দূর্নীতি কি তা নিয়ে সাধারন মানুষের ভিতর একটা ধারনা আছে। নীতিহীন মানুষকেও সাধারন মানুষ দূর্নীতিবাজ মনে করে। আমাদের চলমান আইন নৈতিক দূর্নীতি সম্পর্কে নীরব। সমাজে যে লোকটির ব্যবহার খারাপ, মন্দ কাজ করে, শক্তি প্রয়োগ করে লক্ষ্য হাসিল করে সাধারন মানুষ মনে মনে তাকেও ঘৃণা করে। দূর্বল বলে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করতে চায়না। এক সময় সমাজে মন্দ লোকের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। এখন মন্দ লোকেরাই সমাজ চালায়, দেশ চালায় ও আইন চালায়। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিবান শিক্ষকের অবস্থা খুবই করুণ। প্রতিবাদী শিক্ষকের জীবন যায়। বখাটে ছেলে ও ইভটিজারদের প্রতিহত করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেক মা বাপ ও সমাজের মুরুব্বী প্রাণ হারিয়েছে। সমাজ থেকে যখন প্রতিবাদ উঠে যায় তখন ন্যায় অন্যায়ের ফারাক আর থাকেনা। কারণ ন্যায়ের পক্ষে লোক পাওয়া যায়না, অন্যায়ের প্রতিবাদ আর কেউ করেনা। দলবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদী সমাজে সহজে অন্যায় অবিচার বাসা বাঁধতে পারেনা। একই ভাবে রাস্ট্র বা সরকার জুলুমবাজ হয়ে উঠতে পারেনা। অন্যায় জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা, প্রতিবাদ করা, প্রয়োজনে লড়াই করা মানুষের অবশ্য কর্তব্য। নৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে এতা ফরজ।
সকল প্রকার জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ইসলাম মানুষকে আহবান জানিয়েছে, উত্সাহিত করেছে। আল্লাহপাক ন্যায়ের প্রতীক, তিনি তাঁর খলিফা মানুষকে ন্যায় প্রতিস্ঠা করতে তাগিদ দিয়েছেন। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কোন অপশানাল বিষয় নয়। মানুষের প্রধানতম কর্তব্য হচ্ছে সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার ও জুলুমকে চিরতরে বিদায় করে দেয়া। সে জন্যেই মানুষকে অবশ্যই ন্যায় অন্যায়ের ফারাক বুঝতে হবে। মানুষকে শয়তানের পথ পরিহার করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে দূর্ণীতি কি আর জুলুম কি? আমাদের রাস্ট্র ও সমাজের কাছে বিষয়টা পরিস্কার নয়। যে জুলুম করে সেই জালেম। আর যে জুলুম বা নির্যাতনের শিকার হয় সে মজলুম। মজলুমের আর্তনাদে আল্লা্র আরশ কম্পিত হয়। যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহপাকের গজব না পড়ে ততক্ষণ জালেম তার অপরাধের কথা বুঝতে পারেনা। যেমন ফেরাউন নমরুদ ও সাদ্দাদ বুঝতে পারেনি। হাল জামানার বহু জালেম জগত থেকে বিদায় নিয়েছে, ইতিহাসে ধিকৃত হয়ে আছে। জীবিত ব্যক্তি জালেম ও রাস্ট্র জালেম গুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি।
আমাদের দূর্ণীতি দমন কমিশন( দুদক) ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনায় এসে গেছে। ১/১১র সরকার দূর্ণীতি দমনের কথা বলে দেশ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। নামী দামী মানুষকে ধরে নিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছে।কেয়ার টেকার আমলে জেনারেল হাসান মাহমুদ দুদকের চেয়ারম্যান হিসাবে আলোড়ন সৃস্টি করেছিলেন। তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে দুর্ণীতি দমনের জন্যে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতেন। তখন থেকেই দুদক আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে। এখন দুদকের তেমন কোন সুনাম বা পজিটিভ ইমেজ নেই। কেয়ার টেকার সরকারের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের আমলে দুদক সরকারী নির্দেশে মামলা করে , আর মামলা তুলে নেয়। এ বিষয়ে আমি এর আগেও অনেকবার লিখেছি। বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , চুরি ডাকাতি, খুন খারাবী, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ইত্যাদি নানা ধরনের দুর্ণীতি রয়েছে। নৈতিক বা মরাল দুর্ণীতির কথা বাদই দিলাম। এক সময় রাজনীতিকরা রাজনৈতিক কারণে জেলে যেতেন, এখন দূর্ণীতির কারণেও জেলে যান। শুধু আমাদের দেশে নয় , সারা পৃথিবীতে এসব ঘটছে।
বাংলাদেশ এখন একটি ব্যাপক দুর্ণীতির দেশ। সমাজ বা রাস্ট্রের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দুর্ণীতি নেই। এমন কি শ্রমজীবী মানুষও দুর্ণীতি করে। সুযোগ পেলেই কাজে ফাঁকি দেয়। কারখানার শ্রমিকরা মনে তারা যদি জোট বদ্ধ থাকে তাহলে মালিকের কাছ থেকে জবরদস্তি দাবী আদায় করা যাবে। ছাত্ররাও মনে করে, যে ভাবেই হোক একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারলেই হলো। তারপর দলীয় আনুগত্যের কারণে বিসিএস পাশ করে সরকারী চাকুরী করা যাবে। সহকারী সচিব হতে পারলেইতো সচীবের বা মন্ত্রীর ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করা যাবে। নকল করে পাশ করে দলীয় কারণে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যাবে। তারপরেতো ভাইস চ্যান্সেলর হওয়া আর ঠেকায় কে? এসব দুর্ণীতি কিন্তু দুদক বা পুলিশী আইনের আওতায় পড়েনা। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব একবার বলেছিলেন, ছেলেরা লেখাপড়া করবে কেন? তারা জানে দলের সাথে বা নেতার সাথে থাকলে একদিন নিশ্চিত মন্ত্রী বা এমপি হওয়া যাবে। বিশ্বব্যাপী দুর্ণীতিবাজ দেশ গুলোর ভিতর বাংলাদেশের অবস্থান খুবই করূন ও লজ্জাজনক। সম্প্রতি টিআইবি ( ট্রান্সপারেন্সী ইন্টার ন্যাশনাল ) বাংলাদেশের দূর্ণীতি সম্পর্ক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। টিআইবি একটি আন্তর্জতিক সংস্থা। এই সংস্থা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের দুর্ণীতির সূচক প্রকাশ করা হয়। তবে তারা পশ্চিমা দেশে তেমন শক্তিশালী ভাবে কাজ করে বলে মনে হয়না। কয়েকদিন আগে আমি টিআইবি অফিসে ফোন করেছিলাম তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে কথা বলার জন্যে। টিআইবির একজন কর্তা ব্যক্তি জানালেন তারা মূলত দুর্ণীতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার কাজে নিয়োজিত। আমি জানতে চেয়েছিলাম টিআইবি কখনও তার কাজের মূল্যায়ন করে কিনা। ভদ্রলোক কোন উত্তর দিলেন না। প্রায় এক যুগের মতো টিআইবি বাংলাদেশে কাজ করছে, কিন্তু দুর্ণীতি এক বিন্দুও কমেনি, বরং দিন দিন বেড়ে চলেছে। অথচ দূর্ণীতি কমানোর নামে টিআইবি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। সুশীল সমাজের লোকজনকে টাকা পয়সা দিয়ে নিজেদের পক্ষে রাখার চেস্টা করছে। শুরুতেই বলেছি সমাজের মুরুব্বী ও নেতাদের নৈতিকতা ও মুল্যবোধ শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। বাংলাদেশে এখন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ধর্মীয় আলেম সমাজ, উকিল ব্যারিস্টার সবাই নৈতিক ও আর্থিক দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশ, কাস্টমস, আয়কর বিভাগের কথা নাইবা বললাম। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিও জনগনের তেমন কোন আস্থা নেই। কারণ, তারা সবাই কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচিত হন। তাদের প্রধান লক্ষ্য সমাজে প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ ও অনৈতিক পথে সম্পদ অর্জন করা। একবার কেউ নির্বাচিত হলে তিনি ধনী হয়ে যান। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রায় নিজ নিজ এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্যে অস্ত্রধারী মাস্তানদের লালন পালন করেন। সমাজের নিরীহ মানুষদের শোষণ করার জন্যে নেতা মাস্তানদের পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেন। সমাজের এসব অপরাধ দুদকের আওতায় পড়েনা। তাই দুদক এ নিয়ে ভাবেনা।
আমাদের সমাজে ইভ টিজার বা নারী উত্বক্তকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে নৈতিক অবনতির কারণে। যারা প্রতিবাদ করছেন ইভ টিজাররা তাদের হত্যা করছে বা নির্যাতন করছে। আবার ইভরা মানে তরুণীরাও টি শার্ট বা গেঞ্জী, জিন্সের প্যান্ট পরে বুক চেতিয়ে হাটছে। তাদের শরমের বালাই নেই। মেয়েদের পোষাক আশাক , চলাফেরা ও ভাষা সম্পর্কে মা বাপ সজাগ নন বলেই মনে হয়। মেয়েদের এ ধরণের হাব ভাব প্রত্যক্ষ ভাবেই ছেলেদের উসকানী দেয়। আমরা বখাটে ছেলেদের কথা বলছি, কিন্তু বখাটে মেয়েদের কথা বলিনা। অনেক সময় পুলিশও বখাটে ছেলে মেয়েদের আশ্রয় দেয় পারিবারিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে।কোন কোন ক্ষেত্রে নেতারাও ইভ ইজারদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। দলীয় নেতা এমপি বা মন্ত্রীরা যদি কখনও অপরাধ করেন তখন সরকার তাদের রক্ষা করেন। বলা হয় সরকারের ইমেজ বা ভাবমুর্তি রক্ষার জন্যেই তাদের অপরাধের বিচার করা হয়না। দুর্ণীতির সূচক উপরে উঠছে না নামছে তা টিআইবি বা দুদকের ব্যাপার। টাকার জন্যে সন্তান মা বাপকে হত্যা করছে। স্বামী যৌতুকের জন্যে স্ত্রীকে আগুন লাগিয়ে মারছে। বিয়ের প্রস্তাবে রাজী না হলে মেয়েদের প্রতি এসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে এক সাংবাদিকের পুত্রবধু ও নাতিরা নিজেদের ঘরেই বেদনার কথা জানিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এসব অপরাধের বিচার কে করবে? জানি, এসব মামলা পুলিশ দেখছে। নব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরণের মামলার বিচার হয়না। শোনা যায়, উপর থেকে নিচের সব আদালতেই টাকা দিয়ে বিচার কেনা যায়। সত্য লিখলে বা বললে নাকি আদালত অবমাননা হয়। তাই সত্য কথা বলাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা) বলেছেন, একটি সমাজ নস্ট হয়ে গেছে কিনা তা জানা বা বুঝার জন্যে একটি মাত্র উপায়। তাহলো, যে সমাজে ধনীরা কৃপণ হয় আর দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়, জ্ঞানীরা পালিয়ে থাকে আর মুর্খরা মঞ্চে বসে থাকে, রাজা বা শাসক মিথ্যা কথা বলে। এবার আপনারাই বলুন বাংলাদেশের অবস্থা কি? আমিতো দেখছি আর্থিক ও পুলিশী দূর্ণীতির চেয়ে নৈতিক দূর্ণীতি হাজার গুণ বেড়ে গেছে। যে সমাজে নৈতিকতা নেই সেই সমাজে অন্যসব দূর্ণীতি বাড়তেই থাকে। সমাজে অশান্তি বাড়তেই থাকে। সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে। দূর্ণীতিবাজ সমাজে সবকিছুই স্থিতি হারিয়ে ফেলে। প্রতিটি গৃহই এখন দূর্ণীতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ছেলে কি করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করে তার খোঁজ মা বাপ রাখেনা। মেয়ে কিভাবে হাজার টাকা খরচ করছে, দামী পোষাক পরছে, দামী মোবাইল ব্যবহার করছে সেদিকেও মা বাপের নজর নেই। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে মেয়েরা ৮০ ভাগ তালাকনামা জমা দিচ্ছে। কথায় কথায় তালাক দিচ্ছে। কথায় কথায় সংসার ভেংগে দিচ্ছে। মধ্য ও উচ্চবিত্তের মেয়েরা বিয়ের সময় বড় অংকের মোহর লিখিয়ে নেয়, লাখ লাখ টাকার অলংকার নেয়। একটি তালাকনামার মাধ্যমেই একটি মেয়ে কয়েক মিলিয়ন টাকার মালিক হয়ে যায়। সাম্প্রতিক ঘটিত রুমানার ঘটনা কিন্তু কোন গরীব পরিবারের ঘটনা নয়। এই ঘটনা সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতীক। নামীদামী পরিবারের মেয়েরা এখন আর বিয়ে নামক প্রতিস্ঠানটি রাখতে চাইছেনা। বেশ কিছু সমাজ বিজ্ঞানী বলছেন, আগামীদিনে পরিবার আর থাকবেনা। ড. কামালের প্রতিস্ঠান ব্লাস্টে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে তালাক বিষয়ে জানার জন্যে। একজন মহিলা পরিচালক জানালেন, তাঁরা গরীব মেয়েদের পারিবারিক ও তালাক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। তাঁদের মূল কাজ হলো গরীব মেয়েদের অধিকার প্রতিস্ঠা করা। ব্লাস্টের পরিচালক মহিলা আরও জানালেন, মেয়েরা এখন তাদের অধিকার বেশী পরিমানে প্রয়োগ করছে। এটা একটা ক্রান্তিকাল। এ সময়ে কিছু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বড় কিছু আদায় করতে হলে বা বড় কিছু অর্জন করতে হলে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। একজন আইনজীবী বললেন, নারী অধিকার আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। নারী নির্যাতনের ৮০ ভাগ মামলা ভুয়া। নারীদের অধিকার প্রতিস্ঠার জন্যে সমাজ ও সরকার অতি প্রতিক্রিয়া থেকে অনেক আইন তৈরী করেছে যার কুফল এখন হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে। শুনেছি এক ব্যান্কারের ডাক্তার কন্যা এ পর্যন্ত তিনবার বিয়ে করেছেন। কোন বিয়েই কয়েক মাসের বেশী টিকেনি। কন্যাটি নানা ছুতানাতায় বিয়ে ভেংগে দেয় বা তালাক দেয়। এর মাধ্যমে সে প্রচুর সোনাদানা ও নগদ অর্থের মালিক হয়।এভাবে সম্পদ অর্জনে মেয়েটির মা তাকে উত্সাহিত করে। এটি নারী অধিকারের অপব্যবহারের একটি নৈতিক ও ফৌজদারী ঘটনা। সমাজের এসব অবক্ষয় ও মূল্যবোধহীনতার কোন ঘটনাই দুদকের আওতায় পড়েনা। তবে দুদকের উচিত হবে শুধুমাত্র আর্থিক দূর্ণীতি নিয়ে কাজ করা। এর নাম বদলে দিয়ে ফিনান্সিয়াল ক্রাইম কমিশন (এফসিসি ) করা উচিত হবে। বিভিন্ন দেশে আর্থিক অপরাধের তদন্ত করে এফসিসি ধরনের সংগঠণ।
টিআইবি’র বিষয়ে আমাদের সাধারন মানুষ এখনও ভাল করে কিছু জানেনা। ইদানিং রাজধানীতে দেখতে পাচ্ছি টিআইবি পবিত্র কালামে পাকের আয়াত উল্লেখ করে বিলবোর্ডের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। প্রথমে আমি একটু অবাকই হয়েছি। যারা টিআইবি পরিচালনা করেন তাঁরা নিজেরা ব্যক্তিগত জীবনে নিজেদের স্যেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ বলে প্রচার করেন। জনগণের ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধকে এক্সপ্লয়েট বা ঠকিয়ে টিআইবি কাজ হাসিলের চেস্টা করছে। এটা এক ধরণের নৈতিক অপরাধ। এটাকে বলা হয় ডবল স্ট্যান্ডার্ড। মানে যা নিজে বিশ্বাস করিনা তা বলে সাধারন মানুষের মূল্যবোধকে পরিহাস করা। টিআইবি একটি পশ্চিমী প্রতিস্ঠান যা প্রয়োজনে নিজেদের স্বার্থে বিভি্ন্ন দেশ ও সেই দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ এনে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। এসব ক্ষেত্রে তারা দেশের সুশীল সমাজকে ব্যবহার করে থাকে। টিআইবির সাথে দেশের বড় বড় এনজিও গুলোর নানা ধরণের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দেশে হাজার হাজার এনজিও রয়েছে বিদেশ থেকে টাকা এনে দারিদ্র বিমোচনের নামে বিগত কয়েক যুগ ধরে কাজ করছে। কিন্তু দারিদ্র কমেনি। কোন কোন ক্ষেত্রে দারিদ্র বেড়ে গেছে। কিন্তু এনজিও নেতাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। জনগণকে ঠকিয়ে অনেকে আবার স্যার টাইটেল পেয়েছে। এনজিও গুলো এখন হরেক রকম ব্যবসা শুরু করেছে। তাদের নিজস্ব ব্যান্ক , ব্যবসা ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এসব এনজিও নেতাদের প্রভু হচ্ছে বিদেশীরা, যেসব বিদেশী প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। এসব এনজিও নানা উছিলায় নিয়মিত কর ফাঁকি দেয়। এনবিআর এদের কিছুই করতে পারেনা। সরকারের উপর এদের প্রচন্ড প্রভাব থাকে। রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় এনজিওর বেনিফিসিয়ারী। নেতাদের অনেকের ছেলেমেয়েরা এনজিও গুলোতে বড় বড় চাকুরী করে। এরাই সুশীল সমাজ নামে এক ধরনের পরগাছা তৈরী করেছে। টিআইবি নিজেই এক ধরণের এনজিও এবং বড় এনজিওদের সাথী দোসর ও বন্ধু। এদের কথা টিআইবি কখনও বলেনা। হয়ত এনজিওদের দূর্ণীতি টিআবির আওতায় পড়েনা।
আমাদের কর এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যাতে কর কর্মচারীরা করদাতাদের আর্থিক অপরাধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে। আমার ধারণা, অনেক মানুষই কর দিতে চায়। কিন্তু কর ব্যবস্থার কারণে সরাসরি কেউ কর দিতে পারেনা। জেলা শহর গুলোতে কর কর্মকর্তারা করদাতাদের আতংকে পরিণত হয়েছে। ফলে শুরু হয় নানা ধরণের লুকোচুরি। সবচেয়ে বেশী হয়রানীর শিকার হয় ব্যক্তি করদাতা। কর ব্যবস্থাটা সহজ সরল নয় বলে করদাতাকে উকিল বা কোন কর কর্মচারীর সহযোগিতা নিতে হয় অর্থের বিনিময়ে। সে অর্থের পরিমাণ করের চেয়ে বেশী। উকিল বা কর কর্মচারীর কথা হলো আমাকে বেশী করে দেন, সরকারকে কম দেন। সারাদেশে দুদকের লোক বা কর্মচারী রয়েছে। এরাও দূর্ণীতির অন্যতম আখড়া। এরা এক ধরণের দালালের দ্বারা ভয় ভীতি দেখিয়ে সাধারন মানুষের কাছে থেকে টাকা আদায় করে।
আর্থিক বা পুলিশী দূর্ণীতি সমাজে সব সময় ছিল। সুদুর অতীতে সমাজে এমন ব্যাপক দূর্ণীতি ছিলনা। তখন হাজারে একজন দূর্ণীতি করতো।তাকে সমাজ ঘৃণা করতো। এক ধরণের বয়কট চলতো তার সাথে। এখন একশ’তে ৯০ জন দূর্ণীতির সাথে জড়িত। মানুষের মন মানসিকতা এমন হয়েছে যে, সুযোগ পেলেই দূর্ণীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। এর একমাত্র কারণ, নৈতিক অবনতি। মানুষ অপরাধকে আর অপরাধ মনে করেনা। সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দূর্ণীতির কারণেই সর্ব নিম্নে দূর্ণীতি নেমে এসেছে। এখন আমাদের একদল নৈতিক সৈনিকের প্রয়োজন। যারা অনৈতিকতা ও অধর্মের বিরুদ্ধ নৈতিকতা ও ধর্মের যুদ্ধ করবে। যারা গভীর ভাবে ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন যে হারাম অর্জন করে হারাম খাদ্যের শরীর দ্বারা কোন এবাদতই গৃহিত হবেনা।( ১৬ই নবেম্বর, ২০১১। নয়া দিগন্ত )
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com
Read Full Post »