ক’দিন আগে ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ নামের একটি ভারতীয় ছবি দেখেছি। এ রকম ছবি বাংলাদেশে তৈরি হয়না বা লোকে দেখেনা। ছবিটার বিষয় ছিল মানুষ বড় না আইন বা আদালত বড়? সত্য বড় না আইন বড়? এ কথা গুলোর উত্তর আমি বুদ্ধি হওয়ার পড় থেকে খুঁজে আসছি। এখনও পাইনি। স্কুল কলেজের পড়ালেখা শেষ করেই মূল্যবান সমাজের পছন্দনীয় চাকুরী না করে খবরের কাগজে চাকুরী নিয়েছিলাম বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। বিয়ের বাজার ,বাড়ি ভাড়ার বাজার কোথাও সাংবাদিকের দাম ছিলনা। সাংবাদিক শুনলেই কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চাইতোনা। পাড়ার দোকানীরা বাকি দিতে চাইতোনা। আমার ব্যাপারটা একটু আলাদা ছিল।
আমি প্রথমে নবীশ হিসাবে চাকুরী নিয়েছিলাম পাকিস্তান অবজারভারে মাত্র একশ’ টাকা পকেট এলাউন্স হিসাবে। বাকি টাকা বাবার কাছ থেকে নিতাম না দিলে গোস্বা করতাম। বাবার বড়ছেলে হিসাবে সীমাহীন আদর করতেন। কারণ, আমার মা ছিলনা। বাবা শুধু একবার বলেছিলেন তুমি বড়ছেলে, বুঝে শুনে কাজ করো।
৪৭ সালে আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দে মানুষ বিভোর। কারণ,পাকিস্তান অবহেলিত ও নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তি ও কল্যাণের জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যখন পাকিস্তান ভেংগে যায় তখন আমার বয়স ৩১। বাংগালী মুসলমানের মুক্তির জন্যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন বিদেশী শোষক শাসকরা আর নেই। এখন আমাদের সম্পদ আর কেউ লুট করবেনা। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি অতি কাছে থেকে ভিতরে ও বাইরে থেকে। ২৫শে মার্চের রাত দেখেছি অবজারভার হাউজে থেকে। আবার ১৬ই ডিসেম্বর আনন্দে নেচেছি ঢাকার রাস্তায় মাতালের মতো। আমি বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে মানুষের মুক্তি চেয়েছি। শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেছি। স্কুল কলেজে এবং সাংবাদিকতা জীবনের শুরুতে লোকে আমাকে নাস্তিক বলতো। আমি নাকি বাম চিন্তাধারার লোক ছিলাম। সরকারী গোয়েন্দারা নিয়মিত জ্বালাতন করতো। ৭১ সালে ফেণী নদীতে আমার লাশ অনেকেই দেখেছেন বলে আমি নিজেও শুনেছি।
এখন বন্ধুরা বলেন আমি নাকি মৌলবাদী। আমি ইসলামিস্ট,মনে হয় ইসলাম নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা খুবই নিন্দনীয় কাজ। ইসলাম আর মুসলমান যেন বিশ্ববাসীর জন্যে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই যেন দূর দূর করে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। একই অবস্থা বিরাজ করেছে ৬০ সালের দিকে। তখন বামপন্থী বলে সবাই নিন্দা করতো।
এবার মূল কথায় ফিরে আসি। ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ফিল্মটি জনমত, আইন ও মিডিয়ার ভুমিকা নিয়ে তৈরি। জেসিকা মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে। একটি পার্টিতে এক মন্ত্রীর ছেলে সবার সামনে জেসিকাকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু কোন সাক্ষী পাওয়া গেলনা। কেউ নাকি দেখেনি। তাই আদালত জেসিকা হত্যার অভিযোগে কাউকে দায়ী করতে পারেননি। জেসিকা নিহত হয়েছে একথা সত্য, কারণ লাশটি পাওয়া গেছে। আদালত নিজে অন্ধ। নিজে কিছু দেখেনা, নিজে কিছু বলেনা। আদালতকে পরিচালনা করে দেশের আইন। আইন যদি মন্দ থাকে তাহলে আদালতের কিছুই করার থাকেনা। আইন পরিবর্তন করবে দেশের জনগণ ও তাদের প্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধিরা যে আইন(ভাল হোক আর মন্দ হোক) তৈরি করবেন সে আইনের ভিত্তিতেই আদালত বিচার করবেন। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে জনপ্রতিনিধি কারা হবেন। ৩৭ সাল থেকে এসেম্বলী বা সংসদে আইন তৈরি করেছেন আইনজ্ঞরা। এ ধারা অব্যাহত ছিল ৫৬ সাল পর্যন্ত। জেনারেল আইউবের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সংসদ সদস্য হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারগণ। জেনারেল আইউব চালু করেছিলেন বেসিক ডেমোক্রেসী বা মৌলিক গণতন্ত্র। জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতেন ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যদের দ্বারা। সারা পাকিস্তানে ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী ছিলেন। ধনীরা ভোট কিনেই সংসদ সদস্য হয়ে যেতেন। গণ আন্দোলনে জেনারেল আইউবের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সময়ে ৭০ এ সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি। ফলে পাকিস্তান ভেংগে যায়।
জেসিকা হত্যা তদন্ত করেছে একজন সত্ পুলিশ অফিসার। ওই রাতের পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন উচ্চ সমাজের ৩শ’ মেহমান। সবাই বললেন, তাঁরা ঘটনা ঘটার আগেই চলে গেছেন। তাই তাঁরা কিছু দেখেননি। পুলিশ অফিসার ৭জন সাক্ষী জোগাড় করতে পেরেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সাক্ষীই টিকেনি। আদালতে দাঁড়িয়ে সবাই মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে। এমন কি যে ছেলেটাকে বাঁচাবার জন্যে জেসিকা প্রাণ দিয়েছে সে ছেলেটাও সাক্ষী দেয়নি প্রাণের ভয়ে বা টাকার লোভে। ছেলেটা সাংবাদিককে বলেছে, এক কোটি টাকা অথবা একটি গুলি। বলুন এবার আমি কোন দিকে যাবো? বিষয়টা ছিল মন্ত্রীর ছেলের জীবন বনাম জেসিকার মৃত্যু। আলোচ্য ফিল্মটার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম আইন আর সত্যের মাঝখানে হাজার মাইল দূরুত্ব আছে। আদালত,উকিল, আইন ও সাক্ষী সাবুদই আসল। যিনি বা যাঁরা সবকিছু নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারবেন বা নিজের পক্ষে রাখতে পারবেন তিনিই বিজয়ী হবেন। সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আদালতের বিবেচ্য বা বিচার্য বিষয় সত্য বা ন্যায় নয়। জাস্টিস শব্দটি কিন্তু সত্য বা ন্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করেনা। বিচারকের কাজ হচ্ছে সাক্ষী সাবুদের ভিত্তিতে রায় দেয়া, সত্য প্রতিষ্ঠা করা নয়। জেসিকা গুলিতে মারা গেছে একথা সত্য ও প্রমানিত। কিন্তু কার গুলিতে মারা গেছে? একথা প্রমান করার দায়িত্ব বাদী বিবাদীর। আদালতের নয়। জেসিকার বাবা মা বোন সাক্ষী সাবুদ জোগাড় করতে পারেননি। বরং শোকে দু:খে মা মারা গেছেন, বাবা হাসপাতালে, বোন হতাশ ও ক্লান্ত।
বাংলাদেশের সাধারন মানুষের আশা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হবে,জনগণের জীবনে স্বাধীনতার আকাংখা প্রতিফলিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। গণতন্ত্রের বুলি আছে,গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের নাটক ও মঞ্চ আছে, বাস্তবতা নেই। বাংলাদেশ একটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, জনগণতান্ত্রিক নয়। জনগণের নামে গণতন্ত্র আছে, তা ভোগ করেন শক্তিমানরা। এখানে সব আইনই শুধুমাত্র ক্ষমতাবান ও তাদের তাবেদারদের জন্যে। এদেশে নির্বাচনের প্রহসন করে সিভিল ডিক্টেটর তৈরি করা হয়। কারণ, তথাকথিত নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রের লেবাস পরা রাজা বাদশাহর মতো ক্ষমতাধর নেতা তৈরি করা হয়। ৫শ’ বছর আগে মোঘল বাদশাহরা যেমন চলতেন হাল জামানার বাদশাহরাও তেমন করেই চলেন। তাঁদের বাদশাহদের মতোই রাজপ্রাসাদ আছে, পাইক পেয়াদা, সৈন্য আছে। আমাদের স্বাধীন বাংলার রাষ্ট্রের নাম প্রজাতন্ত্র। এটা শুধুই একটা নাম। এখানে প্রজাদের নামে রাজার শাসন চলে। এখানে দরবারের নামে জাতীয় সংসদ আছে। বাদশাহর দরবারে যেমন হুজুর যা বলেন তাই আইন, তাহাই সত্য। বৃটিশরা এদেশ যখন দখল করে তখন রাজা বাদশাহদের আইন ও ফরমান জারী ছিল। তার সাথে যোগ হয়েছিল ইংল্যান্ডের রাজা রাণীর আইন। পাকিস্তান আমলেও পুরাণো বাদশাহী আইন, বৃটিশের আইনের সামান্য কিছু সংশোধন করে দেশ চালানো হয়। এখানে কখনই গণমানুষের আইন তৈরি হয়নি।
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা বাংলাদেশে কি আইন চালু আছে? আপনি অতি উচ্চ শিক্ষিত হলেও চট করে কি উত্তর দিতে পারবেন? না পারবেন না। এখানে কিছু শরীয়া আইন, কিছু বৈদিক ও সনাতনী আইন আছে। তবে ৯০ ভাগ আইনই এসেছে ল্যাটিন ও বৃটিশ উত্স থেকে। সব আইনই হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী দর্শণ থেকে। প্রজা নামের জনগণকে শাসনের নামে শোষণ করাই সব আইনের লক্ষ্য। আইনের চেয়ে মানুষ বড় বা মানবতা বড় এ দর্শণ এদেশে নেই। এখানে সবকিছুই মানুষের চেয়ে বড়। দর্শণই হচ্ছে মানুষকে দমন করো, রাষ্ট্র ও সরকারকে রক্ষা করো। তিন লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব সরকার আদায় করে বা করবে, বেসরকারী ভাবে আদায় হয় আরও পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। প্রজা বা জনগণের নামে মানুষকে কঠোর ভাবে দমনের জন্যে বিরাট অংকের এ রাজস্ব আদায় করা হয়। জনগণের নামে যে উন্নয়ন কাজের কথা বলা হয় তাও জন সাধারনের দোর গোড়ায় পৌঁছে না। কিন্তু আইন বা সংবিধানে লেখা আছে সকল নাগরিকের সমান অধিকার, সবাই পাবে শিক্ষা, চিকিত্সা আশ্রয় ও খাদ্যে অধিকার। আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন, সবাই কি এসব অধিকার ভোগ করছে। যে কারণেই হোক, যার ঘাড়েই দোষ চাপানো হোক ৭৪ সালে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। ৭১ সালেইতো লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে স্বাধীনতার জন্যে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মহা দুর্যোগের সময়েও মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। সবাই একে অপরকে সাহায্য করেছে। ৭৪এ ঢাকার রাস্তায় লোক না খেয়ে মারা গেছে। সরকারের গুদামে না খেয়ে মারা গেছে। কাপড়ের অভাবে বাসন্তী জাল পরেছে।
পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ২৩ বছরে ২২ ধনী পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল। তারা নাকি পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে লুট করে খাচ্ছে। এবার আপনারাই বলুন, বাংলাদেশের ৪৩ বছরে কত হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে? কেমন করে এরা ধনী হলো? কার সম্পদ তারা লুট করেছে? এখন আর কেউ ধনী বা ধন নিয়ে কথা বলেনা। এখন রাজনীতিকরা আর ধনীরা মিলে মিশে এক সাথে থাকে। তাদের সাথে থাকে নানা ধরণের বাহিনী,গ্রুপ, নানা বুদ্ধিজীবী, নানা মিডিয়া। এখনতো শ্রমিক নামে পরিচিত সাংবাদিকরাও কোটিপতি হতে চায়। চাইবেনাই বা কেন? সমাজের ভাল মন্দ, ন্যায় অন্যায় , সন্মান অসন্মান সবই যখন টাকার বা ধনের মানদন্ড হচ্ছে তখন সাংবাদিকরা অন্য পথে যাবেন কেন? খুব ভালো হতো যদি দেশের সব মানুষ ধনী হয়ে যেতো। রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে চোর বদমাস মাস্তানও জনগণের সেবক হয়ে যায়। শেখ সাহেব আর জিয়া সাহেবের নামে সারা দেশে হাজার হাজার সংগঠণ। ফলে অবিরত চাঁদাবাজি চলছে। আমেরিকার সাথে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ করে ভিয়েতনাম এখন স্বাধীন। খুব দ্রুত গতিতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা আমরা পারিনি,কারণ আমাদের নেতাদের মূলনীতি হচ্ছে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি ও বিরোধী শক্তিকে মুছে দেয়া। ফলে দেশের মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এদেশে একবার কেউ সংসদ সদস্য হলে সারা জীবন তিনি বসে বসে খেতে পারেন। মন্ত্রী হলেতো কথাই নেই।
দেশে নতুন মিডিয়া আইন তৈরি হয়েছে সরকার ও রাষ্ট্রকে জনসাধারণের সমালোচনা থেকে রক্ষা করার জন্যে। যেমন শেখ সাহেব চারটি কাগজ ছাড়া সব খবরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জেসিকার হত্যা মামলাটি মিডিয়াই শেষ পর্যন্ত গণ মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে। মানুষের আন্দোলনেই সরকার ও আদালত মামলাটির পূণর্বিচারের ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশে এ রকম হাজার হাজার মামলা আছে, যার কোন সুরাহা হয়না। গরীবেরা টাকার অভাবে আদালতের দোর গোড়ায় যেতে পারেন না। যাদের কাছে টাকা আছে, শক্তি আছে তারাই নিজেদের পক্ষে বিচারের রায় পাবেন। বাংলাদেশে সরকার বা রাষ্ট্র বনাম নাগরিক(গরীব) মামলায় সব সময় গরীব হেরে যায়।
বাংলাদেশকে এখন অনেকেই পুলিশী রাষ্ট্র বলে থাকেন। এর আগেও আমি অনেকবার বলেছি যে,ন্যায় অন্যায় যেভাবেই হোক না কেন, রাষ্ট্র যাঁদের দখলে থাকবে সকল বাহিনী ও প্রশাসনিক যন্ত্র তাঁর পক্ষেই থাকবে। চলমান আইনে পুলিশ রাষ্ট্রের প্রতীক। সুতরাং রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশটি কিন্তু রাষ্ট্র। পুলিশ আপনাকে উর্দু ভাষায় ‘শালা, ভয়েনচোত্’ বলতে পারবেন। আপনার পাছায় তিনটি লাথি দিতে পারবেন। আপনার কোমরে দড়ি দিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যেতে পারবে। আপনাকে কিন্তু আইন মানার জন্যে চুপ করে থাকতে হবে। আপনার পাছায় লাথি মারা জন্যে সহযোগিতা করতে হবে। যদি অসহযোগিতা করেন তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় পড়তে পারেন। পুলিশ বেচারার কোন দোষ নেই। তিনি আইনের দাস। যেমন আইন তেমন পুলিশধর্ম। তাহলে নাগরিক হিসাবে আপনার অধিকার কি? না, আপনার কোন অধিকার নেই। এ কারণেই প্রবাদ আছে, বাঘে ছুইলে আঠার ঘা, পুলিশে ছুইলে ছত্রিশ ঘা। চলমান আইনে পুলিশই বাদী , পুলিশি সাক্ষী। বৃটিশ আমলে স্বাধীনতাকামীদের ধরে রিমান্ডে নেয়া হতো অত্যাচার করার জন্যে। এখন পুলিশ চোর ডাকাত মাস্তান রাজনীতিক সবাইকেই রিমান্ডে নিয়ে যায় আদালতের অনুমতি নিয়ে। রিমান্ডের উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসাবাদ( আদর যত্ন )করে সত্য বের করা। পুলিশের আদর যত্ন বেশী খেয়ে শরীর খারাপ হয়ে গেলে ( অতিরিক্ত ভোজনে)আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। খবরের কাগজওয়ালারা রসিকতা করে বলেন পুলিশের রিমান্ড ব্যবসা।
লিমনের মামলার কথা স্মরণ করুন। মিডিয়া এক্ষেত্রে অবিরাম সাপোর্ট দিয়ে গেছে। এটিতো লাখো মামলার ভিতর একটি। লাখো লাখো মামলার কোন বিচারই হয়না। আইন বা চলমান বিচার ব্যবস্থার কারণে বছরের পর বছর লেগে যায় মামলা নিষ্পত্তি করতে। এতো লম্বা সময় ধরে মামলা চালানো কোন গরীবের পক্ষেই সম্ভব নয়।এখনতো বাহিনীর কিছু কিছু লোক টাকা পয়সা নিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যে কোন নাগরিককে (গরীব ) বাহিনীরা ৫৪ ধারার কথা বলে আটক করতে পারেন। এই আইনটি তৈরি করেছিল বৃটিশরা। দেশ চালাতে হলে নাকি ৫৪ ধারা খুবই জরুরী। মনে হয় দেশটা সরকারের, নাগরিকদের নয়। তাই নাগরিক( গরীব ও তথাকথিত মন্দলোকদের) দমনের জন্যে ৫৪ ধারা মহৌষধ।
বাংলাদেশের আরেকটি মহারোগ হচ্ছে দূর্ণীতি। এমন একটি সরকারী অফিসের নাম বলুন যেখানে দুর্ণীতি নেই। ভারতে দুর্ণীতির অভিযোগে সিবিআই মন্ত্রীর বাড়িতে রেইড করতে পারে। বাংলাদেশে বিগত ৪৩ বছরে কোন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলার বাড়িতে কি কোন রেইড হয়েছে?
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
Archive for November, 2014
আইন আদালত মানুষ ও সত্য
Posted in Uncategorized on November 20, 2014|
রাজনীতির মানুষ ও মানুষের রাজনীতি
Posted in Uncategorized on November 18, 2014|
রাজনীতির মানুষ ও মানুষের জন্যে রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার
মানুষের রাজনীতি কি এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদামাটা ভাবে বলা যেতে পারে মানুষের জন্যে রাজনীতি। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে রাজনীতিটা কি? আমি রাজনীতিকে যেভাবে দেখেছি বা ভেবেছি তা বাস্তবে কখনই দেখিনি। ছাত্রকাল থেকেই নিপীড়িত নির্যাতিত অবহেলিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে এখনও সে রাজনীতি আসেনি বা মুক্তিকে আমি এখনও দেখিনি। জীবনের অর্ধেক সময় বিশ্বাস করেছি মাও জে দং বা লেনিনের পথই মানুষের মুক্তির পথ। তবে ওই ধারার চেতনায় আমি কখনই সমাজতন্ত্রী বা কমিউনিষ্ট হতে পারিনি। রাজনীতিতে আমি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। মাওলানা সাহেব কখনই কমিউনিষ্ট ছিলেন না। অবজারভার ছেড়ে দিয়ে আমি সংবাদে চাকুরী নিয়েছিলাম রাজনৈতিক কারণে। তখন জহুর হোসেন চৌধুরী সংবাদের সম্পাদক ছিলেন আর শহীদুল্লাহ কায়সার ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক। সংবাদ ছিল কমিউনিষ্ট বা বাম চিন্তাধারার মানুষদের একমাত্র মুখপাত্র। জহুর হোসেন চৌধুরী সাহেব কখনই কমিউনিষ্ট ছিলেন না। তিনি নাকি এম এন রায়ের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু শহীদুল্লাহ কায়সার ছিলেন কমিউনিষ্ট। সংবাদে চার বছরের মতো কাজ করে আমি আমার নিজ শহর ফেণীতে চলে যাই সরাসরি গণমানুষ আর কৃষকের রাজনীতি করার জন্যে। তখন আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত। ওই অবস্থাতেও আমি রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিই। ফসল নামে একটি কৃষক আন্দোলনের কাগজের সম্পাদনা শুরু করি। সে সময়ে কৃষক শ্রমিকের কথা বললেই লোকে কমিউনিষ্ট মনে করতো। সরকারও তাই মনে করতো। ফলে সরকারী গোয়েন্দারা সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকতো। সমাজের ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরাতো বিরুদ্ধে ছিলেনই। সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তাদের জোট ছিল ক্ষমতাবানদের সাথে। আমি প্রায় পাঁচ বছর গ্রামে গঞ্জে কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি করেছি। এক সময় আমার মনে হলো রাজনীতি একটি কৌশলের ব্যাপার। সত্য আর রাজনীতি এক বিষয় নয়। রাজনীতি হলো জনগণ যে কথা শুনতে চায় তা বলতে হবে এবং সে ভাবেই চলতে হবে। যা আমার চরিত্র ও নীতি বিরোধী ছিল। রাজনীতি হলো ‘ আপনি কি তা গুরুত্বপূর্ণ নয়,লোকে বা জনগণ আপনাকে কি ভাবে দেখে বা দেখতে চায় তা গুরুত্বপূর্ণ’। ব্যক্তিগত জীবনে আপনি হয়ত একজন চোর বদমাশ, কিন্তু জনগণ মনে করে আপনি একজন দরবেশ। এটাই আপনার সাফল্য। আমি তাই আবার ফিরে আসি রাজধানীতে সাংবাদিকতা করার জন্যে। পূর্বদেশে যোগ দেই ১৯৬৯ সালে। এর আগে পাঁচ বছর অবজারভার ও সংবাদে চাকুরী করেছি। এরপর দলীয় রাজনীতিতে আর কখনও অংশ গ্রহণ করিনি।কিন্তু রাজনীতি ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজ কখনই চলতে পারেনা। তাই খুবই প্রবল ভাবেই এখন রাজনীতির জয় জয়কার চলছে।
একজন রাজনীতিক, সমাজকর্মী, ব্যাবসায়ী, ব্যান্কার নিয়ে কিছু লিখবো বলেই কম্পিউটারের সামনে বসেছি। বলতে পারতাম কাগজ কলম হাতে নিয়ে বসেছি। কিন্তু তা বলিনি , কারণ বহুদিন ধরেই আমি হাতে লিখতে পারিনা। ভাগ্য ভাল কম্পিউটার ব্যবহার করা শিখতে পেরেছিলাম আমার সন্তানদের ছাত্র হয়ে। এই ভদ্রলোক হলেন মিষ্টি মানুষ মোশাররফ হোসেন। ডাক নাম পেয়ারা। জন্ম ফেণী শহরের ডাক্তার পাড়ায়। বাবা বেলায়েত হোসেন ছিলেন একজন রাজনীতিক ও নামজাদা আইনজীবী। মোশাররফ সাহেব বিশাল ঐতিহ্যের অধিকারী এক পরিবারের সন্তান। ফেণী জিলার সোনাগাজী উপজিলার আহমদপুর মুন্সীবাড়ীই হলো তাঁর মূল ঠিকানা। বৃটিশ আগমণের আগে থেকেই শিক্ষিত একটি পরিবার। এই বাড়ীর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ফার্সী জানা উকিল। এক নামে, এক ডাকে সবাই চিনেন আহমদপুর আমিরউদ্দিন মুন্সীবাড়ি। একই নামেই রয়েছে হাট বাজার, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা,পোষ্টাফিস ও ব্যান্ক। মুন্সীদের মূল পেশা ছিল তালুকদারী আর ওকালতি।
আমি যতদূর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি তাতে দেখি মুন্সী বোরহানউদ্দিন বক্স ছিলেন এই পরিবারের মূল পুরুষ। তাঁরই তিন সন্তান মুন্সী আমিরউদ্দিন, মুন্সী ইলাহি বক্স ও মুন্সী আমজাদ বক্স। সবার বড় ছিলেন মুন্সী আমিরউদ্দিন। এ্ঁরা সবাই ছিলেন ফার্সী জানা উকিল। ওকালতি করার জন্যে তাঁরা সবাই ফেণী শহরে বাড়ি করেছিলেন। পরবর্তী কালে আমিরউদ্দিন মুন্সী সাহেবের নামেই সবকিছু পরিচিতি লাভ করে।কারণ তিনিই ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। মুন্সী আমজাদ বক্সের দুই ছেলে মুন্সী ইসরাইল ও মুন্সী ইয়াকুব। ইসরাইল সাহেব বহু বছর এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। বেলায়েত সাহেব ছিলেন ইসরাইল সাহেবের বড়ছেলে। ইনিও পিতার মতো বহু বছর এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন।মুন্সী আমিরউদ্দিন সাহেবের বড়ছেলে হলেন মুন্সী আবদুল আজিজ। এলাকার মানুষ তাঁকে ডেপুটি সাহেব হিসাবেই চিনেন। তিনি অবসর নেয়ার আগে কুমিল্লার জিলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। শুনেছি, আবদুল আজিজ সাহেব শুক্রবারে জুমার নামাজে ইমামতি করতেন। আবদুল আজিজ সাহেবের বড়ছেলের নাম ব্যারিষ্টার আমিন আহমদ। ইনি পরে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ জাষ্টিস হয়েছিলেন। তাঁরই ছোট ভাই ছিলেন জাষ্টিস বাকের আহমদ। ফেণী জিলায় এমন বিশাল শিক্ষিত কয়েকটি পরিবার আছে মাত্র। তবে পরশুরামের হাবিবুল্লাহ বাহার সাহেবদের বাড়ির খান বাহাদুর আবদুল আজিজ সাহেবও একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। ইনি শিক্ষাবিদ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন। হাবিবুল্লাহ বাহার সাহেব পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম মন্ত্রী সভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। দাগনভুঁইয়ার হামিদুল হক চৌধুরী সাহেবদের বাড়িও একটি বিখ্যাত পরিবার।
আমি ও মোশাররফ সাহেব একই শহরের ছেলে। আমি উকিলপড়ার আর তিনি ডাক্তার পড়ার। ওখানে হাসপাতাল থাকার কারণেই এলাকাটি ডাক্তার পড়া হিসাবে পরিচিত। মোশাররফ সাহেব ৫৪ সালে মেট্টিক পাশ করেছেন। তখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। তখন থেকেই তাঁকে আমি চিনি। ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে আমি নিয়মিত ডাক্তার পাড়ার দিকে যেতাম। মেশাররফ সাহেব একেবারেই নরম বিনয়ী স্বভাবের সদা হাস্য মানুষ ছিলেন। তখন তাঁর সাথে আমার তেমন গভীর সম্পর্ক ছিলনা। তখন সিনিয়রদের সাথে একটা দুরুত্ব থাকতোই। আমরা তাদের সম্মান করতাম। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন ছাত্র শক্তির অনুসারী। ছত্রশক্তির প্রতিষ্ঠাতা ফরমান উল্লাহ খান কিছুদিন ফেণীতে পড়ালেখা করেছেন। ছাত্রশক্তির মূলনীতি ও আদর্শ ছিল হজরত ওমরের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এরপরে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে স্নাতক লাভ করে ইপসিকে( বিসিক) কিছুদিন চাকুরী করেন। চাকুরীর ব্যাপারে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিলনা। তিনি কনসেপ্ট অব পাকিস্তান নামে একটি ইংরেজী ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন তাঁর আমৃত্যু বন্ধু জাকি সাহেবকে নিয়ে। ম্যগাজিনের সম্পাদক ছিলেন মীজানুর রহমান শেলী। ম্যাগাজিনটি সারা পাকিস্তানে খুবই নাম করেছিল। বাংলাদেশ হওয়ার পর তিনি প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন ব্যবসা শুরু করেন। এরপরে তিনি জনশক্তি রফতানীতে মনো নিবেশ করেন। এ ব্যবসায় তিনি প্রভুত অর্থ আয় করেন। সকল ব্যবসাতেই জাকি সাহেব তাঁর পার্টনার ও সহযোগী ছিলেন। জাকি সাহেব পরে বৈবাহিক সূত্রে মোশাররফ সাহেবের ঘনিষ্ট আত্মীয়ে পরিণত হন। এ দুজনের বন্ধুত্ব আমাদের সমাজে প্রবাদে পরিণত হয়েছে। জাকি সাহেব নিজেও একজন বিনীত দয়ালু মানুষ। ফলে দুজনেরই মন মানসিকতা এক রকম ছিল। জাকি বললেন, ১৯৬১ সালে মোশাররফ সাহেবের সাথে পরিচয় হয় এবং কালক্রমে অকৃত্রিম বন্ধুত্বে পরিণত হয়। জাকি সাহেব পরে পেয়ারা সাহেবের মামাতো বোনকে বিয়ে করেন। চাকুরী না করে ব্যবসা করার জন্যেই তাঁরা দুজন এক হয়েছিলেন। কনসেপ্ট অব পাকিস্তান নামক ইংরেজী ম্যাগাজিন দিয়ে শুরু করেছিলেন শূণ্য হাতে। এইভাবেই দুজনের যৌথ জীবন শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রথম ইসলামিক ব্যান্কের উদ্যোক্তা ছিলেন তাঁরা। এরপরে জনশক্তি রফতানী,পোষাক রফতানী, নির্মান সহ নানা ধরণের ব্যবসা করেছেন। পেয়ারা সাহেব বিজেএমই, বায়রা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
মোশাররফ সাহেব এলিফেন্ট রোডের চিত্রা হাউজে বহু বছর ছিলেন। এ বাড়িটা ছিল এটর্ণি জেনারেল আমিনুল হক সাহেবের। তাঁর ডাক নাম ছিল মনু। সবাই মনু ভাই বলে ডাকতো। মনু ভাই শহীদ সার্জেন্ট জহুরের বড় ভাই। মোশাররফ সাহেব আর আমিনুল হক সাহেবেরা একই বংশের সন্তান। খান বাহাদুর সিরাজুল হক সাহেব ফেণী জিলার সোনাগাজী মুন্সী বাড়িরই সন্তান। তিনি মুন্সী এলাহি বক্সের দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তান মুন্সী আবদুল গণি। সিরাজুল হক সাহেব বৈবাহিক সূত্রে মাইজদী সোনাপুরে চলে যান।
মোশাররফ সাহেব সারা জীবন টাকা আয় করেছেন আর তা মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। ইন্তিকালের সময়ে তাঁর কাছে তেমন অর্থবিত্ত আর ছিলনা। তিনি বলতেন কেউ চাইলে না করতে পারিনা। না থাকলে অনেক সময় ধার করেও মানুষকে সাহায্য করতেন। সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক সমাজের সাথে তাঁর গভীর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি বহু ম্যাগাজিন ও দৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি কখনই নিজেকে ধনী মনে করতেন না। ধনবান মানুষ হয়েও তিনি অতি সাধারন মানুষের মাঝেই বাস করতেন।শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং পর পর তিনবার বিএনপির সংসদ সদস্য বির্বাচিত হন। কিন্তু সকল রাজনৈতিক দলের সাথেই, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তাঁর মধুর সম্পর্ক ছিল। চলমান সময়ে রাজনীতিতে মোশাররফ সাহেবের মতো মানুষ আর নাই বললেই চলে। এখন রাজনীতিক মানে অশ্লীল ক্ষমতাবান ও দুর্ণীতিবাজ। খিস্তিখেউর এখন রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতি। বিশেষ করে আওয়ামী সংস্কৃতির প্রধান উপাদান হলো খিস্তিখেউর। মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী জানান দিয়েছেন যে, যারা দুর্ণীতির বিরুদ্ধে বলে তাঁদের সম্পদেরও হিসাব নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বিএনপির আমলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই ছাত্রদের দিয়ে দেয়া হতো। এমন কি তিনি নাকি আমেরিকাকেও তেমন পাত্তা দেন না। আমেরিকাকে ছাড়াও বাংলাদেশ চলতে পারবে। আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। এর আগে তাঁর দলের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাহেব আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনাকে কাজের বুয়ার সাথে তুলনা করেছেন। এর মানে সৈয়দ সাহেব কাজের বুয়া বা ডোমেষ্টিক বা হোম ওয়ার্কারদের ঘৃণা করেন। তাই মোজেনাকে কাজের বুয়া বলেছেন। তিনি একই ভাষণে আমেরিকারী সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে দুইআনি মন্ত্রী বলেছেন। যা নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসে সৈয়দ সাহেবের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রসংগক্রমেই রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কথা বললাম। তোফায়েল সাহেবও ক’দিন আগে বলেছেন সম্পাদক সাহেবদের দুর্ণীতির হিসাব নেয়া হবে। সংবাদপত্র থাকলে সম্পাদক থাকবেন। আর সম্পাদক থাকলে ক্ষমতাবানদের দূর্ণীতির কথা প্রকাশিত হবে। ইংগিত হলো স্বাধীন সংবাদপত্রের প্রয়োজন নেই। শেখ সাহেব সব কাগজ বন্ধ করে দিয়ে শুধু সরকারী কাগজ রেখেছিলেন। এমন এক সময়ে বা জামানায় রাজনীতিতে মোশাররফ সাহেবের টিকে থাকার কথা নয়। কারণ, পারিবারিক কারণেই তিনি এমন ভাষা ও সংস্কৃতির ওয়ারিশ নন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন সংসদে খিস্তিখেউর হয়না। সংসদ বেশ শালীন হয়ে গেছে , কারণ সংসদে বিএনপি নেই। ফলে এখন অপু উকিল মার্কা সদস্যদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। ৩৭ সাল থেকে আমাদের এ অঞ্চলে রাজনীতিতে যাঁরা এসেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত বিত্তবান পরিবারের সন্তান। যেমন ধরুন, শেরে বাংলা, স্যার নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নুরুল আমিন, আবু হোসেন সরকার। এঁরা কেউই ব্যবসায়ী বা চাঁদাবাজ রাজনীতিক ছিলেন না। তাঁদের পেশা ছিল ওকালতি বা জমিদারী,তালুকদারী। এখন রাজনীতিকদের পেশা রাজনীতি। একবার চাঁদা তুলে সংসদ সদস্য হলেই কেল্লা ফতে। মন্ত্রী হলেতো কথাই নেই। সারা জীবন পরিচয় লেখেন সাবেক মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য। জেনারেল আইউবের আমল থেকেই রাজনীতিতে ঠিকাদার বা কন্ট্রাক্টরদের উত্থান। এখন রাজনীতিকদের খোরপোষ দেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ও সওদাগরগণই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা ব্যান্ক, বীমা, পানি ও আকাশের জাহাজের মালিক হন। ৭০ সালে যাঁর মাসিক আয় ছিল ৫/৬শ’ টাকা এখন তিনি ৫/৬ হাজার কোটি টাকার মালিক।
মেশাররফ সাহেব বিয়ে করেছেন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও আইএলওর গভর্ণিং বডির সদস্য ফয়েজ আহমদ বর কণ্যা ফরিদা হোসেনকে। ফরিদা হোসেন একজন একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক। তিনি বহু বছর যাবত পিইএন ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ শাখার সভাপতি। তিনি অবিনশ্বর নামের একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনের সম্পাদক। মোশাররফ সাহেবের তিন কণ্যা। তাঁরা চার ভাই ও একবোন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবক্তা কারা?
Posted in Uncategorized on November 13, 2014|
মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবক্তা কারা ? এরশাদ মজুমদার
বাংলাদেশ কি ধরণের রাস্ট্র বা এ দেশের অর্থনীতির রূপ কি? এ প্রশ্নের উত্তর কি একটি না বহু? আমি ১৯৬১ সালে নবীশ অর্থনৈতিক রিপোরটার হিসাবে পাকিস্তান অবজারভারে আমার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করি। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে কথা বলার রাজনীতি মাত্র শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী অর্থনীতিবিদরা বৈষম্য নিয়েই কাজ করছিলেন। কালক্রমে বৈষম্য বিষয়টিই রাজনীতিতে প্রধান বিষয় হিসাবে আলোচিত হতে থাকে। আমার দায়িত্ব ছিল বৈষম্য নিয়ে রিপোর্ট করা। তখন অবজারভার গ্রুপের সকল কাগজের দায়িত্ব ছিল বৈষম্য নিয়ে লেখা। বংগবন্ধুর রাজনীতির তথ্য উপাত্ত সংগৃহীত হতো অবজারভার ও পূর্বদেশ থেকে। ষে বিষয়কে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ভেংগে গেছে তা একটি বিশাল মহাভারতের মতো। অন্ধের হাতি দেখার মতো। চক্ষষ্মানও পুরো বিষয়টা দেখতে পারেন না। যতটুকু বুঝেছেন ততটুকুই বলতে পারেন বা লিখতে পারেন। তবে সবাই একমত ছিলেন যে বিশাল বৈষম্য বিরাজ করছে। পূর্বদেশের সম্পাদক মাহবুবুল হকের জাতীয় সংসদের ভাষণ পড়লেই জানা যাবে হিমালয় প্রমাণ বৈষম্য ছিল। যা শুরু থেকেই পাকিস্তানের ভিতকে দূর্বল করে ফেলেছিল। ৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমেই পাকিস্তানের ভিত ভেংগে গেল। এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। পাকিস্তানের সামরিক শাসকগণ ৬দফা মানলেও পাকিস্তান কনফেডারেশন হিসাবে হয়ত টিকে থাকতে পারতো। মাহবুবুল হক বলেছিলেন, চলমান গতিতে বৈষম্য অব্যাহত থাকে তাহলে একদিন পাকিস্তান আর টিকবেনা। মাহবুবুল হকে সেই ভাষণের পর বংগবন্ধু তাঁকে বিমান বন্দরে গিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। জাতীয় সংসদে মাহবুবুল হকের সেই ঐতিহাসিক ভাষন পুরোটাই ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছিল।
ক’দিন আগে এম এম আকাশ( মন মোহন আকাশ বা অন্যকোন নাম)নামের এক ভদ্রলোক মৌলবাদের অর্থনীতি নিয়ে একটি উপ সম্পাদকীয় লিখেছেন একটি ধর্মমুক্ত কাগজে। মৌলবাদের অর্থনীতি নিয়ে লেখালেখি করে আবুল বারাকাত নামের আরেকজন অর্থনীতিবিদ নাম কামিয়েছেন। মৌলবাদের অর্থনীতি কি সে বিষয়ে গবেষণা মূলক কোন বই এখনও তাঁরা লেখেননি। আমরা এতদিন গরীবের অর্থনীতি বা ধনীর অর্থনীতির কথা শুনেছি। শোষণের অর্থনীতির কথাও শুনেছি। গরিবী হটাবার জন্যে আমাদের দেশেও নানা কর্মসূচী নিয়েছে সরকার। গরীবের ব্যান্ক নামে গ্রামীণ ব্যান্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমবায় ও এনজিও গুলোও অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এনজিও করে বহু ভদ্রলোক ধনী হয়ে গেছেন। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের কথা বলে রাজনীতিবিদরা মাঠে ময়দানে গলা ফাটাতেন। পাকিস্তান ২৩ বছরে ২২ পরিবার বানিয়েছিল। বাংলাদেশ ৪৩ বছরে ২২ হাজার পরিবার বানিয়েছে। বাংলাদেশে যে হারে কিছু মানুষ ধনী হয়েছে সে হারে দারিদ্র দূর হয়নি। এদেশে রাজনীতিকদের ধনী হওয়া খুবই সহজ। একবার চেষ্টা তদবীর করে এমপি/মন্ত্রী হতে পারলেই পুঁজির বিকাশ ঘটে যায়। ৬০ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত ছিল পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজির বিকাশের আন্দোলন। বড় বড় বাম ধারার অর্থনীতিবিদরা পূঁজির বিকাশের জন্যে লেখালেখি করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই এখনও জীবিত। ৬দফার জন্ম হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজির বিকাশের আন্দোলন থেকে। আসলে আন্দোলনটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বড় পুঁজির সাথে পূর্ব পাকিস্তানের ছোট পুঁজি টকতে পারছিলনা। ছোট পুঁজির আকাংখা ছিল বড় পুঁজি হওয়া। তাই বাংগালী মুসলমান আমলা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও ছোট পুঁজির মালিক সবাই একই কাতারে সামিল হলেন পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজির বিকাশের স্বার্থে। তখন সকল পত্রিকাই এর পক্ষে ছিল। এমন কি বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী কাগজ গুলোও। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্বার্থ, চাকুরী ও ব্যবসা বাণিজ্যে ন্যায্য হিস্যা আন্দোলনের রাজনৈতিক দল হিসাবে জন স্বীকৃতি লাভ করে শেখ সাহেবের আওয়ামী লীগ। এমন একটি জনপ্রিয় আন্দোলন শেখ সাহেবকে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করে। ফলে ৭০ এর নির্বাচনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলা ও দেন দরবার করার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলেন। এ সময়ে বাংগালীর অর্থনীতি, অবাংগালীর অর্থনীতি, মুসলমানের অর্থনীতি, হিন্দুর অর্থনীতি বা মাড়ােয়ারী অর্থনীতি নামে কোন ধরণের কথা শুনা যায়নি। বড় পুঁজি, ছোট পুঁজি,শিল্প পুঁজি, বাণিজ্য পুঁজি,ফড়িয়া দালাল পুঁজির কথা শুনেছি। আকাশ সাহেবদের মতে যদি মৌলবাদের অর্থনীতি থেকে থাকে তাহলে অমৌলবাদের অর্নীতিও আছে। মুসলমান অর্থনীতি থাকলে অমুসলমান অর্থনীতিও আছে।
আসলে বারাকাত ও আকাশগংয়ের মনো জগতে রয়ে্ছে সাম্প্রদায়িকতা। ৭০ সালে আকাশ সাহেব বা বাবুদের পূর্বসুরীরা ছোট পুঁজির বিকাশের জন্যে আন্দোলন করেছেন। আর এখন আকাশ বাবু ও বারাকাত সাহেব অমৌলবাদী অর্থনীতির জন্যে কাজ করছেন।
বাংলাদেশের সকলকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বংগবন্ধু কখনই সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতেও বিশ্বাস করতেন না। তিনি খুব সাদামাটা ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারন মানুষের কল্যাণ চাইতেন। সে জন্যেই তিনি ৬দফা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ আদায় করার জন্যে। কিন্তু বেকুব পাকিস্তানী সামরিক জান্তা তা বুঝতে পারেনি। আর ভুট্টোর( জওহর লাল নেহেরুর সন্তান বলে বহুল পরিচিত বা প্রচারিত) সীমাহীন ক্ষমতার লোভ পাকিস্তানকে বিভক্ত করে ফেলেছে। নেহেরু গং ভারত ভেংগেছে আর সেই পরিবারের মিত্র ভুট্টো পাকিস্তান ভেংগেছে। ইন্দিরা গান্ধী ভুট্টোকে সহযোগিতা করেছেন ভারতের রাজনৈতিক স্বার্থে। ভুট্টো নিজে কম মুসলমান ছিলেন আর অধিকতর ধর্মমুক্ত তথাকথিত প্রগতিশীল ছিলেন। নেহেরু পরিবারও ধর্মমুক্ত আধুনিক ছিলেন।
পাকিস্তান কেন হয়েছিল তা আমাদের বর্তমান তরুণ সমাজ ও রাজনীতিকরা জানেন না। জানলেও পাকিস্তান সৃষ্টির কারণকে তারা সাম্প্রদায়িকতা বলে চিহ্নিত করেছেন। ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ পরীক্ষা করলে দেখা যাবে ভারতকে বিভক্ত করার জন্যে কংগ্রেস ও বৃটিশ শাসক গণ দায়ী। মুসলমান বা মুসলীম লীগ ১৯৪০ সালে এসে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। কংগ্রেস যদি সনাতনপন্থীদের দল না হয়ে দলমত ধর্ম নির্বিশেষে সর্ব ভারতীয় রাজনৈতিক দল হতো তাহলে মুসলীম লীগের জন্ম হতোনা। মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছিল কংগ্রেস নেতাদের হীনমন্যতা ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে। কিন্তু সু কৌশলে ভারত ভাংগার দোষটা চাপিয়ে দিয়েছে মুসলমানদের উপর। এটা সবাই জানে বৃটিশ দখলদারিত্বের আমলে সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে মুসলমানেরা( হান্টারের ‘দি ইন্ডয়ান মুসলমানস পড়ুন)।
একই ভাবে পাকিস্তানকে খন্ডিত করার জন্যে বাংগালী মুসলমানদের দায়ী করা হয়। কারণ বাংগালী মুসলমানেরাই শোষিত ছিল। যে সমস্যা আলাপ আলোচনা করেই সমাধা করা যেতো তার সমাধান হয়েছে দেশ ভেংগে, সম্পদ নষ্ট করে ও লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে। বংগবন্ধুতো ৬দফার মাধ্যমেই সমাধান চেয়েছিলেন। সকল দলিলই এ কথা প্রমান করে।
আকাশ বাবুরা মনে করেন,৭১এর যুদ্ধ ছিল বাংগালী আর অবাংগালীদের ভিতর। যদিও অবাংগালী ভারতীয়রা রাজনৈতিক কারণে পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী মুসলমানদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। এখন আকাশবাবু স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির গবেষণা করছেন। যদি ইসলাম আর মুসলমানিত্ব মৌলবাদ হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষই মৌলবাদী। আকাশবাবুরা নিজেদের অধিকতর বাংগালী আর কম মুসলমান মনে করেন। এটাই দন্ধের মূল কারণ। তাঁরা মনে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে দেশের সকল মানুষ পশ্চিম বাংলার সনাতনপন্থীদের মতো হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই উল্লেখ করছি যে অখন্ড বংগদেশকেও খন্ডিত করেছে সনাতনপন্থীরা। ৪৭ সালে মুসলমান নেতারা অখন্ড বাংলাদেশের প্রস্তাব করেছিলেন। সনাতনপন্থীরা তার বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু দোষ চাপিয়ে দেয়া হলো বাংগালী মুসলমানদের উপর।
পাঠকবন্ধুগণ,ধর্মহীন আরবী বা বাংলা নামধারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৌলবাদের( ইসলাম বা মুসলমানিত্ব) গন্ধ পান। পূর্ব পাকিস্তানের পুঁজির বিকাশের কথা বলে তখন প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদগণ আইনী বেআইনী পথে নানা ধরণের সুপারিশ করেছেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বিকাশের কথা বলে দলীয় লোকদের লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে বেশ কিছু লোক রাতারাতি পুঁজির মালিক হয়ে গেলেন। আর কিছুলোক ব্যান্ক গুদামের মাল লুট করে নিজেদের পুঁজির ব্যবস্থা করেছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালে মানে স্বাধীনতার ১২ বছরের মধ্যেই লুটেরা পুঁজির মালিকেরা ব্যান্ক বীমা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। ৮৩ সালে ব্যান্ক প্রতিষ্ঠা করতে মাত্র তিন কোটি টাকা লাগতো। এখন লাগে নানা ধরণের অদৃশ্য ব্যয় সহ এক হাজার কোটা টাকা। ৮৩ সালে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যান্কের পরিচালক হওয়া যেতো। এখন এক হাজার কোটি টাকা দিতেও অনেকেই রাজী। কালো বা লুটেরা পুঁজি সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ হয়েছে মিডিয়াতে। এ ব্যাপারে নীতিবান সাংবাদিকদেরও কোন আপত্তি নেই। পুঁজির মালিক চোর ডাকাত লুটেরা হলেও সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবীদের কিছু আসে যায়না। এখনতো সাংবাদিকরা এক সাথে তিন চারটে পদের দায়িত্ব পালন করেন। একজন সম্পাদক ইউনিয়ন নেতা, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হতে পারেন। ইউনিয়ন নেতা হিসাবে শ্রমিক সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা করেন, আর অফিসে গিয়ে সাংবাদিক কর্মচারীদের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন।
আকাশ বাবু ও বারাকাত বাবুরা অশ্লীল লুটেরা পুঁজির বিকাশের ব্যাপারে তেমন কিছু বলেন। এই পুঁজিইতো তাদের মৌলবাদের অর্থ বা পুঁজি লিখতে উত্সাহ দান করে। বাংগালীদের পুঁজি চাই বলে গলা ফাটিয়ে পাকিস্তান আমলেই কিছুলোক পাটকল বা সুতাকল স্থাপন করেছিল। তার আগে বৃটিশের তাবেদারী করে পুঁজির মালিক হয়ে চা বাগানের মালিক হয়েছে। তখন তাবেদারী তগমা হিসাবে নবাব, খান বাহাদুর ও খান সাহেব হয়েছেন। যেমন আমাদের সওদাগর কবির বাপদাদা বৃটিশদের সেবা করে জমিদারী পেয়েছিলেন । পুঁজি সংগ্রহের জন্যে ঠাকুর পরিবারকে বহু আজে বাজে কাজ করতে হয়েছে। কাজী নজরুলের পুঁজির দরকার নেই তাই তিনি সাদা সিধে গরিবী জীবন যাপন করতেন। ইংরেজ আসার ফলে এই খানদানী পরিবারের পতন হয়। ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী উড়িষ্যা দখল করলে নীলরতন ঠাকুর দেওয়ানীতে চাকুরী পান। ঠিক ওই সময়ে নজরুলের পীরদাদারা ছিলেন প্রধান বিচারপতি( কাজীউল কুজ্জাত)। আকাশবাবুর পরম আত্মীয় চৌধুরী সাহেবদের দাদাও আমিনের চাকুরী করতেন। আমিনরা কেমন ঘুষখোর তা আপনারা সবাই জানেন।
আকাশ বাবুরা লুটেরা অর্থনীতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন না। ব্যান্ক গুলোতে বর্তমানে ৫০ হাজার কোটিরও অধিক খেলাপী ঋণ রয়েছে, যা আদায় হলে দুটি পদ্মাসেতু তৈরি করা যায়। তাঁরা দেখেন মৌলবাদের অর্থনীতি। আমি একজন মৌলবাদী,মানে আমি আমার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করিনা। আমার রক্তে আমার পূর্ব পুরুষের রক্ত বইছে। আমি তাই তাঁদের অস্বীকার করতে পারিনা। তাঁরাই আমার বায়া দলিল। আমি তাঁদের সম্পদ ও সম্মানের ওয়ারিশ। আর আকাশ বাবুরা পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেন। তাই আজ বিতর্ক উঠেছে মারা গেলে লাশ(শবদেহ) কোথায় নেয়া হবে, ও্ঁসৌধে( শহীদ মিনার) না শ্মশান বা গোরস্তানে। লাশ (শবদেহ) সমুখে রেখে দোয়া দরুদ পড়বেন না রবীন্দ্র সংগীত শুনবেন। বাপের বা দাদা নানার নাম গোপন রেখে অনেকেই নাম রাখেন পুরোহিত,এম এম আকাশ, সীমান্ত খোকন,সমুদ্র গুপ্ত,পার্থ সারথী। সমাজ এদের নিয়ে বিভ্রান্ত। এরা কারা।
এইতো ক’দিন আগেই মোদী সাহেব বলেছে ধর্মের সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই। ধার্মিক হলেই সন্ত্রাসী হবে এ ধারণা ভুল এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত, রাজনৈতিক স্বর্থ হাসিলের কূটবুদ্ধি। ধর্মীয় গোঁড়ামী অশিক্ষিত( শিক্ষা যাদের অন্তরে আলো জ্বালাতে পারেনি) মানুষের কাজ। বাংলাদেশে তথাকথিত শিক্ষিত প্রভাবশালী লোকদের ৮০ জনই ইসলাম কি তা জানেন না। তাই তাঁদের অনেকেই ইসলামকে মৌলবাদী(গোঁড়া) প্রগতিবিরোধী ধর্ম হিসাবে গালাগাল দেয়। জগতে যে কোন মানুষই ধর্মহীন, ধর্মমুক্ত হতে পারেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার। কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষকে গালাগাল অধিকার কারো নেই। ভারতের অর্থনীতি মাড়োয়ারীদের অধিকারে বা নিয়ন্ত্রণে। সেখানে অর্থনীতিবিদরা সে অর্থনীতিকে মৌলবাদের অর্থনীতি বলে গালাগাল দেয়না। ৭১ সালে যারা ভিন্নভাষী ব্যবসায়ীদের সম্পদ লুট করেছে এখন তারাই বা তাদের অনুসারীরা মৌলবাদের অর্থনীতির কথা বলে শরীয়া ভিত্তিক ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো দখলের পায়তারা করছে। এদের পুর্ব পুরুষরাই ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলমানদের সম্পদ লুটে নিয়েছে আর তাদের সহযোগী ছিল সনাতনপন্থী ক্ষমতাবান লোকেরা।
মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে পন্ডিত বা আল্লামা আহমদ শরীফের একটি বই আছে। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোন থেকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। মৌলবাদ বা ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের জন্ম হয়েছে ফরাসী দেশে। বৃটেন এর লালন পালন করেছে। আমেরিকা এখন তার প্রয়োগ করছে। শব্দটির উত্পত্তি হয়েছে খৃষ্টধর্মের ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে। বৃটেনের রাষ্টধর্ম হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্টবাদ। ক্যাথলিকরা এদেশ থেকে বিতাড়িত। মতবিরোধের কারণে রাজা কয়েকবার গীর্জা প্রধানকে হত্যা করেছেন। ব্লেয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে নিজ ধর্ম ক্যাথলিকবাদ ত্যাগ করে প্রটেস্ট্যান্টবাদ গ্রহণ করেছিলেন। ওরা নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে মৌলবাদ শব্দটিকে ইসলাম ও মুসলমানদের কাধে তুলে দিয়েছে। এখন আমেরিক, বৃটেন, ফ্রান্স ও পশ্চিমা দেশগুলো সুকৌশলে ইসলামেকে মৌলবাদী বলে প্রচার করতে থাকে। সেই প্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছেন পন্ডিত আহমদ শরীফের মতো কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি। কোরআন, ইসলাম ও রাসুলের(সা) জীবনী যাঁরা অনুধাবন করেছেন বা পড়েছেন তাঁরা কখনই ইসলামকে মৌলবাদী ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা বলতে পারেন না। তথাকথিত কমিউনিজম বা প্রগতিবাদীতা জগতের কিছু মানুষকে কিছুদিনের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। সত্যিকারের প্রগতিবাদিতাই হলো ইসলাম। দু:খ ও বেদনার বিষয় হলো পশ্চিমাদের ইসলাম নিয়ে মিথ্যা প্রচারণাকে বেশ কিছু মুসলমান দেশ ও জ্ঞানী ব্যাক্তি গ্রহণ করেছে। বেশ কিছুদিন হলো শুনতে পাচ্ছি পলিটিকেল ইসলাম শব্দটি। এটারও প্রচারক পশ্চিমারা ও তাঁদের এদেশীয় তাবেদারগণ। মদীনা রাষ্ট্রই হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম গণমানুষের রাষ্ট্র। মুহম্মদ(সা) ছিলেন এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। আমি সবাইকে বলবো মদীনা সনদ পাঠ করার জন্যে। এই সনদেরও অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন আকাশ বাবুদের মতো এক শ্রেণীর রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তথাকথিত প্রগতিবাদীতার দেশের এক্যকে বিনষ্ট করছে। এখন অর্থনীতিকে ধ্বংশ করার অভিযান চালাচ্ছে।
সকালবেলা ৯৪
Posted in Uncategorized on November 4, 2014|
সকালবেলা ৯৪
আমার দাদার দাদা(Great great grand father) আতাউল্লাহ মাজমুয়েদার ছিলেন হয়ত ত্রিপুরা মহারাজার রেভিনিউ কালেক্টর। শব্দটি ফার্সী। উচ্চারন মাজমুয়েদার। মোঘলদের রাজস্ব আদায়কারীদের পদবী ছিল মাজমুয়েদার। মানে রাজস্ব জমাকারী। মাজমা মানে একত্রিত করা। কিন্তু আমার দাদা ইয়াকুব আলী মজুমদার সাহেব ছিলেন সওদাগর। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি বলতেন, আল্লাহর রাসুল(সা) সত্ ব্যবসায়ীদের অলিআল্লাহর কাতারে স্থান দিয়েছেন। রাসুলেপাকের(সা) সাহাবীদের অনেকেই কাপড়ের ব্যবসা করতেন। দাদাজানের বাবার নাম মনসুর আলী মজুমদার ও ব্যবসা করতেন। আমাদের বাড়িতে ইংরেজী শিক্ষা প্রবেশ করে ১৯০০ সালে।আমার দাদাজানের এতে আপত্তি ছিল। তিনি বলতেন ,নাসারার বিদ্যায় ঈমান নষ্ট হয়। আমার বড় ও মেজজেঠা ছিলেন আরবী শিক্ষিত। বড়জেঠা কাপড়ের ব্যবসা করতেন আর মেজজেঠা জমিজমা দেখাশুনা করতেন। সেজজেঠা ফজলে আলী সাহেব সরকারী চাকুরী করতেন। আমার বাবা আবদুল আজিজ মজুমদার ব্যবসা করতেন রেংগুনে। আমার চাচা আবদুল মজিদ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে পাশ করে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। ছোট চাচা মুলকুতের রহমান ও কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি ১৯৪৬ সালে মারা যান। রেংগুনে বাবা ধানচালের ব্যবসা করতেন। তখনকার শ্যামদেশ, এখন থাইল্যান্ডেও বাবার ব্যবসা ছিল। পরে তিনি কিছুদিন নির্মান ব্যবসাও করেছেন মেদিনীপুরে। জীবনে শেষ সময়ে তিনি ফেণীতে ছিলেন।
এবার আমার মায়ের কথা একটি বলি। তিনি আশরাফ উন নেছা( সম্ভ্রান্ত নারী)। আমার নানার বাড়ি রামপুর পাটোয়ারী বাড়ি। নানার নাম কলিম উদ্দিন পাটোয়ারী। নানীর নাম সৈয়দা নওয়াবজান বিবি। আর আমার দাদার বাড়ি উকিলপাড়া( এক সময়ে দাউদপুর নামে পরিচিত ছিল। এলাকাটা রামপুর মৌজার ভিতর। ১৮৭০ সালে দাদা এখানে বাড়ি করেছেন। দাদা পিতৃমাতৃহীন হয়ে ফেণীতে এসে ফুফুর কাছে পালিত হন। ১৮৭৬ সালে ফেণী মহকুমা হয়। তখন কবি নবীন সেন প্রথম এসডিও হয়ে ফেণীতে আসেন। ১৮৮৬ সালে ফেণী হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমার নানার নাম কলিম উদ্দিন পাটোয়ারী। আমার দুই মামা ও পাঁচ খালা। প্রতি বছর স্কুল ছুটির সময় আমরা খালাদের বাড়ি যেতাম। মা’র নানার বাড়ি রামপুর সৈয়দ বাড়ি। মা কিছু লেখাপড়া জানতেন। শিশুকালে তিনি আমাকে অংক করাতেন সে কথা মনে আছে। আমার বাবা নরম মানুষ ছিলেন,অতি দয়ালু ছিলেন। মা ছিলেন দৃঢ়চেতা । শক্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল। মাকে আমরা বেশী দিন পাইনি। ১৯৫১ সালে তিনি জগত ছেড়ে চলে গেছেন। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। মা’র বিয়ে হয়েছে ১৯৩৫ সালে। আমরা ছিলাম চার ভাই দুই বোন। দুই বোন মারা গেছে বাল্যকালেই।
আমার দুই ফুফু ছিলেন। একজন আছিয়া খাতুন, আর ছোট জন ফাতিমা খাতুন। ছোটজনের বিয়ে হয়েছে হাজারী বাড়িতে। বড় ফুফুর বিয়ে হয়েছে গোবিন্দপুর বৈদ্য বাড়িতে।