সকালবেলা ৭৭
ইতিহাস কি ভাবে রচিত হয় ? এ বিষয়টা জানার আগ্রহ কি সবার থাকে? আমার ধারণা সবার থাকেনা। স্কুল জীবনে ইতিহাস পড়াটা ছিল খুবই বিরক্তিজনক। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই। তবে মানুষের ইতিহাস জানার আগ্রহ আমার খুবই বেশী। এ নিয়ে লিখতেও আমার ভাল লাগে। যাঁরা ইতিহাসবিদ তাঁদের ইতিহাস রচনার একটি পদ্ধতি আছে। তাঁরা ইতিহাস রচনা নিয়ে গবেষণা করেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ান।
এখন প্রশ্ন হলো, ইতিহাস কার? মানুষের না দেশের , না রাজা বাদশা বা শাসকের? এখন আমরা যা পড়ি বা দেখি তা রাকা বাদশাহ ও শাসকদের ইতিহাস। সাম্রাজ্যগুলো যখন গণতান্ত্রিক বা জনগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে তখন মানুষের সংগ্রাম বা লড়াইয়ের কথা লিপিবদ্ধ হতে শুরু করেছে। ইতিহাসবিদদের নিরপেক্ষ নির্মো্হ নির্লোভ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা কি সেরকম ইতিহাসবিদ দেখতে পাই? না, তেমন নির্মো্হ ইতিহাসবিদ দেখা যায়না।
যেমন ধরুণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা গণতন্ত্রের ইতিহাস। এতো বেশী দিন আগের কথা নয়। ৪৭ সাল থেকে পরের ঘটনাবলী দেখেছেন এমন বহু মানুষ এখনও জীবিত আছেন। আমি নিজেও একজন সাংবাদিক হিসাবে খুব কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও ৫০ বছরের রাজনৈতিক ঘটনাবলী দেখেছি। আমি এক রকম দেখেছি, আরেকজন আরেক রকম দেখেছেন। রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে এত কথা কেন? সবার কাছেইতো এক রকম হওয়ার কথা ছিল। না এক রকম হয়নি। প্রত্যেকেই নিজ নিজ চিন্তাধারা থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা করতে চান। চলমান সময়ে যেমন ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে , অতীতেও তাই হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ দেখে তাদের দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে। একই ভাবে বিএনপিও দেখে। আওয়ামী লীগের চিন্তার সাথে ভারতীয় চিন্তার মিল আছে। ভারতীয়রা চায় বাংলাদেশ ১৬আনা বাংগালীর দেশ হোক। পশ্চিম বাংলা বা ভারতীয় বাংলা আর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চিন্তা এক হবে। আজ থেকে ২০/৩০ বছর পর যদি রেফারেন্ডাম হয় তাহলে বাংলাদেশ ভারতের সাথে যোগ দেবে। এজন্যে এখনি এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী কাজ করছেন। তারা ভারতীয় পদক গ্রহন করা শুরু করেছেন।
বিএনপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী কথাটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি মুসলীম রাস্ট্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। বংগবন্ধুও তাই চেয়েছিলেন। তিনি ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
সিরাজ উদ দৌলার ইতিহাস দুই রকম। ইংরেজ ও হিন্দু ঐতিহাসিকদের একাংশ সিরাজকে ভিলেন বানিয়েছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে সিরাজ ছিলেন দেশপ্রেমিক। তিনি ইচ্ছা করলে সবার সাথে সমঝোতা করে সুখে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি।
বাদশাহ আওরঙজেব একজন ধর্মপ্রাণ শাসক ছিলেন। হিন্দুরা তার বিরুদ্ধে হাজারো রকমের পুস্তক রচনা করেছে। এখনও ভারতের স্কুল কলেজে আওরঙজেবকে খলনায়ক হিসাবে চিত্রিত করা হয়। আপরদিকে আকবরকে তারা মহানায়ক মনে করে। কারণ আকবর নতুন সমঝোতার ধর্ম দ্বীনে ইলাহী প্রতিষ্ঠার চেস্টা করেছিলেন।
বাংলাদেশ এখন চিন্তার জগতে দ্বিধা বিভক্ত। এই বিভক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় চিন্তা চেতনা, সংস্কৃতি ইতিহাস রাজনীতি সবই বিভক্ত। ভারত অন্ধভাবে নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.