিত, খলিফা/শাসক/নেতা আর তথাকথিত আলেম, রাজা/ মন্ত্রী শান্ত্রী আর পাদ্রী বা পোপ মিলে ষড়যন্ত্র করে ধর্মের রূপ ও কর্ম বদলে দিয়েছে নিজেদের স্বার্থে জনগণকে শোষণ করার জন্যে। বাংলাদেশেও তেমন ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ দেশের ইসলাম না জেনেও রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি, প্রধান বিচারপতি হওয়া যায়। কিছু না জেনেও ধর্মের উপর ভাষণ দিতে পারেন। ধর্মের বিরুদ্ধে রায়ও দিতে পারেন।

বাংলাদেশে সম্প্রদায় বা গোষ্ঠি ভিত্তিক চেতনা আছে কিন? আমি মনে করি সম্প্রদায় ভিত্তিক চেতনা সারা বিশ্বেই আছে। থাকাটাকে আমি অপরাধ মনে করিনা। যারা মেজরিটি তারা রাস্ট্র, রাজ্য ও সাম্রাজ্যে বেশী সুযোগ সুবিধা পায়। প্রশ্ন হলো সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক মনোভাব কোনটি? রাস্ট্র বা সরকার কি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করতে পারে? আমি মনে করি পারেনা বা পারা উচিত নয়। কোন বিচারেই সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন করা যায়না। এখন প্রশ্ন হলো সম্প্রদায় বা সাম্প্রদায়িকতা কি?
পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সাধারন মানুষ কখনই সাম্প্রদায়িক ছিলনা এবং এখনও নেই। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ একেবারেই অসাম্প্রদায়িক। ভাবাই যায়না এখানে কখনও সাম্প্রদায়িক কারণে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জুলুম হবে। পন্ডিত আহমদ শরীফও বলেছেন, বাংলাদেশে তিন চারটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু ভারতে সাম্প্রদায়িক হাংগামা লেগেই আছে। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে খবর আসে ধর্মীয় মাইনরিটির উপর হামলা হচ্ছে। আমি বলবো, এসব রাজনৈতিক খেলা। তবে পাকিস্তান আমল থেকেই সাম্প্রদায়িক অপচেতনাকে সরকার বা সরকারী দল উসকিয়ে দেয়। এখনও সেই খেলা অব্যাহত আছে। তবে যা ঘটে তার চেয়ে বেশী চিত্‍কার ও চিল্লাচিল্লি হয় বেশী রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যে। তবে কিছু তথাকথিত প্রগতিশীলতার লেবাসধারী বুদ্ধিজীবী আছেন যারা মনো জগতে ধর্মহীন, কিন্তু ধর্মীয় নাম নিয়ে সমাজে চলেন তারা নিজ ধর্ম বা সমাজকে হেয় করার জন্যে সব সময় সাম্প্রদায়িকতার জিকির তোলেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা ইসলাম ও মুসলমানিত্ব। পশ্চিমা জগত ও ভারত বাংলাদেশকে ধর্মমুক্ত দেশে পরিণত করতে চায়। এরা নিজেদের তথাকথিত সেক্যুলার বলে দাবী করে এবং এ কারণেই তারা সমাজে সম্মানিত। এদেশে একজন ধর্ম জ্ঞানের পন্ডিত বা আলেমের চেয়ে অর্ধ শিক্ষিত ধর্মহীন বা ধর্ম বিরোধী লোকের সম্মান অনেক বেশী। অথচ এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। অপর পক্ষে অন্য ধর্মের লোকদের এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়না।
আমার কিছু হিন্দু বা অন্য ধর্মীয় বন্ধুদের সাথে বিষয়টা নিয়ে খোলা মনে আলাপ করেছি। তারা বলে দেখুন এরশাদ ভাই, মাইনরিটিরা সবদেশেই একাট্টা থাকে। বাংলাদেশেও আমরা অবিরাম চিত্‍কার না করলে সরকার ও মিডিয়া আমাদের সমস্যা বুঝতে পারবেনা। তোমরাতো ভারতীয় বা পশ্চিম বাংলার মাইনরিটিদের তুলনায় অনেক বেশী সুখে আছো। সেটা আপনার দৃষ্টিতে। আমরাতো বলবো , আমরা অবহেলিত, মুসলমানেরা আমাদের বাড়ি আক্রমণ করছে, মন্দির ভেংগে ফেলছে। এটা বাংলসাদেশের মাইনরিটি বা হিন্দুদের কৌশল। অবিরাম চিত্‍কার করাটাই আমাদের আন্দোলন। বাংলাদেশের মিডিয়ার ৯০ ভাগই আমাদের পক্ষে।চিত্‍কার না করলে আমরা ৩০/৪০ ভাগ সুবিধা কেমন করে পাবো। অংকের হিসাবেতো আমরা ১০ ভাগও পাইনা। সেজন্যেই আমরা মাইনরিটি মানসিকতার সরকার চাই। যারা বাংগালী বাংগালী চিত্‍কার করে পাকিস্তান ভেংগেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও বাংগালী বাংগালী করছে। আমরাও চাই তারা বেশী বেশী করে বাংগালী বাংগালী বলে চিত্‍কার করুক। এখন তাদেরকে লাগিয়ে দিয়েছি মৌলবাদ, জংগী, সন্ত্রাসী, পাকিস্তানী বলে চিত্‍কার করার জন্যে। কিক্ষুতেই যেন ইসলাম আর মুসলমান বিষয়টা সামনে আসতে না পারে। আর নানা ভাবে সাহায্য করার জন্যে কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠণ ও ভারত সাথেই আছে।
এক হিন্দু সাংবাদিক বন্ধু বললো, আমি জানি , আপনি একজন ভাল মানুষ। আপনি মুসলমান আর ইসলামের স্বার্থে কথা বলেন ও লিখেন। এটা আপনার ন্যায্য অধিকার ও হক। কিন্তু আমরা আপনাকে মৌলবাদী, জংগী বলে গালাগাল করবো। ভারত সহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামকে দেখতে পারেনা। ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছে। কী অবাক লাগে যখন দেখি মিশরের প্রশ্নে সউদী বাদশাহ ইজরায়েলকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতকে সমর্থন করে। এই বাদশাহই নাকি দুই পবিত্র ঘরের খাদেম। তাহলে বুঝুন আপনি মেজরিটি হলে কি হবে? এ রাস্ট্রটাতো মেজরিটি মাবুষের চিন্তা চেতনার পক্ষে নয়।
ঠিক বলেছো ভাই, ইসলাম ধর্মে বাদশাহী নাই। তবুও মক্কা মদিনায় বাদশাহী আছে। এটা ইসলাম ও মুসলমানদের দুর্ভাগ্য। বাদশাহ আওরঙজেবকে লেখকরা সাম্প্রদায়িক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। আহমদ শরীফ সাহেব বলছেন, বাদশাহ আওরঙজেবের ছয় জন সেনাপতির মধ্যে চারজনই ছিলেন হিন্দু। তাঁর দরবারের উচ্চপদে ৩০/৪০ ভাগ হিন্দু কর্মচারী ছিলেন। এখনও ভারতের স্কুলের পাঠ্য পুস্তকে আওরঙজেবের নিন্দা করে গল্প ছাপা হয়। সরকারী নির্দেশেই এ সব কাজ হয়।
বাংলা কেন ভাগ হয়েছে তার উপর গবেষণা করে বই লিখেছেন জয়া চাটার্জী। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, সাধারনের ধারণা বা বিশ্বাস হচ্ছে বাংলাকে ভাগ করেছে মুসলমানেরা। জয়া চাটার্জী প্রমাণ করেছে ওই ধারণা বা বিশ্বাস একেবারেই মিথ্যা। এজন্যে তিনি দলিল দস্তাবেজ পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে কারণে ভারত ভাগ হয়েছে ঠিক একই কারণে বাংলা ভাগ হয়েছে। বাংলা বা পাঞ্জাবে মুসলীম মেজরিটি ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই পুরো পাঞ্জাব ও বাংলা পাকিস্তানের সাথে যাওয়ার কথা। দুটো রাজ্যকে ভাগ করা হলো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন থেকে। এখানে মুসলীম মেজরিটির থিওরী কাজে লাগেনি। কংগ্রেসই এ দুটো রাজ্য বা প্রদেশকে ভাগ করেছে। অখন্ড বাংলাদেশ স্বাধীন হতে চেয়েছিল একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে। কিন্তু নেতারা রাজী হননি। হিন্দু নেতারা রাজী হলে ৪৭ সালে বাংলাকে ভাগ করে দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের ভিতর বিতরণ করা হতোনা। জয়া চাটার্জী তাঁর গবেষণায় বলেছেন, মুসলীম লীগ নেতারা পাকিস্তান প্রস্তাব তুলতোনা যদি কংগ্রেস নেতারা সাম্প্রদায়িকতার পথ অবলম্বন না করতেন। কংগ্রেস নেতারা যদি ভারতকে কনফেডারেশন করতে রাজী হতো তাহলে পাকিস্তান হতোনা। জয়ার মতে পাকিস্তান প্রস্তাব ছিল শক্ত দর কষাকষির একটা হাতিয়ার। গান্ধীজী আর নেহেরু যদি মুসলমানদের ন্যয্য দাবী মানতেন তাহলে ভারত আজ অখন্ড থাকতো। অথচ মিডিয়া প্রোপাগান্ডা এতই শক্তিশালী যে, ভারত বিভাগের সব অপরাধ বা দোষ চাপানো হয়েছে মুসলমানদের উপর।
কিছু হিন্দু নেতা আজও মনে করেন ভারত শুধু হিন্দুদের। তাও আবার উচ্চবর্ণ হিন্দুদের। ভারতে ৩০ কোটি অচ্যুত/হরিজন/শূদ্র রয়েছে। ধর্মীয় ভাবেই তারা অর্ধ মানব। তাদের কাজ হচ্ছে উচ্চ বর্ণের হিন্দু ও তাদের সহযোগীদের সেবা করা। এরপরে ভারতে রয়েছে,বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। যাদেরকে ভারত ছাড়া করেছে হিন্দু রাজারা। আরও আছে শিখ জৈন ও নানা ধরণের অবহেলিত জাতি। সোয়াশ’কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ৩০ কোটি বর্ণ হিন্দু ৩০ কোটি মুসলমান রয়েছে। যদিও ভারতের পরিসংখ্যান বলে ভারত মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটির বেশী নয়। ভারতের জাতীয় সম্পদের এক ভাগের মালিকও মুসলমানেরা নয়। ভারতীয় জীবনে মুসলমানদের উপস্থিতি এক ভাগ ও নেই।
ভারতীয় জীবনে বা শাসনে ধর্মের প্রভাব খুব গভীর। চলমান হিন্দু ধর্ম একটি বর্ণবাদী ধর্ম। এ ধর্মে মানুষ হলো রাজা আর যাজক। এ অবস্থা এক সময় বৃটেন ও ইউরোপেও ছিল। এটা ছিল যাজক আর রাজা বা রাজন্যবর্গের একটা মোর্চা। এ মোর্চার লক্ষ্য ছিল গণমানুষকে শোষণ করা। ভারতে এ শোষণ এখনও খুবই শক্তিশালী ভাবে অব্যাহত আছে। ভারতের বাহ্যিক রূপ হলো তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতা, প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা। এর অন্তর রূপ হলো হিংস্র বর্ণবাদ। এই বর্ণবাদে প্রকাশ্যে মানুষকে দাস বানানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দলই কথা বলেনা। যেমন হিন্দু কমিউনিস্টরা বর্ণবাদে বিশ্বাস করেন ,পুজা করেন, মন্দিরে যান। আবার গণমানুষের কথাও বলেন। এ প্রসংগে আমি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পিতা মুজাফফর আহমদের স্মৃতিকথা পড়ার জন্যে অনুরোধ করবো। ভারতের নেতাদের কাছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানবতা ইত্যাদি শুধুমাত্র বুজরুকি। ধর্মীয় ভাবেই তারা সাম্পদায়িক ও মৌলবাদী। তারা ভারতকে একটা হিন্দু রাস্ট্র মনে করে। এ ব্যাপারে আমি আপনাদেরকে পন্ডিত অম্বেদকারের জীবনী পড়ার অনুরোধ জানাবো। তবে ভারতের মৌলিক ধর্মগ্রন্থ একেশ্বরবাদ ও এক অবতার/ নবী/ রাসুলে বিশ্বাস করে। পরবর্তী কালে রাজা আর সুবিধাভোগী যাজকরা কিতাব গুলোতে নিজেদের সুবিধা মত শ্লোক বা আয়াত সংযোজন করেছে। যা আলকোরআন পুর্ববর্তী কিতাবগুলোতে সংযোজিত হয়েছে। ওইসব অনাচারের কারণেই আল্লাহপাক শেষ নবী ও শেষ কিতাব প্রেরণ করেছেন।
পন্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন তাঁর হিন্দুইজম বইতে বলেছেন, হিন্দুইজম কোন ধর্ম নয়। এটা ভারত বাসীর জীবনধারা ও সংস্কৃতি। এখানে এক কিতাব বা এক নবী/দূত নেই। ফলে পাঁচ হাজার বছর ধরে বহু মুনি ঋষি অবতার নানা গ্রন্থে নানা নিয়ম রেখে গেছেন। প্রাচীন কাব্যগুলোও এখানে ধর্মগ্রন্থ বা অনুকরণীয় পুস্তকে পরিণত হয়েছে। সুপ্রাচীন কালে ভারত কখনও একটি দেশ বা রাজ্য ছিলনা। ভারত প্রধান দুটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। যা এখনও অদৃশ্য ভাবে আছে। উত্তরে আর্যাবর্ত ও দক্ষিণে দাক্ষিণাত্য। উত্তরে ছিল আর্য ধর্ম বা সংস্কৃতি আর দক্ষিণে ছিল দ্রাবিড় ধর্ম বা সংস্কৃতি। যা আজও পুরোপুরি মিশে যেতে পারেনি। তাই হাজার হাজার বছর ধরে এখানে বহু রাজ্য আর বহু ধর্ম চলে আসছে। সব রাজ্যকে এক করে একটি কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে মুসলমান শাসকগণ। হিন্দু বা হিন্দুস্তান নামটিও দিয়েছে বিদেশীরা। আজ যে ভারত/ইন্ডিয়া/ হিন্দুস্তান আমরা দেখছি তা মুসলমানদের তৈরি। জাতপাতের কারণে এদেশের লোকেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।
ভারত বিষয়ে ভারততত্ব নামে প্রথম আকর গ্রন্থ রচনা করেছেন মহাজ্ঞানী আলবিরুণী আরবী ভাষায় ১০৩১ সালে। এখন এই বই পৃথিবীর বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ। বাংলা একাডেমী প্রথম প্রকাশ করেছে ১৯৭৪ সালে। আলবিরুণী বলেছেন শিক্ষিত হিন্দুরা একেশ্বরবাদী। ব্রাহ্মণরা নিজেদের প্রভুত্ব বজায় রাখার জন্যে শাস্ত্রবিধান তৈরি করে জনসাধারনকে বিদ্যা ও ধর্মজ্ঞান লাভে নিষেধাজ্ঞা জারূ করে। ভারতে মুর্তিহীন একেশ্বর বাদ ছিল। কালক্রমে তা বিলীন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক জোট বা মোর্চা গঠন করেছে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যে। এদের কাছে ইসলামের নানা রূপ। ইদানিং শুনি পলিকেল ইসলামের কথা। আরেক গ্রুপ বলেন শরীয়তি ইসলাম, আবার কেউ বলেন মারিফতী ইসলাম। ইসলামের কিছুই জানেন না এমন লোকও ইসলাম নিয়ে কথা বলেন। আসলে এরা জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভারত ও ইসলাম বিরোধীদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

এরশাদ, তুমি কি লক্ষ্য করেছো কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বাংলাদেশে দ্বিমত বা ত্রিমত কেমন শক্তিশালী খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে চলেছে। কেন এমন হচ্ছে ভেবে আমি দু:খ ও বেদনায় কাতর হয়ে যাই। যেমন ধরো, বংগবন্ধু আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দিয়েছিলেন কিনা? ২৫শে মার্চ রাতেই বংগবন্ধু পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছেন। তিনি ধানমন্ডীর ৩২ নাম্বার রোডের বাড়িতেই ছিলেন। হয়ত তাঁর কাছে খবর ছিলো পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করবে। অথবা তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে লিখিত ভাবেই অনেকের মতামত জারী রয়েছে।
আমি এর আগে বহুবার বলেছি বংগবন্ধু আমাদের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাঁকে বার বার বিতর্কের মাঝে ফেলে দিচ্ছে। তাঁরা জিয়া সাহেবকে বংগবন্ধুর প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্ধী করে তুলছে। এটা এখন আওয়ামী লীগের মজ্জাগত হয়ে গেছে। কিন্তু কারা এসব করাচ্ছে? শেখ হাসিনা কি ব্যাপারটা বুঝতে পারে? না, আমার মনে হয়না। জিয়া সাহেব ৪শ’টাকার মেজর ছিলেন। সবাইকে সেল্যুট দিতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন পাকিস্তান দালাল হিসাবে। এসব আজেবাজে কথা আওয়ামী লীগ নেতারা কেন বলেন, কে তাদের দিয়ে এসব কথা বলায়? বললে কি লাভ হয়?
ফলে ভিন্নমতের লোকেরা বলছে বংগবন্ধু কখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেকোন ভাবেই হোক পাকিস্তান টিকে থাকুক। তিনি কনফেডারেশন চেয়েছিলেন। তিনি যে অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন তার ভুরি ভুরি প্রমান এখন চারিদিক থেকে আসতে শুরু করেছে। দেশে ফিরে ১০ই জানিয়ারী যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে একটা ইংগিত রয়েছে যে , এখন আর কিছু করার সুযোগ নেই। ভুট্টো সাহেব আপনারা সুখে থাকুন। পাকিস্তান থেকে লন্ডনে পৌঁছে তিনি কি বলেছিলেন তা সিরাজুর রহমানের লেখায় বার বার প্রকাশিত হয়েছে। বংগবন্ধু জীবিত থাকতে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি, কোন ধরণের বিতর্কও তৈরি করেননি। তাঁর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ এই বিতর্ক তুলেছে একেবারেই মিথ্যার উপর ভর করে।
বুঝলে আশি, এর আগে আমি বহুবার লিখেছি, বংগবন্ধুর ঘোষণা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তিনিতো ৭০/৭১ এ এদেশের একমাত্র নেতা। তাঁর কথায় সব চলতো। কারণ তখন তিনিই একমাত্র জন প্রতিনিধি। নেতৃত্ব দেয়ার একমাত্র বৈধ ব্যক্তিত্ব। সে নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।কোন ধরণের ষড়যন্ত্র না হলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। সেজন্যে তিনি এবং তাঁর দলের নেতারা ২৪শে মার্চ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কি আলোচলা করেছেন তা কিন্তু আওয়ামী নেতারা আজও প্রকাশ করেন নি। শেষ পর্যন্ত কি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল? এসব কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনও জানেনা। অনেকেই বলেন, বংগবন্ধু কনফেডারেশন করতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কোন কথাই শুনতে রাজী নয়। বংগবন্ধু জীবিত নেই তাই তারা তাঁর নামে যা ইচ্ছে তাই চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চলমান আওয়ামী নেতৃত্বের ব্যক্তিত্ব না থাকার ফলে তাঁরা সবকিছুতেই দিল্লী নির্ভর হয়ে থাকেন। তাঁরা মনে করেন এবং বিশ্বাসও করেন যে ভারত বিশেষ করে কংগ্রেসের অন্ধ সমর্থন না থাকলে ক্ষমতায় আসা যাবেনা বা থাকা যাবেনা। হয়ত দিল্লীর কোন শক্তি তাঁদের ভয় দেখায় বা ব্ল্যাকমেইল করে। দিল্লীর সাথে থেকে বা অনুগত হয়েও নেপালের রাজ পরিবার বাঁচতে পারেনি।সিকিম তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেনি। লেনদুপ দর্জি আজ একজন বেঈমান হিসাবে চিহ্নিত। শ্রীলংকা বহু বছর ভারতের সাথে সমঝোতা করে চলতে চেয়েছিল। পারেনি, শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকাকে কোমর শক্ত করে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয়েছে। মালদ্বীপকে ভারত সব সময় নানা রকম ভীতির ভিতর রেখেছে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তান আমল থেকে অশান্ত করে রেখেছে ভারত। এই হলো আমাদের প্রতিবেশী ভারতের চেহারা। তেমনি একটি দেশের সাথে চলমান সরকার গাঁটছড়া বেঁধেছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্যে।
তুমি কি শুনেছো আশি, তাজউদ্দিন সাহেবের আমেরিকার বাসিন্দা বড়মেয়ে শারমিন আহমদ তাজউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন যাতে অনেক না জানা ও অজানা কথা প্রকাশ করেছেন। এই বইতেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। বরং ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাবকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বংগবন্ধু বলেছেন, এই ঘোষণা তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগকে শক্তিশালী করবে। ওই বইতেই বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিব বাহিনীর লোকেরা তাজউদ্দিন সাহেবকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শেখ মণির নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠণের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। ওটা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী র’র একটি কৌশল। এর আগে দৈনিক প্রথম আলোর বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা থেকে প্রকাশিত বইতেও বলা হয়েছে বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এ বিষয়ে শারমিন আহমদের ভাষণের একটি ভিডিও এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
যেভাবেই হোক বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন দেশ। এটাই বাস্তব এবং সত্য। ৪৩ বছর পরেও ঘোষণা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের স্বাধীনতাকেই বিতর্কিত করে তুলেছে। তবে স্বাধীনতার পর তাজউদ্দিন সাহেবের এমন অবস্থা হলো কেন? কেন বংগবন্ধুর সাথে তাঁর দূরত্ব তৈরি হলো? যে মানুষটির নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হলো সে মানুষটি কি কারণে বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কাছে অপাংতেয় হয়ে গেলো। এ ব্যাপারে অবশ্য শারমিন আহমদের নিজস্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আছে। সে সব ব্যাখ্যা তিনি তাঁর বইতে দিয়েছেন। এর আগে তাজউদ্দিন সাহেবের ছেলে সোহেল তাজকে নিয়ে সরকার অনেক নাটক করেছেন। সোহেলের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সরকার বহু লুকোচুরি করেছে। শেষ পর্যন্ত সোহেল জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। তাজউদ্দিন সাহেব একজন মেধাবী ছাত্র ও বিদ্বান মানুষ ছিলেন। তাঁরই বুদ্ধি পরামর্শকে বংগবন্ধু খুবই গুরুত্ব দিতেন। বড়ই বেদনার বিষয় এমন মানুষটি বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারলেন না। শারমিন আহমদ অতি বেদনা ও ক্ষোভ থেকেই বইটি রচনা করেছেন। তাঁর পিতা একজন রাজনীতিক ছিলেন। ফলে রাজনীতির অন্দর মহলের অনেক কথা এসেছে। অনেক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ও এসেছে। যে মানুষটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সে মানুষটা এখন পর্দার অন্তরালে। শারমিন বলেছে, বংগবন্ধু কখনই নয় মাসের কথা বা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে চাননি। এতে তাজউদ্দিন সাহেব অবাক হয়েছে। হয়ত বংগবন্ধু শেখ মনির কাছ থেকে সব জানতে পেরেছিলেন।
তবে গবেষকরা বলেন, কেউ চাক বা না চাল ভারত একদিন পাকিস্তানকে ভাংতোই। ৪৭ সালেই ভারতের নেতারা পরিকল্পনা নিয়েছেন পাকিস্তান ভাংগার । ভারতের নেতারা এখনও পাকিস্তানের অস্তিত্ব স্বীকার করেনা। মোক্ষম সময় ছিল ১৯৭১ সাল। শেখ সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এমন কি তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরও পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কি হবে তা বলে যাননি। তাজউদ্দিন সাহেব অনুরোধ করেছিলেন ঘোষণা দিতে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে তাঁর অনুপস্থিতিতে যিনি দলকে বা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
বংগবন্ধু পরবর্তী আওয়ামী লীগ একটি মিথ্যা ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করছে। আমার এক গবেষক বন্ধু বললেন,বাংলাদেশ এখন যারা চালাচ্ছেন তাদের আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, দেখতে পাচ্ছেন তাদের ছায়া। ছায়ারতো কোন স্বাধীনতা থাকে না। কায়া যা চাইবে তাই হবে। অখন্ড বংগদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ ভাগ। মুসলমান ছিল ৫৫ ভাগ। বাকি ১৫ ভাগ ছিল বৌদ্ধ, খৃষ্টান, শিখ ও হরিজন। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ ছিল মুসলমান। এখন ৯০ ভাগ মুসলমান। শিক্ষিত হিন্দুদের বেশীর ভাগ দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে গেছেন। মুসলমানেরা অখন্ড বংগদেশ চেয়েছিল, কিন্তু হিন্দু নেতারা রাজী হননি ধর্মীয় কারণে। অখন্ড বংগদেশে মুসলমানরা ছিলো মেজরিটি। পর পর তিনজন প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন মুসলমান। দিল্লী বা কোলকাতার বাবুরা মুসলমান শাসিত অখন্ড বাংলাদেশ চাননি। ফলে ভারত বিভক্তির সাথে বংগদেশও ভাগ হয়ে গেল। ঢাকায় বসে যারা দিল্লীর পদ্মভূষণ গ্রহন করছেন তাঁরাও ৪৭ সালে দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে এখানে সম্মানিত হয়েছেন, নিজেদের প্রাণ রক্ষা করেছেন। এরাই বলে থাকেন ৪৭ সালের দেশ বিভাগ ভুল ছিল। কেন তাঁরা এ তত্ত্ব পেশ করছেন তা তাঁরা ভাল জানেন। ৪৭এর পর থেকে দিল্লী সরকারের নীতির কোন পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি জানিনা। মুসলমানদের প্রতি তাদের মনোভাবের কোন পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। বেনিয়া বৃটিশদের আগমনের আগে শত শত বছর ধরে ভারতে হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি অবস্থান করেছে। কোথাও সমস্যা হয়নি। বৃটিশ আমলেই সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পায়। এখনও ভারতে প্রতি বছর কয়েকশ’ দাংগা হয়। এ ব্যাপারে শৈলেশ বানার্জির দাংগার ইতিহাস বইটি পড়ার জন্যে অনুরোধ জানাবো। যদিও লেখক নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে কিছুটা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট ছিলেন। তবুও বইটাতে অনেক তথ্য আছে। হিন্দু মুসলমান ছাড়াও দাংগা হয়। তথাকথিত ভারত সেক্যুলার ভারত দাংগা কখনই বন্ধ করতে পারেনি। ৪৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোন দাংগা হয়নি। যা হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে। প্রায়ই দেখবেন, হিন্দু মন্দির বা বৌদ্ধদের টেম্পল আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু ফেসবুকের গুজব নিয়েও নাকি হিন্দু বা বৌদ্ধদের আক্রমণ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই অসাম্প্রদায়িক। মুসলমানদের ভিতর অচ্যুত বিষয়টি নেই। বংগবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লেই বুঝতে পারবেন তাঁর বাল্যকালে গোপালগঞ্জের হিন্দুরা কেন সাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনিতো প্রথমবার জেলে গিয়েছেন হিন্দু বন্ধুর গায়ে হাত তুলে।
৪৯ সালেের জুন মাসে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারী মুসলীম লীগের গণবিরোধী ভুমিকার কারণে। ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগ পরাজিত হলে পরবর্তী পর্যায়ে মুসলীম শব্দ বাদ দিলে কংগ্রেস ও বামপন্থী বেশ কিছু নেতা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে। ৭০ সাল পর্যন্ত আমরা এ দলটিকে আমেরিকার দালাল বলতাম। সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দলটি আমেরিকার সাম্রাজ্য নীতি সমর্থন করতে থাকে। সেটা ৭০ সাল নাগাদ জারী থাকে। ৭২ সালে হঠাত্‍ করে আওয়ামী লীগ মস্কোর দিকে ঝুকে পড়ে। কালক্রমে আওয়ামী লীগ একটি পুরো ভারতপন্থী দল হয়ে ভারতীয় কংগ্রেসের ছায়াতে পরিণত হয়।
৭৫ সালে বংবন্ধুর পতনের পর থেকেই দলটি দিল্লীর খপ্পরে পড়ে গেছে। বিশেষ করে ৭৫ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত হাসিনা ওয়াজেদ দিল্লীতে অবস্থান করে মহাভারতের আদর্শে দীক্ষা লাভ করেছেন বলে অনেকেই অনুমান করেন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের মিলিটারী সমর্থিত ফখরুদ্দিনের সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের উপস্থিতি প্রকাশ্য হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন প্রমান করেছে ভারত এখন বাংলাদেশের টুটি চেপে ধরেছে। ২০০৭ সালে কাঁধে দাঁত বসিয়েছিল, এখন গলায় । যেমন করে বাঘ বা সিংহ হরিণকে কাবু করে।
শারমিন আহমদের পুরো বইটাই একটা অভিযোগের বই। এতে আক্রমণের প্রধান শিকার বংগবন্ধু। বইতে বলা হয়েছে বংবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কখনই আগ্রহ দেখাননি।
আশি, যে বিষয় নিয়ে তুমি কথা শুরু করেছিলে তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও নেতাদেরকে কে বা কারা অবিরাম ভাবে বিতর্কিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগের চাটুকাররা হাসিনাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। দেশবাসী জানে হাসিনার ক্ষমতা একজন সম্রাটের ক্ষমতা। তিনিই সংবিধান, তিনিই সংসদ, তিনি একাই ১৬ কোটি মানুষ। এ ক্ষমতা তাঁকে দিয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান। বাকশালের মাধ্যমে বংগবন্ধুকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল তা পরবর্তীকালে সকল প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতিরা ব্যবহার করে চলেছেন। এদেশে গণতন্ত্র আর সংসদ মানে একজন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান। একটি গণতান্ত্রিক জবাবদিহি মূলক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে সংবিধানের সংশোধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঐক্যমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্যে অবিলম্বেই একটি জাতীয় কনভেনশন আহবান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সংসদে এক সিট বা আসন বেশী পেলে সেই দলের নেতাই রাজা এ ব্যবস্থাকে রহিত করতে হবে। জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকলেই মৌলিক বিষয়ে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রহিত করতে হবে।
২০০৮ সালে একটি অবৈধ সরকার একটি ফালতু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে। মইনউদ্দিন আর ফখরুদ্দিনের সরকার ছিল একটি অবৈধ সরকার এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। কেন তারা ক্ষমতা দখল করেছিল তা এখন দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার। সেই ধারা এখনও অব্যহত আছে। একটি বিষয় আমি বারবার বহুবার বলেছি যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ইসলাম। কারণ, এদেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলমান। এই ৯০ ভাগের কথামতোই দেশ চলবে। ৯০ ভাগের আশা আকাংখাই প্রতিফলিত হবে দেশের রাজনীতি ,সংস্কৃতি ও দর্শনে। কিন্তু তা হচ্ছেনা। আগেই বলেছি, সংসদে একটি বেশী পেলেই চলমান ব্যবস্থা অনুযায়ী ৫১ই ১০০। ৪৯এর দাম শূণ্য। এটাই হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নমুনা।
চলমান সরকার সকল দিক থেকেই মাইনরিটি মানসিকতার সরকার। তাদের আদর্শ হচ্ছে ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার শ্লোগান দিয়ে দেশের মেজরিটি মানুষকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা রাখা। ভারত সেক্যুলারিজমের নামাবলী পরে মুসলমান ও হরিজনদের শোষণ করে ,অত্যাচার করে। বাংলাদেশের সরকারও একই নীতি অবলম্বন করে চলেছে। তবে বাংলাদেশে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের শোষণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। ধর্মের কথা বললেই মৌলবাদী বলা হচ্ছে।
মিশরে আলসিসি ক্ষমতা দখল করেছে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে। জন্মগত ভাবে সে একজন ইহুদী। ইহুদী মায়ের সন্তান। তাকে সমর্থন করছে সৌদী বাদশাহ, আমেরিকা ও পশ্চিমা জগত। বাদশাহ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন গণতন্ত্রের ভয়ে, পশ্চিমারা সমর্থন দিচ্ছে ইসলামের ভয়ে। আর সিসি মোবারক ও জেনারেল এরশাদের মতো জোর করে গণতন্ত্র চালু করবে। শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতায় বসিয়েছে জেনারেল মইন ও ভারত। ভারতের লক্ষ্য তাবেদার সরকারকে ক্ষমতায় রাখা আর জেনারেল মইনকে ব্যবহার করেছে ভারতের গোয়েন্দারা।
আমাদের ইতিহাস, বায়াদলিল পাল্টে যাবে যদি ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী শক্তি বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে।
লেখক: কবি ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »

সকালবেলা ৮৪


সকালবেলা ৮৪

‘মান আরাফা নাফসা ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা’। তুমি যদি নিজেকে চিনতে পারো তাহলেই তুমি তোমার খোদাকে চিনতে পারবে। নো দাইসেল্ফ(সক্রেটিস)। সবাই নিজেকে জানার চেষ্ট করুন। কি রহস্য লুকিয়ে আছে এই আমিতে। আমিটা কে? আপনার সুরত বা দেহটা কি আমি? দেহ ত্যাগ করে যে চলে যায় সে কে? আর আপনিই বা কে?
মাটির দেহতো মাটিতে রেখেই চলে যেতে হবে। দেহ হচ্ছে জগতের রূপ। আদম বা প্রথম মানব তৈরির পর মানবের স্রষ্টা মান দেহে অবস্থান গ্রহন করেন। তারপরেই মাটির পুতুলটা জীবন পায় ও মানবে রূপান্তরিত হয়। আলকোরাণে আল্লাহপাক নিজেই বলেন, আমি উহাতে রূহ ফুকিয়া দিলাম। মানে রেসপিরেটরী সিষ্টেম চালু করা। তিনি বলেন আমি বান্দার ক্বালবে অবস্থান করি।
আল্লাহতায়ালা নবীজীকে বলেন, মানুষ আপনাকে প্রশ্ন করবে রূহ কি? আপনি বলুন, ইহা আমার প্রভুর নির্দেশ।
প্রতিটি মানবের দেহে আল্লাহপাকের নির্দেশ জারী রয়েছে। সে নির্দেশ যখন প্রত্যাহার করা হয় তখন মাটির দেহ বা পুতুলের কোন দাম বা কার্যকারিতা থাকেনা। রূহ যেখান থেকে এসেছিল সেখানেই ফিরে যায়। তাহলে বলুন আপনি কে? দেহ আপনার নয়, রূহ ও আপনার নয়। তাহলে আপনি কোনটি? বলুন আপনার উত্তর কি? জানি আপনার কোন উত্তর নেই। কারণ আপনি নিজেকে এখনও চিনতে পারেন নি। তাহলে কখন চিনবেন?
সময়ের মালিকওতো আপনি নন। যে ক’দিন আল্লাহপাকের নির্দেশ জারি আছে সে ক’দিনই আপনার সময়। নির্দেশ প্রত্যাহৃত হলে সময় ফুরিয়ে যায়। অতি আপনজনও মাটির দেহটাকে কাছে রাখবেনা। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় সন্তান সন্ততি প্রিয়তমা দেহটাকে মাটির নীচে চাপা দিয়ে আসবে। যে মাটির উপরে আপনি দম্ভ ভরে পদ চারণা করেছেন। ভেবেছিলেন আপনি এ মাটির উপরে সর্বে সর্বা। আপনার হুকুমে সবকিছু চলে। ফেরাউনের মতো আপনি হুকুম করলেই মানুষের মৃত্যু হয়। আপনি মায়ের গর্ভ ধারণকে বন্ধ করতে পারেন। আপনি ফাঁসির আসামীকে মাফ করে দিতে পারেন। জগত বা বাংলাদেশ নামক ভুগোলটি আপনার হুকুমে উঠে আর বসে ।
জানি, আপনি মারা গেলে জাতীয় পতাকা মোড়ানো হবে, বাহিনী গুলো মূল্যহীন দেহটাকে স্যেলুট দিবে। খবরের কাগজে বড় বড় করে ছাপা হবে। বিদেশী নেতারা বাণী পাঠাবে। কিন্তু এর পরে কি? যতদিন ক্ষমতায় আপনার সিলসিলা থাকবে ততদিন কবরে ফুল পড়বে। কবর পাকা করে তাজমহল বানাতে পারবেন। কবর ছাড়াও শুধু ছবিকে স্যেলুট দিতে বাহিনীদের বাধ্য করতে পারবেন। আপনি কি জানেন না ওই কবরে বা মাটির নীচে কিছু নেই। এমন হাড়গোড়ও নেই। তাহলে কাকে স্যেলুট মারছেন বা সম্মান জানাচ্ছেন
হে মানুষ, কখনই কি ইচ্ছা হয়না জানার জন্যে আসলেই আপনি কে? তাহলে এখনি শুরু করুন জানার জন্যে আপনি কে?

Read Full Post »

সকালবেলা ৮৩


সকালবেলা ৮৩

জগতের বয়স কত? সৃষ্টির বয়স কত? এ হিসাব সুস্পষ্ট করে এখনও মানব জাতি জানেনা। তবে জানার নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত আছে। মানুষের মনে অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক প্রশ্ন। জানার আগ্রহ থেকেই মানুষ প্রশ্ন করে। এ ভাবেই মানুষ অজানাকে জানার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জানার শেষ নেই তাই প্রশ্নেরও শেষ নেই। একদল মানুষ বস্তুর বা সৃষ্টির রহস্য আবিষ্কার করছে, আরেকদল কোদ স্রষ্টার রহস্যকে উন্মোচিত করার কাজে নিয়োজিত।
ধর্মের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই স্রষ্টা তার জীবন বিধি প্রেরণ করেছেন নবী রাসুল, অবতার ভগবান ঈশ্বর গডের মাধ্যমে। জগতের সকল ধর্মের একই বাণী , সত্যের পথে চলো। সত্য জীবন যাপন করো। ঋষি দরবেশরাও সত্য পথ দেখাবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
অপরদিকে কিছু মানুষ সৃষ্টি বা বস্তুর রহস্য ভেদ করার জন্যে জীবন দান করে যাচ্ছেন।
ধর্ম মুলত: জ্ঞান সাধনার বিষয়। শুধু জ্ঞানীরাই ধর্ম বুঝতে পারে। শুধু জ্ঞানীরাই মানুষকে পথ দেখাতে পারে। বৈজ্ঞানিকের কাজ সৃষ্টি নিয়ে আর সত্যপথের জ্ঞানীরা মানুষকে পথ দেখায়। বিজ্ঞান বা বস্তু পরিবর্তনশীল। কিন্তু সত্য অপরিবর্তনীয়। সত্য এক। অনেকেই বলেন নিরেট সত্য বলে কিছু নেই। স্থান কাল পাত্র ভেদে সত্য নাকি রূপ বদলায়। এই শ্রেণীর মানুষ হচ্ছে কু তার্কিক। জগতে অনেকই অনেক পথ বা দর্শনের কথা বলেছেন। কিন্তু সত্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যা দেখছি তা দৃশ্যমান বাস্তব, কিন্তু সত্য নয়। আমরা সবুজ গাছ দেখছি, এক সময় আর সবুজ থাকেনা, পাতা ঝরে যায় , নতুন পাতা গজায়। অথবা গাছটা মরে যায় বা বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু গাছের পিছনে কি? কেমন করে এ গাছ জন্মাচ্ছে, বড় হচ্ছে, ফল দিচ্ছে, মানুষের কল্যাণ করছে।
একই ভাবে মানুষও আসছে আবার সীমাবদ্ধ সময়ের পরে চলে যাচ্ছে। তাহলে পিছনের রহস্যটা কি? এ প্রশ্ন বৈজ্ঞানিকের আছে, অদৃশ্য রহস্যের ধ্যানী, জ্ঞানী, ঋষি ,অলি আল্লাহদেরও আছে। এ ধারা চলে আসছে, চলছে ও চলবে। মরমীবাদ বা আধ্যাত্ববাদও এক ধরণের জ্ঞান অন্বেষণ। সুফী সাধক, ঋষি, দরবেশ, অলি আল্লাহরা খোদাকে খুঁজে চলেছেন। তেমনি মরমী কবি রুমী ,মনসুর হাল্লাজ, হাফিজ, শেখ সা’দী, খৈয়াম, গালিব আল্লাহ প্রেমে মশগুল হয়েই কাব্য রচনা করে জগতে অমর হয়ে আছেন। কিন্তু বিজ্ঞান সে অবস্থায় নেই। প্রতি নিয়ত এর পরিবর্তন হচ্ছে। প্রকৃতির অজানা ও অদৃশ্য রহস্য জানার জন্যে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা কেউই এক জায়গায় স্থির নেই।
সক্রেটিস বলেছিলেন, নো দাইসেল্ফ। মানে নিজেকে জানতে হবে। কেনো উপনিষদেও বলা হয়েছে নিজেকে জানো। প্রশ্ন করো, তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো? কোথায় ফিরে যাবে? কেনই আসা আর কেনইবা ফিরে যাওয়া। অলি আল্লাহদেরও একই প্রশ্ন।
আল্লাহ রাসুল মোহাম্মদ (সা) বলেছেন, মান আরাফা নাফসা ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা। মানে নিজেকে জানতে বা চিনতে পারলেই াপন রবকে জানা বা চিনা যাবে। আমরা ক’জন নিজেকে চিনতে পেরেছি? নিজেকে জানার বা চেনার চেষ্টা কি কখনও করেছি। না করিনি। জানতে পারলে আমরা পূর্ণাংগ মানবে পরণত হতে পারতাম। এখন আমরা শুধুমাত্র সুরতী মানুষ। মানে দেখতে মানুষের মতো, আসলে মানুষ নই। হে খোদা , আমাকে মানুষ হওয়ার যোগ্যতা দান করো। তোমাকে চেনার ক্ষমতা দাও। জগতের জঞ্জাল থেকে আমাকে উদ্ধার করো।

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি ৫ / এরশাদ মজুমদার

আশির সাথে দেখা হতেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’র অপারেশন প্রসংগে কথা তুললো। আমি বললাম, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? ঢাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম, নিরাপত্তা অফিসার ও কর্মীদের উপস্থিতি, বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দাদের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দাদের যৌথ কর্মসূচী সম্পর্কে বহুদিন থেকে গুজব চালু আছে। বিভিন্ন দেশই গোয়েন্দা কার্যক্রম চালু রাখে লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশে সরাসরি উপস্থিত আছে অনেকদিন থেকে এবং গুজব হিসাবে এ খবর সবাই জানে। তুমি কি এ প্রথম শুনলে বা জানলে?
গুজবের কথা আমিও অনেকদিন ধরে শুনে আসছি। কিন্তু এবার দেখলাম, আমাদের বিমানবন্দরে র’র লোকেরা সরাসরি কাজ করছে। খবরটা প্রথমে প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় কাগজে। সেদিক থেকে বিচার করলে বলতে হবে ভারতীয় কাগজের স্বাধীনতা আমাদের চেয়ে বেশী। মুক্ত চিন্তার প্রতিনিধি কবি ফরহাদ মজহার বলেছেন, রিজওয়ানার স্বামী আবু বকর সিদ্দিককের গুমের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ জড়িত থাকতে পারে। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন র’র লোকেরা কাজ করছে এটা সরকার মানে প্রধানমন্ত্রী জানেন বলে সবাই অনুমান করেন। বিমান বন্দরে জংগী সন্দেহে একজন লোককে যে ভাবে তুলে নিয়ে চলে গেলো তা বাংলাদেশ সরকার টেরও পায়নি। টের পেলেও কিছু বলার বা করার শক্তি হয়ত সরকারের নেই।বাম মোর্চার নেতারা বলছেন, ভারতের সাথে বন্ধুত্ব মানে নতজানু বিদেশ নীতি নয়। তবে বাম মোর্চার নেতাদের কথায় দেশের মানুষ তেমন গুরুত্ব দেয়না। এরা এক ধরণের এনজিও। এদের আদর্শের মূল সুর হলো সকল অবস্থায় ভারত ও রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়া। তারা এ কাজটি শুরু করেছেন ১৯৭২ সাল থেকে। বংগবন্ধু এদের সাইনবোর্ড নামিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরা কি এক অদৃশ্য কারণে সকল অপমান সহ্য করেও আওয়ামী লীগের সাথেই থাকে। হিন্দুরা যেমন পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছে, এখন বাংলাদেশেরও বিরোধিতা করে। কারণ, হিন্দুরা মনো জগতে ভারতকেই হিন্দুদের দেশ মনে করে। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সবচেয়ে বেশী অবিচার করে চলেছে আওয়ামী লীগ। তবুও তারা আওয়ামী লীগের সাথেই থাকে। কারণ আওয়ামী লীগ ভারতের বন্ধু, তাই বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করে। বাংলাদেশ হওয়ার পর এদেশে হিন্দুদের সুযোগ সুবিধা শত গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে থাকলে তারা কখনই এ সুবিধা পেতোনা।
আমার লেখা পড়ে অনেকেই আমাকে সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করতে পারেন। বাংলাদেশে মুসলমানের বিরুদ্ধে বললে আপনি প্রগতিশীল আর হিন্দুদের সম্পর্কে সত্য কথা বললে আপনি সাম্প্রদায়িক। এ চিন্তার ধারা এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোকের ভিতর অনেক দিন ধরে চলে আসছে। আমাদের সমাজে অনেক মন্দলোককে দরবেশী ইমেজ নিয়ে জীবন যাপন করতে দেখেছি। আমি কিছু বললেই বন্ধুরা বলে, তিনি একজন সম্মানিত প্রভাবশালী মানুষ। তার বিরুদ্ধে কথা বলে তুমি নিজের ক্ষতি করছো।
বংগবন্ধু আত্মজীবনীতে তিনি খুবই স্পষ্ট করে বলেছেন,তাঁর শহরে হিন্দুদের প্রভাব ছিল বেশী। তিনি জীবনে প্রথম জেলে গিয়েছেন এক হিন্দু বন্ধুর সাথে মারা মারি করে জেলে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেই লিখেছেন, তাঁর দল ছিল। কেউ কিছু বললেই দলবেঁধে হামলা করতেন। আসলে তিনি তাঁর মনো জগতে প্রতিবাদী ছিলেন। হিন্দুদের সম্পর্কে তিনি অনেক কথাই লিখে গেছেন তাঁর অসামাপ্ত আত্মজীবনীতে। পাঠক হিসাবে আপনিই বলুন তাঁকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? আপনি বলবেন কি তিনি একজন সাম্প্রদায়িক ছিলেন। শুধু তাঁর স্মৃতিকথায় নয়, বহু জ্ঞানী গুণীর বইতে আছে বাংলার মুসলমানদের উপর ইংরেজ ও হিন্দুরা যৌথভাবে কি অত্যাচার করেছে। আমাদের কবিগুরু ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর জমিদারীর প্রজাদের বেশীর ভাগই ছিলেন মুসলমান। জমিদারী রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁকে প্রজাদের উপর অনেক অত্যাচার করতে হয়েছে। কবিতার কারণে সেই কবিগুরুকে আমাদের কিছু তথাকথিত শিক্ষিত লোক দেবতা ও ঋষিতে পরিণত করেছে। একই ভাবে আমাদের কিছু লোক বংগবন্ধুকে দেবতায় পরিণত করার কাজে লিপ্ত। ছবি,প্রতিকৃতি বা মুর্তিতে ফুল দেয়া মুসলমানের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি বিরোধী। তাহলে কিভাবে এ সংস্কৃতি কিভাবে চেতনায় প্রবেশ করলো। যেমন,পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালন বা বাংগালী সংস্কৃতির নামে যা আমাদের জীবনে ঢুকে পড়েছে তা কখনই বাংগালী মুসলমানের নয়। চারুকলার ছাত্ররা কার উসকানীতে এসব করছে তা তলিয়ে দেখার সময় এসে গেছে। আমার বিশ্বাস তারা না জেনে আবেগের বশবর্তী হয়ে এসব করছে। যে পশু পাখি নিয়ে মিছিল বা মংগল শোভা্যাত্রা করা হয় তা নিয়ে ছাত্ররা কি কখনও ভেবেছে? যেমন, পেঁচা মংগলের প্রতীক ও লক্ষ্মীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস সরস্বতীর বাহন, সিংহ দুর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ুর কার্তিকের বাহন। পহেলা বৈশাখতো বাংলাদেশে শত বছর ধরে পালিত হচ্ছে। মূলত: এই নববর্ষ নতুন ব্যবসার প্রতীক। পুরাণো বছরের হিসাব নিকাশ মিটিয়ে নতুন বছরের হিসাব খোলা। একে বলা হয় হালখাতা। হিন্দু মুসলমান সবাই এই হালখাতা খোলে। গ্রাম বাংলায় এখনও পহেলা বৈশাখকেই একাউন্টিং ইয়ার হিসাবে ধরা হয়। যারা পহেলা বৈশাখ নিয়ে ভন্ডামী করে কৈ তারাতো পহেলা বৈশাখ থেকে জাতীয় বাজেট তৈরির জন্যে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেনা। আমাদের জাতীয় ক্যালেন্ডার এখনও ইংরেজী। আমাদের সরকারী ছুটির হিসাব করা হয় ইংরেজী ক্যালেন্ডার মোতাবেক। আদালতের রায় তৈরি হয় ইংরেজীতে। বাংলা সনতো আমাদের জীবনে চালুই হয়নি। তাহলে পশু পাখির মিছিল কি জন্যে, কি উদ্দেশ্যে? কোন এক অদৃশ্য শক্তি নিজেদের হীন স্বার্থ আদায়ের জন্যে আমাদের তরুণ সমাজকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। সবাই মুন্সীর ‘ইন্ডিয়া ডক্ট্রিন’ বইটি পড়ুন। তাহলেই বুঝবেন অদৃশ্য শক্তি কি চায়? কি তাদের লক্ষ্য। আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি ভারতই বংগবন্ধুকে জগত থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কারণ তিনি জীবিত থাকলে ভারত তার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে পারবেনা। এখন ভারতই বংগবন্ধুকে দেবতা বানাবার কাজ শুরু করেছে। বংগবন্ধুর ওআইসি সম্মেলনে যাওয়াটা ভারত মেনে নিতে পারেনি। বংগবন্ধু যে একজন সাধারন মানুষ তা আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে বা ভুলতে বসেছে। শুধু মাত্র অদম্য সাহসের কারণে তিন রাজনীতি উচ্চ শিখরে আরোহন করেছেন। চলমান সময়ের বাংগালী মুসলমানেরা এমন একজন সাহসী নেতাই চেয়েছিল। ব্যক্তিগত ভাবে বংগবন্ধুর সাথে আমার বহু স্মৃতি আছে। আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি। অপরদিকে কিছুলোক সুপরিকল্পিত ভাবে দিনরাত জিয়াউর রহমানের বিরোধিতা করতে গিয়ে বংগবন্ধুকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এই প্রক্রিয়ায় অদৃশ্য শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই দুই নেতাকে হেয় ও বিতর্কিত করে তুলেছে। একবার ভেবে দেখুন এই দুই নেতা বিতর্কিত হলে কার লাভ?
ক’দিন আগে শ্রীলংকা গার্ডিয়ানে গান্ধীজীর যৌন জীবন নিয়ে একটি আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে। ১৮/২০ বছরের মেয়েরা বাপুজীর সাথে একই চাদরের নীচে উলংগ শুয়ে থাকতো। বাপুজী নাকি এভাবেই তাঁর যৌন ক্ষমতা বা আগ্রহকে পরিক্ষা করতেন। এর বহু রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। তবে সাধারন মানুষ এটাকে সমর্থন করেনা। তবুও গান্ধীজী ভারতের বাপুজী বা পিতা। প্রশ্ন হলো বিখ্যাত লোকদের দোষ বা অপরাধ থাকতে পারে কিনা? মানুষ মাত্রই দোষ থাকতে পারে। কিন্তু চাটুকারেরা বা স্বার্থন্বেষীরাই মানুষ দেবতার আসনে বসাতে চায় বা দেবতা বানিয়ে ফেলে। গান্ধীজীর সম্পর্কে আমার নিজেরও কিছু অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭৩ সালে আমি সাংবাদিকতার একটি ট্রেনিং কোর্সে রাজস্থান ইউনিভার্সিটির গেস্ট হাউজে প্রায় দেড় মাস ছিলাম। ছুটির দিনে আমরা রিকসা করে জয়পুর শহরে যেতাম। একদিন একটি রিকশা নিয়ে জয়পুরের দিকে রওয়ানা দিয়েছি। গেস্ট হাউজের সামনেই ছিল একটা মোড়। ওই মোড়ের বিরাট আইল্যান্ডের উপর ছিল গান্ধীজীর বিরাট এক মুর্তি। রিকশাওয়ালা মোড় ঘুরে কয়েক গজ সামনে গিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো,‘ ছাআলা জিন্দেগী ভর ধুপ মে খাড়া রহেগী’। আমি জানতে চাইলাম, কি হলো ভাই? নেহি চাব, আপকো কুছ নেহি বোলা। ইয়ে ছালা লেংগুটি ওয়ালাকো বোলা। বেটা ধোকে বাজ। কিন্তু বুঝতে পারলাম না ভারতের বাপুজী কেন ধোকাবাজ। আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো আহমেদাবাদ শহরে। শ্রাবস্তী নদীর ওপারে গান্ধী আশ্রম। নদীটি এখন শুকিয়ে গেছে। বর্ষাকালে পানি থাকে। শীতে একেবারেই শুকিয়ে যায়। সকালবেলা জামালা খুলে নারী পুরুষ সবাই দলবেঁধে প্রাতকালীন প্রাকৃতিক কাজ সমাধা করছে। হাতে কাজ না থাকায় ভাবলাম গান্ধী আশ্রমটা দেখে আসি। একটা রিকশা নিয়ে গেলাম নদীর ওপারে। আশ্রমের নামতেই রিকশাওয়ালা জানতে চাইলো কতক্ষণ সময় লাগতে পারে। আমি বললাম দশ পনেরো মিনিট। বললো সে অপেক্ষা করবে। আমি ভিতরে গিয়ে দেখলাম, গান্ধীজীর ব্যবহার্য জিনিষপত্র কলম, কাগজ, পোষাক, খাট, বিছানা, বসার চেয়ার সহ আরও অনেক জিনিষ। একটা চরকা, কিছু তুলা ও সুতা আছে এদিক ওদিক দেখে পনেরো বিশ মিনিটে বেরিয়ে এলাম। রিকশাওয়ালা অবাক হয়ে গেলো। কেয়া চাব এতনা জলদি? জানতে চাইলো, আমি কি দেখেছি? আমি বর্ণনা দিলাম। আবার জানতে চাইলো, অওর কুছ নেহী দেখা? কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম সাদা কাপড় পরা কিছু মেয়ে দেখলাম। ওরা ওখানকার সেবায়েত। গান্ধী আশ্রমের কর্মচারী। এরা সবাই বিধবা।
চাব, শামকো বাবুলোগ এধার আতা হ্যায়, মৌজ করতা হ্যায়।
আমাদের বংগবন্ধুও তেমনি একজন নেতা। দোষে গুণে মানুষ। মানুষের কিছু দোষ থাকে যা একেবারেই ব্যক্তিগত। জনগণের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকেনা। জননেতাদের দোষ নিয়ে জনগণ কথা বলে। মিডিয়াতে প্রচারিত হয়। প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় এলে মামলা হয়। বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে সব সরকারই রাজনৈতিক মামলা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও হয়েছে। জেনারেল ইয়াহিয়াও তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিল ১৯৭১ সালে। শুনেছি প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহী তাঁর উকিল ছিলেন। প্রখ্যাত আইনজীবী কামাল হোসেন সাহেব পুরো বিষয়টা ভাল করে জানেন। ১০ই জানুয়ারী বাংলাদেশে ফিরে বলেছিলেন, আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। তিনি তাঁর মুসলমান পরিচয় ত্যাগ করতে চাননি। তিনি ঐতিহ্যবাহী মুসলমান পরিবারের সন্তান। তিনি কখনই ইসলাম বা মুসলমানিত্ব ত্যাগ করতে পারেন না। কিন্তু তাঁর কন্যা যে কোন কারণেই হোক ইসলাম ও মুসলমানিত্ব থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছেন। জানিনা , কেন তিনি এ পথ গ্রহণ করেছেন। এমনও হতে পারে , কেউ তাঁকে পরামর্শ দিয়েছে ইসলামকে অন্তরে রাখুন। অন্তরের বাইরে আনবেন না। আপনার বাবা ওআইসি সম্মেলনে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন। কারণ, প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশকে একটি মুসলমান দেশ হিসাবে দেখতে চায়না। তারা এদেশকে ধর্মহীন(সেক্যুলার) বাংগালীর দেশ বা রাস্ট্রে পরিণত করতে চায়। যদি মুসলমানের দেশই হয় তাহলে পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার কি দরকার ছিল?আমরা যতই বলি পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের বিরোধ ছিল নানা ধরনের বৈষম্য নিয়ে। সবচেয়ে বড় বৈষম্য ছিল অর্থনীতি নিয়ে। ধর্ম নিয়ে পাকলিস্তানীদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ ছিলনা। আমরা বাংগালী মুসলমান, ওরা ছিল পাঞ্জাবী, বালুচ, সিন্ধী ও পাঠান মুসলমান। ভারতেও আছে বাংগালী হিন্দু ও অবাংগালী হিন্দু। কিন্তু দিল্লীর মসনদে বাংগালী হিন্দুরা কখনই বসতে পারেনি। ভারতের বাংগালীরা ক্ষুদ্র মাইনরিটি। বাংগালী মুসলমানরা সারা পাকিস্তানে মেজরিটি ছিল। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি। উল্টো নিরস্ত্র মানুষের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।
সেদিন আমার একবন্ধু মসকরা বা ঠাট্টা করে বলছিলো, মোদী ক্ষমতায় এসে যদি দেখে দিল্লীই পরোক্ষ বা অদৃশ্য ভাবে বাংলাদেশ পরিচালনা করছে, তাহলে বলতে পারে আর কতদিন পরোক্ষভাবে দেখতে হবে। ৭১ সালে মুজিব নগর সরকারের সাথে দিল্লীর যে চুক্তি হয়েছে তাতে দেশটা চালাবার অধিকার ভারতের আছে। ইতোমধ্যেই তারা বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভুমি দাবী করেছেন।
আমিও মসকরা করে বললাম, সরাসরি চালাবার চাইতে পরোক্ষ ভাবে চালালে লাভ বেশী। শুনেছি, ভারতীয় গোয়েন্দাদের পরামর্শও তাই। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ভিতরে ভারতীয় গোয়েন্দাদের আরও বেশী বেশী কাজ করতে হবে। বুদ্ধিজীবীদের পেছনে আর অনেকবেশী অর্থ ব্যয় করতে হবে। আরও অনেককে পদ্মভূষণ দিতে হবে। তবে সংবিধানের ধারা পরিবর্তন করে বলতে হবে ভারত থেকে যে কোন রাস্ট্রীয় পদক আনার জন্যে কোন অনুমতি লাগবেনা। এখন সংবিধানের ৩০ ধারায় বিদেশী পদক গ্রহণের ব্যাপারে কিছু বিধি নিষেধ আছে। তবে ভারত বাংলাদেশের সংবিধানকে তেমন তোয়াক্কা করেনা।
বাংলাদেশের অবস্থা আজ কোন পর্যায়ে আছে তা মন্ত্রীদের কথাবর্তা শুনলেই বুঝা যায়। সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন বলেছেন, ভারতের বিরোধিতা করার জন্যেই বিএনপি তিস্তার পানি নিয়ে লংমার্চ করতে চায়। মানে ভারতের বিরোধিতা করা যাবেনা। শুনেছি, শেখ সাহেব ভারত বিরোধী মনোভাব চাংগা রাখার জন্যে মাওলানা ভাসানীর সহযোগিত চাইতেন। আমারতো মনে হয় তিস্তার ব্যাপারে সরকারের উচিত ছিল সর্বদলীয় সভা আহবান করে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ দেশের স্বার্থেও ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবেনা।
এরশাদ, তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা কি ভুল করেছি। না আশি, আমরা বা দেশবাসী কোন ভুল করিনি। ৪৩ বছরে দেশের উন্নতি হয়নি একথা বলা যাবেনা। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি একটি ধনী দেশে পরিণত হওয়ার জন্যে। আর্থিক ভাবে একটি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যে সকল উপাদান উপকরণ বাংলাদেশের আছে। বংগবন্ধু আর জিয়া সাহেবের পরে বাংলাদেশে তেমন শক্তিশালী নেতা দেশ চালাবার দায়িত্ব পান নি। এটা জাতির দূর্ভাগ্য। অনেকেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সকল সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনিও জিয়া সাহেবের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারেন নি।
আমি এর আগে বহু বার বলেছি, বাংলাদেশে রাজনীতি এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। জেলা উপজেলার নেতা হলেও টাকার আর অভাব হয়না। একবার এমপি হতে পারলে চৌদ্দ গোষ্ঠির অভাব দূর হয়ে যায়। অসাধি না হলেও সরকার এমপিদের ধনী বানিয়ে দেয়। ‘সুজন’ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে ৯০ ভাগ এমপিই কোটিপতি। ৬০ ভাগ এমপি ব্যবসায়ী। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম সুখী দেশ গড়ে তোলা। সবার মৌলিক অধিকার শক্তভাবে রক্ষা করা হবে। ৪৪ বছরেও সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »

সকালবেলা ৮২


সকালবেলা ৮২
আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২১ সাল। আমি খুব ভোরে উঠি। কখনও আজানের সাথে সাথে, কখনও বা একটু পরে। ডাক্তার বলেছেন অল্প ডোজের ঘুমের অষুধ খেতে। তাতে ঘুম ভাল হবে। আমার নাকি ঘুমের দরকার। আমার ঘুম পাতলা।
ঘুমের অষুধ খাওয়ার কারণে আজ ঘুম থেকে উঠেছি সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে। ঘুমের অষূদের চাপটা ছিল। তবুও উঠে অজু করে নামাজ পড়ে ব্লাড প্রেসার ও সুগার লেবেল পরীক্ষা করলাম। রোজই করি। মাস খানেক ধরে আমার সুগার লেবেল ও প্রেসার উঠানামা করছে। ৩০ বছর ধরে এটা এক রকম ছিল। এখন কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। ডাক্তারের কাছে যাই প্রিয়জনদের তাগিদে।
আমি জানি শরীরের বয়স বাড়ছে। প্রেসার, পালস রেট আর জোয়ানদের মতো থাকবেনা। থাকার কথাও নয়। আল্লাহপাক আদমের(আ) মাটির দেহে যে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলেন আমিও ওয়ারিশানা সূত্রে সেই রূ্হ বয়ে চলেছি। শরীর যতই বুড়িয়ে যাক, তিনি হুকুম না করলে রূহ এ দেহ ত্যাগ করবেনা। শুনেছি, খোদা তাঁর প্রিয় বান্দাহদের বেশী হায়াত দিয়ে বেশী ইবাদত ও সত্‍কর্মের সুযোগ দেন। অথবা দুনিয়ায় বার্ধক্যের বেশী কষ্ট দিয়ে আখেরাতের কষ্ট কমিয়ে দেন। আমিতো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার মূহুর্ত পর্যন্ত সুস্থ থেকে আমি আমার প্রভুর কথা বলতে চাই।
আজ এই সকালবেলা আপনাদের কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে চাইনা। তবে আপনারা সকলেই শান্তিতে থাকুন, আল্লাহপাকের সীমাহীন রহমত ও বরকত আপনাদের উপর বর্ষিত হোক। সবাই সুখে থাকুন। আপনাদের জন্যে এটা আমার প্রতিদিনের দোয়া।
আজ বাংলা বছরের প্রথম দিন বলে রাজনীতিতে অশ্লীল ভাষার কোন ছুটি হয়নি। টিভি স্ক্রলে দেখলাম, বহু খুনাখুনির খবর। কেউ বলেনি , আজ আমাদের নতুন বছরের নতুন দিন। অন্তত একটি দিন সবাই ভাল থাকুন, মন্দ কাজে জড়িত হবেন না, ভাইয়ের গলায় ছুরি চালাবেন না, বুকে গুলি মারবে না, পুলিশকে বলুন আজ আপনারা ঘুস খাবেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে ১০ বছরের মাসুম পড়ে আছে। জঠরের জ্বালায়, দারিদ্রের কষাঘাতে তার বাবা তাকে ঢাকা পাঠিয়েছিল কারো বাসায় কাজ করে নিয়মিত দুমুঠো খেতে পাবে। যে বয়সে আপনার সন্তান অতি আদরে থাকে, আয়ার হাত ধরে বা গাড়িতে চড়ে স্কুলে যায়। হয়ত বা ঐশীর মতো গড়ে উঠছে। আপনি হয়ত ঘুষ খান, নয়ত রাস্ট্রের অর্থ লুট করেন ক্ষমতাবানদের ভালবাসায়। কিন্তু ১০ বছরের মাসুম না খেতে পেয়ে কি তার হাল হয়েছে তা আপনারা টিভি বা খবরের কাগজে দেখেছেন। শুধু ভুখা থাকা নয়, শিক্ষিত গৃহনেত্রী মাসুমের উপর সীমাহীন অত্যাচার করেছে। রাতে বাথরুমে রেখে তালাবন্দী করে রাখতেন। তাহলে বলুন, আমি কেমন করে আপনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। তার উপরে আপনাদের বছরে তিন বার নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে হয়। এমন জাতি জগতে আর নেই যার তিনটি নববর্ষ।
আজ বাঘ ভাল্লুক পশু পাখির মংগল শোভা্যাত্রা বেরিয়েছে। কোটি টাকা খরচ করে এমন শোভা্যাত্রা না করে সারা দেশে দরিদ্রদের কাপড়, খাবার ও চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করেন। সারা দেশে তেমনি একটি আন্দোলন গড়ে তুলুন। তাহলে দেশের অতি সাধারন ভুখা নাংগা মানুষেরা ও আপনাদের সাথে থাকবে। আমি একটি সুখী সুন্দর মানুষের দেশ দেখার জন্যেই ৭১ সালে জীবন দিতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। কোথায় আছে সেই সুখী সুন্দর মানুষের দেশটি।

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

দেখো এরশাদ, আমার স্বপ্নের কথা তোমাকে বহুবার বলেছি। আমার স্বপ্নটা হলো দেশের মানুষকে নিয়ে। আমি একটা সুখী মানুষের দেশ দেখতে চাই। স্কুল জীবন থেকেই আমি এ স্বপ্ন দেখে আসছি। আমি একটা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার কোন অভাব ছিলনা এবং এখনও নেই । পাকিস্তান টিকে থাকলে আমার ব্যক্তিগত কোন অসুবিধা ছিলনা। তবুও আমি মুক্তিযুদ্ধে কেন গিয়েছিলাম? ভেবেছিলাম, পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেলে আমার দেশের সাধারন মানুষ এক কথায় যাদর গরিব বলা হয় তারা সুখে থাকবে। রাস্ট্র বা দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ পরাধীন বা অধিকার হারা থাকতে পারে। আমার সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। যে ধারায় বা নীতি পদ্ধতিতে দেশ বা রাস্ট্র চলছে তাতে এ জীবনে বাংলাদেশের মানুষকে সুখী দেখতে পাবোনা। তুমিতো নামজাদা ইকনমিক রিপোর্টার ছিলে। পূর্ব পশ্চিমের সামগ্রিক বৈষম্য বা ডিসপ্যারিটি নিয়ে কম লেখোনি। অবজারভার আর পুর্বদেশের ইকনমিক রিপোর্ট পড়েই বংগবন্ধু বক্তৃতা দিতেন। হাটে মাঠে মানুষকে সে তথ্য পরিবেশন করতেন। ইউনিভার্সিটিতে থাকতে পুর্বদেশে তোমার রিপোর্ট নিয়মিত পড়তাম। সচেতন ছাত্রদের সে রিপোর্ট দেখাতাম। পাকিস্তানের সাথে থেকে আমরা অধিকার হারা ছিলাম বলেইতো আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি, স্বাধীনতা এনেছি। কিন্তু কই, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হতে চলেছে। দেশে এখন কোটি কোটি লোক বেকার, সবার ঘরে শিক্ষা প্রবেশ করেনি, সবাই চিকিত্‍সা পায়না, সবার আশ্রয় নাই। ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার লোক লুটপাট করে ধনী হয়ে গেছে। তারা এখন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইতো সেদিন ভিয়েতনাম আমেরিকার কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছে। তার আগে দুই যুগ আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আজ তারা বাংলাদেশের চেয়েও ধনী । সেখানে আদর্শবান ত্যাগী নেতা আছেন। তাদের প্রধানতম আদর্শ দেশের মানুষের কল্যাণ। আজ আমেরিকা তাদের প্রধান বন্ধু। আশে পাশের সব দেশ এগিয়ে গেছে। আমিতো এমন বাংলাদেশ চাইনি। পাকিস্তান আমলে অবাংগালীরা শোষণ করতো, আর এখন ভারতীয় অবাংগালী আর দেশীয় বাংগালীরা শোষণ করছে। মাত্র ৪৪ বছরে কেমন করে একটা বিজনেস গ্রুপ ৪৪ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়? কিছুলোকতো রাজনীতিকদের সহযোগিতায় ব্যান্কে আমানত রাখা জনগণের টাকা সরাসরি মেরে দিয়েছে।
আশি, তুমিতো অর্থনীতির কথা বলছো। আমি দেখছি বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও ভাষার অবস্থা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু দেশটি দশ ভাগ লোকের চিন্তধারা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তারা বলছে সবকিছুতেই বাংগালীয়ানা আনতে হবে। যদি প্রশ্ন করো কি ভাবে বাংগালীয়ানা আনতে হবে? তখন আমতা আমতা করতে থাকে। তারা বলে, পহেলা বৈশাখ, ভাষা দিবস, বসন্ত উত্‍সব, হোলি বা দোল খেলা, বাংলা মদ, পান্তা, ইলিশ, শুটকী খাওয়া বাংগালীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। যারা এই সব করে তারা কারা? তারাতো কয়েক হাজার ছাত্র বা রাজধানীর কিছু লোক। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি কি এসব করে? করবেনা কেন? আস্তে আস্তে সবই করবে। বাংগালী হওয়ার জন্যেইতো পাকিস্তান থেকে বেরিয়েছি। তারা বলে ধর্ম একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর সাথে সমাজ বা রাস্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই।
তখন আমার মনে পড়ে গেল ভারতের এক মন্ত্রীর কথা। তিনি নাকি বাংলাদেশের হিতাকাংখী। এক সময় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, তোমরা ৭১ সালে যুদ্ধ করেছো বাংগালী হওয়ার জন্যে, এখন মুসলমান হতে চাও কেন? তোমরা মুসলমান হিসাবেতো পাকিস্তানের সাথেই ছিলে। যদি মুসলমান থাকতে চাও তাহলে আলাদা হওয়ার কি দরকার ছিল। আমি বললাম, আমিতো মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, তখন এমন কোন কথা শুনিনি। কেন? তোমাদের শ্লোগানতো ছিল ‘জয় বাংলা’।
দেখুন দাদা, ৪৭ সালে আপনারা স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ চাননি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সাথে গিয়েছি। বাংলার প্রতি আপনাদের যদি দরদ থাকতো তাহলে ৪৭এ ভাগ করতেন না। ১৯০৫ সালে আপনারা বংগভংগ রোধ করার করার জন্যে কি না করেছেন। এমন কি দাংগাও করেছেন। এখন আবার বলছেন ৪৭এর ভারত বিভাগ ভুল ছিল। আপনাদের কবিতায়, সাহিত্যে , নবেল নাটকে এখন আর পশ্চিম বাংলা বলেন না। বলেন বাংলাদেশ। আপনারা ভারতীয় বাংগালী। এই বাংগালীরা অবাংগালী দিল্লী দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। কই, আপনারাতো অখন্ড বাংলাদেশের দাবীকে সামনে নিয়ে আসছেন না। বরং, উল্টো বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ভিতর বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। আপনাদের লক্ষ্য কি?
আমরা চাই তোমরা ষোলয়ানা বাংগালী হিসাবে বিকশিত হও। দেখুন দাদা, আমরা বাংগালীও , আবার মুসলমানও। শুধু বাংগালী নই। দুটোই আমাদের আইডেন্টিটি। ভৌগলিক কারণে আমরা বাংগালী, আর ধর্মীয় কারণে আমরা মুসলমান। আমাদের বিশ্ব পরিচয় বাংলাদেশী। আর আপনাদের পরিচয় ভারতীয়। পাসপোর্টে লেখা থাকে বাংলাদেশী। আপনার পাসপোর্টে লেখা থাকে ইন্ডিয়ান। হিন্দু বা মুসলমান কিছুই লেখা থাকেনা। আমিতো শুনেছি তুমি বাম চিন্তাধারার লোক ছিলে। ঠিকই শুনেছেন। ইসলাম একটি বাম চিন্তাধারার ধর্মীয় বিশ্বাস। মাওলানা ভাসানী ছিলেন আমার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরু। আমি গণমানুষের মুক্তিতে বিশ্বাস করি, রাস্ট্র বা দেশের মুক্তি নয়। মানুষের মুক্তির জন্যে দেশের মুক্তি প্রথম ধাপ। বাংলাদশের জমিন মুক্তিলাভ করেছে, কিন্তু মানুষের মুক্তি আসেনি, মানূষ রাস্ট্রের দাস হয়ে গেছে। সংবিধান বলে মানুষ নাকি সার্বভৌম। আমি দেখি মানুষ রাস্ট্রের দাস। দাদা, আপনাদের দেশের বামপন্থীরা মন্দিরে যায়, আবার কমিউনিস্ট ও থাকে। হিন্দু কমিউনিস্টদের কথা জানতে হলে কমরেড মুজাফফর সাহেবের জীবনী পড়ুন। মুসলমান কমিউনিস্টরা মসজিদে গেলেই আপনাদের আপত্তি। আপনারা বলেন, ভারত সেক্যুলার দেশ। অথচ , ভারতে সারা বছর সাম্প্রদায়িক দাংগা লেগে থাকে। বাংলাদেশে কোন দাংগা হয়না। যা হয় তা রাজনীতি। দাংগা রাজনীতির একটা অংশ।বহুকাল ধরে চলে আসছে।
ভারতের ওই মন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, দেখো এরশাদ, আমরা তোমাদের স্বাধীন করেছি বিনা স্বার্থে নয়। এতে নিশ্চয়ই ভারতের স্বার্থ আছে। ভারতের সহযোগিতা না পেলে তোমরা কোন দিনও স্বাধীন হতে পারতেনা। কাশ্মীর আর ভারতের পুর্বাঞ্চলের অবস্থা দেখছোনা? আর তোমরা নয় মাসেই স্বাধীন হয়ে গেলে? এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েছো, জাতিসংঘের সদস্য হয়েছো, জাতীয় পতাকা উড়াচ্ছো, জাতীয় সংগীত গাইছো। এসব কার অবদান? এখন ভারতের অবদান ভুলে গেলে চলবে কেন? ভারতের স্বার্থের প্রতি বুড়ো আংগুল দেখালেতো চলবেনা। ভুলে গেলে চলবেনা ভারত একটি শক্তিশালী দেশ। তোমরা তার প্রতিবেশী। আমাদের অনুরোধ অবহেলা করে চীন আমেরিকার কথা শুনবে আর পাকিস্তানের সাথে আবার গাঁটছড়া বাঁধবে তা কখনও হবেনা। পতাকা, জাতীয় সংগীত, ভৌগলিক এলাকা থাকলেই কোন দেশ সার্বভৌম হয়না। তোমাদের দেশের কিছু নেতা বা দল বাস্তবতা মানতে চায় না। আমাদের অমান্য করলে কোন দলই এদেশে রাজনীতি করতে পারবেনা। তুমি কি ভুলে গেছো শেখ মুজিব ভারতের অনুরোধকে অবহেলা করে ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। তার ফল তিনি ভোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ বহু বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এখন বার বার ক্ষমতায় আসতে শুরু করেছে। ভারতের কথা না শুনে জিয়া সাহেবকেও মর্মান্তিক ভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। ১/১১ এর সরকার ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার রাজনীতিকে তচনচ করে দিয়েছে। অথচ সেই সেনাপতিকে খালেদা জিয়াই নিয়োগ দিয়েছিলেন নিজের আত্মীয় বলে। ফল কি হয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। নামমাত্র নির্বাচন করেও ক্ষমতায় থাকা যায় তা এখন বাংলাদশের মানুষ দেখছে। সবাই বিরুদ্ধে থেকেও শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসাটাকে কেউ রোধ করতে পারেনি। ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা।
সাথে আমার এক সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধুও ছিলেন মন্ত্রীর সামনে। তিনি হঠাত্‍ ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলে ফেললেন, কিছু সাংবাদিক আছে দেশের স্বার্থে রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে চায়না। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে বিশ্বের কোন ছোট দেশই সার্বভৌম নয়। ভারতের মন্ত্রী বললেন, দেখো এরশাদ , তোমার লেখা কলাম আমাদের লোকেরা নিয়মিত পড়ে। তোমার কথা আমার পছন্দ। এসব হলো নীতি আর আদর্শে কথা। বাস্তবতা নয়। বাংলাদেশ কখনই স্বাধীন পররাস্ট্র বা সামরিক নীতি অনুসরণ করতে পারবেনা। বিশ্ব ভু রাজনীতি কারণে এটা সম্ভব নয়।
ক’দিন আগে আমার এক সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধু প্রেসক্লাবে দেখা হতেই বললেন, আপনাদের বিএনপির খবর কি? আমি বেশ কিছুক্ষণ বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। উত্তরে বললাম, খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। আমাদের বিএনপি! এইদল ক্ষমতায় এলে আপনি চাকুরী পান, আর দল হলো আমার। আমিতো জীবনেও কোন সরকারের চাকুরী বা তাবেদারী করিনি। উত্তরে বন্ধু বললেন, আরে না আমি ঠাট্টা করলাম। সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন? তবুও বললাম আপনারাইতো জেনারেল মইনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন স্টাফের সাথে ক’দিন আগে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, দেখুন আমি চাকুরী করি। কোন রাজনৈতিক দল করিনা। আমি জানতে চাইলাম, আপনিতো বিএনপির মঞ্চেও ভাষন দেন। তিনি উত্তর দিলেন, মেহমান হিসাবে উপস্থিত থাকি।এ ধরণের বহু লোক বিএনপি চেয়ার পারসনের চারিদিকে বেষ্টিত থাকেন।
আওয়ামী লীগে আমার বহু বন্ধু আছে। তারা বলেন, এটা বংগবন্ধুর দল তাই এ দলে আছি। ছত্রলীগে ছিলাম এখন আওয়ামী লীগে আছি। এটা একটা ধারাবাহিকতা। আওয়ামী রাজনীতির গভীরে কখনও যাইনি। এর আদর্শ বা দর্শন কি তা নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। ভাবার প্রয়োজনও করিনি। যখন বলি দেশের ৯৯ ভাগ হিন্দু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে কেন? উত্তরে তারা বলেন, তারা হয়ত মনে করে আওয়ামী লীগ ভারতপন্থী। হিন্দুদের সাথে ভারতের কি সম্পর্ক? পাকিস্তান আমলে না হয় ভারতপন্থী ছিল, এখন কেন? এদেশেতো তারা কম সুবিধা পায়না। সংখ্যার দিক থেকে আট ভাগ সুবিধা পাওয়ার কথা। তারা বিশ ভাগ সুবিধা ভোগ করছে। ভারতের মুসলমানেরা পঁচিশ ভাগ হয়েও মাত্র এক ভাগ সুবিধা পায়। এ বিষয়টা কি আপনারা কখনও চিন্তা করেছেন। ওভাবে চিন্তা করলে আমরা দলে থাকতে পারবোনা। আমাদের জ্ঞান গম্যি সাধনা সবই হলো আওয়ামী বিরোধী রাজনীতি ও দর্শনকে বিনাশ করা। আমরা মনে করি আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আমরাই দেশ চালাবো। আমরাই একমাত্র দেশ প্রেমিক দল। আমরাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল, বাকিরা সবাই স্বাধীনতা বিরোধি। এটাই আমাদের ধ্যান ধারণা। এর বাইরে আমরা চিন্তা করিনা। আমাদের নেতা নেত্রী যে ভাষায় কথা বলেন আমরা সে ভাষাতেই কথা বলি।আমাদের নেত্রী দূরদর্শী, তিনি জানেন ভারতের সাথে দ্বিমত করে ক্ষমতায় থাকা যাবেনা। তিনি মনে এটা ভারতের পক্ষে থাকা নয়, বরং সমঝোতার মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নেয়া। তিনি জানেন তা না হলে নেপালের অবস্থা হবে, যেমন হয়েছে বংগবন্ধুর অবস্থা। অমন জনপ্রিয় নেতা এ দেশে আর জন্ম গ্রহন করবেনা।
দেখো আশি, আমি দেশের পক্ষে কথা বলি বলে আমাকে বিএনপি বা জামাতপন্থি বলা হয়। আমি নাকি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি নই। এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেই চলবেনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও থাকতে হবে। তারা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের দালাল বলে। খালেদা জিয়াকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে। লন্ডনে তারেক জিয়া কি বলেছে তা নিয়ে এখন আওয়ামী নেতাদের ঘুম নাই। রাতদিন খিস্তি খেউর করে চলেছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে রাজনীতি থেকে সভ্যতা ভব্যতা চির বিদায় নিতে চলেছে।
এতো গেলো রাজনীতি ও সংস্কৃতির অবস্থা। ক’দিন আগে ‘বাংগালীর ধর্মচিন্তা’ নামক একটি বইয়ের আলোচনা বৈঠকে গিয়েছিলাম। বইয়ের প্রকাশক সাইদ বারী আমার খুবই প্রিয় মানুষ। বইটি সম্পাদনা করেছেন ডক্টর আবদুল হাই। তিনিও বিনীত ভদ্রলোক। আলোচনায় অনেক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। আমি শিক্ষক ও জ্ঞানীদের ঢংয়ে কথা বলতে পারিনা। আমার সে রকম প্রশিক্ষণ নেই। বইটির ভুমিকা আমার ভাল লেগেছে। আলোচকদের বক্তব্যও ভাল ছিল। বইটিতে যে সব লেখা সংকলিত হয়েছে তার বেশীর ভাগেরই ধর্মহীনতার দিকে ঝোঁক রয়েছে। সংকলক বা সম্পাদক বলেছেন, ধর্মের পক্ষে তেমন ভাল লেখা পাননি। আমি মনে করি ধর্ম না মানা বা ধর্মহীন থাকা কোন অপরাদ নয়। এটা একেবারেই ব্যক্তগত ব্যপার। কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলাটা ন্যায়সংগত বলে আমি মনে করিনা। ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে ধর্মচর্চা করা পক্ষে থেকে বা বিপক্ষে থেকে। একজন ধার্মিকেরও উচিত্‍ হবেনা অধার্মিকের বিরুদ্ধে কথা বলা। যারা ধর্ম মানেন না তাদের সংখ্যা জগতে অতি নগন্য। আবার এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে গালমন্দ করাও উচিত্‍ নয়। সকল ধর্মই এক আল্লাহ/খোদা/ ইশ্বর/ভগবান/ গড/ ইলাহাতে বিশ্বাস করেন। ইশ্বর নিরাকার একথাও সবাই স্বীকার করেন। তিনি সকল অবস্থায় সর্বত্র বিরাজমান। শুধু ধর্ম সম্পাদনর সময় বিভিন্ন জন ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন , যতমত তত পথ। কিন্তু লক্ষ্য এক। সবাই স্বীকার করেন মানুষই স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। বইয়ের নামকরণ নিয়ে সবাই আপত্তি করেছেন। ভারতীয় বাংলায় বাংগালী বলতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীকেই বুঝায়। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের অফিসিয়াল স্বীকৃতি হলো বাংলাদেশী। এখানে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। বাকি ১০ ভাগ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও অন্যান্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ভৌগলিক ও ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় আচারের প্রভাব রয়েছে। শুধু বাংগালী বলা হলেও ভারতীয় বাংগালীর সাথে চিন্তা চেতনায় বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সম্প্রতি সেক্যুলারিজম শব্দটা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার একটা প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের অর্থ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কুচেষ্টা চলছে। এটা এক ধরনের ভন্ডামী। সেক্যুলার সব্দের অর্থ ধর্মহীনতা। যিনি বা যারা ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষায় বিশ্বাস করেন না। পরকালেও বিশ্বাস করেন না। জগতই তাদের কাছে প্রধান। এ কথাটি তারা প্রকাশ্যে সরাসরি বলতে চান না। আরেক গ্রুপ বেরিয়েছে যারা ধর্মীয় ইসলাম আর রাজনৈতিক ইসলাম এক নয়। এরাও ইসলাম বিরোধী একটা গ্রুপ। আরও এক গ্রুপ আছে যারা বলেন, ধর্ম ব্যক্তিগত ও ঘরের ব্যপার। একে বাইরে আনা যাবেনা। এমন কি মসজিদও রাখা যাবেনা। এমন কি শুক্রবারের জুম্মার নামাজও পড়া যাবেনা। যদি পড়া হয় তাহলে খোত্‍বা কি হবে তা ঠিক করে দিবে সরকার
ভারতও চায় বাংলাদেশ একটি পূর্ণাংগ ধর্মহীন রাস্ট্রে পরিণত হোক। রাস্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকবেনা। ধর্ম হবে একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য,সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন রাখার একটা চেষ্টা চলছে।
লেখক: ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »

সকালবেলা ৮১


সকালবেলা ৮১

এবিএম মুসা ( আবুল বাশার মুহাম্মদ মুসার সাথে আমার সরাসরি পরিচয় হয় ১৯৬২ সালে পাকিস্তান অবজারভার অফিসে। তিনি তখন অবজারভারের বার্তা সম্পাদক। আমি ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে আমি নবীশ অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসাবে অবজারভারে যোগ দিই। মাহবুব জামাল জাহেদী সাহেব তখন বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।মুসা ভাই কমনওয়েলথ বৃত্তি লন্ডন গিয়েছেন সাংবাদিকতায় উচ্চতর শিক্ষার জন্যে। ফিরে এসেছেন ১৯৬২ সালে। তখনও আমি বিজনেস পেইজের রিপোর্টার ছিলাম। শহীদুল হক, এনায়েতউল্লাহ খান, তওফিক আজিজ খান, এটিএম মেহেদী, আবদুর রহীম, মতিউর রহমান স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।
মুসা ভাইয়ের জন্ম ফেনী জেলার ধর্মপুর গ্রামে। বাবা আশরাফ আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট। বল্যকালে তিনি ছিলেন ডানপিটে। ফলে বাবার সাথে বনিবনা হতোনা। লেখাপড়া করেছেন ছোট মামা আবদুল অদুদের ফেণী বাসায় থেকে।
যৌবনে বাম চিন্তাধারা বহন করতেন। তোহা সাহেব ,অলি আহাদ সাহেবদের সাথে যুবলীগ করতেন। এখনকার আওয়ামী পন্থী যুবলীগ নয়। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি আওয়ামী চিন্তাধারা সাথে মিলিত হন। যদিও তিনি বলতেন, আমি শেখ সাহেবের ভক্ত। শেখ সাহেব বাংগালী মুসলমানের একচ্ছত্র নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলে মুসা ভাই একজন নামজাদা সাংবাদিক হিসাবে শেখ সাহেবের ভক্ত হয়ে উঠেন। ৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ সাহেব প্রমান করলেন তিনিই পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতা। মুসা ভাই ,ফয়েজ ভাই, মুকুল ভাই ও গাফফার ভাই বংগবন্ধুর অতি কাছে মানুষ ও সাংবাদিক ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এরা সবাই পুরস্কৃত হয়েছিলেন সরকারী সুযোগ সুবিধায়। মুসা ভাই ৭৩ এর নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন। তিনি বহু সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের তিনি অন্যতম। বহু বার তিনি ক্লাবের সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সমালোচকদের ব্যাপারেও তিনি উদার ছিলেন। দেখা হলে বলতেন , ‘যা লিখছো ভালই লিখছো’। কেউ তাঁর লেখার সমালোচনা করলে তিনি বলতেন,‘হড়ছ কা’। মানে পড়িস কেন?
মুসা ভাই সাংবাদিকতার ক্যরিয়ার শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামে সংবাদের প্রতিনিধি হিসাবে। প্রথম জীবনে স্পোর্টস রিপোর্টার ছিলেন। পূর্বা পাকিস্তান বা বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। ৫০ এর দিকে তিনি অবজারভারে যোগ দেন এবং কালক্রমে বার্তা সম্পাদক হন। তিনি সত্যিই একজন সৃজনশীল , ইনোভোটিভ বার্তা সম্পাদক ছিলেন। গাড়িতে বাংলা নম্বরপ্লেট ও বাংলায় বিলবোর্ড বা সাইন বোর্ড চালুর ব্যাপারে মুসা ভাইয়ের একক অবদান ছিল। মুসা ভাইয়ের সাথে আমি পরে জনপদ ও নিউনেশনে কাজ করেছি। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও স্মৃতির কথা বলতে গেলে লেখাটি খুব বড় হয়ে যাবে। তবে শুধু এ টুকুই বলবো যে তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। এমন সাহসী লেখক সাংবাদিক আমি আর দেখিনি। বাইরের দিকে দেখলে মনে হবে তিনি খুব রাফ বা অপরিশীলিত। কিন্তু মনটা ছিল খুবই নরম। পছন্দের সহকর্মীদের খুবই ভালবাসতেন। কর্ম জীবনে তিনি সব সময় একটা নীতিতে বিশ্বাস করতেন। তবে তাঁর সমালোচনাও কম নয়। নিজের স্বার্থ রক্ষাতেও তিনি খুবই কঠোর ছিলেন।
শেষ জীবনে টকশোতে কথা বলে তিনি জাতির বিবেকে পরিণত হয়েছিলেন। পরম করুণাময়ের কাছে দরখাস্ত করি তিনি যেন মুসা ভাইয়ের আত্মার মুক্তি দান করেন।

Read Full Post »

সকালবেলা ৮০


সকালবেলা ৮০

সকাল সাতটায় মাছরাঙা টেলিভিশনের গাড়ি এসে আমায় নিয়ে গেল তাদের রাঙা সকাল প্রোগ্রামের এক ঘন্টার লাইভ শোতে অংস গ্রহণের জন্যে। অনেকদিন আমি টিভিতে যাইনা। কেমন যেন ভাল লাগেনা। সাতটায় যাওয়ার ফলে রাস্তার সময়সূচীতে পরিবর্তন হয়ে গেছে। নাস্তায় আগে ডায়াবেটিসের যে অষুধটা কেতে হয় তা খাওয়া হয়নি। মাছরাঙায় যাওয়ার পর তাঁরা আমার নাশতার ব্যবস্থা করেছিলেন। খুব ভাল নাস্তা। এর পরেই পকেটে নিয়ে যাওয়া অষুধ গুলো মুখে দিলাম। এর পরে হাজির হলো এক কাপ কফি। তাদের আতিথিয়তা আমার খুব ভাল লেগেছে। আটতা বাজার ক’ মিনিটা আগেই ষ্টুডিওতে ঢুকলাম। উপস্থাপক ও উপস্থাপিকা কিবরিয়া ও রুবাইয়াত প্রোগ্রামটা কি তা বুঝিয়ে দিলো। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এক ঘন্টা কেমন করে প্রাগ্রাম হয়। এত কথা কোত্থেকে বলবো। একঘন্টার মাঝে কয়েকবার বিজ্ঞাপণ বিরতি ছিল। জানিনা কত মিনিট বিরতি ছিল।
উপস্থাপক ও উপস্থাপিকা দুজনকেই আমার খুব ভাল লেগেছে। ওরা প্রোগ্রামটা কিভাবে চালাতে চেয়েছিল আমি জানিনা। কিন্তু আমি সীমার ভিতর থেকে কথা বলতে পারিনা। তাই একটা প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে গিয়ে নানা দিকে ছুটাছুটি শুরু করে দিই। এটা আমার অভ্যাস। সত্যি কথা হলো আমরাতো চারিদিক নিয়েি বেঁচে আছি।
রাঙা সকলালে যে অতিথিকে হাজির করা হয় বা আমন্ত্রণ জানানো হয় তাকে মুক্তভাবে কথা বলতে দেয়া হয়। সেদিক থেকে আমি মুক্ত স্বাধীন ছিলাম। শুরুতে মনে হয়েছিল লম্বা সময়। পরে দেখলাম সব কথা বলার আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। জানিনা ক’ঘন্টা হলে ভাল হতো। না বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। আমার শৈশব, কৈশোর , স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। আমার মায়ের কথা বলতে গিয়ে আমার কান্না এসে গিয়েছিল। মা আমাকে কেন যেন আচ্ছন্ন করে রাখে। মা’তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ১৯৫১ সালের অক্টোবর মাসে মাত্র ৩১/৩২ বছর বয়সে। ১৫ বছর বয়সে মা’র বিয়ে হয়েছিল ১৯৩৫ সালে। বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট বানাবেন। কিন্তু আমি হয়ে গেলাম সাংবাদিক। কেন হয়েছি জানিনা। তবে আমি সব সময় বলতে ও লিখতে ভালবাসতাম। সাংবাদিকতা পেশাটা তখনও সমাজে তেমন স্বীকৃতি লাভ করেনি। কেউ এটাকে পেশা মনে করতোনা। ভাবতো সমাজকর্ম।
সবাই হয়ত জানেন, আমি পাকিস্তান অবজারভারে আমার ক্যরিয়ার শুরু করেছি। তখন আবদুস সালাম ছিলেন সম্পাদক আর এবিএম মুসা ছিলেন বার্তা সম্পাদক। সালাম সাহেব ছিলেন দার্শনিক আর মুসা ভাই ছিলেন ডাকসাইতে বার্তা সম্পাদক। সারা পাকিস্তানে নাম ছিল। তাঁর সময়ে তিনি ছিলেন সেরা বার্তা সম্পাদক। তাঁর সাহসও ছিল সবার চেয়ে বেশী। লন্ডন থেকে ফিরে এসে তিনি অবজারভারের মেকআপ ও ছবি এডিটিংয়ে পরিবর্তন আনলেন। এর পরে মুসা ভাইয়ের সাথে আমি কাজ করেছি দৈনিক জনপদ ও সাপ্তাহিক নিউনেশনে। মুসা ভাইকে নিয়ে পরে একটি আলাদা আর্টিকেল লিখবো আশা রাখছি।
আমার পোষাক নিয়ে উপস্থাপকদের কৌতুহল ছিল। আমার মাথায় ছিল রূমী টুপি পাগড়ী। গায়ে ছিল এক ধরণের ব্যতিক্রমী পাঞ্জাবী। পরণে ঢোলা সালোয়ার ও পায়ে ছিল কাবুলী স্যান্ডেল। বললাম এটা আমার ফরমাল পোষাক। আমি রূমী ভক্ত।
আমি এখন রূমী হাফিজ ও হাল্লাজের অনুবাদ করছি।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭৯


সকালবেলা ৭৯

ক’দিন পরেই বাংলা নববর্ষ। শুধুই নববর্ষ বলতে পারলে খুশী হতাম। কিন্তু বলা যচ্ছেনা। কারণ আমাদের অনেক গুলো নববর্ষ। আমাদের সরকার , ব্যবসা বাণিজ্য, বিদেশ যোগাযোগ চলে ইংরেজী সন মোতাবেক। ইংরেজরা এসে আমাদের এ সন দিয়ে গেছে। ইংরেজদের ভাল মন্দ অনেক কিছুই আমরা গ্রহন করেছি। তার আগে নবাব ও বাদশাহী আমলে ছিল হিজরী সন। বাংগালী মুসলমানদের ধর্ম কর্ম, উত্‍সব চলে হিজরী সন ও চাঁদ মোতাবেক। মোগল আমলেই ফসলী সন চালু হয়েছে সুবে বাংলার খাজনা আদায়ের জন্যে।
বাংলা বা বংগদেশ তখন ছিল সুজলা সুফলা একটি সমৃদ্ধ দেশ। সারা বিশ্বের মানুষ আসতো এখানে ব্যবসা করার জন্যে। ১৬শ’ সালে ঢাকা ছিল ইংল্যান্ডের চেয়েও অনেক আধুনিক একটি শহর। বাংলার সম্পদ লুঠ করে ইংল্যান্ড গড়ে তুলেছে। আর বাংলা দিন দিন গরীব হয়েছে।
দাদাভাই নওরোজীর ’ পোভার্টি ইন ইন্ডিয়া’ পড়লেই জানা যাবে পুরো ভারত কিভাবে শোষিত হয়েছে। বাংলার মুসলমানদের দুর্দশার কথা জানতে হলে পড়তে হবে উইলিয়াম হান্টারের ‘ ইন্ডিয়ান মুসলমানস’।
এক সময় বাংলা নববর্ষ পালিত হতো অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে। গ্রামে গ্রামে মেলা বসতো। প্রচুর বিকি কিনি হতো। সবাই খুশী ছিল।
রাজধানী সহ প্রধান প্রধান শহর গুলোতে এখন নববর্ষ পালিত হয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য নিয়ে। অজানা সূত্রের অর্থ নিয়ে নানা রকম পশুর ছবি মুর্তি নিয়ে মিছিল আর নর্তন কুর্দন করা হয়। পুজোর ঢংয়ে ঢোলও বাজানো হয়। এই তরুণ বা প্রৌঢদের একাংশ ৩১শে ডিসেম্বর যাকে ওরা বলে থার্টি ফার্স্ট নাইট বলে থাকে। এজন্যে পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। কে বা আমাদের তরুণদের এ পথে ঠেলে দিচ্ছে তা ভাবার মতো মানুষ এখন বাংলাদেশে নেই।
বাংলা সনের ইতিহাস নিয়ে আমাদের তরুণরা তেমন কিছু ভাবে বলে মনে হয়না। আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্তিতে আছেন। তাঁরা যোলয়ানা বাংগালী হবার চেষ্টা করতে গিয়ে বাপদাদার ইতিহাস ভুলে গেছেন। পূর্ব বাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশে যে বুদ্ধিজীবী সমাজের জন্ম হয়েছে তাঁদের ৮০ ভাগই নির্যাতিত মুসলমান কৃষকের সন্তান। মা বা হাজারো কষ্ট সহ্য করে এঁদের পড়ালেখা করিয়েছেন। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এরা পড়ালেখা করতে পেরেছেন। এরা মা বাবার প্রচেষ্টা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের কথা ভুলে যেতে যায়। বাংলা সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা বলে এরা হিন্দু ঐতিহ্যের খপ্পরে পড়েছে। অপরদিকে বিদেশী ভাবধারা অনুকরণ করতে গিয়ে নতুন এক খিচুড়ী প্রজন্মে পরিণত হয়েছে।
আমাদের সরকারী বাজেট বাংলা সন ব্যবহার করেনা। সরকারী অফিসে এখনও যোলয়ানা বাংলা ব্যবহার করেনা। রাজনীতির স্বার্থে এরা বাংলা আর বাংগালীয়ানাকে ব্যবহার করে। যে আদর্শ বা উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছিল তা আজ আর মুখ্য বিষয় নয়।

Read Full Post »

Older Posts »