সকালবেলা ৭৮
এক সকালে আমার সন্তান সানি বললো, বাবা তোমার বয়স হয়েছে একথা ভুলে যাও কেন? আমি প্রতিদিন প্রেসক্লাবে যাই। আড্ডা মারি। বন্ধুদের সাথে কথা হয়। বিশেষ করে কবি বন্ধুদের সাথে কবিতা সাহিত্য নিয়ে নানা আলোচনা। আমি জাতীয় প্রেসক্লাব কবিতাপত্র পরিষদের সভাপতি। পরিষদ থেকে প্রতি মাসে কবিতাপত্র নামে একটি ম্যগাজিন প্রকাশিত হয়। এটা সম্পাদনা করেন প্রখ্যাত গীতিকার ও কবি কেজি মোস্তফা।
ঘরে মানে বাসায় আমার কোন কাজ নেই। আমার বাসায় আড্ডা হয়না। প্রেসক্লাবে না গেলেও বন্ধু বান্ধবদের অফিসে গিয়ে আড্ডা দেই। তারাও খুশী হয়। ৬১ সালে অবজারভারের নবীশ রিপোর্টার হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করার পর ঘরে শোয়া ছাড়া থাকা হয়নি। তখন আমার বয়স মাত্র ২১। শিক্ষা জীবন শেষ কাকরাইলে একটি ছোট্ট বাড়ি নিয়ে থাকতাম আমি। সকালে তালা দিয়ে বেরিয়ে যেতাম, রাত গভীরে ফিরতাম। সকাল দুপুর রাত্রি প্রেসক্লাবে খেতাম।
বুঝতে পারি আমার দেহের বয়স ৭৪ বছর চলছে। বেশী কি কম বুঝতে পারিনা। তবে প্রচুর অষুধ খেতে হয়। নানা ধরণের নিয়ম কানুন মানতে হয়। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ডাক্তারদের কাছে যাওয়া যে কি কঠীন তা কেবল ভুক্তভুগীরাই জানেন। মনে হচ্ছে শরীরের ভিতরে কোথাও বিশাল ঝড় বইছে। প্রেসার এই বাড়েতো এই কমে যায়। সুগার ঠিক থাকেনা। তাকে ইনসুলিন দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়। খাওয়া দাওয়া নিয়ম মতো না হলে সুগার বেড়ে যায়, নয়তো কমে হাইপো হয়ে যাবার উপক্রম হয়। আবার সোডিয়াম পটাসিয়াম নিয়েও নানা বিড়ম্বনা। হাইপো হলে গা কাঁপে প্রচুর ঘাম দেয়, মনে হয় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আবার লবণ বা সোডিয়াম কমে গেলেও একই অবস্থা হয়। তবে স্মৃতির সমস্যা দেখা দেয়।
অবাক কান্ড হলো, আমাকে দেখে কারেই মনে হয়না আমার শরীরে এত অসুবিধা। আমি সব সময় হাসি খুশী থাকি। দুটি জিনিষ আমি কখনই অনুভব করিনা। দারিদ্র ও অসুখ। আপনি বা আপনারা যদি প্রশ্ন করেন, কেমন আছেন? আমি উত্তর দেই খুব ভালো, ফার্স্ট ক্লাস। অনেক বন্ধু বলেন, আপনাকেতো কেমন আছেন প্রশ্ন করা যাবেনা। আপনিতো সদাহাস্য, সদানন্দ, সদাসুখী। তবুও জানতে চাই এখন ফার্স্ট ক্লাসে আছেন, না সেলুনে আছেন।
আমি নিয়মিত কম্পিউতার ব্যবহার করি। সকাল বিকাল সময় করে নিয়মিত লিখি। এখন রূমী ও মনসুর হাল্লাজ অনুবাদ করছি। ইংরেজীতে হাইকু লিখছি। রূমী স্টাডি সার্কেল গঠন করেছি। স্মৃতিকথা লিখছি।
সবই করি শরীরের জন্যে। ব্যস্ত থাকলে সুখ আনন্দ আমার সাথে থাকে। একা থাকলেই অসুখেরা আমার সাথে ইয়ার্কি মারে। শুধু শরীরের জন্যেই রাত ৩/৪টা দিকে জায়নামাজে বসে জিকির করি। ২০/২৫ বছর আগেও করতাম। এতে হার্টের রক্ত চলাচল বাড়ে। আল্লার সাথে কিছুক্ষণ থাকা যায়।
বয়স হয়েছে একথা ভাবলে কি আমি সুস্থ থাকবো? বয়সতো রূহের হয়নি। দেহ পুরাণা হয়ে গেলে রূহ দেহ ছেড়ে চলে যায় যেখান থেকে এসেছে সেখানে। আমার সন্তান ও বিবির সমস্যা আমার শরীর নিয়ে। তারা আমার দেহের যৌবন চায় বা সুস্থতা চায়। আমি বুঝি শরীরটা অচল হলে ওদের কষ্ট বাড়বে। সংসারে অসুস্থ লোকের দেখা শোনা করা খুবই কঠীন। তখন সবাই মিলে দোয়া করে, ‘আল্লাহ তুমি ওনাকে সুস্থ করে দাও না হয় নিয়ে যাও’। ওনার কষ্ট ( আসলে আমাদের হবে) আমাদের আর সহ্য হয়না।