নারী অধিকার ও তালাকের মহামারী / এরশাদ মজুমদার
বাংলাদেশে তালাক বাড়ছে, সংসার ভাংগছে। বিশেষ করে রাজধানীতে মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনী ক্ষমতাবান পরিবারে তালাক বা ডিভোর্সের মহামারী শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনে গেলেই জানতে পারবেন তালাক বা ডিভোর্সের হাল হকিকত। অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে রাজধানীতে নিবন্ধিত বা রেকর্ডকৃত তালাকের মধ্যে মেয়েদের ডিভোর্সের সংখ্যা হলো শতকরা ৯০ ভাগ। দশ ভাগ ডিভোর্স দিচ্ছে ছেলেরা। এটা একটি সামাজিক বিষয়। এ নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা এগিয়ে আসতে পারেন। এ বিষয়টা নিয়ে আমি অনেকদিন থেকে ভাবছি। এ নিয়ে ইতোমধশেই আমি দুটো উপন্যাস লিখেছি। একটি ‘ডিমের খোসায় পথচলা’ এবং অপরটি ‘জেন্ডার ক্লাব’। দুটো উপন্যাসের বিষয় হচ্ছে রাজধানীর উচ্চবিত্তের মেয়েদের জীবন ও জীবন বোধ। বেশ কয়েক বছর আগে রোমে আনসা নিউজ এজেন্সীর সম্পাদকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম রোমে তালাক বা ডিভোর্সের হার কি রকম। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, রোমে তালাকের হার শূণ্য। আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম। আমার বিস্ময় ও অবাক হওয়া দেখে তিনি হেসে উঠলেন এবং বললেন রোমে কোন বিয়েই হয়না। তাই তালাক বা ডিভোর্সের প্রশ্ন উঠেনা। তিনি আরও বললেন, তাঁর জেনারেশনে ডিভোর্সের হার খুবই কম। কিন্তু পরের জেনরেশনে বিয়েই নেই। ছেলে মেয়েরা ‘লিভ টুগেদার করে’। যতদিন ভাল লাগে একসাথে থাকে। ভাল না লাগলে আলাদা হয়ে যায়। আইনের কোন ঝামেলা নেই। আনসা সম্পাদক আরও জানালেন, এখানে ক্যাথলিক ধর্ম ব্যবস্থায় বিয়েতে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। আবার ডিভোর্সের সময় ও অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। তাই নতুন প্রজন্ম বিয়ের ঝামেলা এড়িয়ে চলে। তিনি বললেন, তাঁদের জামানা শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুনদের জামানা। এমন কি তাঁর নিজের ছেলে বিয়ে না করে লিভ টুগেদার করে।
পশ্চিমে এখন আরও নানা রকম ঘটনা ঘটে চলেছে। ওখানে সমকামী বিয়ের অনুমোদ দিচ্ছে সরকার। আর এসবই হচ্ছে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের নামে। নামী দামী রাজনীতিকরাও সমকামী বিয়ের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছেন। পশ্চিমারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। ক্ষমতার জোরে পৃথিবী শাসন করছে। কিন্তু তাঁদের নৈতিকতার ব্যাপক পতন হয়েছে। ওইসব দেশে গণহারে স্কুলের ছোট ছোট মেয়েরা মা হচ্ছে। পিতারা নিজ কন্যাকে ধর্ষণ করছে। মন্দ মানুষের বিকাশ সৃস্টির শুরু থেকেই আছে। আমরা হাবিল কাবিলের কাহিনী শুনেছি। বেহেশতে বাবা আদমকে শয়তানের প্ররোচনার কথা শুনেছি। আদমের ক্ষমতা প্রার্থনার কথাও আমরা জেনেছি। শয়তান তার অবাধ্যতার জন্যে অভিশপ্ত হয়েছে। শয়তান হচ্ছে অহংকারের প্রতীক। অহংকার হচ্ছে স্বয়ং স্রস্টার গায়ের চাদর। কোন সৃস্টিরই অহংকার করার অধিকার নেই। শয়তান অহংকার করেই অভিশপ্ত হয়েছে। আমার এ কথা গুলো তাদের জন্যে প্রযোজ্য যারা শয়তানে বিশ্বাস করেন। মানুষ যদি শয়তানের অনুসারী হয় তাহলে মানুষও অভিশপ্ত হবে। তাই বলছি পশ্চিম থেকে আমরা সবকিছু গ্রহণ করতে পারিনা। শয়তানও সাধক ও জ্ঞানী ছিল। কিন্তু অহংকারী ছিল। আজকের পশ্চিমারাও অহংকারী। তারা ক্ষমতার অহংকারে দিশেহারা। সারা পৃথিবী আজ তাদের কারণে অশান্ত হয়ে পড়েছে।
পবিত্র কালামে পাকে সমকামিতার কুফল ও শাস্তি সম্পর্কে সাবধান বাণী রয়েছে। সমকামিতার জন্যে সদোম ও গোমোরাহ নামের দুটি নগর ধ্বংশ হয়ে গেছে। সমকামিতা স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ব্যাপার নয়। যারা এ পথে গেছে বা যাচ্ছে তারা কেউই স্বাভাবিক মানুষ নয়। সৃস্টির মূল রহস্যই হচ্ছে প্রজনন প্রক্রিয়া। সমগ্র সৃস্টি এই প্রক্রিয়ার প্রতিস্ঠিত হয়ে টিকে আছে। সমকামিরা সৃস্টি বিরোধী। আমাদের দেশেও সমকামি শূণ্যের কোঠায় আছে একথা বলা যাবেনা। তবে সমাজ ,আইন ও ধর্ম একে স্বীকৃতি দেয়না। সমকামিদের প্রকাশ্য কোন সামাজিক সংগঠণ বাংলাদেশে নাই বলেই জানি। সৃজনশীল সাহিত্য বা সৃস্টি কর্মে এ বিষয়টা এখনও তেমন ভাবে উপস্থাপিত হয়নি। ভারতে এ বিষয়টা খুবই প্রকাশ্য। সেখানে সামাজিক সংগঠণ আছে। তাদের আন্দোলন আছে। ভারতে সেক্স ওয়ার্কারদের সংগঠণও প্রকাশ্য। সেখানে অধিকার আদায়ের জন্যে নানা রকম আন্দোলন হচ্ছে। বাংলাদেশে পশ্চিমা অর্থে লালিত কিছু এনজিও সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে কাজ করার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর কোন সামাজিক স্বিকৃতি নেই।
নারী অধিকার আন্দোলন বাংলাদেশে এখন তুংগে। আমাদের নারী নেত্রীরা পশ্চিমাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত। পশ্চিমাদের কাছে থেকে টাকা পয়সা ও ধ্যান ধারণা নিয়ে এরা কাজ করেন। পশ্চিমারা নিজেদের ঘর সংসার, ঐতিহ্য ও ধর্মকে ধ্বংস করেছে। তারা তাদের নবী ইসাকে(আ) নিয়ে ব্যাংগ করে। নবী ইসাকে(আ) নিয়ে আজে বাজে সিনেমা বানায়। আমাদের নারী নেত্রীদের আদর্শ হচ্ছে পশ্চিমারা। জাতি সংঘ হচ্ছে ওই পশ্চিমাদের একটা আড্ডাখানা বা ক্লাব। জাতিসংঘ মানব কল্যাণে যতটুকু নিবেদিত তার চেয়ে অনেক বেশী নিয়োজিত মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্যে। নারী অধিকার আর নারী স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমাদের ভ্রান্ত ও বিপদগামী ধারণা এখন আমাদের নারীনেত্রীরা গ্রহণ করেছেন। পশ্চিমাদের তৈরী নারীনীতি গ্রহণ করার জন্যে বাংলাদেশে আন্দোলন করছে। ফলে আমাদের মেয়েরা বিভ্রান্ত। চলমান আওয়ামী সরকারের মাথায় তথকথিত স্যেকুলারিজমের ভুত চেপে বসে আছে। এ ব্যাপারে স্যেকুলারিম মার্কা কিছু রাজনৈতিক দল আছে যাদের মিডিয়া সাপোর্ট করে তারাই আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। দেশে কিছু দায়িত্বহীন বুদ্ধিজীবী আছে যারা সমাজ ঐতিহ্য, ইতিহাস ও ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে পশ্চিমাদের হাততালি অথবা দু’চার পয়সার স্কলারশীপ পেতে চায়। স্যেকুলারিজমের ভুত এখানে বহুদিন ধরে ঘুরাফিরা করছে। এরা তরুনদের মাথা খায়। যে বৃটেন এক সময় স্যেকুলারিজমের কথা বলেছিল সেই বৃটেনই এখন বলছে আমরা একটি খৃস্টদেশ। আমেরিকাও বলছে তারা একটি খৃস্টদেশ। কিন্তু আমাদের কিছুলোককে স্যেকুলারজম একেবারে গিলে খাচ্ছে। আমি এর বহুবার বলেছি স্যেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কোন কিছুই এ জগতে নেই। এটা হচ্ছে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ভন্ডামী। নিজের মূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। এরা বিভ্রান্তিতে আছে। মারা গেলে এদের পরিবার এদের লাশ নিয়ে বিপদে পড়েন। কারণ মৃত ব্যক্তি বলে গেছেন, তাঁর লাশ বা মরদেহ মেডিকেলে দেয়ার জন্যে। এটা ভাল পরামর্শ। কিন্তু কেউ যদি বলেন, তাঁর জানাজা যেন না পড়া হয়। ইদানিং মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। অনেকের মরদেহ কাঁধে নিয়ে সংগীত বাজানো হয় বা পরিবেশন করা হয়। সেদিক থেকে শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী সাহেব খুবই ভাল করেছেন। তিনি অছিয়ত বা পরামর্শ করে গেছেন তাঁর লাশ নিয়ে কি করা হবে। অনেকেরই ধারণা ছিল তাঁর লাশ শহীদ মিনারে নেয়া হবে এবং নানা রকম ভন্ডামী করা যেতো। সে সুযোগ তাঁর ভক্তরা পাননি।
আপনারা সবাই ইতোমধ্যে শুনেছেন বা পড়েছেন যে, বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে বিয়ে আইন জারী হয়েছে। যদিও এটা অনেক আগে জারী হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি সম্প্রতি। এ আইন মোতাবেক ধর্ম কোন বিষয় নয় বা বাধা নয়। বিয়ের জন্যে কাউকেই ধর্ম পরিবর্তন করতে হবেনা। শুধু সাক্ষী রেখে দলিল বানালেই চলবে। এ বিয়ের কাজী হচ্ছেন শ্রীযুক্ত প্রাণেশ সমাদ্দার। সারা দেশের জন্যে একজনই কাজী বা রেজিস্ট্রার। এ বিয়েতে ফি হলো পাঁচ হাজার টাকা। বছরে দু’চারটা ধর্মহীন বিয়ে হয়। দম্পতিরা নাকি সুখেই আছেন। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। কোন অসুবিধা হচ্ছেনা। সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁদের সন্তানদের নিয়ে। সন্তানরা কোন ধর্মের অনুসারী হবে তা ঠিক করা যাচ্ছেনা। এ ব্যাপারে সরকার এবং বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা করার সময় এসে গেছে। আদমশুমারীতে ধর্মের কলামে ধর্মহীনদের জন্যেও একটি কলাম রাখা দরকার হয়ে পড়বে। ধর্মহীনদের জন্যে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। চলমান আইনী ব্যবস্থায় সিভিল ম্যারেজের ব্যবস্থা আছে। মানে আদালত বা কোর্টে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যাবে। এই বিয়েতেও ধর্মের উল্লেখ করতে হয়। বর কনে একই ধর্মের না হলে বিয়ে রেজিস্ট্রী করা যায়না। ছেলে বা মেয়েকে মুসলমান হয়েই বিয়ে রেজিস্ট্রী করতে হয়। হিন্দু ধর্মীয় বিয়ের আইন গুলো এখনও পরিবর্তন হয়নি বাংলাদেশে। ভারতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এমন কি চীনেও হয়েছে। সবাই ইসলাম ধর্মের বিয়ের আইন গুলো কিছুটা অনুসরণ করেছে। বাংলাদেশেও হিন্দু বিয়ে ও পারিবারিক আইনের পরিবর্তন হও দরকার। এমন কি বর্ণবাদী শূদ্র ব্যবস্থার আইনটিরও পরিবর্তন হওয়া দরকার। মনুসংহিতার আইন মোতাবেক শুদ্রদের মানুষ বলে গণ্য করা হয়না। ভারতে আন্তবর্ণের বিয়ে হয়না। ভোটের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সব মানুষই সমান। বলা হয় নাগরিক হিসাবে সবাই সমান। ভারতের ৩০ কোট হরিজন বা শুদ্রকে ধর্মীয় কারণে মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয়না। বাংলাদেশে হিন্দুদের বর্ণবাদী আইনটি বাতিল করা দরকার। হিন্দুনেতারা বাংলাদেশে স্যেকুলার হতে চান কিন্তু বর্ণবাদ ব্যবস্থার অবসান চাননা।
হতভাগা মুসলমানরা কখনই নিজধর্ম সম্পর্কে ভাল ভাবে জানার চেস্টা করেনি। সব সময় বেহেশত দোজখ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে শত শত বছর ধরে। দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম নারী শিক্ষাকে বাধ্যতা মূলক করেছে। এ কথাটা বাংলাদেশের মুসলমানরা আজও ভাল করে জানেনা। যার বিদ্যা নেই সে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেল। অশিক্ষাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। তবুও বাংলাদেশের নারী পুরুষের বিরাট অংশ অশিক্ষিত বা বিদ্যাহীন রয়ে গেছে। আমি নিজেও ভেবে কুল পাইনা কেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষ কেন এখনও বিদ্যাহীন রয়ে গেছে। ইসলাম নারী পুরুষের বিদ্যাকে বাধ্যতামূলক করেছে দেড় হাজার বছর আগে। সে বাণী এখনও আমাদের কানে প্রবেশ করেনি। আমাদের যাঁরা ধর্মশিক্ষা দেন তাঁরা বিষয়টিকে সর্ব সাধারনের কাছে খোলাসা করেননি। কে করেননি তা তাঁরাই ভাল জানেন। বিদ্যাহীন জাতির ভবিষ্যত সব সময় অন্ধকার। পূর্ণাংগ ইসলাম জানলে আজ আমাদের অবস্থা এমন হতোনা। ৬শ’ সাল থেকে ১২শ’ সাল পর্যন্ত ইসলামই বিশ্ববাসীকে শিক্ষার আলো দান করেছে। এখন নিজের ঘরেই সেই আলো নিভে গেছে।
বিজ্ঞানের কিছু জ্ঞান ছাড়া পশ্চিমাদের কাছে এখন আমাদের শিখার মতো কিছুই নাই। এ কথা এখন এ দেশের সরকার বুদ্ধিজীবী কবি শিল্পী কাউকেই বুঝানো যাচ্ছেনা। চারিদিকে তাকালে মনে হয় সবকিছুর জন্যে শুধুই ইসলাম দায়ী । রাজনীতিক, মিডিয়া এবং পশ্চিমা প্রপাগান্ডা আমাদের অন্ধ করে দিয়েছে। আজ আমাদের সন্ত্রাসী বা টেরোরিস্ট বলে গালাগাল দিচ্ছে। নিজ দেশেও আজ মনে হয় মুসলমানরা মাইনরিটি হয়ে গেছে। আমাদের নির্বাচিত সরকারই সন্ত্রাসের নামে ইসলামের বিরোধী করছে। আমাদের আদালত জেনে হোক বা না জেনে হোক মাঝে মধ্যেই কোরাণী আইনের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে থাকেন। নিজেদের মনগড়া কোরাণের ব্যাখ্যা দেন। সরকারের ব্যবহারের কারণে সারা দেশে কিছুলোক কোরাণ ও রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে আজে বাজে কথা বলে। সম্প্রতি দিল্লী প্রবাসী সালাম আজাদ নামক এক বাংলাদেশী ইসলাম ও রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে একটা চটি বই লিখে বিতরণ করছে। বর্তমান সরকারের আসকারা পেয়েই সালাম আজাদ মার্কা লোকেরা এ ধরনের নোংরা বই লিখতে পারে। হিন্দুস্তান বাংলাদেশের এ ধরণের কিছু লোককে খোরপোষ দেয়। বিনিময়ে এরা নিজ ধর্ম, নিজ দেশ ও নিজ মানুষের বিরুদ্ধে কলম ধরে। আমরা যারা সালাম আজাদের মতো হীনমন্যতায় ভুগি তারাই দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলি। এ ধরণের মানুষকেই আমরা নানা মঞ্চে দেখি বুদ্ধিজীবী, কবি শিল্পী, শিক্ষক বিচারক হিসাবে। এদের বাহবা দেয়ার মতো লোকেরও অভাব নেই। সমাজ আজ এত অশান্ত হয়ে উঠেছে একমাত্র এদের কারণে।
এদেরই সন্তানরাই ধর্মের বিরুদ্ধে, সমাজের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। এরাই ক্লাবে যায়, মদ খেয়ে মাতাল হয়। এদের মা বাবারা এতে আনন্দিত হয়। এটা নাকি এদের সামাজিক মর্যাদা। নারী অধিকারের নামে এরা জরায়ুর স্বাধীনতা চায়। এরাই ধর্ম ও সমাজ বিরোধী নারী নীতি তৈরী করেছে এবং সেটা পাশ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। এদের গোত্রের লোকেরাই মহানবীর(সা) কার্টুন আঁকে। এরাই আদালতে বসে কোরাণ সুন্নাহর বিরুদ্ধে রায় দেয়। এরাই পরিবার ব্যবস্থাকে ভেংগে চুরমার করতে চায়। এইসব উঁচু দরের বুদ্ধিজীবীদের কন্যারা কুমারী মা হয়। দেশের ক্লিনিক গুলোতে যেয়ে খবর নিন, জানতে পারবেন হাজার হাজার এবর্শনের কথা। অনেক কন্যা নিয়মিত বড়ি খায়। এদের মা বাপ এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বিয়ের পরে এরা আর সংসার নামক ধর্ম পালন করতে চায়না। রাজধানীর সিটি কর্পোরেশনের ডিভোর্স সালিশী কেন্দ্রে গিয়ে খবর নিন। জানতে পারবেন রাজধানীতে তালাকের মহামারী লেগেছে। কোন কারণ নেই তবুও ডিভোর্স। কারণ ,আর ভাল লাগছেনা। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর কন্যরা চার/পাঁচ বার ডিভোর্স দিলেও কিছু আসে যায়না। এদের টাকা পয়সার অভাব নেই। এদের মা বাবারা খুবই প্রভাবশালী। ইতোমধ্যে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারেও এ রোগ ঢুকে পড়েছে। স্বামী স্ত্রী দু’জনই ব্যান্কে চাকুরী করেন। শিশু সন্তানটি থাকে নানী বা দাদীর কাছে। বাসায় ফিরার পথে শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়। বাসায় ফিরে চা তৈরী করা নিয়ে খিটমিট, তারপরে কন্যার পক্ষ থেকে ডিভোর্স। তারপরে শুরু হয় দুই পরিবারের মধ্যে মল্লযুদ্ধ। কেউ কারো চেয়ে কম যায়না। সমঝোতার কোন উদ্যোগ নেই। সবাই বিয়ে ভাংগার জন্যে উঠে পড়ে লেগে যায়। ধনী ও প্রভাবশালী লোকেরা চান ছেলেটা একটু পোষ মানিয়ে চলুক। টাকা পয়সারতো কোন অভাব নেই। আমাদের মেয়েটা একটু বেশী আদুরে। ছেলে মেয়ে দুজনই ধনী হলে সেখানে কথায় কথায় তালাক। না হয় জুতাপেটা বা লাঠালাঠি। মোহর এক কোটি টাকা তাতে কী?
আপনারা যে কোন একজন ধনী পরিবারের খবর নিন , যেখানে বাড়িতে পাঁচটি ড্রয়িং রুম আছে। মেয়ের ড্রয়িং রুমে সে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারছে রাতভর, মা বাবার কোন খবর নেই। ছেলের ড্রয়িং রুম, মায়ের ড্রয়িং রুম ও বাবার ড্রয়িং রুমেরও একই অবস্থা।বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানীতে এক নামকরা ধনীর কন্যা নিচতলায় খুন হয়েছেন যখন উপরে মা বা আড্ডায় ব্যস্ত ছিলেন। ছেলে বা মেয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এ ব্যাপারে মা বাবার কোন মাথা ব্যথা নেই। এসব পরিবারের মেয়েরা সহজে সংসার করতে পারেনা। আমি একটি পরিবারকে চিনি যেখানে মা বাবা দুজনই ডাক্তার। মায়ের রোজগার বাবার চেয়ে অনেক বেশী। মাসে পাঁচ দশ লাখ টাকা। রাজধানীতে কয়েকটা বাড়ি আছে। একটি মাত্র মেয়ে। অতি আদরের মেয়ে, অতি বেশী আদরের ভিতর মানুষ হয়েছে। মেয়েটিও খুব ভালো। খুব ভালো তার মন ও হৃদয়। তবুও তার সংসার করা হলোনা। কারণ, স্বামী তার মন বুঝতে পারেনা। সে যেভাবে চায় সেভাবে স্বামী চলেনা। ফলে মেয়েটির সংসার করা হলোনা। মা তার কন্যাকে রাজধানীর মনো বিজ্ঞানী বা মনো চিকিত্সকদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক্তারদের এক কথা, সংসার নামক বাস্তব জগতে মানিয়ে নিতে মেয়েটির সময় লাগবে। পথা একটই খোলা। তাহলো তালাক দেয়া এবং রাগের বসে স্বামীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা।অনেক বুঝিয়েও মেয়েটাকে সংসার করানোতে রাজী করা গেলনা।
আমি আরেকটা মেয়েকে চিনি। এই মেয়েটার বাবা একজন সাবেক ব্যান্কার। একটি ব্যান্কের এমডি ছিলেন। মা একজন চীফ ইজ্ঞিনিয়ারের মেয়ে। ব্যান্কার ভদ্রলোক একজন নরম বিনীত মানুষ। সারা জীবন স্ত্রীর বাড়িতেই ছিলেন। তাই তাঁর কোন ব্যক্তিত্ব ছিলনা। ফলে সংসারে ব্যান্কার ভদ্রলোকের কথার কোন দাম ছিলনা। তাঁর কথারও কোন মূল্য ছিলনা। অবসর নেয়ার পরও ভদ্রলোক চাকুরী করেন তাঁর স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ফার্মে।ভদ্রলোকের সন্তানেরাও বড় হয়েছে মায়ের আদর্শে। বড় মেয়ের দেয়াটা মায়ের এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত বড় মেয়েটা তিন বার বিয়ে করেছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে। প্রতিবারই নিজেকে কুমারী বলে পরিচয় দিয়েছে মেয়েটি এবং স্বামীর কাছে থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার আদায় করেছে। তালাক দেয়াটা এক শ্রেণীর মেয়ের কাছে ব্যবসা বা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে।
মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনীদের পরিবারে মেয়েদের তালাক এখন মহামারীতে পরিণত হয়েছে। এর এমাত্র কারণ, ধর্মীয় অনুভুতি ও চর্চার অভাব। নারী অধিকারের তথকথিত আন্দোলন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের বিভ্রান্ত করছে। একই ভাবে বস্তির গরীব মানুষদের ভিতর তালাক বিবাহ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বস্তিতে বিয়ের কোন নিবন্ধন হয়না। এখানে বেশ কিছু এনজিও কাজ করছে পারিবারিক মামলা নিষ্পত্তি করতে।( নয়া দিগন্ত, ১৩ই এপ্রিল,২০১২ )
লেখক: কবি ও সাংবাদিক