যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার
তোমরাতো জানো মনটা আমার চিরকালই বিদ্রোহী। সারা জীবনই মনের কথা মতো চলেছি। তাই তোমাদের কথা খুব বেশী একটা শুনতে পারিনি। আমি অনেক ভেবেছি আমাকে নিয়ে।কেন আমি অন্য দশ জনের মতো হতে পারলাম না। বেশ সুখে শান্তিতেই আমার দিন গুলো কাটার কথা ছিল। যে সংসারকে সুখের বলা হয় তেমন সংসারই আমার । আমার বিবির মতো মানুষ হয়না। তিনি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখার চেস্টা করেছেন। আমার এতোটুকু অসুবিধা হোক তিনি তা কোনদিনও চাননি বা হতে দেননি। তিনি যেমন করে আমাকে ভালবাসেন তেমন করে আমি তাঁকে ভালবাসতে পারিনি। আসলে আমি একজন গৃহহীন গৃহী। সংসারে থেকেও কোনদিন এর ভিতরে ছিলামনা। আমার বিবিই একা একটা সংসার। তিনিই এ সংসারের মাঝি। তিনি নৌকার মালিক । তিনিই সারাজীবন বৈঠা টেনেছেন। এর সুখ দুখ তিনিই । আমি ছিলাম শুধু তাঁর একজন সাথী। আমরা দুজন একসাথে আছি ৪৭ বছর। ২০১৬তে ৫০ বছর পুরবে। জানিনা সেদিন আমি বা তিনি থাকবেন কিনা। আমি চাই তিনি থাকুন। আমার মতো মানুষের বেশীদিন জগতের জায়গা বা অন্ন ধ্বংস করা উচিত নয়। আমি কোন দিন কাউকে নিজের দেশের চেয়ে বেশী ভাল বাসতে পারিনি। দেশ আমার প্রথম প্রেম।
৪৩ বছরে আমাদের দেশটি মালয়েশিয়া বা সিংগাপুরের মতো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তা তুমি ভাল করে জানো। তুমিতো দেশকে ভালবেসে আর সংসার করোনি। সেদিক থেকে ভাবলে তুমি আমার চেয়ে অনেক অনেক বড় দেশপ্রেমিক। সারাটা জীবন দেশকে শুধু দিয়ে গেছো। আমি তেমন করে কিছু দিতে পারিনি। তাই তোমার কাছে গেলেই আমার মাথা অবনত হয়। একজন নারী হয়ে তুমি যা পেরেছো আমি কেন তা পারিনি তা ভেবে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। মাঝে মাঝে নিজের প্রতি সীমাহীন ঘৃণা হয়।
দেশের এখন যে অবস্থা তাতে এ বয়সে আমি শুধু চোখের পানি ফেলি। ভাবলেই কান্নায় আমার বুক ভেংগে যায়। চোখের পানিতেই সব ভিজে যায়। তুমিতো এখনও লড়াই করে যাচ্ছো। কতবার জেলে গিয়েছো তার হিসাব তুমি কখনই রাখোনা। তুমি বলো দেশকে ভালবাসলে একটু কষ্ট পেতেই হয়। আসলে আমরাতো দেশকে ভালবেসেছি দেশের মানুষের জন্যে। এ মানুষ গুলো সারা জীবন শুধু দিয়ে গেছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। ৪৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভেবেছিলাম এটাই শেষ যুদ্ধ। দেশের সব মানুষ দুবেলা ভাল করে খেতে পারবে। আব্রু রক্ষা করার মতো পরণের কাপড় পাবে। ওদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। চিকিত্সার অভাবে মরে যাবেনা । না যা ভেবেছিলাম তা হয়নি । কখন হবে তা ও জানিনা । কখনও হবে কিনা তাও বলতে পারিনা ।
এখন আমাদের বয়স বেশ হয়ে গেছে। একটি সুখী দেশের নাগরিক হিসাবে নিজের দেশকে দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। তুমিতো এ দেশের কাছে কিছুই চাওনি নিজের জন্যে। চেয়েছিলে শুধু দেশের মানুষের জন্যে সুখ। এখতো তুমি বড়ই একা। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলে ২২/২৩ বছর বয়সে । যে বয়সে মানুষ প্রেম করে, ভালবেসে ঘর বাঁধে । তোমাকে অনেক বার বলেছিলাম,ওই বয়সে যুদ্দে যেওনা। তুমি রাগ করতে, অভিমান করতে, কেঁদে ফেলতে । বলতে যুদ্ধ বুঝি শুধু ছেলেদের কাজ । শেষ পর্যন্ত তুমি যুদ্ধে গেলে। যুদ্ধের ক্যাম্পে, ময়দানে, সীমান্তে সবাই তোমাকে কাছে পেতে চেয়েছে, আদর করতে চেয়েছে। তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখি তাই বন্ধুরা প্রায় সবাই আমার উপর নাখোশ ছিল। তোমার বাবা মাও আমার উপর ক্ষ্যাপে ছিলেন । তাঁরা ভাবতেন আমিই তোমাকে উসকিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম।
২০শে ডিসেম্বর তুমি আমি এক সাথে ঢাকায় ফিরে আসি । তোমাকে ধানমন্ডির বাসায় রেখে আসতে গিয়ে আমি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছি। । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুলাই মাসের দিকে তোমার মা এ জগত ছেড়ে চলে গেছেন । সে খবর আমি তোমাকে জানাতে পারিনি । জানাবার মতো আমার সাহস ছিলনা । সে সময়ে তোমাকে সান্তনা দিবার ক্ষমতাও আমার ছিলনা । বাসায় ঢুকে তুমি মা মা বলে বাসার ভিতরে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলে । আমি ড্রয়িংরুমে তোমার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম । তাঁর দু চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে পানি ঝরছিলো । তাঁর কান্না দেখে আমারও চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।
তুমি কিচেন থেকে ড্রয়িংরুমে ফিরে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিলে আর জানতে চাইছিলে মা কোথায় ? তখন তোমার বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । আমিও চুপ, তিনিও চুপ । তুমি ধীরে ধীরে আন্দাজ করছিলে। যে রাতে বাসা ছেড়েছিলে সে রাতে তোমার মা অসুস্থ ছিলেন । প্রচন্ড ব্যথায় কাঁতরাচ্ছিলেন আর তোমাকেই ডাকছিলেন। বলছিলেন, আশি, কোথাও যাসনে মা। আমাকে আর কষ্ট দিসনে মা। তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো। সে রাতেই তুমি মাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলে আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ।
তুমি এবার প্রচন্ড কান্নায় ভেংগে পড়লে । মাগো মাগো বলে চিত্কার করতে লাগলে । আমি বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে তোমাকে সান্তনা দিবো । তোমাকে ওই অবস্থায় রেখেই আমি নিষ্ঠুরের মতো চলে এসেছিলাম । আমারও কষ্ট হচ্ছিলো, চোখ মুচতে মুচতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম । আমার সারা শরীর কাঁপছিলো । আগে থেকেই সবাই জানতো আমি ঢাকায় ফিরেছি । শান্তি নগরের বাসায় সবাই অপেক্ষা করছিলো । আমার ভাইবোন সবাই উপস্থিত । আমার কাঁধে একটি ঝুলানো ব্যাগ ছিল । পরণে ছিলো যুদ্ধের পোষাক । আমার দুই বছরের রণি বলেছিলো যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে একটি সাইকেল কিনবে । বিবিজানকে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে আদর করলাম । তিনি যেন লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইলেন । আমার চুল দাড়ি ও গোপের দিকে তাকালেন । অভ্যাস মতো বললেন,এক্ষুনি বাথরুমে যাও,দাড়ি গোপ কামাও । মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে । এখন আর মুক্তিযোদ্ধাগিরি করার করার প্রয়োজন নেই । কালই অফিসে যাও, দেখো চাকুরী আছে কিনা । একদিনের জন্যেও এই পোষাক আর পরবেনা । আল্লাহই ভাল জানেন , কতদিন গোসল করোনি । ভাইবোন সবাই পা ছুয়ে সালাম করলো । নিকট দূরের আত্মীয় স্বজনরাও বাসায় এলেন । অনেকেই বললেন, আমরা লোকে মুখে আপনার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সেদিন বেগম সাহেবাকে বিশ তিরিশ জনের খাবার রান্না করতে হয়েছে।
পরেরদিন প্রেসক্লাবে যাওয়ার আগে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম । তোমার বাবাকে ড্রয়িংরুমেই পেয়েছিলাম । মনে হলো , তাঁর মনের জোর একেবারেই শূণ্যের কোঠায়। স্ত্রী বিয়োগের বেদনা তিনি আর বইতে পারছেন না। কথা বলতে বলতে ফুপিয়ে কাঁদছেন। চায়ের কাপ হাতে ড্রয়িংরুমে তুমি আসার আগেই তিনি বললেন, বাবা আমার মেয়েটার এখন কি হবে । তুমি আমাকে পথ দেখাও। আমি আর ক’দিন বাঁচবো? মেয়েটার একটা সুরাহা দেখে না গেলে আমার দোজখেও ঠিকানা হবেনা ।আমার দু’হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,মেয়েটার একটা ব্যবস্থা। করে দাও । তুমি ছাড়া এ জগতে ওর আর কেউ নেই । চারিদিকে ওর শুধু বদনাম । কেউ এ মেয়েকে বিয়ে করবেনা । আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারিনা । ও নিজে কিভাবে মুখ দেখাবে আমি ভেবে পাচ্ছিনা। আমার বাড়ির লোভে বহু বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা ওকে বিয়ে করতে চায় । বাড়ির চাকর হওয়ার যোগ্য নয় এমন ছেলেরা ক’দিন পরেই বাড়ি বয়ে এসে ঝামেলা পাকাবে । এমন সময় তুমি এসে পড়ায় তিনি মুখ বন্ধ করে চুপ হয়ে গেলেন।
তুমি বললে, বাবা আমাকে নিয়ে তুমি অত চিন্তা করোনা । মুক্তি যুদ্ধ করেছি দেশদের জন্যে । দেশের মানুষ যদি বদনাম করে করুক । দেখিনা, দেশ এখন কোন দিকে যায় । তুমি ভাবছো আমাকে নিয়ে , আর আমি ভাবছি দেশকে নিয়ে । সোনার বাংলা গড়বো বলেইতো দেশ স্বাধীন করেছি । অনেক বড় কাজ করেছিস মা, এমন বড় কাজ আর হয়না। কিন্তু তুইতো মেয়ে মানুষ। সংসারতো করতেই হবে। সংসার ধর্ম কর্ম দুটোই। আমি তোকে বিয়ে দিয়েই মরতে চাই। বেশীদিন বাঁচবোনারে মা। তুই একা কেমন করে থাকবিরে মা । এরশাদ যদি তোর দায়িত্ব নেয় আমি শান্তিতে মরতে পারবো। আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। কিছু বলবো তেমন সাহস আমার ছিলনা।
তুমি খালুজানকে ধমক দিয়ে বলে উঠলে, বাবা তুমি পাগলামী করলে আমি আর এখানে থাকবোনা। তুমি শান্তিতে থাকো, এসব নিয়ে একেবারেই ভেবোনা। এরশাদকে তুমি অস্বস্তিতে ফেলোনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে নিয়ে সে জ্বালাতন সহ্য করেছে। ও না থাকলে আমি বেঁচে ফিরে আসতে পারতাম না। তুমিতো জানো ও বিবাহিত। সে তার স্ত্রীকে সীমাহীন ভালবাসে। সে তোকেও ভালবাসে।
ভালোতো বাসবেই, সে আমার পরম বন্ধু। জগতের সবাই জানে সে আমার বন্ধু।
আয়েশা, দেশকে ভালবেসে আমরা অনেকটা পথ, অনেক গুলো বছর পার করে এসেছি। তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচে বড় পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় তুমি আমাকে পাশ করিয়ে দিয়েছো। তুমি বহু আসগেই বলেছো তোমার স্বপ্নভংগ হয়েছে। তোমার মন ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম তা আর হবে কিনা জানিনা।
আমাদের শরম চলে গেছে। কথায় কথায় বলি ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। দু’লাখ মা বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। এসব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। পুরো জাতিটাই মিথ্যার বেসাতি করে চলেছে। শহীদ আর বীরাংগনাদের নিয়ে ব্যবসা চলছে। লাখ লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে। সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে। আসমরা ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে কত কথা বলেছি। এখন সে রকম ২২ পরিবারকে কিনতে পারে ২২শ’ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পার্লামেন্টের বেশীর ভাগ সদস্যই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ওরাই দেশ চালায় রাজনৈতিক দল চালায় । যে যত বেশী কর ফাঁকি দিতে পেরেছে সেই তত ধনী হতে পেরেছে। দেশটা এখন মুরুব্বীহীন এক সুন্দরী নারী বা সম্পদে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশের আব্রু নিয়ে চারিদিকে টানাটানি চলছে। এরাই সুযোগ পেলেই কোরাসে সুর তুলে গাইতে থাকে ‘আমি তোমায় ভালবাসি’। এদের লাজ লজ্জা নেই, মা বোন নেই। তাই নিজের মাতৃভুমির ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছে। এরাই আবার চেতনার কথা বলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গালাগালি করে। জাতির মহান নেতা, স্থপতি বংগবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়াকে দলবেঁধে গালাগাল করে। এ ব্যাপারে দলগুলোর ভিতর সীমাহীন প্রতিযোগিতা। ৪৩ বছরে এ দেশের রাজনীতিকরা কম ধনী হননি। যেকোন ভাবেই যে কেউই একবার এমপি হতে পারলে চৌদ্দ গোষ্ঠির ব্যবস্থা হয়ে যায় ।
তোমার আমার দূর্ভাগ্য আমরা এখনও জীবিত আছি এমন বাংলাদেশকে দেখবার জন্যে । আমি ভেবেছিলাম সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমার কথাই সত্য হলো। দেশের কিছুই হলোনা। কোটি লোক এখনও নিয়মিত চিকিত্সা পায়না, সবার ঘরে শিক্ষা প্রবেশ করেনি, বেকারত্বের চিত্কার আজ ঘরে ঘরে। নেতাদের ছেলে মেয়ে ,আত্মীয় স্বজনের বিদেশে লেখাপড়া না করলে চলেনা। দেশ প্রেমিকের রাজনীতি আজ কসাই খানায় নিয়মিত জবাই হচ্ছে। সত্ রাজনীতির চীত্কারে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস আজ কম্পিত। বাংলাদেশ আজ দুইটি দেশ। একটি বাংলা, অপরটি বাংলাদেশ। জাতি আজ দুইটি, একটি বাংগালী,অপরটি বাংলাদেশী। একদল পাকিস্তান বা চীনের পক্ষে, আরেকদল ভারত আর রাশিয়ার পক্ষে। রাজনীতিকরা কথায় বলে ফেলেন, দেশে এখন দুই পক্ষ। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি আর স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। দেশের মানুষকে ভাগ করার জন্যে রাজনীতিবিদরা উঠে পড়ে লেগেছেন। শুধুমাত্র রাজনীতির হীন স্বার্থে এমন চরম বিপর্যয় তাঁরা ডেকে এনেছেন।
অনেকেই বলেন, দেশকে আজ এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে ভারত। আবার অনেকে বলেন,পাকিস্তানের চরেরা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভারত এখন যা করছে তাকে আমি সঠিক মনে করি। ৭১ সালে তারা আমাদের জন্যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছে, তাদের হাজার হাজার সৈন্য মারা গেছে, সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমাদের উপর মুরুব্বীয়ানা করার তাদের ন্যায্য অধিকার আছে । আমাদের রাজনীতি ,সমাজনীতি ,অর্থনীতি ,সংস্কৃতি সবই আজ তাদেরই দান। এছাড়া, ভারত আমাদের বৃহত্ প্রতিবেশী। চীনের সাথে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এক তুবড়িতে ৭১ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে। ভারততো আশে পাশের সবদেশের মুরুব্বী। বাংলাদেশের মুরুব্বী হতে আপত্তি কোথায়। শুনেছি,ভারতের নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে বলে থাকেন, ৭১ সালে বাংলাদেশ বানাতে তাদের যে খরচ হয়েছে তা আজও উঠে আসেনি। খরচ পুষিয়ে দেয়ার জন্যে মুজিব নগর সরকার একটি গোপন চুক্তি করেছিল বলে জোর গুজব রয়েছে। ভারত নাকি সে চুক্তির ষোলয়ানা বাস্তবায়ন চায়। সে চুক্তিটা কি তা ভারতের প্রকাশ করা উচিত্ এবং বাংলাদেশ সরকারের তা বাস্তবায়ন করা দরকার।
আয়েশা, আমি জানি তোমার বেদনার কোন শেষ নেই। সীমাহীন বেদনা সহ্য করার জনেই তুমি এখনও বেঁচে আছো। তরুণদের কথা শুনে তোমার হয়ত আরও বেশী কষ্ট হয়। ওরাতো জানেনা,মুক্তিযুদ্ধ কি ছিল। ওদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধুই কবিতা বা গাণ । রংতুলির ছবি। বুকফাটা কান্নার একটি ডকুমেন্টারী। ওদের কাছে সবই কল্পনা,রংগিণ ক্যানভাস। ওদের তুমি ক্ষমা করে দাও। কারণ ওরা এখনও বাপদাদার বায়াদলিল জানেনা। ৪৩ বছরেও আমরা তাদের ভাল করে জানাতে পারিনি আমাদের পূর্ব পুরুষের কথা, ইংরেজের ১৯০ বছরের শোষণের কথা, ক্ষুদিরাম আর শের আলী খানের কথা। তাই আজ দেশের এমন অবস্থা হয়েছে। ভারতকে ভাল করে তার পাওনা বুঝে নিতে দাও। মনে রাখতে হবে সবকিছুরই একটা হিসাব আছে। ভারতের স্বার্থ তোমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে। ভারত পাকিস্তান ভেংগেছে তোমাকে প্রিয়তম প্রতিবেশী হিসাবে পাওয়ার জন্যে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com
Read Full Post »
You must be logged in to post a comment.