Feeds:
Posts
Comments

Archive for March, 2014

সকালবেলা ৭৭


সকালবেলা ৭৭

ইতিহাস কি ভাবে রচিত হয় ? এ বিষয়টা জানার আগ্রহ কি সবার থাকে? আমার ধারণা সবার থাকেনা। স্কুল জীবনে ইতিহাস পড়াটা ছিল খুবই বিরক্তিজনক। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই। তবে মানুষের ইতিহাস জানার আগ্রহ আমার খুবই বেশী। এ নিয়ে লিখতেও আমার ভাল লাগে। যাঁরা ইতিহাসবিদ তাঁদের ইতিহাস রচনার একটি পদ্ধতি আছে। তাঁরা ইতিহাস রচনা নিয়ে গবেষণা করেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ান।
এখন প্রশ্ন হলো, ইতিহাস কার? মানুষের না দেশের , না রাজা বাদশা বা শাসকের? এখন আমরা যা পড়ি বা দেখি তা রাকা বাদশাহ ও শাসকদের ইতিহাস। সাম্রাজ্যগুলো যখন গণতান্ত্রিক বা জনগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে তখন মানুষের সংগ্রাম বা লড়াইয়ের কথা লিপিবদ্ধ হতে শুরু করেছে। ইতিহাসবিদদের নিরপেক্ষ নির্মো্হ নির্লোভ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা কি সেরকম ইতিহাসবিদ দেখতে পাই? না, তেমন নির্মো্হ ইতিহাসবিদ দেখা যায়না।
যেমন ধরুণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা গণতন্ত্রের ইতিহাস। এতো বেশী দিন আগের কথা নয়। ৪৭ সাল থেকে পরের ঘটনাবলী দেখেছেন এমন বহু মানুষ এখনও জীবিত আছেন। আমি নিজেও একজন সাংবাদিক হিসাবে খুব কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও ৫০ বছরের রাজনৈতিক ঘটনাবলী দেখেছি। আমি এক রকম দেখেছি, আরেকজন আরেক রকম দেখেছেন। রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে এত কথা কেন? সবার কাছেইতো এক রকম হওয়ার কথা ছিল। না এক রকম হয়নি। প্রত্যেকেই নিজ নিজ চিন্তাধারা থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা করতে চান। চলমান সময়ে যেমন ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে , অতীতেও তাই হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ দেখে তাদের দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে। একই ভাবে বিএনপিও দেখে। আওয়ামী লীগের চিন্তার সাথে ভারতীয় চিন্তার মিল আছে। ভারতীয়রা চায় বাংলাদেশ ১৬আনা বাংগালীর দেশ হোক। পশ্চিম বাংলা বা ভারতীয় বাংলা আর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চিন্তা এক হবে। আজ থেকে ২০/৩০ বছর পর যদি রেফারেন্ডাম হয় তাহলে বাংলাদেশ ভারতের সাথে যোগ দেবে। এজন্যে এখনি এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী কাজ করছেন। তারা ভারতীয় পদক গ্রহন করা শুরু করেছেন।
বিএনপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী কথাটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি মুসলীম রাস্ট্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। বংগবন্ধুও তাই চেয়েছিলেন। তিনি ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
সিরাজ উদ দৌলার ইতিহাস দুই রকম। ইংরেজ ও হিন্দু ঐতিহাসিকদের একাংশ সিরাজকে ভিলেন বানিয়েছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে সিরাজ ছিলেন দেশপ্রেমিক। তিনি ইচ্ছা করলে সবার সাথে সমঝোতা করে সুখে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি।
বাদশাহ আওরঙজেব একজন ধর্মপ্রাণ শাসক ছিলেন। হিন্দুরা তার বিরুদ্ধে হাজারো রকমের পুস্তক রচনা করেছে। এখনও ভারতের স্কুল কলেজে আওরঙজেবকে খলনায়ক হিসাবে চিত্রিত করা হয়। আপরদিকে আকবরকে তারা মহানায়ক মনে করে। কারণ আকবর নতুন সমঝোতার ধর্ম দ্বীনে ইলাহী প্রতিষ্ঠার চেস্টা করেছিলেন।
বাংলাদেশ এখন চিন্তার জগতে দ্বিধা বিভক্ত। এই বিভক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় চিন্তা চেতনা, সংস্কৃতি ইতিহাস রাজনীতি সবই বিভক্ত। ভারত অন্ধভাবে নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

Read Full Post »


সকালবেলা ৭৬

বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন জাতীয় নেতা। এ ব্যাপারে কারো মনে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনার মনে এ সন্দেহ আছে। তাই শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের লোকেরা বংগবন্ধুকে দেবতা বানাতে গিয়ে বিতর্কিত করে ফেলেছে।
বংগবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন স্কুল জীবনে একজন মুসলীম লীগ কর্মী হিসাবে। তিনি এ কথা তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন। তিনি হিন্দুদের অত্যাচার সম্পর্কে বলেছেন। তিনি ২০ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করে কোলকাতা যান কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্যে। সেখানে সোহরাওয়ার্দি সাহেবের সান্নিধ্য লাভ করে। তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেব অখন্ড বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বংগবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করেছেন। ৪৭ সালে পূর্বপাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় এসে মুসলীম লীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। কিন্তু তখন মুসলীম লীগ গণবিরোধীদের দখলে চলে গেছে। আসাম প্রদেশ মুসলীম লীগ সভাপতি মাওলানা ভাসানী ঢাকায় এসে দেখেন মুসলীম লীগে তাঁর কোন স্থান নেই। মুসলীম লীগ খাজাগজাদের হয়ে গেছে। মাওলানা সাহেব সরকার বিরোধী প্ল্যাটফরম হিসাবে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীম গঠণ করেন। বহু তরুণ মুসলীম লীগ কর্মী তাঁর সাথে যোগ দেয়। শেখ সাহেব তখন মাওলানা ভাসানীর ডান হাত। মাওলানা সাহেব বলতেন ,‘ আমরা জনগণের মুসলীম লীগ, আর ওটা সরকারী মুসলীম লীগ’।
এভাবেই শেখ সাহেব একদিন জাতীয় নেতায় পরিণত হন। শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। কিন্তু তিনি কখনও বলেননি যে, তিনি ইসলাম বা মুসলমান বিরোধী। তিনি তাঁর ইমেজ তৈরি করেছিলেন একজন উদারপন্থী মুসলীম নেতা হিসাবে। ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে তিনি বলেছিলেন, আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। আমি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম রাস্ট্রের প্রধান।
৭৪ সালে তিনি ভারতের বিরোধীতাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তান গিয়েছিলেন ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের জন্যে। তখনি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এখন শেখ হাসিনা বংগবন্ধুকে সেক্যুলার(ধর্মহীন) মুসলীম বিরোধী নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ভারত চায় বাংলাদেশ শুধু বাংগালীদের রাস্ট্র হোক। ধর্ম যেন এদেশে গুরুত্ব লাভ না করে। বাংলাদেশ যেন মুসলমান দেশ হিসাবে বিকশিত না হয়।
বর্তমানে বংগবন্ধুকে নিয়ে যেসব বিতর্ক চলছে তার জন্ম দিয়েছে শেখ হাসিনা ও বামপন্থী অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগাররা। এরা আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেছিল বংগবন্ধু জীবিত থাকতেই। তখন বংগবন্ধু বলেছিলেন , সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে আমার কাছে আসুন। সে কথা তাদের মনে আছে। এখন আওয়ামী লীগের ভিতরে ঢুকে পড়েছে ভারতের পরামর্শে। ওরাই এখন শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে চালায়।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭৫


সকালবেলা ৭৫

বংগবন্ধু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। আমার বিশ্বাস এ ব্যাপারে সবাই একমত। রাজনৈতিক কারণে হয়ত অনেকেই দ্বিমত করবেন। মাওলানা ভাসানী ও বংগবন্ধুকে আমি অতি কাছে থেকে দেখেছি। তাঁদের সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে। দুজনই আমার কাছে পিতৃতূল্য। মাওলানা সাহেব ক্ষমতার রাজনীতি করতেন না, শেখ সাহেব করতেন। শেখ সাহেবের লক্ষ্য ছিল রাজনীতি করে ক্ষমতায় গিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আর মাওলানা সাহেব মানুষকে রাজনীতি ও অধিকার সচেতনের আন্দোলন করতে। মাওলানা সাহেব যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি তখন তাঁর দল পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষমতায়। কিন্তু তিনি থাকতেন সন্তোষে কুড়ে ঘরে। ঢাকায় এলে ভক্তদের বাড়িতে উঠতেন।
পাকিস্তানের বিদেশ নীতির প্রশ্নে দ্বিমত হওয়ায় মাওলানা সাহেব আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাপ গঠণ করেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও শেখ সাহেব একদিকে গেলেন আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করার দাবী নিয়ে। ৭২ সালের আগে শেখ সাহেব ছিলেন মার্কিনপন্থী। ৭২ সালে সমাজতন্ত্রী হয়ে গেলেন রাতারাতি ভারত ও রাশিয়ার পরামর্শে। এমন কি মনিবাবুরাও তাঁর পিছে পিছে ঘুরতে লাগলেন।
৭২ এর পরে শেখ সাহেবের সাথে মাওলানা সাহেবের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিলনা। তবে শেখ সাহেব মাওলানা সাহেবকে পিতার মতো সম্মান করতেন। মাওলানা সাহেব যখন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের দাবী তুলেছেন তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বলেছেন ৯৮ ভাগ স্বায়ত্ব শাসন দেওয়া গেছে।
শেখ ৬দফা নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে মাওলানা সাহেব তা সমর্থন করেননি। ৬দফা ছিল কনফেডারেশনের প্রস্তাব। ৭১ সালের ২৪শে মার্চ পর্যন্ত তিনি ৬দফা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তা না মেনে ২৫শে মার্চ রাতে শক্তি প্রয়োগ করে পূর্ব পাকিস্তানকে সাথে রাখার চেষ্টা করেছে। ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ভারত আগে থেকেই জানতো কি ঘটতে যাচ্ছে। তাই সীমান্তে শরাণার্থী শিবির খুলে রেখেছিল। ২৫শে মার্চ রাত ১২টার দিকে সেনাবাহিনী শেখ সাহেবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে যায়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি কি কোন ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন? এ বিষয় নিয়ে ৭২-৭৫ এ শেখ সাহেব মুখ খোলেননি। তাঁর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ / শেখ হাসিনা বিতর্কটি জন সমক্ষে আনেন। এটা এখন বিশাল বিতর্ক। আওয়ামী লীগ/শেখ হাসিনা একবার বলেন ৭ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা, আবার বলেন ২৬শে মার্চ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কোন ধরণের ঘোষণা না দিয়ে গ্রেফতার হয়ে পাকিস্তান চলে গেছেন। এ ব্যাপারে তাজউদ্দিন সাহেব, আসম রব ও ওয়াজেদ সাহেব লিখিত বক্তব্য রেখেছেন।
এই বিতর্ক উত্থাপন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ শেখ সাহেবকে দলীয় নেতায় পরিণত করেছে। তাঁর নামে মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করে চলেছে।
সকালবেলা ৭৫

শেখ সাহেবকে এ দেশের সবাই প্রধান জননেতা মনে করেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তিনি বাংলাদেশের প্রধান নেতা। জিয়া সাহেব নিজেও কখনই বংগবন্ধুকে নিয়ে কোন বিতর্ক তোলেননি। আওয়ামী লীগ কোন স্বার্থে কার নির্দেশে শেখ সাহেবকে জাতীয় নেতা থেকে দলীয় নেতায় পরিণত করছে কে জানে।
যে কোন কারণেই হোক, কালুরঘাট রেডিও থেকে জিয়ার ঘোষণাই ২৬/২৭শে মার্চ দেশবাসী শুনতে পেয়েছে।
প্রথম ঘোষণায় জিয়া সাহেব বলেছেন, I major Zia do hereby declare independence of Bangladesh as Head of The Provisional Government of Bangladesh. I appeal to the world to support our freedom struggle. এরপরে দ্বিতীয় ঘোষণায় জিয়া সাহেব বলেছেন, I major Zia do hereby declare indepence of Bangladesh onbehalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman. I appeal to world to support our freedom struggle.
ইংরেজী ঘোষণাটা প্রায়ই এ রকম। আমি হুবহু উল্লেখ করতে পারিনি। স্মৃতি থেকে লিখেছি। আমি নিজে কানে শুনেছি ওই ঘোষণা।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭৪


সকালবেলা ৭৪

হোসাইন বিন মনসুর হাল্লাজ(৮৫৮-৯২২)। বাগদাদে মাজার। দশ বছরের মতো জেলে ছিলেন। নির্যাতিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত খলিফা তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। খলিফার মা শাহঘাব বেগম মনসুরের ভক্ত ছিলেন। তিনি বহুবার মনসুরের সাথে জেলখানায় দেখা করেছেন।
শাহঘাব বেগম বলেছিলেন, আমি কি একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি? মনসুর উত্তর দিয়েছিলেন, আমার ব্যক্তিগত বা নিজস্ব বলতে কিছুই নেই।
হাল্লাজের ‘ আনা আল হাক্ব’ নিয়ে এখন ও সুফীবাদের জ্থানী গুণীরা গবেষণা করে চলেছেন। ‘আমিই সত্য’। কে এই আমি? সত্য কে এবং কি? আল্লাহপাকের জাতি বা মৌলিক নাম আল্লাহ। বাকি সব নাম গুণ বাচক। যখন বলা হয় ‘আল্লাহর রংয়ে রঞ্জিত হও’, তখন বুঝতে হবে বলা হচ্ছে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহপাকের বহু গুণবাচক নাম। তন্মধ্যে হাক্ব একটি গুণবাচক নাম।
হাল্লাজ যখন বলেন আমি বা আনা তখন এই আমি বা আনা কে? হাল্লাজ বা আমি এরশাদের ভিতর কে বাস করে যাঁকে দেখিনা, যিনি নিরাকার। সেই তিনিই এখানে আমি, মনসুর নয়। যিনি ভিতরে নিরাকার অদৃশ্য হয়ে থাকেন তিনি বিদায় নিলে আমি এরশাদ বা মনসুর কি থাকে? মাটির এ দেহটাকে খুব দ্রুত গতিতে মাটির নীচে রেখে আসা হয়। উপরে থাকলে পঁচে যাবে , দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে।
মনসুরের ‘আনা’ হচ্ছে সেই অদৃশ্য নিরাকার আমি যা মনসুরের মুখে শব্দ হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। শব্দ রূপ রং রস মুর্ত বিমূর্ত সবই জাগতিক। খোদার কাছে এর কিছুই নেই। যেমন কোন কিছু আঁকার বা লেখার আগে কাগজ বা কাপড় সাদা থাকে। আঁকার বা লেখার পড় সেই সাদা আর দেখা যায়না। তখন আমরা শুধু দৃশ্যমান ছবি,রং ক্যানভাস বা তুলি নিয়ে কথা বলি। পিছনের অদৃশ্য মূল সাদার কথা মনে থাকেনা। এর আগেতো তা নিরাকার ছিল। ছবি আঁকার পরেই তা রূপ লাভ করেছে। জগতের সবকিছুই এমন। খোদা নিজেই এ জগতের রূপ দিয়েছেন। সেই রূপের ভিতরেই রূপ নিয়ে আমরা খেলা করি। আমরা কবি শিল্পী সুফী গায়ক হই। সুফীরা বলেন, আল্লাহর সুরেরও শেষ নেই নুরেরও শেষ নেই।
মনসুরের মন আত্মা বা রূহ হাক্বের সাথে মিশে গিয়েছিল। মনসুর ছিলেন দৃশ্যমান পাত্র মাত্র। এক খন্ড মাটি। যার কোন দামই নাই। তাই আমি এরশাদ মনে করি হাক্ব মনসুরের মাধ্যমেই নিজেকে প্রকাশ করেছেন।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭৩


আজ ২৬শে মার্চ। ৪৪তম স্বাধীনতা দিবস। বিশ্ব রেকর্ড স্থাপনের সরকারী উদ্যোগ চলছে। সকালে মানে বেলা ১১টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়েছি প্রেসক্লাবে যাওয়ার জন্যে। রাস্তায় নেমেই দেখলাম দোকানপাট খোলা। রাস্তায় অন্যান্য দিনের মতো ভিখারীরাও আছে। ফুটপাতের দোকানগুলোও আছে।
এখানে সেখানে বাতাসে বংগবন্ধুর ভাষণ ভেসে আসছে। লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। ভোর বেলা যথা নিয়মে তোপধ্বনি(তোপ শব্দটা বাংলা নয়) শোনা গেছে। কাজটা সেনাবাহিনীর। যথা নিয়মে প্রধানমন্ত্রী, রাস্ট্রপতি( নামটা দ্বিতীয় স্থানে দিলাম)। কারণ ওই পদটার কোন ক্ষমতা নেই। এটা পদের দোষ নয়। সংবিধান ওই পদকে ক্ষমতা দেয়না। যেমন সংবিধানের নাগরিকদের নামে চালানো হয়। রাস্ট্রটাও ওই পদের নামে চালানো হয়। আমাদের দেশে নাগরিকরা প্রজা(subjet).বৃটিশ প্রজা ছিলাম, পাকিস্তানের প্রজা ছিলাম, এখন বাংলাদেশের প্রজা। কারণ সংবিধানে সেভাবেই আছে। রাজার যুগেও প্রজা বলা হতো, এখনও বলা হয়। রাস্ট্রের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ইংরেজীতে বলা হয় ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’। রিপাবলিকের বাংলা করা হয়েছে প্রজাতন্ত্র। এটা হতে পারতো জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। হয়নি, কারণ মনোজগতে প্রজা শব্দটি রয়ে গেছে। এসব নিয়ে আমাদের মিডিয়া, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী কেউ ভাবেন না। না ভেবেই চলে গেছে ৪৪ বছর। ইতোমধ্যে দুটো বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেছে।
টিভি চ্যানেলে দেখলাম, রাস্তাঘাটে চিরাচরিত নিয়মে সাধারন মানুষের সাক্ষাত নেয়া হচ্ছে। প্রশ্ন জাতীয় সংগীত গাইতে পারো বা পারেন। উত্তর- জাতীয় সংগীতততততত******। বস্তির একজন লোকের সাক্ষাত। আপনি কেমন আছেন? কেমন আর থাকবো। একবেলা খাইতো আরেকবেলা না খেয়ে থাকি। ফুটপাতে কত বছর আছেন। হবে কয়েক বছর। পুলিশকে কিছু টাকা দিলেই হয়। না দিলে তুলে দেয়।
ছাত্রের সাক্ষাত। তুমি কি জাতীয় সংগীত গাইতে পারো? না পারিনা। গাণটা কি জানো? জানি দুয়েক লাইন বলতে পারবো।
অর্থনীতিবিদদের সাক্ষাত। আমরা এগিয়েছি নিশ্চয়ই। কিন্তু মালয়েশিয়া, কোরিয়া, সিংগাপুর ,ভিয়েতনামের মতো হতে পারিনি। এক সময় আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম।
আমার সাক্ষাতকার আমি নিজেই নিলাম। পাকিস্তান আমলের আধা স্বাধীন ২৩ বছর আর বাংলাদেশ আমলের পুরো স্বাধীন ৪৪ বছরে কয়েক হাজার মানুষ শত/হাজার কোটি টাকার ধনী হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা সবাই ধনী হয়েছেন। কোটি কোটি গরীবের থাকার জায়গা নেই, চিকিত্‍সা নেই, শিক্ষা নেই। সকল সরকারী আধা সরকারী চাকুরেরা ঘুষকে বাধ্যতামুলক করেছে। প্রতিটা মন্ত্রী এমপি কোটি কোটি টাকার মালিক।
৪৪ বছরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ বিরোধী শক্তি বেড়েছে বলে সরকার চিত্‍কার করছে। দেশ আজ বিভক্ত। একদল বাংগালী, আরেকদল বাংলাদেশী। একদল স্বাধীনতার পক্ষে, আরেকদল স্বাধীনতার বিপক্ষে। জাতীয় ইস্যু কি তা কেউ জানেনা।
সেক্যুলারিজম বনাম ধর্মের লড়াই চলছে। রাজনৈতিক মাইনরিটি ক্ষমতায় বসে আছে জোর করে।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭২


সকালবেলা ৭২

আজ ২৬শে মার্চ। ৯২২ সালের এইদিনে জগতের শ্রেষ্ঠতম সুফী কবি হোসাইন বিন মানসুর হাল্লাজের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি বলেছেন, ‘আনা আল হাক্ব’, I am the truth. তখনকার জ্ঞানী গুণীরা মনে করেছিলেন তিনি নিজেকে খোদা দাবী করেছেন। ফলে তাঁকে দীর্ঘকাল জেলে রাখা হয়। নির্যাতন করা হয়। শেষ পর্যন্ত টুকরো করে তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
মনসুর হাল্লাজের মাজার এখন বাগদাদে আছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সে মাজারে যাচ্ছে। কিন্তু সে সময়ের খলিফার নাম কেউ জানেনা।
আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দাহ আমার হয়ে গেলে আমি তার হয়ে যাই। আমার হাত তার হাত। এখন শরীয়ত এবং মারিফাতের জ্ঞানী গুণীরা বুঝতে পেরেছেন সে সময়ের রায় ভুল ছিল। মাওলানা রুমী জগতের শ্রেষ্ঠতম সুফী কবি। তিনি হাল্লাজের ৩শ বছর পরে জগতে এসেছেন। তিনি বলেছেন, মনসুর স্রষ্টা ও সৃষ্টির গোপন রহস্য ফাঁস করে দিয়েছে। আমি করলে আমারও মৃত্যুদন্ড হবে।
জগতের মহাজগতের সবকিছুই সৃষ্টি। রূহ এক বিস্ময়কর জিনিস যা শুধু মানুষের ভিতর আছে। মানুষের ভিতর ক্বালব আছে। সে ক্বালবে আল্লাহ বাস করেন। যিনি আল্লাহকে অনুভব করেন তিনি আল্লাহর হয়ে যান। মনসুর একজন তেমন কবি ও সুফী। তাঁর দেহটার নাম ছিল মনসুর। তাই তার বাক্যকে মনসুরের বাক্য বলে ভুল করেছে। তাই শরীয়তের আদালত দেহটাকেই হত্যা করেছে বা ধ্বংস করেছে। কিন্তু ক্বালবের খোদা কোথায় গেলেন? মনসুরের যখন শাস্তি হচ্ছিলো তখন তিনি হাঁসছিলেন। সবাই জানতে চেয়েছিল হাঁসির কারণ কি? তিনি বলেছিলেন, প্রেমের পরিক্ষা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত প্রেমই জয়ী হলো
অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হলে হজরত ইব্রাহিমকে(আ) ফেরেশতারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তিনি বলেছিলেন, আমার অবস্থা আমার মালিক জানেন। তিনিই ব্যবস্থা নিবেন। তখন আল্লাহপাক বললেন, হে আগুন, তুমি ইব্রাহিমের জন্যে আরামদায়ক হও।
আমি এখন মনসুরের বাংলা অনুবাদ করছি। আপনারা আমার জন্যে দোয়া করবেন।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭১


সকালবেলা ৭১

রাজনীতির উদ্দেশ্য এক সময়ে ছিল মানুষের সেবা করা। কেউ শুধু সমাজ সেবার মাধ্যমে জনগণের জন্যে কাজ করতেন। তাদের বলা হয় সমাজ সেবক। এঁরা এলাকায় স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা মক্তব মসজিদ মন্দির করেন। রাজনীতিতে কখনই জড়ান না।
যারা রাজনীতিক তাঁদের লক্ষ্যও গণমানুষের সেবা করা। রাজনীতিকদের পরিসর সারাদেশ। তাঁরা দল করেন, দলের আদর্শ প্রচার করেন, জন সমর্থন সংগ্রহ করেন। তারপর এক সময় জন সমর্থন মানে নির্বাচন করে দেশ পরিচালনার জন্যে সরকার গঠণ করেন। এক সময় রাজনীতি করতেন উকিল মোক্তার, এলাকার বিত্তবান লোকেরা। এদের কোন অভাব ছিলনা।
এখন সে সব দিন আর নেই। এখন রাজনীতি নাকি পেশা। জীবন যাপনের একটা পদ্ধতি। ফুলটাইম পলিটিশিয়ান। রাজনীতি করেই বাড়ি গাড়ি, ধন সম্পদ, খ্যাতি যশ লাভ করা যায়। রাজনীতি করার জন্যে জ্ঞানের একেবারেই প্রয়োজন নেই। কিছু লেখাপড়া থাকলে ভাল। না থাকলেও অসুবিধা নেই। ১৭/১৮ বছর বয়সে একটু অভদ্রতা বা মাস্তানী দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তাহলে সিনিয়ার নেতা বা মস্তানদের নজরে পড়ে যাবেন। শুরু হয়ে নতুন জীবন। আপনি কমিটিতে এসে যাবেন। মিছিল করবেন, মিছিলের নামে চাঁদা তুলবেন। কালক্রমে একদিন আপনি দলের নেতা হবেন, মন্ত্রী হবেন, সংসদ সদস্য হবেন।
রাজনীতির মুল মন্ত্র এখন শক্তি। আর এই শক্তি হলো ধন জন, টাকা পয়সা। যার যত বেশী তার তত বেশী প্রভাব প্রতিপত্তি। রাজনীতিতে এখন নানা ধরণের টুলস বা সরঞ্জাম লাগে। সরঞ্জাম হলো দাও, ছুরি, রামদাও, তলোয়ার, ভোজালী, পিস্তল, একে ৪৭, হাতবোমা, গ্রেনেড, মটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, কার, মিছিলের জন্যে বাস ও ট্রাক।
এক সময় লাগতো জন সমর্থন, লিফলেট, চুংগা ও হাতে লেখা পোস্টার। এখন সে সব লাগেনা। এক সময় পান বিড়ি হুক্কা ছিল আপ্যায়ন। এখন দামী সিগারেট, দামী হোটেলে খাবার, দামী ক্লবের সদস্যপদ ও দামী মদ।
আজকের সকলাবেলায় এ কথা গুলো বলছি নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার জীবন পড়ে। তিনি নাকি জগতের দরিদ্রতম প্রধানমন্ত্রী। বাড়ি গাড়ি , ব্যান্ক ব্যালেন্স কিছুই নাই। এমন কি কোন ব্যান্ক একাউন্টো নাই। তিনি ছিলেন অভিজাত ধনী পরিবারের সন্তান। রাজনীতি করবেন বলে সব ত্যাগ করেছেন। তাঁর তিনটি মোবাইল ফোন আছে। একটি আধুনিক। বাকী দুটো প্রায় অচল। তাঁর জীবন যাপনের খরচ বহন করে তাঁর দল। তিনি ছোট্ট একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। এখন তাঁর বয়স ৭৫। পুরো জীবনটাই দান করেছেন মানুষের জন্যে।
এবার আসুন , আমাদের রাজনীতিকদের দিকে তাকান । কিছুদিন আগে রাজনীতিকদের সম্পদের হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। সুশীল কৈরালার মতো একজন রাজনীতিকও বাংলাদেশে নেই। যদি কোথাও কেউ থাকে দয়া করে জানাবেন।
১৯৬০ সালের পিছনের দিকে ফিরে যান। হয়ত দুয়েক জন পাবেন। অকল্পনীয় জনপ্রিয় নেতা মাওলানা ভাসানী কথা ভাবুন। এমন কি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শেখ সাহেবের কথা ভাবুন। এরা কেউ সম্পদের পিছে দৌঁড়াননি। মাওলানা সাহেবের কোন সম্পদই ছিলনা। শেখ সাহেবের ধানমন্ডীর বাড়িটা করে দিয়েছে বন্ধু বান্ধব। সোহরাওয়ার্দী , শেরে বাংলা ছিলেন ডাকসাইতে আইনজীবী। লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন নিজের পেশা থেকে। কিন্তু কিছুই রেখে যাননি। কিন্তু এখন শেখ সাহেবের বংশধরদের দিকে তাকান। একই ভাবে জিয়া সাহেবের পরিবারের দিকে তাকান। ভেবে নিজেরাই বলুন কি রায় দিবেন।
তাহলে সোনার বাংলা বলে লাভ কি?
৪৩ বছরে ৪৩ হাজার লোক অকল্পনীয় ধনী হয়েছে বাংলাদেশ আর রাজনীতিকে ব্যবহার করে। ৭০ সালে পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানী ও শেখ সাহেব লড়াই করেছেন। এখন ধনীরা সরাসরি দেশ চালায়। রাজনীতিকরা তাঁদের হাতের পুতুল।
এইতো ক’দিন আগে মালয়েশিয়ার গৌরব মহাথির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তিনি কেমন করে মালয়েশিয়াকে জগতের সম্মানিত দেশ করেছেন? আমাদের দেশে কি একজন মহাথির হতে পারেনা?

Read Full Post »

অপেক্ষা


তিনি বললেন
দরজায় কে দাঁড়িয়ে আছো
আমি বললাম
আপনার গোলাম।
তিনি বললেন
তুমি কেন এসেছো
আমি বললাম
আপনাকে সালাম
পেশ করবো বলে।
তিনি বললেন
তুমি কতক্ষণ
অপেক্ষা করবে
আমি বললাম
যতক্ষণ আপনি
না ডাকবেন
তিনি বললেন
তুমি কতক্ষণ জ্বলবে
আমি বললাম
পুণরুত্থান পর্যন্ত।

Read Full Post »

সকালবেলা ৭০


সকালবেলা ৭০

এইতো ক’দিন আগেই আমি লিখেছি ৭ই মার্চের বংগবন্ধুর ভাষণের কথা। সেদিন আমি ময়দানে আমি ছিলাম সাংবাদিক হিসাবে। পুরোভাষণটা শুনেছি। হয়ত দশ বারো ভাগ ভুলে যেতে পারি। ৮ই মার্চের কাগজ দেখলেই বুঝা যাবে বা জানা যাবে তিনি কি বলেছেন এবং সেই বলার মানে কি। প্রসংগটা তুলছি এ কারণে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ৭ই মার্চের ভাষণ উপলক্ষ্যে বলেছেন, স্বাধীনতার শত্রুরা এখনও সক্রিয়। সে অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী ঘরাণা বা ভারতপন্থী। শেখ হাসিনার একটা সুবিধা আছে। আর সেটা হলো তিনি কখনই নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভাবতে পারেন না। তিনি ভাষণ দিলেই বিরোধী দল, খালেদা জিয়া বা অস্থিত্বহীন স্বাধীনতা বিরোধী বিষয় ছাড়া কথা বলতে পারেন না। তাঁর দৃষ্টিতে তিনি এবং তাঁর দল ছাড়া দেশের বাকি মানুষ স্বাধীনতা বিরোধী। এ পরিস্থিতি ৭২ সালে দেখা দিয়েছিল। তখন এনায়েতুল্লাহ খান তাঁর কাগজ হলিডেতে বলেছিলেন, ‘সিক্সটি ফাইভ মিললিয়ন কোলাবোরেটর’। তারপর বংগবন্ধু বুঝলেন এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। একই কারণে তিনি কালাবোরেটরদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ভারতের পরামর্শে জাতিকে ইতোমধ্যে বিভক্ত করে ফেলেছেন। স্বাধীনতার পক্ষশক্তি ও বিপক্ষশক্তি। আওয়ামী লীগের ভোট বাদ দিলে আওয়ামী লীগের মতে দেশে এখন ৬০ ভাগ মানুষ স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তি।
তোফায়েল সাহেব জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। তাঁর জাতীয় ঐক্যার ডাক বংগবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকের মতো। ৭ই মার্চ বংগবন্ধু ডাক দিয়েছেন,কিন্তু কোন ঘোষণা দেননি। এরপরেও তিনি পাকিস্তানীদের সাথে ৬ দফার আলোকে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। ৬ দফা ছিল এক ধরণের কনফেডারেশন। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মতোই। ৪৭ সালে লাহোর প্রস্তাব মানা হয়নি। ফলে পাকিস্তান নামকা ওয়াস্তে ফেডারেশন ছিল। প্রদেশ গুলোর কোন ক্ষমতা ছিলনা। দূরত্বের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের একটা বিশেষ স্ট্যাটাস থাকা উচিত্‍ ছিল। ৪৭ সালেই পাকিস্তান ভাংগনের যাত্রা শুরু হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকদের গোঁয়ার্তুমির কারণে। অপরদিকে ভারত ৪৭ সাল থেকে পাকিস্তান ধ্বংস করার কাজ শুরু করেছিল
পাকিস্তান ভাংগার দায় কিন্তু পাকিস্তানীদেরই। তারা কখনই একটা গণতান্ত্রিক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়নি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গঙতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বার বার বাধাগ্রস্ত করেছে। তোফায়েল সাহেবের ঐক্যের ডাক একটা কথার কথা। সেদিন হয়ত তাঁর কাছে বলার মতো তেমন কিছু ছিলনা। তাই বলেছেন। বাংলাদেশে রাজনীতিকরা অনেক কথাই বলেন, যা তাঁরা বিশ্বাস করেন না বা কথার কথা বলে মনে করেন।
জাতীয় ঐক্য কি তিনি জানেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। চলমান বাংলাদেশে রাজনীতিতে দুটি ধারা বহমান। একটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে,যেটাকে ভারত সমর্থন করে। অপরটি বিএনপির নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ বাংগালী সংস্কৃতি ও বাংগালী জাতীয়তাবাদের প্রচারক। আওয়ামী লীগ তথাকথিত সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে। যার মানে হচ্ছে তারা ধর্মহীন সমাজ বাবস্থায় বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলে বিশ্বাস করেনা। আওয়ামী লীগ সংবিধানে আল্লাহর নাম রাখার বিপক্ষে।
বিএনপির সাথে রয়েছে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামে বিশ্বাসী। বিএনপি বাংগালী মুসলমানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।
তাহলে ঐক্যের সুত্র কোথায়? অর্থনীতি ছাড়া দুই দলের ভিতর জাতীয় ঐক্যের আর কোন সূত্র আছে বলে আমি মনে করিনা। শেরে বাংলা বলেছিলেন , আনন্দবাজার আর অমৃতবাজার পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে লিখলে বুঝবে আমি মুসলমানদের পক্ষে আছি। তেমনি ভারত কোনদলকে সমর্থন করলে বুঝতে হবে সে দল বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

Read Full Post »

সকালবেলা ৬৯


সকালবেলা ৬৯

বেশ কিছুদিন যাবত আমি মানসিক অস্থিরতায় আছি। ভচর বিশেক আগে একবার এমন হয়েছিল। সংসার ত্যাগ করার প্রান্তে এসে গিয়েছিলাম। আমার বিবিজান আমাকে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিছু দিন চিকিত্‍সাও চলেছে। তখন মনে হতো সংসার দিয়ে কি হবে? আল্লাহ দরবারে আমার কি অবস্থা জানার জন্যে পাগল হয়ে উথেছিলাম। ডাক্তার সাহেব শুধু ঘুমের অষুধ দিতেন।
তারও আগে আমি রাত জেগে জিকির (আল্লাহর স্মরণ) করতাম। এক পর্যায়ে মনে হতো আমি শূণ্যে ভাসছি। এসব চলছে ৩০ বছর ধরে। তারপরে কুব সিরিয়াসলি মনসুর হাল্লাজ, মাওলানা রূমী, হাফিজ, সা‘দী, খৈয়াম গালিব পড়ে বুঝতে পারলাম ভালবাসাই সবকিছু। কিন্তু কিভাবে ,কেমন করে ভালবাসবো।
আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, আমিই মারেফাত আর শরিয়ত। আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ নিজেও বলেছেন, আমাকে ভালবাসতে হলে আমার রাসুলকে ভালবাস। স্ত্রী সন্তান, মা বাপ, ধন সম্পদের চেয়ে আল্লাহ রাসুলকে ভালবাসতে হবে। জগতকে কম ভালবাসতে হবে। এখানে মুসাফিরের মতো থাকতে হবে। সময়তো আর বেশী নয়। ৬০/৭০/৮০/৯০ বছর। তারপর একদিন এ দেহটা ফেলে রূহ চলে যাবে যেখান থেকে এসেছে সেখানে। মাটির জিনিষ মাটিতে মিশে যাবে। সবকিছু ফেলেই যেতে হবে।
কি অবাক কান্ড সব জেনে শুনেও মন মানেনা। জগতের জন্যে, সংসারের জন্যে, প্রিয়জনের জন্যে এমন মায়াতো আল্লাহপাকই সৃষ্টি করেছেন। আমিতো একজন অতি অতি সাধারন মানুষ । জগতের প্রতি মোহ আমার ফিতরাত। জগত সংসার করেই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলকে পেতে হবে। মনে হয় সহজ। কিন্তু না, খুবই কঠিণ।
মনসুর আর রূমী এখন আমার ধ্যান ও জ্ঞান। দুজনই আমার সাধনা। মনসুরের মৃত্যুদন্ড হয়েছে ৯২২ সালের ২৬শে মার্চ বাগদাদে। জন্মেছেন ৮৫৮/৯ সালে ইরাণের শিরাজ শহরে। আরবী ও ফারসী ভাষায় কবিতা লিখেছেন। মনসুর বলেছিলেন ‘আনা আল হাক্ব’। I am the truth. আমিই সত্য। শরিয়তের বিচারকেরা মনসুরের এ বক্তব্যকে খোদাদ্রোহিতা সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।
মাওলানা রূমী বলেছেন, মনসুর গোপন কথা ফাঁস করে দিয়েছে। আমি করলেও আমাকে টুকরো টুকরো করা হবে। রূমীর জন্ম ১২০৭ সালে তাজাকিস্তানের বক্স শহরে। বিকাশ ঘটেছে তুরস্কের কুনিয়া শহরে। সেখানে তাঁর মাজার রয়েছে।
আমি এখন মনসুর ও রূমীর ভালবাসা ও প্রেমে মগ্ন। ইচ্ছা হয় আজই সংসার ছেড়ে মনসুর বা রূমীর মাজারে চলে যাই। রূমী মনসুর ও হাফিজের কবিতা অনুবাদ শুরু করেছি। দেখা যাক কি হয়। জানুয়ারীর ১৪ থেকে ফেব্রুয়ারীর ১৫ পর্যন্ত আমি ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরে ছিলাম। সেখানে রুমীর একটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলাম। দেখলাম আমেরিকায় এখন রূমী ক্রেজ চলছে।
আমেরিকা থেকে ফিরে এসে এখন ভাবছি বাকি জীবন এদের নিয়ে কাটিয়ে দিবো। যদিও সময় কুলাবে কিনা জানিনা।

Read Full Post »

Older Posts »