এর আগে অনেকবার লিখেছি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবি। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত আছে বলে আমার মনে হয়না।বেশ কিছুদিন ধরে কবির ১৫০তম জন্ম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি কবিগুরুকে নিয়ে সরকারী প্রতিস্ঠান বাংলা একাডেমী দুদিনের আন্তর্জাতিক অনুস্ঠানের আয়োজন করেছে। আন্তর্জাতিক মানে পশ্চিম বাংলার কিছু জ্ঞানী গুণীজনকে ঢাকায় এনে এর নাম দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক। পশ্চিম বাংলার গুণীজন দাওয়াত বা নিমন্ত্রন না পেলেও সোনার বাংলায় আসেন নিয়মিত। কারণ, তাঁরা এ বাংলাকে কখনও তাঁদের ভারতীয় বাংলাকে আলাদা মনে করেন না। প্রধান আকর্ষন ছিলেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত সেন। আমাদের নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের দিনকাল ভাল যাচ্ছেনা। দেশবাসী জানেনা , প্রধানমন্ত্রীর এত রাগ কেন ইউনুস সাহেবের উপর। আওয়ামী পন্থী কিছু লোক বলে নোবেলটা নাকি শেখ হাসিনার পাওয়ার কথা ছিল। ইউনুস সাহেব লবী করে নোবেলটা নিজের জন্যে নিয়ে নিয়েছেন। শুনেছি, প্রধানমন্ত্রীও লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন এ কাজের জন্যে। কিছু আমলা এ কাজে দুই পয়সা ব্যয়ও করেছেন। আমাদের কবিগুরু সম্পর্কেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তিনিও নাকি ইংরেজ সাহেবদের খুশী করে নোবেল জিতে নিয়েছেন। তাঁর দাদা মানে ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাহেবদের খেদমত করে বেসরকারী প্রিন্স টাইটেল পেয়েছিলেন। এটা কোন সরকারী তগমা নয়। বন্ধুরা আদর করে তাঁকে প্রিন্স ডাকতেন। সাহেবদের মনোরঞ্জনের জন্যে দ্বারকানাথ বাবু দুই হাতে টাকা খরচ করতেন। একই ভাবে রাম মো্ন বাবুর কোন রাজ্য রাজত্ব বা জমিদারী ছিলনা। খুব সম্ভব ১৮৩৩ সালে পতিত মোঘল বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর শাহ রাম মোহন বাবুকে রাজা টাইটেল দিয়ে দূত হিসাবে বিলেত পাঠিয়েছিলেন তাঁর পক্ষে তদবীর করার জন্যে। বাদশাহর দূত হিসাবে তিনি রাজা টাইটেল পেতেই পারেন।
আমাদের কবিগুরু শুধুই একজন বিশ্বখ্যাত কবি ছিলেন না, তিনি একজন জমিদার ও ব্যবসায়ী ছিলেন। সবই তিনি পেয়েছিলেন ওয়ারিশয়ানা সূত্রে। সওদাগর ও জমিদার হিসাবে রবীন্দ্রনাথ নাকি হিসাব নিকাশ ভালই করতেন। সেদিক থেকে বিচার করলে অনায়াসে বলা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথ একজন দক্ষ ম্যানেজারও ছিলেন।রাজনীতির ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহের কমতি ছিলনা। ভারতের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও একজন উচ্চ মানের কবি ছিলেন। কবি হিসাবে তিনি অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন। তিনি ১৮৫৮ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান সিপাহসালার ছিলেন। কবিগুরুর বিরুদ্ধে তাঁর কাব্য জগত নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা আছে। জগতে কবির সাহিত্য যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আলোচনা সমালোচনাও থাকবে। আমি ব্যথিত হই যখন দেখি কবিগুরু তাঁর জমিদারী ও সওদাগরী স্বার্থে গণমানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁরই সময়ে তাঁরই স্নেহধন্য অনুজ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইংরেজের বিরুদ্ধে কথা বলেও লিখে জেলে গিয়েছেন। আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এই প্রসংগে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা দুটো কথা বলতে চাই। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিহারের পাটনা দখল করে তখন বিপ্লবী কবি নজরুলের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পাটনার প্রধান বিচারপতি। প্রাণের ভয়ে তাঁরা আত্ম গোপন করে পালিয়ে বর্ধমানের আসানসোলে আশ্রয় গ্রহন করেন। ওই একই সালে কবিগুরুর পূর্ব পুরুষ নীলমনি ঠাকুর উড়িষ্যার দেওয়ানীতে আমিনগিরির চাকুরী গ্রহণ করেন। দ্বারকা নাথও এক সময় ইংরেজ সাহেবদের মুন্সী ছিলেন। সেখান থেকেই সাহেবদের দালালী ও ফড়িয়াবাজী করে তিনি অর্থ কামিয়েছেন। তারপরে প্রিন্স ও জমিদার হয়েছেন। রাম মোহনও এক সময় মুর্শিদাবাদে পেশকার ছিলেন।
আমার আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রবীন্দ্র নাথ মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন। মানুষের যে সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো তাঁ ছিল কিনা । তিনি কি তাঁর কাব্যের কারনে দেবতার আসনে পৌঁছে গিয়েছিলেন কিনা। রবীন্দ্র নাথের প্রজারা তাঁর সম্পর্কে কি বলতেন। রবীন্দ্রনাথের কাব্য বা সাহিত্য থেকে তেমন আয় ছিলনা। তাঁর কাব্যের ইংরেজী অনুবাদের জন্যে তিনি নোবেল পেয়েছিলেন। নোবেল পাওয়ার পর তাঁর দিকে দেশে ও বিদেশে সবার নজর পড়ে। রবীন্দ্রনাথ কখনই সমালোচনার উর্ধে ছিলেন না। কবি হিসাবেও তিনি বহুল সমালোচিত। জমিদার ও বাবসায়ী হিসাবেও তিনি তাঁর অমানবিক কাজের জন্যে সমালোচিত। ভারতীয় গবেষকরা কবিগুরুকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা, আলোচনা সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের বাংলাদেশে তেমন গবেষণা বা আলোচনা হয়না। এখানে যা হয় তা হলো বন্দনা। এখানে কবিগুরুর মানসদাস ও পূজারী আছে। মনে হয় তিনি অবতার বা দেবতায় পরিণত হয়েছেন। এ বিশ্ব যত বড় নামী দামী মানুষ আছেন বা ছিলেন তারা কেউই সমালোচনার উর্ধে নন। মানুষ ভুলের অধীনেই জীবন যাপন করে। যাঁরা শাসক তাঁরা তাঁদের আসন ব্যবস্থার জন্যে সমালোচিত হন ঐতিহাসিকদের কাছে। আমদের সমকালের ইতিহাসের দিকে একবার তাকান। এইতো দেখুন না, বংগবন্ধু একজন বিখ্যাত রাজনীতিক। বাংলাদেশের মানুষের জন্যে সারা জীবন সংগ্রাম করেছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসাবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাস্ট্রপতি হিসাবে কম সমালোচিত নন। যদিও আওয়ামী লীগ ও বংগবন্ধুর অন্ধ ভক্তরা কোন ভাবেই বংগবন্ধুর সমালোচনা সহ্য করতে চায়না। জগতকে যাঁরা পরিবর্তন করেছেন সেই নবী রাসুলগণ তাঁদের প্রতিপক্ষের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী আল্লা্পাকের শেষ রাসুল হজরত মোহাম্মদ(সা)কে মক্কাবাসী তাঁর আত্মীয় স্বজন সীমাহীন অত্যাচার করেছে।
সেখানে রবীন্দ্রনাথ বা বংগবন্ধু কিছুইনা। এঁরা দুজনই সাধারন মানুষ। একজন কাব্য জগতের বাদশাহ, অপরজন গণমানুষের নেতা। কিন্তু তাঁদের যে ভুল ভ্রান্তি নেই একথা আমরা কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি? বাংলাদেশে এক নতুন সংস্কৃতি চালু হয়েছে। যাঁদের ক্ষমতা বেশী বা দলভারী তাঁদের কোন সমালোচনা করা যাবেনা। আমাদের এখন যে অভ্যাস হয়েছে তাতে আমরা শান্ত হয়ে কোন বিষয় বুঝতে চাইনা, অথবা সত্য হলেও অন্যের ভিন্নমতকে সহ্য করতে চাইনা। চলমান বাংলাদেশের রাজনীতির ভাষা দেখেই আপনারা বুঝতে পারছেন আমরা কত অসহনীয় উঠেছি। মনে হয়, আমরা কোন অসভ্য জাতি হাজার বছর আগের কোন সমাজে বাস করছি। রাজনীতিবিদদের ভাষা দেখে মনে হয় তাঁরা আদব কায়দা, আচার ব্যবহার, ভদ্রতা নম্রতা, সত্যমিথ্যা একেবারেই ভুলে গেছেন। বংবন্ধুর জামানায়ও অবস্থা এত খারাপ ছিলনা। এইতো দেখুন না ড. ইউনুসকে ত্যাগ করে আমরা ভিনদেশী ড. অমর্ত্য সেনকে নিয়ে নাচতে শুরু করেছি। আমাদের হাবভাব দেখে সেন বাবু নিশ্চয়ই মনে মনে হাসছেন অথবা কস্ট পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুবই আনন্দিত। বংগবন্ধুর কন্যা ও আমাদের একজন জাতীয় নেত্রী ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে বহু ডক্টরেট সম্মাননা পেয়ে খুবই আলোচিত হয়েছেন। ক’দিন আগে বাংলা একাডেমীর ফেলোশীপ নিয়ে ক’দিন পরেই যাবেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আরেকটি ডক্টরেট সম্মাননা সংগ্রহের জন্যে। যাক এসব হলো প্রাসংগিক বিষয়।
রবীন্দ্রনাথ যখন জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৮৬০ সালে। তার কিছুদিন আগেই ১৮৫৮ সালে ইংরেজদের হাত থেকে ভারতকে স্বাধীন করার জন্যে সকল মত ও পথের সৈনিকরা শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে নেতা মেনে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। সেই বিদ্রোহে ভারতের হাজার হাজার ভারতীয় সৈনিক প্রাণ দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ যে ঠাকুর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন ধনমানে তার বিকাশ ঘটেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও ইংরেজদের আমলে তাদেরই আনুকুল্যে। তাই ঠাকুর পরিবার কখনই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেনি। সুস্পস্ট ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলা দখল করার পর শুরুতেই ইংরেজদের দালালী ও মোসাহেবী যারা করেছিল তন্মধ্যে ঠাকুর পরিবার অন্যতম। ১৭৬৫ সালে নীলমনি ঠাকুরই প্রথম দেওয়ানীতে চাকুরী পান। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আমিনগীরির চাকুরি থেকেই নীলমনি দু পয়সা কামিয়ে নিলেন। আমাদের দেশের আমিনরা এখনও জরীপের সময় ওই ভাবেই টাকা কামায়। একজনের জমি আরেকজনকে দিয়ে টাকা কামায়।
১৪০৬ সালে ২৮শে কার্তিক আনন্দবাজার পত্রিকায় রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন, কোলকাতা শহরে দ্বারকানাথের ৪৩টি সাহেবপাড়া ছিল। এইসব পাড়া ছিল বিদেশী জাহাজে আগত সাহেব ও শ্রমিকদের মনোরঞ্জনের জন্যে। এছাড়াও তখন তাঁর মদ ও আফিমের ব্যবসা ছিল। প্রমোদ সেনগুপ্ত তাঁর বই ‘নীল বিদ্রোহ ও বাংগালী সমাজে লিখেছেন,১৮২৪ সালে অত্যাচারী নীলকরদের ২৭১টি নীল কারখানা ছিল। দ্বারকানাথ বাবু তাঁর বন্ধুদের ছিল ১৪০টি। দেশী এবং বিদেশী নীলকররা ধান চাষীদের নীল চাষ করতে বাধ্য করতো। নীল চাষ করতে রাজী না হলে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হতো। দ্বারকানাথের পরে দেবেন্দ্রনাথ জমিদারীর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন।জন্মসূত্রে পিতার চরিত্র, ব্যবসা বাণিজ্য, ইংরেজ দালালী ও জমিদারী পেয়ে তিনি হয়ে উঠলেন মহর্ষি। নির্ম হাতে প্রজা দমন করে দেবেন্দ্রনাথ সুখ্যাতি অর্জন করেন।আশোক চট্টোপাধ্যায় তাঁর ” প্রাক বৃটিশ ভারতীয় সমাজ’ বইতে উল্লেখ করেছেন, কাঙাল হরিনাথ লিখেছেন, ‘ধর্ম মন্দিরে ধর্মালোচনা আর বাহিরে আসিয়া মনুষ্য শরীরে পাদুকা প্রহার একথা আর গোপন করিতে পারিনা’। কাঙাল হরিনাথের অপ্রকাশিত ডায়েরীতে লিখেছেন, ” নানা প্রকার অত্যাচার দেখিয়া বোধ হইল পুষ্করিণী প্রভৃতি জলাশয়স্থ মত্স্যের যেমন মা বাপ নাই , পশুপক্ষী ও মানুষ , যে জন্তু যে প্রকারে পারে মত্স্য ধরিয়া ভক্ষণ করে ,তদ্রুপ প্রজার স্বত্ব হরণ করিতে সাধারণ মনুষ্য দূরে থাকুক , যাহারা যোগী ঋষি ও মহাবৈষ্ণব বলিয়া সংবাদপত্র ও সভা সমিতিতে প্রসিদ্ধ, তাহারাও ক্ষুত্ক্ষামোদর।”
”প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে ঠাকুর বাড়ির অত্যাচারের প্রতিশোধ নেবার বিক্ষিপত্ চেস্টা করিয়া ব্যর্থ হয়। ঠাকুর বাড়ি থেকে বৃটিশ সরকারকে জানানো হলো , একদল শিখ বা পাঞ্জাবী প্রহরী পাঠাবার ব্যবস্থা করা হোক। মঞ্জুর হলো সংগে সংগে। সশস্ত্র শিখ প্রহরী দিয়া ঠাকুরবাড়ি রক্ষা করা হলো আর কঠিন হাতে নির্মম পদ্ধতিতে বর্ধিত কর আদায় করাও সম্ভব হলো। অশোক চট্টোপাধ্যায় আরও লিখেছেন, ” অথচ এরাও কৃষকদের উপর চরম অত্যাচার করিতে পিছ পা হয় নাই। কৃষকদের উপর অতিরিক্ত কর ভার চাপানোর ব্যাপারে ঠাকুর পরিবার ছিল সবার উপরে। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার। তাঁর জমিদারীর একটা বড় অংশ ছিল আমাদের আজকের বাংলাদেশে। তাঁর প্রজাদের ৮০ ভাগই ছিলেন হতভাগ্য মুসলমান কৃষক। দেবেন্দ্রনাথের পরে জমিদারীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। গণ অসন্তোষ ও ঊনিশ শতকের বাঙালী সমাজ বইতে স্বপন বসু লিখেছেন, ” মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের এতগুলো ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি জমিদার হিসাবে নির্বাচন করলেন চৌদ্দ নম্বর সন্তান রবীন্দ্রনাথকে। এও এক বিস্ময়। অত্যাচার, শোষণ, শাসন, চাবুক, চাতুরী , প্রতারণা ও কলা কৌশলে রবীন্দ্রনাথই কি যোগ্যতম ছিলেন?
কবিগুরু মূলত প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যুক ঈশ্বর গুপ্ত ও বন্কিম চন্দ্রের ভক্ত ও অনুসারী ছিলেন। ঈশ্বর গুপ্ত প্রকাশ্যেই ইংরেজদের বন্দনা করেছেন। মুসলমানদের তিনি শত্রু মনে করতেন। বন্কিম বাবু ইংরেজদের সহযোগিতায় হিন্দু ধর্মের সংস্কার করেছেন। কবিগুরুর পরিবার ছিল হিন্দুমেলার প্রতিস্ঠাতা। এই পরিবার ব্রাহ্ম ধর্মেরও প্রতিস্ঠাতা ছিল। যোগেশ চন্দ্র বাগল লিখেছেন হিন্দু মুসলমান ভেদনীতির জন্ম হয়েছে এই হিন্দু মেলা প্রতিস্ঠার মাধ্যমে। প্রভাত কুমার মুখপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, কবিগুরু বন্কিমকে অনুসরণ করেই লিখেছেন, ” ম্লেচ্ছ সেনাপতি এক মহম্মদ ঘোরী, তস্করের মতো আসে আক্রমিতে দেশ।” ব্রাহ্মদের পোষাক প্রসংগে কবিগুরু লিখেছেন, ‘‘ ধুতিটা কর্মক্ষেত্রে উপযোগী নহে অথচ পাজামাটা বিজাতীয়।” কবিগুরু নিজে কখনই বলেন নি যে, তিনি ধর্মের ব্যাপারে উদার ছিলেন বা স্যেকুলার ছিলেন। তিনি নিজ ধর্ম ও জাতির কল্যাণ ও রক্ষায় জীবন নিবেদন করেছেন। এতে তাঁর কোন ধরনের ভড়ং বা ভন্ডামী ছিলনা। জমিদারী ,ব্যবসা বাণিজ্য ও কমিশন এজেন্ট হিসাবেও তাঁর কোন ধরনের লুকোচুরি ছিলনা। একজন খাঁটি ব্রাহ্ম হিন্দু হিসাবে তিনি সব সময় স্বজাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। স্বজাতির পক্ষে বলেছেন ও লিখেছেন। আমি এতে দোষের কিছু দেখিনা। বরং আমি এটাকে ন্যায় সংগত মনে করি। স্বজাতির স্বার্থ রক্ষা করতে যেয়েই তিনি নতুন প্রদেশ পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করেছেন। সেই সময়েই তিনি ‘ আমার সোনার বাংলা’ গাণটি রচনা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিস্ঠার বিরোধিতা করেছেন। সে সময়ের হিন্দু নেতারা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়কে মক্কা বিশ্ব বিদ্যালয় বলে গালাগাল দিয়েছেন।
কবিগুরুকে বাংলাদেশের কবি হিসাবে গ্রহণ করার জন্যে একদল মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে। এদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। বংগবন্ধু বিষয়টা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন। তাই তিনি বাংলা ভাষার একমাত্র বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বংগবন্ধুর জীবনে এটা একটা মহা গুরুত্পূর্ণ কাজ। তাই নজরুল আজ আমাদের জাতীয় কবি। শুনেছি, তিনি নজরুলের একটি কবিতাকে জাতীয় সংগীত করতে চেয়েছিলেন। নজরুলের রাজনীতি ও কাব্য অবদানকে খাটো করে দেখার জন্যেই ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাড়াবাড়ি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। যে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে সারা জীবন কলম ধরেছেন এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন সেই মানুষটাকে বাংলাদেশে দেবতার আসনে বসাবার জন্যে ষড়যন্ত্র করছে এক শ্রেণীর দাস মনোবৃত্তির এক শ্রেণীর ভারত ও হিন্দু ঘেঁসা বুদ্ধিজীবী। এরা বাড়াবাড়ি না করলে আমাদেরকে কলম ধরতে হতোনা। কবিগুরুর কাব্যগুণ যতই শ্রেষ্ঠ হোকনা কেন তিনি কখনও বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কল্যাণ কামনা করেননি। তত্কালীন পূর্ববংগের প্রজাকুলের(হিন্দু হোক,মুসলমান হোক) কবিগুরু কোন কল্যাণমুলক কাজ করেছেন তার কোন প্রমান কারো কাছে নেই। সাহিত্যের ক্ষেত্রে কবিগুরুর অনেক চৌর্যবৃত্তির অনেক দলিল রয়েছে যা আজ আর উল্লেখ করতে চাইনা। সময় মতো অন্য কোন সময় বলা যাবে।
Read Full Post »