Feeds:
Posts
Comments

Archive for August, 2011


বিষয়টা  খুবই পুরাণো এবং বহুল আলোচিত। আমি মনে করি, বিষয়টা নিয়ে তর্ক বা বিতর্কের কোন প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করিনা। আমরা বাংগালী বাংগাল গৌড়ীয় গংগারিড্ডীয় এসব হাজার বছর ধরে আমাদের পরিচয় ছিল। এসবতো ইতিহাসের অংশ। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত বা বিরোধ নেই। বিদেশী সেন বা মুসলমান যারা এ দেশটা শাসন করেছেন তারাই দেশের নাম দিয়েছেন বাংগাল বা বাংগালী। ইংরেজরা দেশ দখল করার পরও দেশের নাম বাংগালাহ রেখে দেন।পরে উচ্চারণ করা হতো বেংগল। ৪৭এর ভাগের পর অর্ধেকের নাম ওয়েস্ট বেংগল আর পাকিস্তানের অংশে যেটুকু পড়েছে তার নাম হলো পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান। মুসলীম মেজরিটি থাকার কারণেই এই অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পুরো বাংলা বা বংগদেশ ধরলেও এই এলাকায় মুসলীম মেজরিটি ছিল। এখনও পশ্চিম বাংলায় ৩০ ভাগ অধিবাসী মুসলমান।

পাঠক সমাজের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৩৭ থেকে ৪৬ সাল পর্যন্ত নিখিল বংগের তিনজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্যার খাজা নাজিম উদ্দিন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বংগীয় পরিষদের স্পীকারও ছিলেন মুসলমান। বিষয়টা নিয়ে এর আগে বহুবার লিখেছি শুধুমাত্র পাঠক সমাজের স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখার জন্যে।বাংগালী  মুসলমানরা বাংলা ভাগ কখনই চায়নি। কংগ্রেস নেতারাই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বাংলা ভাগ করেছে। কংগ্রেস নেতারা বিরোধিতা না করলে নিখিল বংগ ৪৭ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিস্ঠিত হতো।বাংগালীদের জন্যে একটি স্বাধীন রাস্ট্র কেন তাঁরা চাননি সে রহস্য জানা দরকার। এই নিবন্ধ বা প্রবন্ধ যখন লিখছি তখন বাংলাদেশের ৪০ বছর পুর্তি হয়ে গেছে। স্বাধীন ভারত আর পাকিস্তানের ৬৫ বছর পার হতে চলেছে। দুই দেশ নিজেদের জনগণের উন্নতির কথা চিন্তা না করে শুধু মারামারি করে চলেছে। সুযোগ পেলেই আনবিক বোমার কথা বলে। এক সময় আমেরিকা পাকিস্তানের ইসলামের নামে পাকিস্তানের জানি দোস্ত ছিল। সে পাকিস্তান এখন কথায় কথায় পাকিস্তানে ড্রোন বোমা হামলা চালায়। ওদিকে ভারত বগল দাবায়। ভারত এখন বিশ্ব শক্তি হওয়ার জন্যে দিওয়ানা হয়ে গেছে। আশে পাশের কাউকে আর পাত্তা দেয়না। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান মালদ্বীপ ও সিংহলতো মশামাছি। শুধু পথের কাঁটা হয়ে আছে চীন। চীনের সাথে আবার আমেরিকার গলায় গলায় ব্যবসা। ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন। একদিন আমেরিকানদের চীনারা বলতো কাগুজে বাঘ। সেই বাঘের সাথে এখন গলায় গলায় দোস্তি।

আমাদের দোস্ত কে তাতো  দূরবীন লাগাইয়ও দেখা যাইতেনা। এখন আমাদের একমাত্র বন্ধূ ভারত। না বাইলেও বন্ধূ, চাইলেও বন্ধু।এত কাছাকাছি দুয়ারের মানুষ বন্দুত্ব না করিয়া উপায় কি? ৭১ সালে দেশটা কেন স্বাধীন কইরা দিছে্ তা এতদিনে খোলাশা হইতেছে। দিল্লীত কথা হইল পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতিসংঘের সদস্যপদ ও স্বাধীন সার্বভৌম কথাটাও তোমাদের দিলাম। মুসলমান হিসাবে তোমরা আর বেশী কি চাও? ৭১এ তো ইচ্ছা করলে দখল করে নিতে পারতাম। নি নাইতো। তয়, আমাগো ভালমানুষের দাম দিবানা? আমরাতো তোমাগো কইনাই পুরা বাংলা এক হয়ে যাও। আমাগো দিল্লীরসাপোর্ট না পাইলে তো তোমাগো অবস্থা কাশ্মীর আসাম মেঘালয় ফিলিস্তিনের অবস্থা হইতো। দিল্লীর দয়ার শরীর তাই তোমাদের সাথে কাশ্মীরের মতো ব্যবহার করে নাই।

হাজার বছর ধরেতো আমরা বাংগালী আছি। এ ব্যাপারে আমাদের বা আমাদের পূর্বপুরুষদের কোন সমস্যা দেখা দেয়নাই। ইদানিং আমাদের বাংগালী বানাইবার একটা মহা  তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব বাংগালী মঞ্চ তেড়ী হয়েছে। বিশ্ব বাংগালী সম্মেলন হইতেছে। বাংলাদেশের ভিতরে যারা বংগালী হওয়ার জন্যে দিওয়ানা হয়ে গেছেন তারা ওইসব অনুস্ঠানে ফ্রি টিকেট পাইয়া হাজিরা দেন। সাধারনভাবে নিজেরা টিকেট করিয়া যাইতে পারেননা। বিনা পয়সায় টিকেট পাইয়া একটু যদি বাংগালী হন তাতে ক্ষতি কী? অনেকে আবার অদৃশ্য  থলে থেকে টাকা পাইয়া  বাংগালী হইবার জন্যে বই লিখিয়া ফেলিতেছেন। পুরাণো ইতিহাসের পাতা ঘাটিয়া ন্যনা তথ্য বাহির করিতেছেন। এইসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা হইল ৪৭ সালে ভারত ভাগ করিয়াছিল আমাদের বেকুব পূর্বপুরুষরা। হিন্দু মুসলমান দ্বিজাতি ত্বত্তের ভুয়া কাহিনী বানাইয়া দেশটা ভাগ করিয়া ফালাইছিল। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠিত হইলেও পাকিস্তানের দাবী উত্থাপিত হইয়াছে ১৯৪০ সালে। এই সময়ে মুসলমান নেতারা স্বাধীন ভারতের আন্দোলন করিয়াছেন। মুসলমানদের স্বার্থের কথা বলিয়াছেন। কিন্তু হিন্দু নেতারা কিছুতেই তা শুনিতে বা মানিতে রাজী হইলেননা। ফলে ভারত বিভাগের বিষয়টা পরিস্কার হয়ে  গেল। কিন্তু ভুয়া ইতিহাস রচিত হইল, মুসলমানরা ভারত ভাগ করিয়াছে।

কিন্তু বাংলার মুসলমানরা কখনই বাংলাকে ভাগ করিতে চায়নাই। অখন্ড বাংলাকে এক রাখিয়া মুসলমানরা  স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিস্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা তা চান নাই। ১৯০৫ সালে হিন্ডু নেতারা যে ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন ১৯৪৭ সালে তার বিরুদ্ধে চলে গেলেন। শুধু বাংলাতে তাঁরা এ কান্ড করেন নাই। কাশ্মীর হায়দ্রবাদ গোয়া দমন দিউ, আসামকেও তারা স্বাধীন থেকতে দেন নাই। নানা ছুতা ধরে মুসলীম মেজরিটি এলাকা কাশ্মীরকে জোর করে দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৩ই সেপ্টম্বর সৈন্য পাঠিয়ে  হায়দ্রাবাদ দখল করে নেয়।  এমন মহাভারত নাকি সেকুলার এবং মহাগণতান্রিক। ৩০ কোটি অচ্যুত বা  আধা মনুষ্যের কোন অধিকার নেই। ৩০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে সারা বছর দাংগা বাধিয়ে রেখেছে। এমন মহাভারত সম্পর্কে শৈলেশ কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, শুদু ১৯৯০ সালেই সম্প্রদায়িক দাংগায় ভারতে ৩৬০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভারতীয় দাংগার একটি বিরাট ইতিহাস রঞেছে। পরে তা নিয়ে একটা আলাদা নিবন্ধ বা রচনা তৈরী করা যাবে। আমাদের আজকের বিষয় হলো আমরা কি শুধুই বাংগালী না বাংগালী মুসলমান বা মুসলমান বাংগালী। আমার মনে হয় আমি যা ছিলাম তাই আছি। এক বিন্দুও পরিবর্তন হয়নি। আমার বায়া দলিলও ঠিক আছে। বাপদাদারাও ঠিক আছেন। আমরা ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশে বাস করি বলে আমরা বাংগালী। পাকিস্তানী বা হিন্দুস্তানীদের সাথে  বনিবনা হয়না বলেই আমাদের আলাদা পরিচয় আলাদা রাস্ট্র। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আমরাতো ভারতের সাথে যোগ দিইনি। এ অঞ্চলের  বাংগালী মুসলমামেরা বুঝতে পেরেছে তারা একটা আলাদা জাতি। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি দেখতে ও পড়তে এক হলে ভারতীয় বা পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের মতো নয়। এটা শত বছর ধরে সর্বজন বিদিত।  ৪৬ সালের জুন মাসে বিবিসি জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন ভারতীয় হিন্দু আর মুসলমানে ফারাক কোথায়? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, খুব ছোট্ট ফারাক। ওরা গরু পূজা করে আর আমরা গরু খাই। মহা ভারতের বৃহত্তর স্বার্থে কংগ্রেস ও হিন্দু নেতারা যদি চাইতো তাহলে ভাগ হতোনা। কংগ্রেস নেতারা জোর করে ভারত বিভাগ চাপিয়ে দিয়েছে মুসলমানদের উপর। তখনও যদি বলতো আমরা  ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান কনফেডারেশন মানি তাহলে  ভারত ভাগ হয়না। কিন্তু তা মানেনি। মহাভারত কখনই একটি দেশ বা রাস্ট্র ছিলনা। অনেক ভাষার অনেক দেশ ছিল পাশাপাশি। শুধু মোগল আর ইংরেজরা ভারতকে একটি আধূনিক দেশে পরিণত করেছে। মোগল আমলে ভারত ছিল একটি কনফেডারেশন। দেশীয় বড় বড় রাজ্যগুলো ছিল স্বাধীন। শুধু কেন্দ্রের আনুগত্য স্বীকার করতে আর খাজনা দিতো। সে হিসাবে সুবাহ বাঙলাও ছিল একটা স্বাধীন সুবাহ। দিল্লীকে শুধু খাজনা দিতো।

১৮৮৫ সালে লর্ড হিউম কয়েকজন ভারতীয়কে নিয়ে দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্যে ভারতীয় কংগ্রেস গঠন করেন। মুসলমানরাও তার সাথে ছিল। কিন্তি কার্যত দেখা গেল ভারতীয় কংগ্রেস হিন্দুদের সংগঠণ। কংগ্রেস মনে করতো তারা ভারতবাসীর প্রতিনিধি। মুসলমামরা তা না মানার ফলেই শেষ পর্যন্ত ১৯০৬ সালে মুসলীম গঠিত হয়। শুরুতে কংগ্রেস মুসলীম লীগকে স্বীকৃতিই দিতে চায়নি। মহাজ্ঞানী  আবু রায়হান মুহম্মদ বিন আহমদ আলবিরুনী  তাঁর ভারত বিষয়ক আরবী ভাষায় লিখিত পুস্তকে বলেছে, ভারতীয় মনে করতো ভারতের বাইরে কোন দেশও নেই মানুষও নেই। ভারত বলতে তারা উত্তর ভারত মনে করতো। দক্ষিণে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো। ভারতীয় বিজ্ঞানকে যাদুমন্ত্র মনে করতো। এসব হলো মাত্র  হাজার বছর আগের কথা। পন্ডিত ক্ষিতি মোহন সেন মনে করেন ভারতীয়দের কোন ধর্ম নেই। সম্মিলিত ভারতবাসীর সংস্কৃতিই হলো ধর্ম। ভারতীয়রা আনবিক বোমা বানালেও মনুসংহিতা মান্য করে। ৩০ কোটি মানুষকে অচ্যুত মনে করে। অপরাধের জন্যে পুড়িয়ে মারে। আধূনিক ভারত এসব মেনে নিয়েই সংবিধান রচনা করেছে। সেই সংবিধান এখনও জারী আছে। এখনও বলা হয়নি অচ্যুতরাও বাহ্মণদের মতো মানুষ। না, আরও হাজার বছরেও ভারত মনুসংহিতাকে ত্যাগ করতে পারবেনা। ফলে ভারত একটি খিংচুড়ী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ মানুষে ভদাভেদকে তারা এখনও কল্যাণকর মনে করে।  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাছে ধর্মের নানারূপ। তাঁ ধর্মের মূলমন্ত্র হচ্ছে প্রেম। তিনি তেমন আচারে বিশ্বাস করতেননা। সনাতন  হিন্দু আচার কোন ধর্ম নয় একথা বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু এই প্রচীনতাকে পরিহার করার ক্ষমতা করোই নেই।

ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতি ভারতকে উন্নত করেছে। ভারত বাইরের কাছে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সেই ইসলামকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হিন্দু নেতারা শর বছর ধরে উঠে লেঘেছে। মুসলমানরা এদেশে থেকেছে, এখানকার  সাহিত্য সংস্কৃতি সংগীত ভাস্কর্য সবকিছুকে বিশ্বমানের করে দিয়েছে। হিন্দু ভারত এখনও  ওইসব নিয়ে গৌরব  বোধ করে।ড: তারাপদ তাঁর ‘গবেষণা পুস্তক ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব’ বিশেষ ভাবে তুলে ধরেছেন। মুসলমানরা পৃথিবীর যেখান থেকেই ভারতে এসেছেন তাঁরা আর ফিরে যাননি। তাঁরা এখানকার জনগনের সাথে মিশে যান। এখানকার সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস ও অর্থনীতিতে অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু ইংরেজরা শুধু এ দেশটাকে লুট করেছে ১৯০ বছর ধরে। ৪৭ সালে এ দেশ ত্যাগ কালে সাম্প্রদায়িক দাংগা বাঁধিয়ে দেশটাকে দুই ভাগ করে দিয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক দাংগায় লাখ লাখ লোক প্রান হারিয়েছেন। দাংগার বিষবাষ্প এখনও সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে। ভারতে নিয়মিত দাংগা হচ্ছে। বহু ভাষা ও বহু জাতির  দেশ ভারত আজও মানুষের দেশ হতে পারেনি। গড়ে উঠেছে একটি মহা হিন্দুদেশ হিসাবে। দিল্লী শাসন করে ব্রাহ্মণরা। তাদের  সমর্থন করে ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যরা। মুসলমান আর অচ্যুতরাতো মানুষইনা।

ভারতের বিদেশ নীতির কারণে একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে ভারতের  ভাল সম্পর্ক নেই। ভারত কখনই নিজেকে হিন্দুদেশ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারেনি। এমন কি প্রতিবেশী হিন্দু বা বৌদ্ধদেশ গুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক ভাল নয়। পাকিস্তান আর বাংলাদেশের কথা না হয় বাদ দিলাম। এ দুটি মুসলমান দেশ। ৪৭ সালে বৃটিশদের উস্কানীতে কংগ্রেস হিন্দু মুসলমানের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করে দেয়। একথা আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানি যে ভারত পাকিস্তান ভাংগতে না চাইলে বাংলাদেশ অত সহজে অত তাড়াতাড়ি স্বাধীন হতে পারতোনা। পাকিস্তানকে ভেংগে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া  ’ । ইন্দিরা গান্ধীর হিসানটা ছিল সহজ সরল। ৭১১ সালে মুসলমান জেনারেল প্রথম সিন্ধু জয় করে। ৭১১ সালেই  মুসলমান জেনারেল স্পেন জয় করে। ভারতে ইতিহাস চর্চা শুরু করে সর্ব প্রথম মুসলমানেরা। একথা পন্ডিত জওহারলাল নিজেই স্বীকার করেছেন। এর আগে ভারতীয়রা ইতিহাস চর্চা জানতোনা। ভারতের ইতিহাসের বড় নির্মাতা হচ্ছে মুসলমানরা। এর আগে হাজার বছর ধরে  ভারতীয়রা মীত বা কিসসা কাহিনী রচনা করেছে।  ভারতীয়দের অনেকেই শ্রুতিধর হিসাবে পুরাণো দিনের কথা বলতো। ভারতীয়দের ইতিহাস মানে ধর্ম বলে প্রচারিত নানা কাহিনী। এসব তাদের কাছে পবিত্র বাণী। যে ভারত এখনও অচ্যুত ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে সে জাতি কতটুকু প্রগতিশীল তা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। কবিগুরু গান্ধীজী জওহারলাল কেউই  অচ্যুত ব্যবস্থার বিরোধীতা করেননি। তারপরেও তাঁরা প্রগতিশীল মানবতাবাদী রয়ে গেছেন। ভারতের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড: অম্বেদকার অচ্যুত ব্যবস্থার প্রতিবাদ করে  হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। বাংলাদেশে অচ্যুত বিরোধী কোন প্রকার আন্দোলন এখনও হয়নি। সংবিধান সংশোধনী কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বাবু ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করছেন। তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন মেনন ইনু বড়ুয়া। ভোটের হিসাবে এদের  কারো ৫শ’ ভোটও নেই। মইন ইউ আহমদের নির্বাচনে নৌকায় চড়ে এরা সবাই এখন নির্বাচন যুদ্ধের বীরবিক্রম। মুখে যা আসে তাই বলছেন। প্রধানমন্ত্রীকেও তাই বোঝাচ্ছেন। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শেখ হাসিনা সেকুলার হওয়ার জন্যে ইওয়ানা হয়ে গেছেন। ভারতও চায় তিনি সেকুলার হয়ে যান।  ভারত চায় আশেপাশের সবদেশ সেকুলার থাকবে। শুধু ভারত নিজে রামলীলা করবে।

লেখাটা শুরু করেছিলাম, আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী? এই প্রশ্নের একটা উত্তর পাওয়ার জন্যে। ছোট্ট প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে পিছনের অনেক কথা বলতে হয়েছে। ভারতের ইতিহাস, ভারত ভাগের ইতিহাস, ইংরেজদের কূটচাল, দাংগার ইতিহাস বলতে হয়েছে। আমি জোর দিয়ে এখনও বলি মুসলমানরা ভারত ভাগ চায়নি। মুসলমানদের এক হাজার বছর শাসন কালে ভারতের কোথাও সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। যত দাংগা হয়েছে বৃটিশ শাসন আমলে। ভারতের দাংগার ইতিহাস জানার জন্যে পড়ুন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাংগার ইতিহাস। এ যাবত যে ইতিহাস লেখা হয়েছে তা রচিত হয়েছে গোস্ঠিস্বার্থে। এখনও তাই লেখা হচ্ছে। এক শ্রেণীর  বেতনভুক লেখক বুদ্ধিজীবীর কলম নিয়মিত বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। এদের সাথে যোগ দিয়েছে ভারতের এক শ্রেণীর  হিন্দু বুদ্ধিজীবী। কাগজে কলমে এরা যোলয়ানা ভারতীয় বা ইন্ডিয়ান। ৪৭ সালে এরা চাইলে  সুবাহ বাংলা আলাদা একটা স্বাধীন দেশ হতে পারতো। এরা কিন্তু তা চায়নি। এরা বংলাকে ভাগকরে অর্ধেক ভারতকে দিয়েছে, আরেকভাগ দিয়েছে পাকিস্তানকে। এখন তারাই আবার  বাংগালী হওয়ার জন্যে উঠেপড়ে লেঘেছে। ৭১ এ পাকিস্তানকে বিদায় করে আমরা একটা স্বাধীন দেশ প্রতিস্ঠা করেছি। এখন ভাঁড়াটিয়া লেখক বুদ্ধিজীবীরা কোমর বেঁধে নেমেছে আমাদের বাংগালী বানাবার জন্যে। আরে বাপু, আমরাতো বাংগালী আছিই, একেবারে শক্তভাবে আছি। আমরা বাংগালী মুসলমান বলেই পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে পেরেছি। কই? তোমরা বিশ্ব বাংগালী, ভারতীয় বাংগালীরতো তা পারোনি। বরং আমাদের উসকাচ্ছো বাংগালী হওয়ার জন্যে।  আমাদের চারিদিকে ভারতীয় সিমান্ত। একদিকে খোলা, তাহলো বঙোপসাগর। ভারতের বহু রাজ্য আছে যাদের বের হবার রাস্তা নেই। তাই এখন  বাংলাদেশকে বুকের ভিতর টেনে নেয়ার যত বাহানা। এখন বাংলাদেশের সবকিছুই ভারতের লাগবে। রাস্তা দিতে হবে, বন্দর দিতে হবে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে সেনা লরী চলতে দিতে হবে। দেওয়া নেওয়ার এখনি সময়। ৪০ বছর অপেক্ষ করতে হয়েছে। পাকিস্তানকে ভাংতে হয়েছে। এত সব কেন করেছি? তোমাদের বন্দর পাওয়ার জন্যে। উলফাকে দমন করার জন্যে।

আমাদের রাস্ট্র আছে, তাই আমাদের নিজস্ব নাগরিকত্ব আছে। আমরা জাতিসংঘের সদস্য। আমাদের জাতীয় সংগীত আছে। আমরা সার্বভৌম। আমরা ভারতীয় বা বৃটিশ বাংগালী নই। আমরা বাংলাদেশের বাংগালী। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। ( ৯ই সেপ্টম্বর, ২০১১। নয়া দিগন্ত )

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


ক’দিন আগে ১২ই আগস্ট বিটিভির এক টকশো দেখছিলাম বা শুনছিলাম। আলোচক ছিলেন  বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী ডা: দীপুমনি, সাংবাদিক আবেদ খান ও সাংস্কেতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। আলোচনা বিষয় ছিল বংগবন্ধু জীবিত  থাকলে কি হতো আর না থাকার ফলে কি হয়েছে। এই তিন জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে ডা: দীপুমনির নাম শুনেছি অতি সম্প্রতি। বাকি দুজনকে আমরা অনেকদিন থেকে জানি। লোহানী ভাই আমার মুরুব্বী। সাংবাদিকতার পেশায় আমার সিনিয়ার। বেশ কয়েক যুগ আমরা একই চিন্তাধারাকে লালন করতাম। সে হিসবে সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিস্ট। প্রায় দেখাশুনা হতো। তিনি আমার বাসায় আসতেন, আমিও তাঁর বাসায় যেতাম। এখন তাঁর সাথে তেমন দেখা হয়না। সম্প্রতি বিখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান ও পূর্বদেশ সম্পাদক মাহবুবুল হক সাহেবের স্মৃতি সভায় তাঁর সাথে দেখা হয়েছে। আমরা দুজনই এক সময় পূর্বদেশে কাজ করেছি। এক সময়ে  লোহানী ভাই ছিলেন মাওলানা ভাসানীর ভক্ত। এখন তিনি আওয়ামী ঘরানার লোক হিসাবে পরিচিত। বিএনপিতে ন্যাপের মার্জারের ফলে বিএনপির নেতাদের সাথেও তাঁর সম্পর্ক ছিল, হয়ত বা এখনও আছে। জিয়ার আমলেও তিনি সরকারী সংস্থায় কাজ করেছেন। লোকমুখে শুনি লোহানী ভাই এখন যোলয়ানা আওয়ামী ঘরানার লোক।

আবেদ খানও এক সময় বামপন্থি ঘরাণার লোক ছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি আওয়ামী ঘরাণার লোক বলে পরিচিত। তাঁ পুরো পরিবারের সাথে এক সময় আমার জানা শোনা ছিল। পেশায় কিছুটা জুনিয়ার বলে আমি তাকে তুমি করে বলতাম । এ ছাড়া তার ভাই মন্টু খানও আমার বন্ধু ছিলেন। তিনিও বামপন্থী হিসাবে জীবনে অনেক কস্ট করেছেন। খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। শুনেছি, দীপুমনি সাহেবা জীবনের সকল পর্যায়েই সিপিবি ঘরাণার মানুষ। তাঁর মরহুম পিতা এক সময়ে ইত্তেফাকে চাকুরী করতেন রাজনৈতিক কারনে। তিনি ছাত্রলীগের একজন ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। শুনেছি ডা: দীপুমনির নামের কারণে এক সময়ে নতুন জেনারেশনের সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন তিনি হিন্দু না মুসলমান। তিনি মুসকি হেসে তাঁর উত্তর দিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী নাকি ভারতীয় দূতাবাসের আইন উপদেস্টা। পাঠকের সুবিধার জন্যে তিনজনের পরিচিতিটা তুলে ধরলাম। এদের পূর্ব পুরুষরা সবাই ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

বিটিভির টকশো’র বিষয়ে ফিরে আসি। এখন শোকের মাস চলছে। তাই ওই আলোচনার আয়োজন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে শোক পালন অবশ্য কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। সরকার শোক পালনকে বাধ্যতামূলক করেছেন। তাই এখন সারা দেশেই অফিসিয়াল শোকের মাতম। তারই অংশ হিসাবে সকল টিভি চ্যানেল ও কাগজে বংবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা চলছে। স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো পতাকা উড়েছে। আলোচনা সভা হয়েছে। সব খবর কাগজে প্রচারিত হয়েছে। এসব ছিল রাস্ট্রের নির্দেশে বাধ্যতামুলক। বংগবন্ধু আমাদের দেশের একজন বড় মাপের নেতা। পাকিস্তান পার্লামেন্টের জন্য নির্বাচিত মেজরিটি পার্টি হিসাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। বংগবন্ধু সেই দলের প্রধান হিসবে তিনিই ছিলেন মুজিব নগর সরকারের প্রধান। এ কারনে বংগবন্ধুকে সবাই সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করলে আমি মনে করি এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। সমস্যা হলো, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ঘরানার লোকদের নিয়ে। তাঁরা বংগবন্ধুকে অতি মানব বা দেবতার আসন দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। মুসলমান অধ্যুষিত পূর্ব বাংলা বা পূর্ব বংগ সব সময়েই হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিম বাংলা থেকে আলাদা। পুর্ব বাংলা কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে কৃষকরাই প্রধান অধিবাসী। হিন্দু জমিদার দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত। ইংরেজ আমলে হিন্দুরা ছিল শাসকদের ভাই। তারাই ইংরেজদের আনুকুল্য পেয়েছে। ফলে পূর্ব বাংলা  সকল দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। টকশোতে অংশ গ্রহণকারী তিনজনই দরাজদিলে বলতে চাইলেন, বংগবন্ধু হাজার বছেরের বাংগালী ,তিনি আমাদের বাংগালী বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছে যারা বাংগালী বিরোধী তারা। ৭৫এর আগস্টে তিনি নিহত না হলে এতদিনে আমরা যোলয়ানা বাংগালী হিসাবে বিশ্ব দরবারে স্থান লাভ করতে পারতাম। কিন্তু তা হয়নি,কারণ তিনি আমাদের মাঝে নেই। আলোচকদের বক্তব্য ছিল ৭৫ এর পরে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছে যারা বাংগালীয়ানার বিরুদ্ধে। ভারতীয় পশ্চিম বাংলার অধিবাসীরা ৪৭ সালে একটি স্বাধীন অখন্ড বংগদেশ বা বাংলাদেশ প্রতিস্ঠা করতে চাননি। অখন্ড স্বাধীন বংগদেশ প্রতিস্ঠায় বাধ সেধেছেন কংগ্রেস নেতারা, বিশেষ করে জওহরলাল নেহেরু। ফলে মুসলিম মেজরিটি এলাকা পাকিস্তানে চলে আসে। ফলে অর্ধেক বাংলা ভারতে থেকে যায়। ১৯০৫ সালেইতো পূর্ববাংলাকে আলাদা করে একটি প্রদেশ গঠণ করা হয়েছিল প্রশাসনিক কারণে।  হিন্দু নেতারা তা মানেননি।অখন্ড বংগদেশ রাখার জন্যে তারা  দাংগা হাংগামা বাধিয়ে দিলেন। ফলে ১৯১১ সালে পূর্ববংগ প্রদেশ আইন বাতিল হয়ে যায়। আবার ১৯৪৭ সালে হিন্দু নেতারা স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ চায়নি। কারন অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানরা মেজরিটি হয়ে যায়। ১৯৩৭ থেকে ৪৭ এর আগস্ট পর্যন্ত অখন্ড বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল মুসলমানরা।

একথা সত্যি যে পাকিস্তানের অংশ হয়েও  পূর্ব পাকিস্তান তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি। মেজরিটি হয়েও মেজরিটির মর্যাদা পায়নি। ফলে পুর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে হতাশা ও বেদনা তৈরী হয়। সেই থেকেই ৪৮ – ৫২র ভাষা আন্দোলন, ৫৪র নির্বাচন, ৬৯ এর গণ আন্দোলন বা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বেশীর ভাগ দল নির্বাচন বয়কট করে। মাওলানা ভাসানী বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের ধারণা ছিল নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতা হাতে নিতে পারবে। যা পাকিস্তানের  সামরিক শাসকরা কখনই চায়নি। ফলে জটিলতা তৈরী হয়।৭১ সালের মার্চে গণ আন্দোলন অব্যাহত থাকার সময়ে বংগবন্ধু ও জেনারেল ইয়াহিয়া সমঝোতার জন্যে আলোচনা চালিয়ে যান। যদিও সেই আলোচনার সর্ব পরিস্থিতি কি ছিল তা  দেশবাসী জানেনা। ২৫শে মার্চ  রাতে সমারিক বাহিনী নিরস্ত্র জনগণের উপর আক্রমন করবে তা বংবন্ধু জানতেন। তাই তিনি নেতাদের আত্মগোপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কোথাও যাননি। নিজ বাস ভবনে অপেক্ষা করছিলেন সামরিক বাহিনীর আগমনের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। মহা সত্য হলো বংবন্ধু অখন্ড পাকিস্তানের কাঠামোর ভিতর একটা সমঝোতা চেয়েছিলেন। শুনেছি সেই সমঝোতা হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর একটি গ্রুপ ভুট্টোর উসকানীতে আক্রমন চালিয়েছিল।

বংগবন্ধু সারাজীবনই একজন মুসলীম নেতা ছিলেন। তিনি নিজেকে বাংগালী বলে দাবী করলেও তিনি কখনই মুসলমান হিসাবে নিজের অবস্থান ত্যাগ করেননি। ৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুস্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও। তিনি নিজেকে মুসলমান দেশের নেতা হিসাবে ঘোষনা করেছিলেন। তাঁর আমলেই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করেছিল। মুসলীম লীগের কর্মী হিসাবেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক শুরু করেছিলেন। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামি মুসলীম লীগ গঠিত হলে তিনি  নতুন দলের যুগ্ম ষম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।এক সময় তিনি নতুন দলের সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন। বংবন্ধুর সারা জীবনের বক্তৃতা ও বিবৃতি গুলোকে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে তিনি কখনই মুসলীম স্বার্থের বিরোধিতা করেননি। এখন  বংগবন্ধুর  কিছু ভক্ত বা সমর্থক নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে যোলয়ানা বাংগালী ও সেকুলার বানাবার চেস্টা করছে। এসব করে তাঁরা দেশবাসীর কাছে বংগবন্ধুর ভাবমুর্তি বা ইমেজ ধ্বংস করার চেস্টা করছে। এরা আসলেই  আওয়ামী ঘরাণার লোক নয়। এরা আওয়ামীর ঘাড়ে চেপে বসেছে এবং অদৃশ্য প্রভুর ইংগিতে কাজ করছে। এরা কেউ ধর্ম মানেনা। সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সমাজে এদের কোন সমর্থক বা ভোটার নেই। আওয়ামী লীগের হারা জিতার সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। এইতো আর কিছুদিন পরেই এরা  ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া শুরু করবে।

সোজা কথায় বলা যায় বংগবন্ধু কখনই ধর্মহীন সেকুলার ছিলেননা। তাঁর পূর্ব পুরুষ কেউই তেমন ছিলেননা। তার বাবা মরহুম শেখ লুতফুর রহমানকে আমি দেখেছি। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আজ  যারা তাঁকে যোলয়ানা সেকুলার বাংগালী বানাবার চেস্টা করছে তারা কেউই আওয়ামী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনা। তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের কাজে নিয়োজিত। তাঁরা জেনে শুনেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বংবন্ধুর ভাবমুর্তি ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয়েছে। বিদেশী প্রভুদের ইংগিতে এরা আওয়ামী লীগকেও বিপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমানের একটি বই  এ সময়ে আমার হাতে এসেছে। বইটির নাম বাংলাদেশের আরেকনাম বংগবন্ধু শেখ মুজিব। আতিউরকে আমি ছাত্র বয়স থেকে চিনি। চিন্তা ও আদর্শের দিক থেকে আমরা কাছাকাছি ছিলাম এক সময়ে। পরবর্তী সময়ে ক্যারিয়ার, পদ পদবী ও এনজিও সংশ্লিস্টতার কারণে আতিউরের পথ আলাদা হয়ে যায়। ফলে তার উন্নতির সোপান খুলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হওয়ার সুবাদে তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই গুলি বিক্রিতে কোন অসুবিধাই হয়না।

বইটার নাম শুনেই পাঠক সমাজ বুঝতে পেরেছেন ওই বইতে কি আছে। এই বইটি এর আগে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে শেখ মুজিব: বাংলাদেশের আরেক নাম। কিছু লেখা বাড়িয়ে দিয়ে নতুন নামে বইটি আবার প্রকাশ করা হয় ২০১০ সালে। বইতে নতুন তথ্য তেমন কিছু নেই। বিভিন্ন লেখকের পুরণো কিছু লেখা নতুন মোড়কে প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্যগত দিক থেকে  বইটাকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মেনে করা যায়না। এটাকে ইতিহাসও বলা যায়না। লেখক একটা উদ্দেশ্য নিয়েই বইটা লিখেছেন। তা হলো বংগবন্ধুই এক, তিনিই শ্রেষ্ঠ, তিনিই সবার উপরে। সমকালীন রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আর ছিলনা। বংগবন্ধু জন্মেই এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। তিনি কখনই মুসলীম কর্মী ছিলেন না, জন্মেই সেকুলার বাংগালী ছিলেন। যেন কখনই মুসলমান ছিলেন না। তিনিই যেন আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রতিস্ঠাতা। তিনিই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা। এ ধরণের নানা  কথা আছে। উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে জানানো। আতিউরের মতো এ রকম আরও অনেক জ্ঞানী গুণীজন আছেন যাঁরা এমন সব কথা বলে যাচ্ছেন যা কখনই ইতিহাস সমর্থিত নয়। এইতো ক’দিন আগে শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী সাহেব বলে ফেললেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তিনি আসলে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবু এমন নির্জলা মিথ্যা বলছেন কিনা জানিনা। এ বয়সে তিনি আর কি চান? মুক্তি যুদ্ধ না করেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। তিনি ছিলেন মোনেম খাঁর একজন খয়ের খাঁ। আমাদের আতিউর ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও একজন বড় মুক্তিযোদ্ধা।

ক’দিন আগে একপক্ষ নামে একটি ম্যাগাজিন আমার হাতে আসে। একপক্ষ মানে পাক্ষিকও হতে পারে ,আবার শুধু একপক্ষের কথা হতে পারে। যে সংখ্যাটি আমার হাতে এসেছে তা উত্‍সব সংখ্যা। কিন্তু কিসের উত্‍সব তা বুঝা গেলনা। এটা ঈদ সংখ্যা না জন্মাস্টমী সংখ্যা তা বুঝা গেলনা। হয়ত বছরপুর্তির উত্‍সবও হতে পারে। একপক্ষের সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি নামের একজন মহিলা। তিনি খুবই উঁচু মহলের একজন নারী। উঁচু মহল বা অন্দর ছাড়া তাঁকে নাকি আর কেউ চিনেনা। এ কাগজের প্রকাশক এম এ  আউয়াল সাহেব একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। জমির ব্যবসা করেন। তিনি নাকি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের কর্মকর্তা। ম্যাগাজিনটা পড়ে মনে হলো এটা মুসলমান বিরোধী একটা মুখপত্র। উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িকতার জন্যে মুসলমানদের দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন বলিস্ঠ রেফারেন্স নেই। অজানা অচেনা লেখক আবুল খায়ের সাহেব( সাম্প্রদায়িক নাম?) নিজের মনের মাধুরী মিশায়ে কতগুলো তথ্য পরিবেশন করেছেন যা একেবারেই একটা প্রপাগান্ডা। পুরো লেখাটাই একটা সাম্প্রদায়িক। ওই নিবন্ধে খায়ের সাহেব(কল্যাণ বাবু) বংগবন্ধু সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন যা পড়লে মনে হবে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা, তিনিই ভাষা আন্দোলনের একমাত্র নেতা, তিনিই এককভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন

ওই নিবন্ধের এক  জায়গায় বলা হয়েছে, ‘ ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন সংঘটিত আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা তথা ভারতবর্ষে আধুনিক জীবনের সূচনা হয়।কয়েক শাতাব্দী ধরে মুসলিম প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির পাশবিক নিগড়ে আবদ্ধ থাকায় সমগ্র সমাজ জরাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। কথাগুলো শুনে মনে হয় কোন ইংরেজ সাহেবের,অথবা কোন হিন্দূ ভদ্রলোকের। যাঁরা বাংলার তথা সারা ভারতের স্বাধীনতা হরণকে নব জাগরনের সূচনা অভিহিত করেছেন। পরাধীনতাকে রেনেসাঁ বলে বগল বাজিয়েছেন। পাঠক সমাজ বুঝতে পারছেন একপক্ষ ম্যাগাজিনটা কেন প্রকাশিত হয়েছে। কল্যাণ বাবু মানে আবুল খায়ের নামধারী ভদ্রলোক নবাব সিরাজকে লম্পট দুশ্চরিত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। সিরাজ সম্পর্কে আরও বহু মিথ্যা কথা ওই নিবন্ধে প্রকাশ করা হয়েছে।

তরীকত নেতা  আউয়াল সাহেব একপক্ষের সাল তামামী লেখায় ম্যাগাজিনের পলিসি নিয়ে কথা বলেছেন।তিনি  বলেছেন একপক্ষ একটা পলিসি ম্যাগাজিন। রাস্ট্রের পলিসি বাপারে তাঁরা সরকারকে পরামর্শ দিতে চান। তিনি নিজেই বলেছেন, ম্যাগাজিনের নাম একপক্ষ হলেও তাঁরা বহু পক্ষের কথা বলতে চান। তাঁর বহু পক্ষ হলো সেকুলারিজম, মুসলমান বিদ্ধেষ এবং সাম্প্রদায়িকতা। আমার এক বন্ধু  যিনি বহুকাল সাংবাদিকতা করেছে  তিনি বলেছেন, আউয়াল সাহেব খুব ভাল মানুষ। তিনি হয়ত মাসুদা ভাট্টির খপ্পরে পড়েছেন। তরীকত ফেডারেশনের লোক হয়ে তিনি মুসলমান বিরোধী এমন ম্যাগাজিনের প্রকাশক হতে পারেন না। ভারতের সম্প্রদায়িক সম্প্রতি বাংগআ বিয়ে মাগাজিনা যা ছারা হয়েছে তা হয়েছে তা একৃবারেদি এপক্ষের। ইতিহাস বিবর্জিত ও বিকৃত। কি উদ্দ্যশ্যে তাঁরা এমন একটি ম্যাগাজিত প্রকাশ করছেন তা বোধগম্য নয়।

বেশ করেক বছর আছে বংগালী নামে একটি ম্যাগাজিন আমার হতে ত্‍সেছি। বহু কস্টে প্রকাশনের  ঠিকানা বের বিয়েছেলাম। ধন মন্ডীর ২৮ নম্বর রোঢের একটি বাড়ি থেকে ওই ম্যগাজিনটা প্রকাশিত হয়েছিল। ও ম্যগাসিনে বলা হয়েছিল সকল প্রকার পূজা বাংগালীদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস।( ২৬ শে আগস্ট, ২০১১, নয়াদিগন্ত । ২৯শে আগস্ট,২০১১, দৈনিক দিনকাল)

Read Full Post »