Feeds:
Posts
Comments

Archive for September, 2014


বাংলাদেশে ধর্ম বিশ্বাস ও রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার

চলমান সরকারের দল, নেতা ও কর্মীদের ধর্মনীতি হলো ‘ ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। এই নীতি ও শ্লোগানটি খুবই আকর্ষণীয়। শুনতে ভাল লাগে। এই সরকারের আরেকটি খুবই মূল্যবান নীতি হলো‘জনগণই সার্বভৌম’। সংবিধান নাগরিকের সকল অধিকার নিয়ন্ত্রণ করবে বা পরিচালনা করবে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। বাকি ১০ ভাগ অন্যান্য ধর্ম বা রীতিতে বিশ্বাস করেন। যাঁরা সত্যিকারেই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং মুসলমান হিসাবে পরিচিত তাঁরা সকলেই আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন। আমাদের সংবিধান যেহেতু আল্লাহ/ ভগবান/ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা সেহেতু আইনের দৃষ্টিতে একজন মুসলমান বা একেশ্বরবাদী অপরাধী সাব্যস্ত হতে পারে। বৃটেনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রটেস্ট্যান্ট খৃষ্টবাদ। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান বিচারপতি হতে হলে একজন নাগরিককে বৃটেনের সরকারী ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার সাহেব ছিলেন ক্যাথলিক। কিন্তু রাজনীতি করার জন্যে প্রটেস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছিলেন। কারণে বৃটেনে রাজনীতি করতে হলে সরকারী বা রাজার ধর্ম মানতে হবে। যদিও এরা কেউই মূল খৃষ্ট বাদে বিশ্বাস করেন না। খৃষ্টবাদ ও বাইবেল ও তৌরাত যদি বিকৃত না হতো তাহলে জগতে আল্লাহপাক সর্বশেষ কিতাব আলকোরআন নাজিল করতেননা।আধুনিক মহাগণতান্ত্রিক ভারত ১৯৭৬ সালে তথাকথিত সেক্যুলাজিম(ধর্মহীনতার ) নামাবলী পরেছে। আর এখন ক্ষমতায় আছে ধর্মবাদী দল বিজেপি। এরাই কল্পিত রাম মন্দিরের কথা বলে সরকারের সহযগিতায় বাবর মসজিদকে চুরমার করেছে। বিশ্বের কোন ইসলামিক দল ভিন ধর্মের মন্দির, গীর্জা, অগ্নিমন্দির বা সিনাগগ ভেংগেছে এমন কোন প্রমান কারো কাছে নেই। ভারতে দাংগার ইতিহাস পড়ুন। বিগত ৪৪ বছরে ভারতে কয়েক হাজার দাংগা হয়েছে ধর্মীয় কারণে। এতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলমানেরা। মোদির বিরুদ্ধে দাংগায় সরাসরি দাংগার অভিযোগ থাকা সত্বেও ভারতবাসী বিজেপিকে নির্বাচিত করেছে। আর মোদিজী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। সেক্যুলার কংগ্রেসের ভন্ডামী থেকে মুক্তি লাভের জন্যেই ভারতবাসী বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে গবেষকরা বলছেন।
বাংলাদেশও রাজনৈতিক ধোকাবাজীর জন্যে সেক্যুলারিজমের জোব্বা পরিধান করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেও সনাতন ধর্মীদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয় ও মন্দির ভাংগা হয়। অভিযুক্ত করা হয় ধর্মীয় দল ও আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে। যেমন ১৯৪৬ সালের মহাদাংগায় অভিযোগের আংগুল তোলা হয়েছিল বংগবন্ধু ও সোহরাওয়ার্দাীর সাহেবের বিরুদ্ধে। ৪৬এর দাংগায়ও মুসলমানেরা সবচেয়ে বেশী নিহত হয়েছে।
আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ক্যাথলিক খৃষ্টবাদ। ওবামার বাপদাদারা মুসলমান ছিলেন, এই নিয়ে আমেরিকানরা কম হৈচৈ করেনি। ওবামা বেচারা শেষ পর্যন্ত নিজের নামের সাথে হুসেন শব্দ ব্যবহার করা ত্যাগ করেছেন।বৃটেন আমেরিকা সহ বহু পশ্চিমা দেশে বাইবেল হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করেন। আমেরিকার ডলারে বা বৃটেনের পাউন্ডে রানী বা প্রেসিডেন্টের ছবি থাকে। লেখা থাকে ‘ইন গড উই ট্রাষ্ট’। বাংলাদেশে রাজার ক্ষমতা সম্পন্ন নেতারা সংবিধান মোতাবেক আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে বাধ্য নন।
ভারতের বিকৃত ও পরিবর্তিত ও ভুলে যাওয়া সনাতন ধর্মে এক শ্রেণীর মানুষকে অর্ধমানব হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় রাজনীতিতে ও সংবিধানে সব মানুষকে সম মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিকৃত প্রচলিত ধর্মরীতিতে তাঁদের অর্ধমানব, অচ্যুত বা হরিজন বলা হয়। গান্ধীজী আদর করে ওদের নাম দিয়েছেন হরিজন মানে ইশ্বরের লোক বা জন। বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ ইসলামে বিশ্বাসী বলে হরিজন/অচ্যুত প্রথা মুসলমানদের ভিতর নেই। তবুও কিছু হরিজন আছেন যাঁরা বিকৃত সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করেন। আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে ভারতে আর্য আগমনের পূর্বে এখানকার সব মানুষ সম মর্যাদার ছিলেন। সবাই নিরাকার একেশ্বর বাদে বিশ্বাস করতেন। মুর্তি পূজা বা বহু ইশ্বরের কোন অস্তিত্ব ছিলনা। কোথাও কোন মুর্তি ছিলনা। আর্যরা বহিরাগত বিজয়ী, তাই তাঁদের ধর্ম, ভাষা,রীতিনীতি ,আচার ব্যবহার চালু করেছে পরাজিতদের ভিতর।
বাংলাদেশে আমরা মানে মুসলমানেরা মসজিদে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, নামাজে সারাদিনে বহুবার ‘আল্লাহু আকবর’( আল্লাহই সর্বশক্তিমান বা আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ) উচ্চারণ করে থাকি। এটা মুসলমানদের জন্যে বাধ্যতামূলক। কিন্তু নাগরিক জীবনে সংবিধান মোতাবেক বলতে হবে ‘জনগণ হু আকবর’ বা জনগণই সার্বভোম। নাগরিক জীবনে আপনার জন্যে বা মুসলমানদের জন্যে সংবিধানের অবস্থান আল্লাহর কিতাব পবিত্র আলকোরআনের উপরে(নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। আমাদের সংবিধান মোতাবেক দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমি ‘জনগণ সার্বভৌম’, ‘সংবিধান সার্বভৌম’বলতে বাধ্য।
বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও ইসলামী নিয়ম কানুন, আচার বিচার, কালচার মানতে বাধ্য নই। এটা নাকি ব্যক্তিগত ব্যাপার। এদেশে ধর্ম মানাটা ঐচ্ছিক। নামাজ, রোজা বা ধর্মীয় আইন কানুন জারী রাখার ব্যাপারে রাষ্ট্র বা সংবিধান সেক্যুলার( ধর্মহীন)। বাংলাদেশে আরবী নামধারী মুসলমান নেতা বা মন্ত্রীরা পূজামন্ডপে গিয়ে দেবীর দর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘ দেবী এবার নৌকায় এসেছেন,তাই ফসল ভাল হবে। এর মানে তিনি এটা বিশ্বাস করেন। অথবা রাজনৈতিক কারণে নেতারা এমন কথা বলে থাকেন। আমাদের দেশের তথাকথিত সেক্যুলার আরবী নামধারী নেতারা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন এবং ছবির গলায় বা ছবির বেদীতে ফুল দিয়া সম্মান প্রদর্শন করেন। ওই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মুনাজাতের মতো করে হাত তুলে ঠোট নাড়েন। রাজনীতিতে সত্য বা মিথ্যা হচ্ছে কৌশল। এখানে আদর্শ, নীতি বা ধর্মীয় বিষয়টা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। মইন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময় একজন ধর্মমন্ত্রী ছিলেন যিনি ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম মানতেন না। ধর্মবিরোধী ছিলেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী কোন মানুষকে ধর্মমন্ত্রী করা হয়নি। বরং অযোগ্য লোককেই ধর্মমন্ত্রী করা হয়েছে।
মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ও অধিকারকে জাতিসংঘ সনদ স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের সকল দেশেই নাগরিকদের ধর্ম মানার অধিকার আছে। পরধর্মকে নিন্দা বা আঘাত করার অধিকার কারোই নেই। মুসলমান হিসাবে আপনার প্রতিবেশী অন্যধর্মের মানুষও আপনার ভাই। তাঁকে ভুখা বা অভুক্ত রেখে আপনি যদি খান তাহলে আপনি মুসলমান নন। প্রতিবেশীকে রক্ষা করাও একজন মুসলমানের দায়িত্ব। কিন্তু যদি ইসলামের এই নীতি পালন না করেন তাহলে তাঁর মতো মুসলমানের ইসলামে প্রয়োজন নেই। জগতে কোটি কোটি মন্দ মুসলমান আছে। এজন্যে ইসলামকে দায়ী করা অন্যায় হবে। কিন্তু চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মুসলমানেরাই একমাত্র মন্দ জাতি। এমনি একটি অবস্থা ও পরিবেশে বাংলাদেশের আবদুল লতিফ(অনুগ্রহকারীর দাস) নামের একজন মন্ত্রী সদর্পে পবিত্র হজ্জ্ব, রাসুল(সা) ও তাবলীগ ব্যবস্থা কটুক্তি করেছেন। এই ভদ্রলোকের নামের ‘সিদ্দিকী’ শব্দটি ব্যবহার করলামনা। কারণ তিনি একজন সিদ্দিকী একথা ভাবতে আমার কষ্ট হচ্ছে। তাঁর আব্বাজানকে এলাকার মানুষ ছিদ্দিক মোক্তার সাহেব হিসাবেই চিনে। তািনি একজন ডাক সাইটে আইনজীবী ছিলেন। তাঁর সন্তানেরা কিভাবে সিদ্দিকী হলেন তা এলাকার মানুষ জানেন না। কোরায়েশ বংশের মান্যগণ্য অনেক নেতাই কাফের ও মোনাফিক ছিলেন। তাঁরাই রাসুলকে(সা) সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছেন। এমন কি হুজুরের(সা) আপন চাচা আবু তালেব সাহেবও ইসলাম ধর্ম গ্রণ করেননি। কিন্তু তিনি সারাজীবন রাসুলকে(সা) সাহায্য ও নিরাপত্তা দান করেন। হুজুর(সা) বিয়ের আগ পর্যন্ত আবু তালিকের ঘরেই ছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রথম সিদ্দিকী হলেন হজরত আবু বকর(রা)। আল্লাহর রাসুলই (সা) তাঁকে সিদ্দিকী উপাধি দিয়েছেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিকী বয়স্ক পুরুষদের ভিতর প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। তিনিই হুজুরের(সা) মেরাজের প্রথম স্বীকৃতিদানকারী ও সত্যায়নকারী। তিনি তাঁর সকল সম্পদই ইসলামের জন্যে দান করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল(সা) জানতে চেয়েছিলেন, ঘরে কিছু রেখে এসেছেন কিনা? উত্তরে হজরত আবু বকর(রা) বলেছেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল(সা)কে ঘরে রেখে এসেছি। তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা । রাসুল(সা) এর পরে তিনিই আল্লাহপাকের সাহায্যে ইসলামকে রক্ষা করেছেন।
বিতাড়িত মন্ত্রী আবদুল লতিফ কেমন করে সিদ্দিকী হলেন? যেহেতু তিনি একজন রাজনীতিক সেহেতু দেশবাসীর জানার অধিকার আছে তিনি কেমন করে সিদ্দিকী হলেন। কেনই বা হলেন? তাঁর বাবাও কেমন করে সিদ্দিকী হলেন? নাম সিদ্দিক হলেই কি কেউ সিদ্দিকী শব্দটি লিখতে পারেন? এই ব্যক্তি ইতোমধ্যেই ধর্মত্যাগী হয়ে গেছেন। রাসুল(সা ) নামের সাথে দরুদ পাঠ করা সকল মুসলমানের জন্যে বাধাতমূলক। আল্লাহপাক বলেন,‘ ইন্নাল্লাহা ও মালায়েকাতাহু ইয়ুসাল্লুনা আলান্নাবীয়ি। ইয়া আইয়ুহাল্লাযিনা আমানু সাল্লু আলাইহে ওয়া সাল্লেমু তাসলিমা।’(সুরা আহযাব, আয়াত ৫৬)। বাংলা তরজমা ‘নি:সন্দেহে আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ রহমত বর্যণ করেন সেই পয়গম্বরের প্রতি । হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি প্রচুর দরুদ শরীফ পাঠ কর এবং প্রচুর সালাম পেশ করো’। প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করুন,রাসুল(সা) এর মর্যাদা আল্লাহপাকের কাছে কোন স্তরের। আমাদের প্রিয় রাসুলকে(সা) আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, রাসুল(সা) হচ্ছেন জগতের জন্যে রহমত স্বরূপ। তিনি সকল নবী রাসুলের ইমাম। আপনি যদি কালেমা ‘ লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ(সা) বলে ঈমান এনে থাকেন তাহলে কোরআন ও রাসুল(সা)কে মান্য করা আপনার জন্যে বাধ্যতামূলক। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার রাসুলকে(সা) অনুসরণ করো,তাহলেই আমাকে মানা হবে। আমার রাসুলকে(সা) ভালবাস, তাহলে আমাকে ভালবাসা হবে। বিবি আয়েশা বলেছেন, তোমরা নবীজীকে অনুসরণ করো, তাহলেই কোরআনকে অনুসরণ করা হবে।
এছাড়াও জগতের মণিষীরা বলেছেন যে, মুহাম্মদ(সা) জগতের সর্বশ্রষ্ঠ মানব। টমাস কারলাইল ১৮৪০ সালে ১২ ঘন্টা ব্যাপী নবীজীর(সা) উপর যে ভাষণ দিয়েছেন তা পড়ুন। ‘ হজরত মোহাম্মদ তাঁর প্রতিপালকের নিকট থেকে জ্ঞানগর্ভ শরীয়ত লাভ করেন। আমি নিজে সূর্যের মতো আলোকিত হচ্ছি তার দ্বারা ।’( সামবেদ,পুরকার্যক-২,দুরশতি ৬, মন্ত্র ৮ )। মহাঋষি ব্যাসজীর লিখিত ভবিষ্য পুরাণ উল্লেখ করেছেন যে, একজন ম্লেচ্ছ এক অজানা দেশ থেকে আসবেন এবং তার ভাষাও কারো জানা থাকবেনা। তিনি হবেন আত্মা পবিত্রকরণে দক্ষ। তিনি তাঁর সাথীদের সমভিব্যবহারে আসবেন, তাঁর নাম হবে মুহাম্মদ। রাজা ভুজ সেই মহাদেবতা ফেরেশতাদের মত উত্তম চরিত্রের আদর্শ ব্যক্তিকে গংগার মোহনার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে অর্থাত্‍ সকল পাপ থেকে পাক পবিত্র করেছেন। তিনি তাঁর অন্তরের সমস্ত ভক্তি শ্রদ্ধা এবং উপঢৌকনাদি দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন এবং বলেছেন এবং বলেছেন আমি আপনার সামনে মাথা নত করে দিলাম। ‘ হে বিশ্ব বরেণ্য নেতা , মান জাতির গৌরব, আরবের অধিবাসী শয়তান ও শয়তানী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্যে শক্তি সংগ্রহকারী, ম্লেচ্ছ দুশমন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত, হে পবিত্র সত্তা, সকল দিক থেকে পাক পবিত্র সত্তা, পুর্ণাংগ নেতার বাস্তব প্রতিমূর্তি! আমি আপনার অধম এক সেবক। আমাকে আশ্রয় দিন এবং আপনার পদরলে লুটিয়ে পড়া এক ব্যক্তি হিসাবে জেনে নিন।’(বিষ্ণুপুরাণ, প্রকাশক: ভেকটিশোর প্রেস, বোম্বে,প্রতিমগবর, ৩য়খন্ড, শ্লোক ৫-২৭)। এছাড়া যবুর, তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবেও রাসুলু্ল্লাহর(সা) আগমণ বাণী ঘোষিত হয়েছে। আল্লাপাক অতীতের সকল বিকৃত কিতাবকে শুদ্ধ করে শেষ নবী ও রাসুলের(সা) মাধ্যমে জগতবাসীর জন্যে শেষ কিতাব হিসাবে প্রেরণ করেছেন। বিতাড়িত ধর্মত্যাগী মন্ত্রী জগতের আলো নবীজীকে কোন প্রকার সম্মান না দেখিয়ে বলেছেন, আরবের আবদুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদ। একই সাথে এই বিতাড়িত মন্ত্রী পবিত্র হজ্ব নিয়ে কটুক্ত করেছেন। নবীজীকে আল্লাহপাকের নির্দেশ মোতাবেক সম্মান না করলে সেই লোকের মুসলমান থাকার কোন অধিকার আছে কিনা?
বাইশ নম্বর সুরা আল হাজ্বের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,‘ হে নবী, স্মরণ করো,যখন আমি ইব্রাহীমকে এ ঘর(কাবা) নির্মানের জন্যে স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম(তখন তাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম), আমার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করোনা, আমার এ ঘর তাদের জন্যে পবিত্র রেখো যারা এর তাওয়াফ করবে,যারা এখানে নামাজের জন্যে দাঁড়াবে রুকু করবে ও সাজদা করবে। আয়াত ২৭শে আল্লাহপাক বলেন, তাকে মানে (হজরত ইবরাহীমকে ) আদেশ দিয়েছিলাম তুমি মানুষদের মাঝে হজ্বের ঘোষণা করে দাও। কালামে পাকে পবিত্র কাবা ঘর ও হাজ্ব সম্পর্কে আরও অনেক আয়াতে বর্ণনা রয়েছে। এখন আপনারাই বিবেচনা করুন কাবা, হাজ্ব, কোরবাণী, তাওয়াফ না বিশ্বাস করলে কারো পক্ষে মুসলমান থাকা যায় কিনা?
নিন্দিত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে কটুক্তি করে শেষ পর্যন্ত সনাতন মুর্তপুজক ভারতে আশ্রিতা হিসাবে বসবাস করছেন। ইসলামের বিরুদ্ধ কথা বলে তিনি ভারত সহ পশ্চিমা দেশ গুলোতে আদর যত্ন পেয়েছেন। এখন সবাই তাঁকে পরিহার করতে শুরু করেছেন। এই তাসলিমা বিতাড়িত মন্ত্রীকে সমর্থন করেছেন। তথাকথিত উদার গণতন্ত্রী ভারত কয়েক মাস আগে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে লিখিত একটি গবেষণা পুস্তক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তসলিমার বই লাখ লাখ কপি ছাপিয়ে বিলি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিতাড়িত মন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন এখন দেশে ফিরে না আসার জন্যে। আসলে নাকি ইসলামিষ্টরা নাকি নিরাপত্তা সৃষ্টি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় মনে হচ্ছে বিতাড়িত মন্ত্রীর কটুক্তিতে শুধুমাত্র ইসলামিষ্টরাই ক্ষুব্দ হয়েছে। সারা দেশবাসী মানে মুসলমানেরা এতে ক্ষুব্দ হয়নি। তিনি হয়ত আওয়ামী রাজনীতির দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখছেন। শুরুতেই বলেছি বাংলাদেশের রাজনীতি এখন সুবিধাবাদ। ভোটার যদি চায় তাহলে হিজাব পরে চলতে হবে। ভোটার যদি চায় তাহলে দূর্গাকে প্রণাম করা যাবে। ধর্মহীনরা যদি বলে সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ দিন, ভোটারের সন্তুষ্টির জন্যে তাও করা যাবে। সব কথার আসল কথা হলো ভোটার হলো দেবতা। যে ফুলে দেবতা তুষ্ট হয় সেই ফুল দিয়ে বন্দনা করতে হবে। যারা ভোটারদের তুষ্ট করতে জানেনা বা বহুরূপী হতে পারেনা তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকবেনা। এমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার পরও ওই ধর্মত্যাগীকে কোন রকম শাস্তি দেওয়া হয়নি। দল বা সরকার জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়নি। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা না করেও একজন মন্ত্রী কেবিনেট থেকে বাদ পড়তে পারেন। মন্ত্রীত্ব থেকে বরখাস্ত হওয়া কোন ধরণের শাস্তি হতে পারেনা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয় তাহলে নারীর সংখ্যা হয়ত ৮কোটি। শিক্ষিত নাগরিকের সংখ্যা হয়ত এখন চার কোটির মতো। দস্তখত করতে পারেন এমন নাগরিকের সংখ্যা হয়ত ছয়কোটি। এর ভিতর নারীর সংখ্যা দুই কোটি হবে। শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংখ্যা হয়ত এক কোটির মতো। এর মানে হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ষোল ভাগের এক ভাগ।

Read Full Post »


যিনি বা যাঁরা বিজয়ী তাঁর বা তাঁদের ইতিহাস বা গৌরব গাঁথা লেখেন কবি সাহিত্যিক ও ইতিহাস বিদগণ। রাজা বাদশাহরা যা বলেন বা নির্দেশ দেন তাই রচনা করেন তাঁরা। যেমন ধরুন, আর্যরা ভারতের মূল বাসিন্দা নন। আমরা জানি তাঁরা বহিরাগত। যদিও প্রখ্যাত বিজেপি ঐতিহাসিক ভগবান গিদওয়ানী মনে করেন আর্যরা ভারতীয়। আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে বিশ্ব বিজয়ে তাঁরা বাইরে গিয়েছিলেন। আবার তিন হাজার বছর আগে স্বদেশে ফিরে এসেছেন। ভারতীয় ধর্মের মূল স্রষ্টা হলেন আর্য ঋষিগণ। তাঁরাই রচনা করেছেন বেদ উপনিষদ। তাঁরাই রচনা করেছেন রামায়ন মহাভারত। কিন্তু বিশ্ব ইতিহাস বলে আর্যরা বিদেশী। তারা ভারতে এসেছেন বিজয়ী হিসাবে দেশ শাসন ও ধর্ম প্রচারের জন্যে। তখন আর্যদের চেয়ে ভারতবাসী অনেক অগ্রসরমান ছিলেন। তাঁরা কৃষিকাজ ও গো পালন জানতেন। তাঁরা যুথবদ্ধ হয়ে গৃহ নির্মাণ করে বসবাস করতেন। কৃষি ও গো পালনই ছিল তাঁদের প্রধান পেশা।
দেবতা ও রাজা রাম ছিলেন আর্য প্রতিনিধি। তিনি ভুমিপুত্র রাবণ সহ আরও অনেক দেশীয় দেশপ্রেমিক রাজাকে অসুর আখ্যায়িত করে পরাজিত করে হত্যা করেন। বিজয়ী রাম ও তাঁর সহযোগীদের কাহিনীই হলো রামায়ন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন রামের জন্ম কবির মনোভুমিতে। এমন কোন মানুষ ভারতে কখনই ছিলনা। এই কল্পমানবকে নিয়েই ভারতবাসী আজ গর্বিত ও গৌরবান্বিত। কিন্তু চিন্তার জগতে ভারত আজও দ্বিধা বিভক্ত। ভারতের দক্ষিণে ও শ্রীলংকায় রাবণকে বীর হিসাবে পূজা করা হয়। রামায়ন ও মহাভারত বিজয়ীদের প্রশমসায় রচিত মহাকাব্য। এসব হচ্ছে মূল ভারতবাসীকে হেয় করার কাহিণী। কালক্রমে আর্যদের ঋষিদের প্রভাবে ও প্রচারণায় প্রায়ই ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে। ভারত বহু ভাষা ও জাতির দেশ। আর্যদের ভাষা ছিল সংস্কৃত। তাঁদের ধর্মীয় পুস্তক ও কাব্য গুলো রচিত হয়েছে সংস্কৃত ভাষায়। এই আর্য ঋষিরাই ভারতে ধর্মীয় ও সামাজিক বর্ণবাদ তৈরি করেছে নিজেদের শাসন ও প্রভাবকে চিরস্থায়ী করার জন্যে। তাঁরাই অর্ধমানব নামের অচ্যুত বা অস্পৃশ্য মানুষ তৈরি করেছে, যা আজই ভারতে বহাল রয়েছে। বলা হয় ভারতে এখন ৩০ কোটি অচ্যুত মানুষ রয়েছে। মানবিক,আধুনিক,বিজ্ঞানমনস্ক ভারত গ্রহে যাচ্ছে কিন্তু ৩০ কোটি মানুষকে মানুষ হিসাবে স্বীকার করেনা।
আধুনিক ভারত বলে কথিত দেশের নেতারা বিদেশী আর্যদের নিজেদের নেতা, ধর্মনেতা ও পূজনীয় হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তাঁদের দর্শণকে নিজেদের দর্শণ বলে প্রচার করছেন। কিন্তু এক হাজার বছর আগে ধর্ম প্রচারের জন্যে ভারতে আসা ও এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মুসলমানদের নিজেদের আপনজন ভাবতে পারেনা। এর কারণ কিন্তু ভারতের সাধারণ মানুষ নয়। আর্য ঋষিরা আসলেই নিজেদের প্রভুত্বকে চিরস্থায়ী ভাবে জারি রাখার জন্যেই নতুন মানবিক সকল ধর্মকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ভারতেই জন্ম অন্যান্য ধর্ম বা দর্শনকে আর্যরা গ্রহন করেনি এবং নানা ধরণের অত্যাচার করে প্রতিহত করেছে। তাঁরা বৌদ্ধ, জৈণ, শিখ, কবির নানক সবাইকে প্রতহত করেছে। বৌদ্ধদের নির্মুল করার জন্যে লাখ লাখ বৌদ্ধকে হত্যা করেছে। হাজার বছর পরেও ভারতের নেতারা ইসলাম ও মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতে চায়। মুসলমানরা নাকি বিদেশী। তাহলে আর্য বা আর্য ধর্মের কি হবে? আর্য ধর্মপুস্তকের কি হবে? আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে হিন্দু ধর্ম নামে জগতে কোন ধর্ম নেই, অতীতেও ছিলনা। ভারতে এখনও এক ধর্ম নেই, এক জাতিও নেই। হিন্দু একটি ভৌগলিক অঞ্চল বা এলাকার নাম। বিদেশীরা এই এলাকাকে হিন্দুস্তান বলে অভিহিত করতো। হয়ত সিন্ধুনদী বা হিন্দুকুশ পর্বতের কারণে এই অঞ্চলকে হিন্দুস্তান বলতো। ইংরেজরা বা ইউরোপের লোকরা ইন্ডিয়া বলে অভিহিত করেছে। আবার অনেকেই মনে করেন রাজা ভরতের নামানুসারে অযোধ্যাকে ভারত নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভারতের মূল ইতিহাসেই গলদ রয়েছে। আর্য রাজা, মহারাজা ও ঋষিরা মূল ভারতীয়দের ইতিহাসকে মুছে দিয়েছে।
ইসলাম ভারতে এসে ধর্মীয় ভেদ আর বর্ণবাদের কারণে যারা হাজার হাজার বছর ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত ছিল তাদের মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। দাসকে বাদশাহ ও সেনাপতি বানিয়েছে।মুসলমান ঋষি, দরবেশ, সুফী ও বিজ্ঞানীরা ভারতকে আধুনিক হতে সাহায্য করেছে। আজ যে আধুনিক ভারত আপনারা দেখছেন তার ভিত্তি তৈরি করেছেন মুসলমান বাদশাহ ও জ্ঞানীরা। আর্য ঋষি ও জ্ঞানীরা ছিলেন রাজাদের অনুগত। তাঁদের সব জ্ঞানই ছিল রাজার জন্যে। কেমন করে রাজারা সাধারন মানুষকে শোষণ তার মন্ত্র শিক্ষা দিতেন ঋষিরা। ইসলাম এসেই সব মানুষকে জানিয়ে দিল মানুষ আল্লাহ বা স্রষ্টার প্রতিনিধি। আল্লাহর চোখে সব মানুষই সমান। সবার সমান অধিকার। সবাই শুধু আল্লাহকে সেজদা করবে। আল্লাহর আইন মেনে চলবে।
গুরু নানক বলেছেন,“বেদ পুরাণের যুগ চলে গেছে। এখন দুনিয়াকে পরিচালিত করবে একমাত্র কুরআন। মানুষ ্যে অবিরত অস্থির এবং নরকে যায় তার একমাত্র কারণ এই যে , ইসলামের নবীর প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই।”
নেহেরুজী বলেছেন, “হজরত মুহম্মদের(সা) প্রচারিত ধর্ম এর সততা, সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমতা ও ন্যায়নীতি পার্শবর্তী রাজ্যের লোকদের অনুপ্রাণিত করে। কারণ ঐ সমস্ত রাজ্যের জনসাধারন দীর্ঘদিন যাবত একদিকে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিতও নির্যাতিত হচ্ছিল। তাদের কাছে ইসলাম বা মুহম্মদের নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী।”
গান্ধীজী বলেছেন, “প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ,প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো উজ্জ্বল নযত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিল আলো ও স্বস্তি ইসলাম একটি মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সংগে হিন্দুরা হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক তাহলে আমার মতোই তারা একে ভালবাসবে।” রাজনীতির কারণেই হোক আর অনুভুতির কারণেই হোক তাঁরা ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতাকে মুছে ফেলতে পারেননি। এমন কি অচ্যুতদের মুক্তির জন্যেও তাঁরা কিছু করেননি। এমন কি বাংলাদেশের এক শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষের দেবতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ অচ্যুতদের মুক্তির জন্যে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। বরং তাঁরা সবাই নিজেদের আর্য ভাবতে পছন্দ করতেন। মহাশক্তিশালী প্রচার ও প্রোপাগান্ডার ফলে ভারত বা বাংলাদেশে সবাই নিজেদের আর্য ভাবতে গৌরববোধ করে। কারণ তাঁরা মনে করেন আর্য মানে পরিশীলিত বা কালচার্ড। অনার্য মানে আনকালচার্ড। অসুর সমান। তাইতো রাবণের মতো সকল ভুমিপুত্রই অসুর বা অমানব। আর্য নেতা রামকে বানানো হয়েছে রাজা ও দেবতা। তাই অনার্যদের শাসন করার একমাত্র আর্যদের। তাঁরাই আইন বানাবেন, ধর্ম তৈরি করে অনার্যদের পরিচালনা করবেন। অপরদিকে অনার্যদের ধর্ম শিক্ষার সকল পথ ও মত নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ডা: রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, “এ ধর্মের মধ্যে সংমিশ্রণ প্রবনতা এত বেশী যে ,এর মধ্যে একত্ববাদী ও নাস্তিক সহ সকল শ্রেণীর মানুষ একসাথে সহ অবস্থান করতে পারে। এ ধর্মে জীবন যাপনের সমন্বিত কোন বাস্তব ব্যবস্থা নেই।এ ধর্মে আছে শুধু আভিজাত্যের দম্ভভরা এক ইজারাদারী মনোভাব। এর লক্ষ্য মানুষকে পদানত রাখা।” “আরও সরাসরি ভাবে বলা যায় যে, এ ধর্ম মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদ বা ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েমের লক্ষ্যে পৌত্যলিকতার সংস্কৃতি চালু করেছে। ফলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের দুর্ভেদ্য প্রচীর গড়ে তুলেছে। যেখানে নেই কোন মানবিকতা, নেই কোন যুক্তি, নেই বিবেকের কোন স্থান।
বেদ ও পৌত্বলিক ধ্যান ধারণা, শ্রেণী বিদ্বেষ এবং ধর্মান্ধতার ভিত্তিতে আজও হিন্দু সমাজ টিকে আছে বিরাট এক মানবগোষ্ঠির যুক্তিহীন আবেগের কারণে। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সনাতন ধর্মীয় আবরনে সহস্র বছর ব্যাপী শোষিত বঞ্চিত শ্রেণীর উত্থান অবশ্যম্ভাবী।
আলকোরআনের সুরা বাকারার ২১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,আর গোটা মানবমন্ডলীতো একটিমাত্র উম্মত ছিল, কিন্তু তারপর মতভেদ করলো। ঋকবেদে বলা হয়েছে,‘ আমরা সর্বপ্রথম বিশ্বপতির ইবাদত করি এবং তাঁরই নিরংকুশ ও নি:শর্ত আনুগত্য করি যিনি সর্বপ্রথম প্রভু মনিব ও মালিক’। বিশ্ব জগতের মালিক একজনই(ঋকবেদ ৩-১২-১০)। আমরা শুধু আপনারই আনুগত্য প্রকাশ করি ও অবিরত আপনারই জয়গাণ করি(যজুর্বেদ ১৬-৪০)।
আলকোরআনের মতে আসমানী কোন বাণীই আল্লাহপাক বাতিল করে দেননি। মুসলমান বা আলকোরআনে বিশ্বাসীদের বলা হয়েছে, তোমরা অতীতের সকল কিতাব ও নবীদের মান্য করো। এটা তোমাদের ঈমানের অংগ। সকল নবী রাসুলের নাম বা তাঁদের আনীত কিতাবের নাম আমরা জানিনা। ভারতেও নিশ্চয়ই নবী ও কিতাব এসেছে মানুষের জন্যে। বেদ বা উপনিষদের অনেক বাণীর মর্মার্থের সাথে আলকোরআনের মিল রয়েছে, যা মুসলমানেরা বিশ্বাস করে। এক সময়ে স্বার্থান্বেষীরা আসল কিতাবকে বিকৃত করেছে , মুছে দিয়েছে। এরাই হচ্ছে আর্য মুনি ঋষিরা।
শ্রীমত ভগবত পুরাণে(৯-২৪-৫৬) বলা হয়েছে, যখনই কল্যাণকর কাজ ও সদগুণাবলী কমে যায় এবং পাপাচারের প্রসার ঘটে তখন অবশ্যই সকল দেবতাদের বড় দেবতা পথ প্রদর্শনের জন্য একজন অবতার প্রেরণ করেন বা একজন কৃতী পুরুষকে সৃষ্টি করেন। জগত পাপে পূর্ণ হয়ে গেলে আল্লাহপাক মহাপ্লবান সৃষ্টি করেন নূহনবীর জামানায়(আ)। আল্লাহপাক তাঁকে একটি জাহাজ তৈরি করার নির্দেশ দেন এবং বলেন জীবিত সকল প্রাণীকে জাহাজে তোলার জন্যে। মত্‍স পুরাণের(২৫-৩৫) শ্লোকে জাহাজের উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহপাক নবী মনুকে(নুহ) নির্দেশ দেন সকল প্রাণীকে জাহাজে তোলার জন্যে।
প্রাচীন ইরাণে একটি ধর্মের বিকৃত রূপে বলা হয়েছে দুই খোদার দাবী করা হয়েছে। এক খোদা ন্যায় ও সত্যের খোদা অপর খোদা মন্দ ও অন্যায়ের খোদা। এক সময়ে দুই খোদার ভক্তদের মাঝে মহাযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় যাতে অন্যায়কারীরা পরাজিত হয়ে জগতের বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়। তাদেরই একটি অংশ ভারতে আসে আর্য হিসাবে এবং তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে। তাদেরই তৈরি কাহিনী হচ্ছে কুরু পান্ডবের যুদ্ধ বা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। কুরু আর পান্ডবেরা একই গোত্রের এবং পরম আত্মীয়। অর্জুন হচ্ছে এই যুদ্ধের উসকানী দাতা। যেমন কারবালার যুদ্ধ। ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের যুদ্ধ। ন্যায় পরাজিত হয়েছিল। ভারতেও আর্য আর অনার্য(ভুমিপত্র ও ন্যায়ের প্রতীক)যুদ্ধে দেশপ্রেমিকরা পরাজিত হন এবং ভারতে অন্যায়কারী আর্যদের বিজয় কেতন উড়তে থাকে। আর্যদের মিথ্যা ইতিহাস আজও জারী আছে। দিল্লীর সিংহাসনে দীর্ঘ ৬৫ বছরে অনার্যরা দুয়েকবার ক্ষমতায় আসীন হলেও আর্য ষড়যন্ত্রের কারণে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। কংগ্রেসের সকল নেতাই ছিলেন আর্য ধারণা ও বিশ্বাসের প্রতিনিধি। মোদী নিম্নবর্ণের সনাতন বিকৃত ধর্মের প্রতিনিধি হলেও আর্য বিশ্বাস থেকে মুক্ত নন। ভারতে বর্তমানে আর্য ধারণা ও বিশ্বাসের প্রতিনিধির সংখ্যা ১০ ভাগের বেশী নয়। সোজা কথায় বলতে গেলে ভারতের মুল বা আসল অধিবাসীরা আজ ঐতিহ্য হারা। কারণ, আর্যরা তাদের ইতিহাসকে মুছে দিয়েছে। প্রাচীন ভারতে মানে তিন/চার হাজার বছর আগে জনগণ ছিল একেশ্বরবাদী। এক ইশ্বরই ছিল বিশ্বাসের মূল। মনুই ছিলেন তাঁদের প্রথম নবী/অবতার। তিনিই ইশ্বরের কাছে থেকে বাণী লাভ করেছেন। তাঁর বাণী ছিল অলিখিত। পরে আর্যরা তাকে বিকৃত করে নিজেদের কথাগুলো প্রচার করেছে। যারাই এর প্রতিবাদ করেছে তাকেই আর্যরা হত্যা করেছে না অচ্যুত বানিয়েছে। প্রচার করেছে ব্রহ্মার মস্তক থেকে ব্রাহ্মণের জন্ম আর ব্রাহ্মণের পদযুগল থেকে অচ্যুত বা হরিজনদের সৃষ্টি করা হয়েছে। সকল ব্রাহ্মণই আর্য। আর্য ব্যতীত কারোরই ব্রাহ্মণ হওয়ার সুযোগ নেই। এই প্রথা আজও আধুনিক ভারতে প্রচলিত। বিকৃতির কারণেই আল্লাহপাক অতীতের স্থগিত কিতাবের পরিবর্তে নতুন কিতাব ও নবী/রাসুল মানুষের মুক্তির জন্যে পাঠিয়েছেন। আগেই বলেছি, আর্যরা মূল ভারতবাসীর সনাতন ধর্ম ও কিতাবকে ধ্বংশ করেছে। জগতে আল্লাহপাক ১০০টি সহীফা(পুস্তিকা) ও কিতাব পাঠিয়েছেন। বহু নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। ভারতেও নবীরা এসেছেন। যাদের ইতিহাস বা রেফারেন্স হারিয়ে গেছে।
অতি পুরাতন সনাতন ধর্মের উল্লেখ করেছি এ কারণে যে, অখন্ড ভারত বিভক্ত হয়েছে আর্যদের বিদ্বেষ সৃষ্টির কারণে। মুসলমানরা যদি বহু শতাব্দী ধরে ভারত শাসন করতে পারে তাহলে অখন্ড ভারতে তারা থাকতে পারলোনা কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেয়ার দায়িত্ আধুনিক ভারতের অসাম্প্রদায়িক জ্ঞানী মানুষদের। ইতিহাস ও গবেষণা প্রমান করেছে যে অখন্ড ভারতকে খন্ড করেছে আর্য কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা মহা সাম্প্রদায়িক। তাঁদের কারণেই ভারতে হাজার দাংগা হয়েছে। গুজরাটের মহা দাংগার পরেও আরও বহু দাংগা হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তেমন কোন দাংগা হয়নি।
চলমান বাংলাদেশে নাগরিকদের ৯০ ভাগ মুসলমান হলেও এটা মুসলীম বা ইসলামিক রাষ্ট্র নয়। তথাকথিত সেক্যুলারিজমের( ধর্মহীনতার ) নামে রাষ্ট্র নিজেকে ৯০ভাগ মানুষের ধর্মের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য অদৃশ্য শক্তিকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যে। ইসলাম বা মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করার জন্যে পশ্চিমারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও পশ্চিমাদের ইংগিতে উঠছে আর বসছে। আমাদের সংসদ ১০ ভাগ নাগরিককে সন্তুষ্ট করার জন্যে সংবিধানকে আল্লাহ মুক্ত করেছে। রাজনীতিতে, নাগরিকত্বে, অধিকারে আপনি কখনই নিজধর্মের গুণগাণ করতে পারবেনা। এসব হচ্ছে কেন? আপনারা কি কখনই ভেবেছেন? কারণ , ১৫কোটি মুসলমানের দেশে রাষ্ট্র আপনাকে মুসলমান মনে করেনা। রাষ্ট্রের কাছে আপনি শুধু একজন নাগরিক মাত্র। মসজিদ আর কোথাও আপনার অস্তিত্ব নেই। কোরাণের সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্র নিজের তৈরি আইনের দ্বারাই পরিচালিত হয়। কোরাণ আপনার জীবনের ব্যক্তিগত কিতাব। ঘরে আর মসজিদের এই কিতাবের চর্চা করবেন।
১৯০ বছরের ইরেজ শাসনে আমাদের আধুনিক শিক্ষিত মানুষ গুলো ধর্ম থেকে দূরে সরে গেছে। যেন ধর্ম পালন করলে আপনি আর আধুনিক থাকতে পারবেন না। কোরাণকে আল্লাহপাক হেফাজত, রক্ষা ও অবিকৃত রাখলেও আপনাকে অবিকৃত রাখতে পারেননি। আপনার বিশ্বাসে বহু অনাচার প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র। আপনি দেশের আলেম সমাজকে অশিক্ষিত মনে করেন। কোরাণ জানা বা চর্চা করা আপনার জীবনে ব্রত নয়। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে রাস্ট্রে আপনি কোরাণ না জানলেও প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধান সেনাপতি, মন্ত্রী ,সচিব সবকিছুই হতে পারেন। অমুসলীমরা ইসলামের কোন ক্ষতি করতে পারেনি যা করেছে বা করছে মুসলমান নামের শাসকগণ। মুসলমান জ্ঞানী গুণীজনকে সবচেয়ে বেশী অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে মুসলমান শাসকগণই। ভারতের একেশ্বরবাদী সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে আর্য শাসক ও মুনী ঋষিরা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখনও তৈরি হয়নি। এ কাজটি সম্পন্ন করবেন ইতিহাসবিদগন। আর সম্পন্ন হবে হয়ত আরও ৫০ বছর পর। এখন তর্ক বিতর্ক চলছে। এর ফাঁকে তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের কিছু দলিল দস্তাবেজ সংগৃহীত হয়েছে। সে গুলো কিছু প্রকাশিত হয়েছে। আরও প্রকাশিত হবার অপেক্ষায় আছে। ভারতও বাংলাদেশ ডকুমেন্ট নামে বহু খন্ডের দলিল প্রকাশ করেছে।
সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও ভারতকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টিকে তাদের একক এবং অতি একান্ত নিজস্ব মনে করে। এতে আর কারো কোন অবদান আছে তা আওয়ামী লীগ স্বীকার করতে বা মানতে রাজী নয়। ভারতও তাই মনে করে। ভারত নিজের স্বার্থ অনুযায়ী নিজের মতো করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে চায়।গুন্ডে ফিল্মের কথা সবাই জানেন। এই ফিল্মে পরিচালক বা প্রযোজক নিজেদের মতো করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছে। হঠাত্‍ দেখা গেলো বাংলাদেশের কিছু মানুষ দেশপ্রেম দেখাবার জন্যে হেৈচৈ শুরু করে দিয়েছিল। বাংগালীদের এমন স্বভাব চিরদিনের কিনা জানিনা। হামবড়া ভাব ছাড়া আর কিছু দেখাতে পারেনা। রিকশাওয়ালাও সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়। আমি যদি বলি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লেখা বা তার জন্যে তথ্য উপাত্ত জোগাড় করে দেয়া সরকারের কাজ। রাজনীরিকরাতো নিজেদের গৌরব ছাড়া আর কিছু দেখতে পারেনা। এজন্যেই মণিষী রা বলে গেছেন, রাজনীতিকরা আজকের ভাবতে অভ্যস্ত, আর রাষ্ট্রনায়করা আগামীদিন ও আগামী প্রজন্ম নিয়ে ভাবে। আমাদের দেশে এখন কোন রাষ্ট্র নায়ক নেই।
বংগবন্ধুর হয়ত সে সুযোগ ছিল যদি তিনি পাকিস্তান বন্দীদশা থেকে ফিরে এসে গান্ধীজী, মাও জে দংয়ের মতো জীবন যাপন করতেন। তিনি তা করতে পারেননি। ফলে তিনি ইতিহাসের পাতায় বিতর্কিত হয়ে থাকবেন। সে রাষ্ট্রের দায়িত্ না নেওয়ার জন্যে অনেকেই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তাজউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে সরকার চালাতে পারতেন। বরং ঘটনা উল্টো দিকে ঘুরেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান পরিচালক ও প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে বংগবন্ধু আস্থায় নিতে পারেননি। একদলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারেও তিনি তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে আলোচনা করেননি। তিনি আমলে নিতেন মুজিব বাহিনীর নেতা শেখ মনির কথা। কারণ, দিল্লীর আস্থাবান মুজিব বাহিনীর নেতারা প্রবাসী সরকারকে মানতোনা। তাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধ যেন বামপন্থীদের হাতে না চলে যায়। ভাত সরকারের পক্ষ থেকে জেনারেল উবানই মুজিব বাহিনীর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনিও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি বই লিখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতীয় জেনারেল, পাকিস্তানী জেনারেল ও বাংলাদেশের সামরিক নেতারা অনেক বই লিখেছেন। আমরা সব বই পড়িনি। লেখকগণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিকোন থেকে সে সময়ের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন। আর এই যুদ্ধের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত চীন ও পাকিস্তান। পাকিস্তানএর সামরিক শাসকগন নিজেদের আভ্যন্তরীন রাজনীতি অনুধাবন না করে শক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিলেন। রাশিয়াতো ভারতের পার্টনার ছিল। আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সমর্থন করেছে। পূর্বপাকিস্তানে যে গণহত্যা চলছে তা নিক্সন ও কিসিঞ্জার স্বীকার করতে চায়নি। তাঁরা দুজনই তখন চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে ব্যস্ত ছিলেন। তবে তাঁরা আসা করেছিলেন রাজনৈতিক সমাধান হয়ে যাবে । কিন্তু উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ঢাকায় আমেরিকার কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড তাঁর প্রতিদিনের টেলিগ্রামে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের কথা বলেছেন। এজন্যে ব্লাডকে তাঁর চাকুরীতে নানা ধরণের হেনস্তা হতে হয়েছে। তখন দিল্লীতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মিষ্টার কিটিংসও ব্লাড এর মতোই পাকিস্তানী সামরিক জান্তার অত্যাচারের খবর বর্ণনা করে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাতে কিসিঞ্জার কোন কান দেননি। যুদ্ধে পাকিস্তানের পতনের পর নিক্সনকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। কারণ , নিক্সন নাকি পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন। আর ইন্দিরা গান্ধীও ১৬ই ডিসেম্বরের পর এক তরফা ভাবে সিজফায়ার যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন। আর পাকিস্তানও তা মেনে নেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছাও তাই ছিল। ভারতের আকাংখা পূরণ হলো। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলো। হয়ত ভূট্টোর ইচ্ছাও তাই ইচ্ছাও তাই ছিল। কিন্তু বংগবন্ধুর ইচ্ছা ছিল ৬ দফার আদলে একটি অখন্ড শক্তিশালী ফেডারেল পাকিস্তান। বাংলাদেশের সাধারন মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছে এ কথা সত্যি। কারণ, পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক শাসক গোষ্ঠি। ১৭৫৭ সালের পর থেকেই এখানকার সাধারণ মানুষ শোষিত হয়ে আসছে। সে শোষন পাকিস্তান আমলেও অব্যাহত ছিল। ফলে ৬ দফার উত্‍পত্তি হয়েছে। ৬ দফা ছিল পূর্ণাংগ স্বায়ত্ব শাসন বা তার চেয়ে একটু বেশী। পাকিস্তানীরা তা মানেনি আঞ্চলিক রাজনীতির ষড়যন্ত্রের কারণে। লাহোর প্রস্তাব ছিল ফেডারেল পাকিস্তানের প্রস্তাব। শক্তিশালী ফেডারেল কাঠামো মানলে ভারতও খন্ডিত হতোনা। বর্তমানে এ অঞ্চলে রাজনীতি চলছে তার প্রধান নিয়ামক শক্তি হলো ভারত। বাংলাদেশ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ভারতের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতি প্রভাবের মধ্যেই রয়েছে। ভারতের কথা না শুনলে এদেশে ১/১১র মতো সরকার আবার আসবে।
কিন্তু সমস্যা হলো বর্তমান আওয়ামী লীগকে নিয়ে। তাঁরা নিজেদের মতো করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বানাতে চান। মুক্তিযুদ্ধকে তাঁরা তাঁদের মতো করে ভাবেন। এখানেই ইতিহাসের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ। আর একবার মিথা বা অসত্য বললে সেই অসত্যকে নিয়ে চিরজীবন চলতে হয়। এতে ইতিহাসে বিভ্রান্তি তৈরি হয় ক্ষতি হয় জাতি। বাংলাদেশে যে ঐতিহাসিক দ্বন্ধ চলছে তা আওয়ামী লীগের তৈরি করা। রাজনীতিকরা অবারিত ভাবে অসত্য কথা বলেন এবং সত্য ও তথ্যকে কলংকিত করেন। আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ আজ বাস্তব ও স্বাধীন। ৭১ সালে পর্দার অন্তরালে কার কি ভুমিকা ছিল তা দেশবাসীর জানা উচিত। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সারা পৃথিবীতে বই লেখা হচ্ছে। সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায়না। বংগবন্ধু নিজেও দেশে ফিরে এসে পর্দার অন্তরালে কি ঘটেছে তা বলতে পারতেন। তিনি হয়ত মনে করেছিলেন, দেশ যখন স্বাধীন হয়েই গেছে তাহলে অজানা কথা গুলো বলে আর কি লাভ।
বংগবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সামরিক আদালতে বিচারের ঘোষণা দিলে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাতে হস্তক্ষেপ করেন। ফলে জেনারেল ইয়াহিয়া লিখিত ভাবে অংগীকার করলেন, শেক মুজিবকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবেনা। জি ডব্লিউ চৌধুরী এক সাক্ষাতকারে বলেছেন,‘শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেয়ার কথা পাকিস্তান সরকার কোনদিন কল্পনাও করেনি। কিছু মাথা গরম জেনারেল হয়ত ফাঁসি দেয়ার কথা ভেবেছিলেন। পাকিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার রাস্ট্রদূত জোসেফ ফাল্যান্ড বলেছেন, যুদ্ধের উপর যখন ইতিহাস লেখা ্বে ,তকন প্রমানিত হবে ,যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা এবঁ আমাদের স্থানীয় কর্ম তত্‍পরতা শেখ মুজিবকে বাঁচিয়ে রাখে। আমি ইয়াহিয়াকে বলেছি, ‘আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে , মুজিবই হচ্ছে পাকিস্তানের ভবিষ্যত। পূর্ব ও পশ্চিমের চাবিকাঠি। পাকিস্তানের জেল থেকে পিআইএ বিমানে করে ৮ই জানুয়ারী লন্ডনে নেমে এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, তাঁরা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চেয়েছিল। কিন্তু ৭২এর ১৮ই জানুয়ারী বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ সাহেব ফাঁসির গল্পটি প্রকাশ করেন। রাজনীতিতে এ রকমটা করতে হয়। এর দ্বারা নাকি জনগণের কাছে ইমেজ তৈরি হয়।
কিসিঞ্জার আরও লেখেছেন,১৪ই জুলাই আমাদের কলকাতার কজনস্যুলে এসে কলকাতার আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছন, শেখ সাহেবকে মুক্তি দিয়ে ৬ দফার ভিত্তিতে আলোচনা করলে সমঝোতা হতে পারে। তা না হলে স্বাধীনতা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। অপরদিকে শেখ সাহেবের আইনজীবী একেব্রোহি বলেছেন, ইয়াহিয়া খান তাঁর ২৬শে মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাকে আইনগত দৃষ্টিকোন থেকে নড়বড়ে করে ফেলেছেন। ইয়াহিয়ার এ বিবৃতি আদালতকে প্রভাবান্বিত করবে। ১৯৭২ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারী সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটন পোষ্টে লিখেছিলেৃন, পাকিস্তান সরকার সমঝোতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি রাজি হননি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ দখল করে ভুট্টো ২৭শে ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির একটি বাংলোতে শেখ সাহেবের সাথে দেখা করেন। এর আগের দিন শেখ সাহেবকে লয়ালপুর থেকে রাওয়ালপিন্ডি আনা হয়। এরপর আবার দুজন মিলিত হন ৮ই জানুয়ারী। এদিনই ভুট্টো জানালেন, ভাই আপনি মুক্ত। এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন। এ সময়ে কি কথা হয়েছিল তার রেকর্ড দলিল পাকিস্তানের কাছে। ৮ই জানুয়ারী ভুট্টো শেখ সাহেবকে রাওয়ালপিন্ডি বিমান বন্দরে বিদায় জানালেন আর সাংবাদিকদের বললেন, ‘পাখি উড়ে গেছে’( বাংলাদেশ ডকুমেন্ট, ২য় খন্ড ৬০২পৃ)। হিথ্রো বিমান বন্দরে নেমে শেখ বললেন, ‘আমি মিস্টার ভুট্টোর সাফল্য কামনা করি’( বাংলাদেশ ডকুমেন্ট ২য় খন্ড ৬০২পৃ)। বিবিসির সাবেক সাংবাদিক সেরাজুর রহমান বলেছেন, শেখ সাহেব তকনও জানতেন না বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কারণ, ভুট্টো তাঁকে সমঝোতা বা লুজ ফেডারেল সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ৭০ সালে নির্বাচনের পরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে গোলযোগ সৃষ্টি করেছিলেন ভুট্টো। তিনিই দুই প্রধানমন্ত্রীর থিওরী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন উভয় অঞ্চলে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই যৌথ শাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যতদূর শুনেছি, বংগবন্ধু অখন্ড পাকিস্তানের স্বার্থেই ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সাথে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন। আমরা এও শুনেছি , ৬দফার পুরো বাস্তবায়ন না করেও তিনি সমঝোতায় রাজী ছিলেন। কিন্তু কি সমঝোতা হয়েছিল বা কেন শেষ পর্যন্ত কেন আলোচনা গেল? কে এজন্যে দায়ী? ভুট্টো, ইয়াহিয়া বা ইন্দিরা গান্ধী বা পাকিস্তানের সামরিক জান্তা কে অনেকেই দায়ী করেন। ইন্দিরা গান্ধী কেন পাকিস্তান ভাংতে চেয়েছিলেন তা নানা ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানকে ভাংগার জন্যে ভারতের নেতারা ৪৭ সাল থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, এ কথা কারও অজানা নয়। ভারত ৭১ সালে যে সুযোগ পেয়েছে তা কাজে লাগিয়েছে নিজেদের স্বার্থে। বংগবন্ধু ইচ্ছে করেই ভারত যাননি। তিনি হয়ত মনে করেছিলেন, ভারতে গেলে সমঝোতার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। আমেরিকাও চায়নি পাকিস্তান ভেংগে যাক। এ তথ্য আমরা পেয়েছি বিভিন্ন দলিলে। আমেরিকা চেয়েছিল রাজনৈতিক সমঝোতা। সে সমঝোতা হতে দেয়নি ভারত ও রাশিয়া। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন কিছুতেও বংগবন্ধুর মৃত্যুদন্ড চাননি। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছ থেকে এই মর্মে লিখিত ওয়াদা আদায় করেছিলেন। ভুট্টোও শেখ সাহেবের মৃত্যুদন্ড চাননি। তিনিও নিক্সনের কাছে ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু ভুট্টো কি অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন? গবেষণাই একদিন প্রমান করবে ভুট্টো কি চেয়েছিলে আর বংগবন্ধু কি চেয়েছিলেন। সে সময়ের জন্যে আমাদের বা পরের প্রজন্মকে অপেক্ষা করতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক কারণেই আমেরিকা পাকিস্তানের বন্ধু হলেও তখন যে কোন ধরণের সামরিক ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকে। ৭১ সালের পূর্ব বংগবন্ধু রাজনীতিতে আমেরিকা পন্থী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনই বাম রাজনীতির ধারাকে সমর্থন করেননি। ইন্দিরা গান্ধীও চাননি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ বামপন্থীদের দখলে চলে যাক। সেতা আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়েও দেখেছি। সুতরাং, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি অখন্ড পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও ইন্দিরা গান্ধী। তাহলে সামরিক জান্তা অখন্ড পাকিস্তানকে কেন ধ্বংস করলো? পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে বংগবন্ধু কখনই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কারও সাথে আলাপ করতে চাননি। তাজউদ্দিন সাহেব নিজেও এ কথা বলেছেন। তবে বংগবন্ধু হয়ত শেখ মনির কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু জেনে থাকতে পারেন। শেখমনি ও তাঁর বন্ধুরা মুজিব নগর সরকারের বিরুদ্ধেই ছিলেন। শেখ মনির নেতৃত্বেই মুজিব বাহিনী গঠণ করেছিল ভারত সরকার বা ইন্দিরা গান্ধী। জেনারেল উবান বা ভবাণী পুরের র’অফিস মুজিব বাহিনীকে দেখাশুনা করতো।
বংগবন্ধুর সরকারের পতনের পর ৭৫ সালের ২০শে আগষ্ট বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইন্দিরাজী বলেছিলেন,‘বাংলাদেশে নতুন পরিস্থিতি যাই হোকনা কেন বাংলাদেশে ভারতের সর্বময় কতৃত্ব বজায় থাকবে’। কালিদাস বৈদ্য ও চিত্ত সুতাররা চেয়েছিলেন দেশটির নাম হোক স্বাধীন পূর্ব বাংলা। তাহলে একদিন পশ্চিম বাংলার সাথে মিশিয়ে দেয়া যাবে। কালিদাসের মতে শেখ মুজিব ছিলেন ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। তাই তিনি দেশের নাম পূর্ব বাংলা রাখতে চাননি। অনেকেই বলেন ৭৪ সালে দিল্লীর অনুরোধকে উপেক্ষা করে শেখ সাহেব পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। হোয়াইট হাউজ ইয়ার্স বইতে রবার্ট ডালেক লিখেছেন যে,পূর্ববাংলা বিষয়ক নীতি ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদন ছিল। শর্মিলা গবেষণাধর্মী বই ডেড রেকনিংয়ের ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয়দের তেমন আগ্রহ নেই। কারণ তারা বানোয়াট ইতিহাসে বিশ্বাস করে। কেউ যদি দলিল ভিত্তিক কোন ইতিহাস রচনা করে তখন লেখককে পাকিস্তানের দালাল বলে গালাগাল দিতে শুরু করে। বংগবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণে জয় বাংলা ও জয় পাকিস্তান বলেছেন কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরাণার লোকেরা খন্দকার সাহেবকে যা ইচ্ছে তাই বলে গালাগাল করে চলেছে। জিয়াউর রহমানকে বহু আগেই পাকিস্তানের চর বলে অভিহিত করেছে। আর বাকি রয়েছেন শফিউল্লাহ সাহেব। একদিন তাঁকেও হয়ত এমন গালাগাল শুনতে হতে পারে। আমি বহুবার লিখেছি, বংগবন্ধু আমাদের দেশের ও জাতির প্রধান নেতা। তাঁর নামেই দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। জিয়া সাহেবও বংগবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে ঘোষণার বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ পানি ঘোলা করছে কেন?
এবার আসা যাক ৭১ সালের নয় মাসে বংগবন্ধুর পরিবার কেমন ছিলেন। যারা দেখেছেন বা লিখেছেন তাঁরা বলেন, বংগবন্ধুর পরিবারকে সে সময়ে নিয়মিত ভাতা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এমন কি তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছে পাকিস্তানী সেনারা। বংগবন্ধুর পিতামাতা চিকিত্‍সার ব্যবস্থাও করেছে পাকিস্তানীরা। এয়ার মার্শাল আজগর খান সাহেব বংগবন্ধুর পিতাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। ছেলেকে এক নজর দেখার জন্যে শেখ লুত্‍ফর রহমান সাহেব জেনারেল ইয়াহিয়াকে টেলিগ্রাম করেছেন সে কথা বলেছিলেন আজগর খান সাহেবকে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বানোয়াট গল্প যাঁরা লিখছেন বা লিখতে চান তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে হেয় করছেন, বিদেশীদের চোখে আমাদের হীন করছেন। সে সময়ে পর্দার অন্তরালে কি হয়েছে তাও জানার অধিকার দেশবাসীর আছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


কাশ্মীরী, ফিলিস্তিনি, কুর্দিরা জাতি, কিন্তু তাঁদের কোন স্বাধীন দেশ নেই। স্বাধীন রাস্ট্র বা দেশ গঠণের জন্যে তাঁরা কয়েক যুগ ধরে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ নির্যাতিত হয়ে ভৌগলিক স্বাধীনতা চায়। কারন ভৌগলিক অধিকার না থাকলে আধুনিক যুগে রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়না। ইংরেজ ও হিন্দু শোষণ থেকে মুক্তি লাভের আশায় ভারতের মুসলমানেরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাংখায় পাকিস্তান চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের কংগ্রেস বা হিন্দু নেতারা পাকিস্তান প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। এমন কি অখন্ড ভারতের কাঠামোতেও হিন্দু নেতারা মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার মেনে নিতে চায়নি। হিন্দু নেতারা যদি হিনমন্যতায় না ভুগে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতেন তাহলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হতোনা। ভারতে বহু জাতি ও বহু ভাষা রয়েছে এ কথা কংগ্রেস নেতারা মানতে চাননি। তাঁরা মানতে চাননি ভারতে হিন্দু ছাড়া আরও বহু ধর্ম রয়েছে। মুসলমানেরা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জাতি। কংগ্রেসের ভন্ডামী ও তথাকথিত সেক্যুলারিজমের নামে মুসলমানদের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায়নি। ফলে, মুসলমান নেতারা( যাদের বেশীর ভাগই ছিলেন উচ্চ সমাজের প্রতিনিধি) বাধ্য হয়ে ১৯৪০ সালে পাকিস্তানের দাবী তোলে। কংগ্রেস নেতারা মনে করতেন, তারা সকল ভারতীয়ের প্রতিনিধিত্ব মূলক সংগঠণ। কার্যত ও বাস্তবতায় কংগ্রেস ছিল হিন্দুদের সংগঠণ। তাই ১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারতের মুসলমানদের নিজেদের সংগঠন মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি মনে করি হিন্দু নেতাদের ব্যর্থতার কারণেই মুসলীম লীগের জন্ম হয়েছে। কালক্রমে মুসলমানদের শক্তিশালী দরকষাকষির ফলেই ১৯৪৭ সালে ভারত ভেংগে নতুন রাষ্ট পাকিস্তানের জন্ম হলো, যা হিন্দু নেতারা কখনই মেনে নিতে পারেননি। ফলে দুই দেশের ভিতর জন্ম লগ্ন থেকেই বৈরিতা চলতে থাকে। পাঠক সমাজের স্মৃতিকে একটু ঝালিয়ে নেয়ার জন্যে পেছনের কথা গুলো বলেছি।
পাকিস্তান নামক কোন দেশ ৪৭এর আগে কোথাও ছিলনা। ইংরেজদের আগে ভারতে কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলমান শাসন ছিল। হিন্দুস্তান শব্দটির স্রষ্টা বিদেশীরা। সিন্ধু,হিন্দুকুশ শব্দ থেকে হয়ত বিদেশীরা এই নাম করণ করে থাকতে পারে। তবে মুসলমানদের আগমনের আগে ভারত বা হিন্দুস্থান কখনও একদেশ ছিল। বিভিন্ন এলাকা বা অঞ্চল বিভিন্ন রাজা শাসন করতেন। এরা সবাই স্বাধীন ও সার্বভৌম ছিলেন। মুসলমানরাই এক ভারত বা হিন্দুস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ইংরেজ শাসন কালে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়া হয়। ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ভিতর অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধকে ইংরেজরা কাজে লাগায়। হিন্দু, প্যাগান, পৌত্তলিকরা মনে করেন ভারত একমাত্র তাঁদেরই দেশ। কারণ ধর্মীয় ভাবে ভারতে হিন্দুরা মেজরিটি। যদিও এখানে বহু ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বাস করে। তবুও হিন্দুরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এদেশ শুধু হিন্দুদের। এর ফলেই হিন্দু মেজরিটির সাথে মুসলমানদের বিরোধ তৈরি হয়। আমি এর আগে বহুবার বলেছি, হিন্দু নেতরা একটু উদার ও সহনশীল হলে ভারত ভাগ হয়ে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টি হতোনা। মুসলীম মেজরিটি এরিয়া নিয়েই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে কোন ধরণের যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়নি। যদিও ১৭৫৭ সালের পরেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলমানেরা যুদ্ধ শুরু করে আর হিন্দুরা ইংরেজদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে সহযোগিতা করতে থাকে। ফলে মুসলমানরাই ছিল ইংরেজদের প্রধান শত্রু।
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ববাংলা ছিল সবচেয়ে বেশী শোষিত ও নির্যাতিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরেও সেই শোষণ ও নির্যাতন অব্যাহত থাকে এবং পূর্বাঞ্চলের গরীব মুসলমানদের ভিতর অসন্তোষ চরমে উঠে। আলাপ আলোচনা ও সমঝোতার নামে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বংগবন্ধুকে ধোকা দিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। বংগবন্ধু তাদের প্রতারণা মূলক আলোচনা অব্যাহত রাখেন রাখেন ২৪শে মার্চ পর্যন্ত। যদিও বংগবন্ধু দৃঢভাবে বিশ্বাস করেছিলেন সমঝোতা হবে। এটা ছিল পাকিস্তানী সামরিক জান্তার চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও সীমাহীন শক্তি প্রয়োগ করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা। ২৫শে সারাদিন বংগবন্ধু সারাদিন নিজ বাসভবনে অপেক্ষা করেছেন কখন ঐতিহাসিক সমঝোতা পত্র আসবে। যদিও সমঝোতাপত্রে কি ছিল দেশবাসী আজও জানেনা। যদিও অনেকেই বলেন, সমঝোতা ছিল ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানকে কনফেডারেশনে পরিণত করা। তাই বংগবন্ধু ২৫শে মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে তাজ উদ্দিন সাহেব যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। বরং বলেছিলেন, এই ঘোষণাপত্র তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দলিল হয়ে যাবে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার কথা বলে নিজে ঘরে বসে থাকলেন। এ কথা তাজউদ্দিন সাহেবই বলেছেন।
অপরদিকে জেনারেল ইয়াহিয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে শেখ সাহেব দলের স্বাধীনতাকামীদের প্রচন্ড চাপের মুখে রয়েছেন। তাই চাপ কমাবার জন্যে ইয়াহিয়া ৬ই মার্চ বংগবন্ধুকে একটি নম্বরবিহীন ফোন থেকে ফোন করলেন। ওইদিন ইয়াহিয়া একটি বার্তাও পাঠালেন বংগবন্ধুর কাছে। বার্তায় বললেন, ‘অনুগ্রহ করে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না।আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে,আপনার আকাংখা এবং জনগণকে দেয়া আপনার অংগীকারের পুরোপুরি মর্যাদা আমি দেবো। আমার কাছে একটি পরিকল্পনা আছে যা আপনার ৬ দফার চেয়েও বেশী খুশী করবে। আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না( নিয়াজীর আত্ম সমর্পনের দলিল,৬৪পৃ)।
৬ই মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের বৈঠক বসলো। একটানা নয় ঘন্টা বৈঠক চললো। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতাকামীদের পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এর আগে গোপনে শেখ সাহেবের সাথে মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাডের সাথে শেখ সাহেবের সাথে বৈঠক হয়। ফলে ৭ই মার্চ ভাষণে শেখ সাহেব স্পষ্ট করে স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দেননি। এসব ছিল ইয়াহিয়ার ছল চাতুরী। আর বংগবন্ধু সীমাহীন ভুল করেছেন তাঁকে বিশ্বাস করে। ৭ই মার্চের ভাষণে বংগবন্ধু ২৫শে মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যাওয়ার জন্যে ৪ দফা দাবী পেশ করলেন। ১) সামরিক আইন তুলে নিতে হবে,২) জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,৩) সেনা বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে,৪) বাংলার মানুষ হত্যার কারণ অনুসন্ধানের জন্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে হবে। এই ভাষণ সম্পর্কে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে এটাই সর্বোত্তম ভাষণ।’( নিয়াজীর আত্মসমর্পনের দলিল ৬৬পৃ)। নিজের ভাষণ সম্পর্কে শেখ সাহেব নিজে কি বলেছেন। ৭২ সালের ১৮ই জানুয়ারী ডেভিড ফ্রষ্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন,স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কি পরিণতি হবে আমি জানতাম। তাই বলেছি ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ফ্রষ্ট প্রশ্ন করলেন আপনি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে কি হতো? শেখ সাহেব বললেন, ওইদিন আমি এটা করতে চাইনি। কেননা, বিশ্বকে তাদের আমি এ বলার সুযোগ দিতে চাইনি যে, তারা বলুক মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং আঘাত হানা ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নেই। আমি চাইলাম তারাই আগে আঘাতটা হানুক এবং আমার জনগণ তা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।( বাংলাদেশ ডকুমেন্টস: ২য় খন্ড ৬২পৃ)।
তাজউদ্দিন কন্যা শারমিন আহমদ লিখেছেন,২৫শে মার্চ রাতে তাজউদ্দিন সাহেব বংগবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন তাঁকে আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু শেখ সাহেব রাজী হলেন না। তিনি বললেন, যা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো। পরশুদিন ২৭শে মার্চ হরতাল ডেকেছি। ওই সময়ে পাশের রুমে বেগম মুজিব শেখ সাহেবের স্যুটকেস গুছিয়ে দিচ্ছিলেন। এর মানে শেখ সাহেবকে সেনাবাহিনী নিতে আসবে সেকথা বেগম মুজিব জানতেন। এর পরে তাজউদ্দিন সাহেব পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে যান এবং সেটা দস্তখত করতে বলেন। তাঁর সাথে একটা টেপ রেকর্ডারও ছিল। তিনি আরও বললেন,আপনাকে বলে যেতে হবে আপনার অনুপস্থিতে কে নেতৃত্বে থাকবেন। রিচার্ড সিসন এবং লিও ই রোজ তাঁদের বই ওয়ার এ্যান্ড সিসেসন পাকিস্তান বইয়ে লিখেছেন, বৈঠক শেষে মুজিব একজন সিনিয়র সামরিক অফিসারকে জানালেন যে তিনি এবং ইয়াহিয়া ১১জন মন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠণের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সহ ৬ জন পূর্ব পাকিস্তান থেকে, অপর ৫জন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। ৩জন ভুট্টোর দল পিপিপি ও ২জন ওয়ালী খানের ন্যাপ থেকে। আসলে সবকিছু ছিল ধোকা। শেখ সাহেব হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন ধোকার বিষয়টি। তবুও তিনি আগে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিতে চাননি। তিনি হয়ত এটা কৌশল হিসাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি মে করতেন তাঁর অনুপস্থিতিতেও তাঁর দল সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। তিনি কোন ভাবেই চাননি তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান ভাংগার অভিযোগ আসুক। ২৪শে মার্চেও বংগবন্ধু বলেছেন,আমরা শান্তিপূর্ণ মীমাংসা চাই। এর মানে এই নয় যে,আমি আমার দাবী ধেড়ে দেবো।( দৈনিক পাকিস্তান ২৪শে মার্চ) ২২শে মার্চেও বংগবন্ধু বলেছিলেন, যদি কোন অগ্রগতিই না হয় তাহা হইলে আমি আলোচনা চালাইয়া যাইতেছি কেন?
জেনারেল জ্যাকব তাঁর লিখিত ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা- বার্থ অফ এ ন্যাশন’বইতে উল্লেখ করেছেন যে,তাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন আপাদমস্তক এক গণতন্ত্রী। সেহেতু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরির সময় তিনি সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোণার ব্যাপারে তাজউদ্দিন সাহেব জ্যাকবের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। জ্যাকব একটি ড্রাফট তৈরি করে তাজউদ্দিন সাহেবকে দেন। তিনি সেই ঘোষণা নামজাদা আইনজীবীদের দেখিয়ে ১১ই এপ্রিল ঘোষণা দেন এবং ১৭ই এপ্রিল বেদ্যনাথতলাকে মুজিব নগরকে প্রবাসী সরকারের রাজধানী করে সরকার গঠণের ঘোষণা দেন। ১১ই এপ্রিলের ঘোণায় তাজউদ্দিন সাহেব বলেন,জিয়াউর রাহমানই প্রথম ঘোষণা দিয়েছেন
ইন্সটিটিউট ফর ডিফেন্স ষ্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস এর পরিচালক কে সুব্রামানিয়াম বলেছেন,‘মেজর জিয়ার কার্যক্রম এবং পরদিন ২৬শে মার্চ ত্বড়িত সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম শহর দখল এবং অস্থায়ী সরকারের ঘোষণাদান একজন মধ্যম পর্যায়ের সামরিক অফিসারের তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ই কেবল বিধৃত করেনা,তাঁর দূরদর্শিতা ও পরিকল্পনাকেও প্রতিভাত করে।(দ্য লিবারেশন ওয়ার,১৫১-১৫২পৃ)।
মুজিবনগর সরকার বা বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার নিয়ে লেখার ফলে মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাধ্যক্ষ একে খন্দকারের বই নিয়ে ইতোমধ্যেই আওয়ামী নেতারা নানা ধরণের প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। কিন্তু এ ধরণের কথা এর আগে অনেক বইতে প্রকাশিত হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রথমা প্রকাশিত বই মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর বইতেও বলা হয়েছে বংগবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোন জাতির ভাগ্যে এমন হয়নি।মুক্তিযুদ্ধের ভিতর বাহির সহ আরও গোপন কথা নিয়ে বই বেরিয়েছে দেশে বিদেশে। মুক্তিযুদ্ধে কত লোক মারা গেছে তারও কোন সুরাহা আজও হয়নি। কেন এতো বিভ্রান্তি? কারা কার স্বার্থে এ বিভ্রান্তিকে জিইয়ে রাখতে চান। এ কথা সবাই জানেন যে কৌশলগত কারণে অনেক মিথ্যা কথা বলেন। তাঁরা মনে করেন সময়ের চাহিদা পূরণে বা জনগণকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যে মিথ্যাকথা বলাতে কোন দোষ নেই। তাঁরা বুঝতে পারেন না যে তাঁদের কথা ইতিহাস হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার, ভারত সরকারের অবস্থান যা প্রকাশিত হয়েছে তা আমরা কিছুটা জানি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু আগে বংগবন্ধু ও ইয়াহিয়া যে আলাপ করেছিলেন তার ফলাফল কি ছিল তা আজও আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশবাসীকে জানানো হয়নি। কেন জানানো হয়নি। এর আগের লেখায় একে খন্দকারের বইয়ের বরাত দিয়ে বলেছি মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছে সরকারের অগোচরে বা সরকারের অনুমতি ছাড়া। মুজিব বাহিনীর সাথে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কোন সম্পর্ক ছিলনা। বরং মনে হয়েছে মুজিব বাহিনীর ক্ষমতা প্রবাসী সরকারের চেয়েও বেশী। সরকারের কোন নির্দেশ মুজিব বাহিনীর নেতারা মানতেন না। এমন কি তাঁরা তাজউদ্দিন সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মানতেন না। মুজিব বাহিনীর সদর দফতার ছিল ভবানীপুরে চিত্ত সুতারের বাড়িতে। র’এর পূর্বাঞ্চলের সদর দফতরও ছিল ওই বাড়িতে। মুজিব বাহিনী ছিল উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তাঁদের অস্ত্রও ছিল আধুনিক। তাঁদের গুরু ছিলেন জেনারেল উবান ও চিত্ত সুতার। ইন্ডিয়া ডক্ট্রিন বইতে বলা হয়েছে মুজিব বাহিনী গঠন ছিল র’এর নীতিগত সিদ্ধান্ত। র’ মুক্তিযুদ্ধে আরও অনেক গ্রুপের সাথে সম্পর্ক রাখতো। তারা চাইতো বিভুন্ন গ্রুপের ভিতর অন্তর্কলহ লেগে থাকুক। কখনই যেন ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হয়। কালিদাস বৈদ্য তাঁর ‘বাংগালীর মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব’বইতে স্পষ্ট করে বলেছেন যে,শেখ মুজিব কোনদিনও স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। কালিদাস বৈদ্যের মতে শেখ সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন,শয়তানের সাথে চুক্তিতে আসার চেয়ে পাকিস্তানের সাথে সমঝোতায় আসাটা অনেক শ্রেয়। হেনরী কিসিঞ্জারের হোয়াইট হাউজের বছরগুলো বইতে বলেছেন,ইন্দিরা গান্ধীর নীতি ছিল স্বাধীন পূর্ববাংলা। আর লক্ষ্য ছিল কালক্রমে অখন্ড ভারত নীতিকে বাস্তবায়ন করা। কালিদাস বৈদ্য বাংলা সেনা নামক একটি সংগঠণের প্রধান। ভারতের পশ্চিম বাংলা থেকে এটি পরিচালিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠণ ছারা অন্য কাউকে সুযোগ দিতে চায়নি। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীরা কোন ধরণের ভুমিকা রাখুক তা দিল্লী সরকার চায়নি। বামপন্থীদের দমনের জন্যেই নাকি মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। বিশেষ করে চীনপন্থীরা ছিল মুজিব বাহিনী ও ভারত সরকারের শত্রু। কমরেড নুর মোহাম্মদ লিখেছেন,যাঁরা দেশের ভিতরে থেকে যুদ্ধ করেছেন তাঁদেরকে মোকাবিলা করতে হয়েছে পাকিস্তান বাহিনী, ভারতীয় বাহিনী, মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীকে। নুর মোহাম্মদ লিখেছেন, দেশের ভিতর হাজার হাজার বামপন্থী গণযোদ্ধাকে হত্যা করেছে অন্যান্য সকল বাহিনী। মুজিব বাহিনীর সাথে সমঝোতা করেও গণযোদ্ধারা রক্ষা পায়নি। দেশের ভিতরে তখন বহু বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একে খন্দকারের বইতে এসেছে মুজিব বাহিনীতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সন্তান। অপরদিকে মুক্তি বাহিনীতে ছিলেন কৃষক শ্রমিকদের সন্তান। যাঁরা ঠিক মতো খাবার পায়নি, পোষাক পায়নি, অস্ত্র পায়নি। এঁরাই সবচেয়ে বেশী প্রাণ দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও মুজিব বাহিনী তাজউদ্দিন বিরোধী ভুমিকা অব্যাহত রেখেছিল। শেখ সাহেব কখনই মুক্তিযুদ্ধের কোন কথা শুনতে চাননি। তাজউদ্দিন বলতে গেলেও বংগবন্ধু কোন আগ্রহ দেখাননি।
কেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


একে খন্দকারের ৭১ এর দিনগুলি / এরশাদ মজুমদার

এইতো ক’দিন আগে খন্দকার সাহেবের ‘ ১৯৭১ ভিতরে বাইরে’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশণী। এটি প্রথম আলোর একটি প্রকাশনা সংস্থা। খুব অল্প সময়ে সংস্থাটি বেশ নাম করেছে। এই সংস্থার প্রকাশিত বই গুলো খুবই ভাল। বই গুলোর বিষয় ও মতের সাথে আমার অনেক দ্বিমত আছে। কোলকাতার আনন্দ বাজার ও আনন্দ পাবলিশার্সের যেমন লেখক ঘরাণা আছে তেমনি প্রথমা বা প্রথম আলোরও একটি লেখক ঘরাণা আছে। যদি বলি ভাই, আমার লেখা গুলো প্রকাশ করুন। তাঁরা তা করবেন না। কারণ আমি তাঁদের ঘরাণার লেখক বা সাংবাদিক নই। প্রথম আলো বা ডেইলী ষ্টারের সাংবাদিকতার মানও ভাল। যদিও আমি তাঁদের সম্পাদকীয় নীতি সমর্থন করিনা। খন্দকার সাহেব আওয়ামী ঘরাণার লোক। ক’দিন আগেও সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন। এখন রাতারাতি রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেছেন। কেউ কেউ তাঁকে কুলাংগার অকৃতজ্ঞ বলে গালমন্দ করেছেন। এঁরা কয়েক বছর আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেবকে বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন। তিনি খুবই বিনীত ভদ্রলোক। তাঁর বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও  সবাই আওয়ামী অথবা দিল্লী ঘরাণার লোক। প্রকাশণা সংস্থাটিরও একই ইমেজ। একজন লোক বা সংস্থার ইমেজ তৈরি হয় তার আদব কায়দা, পোষাক আসাক, চলাবলা ,কথাবার্তা ও লেখালেখিতে। যেমন আমেরিকা এখন একটি যুদ্ধবাদী দেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। কথায় কথায় , যেখানে সেখানে গায়ের জোর খাটাতে চায়। বিগত বিশ বছরে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। এখন সে ইসলামী রাস্ট্র নামে একটি সংস্থা তৈরি করে ইরাক ও সিরিয়াতে আক্রমণ চালাচ্ছে বা চালাবার ফন্দি আঁটছে। এ তথ্য আমার নয়। গ্লোবাল রিসার্চ বা ডেমোক্রেসী নাও একথা গুলো প্রচার করেছে। সংস্থা দুটি আমেরিকার কর্পোরেট মিডিয়া বিরোধী প্রতিষ্ঠান। একই ভাবে ইসলামের নানা রূপের কথা আমরা শুনতে পাই। কেউ বলেন ,পলিটিকেল ইসলাম, কেউ বলেন, মিলিটেন্ট ইসলাম বা সন্ত্রাসী বা জেহাদী ইসলাম ও আধ্যাত্ববাদী ইসলাম। আমি যতদূর জানি আলকোরআনের বাইরে কোন ইসলাম নেই। ইসানবী(আ) নাকি বলেছেন, কেউ তোমার গালে এক চড় দিলে তুমি আরেক গাল এগিয়ে দাও। কিন্তু ইসায়ী ধর্মে বিশ্বাসীরা কি সেই পথ অনুসরণ করে? কারা বলছেন এসব কথা তা আমাদের মানে শান্তিবাদী মানুষকে বুঝতে হবে। এক সময় কমিউনিজমকে ধংস করার জন্যে আমেরিকা বেকুব মুসলমানদের ব্যবহার করেছে। এখন ইসলাম বা মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্যে চীন রাশিয়াকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ ১৪/১৫ কোটি মুসলমানের দেশ। কিন্তু দেশ চালাচ্ছেন ধর্ম নিরপেক্ষ/ সেক্যুলার বা ধর্মহীন একশ্রেণী বা গোষ্ঠির লোক। আবার যাঁরা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তাঁরাও ঐক্যবদ্ধ নন। তাঁরা সুস্পষ্ট করে আজ পর্যন্ত নিজেদের কথাও বলতে পারেননি।
খন্দকার সাহেব সকল সরকারেরই চাকুরী করেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর উঠাবসা আওয়ামী ঘরাণার তথাকথিত ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সাথে। সেই খন্দকার সাহেবই আজ রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে আখ্যায়িত হচ্ছেন। খন্দকার সাহেবের সদ্য প্রকাশিত বইটি আমি পড়েছি। পুরো বইটিই মুক্তিযুদ্ধ , এর রাজনৈতিক দিক, সরকার ব্যবস্থাপনা, ভারতের ভুমিকা নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভুতি, চিন্তা ও অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে। এর সাথে আপনার বা আমার একশ’ভাগ দ্বিমত থাকতে পারে। আমি তাঁর সাথে অনেক বিষয়ে আবার দ্বিমত পোষণ করি।
খন্দকার সাহেবের এই বই নিয়ে জাতীয় সংসদে বেশ গরম আলোচনা হয়েছে। বইটি নিষিদ্ধ করার দাবী উঠেছে এবং লেখকের বিরুদ্ধেও মামলা করার কথা উঠেছে। খন্দকার সাহেব মুক্তিযুদ্ধের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের ভিতরের অফিসিয়াল বিষয় খুবই কাছে থেকে দেখেছেন। বইটি পড়ার মতো। এ ধরণের বই আরও বহু প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীর বহু অফিসার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন । আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারেরাও লিখেছেন। এর আগেও প্রথমা প্রকাশিত আরেকটি বইতে খন্দকার সাহেব, এস আর মির্জা ও মঈদুল হাসনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে। সে সময়েও নানা ধরণের গরম গরম কথা হয়েছে। খবরের কাগজে নানা কথা ছাপা হয়েছে। এবারও ছাপা হচ্ছে। এসব বিষয় জানার জন্যে দেশের মানুষ আগ্রহী। পত্রিকার পাঠকগণও উত্‍সাহী। কিছুদিন আগে ভারতের গুন্ডে ছবিতে নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের যুদ্ধ বলে নাকি আমাদের অপমান করা হয়েছে। কেউ কিছু বললে বা লিখলে যদি তা আওয়ামী লীগের পছন্দ না হয় তখনি আওয়ামী রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা গলা ফাটিয়ে গালাগাল শুরু করেন। আমার কথা হলো গালাগালির কি আছে? আপনি দলিল দস্তাবেজ দিয়ে আপনিও আপনার কথা বলুন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা এর ভিতরে ছিলাম তারা এখন নানা রংয়ের মুক্তিযুদ্ধ দেখছি। এখনতো আবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাহিনী বের হচ্ছে। অনেকেইতো নানা রকম খেতাব ও স্যালুট নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিরা এখন কি করবেন? আবার মুক্তিযুদ্ধ করেননি এমন শহীদদের সন্তান ও নাতিপুতিরা কি করবেন। ৭১ সালে অসুখে মারা গেছেন এমন মানুষও নাকি শহীদ খেতাব পেয়েছেন। তাই ৪৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও রাজাকারদের কোন তালিকা তৈরি হয়নি। কেউ এ বিষয়ে কথা বললেও তাঁদের উপর হামলা হয়। আমরা কী এক অবাক জাতি! নিজেদের বীরত্বের ইতিহাসও ঠিকমতো লিখতে চাইনা।
অর্থনৈতিক শোষণ, অবিচার অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান টিকবেনা এমন কথা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদেও উচ্চারিত হয়েছে। অপরদিকে ভারত ৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান ভাংগার জন্যে কাজ করে যাচ্ছিল। ২০০৭ সালের এপ্রিলে বেরেলির এক নির্বাচনী সভায় রাহুল গান্ধী বলেছেন,আমাদের পরিবার পাকিস্তান ভাংতে চেয়েছে, ভেংগে দেখিয়েছে। ইন্দিরা গান্ধীজী নিজেও ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেছিলেন ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’( ৭১১ থেকে ১৯৭১)। এর আগে ৭০ সালের এক জনসভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ভারত কোনদিনও পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নিতে পারেনি। ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন ও ডিসেম্বরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছিল অখন্ড ভারতনীতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। ভারত এখনও মনে করে দূর্বল বাংলাদেশ ভারতের জন্যে কল্যাণকর। ভারত কখনই চায়না বাংলাদেশ শক্তিশালী হোক। মুসলমান জিগির তুলে কায়েমী স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই একশ্রেণীর তথাকথিত মুসলমান নেতা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাকিস্তান চেয়েছিলেন নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানেরা। পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা ছিল সবচেয়ে বেশী নিপীড়িত। পাকিস্তানের নেতারা সাধারন মানুষকে হতাশ করেছেন। মাওলানা ভাসানীতো ৫৭ সালেই পাকিস্তানকে বিদায়ী সালাম দিয়েছিলেন। ইতিহাসের পাতায় ৪৭ থেকে ৭১ এর কথা বহুজন লিখেছেন। সে সময়ে বংগবন্ধু ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব ছিলেন আমেরিকাপন্থী । আমেরিকার সকল কাজই তাঁরা সমর্থন করতেন।
৭১ সালে ভারত সরকার যে শেখ মনি, রাজ্জাক ,সিরাজুল আলম ও তোফায়েলের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠণ করেছিলেন তা বাংলাদেশ সরকার জানতোনা। এটা ছিল ভারত সরকারের উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গোপন বাহিনী। এই বাহিনী বাংলাদেশ সরকার বা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডের বাইরে ছিল। এরা তাজউদ্দিন সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী মানতোনা। আমরা এসব কথা তখনও শুনেছি। কিন্তু এবার খন্দকার সাহেব খোলাসা করে লিখেছেন। খন্দকার সাহেব বেশ খোলাসা করে অনেক কথা বলেই নিজের স্মৃতিকথা লিখেছেন। আপনারা কেউ যদি তখন মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে থেকে থাকেন তাহলে আপনারা স্মৃতিকথা লিখুন। এখন যদি সাহস না হয় তাহলে লিখে আদালতের কাছে রেখে যান। বলবেন আপনার ইন্তিকালের পর প্রকাশ করার জন্যে। ইন্তিকাল শব্দটি ভাল না লাগলে বলুন পরলোক বা স্বর্গ লাভের পর। মুজিব বাহিনী কেন গঠণ করা হয়েছিল তা শুধু ইন্দিরাজীই জানেন। জেনারেল উবান শুধু এ বাহিনী গঠণ করে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে হয়ত ইন্দিরাজীর কোন স্বপ্ন বা পরিকল্পনা ছিল। এমনওতো হতে পারে বংগবন্ধু যদি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে না আসেন তাহলে বাংলাদেশ কে চালাবে? তবে শুনেছি, রক্ষীবাহিনীতে মুজিব বাহিনীর অনেককেই চাকুরী দেয়া হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর প্রধান নাকি তোফায়েল সাহেব ছিলেন। দু:খ ও বেদনার বিষয় ৭৫এর আগষ্টে বংগবন্ধুকে রক্ষা করার জন্যে রক্ষীবাহিনী তেমন কোন ভুমিকা পালন করেনি।
একজন লেখক, কবি ও সাংবাদিক হিসাবে নিজের মনের কথা বলবো তেমন পরিবেশ এখন বাংলাদেশে নেই। আমরাতো পাকিস্তানী শোষণ ও শাসন থেকে মুক্তিলাভ করে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক ও সাধারন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনীতিকরা এখনও যা করার কথা ছিল তা করেন নি। অথচ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সবাই শতভাগ এগিয়ে গেছেন। খন্দকার সাহেবও নিজের কাছে প্রশ্ন করেছেন প্রিয় মাতৃভুমি কতটুকু আলোকিত হয়েছে।
বইটির এক জায়গায় খন্দকার সাহেব উল্লেখ করেছেন যে, সরকার গঠণের আগে ৪/৫ এপ্রিল তাজউদ্দিন সাহেব দিল্লী গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করতে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। এজন্যে তাঁকে জবাবদিহি করতে হয়েছে ভবানীপুরে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন সুতারের কাছে। চিত্তবাবু বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। চিত্তবাবু র’ কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে বংগবন্ধুর সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন ৬০এর দশকে। কালক্রমে তিনি বংগবন্ধুর বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেন। দিল্লী যাওয়ার আগে তাজউদ্দিন সাহেব ভবানীপুর গিয়েছিলেন চিত্তর সাথে দেখা করতে। তখন চিত্ত সেখানে ছিলেন না। ভবানীপুরে র’এর দপ্তর ছাড়াও একটি গেষ্ট হাউজও আছে মুজিব বাহিনীর নেতাদের থাকার জন্যে। এই চিত্তবাবুই বংগভুমি আন্দোলনের নেতা। তাঁর দাবী হচ্ছে বাংলাদেশের ক’টা জেলা ছেড়ে দিতে হবে পূর্ববাংলা থেকে চলে যাওয়া হিন্দুদের জন্যে। বংগভংগ আন্দোলনের সামরিক শাখার প্রধান হচ্ছেন বৈদ্যবাবুু। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে রাখার দায়িত্বেও নিয়োজিত রয়েছেন। এই দুই ভদ্রলোকই বাংলাদেশের প্রায়ই সকল জেলায় র’এর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
নেহেরু ডকট্রিন মানে হলো সুপ্রাচীন মহাভারত। ৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হলোও নেহেরুজী ৪৭ সালেই পাকিস্তান ভাংগার কাজে হাত দেন। ১৯৬৮ সালে র’প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্ববাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশে র’ সরাসরি কাজ করতে শুরু করে। বাংলাদেশকে স্থায়ী ভাবে অশান্ত করে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করে রাখাই র’এর বর্তমান কাজ। বাংলাদেশের কালচারেল ফ্রন্টে র’ সবচেয়ে বেশী সাফল্য অর্জন করেছে। আওয়ামী ঘরাণার বুদ্ধিজীবীদের প্রায় ১০০ভাগই র’এর কথায় চলে ধারণা করা হয়। ভারত চায় বাংলাদেশে সব সময় একটি অনগত সরকার, যে সরকার ভারতের নীতিকে অনুসরণ করবে। এমন কি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ২০০৬ সালে বলেছেন,ঐতিহাসিক ভাবেই বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এক অখন্ড ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থিত। আওয়ামী লীগকে ভারত তার বন্ধু রাজনৈতিক দল মনে করে। তাই এ দলটাকে যেমন করেই হোক ক্ষমতায় রাখতে চায়। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন তারই প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন। বর্তমান সরকারকে ভারত নির্বাচিত ভাড়াটিয় মনে করে। পর্দার অন্তরালে ভারত নিজেকে বাংলাদেশের জমিদার মনে করে।
খন্দকার সাহেবের বইতে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভুমিকা কি ছিল তা স্পষ্ট হয়েছে। ভারত চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ যেন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রনের বাইরে না যায়। মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনে আওয়ামী নেতাদের বাইরে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ বিষয়টি আমি নিজেও দেখেছি। ফলে অনেক স্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। এমন কি মুজিব বাহিনীও প্রবাসী সরকারের নির্দেশ মানতোনা। অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। বই নিষিদ্ধ করা বা লেখককে শাস্তি দেয়া সমস্যার সমাধান নয়। আরও তথ্য বহুল আরেকটি বই লিখে উত্তর দেয়াই উত্তম কাজ। আওয়ামী লীগের বহু জ্ঞানী বুদ্ধিজীবী আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই এর চেয়ে অনেক তথ্য বহুল বই লিখতে পারবেন।
আসলে তথ্যের ব্যাপারে সমস্যা গুলো তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা একবার বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা। আবার বলেন, বংগবন্ধু ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার ব্যাপারেও একেকজন এক কথা বলেন। তাজউদ্দিন সাহেব বলেছেন,স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে পাকিস্তানীরা তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা আনবে। পাকিস্তানে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু হলে তিনি বলেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে কি হচ্ছে তা তিনি জানেন না। আমার নিজস্ব বক্তব্য হলো, বংবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তিনি আমাদের জাতীয় নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমি বলবো পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বংগবন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আলোচনা ও সমঝোতার নামে ধোকা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বংগবন্ধুকে নিয়ে নানা ধরণের গল্প বানাচ্ছে, যার কোনই প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে বাংগালী বা বাংগালী মুসলমানের যুদ্ধ মনে না করে তাঁদের দলীয় যুদ্ধ মনে করে। ইতিহাসের সংকট এখানেই। ৭ই মার্চের ভাষণে জয় পাকিস্তান বলেছেন কিনা তখনকার কাগজ দেখলেই জানা যাবে। এ নিয়ে এত হে চৈ করার কি প্রয়োজন? সংসদে মন্ত্রী সাহেবরা যে ভাষায় কথা বলেছেন তাঁদের বন্ধু , সহযাত্রী ও সহমর্মীর বিরুদ্ধে তা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
তবে আমি বলবো, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস রচনায় সকল সরকারেরই দায়িত্ব। দেশবাসীর কাছে আবেদন জানানো যেতে পারে যুদ্ধের সময়ের কাগজপত্র, দলিল দস্তাবেজ সরকারের জমা দেয়ার জন্যে। ইতিহাসের দুইটি ধারাই সংযুক্ত হওয়া দরকার। একটি রাজনৈতিক,অপরটি সামরিক।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »