চীন কেন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায় ? এরশাদ মজুমদার
চীন এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চীনের বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই। এবং সেটা আমার প্রাণপ্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের স্বার্থেই। ১৯৭১ সালে চীন ও আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি সমর্থন দেয়নি। তখন ভারত আর রাশিয়া ছিল একজোট। বাংলাদেশের ব্যাপারে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার আগে ভারত রাশিয়ার সাথে ২৫ বছরের মৈত্রীচুক্তি করে। যার মূল বিষয় ছিল ভারত আক্রান্ত হলে রাশিয়া সে আক্রমণকে রাশিয়ার উপর আক্রমণ বলে বিবেচনা করবে। ভারত তখন সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে চীনের মোকাবিলা করার জন্যে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে ভারত চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধের সমাধার জন্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তারপরেই চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সে সম্পর্ক এখনও পুরোদমে উষ্ণ হয়নি। সীমান্ত সমস্যাও রয়ে গেছে। ওই সময়েই পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে জেনারেল আইউব উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং মাওলানা ভাসানী এ ব্যাপারে আইউবকে সমর্থন করেন। ইতিহাসের এ প্রেক্ষিতে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ভারত ও রাশিয়া নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ৭২-৭৫ সালে দেখেছি রাশিয়াপন্থী রাজনীতির কী দৌর্দন্ড প্রতাপ। দেশে রাশিয়াপন্থী লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার, কিন্তু তাদের প্রতাপ ছিল সীমাহীন। বংগবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ন’মাস ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। ২৫শ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। কারণ তিনি কখনও পালিয়ে থাকা পছন্দ করতেন না। এ কারণেই তিনি ভারত যাননি। বংগবন্ধু মনোজগতে কখনই অন্ধভাবে ভারতভক্ত ছিলেন না। ভারতের রাজনীতি কি তাও তিনি জানতেন। তিনি কোলকাতায় লেখাপড়া করেছেন এবং জীবনের শুরুর প্রাথমিক রাজনীতি সেখানেই করেছেন। বমগবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে সেসব রাজনীতি কথা উল্লেখ করেছেন। হিন্দুরা মুসলমানদের উপরে কি অত্যাচার করতো তার বিবরন ওই আত্মজীবনীতে আছে। তিনি ছিলেন মুসলীম লীগের একজন কট্টর কর্মী। মুসলীম লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়েও তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় যে ভারতীয় সৈন্যরা অবস্থান নিয়েছিল তারা দীর্ঘকাল অবস্থানের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি চীনের কারণে। ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে থাকতেই বংগবন্ধু জাতিসংঘের সদস্যপদ দরখাস্ত করেন ভারত ও রাশিয়ার উসকানীতে। তখন চীন অনুরোধ করেছিল দরখাস্ত না করার জন্যে। চীনকে বাংলাদেশের শত্রু প্রমাণ করার জন্যে ভারত রাশিয়া সদস্যপদের জন্যে বাংলাদেশকে দিয়ে দরখাস্ত করিয়েছিল। চীন বাধ্য হয়েই সে দরখাস্তের বিরোধিতা করতে হয়েছিল। চীন তখন বলেছিল বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ নয়,কারণ সেখানে বিদেশী সৈন্য অবস্থান করছে। এর পরেই ভারত বিদেশী চাপের কারণে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছিল। আর আমরা জানি বংগবন্ধুর অংগুলী হেলনে সৈন্যরা চলে গিয়েছিল। এমন কি অনেকেই বিশ্বাস করেন বংগবন্ধু না হলে ভারতীয় সৈন্যরা কখনই বাংলাদেশ ছেড়ে যেতোনা। বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শন পরিবর্তন হয় বংগবন্ধুর সরকারের পতনের পর। খোন্দকার মোশতাকই চীন ও সউদী আরব সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন মোশতাক সাহেব চীনপন্থী সাংবাদিক ফয়েজ আহমদকে চীনে পাঠান। এর পরেই চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বংগবন্ধুর আমলে ভারত রাশিয়ার চাপে বাংলাদেশে ইসলামী ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান আমলের একটা সময় পর্যন্ত কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। খোন্দকার মোশতাক তিন মাসের মতো ক্ষমতায় ছিলেন। এরপরে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়া। জিয়া সাহেবের আমলেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও পররাস্ট্র নীতিতে পরিবর্তন শুরু করে। জিয়ার আমলেই মুসলমান দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতি হয়। এ সময়েই চীন বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে প্রথম কাতারে চলে আসে। এর আগে ভারত ও রাশিয়া এ ব্যবসাটা করতো।
খোন্দকার মোশতাক চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং চীনপন্থী প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদকে চীন পাঠিয়েছিলেন। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন উষ্ণ। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তারকে উত্খাত করে সেন্যপ্রধান এরশাদ সামরিক আইন জারী করে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ নিজেই বলেছেন যে, তিনি দিল্লীর সাথে আলোচনা করেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ওই সময়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা শান্তই ছিল। তবুও এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরশাদ সাহেবও চীনের সাথে মোটামুটি দৃশ্যমান সম্পর্ক ভাল রেখে চলেছেন। এরশাদ সাহেবকে পুরোপুরি সময় শেখ হাসিনা সমর্থন দিয়েছেন। এরশাদ সাহেবের শাসনকে দীর্ঘায়িত করেছেন। ওই সময়ে জামাত আওয়ামী লীগের সাথে সুসম্পর্ক বজায় চলেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার কঠের আন্দোলনের ফলে সবাই এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হয়। ফলে ৯০ সালে এরশাদের পতন হয়। এরপরেই তথকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। ৯১ সালের নির্বাচন হয়েছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে। তাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে। শেখ হাসিনার আশা ও বিশ্বাস ছিল তাঁর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসবে। এরপর থেকেই শেখ হাসিনা ও দিল্লী যৌথভাবে একটি লক্ষ্য স্থির করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার গোপন কর্মসূচী হাতে নেয়। ৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২৩ বছর হাসিনার রাজনীতি দিল্লীতুষ্ট নীতিতে পরিণত হয়। দিল্লীর শাসকগোষ্ঠি ও তল্পীবাহক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা এখানে ও সেখানে তত্পর হয়ে উঠে বাংলাদেশকে দিল্লীর কঠের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে। যেকোন বাহানায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখাই এখন শেখ হাসিনার প্রধান লক্ষ্য। ৯৬ সাল ও ২০০৬ সালে নারকীয় ঘটনা গুলো ঘটিয়েছে শেখ হাসিনা দিল্লীর উসকানীতে। তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী ছিল শেখ হাসিনা ও জামাতের। খালেদাকে বাধ্য করেছে এ ব্যবস্থা মেনে নিতে। ২০০৮ সালের ভয় ভীতিকর নির্বাচনে জেনারেল মইন শেখ হাসিনকে ক্ষমতায় বসায় দিল্লীর সার্বিক সহযোগিতায়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে দেশছাড়া করেছে দুর্ণীতির অভিযোগে। ওই অবস্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে খালেদাকে বাধ্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে। অবৈধ জেনারেল মইন সরকারের সকল কাজকে হাসিনা স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ,এর আগে হাসিনা বলেছিলেন,তাঁরই আন্দোলনের ফসল হচ্ছে জেনারেল মইনের সরকার। সে সময় মইন দিল্লী সফরে গেলে তাঁকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা ও দামী ছয় ঘোড়া দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে খালেদা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে জেনারেল মইনের দায়ের করা সকল মামলা অব্যাহত রাখেন আর বেহায়ার মতো নিজেদের সকল মামলা প্রত্যাহার করে নেন। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এক মন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসেছি কি খালেদার মামলা প্রত্যাহার করার জন্যে? বরং খালেদা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দায়ের করা হয়। এখন দেশে যে গোলযোগ চলছে তার স্রষ্টাও শেখ হাসিনা। তিনি জনমতকে উপেক্ষা করে সংসদের শক্তির জোরে ও আদালতের দোহাই দিয়ে মীমাংসিত তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেন। শুরু হলো নতুন রাজনৈতিক দ্বন্ধ ও সংঘাত। প্রত্যেক বারই আমরা দেখেছি দিল্লীর প্রতিনিধি বীণা সিক্রি, পিণাক রঞ্জন ও শরণ খুবই ব্যস্ত এবং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে যেকোন প্রকারে ব্ল্যাকমেইল করে দিল্লীর অনুগত রাখার চেষ্টা করেছে। জেনারেল মইনের শাসনকালে পিণাক বাংলাদেশে দিল্লীর অদৃশ্য রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি তখন সচীবদের বদলী ও পোষ্টিং দেখতেন বলে একজন সাবেক সচীব জানিয়েছেন।
এবারের গোলযোগে দিল্লী প্রকাশ্যে অংশ গ্রহণ করছে এবং দেশবাসী শরণের পদচারণা দেখতে পাচ্ছেন। এবার দিল্লী মরণ কামড় দিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধা করতে চায়। আর সমাধান হলো ঢাকায় দিল্লীর অনুগত সরকারকে স্থায়ীবাবে ক্ষমতায় রাখা।আর এজন্যে শেখ হাসিনা,তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও একই ঘরাণার রাজনীতিকদের ক্ষমতায় রাখা জরুরী। স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যেই তত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া গুলোকে ভারত আগেই কিনে নিয়েছে অর্থাত্ নিজেদের অনুগত করে ফেলেছে। তাই ৯০ ভাগ মিডিয়া দৃশ্য বা অদৃশ্য ভাবে ভারতের হয়ে কাজ করে। যদি আপনি প্রশ্ন করেন ভারত আসলে কি চায়? উত্তর হলো ভারত বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে একটা অনুগত সরকার চায়। যাকে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দিবে। লক্ষ্য হলো,বাংলাদেশ ভারতের সকল নীতি অনুসরণ করবে। বিনিময়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পতাকা থাকবে, জাতীয় সংগীত থাকবে ও জাতিসংঘের সদস্যপদ থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও থাকবে, তবে একটা অনুগত প্যারা মিলিটারীও থাকতে পারে। সেজন্যেই বিজিবিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগ ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ভু-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত চীন আমেরিকা এখানে নিজেদের উপস্থিতি জোরালো ভাবে রাখতে চায়। চীনের ব্যাপারে আমেরিক ও ভারতের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভংগী এক। আমেরিকা চীনকে রাজনৈতিক ও সামরিক ভাবে প্রতিহত করতে চায়। এ ব্যাপারে ভারত আমেরিকার প্রক্সি হয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশকে কিছুতেই চীনের প্রভাবে যেতে দেয়া যাবেনা। এ কারণেই আমরা ভারত ও আমেরিকার দৌড়ঝাপ প্রকাশ্যে দেখতে পাচ্ছি। দুই পক্ষই সাংবাদিকদের বলছেন, বাংলাদেশকে জংগীবাদের হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে জংগীবাদ কোথায়? ভারত মনে করে বিএনপি ও জামাত ক্ষমতায় থাকলে জংগীবাদের উত্থান হবে। কিন্তু আমেরিকা মনে করে জামাত একটি মডারেট বা উদার ইসলামিক দল। আমেরিকা বিএনপিকে জংগীবাদের পৃষ্ঠপোষক মনে করেনা। আর আমি মনে করি দুই দেশের অদৃশ্য এজেন্ডা হচ্ছে ইসলাম। যেকোন মূল্যেই হোক বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানকে সকল শক্তি দিয়ে মুলোত্পাটন করতে হবে। ভারত ও আমেরিকা বাংলাদেশে ইসলাম মুক্ত রাজনীতি চায়। এ ব্যাপারে ভারত একাই বাংলাদেশের রাজনীতি দেখভাল করতে চায়, আমেরিকা যেন সরাসরি জড়িত না হয়।
এবারই গণচীন সরাসরি বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং সরকারের সাথে কথা বলেছে। চীন মনে করে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারত আমেরিকা জোট চীনের জন্যে কল্যাণকর নয়। বরং একটা অদৃশ হুমকি। বাংলাদেশে যদি ইসলামী রাজনীতির বিকাশ ঘটে তাতে চীন শংকিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের তাবেদার রাস্ট্রে পরিণত হোক তা চীন চায়না। এ জন্যেই এবারের সর্বশেষ বিবৃতিতে চীন বলেছে তারা একটি উন্নত স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়। স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ সবাই চায়। এটা একটা কূটনৈতিক ভাষাও। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ শব্দ দুটোর সাথে একটা গভীর অর্থ নিহিত রয়েছে। চীন যেহেতু কয়েক যুগ ধরে ভারত বাংলাদেশ ও দিল্লী-শেখ হাসিনা সম্পর্ককে গভীর ভাবে পাঠ করছে সেহেতু আমরা নিশ্চয়ই ওই শব্দ দুটোর ব্যাপারে শংকিত। এর মানে কি তা হাসিনা ও দিল্লী ভাল করে জানে। মীরজাফর যখন লর্ড ক্লাইভকে গোপন চক্রান্ত করছে ক্ষমতার জন্যে তখন তিনি নাকি বুঝতে পারেন নি সুবেহ বাংলার স্বাধীনতা চলে যাবে। বাংলাদেশের ভাগ্যে কি আছে হয়ত হাসিনা জানেন না। তিনি হয়ত শুধুই তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে ভাবছেন। সিকিমের লেনদুপ দর্জিও হয়ত শুরুতে শুধু নিজের ক্ষমতা নিয়ে ভেবেছিলেন। নেপালেও তথাকথিত মাওবাদী নেতা প্রচন্ডকে ভারত সমর্থন দিয়ে রাজার পতন ঘটিয়েছে। ভুটানের রাজা আছে কিন্তু রাজ্য নেই। মালদ্বীপেও ভারতপন্থী নাসিদকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্যে ভারত আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। শ্রীলংকায় কয়েক যুগ ধরে তামিল বিদ্রোহীদের উসকিয়ে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেংগে দিয়েছে। শ্রীলংকা শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত তা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে তামিলদের দমন করতে হয়েছে। এটা হচ্ছে শ্রীলংকার জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট রাজা পাকশের ভারত বিরোধী শক্ত অবস্থান। এখন সবাই তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবাদ বিরোধী অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ভারত কয়েকযুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দিয়ে একটা সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি করিয়েছে। শেক হাসিনা একবারের জন্যেই চিন্তা করেননি ওই চুক্তি একদিন বাংলাদেশের অংগহানি ঘটাবে। এইতো ক’দিন আগে সোনিয়াপুত্র কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন,তাঁর পরিবারই পাকিস্তান ভেংগে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে ভারতেরই স্বার্থে।
যারা ভারতের রাজনীতি ও কূটনীতি নিয়ে ভাবেন বা চিন্তা করেন তাঁরা জানেন যে, নেহেরুজী অখন্ড মহাভারতের স্বপ্ন দেখেছেন। ভারতের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষকরা মনে করেন অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা সম্ভব। চলমান সময়ে ভারত ও তার গোয়েন্দা বাহিনী সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ নিয়ে কাজ করছে। যার ফলে, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম বা তরুণরা ধর্মমুক্ত বাংলাদেশের জন্যে কাজ করছে। এজন্যে অর্থের কোন অভাব নেই। বাংলাদেশে বহু মিডিয়া ও সংস্থা এজন্যে কাজ করছে। ভারত এমন একটা পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরি করতে চায় যখন সবাই বলবে স্থায়ী শান্তির জন্যে ভারতের সাথে চিরস্থায়ী অধীনতামূলক মিত্রতা দরকার। এতদিন ভারত বাংলাদেশের ঘাঁড়ে হাত দিয়ে রাখতো। এবার গলায় বা দাঁত বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সিংহ বা বাঘ যেমন প্রথমেই টুঁটি চেপে রক্ত চুষে নেয়। চীন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে সতর্ক বাণী উচ্ছারণ করেছে। যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধিনতা চান তাদের আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তির আজ প্রধান কাজ হচ্ছে ভারতপন্থি রাজনীতি ও সংস্কৃতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা। আওয়ামী লীগ বলছে এবার নাকি তাদের জন্যে এটা মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশকে ইসলাম মুক্ত করে ভারতের তাবেদারে পরিণত করা। আর স্বাধিনতা ও সার্বভৌমপন্থী জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তিকে জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। এ সময়ে আমাদের প্রধান মিত্র হবে চীন,মায়ানমার ও মুসলীম বিশ্বের সরকার ও জনগণ। সবাইকে মনে রাখতে হবে জেনে হোক ,অথবা না জেনে হোক শেখ হাসিনা নিজেকে লেনদুপ দর্জিতে পরিণত করতে যাচ্ছে। ভারতের উদ্ধেশ্য হাসিল হয়ে গেলে তারা হাসিনাকেও বাঁচতে দিবেনা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com