Feeds:
Posts
Comments

Archive for January, 2014

সকালবেলা ৩২


সকালবেলা নাশতার টেবিলে বসে বাপ বেটায়  কয়েক মিনিট কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। বৌমা ইশরাত ফৌজিয়া গেছে নাতি সাহেবকে স্কুলে নামিয়ে দিতে । এই ফাঁকে বড়ছেলে নওশাদ জামিল নাশতা তৈরির কাজে লেগে গেল । বুড়ো শরীরটাকে রক্ষা করার জন্যে নানা রকমের অষুধের ব্যবস্থা খাওয়ার আগে ও পরে। সবই সময় বা ঘড়ির কাজ বা কেরামতি । সবকিছু সময়মত করতে হবে ।

ছেলেকে বলছিলাম, পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা । এখনকার তরুণরা পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে তেমন ভাবে  বলে মনে হয়না । আমরা  অতি সাধারন পরিবারের মানুষ । গৌরব করার মতো তেমন কোন ঐতিহ্য নেই । তবুও এ ব্যাপারে সব  সময় একটা আগ্রহ ছিল এবং  গেখনও আছে । ফার্সী শেখার জন্যে আজ থেকে  বছর ২০ আগে ইরাণ কালচারেল সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম । সাথে ছিলেন আমার পরম বন্ধু শফিকুল আজিজ মুকুল । আমাদের শিক্ষক ছিলেন কুলসুম মজুমদার । মূল বাড়ি নোয়াখালী। বড় হয়েছেন মোম্বাইতে । আমার নাম মজুমদার দেখে  বোর্ডে ফার্সী বা উর্দুতে  মজুমদার লিখতে অনুরোধ  করলেন । লিখলাম মিম জিম ওয়াও মিম দাল আলিফ রে । কিন্তু কুলসুম বেগম বললেন হয়নি । শব্দটি নাকি মজুমদার নয়, মাজমুয়েদার । বাংলা মানে জমাকারী, যিনি জমা সংগ্রহ করেন । এবার ভাবতে লাগলাম আমার পূর্ব পুরুষ কেউ হয়ত রাজা বাদশাহর খাজনা আদায় করে দিতেন । কখন কে জানে । শব্দটার খোঁজে আমি বহু জায়গায় ঘুরেছি । আমাদের এলাকায় আবার মজুমদারের অভাব নেই । সবাই মজুমদার। কিন্তু যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে আমরা পূর্ব পুরুষরা সবাই সওদাগর ছিলেন ।

আমার সেজো জ্যাঠা  ফজলে আলী সাহেব তাঁর পূর্ব পুরুষের কথা লিখে রেখে গেছেন। সেই লেখা দেখেই গিয়েছিলাম ফেণী শহর থেকে ৪/৫ মাইল দূরে পেঁচিবাড়িয়া গ্রামে । গিয়েছিলাম একটি রিকশা নিয়ে । সাথে ছিল সাইদিয়া রাইস মিলের  এনায়েত । ফেনীতে গেলে এনায়েত আমার সাথী হিসাবে থাকে । ওই গ্রামের  ননু মজুমদারের বাড়ি হলো আমার দাদার বাড়ি । দাদার দাদার নাম  এনায়েত উল্লাহ মাজমাদার । আজগর আলী  মজুমদারের  ডাক নাম ছিল ননু মজুমদার । আমাদের এলাকায় মজুমদারকে মন্দার বলে সংক্ষেপে ডাকে ।

আমার দাদা ইয়াকুব আলী মজুমদার বাল্যকালে মা বাপকে হারিয়ে ১০/১২ বছর বয়সে ফেনীতে আসেন ফুফুর বাড়ি। এখানেই তিনি বড় হয়েছেন । আমার দাদীর নাম শাহাব বিবি । ফেণী শহরের কাছেই রাণীর হাটের  একটি গ্রামে দাদীর বাপের বাড়ি । বায়া দলিল আর দস্তাবেজ দেখে মনে হলো ১৮৭০ এর দিকে দাদাজান ফেণী এসেছেন । আমাদের বর্তমান বাড়িটা  দাদাজান ১৯১১ সালের দিকে কিনে নেন চৌধুরীদের কাছ থেকে । আট শতাংশ জমি হচ্ছে কবরস্থান । ৪০ শতাংশ পুকুর আর বাকী ৬০ শতাংশ ভিটে । শুরুতেতো থাকার মতো লোকই ছিলনা । একেবারে দক্ষিণ দিকে দাদা একটি ঘর তৈরি করেছিলেন । এখন সে বাড়িতে  একশ’রও বেশী লোক বাস করে। আমিতো দাদার নাতি । তাঁর পুতি ও খুন্তি আছে। দেশে বিদেশে অনেকেই বাস করে। বেশীর ভাগই থাকে ঢাকা আর চাটগাঁয়ে
নাশতার টেবিলে ছেলেকে এসব বলতে বলতে আমি একটু ইমোশানাল হয়ে গিয়েছিলাম । নওশাদ বললো, এখন হলো বিজ্ঞানের যুগ, বিজ্ঞান মানুষের মন প্রাণ বদলিয়ে দিয়েছে । এখন মানুষ এসব নিয়ে তেমন ভাবেনা । তবে একেবারে ভাবেনা তা নয় ।

Read Full Post »

সকালবেলা ৩১


তিরিশে জানুয়ারী বৃহষ্পতিবার । যথারীতি মেঘাচ্ছন্ন সকাল । এখন বেলা চারটা, এখন পর্যন্ত সূর্য দেখা যায়নি । আজ আর সম্ভাবনা নেই । এখানে যারা বাস করেন তাদের দিনগুলো হুরমুড়ির ভিতর দিয়ে কাটে । সকালের তাড়াহুড়া দেখলে আমার কষ্ট হয় । এ ঘরে তিনজন অধিবাসী । একজনের বয়স সাড়ে সাত বছর । তিনি আমার নাতি আরশান । আরশান মানে সুফীদের আখড়া । ইয়েমেনে নাকি একটি জায়গা আছে যার নাম আরশান । আমার মংগোলিয়ায় একটি লেক আছে যার নাম আরশান । এর পানি নাকি পবিত্র । আরশান নামের একটি পানীয়ও আছে । এ জামানায় নাম রাখার সময় শিক্ষিত মা বাবা নানা চিন্তা ভাবনা করে রাখেন । আমাদের সময় হয়ত এমন করে খুব বেশী চিন্তা ভাবনা করা হতেনা । ধর্মীয় জ্ঞান আছে এমন একজন মুরুব্বী অথবা একজন ধর্মীয় আলেমের পরামর্শ করে নাম রাখা হতো। শুনেছি আমার দাদাজান মরহুম ইয়াকুব আলী মজুমদার আমার নাম রেখেছিলেন তাঁর দাদাজানের নামের সাথে মিল রেখে । দাদাজানরা সবাই ছিলেন আলী নামধারী । দাদাজানের বাবার নাম ছিল মনসুর আলী মজুমদার । এখন আর সেই রেওয়াজ নেই । বংশধারা বা মুরুব্বীদের প্রতি তেমন সম্মান কেউ দেখায়না । পারলে অনেকেই পারিবারিক ঐতিহ্য ভুলে যেতে চায়। অনেকেই আছেন পারলে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ সেক্যুলার ছিলেন। শব্দটা ব্যবহার করা এখন এক ধরনের ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে । অনেকেই বলেন তাঁদের পূর্ব পুরুষদেরও নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল।
এখানে সময় ঘুলো খুবই কঠিন । আমার নাতি সাহেবকে মহা কষ্টে ঘুম থেকে তুলে টেনে হিচড়ে স্কুলে নিতে হয় । এ নিয়ে নাতি সাহেবের বাবা মা’র প্রাণ ওষ্ঠাগত। স্কুলটা একেবারেই বাসার কাছে । গাড়ীতে ৩/৪ মিনিট লাগে । আমার নাতি সারাদিন নতুন নতুন ইনভেনশন আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ২/৩ মিনিট অন্তর এসেই বলবেন দাদাভাই, আমার একটা গ্রেট ইনভেনশন আইডিয়া আছে ।
প্লিজ লিসেন মি । আমি যদি বলি,আই এ্যাম বিজি । দাদাভাই তখন এ্যাংগ্রি হয়ে যান। তার নিউ আইডিয়া হলো হোম ওয়ার্ক মেশিন তৈরি করা । এ মেশিনকে অর্ডার দিলেই সে হোমওয়ার্ক করে দিবে । দাদাভাই বিকেল স্কুল থেকে ফিরে আসেন । বাবা মা যে কোন একজন অফিস থেকে ফিরার পথে তাকে নিয়ে আসেন । এসেই বলবেন, দাদাভাই আই হ্যাব এ্যা গ্রেট আইডিয়া অব নিউ ইনভেনশন ।
বাংলাদেশের জীবন এখানকার চেয়ে অনেক বেশী আনন্দময় । প্রচুর আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধব। কাজ কর্ম হয়ত কম । লোক বেশী, সে হিসাবে কাজ কম । অনেক সাংবাদিক বন্ধুও এখানে এসে থাকেন । যারা এখানকার ছোট খাট কাগজে কাজ করেন তাঁরাও তেমন ভাল বেতন পান না । অনেকেই অন্যকাজ করেন । এখানে এসেও সবাই বেশ দলবাজি করেন । দল করাটা যেন তাঁদের ধর্ম ।
শত কষ্টেও কখনও মনে হয়নি আমেরিকা আসি জীবিকার জন্যে । এখনতো অনেক বয়স । খুব সুখেই জীবনের সময় গুলো কেটে গেছে । বন্ধু বান্ধবের তুলনায় আমি মহা অযোগ্য একজন মানুষ । কেন যেন আল্লাহতায়ালা আমার উপর সীমাহীন দয়া করেছেন।

Read Full Post »

সকালবেলা ৩০


সকালবেলা ৩০
আজ বিকেলে সাড়ে ছয়টায় রেডমন্ড পাবলিক লাইব্রেরীতে জগতের অন্যতম প্রধান শ্রেষ্ঠতম কবি মাওলানা রুমীকে নিয়ে একটি কবিতা পাঠ ও আলোচনার আসর বসবে । এটি আয়োজন করছেন ওয়াশিংটন রাজ্যের পয়েট লরেট মিষ্টার মাইকেল । তিনি একজন রুমী ভক্ত আমার মতো । আমাকে রুমী পাগল বা মজনুও বলতে পারেন ।
আমি অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ ও আলোচনার জন্যে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হয়েছি । আশা করছি রাজ্যের অনেক কবি ও কবি ভক্তদের সাথে দেখা হবে। গত কয়েক ধরে রুমীকে নিয়ে পড়ছি । ইতোমধ্যেই রুমীর রুবাই ও গজল বাংলায় অনুবাদ করতে শুরু করেছি । রুমীর রুবাই নিয়ে একটি পকেট বই করতে চাই । আশা করছি আমার প্রভু আমাকে লক্ষ্য পুরণে সাহায্য করবেন।
গত রাতে এখানে বৃষ্টি হয়েছে । সারারাত ধরে ইলশে গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে । রাতে বুঝতে পারিনি। সকালে বাইরের মাঠ দেখে বুঝতে পারলাম বৃষ্টি হয়েছে। এখানে একটা মজার ব্যাপার দেখলাম, তাহলো মাঠ দেখে ধরে নিয়েছিলাম সবুজ ঘাসে ভরা। পরে জানতে পারলাম ওখানে কোন সবুজ ঘাস নেই। সবই শ্যাওলা । কাছে গিয়ে দেখলাম, সত্যিইতো।
আর এই শ্যাওলা খাওয়ার জন্যে পাশের বন বা জংগল থেকে হরিণ ও কাঠবিড়ালী নেমে আসে । জংগলটি প্রকৃতিক ও ন্যাচারেল । সরকার শুধু এটাকে রক্ষা করছেন ।
এখানে শীত এখনও আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশী । প্রায় সব সময়েই ৬/৭ ডিগ্রী থাকে । ঢাকায় হয়ত এক দুদিন ৮/৯ ডিগ্রী হয়। কিন্তু ১১/১২ ডিগ্রী থাকে। এখানে সূর্য প্রায়ই দেখা যায়না । যখন সূর্য দেখা যায় তখন মন আনন্দে নেচে উঠে । এখান মানুষের কাছে বিষয়টা একেবারেই স্বাভাবিক ।
ঘরের ভিতর তাপ নিয়ন্ত্রন করা হয় । ফলে ঘরে তেমন শীত অনুভুত হয়না। বাইরে যেতে হলে প্রস্তুতি নিয়েই বের হতে হয় । ঢাকার সকাল গুলো অনেক বেশী আরামদায়ক আমার মতো মধ্যবিত্তের জন্যে ।

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

বেশ ক’দিন হলো তুমি অসুস্থ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে আছো । হাসপাতাল গুলো সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতার কথা এর আগেও বলেছি। বয়স বাড়ছে বলে বেশী বেশী ডাক্তারদের কাছে যেতে হয়। ডাক্তারদের সাথে সব সময় বন্ধুত্ব রাখতে চেষ্টা করি। ফোন করে বা ইমেইল যে ডাক্তার সাহেবকে পাওয়া যায় তার কাছেই যাই। আমি এমনিতেই হাসি মাখা মুখ পছন্দ করি। বেদনা বা দুখময় চেহারার লোক আমি পছন্দ করিনা। বি চৌধুরী সাহেব এ ব্যাপারে সব সময় এক নম্বর। তাঁর চেহারা দেখলেই রুগী অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। ইউনাইটেড হাসপাতাল হিসাবেই বড় পরিসরে তৈরি হয়েছে।। শুনেছি মালিকরা ও ভাল মানুষ। ধানমন্ডী ছেড়ে গুলশান চলে আসার ফলে এখন আর ওই এলাকার ফাইভ ষ্টার হাসপাতাল গুলোতে যেতে পারিনা। তাই ক’দিন আগে গিয়েছিলাম ইউনাইটেডে। চারিদিকে ঘুরে ফিরে মনে হলো পেশান্ট ম্যানেজমেন্ট ভাল নয়। অনেক বিভাগে ষ্টাফ আসে সকাল আটটায়। কোন কারণে আপনি যদি রক্ত দেয়ার জন্যে সাতটায় যান তাহলে রক্ত দেয়ার পর আপনাকে বসে থাকতে হবে। কারন তখনও আটটা বাজেনি। যদি আপনি বয়স্ক মানুষ হন তাহলে আপনার অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন। আপনি যদি কারো কাছে জানতে চান অমুক বিভাগ কোন কোথায় বা কোনদিকে? দায়িত্বরত ষ্টাফ বলবে দোতলায় যান। যদি বলেন রুম নাম্বার কত? উত্তর পাবে রুম নাম্বার নেই। কোন একটি বিভাগের ঠিকানা পেতে আপনাকে উপর নীচ করতে হবে। ডাক্তার সাহেবের সাথে প্রথম দিন দেখা করতে ফি দিতে হবে হবে ১২শ টাকা। দেখা করার পর তিনি আপনাকে অনেক গুলো বিষয় পরীক্ষা করতে বলবেন। তাতে আপনার দশ বারো হাজার বা আরও বেশী টাকা চলে যাবে। আপনি কিন্তু এখনও কোন প্রেসক্রিপশন পাননি। সব রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার সাহেবের কাছে গেলে আবার হয়ত আবার পুরো বা আষা ফি দিতে হবে। তারপর ডাক্তার সাহেব বলবেন, এখন যে অষুধ খাচ্ছেন তাতে চলবে বা একটা অষূধ কম বেশী খাবেন। শুধু ইউনাইটেড নয় রাজধানীর সব ফাইভ/সিক্স ষ্টার হাসপাতালই এ রকম। এখন বন্ধুত্ব থাকলেও সহজে এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়না। তোমার কথা না শুনে বা বুঝে আমি আমার কথা বলা শুরু করেছি। আমি দু:খিত। ডাক্তার বলেছেন, বেশ কিছুদিন তোমাকে বিশ্রাম নিতে হবে। আমিও চাই তুমি কিছুদিন মানে মাস খানেক বিশ্রামে থাকো। এটা তোমার জন্যে জরুরী। ইচ্ছা করতে আমাদের সাথেও থাকতে পারে। আমি কিছুতেই তোমাকে আর ধানমন্ডীর বাড়িতে আর উঠোনা। ওই বাড়িটা সংস্কার করে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেছি । তিন লাখ টাকা ভাড়া পাবে। যদি অফিসের জন্যে ভাড়া দাও তাহলে পাঁচ লাখ টাকা ভাড়া পাবে। তোমার আত্মীয় স্বজনরা এখন তোমার ব্যাপারে অনেক নমনীয় । তাঁরা তোমার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কারো কারো নজর তোমার বাড়ির দিকে। দুয়েক জন জানতেও চেয়েছে তুমি বাড়ি নিয়ে কিছু ভেবেছো কিনা । আমি বলেছি, আপনারা নিজেরা কথা বলে জেনে নিন। আমি বাড়ি নিয়ে কখনই আশির সাথে কখনই আলাপ করিনা। তাছাড়া , এটা আমার বিষয়ও নয়। ও একাই এ বাড়ির মালিক । সে নিজেই ঠিক করবে বাড়িটাকে কি করবে । আপনারা সবাই মিলে বুঝালে সে বুঝবে নিশ্চয়ই
কখনও লোকের কথায় কান দিবেনা । বিশেষ করে শিক্ষিত বাজে লোকের কথায়। তুমি স্বর্গের দেবী হলেও তারা তোমার বদনাম করবে ।
সব কিছু নিয়ে নতুন করে সামনে এগিয়ে যাবার কথা চিন্তা করো । আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো । আমার পরামর্শ হলো তুমি দেশকে নিয়ে নতুন কিছু ভাবো ও লিখো ।দেখো এরশাদ, তুমিতো নিয়মিত কলাম লিখছো, সেমিনারে বলছো। তোমার কথা কে শুনবে। শুনতে পাওনা , আমাদের প্রধানমন্ত্রী টকশো নিয়ে কত কথা বলেন। তিনি তাদের নিশি কুটুম্ব( চোর) বলেছেন। একজন নামজাদা সাংবাদিককে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ কথা বলেছে। সরকারের সমালোনা করলেই মন্ত্রী সাহেবেরা দল বেঁধে কোরাস সংগীত শুরু করে দেন।
লেখালেখির ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। যে মন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি তা এখন আর কোন বিষয় নয়। কলেজের বন্ধুরা বা ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে চায়না। তারা জানতে চায় ওই সময়ে আমার শারীরিক কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা? তোমার সাথে আমার কি সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধ এখন ওদের কাছে তেমন কিছুই না।
দেশ নিয়ে কেউ কিছু ভাবে বলে মনে হলোনা। টিচার্স রুমে বস সবাই ফেসবুক, টুইটার, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল নিয়ে আলোচনা করে। আর না হয় ফ্যাশন পার্লার, নতুন ড্রেস , নতুন অলংকার, নতুন মোবাইল। স্বামীর ক‘টা গাড়ি আছে, বেতন কত পায়, বিদেশে কত বার যায়, স্বামীর কোন বন্ধবী আছে কিনা। আমিতো এমনিতেই একা, টিচার্স রুমেও একা। সবাই আমাকে ভারিক্কী চালের মেয়ে বলে। আমি নাকি গম্ভীর। সহজে কথা বলিনা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবাই আমাকে সোবার শান্ত স্বভাবের বলতো। এখন বলে অহংকারী। স্বাধীনতার ফল হলো সবার চোখে নতুন রং লেগেছে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা সারাদিন ভাবেন তাদের সাথে যখন কথা বলি তখন দেখি ওরা ব্যস্ত সিনেমা বানাবে তার অনুদান নিয়ে। সিনেমা তৈরির আগেই নানাদিক থেকে টাকা পয়সা জেগাড় করা। এক বন্ধু বললেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশটাতো আমাদেরই। যখন জানতে চাইলাম কোথায় যুদ্ধ করেছেন তখন বললেন, আমার বড়ভাই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। সেটাতো জানি। আপনি? আমিতো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। এখনতো মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরাও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। আপনার ভাবীতো একটা বাড়ি পেয়েছেন। তিনি নিজে একটা সরকারী চাকুরী পেয়েছেন। দেখুন আপু, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বানাই, ডকুমেন্টারী করি, গাণ রচনা করি। এটাওতো একটা যুদ্ধ। আপনিতো সেই কখন ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন,এখনতো কিছু করছেন না। আমরাইতো মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচিয়ে রেখেছি। আপনি কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভাল করে জানেন? এখানে জানা জানির কি আছে? আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক। আমরা গণজাগরন করি। মাথায় লাল সবুজের পতাকা বাঁধি।
লাল সবুজের পাঞ্জাবী পরি, মেয়েরা লাল সবুজের শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ পরে। আমিতো দেখি মেয়েরা জিন্সের প্যান্ট , টিশার্ট ও পরে। আবার তারাই পহেলা বৈশাখে পান্তা খাওয়ার জন্যে রমনার মাঠে যায়। এরাই আবার থার্ট ফার্স্ট নাই করে। ঠিক বলেছেন আপু, কিছুতো ও রকম থাকতেই পারে। তবে এদের সংখ্যা তেমন নয়। আমিতো দেখেছি মা হিজাব পরে আর আর মেয়ে টিশার্ট আর জিন্স পরে বুক চেতিয়ে রাস্তায় চলে। তাকালে ছেলেদের দোষ। যাক ও সব কথা বাদ দিন। বুঝলেন , আপু ৭১ সাল নিয়ে পড়ে থাকবেন না। তবে আমি একথা নিশ্চয়ই বলবো ,আপনার মতো ত্যাগী মানুষ এখন বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকজন হতে পারে। শুদ্ধতা আর পবিত্রতা হচ্ছে আপনার আদর্শ। তাই আপনি অন্ধকারে পড়ে আছেন। আলোতে বা মঞ্চে যারা আছেন তাঁরা না ধরনের সওদাগর। কেউ মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসা করছে, কেউ চেতনার ব্যবসা করছে, কেউ মুক্তিযুদ্ধের সার্টফিকেট কিনে নিয়ে নানা সুবিধা নিয়ে এখন শিল্পপতি।৭০ সালে যে লোকটা ব্যান্কের কেরানী বা পিয়ন সে এখন ব্যান্কের ডিরেক্টর। এক ভদ্রলোক ন্যাশনাল ব্যান্ক অব পাকিস্তানের কোরানী ছিলেন, এখন জাতির বিবেক। ডাক সাইটে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে কিছু ঘটলেই ভারতে চলে যান। তাঁর বাপদাদা এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক হিন্দুর অত্যাচারে ভারত থেকে পালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছেন ৪৭ সালে। ধরে নিলাম, পূর্ব পাকিস্তান তাঁর ভালো লাগতোনা। এখনতো বাংলাদেশ। এখন কথায় কথায় ভারতে পালাবার প্রয়োজন কি? অনেকে নানা ধরনের পদক নিচ্ছেন। ৪৪ বছরে দেশটা এরকম হয়ে গেছে। বলুনতো , আমরা কেন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? আপু, এতো এক লম্বা ইতিহাস। আমরাতো ইতিহাস নিয়ে কোন গবেষণা করিনা। আমাদের হাতে সময়ও নেই। পুরাণো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে ভাল লাগেনা। আমাকে বলুন কে মাথা ঘামাচ্ছে। আমরা বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বংগবন্ধু আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জিয়া সাহেব আমাদের ইতিহাস। এখন আমরা দুই জাতি। একটা আওয়ামী জাতি, আরেকটা বাংগালী মুসলমান ,যারা নিজেদের বাংলাদেশী বলে পরিচয় দেয়।
আজ পর্যন্ত ঠিক হলোনা কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাতো জিয়া সাহেবের ঘোষণা শুনেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি। মানলাম, সবাই জিয়ার সাহেবের ঘোষণা শুনেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এটা মানতে চায়না। তারা বলে বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। দেখুন, বংগবন্ধু এদেশের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আমিতো কোন দল বা রাজনীতি করিনা। ৭১ সালেও করতামনা। শুধু দেশকে ভালবেসে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি। তখন এত দলাদলি ছিলনা। আওয়ামী লীগ ৭০এর নির্বাচনে জিতেছে বলে তার একটা আইনগত অধিকার ছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার। তাই তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। ভারতও চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব যেন অন্যকোন দল বা নেতার হাতে না চলে যায়। তাই ইন্দিরা সরকার মাওলানা ভাসানীকে নিজের ইচ্ছা মতো চলাফেরা বা কথা বলতে দেননি।
বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও নেতা না দিলেও তিনিই এ দেশের অবিসংবাদিত নেতা। সময় ও পরিস্থিতির কারণে জিয়া সাহেব সামনে এগিয়ে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে প্রথম বিদ্রোহের ঘোষণা তিনিই দিয়েছেন। অন্য বাংগালী অফিসারগণ জিয়া সাহেবের নির্দেশ গ্রহণ করেছেন। তিনি এবং তাঁর টীমই অবাংগালী অফিসারদের নিরস্ত্র করে বন্দী করেছেন। এসব তথ্য নিয়ে কুতর্ক করা মানে আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করা। ভারতের সহযোগিতা ও নির্দেশে মুজিব নগর সরকার গঠিত হলে জিয়া সাহেব সেই সরকারের আনুগত্য মেনে নেন। সেই সরকারের অধীনেই তিনি যুদ্ধ করেছেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। তিনিতো রাজনীতি করতে চাননি। ৭৫ সালের পর ৭ই নবেম্বর ভাগ্যই তাঁকে জনগণের সামনে নিয়ে এসেছে। তাঁরই সেনাপ্রধান হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান তাঁকে বিদ্রোহী মনে করে। ভারত তাঁকে বেশী সাহসী ও বেশী দেশ প্রেমিক মনে করে। একই কারণে বংগবন্ধু তাঁকে সেনা প্রধান করেননি।
জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা চালু করেছেন। তখন আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক কিছু রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্য কোন দল কার্যকর ছিল না। ইসলাম বা মুসলমানের ঐতিহ্যে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। এটা ছিল রাশিয়া ও ভারতের পরামর্শ। ভাবটা ছিল এমন যে দেশটা মুসলমানদের নয়। ধর্ম কোন বিষয় নয়। বংগবন্ধুতো বলেছিলেন ‘আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। আমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশের নেতা। ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কারণ তিনি মনে প্রাণে একজন বাংগালী মুসলমান ছিলেন। জিয়া সাহেব মুসলমানদের ঐতিহ্য ও স্বার্থ বিরোধী রাজনীতির পথ ত্যাগ করে নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু এখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বংগবন্ধুর আদর্শ ত্যাগ করে তথাকথিত ধর্মহীনদের পাল্লায় পড়েছেন। যদি শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি আসলে কি চান? তিনি সহজ সরল ভাষায় কোন উত্তর দিতে পারবেন না। হয়ত তাঁকে দিল্লীর কাছে থেকে উত্তর সংগ্রহ করার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। আমি বলবো , তিনি তাঁর পিতার রাজনৈতিক আদর্শের ব্যাপারে এখন একেবারেই কনফিউজড বা বিভ্রান্ত।
দেখো আয়েশা, বাংলাদেশের মানুষ খুবই ধর্মপ্রাণ। তারা কখনই ধর্ম বিরোধী রাজনীতির দিকে ঝুঁকবেনা। কিছু ভারতপন্থি ঢাকা বা নগর কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী সমাজে ধর্মহীনতা প্রচার করছে। এরাই পহেলা বৈশাখের নামে নানা ধরণের পশু পাখির ছবি এঁকে মিছিল বের করে। এদেরকে এক অদৃশ্য শক্তি অর্থ জোগান দেয় আর সরকার সমর্থন দিয়ে যায়। এরাই জাতীয় কবি নজরুলকে অবহেলা অবজ্ঞা করে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পাঠ সূচীতে নজরুলের তেমন গুরুত্ব নেই। নজরুল ইন্সটিটিউত আছে , কিন্তু নজরুল বিষয়ক কোন গবেষণা নেই। এই বুদ্ধিজীবীরাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
তুমি বলছো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে টানাটানির কথা। আমিতো দেখছি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হতে চলেছে। ছাত্ররা শিক্ষকদের মারধর করছে। শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি বড় হয়ে গেছে। দলীয় রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ছাত্র আর যুব সমাজ। একই দলের ছাত্ররা ক্ষমতার দ্বন্ধে বা প্রভাব বজায় রাখার জন্যে নিজের বন্ধুকে খুন করছে। ছাত্ররা নাকি প্রতিপক্ষ ও নিজ দলের বিদ্রোহীদের শায়েস্তা বা দমন করার জন্যে টর্চার সেল খুলেছে।
সেদিন এক উচ্চ মর্যাদার পুলিশ অফিসার বলেছেন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কোন সংস্কার হয়নি। সে সব আইন ছিল ভারতবাসীকে দমন করার জন্যে। দমন নিবর্তনমূলক আইন গুলোর সংস্কার হয়নি। ফলে পুলিশকে ওইসব আইনের বলে সরকার দলীয় কাজে বা বিরোধী আন্দোলন দমনের কাজে ব্যবহার করছে। থানায় গিয়ে মানুষ কোন সহযোগিতা পায়না। মেয়েরা থানায় গিয়ে লাঞ্ছিত হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দল আর পুলিশের ভিতর কোন ফারাক নেই শুরুতে রেবের যে ইমেজ ছিল তা এখন আর নাই।
এখনতো মত প্রকাশের তেমন স্বাধীনতা নেই। যে কোন কারণেই হোক সকল ধরণের মিডিয়া ভারত পন্থীদের হাতে চলে গেছে। এরা বাংলাদেশ ও মুসলমানের বিরুদ্ধে কাজ করে। এদেশে ইসলামকে দুর্বল করা মানেই হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের মূলে কুঠারাঘাত করা। যেদিন এ মূল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সেদিন আর হয়ত দেশের স্বাধীনতা থাকবেনা।
লেখক: কবি ও এতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »

সকালবেলা ২৭


সকালবেলা ২৭

ঠিক কি বেঠিক জানিনা । এতদিন পর হঠাত্‍ মনে হলো আমাকে কেউ চিনেনা। আমি আপনজনকে চিনতে পেরেছি কিনা তাও ভাল করে জানিনা। এ জগতে আপনজন কে তা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে । আপনজন কারা ? শিশু হওয়া , কিশোর হওয়া, যুবক হওয়া, তার পর বিয়ে করা, সন্তান উত্‍পাদন করা, সুযোগ পেলে সন্তানদের বড় করা, একদিন বুড়ো হয়ে যাওয়া আর মরে যাওয়া । এ ধরনের জীবন কখনই আমার পচন্দ হয়নি। জীবন আমার কাছে একটি আনন্দময় বহতা নদী। নানা পথ বেয়ে, পাহাড় পর্বত পেরিয় একদিন সাগরে মিশে যাবে । আমি তেমন একটি জীবন চেয়েছি । সব টুকু জীবন সেভাবে পাইনি। তবুও আনন্দিত, আমি সুখী ।
মনে বড় ব্যাথা যে আমি যেভাবে ভাবতে চাই ,বলতে চাই সেভাবে পারিনা। আমি আমার বিবিজানকে( স্ত্রী ) অসম্ভব রকম ভালবাসি। তিনি তা বুঝতে পারেন কিনা জানিনা। আমার সন্তাদেরও সীমাহীন ভালবাসি । ওরা বুঝে কিনা জানিনা । সত্যিই আমি আমার পরিবারকে খুবই ভালবাসি।
কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় দেশকে আরও বেশী ভালবেশী । দেশ নিয়ে কথা বলতে ও লিখতে ভালবাসি ।বন্ধুরা বলেন, সরকার বা রাস্ট্র নিয়ে লিখতে গেলে ওরা ক্ষ্যাপে যেতে পারে । তাহলে তোমার বিপদ হতে পারে । এই বুড়ো বয়সে সেটা ঠিক হবেনা। খামাখা ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ কি । এ বয়সে দেশের খেদমত করার আর কি প্রয়োজন । বেশ ভালোইতো আছো । খাও দাও, কবিতা লিখো , গল্প লিখো , পারলে গাণ গাও। দেখবে বেশ দিন কেটে যাবে। সারা জীবনতো হে হে করে বেড়িয়েছো, এখন বউটারে একটু সময় দাও ।
আরে বাবা, বউকে আর কত সময় দিবো । বউয়ের জন্যেইতো বিপ্লবী হতে পারলাম না। সারা জীবন বউ আর পরিবারের কথা ভেবেইতো মিছিল করতে যাইনি । ছাত্র বয়সের কথা বাদ দাও, সে সময়তো বিয়ে করিনি । তাই বিপ্লবী হওয়ার বিরাট সুযোগ ছিলো ।
এখনতো শুধু লিখছি । না লিখে পারিনা । মনের কথা না বলতে পারলে কান্না পায়, অসুস্থ হয়ে পড়ি । তাইতো এই রাস্ট্র আর সরকার ব্যবস্থা আমার ভাল লাগেনা । আমি একথা বললে রাস্ট্র বা সরকারের কি কোন ক্ষতি হয় ? আমারতো তেমন কোন ফলোয়ার নেই । দুয়েকজন থাকলেও তারাতো কেউ বিদ্রোহ করছেনা। তাহলে আমি কিছু কথা বললে সরকারের অসুবিধা কি তা বুঝতে পারিনা ।‌
ভাত কাপড়, চিকিত্‍সা, থাকার জায়গার দাবীতো করছিনা । আমিতো শুধু আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই। সারা জীবন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছি । যা কখনও বাস্তবে কাছে আসেনি। কী আশ্চর্য ! একটা স্বপ্নের কথাও বলতে পারবো না?

Read Full Post »

সকালবেলা ২৬


আজ ২৬শে জানুয়ারী রবিবার। মনে হচ্ছেন ঘরের ভিতর শীতটা একটু বেশী। যাঁরা এখানে নিয়মিত থাকেন তাঁদের হয়ত কম লাগে। হয়ত আমার বয়সের কারণে শীত বেশী লাগছে। যখন লিখতে বেসেছি তখন ঘরের ভিতর বেশ রোদ। বাইরে রোদ থাকলেও শীতের জ্বালা বেশী। সকালবেলার রোধ প্রায়ই পালিয়ে থাকে বা কুয়াশা আর শীত দুয়ে মিলে রোদকে খেদিয়ে রাখে ।
আমাদের দেশে শীতের সকাল গুলো খুবই মজার । আমরা শীতের পিঠা খাই। মজার পিঠা হচ্ছা ভাপা,খোলা, চিতই, দুধ আর রসে ডুবানো সহ আর বহু পিঠা আছে । অনেক পিঠার নাম আমি জানিনা। আমতো এখন ঢাকায় থাকি। আমাদের শিশুরা গ্রামের জীবনের সে সব আনন্দ পায়না। নগর জীবনে হয়ত অনেক সুযোগ সুবিধা আছে,অনেক কাজ আছে। তাই গ্রাম ছেড়ে মানুষ দিনরাত শহর বা নগরে ছুটে আসছে। রাজধানী ঢাকায় নাকি এখন ৪০ ভাগ মানুস গৃহহীন। তারা ফুটপাতে, রেল ষ্টশনে,বাস ও ষ্টিমার টারমিনালে থাকে। যাদের কাজ আছে তারা বস্তিতে থাকে । এজন্যে তাদের দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। রাজধানীর বস্তি গুলো বেশীর ভাগই রাজনৈতিক মাস্তানদের নিয়ন্ত্রনে থাকে । এখান থেকেই সকল ধরনের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মিছিল পরিচালিত হয় । এ জন্যে মাস্তানরা যথারীতি বিল পেয়ে থাকে । মনে হয় এসব মিছিল টিছিলই মাস্তানদের মূল ব্যবসা । এরাই একদিন রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয় এবং নমিনেশন নিয়ে সংসদ নির্বাচন করে।
গতকাল বিকেলে গিয়েছিলাম এশিয়ান আমেরিকান জার্ণালিষ্ট এসোসিয়েশনের ( আআজা ) বার্ষিক নৈশভোজে। সেখানে অনেক নামকরা সাংবাদিকদের সাথে দেখা হয়েছে । সিয়াটল চাপ্টারের সভাপতি মিস মুই আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি ও আমার বড় ছেলে রণি আমার সাথে ছিল। সেই কষ্ট করে সেখানে নিয়ে গেছে। অনুষ্ঠানটি ছিল অভিজাত ও’এশিয়ান রেষ্টুরেন্টে। সেখানে পরিচয় হয়েছে সিয়াটল টাইমসের এডিটর ক্যাথি বেষ্টের সাথে । আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যাথির সাথে দেখা হবে ।

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

তুমিতো ভাল করেই জানো আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বন্ধুরা কতো কাহিনী রটনা করেছে । আমাদের সমাজটাই এ রকম । নেতারা যেমন তেমন দেশের সাধারন মানুষ। অথচ আমরা কথায় কথায় বলে থাকি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস । আমি যতদূর পড়েছি তাতে মনে করি বাংগালীরা নিজেদের স্বদেশকে নিজেরা কখনও শাসন বা পরিচালনা করেনি । পাল সেন বা মুসলমান শাসকরা কেউই বাংলার মানুষ ছিলেন না। এরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল বা বিদেশ থেকে এসে দখল করে এ দেশ শাসন করেছে । সর্বশেষ নবাব ছিলেন সিরাজ উদ দৌলা । তাঁকে বলা হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব । তিনিও ভিনদেশী
ছিলেন। তবুও বাংলার স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলেন। মহা ষড়যন্ত্রের পলাশী যুদ্ধে বিদেশী ইংরেজ বণিকদের কাছে নবাবার পতন হয়। তারপরে এই ইংরেজরা ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ১৯০ বছর বাংলা সহ সারা ভারত দখল করে শাসন করে। ইংরেজ ঐতিহাসিকরাই বলেছেন, হিন্দু রাজা, মহারাজা জমিদারদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে ইংরেজ বণিকরা পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। তারা অনেকই বলেছেন, পলাশী কোন যুদ্ধ ছিলনা, ছিল একটা ষড়যন্ত্র। অর্থনৈতিক কারণেই মূলত এ যুদ্ধ হয়েছিল।
দাদাভাই নওরোজী তাঁর পোভার্টি ইন ইন্ডিয়া বইতে বলেছেন ১৯০ বছরের শোষণের ফলে ভারত দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে। এ বিষয়ে জানার জন্যে আমাদের তরুণ সমাজ উইলিয়াম হান্টারের ইন্ডিয়ান মুসলমানস বইটি পড়তে পারে।
বাংগালী মুসলমানের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে তারা খুবই আবেগী। সময়ের কথায় উঠে আর বসে। মাঝে নাচতে থাকে। হ্যামিলন শহরের বংশীবাদকের মতো কেউ বাঁশী বাজালেই কিছু না ভেবে , কারো সাথে কথা না বলে ছুটতে থাকে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চিলে কান নিয়েছে শুনেই চিলের পিছে দৌঁড়াতে থাকে। হাতটা কানের কাছে নিয়ে দেখেনা কানটা আছে কি নাই। অনেক সময় রাস্তার মাঝে ভিড়ের ভিতর দেখবেন বেশ কিছুলোক ট্রাফিক জ্যাম করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। যদি কাছে গিয়ে জিগ্যেস করেন, কি হলো ভাই আকাশে কি দেখছেন। উত্তর পেলেন সবাই তাকিয়ে আছে তাই তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশে হাঁটুরে মাইর বলে একটা কথা আছে। মাঝে মাঝে হাটে বাজারে দেখবেন দলবেঁধে কিছুলোক একজন মানুষকে মারছে। জিগ্যেস কি হয়েছে ভাই ? জানিনা, সবাই মারছে তাই আমিও হাতে একটু সুখ করে নিচ্ছি। যদি বলেন, যাঁকে মারছেন তিনিতো আপনার শিক্ষক। তখন কি কিছু বলার বা কওয়ার আছে? মাঝে খবরের কাগজে দেখবেন,গণপিটুনীতে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু।
অথর্ব মুনি একজন বিখ্যাত ঋষি। তিনি অথর্ব বেদ রচনা করে হাজার বছর ধরে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বাংলা ভাষায় অথর্ব মানে অকেজো, অযোগ্য, অকর্মা। অথচ এই শব্দটির অর্থ জ্ঞানী। শব্দটি এসেছে প্রাচীন আর্য বা পাহলবী ভাষা থেকে। মূল শব্দটি হচ্ছে অথুরবাঁ।
তোমার আর আমার সম্পর্কটাকে বন্ধুরা কখনই স্বাভাবিক ভাবে দেখেনি। নারী পুরুষের সম্পর্ককে বাংগালীরা কেমন যেন সন্দেহের চোখে দেখে। কারণ তারা নারীকে একটা সামগ্রী মনে করে। প্রাচীন ভারতীয় সনাতন ধর্মে নারীকে অর্ধ মানব মনে হতো। যেমন মনে করা হয় অচ্যুত বা হরিজনদের। গান্ধীজী আদর করে তাদের নাম দিয়েছিলেন ঈশ্বরের লোক বা পুত্র পুত্রী। ভারতের বিভন্ন জায়গায় ধর্ম ষাঁড় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বলা হয় খোদার খাঁসী বা ষাঁড়। এর মানে এদের কোন মালিক নেই। এরা লাওয়ারিশ। রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। মানুষ এদের খাবার দেয়। হরিজনদের অবস্থা ওই পশু গুলোর চেয়েও খারাপ। ওদের কেউ খাবারও দেয়না। এমন কি ওদের স্পর্শ হলে গোসল করে পবিত্র হতে হয়। এখনও এ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। দক্ষিণ ভারতে নাকি হরিজনদের পায়ে ঘুংগুর লাগিয়ে চলতে হয়। শব্দ হলে পথিকজন বুঝতে পারে একজন অচ্যুত আসছে। একটা মেয়ে বিয়ে না করে থাকতে পারবেনা। তাকে পুরুষ বন্ধুরা বিরক্ত করবে। তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে গিয়েই এত কথা বললাম।
রাজনীতির ক্ষেত্রেও বাংগালী হিন্দু মুসলমান একই রকম। তবে ব্যতিক্রম নাই যে তা নয়। খুবই কম বা নগণ্য। কেন বাংগালী মুসলমান ৪৭ সালে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল আমি বুঝতে পারছিনা। মাত্র ২৩ বছরের মাথায় পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করতে নেমে গেল। এখন বলা হচ্ছে ৪৭ সাথে পাকিস্তানে যোগ দেয়া ভুল ছিল। মাত্র ২৩ বছরের মাথায় একটা স্বাধীনতা শুদ্ধ অশুদ্ধ হয়ে গেল। বাংগালী হিন্দুরা ১৯০৫ সালে পূর্ববংগ প্রদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে। এমন কি জমিদার রবীন্দ্রনাথ নিজেও এ দলে যোগ দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কথা উল্লেখ করলাম এজন্যে যে তিনি আমাদের কবিগুরু ও আমাদের জাতীয় সংগীতের সংগীতের স্রষ্টা। তখন সারা অখন্ড বাংলাদেশে মা মা করে মাতম উঠেছিল। কিছুতেই মায়ের দেহ ছেদ করা যাবেনা। এ নিয়ে দাংগা হাংগামাও কম হয়নি। কিন্তু ৪৭ সালে যখন স্বাধীন অখন্ড বংগদেশের প্রস্তাব উঠলো তখন হিন্দু নেতারা এর বিরোধিতা করলেন। কেনই বা ১৯০৫ সালে অখন্ড বংগদেশ চাইলেন আর কেনই বা ৪৭ সালে খন্ড বাংলা চাইলেন তা নিয়ে এখন কোন নেতা ভাবেন কিনা। এখনও যদি বলা হয় আমরা স্বাধীন অখন্ড বংগদেশ চাই তাহলে হিন্দু নেতারা অবশ্যই বিরোধিতা করবেন এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নাই।
বাংগালী মুসলমানরা যদি ৪৭ সালে ভারতের সাথে থাকতো তাহলেতো তারা মহাভারতের অংশীদার হয়ে সুখে থাকতে পারতো। ৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটা হতোনা। পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের সাথে থাকতে পারবেনা এ ভবিষ্যত বাণী করে গিয়েছিলেন মাওলানা আজাদ। তিনি একজন মহাজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর ভবিষ্যত বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে। তাঁর লিখিত ভবিষ্যত বাণীতে তিনি বলেছেন, বাংগালীরা মুসলমান হলেও সকল ক্ষেত্রেই অবাংগালী মুসলমানদের সাথে মিল নেই। এছাড়া ভৌগলিক দূরত্বও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। অথচ বাংগালী মুসলমানেরাই ঢাকায় মুসলীম লীগের প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংগালী মুসলমানেরাই পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। সেই পাকিস্তানকে মাত্র ২৩ বছরে ত্যাগ করেছে। যাক ভালো হয়েছে, দেরীতে হলেও বাংলার অর্ধেক স্বাধীন হয়েছে। বাকি অর্ধেক স্বাধীন হবে কিনা কে জানে। ৪৭ সালে অখন্ড স্বাধীন বংগদেশের প্রস্তাব যদি হিন্দু নেতারা মানতেন তাহলে ৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হতোনা। অতো বড় একটা মানব সৃষ্ট ডিজাস্টারও হতোনা। বাংগালী মুসলমানরা এখন শুধু বাংগালী হওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। বাংগালী মুসলমান শব্দের সাথে নাকি সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ আছে। চলমান সরকার দেশটাকে মুসলমান ভাব থেকে মুক্ত করার জন্যে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে চলেছে।
যা হোক এতক্ষণতো পুরাণো দিনের কথা বললাম। বাংগালী মুসলমানের মনো জগতের কথা বললাম। প্রসংগ ছিল তোমার আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তুমি বিয়ে করোনি। আমি তোমাকে অনেক বুঝিয়েছি। তোমার বাবা মা বুঝিয়েছেন। কিন্তু তুমি কারো কথা শোনোনি। কি কারণে বিয়ে করোনি তা একেবারেই
বোধগম্য নয়। কিন্তু আমি নিজেকে অসহায় আসামী মনে করি। তোমার সাথে পরিচয় হবার আগেই আমি বিবাহিত । আমার বিবিকে আমি সীমাহীন ভালবাসি । তিনিও আমাকে ভালবাসেন। সব জেনে শুনেই তুমি আমার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছো। আমি তোমাকে অনেক বুঝিয়েছি। তুমি এত বাস্তববাদী হয়েও এ ব্যাপারে ছিলে আবেগী ও অবুঝ। তোমার সীমাহীন একাকীত্ব আমাকেও কষ্ট দেয়,কাতর করে তোলে। তুমি একা ধানমন্ডীর বাড়িতে থাকো। এ ব্যাপারটাও আমাকে কষ্ট দেয়। তোমার বাড়িটা দখল করার জন্যে সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। বলেছিলাম, বাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে একটা ফ্ল্যাটে থাকো। ফ্ল্যাট অনেক নিরাপদ। এতে আমাদের কাছাকাছি থাকাও হতো। কিন্তু তুমি রাজী হলেনা । কিন্তু কেন? আমার উপর রাগ করে নিজের জীবনকে ধ্বংস করছো। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তোমার বাবা চেয়েছিলেন আমি তোমায় বিয়ে করি। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি। তুমি ও আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে। তোমাকে নিয়ে আমার ভিতরেও আবেগ বা ইমোশান ছিল। কিন্তু ভয় পেয়েছি স্বামী স্ত্রী হিসাবে আমাদের সম্পর্ক ফাটল ধরবে কিনা। তোমাকে আমি বেশী ভালবাসি বলেই বউ করতে চাইনি। এ নিয়ে সমাজে আমাদের কম ভোগান্তি হয়নি । বাংগালীদের হাতে হয়ত অফুরন্ত সময় থাকে । তাই জীবনের বেশীর ভাগ সময় পরচর্চা করে কাঠায় । এক সময় এদেশটি সুজলা শ্যামলা ছিল । এখন গরিব হয়ে গেছে, হাতে তেমন কাজ থাকেনা । রাস্তায় হাজার হাজার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে । কারো কাজ আছে কারো কাজ নেই । সবই হয়েছে ইংরেজদের ১৯০ বছরের শোষণের ফলে । অনেকেই বলভেন পাকিস্তানীদের শোষণও কম নয় । আমি বলবো, ইংরেজদের শোষণ যদি একশ’ হয়ে থাকে তাহলে পাকিস্তানীদের শোষন দশ । বিগত ৪৪ বছরে ভারত আমাদের জীবনে যে ভাবে অনুপ্রবেশ করেছে তার এক ভাগও করেনি পাকিস্তান। আমাদের দেশে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আছেন যারা বাংগালী সংস্কৃতির নামে মুসলীম বিদ্বেষী ও বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থা এদের ফাইন্যান্স করে থাকে ।
তুমি তোমার পুরো জীবনটাই দেশের জন্যে ত্যাগ করেছো । এখন শুনতে হচ্ছে আপনি কি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, আপনি কি অসাম্প্রদায়িক, আপনি কি সেক্যুলার বা ধর্মহীন । মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হইনি । তবে একথা সত্যি যে,ভারত সরকার ও এর গোয়েন্দা বিভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতর নানা বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছিল । ভারতের সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব ছিল শেখ মনির নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত বাহিনীর । লোক মুখে শুনেছি, স্বাধীনতার পর তাজউদ্দিনকে কেবিনেট থেকে বের করে দেয়ার পিছনে শেখ মনির হাত ছিল। খোন্দকার মেশতাক মুজিব নগর সরকারে সবচেয়ে বেশী আপোষকামী দক্ষিণপন্থী নেতা ছিলেন বলে বহুল প্রচারিত। তিনি নাকি পাকিস্তানের সাথে একটা আপোষ রফার ব্যবস্থা করেছিলেন। ভারত সরকার টের পেয়েই খুব কম সময়ে সবকিছু সেরে ফেলার চেষ্টা করে। এমন কি পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছে বলে চিত্‍কার দিতে থাকে । লোকমুখে শোনা যায় তত্‍কালীন পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর প্রধানকে ঘুষ দিয়ে সীমান্তের কিছু শহরে বোমা ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে পাকিস্তান হয়ে গেল এগ্রেসর বা আগ্রাসী দেশ । এর কিছুদিন আসগেই ভারত রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তি করে। যে চুক্তি বলে রাশিয়া ঘোষণা ভারতের উপর আক্রমণ মানে রাশিয়া আক্রান্ত । পাকিস্তানের বন্ধু চীন ও আমেরিকা তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পালন করেনি । সে সময় পাকিস্তান ছিল বন্ধুহীন। এটা ছিল পাকিস্তানের বড় রকমের ব্যর্থতা। ক’দিন আগে জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক ডেইলি ষ্টারে একটি নিবন্ধ প্রাকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে বংগবন্ধু শেষ পর্যন্ত কনফেডারেশনের প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু ভুট্টো ও পাকলিস্তান সামরিক বাহিনীর ষড়যন্ত্রের ফলে পাকিস্তান ভেংগে গেল আর ভারতের ২৩ বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো।
৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বংগবন্ধুর সাথে পাকিস্তানের শাসকদের ব্যবহার ও আচরণ একেবারেই সঠিক ছিলনা । এক মানুষ এক ভোট নীতিতে ভোট বা নির্বাচন হওয়ায় জাতীয় সংসদের বেশী সিটের অধিকারী হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান । পাকিস্তানের জনসংখ্যার বেশী ভাগ মানুষ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে । অথচ তারা ছিল অর্থনেতিক ভাবে শোষিত । পাকিস্তানের রাজনেতিক নেতা ও সামরিক শাসক গণ উদ্ভুত পরিস্থিতিকে মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে মোকাবিলা করতে পারেনি। রাজনৈতিক বিষয়কে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করা উচিত ছিল তাদের। বংগবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা আলোচনার ভিত্তিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছিলেন। কিন্তু অজানা কোন এক কারণে ইয়াহিয়ার সামরিক শাসকগণ শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধানের আশা করেছিল । শক্তি প্রয়োগের পথটি ছিল একেবারেই ভুল। অনেকেই বলেন, ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা ভুট্টোর পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে
গিয়েছিল । নির্বাচনের পরেই ভুট্টো দুই প্রধানমন্ত্রী থিওরীর জিকির তুললো। তিনি বলেছিলেন,পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের কোন সিট ছিলনা, আবার ভুট্টোর পিপলস পার্টির কোন সিট ছিলনা পূর্ব পাকিস্তানে। মনো জগতে ভুট্টো এভাবেই বিভাজন তুলেছিলেন। রাজনীতিতে গভীর ভাবে আলোচনায় বিশ্বাসীরা এখনও বিশ্বাস করেন দুই পাকিস্তানের সমস্যাটা অবিরাম আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করা যেতো। এমন কি আলোচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা যেতো । কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক ও ভুট্টো সে সুযোগকে ত্যাগ করে শক্তি প্রয়োগের দিকে এগিয়ে গেছে।
ভারতের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা বছরের পর বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। এবং সবাই দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমেই নিজেদের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পাকিস্তান শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নিলে ভারত সুযোগ গ্রহণ করে। ৪৭ সাল থেকেই ভারত এমন সুযোগ ও দিনের অপেক্ষায় ছিল। ৭১ সালে ভারতের হাতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক গণ ও ভুট্টো সে সুযোগ তুলে দেয়। ভারত খুবই আনন্দ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সুযোগ কাজে লাগায়। পাকিস্তানকে পরাজিত করে ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
বৃহত্‍ ও শক্তিশালী ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতায় দেশ স্বাধীন হলে কি হতে পারে সে ব্যাপারে মুরুব্বীরা ও ঝানু রাজনীতিকরা অনেকেই মত প্রকাশ করে গেছেন । আমাদের নতুন জেনারেশন এখন জাতির মৌলিক কোন বিষয় চিন্তা করতে চায়না। তারা মনে করে বাপদাদা ও মুরুব্বীদের চিন্তা ভুল ছিল । তারা মনে করে পাকিস্তান সৃষ্টি ভুল ছিল। মানে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টিও ভুল ছিল। এক কথায় বলা যেতে পারে তারা মনে করে অখন্ড ভারতই ভালো ছিল। হয়ত একদিন তারা তাদের জামানায় সিকিম বা ক্রিমিয়ার মতো সংসদে আইন পাশ করে ভারতের রাজ্য হয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করবে। মনে হয় সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে । ইতোমধ্যেই ভারত থেকে পদ্মভূষণ পদক সম্মাননা আসতে শুরু করেছে। ৪৭ সালে যারা ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তানে এসেছিলেন তাঁদের সন্তানেরা এখন ভারতপন্থী হয়ে গেছেন। মা বাবা , দাদা দাদী , মুরুব্বীদের মেধার প্রতি এখন তরুণদের কোন আস্থা নেই। তারা মুরুব্বীদের সকল সৃষ্টিকে বাতিল করে দিতে চায়। ভারত চায় তথাকথিত সেক্যুলারিজমের মাধ্যমে তরুণ সমাজ ও আগামীদিনের প্রজন্মকে ধর্মহীন করে তুলতে চায়।
আমি জানি , আমার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার সাথে অনেক ক্ষেত্রে তোমার দ্বিমত আছে । তবুও আমরা একে অন্যের মতকে গভীর ভাবে সম্মান করি । চিন্তার পার্থক্য নিয়ে আমাদের মাঝে কখনও বিরোধ তৈরি হয়না ।
বাংলাদেশ এখন এক অসহায় দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে জ্ঞান বা মেধার কোন দাম নেই। হজরত আলীর(রা)একটি বাণী উল্লেখ করলাম। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল দেশের অবস্থা কি এবং কেমন তা জানার উপায় কি? তিনি উত্তরে বলেছিলেন,
১। যখন দেখবে গরীবেরা ধৈর্যহারা আর ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে। ২। মুর্খরা মঞ্চে বসে আছে আর জ্ঞানীরা পালিয়ে বেড়ায়। ৩। রাজা/শাসক বা খলিফা মিথ্যা কথা বলেন। প্রিয় পাঠকগণ ভাবুন, আমাদের সোনার বাংলা এখন কেমন আছে। তাই বলবো, তুমি দেশকে নিয়ে আর অত উতলা হয়োনা। কান্নাকাটি করে নিজের শরীরের ক্ষতি করোনা। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের সন্তানেরা যদি অজ্ঞানতার অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলে আমরা কি করতে পারি। ১৭৫৭ সালে স্বার্থান্বেষী মহল ইংরেজদের হাত মিলিয়েছিল অতি ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যে। বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা চলে গিয়েছিল। যার জন্যে আমাদের ১৯০ বছর পরাধীন থাকতে হয়েছে। কাশ্মীর, ফিলিস্তিন ও রোহিংগাদের অবস্থা দেখেও আমাদের তরুণদের হুঁশ হচ্ছেনা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক।
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »

সকালবেলা ২৫


মাওলানা রুমি আমার বহুদিনের সংগী। বহুদিন আগে মসনবী শরীফ কিনেছি। মনে হয় কয়েকবার পড়েছি। কিন্তু সে ভাবে হৃদয়ংগম করতে পারিনি। আমেরিকার বিখ্যাত রুমী বিশেষজ্ঞ কোলম্যান বার্কসের সাথে পরিচয় হওয়ার আবার রুমী পড়েছি। আমি বিগত ২০ বছর ধরে গালিবের ভক্ত। নিয়মিত গালিব পড়ি। গালিবকে অনুভব করি। গালিবও রূমী ঘরানার মানুষ। রুমী এক সময় ঘরে পড়া হতো। বিশেষ করে মসজিদের ইমাম সাহেবেরা রুমীর কবিতার রেফারেন্স দেন। ফার্সী ভাষা জানার জন্যে আমি কিছুদিন মানে মাস ছয়েক ফার্সী পড়েছি ইরানিয়ান কালচারেল সেন্টারে। আমার সাথী ছিলেন জ্ঞান তালাশকারী আমার বন্ধু শফিকুল আজিজ মুকুল। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের কোন মিল ছিলনা। কিন্তু জ্ঞান অন্বেষণকারী হিসাবে দুইজনই একই পথের পথিক ছিলাম। স্বাধীন মুক্ত চিন্তার কারণে জীবনের শেষের দিকে আওয়ামী লীগের কাছে মুকুলের কোন দাম ছিলনা। বিয়ে না করার কারণে একাই জীবন যাপন করতেন। তাঁর একটি সুন্দর লাইব্রেরী ছিল। আমাদের দুই জনের বন্ধুত্ব নিয়ে আওয়ামী মহলে উত্‍সুক্যের শেষ ছিলনা।
আওয়ামী লীগে জ্ঞানী বা পড়ুয়া মানুষের কদর কখনই ছিলনা। যারা পড়ালেখা করে ভুলে যেতে পেরেছে তাঁদের মূল্য দলে অনেক বেশী। নেতা বা নেতৃ যা জানেন তার চেয়ে বেশী জানা যাবেনা— এটাই হলো দলের কালচার। কিছু শিক্ষিত লোক এখন দলের নেত্রীর কাছের লোক। কিন্তু তাঁদের কোন বিবেক বা সম্মান বোধ নেই
বংগবন্ধু নিজেও বিদ্যা বুদ্ধির তেমন কদর করতেন না। ফলে যারা একটা জ্ঞান গম্যির কদর বুঝতেন তাঁরা সবাই এক সময়ে তাঁর কাছে থেকে দূরে সরে গেছেন। তবে বংগবন্ধুর অনেক গুণ ছিলো। সে বিষয়ে এত অল্প পরিষরে বলা গেলনা। তবে রাজনীতিতে লড়াই করার মতো সাহস তাঁর অন্যদের চেয়ে বেশী ছিল। আমাদের রাজনীতিতে এখন জ্ঞানের আর প্রয়োজন নেই। তাই রাজনীতি করতে পড়ালেখার প্রয়োজন নেই ।
রূমীর কথা বলতে গিয়ে অন্যসব কথা এসে গেছে। এটা আমার বদ অভ্যাস। ধান বানতে শিবের গীত কিনা জানিনা। রুমী আর রাসুলকে(সা) পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে মানুষের ভাল হওয়াটাই সবচেয়ে বড় কথা। যে ভাল মানুষ নয় তার কোন ধর্ম নেই। একমাত্র ভাল মানুষই ধার্মিক হতে পারে।
যার হৃদয় পবিত্র নয় সে কখনই স্রষ্টার লোক হতে পারেনা।
২৯শে জানুয়ারী এখানে মানে রেডমন্ডে রুমীকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান আছে রেডমন্ড পাবলিক লাইব্রেরীতে । অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন ওয়াশিংটন ষ্টেটের পয়েট লরেট মাইকেল। তিনিই আমাকে দাওয়াত করেছেন। তাই রুমীকে নিয়ে ছাত্রের মতো পড়ালেখা করতে হচ্ছে।

Read Full Post »

সকালবেলা ২৪


এখানে সকাল গুলো সারাদিনই মুখ গোমরা করে থাকে । সকাল আর সন্ধ্যায় তেমন কোন ফারাক করা যায়না । ঘড়ি দেখে বুঝতে হয় সকাল না সন্ধ্যা । সকাল হয় সাতটার দিকে। তখনও অন্ধকার । আমি যে বাড়িতে থাকি তার পেছনেই একটা স্বাভাবিক জংগল। বুঝতে পারছিনা কি বলবো। জংগল না অরণ্য । আপনারা ঠিক করে নিবেন । মাঝে মাঝে হরিণ গুলো নেমে আসে খাদ্যের আশায়। সবুজ মাঠ দেখে মনে হবে ও গুলো ঘাস । না ও গুলো শ্যাওলা।
আজান ঠিক সময়ে দেওয়া হয়। পাঁচটার পরে বা সাথে সাথে। এখানে আছর পড়া হয় বেলা দুইটা থেকে তিনটার ভিতর।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছি সকাল সাতটায়। অজু করে নামাজ পড়বো এমন সময় গা কাঁপছিলো। বুঝতে পারলাম আমার সুগার কমে গেছে বা বেড়ে গেছে। নামাজ না পড়ে রক্ত পরীক্ষা করলাম। দেখলাম সুগার লেভেল ৫.৯ এ নেমে গেছে। তাড়াতাড়ি করে আমার বৌমা ইশরাত ফৌজিয়া একটি মিষ্টি কেক নিয়ে আসলো। ওটা মুখে দিলাম। সাধারনত এ অবস্থা হলে শরীরটা দূর্বল হয়ে যায়, শরীরে ক্লান্তি আসে, বুকে সামান্য চাপ তৈরি হয়। আবেগ তৈরি হয়। বেশ কয়েক ঘন্টা এ অবস্থা জারী থাকে।
এমনিতেই বেশ কিছুদিন থেকে আমার মন ভাল যাচ্ছেনা । দেশের কথা ভেবেও মন খারাপ থাকে। এমন একটি দেশ আমি কখনই চাইনি। দেশ কেমন চলবে তা রাজনীতিবিদরাই ঠক করবেন। আমি শুধু আমার কথাটাই বলতে পারি। আমিতো একজন সামান্য কবি ও লেখক । একজন লেখক বা কবি এর বেশী কি করতে পারে। ৭১ সালেও বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করিনি। শুরুর দিকে মানে এপ্রিল মে’তে বিবিসি’র খবর শুনে তা কার্বন কপি করে হাটে বাজারে বিলি করতাম। তখন একদল ছাত্র আমার সাথে কাজ করতো। ফেণীতে পাক বাহিনী আসার পর আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই । এরপরে কখনও বিলোনিয়া আর কখনও ঢাকা। এ সময়ে আমি আর মানু মুন্সী এজোট ছিলাম। মানুর সাহস ছিল ছিল সীমাহীন।। তাই বলছি , লেখকের স্বাধীনতায় কখনই রাস্ট্রের হাস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। লেখকতো লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারের বিরোধিতা করেনা। নিজের কথা বলে যায় । কেউ গ্রহন করতে পারে, নাও গ্রহন পরে। যে কোন বিষয়ে আবেগ তৈরি হলেই ল্যাপটপ বা পিসি নিয়ে বসি। ভাষার দিকে অত খেয়াল করিনা। বেশ ক’বছর হলো আমি ডান হাতে লিখতে পারিনা। বাঁ হাতে কিছুটা কাজ চালাই। তবে লেখালেখির কাজ পিসি বা ল্যাপটপেই সারি।
আমার বড়ছেলে নওশাদ বছর পনেরো আগে আমাকে কম্পিউটার শিখিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পনেরো বছরে তেমন ভাল করে শিখা হয়নি। মেইল করতে পারি, নিজের ব্লগে কবিতা,প্রবন্ধ, নিবন্ধ ইত্যাদি লিখতে পারি। ফেসবুকেও কিছু মতামত দিতে পারি। তবে ফেসবুকে ছেলে মেয়েদের ভাষা, বানান, আদব কায়দা দেখে মনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কি করার আছে। তবুও সময় কাটাবার জন্যে ফেসবুকে,টুইটারে যাই।
শীতের ভিতর এখানে শাতে চাইনি, তবুও এসেছি। ২০১৪ সাল বাংলাদেশের কেমন যাবে জানিনা। ২০১৩ যেমন গিয়েছে তেমন একটা অবস্থা স্বাধীন দেশে হবে আমি কোনদিন ভাবিনি।

Read Full Post »


যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার

তোমরাতো জানো মনটা আমার চিরকালই বিদ্রোহী। সারা জীবনই মনের কথা মতো চলেছি। তাই তোমাদের কথা খুব বেশী একটা শুনতে পারিনি। আমি অনেক ভেবেছি আমাকে নিয়ে।কেন আমি অন্য দশ জনের মতো হতে পারলাম না। বেশ সুখে  শান্তিতেই আমার দিন গুলো কাটার কথা ছিল। যে সংসারকে সুখের বলা হয় তেমন সংসারই আমার । আমার বিবির মতো মানুষ হয়না। তিনি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখার চেস্টা করেছেন। আমার এতোটুকু অসুবিধা হোক তিনি তা কোনদিনও চাননি বা হতে দেননি। তিনি যেমন করে আমাকে ভালবাসেন তেমন করে আমি তাঁকে ভালবাসতে পারিনি। আসলে আমি একজন গৃহহীন গৃহী। সংসারে থেকেও কোনদিন এর ভিতরে ছিলামনা। আমার বিবিই  একা একটা সংসার। তিনিই এ সংসারের মাঝি। তিনি নৌকার মালিক । তিনিই সারাজীবন বৈঠা টেনেছেন। এর সুখ দুখ তিনিই । আমি ছিলাম শুধু তাঁর একজন সাথী। আমরা দুজন একসাথে আছি ৪৭ বছর। ২০১৬তে ৫০ বছর পুরবে। জানিনা সেদিন আমি বা তিনি থাকবেন কিনা। আমি চাই তিনি থাকুন। আমার মতো মানুষের বেশীদিন জগতের  জায়গা বা অন্ন ধ্বংস করা উচিত নয়। আমি কোন দিন কাউকে নিজের দেশের চেয়ে বেশী ভাল বাসতে পারিনি। দেশ আমার প্রথম প্রেম।
৪৩ বছরে আমাদের দেশটি মালয়েশিয়া বা সিংগাপুরের মতো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তা তুমি ভাল করে জানো। তুমিতো দেশকে ভালবেসে আর সংসার করোনি। সেদিক থেকে ভাবলে  তুমি আমার চেয়ে অনেক অনেক বড় দেশপ্রেমিক। সারাটা জীবন দেশকে শুধু দিয়ে গেছো। আমি তেমন করে কিছু দিতে পারিনি। তাই তোমার কাছে গেলেই আমার মাথা অবনত হয়। একজন নারী হয়ে তুমি যা পেরেছো আমি কেন তা পারিনি তা ভেবে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। মাঝে মাঝে নিজের প্রতি সীমাহীন ঘৃণা হয়।
দেশের এখন যে অবস্থা তাতে এ বয়সে আমি শুধু চোখের পানি ফেলি। ভাবলেই কান্নায় আমার বুক ভেংগে যায়। চোখের পানিতেই সব ভিজে যায়। তুমিতো এখনও লড়াই করে যাচ্ছো। কতবার জেলে গিয়েছো তার হিসাব তুমি কখনই রাখোনা। তুমি বলো দেশকে ভালবাসলে একটু কষ্ট পেতেই হয়। আসলে আমরাতো দেশকে ভালবেসেছি  দেশের মানুষের জন্যে। এ মানুষ গুলো সারা জীবন শুধু দিয়ে গেছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। ৪৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের  সময় ভেবেছিলাম এটাই শেষ যুদ্ধ। দেশের সব মানুষ  দুবেলা ভাল করে খেতে পারবে। আব্রু রক্ষা করার মতো পরণের কাপড় পাবে। ওদের ছেলেমেয়েরা  লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। চিকিত্‍সার  অভাবে মরে যাবেনা । না যা ভেবেছিলাম তা হয়নি । কখন হবে তা ও জানিনা । কখনও হবে কিনা তাও বলতে পারিনা ।
এখন আমাদের বয়স বেশ হয়ে গেছে। একটি সুখী দেশের নাগরিক হিসাবে নিজের দেশকে দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। তুমিতো এ দেশের কাছে কিছুই চাওনি নিজের জন্যে। চেয়েছিলে শুধু দেশের মানুষের জন্যে সুখ। এখতো তুমি বড়ই একা। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলে ২২/২৩ বছর বয়সে । যে বয়সে মানুষ প্রেম করে, ভালবেসে ঘর বাঁধে । তোমাকে অনেক বার বলেছিলাম,ওই বয়সে যুদ্দে যেওনা। তুমি রাগ করতে, অভিমান করতে, কেঁদে ফেলতে । বলতে যুদ্ধ বুঝি শুধু ছেলেদের কাজ । শেষ পর্যন্ত তুমি যুদ্ধে গেলে। যুদ্ধের ক্যাম্পে, ময়দানে, সীমান্তে সবাই তোমাকে কাছে পেতে চেয়েছে, আদর করতে চেয়েছে। তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখি তাই বন্ধুরা প্রায় সবাই আমার উপর নাখোশ ছিল। তোমার বাবা মাও আমার উপর ক্ষ্যাপে ছিলেন । তাঁরা ভাবতেন আমিই তোমাকে উসকিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম।
২০শে ডিসেম্বর তুমি আমি এক সাথে ঢাকায় ফিরে আসি । তোমাকে ধানমন্ডির বাসায় রেখে আসতে গিয়ে আমি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছি। । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুলাই মাসের দিকে তোমার মা এ জগত ছেড়ে চলে গেছেন । সে খবর আমি তোমাকে জানাতে পারিনি । জানাবার মতো আমার সাহস ছিলনা । সে সময়ে তোমাকে সান্তনা দিবার ক্ষমতাও আমার ছিলনা । বাসায় ঢুকে তুমি মা মা বলে বাসার ভিতরে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলে । আমি ড্রয়িংরুমে তোমার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম । তাঁর দু চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে পানি ঝরছিলো । তাঁর কান্না দেখে আমারও চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।
তুমি কিচেন থেকে ড্রয়িংরুমে ফিরে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিলে আর জানতে চাইছিলে মা কোথায় ? তখন তোমার বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । আমিও চুপ, তিনিও চুপ । তুমি ধীরে ধীরে আন্দাজ করছিলে। যে রাতে বাসা ছেড়েছিলে সে রাতে তোমার মা অসুস্থ ছিলেন । প্রচন্ড ব্যথায় কাঁতরাচ্ছিলেন আর তোমাকেই ডাকছিলেন। বলছিলেন, আশি, কোথাও যাসনে মা। আমাকে আর কষ্ট দিসনে মা। তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো। সে রাতেই তুমি মাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলে আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ।
তুমি এবার প্রচন্ড কান্নায় ভেংগে পড়লে । মাগো মাগো বলে চিত্‍কার করতে লাগলে । আমি বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে তোমাকে সান্তনা দিবো । তোমাকে ওই অবস্থায় রেখেই আমি নিষ্ঠুরের মতো চলে এসেছিলাম । আমারও কষ্ট হচ্ছিলো, চোখ মুচতে মুচতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম । আমার সারা শরীর কাঁপছিলো । আগে থেকেই সবাই জানতো আমি ঢাকায় ফিরেছি । শান্তি নগরের বাসায় সবাই অপেক্ষা করছিলো । আমার ভাইবোন সবাই উপস্থিত । আমার কাঁধে একটি ঝুলানো ব্যাগ ছিল । পরণে ছিলো যুদ্ধের পোষাক । আমার দুই বছরের রণি বলেছিলো যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে একটি সাইকেল কিনবে । বিবিজানকে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে আদর করলাম । তিনি যেন লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইলেন । আমার চুল দাড়ি ও গোপের দিকে তাকালেন । অভ্যাস মতো বললেন,এক্ষুনি বাথরুমে যাও,দাড়ি গোপ কামাও । মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে । এখন আর মুক্তিযোদ্ধাগিরি করার করার প্রয়োজন নেই । কালই অফিসে যাও, দেখো চাকুরী আছে কিনা । একদিনের জন্যেও এই পোষাক আর পরবেনা । আল্লাহই ভাল জানেন , কতদিন গোসল করোনি । ভাইবোন সবাই পা ছুয়ে সালাম করলো । নিকট দূরের আত্মীয় স্বজনরাও বাসায় এলেন । অনেকেই বললেন, আমরা লোকে মুখে আপনার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সেদিন বেগম সাহেবাকে বিশ তিরিশ জনের খাবার রান্না করতে হয়েছে।
পরেরদিন প্রেসক্লাবে যাওয়ার আগে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম । তোমার বাবাকে ড্রয়িংরুমেই পেয়েছিলাম । মনে হলো , তাঁর মনের জোর একেবারেই শূণ্যের কোঠায়। স্ত্রী বিয়োগের বেদনা তিনি আর বইতে পারছেন না। কথা বলতে বলতে ফুপিয়ে কাঁদছেন। চায়ের কাপ হাতে ড্রয়িংরুমে তুমি আসার আগেই তিনি বললেন, বাবা আমার মেয়েটার এখন কি হবে । তুমি আমাকে পথ দেখাও। আমি আর ক’দিন বাঁচবো? মেয়েটার একটা সুরাহা দেখে না গেলে আমার দোজখেও ঠিকানা হবেনা ।আমার দু’হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,মেয়েটার একটা ব্যবস্থা। করে দাও । তুমি ছাড়া এ জগতে ওর আর কেউ নেই । চারিদিকে ওর শুধু বদনাম । কেউ এ মেয়েকে বিয়ে করবেনা । আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারিনা । ও নিজে কিভাবে মুখ দেখাবে আমি ভেবে পাচ্ছিনা। আমার বাড়ির লোভে বহু বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা ওকে বিয়ে করতে চায় । বাড়ির চাকর হওয়ার যোগ্য নয় এমন ছেলেরা ক’দিন পরেই বাড়ি বয়ে এসে ঝামেলা পাকাবে । এমন সময় তুমি এসে পড়ায় তিনি মুখ বন্ধ করে চুপ হয়ে গেলেন।
তুমি বললে, বাবা আমাকে নিয়ে তুমি অত চিন্তা করোনা । মুক্তি যুদ্ধ করেছি দেশদের জন্যে । দেশের মানুষ যদি বদনাম করে করুক । দেখিনা, দেশ এখন কোন দিকে যায় । তুমি ভাবছো আমাকে নিয়ে , আর আমি ভাবছি দেশকে নিয়ে । সোনার বাংলা গড়বো বলেইতো দেশ স্বাধীন করেছি । অনেক বড় কাজ করেছিস মা, এমন বড় কাজ আর হয়না। কিন্তু তুইতো মেয়ে মানুষ। সংসারতো করতেই হবে। সংসার ধর্ম কর্ম দুটোই। আমি তোকে বিয়ে দিয়েই মরতে চাই। বেশীদিন বাঁচবোনারে মা। তুই একা কেমন করে থাকবিরে মা । এরশাদ যদি তোর দায়িত্ব নেয় আমি শান্তিতে মরতে পারবো। আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। কিছু বলবো তেমন সাহস আমার ছিলনা।
তুমি খালুজানকে ধমক দিয়ে বলে উঠলে, বাবা তুমি পাগলামী করলে আমি আর এখানে থাকবোনা। তুমি শান্তিতে থাকো, এসব নিয়ে একেবারেই ভেবোনা। এরশাদকে তুমি অস্বস্তিতে ফেলোনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে নিয়ে সে জ্বালাতন সহ্য করেছে। ও না থাকলে আমি বেঁচে ফিরে আসতে পারতাম না। তুমিতো জানো ও বিবাহিত। সে তার স্ত্রীকে সীমাহীন ভালবাসে। সে তোকেও ভালবাসে।
ভালোতো বাসবেই, সে আমার পরম বন্ধু। জগতের সবাই জানে সে আমার বন্ধু।
আয়েশা, দেশকে ভালবেসে আমরা অনেকটা পথ, অনেক গুলো বছর পার করে এসেছি। তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচে বড় পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় তুমি আমাকে পাশ করিয়ে দিয়েছো। তুমি বহু আসগেই বলেছো তোমার স্বপ্নভংগ হয়েছে। তোমার মন ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম তা আর হবে কিনা জানিনা।
আমাদের শরম চলে গেছে। কথায় কথায় বলি ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। দু’লাখ মা বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। এসব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। পুরো জাতিটাই মিথ্যার বেসাতি করে চলেছে। শহীদ আর বীরাংগনাদের নিয়ে ব্যবসা চলছে। লাখ লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে। সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে। আসমরা ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে কত কথা বলেছি। এখন সে রকম ২২ পরিবারকে কিনতে পারে ২২শ’ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পার্লামেন্টের বেশীর ভাগ সদস্যই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ওরাই দেশ চালায় রাজনৈতিক দল চালায় । যে যত বেশী কর ফাঁকি দিতে পেরেছে সেই তত ধনী হতে পেরেছে। দেশটা এখন মুরুব্বীহীন এক সুন্দরী নারী বা সম্পদে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশের আব্রু নিয়ে চারিদিকে টানাটানি চলছে। এরাই সুযোগ পেলেই কোরাসে সুর তুলে গাইতে থাকে ‘আমি তোমায় ভালবাসি’। এদের লাজ লজ্জা নেই, মা বোন নেই। তাই নিজের মাতৃভুমির ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছে। এরাই আবার চেতনার কথা বলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গালাগালি করে। জাতির মহান নেতা, স্থপতি বংগবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়াকে দলবেঁধে গালাগাল করে। এ ব্যাপারে দলগুলোর ভিতর সীমাহীন প্রতিযোগিতা। ৪৩ বছরে এ দেশের রাজনীতিকরা কম ধনী হননি। যেকোন ভাবেই যে কেউই একবার এমপি হতে পারলে চৌদ্দ গোষ্ঠির ব্যবস্থা হয়ে যায় ।
তোমার আমার দূর্ভাগ্য আমরা এখনও জীবিত আছি এমন বাংলাদেশকে দেখবার জন্যে । আমি ভেবেছিলাম সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমার কথাই সত্য হলো। দেশের কিছুই হলোনা। কোটি লোক এখনও নিয়মিত চিকিত্‍সা পায়না, সবার ঘরে শিক্ষা প্রবেশ করেনি, বেকারত্বের চিত্‍কার আজ ঘরে ঘরে। নেতাদের ছেলে মেয়ে ,আত্মীয় স্বজনের বিদেশে লেখাপড়া না করলে চলেনা। দেশ প্রেমিকের রাজনীতি আজ কসাই খানায় নিয়মিত জবাই হচ্ছে। সত্‍ রাজনীতির চীত্‍কারে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস আজ কম্পিত। বাংলাদেশ আজ দুইটি দেশ। একটি বাংলা, অপরটি বাংলাদেশ। জাতি আজ দুইটি, একটি বাংগালী,অপরটি বাংলাদেশী। একদল পাকিস্তান বা চীনের পক্ষে, আরেকদল ভারত আর রাশিয়ার পক্ষে। রাজনীতিকরা কথায় বলে ফেলেন, দেশে এখন দুই পক্ষ। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি আর স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। দেশের মানুষকে ভাগ করার জন্যে রাজনীতিবিদরা উঠে পড়ে লেগেছেন। শুধুমাত্র রাজনীতির হীন স্বার্থে এমন চরম বিপর্যয় তাঁরা ডেকে এনেছেন।
অনেকেই বলেন, দেশকে আজ এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে ভারত। আবার অনেকে বলেন,পাকিস্তানের চরেরা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভারত এখন যা করছে তাকে আমি সঠিক মনে করি। ৭১ সালে তারা আমাদের জন্যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছে, তাদের হাজার হাজার সৈন্য মারা গেছে, সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমাদের উপর মুরুব্বীয়ানা করার তাদের ন্যায্য অধিকার আছে । আমাদের রাজনীতি ,সমাজনীতি ,অর্থনীতি ,সংস্কৃতি সবই আজ তাদেরই দান। এছাড়া, ভারত আমাদের বৃহত্‍ প্রতিবেশী। চীনের সাথে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এক তুবড়িতে ৭১ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে। ভারততো আশে পাশের সবদেশের মুরুব্বী। বাংলাদেশের মুরুব্বী হতে আপত্তি কোথায়। শুনেছি,ভারতের নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে বলে থাকেন, ৭১ সালে বাংলাদেশ বানাতে তাদের যে খরচ হয়েছে তা আজও উঠে আসেনি। খরচ পুষিয়ে দেয়ার জন্যে মুজিব নগর সরকার একটি গোপন চুক্তি করেছিল বলে জোর গুজব রয়েছে। ভারত নাকি সে চুক্তির ষোলয়ানা বাস্তবায়ন চায়। সে চুক্তিটা কি তা ভারতের প্রকাশ করা উচিত্‍ এবং বাংলাদেশ সরকারের তা বাস্তবায়ন করা দরকার।
আয়েশা, আমি জানি তোমার বেদনার কোন শেষ নেই। সীমাহীন বেদনা সহ্য করার জনেই তুমি এখনও বেঁচে আছো। তরুণদের কথা শুনে তোমার হয়ত আরও বেশী কষ্ট হয়। ওরাতো জানেনা,মুক্তিযুদ্ধ কি ছিল। ওদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধুই কবিতা বা গাণ । রংতুলির ছবি। বুকফাটা কান্নার একটি ডকুমেন্টারী। ওদের কাছে সবই কল্পনা,রংগিণ ক্যানভাস। ওদের তুমি ক্ষমা করে দাও। কারণ ওরা এখনও বাপদাদার বায়াদলিল জানেনা। ৪৩ বছরেও আমরা তাদের ভাল করে জানাতে পারিনি আমাদের পূর্ব পুরুষের কথা, ইংরেজের ১৯০ বছরের শোষণের কথা, ক্ষুদিরাম আর শের আলী খানের কথা। তাই আজ দেশের এমন অবস্থা হয়েছে। ভারতকে ভাল করে তার পাওনা বুঝে নিতে দাও। মনে রাখতে হবে সবকিছুরই একটা হিসাব আছে। ভারতের স্বার্থ তোমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে। ভারত পাকিস্তান ভেংগেছে তোমাকে প্রিয়তম প্রতিবেশী হিসাবে পাওয়ার জন্যে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »

Older Posts »