Feeds:
Posts
Comments

Archive for February, 2012


আমি একজন জরিফাকে চিনি। ৬০/৭০ বছর ধরে তার পরিচিত জন তাকে জরিফী বলে ডাকতো। জরিফা কে এবং কি তা ব্যাখ্যা  করা বা বর্ণণা করা কঠিন। ক’দিন আগে জরিফা  এ জগত ত্যাগ করেছেন। খুবই সম্মানজনক ভাবেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। তাঁর বিদায় ছিল ইজ্জতের সাথে। জরিফার মা বাপ ছিলনা। তাঁর কোন ঠিকানা ছিলনা। নিজের কথা, মা বাপের কথা, ভাই বোন আত্মীয় স্বজনের কথা কোনদিনও বলতে পারেনি। যাঁদের কাছে ৭০ বছরেরও অধিক সময় ধরে জরিফা ছিল তাঁরা কেউ কখনও তাঁর পরিচয় সংগ্রহ করার চেস্টা করেন নি। জরিফার পরিচয় জানাটা তাঁদের কাছে খুব একটা জরুরী ছিলনা। তাঁদের হয়ত এমন একজন জরিফার খুবই প্রায়োজন ছিল। মনে হয় ৪২ এর যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের সময় জরিফা হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁর মা বাপ ভাই বোন আত্মীয় স্বজন কেউ হয়ত তাঁর খোঁজ খবর নেয়নি। দারিদ্র আর দুর্ভিক্ষই হয়ত এর কারণ ছিল। তাঁরা হয়ত ভেবেছিলেন অভাবের সংসারে একটি খাবারের মুখ কমলেই ভাল। তাই মানুষ বা সন্তান হিসাবে তাঁর আর প্রয়োজন ছিলনা। যাঁরা তাঁকে ধানক্ষেত থেকে কুড়িয়ে পেয়েছেন, তাঁদেরও ওই রকম একটি মুখের প্রয়োজন ছিল। একটি মুখে আর কত খাবে? যা খাবে তার চেয়ে  গতরে অনেক বেশী দিতে পারবে।

জরিফার সাথে আমারও বেশ জানাশোনা ছিল। কিন্তু অবাক লাগে আমি নিজেও কখনও তাঁর পরিচয় জানতে চাইনি। কেন চাইনি তা আজ ব্যাখ্যা করে বলতে পারবোনা। আমার যখন জরিফার সাথে পরিচয় হয় তখন তাঁর বয়স ৩৫/৪০এর মতো। প্রায় ৪৫ বছর ধরে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। প্রথম পরিচয়েই যদি চেস্টা করতাম তাহলে হয়ত তাঁর বাড়িঘর, মা বাপ ভাইবোনের পরিচয় পাওয়া যেতো। আমি কেন এ কাজটি করিনি , বা তখন আমার এ কাজটি করতে আগ্রহ জন্মেনি তা বলতে পারবোনা। অনেক ভাল কাজ আমরা ইচ্ছা করলেই করতে পারিনা। আমি এরশাদ মজুমদার সমাজের যে অংশে বাস করি সেখানে সত্য, মানবতা, দায়িত্ব নানা ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। সমাজের সব কথা নাকি বলা যায়না। সব সত্য নাকি প্রকাশ করা যায়না। প্রিয়জন বলেন , সমাজের সবকিছু ভাল করার দায়িত্ব তোমার একার নাকি। হয়ত তাই। আমিতো আর সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারিনা। আমাকে যিনি সৃস্টি করেছেন, এ জগতে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনিই আমাকে খুবই ক্ষুদ্র  ক্ষমতাহীন মানুষ করে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জগতের মূলবান কাজগুলো করার জন্যে তাঁর আরও অনেক সৃস্টি রয়েছে। তাই আমাকে কোন দায়িত্ব দেননি। নিশ্চয়ই তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, কিন্তু আমি এই হতভাগা তা কখনই বুঝতে পারিনি। আমি সব সময়ই ভাবি আমার মতো এমন একজন অকেজো মানুষকে জগতে পাঠাবার কি প্রয়োজন ছিল আমার প্রিয়তমের। আমিতো নিজেই আমার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারিনি বা পারছিনা। আমি ভেবে অবাক হই , সত্যিই এখানে আমার কি কাজ ছিল। জন্মসূত্রে আমি অনেক সুযোগ সুবিধার ভিতর জন্মেছি। তাই প্রচলিত ধারনার পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছি। মানে স্কুল কলেজে গিয়েছি। পড়ালেখা শেষ বা অশেষ করে খবরের কাগজে ঢুকে পড়েছি। যা আমার বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল। আমি বাল্যকাল থেকেই কথা বলতে ও লিখতে পছন্দ করতাম। এখনও লিখছি ও বলছি। প্রয়োজনের তূলনায় বয়সটা একটু বেশীর দিকে চলে যাচ্ছে। আগেই বলেছি, আমার প্রিয়তম আমাকে দিয়ে কি কাজ করাতে এখানে পাঠিয়েছেন তা আমি এখনও বুঝতে পারিনি। একটি বিয়ে করা, সংসার নামক বস্তু সাজানো, সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের পালন করা, ভাই বেরাদরের খোঁজ খবর রাখা, একটু বেশী সুখে থাকাতো আমি করছি এবং করে চলেছি। এসব করার জন্যে একজন এরশাদ মজুমদারের কোন প্রয়োজন ছিলকি ? মন বলে এসবের কোন প্রয়োজন ছিলনা। কিন্তু এই দেহ বা অস্তিত্ব বলে চলেছে, জগতে এসব না হলে চলেনা। এ জগতে শতকোটি লোক আসে বা সৃস্টিকর্তা ওদের পাঠান যারা খায় দায় বেড়া হয়, সংসার করে পথে বস্তিতে, বাড়িতে আর রাজমহলে, তারপর একদিন চলে যায়। মাঝখানে যারা বিশ্বাস করে তারা তাদের প্রভুর নির্দেশ মেনে চলার চেস্টা করে,  শেষ বিচারের কথা ভাবে। বাকিরা  মনে করে তারা এমনিতেই এসেছে , আবার এমনিতেই চলে যাবে। আমার প্রভু আমার প্রিয়তম। আমি তাকে ভয় করিনা, কিন্তু লাজে অবনত থাকি। মরমে মরমে মোমের মতো গলে যাই। তিনি যা করতে বলেছেন তা করতে পারিনা। আর ব্যর্থতার কারণেই  সদা অবনত  আছি সারাটি জীবন। আমার প্রতিয়তম ন্যায়ের প্রতীক। আমি সেই ন্যায় প্রতিস্ঠা করতে পারিনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ করা আমার জন্যে অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু আমি পারিনা। আমি আমার খাবার, আমার পোষাক অন্যকে দিতে পারিনা। পতিত মানবতাকে আমি জেনে শুনেও রক্ষা করতে পারিনা। তাই আমি অদৃশ্য কাফনে মুখ ঢেকে বেঁচে আছি। এত সব ব্যর্থতা নিয়ে আমি কেমনে মুখ দেখাই আমার প্রভুকে। তিনি এমন বান্দাহকে ক্ষমা করেন কিনা জানিনা। আমিতো ক্ষমা চাইতেও শরমে মরি।

জরিফা বাংলাদেশের এমন একজন নারী যে নিজেকে একজন মানুষ বলেও চিনতোনা। দুবেলা খাওয়া ছাড়া  জরিফার আর কোন চাহিদা ছিলনা। কোনদিন নিজের মা বাপ ভাই বেরাদরের নাম বলতে পারেনি। নিজের নাম যে জরিফা সে কথাও সে জানতোনা। যে মেয়েটা হারিয়ে গেছে তার নাম জরিফা ছিল বলেই নাম গোত্রহীন মেয়েটির নাম দেয়া হয়েছে জরিফি। হারানো মা বাপের নাম সে কোনদিন বলেওনি।  ঈসা নবী(আ) জন্মেছেন পিতা ছাড়া খোদারই কুদরতে। খোদা বলেন, তিনি এমনটি পারেন। যেমন পেরেছেন পিতামাতা ছাড়া নবী আদমকে(আ) সৃস্টি করতে। যিশুকে দিয়েছিলেন মা মরিয়মকে, আর বাবা আদমকে দিয়েছিলেন মা হাওয়াকে। তারপরেইতো এ জগত দুনিয়া আর আমরা। জরিফাকেও সবই দিয়েছিলেন। তবুও জরিফা ছিল সর্বহারা। ৮০/৮৫ বছরের জীবনে তার কিছুই ছিলনা। না সম্পদ, না ঠিকানা, না মা বাপ, না ভাই বেরাদর। আমার জরিফা আমার খোদার একটি মহা কুদরত। জরিফা ছিল আমাদের জন্যে একটি বিরাট পরীক্ষা। আমাদের সামনে জরিফাকে পেশ করে মহান প্রভু যেন বলে চলেছেন, এই নে তোদের পরীক্ষা। প্রমাণ কর তাদের মানবতা ও মনুষ্যত্ববোধ। আমার কানে বাজছে, প্রভু বলছেন, আমি এভাবেই তোদের পরিক্ষা নিয়ে থাকি। জরিফা তোদের পরীক্ষার হলের প্রশ্নপত্র।

সেই প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে আমি বসে আছি মন সমুদ্রের কিনারায়। সূর্য ডুবু ডুবু। কিন্তু কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেয়া হলোনা। জানিনা, এসব প্রশ্নের কি উত্তর। আমার প্রিয়তম প্রভুতো আমাকে সব প্রশ্নের উত্তরই শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও আমি কেন কোন দিতে পারলাম না বা পারছিনা। বাংলাদেশে এমন জরিফা হয়ত হাজার হাজার বা লাখ লাখ বা কোটি কোটি আছে আমাদের কাছে পরিক্ষার প্রশ্নপত্র হয়ে। আর আমরা কোন উত্তর দিতে না পেরে হলরুমেই বসে আছি। জানিনা, শেষ বিচারের দিনেও উত্তরহীন হয়ে পরীক্ষার হলরুমেই বসে থাকবো কিনা? প্রভু যদি বলেন, যাও, জরিফার কাছ থেকে উত্তর নিয়ে আসো। সেদিন জরিফাকে কোথায় পাবো। আমি জানি, জরিফার অবস্থা সেদিন আমার চেয়ে বা আমাদের সবার চেয়ে অনেক ভাল থাকবে। কারণ, জগতে জরিফা ছিল একজন মজলুম। সারাটা জীবন জরিফা ছিল একজন মহা নির্যাতিত নি:স্ব নারী। যার কথা ছিল মা হওয়ার, বোন হওয়ার, কারো স্ত্রী হওয়ার, কোন সংসারের কর্ত্রী হওয়ার। কিন্তু এসবের কিছুই সে হয়নি। এজন্যে কে দায়ী? কার শাস্তি হওয়া উচিত? জরিফার বেলায় নিজের মানবিক দায়িত্ব পালন করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি, এ কথা বলতে বা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। প্রভুর বিচারালয়ে মাথা অবনত করে দাঁড়াতে আমার কোন লজ্জাবোধ নেই। আমি জরিফা কোনদিনও ফরিয়াদী ছিলনা, আগামীতেও কোনদিন ফরিয়াদী হবেনা। এখানে বা সখানে কোথাও নিজের অধিকার প্রতিস্ঠা করার মতো কোন ক্ষমতা বা বোদ জরিফার কখনই ছিলনা। সেদিন প্রভু নিজেই হবেন বাদী ও বিচারক। আর আসামী থাকবো আমি। এখানেও আমি আমার বিবেকের কাছে আসামী। সেখানেও আমি থাকবো আল্লাহর আদালতে একজন আসামী। আমি কসম খেয়ে বলছি, আমি কোন সাক্ষী সাবুদ চাইবোনা। সকল অভিযোগ মেনে নিয়ে আমি শাস্তি মাথা পেতে নেবো।

এ জগতে আমার কোন শাস্তি হয়নি জরিফার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পালন না করার জন্যে। দায়িত্ব পালনের সকল ক্ষমতা ও যোগ্যতা আমার মালিক আমাকে দিয়েছিলেন। দুনিয়ার সুখ ও ভোগের মাঝে নানা লোভে আমি মত্ত  আছি। মানুষ হিসাবে , সুযোগ সুবিধা ভোগী হিসাবে আমি আমার উপর কোন দায়িত্বই সবার আগে , স্বেচ্ছায়, স্ব উদ্যোগে করিনি। জগতের আদালত আমাকে কখনই আসামী করেনি। জগতের আদালতের এমনিই অভ্যাস। কারণ জগতের আদালত গুলো সব সময়ই সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের পক্ষে। টাকা পয়সা না থাকলে জগতের আদালতে কোন বিচার বা সুবিচার পাওয়া যায়না। জগতে যারা আইন তৈরী করেছেন, যারা আদালত বানিয়েছেন , আইনের কথা বলেন তাঁরা সবাই একই গোত্রের, সমাজের এলিট। তাই আদালত, হাকিম হুকুম, উকিল মোক্তার ব্যারিস্টার সবাই একই গোত্রভুক্ত, একই স্বার্থের রক্ষাকারী। এই এলাকায় জরিফাদের কোন স্থান নেই। তাই জরিফারা জন্ম গ্রহন করে, আর জগতের আলো বাতাস কিছুদিন ভোগ করে জগত ছেড়ে চলে যায়। সে যে একজন মানুষ ছিল সে কথা তার কখনই জানা হয়নি। কেউ হয়ত বলবেন, স্রস্টাই জরিফাকে অমন করে বানিয়েছেন। আমি বলবো, জরিফার ব্যাপারে মানুষ, দেশ, সমাজ, রাস্ট্র তার দায়িত্ব পালন করেনি। জরিফাকে পূর্ণাংগ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিল তার পরিবারের, যারা তাকে কুড়িয়ে পেয়েছেন তাদের, সমাজের ও রাস্ট্রের। এই একজন জরিফার ব্যাপারে কেউ তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। এ ব্যাপারে তাঁদের কোন জবাবদিহিতাও নেই।

আমি যে ভৌগলিক এলাকায় বাস করি তার বর্তমান নাম বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভৌগলিক এলাকা, একটি রাস্ট্রশক্তির অধীনে। আমার পূর্ব পুরুষরাও এই এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেছেন, এখানেই বড় হয়েছেন, এখানেই গত হয়েছেন। এক সময় রাজা মহারাজা, নবাব বাদশাহরা এই এলাকা শাসন করতেন। যখন রাস্ট্র কাকে বলে আমরা জানতাম না। অতীতের কথা আজ আর নাইবা বললাম। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ মিলে ৬৪ বছর পার হতে চলেছে। আমরা নাগরিক নামে অভিহিত হচ্ছি। বলা হচ্ছে আমাদের একটি সংবিধান আছে। সেখানে আমাদের নাগরিক অধিকারের কথা লিখা আছে। আমরা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি। প্রতিনিধিরা সংসদ গঠন করেন। সেখানে বসে আইন পাশ করেন। সে আইন নাকি আমাদের কল্যাণে রচিত হয়। প্রতিনিধিরা সরকার গঠণ করেন। সেই সরকার রাস্ট্র পরিচালনা করেন। সরকার গঠনের পরেই আমাদের প্রিয় প্রতিনিধিরা নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা  পেতে থাকে। সরকারে থাকলে একটু বেশী পায়, না থাকলে কম পায়। যারা বড় ধরনের কোন পোস্ট পান তাদের আয় রোজগার একউ বেশী হয়। সংসদে প্রতিনিধিরা তখন আর এলাকার কোন কথা বলতে পারেন না। সরকারী সদস্যরা অনুমতি ছাড়া কোন কথাও বলতে পারেন না। এসব হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের গুণাবলী। প্রধানমন্ত্রী তখন দল রক্ষার জন্যে নানা ধরণের আয় রোজগারের কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাংলাদেশ হলেতো কথাই নেই। এখানে প্রধানমন্ত্রী বেশীর সময়েই বিরোধী দল ও দলের নেতার বিরুদ্ধে খিস্তি খেউর করতেই ব্যস্ত থাকেন।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠণের পর থেকেই  সরকারী নেতারা নিজেদের জনগণের হাত থেকে রক্ষা বা বাঁচাবার কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের সাথে তখন সাধারন কোন মানুষ আর দেখা করতে পারেনা। তখন তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বা রাস্ট্রপতি হলেতো কথাই নেই। পোঁ পাঁ আওয়াজ দিয়ে রাস্তা সাফ করে বা একেবারে ফাঁকা করে তাঁদের চলতে হয়। শুধুমাত্র জনগণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যে তাঁরা রাস্ট্রীয় খাজানা থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেন। এটা নাকি রাস্ট্রের নিয়ম বা রেওয়াজ। পাঁচশ’ বা হাজার বছর আগে রাজা বাদশাহরাও জনগণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যে কোট কোটি টাকা ব্যয় করতেন। তখনকার দিনে রাজা বাদশাহদের তাঁদের রাণী , সেনাপতি ও রাজপুত্র- শাহজাদারা হত্যা করতেন সিংহাসন লাভের জন্যে। এখন সে রকম নয়। আমাদের দেশের দুজন রাস্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। রাস্ট্রের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। একবার রাস্ট্র প্রতিস্ঠিত হয়ে গেলে সেই রাস্ট্র সবচেয়ে বেশী ব্যস্ত থাকে জনগণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্যে। আত্মরক্ষার জন্যে রাস্ট্রের সেনাবাহিনী, আধা সেনাবাহিনী, পুলিশ আনসার ও রেব অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যাঁরা সরকার গঠন করেন তাঁরাও মনে করেন, জনগণ সব সময় তাঁদের বিরুদ্ধে লেগে থাকবে। তাই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের রক্ষা করার জন্যে রাস্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার প্রচেস্টা চালিয়ে যান।

এতক্ষণ আমি যা বলেছি তা রাস্ট্র , সরকার ও প্রতিনিধি নিয়ে। এর কিছুই কিন্তু জরিফারা বুঝতে পারেনা। তাই রাস্ট্রের কাছে জরিফারা একটি অঁক বা পরিসংখান মাত্র। আদম শুমারীর সময় হয়ত জরিফার নাম খাতায় উঠবে। হয়ত জরিফার নাম ভোটার তালিকায় থাকবে। কিন্তু এতে কিছু আসে যায়না। কারণ, জরিফা যাদের দাসে পরিণত হয়েছে তাঁরা তাকে তথাকথিত  স্বীকৃতি দিতে না ও রাজি হতে পারেন। এসবতো আমাদের মতো এরশাদ মজুমদারদের জন্যে। যাঁরা কিছু লিখে মনের কস্ট মিটাই। জরিফাদের কাছে রাস্ট্র দেশ, সংবিধান, সংসদ, অধিকার, নাগরিকত্বের কোন অর্থ নেই। আমরা বুঝতে পারি রাস্ট্র কি ? আমরা বুঝতে পারি রাস্ট্রের হাত কত লম্বা। নাগরিককে গলা টিপে মারার জন্যে রাস্ট্রের এই লম্বা হাত কত নিষ্ঠুর হতে পারে। বৃটিশ আমলে আমরা ছিলাম পরাধীন প্রজা। তাই আইন আদালত ছিল বিদেশী শাসক বৃটিশদের পক্ষে। আইনের কথা বলেই তারা নিষ্ঠুর ভাবে আমাদের দমন করতো। বৃটিশ চলে যাওয়ার পর দেশের নাম বদলে পাকিস্তান ও ভারত হয়েছে। জাতীয় সংগীত ও পতাকা বদলেছে। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ হয়েছে। কিছু সংখ্যক মানুস দেশ চালাবার ক্ষমতা পেয়েছে। কথা বলার কিছু সুযোগ হয়েছে। সংসদে কিছু তর্ক বিতর্ক হয়। সংবাদপত্রে কিছু কথা বলা হয়। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা পাকিস্তানের শাসন ও শোষণকে প্রত্যাখ্যান করে দেশটাকে স্বাধীন করে নাম দিয়েছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেরও ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও রাস্ট্র এখনও জনগণের হয়ে উঠতে পারেনি। রাস্ট্রের আইন গুলো বৃটিশদেরই রয়ে গেছে। এখন সেই আইনেই দেশ চলে। ফলে আমাদের মানবিক মর্যাদা নেই। আমরা সত্যিকারে নাগরিক হয়ে উঠতে পারিনি। আমরা কিছুলোক কথায় কথায় চেতনার জাগরন ও ক্ষমতায়নের কথা বলি। বিগত ৬৫ বছরেও তা হয়নি। এখনও আমাদের চারিদিকে কোটি কোটি জরিফা রয়ে গেছে। যাঁরা এখনও মানুষ হয়েই উঠতে পারেনি। নাগরিক হয়ে উঠার প্রশ্নই উঠেনা। আমার যেন কেন মনে হয় রাস্ট্র সত্যিই আমাদেরকে জাগরিত, আলোকিত ও ক্ষমতায়িত নাগরিক হিসাবে দেখতে চায় কিনা?

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


ক’দিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশের চেতনা বিরোধীরা স্বাধীনতার শত্রু। একইদিন তিনি আবার বলেছেন, চারনীতি বিরোধীরা স্বাধীনতার শত্রু। আবার কেউ কেউ বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীরা স্বাধীনতার শত্রু। সাবেক উপরাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল সাহেবের সুযোগ্য সন্তান সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, রাজনীতিকদের সব কথা সিরিয়াসলি নিবেন না। রাজনীতিকরা নানা কারণে নানা কথা বলেন। ওসব নাকি কথা নয়, কথার কথা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলে থাকেন শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি নাকি পাকিস্তানীদের গোয়েন্দা ছিলেন। আরেক আওয়ামী নেতা বলেছেন, কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। বুঝতে পারছিনা কার কথা বিশ্বাস করবো আর কার কথা বিশ্বাস করবোনা। এমনিতেই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতাদের নিয়ে নানা কথা চলছে। আমরা জানি , ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম হয়েছে। শামসুল হক সাহেব ছিলেন এই দলের সাধারন সম্পাদক। বংগবন্ধু শেখ মুজিব ও খোন্দকার মোশতাক ছিলেন নতুন দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। কিন্তু ইদানিং এমন লোকের দেখাও পাই যিনি বা যাঁরা বলেন, বংগবন্ধু কখনও মুসলীম লীগ করেননি। তিনি পাকিস্তান আন্দোলন করেননি। বংগবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা। এই শ্রেণীর লোকরা বলেন ইতিহাস পূণর্নিমান করতে হবে। ভাবটা যেন এমন বংগবন্ধু কোনদিনও মুসলীম লীগার বা পাকিস্তানী ছিলেন না। তিনি জন্মলগ্ন থেকেই  আওয়ামী লীগার এবং বাংলাদেশী। তিনি যে একদিন জিন্নাহ টুপি পরেছেন এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছেন এ থথ্য মানতে রাজী নন তাঁর অতি উত্‍সাহী ভক্তরা। এসব কারণেই জাতির জীবনে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশ নাকি একটি ভাষা ভিত্তিক রাস্ট্র। পৃথিবীতে বহু জাতি আছে যাদের ভাষা একই। কিন্তু তারা এক জাতি নয়। আরব বিশ্বে বহু জাতি আছে যাদের ভাষা আরবী। তবুও তারা এক জাতি নন। পৃথিবীর বহু জাতি ইংরেজীতে কথা বলেন, কিন্তু তারা সবাই ইংরেজ নন এবং এক জাতিও নন। যেমন বাংলাদেশের মানুষ আর পশ্চিমবাংলার মানুষ এক জাতি নন। অথচ এই দুই দেশের মানুষের ভাষা এক। শুধু ভাষার কারণে আমরা একটা জাতিতে পরিণত হইনি। যদি তাই হতো তাহলে বংগদেশ একটি দেশ থাকতো বা ভারতের সাথেই থাকতো। ৪৭ সালে পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতোনা। এ কথা আজ মহাসত্য যে, আমরা বাংগালী মুসলমান বলেই একটি স্বাধীন আলাদা দেশ গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের কাছে বাংগালীত্ব আর মুসলমানিত্ব কোনভাবেই আলাদা নয়। বাংলাদেশ রাস্ট্র প্রতিস্ঠার মূল উপাদান শুধু বাংগালীত্ব নয়। শুধু ভাষাও নয়। এক হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে এই ভৌগলিক এলাকায় মুসলমানদের আবাদ শুরু হয়। শত শত পীর ফকির ও ধর্মগুরু এ দেশে ইসলাম প্রচার করেছেন এবং নির্যাতিত লাঞ্চিত অধিবাসীদের মুক্তির পথা দেখিয়ে মুসলমান করেছেন। হয়ত মুসলমান হওয়ার আগে তাঁরা নিম্নবর্ণের  হিন্দু ছিলেন। সমাজে তাঁদের কোন মর্যাদা ছিলনা। আঞ্চলিক বা ভৌগলিক কারণে তাঁদের ভাষা বাংলা। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সাথে সাথে সমাজে তাঁদের নতুন মর্যাদা প্রতিস্ঠিত হয়েছে। মানবতা বিরোধী বর্ণ প্রথা থেকে তাঁরা মুক্তি লাভ করেছেন। তাই আমাদের জাতিসত্বা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ৭২ এর ১০ই জানুয়ারীর ভাষণে বংগবন্ধু উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষাণা করেছেন যে তিনি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম রাস্ট্রের নেতা। বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ত  বিস্তারিত ভাবেননি, নতুবা তাঁকে কেউ এ বিষয়ে ভুল বুঝিয়েছেন। অথবা কেউ প্রধানমন্ত্রীর সারল্যের সুযোগ নিয়েছে। যাঁরা মনে করেন আমরা একটি ভাষা ভিত্তিক জাতি তাঁরা হয়ত বিভ্রান্তিতে আছেন, নয়ত কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। ভারতীয় বাংগালীদের রাস্ট্রভাষা এখন হিন্দী। তাদের জাতীয়তা বাংগালী নয়, ভারতীয় বা ইন্ডিয়ান। ভাষার ব্যাপারে  বাংলাদেশ কখনই ভারতীয় বাংগালীদের মুখাপেক্ষী নয়।

সম্প্রতি ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার, শুদ্ধ বানান, সঠিক ব্যবহার নিয়ে আদালতের নির্দেশে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রতি দেশের মানুষের কোন সমর্থন নেই। এই কমিটির সদস্যরা একটি রাজনৈতিক আদর্শের বিশ্বাসী। এই কমিটির ধ্যান ধারনার সাথে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার কোন মিল নেই। এই কমিটি মনে করে বাংলা ভাষার রাজধানী এখনও কোলকাতা। তাঁরা মনে করেন বাংলা ভাষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্যে কোলকাতা যেতে হবে। এই কমিটি অসাম্প্রদায়িকতার নামে এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ত মনে  করেন  ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান করাটাই হলো অসাম্প্রদায়িকতা। এবং সেটাই একুশের চেতনা তাহলে তিনি সঠিক পথে চলছেন না। আমার বা আমাদের কাছে একুশের চেতনা মানে বাংলাদেশের মানুষের চেতনা। যে চেতনায় তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। যে চেতনায় তাঁরা লালিত ও বিকশিত হয়েছেন।যে চেতনার কারণে মুসলমান হয়েও এ দেশের মানুষ পাকিস্তানের সাথে থাকেনি। বরং লড়াই করে নিজের জাতিসত্তাকে রক্ষা করার জন্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষা বিকশিত হয়েছে বেদ উপনিষদ গীতার উপাদান নিয়ে। এমন কি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাধনার মূল উপাদান ছিল বেদ উপনিষদ ও গীতা। আর আমাদের বাংলা ওই সকল উপাদান থেকে মুক্ত। আমরাতো বলেই থাকি একুশ মানে মাথা না নোয়ানো। একুশ মানে ভাষার মর্যাদার জন্যে লড়াই করা। যদি একথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমরা কেমন করে পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষার কাছে মাথা নোয়াতে পারি? না পারিনা। আমরা আমাদের ভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছি। আমরা বাংগালী মুসলমান হিসাবে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিস্ঠা করেছি। যা পশ্চিম বাংলার মানুষ করতে সাহস করেনি। তাই তারা  দিল্লীর অধীনেই রয়ে গেছে।

সংবিধানের চার মূলনীতি, যা বংগবন্ধু দেশে ফিরে আসার আগেই নির্ধারিত হয়েছিল তা এখন কাগজে কলমে আছে। আমাদের জীবন চর্চায় নেই। সমাজতন্ত্র একটি অর্থনৈতিক চিন্তা ধারা। যা সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবী নিয়ে এসেছিল তা এখন কাগজে এবং বইতে স্থান নিয়েছে। খোদ রাশিয়া বা চীন এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আর অনুসরন করছেনা। সমাজতন্ত্র এখন বহুদেশ থেকেই বিদায় নিয়েছে। এর পরিবর্তে এখন উদার অর্থনীতি, মিশ্র অর্থনীতি বা  কল্যাণধর্মী ধনতান্ত্রিক সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিজেও তার রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তন করেছে। মিশ্র অর্থনীতির ব্যবহার বংগবন্ধুর আমলেই শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশও তার পথ পরিবর্তন করে কল্যাণমুখী অর্থনীতির দিকে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু কোন সরকারই বাংলাদেশে কল্যাণমুখী অর্থনীতি চালু করতে পারেনি। বরং সব সরকারই শোষণমুখী, গণবিরোধী অর্থনীতি চালু করেছে। ফলে খুবই উলংগভাবে এখানে ধনের বিকাশ লাভ করেছে। এক শ্রেণীর ধনী এখন সমাজ ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।রাজনৈতিক দলগুলো ধনীদের তাবেদারে পরিণত হয়ে পড়েছে।

আমাদের দেশে এখন যে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে তা খুবই বুড়িয়ে গেছে। দাঁত পড়ে গেছে, চোখে দেখেনা। এক সময় সমাজপতিরা এই গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। এক নাগাড়ে  কয়েকশ’ বছর ব্যবহারের ফলে এই গণতন্ত্র এখন মানুষের কল্যাণে কিছুই করতে পারছেনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনই গণতন্ত্রের ন্যাক্কারজনক নমুনা। ১/১১র সরকার জাতিকে দেখিয়ে গেছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কাকে বলে।বূড়ো গণতন্ত্র নিয়ে এখন বৃটেন আমেরিকাতেও নানা কথা উঠেছে। সত্যিকারের গণতন্ত্র এখন জগতের কোথাও নেই। থাকলে মানুষের এত কস্ট হতোনা। তথকথিত এই গণতন্ত্রের সাথে শোষণের একটা বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিশ্বব্যাপী ‘অকুপাই’ আন্দোলন শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রের নেতারা  জনগণকে লাঠিপেটা করে  গণতন্ত্র আর ধনবাদকে রক্ষা করার চেস্টা করছেন।আওয়ামী লীগের প্রচন্ড আন্দোলনের মুখে জেনারেল মঈনকে দেশের ক্ষমতা দখল করে নিতে সহযোগিতা করেছে। জেনারেল সাহেবই সাবেক আমলা ফখরুদ্দিন সাহেবকে তথকথিত কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসাবে চাকুরী দেন। নির্বাচনের আগে জেনারেল মঈনের সরকার নানা ধরণের মাদারীর খেল দেখিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বুঝা গেল কেন তাঁরা ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তথকথিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে ভাঙবার চেস্টা করেছেন। বিএনপির ১১ বছরের সাধারন সম্পাদক মান্নান ভুঁইয়াকে দিয়ে নতুন বিএনপি গঠনের চেস্টা করেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ১/১১র সরকার তাঁদের আন্দোলনের ফসল। ক্ষমতায় গেলে তাঁরা ওই বেআইনী সরকারের সব কার্য কলাপকে বৈধতা দিবেন। ২৮শে অক্টোবরের লগি বৈঠার মর্মান্তিক ঘটনার বিচার না হওয়ায় দেশবাসী তখনি বুঝতে পেরেছিলেন জেনারেল মঈন কেন ক্ষমতা দখল করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখলের ফলে ২৮শে অক্টোবরের সেই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার হয়নি। ওই ঘটনার ছবি যখন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দেখেছে তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনকে ধিক্কার দিয়েছে। ওই ঘটনার উদ্বৃতি দিয়ে ইনু মিনুরা এখনও নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করে।

ধর্ম নিরপেক্ষতা বা স্যেকুলারিজম আরেকটি চিন্তাধারা যা এসেছে পশ্চিমের অবক্ষয়ী সমাজ ব্যবস্থা থেকে। আমি এর আগেও বার বার বলেছি ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি শ্লোগান যা সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে। বহু দেশে এখনও এই শ্লোগানটি জারী আছে। সত্যি কথা বলতে কি চলমান বিশ্বে ধর্ম নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই। আছে শুধু একটি শ্লোগান। যা আমাদের দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিক, কলামিস্টদের বিভ্রান্ত করেছে। সম্প্রতি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন স্পস্ট করে ঘোষণা করেছেন, বৃটেন একটি খৃস্টদেশ। এই দেশের অধিবাসীরা প্রটেস্ট্যান্ট খৃস্টধর্মে বিশ্বাস করে। বৃটেনের রাজ পরিবার প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মের প্রচারক। এ দেশে প্রধানমন্ত্রীকেও  রাজ ধর্মে বিশ্বাস করতে হয়। ব্লেয়ার সাহেব বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে ক্যাথলিক বিশ্বাস ত্যাগ করে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখন তিনি আবার ক্যাথলিক ধর্মে ফিরে গেছেন। আমেরিকার ওবামা সাহেব এক সময় মুসলমান ছিলেন। মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। নামের সাথে হুসেন রেখেছিলেন। তাঁর আত্মীয় স্বজন অনেকেই এখনও মুসলমান। তিনি শুধু রাজনীতির স্বার্থে মুসলমানিত্ব ত্যাগ করেছেন। তাতেও রেহাই পাচ্ছেন না। তাঁকে বার বার জবাবদিহি করতে হচ্ছে তাঁর ধর্ম নিয়ে। তাঁকে ঘোষণা দিতে হচ্ছে তিনি আর মুসলমান নেই। কারণ আমেরিকা একটি খৃস্টদেশ। সে দেশে প্রেসিডেন্ট বা রাস্ট্রপতি হতে হলে  অবশ্যই খৃস্ট ধর্মে বিশ্বাস করতে হবে। বাংলাদেশও একটি মুসলিম দেশ। এখানকার ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। ইসলাম এখানে রাস্ট্র ধর্ম। এ দেশে অন্য ধর্মের মানুষও শান্তিতে বাস করে শত শত বছর ধরে। ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবীদার ভারতে বছরে শত শত সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়। ভারতে মোদীর মতো মনুষ্যত্বহীন মানুষ রাজনীতি করে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী  হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এমন ভারতের আদর্শ নাকি ধর্ম নিরপেক্ষতা। বাংলাদেশেও একশ্রেণীর রাজনীতিক ধর্ম নিরপেক্ষতার লেবাস পরে রাজনীতি করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ধর্ম নিরপেক্ষতার বয়ান করলেও নিয়মিত নামাজ রোজা ও ধর্ম কর্ম করেন। সত্যি কথা হলো স্যেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা পশ্চিমা জগতের একটা ভন্ডামী। সেই ভন্ডামী আমাদের দেশে এসে হাজির হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তিনটি নববর্ষ পালন করে। প্রথমটি পহেলা বৈশাখ, দ্বিতীয়টি ইংরেজী নববর্ষ এবং তৃতীয়টি পহেলা মহররম। মুসলমান হওয়ার কারণে আমরা পহেলা মহররম পালন করি। ইংরেজদের অধীনে থাকার কারণে পহেলা জানুয়ারী ও বাংলার নিজস্ব পঞ্জী অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালন করি। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। আল কোরাণ পড়ার জন্যে আমাদের আরবী জানতে হয়, একই ভাবে হিন্দুদের সংস্কৃত জানতে হয় গীতা পাঠ করার জন্যে। আমরা একসাথে পহেলা বৈশাখ পালন করি, পূজা ও ঈদ পালন করি আলাদা ভাবে। এটাই আমাদের সংস্কৃতি সহ অবস্থানের নীতি। তবে একথা কখনই ভুললে চলবেনা আমরা মুসলমান বলেই আজ একটি আলাদা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা প্রথমে পাকিস্তানের সাথে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত একটি স্বাধীন দেশ প্রতিস্ঠা করেছি। মুসলমান না হলে আমাদের আলাদা একটি রাস্ট্র প্রতিস্ঠার কোন প্রয়োজন ছিলনা। ১০ই জানুয়ারীর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, আমি বাংগালী, আমি মুসলমান।

আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বংগবন্ধুর কণ্ঠে কণ্ঠে মিলিয়ে আমিও বলতে চাই আমি একজন বাংগালী মুসলমান। এছাড়া আমার আর কোন পরিচয় নেই, কোন অস্তিত্ব নেই। মুসলমানিত্ব বাদ দিলে আমার অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা আর থাকেনা। বাংলাদেশের হিন্দুদের আলাদা স্বাধীন কোন দেশের প্রয়োজন ছিলনা। যেমন পশ্চিম বাংলার হিন্দুরা ভারতের অধীনে সুখে শান্তিতে আছেন। এ অঞ্চলের মুসলমানদের জন্যে স্বাধীনতা বা আলাদা সত্তা অপরিহার্য ছিল। তাই তাঁরা মুসলমান হয়েও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ৪৭ সালেই নিখিল বংগদেশ স্বাধীন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি কংগ্রেস ও হিন্দু নেতাদের বিরোধিতার কারণে। তখন বাংগালিয়ানা বা বাংগালিত্ব কাজ করেনি। কাজ করেছে হিন্দুত্ব। নেহেরুজী ও গান্ধীজী বুঝতে পেরেছিলেন বাংলা যদি অখন্ড ও স্বাধীন থাকে তাহলে একটি শক্তিশালী রাস্ট্র ও জাতিতে পরিণত হবে। নেহেরুজী তা কখনই চাননি। একই ভাবে তিনি পাঞ্জাবকে বিভক্ত করেছেন। এক সময় বলা হতো, হোয়াট বেংগল থিংকস  টুডে, রেস্ট অব ইন্ডিয়া থিংক টুমরো। বিদ্যা বুদ্ধিতে বাংলা ছিল সবার আগে। কংগ্রেসের ষড়যন্ত্রে সেই বাংলাকে ভাগ হতে হলো। এক সময় পাঞ্জাব ছিল ভারতের শস্য ভান্ডার। আর্থিক ভাবে স্বয়ং সম্পুর্ণ ছিল।  পাঞ্জাব এক থাকলে হয়ত  দিল্লী তার  সাথে পেরে উঠতোনা। তাই ভারত এখন নানা দিক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশকে নিজের প্রভাবের বলয়ে রাখার জন্যে দিনরাত নানা ধরণের খেলা খেলে যাচ্ছে। বুঝে হোক না বুঝে হোক দিল্লীর সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে বাংলাদেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে  সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ভারতের নানা মুখি আগ্রাসন। অর্থনৈতিক আগ্রাসন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, সীমান্ত আগ্রাসন, পানি আগ্রাসনের মুখে পড়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। স্বাধীনতার চেতনা, একুশের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করতে হলে আমাদের অবশ্যই সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষকে বর্ণিত চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি এগিয়ে যান তাহলে আমরা সবাই তাঁর সাথে আছি। আজ আমাদের প্রধানতম চেতনা হচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশকে ভারতের সকল প্রকার শোষন থেকে রক্ষা করা। এই শোষন বিরোধী লড়াই বা যুদ্ধই হচ্ছে নয়া মুক্তিযুদ্ধের অভিযান। এই অভিযানের বিরুদ্ধে যাঁরা অবস্থান নিবেন তাঁরা হবেন স্বাধীনতা বিরোধী, একুশের চেতনা বিরোধী ও দেশের উন্নয়ন বিরোধী শক্তি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


ভাষা আন্দোলন মানে পাকিস্তান রাস্ট্রের অফিসিয়াল ভাষা বাংলাকে রাস্ট্র ভাষা করার আন্দোলন। পাকিস্তান রাস্ট্রের অফিসিয়াল ভাষা মানে সারা দেশের জনগণের লিংগুয়া ফ্রাংকা বা কমন ভাষা উর্দু হবে পাকিস্তান রাস্ট্রের প্রতিস্ঠাতা জিন্নাহ সাহেব ঢাকায় ঘোষণা করেছিলেন। এতে ছাত্র সমাজ ক্ষুব্দ হয়েছিল। জিন্নাহ সাহেবের সভাতেই ছাত্র সমাজ এর প্রতিবাদ করেছিল।  জিন্নাহ সাহেব পরে বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা যদি বিভিন্ন রকম হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান টিকে থাকতে পারবেনা। এবং পাকিস্তান টিকেনি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই পাকিস্তান রাস্ট্রের ভাংগার কাজ শুরু হয়েছিল। এসব হয়েছে ৪৮ সালে। এর আগে ৪৭ সালেই তমদ্দুন মজলিশ বাংলাকে রাস্ট্রভাষা করার দাবী জানিয়েছে। পাকিস্তান রাস্ট্র প্রতিস্ঠা হওয়ার সাথে সাথেই রাস্ট্রভাষার দাবী শুরু হয়ে যায়।  তারও আগে স্বাধীন ভারতের রাস্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ হিন্দীর পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ভাষা বিশারদ জ্ঞান তাপস ডক্টর শহীদুল্লাহ মত দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার পক্ষে। কবিগুরু বলেছিলেন, বাংলা  সারা ভারতের সকল নাগরিকের সাধারন ভাষা বা লিংগুয়া ফ্রাংকা হতে পারেনা। শেষ পর্যন্ত হিন্দীই ভারতের  রাস্ট্রভাষা বা লিংগুয়া ফ্রাংকার স্বীকৃতি পায়। হিন্দী কিন্তু ভারতের কোন অঞ্চলের ভাষা নয়। উর্দুকে সারা ভারতের লিংগুয়া ফ্রাংকা  করার প্রস্তাব প্রায়ই স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উর্দুর উত্‍পত্তি আরবী ভাষা বা অক্ষর থেকে হওয়ার কারণে কংগ্রেস নেতারা এর বিরোধীতা করেন।পাকিস্তানেও উর্দু কোন অঞ্চলের ভাষা নয়। পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ উর্দুকে জনগণের সাধারন ভাষা হিসাবে মেনে নিয়েছে।

৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যাত্রা শুরু হয়েছিল ৪৭ সালেই। একথা সত্যি যে, পূর্ব পাকিস্তান পরে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল তার শুরু হয়েছিল ভাষাকে কেন্দ্র করে। বাংলাকে ৫৬ সালে রাস্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়েও পাকিস্তানকে টিকানো যায়নি। কারন পাকিস্তানের শাসকরা ছিলেন গণবিরোধী। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার মানুষের দাবী দাওয়াকে তারা সব সময় অগ্রাহ্য ও অবহেলা করে এসেছেন। সবচেয়ে বেশী ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। ৭১ সাল নাগাদ ও ওই বৈষম্য দূর করা যায়নি। পাকিস্তান নামক রাস্ট্রে সবাই মুসলমান হলেও সংস্কৃতি , আচার আচরন ও ভাষার দিক থেকে সবাই ছিল আলাদা। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের সাথে অন্য এলাকার মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম ছাড়া অন্যকোন বিষয়ে তেমন মিল ছিলনা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে যে জাতীয় সংহতি সৃস্টি করার কথা ছিল তা শাসকরা করতে পারেননি। পাকিস্তান ভেংগে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল শাসকদের ব্যর্থতা। পাকিস্তানের শাসক গোস্ঠি ছিল গণবিরোধী এবং তাদের কোন দেশপ্রেম ছিলনা। তারা সব সময় জোর জবরদস্তি করে দেশ পরিচালনার চেস্টা করেছেন। ৭০ সালের নির্বাচনই প্রমান করেছে পূর্ব ও পশ্চিমের রাজনীতি দুটি বিপরীত ধারায় প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। উভয় অঞ্চলে কোন একক রাজনৈতিক দলের প্রভাব ছিলনা। উভয় অঞ্চলের নেতাদের ভিতর যে সমঝোতার প্রয়োজন ছিল তা ছিলনা এবং তা গড়ে উঠার কোন সম্ভাবনাও ছিলনা। রাজনৈতিক নেতাদের মেধা ও দূরদর্শিতা থাকলে ৭১ সালের রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃহত্যার পরিস্থিতি এড়ানো যেতো। আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই দুই অঞ্চল আলাদা হতে পারতো। পাকিস্তানীদের অদূরদর্শিতা, গোঁয়ার্তুমির কারণে পাকিস্তান ভেংগে গেছে। মূলত পাকিস্তান সৃস্টি হয়েছিল পূর্ব বাংলার কারণে। এখানকার মুসলমানরা ছিল সর্বদিক থেকে নির্যাতিত শোষিত ও অবহেলিত। এই নির্যাতন ও শোষণ থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র পথ ছিল স্বাধীনতা লাভ করা। তাই পূর্ববাংলার মুসলমানরা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিয়েছিল মুক্তির আশায়। পশ্চিম বাংলার বাংগালী হিন্দুরা রয়ে গেল দিল্লীর অধীনে একমাত্র ধর্মীয় কারণে।

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি ৪০ বছর আগে। স্বাধীন দেশ গঠণের পেছনে ৭১ সালে আমাদের যে মনোভাব ছিল এখন আর তা নেই। আমরা যা আশা করেছিলাম তা হয়নি। বংগবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন একজন বড় মাপের নেতা, একজন মহান দেশপ্রেমিক। তাঁর সভায় হাজার হাজার লোক হতো। দেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শুনতো। কিন্তু তিনি কখনই রাস্ট্র নায়ক ও সফল শাসক ছিলেন না। তিনি বুদ্ধি মেধার চাইতে আবেগকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। তিনি আজীবন জনপ্রিয় বা পপুলার থাকার আদর্শে বিশ্বাস করতেন। সমগ্র বাংলাদেশের জননেতা, রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি নিজেকে একজন দলীয় নেতা মনে করতেন।যা কখনই বাস্তবায়নযোগ্য নয় তা তিনি সব সময় ভাবতেন। সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করে, বছরের পর বছর জেল খেটে তিনি শেষ পর্যন্ত তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় গিয়েছিলেন কিছু চাটুকারের পরামর্শে। ৭০-৭২ এ যেখানে তাঁ জনপ্রিয়তা ছিল ১০০র ঘরে তা প্রায় শূণ্যের কোঠায় চলে এসেছিল ৭৫ এর দিকে। তিনি নিহত হওয়ার পর তাঁর দলের নেতা কর্মীদের বেশীর ভাগই পালিয়ে গিয়েছিল। বামপন্থী নেতারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই বামপন্থীরা আবার এখন হাসিনার কাঁধে ভর করেছে। এখন তাঁরা দেশ চালাচ্ছে।নৌকায় না উঠলে তারা কখনই ক্ষমতায় আরোহন করতে পারতোনা। বাংলাদেশে বামপন্থীদের এক লাখ ভোটও নেই। কারো কাঁধে ভর না দিলে তারা কখনই  সংসদে বা ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। অপরদিকে ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট রয়েছে এক কোটির মতো।

সাবেক পূর্ব বাংলা বা আজকের বাংলাদেশের ভাষা কখনই পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষার মতো নয়। বাংলাদেশের মেজরিটি মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে এখানে নতুন এক বাংলা ভাষার সৃস্টি হয়েছে। বাংগালী মুসলমানদের ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য ইতিহাস বাংগালী হিন্দুদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। বাংলাদেশের বাংলা ভাষায় প্রায় দশ হাজার ফার্সী আরবী উর্দু তুর্কী রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েক হাজার ইংরেজী পর্তুগীজ শব্দ। বাংলাদেশের বাংলা একটা জীবন্ত বহমান ভাষা। এর দুয়ার চিরদিনের মতো খোলা। তাই বিদেশী ভাষার নানা শব্দ অনায়াসে এর ভিতর প্রবেশ করতে পারে। পশ্চিম বাংলা হচ্ছে প্রায় মৃত সংস্কৃত ভাষার উত্তরাধিকারী। পশ্চিম বাংলাকে ইতোমধ্যেই হিন্দী গ্রাস করতে চলেছে। এখন ঢাকা হচ্ছে বাংলা ভাষার রাজধানী। এখানেই বাংলা ভাষার বিকাশ ও সমৃদ্ধি হবে। বাংলা এখন একটি স্বাধীন দেশের রাস্ট্র ভাষা। আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারীকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। আগামীদিনে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিবে। পৃথিবীর ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও এটি শুধু বাংলাদেশের রাস্ট্র ভাষা।

তবুও আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এখনও নিরাপদ নয়। এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের  উত্‍পত্তি দেশের ভিতরে ও বাইরে। ফলে ৪০ বছরে বাংলার যে বিকাশ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বাংলা ভাষাকে নিয়ে প্রচুর রাজনীতি হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকার ও রাজনীতিকরা ভাষার প্রশ্নে দেশের মানুষের সাথে মশকরা করেন। ফেব্রুয়ারী মাস এলে বাংলা ভাষাকে নিয়ে নাটক চলে। ভাষার জন্যে আমাদের কালচারেল মিনিস্ট্রীর বাজেট নাই বললেই চলে। বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, শিল্পকলা একাডেমী , শিশু একাডেমী সহ আরও অনেক কালচারেল সংগঠনের বাজেট ১৫/২০ কোটি টাকার বেশী নয়। এই বাজেটের ৯০ ভাগ ব্যয় হয় কর্মচারীদের বেতন ভাতার জন্যে। আরও কিছু ব্যয় হয় গাড়ি ফার্নিচার ও স্টেশানারীজের জন্যে। গবেষণা , প্রকাশনা বা উন্নয়নের জন্যে তেমন কোন বাজেট থাকেনা। অপরদিকে আমরা শুনতে পাই ভারত বাংলাদেশের কালচারেল ফ্রন্টে প্রতিমাসে একশ’কোটি টাকা ব্যয় করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলেও সরকারের নজর অনেক বেশী কবিগুরু জমিদার রবীন্দ্রনাথের দিকে। রবীন্দ্রনাথের  সার্ধ বার্ষিকী পালনের জন্যে কোন মহলেরই অর্থের অভাব হয়না। রবীন্দ্র চর্চা বৃদ্ধি করার জন্যে সারা দেশে ছায়ানটের মতো বহু সংগঠন তৈরী হয়েছে। ছায়ানটের জন্যে সরকার ধানমন্ডীতে একশ’কোটি টাকার জমি দান করেছেন। আর জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের নামাংকিত প্রতিস্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট পড়ে আছে ধানমন্ডীর আটাশ নম্বরের এক কোনে। বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানী গুলো নজরুল উত্‍সবের জন্যে তেমন কোন খরচ করতে চান না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের উপর কিছু করতে গেলেই তারা লাখ লাখ টাকা  খরচ করতে এগিয়ে আসেন। বিজ্ঞাপন কোম্পানী গুলো রবীন্দ্র উত্‍সব করার জন্যে নানা দিক থেকে ফান্ড পেয়ে থাকে। এখনতো রবীন্দ্র ভক্তদের পোয়াবারো। বর্তমান সরকার দিল্লীকে খুশী করার জন্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে তেমন কোন ফান্ড বা বাজেট নেই। বড়ই দু:খের বিষয় আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের জীবনী নিয়ে তেমন মূলবাব গবেষণা পুস্তক আজও প্রকাশিত হয়নি। ঢাকায় পাঠক সমাবেশ রবীন্দ্রনাথের  উপর ২৮ খন্ডের একটি সিরিজ প্রকাশ করেছে। পাঠক সমাবেশ একটি বাণিজ্যিক প্রতিস্ঠান। লাভের জন্যে বইয়ের ব্যবসা করে। নজরুল জীবনী নিয়ে গবেষণা মূলক তেমন বই নেই বলে হয়ত তারা রবীন্দ্রনাথা প্রকাশ করেছে। অদৃশ্য হাত হয়ত রবি ঠাকুরের বই কিনে নেয় যায়, অথবা প্রকাশককে নানাভাবে সাহায্য করে। নজরুলের জন্যে কোথাও তেমন অদৃশ্য হাত নেই। আগেগি বলেছি , আমাদের সাংস্কৃতিক জগত দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে। এ খাতের জন্যে তেমন টাকা পয়সা নেই। সরকার  বুঝতেও পারেনা সাংস্কৃতিক ভাবে দেশ পংগু হলে দেশের ভবিষ্যত  কি হতে পারে।

৪০ বছরে ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সংস্কৃতির শিকড় নড়বড়ে হয় গেছে। বেশীদিন লাগবেনা যখন ঘরে ঘরে আমাদের শিশুরা হিন্দীতে কথা বলবে। তখন এক শ্রেণীর দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী দাবী তুলবে হিন্দী শেখার জন্যে। দিল্লী বলে বসবে বাংলাদেশে হিন্দী ইন্সটিটিউট প্রতিস্ঠা করার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে। শুনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দী শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। বিদেশী ভাষা শিখা একটা খুবই ভালো কাজ। কিন্তু আমরাতো কথায় কথায় বলি  আমরা হাজার বছরের বাংগালী। বাংলা ভাষা আমাদের গৌরব। চারিদিকের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলা না জানলেও চলবে। আমরা ইংরেজী হিন্দী শিখবো, তাতেই চাকুরী পাওয়া যাবে। ৪০ বছরের স্বাধীনতার ফল হলো এখন ঘরে ঘরে গ্রামে গঞ্জে সবাই ভারতীয় চ্যানেল দেখছে। সরকারী টিভি চ্যানেল বিটিভি এখন কেউ দেখেনা। তাই সরকার বিটিভির প্রচারিত খবর প্রচারের জন্যে অন্য চ্যানেল গুলোকে বাধ্য করছে। তারপরেও কেউ দেখেনা।

আমাদের প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া গুলো বাংলাদেশের জাতিসত্তা বিকাশে তেমন কোন ভুমিকা পালন করেনা। কারণ কখনই জানার প্রয়োজন মনে করেনা আমাদের জাতিসত্তার উপাদান কি? মোটামুটি বলা যায়  মিডিয়া মালিক এবং কর্মীরা এ ব্যাপারে একেবারেই বিভ্রান্ত। আমাদের ভাষা এবং ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে তাঁরা ভাবেন বলে মনে হয়না। কোলকাতার নানা শব্দ ইতোমধ্যেই আমাদের এখানে চালু হয়ে গেছে। আমরা আগে বলতাম বা লিখতাম সংসদ সদস্য, এখন লিখছি সাংসদ। এসব চালু করেছে পত্রিকা গুলো। এসবের মূল কারণ আমরা হীনমণ্যতায় ভুগছি। আমরা মনে করছি বাংলা ভাষার জন্যে আমাদের কোলকাতার দ্বারস্থ হতে হবে। পাকিস্তানের ২৩ বছর সহ আমরা ৬৪ বছর পার করতে চলেছি। আমরা বলে থাকি ভাষা আন্দোলনই আমাদেরকে স্বাধিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাষা স্বাধীন হতে পারেনি। ভাষার কাঁধে এক ধরনের ভুত চেপে বসে আছে। সেই ভুতকে কিছুতেই নামানো যাচ্ছেনা। ক’দিন আগে প্রখ্যাত শিল্পী রাশা বলেছেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা এখন আর  কাকা কাকী, দাদা দাদী, বাবা  মা বা আব্বা আম্মা বলেনা। তারা বলে আংকেল আন্টি, ডেড মম, গ্র্যান্ডপা গ্র্যান্ডমা বলে থাকে। কোলকাতার নাটকে ভাইকে ব্রাদার বা ব্রো বলা শুরু করেছে। কোনদিন হয়ত আমাদের এখানেও চালু হয়ে যাবে। মোম্বাইয়ের সিনেমা দেখে দেখে আমাদের এখানে বিয়ের সাজগোজ চলছে। কাপড় চোপড়ও আসছে ভারত থেকে। ঢাকায় ভারতীয় কাপড়ের দোকান জুতার দেকান এসে গেছে। মোম্বাইয়ের কল্যাণে এখন বিয়ের অনুস্ঠান হয় দশ বারোটা। যারা মধ্যবিত্ত তারাও চার পাঁচটা অনুস্ঠান করে। একটি অনুস্ত্‍তান হচ্ছে মাছের বিয়ে। মাছকে বর কনের মতো সাজানো হয়। গ্রামে অর্থের অভাবে একটি গরীব মেয়ের বিয়ে হয়না। ছেলেরা বা বরপক্ষ চোখের শরম ফেলে দিয়ে প্রকাশ্যেই যৌতুক চায়। ধনীরা মোহর ধার্য করেন ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। ধনীর মেয়েরা কিছুদিন পর ছেলেকে ত্যাগ করে বা ডিভোর্স দেয় এবং বড় অংকের মোহর আদায় করে।

যে আবেগে আপ্লুত হয়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এখনও ফেব্রুয়ারী মাস এলে সেই আবেগ জাতিকে পরিচালিত করে। ফেব্রুয়ারী মাস এলেই আমরা কত কথা বলি তার কোন সীমা রেখা নেই। আমাদের কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক বুদ্ধিজীবীরা নানা ভড়ং করেন নিজেদের জাহির করার জন্যে। শত ভড়ং ও ভন্ডামীর ভিতর দিয়ে আমাদের ফেব্রুয়ারী মাস পার হয়। বিশাল জম জমাট বইয়ের ব্যবসা হয়। কিন্তু আমাদের ভাষা যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই ডুবে আছে। বরং অদৃশ্য ভুতের ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের ভাষায় নানা ধরনের অপসংস্কৃত ও অপভাষা ঢুকে পড়ছে। সেদিকে কারো নজর নেই। বাংলা একাডেমী এখন রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সেখানে লোক নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে এখন দলবাজী হয়। সকল কালচারেল প্রতিস্ঠান আজ রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফলে আমরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে একেবারেই পংগু হতে চলেছি। আমাদের পহেলা বৈশাখ দেখলেই মনে হয় রাম রাবনের মেলা শুরু হয়েছে। নানা ধরনের পশু পাখী হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রতীক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একদিন আমাদের জাতিসত্তা কি তা একেবারেই ভুলে যাব। আমরা সেই পথেই খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

 

Read Full Post »


সরকারের কাছে প্রচুর খাস জমি আছে সারাদেশে। এসব জমি প্রভাবশালী ক্ষমতাবানরা সরকারের কাছে থেকে  অস্থায়ী বা স্থায়ী লীজ বা বন্দোবস্ত নিয়ে ব্যবহার করেন। এমন কি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যে জমি দেয়া হয় সে জমিও প্রভাবশালীরা নিজেদের দখলে নেয়ে যান। গরীন ভুমিহীন বা গৃহহীনরা হয়ত কিছু নগদ নিয়ে চলে যায়। সরকার গৃহহীনদের আশ্রয় দেয়ার জন্যে গুচ্ছগ্রাম  পরিকল্পনা তৈরী করেছেন। কিন্তু কিছু হচ্ছেনা। এর প্রধান কারণ রাস্ট্র ব্যবস্থায় সীমাহীন দূর্ণীতি। বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় চৌকিদার থেকে গণভবন বা বংগভবন পর্যন্ত সর্বত্র সীমাহীন দূর্ণীতি বিরাজ করছে। আর দূর্ণীতির প্রধানতম শিকার হচ্ছে রাস্ট্রের অতি সাধারন মানুষ। যারা দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করেন। রাস্ট্র  সরকার বা প্রভাবশালীদের শোষণের প্রধানতম কারণ হচ্ছে শিক্ষাহীনতা, অধিকার অসচেতনতা। রাস্ট্র কি আর নাগরিকত্বইবা কি তা সাধারন মানুষ জানেনা। ফলে রাস্ট্র , সরকার ও প্রভাবশালীরা রাস্ট্র আর সরকারের সহযোগিতায় জনগণকে শোষণ করে। সাধারন মানুষ বুঝে তাদের বুঝে তাদের কল্যাণ। তাদের ভাত কাপড় শিক্ষা, চিকিত্‍সার ব্যবস্থা।

ভূমি ব্যবস্থাপনা একটি খুবই জটিল ব্যবস্থা। শত বছরেও এই ব্যবস্থা নাগরিক বা দেশের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত বা নিবেদিত হয়নি। মূলত সরকারী  ভুমি ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের প্রজা মনে করা হয়। প্রজাদের স্থায়ী কোন অধিকার থাকেনা। প্রজারা জমিদার শাসীত ছিল। আমাদের রাস্ট্রের নামে এখনও প্রজাতন্ত্র শব্দটি জারী আছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। গণ আর প্রজা শব্দ দুটো বিপরীতমুখি এবং এর মানেও আলাদা। তবুও বাংলাদেশ রাস্ট্রের নামে এমন বিপরীতমুখি শব্দ আছে কেমন করে? এর মানে যাঁরা সংবিধান তৈরি করেছেন মনোজগতে প্রজা শব্দটি বিরাজ করছে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে সরকারের মনোজগতেও জমিদারী ভাবটি এখনও বলবত বা জারী আছে। জমিদার , রাজা বাদশাহ বা নবাব, মহারাজারা যা করতেন সরকারও তা করবে। একটা সময় ছিল যখন প্রজাদের জমিদার বা রাজকাছারীতে নিয়ে জুতাপেটা বা লাঠিপেটা করা হতো। এখনও জুতা বা লাঠিপেটা চলছে। তবে একটু ভিন্ন চেহারায় বা আদলে। এখন প্রভাবশালীরা দেশের যে কোন গরীব নাগরিক বা প্রজাকে পরটাতে পারে। কারণ প্রভাবশালীরা রাস্ট্রের খুঁটি বা বন্ধু। পুলিশতো নিজেই রাস্ট্র। পুলিশ নিজেই এখানে সেখানে রাস্তা ঘাটে নাগরিক বা প্রজাকে তুলাধুনা করতে পারে। পুলিশ হলো রাস্ট্রের প্রতীক। তাই ছাত্রকাল থেকে দেখে আসছি পুলিশ কিভাবে পিটায়।

ভুমি ব্যবস্থাপনা সত্যিই খুবই জটিল ব্যবস্থা। নাগরিক বা প্রজারা গরীব ও নিরক্ষর হওয়ার ফলে তহশীল অফিস চিরদিন প্রজাদের উপর অত্যাচার করে এসেছে। সেকালে জমিদারের কাচারী, এখন হচ্ছে সরকারী কাচারী। সেই পুরাণো নথিপত্র। প্রায়ই ছেঁড়া, পড়া যায়না। ভুমি অফিসের প্রধান হলেন হেড তহশীলদার সাহেব। নতুন পদবীটা আমি ভাল করে জানিনা। মনে হয় সহকারী ভুমি রাজস্ব অফিসার। উপ সহকারী রাজস্ব অফিসারও আছেন। এঁদের উপরে আছেন সহকারী কমিশনার ল্যান্ড(ভুমি)।  আমাদের ছাত্রকালে বা পাকিস্তান আমলে মাওলানা ভাসানী কৃষক আন্দোলনের সময় তহশীল অফিসে আগুন লাগাবার ডাক দিতেন। আসলে তহশীল অফিস ছিল প্রতীকী ঘৃণার পাত্র। সাধারন মানুষ তহশীল অফিসকেই তাদের শোষণের অফিস বা যন্ত্র মনে করতো। এখন পাকিস্তান নাই, জমিদার নাই , বৃটিশ কোম্পানী বা সরকারও নেই। তাহলে নাগরিক বা প্রজাকে শোষণ করছে কারা? অদেশ্য এই শোষককে কেউ দেখতে পায়না। পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে বা পাকিস্তানকে ভারত কর্তৃক পরাজিত করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। এখনতো বাংগালীরাই শাসক। বাংগালীরাই দেশ চালায়। এখনতো আমরা বাংলায় কথা বলি। উর্দু নাই, উর্দুওয়ালারাও নাই। দেশের রাজধানীও এখন হাতের নাগালে। মন্ত্রী সচিবদের আমরা চিনি। ওরা আমাদের আত্মীয় স্বজন। সেনাবাহিনীর ছেলেরাও আমাদের ছেলেমেয়ে। তারপরেও আমাদের নাগরিক বা প্রজারা মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। ইতোমধ্যেতো ৪০ বছর পার হতে চলেছে। মুসলীম লীগ, আইউব খান ইয়াহিয়া খান গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। দীর্ঘকাল সামরিক শাসন চালিয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম সামরিক শাসন জারী করেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির প্রভাবশালী নেতা খোন্দকার মোশতাক। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম চীফ মার্শাল ল’ এডমিন্সট্রেটর বা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। এর আগে বংগবন্ধু, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত জননেতা শেখ সাহেব একদলীয় শাসন কায়েম করে রাস্ট্রের সকল বাহিনীকে দলের সদস্যপদ দান করে তাঁদের সবাইকে রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে এসেছেন। পরে পরিস্থিতি ও পরিবেশ জেনারেল জিয়াকে রাজনীতিতে ডেকে আনে। সেনা প্রধান জেনারেল এরশাদ এক পর্যায়ে নির্বাচিত রাস্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে জবরদস্তি ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ন’বছর দেশ চালান। জনরোষের মুখে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগ করেন ও জেলে যান।

আমরা তাহলে দেখলাম স্বাধীন সোনার বাংলায়ও সামরিক শাসন হয়, বিভ্রান্ত বলে কথিত সেনা অফিসার ও সৈনিকরা রাস্ট্রপতিকে খুন করে। পরের সরকার এসে কথিত খুনীদের বিচার করে ফাঁসি দেয়। দেশের সাধারন মানুষ কিন্তু কাউকে খুন করেনি। এমন কি এ দেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী অংশ গ্রহন করেছেন এ দেশের অতি সাধারন মানুষ, যাদের ৮০ ভাগই ছিলেন  কৃষক  শ্রমিক,  ছাত্র ও বাংগালী সেনা অফিসার এবং সৈনিকরা। রাজনীতিকরা বিশ্বব্যাপী জনমত সৃস্টি করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বেশী সুযোগ আদায় ও গ্রহণ করেছেন আমলা ও রাজনীতিকরা। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বদিক থেকে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ী ও তাদের  বন্ধু রাজনীতিকরা। আপনারা একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন পুরাণো দিনের রাজনীতিকদের কথা। ৪৭ এর আগে যাঁরা রাজনীতি করেছেন তাঁরা নির্যাতিত অবহেলিত  শোষিত দেশবাসীর জন্যে সংগ্রাম করেছেন। মুসলমান নেতারা কংগ্রেস ছেড়ে মুসলীম গঠণ করেছেন নিজেদের অধিকার প্রতিস্ঠা করার জন্যে। কংগ্রেস নেতাদের হিন্দুত্ববাদীতার ফলে মুসলমানদের আর কোন উপায় ছিলনা, কোন পথ খোলা ছিলনা। হয়ত তথকথিত স্যেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত কিছু লোক এ কথা স্বীকার করেন না। কারণ তাঁরা কংগ্রেসকে স্যেকুলার রাজনৈতিক দল মনে করে। আমি এর আগে বহুবার বলেছি পৃথিবীতে স্যেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই। পৃথিবীর সব মাইনরিটি স্যেকুলার হতে চায়। বাংলাদেশে মাইনরিটিরা এবং তাঁদের সাথে কয়েক জন মেজরিটির সদস্য স্যেকুলারিজম প্রচার করে।

যাহোক পাকিস্তান হয়েও সাধারন মানুষের কোন উপকার হয়নি। যাঁরা সুবিধাভোগী ছিলেন তাঁদের সুবিধা আরও বেড়ে গেল। ইতোমধ্যে পাকিস্তান ভেংগে বাংলাদেশ হয়েছে। সময় পার হয়েছে ৬৪ বছর। পাকিস্তান বলুন আর বাংলাদেশ বলুন, বাংগালী বলুন আর মুসলমান বলুন, যে নামেই ডাকুন সাধারন মানুষ এখনও অবহেলিত শোষিত ও নির্যাতিত। ভুমি ব্যবস্থাপনায় জন কল্যাণমুখী তেমন কিছুই করা হয়নি। বংগবন্ধু ঝোঁকের মাথায় বলেছিলেন, ২৫ বিঘার উপরে কারো জমি থাকতে পারবেনা। কিন্তু সাধারন কৃষক শ্রমিক কারোই ২৫ বিঘা জমি ছিলনা। ধনীরা রাতারাতি নিজেদের জমি পরিবার পরিজনের ভিতর ২৫ বিঘা করে বন্টন করে জমির মালিকানা বহাল রাখলেন। খাজনা বা রেন্ট কথাটা বাদ দিয়ে এখন বলা হয় ভুমি উন্নয়ন কর। এ কথা বলে সবার কাছ থেকে তহশীল অফিস টাকা আদায় করছে। মোঘল আমল থেকে শুরু করে ভূমি ব্যবস্থাপনায় কোন সরকারই তেমন কিছু করেনি। এমন একটি সরকার কখনই ক্ষমতায় আসেনি যারা ভুমি ব্যবস্থা ও দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন করতে চায়।

বাংলাদেশে এখন বড় বড় কোম্পানী গুলো কৃষিতে বড় পুঁজি বিনিয়োগ করছে। বড় কোম্পানী গুলো এখন মুড়ি চিড়া, চানাচুর খৈ  ইত্যাদির ব্যবসা শুরু করেছে। মশলার বিজ্ঞাপনে এখন টিভি ও পত্রিকার পাতা ভরপুর থাকে। একশ’ টাকার  এক কেজি মশলা এক হাজার টাকায় বিক্রি করে। এতে সমর্থন জোগায় মিডিয়া ও  বুদ্ধিজীবীরা। মশলার ব্যবসায়ীরা নিজেরাই টিভি ও পত্রিকার দোকান খুলে বসে আছেন। ভুমি ব্যবস্থাপনা ও কৃষিতে যে পরিবর্তন আমরা বা আমি আশা করেছিলাম তা হয়নি। বাংলাদেশে কৃষিতে যদি সঠিক বিনিয়োগ হতো তাহলে এতদিনে আমরা একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতাম। কিন্তু তা হয়নি । কারণ , সরকার গুলো সাধারন মানুষের পক্ষে কাজ করেনা। বাংলাদেশ ব্যান্কের গভর্ণর আতিউর রহমান কৃষকদের কথা বলে সবার দৃস্টি আকর্ষন করেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তা তাঁর একটি শ্লোগান ছিল মিডিয়ার সমর্থন পাওয়ার জন্যে। পাকিস্তান আমলে ব্যান্কগুলো গ্রামের শাখা থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে শহরে বিনিয়োগ করতো, যা এখনও বিদ্যমান আছে। এর মানে গ্রামগুলো এখনও শোষিত হচ্ছে। আজও গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমানে স্বাস্থ্য সেবা, চিকিত্‍সা, শিক্ষা নেই । কারণ আমাদের রাস্ট্র এখনও গ্রামকে শোষণে বিশ্বাস করে যা পাকিস্তান আমলেও জারী ছিল। সোজা কথায় বলতে গেলে বলতে হবে পাকিস্তানের ২৩ বছর আর বাংলাদেশের ৪১ বছর মিলিয়ে ৬৪ বছর ধরে গ্রামের মানুষ একটানা শোষিত হয়ে এসেছে। পাকিস্তানের শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণেই যে বাংলাদেশ সৃস্টি হয়েছিল সেই শোষণ ও বৈষম্য আজও দূরীভূত হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রাম আর শহরে বৈষম্য অনেক বিরাট হয়ে দেখা দিয়েছে। একটি সরকারও গ্রামের অব্যাহত সার্বিক উন্নয়নে কোন পরিকল্পনা গ্রহন করেনি। পাকিস্তান আমলে বলা হয়েছিল পুঁজি কেন্দ্রীভুত হওয়া ও কার্টেল সৃস্টি সম্পর্কে। এখন বাংলাদেশে কার্টেলের বাবা সৃস্টি হয়েছে। কিন্তু কারো মুখে রা শব্দটি নেই। পাকিস্তানে ছিল মাত্র ২২ পরিবার যারা পুঁজির পাহাড় গড়ে মানুষকে শোষণ করতো। এখন বাংলাদেশে ২২শ’ পরিবার সৃস্টি হয়েছে যারা সরকারের সহযোগী হয়ে দেশবাসীকে শোষন করছে। এখন একই গ্রুপ বা ব্যক্তির হাতে ব্যান্ক বীমা, শিপিং, ক্লিয়ারিং, বিমান, হাসপাতাল,ফার্মাসিউটিকেল  স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আটকা পড়েছে। সরকার এ ধরণের লোকের হাতের ইশারায় চলে। অথবা তথাকথিত গণতন্ত্রের জামানায় সরকার দুর্বৃত্ত ধনীদের সাথে সমঝোতা করে রাজনীতিকরা সরকার ও রাস্ট্র পরিচালনা করেন। কারণ রাজনীতি করার জন্যে ধনীরা তাদনদের টাকা সরবরাহ করেন। ফলে রাস্ট্র ও রাস্ট্রের সাধারন মানুষদের শোষণের জন্যে ধনীরা এক ধরনের লাইসেন্স পেয়ে যায়।

আগেই বলেছি ৭১ সালে আমরা কেন স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। এর প্রধান কারণ ছিল পূর্ব ও পশ্চিমের ভিতর সীমাহীন বৈষম্য। ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের ভিতর বিরাট ফারাক তৈরী হয়েছিল। ৭১ এর আগে কোলকাতা কেন্দ্রিক পশ্চিম বাংলা পূর্ব বাংলাকে শোষণ করতো। ফলে বাংলার স্বাধীনতা অপরিহার্য পড়েছিল। বড়ই পরিতাপের বিষয় সেই শোষণ প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশের সাধারন  নাগরিক বা প্রজার তূলনায় এক শ্রেণীর রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীর অবৈধ সম্পদ কয়েক হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এই বৃদ্ধি অবাধে অব্যাহত রয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় যে রাস্ট্রটা দেশের মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে সৃস্টি করা হয়েছে। আমরাতো স্বপ্ন দেখেছিলাম এক শোষণ মুক্ত রাস্ট্র ব্যবস্থা। যে রাস্ট্রটা সিংগাপুর মালয়েশিয়ার মতো বিকশিত হবে। আমাদের সেই রঙিন স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। এর মানে হচ্ছে আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থাপনার মূলে গলদ রয়ে গেছে। রাস্ট্র যাঁরা চালান তাঁরা নিজেদের এবং কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষেই কাজ করে চলেছেন। এইতো ক’দিন আগে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের গৌরব ড. ইউনুস বলেছেন, বাংলাদেশের আগামীদিন তরুনদের হাতে। রাজনীতির পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। তিনি আরও বলেছেন গ্রাম এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। উন্নয়নের চাবিকাঠি গ্রামের মানুষ কৃষক শ্রমিকদের হাতে দিতে হবে। বিগত ৫০ বছর ধরে আমি লিখে এসেছি পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবি কাঠি হচ্ছে গ্রামে। শত সহস্র বছর ধরে গ্রামই শহরকে বাঁচিয়ে আসছে। ইংরেজের শোষণের ফলে সেই গ্রাম ভিখেরীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামগুলো ছিল এক একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক ইউনিট। সেটাই ধ্বংস করেছে ইংরেজরা।

জেনারেল এরশাদের ভাই জিএম কাদের বলেছেন, দেশের বর্তমান অবস্থার জন্যে গণতন্ত্র দায়ী। কারণ, রাজনীতিকরা ভোটের জন্যে মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের উপর নির্ভরশীল। আমিতো মনে করি, যতদিন দেশের রাজনীতি রাজধানী ভিত্তিক বা কেন্দ্রিক  থাকবে ততদিন মাস্তান ও সন্ত্রাসীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করবে। রাজনীতিকরা মাস্তান ছাড়া চলতে পারবেনা। অপরদিকে ধনীরাও সম্পদ বৃদ্ধি ও রক্ষার জন্যে মাস্তান পুষতে থাকবে। তাই অনেকে মনে করেন রাজধানী দখল করতে পারলেই দেশ দখল হয়ে যায়। এই ব্যবস্থাকে একেবারেই বদলিয়ে দিতে হবে। নতুন নকশা, নতুন পরিকল্পনা লাগবে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক উন্নত রাস্ট্রে পরিণত করতে।চলমান রাজনীতি বা রাজনৈতিক চিন্তাধারা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব নয়। এরশাদ সাহেব জোর করে ক্ষমতা দখল করে নয় বছর বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসেছিলেন। ভারতই তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আওয়ামী লীগের সমর্থনও তিনি পেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে পল্লীবন্ধু বলে জাহির করেন। এটাও এক ধরনের ধোঁকাবাজি। এরশাদ সাহেব বাংলাদেশে সীমাহীন দূর্ণীতির প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তাঁর আমলেই রাজধানীর চারিদিকে ভুমি দখল শুরু হয়েছিল, যা এখনও অব্যাহত আছে। কথা ছিল রাজধানীর চারিদিকে সবুজ বেস্টনী থাকবে।

শুতেই খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে কথা তুলেছিলাম। খাস জমি সরকারের খামখেয়ালীপনার শেষ নেই। সকল সরকারই রাজনৈতিক কারণে খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে শিশুর পুতুল খেলা শুরু করেন। সাধারন মানুষকে নির্যাতনের জন্যে এটা  সরকারগুলোর একটা কৌশল। গুচ্ছগ্রাম, ভুমিহীনদের পূণর্বাসন ইত্যাদি নানা নামে সরকার ভুমিহীন ও গ্রামের গরীব মানুষদের নিয়ে তেলেসমাতি করে থাকেন। কারণ সকল সরকারের মনেই কৃষক শ্রমিক ও ভুমিহীনদের নিয়ে রাজনীতি করার হীন কৌশল কাজ করে। স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া জমিও সরকার নিয়েও সরকার নানা কূট কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। সারাদেশে লাখ লাখ একর কৃষি ও অকৃষি খাস জমি আছে যা অনাবদী পড়ে আছে। যা শুধু রাজনৈতিক কারণে সরকার দীর্ঘ মেয়াদী কোন সিদ্ধান্ত নেয়না। এ ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা দেশের মানুষের কোন উপকার করেনা। এ ধরণের খাস জমিকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষকে ঠকাবার জন্যে নানা ধরনের দালাল তৈরী হয়। যারা জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে ভুমি অফিসগুলোতে দালালী করে বেড়ায়। এসব দালাদের ভিতর বহু রাজনৈতিক কর্মীও থাকে। ১৯৮৫ সালে সরকার জানালেন দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত নবায়নের প্রয়োজন হবেনা। ২০০৫ সালে বলা হলো  ৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হলো। মানে দীর্ঘ বা স্থায়ী বন্দোবস্ত বাতিল করা হলো বা নবায়ন করতে হবে। সরকার ইচ্ছা করেই এ ধরণের জটিলতা তৈরি করে নাগরিকদের হয়রানী করে। এমন অকৃষী জমি আছে যা ৫০/৬০ বছর আগে স্থায়ী লীজ বা বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ২০০৫ সালের সার্কুলারে তা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে সারা সারাদেশে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। রাজধানীতে সরকার বা সরকারী নানা এজেন্সী যে সকল জমি দীর্ঘ মেয়াদে বা স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তা বাতিল করলে কি ধরণের আইনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে তা সরকার চিন্তা করার সুযোগ পায়নি। হয়ত কোন কোন মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সরকারকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে থাকে। ৯০ বা ৯৯ বছরের স্থায়ী লীজ বা বন্দোবস্ত বাতিল করা যায় কিনা তা সরকার বা মন্ত্রণালয়ের চিন্তা করা দরকার ছিল।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »