বিষয়টা খুবই পুরাণো এবং বহুল আলোচিত। আমি মনে করি, বিষয়টা নিয়ে তর্ক বা বিতর্কের কোন প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করিনা। আমরা বাংগালী বাংগাল গৌড়ীয় গংগারিড্ডীয় এসব হাজার বছর ধরে আমাদের পরিচয় ছিল। এসবতো ইতিহাসের অংশ। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত বা বিরোধ নেই। বিদেশী সেন বা মুসলমান যারা এ দেশটা শাসন করেছেন তারাই দেশের নাম দিয়েছেন বাংগাল বা বাংগালী। ইংরেজরা দেশ দখল করার পরও দেশের নাম বাংগালাহ রেখে দেন।পরে উচ্চারণ করা হতো বেংগল। ৪৭এর ভাগের পর অর্ধেকের নাম ওয়েস্ট বেংগল আর পাকিস্তানের অংশে যেটুকু পড়েছে তার নাম হলো পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান। মুসলীম মেজরিটি থাকার কারণেই এই অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পুরো বাংলা বা বংগদেশ ধরলেও এই এলাকায় মুসলীম মেজরিটি ছিল। এখনও পশ্চিম বাংলায় ৩০ ভাগ অধিবাসী মুসলমান।
পাঠক সমাজের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৩৭ থেকে ৪৬ সাল পর্যন্ত নিখিল বংগের তিনজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্যার খাজা নাজিম উদ্দিন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বংগীয় পরিষদের স্পীকারও ছিলেন মুসলমান। বিষয়টা নিয়ে এর আগে বহুবার লিখেছি শুধুমাত্র পাঠক সমাজের স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখার জন্যে।বাংগালী মুসলমানরা বাংলা ভাগ কখনই চায়নি। কংগ্রেস নেতারাই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বাংলা ভাগ করেছে। কংগ্রেস নেতারা বিরোধিতা না করলে নিখিল বংগ ৪৭ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিস্ঠিত হতো।বাংগালীদের জন্যে একটি স্বাধীন রাস্ট্র কেন তাঁরা চাননি সে রহস্য জানা দরকার। এই নিবন্ধ বা প্রবন্ধ যখন লিখছি তখন বাংলাদেশের ৪০ বছর পুর্তি হয়ে গেছে। স্বাধীন ভারত আর পাকিস্তানের ৬৫ বছর পার হতে চলেছে। দুই দেশ নিজেদের জনগণের উন্নতির কথা চিন্তা না করে শুধু মারামারি করে চলেছে। সুযোগ পেলেই আনবিক বোমার কথা বলে। এক সময় আমেরিকা পাকিস্তানের ইসলামের নামে পাকিস্তানের জানি দোস্ত ছিল। সে পাকিস্তান এখন কথায় কথায় পাকিস্তানে ড্রোন বোমা হামলা চালায়। ওদিকে ভারত বগল দাবায়। ভারত এখন বিশ্ব শক্তি হওয়ার জন্যে দিওয়ানা হয়ে গেছে। আশে পাশের কাউকে আর পাত্তা দেয়না। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান মালদ্বীপ ও সিংহলতো মশামাছি। শুধু পথের কাঁটা হয়ে আছে চীন। চীনের সাথে আবার আমেরিকার গলায় গলায় ব্যবসা। ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন। একদিন আমেরিকানদের চীনারা বলতো কাগুজে বাঘ। সেই বাঘের সাথে এখন গলায় গলায় দোস্তি।
আমাদের দোস্ত কে তাতো দূরবীন লাগাইয়ও দেখা যাইতেনা। এখন আমাদের একমাত্র বন্ধূ ভারত। না বাইলেও বন্ধূ, চাইলেও বন্ধু।এত কাছাকাছি দুয়ারের মানুষ বন্দুত্ব না করিয়া উপায় কি? ৭১ সালে দেশটা কেন স্বাধীন কইরা দিছে্ তা এতদিনে খোলাশা হইতেছে। দিল্লীত কথা হইল পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতিসংঘের সদস্যপদ ও স্বাধীন সার্বভৌম কথাটাও তোমাদের দিলাম। মুসলমান হিসাবে তোমরা আর বেশী কি চাও? ৭১এ তো ইচ্ছা করলে দখল করে নিতে পারতাম। নি নাইতো। তয়, আমাগো ভালমানুষের দাম দিবানা? আমরাতো তোমাগো কইনাই পুরা বাংলা এক হয়ে যাও। আমাগো দিল্লীরসাপোর্ট না পাইলে তো তোমাগো অবস্থা কাশ্মীর আসাম মেঘালয় ফিলিস্তিনের অবস্থা হইতো। দিল্লীর দয়ার শরীর তাই তোমাদের সাথে কাশ্মীরের মতো ব্যবহার করে নাই।
হাজার বছর ধরেতো আমরা বাংগালী আছি। এ ব্যাপারে আমাদের বা আমাদের পূর্বপুরুষদের কোন সমস্যা দেখা দেয়নাই। ইদানিং আমাদের বাংগালী বানাইবার একটা মহা তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব বাংগালী মঞ্চ তেড়ী হয়েছে। বিশ্ব বাংগালী সম্মেলন হইতেছে। বাংলাদেশের ভিতরে যারা বংগালী হওয়ার জন্যে দিওয়ানা হয়ে গেছেন তারা ওইসব অনুস্ঠানে ফ্রি টিকেট পাইয়া হাজিরা দেন। সাধারনভাবে নিজেরা টিকেট করিয়া যাইতে পারেননা। বিনা পয়সায় টিকেট পাইয়া একটু যদি বাংগালী হন তাতে ক্ষতি কী? অনেকে আবার অদৃশ্য থলে থেকে টাকা পাইয়া বাংগালী হইবার জন্যে বই লিখিয়া ফেলিতেছেন। পুরাণো ইতিহাসের পাতা ঘাটিয়া ন্যনা তথ্য বাহির করিতেছেন। এইসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা হইল ৪৭ সালে ভারত ভাগ করিয়াছিল আমাদের বেকুব পূর্বপুরুষরা। হিন্দু মুসলমান দ্বিজাতি ত্বত্তের ভুয়া কাহিনী বানাইয়া দেশটা ভাগ করিয়া ফালাইছিল। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠিত হইলেও পাকিস্তানের দাবী উত্থাপিত হইয়াছে ১৯৪০ সালে। এই সময়ে মুসলমান নেতারা স্বাধীন ভারতের আন্দোলন করিয়াছেন। মুসলমানদের স্বার্থের কথা বলিয়াছেন। কিন্তু হিন্দু নেতারা কিছুতেই তা শুনিতে বা মানিতে রাজী হইলেননা। ফলে ভারত বিভাগের বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেল। কিন্তু ভুয়া ইতিহাস রচিত হইল, মুসলমানরা ভারত ভাগ করিয়াছে।
কিন্তু বাংলার মুসলমানরা কখনই বাংলাকে ভাগ করিতে চায়নাই। অখন্ড বাংলাকে এক রাখিয়া মুসলমানরা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিস্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা তা চান নাই। ১৯০৫ সালে হিন্ডু নেতারা যে ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন ১৯৪৭ সালে তার বিরুদ্ধে চলে গেলেন। শুধু বাংলাতে তাঁরা এ কান্ড করেন নাই। কাশ্মীর হায়দ্রবাদ গোয়া দমন দিউ, আসামকেও তারা স্বাধীন থেকতে দেন নাই। নানা ছুতা ধরে মুসলীম মেজরিটি এলাকা কাশ্মীরকে জোর করে দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৩ই সেপ্টম্বর সৈন্য পাঠিয়ে হায়দ্রাবাদ দখল করে নেয়। এমন মহাভারত নাকি সেকুলার এবং মহাগণতান্রিক। ৩০ কোটি অচ্যুত বা আধা মনুষ্যের কোন অধিকার নেই। ৩০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে সারা বছর দাংগা বাধিয়ে রেখেছে। এমন মহাভারত সম্পর্কে শৈলেশ কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, শুদু ১৯৯০ সালেই সম্প্রদায়িক দাংগায় ভারতে ৩৬০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভারতীয় দাংগার একটি বিরাট ইতিহাস রঞেছে। পরে তা নিয়ে একটা আলাদা নিবন্ধ বা রচনা তৈরী করা যাবে। আমাদের আজকের বিষয় হলো আমরা কি শুধুই বাংগালী না বাংগালী মুসলমান বা মুসলমান বাংগালী। আমার মনে হয় আমি যা ছিলাম তাই আছি। এক বিন্দুও পরিবর্তন হয়নি। আমার বায়া দলিলও ঠিক আছে। বাপদাদারাও ঠিক আছেন। আমরা ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশে বাস করি বলে আমরা বাংগালী। পাকিস্তানী বা হিন্দুস্তানীদের সাথে বনিবনা হয়না বলেই আমাদের আলাদা পরিচয় আলাদা রাস্ট্র। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আমরাতো ভারতের সাথে যোগ দিইনি। এ অঞ্চলের বাংগালী মুসলমামেরা বুঝতে পেরেছে তারা একটা আলাদা জাতি। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি দেখতে ও পড়তে এক হলে ভারতীয় বা পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের মতো নয়। এটা শত বছর ধরে সর্বজন বিদিত। ৪৬ সালের জুন মাসে বিবিসি জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন ভারতীয় হিন্দু আর মুসলমানে ফারাক কোথায়? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, খুব ছোট্ট ফারাক। ওরা গরু পূজা করে আর আমরা গরু খাই। মহা ভারতের বৃহত্তর স্বার্থে কংগ্রেস ও হিন্দু নেতারা যদি চাইতো তাহলে ভাগ হতোনা। কংগ্রেস নেতারা জোর করে ভারত বিভাগ চাপিয়ে দিয়েছে মুসলমানদের উপর। তখনও যদি বলতো আমরা ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান কনফেডারেশন মানি তাহলে ভারত ভাগ হয়না। কিন্তু তা মানেনি। মহাভারত কখনই একটি দেশ বা রাস্ট্র ছিলনা। অনেক ভাষার অনেক দেশ ছিল পাশাপাশি। শুধু মোগল আর ইংরেজরা ভারতকে একটি আধূনিক দেশে পরিণত করেছে। মোগল আমলে ভারত ছিল একটি কনফেডারেশন। দেশীয় বড় বড় রাজ্যগুলো ছিল স্বাধীন। শুধু কেন্দ্রের আনুগত্য স্বীকার করতে আর খাজনা দিতো। সে হিসাবে সুবাহ বাঙলাও ছিল একটা স্বাধীন সুবাহ। দিল্লীকে শুধু খাজনা দিতো।
১৮৮৫ সালে লর্ড হিউম কয়েকজন ভারতীয়কে নিয়ে দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্যে ভারতীয় কংগ্রেস গঠন করেন। মুসলমানরাও তার সাথে ছিল। কিন্তি কার্যত দেখা গেল ভারতীয় কংগ্রেস হিন্দুদের সংগঠণ। কংগ্রেস মনে করতো তারা ভারতবাসীর প্রতিনিধি। মুসলমামরা তা না মানার ফলেই শেষ পর্যন্ত ১৯০৬ সালে মুসলীম গঠিত হয়। শুরুতে কংগ্রেস মুসলীম লীগকে স্বীকৃতিই দিতে চায়নি। মহাজ্ঞানী আবু রায়হান মুহম্মদ বিন আহমদ আলবিরুনী তাঁর ভারত বিষয়ক আরবী ভাষায় লিখিত পুস্তকে বলেছে, ভারতীয় মনে করতো ভারতের বাইরে কোন দেশও নেই মানুষও নেই। ভারত বলতে তারা উত্তর ভারত মনে করতো। দক্ষিণে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো। ভারতীয় বিজ্ঞানকে যাদুমন্ত্র মনে করতো। এসব হলো মাত্র হাজার বছর আগের কথা। পন্ডিত ক্ষিতি মোহন সেন মনে করেন ভারতীয়দের কোন ধর্ম নেই। সম্মিলিত ভারতবাসীর সংস্কৃতিই হলো ধর্ম। ভারতীয়রা আনবিক বোমা বানালেও মনুসংহিতা মান্য করে। ৩০ কোটি মানুষকে অচ্যুত মনে করে। অপরাধের জন্যে পুড়িয়ে মারে। আধূনিক ভারত এসব মেনে নিয়েই সংবিধান রচনা করেছে। সেই সংবিধান এখনও জারী আছে। এখনও বলা হয়নি অচ্যুতরাও বাহ্মণদের মতো মানুষ। না, আরও হাজার বছরেও ভারত মনুসংহিতাকে ত্যাগ করতে পারবেনা। ফলে ভারত একটি খিংচুড়ী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ মানুষে ভদাভেদকে তারা এখনও কল্যাণকর মনে করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাছে ধর্মের নানারূপ। তাঁ ধর্মের মূলমন্ত্র হচ্ছে প্রেম। তিনি তেমন আচারে বিশ্বাস করতেননা। সনাতন হিন্দু আচার কোন ধর্ম নয় একথা বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু এই প্রচীনতাকে পরিহার করার ক্ষমতা করোই নেই।
ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতি ভারতকে উন্নত করেছে। ভারত বাইরের কাছে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সেই ইসলামকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হিন্দু নেতারা শর বছর ধরে উঠে লেঘেছে। মুসলমানরা এদেশে থেকেছে, এখানকার সাহিত্য সংস্কৃতি সংগীত ভাস্কর্য সবকিছুকে বিশ্বমানের করে দিয়েছে। হিন্দু ভারত এখনও ওইসব নিয়ে গৌরব বোধ করে।ড: তারাপদ তাঁর ‘গবেষণা পুস্তক ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব’ বিশেষ ভাবে তুলে ধরেছেন। মুসলমানরা পৃথিবীর যেখান থেকেই ভারতে এসেছেন তাঁরা আর ফিরে যাননি। তাঁরা এখানকার জনগনের সাথে মিশে যান। এখানকার সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস ও অর্থনীতিতে অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু ইংরেজরা শুধু এ দেশটাকে লুট করেছে ১৯০ বছর ধরে। ৪৭ সালে এ দেশ ত্যাগ কালে সাম্প্রদায়িক দাংগা বাঁধিয়ে দেশটাকে দুই ভাগ করে দিয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক দাংগায় লাখ লাখ লোক প্রান হারিয়েছেন। দাংগার বিষবাষ্প এখনও সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে। ভারতে নিয়মিত দাংগা হচ্ছে। বহু ভাষা ও বহু জাতির দেশ ভারত আজও মানুষের দেশ হতে পারেনি। গড়ে উঠেছে একটি মহা হিন্দুদেশ হিসাবে। দিল্লী শাসন করে ব্রাহ্মণরা। তাদের সমর্থন করে ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যরা। মুসলমান আর অচ্যুতরাতো মানুষইনা।
ভারতের বিদেশ নীতির কারণে একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে ভারতের ভাল সম্পর্ক নেই। ভারত কখনই নিজেকে হিন্দুদেশ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারেনি। এমন কি প্রতিবেশী হিন্দু বা বৌদ্ধদেশ গুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক ভাল নয়। পাকিস্তান আর বাংলাদেশের কথা না হয় বাদ দিলাম। এ দুটি মুসলমান দেশ। ৪৭ সালে বৃটিশদের উস্কানীতে কংগ্রেস হিন্দু মুসলমানের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করে দেয়। একথা আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানি যে ভারত পাকিস্তান ভাংগতে না চাইলে বাংলাদেশ অত সহজে অত তাড়াতাড়ি স্বাধীন হতে পারতোনা। পাকিস্তানকে ভেংগে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া ’ । ইন্দিরা গান্ধীর হিসানটা ছিল সহজ সরল। ৭১১ সালে মুসলমান জেনারেল প্রথম সিন্ধু জয় করে। ৭১১ সালেই মুসলমান জেনারেল স্পেন জয় করে। ভারতে ইতিহাস চর্চা শুরু করে সর্ব প্রথম মুসলমানেরা। একথা পন্ডিত জওহারলাল নিজেই স্বীকার করেছেন। এর আগে ভারতীয়রা ইতিহাস চর্চা জানতোনা। ভারতের ইতিহাসের বড় নির্মাতা হচ্ছে মুসলমানরা। এর আগে হাজার বছর ধরে ভারতীয়রা মীত বা কিসসা কাহিনী রচনা করেছে। ভারতীয়দের অনেকেই শ্রুতিধর হিসাবে পুরাণো দিনের কথা বলতো। ভারতীয়দের ইতিহাস মানে ধর্ম বলে প্রচারিত নানা কাহিনী। এসব তাদের কাছে পবিত্র বাণী। যে ভারত এখনও অচ্যুত ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে সে জাতি কতটুকু প্রগতিশীল তা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। কবিগুরু গান্ধীজী জওহারলাল কেউই অচ্যুত ব্যবস্থার বিরোধীতা করেননি। তারপরেও তাঁরা প্রগতিশীল মানবতাবাদী রয়ে গেছেন। ভারতের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড: অম্বেদকার অচ্যুত ব্যবস্থার প্রতিবাদ করে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। বাংলাদেশে অচ্যুত বিরোধী কোন প্রকার আন্দোলন এখনও হয়নি। সংবিধান সংশোধনী কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বাবু ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করছেন। তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন মেনন ইনু বড়ুয়া। ভোটের হিসাবে এদের কারো ৫শ’ ভোটও নেই। মইন ইউ আহমদের নির্বাচনে নৌকায় চড়ে এরা সবাই এখন নির্বাচন যুদ্ধের বীরবিক্রম। মুখে যা আসে তাই বলছেন। প্রধানমন্ত্রীকেও তাই বোঝাচ্ছেন। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শেখ হাসিনা সেকুলার হওয়ার জন্যে ইওয়ানা হয়ে গেছেন। ভারতও চায় তিনি সেকুলার হয়ে যান। ভারত চায় আশেপাশের সবদেশ সেকুলার থাকবে। শুধু ভারত নিজে রামলীলা করবে।
লেখাটা শুরু করেছিলাম, আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী? এই প্রশ্নের একটা উত্তর পাওয়ার জন্যে। ছোট্ট প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে পিছনের অনেক কথা বলতে হয়েছে। ভারতের ইতিহাস, ভারত ভাগের ইতিহাস, ইংরেজদের কূটচাল, দাংগার ইতিহাস বলতে হয়েছে। আমি জোর দিয়ে এখনও বলি মুসলমানরা ভারত ভাগ চায়নি। মুসলমানদের এক হাজার বছর শাসন কালে ভারতের কোথাও সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। যত দাংগা হয়েছে বৃটিশ শাসন আমলে। ভারতের দাংগার ইতিহাস জানার জন্যে পড়ুন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাংগার ইতিহাস। এ যাবত যে ইতিহাস লেখা হয়েছে তা রচিত হয়েছে গোস্ঠিস্বার্থে। এখনও তাই লেখা হচ্ছে। এক শ্রেণীর বেতনভুক লেখক বুদ্ধিজীবীর কলম নিয়মিত বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। এদের সাথে যোগ দিয়েছে ভারতের এক শ্রেণীর হিন্দু বুদ্ধিজীবী। কাগজে কলমে এরা যোলয়ানা ভারতীয় বা ইন্ডিয়ান। ৪৭ সালে এরা চাইলে সুবাহ বাংলা আলাদা একটা স্বাধীন দেশ হতে পারতো। এরা কিন্তু তা চায়নি। এরা বংলাকে ভাগকরে অর্ধেক ভারতকে দিয়েছে, আরেকভাগ দিয়েছে পাকিস্তানকে। এখন তারাই আবার বাংগালী হওয়ার জন্যে উঠেপড়ে লেঘেছে। ৭১ এ পাকিস্তানকে বিদায় করে আমরা একটা স্বাধীন দেশ প্রতিস্ঠা করেছি। এখন ভাঁড়াটিয়া লেখক বুদ্ধিজীবীরা কোমর বেঁধে নেমেছে আমাদের বাংগালী বানাবার জন্যে। আরে বাপু, আমরাতো বাংগালী আছিই, একেবারে শক্তভাবে আছি। আমরা বাংগালী মুসলমান বলেই পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে পেরেছি। কই? তোমরা বিশ্ব বাংগালী, ভারতীয় বাংগালীরতো তা পারোনি। বরং আমাদের উসকাচ্ছো বাংগালী হওয়ার জন্যে। আমাদের চারিদিকে ভারতীয় সিমান্ত। একদিকে খোলা, তাহলো বঙোপসাগর। ভারতের বহু রাজ্য আছে যাদের বের হবার রাস্তা নেই। তাই এখন বাংলাদেশকে বুকের ভিতর টেনে নেয়ার যত বাহানা। এখন বাংলাদেশের সবকিছুই ভারতের লাগবে। রাস্তা দিতে হবে, বন্দর দিতে হবে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে সেনা লরী চলতে দিতে হবে। দেওয়া নেওয়ার এখনি সময়। ৪০ বছর অপেক্ষ করতে হয়েছে। পাকিস্তানকে ভাংতে হয়েছে। এত সব কেন করেছি? তোমাদের বন্দর পাওয়ার জন্যে। উলফাকে দমন করার জন্যে।
আমাদের রাস্ট্র আছে, তাই আমাদের নিজস্ব নাগরিকত্ব আছে। আমরা জাতিসংঘের সদস্য। আমাদের জাতীয় সংগীত আছে। আমরা সার্বভৌম। আমরা ভারতীয় বা বৃটিশ বাংগালী নই। আমরা বাংলাদেশের বাংগালী। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। ( ৯ই সেপ্টম্বর, ২০১১। নয়া দিগন্ত )
লেখক: কবি ও সাংবাদিক