Feeds:
Posts
Comments

Archive for May, 2013


ভারতের পরামর্শে সরকার দমন নীতি অব্যাহত রাখবে / এরশাদ মজুমদার

বংগবন্ধু ভারতের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে ৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহন করেছিলেন। তখন থেকে ভারত বংগবন্ধুকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিল।। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ভোর রাতে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল তা ভারত সরকার ভালভাবেই জানতো। তখন ভারতের সাথে বাংলাদেশের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। এতদ সত্বেও ভারত বংগবন্ধুকে রক্ষা করার চেস্টা করেনি। কারণ ভারত বুঝতে পেরেছিল বংগবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের আদর্শ উদ্দেশ্য কিছুই বাস্তবায়িত হবেনা। ১০ ই জানুয়ারী দেশে ফিরেই বংগবন্ধু বলেছিলেন,আমি দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশের নেতা। ভারতের মতে এ কথা বলে বংগবন্ধু সংবিধান লংঘন করেছেন। ধর্ম নিরপেক্ষতা বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম আদর্শ। সেখানে বংগবন্ধু কিভাবে বলেন,এটা দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশ। এটা সংবিধান মোতাবেক তিনি বলতে পারেন না। তার উপরে ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি লাহোর গিয়েছিলেন। তিনিই ইসলামিক একাডেমীকে অধিক ক্ষমতাবান ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে ইসলামিক পন্ডিত আবুল হাসেম সাহেবকে পরিচালক নিযুক্ত করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ বার বার ক্ষমতায় এসেও বংগবন্ধুর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেননি। যর ক’জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাঁরাও হত্যার পেছনে কারা ছিল তা প্রকাশ করে যাননি। খোন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় আসয় অনেকে মনে করেন কাজটি আমেরিকা করিয়েছে। আবার অনেকেই মনে করেন ভারত করিয়েছে। আমেরিকার সম্মতি ছিল। বংগবন্ধু হত্যার বেনিফিট আওয়ামী লীগ ষোলয়ানা ব্যবহার করছে। এবং তাঁকে রাজনীতিতে ব্যবহার করার জন্যে তাঁর উপর নানা রকম মিথ্যা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাঁর নামে বহু মিথ্যার প্রচার করছে বর্তমান আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বংগবন্ধুকে একবার মুসলীম নেতা বানাতে চায়,আবার ধর্ম নিরপেক্ষ নেতা বানাতে চায়। বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ করে শেখ হাসিনা ভুল করেছেন। বইটি পড়লে সবাই বুঝতে পারবেন তিনি কখনই ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন না। নিজ ধর্মকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন এবং পর ধর্ম ও মতকে সম্মান করতেন। রাসুলকে(সা)নিয়ে দাউদ হায়দার অশালীন মন্তব্য করায় বংগবন্ধু তাঁকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই দাউদ এখনও বিদেশেই অবস্থান করছে। বহু ধর্মহীন(সেক্যুলার) ব্যক্তি তাঁর আমলেই বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। সেসব দেশত্যাগী বন্ধুরা বিদেশে সুখে শান্তিতে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশকে একটি ধর্মহীন রাস্ট্রে পরিণত করার জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এরা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ায় লেখালেখি করছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মানে ধর্মহীনতার পক্ষে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বংগবন্ধুর দলীয় রাজনৈতিক মত ও পথকে সম্মান করতাম না। কিন্তু একজন বড় মাপের নেতা ও মুরুব্বী হিসাবে তাঁকে সম্মান করতাম এবং এখনও করি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পক্ষে আমিই প্রথম কলম ধরি। তখন আমার প্রিয় বন্ধু শফিকুল আজিজ মুকুল বলেছিলেন,এরশাদ ভাই আপনি চিরদিন উল্টা পথে চললেন। এখন এ লেখার জন্যে আপনার বিপদ হতে পারে। বলেছিলাম,হোক বিপদ। এইতো সেদিনোতো সবাই বাপ বাপ করে জান কোরবান করছিলো,তাঁরা আজ কোথায়? বংগবীর কাদের সিদ্দিকী ছাড়া সে সময় আর কেউ বংগবন্ধুর জন্যে জীবন দিতে রাজী হয়নি। আমার বন্ধু মুকুল ল্যাবএইডে মারা গেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে দেখতে দলের উচ্চ পর্যায়ের কেউ আসেননি। বংগবন্ধুর সহযোগী ও কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আবদুল আজিজ সাহেব দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন,তাঁর খোঁজ খবর নেয়ার মতো আওয়ামী লীগে কেউ নেই। দলের নেতা শেখ হাসিনা মনে করেন,বাপের বন্ধুদের খোঁজ খবর নিতে গেলে সারাদিন তাঁদের পেছনেই সময় দিতে হবে। তাছাড়া তাঁরাতো এখন কোন কাজে লাগবেননা। তাই তিনি ,সুরঞ্জিত বাবুর ভাষায় কচি কাঁচার আসর সাজিয়েছেন। আমি বলবো,শেখ হাসিনা প্রমান করতে চান বাপের বন্ধুদের সাথে রাখলে তিনি নিজের মন মতো করে দল চালাতে পারবেন না। তাই তিনি কচি কাঁচাদের নিয়ে দল ও মন্ত্রী সভা সাজিয়েছেন। একদিনের অভিজ্ঞতা নাই এমন ব্যক্তিকে সরাসরি স্পীকার করেছেন। কেবিনেটের সকল সদস্যই অভিজ্ঞতাহীন। কিন্তু তাঁদের মন্ত্রী করতে হয়েছে অদৃশ্য শক্তির ঈশারায়। তাঁরাই এখন হাসিনার শক্তি। বাজারে জোর গুজব, যদিও আমার কেন যেন বিশ্বাস হয়না, বাংলাদেশে নাকি এখন ভারতীয় গোয়েন্দাদের অফিস আছে। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার জন্যে বিদেশী নিরাপত্তা বাহিনী আছে।
লোকে বলে বংগবন্ধুর কন্যা নাকি বলেছিলেন,যে দেশের এবং দলের মানুষ আমার পিতার মৃত্যুতে এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলেনি তাদের ধ্বংস দেখতে চাই। এসব আসলে গুজব। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য না থাকলে তখন গুজব কলেরার মতো ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সরকারের আমলে গুজব খুবই শক্তিশালী। সরকার যতই সাফাই গাইছে জনগণ তা বিশ্বাস করছেনা। শাপলা চত্বরের ঘটনায় সরকারের বক্তব্য কেউই বিশ্বাস করেনি। এক কান দুই কান করে সারা বিশ্বে গুজবটি ছড়িয়ে পড়েছে। জগত বিখ্যাত সাময়িকী ইকনমিষ্ট বলেছে , বাংলাদেশের মিডিয়া সরকার অনুগত হতে বাধ্য হয়ে পড়েছে। মৌলবাদ দমনের নামে সরকার আমেরিকা ভারত ও ইউরোপীয় দেশ গুলোর বাহবা পেয়েছে। মৌলবাদ বা সন্ত্রাস দমনের জন্যে সরকার ভারত ও আমেরিকার অংশীদারিত্ব গ্রহন করেছে। কিন্তু তাতেও সরকারের চলছেনা। ওআইসি সদস্য দেশগুলোর দূতদের ডেকে বলতে হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলাম বিরোধী নয়। কেন হঠাত্‍ মুসলমান দেশগুলোকে বুঝাতে হচ্ছে। কারণ, মুসলমান দেশ গুলো সরকারের ইসলাম বিরোধী ভুমিকায় সন্তুষ্ট নয়। যে ওআইসির সাথে বংগবন্ধু সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা বর্তমান আওয়ামী সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আর ভারতের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে ইসলাম ও মুসলীম দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। সে ল্ক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে ভারত শক্তিশালী ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা একবার সিকিমের কথা ভাবুন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র কিভাবে সংসদে আইন পাশ করে ভারতে যোগ দিয়েছে। এতো বেশীদিন আগের কথা নয়। কাশ্মীরে গণভোট হওয়ার কথা ৬০ বছর আগে। কিন্তু হয়নি। জাতিসংঘ বা বিশ্বের নেতারা আর কাশ্মীর নিয়ে ভাবেনা। স্বাধীনতার জন্যে কাশ্মীরীরা প্রতিদিন জীবন দিচ্ছে।
ভারতের পরামর্শ হলো রাস্ট্র রক্ষার জন্যে সরকারের দমননীতি সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। কারণ,রাস্ট্র জনগণের চেয়ে বড়। তাই বর্তমান সরকার দমননীতির আশ্রয় নিয়ে হেফাজতকে রাতের অন্ধকারে ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়েছে। বিএনপি জামাতের শত শত নেতা কর্মীকে জেলে পাঠিয়েছে। জামাতের শত শত কর্মী নিহত হয়েছে। সভা সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেছেন,মিডিয়া সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করবে। স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকু বলেছেন, সন্ত্রাসী দলের জন্যে সভা সমিতি আজীবনের জন্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মানে, এ সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকবে। আর আজীবন মানে জীবন থাকা পর্যন্ত। মানে একদিন, এক বছর ইত্যাদি। হাসিনা মনে করেন তাঁর দীর্ঘ মেয়াদে থাকাটা জরুরী। কারণ, নির্বাসনে দিল্লী থাকার সময় যে সব ওয়াদা তিনি করেছিলেন তার কোনটাই বাস্তবায়ন করে ঋণ শোধ করতে পারেননি। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি ,তা হলো দিল্লী কখনই নিজের স্বার্থের বাইরে কিছুই করেনা। ছলে বলে কৌশলে যে কোন উপায়ে স্বার্থ আদায় বা উদ্ধার করা দিল্লীর নীতি ও আদর্শ। ভারত বিভক্তির পর থেকেই দিল্লী পাকিস্তানকে ভেংগে ফেলার নীতি গ্রহন করেছে এবং ১৯৭১ সালে সে নীতি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে আমরা বাংগালী মুসলমানেরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বলে প্রাচারিত বাংলাদেশ পেয়েছে। ভারতের লক্ষ্য অর্জিত হলো আর আমরাও খুশী। তাই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে ভারতের প্রত্যাশা কি?
বিগত ৪২ বছরে ভারত বাংলাদেশের কাছে থেকে কি কি পেয়েছে? মুজিব নগর সরকার ভারত কি দেবে বলে ওয়াদা করেছিল সাধারন নাগরিক হিসাবে তার কিছুই জানিনা। ৪২ বছর ধরে দুটি দেশের সম্পর্ক , লেনদেন ও চাওয়া পাওয়া দেখলে বুঝা যায় ভারত কি চায়। ভারত আমাদের মানে বাংলাদেশের মানুষের খুবই কাছের বন্ধু। ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে মান অভিমান করে অনেক কিছুই চাইতে পারে। ভারতের চাহিদা মিটাবার মতো সুযোগ সুবিধা ও শক্তি বাংলাদেশের আছে কিনা তা দেখার বিষয়। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের বন্ধুত্বকে কিভাবে দেখে সেটাও একটা বিষয়। প্রতিবেশী ভারত একটি শক্তিশালী দেশ এ ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই। চীনের মতো দেশকে মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা, বুদ্ধি ও শক্তি ভারতের আছে। ভারত ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে আমেরিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। আমেরিকার লক্ষ্য হলো ভারতকে চীনের মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠিত করা। এই ভারত এক সময় অন্ধভাবে রাশিয়ার বন্ধু ছিল। বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার নীতিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এখন রাশিয়ার আর সেদিন নেই। তাই ভারত ও তার নীতির পরিবর্তন করেছে। ছিনকে মোকাবিলা করবে বলে আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ তা পারেনি। কারণ,বাংলাদেশের শক্তিশালী কোন পররাষ্ট্র নীতি নেই। এ বাপারে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ভিতর তেমন ফারাক নেই। আওয়ামী লীগের ভারত নীতি পারিবারিক আত্মীয়তার মতো। এর বিপরীতে বিএনপিও তেমন কোন শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারেনি। বিএনপর উচিত ছিল চীন পাকিস্তান মায়ানমারের সাথে শক্তিশালী বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। কিন্তু বিএনপি তা পারেনি। ফলে ১/১১র সরকার বিদায় সময় আমেরিকা ও ভারতের অনুমতি নিয়েই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে। ভারত চায় আওয়ামী লীগ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকুক। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ পশ্চিমা জগতকে বুঝাতে পেরেছে বিএনপি ইসলামপন্থী একটি রাজনৈতিক দল। মৌলবাদী ও ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের সাথে এর গভীর সম্পর্ক আছে। জামাতের সাথে জোট বাধার ফলে পশ্চিমারা মনে করে সেক্যুলার একটি রাজনৈতিক দল। ধর্মের ব্যাপারে ,বিশেষ করে ইসলামের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিরোধী অবস্থানকে ভারত ও পশ্চিমারা সমর্থন করে। হেফাজতের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কঠোর দমন নীতিকে আমেরিকা ও ভারত যৌথভাবে সমর্থন দিয়েছে। হেফাজতকে দমন করে আওয়ামী লীগ অনেক বেশী আস্থাবান হয়ে উঠেছে। জেল জুলুম,মামলা হামলার কারণে জামাত ও বিএনপি অনেক খানি বেসামাল আগষ্ট নাগাদ দমননীতি অব্যাহত রাখার জন্যে ভারতীয় গোয়েন্দারা শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে চলেছে। তারা বার কাশ্মীর ও ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলোর রেফারেন্স ব্যবহার করছে। ৬০ বছর ধরেই এই রাজ্যগুলোকে দমন করে রেখেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে।
রাস্ট্র রক্ষা, মৌলবাদ ওা সন্ত্রাস দমনের নামে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের উপরে কঠোর দমন নীতি চালাবে। ভারত মনে করে আওয়ামী লীগ যদি আগষ্ট পর্যন্ত দমন নীতি চালিয়ে যেতে পারে তাহলে বিরোধী দল নির্বাচনের জন্যে ঘর গুছিয়ে উঠতে পারবেনা। আওয়ামী লীগের সমর্থক শিক্ষিত জনেরা মনে করেন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মতো বিরোধী দল গড়ে উঠবেনা। এবার আওয়ামী লীগ প্রমান করেছে দলটি ক্ষমতায় বা ক্ষমতার বাইরে সমান ভাবে পারদর্শী। যেমন কেয়ার টেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আওয়ামী যে কঠোর আন্দোলন করেছিল বিএনপি সে রকম আন্দোলন করতে পারছেনা। অপরদিকে আমেরিকা ও ভারত বিরোধী দলের চলমান সমর্থন করছেনা। তারা হরতালকেও সমর্থন করেনা। এ কারণে সরকার বিরোধী দলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন ,খালেদা জিয়া তাঁর ছেলেদের কারণে কঠোর আন্দোলনে যেতে পারছেন না। তাঁরা মনে করেন বিএনপিকে সংসদেও কঠোর দায়িত্ব পালন করতে হবে। যতটুকু সুযোগ পাওয়া যাবে তা ব্যবহার করতে হবে। সমাজের সকল স্তরে যে পরিমান ভয় ভীতি সৃষ্টি করার প্রয়োজন ছিল সরকার ইতোমধ্যেই তা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। দিগন্ত ও ইসললামিক টিভি, দৈনিক আমার দেশ সহ আরও অনেক প্রিন্ট অনলাইন পত্রিকার অবস্থা দেখে চলমান পত্রিকা গুলো অনুগত হয় পড়েছে। এটাও সরকারের একটা বিরাট সাফল্য।
আওয়ামী লীগ যেহেতু খুব সাফল্যের সাথে ভারতের নীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সেহেতু ভারত মনে করে শেখ হাসিনার আরও একবার ক্ষমতায় আা দরকার। আমেরিকও হয়ত সে রকমই মনে করে। বাংলাদেশের প্রশ্নে ভারতের প্রথম ও প্রধানতম নীতি হলো ধর্মের গুরুত্ব দিন দিন কমিয়ে আনতে হবে। কালক্রমে দেশে যেন ইসলাম যেন কোন ধরনের প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। আর এই নীতি একমাত্র আওয়ামী লীগই বাস্তবায়ন করতে পারবে। অপরদিকে ভারত শেখ হাসিনাকেও অব্যাহত ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। কথা না শুনলে বংগবন্ধুর অবস্থা হবে।
লেখন: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


রাস্ট্র যে কোন সময় অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারে। নিজ নাগরিকদের উপর অত্যাচার করার অধিকার নাগরিকরাই রাস্ট্রকে দিয়েছে। রাস্ট্রকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্যে নাগরিকরা স্বেচ্ছায় অনেক অধিকারকে সারেন্ডার করেছে। রাজনীতিকরা বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দেশ বা রাস্ট্র বড়। এ বাক্য দ্বারা মানুষ বা নাগরিকদের রাস্ট্রের অধীনে আনা হয়েছে। ফলে জগতের অনেক নির্বাচিত বা অনির্বাচিত শাসক রাস্ট্রের সীমাহীন ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারী ও অত্যাচারী হয়ে গেছে। বাংলাদেশে তেমনি একজন সিভিল ডিক্টেটর বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সারা জীবন গণতন্ত্র আর বাল স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করেছেন। বছরের পর বছর জেল জুলুম সহ্য করেছেন। তিনিই শেষ পর্যন্ত এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। সরকারী কাগজ ছাড়া সব কাগজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিশ্বাস করি যে, বংগবন্ধু দেশের মানুষের কল্যাণ চাইতেন। তিনি দেশের মানুষের জন্যে ভাবতেন। তাঁর সারল্য ও দেশপ্রেমকে ব্যবহার করে মস্কোপন্থী বাম ও ভারতপন্থী দলগুলো তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করিয়েছে।এর আগে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। তাঁকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিলে উন্নয়নের পথ সুগম হবে। এজন্যেই দেশের মানুষের স্বার্থেই দরকার এক দলীয় শাসন। ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বংগবন্ধুর আমলে রাজনৈতিক কারণে বহুলোককে হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ কখনই সমাজতান্ত্রিক দল ছিলনা। যে দলটি ৭০ সালেও ঘোর মার্কিনপন্থী ছিল সেই দলটিই রাতা রাতি সমাজতান্ত্রিক হয়ে গেল। আসলে বংগবন্ধু কখনই সমাজতান্ত্রিক ছিলেন না। ভারত ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে বাধ্য করেছিল সমাজতান্ত্রিক নীতি গ্রহন করতে। যদিও ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওয়াদা ছিল তারা কখনই কোরআন সুন্নাহ বিরোধি আইন করবেনা। তখনও দলটি জানতোনা তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে কিনা এবং পূর্বপাকিস্তান স্বাধীন হয়ে নতুন রাস্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতের রাজনৈতিক কর্মসূচী। এ কাজে তারা বামপন্থীদের ব্যবহার করেছে। ৪৭ সালেই ভারত পাকিস্তান ভেংগে ফেলার কর্মসূচী হাতে নেয়। তাদের সেই কর্মসূচী তারা ৭১ এ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করে।
শুধু একবার ভেবে দেখুনতো,যদি ইয়াহিয়া খান বা পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বংগবন্ধু মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে মেনে নিয়ে(যা মানা বাধ্যতামুলক ছিল)নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতো তাহলে কি হতো? বংগবন্ধু ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সাংগ পাংগকে বিশ্বাস করেছিলেন বলেই সমঝোতার চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না ভারতের কি পরিকল্পনা ছিল। এমন কি তিনি ২৫শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন সমঝোতাপত্রে দস্তখত করার জন্যে। আসলে সমঝোতা হয়েছিল ভুট্টো আর ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে। তাঁরা দুইজন ছিলেন ভাই বোনের মতো। এসব কথা একদিন সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হবে। পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে বাংলার তরুণ, কৃষক,শ্রমিক, ছাত্র যুবক,পুলিশ,ইপিআর, আনসার ও বাংগালী সৈনিক ও অফিসারেরা প্রতিহত করেছে। জীবন দিয়েছে। ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যবহার করে দিল্লী মুজিব নগর সরকার গঠন করে সাহায্য ও সমর্থন দিতে থাকে। মুজিব নগর সরকারের কতৃত্ব চলে যায় দিল্লীর হাতে। এর আগে ২৬শে মার্চ বাংগালী সেনা অফিসার মেজর জিয়া সুস্পষ্ট ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীকে উদাত্ত কণ্ঠে আহবান জানালেন সমর্থন ও সহযোগিতার জন্যে। মুজিব নগর সরকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ১৭ই এপ্রিল। ভারত সরকারের দলিল দস্তাবেজেও রয়েছে মেজর জিয়ার নাম স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে। ইন্দিরা গান্ধি জানতেন, পাকিস্তানের সামরিক জান্তা যে কোন সময় শেখ সাহেবের সাথে সমঝোতা করে ফেলতে পারে। তাই ইন্দিরা গান্ধী বিশ্ব জনমত তৈরির জন্যে এবং বিশ্ব নেতাদের সমর্থন লাভের জন্যে বিদসেশ সফরে বেরিয়েছিলেন। তাজউদ্দিন সাহেব ও একে খোন্দকার সাহেবও স্বীকার করেছেন তাঁরা মেজর জিয়ার ঘোষণা শুবেছেন। বংগবন্দূ জীবিত থাকতে ঘোষণা নিয়ে কোন বিতর্ক তৈরি হয়নি।
এতক্ষণ প্রাসংগিক বিষয় হিসাবে পেছনের কথা গুলো উল্লেখ করেছি। আজকের প্রধান বিষয় হচ্ছে রাস্ট্রের নিপীড়ন ও দমন ক্ষমতা নিয়ে। বাংলাদেশ রাস্ট্রটি ক্রমাগত ভাবে অত্যাচারী হয়ে উঠেছে। ৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের নিরী্ নিরস্ত্র মানুষকে বাগে আনার জন্যে বা বাধ্যতামুলক ভাবে অনুগত করার জন্যে সকল ধরনের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছে। হয়ত তাদের বিশ্বাস ছিল দমনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আত্মসমর্পন করবে। তাদের সে ধারনা ভুল প্রমানিত হয়েছে। সামরিক জান্তা হয়ত সুযোগ পেয়ে পাকিস্তানকে টুকরো করার জন্যেই আক্রমণ চালিয়েছে। হয়ত তারা পোড়ামাটি নীতি গ্রহন করেছিল।
আমাদের ভুগোলটা হয়ত স্বাধীন হয়েছে। কারণ এর একটা ভুগোল আছে, জাতীয় সংগীত আছে, জাতিসংঘের সদস্যপদ আছে, বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু নাগরিকরা সত্যিকার অর্থে কখনই স্বাধীন হয়নি। এদেশের সংবিধান গণবিরোধী। এখানে পুলিশ হলো রাস্ট্র। নাগরিক হলো পুলিশের প্রজা।
বাংলাদেশ কখনই ভারত চীন আমেরিকার মতো স্বাধীন নয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে তেমন কোন নীতি এ রাস্ট্র নিতে পারেনি শুধুমাত্র শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে। আমরা মহাথির, লী কুয়াং, পার্ক চুং হি বা মাওয়ের মতো নেতা পাইনি এটা হয়ত আল্লাহরই ইচ্ছা। আরেকটি কারণ হলো আইনগত ভাবেই আমরা তেমন স্বাধীন দেশ বা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইনি। ভারতের মতো একটি সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসী রাস্ট্র পাশে থাকলে বাংলাদেশের মতো একটি দূর্বল রাস্ট্রের অবস্থা কি হতে তা আমাদের নেতারা কখনই বুঝার চেষ্টা করেন নি। বরং বংগবন্ধু ও জিয়া সাহেব ছাড়া সকল সরকারই দিল্লীকে খুশী রেখে বা উলংগ ভাবে আনুগত্য স্বীকার করে দেশ চালাবার। চেষ্টা করেছে। জেনারেল এরশাদ ও বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই ভারতের অনুগত ছিল। এ দুজন সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার বিশ্লেষণ দেখলেই বুঝা যায় যে তাঁরা কখনই বাংলাদেশের মর্যাদা নিয়ে ভাবেননি। খালেদা জিয়াকে ভারত কখনই ষোলয়ানা মিত্র মনে করেনি। বিষয়টা জানা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া ভারতের ব্যাপারে একটা নমনীয় নীতি অনুসরণ করে এসেছেন। অপরদিকে তিনি চীন , পাকিস্তান, মায়ানমার এবং আরব দেশ গুলোর সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেননি। তাই বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সাথে ১০০ ভাগ বন্ধিত্ব আছে এমন একটি দেশও নেই। ২০০৬ সাল ও পরবর্তী ঘটনাবলীর পথ ধরে ১/১১র সরকার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে , তিনি যাদের আপন লোক মনে করে কাছে টেনে নিয়েছিলেন তাঁরা সবাই তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১/১১র সরকার ছিল মূলত: দিল্লীর এক্সটেনশন। পিনাক রঞ্জনই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো। আমেরিকা ও তার মিত্ররা এক হয়ে ভারতকে এ সুযোগটা করে দেয়। ওই সুযোগেই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ও এর জোটভুক্ত দল গুলো ক্ষমতায় এসেছে জাতীয় সংসদের দুই তৃতীয়াংশের চেয়েও বেশী সিট দখল করে। ৭৩ সালেও এ রকম একটি নির্বাচন হয়েছিল। তখন ভারত বা আর্মির কোন প্রয়োজন হয়নি। তখন বংগবন্ধুর জনপ্রিয়তা তুংগে। তখন আওয়ামী লীগ সিট পেয়েছিল ২৯০ বা ২৯৩। আর যায় কোথায়? ওই সংখ্যা গরিষ্ঠতার কারণে বংগবন্ধু একজন সিভিল ডিক্টেটরে পরিণত হন। সামান্য সমালোনাও তিনি সহ্য করতে পারতেন না। সে সময়ে ডানপন্থী ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দল গুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এখন দেশে এমন এক পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে যাতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও দলের নেতা ও কর্মীরা শংকিত। একটি নির্বাচিত সরকার জনগণের উপর কেমন করে এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করতে পারে। প্রশ্ন হলো কেন সরকার দমননীতির এমন ঝুঁকে পড়েছেন। যারা দেশে বিদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, খোঁজ খবর রাখেন বা লিখেন তাঁরা অবশ্যই জানেন কেন সরকার রাস্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা যারা বিগত ৫০ বছর ধরে খবরের কাগজের সাথে জড়িত তাঁরা এমন দমন ব্যবস্থা পাকিস্তন আমলেও দেখিনি। তাহলে সরকার এমন নিষ্ঠুর দমন নীতির আশ্রয় নিয়েছে কেন? এর উত্তর পেতে হলে মিশরের মোবারক, ফিলিপিনের মার্কোস, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো,লিবিয়ার গাদ্দাফি,সালাজার ফ্রাংকোর দিকে একবার তাকান। ওরা বহু বছর ক্ষমতায় ছিলো। বংগবন্ধুও এদের মতো কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলে জাসদের হাজার হাজার কর্মী নিহত হয়েছে। সেই জাসদের ইনু এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। এই ইনুরাই গণবাহিনী গঠন করে বহু সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। বার বার সেনা বাহিনীতে গোলযোগ সৃষ্টি করেছে। দমন নীতি গ্রহন করে ক্ষমতায় টিকে থাকাটাও আধুনিক রাস্ট্র ব্যবস্থায় একটি পদ্ধতি। ক্ষেমন আমেরিকা সারা পৃথিবীকে ভয় দেখিয়ে ,শক্তি প্রয়োগ করে নিজের প্রভাব জারী রেখেছে। এমন কি অন্যদেশে জোর প্রবেশ করে সেদেশের নেতা বা সরকার প্রধানদের ধরে জেলে বন্দী করে রেখেছে। উদ্দেশ্য বিশ্ববাসীকে দেখানে বিরুদ্ধে গেলে কি অবস্থা হতে পারে। ভয় বা শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষকে অবনত ও অনুগত করা।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সেই দমন নীতির পথ গ্রহণ করেছে। গত কয়েক মাসে নানা কারণে কয়েকশ’নাগরিক নিহত হয়েছে। সরকার প্রধান হত্যার অপরাধ চাপিয়ে দিচ্ছেন বিরোধী দলের উপর। শেখ হাসিনা অনবরত বলে চলেছেন,মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের কর্মী বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া শেখ হাসিনার মতোই নীতি গ্রহণ করেছে। শেখ ্াসিনার কোন দোষই নেই। তিনি গণতন্ত্র, দেশের উন্নতি,স্বাধীনতার জন্যে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন সংসদে মেজরিটি সিটই আসল কথা। যেভাবেই হোক বেশী সিট নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারলেই হলো । গণতন্ত্রও থাকবে,দেশের উন্নতিও হবে। বিশ্বের সকল সিভিল ডিক্টেটররাই তাই মনে করেন। মার্কোসও সেভাবেই ক্ষমতায় ছিলেন এবং নিজ দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে গেছেন।
যেসব রাস্ট্র বা সরকার ভয় দেখিয়ে দেশ শাসন করে বা নাগরিকদের অনুগত রাখে তারাই এখন শেখ হাসিনার প্রধান পরামর্শক উপদেষ্টা। তাদের পরামর্শ হলো দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দমন ও নিপীড়ন নীতি গ্রহণ করা জায়েজ। রাস্ট্রের অত্যাচারী ক্ষমতা সরকারকে এ অধিকার দেয়। তাদের উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে অনুগত রাস্ট্রে পরিণত করা। গণতন্ত্রের লেবাস পরিয়ে একটি শক্তিশালী অনুগত রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় রাখা এবং বিনিময়ে নিজেদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য হাসিল করা। এজন্যে কি করতে হবে? ভয় দেখিয়ে বৃহত্‍ জনগোষ্ঠির নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও স্বাধীন থাকার স্পৃহাকে ভোতা করে দেওয়া। বাংলাদেশের বৃহত্‍ জনগোষ্ঠি হলো দরিদ্র মুসলমান। ইংরেজরা যেমন ভারতের মুসলমানদের অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে দমিয়ে রেখেছিল ঠিক তেমনি। একই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে হাসিনা সরকার। দমন করো ,অত্যাচার করো,খুন করো, ঘুম করো। দেখবে ,একদিন তোমার প্রতিপক্ষ ক্লান্ত হয়ে গেছে। চীন ও রাশিয়ায় ৭০ বছর মুসলমানদের মসজিদ ও ধর্মকর্ম বন্ধ ছিল। ষখন বন্ধ রাখার নীতি প্রত্যাহৃত হলো তখন দেখা গেলো মুসলমানেরা নামাজ পড়া ভুলে গেছে। এখনও সেসব দেশে শত শত মসজিদ বন্ধ রয়েছে। ভারতেও বহু মসজিদ বন্ধ রয়েছে। বহু রাজ্যে মাইকে আজান দেওয়া যায়না, প্রকাশ্যে কোরবানী করা যায়না। ৪৭ সালের আগে পূর্ব বাংলা কোন কোন অঞ্চলে কোরবাণী করতে জমিদারের অনুমতি লাগতো। নদীয়ার মহারাজা মুসলমানদের দাড়ির উপর খাজনা বসিয়েছিলেন। হিন্দুদের পুজায় মুসলমানদের কর দিতে হতো। বাংলাদেশে এখন দাড়ি টুপি ওয়ালারা ভয়ে আতংকিত। মসজিদের ইমামরা কোরাণের নির্দেশনা মোতাবেক তাফসীর করতে সাহস পাননা।কোরাণে বর্ণিত ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাদের বিরুদ্ধেও বয়ান করতে পারবেন না। সরকারের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও আতংক তৈরী হয়েছে। মসজিদে মসজিদে সরকারী বেসরকারী গোয়েন্দাদের আনাগোণা। হাসিনা সরকারের দৃশ্য অদৃশ্য পরামর্শকরা এতে বেশ খুশী। কারণ,এটাই তাদের টার্গেট। মানুষ ভীত হয়ে গেলে অনুগত হয়ে যাবে। ভয়ে নিয়মিত ভোট দিয়ে যাবে। যুগের পর যুগ ক্ষমতায় থাকা যাবে। যেমন নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় ছিলেন মার্কোস ও মোবারক।
যে সামরিক কেয়ারটেকার সরকার হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে দুই তৃতীয়াংশ সীট দিয়ে সেই ব্যবস্থার উপর তাঁর এখন কোন আস্থা নেই। তিনি নিজে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন। প্রধানপন্ত্রীর পদে থেকে এমপির জন্যে নির্বাচন করবেন জোর করে। কারণ ক্ষমতায় থাকলে রাস্ট্র শক্তি তাঁর হাতে থাকবে। তাঁর কাছে এটাই গণতন্ত্র। অদৃশ্য পরামর্শক ও উপদেষ্টারা বলছেন, ধর্মহীন(অনেকেই বলেন ধর্ম নিরপেক্ষ)রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে হাসিনাকে অবশ্যই ক্ষমতায় থাকতে আরও অনেক বছর। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নতুন ডক্ট্রিন হলো ক্ষমতায় থাকার গণতন্ত্রের লেবাস অবশ্যই পরতে হবে। জনগণের সমর্থন না থাকলেও সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সীট থাকলেই হলো। থা্লে দেখবেন সারা বিশ্ব আপনাকে সমর্থন জানাবে। তথাকথিত মৌলবাদ ও জংগীবাদ দমনের জন্যে আমেরিকার কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার মাগনা পাবেন। কাশ্মীরে ভারত ৬৫ বছর ধরে দামন নীতি চালয়ে হাজার হাজার কাশ্মীরি মুসলমানকে হত্যা করছে। বিশ্বাসী একটি কথাও বলেনা। গণতন্ত্রের লেবাস পরে দমনের মাধ্যমে ক্ষমতা স্থায়ীকরণ আধুনিক রাস্ট্র ব্যবস্থার একটি নতুন কৌশল। নিরী্হ নিরস্ত্র হোফাজতের কর্মীদের গভীর রাতে ফ্ল্যশ আউট করার পরামর্শও ছিল ইসলাম বিরোধী শক্তির। সে রাতের ঘটনাকে সরকার বেমালুম গায়েব করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে মিডিয়া হচ্ছে সরকারের সহযোগী। এখন সরকার সরকার কথায় কথায় বলে হেফাজতের কথা ভুলে যাবেন না। আজ এখানেই শেষ করছি পবিত্র আল কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে। সুরা আল ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াত। ওয়া মাকারু,ওয়া মাকারাল্লাহু, ওয়াল্লা খায়েরুল মাকেরীন। বাংলা তরজমা, আর তাহরা গোপন ষড়যন্ত্র করিল এবং আল্লাতায়ালা গোপন কৌশল করিলেন,আর আল্লাহতায়লা হচ্ছেন শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


ইসলামকে গৃহধর্মে পরিণত করার ষড়যন্ত্র / এরশাদ মজুমদার

ভারতের সনাতন ধর্মে বহু দেবতার অবস্থান। ফলে, এক দেবতার কোন ধারণা কখনই গড়ে উঠেনি। কোলকাতার দেবতার সাথে দিল্লীর দেবতার কোন মিল নেই। আবার দিল্লীর দেবতার সাথে তামিল নাড়ু বা দাক্ষিণ্যত্যের কোন মিল। ভারত বিজয়ের সময় আর্যরা তাদের নিজেদের ধর্ম ও অনেক দেবতা নিয়ে এসেছে। আর্যরাই মহেনজোদারো ও হরপ্পা নগরী ধ্বংস করে। আর্যদের রচিত মহাকাবে রামায়ন মহাভারত এখন এক ধরনের ধর্মগ্রন্থ হিসাবে পুজিত হয়। এ দুটি মহাকাব্য মানব রচিত।
আমরা বাল্যকাল থেকে হিন্দুদের গৃহ দেবতার কথা শুনে এসেছি। প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতেই একটি দেবতা আছে। এক এক শ্রেণীর এক এক দেবতা। এমন ভারতের অফিস আদালতেও দেবতার ছড়াছড়ি। কোলকাতায় যেমন দূর্গাদেবীর মর্যাদা বেশী তেমনি দিল্লীতে বা মোম্বাইতে গণেশ দেবতার গুরুত্ব বেশী। তিনশ’বছর আগেও সনাতন বা হিন্দু ধর্মে সার্বজনীন কোন পূজা ছিলনা। সবাই ঘরে ঘরে পূজা করতো। সম্ভবত মোঘল আমলেই সার্বজনীন পূজা উত্‍সবের ব্যবস্থা করা হয়। ইসলামের বিজয়ের আগে ইরাণে জরথস্ত্রু বা জোরাস্ত্রাসের ধর্ম চালু ছিল। আমরা এই ধর্মকে পারসি ধর্ম নামে চিনি। এই ধর্মের অনুসারীদের অগ্নি উপাসক বলা হয়। ধর্ম প্রবর্তক জরথস্ত্রু নাকি অগ্নিকে সম্মুখে রেখে তাঁর বাণী জারি করেছিলেন। পারসিকদের উপাসনালয়কে অগ্নি মন্দির বা ফায়ার টেম্পল বলা হয়। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা। আবেস্তায় বর্ণিত অনেক দেব দেবীকে ভারতীয়রা গ্রহন করেছে বাধ্য হয়ে। কারণ তারা ছিল পরাজিত। আর্যরা পুরো ভারত দখল করতে পারেনি বলে দক্ষিণের ধর্মের সাথে উত্তরের তেমন মিল নেই। পারসিদের প্রধান কেন্দ্র এখন ভারত। আর্যদের প্রধান আইন গ্রন্থ হলো মনুসংহিতা। সেসব ধর্মীয় আইন এখনও ভারতে আছে। মনুই মানুষের ভিতর বর্ণবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনিই সৃষ্টি করেছে চতুর্বর্ণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
এসব হচ্ছে প্রাসংগিক কথা। মূল বিষয় হলো,ভারত বাংলাদেশকে মুসলমান দেশ হিসাবে দেখতে চায়না বা জাতীয় জীবনে ইসলামের প্রভাবকে কমিয়ে শূণ্য পর্যায়ে নিয়ে আসতে চায়। এটাই হচ্ছে ভারতীয় গবেষকদের পরামর্শ বা সুপারিশ। তাই ভারত সরকারকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে। বিগত ৪২ বছর ধরে ভারত এই খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আসছে। এই বিনিয়োগের সুফল ভারত পেতে শুরু করেছে। ভারতের কাছে গণজাগরণের নেতারা বাংলাদেশের আগামীদিনের নেতা। তাই গণজাগরণকে সমর্থন দিয়েছে। ওই কারণেই বাংলাদেশ সরকার গণজাগরণকে ষোলয়ানা সমর্থন দিয়েছে। আওয়ামী পন্থী সাংস্কেতিক সকল সংগঠনই গণজাগরণকে সকল প্রকার লজিষ্টিক দিয়ে সাহায্য করেছেন। এমন কি নাস্তিক ব্লগাররাও গণজাগরণকে সমর্থন দিয়েছে। সরকার জেনে শুনেই সেসব নাস্তি ব্লগারদের জেনেশুনে প্রটেকশন দিয়েছে। কারণ সরকার এ সমর্থন জানাতে বাধ্য ছিলো। আওয়ামী লীগ যতটা না সেক্যুলার( ধর্মহীন) তার চেয়ে হাজার গুণ সেক্যুলার হচ্ছে তার সহযোগী সংগঠণ গুলো। সরকারের ভিতর ঢুকে বসে আছে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ। এরা কেউই মুলত: আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করেনা। এরা সকলেই অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে আওয়ামী লীগে ঢুকে বসে আছে।এদের লক্ষ্য কি? এদের লক্ষ্য হচ্ছে কালক্রমে বাংলাদেশকে ইসলাম থেকে মুক্ত করা। কেন মুক্ত করতে হবে? কারণ ইসলাম জারী থাকলে বা ৯০ ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ থাকলে ভারতের প্রভাবকে স্থায়ী অবস্থানে পৌঁছানো যাবেনা। কারণ , বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম। যদি তা না হতো তাহলে ৪৭ সালে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হতোনা। হিন্দু প্রধান পশ্চিম বাংলা ধর্মীয় কারণে ভারতের সাথে রয়ে গেছে। এমন কি তারা স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ গড়তেও রাজী হয়নি। হিন্দু নেতরা জানতেন অখন্ড বংগদেশ বা বাংলাদেশে মুসলমানরাই মেজরিটি এবং তারাই দেশটির শাসক হবে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বেংগল এসেম্বলীতে মেজরিটি ছিল মুসলমানরা। তারাই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিম বাংলায় এখনও ৪০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু শাসন ক্ষমতায় তাদের অবস্থান ১০ ভাগেরও কম। সরকারী চাকুরীতে তাদের অবস্থান এক ভাগও নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্ম মনে করেন আমার কথায় সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ আছে। তারা নিজেদের ষোলয়ানা শুধুমাত্র বাংগালি হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। এটা নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল। ভারতের বাংগালী রাস্ট্রপতি প্রণব বাবু যখন বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি এক ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন,৭১ সালে তোমরা খাঁটি বাংগালী হতে চেয়েছিলে। তাই আমরা তোমাদের সমর্থন করেছিলাম। এখন তোমরা বলছো মুসলমান থাকতে চাই। তাহলেতো তোমরা পাকিস্তানের সাথেই থাকতে পারতে। বাংলাদেশকে আমরা খাঁটি সেক্যুলার বাংগালীর দেশ হিসাবে দেখতে চাই।সোজা কথা হলো ভারত যেভাবে চাইবে বাংলাদেশ সেভাবেই চলবে।
বংগবন্ধু থাকলে আওয়ামী লীগের এ অবস্থা হতোনা। বংগবন্ধুর শত্রুরা সাবাই এখন আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে বসেছে। এরা কেউই আওয়ামী লীগের নীতিতে বিশ্বাস করেনা। তথাকথিত বামপন্থীরা ভারতের আগামী দিনের নীতি বাস্তবায়ন করতে চায়। ভারতকে ইতোমধ্যেই আমেরিকা আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে মেনে নিয়েছে। শর্ত শুধু একটা, তাহলো চীনের বিরুদ্ধে লেগে থাকতে হবে। আর ভারতের শর্ত হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলো যেন ভারতের অনুগত্য মেনে চলে। আমেরিকা ভারতের এ শর্ত স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাবে থাকতেই হবে। আর প্রভাবকে মেনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা। মুলত সহযোগীরাই হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রধান শক্তি। সম্মিলিত বাম ও একই ঘরাণার বুদ্ধিজীবীদের কোন ভোট নাই। তাই তাদের কৌশল হচ্ছে আওয়ামী কাঁধে চড়ে লক্ষ্যকে গন্তব্যে পৌছে দেয়া। এ ব্যপারে তারা আংশিক সাফল্য লাভ করেছে। চলমান মন্ত্রীসভায় তাদের উপস্থিতি প্রকাশ্য। াব গুতুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় গুলো বামদের দখলে। বিশেষ করে শিক্ষা সংস্কৃতি ও বিদেশ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীসভা দেখে কালো বিড়াল প্রতীক সুরঞ্জিত বলেছিলেন, কচি কাঁচার মেলা। যদিও সুরঞ্জিত বাবু একই ঘরাণার লোক। তিনি বলেছিলেন বাঘে ধরলে ছেড়ে দেয়, হাসিনা ধরলে ছাড়েনা। তারপরে সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনা গুলো দেশবাসী জানেন। তাঁকে সবাই কালো বিড়াল হিসাবে চিনেন। তাঁর মন্ত্রণালয় চলে গেলেও মন্ত্রীত্ব যায়না। তিনি এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। উর্দুতে বলে উজিরে খামাখা। সুরঞ্জিত এখন খামাখা মন্ত্রী। হাসিনা কেন তাঁকে খামাখা মন্ত্রী রেখেছেন তা তিনি এবং সুরঞ্জিতই ভাল জানেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন দলের বুড়োদের কথার কোন দাম দেন না। প্রধানমন্ত্রীর মূল পরামর্শক দিল্লীই ঠিক করে দেয় নতুনদের ভিতর কাকে নেয়া হবে আর কাকে বাদ দেয়া হবে। সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাচ্ছেন। সাহারা বেগম তুলনা মূলক ভাবে নরম ছিলেন,তাই তাঁকে সরিয়ে মখাকে আনা হয়েছে। মখা তাঁর যোগ্যতা প্রমান করেছেন। সরকারের চলমান কঠের দমননীতির দর্শন ও পরামর্শ আসছে দিল্লী থেকে। আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকার দিল্লীর জন্যে শ্রেষ্ঠ বন্ধু। খালেদাও কম যান না। তিনিও দিল্লীকে খুশী রাখতে চান। কূটনৈতিক কারণেই এটা হয়ত খালেদার জন্যে অপরিহার্য। খালেদার ষ্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাঁরা আছেন বা যাঁরা তাঁর ঘনিষ্ঠ পরামর্শক তাঁরা সবাই তেমন রাজনৈতিক আদর্শের লোক নন। ধরুন, আপনি প্রশ্ন করলেন,আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ফারাক কি? চট জলদি এর কোন উত্তর স্বয়ং খালেদা জিয়াও দিতে পারবেন না।
১৯৪৯ সালের জুন মাসে যে আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম হয়েছে তারই উত্তরসূরী হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ যারা ৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর মুসলীম শব্দটি ত্যাগ করেছিলেন বাম ও সেক্যুলারদের চাপে পড়ে। ওই নির্বাচনের জনসভায় মাওলানা সাহেব বলতেন,আমরা হলাম জনগণের মুসলীম লীগ আর নুরুল আমীনের দল হচ্ছে সরকারী মুসলীম লীগ। সেই নির্বাচনের পরেই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে মুসলীম লীগ মুছে গেছে। দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী। তিনি ছিলেন জালেম সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরোধী। তিনি ইসলামী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ফলে তাঁর সাথে সখ্যতা ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলোর সাথে। তিনি বিশ্ব শান্তি পরিষদেরও নেতা ছিলেন। কিন্তু মাওলানা সাহেব শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে টিকতে পারেননি। ১৯৫৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। যাতে সারা পাকিস্তানের বামপন্থি নেতারা যোগ দিয়েছে। এখানেও কট্টর বামরা তাঁকে ব্যবহার করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। তিনি বলতেন,আমি খোদা বিহীন সমাজ বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। তিনি গণচীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও জে দংকেও বলেছিলেন তোমাদের সমাজতন্ত্রের সাথে আল্লাহকে যোগ করো, আমি তোমাদের দলে যোগ দেবো। মাওলানা সাহেব ন্যাপ গঠন করার পর বামরা সবাই দল বেধে আবার তাঁর ছায়াতলে স্থান নেয়। কারণ শেখ সাহেব আর সোহরাওয়ার্দী সাহেব সমাজতন্ত্র বিরোধী ছিলেন। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী সাহেব ছিলেন চরম আমেরিকা ঘেষা একজন রাজনীতিক। তিনি অন্ধ ভাবে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে সমর্থন করতেন। তিনি বলেছিলেন, জিরো + জিরো। মানে পাকিস্তান ছিলো জিরো আর আমেরিকা ছিলো এক বা দশ। সাথে শূন্যা যোগ করলে দশ বা একশ’ হবে। তিনিই পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের প্রশ্নে বলেছিলেন,৯৮ ভাগ স্বায়ত্ব শাসন দেয়া হয়ে গেছে। শেখ সাহেব ছিলেন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের এই সাম্রাজ্যবাদী নীতির অন্ধ সমর্থক। ৭০ সাল নাগাদ আমরা আওয়ামী লীগকে একটি সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখে এসেছি। ন্যাপ গঠণের পর ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া সাহেব মাওলানা সাহেবকে লুংগী মাওলানা বলে গালি দিতেন। বাম ঘরাণার সাংবাদিকদের লাল মিয়া বলে সম্বোধন করতেন। ৭২ সালে এসে আওয়ামী লীগ দলের নীতিতে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করে। ৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সময় দিল্লী মুজিব নগর সরকারের মাথায় এ বিষয়টা ঢুকিয়ে দেয়। এরপরে সংবিধানে বিষয়টা প্রবেশ করাণো হয়।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে , পাকিস্তান যেহেতু আমেরিকা পন্থী ছিল সেহেতু ভারতের সাথে রাশিয়ার সখ্যতা ছিল। এক সময় আইউবের আমলে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় জেনারেল আইউব। এ ব্যাপারে মাওলানা সাহেব আইউবকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই থেকেই পাকিস্তানের সাথে চীনের সুসম্পর্ক। এবং এখনও সেটা অব্যাহত আছে। ৬২ সালে ভারতের সাথে চীনের একদফা যুদ্ধও হয়ে গেছে। চীন ভারত সম্পর্ক এখনও শীতল রয়ে গেছে। এইতো ক’দিন আগে চীনের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলে তিব্বতীরা চীন বিরোধী শ্লোগান দেয়। তিব্বতকে ভারত বহুদিন ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে। তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে ভারত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত বিরোধ এখন খুবই প্রকট। ভারত যেহেতু প্রতিবেশীদের ব্যাপারে আগ্রাসী নীতি গ্রহন করে মোড়লীপনা করতে চায় সেহেতু বাংলাদেশের উচিত ছিল নিকট প্রতিবেশী চীন মায়ানমার পাকিস্তান মালয়েশিয়া নেপাল শ্রীলংকার সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া। আওয়ামী লীগের পক্ষে এ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ভারতের অনুগত দল ও ব্যক্তি। যা শেখ বেঁচে থাকলে কখনই সম্ভব ছিলনা। বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জগতে শেকড় গেঁড়ে বসে আছে। ফলে ,আগামী দিনের প্রজন্ম এ দেশটা যে মুসলমানের দেশ তা আর স্বীকার করতে চায়না। কিছু বাম,কিছু সেক্যুলার ও কিছু ভারতের তাবেদার তরুণদের মাথা খেয়েছে। সব মিলে লাখ খানেক মানুষকে ভারত তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। এদের কাছে ঢাকার সার্বভৌমত্বের পক্ষে নিবেদিত হওয়ার চেয়ে দিল্লীর স্থায়ী তাবেদারী করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এরাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আদর্শগত সৈনিক। এরা পর্দার অন্তরালে থাকে। কিন্তু এখন প্রকাশিত গণজাগরণ মঞ্চের কারণে। ভারতের রাস্ট্রপতি বাংগালী বাবু প্রণব মুখার্জীতো (প্রধানমন্ত্রী ও পররাস্ট্রমন্ত্রীর কাকাবাবু) বলেই ফেলেছেন গণজাগরণ হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। গণজাগরণকে সরকার লজিষ্টিক সাপোর্ট দিয়েছে মাসের পর মাস। আর ভারতপন্থী ব্যবসায়ী, মিডিয়া ও আহমদীয়া জামাত অর্থবিত্ত দিয়ে সাহায্য করেছে। এমন কি হেফাজত জামাত বিরোধী একশ্রেণীর ভারতপন্থি ইসলামিক গ্রুপও সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমি তরিকত ফেডারেশনের এক নেতার কথা জানি রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা করেন। ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হাতে রাখার জন্যে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ওই ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেখেছেন একজন প্রভাবশালী মহিলাকে। এই মহিলার সাথে দিল্লীর কোন মহলের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। বেংগল ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে যা ষোলয়ানা ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ভরন পোষণের জন্যে নিবেদিত।
সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবীর ময়দানে বিএনপির অবস্থান একেবারে নাই বললেই চলে। খালেদা জিয়া যতবারই ক্ষমতায় এসেছেন এদিকে একেবারেই নজর দেননি বা নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব বলেছিলেন,আমি বিদেশ থেকে টাকা ধার করে গাণ বাজনা নাচ গাণের জন্যে খরচ করতে পারিনা। এমন কি বিএনপি নিজদের কাগজটাও চালাতে পারেনা। যাদের টিভির অনুমতি দেয়া হয়েছিল তারা তা বিক্রী করে দিয়েছেন আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবীদের কাছে। বিএনপি মনে করে আওয়ামী বিরোধীরা আর কোথায় যাবে। অতএব তারা বাধ্য হয়েই বিএনপির সাথে থাকবে। জেনারেল মইনের সরকারের আমল থেকেই বিএনপিকে দাফন করার কাজ চলছে। সেকাজ এখনও অব্যাহত আছে। জেনারেল মইনের উত্তরসূরী তথাকথিত বেসামরিক নির্বাচিত সরকার এখন রণমুর্তি ধারণ করেছে। শুরুতেই বলেছি হেফাজতকে দমনের পরে বর্তমান সরকার বিএনপির দিকে নজর দিয়েছে। প্রথমিক পদক্ষেপ হলো কঠোর ভাবে দমন করা। পরামর্শকদের প্রেসক্রিপশন হলো হাতপা ভেংগে দিয়ে দেখো ফল কি হয়। তাতে যদি না হয় তাহলে কিছু হত্যা করো, কিছু জেলজুলুম করো। এতে নাকি বিশ্বব্যাপী ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। তারপর হলো আমেরিকাকে বুঝাও আমরা মৌলবাদী উত্থানকে দমন করছি। গোলাবারুদ কেনার জন্যে আমাদের বেশী করে সাহাযা দিন। আমাদের আরও পাঁচ বছর সময় দিন। আমরা পুরো বাংলাদেশকে ধর্মহীন করে আপনাদের খেদমতে পেশ করবো। মের ভারতের যৌথ প্রেসক্রিপশন হলো ইসলামকে গৃহধর্মে পরিণত করো। মুসলমানরা রাতদিন ঘরে বসে এবাদত করুক। প্রত্যেক গৃহকে মসজিদে পরিণত করো। ইসলামকে সূফী ধর্ম হিসাবে প্রচার করো। রাজী হুজুর। ইসলামের বাইরে বের হতে দেবোনা। আমাদের ২০৫০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দিন। আমাদের দলে এখন অনেক দামী দামী হুজুর এসে গেছেন। আমরা আলকোরআনের নতুন তাফসীর করাবো।

লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress

Read Full Post »


রাস্ট্রের অধিকার বনাম নাগরিকের অধিকার / এরশাদ মজুমদার

এ বিষয় নিয়ে আমি এর আগেও অনেক বার লিখেছি। আজ আবার লিখছি। চলমান সরকারের আমলে বিগত কয়েক মাসে রাজনৈতিক কারণে কয়েক’শ নাগরিক নিহত হয়েছেন। বিশেষ করে ৫ই মে গভীর রাতে বা ৬ই মে রাত আড়াইটায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তাতে একজন নাগরিক হিসাবে আমার মনটা একেবারেই ভেংগে গেছে। ২৫শে মার্চ রাতে আমি অবজারভার হাউজে ছিলাম। রাত এগারটার দিকে কন্টিনেন্টাল থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে অবজারভারে ফিরে আসি। রাত বারটার দিকে সম্ভবত পাক সেনাবাহিনী অপারেশনে নামে। মধ্যরাত হলেই পাক সেনারা অপারেশনে নামবে এটা আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা ছিল। ফলে ২৪শে মার্চের পরে ২৫শে মার্চ সারাদিন জেনারেল ইয়াহিয়া বা তাঁর সহকর্মীরা কেউ বংগবন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেননি। ভুট্টো তখন কন্টিনেন্টালে অবস্থান করছিলেন। তিনিও বংগবন্ধুর সাথে কোন যোগাযোগ করেননি।আমার দায়িত্ব ছিল ভুট্টোর সাথে কথা বলা। একটি শব্দ হলেও চলবে। কথা বলেছিলাম,কিন্তু সে কথা আর প্রকাশ করতে পারিনি। বংগবন্ধু সারাদিন নিজ বাস ভবনেই অপেক্ষা করছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া বা তাঁর লোকের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার জন্যে। সে ফোন আর আসেনি। ২৫শে মার্চ রাতে অবজারভারে আটকে পড়ার পর বের হতে পেরেছি ২৭শে মার্চ সকালে যখন দুই ঘন্টার জন্যে কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। বাসায় ফিরার পথে এখানে সেখানে বিক্ষিপ্ত লাশ ছিল। সবচেয়ে বেদনা দায়ক একটি দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে। তাহলো ফকিরাপুল পানির ট্যান্কের মাথায় একটি স্বাধীন বাংলার পতাকা ছিল। সেটা নামাবার জন্যে পাকিস্তানী সৈনিকরা একটা কিশোরকে উপরে পাঠিয়েছিল পতাকাটা নামাবার জন্যে। কিশোরটি পতাকা খুলে হাতে নেয়ার সৈনিকরা তাকে গুলি করে চলে যায়।
সে রাতে রাজধানী ঢাকার কোথাও আলো দেখতে পাইনি। আমরা ছাদে উঠে দেখছিলাম যা দেখা যায়। খু্ব হুঁশিয়ারে। সেনিকরা টের পেলেই গুলি করবে। তাদের মনে সব সময় প্রতিরোধের ভয় ছিল। এদিক ওদিক পাতা নড়লেও ওরা গুলি করতো। ছাদে দাঁড়িয়েই আমরা দেখেছি ঢাকা শহরের কোথায় কোথায় পাক সেনারা আগুন দিয়েছে। বস্তি গুলো ছিল তাদের প্রধান টার্গেট। শুরতেই বস্তিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তাই চারিদিকে গভীর অন্ধকারে শুধু আগুন দেখছিলাম। রাজার বাগ আর পিলখানার দিক থেকে গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। ২৭শে মার্চ সকালে কারফিউ শিথিল হলে অনেকেই বাজার সদাই করার জন্যে বেরিয়েছিলেন। সবাই পেটের আগিদেই বের হয়েছিলেন। দুয়েকটা রিকসাও দেখা গিয়েছে।সময় ছিল খুবই কম। মাত্র দুই ঘন্টা। তাই সবার মাঝেই ছিল প্রচন্ড তাড়াহুড়া। যাক ২৫শে মার্চ রাতের কথা এসেছে প্রসংগক্রমে। ওইরাত বা পরের রাত বা দিনের কথা বলতে গেলে পুরো একটা বই হয়ে যাবে। কিন্তু সে সময় এখন হাতে নেই।
এখন ৫ই মে গভীর রাত বা ৬ই মে অতি ভোরের কথা বলতে হাতে নিয়েছি। এখন সময়টা হচ্ছে ২০১৩ সাল। আর সে সময় মানে ৭১ সালের ২৫শে মার্চ ক্ষমতায় ছিল বাংগালী মুসলমান বৈরী পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠি। ২০১৩ সালের ৫ই মে ক্ষমতায় আছেন খাঁটি বাংগালী সরকার। তাও আবার নির্বাচিত। তার উপরেও আছে বংগবন্ধুর প্রাণের দল আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যার সরকার। মুসলমান কথাটা উল্লেখ করলামনা এ কারণে যে,এই সরকার নিজেদের সেক্যুলার ধর্মহীন ভাবতে ভালবাসেন। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজনীতিতে দুটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসে গেছে। ক্ষমতায় আরোহনের জন্যে নির্বাচন পদ্ধতি। বিরোধী দল চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। ক্ষমতাসীন দল চায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অপর বিষয়টা হঠাত্‍ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। হওয়ার কথা ছিলনা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে শাহবাগে কিছু তরুণ সমাবেশ বা জমায়েত করতে শুরু করলো। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি বা দেখেনি তাদেরই আবেগের বহি:প্রকাশ ছিল শাহবাগের মিলন মেলা। পরে নামকরণ হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। সরকার দেখলো এই মঞ্চকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। শুরু হয়ে গেল সরকারী তোড়জোড়। সমর্থন। টাকাপয়সার জোগান। পানি ও খাওয়া দাওয়া, নাচগাণ সারারাত সারাদিন। এমন রমরমা জাগরণ নিয়ে ছোটগল্প লিখে আওয়ামী ঘরাণার প্রখ্যাত আমলা ও লেখক হাসনাত আবদুল হাই পড়লেন মহাবিপদে। গল্পের প্রকাশক সাবেক কমিউনিষ্ট নেতা মতিউর রহমান ও বিপদে পড়লেন। উভয়েই ক্ষমা চেয়ে জীবন রক্ষা করলেন। হঠাত্‍ শোনা গেলো গণজাগরণ মেলা বা মঞ্চের কিছু নেতা ও ব্লগার নাস্তিক এবং তাঁরা গত কয়েক বছর ধরে আল্লা,রাসুল(সা) ও কোরআনের বিরুদ্ধে অশালীন ভাবে গালাগাল করে যাচ্ছে। তাদের নাস্তিকতা নিয়ে লিখতে গিয়ে এখন দৈনিক আমার বন্ধ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বন্দী অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। তাঁর মায়ের বিরুদ্ধেও সরকার মামলা দিয়েছে। গণজাগরণের নাস্তিক নেতাদের শাস্তির দাবী সহ আরও কিছু দাবী নিয়ে আন্দোল শুরু করেছে ধার্মিক মানুষদের অরাজনৈতিক সংগঠণ হেফাজতে ইসলাম। এর নেতা বা আমীর হলেন আল্লামা আহমদ শফী সাহেব। তিনি দেওবন্দী ছিলছিলার মানুষ। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হজরত মাওলানা আল্লামা মাদানী সাহেব ছিলেন শফী সাহেবের ওস্তাদ। বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা গুলো হলো দেওবন্দ ছিলছিলার। এসব মাদ্রাসা সরকারী সাহায্য গ্রহণ করেনা। জনগণের সাহায্যে এসব মাদ্রাসা চলে। বয়সের ভারে শফী সাহেব এখন একেবারেই ক্লান্ত। এ বয়সে এত বড় ঝুঁকি নেয়ার কথা নয়। শুধুই প্রাণের দাবীতে,দ্বীনের ভালবাসায় তিনি নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি বার বার ঘোষণা দিয়েছেন, হেফাজতের কোন রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। কাউকে ক্ষমতায় বসাবার জন্যে বা ক্ষমতা থেকে নামাবার জন্যে তাঁরা আন্দোলন করছেন না। ১৩ দফা সম্বলিত কিছু ধর্মীয় দাবী নিয়ে তিনি আন্দোলন করছেন। এজন্যে ইতোমধ্যেই তাঁকে নানা ধরনের গালাগাল শুনতে হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে হেফাজত সারাদেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে ৪০টির বেশী সমাবেশ করেছে। কোথাও কোন অঘটন ঘটেনি। ৫ই মে ঢাকায় সমাবেশ হবে সে ঘোষণা তারা ৬ই এপ্রিলের মহা সমাবেশে দিয়েছেন। সরকার কোন প্রকার বাধা দিবেনা বলেও ৬ই এপ্রিলের সমাবেশ পন্ড করার জন্যে নানা ধরনের কুট কৌশল অবলম্বন করেছিল। ঘোষণা মোতাবেক হেফাজতের নেতা কর্মীরা ৫ই মে ভোর বেলা থেকেই রাজধানীর প্রবেশ পথ গুলোতে অবস্থান শুরু করেন এবং খুবই সুশৃংখল ভাবে বিকেলের দিকে শাপলা চত্বরের সমাবেশের দিকে মিছিল করে রওয়ানা দেন। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হঠাত্‍ দেখা গলো পুরাণা পল্টনের রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড তৈরী করে। কেন পুলিশ হঠাত্‍ করে এ কাজ করেছে তা এখনও জানা যায়নি। ব্যাস,শুরু হয়ে গেল ধস্তাধস্তি,ধাক্কাধাক্কি, মারা মারি। প্রচন্ড গোলাগুলি,টিয়ার গ্যাস,রাবার বুলেট, ইট পাটকেল। পুলিশই এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাত অব্দি আর অবস্থার পরিবর্তন হয়নি গুলিস্তান দিয়ে হেফাজতের কর্মীরা সমাবেশের দিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ ও একই ঘরাণার নিবেদিত কর্মীরা হেফাজতের মিছিলকে বাধা দেয়। দ্বিতীয় স্থানে শুরু হলো মারামারি। হেফাজত কর্মী বনাম পুলিশ,ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ। পরিস্থিতির অবনিতি হতে লাগলো। এ সময়ে সরকার উদ্যোগ নিলে ঘটনার ওইখানেই সমাপ্তি হতো। না সরকার উদ্যোগ নেয়নি। হয়ত কোন কারণে অপেক্ষা করছিলেন। একদিকে লক্ষ লক্ষ ধর্মীয় মানুষের সমাবেশ চলছে,অন্যদিকে পুলিশ ছাত্রলীগ ও অজানা লোকদের দাংগা চলতে থাকলো। খারা আগুন লাগাচ্ছে, কারা দেকানপাট লুট করছে কিছুই বুঝা গেলনা। আমরা দেখলাম,এখানে ওখানে আগুন জ্বলছে আর সীমাহীন গুলির আওয়াজ চলছে। সব্দ গ্রেনেডের হামলা চলছে। রাত আস্তে আস্তে ভারী হতে লাগলো। সমাবেশও চলছে পুলিশের গোলাগুলিও চলছে। আল্লামী শফী সমাবেশে আসছেন বলে ঘোষণা দিলেও তিনি শেষ পর্যন্ত আসেননি। আর মঞ্চ ঘোষিত হলো আমীরের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সমাবেশ চলতে থাকবে। তখন মনে হয়েছ অদৃশ্য কোন শক্তি সবকিছুকে নিয়ন্ত্রন করছে। সৈয়দ আসরাফ সাহেব ঘোষনা দিলেন ৬টা মধ্যে সমাবেশ বন্ধ করে চলে যেতে হবে। তখন ৬টা পেরিয়ে গেছে। তখনি তিনি ঘোষণা দিলেন ইতিহাসের পূণরাবৃত্তি ঘটবেনা। মানে ২৫শে মার্চ বা ওই ধরনের কিছু ঘটবেনা। অন্যরকম কিছু ঘটবে। আবার বিএনপি নেত্রী ঘোষণা দিলেন তাঁর দলের কর্মীরা যেন হেফাজতের কর্মীদের সহযোগিতা করে। ২৫ শে মার্চ রাতে রাস্তায় কোন সমাবেশ ছিলনা । শহরের অবস্থা ছিল থমথমে। যদিও রাস্তায় নানা ধরনের ব্যারিকেড দেয়া চলছিলো। ৫ই মে গভীর তাতে শাপলা চত্বরে ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। ২৫শে পাক বাহিনীকে সারা ঢাকা ছড়িয়ে পড়ে অপারেশন চালাতে হয়েছে। ৫ই মে যৌথ বাহিনীকে শুধু এক জায়গায় এক লক্ষ্যে অপারেশন চালাতে হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যারা ছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন ধর্মজ্ঞানী ও ধর্মছাত্র গ্রামের মানুষ। জীবনে লক্ষ্য একটাই, তা্হলো ধর্মকে রক্ষা করা ধর্মীয় জীবন যাপন করা। শাপলা চত্বরে তারা যুদ্ধ করতে আসেনি। এসেছিল মুরুব্বীদের ডাকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে। সেই ধর্মজ্য়ানী ও ধর্মছাত্রদের উপর অপরেশন চালালো ১০ হাজার সদস্যের এক যৌথ বাহিনী। যারা রাস্তায় বসেছিল, কেউবা ঘুমাচ্ছিল। আগেই অন্ধকার জারী করা হয়েছিল,পানি সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল। চারিদিক ঘোরাও করা হয়েছিল
অবাক হয়ে দেখলাম, স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার কত নিষ্ঠুর হতে পারে। রাস্ট্রের দমন শক্তি কি ও কত প্রকার তাও আমাদের দেখতে হলো। নির্বাচিত সরকার রাস্ট্রের দমন শক্তিকে কত নিষ্ঠুর করে তুলতে পারে। আজ আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে রাস্ট্র বড় না মানুষ বড়। মানুষের জন্যে রাস্ট্র না রাস্ট্রের জন্যে মানুষ। আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রটি নিজ নাগরিকদের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়ে মুখোমূখী দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোন দিকে থাকবো অত্যাচারী রাস্ট্রের পক্ষে, না মানুষ হিসাবে নিজের মানবিক অস্থিত্বকে রক্ষা করবো। আমি জানি এমন নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনার পক্ষ বিপক্ষ আছে। হিটলারেরা কখনই নিজের কর্ম ও অবস্থানের কথা বুঝতে পারেনা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »