আওয়ামী লীগের নানা রংয়ের ইতিহাস / এরশাদ মজুমদার
মোহাম্মদ জাকারিয়া( যাকারিয়াও হতে পারে) নবাব সিরাজ উদ দৌলার উপর পাঁচশ’পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। সিরাজ উদ দৌলার উপর সারা বিশ্বে অনেক বই বেরিয়েছে। ১৯৮৫ সালে আমি পলাশী দিবস পালনের জন্যে রাজধানীতে পোষ্টারিং করেছিলাম। একটি সেমিনারেরও ব্যবস্থা করেছিলাম। সে সময়ে সিরাজ সম্পর্কে অনেক গুলো বইও সংগ্রহ করেছিলাম। কিছু বই হয়ত এখনও আছে। তবে অনেক গুলো বই জাতীয় প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটিকে দিয়েছি। দান কথাটা বললামনা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার খাতিরে। এখন যদি বলি বই গুলো দেখতে চাই তাহলে জবাব আসবে সদস্যরা নিয়ে আর ফেরত দেননি। আমাদের দেশে বইয়ের ক্ষেত্রে এ রকম হয়ে থাকে। সারাদেশের বড় বড় সব লাইব্রেরী বা পাঠাগারে এ কান্ড চলছে এবং চলে এসেছে।
বিদেশী ঐতিহাসিকরা বলেছেন পলাশী যুদ্ধ নয়, বলতে হবে পলাশীর ষড়যন্ত্র। পলাশীর প্রভাব হলো ইংরেজরা সুবেহ বাংলা( বাংলা বিহার উড়িষ্যা) দখল করে কালক্রমে পুরো ভারত দখল করে। ভারতের সম্পদ দখল করে বিলেতে পাচার করে এবং ঐ ক্ষমতা বলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা দখল করে নেয়। ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করে সিরাজের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করতে থাকে। সেই মিথ্যা ইতিহাসকে ছাপিয়ে সত্য প্রকাশ হতে অনেক সময় লেগে যায়। সত্যকে এভাবেই পথ অতিক্রম করতে হয়। সিরাজের ক্ষেত্রে ইংরেজরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তিনি সত্যিই একজন দেশ প্রেমিক ছিলেন। এই যুবক নবাব ইচ্ছে করলে ইংরেজদের ক্রীড়নক হয়ে সুখে থাকতে পারতেন। না তিনি তা করেননি। বিনিময়ে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে।
২৩শে জুন ছিল পলাশী দিবস। এদিন সুবেহ বাংলা পরাধীন হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবী, এই দিনেই নাকি এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ববংগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর মুসলীম লীগ সরকারের নেতারা যে কারণে দেশটি স্বাধীন হয়েছে সে কারণ গুলোর প্রতি নজর না দিয়ে গোষ্ঠি প্রীতি শুরু করেছিলেন। প্রথমেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল ভাষা নিয়ে ১৯৪৭ সালেই। মুসলীম লীগ এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে কেন্দ্র নির্ভর হয়ে পড়েছিল। ফলে জনপ্রিয় বিষয় গুলোর সমাধান না করে দমন নীতির আশ্রয় নেয়। মুসলীম লীগের রক্ষণশীল দক্ষিনপন্থি গ্রুপ তখন ক্ষমতায়। ফলে প্রগতিশীল বা গণমুখি গ্রুপ বাধ্য হয়ে নতুন দল গঠণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। তারই প্রকাশ ঘঠেছে ১৯৪৯ সালে ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পুরাণো ঢাকার রোজ গার্ডেনে বিরোধী গ্রুপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দলের সভাপতি হলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান আর সাধারন সম্পাদক হলেন টাংগাইলের শামসুল হক। খোন্দকার মোশতাক আর শেখ সাহেব হলেন যুগ্ম সম্পাদক। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন পর্যন্ত দলটির নাম ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ। আমি নিজের কানে শুনেছি, মাওলানা সাহেব জনসভায় বলতেন, আমরাও মুসলীম লীগ। নুরুল আমিনের দল হচ্ছে সরকারী মুসলীম লীগ,আর আমরা হচ্ছি জনগণের(আওয়ামী) মুসলীম লীগ। আমরা কৃষক শ্রমিকের কথা বলার জন্যে আলাদা মঞ্চ গঠণ করেছি। মাওলানা সাহেব আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। তখন আসামে মুসলীম লীগ ক্ষমতায় ছিলো। ৫৫ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর দলটির নাম পরিবর্তন করে শুধু আওয়ামী লীগ করা হয়। দলের উপর কংগ্রেস ও অদৃশ্য বাম দল ও ব্যক্তির প্রভাব বাড়তে থাকে। এটি সম্পুর্ণ নতুন দল ও নীতি হিসাবে যাত্রা শুরু করে। সে হিসাবে বর্তমান আওয়ামী লীগের জন্মদিন ২৩শে জুন নয়। মাওলানা সাহেব ৫৭ সাল পর্যন্ত দলের সভাপতি ছিলেন এবং মৌলিক ইস্যু গুলোতে দ্বিমত হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তখন আওয়ামী লীগ কেন্দ্র ও প্রদেশে ক্ষমতাসীন। ইতোমধ্য শেখ সাহেবকে দলের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়। দলে শেখ সাহেবের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও শেখ সাহেব ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের একনিষ্ঠ তাবেদার। ৭০ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ বা শেখ সাহেব ছিলেন বাংগালী পুঁজির মুখপাত্র। তিনি মুখে সাধারন মানুষের কথা বলতেন। বাংগালীদের স্বার্থের কথা বলে বাংগালী পুঁজির বিকাশের জন্যে কাজ করেছন। তখন তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন রেহমান সোবহান গ্রুপ। রেহমান সোবহান সাহেবদের উপর অবাংগালী পুঁজিপতিদের বিরাট প্রভাব ছিল। এরা মুখে সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন,আসলে ছিলেন পুঁজিপতিদের সেবক।
মাওলানা সাহেব ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করলেন। আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর সকল সম্পর্ক ছিন্ন হলো। শেখ সাহেব তাঁর আওয়ামী লীগ নিয়ে নিজের মতো করে চলতে লাগলেন। কালক্রমে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিষ্ঠা লগ্নের প্রায় সকল নেতাই বেরিয়ে গেলেন। ৭০ সাল নাগাদ শেখ সাহেব পূর্ববংগ বা পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হলেন। রাজনীতিতে তিনি নতুন ধারা চালু করলেন। ৭০ সালের নির্বাচনটি হলো বাংগালী আর অবাংগালীর মাঝে। এর মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ লাভ করে। ফলে পূর্ববংগে বাংগালী অবাংগালীর মাঝে বহু দাংগা হয়। সে সময়ে দলের ক্ষমতাবান শক্তি হয়ে দাঁড়ালো তরুণ বিপ্লবী ও বিদ্রোহী ধারা। যাদের উপর শেখ সাহেবের কোন প্রভাব ছিলনা। তরুণরা গোপনে স্বাধীনতার দাবী তোলে। ৭০ সালের নির্বাচনে দেশের বেশীর ভাগ দল অংশ গ্রহণ করেনি। ফলে শেখ সাহেব ১৬৭ সিট লাভ করে সারা পাকিস্তানের একমাত্র নেতায় পরিণত হন। অপরদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো আর সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্যে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পাকিস্তানের এই মহা জটিল অবস্থার সুযোগ নেয়ার জন্যে ভারত অপেক্ষা করছিলো। ফলে পরিস্থিতি শেখ সাহেবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমন অবস্থায় ২৫ শে মার্চ মধ্যরাত্রে পাকিস্তানী সেনাশাসকরা আক্রমণ চালিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। মধ্যরাত্রেই শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগারে চলে গেলেন। অপরদিকে লাখ লাখ মানুষ জন্মস্থান ত্যাগ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অবস্থান নেয়। এ সময় ভারত সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। ভারত সরকার আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের নেতা ও কর্মীদের তেমন কোন সহযোগিতা করেনি। বরং ভারত সরকারের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাথে অন্যকোন দল যেন যুক্ত না হয়। এজন্যে ভারত সরকার মাওলানা সাহেবকে গৃহবন্দী করে রাখেন। ন্যাপের মহাসচিব যাদু মিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
কোলকাতায় যে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় তার বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে দাঁড়ালো ছাত্রলীগের বিপ্লবী অংশ। একে খোন্দকারের বইতে এর কিছু বক্তব্য পাওয়া যাবে। বিপ্লবী ছাত্র নেতারা মুজিব বাহিনী গঠণ করে আলাদা ট্রেনিং নিতে থাকেন। ছাত্রনেতারা ভবানীপুরে অফিস করে র’য়ের মাধ্যমে ভারত সরকারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে থাকে। এ বিষয়ে বিশদ জানার জন্যে মহিউদ্দিন আহমদের জাসদের রাজনীতি বিষয়ক বইটিও পড়তে পারেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। এ সময়ে খন্ডিত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন ভুট্টো। তিনি জানিয়ারী মাসের ৮ তারিখে শেখ সাহেবকে মুক্তি দিয়ে ঢাকায় পাঠান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা ঘটনাবলী শেখ সাহেবের জানা ছিলনা। ফলে শেখ মণি ও তাজউদ্দিনের সাহেবের দন্ধে তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন। অবশেষে শেখ মনির জয় হলো এবং শেখ সাহেব তাজউদ্দিনকে ক্ষমতা থেকে বের করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এর মানে হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ পরিবারের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হলো। অপরদিকে ভারত জাসদকে শক্তিশালী করতে থাকে।
শেখ সাহেবের বেদনাদায়ক পতনের পর শেখ হাসিনা দিল্লীতে এসে সরকারী নিরাপত্তা ও আতিথিয়তায় বসবাস করতে থাকেন। দিল্লী অবস্থান কালে শেখ হাসিনার দেখাশুনা করতেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। শেখ সাহেব পুরোপুরি ভারতীয় নীতির সমর্থক ছিলেন না। ফলে দিল্লীর সাথে তাঁর বনিবনা হচ্ছিলনা। পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি(অর্গেনাইজেশন ফর ইসলামিক কনফারেন্স) সম্মেলনে যেতে রাজী হলেন। কিন্তু ভারত এতে বাধা দিতে লাগলো। ভারতের এ ধরনের ব্যবহার শেখ সাহেবের আত্ম সম্মানে লাগলো। তিনি জিদ ধরলেন সম্মেলনে যাবেন। ভারতের অনাকাংখিত আপত্তি তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। শুরু হলো শেখ সাহেবের সাথে দিল্লীর মানসিক যুদ্ধ। চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার জন্যে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এটা ভারত একেবারেই পছন্দ করেনি। তাই অনেকের বিশ্লেষণ শেখ সাহেবের মর্মান্তিক পতনের জন্যে ভারত দায়ী। মোশতাকের সময়েই চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব কমতে থাকে। বাংলাদেশ বাংগালী মুসলমানের দেশ হিসাবে বিকশিত হতে থাকে। জিয়াউর রহমান সাহেব ক্ষমতা এলে ভারত সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জিয়া সাহেবের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের শ্লোগাণ ভারত সমর্থন করেনি। ভারত চায় বাংলাদেশ হবে শুধু বাংগালীদের দেশ, বাংগালী মুসলমানের দেশ নয়। বাংলাদেশে বহু ধর্ম ও গোত্রের মানুষ বাস করে। তাঁরা অনেকেই বাংগালী নয়, চাকমা, মারমা, রাখাইন, গারো,মং সাহ বহু উপজাতি আছেন। তাঁরা বাংলাদেশী চাকমা। জাতীয় সংসদে শেখ যখন বলেছিলেন,‘তোরা সব বাংগালী হয়ে যা’। তখন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র লারমা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমরা বাংগালী নই। আমরা বাংলাদেশের চাকমা। বাংলাদেশ হওয়ার পর পরই পাসপোর্টে লেখা হতো সিটিজেন অব বাংলাদেশ। এখন লেখা হয় বাংলাদেশী। ভারত চায় পাসপোর্টে বাংগালী বা সিটিজেন অব বাংলাদেশ লেখা হোক।
জিয়াউর রহমান সাহেব যে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা ভারত একেবারেই সমর্থন করেনি। ফলে ,ভারত শুরু থেকেই জিয়া সাহেবকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। জিয়া সাহেব দেশের ভিতরে যে রাজনীতি শুরু করেছিলেন তা ছিল বাংগালী মুসলমানের রাজনীতি। যা ভারত একেবারেই সমর্থন করেনি। ভারত মনে করে ৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম বা মুসলমানিত্ব ত্যাগ করেছে বাংলাদেশ। ভারত একটি নানা ধর্ম, ভাষা ও জাতির দেশ। হিন্দী কোন জাতিরই ভাষা নয়। ভারতের দক্ষিণ ও উত্তর আজও বিভক্ত। ভারত নামমাত্র একটি সেক্যুলার(ধর্মহীন) দেশ। এখন সেখানে কট্টর ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়। গুজরাটে হাজার হাজার মুসলমান হত্যার পর মোদী সাহেব বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন। এর মানে কংগ্রেসের তথাকথিত সেক্যুলার রাজনীতি ছিল একটি ভন্ডামী। বাংলাদেশেও সেক্যুলার রাজনীতি একটি ভন্ডামী। কয়েকদিন আগে আইন মন্ত্রী বলেছেন, সরকার কোরাণ ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করবেনা। কিন্তু বাংলাদেশ কোরাণ ও সুন্নাহ ভিত্তিক দেশ নয়। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বা ভোটার মুসলমান হওয়ার কারণে সরকার মাঝে মাঝে ধর্মীয় শ্লোগাণ দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে হিজাব পরেন ও নিয়মিত নামাজ পড়ার কথা প্রচার করেন। আমি নিজেও বিশ্বাস করি তিনি একজন নামাজী ও নিয়মিত কোরাণ পাঠ করেন। কিন্তু তাঁর দল ও সরকারের আচার আচরণ ধর্মীয় নয়। আওয়ামী লীগের ইমেজ হচ্ছে একশ’ভাগ সেক্যুলার বা ধর্মহীন। আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল রাজনৈতিক শক্তিকে আওয়ামী লীগ মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, জংগী ও জেহাদী বলে প্রচার করে। ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কারণে সকল সরকারই ব্যক্তিগত ভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে। হিন্দুত্ববাদী কট্টর ধর্মবাদী মোদীজী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদি নির্বাচন বিরোধী সরকারও থাকে তাহলেও দিল্লী তাকে সমর্থন করবে। জেনারেল মঈনকে দিল্লী ক্ষমতায় এনেছিল হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার জন্যে। ৪৭ সাল থেকে ভৌগলিক কারণে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে তার যে স্বার্থ ছিল তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছিলে হাসিনার আমলে তার ষোলয়ানা সুযোগ এসে গেছে। আর এ সুযোগ এসেছে শেখ হাসিনার কারণে।কারণ শেখ হাসিনাই একমাত্র ভারতের স্বার্থ গুলোকে নিরাপদের বাস্তবায়ন করতে পারেন।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার একটি মতামত সভা অনুষ্ঠিত হয় মোদীর ২২ দফা চুক্তি নিয়ে। মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু একটি লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই বক্তব্য সমর্থন করি। বিদ্যুত, সীমান্তচুক্তি, কানেকটিভিটি বা করিডর নিয়ে অভিজ্ঞ আলোচক গণ নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। মিশু বলেছেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত অবৈধ। ২২ দফা চুক্তি আজও জনগণের কাছে পেশ করা হয়নি। দেশের মানুষ জানেনা ওই চুক্তিতে কি আছে।
বিখ্যাত চিন্তাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে বাংলাদেশ আজ পরাজিত। সর্বত্রই হিন্দীর চর্চা। চৌধুরী সাহেব একজন সেক্যুলার বা ধর্মমুক্ত মানুষ। তাই তিনি ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশকেও ভয় পাচ্ছেন। বাম মোর্চা মনে করে সকল মত ও পথের দেশপ্রেমিক জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের এক মঞ্চে সমবেত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
৫৪ সালে মুসলীম লীগের পতনের জন্যে সকল মত ও পথের দল ও ব্যক্তি যুক্তফ্রণ্ট গঠণ করেছিলেন। এই ফ্রণ্টের নেতা ছিলেন মাওলানা ভাসানী , শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। এই ফ্রণ্টে ইসলামীদল, কংগ্রেস, কমিউনিষ্ট ও আওয়ামী লীগ। বড় শরীক ছিল আওয়ামী লীগ। ফলে মুসলীম লীগের পতন হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল গণবিরোধী মুসলীম লীগের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্র থেকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ভারত। ফলে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ভারত এ দক্ষিন এশিয়ার একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হতে চায়। এ ব্যাপারে আমেরিকা ভারতকে সমর্থন দিতে চায় বলে বহুল প্রচারিত। আমেরিকার উদ্দেশ্য চীনকে ঠেকানো। ভারতও চায় শেখ হাসিনা চীন বিরোধী বলয়ে থাকুক। চীন এখন আদর্শগত বিরোধে না গিয়ে মাড়োয়ারীদের মত বড় বড় ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায়। শেখ হাসিনাও চীনকে বড় বড় ব্যবসা দিয়ে হাতে রাখতে চায়। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ এখন ব্যক্তিগত স্বার্থের ঝুলি এবং ভিন্ন পতাকাবাহী স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বের নামাবলী পরা ভারতের একটি বোবা রাজ্য। ভারতের পশ্চিম বংগ রাজ্য নদীর পানি হিস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে। বাংলাদেশ আজ দিল্লীর হাতে অসহায় হয়ে পড়েছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com