Feeds:
Posts
Comments

Archive for September, 2010


আজ আলোর পুত্র সক্রেটিসকে নিয়ে লেখাটা শুরু করতে চাই। আমি সক্রেটিসের একজন পরম ভক্ত। শুধু ভাবি রাস্ট্র কেন এই হত দরিদ্র নিরী্ মানুষটাকে হত্যা করলো। রাস্ট্রের কি এমন ক্ষতি করেছে এই নিরী্ মানুষটা। কেন রাস্ট্র সক্রেটিসকে সহ্য করলোনা।আল্লাহর নবী যিশুর জন্মের চারশ’ বছর আগে এথেন্স পরাজিত হয় স্পার্টার কাছে। এথেন্স ছিল গনতান্ত্রিক নগর রাস্ট্র। পরাজয়ের পর সেখানে প্রতিস্ঠিত হয় তিরিশ সদস্যের এক স্বৈরতন্ত্র। এগার জনের এক গুপ্ত পুলিশ বাহিনী। এই পুলিশ বাহিনীর প্রধান ছিল সাতুরোস। সে ছিল কঠোর প্রকৃতির নিষ্ঠুর লোক। যেকোন সময় যেকোন নাগরিককে ধরে নিয়ে গোপনে হত্যা করতো। যারা জীবিত থাকতো তাদের উপর চলতো নির্যাতন। সময়টা ছিল ৪০৪ খৃস্টপূর্বের সেপ্টেম্বর  থেকে ৪০৩ সালের মে পর্যন্ত মোট আট মাস। ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্যে ওই স্বৈরতন্ত্র মাত্র ২/৩ হাজার মানুষকে ভয় আর লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে টানতে পেরেছিল। স্বৈরাচারীরা নগরের বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন আদায়ের চেস্টা করতে গিয়ে প্রথমেই তাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে সত্যের বাণী বাহক মানব জাতির অহংকার সক্রেটিসকে। তারা সক্রেটিসকে দলে টানতে ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রথমে রাস্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও পরে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনে।তখন সক্রটিসের বয়স ৭০। শেষ পর্যন্ত ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে তার মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। জনাকীর্ণ আদালতে সরকার সমর্থকরা বার বার শ্লোগান দিয়ে সক্রেটিসের প্রাণদন্ডর দাবী করছিলো। বাদী ছিল একজন বাগ্মী ও স্বৈরতন্ত্রের কঠোর সমর্থক। নাম তার মেলেতুস। আদালতের বিচারকের সংখ্যা ছিল ৫০১ জন। এদের অনেকেরই আইন বিষয়ক কোন জ্ঞান ছিলনা। তাদের একমাত্র সার্টিফিকেট ছিল তারা সরকার সমর্থক। আড়াই হাজার বছর পরেও  সক্রেটিস আজ আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। কারন তিনি সত্যের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন। বিচারকরা তাঁকে লঘুদন্ড দিতে রাজী ছিলেন যদি তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সক্রেটিস তাতে রাজী হননি। তিনি বলেছিলেন, আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে সত্যের মৃত্যুর হবে। আমার চেয়ে সত্য অনেক বড়। সক্রেটিসই বলেছিলেন, ‘নো দাইসেল্ফ’। তাঁর বাণী ছিল মানুষের অন্তর্ণিহিত সত্যকে অনুধাবন করার আবেদন। কিন্তু মানুষ নিজের কাছেই অজানা রয়ে গেছে।

ঠিক এ সময়ে আমার মনে পড়ছে, ইমামুল মুরসালিন হজরত মোহাম্মদ(সা:) এর কথা। মক্কার নেতারা নবীজীর সাথে দেখা করে প্রস্তাব দিয়েছিল নবীজী যদি সত্য প্রচার করেন তাহলে তারা তাঁকে নেতা মানবে, ধন সম্পদ দান করবে আর মক্কার সবচে সুন্দরী নারীর সাথে নবীজীর বিয়ে দিবেন। নবীজী তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর এক হাতে চন্দ্র আর অন্য হাতে সূর্য দিলেও তিনি সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করতে পারেননা। আোনারা শুধু একবার ভাবুন, জগতে মানুষ কি চায়?  চায় ক্ষমতা সম্পদ ও সুন্দরী নারী। কিন্তু নবীজী চেয়েছেন জগতে শুধু সত্য প্রতিস্ঠা করতে। সেই সত্য তিনি প্রতিস্ঠা করে গেছেন। তিনি জগতে মানব জাতির মুক্তির সনদ দান করে গেছেন। সত্য প্রতিস্ঠা করার জন্যে নবীজী জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, শত্রুদের সাথে অনেক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। আল্লাহর নবীও বলেছেন,‘ মান আরাফা নাফছা, ফাকাদ আরাফা রাব্বা’। মানে তুমি যদি নিজেকে জানতে পারো,তাহলেই তোমার প্রভুকে জানতে পারবে।

শুধু মুসলমানের স্বার্থের কথা বলে আমরা মানে আমাদের বাপ দাদারা ৪৭ সালে মুসলমানের দেশ পাকিস্তান প্রতিস্ঠা করেছিলম। মাত্র ২৩ বছর এই পাকিস্তান এই অঞ্চলে টিকে ছিল। কারণ আমরা ভাবতে শুরু করলাম আমরা শুধু মুসলমান নই, বাংগালীও। শুরু হলো দন্ধ। তারপরে ৭১ এ আমরা বহু প্রাণের বিনিময়ে প্রতিস্ঠা করলাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে ৪০ বছর। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এখনও ঠিক হয়নি আমরা মুসলমান না বাংগালী। আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী। আমাদের সংস্কৃতির বায়া দলিল কি? আমাদের ভাষার উত্‍পত্তি কোথা থেকে?  এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কোন সুরাহা হয়নি। যদি ধরে নেই যে আমরা বাংগালী। এখন পৃথিবীতে প্রাত ৩০ কোটি বাংগালী আছে। এরমধ্যে ১৫ কোটির কোন স্বাধীন দেশ নেই। এমন কি আমাদের ইতিহাসটাও ঠিক মতো লিখিত হচ্ছেনা। সবাই শুধু বলছে ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে। যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলই নিজেদের মতো করে ইতিহাস লিখতে চায়। এইতো ক’দিন আগেই শুনা গেল স্বাধীনতার দলিলে লেখা আছে ৭১ সালে যুদ্ধহয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাকিস্তান আত্মসমর্পন করেছে ভারতের কাছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই  বিজয় দিবস পালন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ঢাক ঢোল বাজিয়ে বিজয় দিবস পাল করে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে জাঁক জমকের সাথে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পাল করে।

চারিদিকের হাল হকিকত দেখে আমাদের ছাত্র বয়সের কথা মনে হচ্ছে। তখন সোভিয়েত দেশ, পিকিং রিভিও বা মাওয়ের লাল বই হাতে দেখলেই গোয়েন্দারা আমাদের পিছনে লেগে যেতো। ওরা ভাবতো যারা ওসব বই পড়ে তারা কমিউনিস্ট। তখন পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। পার্টির নেতাদের বেশীর ভাগই থাকতেন আন্ডার গ্রাউন্ড। পরে মাওলানা ভাসানীর সাথে আইউব খানের একটা সমঝোতা হওয়ার পর বামপন্থী ও কমিউনিস্ট নেতাদের সরকার মুক্তি দেয়। এখন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের বই দেখলেই গোয়েন্দারা পীছনে লেগে যায়। এমন কি কোরাণ হাদিস ও রাসুল(সা:) সম্পর্কিত বই দেখলেও গোয়েন্দারা তাড়া করছে। আরবী ফারসী ও উর্দুতে ছাপানো সিনেমার বই দেখলেও গোয়েন্দার জেএমবি বলে পাকড়াও করছে। এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা নাহিদ সাহেব ঘোষণা দিয়েছেন জংগীবাদ কি ও কেন তা এখন থেকে স্কুল কলেজে পড়ানো হবে। নাহিদ সাহেবের মুখে এই প্রথম শুনলাম ইসলাম শান্তির ধর্ম। জানিনা সেদিন কবে আসবে সরকার ফরমান জারী করবেন ‘সরকারী ইসলাম’ ছাড়া অন্যকোন ইসলামের চর্চা করা যাবেনা। সউদী আরবে সরকারী ইসলাম ছাড়া অন্য ইসলাম নিষিদ্ধ। সউদী আরবে সরকারী অনুমোদন ছাড়া  কোরাণের ভিন্ন কোন তাফসীর প্রকাশ করা যায়না।

২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন পালিত হয়েছে ভারতে এবং পৃথিবীর অন্যখানে যেখানে গান্ধীজীর ভক্ত আছে। ভারতে আবার গান্ধীজীর সমালোচকও আছে। যারা তাকে জনগনের নেতা মনে করেনা। বেশ কিছুদিন আগে টাইম ম্যাগাজিন রাম গডসের একটি সাক্ষাত্‍কার প্রকাশ করেছে। রাম গডসে হচ্ছে নাথুরাম গডসের বড় ভাই। গান্ধী হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন কারাভোগ করে মুক্তি লাভের পর টাইম ম্যাগাজিন তার সাক্ষাত্‍কার নিয়েছে। তখনও রাম গডসে বলেছে গান্ধী কখনই ভাল মানুষ ছিলেননা। তিনি হিন্দু স্বার্থ বিরোধী কাজ করেছেন বলেই আমরা তাকে হত্যা করেছি। রাম মনে করে গান্ধী একজন ভন্ড ও প্রতারক। একজন নকল সন্যাসী। তাকে হত্যা করে আমি অনুতপ্ত নই। রাম সম্ভবত এখন পুণায় বাস করেন। রামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,এলাকার লোক আপনাকে কি দৃস্টিতে দেখে। রামের উত্তর ছিল তারা আমাকে ঘৃণা করে। মাঝে মাঝে গায়ে থুথু দেয়। এতে আমি কিছু মনে করিনা। ‘হে রাম’ সিনেমা সম্পর্কে গডসের মন্তব্য ছিল, সিনেমাটি একটি বানোয়াট গল্প। এর সাথে ইতিহাসের কোন সম্পর্ক নেই। কারন গান্ধী মারা যাওয়ার সময় হে রাম বলেননি। কারন সে সময় তার কাছে ছিলনা। তাকে দেবতা বানাবার জন্যেই ওই ছবিটি বানানো হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর আজীবনের ভক্ত কে কে বিড়লা তার আত্ম জীবনীতে বলেছেন, ‘বিড়লা’জ ইউজ টু স্পেন্ট মিলিয়নস তো কিপ বাপুজী পুয়র’। মানে বাপুজীকে গরীব রাখার জন্যে বিড়লাদের কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। বাপুজী বা মহাত্মা সম্পর্কে ভারতের সাধারন মানুষের কি ধারনা তা আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ৭৩ সালে আমি কিছুদিন রাজস্থানের জয়পুর ইউনিভার্সিটি গেস্ট হাউজে ছিলাম একটা ট্রেনিং কোর্সের কারনে। ওই গেস্ট হাউজের সামনেই ছিল বিরাট এক গান্ধী মুর্তি। আমি একদিন রিকসা করে ওই মুর্তির পাশ দিয়ে জয়পুর বাজারে যাচ্ছিলাম। মনে নেই, সম্ভবত গ্রীস্মকালের পড়ন্ত বেলা ছিল। প্রচন্ড গরম ছিল। আপনারা জানেন, রাজস্থান মরুভুমির দেশ। গরমের কোন শেষ নেই। ঘর্মাক্ত রিকসাওয়ালা ঘাম মুচতে মুচতে খুব বিরক্ত হয়ে বিড় বিড় করে কি যেন বললো মুর্তির দিকে তাকিয়ে। আমি জিগ্যেস করলাম, কেয়া হুয়া ভাই? রিকসাওয়ালা উত্তর দিলো, শালা জিন্দেগী ভর তোম ধুপ মে খাড়া রহেগা। ধোকাবাজ কাঁহেকা। নাংগুটি পহেনকে গরীবোকো ধোকা দেতা। বাংলা মানে হলো- শালা, আজীবন রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাক। ভন্ড প্রতারক। নেংটি পরে গরিবদের ধোকা দিচ্ছ। একবার আমি আহমেদাবাদ গিয়েছিলাম। উঠেছিলাম শবরমতি নদীর তীরে অবস্থিত সী ভিউ হোটেলে। তখন মনে হয় শীতকাল ছিল। নদী একেবারেই শুকনা ছিল। কিন্তু বালির নীচে পানি ছিল। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারনে শহরে থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। আমি জানলে ওই সময় আহমেদাবাদ যেতামনা। আমাদের বুড়িগংগার মতো শবরমতি নদী আহমেদাবাদ শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছিল। নদীর উপর আটটি ব্রীজ ছিল। একদিন বিকেলে আমি গান্ধী আশ্রম দেখার জন্যে নদীর অপর পারে গিয়েছিলাম রিকসা করে। রিকসাকে অপেক্ষা করতে বলে আমি আশ্রমের ভিতর ঘুরে ফিরে দেখলাম। ঘন্টাখানেক পর রিকসায় উঠে হোটেলের দিকে রওয়ানা দিলাম। কয়েক গজ সামনে এগোবার পর রিকসাওয়ালা জানতে চাইলো ভিতরে আমি কি কি জিনিষ দেখেছি। আমি বললাম বাপুজীর ব্যবহৃত অনেক জিনিস দেখেছি। সে আবার জানতে চাইলো আমি আর কিছু দেখেছি কিনা। অনেক চিন্তা করে আমি বললাম, না আর কিছু দেখিনি। কেঁউ, আপ বিধ্বা নেহি দেখা? পনরা ষোলা আওর বিশ সাল কি বিধ্বা নেহি দেখা? আমি বললাম, হাঁ হাঁ দেখেছি। সাব ওহাঁ বাবুলোগ যাতা হ্যায় বিধ্বা সে মোলাকাত করনে কি লিয়ে। কিন্তু এসব সাধারন মানুষের কথায় কি আসে যায়। সারা দুনিয়া জানে বাপুজী একজন সন্যাসী।

এতদিন শুনে এসেছি, পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে দ্বিজাতি তত্ব দিয়ে ভারতকে দুভাগ করেছে। জিন্নাহ অবশ্য এক সময় আমাদেরও জাতির পিতা ছিলেন। আমরা এখন জিন্নাহকে দেখতে পারিনা। কিন্তু ইদানিং শুনতে পাচ্ছি জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি ভারত বিভক্তি চাননি। ভারতকে দুভাগ করেছেন মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু ও সরদার প্যাটেল। এসব কথা লিখছেন ভারতীয় গবেষক ও রাজনীতিকরা। প্রশ্ন উঠেছে হঠাত্‍ করে গবেষক ও রাজনীতিকরা এসব কথা বলছেন কেন? ভারতের হেরিটেজ ফাউন্ডেশন অখন্ড ভারত প্রতিস্ঠা করার বিষয় নিয়ে গবেষনা করছেন। অবশ্য রারা এতে কোন রাজনীতি নেই। শুধুমাত্র গবেষনার স্বার্থেই এ কাজ করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ইতিহাস পুনর্নির্মান করার জন্যেই এ গবেষনা চালানো হচ্ছে।

আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা আসল ইতিহাসই তৈরি করতে পারছিনা। স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিতর্ক আমরা চালিয়ে যাচ্ছি বছরের পর বছর। আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী তাও ঠিক হয়নি। আমরা বংগবন্ধু আদালত জাতীয় সংসদ জাতীয় সংগীত নিয়ে কোন কথাই বলতে পারবোনা। এসব নাকি খুবই পবিত্র। আলোচনা সমালোচনার উর্ধে।শুনেছি পশ্চিম বাংলার মানুষ বংগবন্ধুকে দেবতা বা অবতারের মতো সম্মান করেন। আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের উপর হয়ত ওই ধরনের একটা প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে। ৭২-৭৫ এর দিকে বাংলার বাণীতে মরহুম শেখ মনি বলেছিলেন আইনের শাসন নয় মুজিবের শাসন চান চাই। তিনি আরও বলেছিলেন,বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে কিছু বললে জিব কেটে ফেলা হবে।শুরু করেছিলাম সক্রেটিসকে দিয়ে আর  শেষ করতে চাই ওই সময়ের স্বৈরাচারী সরকার সম্পর্কে দুটো কথা বলে। ওই সরকারটি টিকে ছিল মাত্র আট মাস। তারপরেই মানুষ বিদ্রোহ করেছে। ওই সরকার গনতন্রের কথা বলেই মানুষের উপর অত্যাচার করতো।

এরশাদ মজুমদার, কবি লেখক ও সাংবাদিক, ( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »

বায়া দলিল ৩


মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এশিয়ায়। এ ব্যাপারে এখনও কারো কোন দ্বিমত নেই। এক সময় বিশাল এশিয়াই ছিল পৃথিবী। আমেরিকা নামক দেশ বা রাস্ট্রটি মানচিত্রে এসেছে মাত্র কয়েকশ’বছর আগে। গবেষকরা বলেন, ১৪৯২ সালে কলম্বাস ভারতে আসার জন্যে   রওয়ানা দিয়ে ভুল পথে  আমেরিকায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। আমেরিকানরা ক’বছর আগে কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের ৫০০ বছর পালন করেছে। এদিকে আবার ভারত দাবী করে এক সময় আর্যরা বিশ্ব ভ্রমনে গিয়ে কয়েক হাজার বছর আগে আমেরিকা আবিস্কার করেছে। আমেরিকার আদিবাসীরাই হচ্ছে আজকের রেড ইন্ডিয়ান। যাদের বর্তমান আমেরিকানরা ধীরে ধীরে মেরে ফেলছে। বলা হয় আজকের আমেরিকা হচ্ছে ইমিগ্র্যান্টদের দেশ। কয়েকশ’ বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ভাগ্যের অন্বষনে মানুষ আমেরিকায় আবাস গড়েছে। বৃটিশরা আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের ধরে এনে আমেরিকায় দাস হিসাবে বিক্রি করেছে। দাসদের করুন কাহিনী আপনারা অনেকে পড়েছেন। আজকের আমেরিকা বহিরাগতদের গড়ে তোলা একটি দেশ। আজ আমেরিকানরা পৃথিবীর নেতা। গরীব দেশ গুলোকে ধার দেনা দিয়ে করতলগত করে রাখছে। যারা কথা শুনেনা তাদের উপর হামলা করছে। বিগত একশ’ বছর ধরে আমেরিকা আর তার মিত্ররা বিভিন্ন দেশ দখল করেছে। এক সময় এই শক্তিধর আমেরিকা ছিল বৃটিশদের কলোনী। আমেরিকানদের স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা আপনারা জানেন। তারপর তাদের গৃহযুদ্ধের কথাও আপনারা জানেন। আমেরিকার বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিকরা হয়ত সুদুর অতীতের বড় বড় সাম্রাজ্যের কথা ভুলে গেছেন।তারা ভুলে গেছেন এক সময় বৃটিশরা তাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার এমন দিন এক সময় থাকবেনা। সেই সময়টা মোটেই দূরে নয়। আজ আমাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্বাস করতে চায়না এক সময় আমাদের এই দেশটা সুজলা সুফলা ছিল। ভাগ্যের অন্বেষনে বিদেশীরা এখানে আসতো। বেশীদিন আগের কথা নয় সোনার বা বাংলায় ব্যবসা করতে এসেছিল আরব বৃটিশ পর্তুগীজ ফ্রান্স ও ওলন্দাজরা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতো ষড়যন্ত্র করে দেশটা দখন করে ১৯০ বছর এদেশে শোষণ চালিয়েছে। ওই শোষণ থেকে মুক্তিলাভের জন্যেই কংগ্রেস ও মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছিল।

এক সময় সভ্যতার পীঠস্থান ছিল ইরাক ইরান মিশর সিরিয়া চীন ও প্রাচীন ভারত। ইউরোপে ছিল রোম ও গ্রীস। এখন এরা কেউ ক্ষমতাধর নয়। চীন আর ইরান ছাড়া বাকিরা সবাই আমেরিকার তাবেদারি করে বেঁচে আছে। আমরা বাংগালীরা নিজেদের গৌরবের কথা বলতে গিয়ে মুখের ফেনা বের করে ফেলি। হাজার বছরে আমাদের নিজেদের কোন স্বধীন রাস্ট্র ছিলনা। ৭১ সালের আগে এখানে পাল সেন খিলজী মোঘল বৃটিশ আর পাকিস্তানীরা শাসন করেছে। পাকিস্তানী মুসলমানদের সাথে ছিলাম আমরা ২৩ বছর। তারপর থেকে একশ’ভাগ আমাদের নিজেদের স্বাধীন রাস্ট্র। এখন কোন বিদেশী আসন নেই।স্বাধীনতার ৪০ বছর পুর্তি হতে চললো। কিন্তু আমরা স্বপ্নের সেই সুখ পাইনি। এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু। কাল্পনিক শত্রু আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করে তারা এবং তাদের বন্ধুরা ছাড়া আর কারো দেশ চালাবার অধিকার নেই। বাকি কারো দেশ চালাবার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ মনে করে একমাত্র তারাই রাজনৈতিক দল। বামপন্থী নেতা সেলিম সাহেবতো দাবী জানিয়েছেন যেসব দলের সাথে ইসলাম শব্দ আছে সেগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্যে। আমি অবাক হচ্ছি যে একজন শিক্ষিত লোক কিভাবে এমন দাবী করতে পারেন। সেলিম সাহেব কখনও ভোটে দাঁড়ান না বা ভোট প্রার্থী হননা। তাঁর বামপন্থী বন্ধুরা ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠে করুন সুরে গান ধরেছেন, আগে জানলে তোর ভাংগা নৌকায় চড়তাম না। সেলিম সাহেবেরা আসলে একদলীয় গনতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। সেলিম সাহেবের ধর্মহীন দল রাজনীতি করতে পারবে, কিন্তু ধর্মে বিশ্বাসীরা কেউ রাজনীতি করতে পারবেনা। পথিবীর কোথাও এমন ব্যবস্থা নেই । এমন কি চীন রাশিয়াতেও নেই। চীন রাশিয়ায় ধর্ম নিষিদ্ধ করার দিন চলে গেছে।

আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের কারনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনই ঐকমত্য স্থাপিত হয়নি। কারন আওয়ামী লীগের কাছে দেশের উন্নতির চেয়ে দলের স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দলটি মুখে গনতন্ত্রের কথা বলে ফেনা জমিয়ে ফেলে। কিন্তু কাজে দেশের চেয়ে দল বড়। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশ শব্দটি সমার্থক। তারা মনে করে দলের উন্নতি হলেই দেশের উন্নতি হবে। তাতেও তাদের মন ভরেনা। তারা চান  দেশের প্রশাসন ও সব ধরনের বাহিনী তাদের দলের হয়ে কাজ করবে। এমন কি আদালতও এই দলের জন্যে কাজ করবে। এই মানসিকতা থেকেই বংগবন্ধু বামপন্থীদের পাল্লায় পড়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন। এখনও সেই সব আলামত দেখা যাচ্ছে। আমার লেখা পড়ে আপনাদের মনে হতে পারে আমি অন্ধভাবে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছি। না আমি তা মোটেই করছিনা। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ও মতবাদ আছে। কিন্তু কোন দলীয় মতবাদ নেই।আমি অন্ধভাবে কোন দলকে সমর্থন করিনা। অনেকেই মনে করেন, বিশেষ করে আমার আওয়ামী বন্ধুরা মনে করেন আমি এক সময় বামপন্থী চিন্তাধারার লোক ছিলাম এখন ডানপন্থী হয়ে গেছি। আমার বন্ধু  সাবেক সচিব মহিউদ্দিন কাগজে লিখেই ফেলেছেন আমি মোল্লা হয়ে গেছি। আবার কেউ কেউ মনে করেন আমি বিএনপি বা জামাত সমর্থক হয়ে গেছি। কারো কথায় আমার কিছু আসে যায়না। সবাই নিজের মতো করে ভাবে। তবে একথা ঠিক যে আমি  দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভাবি। আর ভাবি বলেই আমি নিজের পছন্দ ও ইচ্ছানুযায়ী সাংবাদিকতায় এসেছি। এই পেশায় এসে আমি আনন্দ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন হলো একটি সম্মানিত দেশ ও রাস্ট্রের নাগরিক হওয়া। ৭১ সালে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল সেই স্বপ্ন নিয়েই। কিন্তু সে স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি। স্বপ্ন ভংগের কারন দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল। সিংগাপুর কোরিয়া তাইওয়ান ও মালয়েশিয়া আমাদের চোখের সামনেই সম্মানিত রাস্ট্রে পরিণত হয়েছে। কারো সময় লেগেছে ১৫ বছর আর সময় লেগেছে ২০ বছর। আমদের ৪০ বছর পার হতে চলেছে। দারিদ্র অশিক্ষা এখনও বিশাল ভাবে বিরাজ করছে। অথচ আমাদের রয়েছে বিশাল কৃষক ও শ্রমিক সমাজ। কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে আমি মনে করি। এই বিশ্বাস থেকেই আমি ১৯৬৫ সালের ১৭ই মার্চ কৃষি পত্রিকা সাপ্তাহিক ফসল প্রকাশ করি। তখন প্রশাসন ও সমাজ মনে করতো আমি কমিউনিস্ট। আমি চিরদিনই একজন মানবতাবাদী। বহুকাল আমি সে পত্রিকা চালিয়েছি। এখন বন্ধ। বাংলাদেশের সরকারগুলো ধনী ও সংঘবদ্ধ মধ্যবিত্তের সরকার।এদেশে রাজনীতিকরাও কৃষক শ্রমিকের পক্ষে নয়। পত্রিকা গুলোও তাদের পক্ষে। সবাই মুখে শ্রমিক ও কৃষকদের পক্ষে কথা মন ভুলানো কথা বলে। গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে কৃষকরাই সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে। ৪০ বছরে ধনীর সংখ্যাতো কম হলোনা। ৬০ থেকে ৭০ নাগাদ রাজনীতিকদের শ্লোগান ছিলো পাকিস্তানের বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে। ওরাই নাকি তখন পূর্ব পাকিস্তানকে চুষে খাচ্ছিল। আর এখন কয়েক’শ’ বাংগালী ধনীর জন্ম হয়েছে যারা যখন তখন সরকারকে প্রশাসনকে চোখ রাংগায়। এখন এসব ধনীর বিরুদ্ধে রাজনীতিকদের কোন আওয়াজ নেই। সব দলই এসব ধনীর কাছে থেকে মাসোয়ারা নেয়। ছাত্রনেতারা ধনীদের কথায় উঠে বসে। ধনীরা প্রায় সবাই কাগজ ও টিভির দোকান খুলে বসে আছে। সেখানে  সাংবাদিক নামের শ্রমিকরা কাজ করে। সবাই ভাল বেতন পায়। নানা ভাবে আরও অনেক আয় আছে সাংবাদিকদের। আমার এসব কথা কি কোন কাগজ ছাপবে? না ছাপবেনা। মহান স্বাধীন(?) মিডিয়ার বিরুদ্ধে সত্যকথাও নাকি বলা যাবেনা। আমি এমন একটি গনতান্ত্রিক দেশে বাস করি যেখানে সরকার সাংবাদিক মাস্তানদের বিরুদ্ধে কথা যায়না। আপনারা সবাই আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন। তাহলে বলুন, এই এতিম দেশটির উন্নতি কে করবে?

আল্লাহর রাসুল ইমামুল মুরসালিন হজরত মোহাম্মদ(সা:) বলেছেন, তোমরা সব সময় সংঘবদ্ধ থাকবে। তোমাদের একতাই হবে তোমাদের শক্তি। বিচ্ছিন্ন হলেই তোমরা পদানত হবে। শত্রুরা তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। তোমাদের জন্যে আমি দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছি। একটি আল্লাহপাকের কিতাব আল কোরাণ,আর অপরটি আমার সুন্নত। এ দুটি জিনিষ যতদিন তোমাদের কাছে থাকবে ততদিন পৃথিবীর ইমামতি তোমাদের কাছে থাকবে। তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করোনা। চলমান বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা কেন এমন হয়েছে তা নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করতে পেরেছেন।

ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মহানবীর(সা:) জামাতা হজরত আলী (রা:) বলেছেন, একটি দেশ বা সমাজ নস্ট হয়ে গেছে বুঝবে কেমন করে। যখন দেখবে, সে সমাজে গরীবরা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপন হয়ে গেছে।মুর্খরা মঞ্চে বসে থাকবে আর জ্ঞানীরা পালিয়ে থাকবে আর দেশের শাসক মিথ্যা কথা বলবে। তাহলে আপনারাই বলুন, বাংলাদেশ এখন কোন অবস্থায় আছে? যে কোন কারনেই হোক বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ নয়। জাতির বিভক্তি আজ সুস্পস্ট। আওয়ামী লীগ ধর্মহীন রাজনীতি করতে চায়। আর বিএনপি দাবী করে তারা জাতীয়তাবাদ ও ইসলামকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। আমার মনে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ধর্মহীন রাজনীতি চায়না। তারপরেও বাংলাদেশের রাজনীতির আজ এই হালত কেন? কারন নেতারা বিভ্রান্ত ও স্বার্থপর।

শুরু করেছিলাম আমেরিকার বায়া দলিল নিয়ে কথা বলার জন্যে। আমেরিকার নিজস্ব কোন ইতিহাস বা ঐতিহ্য নেই। কারন তার ইতিহাস মাত্র কয়েক’শ’ বছরের। তাই সে পৃথিবীর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী দেশগুলো আক্রমন চালাচ্ছে। ইরাকের প্রায় সব সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। যেমন ময়ুর সিংহাসন ও কোহিনুর মুকুট ইংরেজরা ভারত থেকে লুট করে নিয়ে গেছে। প্রসংগত বাবরী মসজিদের কথা উল্লেখ করতে মন চাইছে। এটাও একটা বায়া দলিলের মামলা। এলাহাবাদ হাইকোর্টে ৬০ বছর ধরে এই মামলা চলছে। অযোধ্যায় বাবর এই মসজিদ প্রতিস্ঠা করেছিলেন। দলিল দস্তাবেজ সেইভাবেই আছে। কিন্তু কট্টর হিন্দুরা মনে করে অযোধ্যা রামের জন্মস্থান। এখানে রাম মন্দির ছিল। বাবর সেই মন্দির ভেংগে মসজিদ প্রতিস্ঠা করেছে। ইতিহাসবিদ,গবেষক, প্রত্নতত্ববিদরা বলেছেন হিন্দুদের দাবীর স্বপক্ষে কোন দালিলিক প্রমান নেই। এক সময় কট্টর হিন্দুরা বাবরী মসজিদকে গুড়িয়ে দেয়। ৬০ বছর পর এলাহাবাদ হাইকোর্ট জমির মালিকানার রায় ঘোষণা করেছেন। আসলে ওই রায় কোন রায় নয়। আদালত শান্তির আশায় আপোষ করেছেন। মেজরিটি হিন্দুর দেশ ভারতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কেমন করে সঠিক রায় দিবেন? তাই মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি শান্তি ও নিরাপত্তার আশায় উভয় পক্ষের মাঝে বাটোয়ারা করে দিয়েছে। এটা কোন দালিলিক রায় নয়। সমঝোতার রায়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এখন পরিবেশ পরিস্থিতির শিকার। তাঁকে বার বার ঘোষণা দিয়ে বলতে হচ্ছে তিনি এখন আর মুসলমান নন। একজন পূর্ণাংগ খ্রিস্টান। কারন আমেরিকানদের অনেকেই মনে করেন তিনি এখনও মুসলমান। বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারন আমেরিকা একটি খ্রিস্টান প্রধান দেশ। তাই তারা সাধারন ভাবে মনে করে সেই দেশের নেতা হবেন একজন খাঁটি খ্রিস্টান। ম্যানহাটনের জিরো পয়েন্টের কাছে মুসলমানরা নিজেদের জায়গায় একটি ইসলামিক সেন্টার তৈরী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেখানেও ক্রিস্টান বন্ধুরা আপত্তি তুলেছেন। আবার ফ্লোরিডায় এক ধর্মযাজক পবিত্র কোরাণ শরীফে আগুন লাগাবার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব ঘটছে মহান সেকুলার দেশ খোদ আমেরিকায়। আর এসবই হলো বায়া দলিলের কথা। জাতি হিসাবে শুধু আমাদের কোন বায়া দলিল নাই।( নয়া দিগন্ত ১১ অক্টোবর )

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


টিভি অন করতেই সামনে এসে পড়লো আরটিভির রোড টু ডেমোক্রেসি নামের একটা প্রোগ্রাম। প্রোগ্রামটা যিনি পরিচালনা করেন তিনি খোলা মনের মানুষ নন বলে মনে হলো। এই অনুস্ঠানে দুয়েক জন সাংবাদিকও থাকেন। রাজনৈতিক দলের নেতারাও থাকেন। তবে বড় দুই দলের নেতারাই থাকেন বেশী। সালা্উদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়া বিএনপির বাকি নেতাদের চোয়ালে তেমন জোর আছে বলে মনে হয়না। এসব টকশো/ঠগশো বা তেতুল শোতে গলা না ফাটালে বাজী মাত করা যায়না। টকশো দেখে দুই গ্রামের তার্কিকদের কথা মনে পড়ে গেল। প্রথম গ্রামের তার্কিক মঞ্চে উঠেই প্রশ্ন রাখলেন, বলুনতো ‘আই ডু নট নো’ মানে কি? দ্বিতীয় গ্রামের তার্কিক মঞ্চে উঠে হাসতে হাসতে বললেন, এটা কোন প্রশ্ন হলো। সবাই চিত্‍কার বললো উত্তর দিন। দ্বিতীয় গ্রামের তার্কিক বললেন, এর মানে হলো ‘আমি জানিনা’। আর যায় কোথা? সবাই দাঁড়িয়ে চিত্‍কার করে বললো,প্রথম গ্রাম হেরে গেছে। আমাদের জ্ঞানী গুণীদের টকশো অনেকটাই গ্রামের তার্কিকদের মতো। সেদিনের টকশোতে সিদ্দিকী সাহেব নামের এক মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী মহোদয় হজরত আবু বকর সিদ্দিকী(রা:) বংশধর কিনা জানিনা। শুনেছি ওই পদবীর সিলসিলা এসেছে হজরত আবু বকরের(রা:) বংশ থেকে। সিদ্দিকী মানে বিশ্বাসী । আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠতম রাসুল ইমামুল মুরসালীন মোহাম্মদ মোস্তফার(সা:) রেসালত ও নবুয়ত ঘোষণা প্রথমেই বিশ্বাস করেছিলেন প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর(রা:)।তিনিই প্রথম বয়স্ক পুরুষ যিনি নবীজীর নবুয়তকে বিশ্বাস করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি সিদ্দিকী নামে পরিচিত হয়েছেন। আমাদের আলোচনার সিদ্দিকী সাহেব কোন সিলসিলা থেকে এই পদবী পেয়েছেন তা দেশের মানুষ জানেনা।

সেদিন টিভি টকশো’তে সিদ্দিকী যেভাবে কথা বলছিলেন তাতে নিশ্চিত ভাবে মনে হয়েছে তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকরের(রা:) বংশধর নন। তাহলে তিনি ওরকম ভাষায় কথা বলতে পারতেননা। পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা অন্যদের দেবতাদের কখনই মন্দ বলোনা, যদি বলো তারা ক্ষুব্দ হয়ে তোমার আল্লাহকে গালি দেবে। সিদ্দিকী সাহেবের উপর তার নামের বা পদবীর কোন প্রভাব বা তা’ছির পড়েনি। পড়লে তিনি টকশো’তে ওভাবে কথা বলতেন না। তিনি বলেছেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি কোন রাজনৈতিক দল নয়। সামরিক দর্জি ওসব দল তৈরী করেছে। অনুস্ঠানের পরিচলক বিএনপির ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে আলোচনায় অংশ গ্রহনের জন্যে ফোনে আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্দিকী সাহেব বললেন, উনি একজন ভুঁইফোড় রাজনীতিক। তার সাথে কি কথা বলবো। সিদ্দিকী সাহেব আরও বললেন, বিরোধী দল সংসদে আসলেই কি না আসলেই কি? জনগন আমাদের ভোট দিয়েছে সরকার চালাবের জন্যে। সংসদে বিরোধী দল থাকলে পত্রিকার জন্যে ভাল । তারা কিছু মুখরোচক খবর লিখতে পারবেন। এছাড়া সংসদে বিরোধী দলের কোন কাজ নেই। তিনি আরও বলেছেন, দেশর মানুষ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়েছে দেশ চালাবের জন্যে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মন্ত্রী মহোদয় হয়ত ভুলে গেছেন বিরোধী দল তিন কোটি ভোট পেয়েছে। আগামী নির্বাচনে সিদ্দিকী সাহেবের দল যদি হেরে যায় তাহলে কি বলা যাবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি জিতে গেছে? এই প্রশ্নটার উত্তর সিদ্দিকী সাহেবের কাছে আছে কিনা জানিনা।

ঠিক এই সময়ে মনে পড়ছে সাহসী সাংবাদিক এনায়েত উল্লাহ খানের কথা। তিনিই তার বিখ্যাত সাপ্তাহিক হলিডেতে লিখেছিলেন ‘সিক্সটি ফাইভ মিলিয়ন কোলাবোরেটর।’ সময়টা ছিল ৭২-৭৫ সালের কথা। তখনও আওয়ামী লীগ গলা ফাটিয়ে প্রচার করছিলো তারা ছাড়া বাকিরা সব কোলাবোরেটর। তখন কান সাহেব ওই হেডিং দিয়ে একটা আর্টিকেল লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজও আওয়ামী নেতারা বলতে শুরু করেছেন তারা ছাড়া বাকি সব মানুষ স্বাধীনতা বিরোধী। এজন্যে দেশের মানুষ শংকিত। আওয়ামী লীগের বায়া দলিলটা মন্র্রী মহোদয়ের ভাল করে জানা নেই। তার দলের নামে কোথাও বাংগালিয়ানা নেই। আওয়াম শব্দটা উর্দু, আর লীগ শব্দটা ইংরাজী। শুরুতে এই দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। মানে জনগনের মুসলিম লীগ। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের বাইরে নতুন নাম করণ করা খুবই কঠিন ছিল। মাওলানা ভাসানী বলতেন, আমাদের দল জনগনের মুসলিম লীগ। আর নুরুল আমিনেরটা সরকারী মুসলীম লীগ। এক সময় বংগবন্ধু নিজেই মুসলীম লীগের কর্মী ছিলেন। সেই সময়ে বংগবন্ধু কায়েদে আযম জিন্দাবাদ বলে শ্লোগান দিতেন।জিন্নাহ টুপি আর শেরওয়ানী পরে গৌরবান্বিত হতেন।এটা বোধ হয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ভাবতেও পারেন না।বংগবন্ধু জীবনের শুরুতে মুসলীম লীগ করতেন এটা কোন মন্দ ব্যাপার নয়। তখন মুসলীম লীগই ছিল মুসলমানদের একমাত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম। মেজরিটি হিন্দুদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ছিল কংগ্রেস। দুই দলের কোথাও সাধারন মানুষের তেমন কোন ভুমিকা ছিলনা।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রথম একশ’ বছর ছিল মুসলমানদের প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস।তখন হিন্দুরা কোম্পানীকে সহযোগিতা করেছে। কথাটা আজ ভাল লাগুক বা না লাগুক এটাই হলো ইতিহাস। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিস্ঠিত হয় একটা সমিতি হিসাবে। এর প্রধান ছিলেন একজন বৃটিশ। কংগ্রেসের কাজ ছিল বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সাথে দর কষাকষি করা। বহু মুসলমান নেতা প্রথম দিকে কংগ্রেসের সাথেই ছিলেন। কিন্তু অধিকারের প্রশ্নে বনিবনা হয়নি। ১৯০৬ সালে সারা ভারতের মুসলমান নেতাদের উদ্যোগে ঢাকায় মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠিত হয়। তখন এর নেতৃত্বে ছিলেন মুসলিম এলিট ক্লাশ। মুসলীম লীগের লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে বিদেশী সরকারের সাথে কথা বলা। সেই মুসলীম লীগই ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্তাপন করে। তত্‍কালীন পূর্ববাংলার ৯০ ভাগ মানুষ পাকিস্তান প্রস্তাব সমর্থন করে।জিন্নাহ বলেছিলেন, পূর্ব বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্যে পাকিস্তান প্রতিস্ঠা করা অপরিহার্য। সেই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।পাকিস্তানী শাসকদের অত্যাচার থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ছিল স্বাধীনতা লাভ করা। বাংগালীদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। এ লক্ষ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন থেকেই। তারপরেতো আরও অনেক আন্দোলন। এক সময়ে সবচেয়ে বড় আন্দোলন ছিল অর্থনৈতিক শোষনের বিরুদ্ধে। পূর্ব পাকিস্তানের উপর পাকিস্তানী শাসক ও শোষকদের সকল ধরনের সীমা অরিক্রম করে গিয়েছিল। তারই প্রতিক্রিয়া ছিলো ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল। শোষনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের নিরন্কুশ রায়। এ রায়কেও পাকিস্তানের শামরিক জান্তা ও ভুট্টো বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল সামরিক শক্তি দিয়ে জনগণকে পরাজিত করবে। তারা ভাবেনি ভারত কি করতে পারে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ১৬ই ডিসেম্বর রমনার মাঠে পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজী। বিজয়ী জেনারেল ছিলেন মিস্টার অরোরা। বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। কেন তিনি বিজয়ের দলিল স্বাক্ষর অনুস্ঠানে  উপস্থিত ছিলেন না সে তথ্য আজও রহস্যাবৃত। সত্য মিথ্যা জানিনা, তবে শুনেছি পাকিস্তান বা ভারত  নাকি তাতে রাজী হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে ৭১ সালের যুদ্ধটা কার সাথে কার হয়েছে। এটা কি বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের না ভারতের সাথে পাকিস্তানের? পাকিস্তানের পরাজয়ের দলিল স্বাক্ষরের পর ভারতের প্রয়াত প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টে বলেছিলেন, ‘হাজার সাল কা বদলা লিয়া’। বাংলায় বলতে গেলে, হাজার বছরের প্রতিশোধ নিয়েছি। কিন্তু, কিসের প্রতিশোধ? কেন প্রতিশোধ? এখানেই আসে বায়া দলিল, লিন্ক টাইটেল বা ইতিহাস ইতিহ্যের কথা। ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় গবেষক বা রাজনীতিকরা তাদের বায়া দলিল সম্পর্কে একশ’ভাগ সজাগ। সেই জাগরনের হিসাব থেকে ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন হাজার বছরের ইতিহাসের কথা। তিনি ৭১১ সালের মুহম্মদ বিন কাশেমের সিন্ধু বিজয়ের কথা মনে রেখেই কথাটা বলেছেন। তিনি একশ’ভাগ ঠিক কথাটাই বলেছেন। এটাই হচ্ছে ভারতীয় নেতাদের জাতীয়তাবোধ।তারা সবাই জানেন তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য হচ্ছে হিন্দিত্ববাদ এবং হিন্দুস্থান। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য এখনও নির্ণিত হয়নি। তাই আমাদের জাতীয়তাবোধ তৈরী হয়নি।

আমাদের এক শ্রেণীর নেতা শ্লোগান দেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরম করুণাময় সর্বশক্তিমানের নামে শুরু করছি, জয় বাংলা। কারণ তারা মনে করেন আল্লাহ হু আকবর, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আরবী শব্দ। এসব পবিত্র শব্দকে বাংলায় অনুবাদ করে বলতে হবে। বাংলা বললে তাদের রাজনীতি থাকেনা। মাননীয়া শেখ হাসিনা ওয়াজেদ নাকি নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং কোরাআন তেলাওয়াত করেন। তখনও কি তিনি আল্লাহতায়ালার পবিত্র বাক্যগুলিকে বাংলা করে পড়েন? আমি এক হাজার ভাগ নিশ্চিত তিনি ওই পবিত্র বাক্য গুলো আরবীতেই পড়েন। আমার এক আওয়ামী বুদ্ধিজীবী বন্ধু বলেন, ধর্মের সাথে রাজনীতির মিশাল দিবেন না। রাজনীতির শ্লোগানের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তাহলেতো বলতে হবে আপনাদের সকলের নাম বদলাতে হবে। আরবী নামের ভিতর সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ থাকে।

৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের দলিল দস্তবেজ খুঁজতে গিয়েও আমাদের সরকারের কাছে কোন দলিল নাই। তারা বিচারের জন্যে খবরের কাগজ, জীবিত লোকের সাক্ষ্য নেয়ার চেস্টা করছেন। ওসব দলিল আছে পাকিস্তান আর ভারতের কাছে। ভারত সে সব তথ্য দিতে হয়ত রাজী হচ্ছেনা। কারণ পাকিস্তানের সাথে ভারতের বহু অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। যেমন ভারত বাংলাদেশের সাথে আলাপ না করেই ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দিতে রাজী হয়েছে। যেমন ভারত বাংলাদেশ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে জাতিসংঘে চীনের ভেটোর কারনে। চীন বলেছিলো যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশী সৈন্য থাকবে ততদিন দেশটি স্বাধীন নয় এবং জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্যে যোগ্য নয়। যেমন, বাংলাদেশের প্রথমবার ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ ভারত বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বংগবন্ধু ভারতের অনুরোধকে উপেক্ষা করেই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন অন্যান্য মুসলীম দেশের অনুরোধে। মুসলীম বিশ্বের অনুরোধেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারপরেই ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। যে তিনটি দেশ ৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল সেই তিনিটি দেশ হচ্ছে চীন আমেরিকা ও সউদী আরব। এখন তিনটি দেশই বাংলাদেশের পরম বন্ধু। যদিও অতি সম্প্রতি চীন মায়ানমার ও মুসলীম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছেনা। এটা বর্তমান সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা।

বংগবন্ধু যদি আজ জীবিত থাকতেন তাহলে মুসলীম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও আরও সুসংহত ও গভীর হতো। কারণ তিনি সব সময় নিজেকে একজন মুসলীম ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার মনে করতেন। আমরা যারা সাংবাদিকতা জীবনে তাঁর কাছাকাছি বা সান্নিধ্যে এসেছিলাম তারা জানি তিনি তিনি কত বেশী উদার এবং উষ্ণ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তিনি কখনও কঠোর শাসক ছিলেননা। তাঁর উদারতার সবচেয়ে বেশী সুযোগ নিয়েছে বামপন্থী নেতা ও দলগুলো। তাঁকে ভুল বুঝিয়ে দেশের উন্নতির কথা বলে রাশিয়া ও ভারত গনতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে  এক দলীয় শাসন জারী করতে প্ররোচিত করেছিল। যা আওয়ামী লীগ পরবর্তিতে প্রত্যাখ্যান করেছে।

Ershad Mazumder, a poet writer & journalist

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


বায়া দলিল শব্দটার সাথে আমরা খুবই পরিচিত। এটা একটা ফারসী শব্দ। মোঘল আমলে থেকেই জমি জমার ব্যাপারে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জমি কিনতে গেলে জমির পিছনের ইতাহাস ভাল করে পরীক্ষা করতে হয়। সেই ইতিহাস শুদ্ধ হলেই জমি বেচাকেনা হয়। জমি বেচাকেনার ক্ষেত্রে এসব হলো আইনি বিষয়।এ গুলো মানতেই হবে। তাছাড়া এই সময়ে জমি জমার ক্ষেত্রে জাল জালিয়াতি বেড়ে গেছে। শুধু জমি জমার ক্ষেত্রেই নয়, এখন জাতির সবখানেই জাল জালিয়াতি চলছে।আমরা জানি বা না জানি সব সৃস্টির পেছনেই তার ইতিহাস বা দলিল আছে। সৃস্টির রহস্য জানার জন্যেই জিন রহস্য আবিস্কৃত হয়েছে। যেমন ধরুন আপনি বৈবাহিক আত্মীয়তা করবেন।তখন আপনি কি করেন? ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেস্টা করেন। কেন করেন? কারন আপনি জানতে চান যার সাথে আত্মীয়তা করছেন তার ভিত্তি কি রকম।

একটা জাতিরও বায়া দলিল থাকে। কারন চট করে একদিনে এক বছরে বা এক যুগে কোন জাতি গড়ে উঠেনা। জাতির একটা রাজনৈতিক সংজ্ঞা আছে। একটা জাতির নৃতাত্বিক ও সাংস্কৃতিক সংজ্ঞা আছে। যেমন আমরা বাংলাদেশীরা এখন একটা জাতি। আমাদের একটা ভৌগলিক সীমানা আছে, সেই সীমানায় একটা রাস্ট্র আছে। পৃথিবীর প্রায় সব রাস্ট্রই আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত আছে। আমাদের পাসপোর্টে জাতীয় পরিচিতিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশী। পৃথিবীতে বহু জাতি আছে যাদের কোন রাস্ট্র নেই। অনেক জাতি রাস্ট্র প্রতিস্ঠার জন্যে লড়াই করছে। শাসকদের কামান বন্দুকের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে। সাম্প্রতিক ইতিহাস হলো আফগানিস্তান ও ইরাক। জাতিসংগের সকল নিয়ম নীতি ও সনদ লংগন করে আমেরিকা এই দুইদেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে দখল করে নিয়েছে। সেখানে হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।

সত্যি কথা বলতে কি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মুল দলিল এখনও বলা হয়নি লিখা হয়নি। তাই রাজনীতিবিদরা যার যেমন ইচ্ছা কথা বলে যাচ্ছেন। সবাই নিজেদের ইচ্ছামতো জাল দলিল বানাবার চেস্টা করে চলেছেন। এইসব ভুয়া দলিল আগামী দিনে আগামী প্রজন্ম মুছে দিবে। ৭১ সালে শুধু একটা মুক্তিযুদ্ধ দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা আসেনি। এর পিছনে রয়েছে বহু বছরের রক্তাক্ত ইতিহাস। চলমান সময়ের দিকে তাকালে মনে হয় আওয়ামী লীগ আর বংগবন্ধু ছাড়া আমার স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে আর কিছু নেই। মনে হয় সবকিছু মুছে দিয়ে বলতে হবে বংবন্ধু ছাড়া এই হতভাগ্য জাতির আর কেউ নেই। নেই যেন নবাব সিরাজ উদ দৌলা, নবাব ওয়াজেদ আলী খান, বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর, শের আলী খান, ক্ষুধিরাম, তিতুমীর, হাজী শরিয়ত উল্লাহ, পীর দুদু মিয়া, নবাব সলিম উল্লাহ,মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও সো্হরাওয়ার্দী। আমরা ভুলে গেছি ১৯০৬ সালের মুসলীম লীগ, ১৯৪৯ সালের আওয়ামী মুসলীম লীগ, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট আর ৭১ সালের জাতীয় কমিটি প্রতিস্ঠার কথা। আমরা যেন ১৭৫৭ থেকে সোজা ১৯৭১ সালে আসতে চাই। মাঝখানে আর কোন সময় নেই,কোন ইতিহাসও নেই। হাজার বছরের একমাত্র বাংগালী বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। কোথায় গেল পাল সেন খিলজীরা? কোথায় গেল রবিন্দ্রনাথ আর নজরুলেরা।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমাদের বাংলা ভাষার দুই প্রধান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি গুরু সম্পর্কে যা জানি তার সিকি ভাগও জানিনা বিদ্রোহী কবি সম্পর্কে। তার বিদ্রোহী কবিতা যারা পড়েছেন তারা সবাই জানেন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি কি না করেছেন। জেলে গিয়েছেন। আর একটু পিছনের দিকে গেলেই জানতে পারবেন নজরুলের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পাটনার প্রধান কাজী বা প্রধান বিচারক। ১৭৬৫ সালে ইংরেজ কোম্পানী পাটনা দখল করলে প্রধান বিচারপতি পাটনা থেকে পালিয়ে বর্ধমানের আসানসোলে এসে আত্ম গোপন করেন। সেই থেকেই কাজীদের পতন। ওই একই সালে কবিগুরুর পূর্ব পুরুষ নীলরতন ঠাকুর উড়িষ্যার দেওয়ানীতে আমিনগিরির চাকুরী পান। কবিগুরুর ব্যক্তিগত সচীব ও জীবনীকার প্রভাত কুমার বলেছেন, আমিনগিরির চাকুরী পেয়ে নীলরতন দু’পয়সা কামিয়ে নিলেন। কোম্পানী আমলে একজনের উত্থান আরেকজনের পতন। এটাই হলো ইতিহাসের বায়া দলিল।আমাদের গবেষকরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননা। তারা মনে করেন এতে কবিগুরুকে ছোট করা হয়।

আমরা বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষই জানিনা শের আলী খান লোকটা কে? আমরা জানি স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন কৃতী সন্তান ক্ষুদিরামের নাম। ভারতের বড়লাটকে মারা জন্যে বোমা মেরে ধরা পড়েছিলেন ক্ষুধিরাম। বৃটিশদের বিচারে তার ফাঁসী হয়েছিল। শের আলী খান একজন পাঠান স্বাধীনতার সৈনিক। তিনি ছিলেন আন্দামান দ্বীপের পোর্ট ব্লেয়ার কারাগারে বন্দী। বড়লাট লর্ড মেয়ো আন্দামান কারাগার সফরে গেলে শের আলী খান তাকে হত্যা করেন।দিনটি ছিল ৮ ফেব্রুয়ারী ১৮৭২ সাল। শের আলী খান তার জবানবন্দীতে বলেছিলেন তিনি এজন্যে অনুতপ্ত নন। কারণ তিনি কারাগারে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুযোগ পেলে একজন বিদেশীকে হত্যা করবেন। লর্ড মেয়োই একমাত্র বড়লাট যিনি নিহত হয়েছিলেন একজন স্বাধীনতা সৈনিকের কাছে। আমরা অনেকেই এ ঘটনা  জানিনা কারণ আমাদের কোন বায়া দলিল নেই।আমরা সঠিক ইতিহাসে বিশ্বাস করিনা। আমরা বলবো শের আলী খানতো আর বাংগালী নয়। মাঝে মাঝে শুনি নবাব সিরাজ উদ দৌলা বাংগালী ছিলেন না। তিনি কেমন করে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হন। পরলোকের বাসিন্দা, মরহুম বললাম না কারন তিনি তাতে বিশ্বাস করতেন না। মারা যাওয়ার পর তার শবযাত্রায় রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া হয়। তিনি বলতেন, ইসলাম আরবের ধর্ম। এটা কেমন করে বাংগালীদের ধর্ম হয়।

আমরা আওয়ামী লীগের সঠিক ইতিহাসটাও রচনা করতে চাইনা। কারণ অনেকেই মনে করেন আসল ইতিহাস রচিত হলে  বংগবন্ধুকে বাংগালী জাতির হাজার বছরের নায়ক বলা যায়না। তাই বংগবন্ধুই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা। বংবন্ধু এক সময় মুসলীম লীগ কর্মী ছিলে একথা বললেও যেন গুণা্ হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা সভাপতি মাওলানা ভাসানী আর প্রতিস্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের নাম আওয়ামী লীগ নিতে চায়না। নতুন প্রজন্মের আওয়ামী কর্মীদের এ ধরনের আরও বহু কথা জানানো হয়না। হয়ত বংবন্ধু জীবিত থাকলে এ অবস্থা হতোনা। আওয়ামী লীগের উপর শ্যামলী ঘোষ নামের একজন গবেষক একটি বই প্রকাশ করেছেন। এই গবেষণার জন্যে শ্যামলী ঘোষকে অর্থ যোগান দিয়েছে দিল্লীর জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়। এই গবেষণা পুস্তকটিও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পড়লে মনে হবে বংগবন্ধুই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা।

দেখুন না, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কত কেলেংকারীই চলছে।মেজর জিয়া যেন ওই ঘোষণা দিয়ে অপরাধ করে ফেলেছেন। আমরা যারা ওই সময়ে জীবিত ছিলাম প্রায় সকলেই মেজর জিয়ার ঘোষণার কথা ২৬/২৭ মার্চ শুনতে পেয়েছি। দিল্লী সরকারের বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজে লেখা রয়েছে মেজর জিয়া বংগবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বংগবন্ধু যতদিন জীবিত ছিলেন এ বিষয়ে কোন বিতর্ক হয়নি।ইদানিং শুনতে পাচ্ছি জিয়া পাকিস্তানের চর হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। বংগবন্ধু একজন মহান নেতা। তারই নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত আছে বলে আমার মনে হয়না। কিন্তু কি কারণে জানিনা আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে চায়না। জিয়াউর রহমান কখনই বংগবন্ধুর চেয়ে বড় নেতা নন। তিনি নিজে কখনই এমন কথা বলেননি। সময়ের প্রয়োজনে জিয়া সাহেব বার বার জাতির সামনে হাজির হয়েছেন। ঘটনা প্রবাহ তাকে টেনে জনতার সামনে নিয়ে এসেছে। ২৬।২৭ মার্চের আগে আমরাতো তার নামই শুনিনি। কিন্তু এই জাতির ইতিহাসে সাথে ভাগ্যই তাকে জড়িয়ে নিয়েছে। এখানে কোন জোর জবরদস্তি হয়নি। ৭৫ সালের ৭ নবেম্বর আমরা আবার রেডিওতে তার ভাষন শুনেছি। সময় ও পরিস্থিতি তখন তাকে ওই ভাষণ দিতে বাধ্য করেছে। এর পরে তিনি এ দেশের রাস্ট্রপতি হয়েছেন। রাজনীতিতে একটা নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছেন। তাহলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘরানার গবেষক ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন আমাদের জাতীয়তা বাংগালী। এখন পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি বাংগালী আছেন। কিন্তু ১৫ কোটি বাংগালীর একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র আছে। অন্য বাংগালীদের নিজস্ব কোন রাস্ট্র নেই। তারা কেউ ভারতীয় বাংগালী, কেউ পাকিস্তানী বাংগালী আর কেউ অন্যদেশী বাংগালী।পাকিস্তান আমলে আমরাও ছিলাম পাকিস্তানী বাংগালী। এখন  একমাত্র আমরাই হলাম বাংলাদেশী। আমাদের পাসপোর্টেও জাতীয়তার ঘরে লেখা রয়েছে বাংলাদেশী। এমন কি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের পাসপোর্টেও লেখা রয়েছে বাংলাদেশী। সবকিছু জেনে শুনে বুঝে আওয়ামী ঘরানার লোকেরা এ বিষয়ে তর্ক করতে ভালবাসে। ৪৭ সালেও পশ্চিম বাংলার জ্ঞানী গুণীরা অখন্ড স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। ১৯০৫ সালে তারা পূর্ববংগ প্রদেশ গঠনের বিরোধীতা করেছেন। সে বিরোধিতায় আমাদের কবিগুরুও অংশ নিয়েছিলেন।কবিগুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠারও বিরোধিতা করেছিলেন।

সময়ের ঘুর্ণিপাকে রবার্ট ক্লাইভ ও জগতশেঠ আমাদের বন্ধু হতে চলেছে। কোলকাতায় ক্লাইভ স্ট্রীটের নাম পরিবর্তন হয়নি। ঢাকায় মিন্টু রোডের নাম পরিবর্তন হয়নি। এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লর্ড কার্জনের নাম জ্বল জ্বল করছে।মোম্বাইতে জিন্নাহর নাম পরিবর্তন হয়নি। তেমনি করাচীতে গান্ধীর নাম পরিবর্তন হয়নি। আমাদের এখানে নাম পরিবর্তনের কোন শেষ নেই।এইতো এই ক’দিন আগে বিজয় সরণীর একটি প্রতিস্ঠানে মাওলানা ভাসানীর নাম পরিবর্তন করে বংগবন্ধুর নাম জারী করা হয়েছে। অথচ মাওলানা সাহেব ছিলেন বংগবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু বা ওস্তাদ।আমরা যদি আমাদের দেশ ও ইতিহাস নিয়ে এত হীনমন্যতা নিয়ে বাঁচতে চাই তাহলে দেখা যাবে দেশটার নাম পরিবর্তন হয়ে বংগভুমি হয়ে যাবে। যারা বংগভুমিতে বিশ্বাস করেন তাদেরও একটা যুক্তি আছে। মহাভারতকে যদি মহাকাব্য  ইতিহাস  ধর্মগ্রন্থ বা বায়া দলিল মনে করি   তাহলে দেশের নাম বংগভুমি হতে আপত্তি কোথায়? অখন্ড বাংলাদেশের নাম এক সময় বংগদেশ বা বংগভুমি ছিল। মহাভারতে বর্ণিত একজন রাজার নাম ছিল বলি। তার কোন সন্তান ছিলনা। তাই তিনি তত্‍কালীন রেওয়াজ অনুযায়ী সন্তান উত্‍পাদনের জন্যে একজন ঋষিকে প্রাসাদে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। সেই ঋষির ঔরসেই পাঁচ রাজপুত্রের জন্ম হয়। তারাই হলেন অংগ বংগ কলিংগ সুম্ম ও ব্রম্ম। রাজপুত্র বংগ  আমাদের এই ভৌগলিক এলাকা শাসনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তারই নামানুসারে দেশের নাম করা হয়েছে বংগদেশ। কিন্তু ঐতিহাসিকরা মহাভারতের এই তথ্যকে গ্রহন করেননি।এখন এই বাংলাদেশে কেউ যদি মনে করেন রাজপুত্র বংগই আমাদের বায়াদলিল তাহলে দেশের নাম বংগদেশ বা বংগবন্ধুদেশ হতে আপত্তি কোথায়?

Read Full Post »

আদালত অবমাননা


দৈনিক আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ছ’মাসের জেল দিয়েছেন। সাথে এক লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন। ওই পত্রিকার সিনিয়ার রিপোর্টার নোমানকেও এক মাসের জেল দিয়েছেন। নোমানকে সরাসরি জেলারের কাছে সারেন্ডার করতে বলেছেন। ক’দিন আগে নোমানকে তার বন্ধুরা জেলগেটে পৌঁছে দিয়েছেন। এই দুইজন সাংবাদিক নাকি আদালত অবমাননা করেছেন। সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারকগন বিচারকালে বিষয়টাকে সেইভাবেই দেখেছেন। আদালতের ওই রায় নিয়ে দেশে বিদেশে নানা কথা উঠেছে। প্রতিদিন দেশে বিদেশে বহু সংগঠন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবী করে চলেছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগে এর আগে বাংলাদেশে কোন সাংবাদিককে এ ধরনের শাস্তি দেয়া হয়নি। আশে পাশের কোন দেশেও নাকি এমন রায় হয়নি।আমি বলবো,

‘বিচারক, তোমার বিচার করবে যারা

সেই জনতা আজ জেগেছে’

প্রশ্ন উঠেছে বিচারকের সমালোচনা বা রায়ের সমালোচনা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে কিনা। আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছে আদালত আর বিচারক সমার্থক কিনা। কিসে কেমন করে আদালত অবমাননা হয় তা আজও সুস্পস্ট হয়নি। সব সময় দেখা গেছে মাননীয় বিচারকগন মনে করেছেন আদালতের অবমাননা হয়েছে। অথবা কেউ অবমাননার বিষয়ে বিচারকদের দৃস্টি করেছেন। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি জীবনে বহুবার আদালত অবমাননার মামলায় পরেছিলাম। ৮০ সালে জুমাতুল বিদার দিন সকাল দশটায় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়। এটা ছিল মানহানির মামলা। যে পুলিশ অফিসার আমাকে গ্রেফতার করতে এসেছিলেন তাকে বললাম আজতো ছুটির দিন। এখন কোথায় নিয়ে যাবেন? তিনি বললেন, বিশেষ ব্যবস্থায় আদালত বসবে। ওইদিন আরও গ্রেফতার হয়েছিলেন সম্মানিত জহুর হোসেন চৌধুরী, অলি আহাদ। ইফতারের একটু আগে আদালত থেকে জামি পেয়েছিলাম। মানহানির মামলা করেছিলেন সে সময়ের শ্রম মন্ত্রী আতাখান সাহেব। তাঁরই তদবীরের কারনে জুমাতুল বিদার ছুটির দিনেও আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। মনে হয় ৬৬/৬৭ সাল হবে আমার বিরুদ্ধে সুয়োমোটো আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল আমি আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করেছি। তখন আমার বয়স ২৬/২৭ এর বেশী নয়। অতসব কিছু বুঝতাম না। আমার বন্ধু ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবের কাছে এলে তিনি সাহস দিয়ে বললেন ঘাবড়াবার কিছু নেই।মাফ চাইলেই আদালত মাফ করে দিবেন। সেবার মাফ চেয়ে রেহাই পেয়েছিলাম।আমার এমনও সময় গেছে আমি মামলা চালাবার জন্যে কোন উকিল পাইনি। এসব হলো প্রাসংগিক কথা।

মাহমুদুর রহমান সাহেবকে আমি খুবই সম্মান করি। তিনি চলমান সময়ের একজন বীর কলম সৈনিক। তিনি আমার বা আমাদের মতো নন। আমরা যারা নিজেদের পেশাদার সাংবাদিক বলি সত্যি কথা বলতে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই। একদিকে সরকার,অন্যদিকে ডাল চাল তেল নুনের ব্যবসায়ী পত্রিকার মালিক সাহেবেরা। কিছুদিন আগে পূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নান সাহেব বলেছিলেন ভুমি দস্যুদের কাগজ বর্জন করুন। সত্যিই ইদানিং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী পত্রিকা বের করেছেন নিজেদের কায়েমী স্বার্থ রক্ষা করার জন্যে। নামী দামী ডাকসাইটে  সাংবাদিকরা এসব কাগজে কাজ করেন এবং ওসব মালিকের জন্যে দেন দরবার করেন। পুরোনো জামানায় রাজনীতিক ও আইনজীবীরা আদর্শ প্রচারের জন্যে কাগজ বের করতেন। এখন পত্রিকা গুলোর তেমন কোন আদর্শ নেই। ধরুন, আমি একটা কলাম লিখতে চাই। কিন্তু কোথায় লিখবো? নয়া দিগন্ত আর আমার দেশ ছাড়া আমার লেখা আর কেউ ছাপতে চায়না। কারন জানিনা। এখন সাংবাদিকরা বিভক্ত। দুটো ইউনিয়ন। অনেক নেতা।

এমনি একটা সময়ে মাহমুদুর রহমান তার সাহসী লেখনীর জন্যে জেলে আছেন একজন সাধারন কয়েদীর মতো। তিনি আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।আদালতে তিনি নিজেই নিজের কথা বলেছেন। আদালত তাঁর কথায় সন্তুস্ট হতে পারেননি। তাই তাঁর সাজা হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের  জবানবন্দীর কথা  আজ আমার বার বার মনে পড়ছে। সাংবাদিকতার জন্যেই তত্কালীন আদালত তাঁকে শাস্তি দিয়েছে। নজরুল আদালতের কাছে ক্ষমা চাননি। সে আদালত ছিল পরাধীন দেশের আদালত। এখন আমাদের একটা রাস্ট্র আছে, পতাকা আছে, জাতীয় সংগীত আছে। কিন্তু আইনটা রয়ে গেছে সেই পুরোণো আমলের। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও এখন মত প্রকাশ করা যায়না।কথা বললেই মামলা হয়ে যায়। তবু বলতে হয় আদালত স্বাধীন, আমরা স্বাধীন। জাতীয় সংসদে বেশী সিট পেলেই একটা দল যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। সেই একদলীয় সংসদের কথাই দেশের আইন। বিরোধী দল ভোট পেয়েছে তিন কোটির উপরে। কিন্তু সংসদে তেমন সিট পায়নি। এই তিনকোটি ভোটারের তেমন কোন দাম নেই। তিন কোটি মানুষের কথা শোনার কেউ নেই। এটাই হচ্ছে এখন বাংলাদেশের গনতন্ত্রের নমুনা।

রাস্ট্র ব্যবস্থার এমন হাল হকিকত দেখে আমার সক্রেটিসের বিচারের কথা মনে পড়ছে। মহাজ্ঞানী সক্রেটিসের জবানবন্দীও আমরা পড়েছি। সে সময়ের আদালত সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলো। সেই মৃত্যুদন্ডকে মেনে নিয়ে তিনি হ্যামলক পান করেছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে দেশত্যাগ করতে পারতেন । তার সে সুযোগ ও সুবিধা ছিল। তিনি বলেছিলেন তিনি যদি পালিয়ে যান তাহলে সত্যের পরাজয় হয়। সত্যের পালিয়ে যাওয়া হয়।সক্রেটিস একজন আদর্শবাদী অতি দরিদ্র ব্যক্তি ছিলেন।জ্ঞান ছাড়া তার আর কোন সম্পদ ছিলনা। এমন একজন দরবেশ মানুষকে রাস্ট্র সহ্য করতে পারেনি। তাকে মেরে ফেলতে হলো। আজ আড়াই হাজার বছর পরেও আমরা এই মহান পুরুষকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। কিন্তু সেই সকল বিচারক আর শাসকদের কথা কেউ মনেও রাখেনি।

মহান সুফী সাধক আল্লাহ প্রেমিক মনসুর হাল্লাজকেও শাসক ও শরিয়া আদালত মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল।তখন শাসক এবং আদালত ও আলেম সমাজ হাল্লাজের মৃত্যুদন্ডকে সঠিক মনে করেছিলো। এখন সবাই মনে করেন সেই দন্ডাদেশ ভুল ছিল। তত্‍কালীন শাসক ও শরীয়া আদালত কেন এমন কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারন তারা হাল্লজের কথা বুঝতে পারেনি। হাল্লাজ রাস্ট্রের বা খেলাফতের জন্যে কোন হুমকি ছিলেননা। হাল্লাজ বলেছিলেন ‘ আমিই সত্য ’। আনা আল হাক। তিনি কখনই বলেননি আমিই খোদা। তিনি খোদায়ী দাবী করেছেন বলে অভিযোগ এনে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল।

কি অপরাধ ছিল ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা (রহ)। তিনি আজও বিশ্ব মুসলিম হানাফী মজহাবের নেতা। এত বড় ফকী আজও জন্ম গ্রহণ করেননি। তাঁকেও প্রাণ দিতে হয়েছে ক্ষমতার রোষানলে পড়ে। তত্‍কালীন খলিফার সাথে মতবিরোধের কারনে ইমামে আজমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বিমা বিচারে জেলে ছিলেন আট বছরের চেয়েও বেশী সময়। এবং তিনি জেলেই ইন্তিকাল করেন। ইমামে আজমের শতশত ফতোয়া মুসলিম বিশ্বের সকল মজহাবের কাছে আজও সম্মানিত। এমন একজন মানুষের সাথে খলিফার কি বিরোধ ছিল? এই বিরোধ ছিল সত্য এবং মিথ্যার। ইমামে আজম সত্যের জন্যেই প্রাণ দিয়েছেন।আমি এ রেফারেন্স গুলো উল্লেখ করেছি ইতিহাসের পাতা থেকে। রাস্ট্র এবং শাসকগণ সব সময়ই সত্যের গলা টিপে হত্যা করতে চায়। সত্যের যে মরণ হয়না তা তারা জেনেও ক্ষমতার দম্ভে উন্মাদ থাকতো। বিশ্বের সবখানে সে অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। গুয়ান্তনামে কারাগারের কথাই চিন্তা করুন। কার বিচার কে করছে?

মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমি এ কথাগুলো বলেছি। অনেকে বলবেন মাহমুদুর রহমান তেমন কোন মহত্‍ ব্যক্তি নন তাঁর অবস্থার সাথে মহাণ ব্যক্তিদের তুলনা করা যায়। না, আমি তুলনা করিনি। শুধু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছি যে দন্ড দিয়ে কোন কালেই সত্যকে হত্যা করা যায়না। সত্য কোন কাল বা সময়ের সাথে জড়িত নয়। সত্য কোন আইন নয় যাকে আদালত ব্যাখ্যা বিশ্লেশন করতে পারেন। সত্যকে পরিবর্তন পরিমার্জনও করা যায়না। আদালত বা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষ আলোচনা করে আসছে। আগামীতেও করবে। সময় পরিবেশ আর প্রয়োজনে  রাস্ট্র ও শাসকরা  আইনের পরিবর্তন করে মানুষের কল্যানের নামে। সেই আইনের যাতাকলে সাধারন মানুষের শাস্তিও হয়।

এইতো ধরুন ক’দিন আগে মাননীয় রাস্ট্রপতি সরকারের অনুরোধে ফাঁসির আসামীকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়াও ইতোমধ্যে দেশের সজ্জন ব্যক্তিরা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন রাস্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আদালতের রায়ের সাংঘর্ষিক। এ প্রশ্নে আদালত ও রাস্ট্রপতি উভয় প্রতিস্ঠানই বিতর্কের কাছে চলে গেছেন। দেশী বিদেশী বহু ব্যক্তি ও প্রতিস্ঠান মাহমুদুর রহমান সাহেবের মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। অনেকেই আদালতকে অনুরোধ করেছেন রায় পুণর্বিবেচনা করতে। আমি এর কিছুই করবোনা। সরকার যেভাবে পুলিশ পাঠিয়ে মাঝরাতে ধস্তাধস্তি করে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছেন তাতে সরকারের মনোভাব স্পস্ট হয়ে গেছে। এর পরেও সরকারের নির্দেশে পুলিশ আরও অনেক গুলো মামলা করেছে তার বিরুদ্ধে। মাহমুদুর রহমান সাহেব আদালতের কাছে ক্ষমা চাননি। তিনি তার চিন্তা ও লিখাকে সঠিক মনে করেছেন। কিন্তু আদালত মনে করেছেন মাহমুদুর রহমান ঠিক করেননি। এ ক্ষেত্রে আদালত আর সরকারের মনোভাব একই ছিলো। সরকারও চেয়েছিলেন মাহমুদুর রহমানের শাস্তি হোক। এমনও হতে পারে ছ’মাসের দন্ড শেষ হবার পরেও সরকার তার বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা রুজু করবে। তখনও হয়ত মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ কমবেনা।তাই আমি মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে ভিক্ষা চাইবোনা। এইতো ক’দিন আগে মহামান্য রাস্ট্রপতি  আওয়ামী কর্মী বলে পরিচিত বেশ ক’জন ফাঁসীর আসামীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।মুক্তি প্রাপ্ত ওই দলীয় কর্মীদের মন্ত্রী মহোদয় ফুলের মালা দিয়ে সম্বর্ধনা দিয়েছেন। তিনি ক্ষমা করতে পারেন বলেই খুঁজে বেছে ফাঁসীর আসামীকেই ক্ষমা করলেন। এমনি একটি রাস্ট্রে সত্যকথা লেখার জন্যে মাহমুদুর রহমান জেলের সাজা ভোগ করছেন।

আমার দেশ এ প্রকাশিত ১৪/০৯/১০

Read Full Post »