Feeds:
Posts
Comments

Archive for December, 2012


সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ও অর্থনীতি / এরশাদ মজুমদার

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকরা সাম্প্রদায়িকতা বা কমিউনালিজম কি বোঝান তা আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। ১৯৫০ সালের দাংগা দেখেছি আমার শহরের উকিল পাড়ায়। শুনেছি, বিহারের দাংগার প্রতিবাদ বা প্রতিশোধের জন্যে ওই দাংগা ঘটানো হয়েছে। দাংগা ছিল এক তরফা। হিন্দুদের হত্যা করা, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের দোকান পাট লুট করা। আরও যেখানে দাংগা হয়েছে তা দেখিনি এবং ভাল করে জানিনা। ওই দাংগায় আমার প্রিয় শিক্ষকেরা প্রায় সবাই চলে গিয়েছেন। যারা সরাসরি দাংগায় অংস নিয়েছেন তারা অনেকেই সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং সমাজে প্রতিপত্তিশালী হয়েছেন। অনেকেই ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কারণ, হিন্দুরা সবাই তাঁদের ভোট দিয়েছেন। যুক্তফ্রন্টের সেই ধারাবাহিকতায় হিন্দুরা এখনও নৌকায় ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক বা মার্কা ছিল নৌকা। যুক্তফ্রন্টের শরীক দলে ইসলামী দলগুলোও ছিল। সাথে বামপন্থি দলও ছিল। আওয়ামী লীগের তখন নাম ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ। মূল মুসলীম লীগের নাম দেয়া হয়েছিল সরকারী মুসলীম লীগ। নতুন দল আওয়ামী মুসলীম লীগের নাম ছিল জনগণের মুসলীম লীগ। শুরুতে মাওলানা ভাসানী সাহেবকে বলতে হয়েছিল আমরাও মুসলীম লীগ। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে, কিন্তু মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে নই। ৫০ এর দাংগার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান সাহেব ফেণী এসেছিলেন। ওই দাংগায় নামজাদা দু’জন মানুষ নীহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন শ্রীযুক্ত গুরুদাস কর ও হরেন্দ্র কর। শুনেছি গুরুদাস কর ফেনী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এ ছাড়াও বাজারের কিছু গরীব হিন্দুও মারা গেছেন। এরপর ধীরে ধীরে অনেক হিন্দু বাড়ি ঘর বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। অনেকে এখনও ভারতের বিলোনিয়াতে বসবাস করছেন। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনীতিতে ফেণী, নোয়াখালি ও কুমিল্লার সন্তানদের বিরাট প্রভাব রয়েছে।
১৯৬৪ সালে ঢাকায় যে দাংগা হয়েছে তাও আমি দেখেছি। যোগী নগরে এক বৃদ্ধ প্রেস কর্মচারীকে কিছু যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুরো পেট কেটে রাস্তার পাশে ফেলে চলে গেছে। ওই দৃশ্য দেখে আমি বেশ কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম। ওই বৃদ্ধ জানলোনা কেন সে নিহত হয়েছে। তাছাড়া নিহত ব্যক্তিটির সাথে রাজনীতি বা অর্থনীতির কোন সম্পর্কই ছিলনা। যারা হত্যা করেছে তারাও ছিল গরীব। দাংগা যারা ঘটান তাদের দুটি উদ্দেশ্য, একটি রাজনীতি আর অপরটি অর্থনীতি। যোগীনগরের ওই বৃদ্ধ নিহত হওয়ার পর হয়ত তার প্রেস বা বাড়িটা কেউ দখল করে নিয়েছে। শুধু হিন্দু মুসলমান নয়, নোয়াখালী বিহারীর দাংগাও দেখেছি। চট্টগ্রামে নেয়াখালি জেলার গরীব মানুষ নিধনের দাংগাও দেখেছি। কারণ ছিল নোয়াখালির লোকেরা চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা বাণিজ্য,চাকরী বাকরী সব দখল করে নিচ্ছে। আদমজীতেও নোয়াখালি বনাম অন্য জেলার শ্রমিকদের দাংগা হয়েছে। সব দাংগার কারণ ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। অবাংগালীরা বেশী চাকুরী পাচ্ছে তাই বাংগালীরা অসন্তুষ্ট ছিল। অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছে শ্রমিক বা রাজনৈতিক সংগঠণ গুলো।

শুরুতেই বলেছি, সাম্প্রদায়িকতা কি আমি আজও বুঝতে পারিনি। কয়েকদিন আগে ঢাকায় সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একট জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেলো। উদ্যোক্তারা সবাই জ্ঞাণী গুণী। তাঁরা নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ বলে প্রচার করেন। এর মানে হলো তাঁরা একটি গোষ্ঠি বা গোত্র। যাঁরা ধর্ম নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। অথবা ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করেন। এসব গণ্যমাণ্য ব্যক্তি সারা জীবন নিজ ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অন্যধর্মের লোকদের খুশী করার চেস্টা করে গেছেন। এঁরা সাম্প্রদায়িকতা দেখেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে। ৭১ সালে যারা নিজ ঘরবাড়ি ,ধন সম্পদ ফেলে পাকিস্তান চলে গেছেন তারা সবাই ছিলেন অবাংগালী। তাদের সে সম্পদ ও বাড়িঘর কারা দখল করেছিলেন? সরকারও রাস্ট্রের নামে দখল করে নিয়ে নিজেদের লোকদের ভিতর বিতরন করেছেন। মতিঝিল, গুলশান , ধানমন্ডী,বনানীর বাড়ি গুলোর খবর নিন, দেখবেন এ গুলো কারা নিয়েছেন। মতিঝিলের বাংলার বাণী পত্রিকার ভবনটিতো ছিল একটি উর্দু পত্রিকার ভবন। সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরাও অনেক অবাংগালীর বাড়ির দখল নিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের যে সকল হিন্দুরা বাড়িঘর ফেলে চলে গেছেন সেগুলো দখল করেছেন বাংগালী মুসলমান বা আওয়ামী লীগের নেতারা। এটাও ছিল অর্থর্নতিক কারণ। হিন্দুরা চলে গেলে ওই সম্পদের মালিক হবে একজন মুসলমান বাংগালী। এইতো কিছুদিন আগে তথাকথিত সেক্যুলার দেশ বৃটেনে( যদিও রাস্ট্রধর্ম প্রটেস্ট্যান্ট খৃশ্চিয়ানিটি) একটা বড় দাংগা হয়ে গেলো। ভাল ভাল পরিবারের ছেলেরা দোকান পাট লুটপাট করেছে। সে দৃশ্য আমরা বিবিসির বদৌলতে দেখতে পেয়েছি। আমেরিকাতেও সাদা কালোর দাংগা লেগেই আছে।
৭১ সালের মার্চ মাসে রাজধানী ঢাকায় নিয়মিত অবাংগালীদের দোকান পাট লুট হয়েছে। সেই লুটের মাধ্যমে বহু লোকের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
ষোলই ডিসেম্বর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যান্কের পড়ে থাকা নোট লুট হয়েছে এক সপ্তাহ ধরে। ওই লুটের ছবি সম্ভবত ১৮/১৯ ডিসেম্বরের পূর্বদেশে ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ওইসব নোটকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ তখন নতুন নোট ছাপানো সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সোজা কথায় বলতে গেলে দাংগার একটি বিশাল অর্থনীতি ও রাজনীতি আছে।
১৭৫৭ সালে ইংরেজরা ক্ষমতা দখলের পরে মুসলমানদের সম্পদ লুট করেছিল। লর্ড ক্লাইভের মামলা তার বড় প্রমান। সম্পদ লুটের জন্যেই ক্লাইভের বিচার হয়েছিল। সেই লুট অব্যাহত ছিল ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত। ১৮৫৮ সালের পর ভারতের রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আন্দোলন শুরু হয়। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল ইংরেজরা কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাবে। ক্ষমতা নিয়েছিল মুসলমানদের কাছ থেকে। মুসলমানরা চেয়েছিল অখন্ড ভারত ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। যে ন্যায়নীতি পালিত হয়েছে মোঘল আমলে। কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে, রাজ্য বা সুবাহ গুলো স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করবে। কিন্তু হিন্দুরা চাইলো অখন্ড ভারত হিন্দুদের নেতৃত্বে। মুসলমানরা তা মানলোনা। ফলে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে গেলো। ভারত ভাগের সময় যে দাংগা হয়েছে তা হাজার বছরেও হয়নি। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, সম্পদ হারিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারন মানুষ। সেই সময় ত্যাগ করে যে সকল বাংগালী মুসলমান পূর্ব পাকিস্তান এসেছিলেন শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে তাঁরা এখন ভারতপন্থী বাংগালী হয়েছেন। তাঁরাই বলেন ভারত বিভক্তি সঠিক ছিলনা। ওই বিভক্তি নাকি সাম্প্রদায়িক ছিল। মানলাম, সাম্প্রদায়িক ছিল। কিন্তু কে দায়ী ছিল? অনেকেই বলেন, পাকিস্তান নাকি সাম্প্রদায়িক রাস্ট্র ছিল। আমিতো মনে ভারতও একটি সাম্প্রদায়িক হিন্দু রাস্ট্র ছিল এবং আছে। ভারতে দাংগার ইতিহাস নামক বইতে বলা হয়েছে এখনও ভারতে বছরে এক হাজার ছোটখাট দাংগা হয়। বড় দাংগা হলে আমরা খবর পাই। যেমন গুজরাটের দাংগা। গুজরাট দাংগার হোতা নরেন্দ্র মোদী এখনও নির্বাচিত হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী হয়। মোদীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। ভারত মূলত ধর্মীয় ভাবে একটি বর্ণবাদী রাস্ট্র। এদেশে হরিজনদের পুড়িয়ে মারা হয়। হরিজন নেতা ড.অম্বেদকার হরিজনদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ভারতের মুসলমানদের অবস্থাও একই রকম। ২০/২৫ ভাগ মুসলমান থাকলেও চাকুরীতে তাদের স্থান এক ভাগেরও কম।
ক’দিন আগে রামুতে যে ঘৃণ্য ও দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা দেশে বিদেশে হয়েছে। দেশের ভিতরে হয়েছে রাজনীতি। সরকার ওই ঘটনার জন্যে বিরোধী দলকে দায়ী করেছে। রামুর ঘটনা থেকে সবাই রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছেন। একই সময়ে মায়ানমার বা বার্মায় রোহিংগা মুসলমানদের উপর সেখান সরকার অত্যাচার করেছে। তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের হত্যা করা হয়েছে। বার্মার এই ঘটনা ছিল রাজনীতি ও অর্থনীতি। এই মার্মায় ১৯৪৪/৪৫ সালেও দাংগা হয়েছে। সে দাংগায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংগালী মুসলমান। বাংগালী মুসলমানদের তাড়িয়ে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দখল করেছিল বার্মিজরা। একজন বুদ্ধিজীবীও রোহিংগাদের সমর্থনে একটি বিবৃতি দেননি। ওই রাস্ট্রীয় দাংগাকে তাঁরা তেমন অন্যায় কিছু মনে করেননি। বাংলাদেশে কোথাও কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হাংগামা নেই। তবুও তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্মেলন করেন এবং প্রকাশ্যে বলেন, এখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। জেনেভা ক্যাম্পে অবাংগালীরা ৪০ বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তা নিয়ে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা একটি কথা বলেন না। তাঁরাওতো একটি সম্প্রদায়। তাঁরাতো এদেশে থাকতে চায়। ইতোমধ্যে সে ক্যাম্পে যারা জন্ম নিয়েছে তাদের বয়সও চল্লিশ পার হয়ে গেছে। ৭১ সালে যাদের বয়স ৫/১০ ছিল তাঁরাও এখন ৫০ পার হয়ে গেছে। তাঁরা আর কতকাল ক্যাম্পে থাকবে? রোহিংগারাও কক্সবাজারে ক্যাম্পে আছে । তাদের রাস্ট্র বের করে দিয়েছে। কারণ তারা একটি সম্প্রদায়। সারা পৃথিবীতে বহু দেশ বহু ক্যাম্প আছে। জাতিগত দাংগা, সম্প্রদায়গত দাংগা, বৈষম্যগত দাংগা, রাজনৈতিক দাংগা লেগেই আছে। আমার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা অবজারভেশন হলো সকল দাংগাই মানবতা বিরোধী। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণে দাংগা বাধানো হয়। এতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অদৃশ্য শক্তি লাভবান হয়।
বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড়ের মুসলীম বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রদায়ের স্বার্থের জন্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাও হয়েছে স্বার্থ ও সম্প্রদায়গত কারণে। পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের অধিকাংশ কর্মচারী ছিলেন অবাংগালী। ফলে সেখানে মারামারি লেগে থাকতো।
কিন্তু ঢাকার এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্মেলন করেন তখন তাঁদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই করেন এবং এজন্যে তাদের অর্থের জোগান দেন একটি অদৃশ্য সাম্প্রদায়িক শক্তি যাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে দেশ হিসাবে দেখানো। তাঁরা প্রমান করতে চান বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে। এই বুদ্ধিজীবীরাই আবার মৌলবাদ নিয়ে হৈচৈ করেন। মৌলবাদের কথা বলেই তাঁরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্‍সা রটনা করেন। বাংলাদেশের সাধারন মানুষের ভিতর কোথাও আমি সাম্প্রদায়িকতা দেখিনা। তাঁরা এ নিয়ে কখনও ভাবেন না। সাম্প্রদায়িকতা হলো রাজনীতিবিদ, একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আর ধনবানদের হাতিয়ার। ভারতে দাংগার ইতিহাস বইটি পড়ুন, দেখতে পাবেন এর মূল কারণ কি? দাংগার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করুন বুঝতে পারবেন এর বেনিফিসিয়ারি কে বা কারা।(প্রকাশিত অর্থনীতি প্রতিদিন, ৫ই জানুয়ারী,২০১৩)
লেখক: কবি ও কলামিস্ট
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


সরকার পাগল হয়ে গেছে,একটা রায় চাই / এরশাদ মজুমদার

শিরোনামের বাক্যটি আমার রচিত নয়। এটি বলেছেন,যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্যে গঠিত সরকারী ট্রাইবুনালের বিচারপতি নিজামুল হক সাহেব। সম্প্রতি দেশী বিদেশী মিডিয়ায় একটি খুবই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশে ইউটিউবে নাকি নিজাম সাহেবের সাথে জনৈক জিয়া উদ্দিন সাহেবের ট্রাইবুনালের বিচার নিয়ে যেসব আলোচনা বা কথাবার্তা স্কাইপের মাধ্যমে হয়েছে তা প্রচার করা হচ্ছে। ওই স্কাইপ আলোচনাতেই নিজাম বলেছেন, ‘সরকার পাগল হয়ে গেছে’। সরকার নাকি খুব দ্রুত গতিতে একটা রায় চায়। সেজন্যে দেন দরবার শুরু করেছে। সম্মানিত বিচারক নিজাম সাহেব ইতোমধ্যেই বিলেতের ম্যাগাজিন ইকনমিস্টকে নোটিশ জারী করেছেন স্কাইপের ব্যক্তিগত আলাপচারিতা প্রকাশ না করার জন্যে। তিনি অস্বীকার করেছেন বিচার নিয়ে কোথাও কোন কথা বলেননি। অথচ দেশবাসী কি আলোচনা হয়েছে সব জেনে গেছে। এখন নিজাম সাহেব কি বলবেন জানিনা। দেশের কয়েকজন নামজাদা আিনজীবী বলেছেন,নিজাম সাহেব বিচারক হিসাবে তাঁর অধিকার হারিয়েছেন। স্বেচ্ছায় তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। জানিনা নিজাম সাহেব পদত্যাগ করবেন কিনা। এর বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী সা্েবকে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। তারও প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাহেবকে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। তিনিও পদত্যাগ করেননি। এসব একেবারেই নৈতিকতার ব্যাপার। যাঁরা যে কোন পদ লাভের জন্যে তদবির করেন তাঁরা কখনও পদত্যাগ করেন না।
যেমন ধরুন,চোর ডাকাত, ঘুষখোর বেআইনী ও মন্দ কাজ করে বাড়তি আয় বা জীবীকার জন্যে। ধনী হয়ে গেলেও তরা এ কাজ ত্যাগ করেন না। তখন বেআইনী ভাবে অর্জিত টাকা বা সম্পদ তাদের মর্জাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থায় ঘুষ প্রকাশ্যে লেনদেনের বিষয়। ঘুষখোরের ছেলে মেয়েরা বিচারপতি সচিব সেনাপ্রধান হতে পারে। নামী দামী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিও হতে পারে। এখন ঘুষ কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়। বরং বেশী টকা হয়ে গেলে তিনি সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। বিচারপতিরাও খান। কারণ আমাদের সমাজে এখন বিত্তের হিসাবে মর্যাদা নির্ধারিত হয়। এখন একজন ধনী লোক বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে তার চেয়ারম্যান বা চ্যান্সেলরও হতে পারেন। যেমন ধরুন, ১/১১র কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান দুই ব্যক্তি এখন বিদেশে নির্বাসিত নিন্দনীয় জীবন যাপন করছেন। কিন্তু তাঁদের সাথী সহযোগী উপদেস্টারা বহাল তবিয়তে আছে সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে। নামের পাশে সাবেক উপদেস্টা লিখেন। ভিজিটিং কার্ডেও লেখা থাকে। টকশোতে যেয়ে জাতিকে উপদেশ দেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হন। যে বৃটিশ সরকার এ দেশকে ১৯০ বছর শোষন করেছে সেই বৃটিশের কাছ থেকে এখনো অনেকে টাইটেল গ্রহণ করে সম্মানিত বোধ করেন। বিয়েশাদীতে বৃটিশের দেয়া টাইটেল খুবই কদর পেয়ে থাকে। আমাদের মানসিকতা এখনও দাসের মানসিকতা। অমুক জমিদারের দাস ছিলাম বলতে আনন্দ বোধ করি। বাড়ির নাম দারোগা বাড়ি, চৌকিদার বাড়ি ইত্যাদি। প্রসংগক্রমেই এসব কথা বলছি।
আগের জামানায় শুনেছি, রাস্ট্র বনাম ব্যক্তির মামলার কথা শুনেছি। রাস্ট্র নাকি সব মামলায় হেরে যায়। ব্যক্তিরা টাকা পয়সা খরচ করে মামলা জিতে যায়। আবার সরকার যখন রাজনৈতিক কারণে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করে তখন নাগরিকের জিতার কোন সম্ভাবনা থাকেনা। সরকারকে জিততেই হবে। কারণ বিচারকগণ সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সরকার যেভাবে বলবেন সেভাবেই রায় হবে। স্কাইপে নিজামুল হক সাহেবের আলাপচারিতায় বুঝা গেল তিনি খুব চাপের মুখে আছেন। আিন প্রতিমন্ত্রী গোপনে তাঁর সাথে দেখা করেছেন। সরকার ডিসেম্বর মাসেই একটা রায় চান। বিচারপতি নিজামুল হক সাহেবের আলাপচারিতায় প্রমান হয়ে গেছে ট্রাইবুনালের কার্যক্রম বিদেশে অবস্থানরত কিছু লোকের নির্দেশনায় চলছে। এসব মানুষ বিদেশে থাকেন এবং দেশের ব্যাপারে তাঁদের কোন দায় দায়িত্ব নেই। প্রসংগক্রমে ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার(রা)কথা মনে পড়েছে। খলিফা মনসুর বিল্লাহ হানাফী মাজহাবের ইমাম আবু হানিফাকে (রা)প্রধান বিচারপতি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইমাম সাহেব রাজী হননি। ফলে ইমাম সাহেবকে জেলে পাঠানো হয়। তিনি আট বছর জেলে থাকেন এবং জেলেই মারা যান। এই ছিল একজন ইমামের চরিত্র। আর এখন বাংলাদেশ বিচারপতি হওয়ার জন্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করেন। সোজা কথায় বলতে হবে দলীয় আনুগত্য ছাড়া বিচারপতি হওয়ার জন্যে আর কোন গুণের প্রয়োজন নেই।
ক’দিন আগে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বিচারপতি মারক্যান্ডি কাটজু বলেছে,৯০ শতাংশ ভারতীয়ই নির্বোধ। ধর্মের নামে খুব সহজেই তাদের বিপথগামী করা যায়। তিনি বলেন,ভারতীয়দের মাথায় কোন মগজ নেই। খুব সহজেই তাদের বল্গাহীন ভাবে চালানো যায়। বিচারপতি কাটজু বলেন, ১৮৫৭ সালের আগে ভারতে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা। এখন দেশের ৮০ ভাগ মানুষই সাম্প্রদায়িক। ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,আপনারা ১৫০ বছর পেছনে পড়ে আছে। ইংরেজরা আপনাদের মাথায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশের কোন বিচারপতি বা বুদ্ধিজীবী এ রকম একট সত্যকথা কি বলতে পারবেন। যদি বলতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা আজ এ রকম হতোনা। ইদানিং সাংবাদিকদের মুরুব্বী ও আমার শিক্ষক মুসা সাহেব কিছু সত্য বাস্তব কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে কিছু আশার সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহপাক তাঁকে হায়াত দারাজ করুন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিচার আর মামলা নিয়ে আছে। দেশের মানুষ নাকি এখন শুধু মামলা আর হামলা চায়। দেশবাসীকে নাকি গ্লাণি থেকে মুক্তি দিতেই সরকার নানা ধরণের মামলা নিয়ে ব্যস্ত আছে। দেশের প্রবৃদ্ধি এখন নিম্নমুখি। কৃষক সমাজ তাঁদের উত্‍পাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেনা। লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানী কমে গেছে। অনেকেই বলছেন মুসলীম দেশ গুলো বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান নীতিকে সমর্থন করছেনা। সংসদে দাঁড়িয়ে সরকার দামীনামী মন্ত্রীরা আমেরিকাকে গালাগাল করছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিশ্বব্যান্কের দূর্ণীতির বিচার করবেন। অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যান্কের ঢাকা অফিসের বিবৃতিকে রাবিশ বলে প্রত্যাখ্যান করছেন। দূর্ণীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যান্কের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যান্ক দূর্ণীতির প্রমানাদি জমা দেয়ার পরেও সরকারের অনুগত দূর্ণীতি দমন কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী হয়নি। সরকারের নির্দেশেই শুধুমাত্র সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনকে বাঁচাবার জন্যেই নাকি দুদক নানা ধরণের বাহানা করছে। ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) দূর্ণীতির যে সূচক প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে দূর্ণীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বেশী অবনতি হয়েছে। এর আগে টিআইবি সংসদ সদস্যদের দূর্ণীতির উপরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল।
ভারতের সাথে বর্তমান সরকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার ত্যাগ করে, দেশের স্বার্থকে নস্যাত্‍ করে অন্তরংগ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেস্ট করেছিল। কিন্তু তেমন কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি দেশের মানুষ ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সজাগ থাকার নীতি অবলম্বনের পক্ষপাতি। কিন্তু সরকার তা করেনি। বরং সরকারের নেতারা বলেছেন ভারত আমাদের পরম বন্ধু , তার কাছে ইচ্ছা করলেই সবকিছু চাওয়া যায়না। ওটা নাকি ভদ্রতার বাইরে। ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মগত মানসিকতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এর আগে আমি বেশ কয়েকবার লিখেছি। ধর্মীয়ভাবেই ভারত একটি সাম্প্রদায়িক রাস্ট্র। তবে এর নেতাদের সাফল্য হলো তাঁরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নামাবলী গায়ে দিয়ে ভাল অভিনয় করতে পারছে এবং বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করতে পেরেছে। বাংলাদেশেও বহু বুদ্ধিজীবী মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ভারত একটি স্যেকুলার বা ধর্মহীন রাস্ট্র। সারা ভারতে ব্রাহ্মণের সংখ্যা হয়ত এক কোটি। আর ব্রাহ্মণদের সমর্থনে রয়েছে আরও কয়েক কোটি ক্ষত্রিয়। সব মিলিয়ে হয়ত দশ কোটি হবে । এরাই ভারত শাসন করেন। এ পর্যন্ত দিল্লী শাসন করে আসছেন ব্রাহ্মণরা। ভারতে ৩০ কোটি শুদ্র আর ৩০ কোটি মুসলমান অবহেলিত ও দলিত। ভারত ১৯৪৮ সালেই ইহুদী রাস্ট্র ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে ধর্মীয় কারণে। সেই ভারতের নেতাদের সাথে শেখ হাসিনার কোলাকুলি ও মাখামাখি। এর একটা গভীর রহস্য রয়েছে। বংগবন্ধু থাকলে এ অবস্থা হতোনা।
আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ তথাকথিত আল্লার আইন চালু হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবেনা , উন্নতিও হবেনা। আমি তথাকথিত সৈয়দ সাহেবের কথায় আমি অবাক হইনি। তিনি এর আগে তিনি বলেছিলেন,‘আমি হিন্দুও নই,মুসলমানও নই’। সোজা সাফটা সরল কথা। কোন রাখঢাক নেই। সেই সৈয়দই এখন বললেন তিনি আল্লাহর আইনও মানেন না। তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব খুবই বিনীত মানুষ ছিলেন। শুনেছি বংগবন্ধুও তাঁকে সম্মান করতেন। সেই সৈয়দ নজরুল সাহেবের ছেলে বলছেন,তিনি ধর্মে বিশ্বাস করেন না। লোকে বলে তিনি নাকি সারাদিন চুর হয়ে পড়ে থাকেন। সহজে অফিসে যান না। তাঁর স্ত্রীও নাকি একজন বিদেশিনী। আওয়ামী লীগের জন্যে এমন একজন সাধারন সম্পাদকই অপরিহার্য ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা নাকি নিয়মিত নামাজ রোজা করেন। পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। মাঝে মাঝে হিজাবও পরেন। কিসাসের কথা বলেন। তিনি জানেন তাঁকে এসব করতে হবে,কারণ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। রাজনৈতিক কারণেই দেশের মানুষকে খুশী রাখতে হবে,তাঁদের ভোট পেতে হবে।
বংগবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ। তিনি পাকিস্তানকে একটি কনফেডারেশন হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে তেমন সাথী সহযোগী পাননি। তিনি পেয়েছিলেন চাটার দল, কম্বলচোর, চোরের খনি। ফলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা তিনি গঠণ করতে পারেননি। তাঁর আত্ম জীবনী পড়লেই বুঝা যাবে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে কি অপরিসীম ত্যাগই না করেছেন। এই ত্যাগ ছিল সাধারন মানুষের ভালবাসার কারণে। সেই স্বপ্নের পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। পরোক্ষ ভাবে ভারত সমর্থন দিয়েছে। এসব কথা আমি আরও অনেকবার বলেছি। ভারত বাংলাদেশকে তার প্রভাব প্রতিপত্তিতে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই ৭১ সাল থেকে। বংগবন্ধু ভারতের দাদাগিরি কখনই মেনে নেননি। তিনি ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ভারত তখন থেকেই বংগবন্ধুর উপর নাখোশ ছিলো। অনেকেই মনে করেন, ফলে বংগবন্ধুর পতন হয়েছে। তখন শেখ হাসিনা বিদেশেই ছিলেন এবং এক সময়ে ভারতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বেশ দীর্ঘ কয়েক বছর ভারতের দিল্লীতে তিনি ভারত সরকারের প্রিয় মেহমান হিসাবে দিল্লীতে অবস্থান করেছেন। জিয়া সাহেবই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন ১৯৮০ সালের মে মাসে। ওই মাসের ৩০ তারিখে জিয়া সাহেব শহীদ হন। লোকে মনে করে জিয়া সাহেবের হত্যার সাথে ভারত ও তত্‍কালীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেই এসব হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়না। এইতো দেখুন না শেখ হাসিনা বংগবন্ধুকে যারা হত্যা করেছেন তাদের বিচার করেছেন। কিন্তু হত্যার কারণ ও রহস্য উদঘাটনের জন্যে কোন কমিশন গঠন করেননি। কারণ এর সাথে শক্তিশালী দেশগুলো জড়িত। সেই দেশ গুলোর সাথেই এখন শেখ হাসিনার খাতির ও গলাগলি চলছে। আসলে বিচার আচার গুলো হচ্ছে রাজনীতি এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে প্রভাবে রাখার একটি কৌশল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তেমনি একটি রাজনৈতিক কৌশল। লক্ষ্য মুসলমান ও ইসলামকে ধ্বংশ করা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পৃথিবীর কোথাও নিষিদ্ধ নয়। এমন কি ভারত পাকিস্তানেও নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। আসলে এটাও এক ধরণের রাজনীতি। জামাতের কয়েকজন নেতাকে ফাঁসী বা শাস্তি দিলে কি ইসলামী রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। জামাতের ৮০ ভাগ নেতার বয়স এখন ৫০ এর নীচে। ৭১ সালে তাঁরা কোন মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলনা। জামাতে ইসলামী নামটি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ কথা আওয়ামী লীগ ভাল করেই জানে। তবুও কেন তারা এ বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করছেন? কারণ একটি আর তা হলো ভারতের ইচ্ছা পূরণ করা। ভারত বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির বিকাশ চায়না। কিন্তু নিজদেশে বিজেপি, শিবসেনা, আরএসএস এর বিকাশ চায়। এতা হচ্ছে ভারতের চাণক্যনীতি। ভারতের রাস্ট্রীয় রাজনীতির মূলনীতি হলো হিন্দুত্ব বা হিন্দুদভা। ভারতবাসী সকলেই হিন্দূ। হিন্দু ছাড়া বাকিরা বিদেশী। বাল থেকারে সাহেব এই নীতিই প্রচার করতেন। ভারতের সকল রাজনীতিকই এই আদর্শের অনুসারী। তাই ভারত চায় বাংলাদেশের জনগণের মনে ধর্মীয় চেতনা দুর্বল হয়ে যাক। রাস্ট্র ধর্ম থেকে দূরে থাকবে। ধর্ম কালক্রমে ব্যক্তিগত ও গৃহের বিষয়ে পরিণত হবে। ভারতে বহু মসজিদ আছে যেগুলো এখন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। কারণ ওসব এলাকায় এখন কোন মুসলমান নেই। রাশিয়া চীনেও এক সময় মসজিদ গুলোতে তালা ঝুলতো । এখন তালা খুলে দেয়া হয়েছে। মুসলমানেরা আবার ধর্ম চর্চা শুরু করেছে।
অখন্ড বংগদেশ বা বাংলাদেশ একটি মুসলীম মেজরিটি দেশ। রাজনৈতিক কারণে সেই দেশ এখন খন্ডিত। হিন্দু প্রধান বলে পশ্চিম বাংলা ভারতের অধীনে। মুসলীম মেজরিটি বলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশে পরিণত হয়। পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা জান দিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই পূর্ব পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশ। কারণ এ অঞ্চল একটি মুসলীম মেজরিটি এলাকা। যদি এই এলাকা হিন্দু মেজরিটি হতো তাহলে ভারতেই থাকতো। এখনকার বহু নামী দামী তথাকথিত স্যেকুলার মুসলমান নামধারী বুদ্ধিজীবী ৪৭ এ ভারত ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছেন। কারণ তাঁদের মুরুব্বীরা বা পিতা বা দাদা মুসলমান ছিলেন। এখন তাঁরা ভারতের দালালী করেন হিনমন্যতার কারণে। মাওলানা ভাসানী বংগবন্ধু প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ এখন মুসলমান বিরোধী ভারতীয় দালালে পরিণত হয়েছে জেনে বা না জেনে। আমি মনে করি শেখ হাসিনা না জেনেই এ কাজটি করছেন।
বিচারপতি নিজামুল হক নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। আবার সেই প্রসংগে ফিরে আসি। কি রায় হবে, রায় কিভাবে ড্রাফট হবে তা নিয়ে নিজাম সাহেব জিয়া উদ্দিন সাহেবের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। মনে হচ্ছে জিয়াউদ্দিন সাহেব রায়টা ড্রাফট করে কয়েকদিনের মধ্যেই নপাঠাবেন। সমস্যা হলো কোন রায়টা আগে লিখবেন। সাঈদী সাহেবেরটা না গোলাম আজম সাহেবেরটা। কোনটা সহজ হবে সেটা নিয়েও তাঁরা আলাপ করেছেন। আলাপে বুঝা গেল সাঈদী সাহেবের রায়টা লিখতে সহজ হবে। সেখানে আইনের তেমন বালাই নেই। খুব তাড়াতাড়ি রায় লিখতে হবে। সরকারের চাপ আছে। একটা রায় অবশ্যই দিতে হবে। আমিতো মনে করি রায় দিয়ে আওয়ামী লীগের কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক লাভ হবেনা। কারো মনে যদি কোন প্রতিহিংসা থাকে তবে তা বাস্তবায়িত হতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি কোনদিনও বিলুপ্ত হবেনা। কারণ তা স্বাভাবিক অবস্থান নয়। কমিউনিষ্টরা রাজনীতি নকরতে পারলে ধর্মীয় দলগুলো রাজনীতি করতে পারবেনা কেন? বামপন্থী মোর্চা জামাতের রাজনীতি বন্ধ করার দাবীতে হরতাল ডেকেছে। অথচ তাদের কোন জন সমর্থন নেই। জাতীয় সংসদে একটি সীটও নেই। সারা দেশে তাদের এক লাখ ভোটও নেই। ।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে আগমন হয়েছে ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। এর আগে ১৯৭১ এর ২৬/২৭শে মার্চ আমরা প্রথম জিয়া সাহেবের নাম শুনি। তখন তিনি ছিলেন মেজর জিয়া। কালুরঘাট রেডিও থেকে দেশ ও বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন,‘আমি মেজর জিয়া বলছি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন দানের জন্যে আমি বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ঘোষণাটি হু বহু এ রকম ছিলনা, তবে মর্মার্থ এ রকমই ছিল। বিশ্ববাসী জিয়া সাহেবের এই ঘোষনা শুনতে পায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভুট্টোর সাথে যড়যন্ত্র করে ২৪শে মার্চের আলোচনা ভেংগে দিয়ে ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশের মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বংগবন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রায় সকলেই পালিয়ে যান। অনেকেই ভিতরের গোপন বিষয় জানতে পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু বংগবন্ধু নিজে ভারত যেতে রাজী হননি। এমন কি স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে রাজী হননি। এ ব্যাপারে পাঠক সমাজ তাজউদ্দিন সাহেবের সাক্ষাত্‍কার পড়তে পারেন। স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করাতে চাইলে বংগবন্ধু রেগে গিয়ে বলেছিলেন,তোরা কি আমাকে রাস্ট্রদ্রোহী বানাতে চাস। বংগবন্ধু জানতেন,পাকিস্তানী সেনা বাহিনী অভিযান চালাবার শুরুতেই তাঁকে গ্রেফতার করতে আসবে। তাই তিনি ৩২ নাম্বার রোডের নিজ বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ওই মূহুর্তের ঘটনা গুলো ডক্টর ওয়াজেদের বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের মানুষ এখনও জানেনা জেনারেল ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সাথে বংগবন্ধু ২৪শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত কি ডায়ালগ করেছেন এবং তার ফলাফল কি ছিল। আমরাতো শুনেছি,২৫শে মার্চ সারাদিন তিনি অপেক্ষা করেছেন সমঝোতাপত্র বা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে। তাহলে একটা সমঝোতা নিশ্চয়ই হয়েছিল। ভুট্টোই নাকি সেই সমঝোতা ভন্ডুল করে দিয়েছিল। সেই সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া ছিল ভুট্টো ও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতের পুতুল।
ভারত একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেটা হলো পাকিস্তানকে আক্রমনকারী বা এগ্রেসর হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। ভারতকে সে সুযোগ করে দিয়েছে পাকিস্তানের তত্‍কালীন বিমান বাহিনী প্রধান। এই ভদ্রলোক আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই ভারতের বিভিন্ন শহরে বোমা বর্ষন করেন। ঠিক ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন কোলকাতায়। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত দিল্লী ফিরে যান এবং ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান আক্রমণ করার আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান পরবর্তীতে তার বেঈমানীর জন্যে এক মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন। তিনি দেশ ত্যাগ করে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ৪ঠা ডিসেম্বর। ৭১ সালটি ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম ষড়যন্ত্রের বছর। আর এই ষড়যন্ত্রের প্রধান নায়ক ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ও ভুট্টো। বংবন্ধু সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলেন। তাই তিনি শেষ মূ্হুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর বেলা বংগবন্ধু নির্মম ভাবে নিহত হন তাঁর ৩২ নাম্বারের বাড়িতে। ফলে তাঁর সরকারের পতন হয় এবং এক দলীয় শাসন ব্যবস্থারও অবসান হয়। এরপর ক্ষমতা দখল করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ। তিনি রাস্ট্রপতি হয়ে সামরিক আইন জারী করে নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। তিনিই জেনারেল রাস্ট্রদূত নিয়োগ দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন এবং জেনারেল জিয়াকে সেনা বাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩রা নভেম্বর আরেকটি অভ্যুত্থান জেনারেল জিয়াকে তাঁর নিজ ভবনেই বন্দী করে রাখা হয়। জেনারেল খালেদ নিজেকে সেনা বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেন। ৪ঠা নভেম্বর জেনারেল খালেদের সমর্থনে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ একটি মিছিল বের করে। ফলে সাধারন সৈনিকদের ভিতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট হয়। তারই ফলে ৭ই নভেম্বর জেনারেল জিয়ার সমর্থনে সৈনিক জনতার বিপ্লব সাধিত হয়। খোন্দকার মোশতাক প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেবের কাছে রাস্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেন। বিচারপতি সায়েম জেনারেল জিয়াকে আবার সেনাবাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন।
জিয়া সাহেবের রাজনীতি শুরু করার প্রথম লগ্নে আমরা জড়িত ছিলাম জিয়া সাহেবের সমর্থনে আমরাই গঠন করেছিলাম ‘সিটিজেনস রে্লী কমিটি’ বা নাগরিক কমিটি। আমার বন্ধু সাংবাদিক আহমদ নজিরকে অনুরোধ করেছিলাম সে সময়ের কথা গুলো লিখার জন্যে। ওই সময়ের কথাগুলো বলার জন্যে পরে আর লোক পাওয়া যাবেনা। অনেক বার মনে করিয়ে দেয়ার পর তিনি একটি লেখা তৈরি করেছেন যার শুরুতে তিনি আমার প্রশংসা করে অনেক কথা বলেছেন, যা আমার মনে হয়েছে বেশী বলা হয়ে গেছে। আহমদ নাজিরের সে লেখাকে ভিত্তি করেই আমি এ লেখাটি তৈরি করার উত্‍সাহ পেয়েছি। এক বছর পাঁচ মাস ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৭৭ সালের ২২শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম অবসরে গেলে জিয়া সাহেব রাস্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশ পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের তাঁর উপর আস্থা আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে একই বছর ৩০শে এপ্রিল দেশব্যাপী আস্থা ভোটের আয়োজন করেন তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে। ১৯ দফা ছিল জিয়া সাহেবের রাজনৈতিক দর্শন। একই বছরের ১৫ই ডিসেম্বর তিনি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠণের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ‘জনগণই ক্ষমতার উত্‍স’।দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক শূণ্যতা বিরাজ করছে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যমেই এই রাজনৈতিক শূণ্যতার অবসান সম্ভব।ধর্ম বর্ণ গোত্র,নির্বিশেষে সব বাংলাদেশী এই ফ্রন্টে যোগ দিতে পারবেন। তবে তাঁদের সকলকেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হতে হবে।
পরে অবশ্য জিয়া সাহেব তাঁর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। আমরা যারা কোন রাজনৈতিক দলে ছিলামনা তারা নাগরিক কমিটি গঠণ করেছিলাম চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক এহতেশামের নেতৃত্বে। তাঁর বাসায় বেশ কয়েকটি সভা হয়। আমি আহমদ নজির ও মানু মুন্সী ছিলাম নিয়মিত কর্মী। পরে হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান ,শামসুল হুদা চৌধুরী আমাদের সাথে এসেছিলেন। আরও অনেকেই ছিলেন, তাঁদের সকলের নাম এখন মনে নেই। বংগবন্ধুর সমর্থক ও ভক্ত ঢাকার মাজেদ সর্দার সাহেবের সাথে এহতেশাম সাহেবের খাতির ছিল। তাঁরই অনুরোধে সর্দার সাহেব প্রথম ঘরোয়া সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেই সভাতেই সর্দার সাহেবকে সভাপতি ও এহতেশাম সাহেবকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠণ করা হয় জিয়া সাহেবের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার জন্যে। আহমদ নজির কমিটির প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ওই কমিটি জিয়া সাহেবের সমর্থনে খবরের কাগজে একটি বিবৃতিও দিয়েছিল।
প্রচারপত্র ও পোস্টার তৈরির দায়িত্ব পড়লো নজির আমি ও মানু মুন্সীর উপর। নজির খুব দ্রুত গতিতে একটি লিফলেটের খসড়া তৈরি করলেন। লীফলেট ছাপার জন্যে টাকা দিয়েছিলেন মাজেদ সর্দার সাহেব। ছাপার আগে সর্দার সাহেবকে লীফলেট দেখাতে হবে এটা আমরা ভাবিনি। ছাপানো লীফলেট তিনি যখন পড়লেন তখন একেবারেই ক্ষাপে গেলেন। সোজা বলে দিলেন ওই লীফলেট বিলি করা যাবেনা। আগেই বলেছি, সর্দার সাহেব ছিলেন শেখ সাহেবের একজন ভক্ত। তিনি জিয়া সাহেবকে সমর্থন করলেও বংগবন্ধুর কোন সমালোচনা করতে চাননা। ফলে নতুন লীফলেট ছাপতে হলো। আমি নিজেও সর্দার সাহেবের সাথে একমত ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য হলো জিয়া সাহেবের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করা। নাগরিক কমিটির পক্ষে আমরা স্টেডিয়ামের সামনে যে সভা আহবান করেছিলাম তাতে মাজেদ সর্দার সাহেব সভাপতিত্ব করেছিলেন। সর্দার সাহেবের সমর্থন ছিল বলেই আমরা রাজধানীতে পোস্টার লাগাতে ও লীফলেট বিলি করতে পেরেছি। মাজেদ সর্দার সাহেবের সমর্থন জিয়া সাহেবের জন্যে বিরাট অর্জন ছিল।
আমরা পুরাণো শহরে অনেকগুলো সভা করেছি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লালকুঠির সভা। এ সভার আয়োজন করেছিলেন মানু মুন্সী। মুন্সীর মতো এমন সত্‍ ও ত্যাগী মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। এক পর্যায়ে আমরা ঢাকা যুব সমাজ নামে একটি যুব সংগঠন করি। আমি ছিলাম এর সভাপতি ও মানু ছিলেন সম্পাদক। এই যুব সমাজের পক্ষ থেকে জিয়া সাহেবের ক্যাবিনেটের মন্ত্রীদের পুরাণো ঢাকায় সম্বর্ধনা দিয়েছিলাম। সে সময়ে চক বাজার ও লক্ষ্মী বাজারের অনেক যুবকের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সবাই ছিল খুবই ত্যাগী মানুষ। ওরাই লালকুঠির সভা আয়োজনে আমাদের সাহায্য করেছিল। ছাত্র যুবকের উপস্থিতিতে লালকুঠির হল ভরে গিয়েছিল। পুরাণো ঢাকার ওই যুবকরা ছিলো ঢাকা যুব সমাজের সদস্য। লালকুঠির সভায় আমি আহমদ নজির ছিলাম অতিথি বক্তা। রাজধানীতে যুব সমাজের কর্মীরাই জিয়া সাহেবের নির্বাচনের কর্মী ছিল। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাস্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জিয়া সাহেব মোট এক কোটি চুয়ান্ন লাখ ১৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেনারেল ওসমানী পেয়েছিলেন ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ভোট। জিয়া সাহেব ছিলেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও জেনারেল ওসমানী ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিচালিত গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে জেনারেল ওসমানী বলেছিলেন,দেশে রাজনৈতিক শূণ্যতা বিরাজ করছে। নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কর্মীরা গণতান্ত্রিক জোট প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্যে কাজ করেনি। অতীতের ব্যর্থতার কারণে কর্মীরা সাধারন মানুষের কাছে যেতে সাহস করেনি। যদিও নৌকাই ছিল জোটের প্রতীক। ১৯৫৪ বসালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীকও ছিল নৌকা। সে সময়ে মানুষের শ্লোগান ছিল ‘মুসলীম লীগের ভাংগা লণ্ঠন দে নিবাইয়া দে’। এবারের নির্বাচনে শ্লোগান ছিল, ‘কম্বল কেটে মুজিব কোট,আর দেবোনা নীকায় ভোট’। নির্বাচন সম্পর্কে গণতান্ত্রিক জোটের শরীক মোন্যাপের সভাপতি প্রফেসর মোজাফফর বলেছিলেন,সেশের গরীব মানুষ কেউ নৌকায় ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে জিয়াউর রহমানকে। জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচীতে গরীবের ভাত কাপড়ের কথা আছে। গরীবের উন্নয়নের কথা আছে। জিয়া যদি এই কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে আমি জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁকে সহযোগিতা করবো।
আগেই বলেছি আমরা জিয়া সাহেবের নাম প্রথম শুনেছি ৭১ সালের ২৬/২৭শে মার্চ। এই নাম নাজানা মানুষটাই কালুঘাট রেডিও থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যে সারা বাংলাদেশের মানুষ শুনেছে। শুধু হীনমন্যতার কারণে আওয়ামী লীগ এই মহাসত্যটি মানতে রাজী নয়। যদিও জিয়া সাহেবের ঘোষণার দ্বারা বংগবন্ধুর অবস্থান ও মর্যাদার কোন কমতি হয়নি। জিয়া সাহেব জীবীত থাকতেও বংগবন্ধুকে কখনও অমর্যাদা করেননি। আল্লাহপাকের কুদরত হলো এই মানুষটার নাম আমরা আবার শুনলাম ৭ই নভেম্বর। তিনি সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্যে রেডিও মাধ্যমে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। সৈনিকরা তাঁর নির্দেশ মেনে আবার ফিরে গেছে। সে সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে অনেক বই প্রবন্ধ/নিবন্ধ আছে। এর মধ্যে শাফাত জামিল লিখেছেন, কর্ণেল তাহের তাঁর গণবাহিনী নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। তাহের জিয়ার ইমেজ ব্যবহারের চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু জিয়া সাহেব তাতে রাজী হননি। তাহের সাহেব একজন ভাল মানুষ এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি হয়ত ভাবতেন বাংদেশ সেনা বাহিনীকে সমাজতান্ত্রিক সেনা বাহিনীতে পরিণত করবেন। তিনি সাধারন সৈনিক ভুল বুঝিয়ে অনেক অফিসারকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু সৈনিকরা যখন বুঝতে পেরেছিল এই বিপ্লবের সাথে জিয়া সাহেব নেই তখনি তাঁরা জাসদ এবং তথাকথিত গণবাহিনীর বিরুদ্ধে চলে গেল এবং জিয়া আহবানেই তারা ব্যারাকে ফিরে গেছেন।
গবেষকরা একদিন নিশ্চয়ই বের করতে পারবেন, সে সময়ে কর্ণেল তাহের সত্যিই কি করতে চেয়েছিলেন। অনেকেই বলেন, তাহের ভারতের ষড়যন্ত্রের খপ্পরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে দূর্বল করতে চেয়েছিলেন। বংগবন্ধুর আমলেও তাঁরা এই প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁরা ভারতীয় দূতাবাসে আক্রমণ করে দূতকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। আজ অনেকেই কর্ণেল তাহেরকে জাতীয় বীর বানাবার চেষ্টা করছেন। সে সময়ের একজন নায়ক ইনু সাহেব এখন নৌকার যাত্রী এবং শেখ হাসিনার সেবা করছেন। কৌশলগত কারণে বা ভারতের পরামর্শে শেখ হাসিনাও বংগবন্ধুর শত্রুদের নিয়ে রাজনীতি করছেন।
জিয়া সাহেব বাংলাদেশে যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি চালু করে গেছেন তা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অপরিসীম অবদান রাখছে। যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধারার সূচনা না হতো তাহলে বাংলাদেশ নেপাল সিকিমের ভাগ্য বরণ করতো। ১/১১র সরকার ভারতেরই নির্দেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে ভারতের সকল চাহিদা পূরণ করার জন্যে। শুধু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতি। এই ধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতি যর বেশী শক্তিশালী হবে ততই ভারতপন্থী ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী রাজনীতি দূর্বল হবে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ইসলামী রাজনীতিতেও নানা ধরনের দূর্বলতা ঢুকে পড়েছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী রাজনীতির এমন বিকাশ কখনই বিশ্বাস করা যায়না। কোথায় গলদ তা খুঁজে বের করার সময় এসে গেছে।

Read Full Post »


কবিতাপত্রের দশম বর্ষ পুর্তি

জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য কবিদের মাসিক প্রকাশনা কবিতাপত্রের দশ বছর পুর্তি হয়ে এগার বছরে পড়েছে। ২০০২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কবিতাপত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। যতদূর মনে পড়ে প্রথম সংখ্যার নাম ছিল আড্ডা। প্রকাশিত হয়েছিল ফসল অফিস থেকে। সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন কেজি ভাই,মানে প্রখ্যাত গীতিকার ও কবি কেজি মোস্তফা। কেজি ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে। এক সাথে কাজ করেছি দৈনিক জনপদে ১৯৭৩ সালে। ওই সময় থেকে প্রায় এক সাথেই আছি। কেজি ভাই সম্পর্কে বেশী বলতে গেলেও কম বলা হয়ে যাবে। সময় সুযোগ মতো অন্য সময় অন্য কোন জায়গায় বলবো।
২০০২ সালে আমি আমি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব পয়েটস কর্তৃক সম্মানিত হই ডিভাইন পয়েট হিসাবে আমার কবিতা প্রিডিলেকশান এর জন্যে। কবিতাটি ছাপা হয়েছে আমেরিকার একটি পয়েট্রি সংকলনে। ২০০২ সালর আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন ডিসির হিলটন হোটেলে কবিতা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে জাতীয় প্রেসক্লাব ভিত্তিক একটি কবিতা সংগঠনের চিন্তা ভাবনা শুরু করে বন্ধুদের সাথে আলাপ করি। এ ধরনের আলাপ আলোচনায় সবাই উত্‍সাহ দেয়। বলতে পারেন একশ’তে একশ’। সবাই রাজী যখন কাজটা শুরু করা যাক। কাজ মানে সময়,কাজ মানে অর্থ। এ ব্যাপারে একশ’তে পাঁচ জন। আসলে পাঁচ জনেই একশ’জনের কাজ করে। বাকিরা উত্‍সাহ দেন। সেটাই বা কম কি। সিদ্ধান্ত হলো আমরা কবিতা আন্দোলন শুরু করবো। ২০০২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর প্রথম কবিতা বৈঠক শুরু হলো। সকলের মত নিয়ে মাসিক প্রকাশনার নাম কবিতাপত্র ঠিক করা হলো। সেই থেকে মাসিক কবিতাপত্রের যাত্রা শুরু হলো। প্রতি মাসেই মাসিক কবিতাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেজি ভাইয়ের অবদান একশ’ ভাগ। নিরলস চেস্টায় প্রতি মাসেই লেখা সংগ্রহ করছেন, দিনের পর দিন লেখার জন্যে সবাইকে তাগিদ দিতে থাকেন। লেখা সংগ্রহ করে প্রেসে পাঠিয়ে, সে লেখার প্রুফ দেখে,সম্পাদনা করে ঠিক সময়ে কবিতাপত্র প্রকাশ করে যাচ্ছেন কেজি ভাই। প্রুপ বা অন্য কোন ভুল হলে সমালোচনার শেষ নেই। সে সব সমালো্চনাকে তিনি হাসি মুখে মোকাবিলা করেন।
অনেকেই বলেছেন, কবিদের সংগঠন হয়না। কবিরা এ কাজটা পারেন না। কবিরা খুবই আবেগ প্রবণ, সংবেদনশীল। অনেকেই বলেন, কবিরা খুবই আত্ম কেন্দ্রিক। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন। কবিরা প্রচন্ড প্রশংসায় ডুবে থাকতে ভালবাসেন। তাঁরা একাই পথ চলেন। তাঁরা সম্মানিত হতে ভালবাসেন। এমনিই হচ্ছে কবিদের জগত। এমনি একটি জগতে একটি কবিতা সংগঠনের দশ বছর টিকে থাকা কম কথা নয়। প্রতি মাসে কবিতা পাঠের আসর, প্রতি মাসেই ম্যাগাজিন প্রকাশ,বছরে দুটো বড় সম্মেলন করা,দ্বিভাষিক কাব্য সংকলন প্রকাশ করা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু কবিতাপত্র তা নিয়মিত করে যাচ্ছে। কবিতাপত্রের আরেকটি বিশেষ দিক হলো এখানে সকল মত ও পথের কবিরা এক সাথে আছেন এবং কবিতা প্রকাশ করে থাকেন। কবিতাপত্রের মাসিক অনুষ্ঠানে অতিথি কবিরাও নিয়মিত অংস গ্রহন করে থাকেন। বার্ষিক সম্মেলন ও বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনেক অতিথি কবিও কবিতা পাঠে অংশ গ্রহন করেন। ২০১২ সালের বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানকে একক ভাবে সহযোগিতা করেছিল মোবাইল কোম্পানী সিটিসেল। আমরা সিটিসেল কর্তৃপক্ষ ও এর সিইও মেহবুব চৌধুরীর কাছে ঋণী।
কবিতাপত্র টিকে থাকার ব্যাপারে জাতীয় প্রেসক্লবের অবদান সীমাহীন। আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করছি তাঁরা আগামীতেও কবিতাপত্রকে নিরলস সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। তবে এ কথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, কবিতাপত্র জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে একমত।
কবিতা হচ্ছে মানব মনের গভীরতম জগতের প্রকাশ। কবিতার জন্ম হাজার হাজার বছর আগে। এক সময় মানব জাতি কবিতাতেই মনের ভাব প্রকাশ করতো। গদ্যের জন্ম কবিতার বহু বছর পরে। বিশ্বের ধর্মগ্রন্থ গুলো প্রকাশিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। জগতের সব মূল্যবান কথা গুলো প্রচারিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। আলকোরাণ আল্লাহতায়ালার নিজস্ব ভাষা। এ ভাষাও নবীজীর(সা:) কাছে প্রেরিত হয়েছে কাব্যের ভাষায়। ফলে আলকোরাণ মুখস্ত বা হেফজ করতে হাফেজদের অসুবিধা হয়নি। পৃথিবীতে লাখ লাখ হাফেজ আছেন বর্তমানে যাঁরা পুরো আলকোরাণ মুখস্ত করে রেখেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে আলকোরাণের কাব্যিক গুণে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের যে কোন সদস্য কবিতাপত্রে কবিতা প্রকাশ করতে পারেন। কবিতার গুণ বা মান আমরা বিচার করিনা। সকলের কবিতাই প্রকাশ করা হয়। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা স্কুল জীবনে কবিতা লেখেছেন কিন্তু পরে আর লিখেননি। এখন উত্‍সাহিত হয়ে অনেকেই আবার কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে অনেকের কবিতার বই বেরিয়েছে এবং তাঁরা নিয়মিত কবিতার চর্চা করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সকল সদস্যই কবিতাপত্রের সদস্য। কেউ কবিতা লিখছেন, আর কেউ অপেক্ষা করছেন কখন লিখবেন। তাই আমরা সকল সদস্যকেই আমন্ত্রণ জানাই,আসুন কবিতার জগতে প্রবেশ করুন এবং নিয়মিত কবিতার চর্চা করুন।

এরশাদ মজুমদার
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
কবিতাপত্র পরিষদ
জাতীয় প্রেসক্লাব

Read Full Post »