Feeds:
Posts
Comments

Archive for April, 2011


অতি আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও ভিন দেশ জোর করে দখল করার যুগে এখনও কোন কোন দেশে মানুষকে মানুষ মনে করা হয়না। কোথাও তারা দাস বা কোথাও আবার হরিজন অচ্যুত হিসাবে পরিচিত। আমাদের দেশ মুসলমানের দেশ বলে দাস ব্যবস্থা ধর্মীয় ভাবে স্বীকৃত নয়। রাস্ট্রও কাগজে কলমে মানুষকে দাস মনে করে না। কিন্তু এখনও অভাব অনটন দারিদ্র ও অশিক্ষার কারনে বহু মানুষ দাসের মতো জীবন যাপন করেন। পাকিস্তানের ২৩ বছর আর বাংলাদেশের ৪০ বছরেও রাস্ট্র গরীব শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিস্ঠা করতে পারেনি। ১৯৭০ সালে এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে অন্ধের মতো ভোট দিয়েছে পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করার জন্যে। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র ও অশিক্ষার কারণে  একনও দাসের জীবন যাপন করছে।বাংলাদেশে  এই শোষণ তীব্র ভাবে শুরু হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও বৃটিশ শাসনের শুরু থেকে। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লেই জানতে পারবেন এই শোষণের তীব্রতা কত বেশী ছিল। আমাদের সন্তানরা যারা ইতিহাস পড়েনা  তারা বিশ্বাস করেনা এক সময় এই দেশটা একটা ধনী দেশ ছিল। বৃটেনের যুবকরা আসতো ঢাকায় চাকুরী করার জন্যে। ১৯০ বছরে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশটি দারিদ্রের শেষ সীমায় নেমে আসে। ইংরেজ আমলে হিন্দু জমিদারদের  শোষন ছিল মুসলমানদের উপর অবর্ণনীয়। ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করে শেরে বাংলা বাংলার মুসলমানদের রক্ষা করেন।

পূর্ণাংগ জীবন ধর্ম ইসলাম জগতে এসেছে সকল শোষণের অবসান ঘটানের জন্যে। ইসলাম জগতে এসেছে সকল মানুষকে সম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে। ইসলাম যখন বললো জগতের সকল মানুষ এক। কালো ধলো ধনী দরিদ্র আশরাফ আতরাফ আরব আজমী সমাজের কায়েমী স্বার্থবাদীদের সৃষ্টি। ইসলামের আগমনের সময় আরব যেমন অন্ধকারে ছিল তেমনি ইউরোপ ছিল বর্বর যুগে। সেখানে মানুষের কোন মর্যাদাই ছিলনা। হাতে গোণা কিছু শক্তিশালী মানুষ বাকী সব মানুষকে দাসে পরিণত করে রেখেছিল। শ্রমের মর্যাদা বা শ্রমিকের ন্যায্য মুজুরী বা পারিশ্রমিকের কথা ইউরোপ  ভাবতেও পারেনি। তাহলে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শ্রমজীবী মানুষের এই করুন অবস্থা কেন? বর্তমানে বাংলাদেশ পশ্চিমা চিন্তাধারা থেকে উত্‍সারিত শ্রম আইন দ্বারা পরিচালিত। রাস্ট্রের কোন আইনেই নৈতিকতা নাই। প্রচলিত আইনের অধীনে থেকেই মালিকরা শ্রমিকদের শোষন করে। ১৯০ বছরের বৃটিশ শাসনের ফলে তাদেরই আইন এখনও জগদ্দল পাথরের মতো দেশ ও জনগণের বুকের উপর চেপে বসে আছে। ওই আইনই স্বাধীন বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে জারী রয়েছে। আমাদের রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতারা কখনই ভাবতে পারেনি দেড় হাজার বছরের পুরোণো ইসলাম  শ্রমিক কৃষক সহ সকল মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্যে কি ব্যবস্থা রেখেছে। আমরা ১লা মে পালন করি আমেরিকার শিকাগো শহরে গুলি করে শ্রমিক হত্যার স্মরণে ও প্রতিবাদে। পরে ওই দিনটির ওয়ারিশয়ানা নিয়ে নেয় রাশিয়া সহ এক সময়ের সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট দেশগুলো। আমেরিকা এখন এই দিনটি পালন করেনা। ওইদিন আমেরিকার শ্রমিকরা কাজ করে। এই দিনে আমেরিকায় কোন ছুটি নেই। আমরা ছুটি ভোগ করি আর লাল সালু  পরে মিছিল করি। বিগত ৬৩ বছরে শ্রমিকদের মুজরী একটাকা থেকে একশ টাকা বা  দুই টাকা থেকে দুইশ’ টাকা হয়েছে।  নারী  শ্রমিকদের অবস্থার এখনও তেমন পরিবর্তন হয়নি। ভাল মুজরীর জন্যে আমরা আমাদের শ্রমিকদের বিদেশ পাঠাচ্ছি এবং তাদের পাঠানো বিদেশী মুদ্রা নিয়ে বাহাদুরী করি। সত্যি কথা বলতে কি দেশটাকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে কৃষক আর শ্রমিকরা। অথচ রাস্ট্র তাদের জন্যে কখনই তেমন কিছু করতে পারেনি। যারা বিদেশে শ্রমিক পাঠায় তারা হয়ে গেল ধনী। আর শ্রমিকদের দারিদ্র কখনই ঘুচলোনা। ২০ বছরে পোষাক শিল্পের মালিকরা আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তাদের সবাই এখন মার্সিডিজ গাড়ি চালায়। পরিবার পরিজন নিয়ে বছরের কয়েক মাস বিদেশে থাকে। তাদের সন্তানেরা বিদেশে লেখাপড়া করে। অপরদিকে দেশের জীবনী শক্তি শ্রমিক ও কৃষকরা মৌলিক সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিগত ২০ বা ২৫ বছরে এ দেশে তিনটি গোষ্ঠি( জমির ব্যবসায়ী, শ্রমিক ব্যবসায়ী ও পোষাক ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সরকার উলংগ ভাবে এদের সমর্থন দিয়েছে। এরা কেউই  সঠিক আয়কর ও শুল্ক দেন না। এর কারণ আমাদের জীবনে নৈতিকতার কোন স্থান নেই। না রা্স্ট্রের জীবনে, না সরকারের জীবনে। ফলে সরকারী  কর্তা  কর্মচারী কারোর জীবনে নৈতিকতা নেই। ঘুষখোর দূর্ণীতিবাজদের এখন কেউ ঘৃণার চোখে দেখেনা। বাপ ছেলের কাছে জানতে চায়না সে অত টাকা কোথায় পায়। স্ত্রী স্বামীর কাছে জানতে চায়না তার অত বেশী টাকার উত্‍স কি? ছেলে মাস্তানী করে বাবা মা জেনেও চুপ করে থাকে। মেয়ে রাত দুপুরে বাড়ি ফিরে  কেন মা বাপ জানতে চায়না। ২০ কামরার বাড়িতে বাসিন্দারা কে কি করছে তা জানার জন্যে পরিবারের কর্তার হাতে কোন সময় নেই। ফলে নিচের তলায় মেয়ে নীহত হলোও উপরতলায় মা বাপ টের পায়না। কলেজের ছাত্র ছেলে রাত দশটায় বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সাথে ডিনার করতে  চাইলে মা বাপ বারণ করেনা।  হয়তা সারা রাতই ছেলে আর বাড়ি ফিরেনা। সেই যে গেল ছেলে আর কোনদিনও ফিরলোনা। বন্ধুরা হয়ত তাকে মেরে ফেলেছে। জানিনা, শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের মুজরীর কথা বলতে গিয়ে প্রসংগ থেকে দূরে চলে গিয়েছি কিনা। বলছি এ কারণে যে, নৈতিকতার বাইরে অর্জিত যেকোন বিত্ত সংসারে অশান্তি ও অনাচার ডেকে আনে। এরা  সম্পদের পাহাড়  গড়ে  শ্রমিক ঠকিয়ে, সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এসব অনাচার ব্যভিচারের সাথে সরকার জড়িত থাকে। এইতো দেখুন না শেয়ার বাজারের কেলেংকারীর গড ফাদারদের নাম সরকার প্রকাশ করতে চায়না। কারণ, হয়ত গড ফাদারদের সাথে সরকারের বন্ধুত্ব রয়েছে।  পবিত্র কালামে পাকে কারুনের ধনী হওয়ার কা্হিনী বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র ইমানদার মুসলমানদের  বুঝাবার জন্যে। ধনী থেকে মানুষ গরীব হয়,আবার গরীব থেকে ধনী হয়। বাংলাদেশ এর বড় নজীর । আমরা নিজেরাই এক জীবনে এসব দেখেছি এবং দেখছি। ৭০ সালে যিনি  সওদাগরী দোকানে কর্মচারী ছিলেন তিনি এখন ব্যান্কের চেয়ারম্যান। ব্যান্কের সহযোগিতায় গুদামের মাল বিক্রি করে যিনি ধনী হয়েছেন তিনিও এখন ব্যান্কের মালিক। অজানা এক  সাপ্তাহিক কাগজের মালিক এখন ব্যান্ক ও বীমা কোম্পানীর মালিক। এরা হচ্ছে পবিত্র কোরাণে বর্ণিত কারুণের কাহিনীর মতো। কারুন একেবারে দরিদ্র থেকে আল্লাহপাকের রহমতে ও নবী মুসার(আ) দোয়ায় ধনী হয়ে নিজের অতীত ভুলে যায়। এমন কি কারুণ তার সম্পদের জাকাত দিতেও ভুলে যায়। আমাদের দেশেও এমন বহু কারুণ আছে।

কারখানা বা কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করার জন্যে অনেক সংগঠন তৈরী হয়েছে। গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলার জন্যে তেমন শক্তিশালী সংগঠন এখনও দেখা যাচ্ছেনা। আমরা প্রায়ই গৃহ শ্রমিকের উপর নির্যাতনের খবর পত্রিকায় দেখতে পাই। এইতো ক’দিন আগে এক মেজর সাহেবের বাসার কাজের মেয়েকে গৃহকত্রী  গরম খুন্তি দিয়ে সারা পিঠ ঝলসে দিয়েছে। কথায় লথায় বাড়ির কর্তা বা কত্রী গৃহ শ্রমিদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। এরাতো প্রায় সবাই মুসলমান। এদের মসজিদেও দেখা যায়। তাহলে গৃহকর্মীদের উপর এমন অত্যাচার হচ্ছে কেন? জগতে ইসলাম আসার প্রায় দেড় হাজার পরেও যদি মুসলমান দেশ ও সমাজে শ্রমিকরা নির্যাতিত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে বাংলাদেশ সহ সেসব দেশে ইসলামী বিধান মেনে চলার মতো মুসলমান নেই। ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে। মালিক শ্রমিকের ভিতর মর্যাদার দিক থেকে কেউ ছোট কেউ বড় নয়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে শ্রম নির্ভর করেই সৃস্টি করেছেন। আল্লাহর রাসুল(সা) নিজেও পরিশ্রম করতেন এবং শ্রম বিনিয়োগ করে জীবিকা নর্বাহ করার জন্যে মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি বলেছেন,   ‘ কয়েক ফিরাত মজুরীর বিনিময়ে আমি মক্কাবাসীর মেষ চরাতাম’। নির্ধারিত মজুরীর বিনিময়ে তিনি এক ইহুদীর কূপ থেকে পানি তুলে দিতেন। আল্লাহর রাসুল(আ) আরও বলেন, ‘ হজরত আদম(আ) ছিলেন একজন কৃষক, হজরত দাউদ (আ) ছিলেন একজন কর্মকার,  নুহ নবী ছিলেন একজন  কাঠমিস্ত্রী,  ইদ্রিস নবী ছিলেন একজন দর্জি  এবং মুসা নবী  ছাগল চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সোজা কথায় বলতে হয় আল্লাহপাক চান সব মানুষই পরিশ্রম করে সত্‍পথে জীবিকা অর্জন করুক। তাই তিনি শ্রমের মর্যাদাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে। পবিত্র কোরাণের সুরা বালাদে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর করে সৃস্টি করেছি। সুরা জুমআতে বলেছেন, নামাজ আদায়ের পরেই তোমরা কাজের উদ্দেশ্যে ছুটে যাও। আল্লাহর রাসুল(সা) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকরা তোমাদের ভাই। যে হাতে কঠিন পরিশ্রমের দাগ রয়েছে  সেই হাত চুম্বনের উপযুক্ত। শ্রমের মাধ্যমে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু। শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই তার পারিশ্রমিক শোধ করো। তোমরা যা খাবে তোমাদের অধীনস্থদেরও তা খেতে দাও। তোমরা যা পরো তাদেরও তা পরতে দাও। শ্রমিকের সামর্থ ও ক্ষমতার বাইরে কোন কাজ আদায় করিওনা। এতে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। যে ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে তার ন্যায্য মজুরী শোধ করেনি কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। ইসলামে শ্রমিক কর্মচারীর উপর যেকোন ধরনের জুলুম নিষিদ্ধ। আল্লাহপাক  ঘোষণা করেছেন, যারা মানুষের উপর জুলুম করে সেই সব জুলুমবাজ অচিরেই তাদের পরিনতি জানতে পারবে।

পবিত্র আল কোরাণের সুরা কাসাসে আপনারা পড়েছেন, হজরত শোয়ায়েব(আ) হজরত মুসাকে(আ) বলছেন, ‘আমি তোমাকে কস্ট দিতে চাইনা। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।’ হজরত মুসাকে(আ) কাজে নিয়োগের সময় হজরত শোয়ায়েব(আ) একথা গুলো বলেছেন। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম,শ্রমিক বা কর্মচারীর সাথে কি রকম ব্যবহার করতে হবে। মালিক শ্রমিকের সম্পর্কের বিষয়টা এখানে সুস্পস্ট হয়ে গেছে। আল্লাহর নির্দেশ হলো শ্রমিকের সাথে সহৃদয়তার সাথে ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহর  রাসুল(সা) ঘোষণা দিয়েছেন, মজুর ও চাকরের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্বের লক্ষ্মণ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা) দীর্ঘ দশ বছর হুজুরে পাকের খেদমত করেছেন, ছায়ার মতো তাঁর পাশ ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্য আল্লাহর রাসুল(সা) কখনই তাঁর(আনাস) কৈফিয়ত তলব করেন নি বা  তিরস্কার করেন নি। আল্লাহর রাসুল(সা) আরও বলেছেন, মজুরী পরিশোধে টালবাহানা করা জুলুম। শ্রমিক মালিকের মধ্যে নির্ধারিত চুক্তি সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করবে। তোমাদের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।( সুরা বনি ঈসরাইল) আপরদিকে শ্রমিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে  চুক্তি মোতাবেক যিম্মাদারী ও আমানতদারী বিশ্বস্ততার সাথে পালন করা। সুরা কাসাসে আল্লাহপাক বলেন, শ্রমিক হিসাবে সেই ব্যক্তি উত্তম যে স্বাস্থ্যবান ও বিশ্বস্ত। সম্পদের মুনাফায় বা লভ্যাংশে শ্রমিকের হক রয়েছে।

বৃদ্ধ বয়সে ও অসুস্থতার সময় ভাতা লাভ করা শ্রমিকের মীলিক অধিকার। কারণ শ্রমই হলো একজন শ্রমিকের পুঁজি। বৃস্ষ হলে বা অসুস্থ হলে তাঁর বেঁচে থাকার আর কোন পুঁজিই থাকেনা। তাই বৃদ্ধ  পংগু  অসুস্থ  অসহায়  বিধবা ও দূর্বল লোকদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব  রাস্ট্রের। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেন, কেউ মারা গেলে তাঁর রেখে যাওয়া মালের মালিক হবেন তাঁর  ওয়ারিশ গণ। এবং তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব সরকারের। শ্রমিক মালিকের অধিকার নিয়ে আরও অনেক হাদিস রয়েছে। সব এখানে উল্লেখ করা গেলনা। এবার আপনারাই বলুন বিশ্বের কোথাও এই নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা। পশ্চিমের উন্নত দেশের দাবীদাররাতো মানবতা মানবাধিকার নিয়ে কত কথা বলে। তারা কি ইসলামে বর্ণিত শ্রমিক অধিকার ও সম্মান বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? না পারেনি। কারন পশ্চিম বলুন আর পূর্বই বলুন কোথাও শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শ্রমিকরা এখনও নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। মুসলমান দেশ গুলোতে শ্রমিকের অবস্থা খুবই করুণ। এসব দেশে  শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী ও মানবিক মর্যাদা একেবারেই পায়না। আমাদের বাংলাদেশে মালিকরা শুধু শ্রমিক নির্যাতন করেনা , হত্যাও করে। হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। এসেশের শ্রমিক নেতাদের কাছে লাল ঝান্ডাই প্রিয়। কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রী নেতারা এ দেশের শ্রমিকদের নেতা। যারা এখন ধনীদের পকেটে ঘুমায়। দামী দামী গাড়িতে চলাফেরা করে। তারা অজ্ঞতার কারণে ইসলামের শ্রম আইন সম্পর্কে কিছুই জানেনা। তাঁদের কাছে ইসলাম প্রগতিশীল কোন ব্যবস্থা নয়। ইসলামকে তাঁরা রক্ষণশীল পিছিয়ে পড়া মতবাদ মনে করে। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোও বাংলাদেশে যথাযত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ইসলামের শ্রমনীতি নৈতিকতার ভিত্তিতে রচিত। স্বয়ং আল্লাহপাক এবং তাঁর  রাসুল এই শ্রমনীতি রচনা করেছেন। এই নীতিতে প্রথমে শ্রমের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। শ্রমিককে মানুষের মর্যাদা দান করা হয়েছে। বলা হয়েছে মালিক শ্রমিক উভয়েই সকল দিক থেকে সম মর্যাদার অধিকারী। শ্রম ও শ্রমিক না থাকলে শুধু পুঁজি জগতের উন্নতি সাধন করতে পারবেনা। মালিককে বা পুঁজির মালিককে ভাবতে হবে মানুষ হিসাবে উভয়েই ভাই। কেউ কারো উপরে বা নিচে নয়। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন চলতে পারেনা। বাংলাদেশে এখন সর্বত্রই ন্যায়নীতি ও নৈতিকতার অভাব। সরকার মালিক ও শ্রমিক কারোর ভিতরেই নৈতিকতা নেই। তাই অর্থনীতি ও উত্‍পাদনে এত অশান্তি ও সংঘর্ষ। মনে রাখতে হবে একজন সত্‍ মানুষের  মর্যাদা একজন অসত্‍ রাজা বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অনেক উপরে। এই নীতিই হচ্ছে ইসলামে শ্রমের নীতি।( নয়া দিগন্ত , ৬ মে ২০১১)

লেখক: কবি  সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


সংবিধানে যে কোন দেশের জনগণের আশা আকাংখা ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাজ হলো জনগণের ইচ্ছা ও আকাংখা মোতাবেক সংবিধান রচনা করা। ৪২ বছরে আমাদের সংবিধানের দেহের  উপর অনেক অপারেশন চালানো হয়েছে।  জনগণের ইচ্ছা বা আকাংখা ও ইসলামী চেতনার প্রতি কোন রকম সম্মান না দিয়ে নেতা বা দলের ইচ্ছা মতো প্রথম খুব বড় ধরনের  কাটা ছেঁড়া শুরু হয় বংগবন্ধুর আমলে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। মেজরিটি বা দুই তৃতীয়াংশের জোরে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সংবিধানের মূল চরিত্র বদলে ফেলা হয়। চালু করা হয় এক দলীয় শাসন। সরকারী কাগজ ছাড়া সব কাগজ বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারী কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ দেয়া হয়। দেশের রাস্ট্রপতি হিসাবে বংগবন্ধুকে দেয়া হয় সীমাহীন ক্ষমতা। বলা হলোনা তিনি কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন। বলা হলোনা ওই পদে কোনদিন নির্বাচন হবে কিনা। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা জারীর প্রতিবাদে মাত্র দু’ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁরা হলেন জেনারেল ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। হঠা্ত্‍ করে পুরো দেশটাকে ঢেকে দিল কালো মেঘের ছায়া। কারো মুখে কোন কথা নেই। তবুও চাটুকার তাবেদার ও চামচারা প্রতিদিন মিছিল নের করে বংগবন্ধুর গলায় ফুলের মালা দিতে লাগলো। বংগবন্ধু ডাক দিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। সাংবাদিকরা শ্লোগান দিলো, ‘ আমরা বংগবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কলম সৈনিক। গলায় ফেস্টুন লাগিয়ে মিছিল বংগবন্ধুর কাছে  গিয়েছে।

এক দলীয়  ও এক নেতার শাসন কায়েম করার  পিছনে উসকানী ছিল সিপিবি ও রাশিয়ার। চারিদিকে দুর্ণীতি অবিচার ব্যভিচার দেখে বংবন্ধু হয়ত ভেবেছিলেন এক দলীয় শাসন কায়েম করে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসবেন। গণতন্ত্রকেও তখন তাঁর সহ্য হচ্ছিলোনা। তাই তিনি ভিন্ন মত দলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ভেবেছিলেন এক দল এক পথ ও মত না হলে তিনি জনগণের জন্যে কাজ করতে পারবেন না। খাদ্যদ্রব্যের জন্যে মানুষের লাইন ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ভারত থেকে আমদানী করা মেয়েদের শাড়ীতে আব্রু ঢাকা যেতোনা। আমরা সাংবাদিকরা টিসিবি থেকে রেশনে শার্টের কাপড় সংগ্রহ করেছি। শিশু খাদ্য পাওয়াই যেতনা। আওয়ামী  স্বেচ্ছা সেবক লীগ  শিশুখাদ্য বিতরন সুপারভাইজ করতো। সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে সে সময়ের দুর্ভিক্ষ। লাখ লাখ মানুষ খাদ্য না পেয়ে মারা গেছে। ঢাকার রাস্তায় ও আমরা মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় মানুষের লাশ বংগবন্ধু নিজেও দেখেছেন। কিন্তু বংগবন্ধু গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারকে হত্যা করে দেশে শান্তি ও মানুষের কল্যাণ আনতে চেয়েছিলেন।

মুল সংবিধান তৈরী করার সময়  আওয়ামী লীগ ও বংগবন্ধুর সরকার জনগণের কথা খুব একটা ভেবেছেন বলে মনে হয়না। তখন হয়ত হাতে সময় ছিলনা। তাই তাড়াহুড়ো করে ৭২এর সংবিধান তৈরী করেছেন। যদি ভাবতেন তাহলে তাঁরা জাতিকে সেকুলার বানাবার চেস্টা করতেন না। সেকুলার কথাটা পশ্চিমাদের একটা প্রোপাগান্ডা তারা নিজেরা ধর্র্মহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেদিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্যে উঠ পড়ে লেগেছে।দেশের নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান একথাটা  আওয়ামী লীগ মনেই রাখেননি। মুসলমানের দেশ হিসাবে পরিচিতি  লাভ করার জন্যে বংগবন্ধু  পাকিস্তানের লাহোর গিয়েছিলেন ওআইসির কানফারেন্সে। তাঁকে নেয়ার জন্যে বিশেষ বিমান এসেছিলেন আলজিরীয় নেতারা। ভারত বংগবন্ধুর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি। বাংলাদেশ মুসলমান দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করুক এটা ভারত কখনই চায়নি। ওআইসি সম্মেলনে না যাওয়ার জন্যে ড: কামালও নাকি  বংগবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন বলে শুনেছি। ভারত তখন একবার ওআিসিতে অবজারভার স্টেটাস লাভের চেস্টা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল ভারতে  ২৫ ভাগ মুসলমান রয়েছ । আমাদের দেশে সেকুলার মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা। তারা আসলে মোনাফেক। তাদের নাম মুসলমানদের মতো। তারা ওই সুযোগে মুসলমানদের মাঝে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাদের  ভারতীয় ও পশ্চিমা প্রভুরা খুবই শক্তিশালী। তাদের হাতে শক্তিশালী মিডিয়া আছে। দেশীয় মিডিয়া গুলোকেও তারা সাহায্য করে থাকে। অনেকে ভারত থেকে মোটা অংকের সাংবাদিক(?) এনে এখানে কাজ দেয়।আমাদের সম্পাদকদের  ৯০ ভাগ সেকুলার ভাব ধরে থাকেন। অনেকেই আবার পশ্চিমা এনজিওদের হয়ে কাজ করেন। নামকরা আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ অনেকেই সংবিধানকে সেকুলার বানাবার জন্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সেকুলার সাহেবদের  ছেলে মেয়েদের নাম দেখলে বুঝবেন না ওরা কারা। কারো নাম সিমান্ত  খোকন, কারো নাম কৃষ্ণা রহমান। এ ব্যাপারে অবশ্য জ্ঞানীজনদের যুক্তি আছে। আরবী নাম হলেই মুসলমান হতে হবে এমন কথা নেই। আরবী নামে ইহুদী খৃস্টান ও হতে পারে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র পূনরায় প্রতিষ্ঠা করেন। বহু মত প্রকাশের জন্যে নিষিদ্ধ কাগজ গুলো আবার চালু করেন। ৭৯ সালে বহু দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি জাতীয় সংসদের নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে। ওই সংসদেই এক দলীয় ব্যবস্থা রহিত/বাতিলের  জন্যে পঞ্চম সংশোধনী পাশ করা হয় এবং সেটা ছিল সকল দল ও মতের ভিত্তিতে। ওই সংশোধনীর ফলেই বাকশাল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগ পূর্বাস্থায় ফিরে আসে। জিয়া সাহেবের আমলেই সংবিধানে বিসমিল্লাহীর রা্হমানের রাহীম , আল্লাহর উপর আস্থা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের বিধান সংযোজিত হয়। এতে কোন দলের আপত্তি ছিলনা। এবং কোন দলের ক্ষতিও হয়নি। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদ সংবিধানে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজিত করেন। এরশাদ সাহেবের ক্ষমতায় আগমনকে আওয়ামী লীগ অভিনন্দন জানিয়েছিল। এরশাদ নিজেই তখন বলেছিলেন তিনি ভারতের সাথে আলাপ করেই ক্ষমতা দখল করেছেন। গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর বিএনপি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে।যা আওয়ামী লীগ ও আমাদের মিডিয়া আশা করতে পারেনি। ওই নতুন নির্বাচিত সংসদেই প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে আওয়ামী লীগও ষোলয়ানা সমর্থন দান করে। ওই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট বা রাস্ট্রপতির যা ক্ষমতা ছিল তা পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্পন করা হয়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কেউ বিষয়টা নিয়ে ভাবেনি। ফলে বর্তমানে রাস্ট্রপতির কাছে কোন ক্ষমতা নেই। সাবেক এক রাস্ট্রপতি বলেছিলেন, কবর জেয়ারত ছাড়া রাস্ট্রপতির আর কোন কাজ নেই। বর্তমানে রাস্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দল ও সংসদের আজ্ঞাবহ। প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া রাস্ট্রপতি কিছুই করতে পারেন না। রাস্ট্রপতির বা প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির আমলে সংসদ যেমন ঠুটো জগন্নাথ ছিল এখনও তাই আছে। ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যে নতুন সংশোধণীর কথা অনেকেই বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীরা বোধ হয় এটা চান না। এতে দলগুলোর মানসিকতা সুস্পস্ট হয়ে উঠেছে। সংবিধানের এসব বিষয় নিয়ে জট পাকিয়েছেন বংগবন্ধু স্বয়ং। মুক্তিযুদ্ধ কালে বংগবন্ধু ছিলেন অনুপস্থিত রাস্ট্রপতি। সৈয়দ নজরুল ভারপ্রাপ্ত রাস্ট্রপতি। তাজউদ্দিন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১০ই জানুয়ারী,যেদিন বংগবন্ধু দেশে ফিরে এলেন সেদিন তিনি ছিলেন সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের রাস্ট্রপতি। ক’দিন পরেই তিনি হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ রাস্ট্রপতির পদে তিনি আরাম পাচ্ছিলেন না। তাজউদ্দিন হলেন অর্থমন্ত্রী আর সৈয়দ নজরুল হলেন শিল্প মন্ত্রী । খোন্দকার মোসতাক হতে চেয়েছিলে পররাস্ট্র মন্ত্রী। কিন্তু বংবন্ধু  পররাস্ট্রমন্ত্রী করলেন ড: কামালকে। আওয়ামী রাজনীতির সাথে ড: কামালের তেমন সম্পর্ক ছিলনা। কিন্তু বংগবন্ধু তাঁকে পছন্দ করতেন। ৭১ এ ড: কামাল নাকি করাচীতে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে দু’জনই এক সাথে করাচী গিয়েছিলেন। বংগবন্ধুর স্থান হলো কারাগারে আর ড: কামালের স্থান হলো শ্বশুর বাড়িতে। কেন এমন হলো তা আজও খোলাসা হয়নি। এক দলীয় ও গণতান্ত্রিক একনায়কের শাসন জারী হওয়ার পর বংগবন্ধু আবার রাস্ট্রপতি হলেন। এবার রাস্ট্রের সব ক্ষমতা তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। চতুর্থ সংশোধনী বাতিলের পরেও রাস্ট্রপতির ক্ষমতা কমেনি। যা জিয়া সাহেব ও জেনারেল এরশাদ ভোগ করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীরা ভোগ করছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার বললে মনে হয় সংসদ সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু তা নয়। কারণ , এখন প্রধানমন্ত্রীরা চতুর্থ সংশোধনীর রাস্ট্রপতির উপর অর্পিত এক নায়কের ক্ষমতা ভোগ ও ব্যবহার করেন। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ভয় করেন। কারণ  সংসদ প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশেই চলে। কাগজে কলমে হয়ত এটা সার্বভৌম। যদিও মুসলমানদের কাছে জগতের কোন কিছুই সার্বভৌম নয়। একমাত্র আল্লাহই সার্বভৌম , যিনি আমাদের স্রস্টা ও প্রতিপালক। বাংলাদেশ ইসলামী আইনে পরিচালিত দেশ নয়। এমন কি ষোলয়ানা মুসলমানের দেশ নয়। এখানে নামের মুসলমান হয়ত ৯০ ভাগ। কোরাণ হাদিস ও ইসলামী আইন কানুন বুঝেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা। দেশের সাধারন মানুষ মুসলমান হিসাবে নিজের পরিচয়ে হয়ত গৌরব বোধ করেন। এদের বেশীর ভাগ মানুষই নিরক্ষর দরিদ্র। ভোটের সময় ভোট দেয়া ছাড়া তাদের আর কোন দায়িত্ব নেই। রাস্ট্রের কোন ব্যাপারে তাদের আর কোন মত নেই বা তাদের কাছে মত চাওয়াও হয়না। ফলে ৯০ ভাগ নগরিক মুসলমান হলেও রাস্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় মুসলমান বা ইসলামের কোন ছাপ নেই। বরং মুসলমানদের সদা সর্বদা গালাগাল দেয়ার জন্যে সবাই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এইতো কয়েকদিন আগে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সংবিধানের মূল চেতনা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোন পরিবর্তন আনা যাবেনা। বেশ কিছুদিন আগে স্বর্গীয় কবীর চৌধুরী সাহেব বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের চাইতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। প্রশ্ন উঠেছে কোন চেতনা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন বা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন বা শহীদ হয়েছেন তাদের বেশীর ভাগই হচ্ছেন কৃষক শ্রমিক ও তাদের সন্তানেরা।  ভারত থেকে বা মুক্তাঞ্চল থেকে ফিরে এসে তারা যার যার কাজে ফিরে গেছেন। তারা কেউই মুক্তিযোদ্ধার সনদ  সার্টিফিকেট বা লাইসেন্সের জন্যে অপেক্ষা করেননি। আমিতো দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেননি বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন এমন অনেকেই সনদ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। রেডিও টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ এমন বহু সাংবাদিককে দেখেছি। ৭২ এর সংবিধান যাঁরা তৈরী করেছেন তাঁরা সবাই আমাদের মুরুব্বী ও অভিভাবক। তাঁদের অবশ্যই আমরা সম্মান করি। প্রধান বিচারপতিকে আমি সম্মান করি। ব্যক্তিগত ভাবে খায়রুল হক সাহেবকেও সম্মান করি। কিন্তু তিনি এবং কবীর চৌধুরী সাহেবদের চেতনা বিষয়ক জটিলতাটা বুঝতে পারছিনা। আমার মনে হয় বা আমার ধারণা জটিলতাটা হচ্ছে  মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৭১ সালে আমরা যোলয়ানা বাংগালী হয়ে গেছি। বাংগালীয়ানা আমাদের সার্বজনীন পরিচয়। ইসলাম এবং মুসলমানিত্ব আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচয়। জনাব খায়রুল হক সাহেব  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে হয়ত বুঝাতে চেয়েছেন আমাদের জাতীয় পরিচয় বাংগালী। আমাদের বাংলাদেশী হওয়া যাবেনা বা চলবেনা। আমাদের পূর্ব পুরুষ বা মুরুব্বীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে খায়রুল হক সাহেবের মতো কিছু ভেবেছিলেন বলে মনে হয়না। বরং দেখেছি, লাখ লাখ মানুষ রোজা রেখে নামাজ পড়ে বংগবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার জন্যে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছেন।

৭২ এর সংবিধানে বিসমিল্লাহ, সামাজিক ন্যায় বিচার, আল্লাহর উপর আস্থা ও রাস্ট্রধর্ম ইসলাম ছিলনা। তাহলে এসব রাখার প্রয়োজন কি? শুধু ভোটের কথা চিন্তা করে কেউ যদি ধর্মের বিষয়টা সংবিধানে রাখতে চান তাহলে বলতে হবে তাঁরা শঠ অবিশ্বাসী ও মোনাফেক। আমেরিকা  ইউরোপের নেতারা বাইবেলে হাত রেখে শপথ গ্রহন করেন। পশ্চিমা জগতের নেতারা এক ধরণের মোনাফেক। তাঁরা বাইবেল স্পর্শ করে ,কিন্তু মানেনা।আর আমাদের দেশে সংবিধানের নামে শপথ করি। এমন কি বৃটেনে প্রটেস্টান্ট না হলে কেউ রাজনীতি করতে পারেনা। রাজ পরিবারের ধর্ম হলো প্রটেস্টন্ট খৃস্চিয়ানিটি। ব্লেয়ার রাজনীতি করার জন্যে নিজ  ক্যাথলিক ধর্ম ত্যাগ করে প্রটেস্টান্ট হয়েছিলেন। এখন আবার পুরোণো ধর্মে ফিরে গেছেন। আমেরিকায় ওবামা কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ওবামা তাঁর জন্ম সনদ প্রকাশ করেছেন। যাঁরা এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন তাদের তিরস্কার করেছেন। কিছু আমেরিকান বলতে চাইছেন যে, ওবামা মুসলমান ছিলেন। তিনি নিজেকে খৃস্টান বলে পরিচয় দিয়ে মিথ্যা বলেছেন। ভারতে ব্রাহ্মণ না হলে সহজে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননা। এমন কি  ভারতীয় নেতারা সোনিয়া গান্ধীকে প্রধান হতে দেয়নি। ইংরেজরা চলে যাবার পর হিন্দু নেতারা চেয়েছিলেন ভারতে একটা  হিন্দু রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করার জন্যে। প্রয়োজন বোধে ভারতকে ভাগ করে হলেও। ইংরেজ আমলে নিস্পেষিত মুসলমানেরা অখন্ড ভারতে তাদের ন্যায্য হিস্যা চেয়েছিল। সেই হিস্যা দিতে হিন্দু নেতারা রাজী হন নি। ফলে পাকিস্তান রাস্ট্র প্রতিস্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের জন্যে আর হিন্দু রাস্ট্র ভারত প্রতিস্ঠিত হয়েছে  হিন্দুদের জন্যে। কাগজে কলমে ভারত অবশ্য একটি সেকুলার রাস্ট্র, যেখানে বছরে এক হাজার ছোট খাট  দাংগা হয় পরোক্ষ সরকারী সহযোগিতায়। বাংলাদেশে ধর্মীয় দাংগা হয়না বললেই চলে। ধর্মহীন বা তথাকথিত সেক্যুলার কিছু বুদ্ধিজীবীরা প্রায়ই সাম্প্রদায়িক দাংগার খবর পান। মাওলানা হাবিবুল্লাহ সাহেবের ভাতিজা শাহরিয়ার সাহেব বাংলাদেশে মাইনরিটি দলনের ভিডিও বানিয়ে পুরুষ্কার পান। তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা বাংলাদেশকে ধর্মহীন বানাবার জন্যে আন্তর্জাতিক কমিটি করেছেন।

মহাজোটের সদস্য হিসবে রয়েছে ইনু মেনন বড়ুয়ারা যাঁদের নির্বাচিত হওয়ার জন্যে কোন জন সমর্থন নেই। বড় দলের কাঁধে ভর দিয়ে তাঁদের চলতে হয় আর দিনরাত ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলতেই থাকেন। নিজেরা ভোট পাননা বলে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন এইসব নেতা। ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে সংবিধান কোন ধর্মগ্রন্থ নয়। তাই গ্রন্থে বিসমিল্লাহ থাকার দরকার নেই। এদেশে বিসমিল্লাহ বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৯০ ভাগ। সকল কাজেই তাদের বিসমিল্লাহ বলতে হয়। কিছুদিন আগেও বিচারপতি হাবিবুর রহমানের পরামর্শে আওয়ামী লীগ নেতারা বিসমিল্লাহ বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমন কি তাঁরা আল্লাহু আকবর বলাও ছেড়ে দিয়েছেন। বিচারপতি সাহেব কেন আওয়ামী লীগকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন একমাত্র তিনিই জানেন। এরপরে আওয়ামী নেত্রী হিজাব ও পুরো হাতার জামা  পরে জনগণকে জানাতে লাগলেন তিনি পাক্কা মুসলমান। এমন কি কয়েকজন আওয়ামী নেতা বলতে লাগলেন, তাদের নেত্রী নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং কোরাণ তেলাওয়াত করেন। ঠিক ওই সময়েই কিছু সেকুলার বুদ্ধিজীবী বলতে লাগলেন, মাইকে আজান দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ কোলকাতায় বা ভারতে মাইকে আজান দেয়া নিষিদ্ধ। এমন কি প্রকাশ্যে গরু জবাই করাও নিষিদ্ধ। ৪৭ সালের আগে বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় গরু জবাই নিষিদ্ধ ছিল। কারণ জমিদার ছিলেন হিন্দু। আমার এক সাংবাদিক বন্ধু  বলেছেন, ৬০ সালের আগে তাঁরা কোনদিন গরুর গোশত খাননি। ঢাকায় এসে প্রথম গরুর গোশত খেয়েছেন। এখনও ভারতের বহু এলায় মসজিদে তালা ঝুলছে। কারণ সেখানে এখন মুসলমান নেই, এক সময়ে ছিল। মোজাদ্দেদ আলফেসানীর মাজারে গিয়েছিলাম আমি। সেখানে একটি বড় মসজিদও আছে। হাতে গোণা কয়েকজন খাদেমকে দেখলাম। জানতে চাইলাম  মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ হয় কিনা। খাদেম সাহেব বললেন, শুক্রবারে জামাত হয়। দূর দূরান্ত থেকে নামাজী আসেন।  কতজন হয় হয়? তিনি বললেন, ৫০/৬০ জন হয়। আশে পাশে তেমন মুসলমান বসতি নেই। এক সময় মুসলমান বসতি ছিল এবং মুসলমান শাসক ছিলেন। চীন রাশিয়াতেও এই অবস্থা ছিল। এখন তারাও আস্তে আস্তে মসজিদ গুলোর তালা খুলে দিচ্ছেন। স্পেনে কি হয়েছে? এক সময় মুসলমান শাসক ছিল। মুসলমানদের দেশ ছিল। এখন সেখানে মসজিদ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা জানিনা।

প্রিয় পাঠক, আপনারাই  ভাবুন যাঁরা সেকুলার তাঁরা কি চান। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইনু মেননরা সেকুলারিজম বা ধর্মহীনতা চান। কারণ তাঁদের কাছে ধর্মের কোন দাম নেই। জনগণের বিশ্বাসের কোন দাম নেই। তাঁরা ভোটের সময় টুপি মাথায় দিয়ে জনসভা করেন। ভোটারদের কাছে ওয়াদা করেন, আমরা কোরাণ সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ ও আইন পাশ করবোনা। নির্বাচিত হওয়ার বলেন, আমরা সেকুলার, ধর্ম নিরপেক্ষ বা ধর্মহীন। রাস্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম ও ধর্মীয় শিক্ষা, মসজিদ নামাজ রোজা হজ্ব ব্যক্তিগত ব্যপার। এর সাথে রাস্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। নারীনীতি ও ফতোয়া ব্যাপারে সরকার মুসলমানদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। দিনরাত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর তাবেদাররা বলে বেড়াচ্ছেন নারীনীতিতে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নেই। আর অপরদিকে দেশের  ওলামা মাশায়েকরা বলছেন, নারীনীতিতে কোরাণ ও সুন্নাহ বিরোধী বহু ধারা আছে। এই অবস্থা কখনই হতোনা যদি ধর্মের ব্যাপারে আমাদের সংবিধানে সুস্পস্ট বিধান থাকতো। কিছু মানুষ, যাঁরা নিজেদের সেকুলার প্রগতিশীল ও সুশীল মনে করেন তাঁরা  বলছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোন কিছু সংবিধানে সংযোজন করা যাবেনা। আগেই বলেছি, চেতনা কি তাঁরা স্পস্ট করে কিছুই বলেন না।  ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনা বিশ্বাস আকীদা বিরোধী কোন কিছুই মানুষ গ্রহন করবেনা। সুরঞ্জিত বাবুর সংবিধান এ দেশের মুসলমানেরা গ্রহন করবেনা।
দেশে এখন নাস্তিক আর আস্তিকের লড়াই চলছে। সরকার নাস্তিক,ধর্মহীন ও তথাকথিত সেক্যুলারদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত ,আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো। এ কারণেই সরকার মৌলবাদ ও জংগীবাদ দমনের নামে বিদেশ থেকে অর্থ নিচ্ছে। সে অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনছে দেশের মুসলমানদের দমনের জন্যে। ৫ই মে গভীর রাতে হেফাজতকে ফ্ল্যাশ আউট করার ব্যাপারে ভারত ও আমেরিকার অনুমতি ছিল। বিগত চার বছরের অত্যাচারী ভুমিকার কারণে সরকার এখন আর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়না। ভারত ও পশ্চিমা দেশ গুলোর কাছে হাসিনার ওয়াদা,যদি তোমরা আমাকে ক্ষমতায় রাখো আমি বাংলাদেশকে একটি ইসলাম বিরোধী রাস্ট্রে পরিণত করবো। তাই বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে নাস্তিক আর আস্তিকের লড়াই। শ্লোগান হবে একটাই,দেশ বাঁচান,ইসলাম বাঁচান।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


আমরা বড়ই হতভাগা বাংলাদেশের মুসলমানেরা। যে দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান সে দেশের  সর্বোচ্চ আদালতে শুনানী চলছে ফতোয়া জারী থাকবে কি থাকবেনা। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? এইতো ক’দিন আগেই ফতোয়া বিষয়ে একটি লেখা নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়েছে। দেশ বিদেশের প্রচুর পাঠক ফোন আর মেইল করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাঠকরা আরও বলেছেন,তাঁরা আমার জন্যে দোয়া করছেন আমি যেন সুস্থ শরীরে থেকে মুসলমানদের খেদমতের আঞ্জাম দিতে পারি। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে আবার একই বিষয়ে লেখার জন্যে কীবোর্ডে হাত রেখেছি।হাতের কম্পনের কারণে  এখন কলম হাতে নিয়ে কাগজে লিখতে পারিনা। তবুও আল্লাহপাকের দরবারে কোটি কোটি শোকর যে তিনি আমার স্মৃতি ঠিক রেখেছেন এবং কম্পিউটার ব্যবহার করতে শিখিয়েছেন। তা না হলে কাউকে ডেকে ডিক্টেশন দিতে হতো। শুধু আবেগ আর মনের কস্টের কারণে আবার লিখতে বসেছি। আদালতে যুক্তি তর্ক চলছে ফতোয়া নিষিদ্ধকরণ নিয়ে। ক’বছর  আগে এক বিচারপতি বা একটি বেঞ্চ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে দেশে ফেতনা ফাসাদ সৃস্টির জন্যে শরীয়া আইনকে অস্বীকার বা অবজ্ঞা করে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে একটি রায় দিয়েছিলেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে তখন সারাদেশে আন্দোলন হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে  মামলা হয়। সেই মামলার শুনানী চলছে এখন। অতীব দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে আদালতে ফতোয়া নিয়ে বিচার চলছে সেই আদালত বৃটিশ রোমান ও লেটিন আইন দ্বারা পরিচালিত। সেখানে কোরাণ হাদিস বা শরীয়া আইনের আলেম বা পন্ডিতদের কোন স্থান নেই। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, ফতোয়ার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। এটা ব্যক্তিগত মতামত। গ্রামের মানুষ অজ্ঞতার কারণে ফতোয়া মানে। ব্যারিস্টার রফিক চলমান আদালত ও বিচার ব্যবস্থার আলোকে এ কথা বলেছেন। শরীয়তের আইন বা কোরাণ হাদিসে দৃষ্টিতে তাঁর কথার কোন দাম নেই। কারণ তিনি শরিয়া আইনের পন্ডিত বা ফকীহ নন। ড: জহির আরেক জন বিদেশী আইন বিশেষজ্ঞ বা পন্ডিত। তিনি বলেছেন, ফতোয়া কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি  বলেছেন, যে কেহ ফতোয়া দিতে পারে। কিন্তু কারো অধিকার হস্তক্ষেপ করে নয়। আমি বলবো ফতোয়া বিষয়ে কোন কথা বলার অধিকার ড: জহিরের নেই। কারণ তিনি এ ব্যাপারে গ্রামের সাধারন মানুষের মতোই অজ্ঞ। ফতোয়া নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার আদালতেরও নেই। কারণ এ আদালত কোরাণ হাদিসের আদালত নয়। আমাদের বিচারক ও আইনজীবীরা  কেউই ফকীহ নন। তাঁরা কেউই শরীয়া আইনের ব্যারিস্টার নন।

সম্মানিত অধ্যাপক অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ  হঠাত্ করে বলে বসলেন, পবিত্র কালামেপাকে আল্লাহতায়ালা নারী পুরুষকে সমতূল্য বলেছে। সে আলোকে নারীনীতি প্রণীত হলে যুগধর্ম পালিত হবে। যুগধর্ম বলতে সামাদ সাহেব কি বূঝাতে চেয়েছেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। যুগধর্ম সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনা নেই। নারীরা মানে মা বোন স্ত্রী ফুফু পিতা ভাই বা দাদার সম্পত্তিতে কি হিস্যা পান তা দিনের আলেকের মতো সুস্পস্ট। যুগধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমি মনে করি যুগধর্ম মানে যখন যা তা মেনে চলা। যেমন পশ্চিমারা এখন সমকামীতার আইন পাশ করছে যুগধর্মের দাবীতে। তাঁরা নবী ইসা(আ) সম্পর্কে নানা কথা বলে। লাস্ট টেম্পটেশন ছবি বানায় । এসব হচ্ছে তাদের যুগধর্ম। এর সাথে আল্লাহর নবী ইসার (আ) কোন সম্পর্ক নেই।যুগধর্ম মানে হচ্ছে ভ্রান্তি। সুতরাং সামাদ সাহেবের প্রেসক্রিপশন আমরা গ্রহণ করতে পারছিনা। এবনে সামাদ সাহেব পশ্চিমের সাথে খালেদা জিয়ার সুসম্পর্ক প্রতিস্ঠার কথাও বলেছেন। পশ্চিমারা ইসলাম পছন্দ করেনা সেকথাও বলেছেন। রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্যে বা আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সু সম্পর্ক রাখার জন্যে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন। সামাদ সাহেবের পরামর্শের সারকথা হলো  ইসলামী দলগুলোর সাথে বেশী বেশী উঠা বসা করার প্রয়োজন নেই। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মুসলমান স্বার্থ বিরোধী দলগুলো  এখনও ক্ষমতায় আসছে। তথাকথিত বাম ও সেকুলার দলগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে লেগে পড়েছে। আওয়ামী লীগ হাতে গোণা  ভোটার ও সমর্থন বিহীন ওই দলগুলোর পাল্লায় পড়েছে।

সরকারকে নিয়ে সত্যিই খুব চিন্তা হয়। চারিদিকে বিরুদ্ধবাদী বা বিরোধি শক্তি দেখছে। দেশের উন্নয়নের কথা ভুলে গিয়ে মামলা মোকদ্দমা নিয়ে শুরু থেকেই ব্যস্ত রয়েছে। বংগবন্ধুর অবস্থাও এ রকম হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি মনে করেছিলেন একদল করলে আর সব কাগজ বন্ধ করে দিলে তিনি শান্তিতে দেশ চালাতে পারবেন। সারা জীবন গনতন্ত্রের জন্যে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তিনি একদলীয় শাসন কায়েম করে একনায়ক হয়ে পড়েছিলেন। একদলীয় শাসনের  কু পরামর্শ দিয়েছিল তাঁকে সিবিপি ভারত ও রাশিয়া। বংগবন্ধু মারা যাওয়ার পর তারা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। অশেষ বেদন ও দু:খের কথা হলো তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর লাখ লাখ ভক্ত সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। দলের বড় বড় নেতারা  প্রায় সবাই খোন্দকার মোশতাকের সাথে কোলাকুলি করেছে। মঈন উদ্দিন আর ফখরুদ্দিনের সরকারের নির্বাচনে ২৬৩ সিট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন তিনিও একজন সিভিল ডিক্টেটর হয়ে উঠতে পারবেন। আদালতের রায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রভাবান্বিত করছেন অথবা প্রধানমন্ত্রী আদালতকে প্রভাবান্বিত করছেন। আদালতও সে্বচ্ছায় বা ইচ্ছায় নানা ধরনের রায় দিয়ে চলেছেন। নিজেরা উজ্জীবীত হয়ে বা নিজেরা আগ বাড়িয়ে অনেক ধরনের মামলা তৈরী করে চলেছেন, যার কোন প্রয়োজনই ছিলনা। গনতান্ত্রিক সরকারকে সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চলতে হয়। যে কোন বড়  ধরনের সংস্কার করতে হলে জাতীয় ঐক্যমতের প্রয়োজন ২৬৩ সিটের জোরে আওয়ামী লীগ সে কথা একেবারেই ভুলে গেছে। দীর্ঘ লড়াই করে বিদেশী শক্তি বৃটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায় করেও মুসলীম লীগ পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছে ১৯৫৪ সালে। মুসলীম লীগ এখন ইতিহাসের পাতায়। এর কারণ মুসলীম লীগ নেতাদের সাথে পূর্ব বংগ বা পূর্ব পাকিস্তানের সাধারন মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বংগবন্ধু  জানতেন ৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিস্ঠিত হলেও, বুদ্ধিজীবীরা বুক চেতিয়ে নিজেদের ভারতীয় বাংগালীদের মতো ভাবলেও সাধারন মানূষ মুসলমানই রয়ে গেছে। এদেশের মানুষকে মুসলমানিত্ব ছেড়ে দিয়ে  ভারতীয় পৌত্তলিক বাংগালী বানাবার জন্যে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের কিনে নিয়েছ। যদি তাই হতো তাহলে ৪৭ সালে দেশ ভাগের প্রয়োজন পড়তোনা। হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা ১৯০৫ সালে যে বংগদেশকে মা ডাকাডাকি করে কান্নাকাটি করেছে সেই বুদ্ধিজীবীরাই ৪৭ সালে মাকে কেটে দুই ভাগ করেছে। এখন স্বাধীন বাংলাদেশকে নিজেদের তাবে রাখার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। পশ্চিম বাংলাকে এখন সেখানকার মিডিয়া দিনরাত বাংলাদেশ বলে বলে মুখের ফেনা বের করে ফেলছে। দিল্লী বাংলাদেশকে তাবে রাখার জন্যে পশ্চিম বাংলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের ব্যবহার করছে। প্রণব বাবু এলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কাকু কাকু বলতে বলতে একেবারে গলে যান। প্রণব বাবু এ পর্যন্ত যতগুলো ওয়াদা করেছেন তার একটিও রক্ষা করেননি। ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে কি ধরনের ব্যবহার করে বা করছে তা জানার জন্যে আমাদের ব্যবসায়ীদের আলাপ করলেই জানা যায়।

প্রসংগত এখানে অতি পুরাণো প্রাসংগিক বিষয় উল্লেখ করতে চাই। শুনেছি, ১৯৪৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহার লাল নেহেরু চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব রেখেছিলেন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল জিন্নাহ সাহেবের কাছে। জিন্নাহ সাহেব সাথে সাথেই নেহেরুর প্রস্তাবে রাজী হয়ে গিয়েছিলেন। জিন্নাহ সাহেব নিজেও একটি ছোট্ট প্রস্তাব রেখেছিলেন। সে প্রস্তাব  ছিল করাচী বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর  পর্যন্ত করিডোর ব্যবহার করতে দেয়া। জিন্নাহ সাহেবের প্রস্তাবের পর নেহেরুজী আর কখনও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার প্রস্তাব উত্থাপন করেন নি। কিন্তু ভারত কখনই নিজের আদর্শ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। ৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দান করাও সেই কৌশলেরই একটা অংশ ছিল। ভারত দৃঢভাবে বিশ্বাস করে একদিন এই অঞ্চলে মহাভারত বা প্রাচীন ভারতবর্ষ প্রতিস্ঠিত হবে। বংগবন্ধুর লাহোরে অনুস্ঠিত ওআইসি যাওয়াটা ভারত ভাল চোখে দেখেনি। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন বাংলাদেশ সেকুলার দেশ হিসাবে ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ না করুক। ইন্দিরা গান্ধী  বংগবন্ধুকে না যাওয়ার জন্যে সরাসরি অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে শুনেছি। ড: কামাল এ বিষয়ে ভাল জানেন। তিনি তখন বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। শুধু এ কারণেই নাকি ভারতের সাথে বংগবন্ধুর সম্পর্কের অবনিতি হয়েছিল। শহীদ জিয়ার সাথেও ভারতের সম্পর্ক ভাল ছিলনা। এ কারণেই শহীদ জিয়া আরব ও মুসলীম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। শহীদ জিয়া চীনের সাথেও  গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে বলেছিলেন, তিনি দিল্লীর সাথে কথা বলেই দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলে। আওয়ামী লীগের কাগজ বাংলার বাণী বলেছিল, বন্দুকের নলে প্রজাপতি। একটি গুলিও ফুটেনি। এ ফোটা রক্তও ঝরেনি। জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে আওয়ামী লীগ অভিনন্দিত করেছিল।

আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার কেন ক্ষমতায় এসে  হঠাত্‍ করে কোরাণ সুন্নাহর বিরুদ্ধে লেগেছে তার প্রেক্ষিত বলার জন্যেই পেছনের কিছু কথা ও ভারতের প্রভাবের কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ এখন ভারতকে করিডোর ট্রানজিট বন্দর দেয়ার জন্যে উঠে পরে লেগেছে। হয়ত আওয়ামী লীগ মনে করে সুদীর্ঘ কাল ক্ষমতায় থাকতে গেলে ভারতকে তুষ্ট করতে হবে। ভারত বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে একটা তাবেদার সরকার চায়। শুধু বাংলাদেশ কেন, তারা শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, মায়ানমার, আফগানিস্তানে তাবেদার সরকার দেখতে ও রাখতে চায়। ১/১১র মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার প্রতিস্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্যে। ওই সময় ভারত মইনুদ্দিনকে লালগালিচা সম্বর্ধনা দিয়েছিল আর ছয়ট ঘোড়া দিয়েছিল। মইনুদ্দিনের সরকারই বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে ভারত মুখী করে তুলেছি।

পাঠকদের সুবিধার্থে ভারতের শহরবানুর মামলার কথা উল্লেখ করতে চাই। শহরবানু ভারতের একজন বিখ্যাত আইনজীবীর স্ত্রী ছিলেন। তালাকের পর শহরবানু আদালতে খোরপোষের মামলা করেন। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে ভারতের উচ্চ আদালত আজীবন খোরপোষের রায় দিয়েছিলেন। ভারতের মুসলমানেরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে ভারতের পার্লামেন্ট ওই রায় স্থগিত করে দিয়েছিল। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ  বাংলাদেশে কি ঘটছে? এখানে আদালত ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়। আজীবন খোরপোষের রায় দেয়। এনজিওরা আদালতের রায়কে সমর্থন করে। এমন কি ড: কামাল, ড: জহির, ব্যারিস্টার আমীরের মতো আইনজীবীরা আদালতকে ভুল পথে পরিচালিত করেন। অথবা আদালতের ভুল ব্যাখ্যা বা রায়কে সমর্থন করেন। নারীনীতির নাম করে সরকার কোরাণ সুন্নাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন নারীনীতির পক্ষ সাফাই গাইতে গিয়ে অসত্য বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে ওলামা মাশায়েকদের গালাগাল করছেন। বিদেশীদের তৈরি করা নারীনীতি বাংলায় অনুবাদ করে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেস্টা করছেন। ওলামা মাশায়েকদের গালাগাল করে প্রধানমন্ত্রীর কোন লাভে হবেনা। বরং আমি বলবো আওয়ামী নেতা এবং মন্ত্রীরা নারীনীতি নিয়েরাজনীতি করছেন এবং প্রতিদিন অসত্য ভাষণ দিচ্ছেন। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, নারীনীতি এ দেশের জনগণের মানে মুসলমানদের বিশ্বাস আকীদা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এই নীতি জোর করে বাস্তবায়িত করে আওয়ামী লীগের কোন উপকার হবেনা। উপকার হবে গুটি কতক মুসলমান নামধারী মোনাফেকের। যারা মুসলমানের ভিতর থেকে কোরাণ ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এরা সেকুলার ও উচ্চ শিক্ষিত। এদের সামাজিক অবস্থানও খুব ভাল। এদের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোণা। এদের পিছনে রয়েছে পশ্চিমা কিছু শক্তি। এরাই বাংলাদেশে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চায়। এরা  সংস্কারের নামে কোরাণ সুন্নাহর পরিবর্তন চায়। এরা কিন্তু প্রাচীন হিন্দু ধর্ম, জুডা ইজম, খৃস্টধর্মের সংসকার চায়না। এই এক্যবদ্ধ চক্রের প্রধান টার্গেট ইসলাম। আওয়ামী লীগ ও চলমান সরকার জেনে হোক আর না জেনে হোক ওই ইসলাম বিরোধী চক্রের খপ্পরে পড়েছে।সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দেশের খ্যাতিমান পাঁচজন মুফতী ও আলেম বলেছেন, ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে ইসলাম নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তাঁরা বলেছেন, মুসলমানদের অস্তিত্বের সাথে ফতোয়া জড়িত। ফতোয়া পবিত্র কোরাণের স্বীকৃত বিষয়। পবিত্র কোরাণকে জানার বুঝার জন্যে ফতোয়ার চর্চা অপরিহার্য। ইসলামের শুরু থেকেই ফতোয়ার চর্চা অব্যাহত আছে। আদালত রায় দিয়ে ফতোয়া বন্ধ করতে পারেনা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন মনোনীত পাঁচজন মুফতী ছিলেন, মুফতী কেফায়েত উল্লাহ,মুফতী রুহুল আমিন,মুফতী মিজানুর রহমান, মুফতী কফিল উদ্দিন সরকার ও ড: আবদুল্লাহ। মুফতী রু্হুল আমিন বলেছেন, ইসলামকে মানতে হলে  আগে জানতে হবে।ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে মুফতী কেফায়েত উল্লাহ বলেছেন, ফতোয়া বন্ধ হলে ইসলাম নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। ফতোয়া হলো  ইসলামী বিধি বিধানের প্রকাশ মাত্র। আইনের সাথে ফতোয়া কখনই সাংঘর্ষিক নয়।যিনি মুফতী তিনি কখনই কাউকে কিছু মানতে বাধ্য করেন না।আিনের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু ফতোয়ার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ফতোয়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একজন মুসলমানের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ফতোয়া প্রযোজ্য। মুফতী কফিল উদ্দিন বলেছেন,  ইসলামের শুরু থেকেই ফতোয়া জারী রয়েছে। আল্লাহর রাসুল(সা) নিজেই ফতোয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মুফতি মিজানুর রহমান বলেছে, কোরাণ সুন্নাহ  ইজমা কিয়াস এই চারটি হলো ফতোয়ার ভিত্তি। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের মুসলমানেরা কার কথা মানবে? না  ইসলামী আইনে অজ্ঞ বিদেশী আইনের  আদালত ও আইনজীবীদের মানবে?( নয়া দিগন্ত, ২৯ এপ্রিল,২০১১)

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com‍

Read Full Post »


মানুষকে আল্লাহপাক যে সব বস্তু দিয়ে তৈরি করেছেন তারই সবই পৃথিবী থেকে নেয়া বা পৃথিবী সৃস্টির উপাদান থেকে নেয়া। মানূষের ভিতর শুধু একটি জিনিষ রয়েছে যা সরাসরি আল্লাহপাক দান করেছেন তা হলো রূহ। কালামে পাকে আল্লাহপাক রাসুলকে(সা) বলেছেন, মানুষ আপনার কাছে জানতে চাইবে রূহ কি জিনিষ। আপনি বলে দিন, ‘ এটা হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ’। এই নির্দেশ যার ভিতর জারী আছে সেই হচ্ছে আসল মানুষ। কালামেপাকে আল্লাতায়ালা বলেছেন, দেখিতে মানুষের মতো হলেও সব মানুষ, মানুষ নয়। অনেকে আছে পশুর চেয়ে অধম। লোক দেখানো কোন কিছুরই আল্লাহর দরবারে কোন দাম নেই। আল্লাহপাক দেখেন মানুষের অন্তর। যার অন্তরে নূর আছে তিনিই ষত্য অসত্য ভালো মন্দের জ্ঞান লাভ করেছেন। নূর হচ্ছে আলো বা জ্ঞান। জ্ঞান হচ্ছে আল্লা্র দান। মানুষের জন্যে জ্ঞান লাভ করা অবশ্য কর্তব্য। জ্ঞান মানুষের জন্যেই। জ্ঞানের কারনেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃস্টির সেরা। রূহ লাভ করার কারণেই তাকে শ্রেস্ঠত্ব দান করা হয়েছে। অন্য সকল প্রাণীর প্রাণ আছে। তারা সবাই পশু পাখি। সৃস্টির সবকিছুই আল্লাহপাক মানুষের খেদমতে নিয়োজিত করেছেন।

মানুষকে খেলাফত দান করা হয়েছে। যেন সে আল্লাহপাকের নিয়ম নীতি বিধান জগতে জারী করতে পারে। মানুষ জানে ভাল কি মন্দ কি। শয়তান সম্পর্কেও মানুষকে অবহিত করা হয়েছে। শয়তানের খপ্পরে যে পড়েছে তার মুক্তির কোন উপায় নেই। তবুও দয়াময় আল্লাহ মানুষের প্রতি সদয় হয়ে অনুতাপ বা তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। অনুতাপ করলেই মানুষ ক্ষমা লাভ করবে। মন্দ পথের দিকে ঝুঁকে পড়া মানুষের ফিতরাতে লেখা রয়েছে। পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ দেখতে চান তাঁর প্রিয়তম সৃস্টি কোনদিকে ঝুঁকে পড়ে। আল্লাহপাক বলেছেন আমার বান্দাহর কোন ভয় নেই, আমি তার সাথেই আছি। আমিই তাকে সরল পথ মুক্তির পথ দেখাবো। মানুষ একটি ভাল কাজ করলে দশটি নেকী বা পূন্য তার নামে বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু ভুল করে কোন অপরাধ করে ফেললে মাত্র একটি শাস্তি লিপিবদ্ধ করা হবে। এসবই হচ্ছে মানুষের মুক্তির পথ সুগম করা। জগতে মানুষ এক আল্লাহ বা এক স্রস্টাকে মানে। বিধান নানা ধরনের হলেও এক স্রস্টার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। ধর্ম বিশ্বাসে মত পার্থক্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এটাই আল্লাহপাকের রীতি।সুরা হুদের ১১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে  সমস্ত মানুষ জাতিকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন। তবুও তারা মতভেদ করতো। তবে তারা নয় যাদেরকে তোমার প্রতিপালক দয়া করেন।’ সুরা হুজুরাতের ১৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃস্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, আর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে। যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই  আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে ব্যক্তি শুদ্ধতম জীবন যাপন করে। আদম বা প্রথম মানবের যুগ থেকেই মানুষকে সত্‍ পথে বা সরল পথে চলার জন্যে স্রস্টা নিয়মিত পথ দেখিয়ে আসছেন। ন্যায় অন্যায়ের পথকে সুস্পস্ট করে দেখানো হয়েছে। তবুও মানুষ তার স্রস্টার নির্দেশ ও নীতি ভংগ করে এবং শয়তানকে অনুসরণ করে। বিবেকের বরুদ্ধে কাজ করে। সরল পথ পরিহার করে বক্র বা মন্দ পথে চলে জীবন নস্ট করে।

ঈসা নবী বলেছেন, যে তোমার সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে সদ্ব্যবহার করো। যে তোমার ছিদ্রান্বেষন করে, তোমাকে কস্ট দেয়,তুমি তার মংগল কামনা করো।( মথি৫, ৪৩ ৪৪)। তিনি আরও বলেছেন, দয়াবানদের সুসংবাদ দাও, কারণ তাদের প্রতি অবশ্যই দয়া করা হবে।( মথি৫,৭) তুমি যদি চির জীবন লাভ করতে চাও তাহলে আমার উপদেশাবলীর হেফাজত করো। শিষ্যরা জানতে চাইলেন, সে সব কি? তিনি বললেন, হত্যা করোনা, ব্যভিচার করোনা, চুরি করোনা, মিথ্যা সাক্ষ্য দিওনা, পিতা মাতাকে সম্মান করো, স্বজনদের নিজের মতো ভালবাসো।( মথি ১৯/ ১৭-১৯ )। মনু সংহিতায়ও বলা হয়েছে, পিতা মাতাকে সম্মান করো, চুরি করা পাপ, পরধন হরণ করোনা। সোজা কায় বলা যেতে পারে কোন কালে কোন ধর্ম অন্যায় অবিচারকে সমর্থন করেনি। তবুও মানব সমাজ থেকে অপরাধ বিলুপ্ত হয়নি। ব্যাপক অন্যায় অবিচার ও ব্যভিচারের কারনে অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।

হজরত আলীকে (রা) প্রশ্ন করা হয়েছিল কোন জাতি দেশ বা সমাজ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্ব লক্ষণ গুলো কি? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, যখন দরিদ্ররা ধৈর্য হারা হবে, ধনীরা কৃপণ হবে, মুর্খরা মঞ্চে বসবে, জ্ঞানীরা পালিয়ে থাকবে আর শাসক মিথ্যা কথা বলবে। বর্ণিত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে মনে করতে হবে সে দেশ সমাজ ও জাতি আর বেশীদিন টিকবেনা। আপনারা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার সাথে হজরত আলীর (রা) কথা গুলোকে মিলিয়ে দেখুন।  কিন্তু আমরা কি তা অনুধাবন করতে পারছি। আমারতো মনে হয় আমরা জাতির নৈতিকতা নিয়ে মোটেই ভাবিনা। আমাদের নেতারা মিথ্যা কথা বলেন। আইনজীবী বুদ্ধিজীবী আলেম সমাজ সবাই মিথ্যা কথা বলে চলেছেন। বিবেকের শাসন একেবারেই লোপ পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, আদালত, সংবিধান, দেশের সীমান্ত নিয়ে চলছে এক ধরনের আস্থাহীনতা। দুজন বড় নেতা নিয়ে চলছে নানা ধরনের গালাগাল ও মিথ্যাচার। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক দূর্ণীতি। সেনা সমর্থিত কথিত বেসামরিক সরকারের অধীনে অনুস্ঠিত নির্বাচনে  আওয়ামী লীগ ২৬৩ সিট  পেয়ে ক্ষমতায় এসেই তার সারা জীবনের রাগ আক্রোশ  প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যে  সবকিছু পরিহার করে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। ৪০ বছরে  প্রতিপক্ষ কোথায় কি করে করেছে তা নিয়েই সরকার ব্যস্ত। দেশের উন্নতি মানুষের উন্নতি তাদের  তালিকায় নেই। জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে, বাড়ি ভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুত গ্যাস নেই। সেদিকে সরকারের কোন খেয়াল নেই। শেয়ার বাজারে টালমাটাল অবস্থা। ৯৬ সালে যেমন হয়েছে ২০১১ সালেও তেমন হয়েছে। সরকারের নিজস্ব লোক নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিই বলছে রাঘব বোয়ালরা শেয়ার বাজার কেলেংকারীর সাথে জড়িত। যাদের বিচার করতে হলে সামরিক শাসন জারী করতে হবে। অর্থমন্ত্রীও তাদের নাম বলতে সাহস করতে পারছেননা। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী তাদের সবার নাম জানেন। ৯৬ সালেও তারা ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। এবারও ছাড়া পেয়ে যাবে।

সরকার তাদের দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত সব মামলা তুলে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। বিরোধী দলের সব মামলা জারী রয়েছে। প্রধান মন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে প্রায় মেরে ফেলার উপক্রম। আদালতের নাম করে তাকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। অনেকেই বলবেন এসব সব সরকারই করে। ক্ষমতায় থাকলেই এসব করতে হয়। আমি হয়ত এ বিষয়ে অনেকের সাথে দ্বিমত করবোনা। তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে আওয়ামী লীগ সরকার যা করছে তা আইউব-ইয়াহিয়া সরকারও করেনি। আমাদের দেশে সরকারের এসব কর্মকান্ডকে দূর্ণীতি বলা হয়না। বলা হয় রাজনৈতিক হিংসা। যেন হিংসা খুন গুম অপহরন নির্যাতন সরকারের এক ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচী। এসব দূর্ণীতি নয়। আমাদের দেশটা  প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হলেও এটা কোন ইসলামিক দেশ নয়। মুসলমানের দেশও বলা যায়না। বলতে হয় মুসলীম মেজরিটি কান্ট্রি। এই পরিচয়টাও হয়ত আর রাখা যাবেনা। বলতে হবে আমরা সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ। আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন পরিমার্জন ও সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছেন সেকুলার হিন্দু নেতা। তিনি আবার বামপন্থী। তিনি দয়া করে বলছেন, সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে, সাথে সাথে ধর্ম নিরপেক্ষতাও থাকবে। রাস্ট্রধর্ম ইসলামও থাকবে। কেউ কেউ সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহীর প্রসংগও টেনে এনেছেন। এটা অসততা ,নৈতিকতা বিরোধী ও দূর্ণীতির পর্যায়ে পড়েনা। এটা নাকি সংবিধান নিয়ে মেজরিটি দলের দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয়। মেনন ও ইনু সাহেব বলেছেন সংবিধান সংশোধনে জামায়েতের খুব খুশী হওয়ার কথা। মেনন সাহেবদের নাকি অখুশী হওয়ার কথা। কারণ তারা যা চাচ্ছেন তা হচ্ছেনা। সরকার ও আওয়ামী লীগের এসব অনাচারকে আমরা দূর্ণীতি বলছিনা। আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে এ সবকে দূর্ণীতি বলা হয়না। চুরি ডাকাতি হার্মাদি লুচ্ছামি ইত্যাদি অপরাধ দেখার জন্যে পুলিশ ও ফৌজদারি আদালত। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিলে শাস্তির জন্যে রয়েছে এনবিআর ও দুদক। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার দুদক ও এনবিআরকে তখন যথেচ্ছা ব্যবহার করেছে। তখন আমরা ব্যসায়ীদের পক্ষে কথা বলেছি। বলেছি এসব করলে দেশের অর্থনীতি ভেংগে পড়বে। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীদের কোন আক্কেল হয়নি। হয়ত কোনদিনও হবেনা। কেমন করে হবে, তারাতো সব ধরনের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে,  ব্যান্কের টাকা মেরে দিয়ে, কাস্টমসে ভুল ঘোষণা দিয়ে, ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং করে, গরীব মানুষের জায়গা জবর দখল করে ধনী হয়েছে। ২০/২৫ বছরে এতই ধনী হয়েছে যে, এখন সরকারকে চোখ রাঙায়। চির অভাবী চির কাঙাল মন্ত্রী এমপি সচিবদের পকেটে নিয়ে তারা বুক ফুলিয়ে হাটে। ইদানিং তারা  টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা চালু করেছে। দামী নামী সাংবাদিক ও কলামিস্টদের কিনে রাখছে। এই সব অসত্‍ ও মহা দূর্ণীতিবাজ ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদে ঢুকে পড়েছে। এরা নির্বাচনের সময় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে শত শত কোটি টাকা দেয়। ফলে তাদের দূর্ণীতির কথা কেউ বলেনা।

দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও আইন বিচার আচার সবকিছুই চলে পশ্চিমা অমুসলীমদের আইনের ভিত্তিতে। কোরাণে বর্ণিত নৈতিক আইনের কোন ধার ধারেনা দেশের আদালত গুলো। নৈতিকতা নিয়ে এখন দেশের কোন সংস্থাই ভাবেনা। যেন ওসব দুনিয়ার বিষয় নয়। ওসব শুধু আখেরাতেই কাজে লাগবে। নৈতিকতাহীন দুর্ণীতিবাজরা আবার সেকুলার হওয়ার জন্যে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের সাথে আঁতাত করে চলেছে। আওয়ামী পন্থী এক সেকুলার রুশীয় শিক্ষার অর্থনীতিবিদ ইতোমধ্যেই বলে ফেলেছেন ইসলাম শব্দ রয়েছে এমন সব ব্যান্ক বীমা ও শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়ার জন্যে। ইসলামী ব্যান্ক দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যান্ক হলেও বেসরকারী খাতের এই বৃহত্তম ব্যান্কটি  বন্ধ করে দেয়ার দাবীও আমরা প্রায়ই শুনি। এই ব্যান্ক নাকি জংগী অর্থনীতির সাথে জড়িত। ওই অর্থনীতিবিদ দেশবাসীকে এখনও  সেকুলার ব্যান্ক বীমা বা শিল্প কারখানার নাম জানাননি। দেশবাসীর কত শতাংশ ইতোমধ্যে সেকুলার হয়ে গেছে তাও ভদ্রলোক জানাতে পারেননি। এরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেকুলার করতে চায়। তাই সাবেক সিপিবি সদস্য নাহিদকে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে। ভারত থেকে পাঠ্য পুস্তক ছাপিয়ে আনা হচ্ছে। কি শরমের ব্যাপার স্বাধীনতার ৪০ বছরেও দেশে পাঠ্য পুস্তক ছাপাবার মতো ছাপাখানা হয়নি। জানিনা, কোনদিন হয়ত বলে বসবেন বা নির্দেশ দিয়ে  বসবেন কোরাণ শরীফ ভারতে ছাপাতে হবে। কোরাণের তরজমা(অনুবাদ) বা তাফসীর(ব্যাখ্যা) ভারতের জ্ঞানীদের কাছ থেকে আনতে হবে। বৃটিশ আমলেতো সাহেবরাও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন।

আমাদের পাপ গুনাহ বা অপরাধ বোধ এখন প্রায়ই নেই বললেই চলে। বহু অপরাধ আছে মানুষ নিয়মিত করে চলেছে যার কোন বিচার আদালত বা সমাজ করেনা। মানুষ এমন অনেক অপরাধ করে যার সাক্ষী সে নিজেই। এ ধরনের অপরাধের বিচার আল্লাহপাক নিজেই করবেন। কিছু অপরাধ আছে প্রকাশ্য। যেমন নামাজ রোজা না করা এবং জাকাত না দেয়া। এসবের বিচারও আমাদের আদালত করেনা। নারীদের অধিকার আদায়ের জন্যে বহু আইন পাস হচ্ছে। কথায় কথায় পুরুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাজার এনজিও নারী অধিকারের জন্যে কাজ করছে। কিন্তু অপরাধ কমছেনা, বরং বেড়েই চলেছে। কেউ কারণ খুঁজে বের করার চেস্টা করছেনা। সম্প্রতি ইভ টিজিং বেড়েছে। সাথে সাথে নতুন আইন বেড়েছে। তাত্‍ক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু  অপরাধ কমছেনা। এসব আমাদের সমাজ বা দেশে দূর্ণীতি হিসাবে চিহ্নিত নয়। নৈতিকতা বৃদ্ধির জন্যে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও কোন কাজ হচ্ছেনা। নৈতিকতার এত বড় পতন এর আগে আমরা কখনও দেখিনি। এক সময় রাজনীতিবিদরা ছিলেন আদর্শ। এখন তাদের আদর্শ হচ্ছে যেকোন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। সেখানে নৈতিকতা বা নীতিবোধের কোন বালাই নেই। শিক্ষা প্রতিস্ঠান গুলোতে কোন নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ঘুষ দূর্ণীতি বেঈমানী রাহাজানি হত্যা  অপহারণ গুম এখন মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এর কারণ রাস্ট্র ন্যায়নীতির বিপক্ষে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। যে সমাজে বা দেশে টাকা ও পেশীশক্তি সবচেয়ে বেশী মর্যাদা লাভ করে সে সমাজের পতন অবশ্যম্ভাবী।

ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। একথা সবাই জানে। তবুও মানুষ ক্ষমতায় অত্যাচার করে জোর জবরদস্তি টিকে থাকতে চায়। আরব দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। সেখানে সব স্বৈর শাসক ৩০/৪০ বছর ধরে নানা টালবাহানায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। ক্ষমতা ছাড়ার কথা বললেই হত্যা করে। পবিত্র কোরাণে অতীতের বহু মানবতা বিরোধী অত্যাচারী শাসকে কথা উল্লিখিত আছে। তাদের পতন কিভাবে কি হয়েছে তারও বিশদ বর্ণনা রয়েছে। তবুও মানুষের হুঁশ হয়না। আধুনিক বিশ্বে বহু ফেরাউনের জন্ম হয়েছে। তারা মুখে বলে আল্লাহয় বিশ্বাস করি, কিন্তু করেনা। তারা বলে আল্লাহর আইন মেনে চলি, কিন্তু  চলেনা। বড় ফোরাউন সন্ত্রাস নির্মূল করার নামে সারা পৃথিবীকে অস্থির করে তুলেছে। ছোট ছোট ফেরাউনেরা বড় ফেরাউনের তাবেদার হয়ে নিজ নিজ দেশে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন রাস্ট্র সরকার ও আল্লাহর আইন ও হুকুমের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থমন্ত্রী একজন মুসলমান হয়েও বলছেন, কোরাণ তেরশ’ বছরের পুরাণো। নানা কারণে তা  আধুনিক হতে পারেনি। কোরাণ হাদিস নিয়ে সরকার মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বিনা কারণে , বিনা প্রয়োজনে অসত্য ভাষন দিচ্ছেন। আমি এর কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা। ওলামা মাশায়েকদের কথাকে সরকার রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। ধর্মীয় বিষয়ে যেকোন সমস্যার সুরাহা করার জন্যে সরকারের উচিত হবে  ফ্বেকা কাউন্সিল গঠন করা। অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করার জন্যেও সরকারের উচিত হবে কোরাণের আলোকে চলমান বিদেশী আইন গুলোকে পরীক্ষা করে দেখা। রোমান গ্রীক ও বৃটিশ আইন দিয়ে মুসলমান সমাজ চালানো যাবেনা। বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেকুলার মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা। তারাই সরকার ও রাস্ট্রযন্ত্রকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ওই হাতে গোণা তথাকথিত সেকুলারদের উসকাচ্ছে ভারত ও পশ্চিমা শক্তি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুসলীম লীগের উত্তরসূরী। বংগবন্ধু নিজেই ছিলেন মুসলীম লীগের প্রথম সারির একজন নিবেদিত কর্মী। পরে আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রথম সারির নেতা হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৯০ ভাগ কর্মী ও সমর্থক ইসলামী ঐতিহ্যে বিশ্বাস করে। তারা কেউই ধর্ম নিরপেক্ষ নয়।

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


সাতচল্লিশ সালের  ১৪ই আগস্ট যাঁরা দেখেছেন এবং ওইদিন যাঁরা পাকিস্তান সৃস্টি করেছেন তাঁদের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। আগস্টে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে দুটি স্বাধীন রাস্ট্র ও দেশ তৈরী হয়েছে। ভারতের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। যে অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাস্ট্র প্রতিস্ঠিত হয়েছে সেই ভৌগলিক এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হাজার বছরের। প্রাচীন ভারতে বিদেশীদের আগমন ঘটেছে পাকিস্তানের তুরখাম সীমান্ত দিয়ে। সাগর পথেও বিদেশীরা ভারতে এসেছে। হাজার হাজার  বছর ধরে বহু জাতি ভারতে এসেছে,অনেকেই ফিরে গেছে। ধর্মীয় জাতি হিসাবে সবচেয়ে বেশী মুসলমান সুফী সাধকগণ। তাঁরাই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করেন। মুসলমান শাসকদের এদেশে আগমন ঘটেছে সুফী সাধকদের আগমনের অনেক পরে। তবে সামরিক শক্তি নিয়ে সিন্ধুর তীরে প্রথম আসেন মুহম্মদ বিন কাশেম। সময় ছিল ৭১১ সাল। একই সময়ে মুসলমানেরা স্পেন পৌঁছেছিল। ৪৭ সাল নাগাদ ভারতে দুই প্রধান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শক্তি ছিল  হিন্দু ও মুসলমানগণ। মুসলমানরা ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। কিন্তু কোন কোন ভৌগলিক এলাকায় মুসলমানদের বসতি ছিল শতকরা ৬০/৯০ ভাগ।

১৬০০ সালের দিকে ইংল্যান্ড বা বৃটেনের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা। তাই তারা সমুদ্রপথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ইংরেজদের আদি ব্যবসা ছিল জলদস্যুতা। তাদের পূর্বপুরুষরা পাইরেটস হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। কালক্রমে তারা ধন ও শক্তি সংগ্রহ করে অভিজাতদের সাথে আত্মীয়তা করে। এভাবেই ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের উত্‍পত্তি হয়। ১৬০০ সালের দিকেই লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রতিস্ঠা হয়। সেই কোম্পানীই ভারতে ব্যবসা করতে আসে। তখন মোগল বাদশাহদের রমরমা অবস্থা। ওই  একই সময়ে ব্যবসা করার জন্যে ভারতে ফরাসী পর্তুগীজ ও  ওলন্দাজরা  আসে। এর বহু আগেই আরবরা ভারতে আসে ব্যবসা করার জন্যে। মূলত  তারা ভারতের উপকূলীয় এলাকায় ব্যবসার কেন্দ্র স্থাপন করে। বিশেষ করে সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে বহু আরব মুসলমান ব্যবসায়ী ও প্রচারকরা এদেশে আসেন। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর ভাষায় প্রচুর আরবী শব্দের মিশেল পাওয়া যায়। স্থল পথেও বাংলাদেশেমুসলমান শাসক বণিক ও ধর্ম প্রচারকরা এসেছেন। ১২০০ সালের দিকে বাংলাদেশ মুসলমান শাসনের অধীনে আসে। দিল্লীতেও মুসলমান  শাসন কায়েম হয় ১২০০ সালের দিকে। ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা  যড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলার শাসন দখল করে। ১৮৫৮ সালে প্রকাশ্যে ভারতীয়  সৈনিকরা  বাহাদুর শাহকে তাদের নেতা মেনে নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। এটাই ছিল ভারতীয়দের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু। এর আগে ১৭৫৭ থেকে ইংরেজদের অধীনতা অস্বীকার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আলেম সমাজের নেতৃত্বে বাংলার কৃষকরা বিদ্রোহ করে। ইংরেজদের দখলদারিত্ব অস্বীকার করে সারা ভারতে মুসলমান আলেম সমাজই প্রথম ১০০ বছর সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ইংরেজ দখলদারিত্বের ফলে এদেশে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের মুসলমান সমাজ। ৭১১ সাল থেকে হিসাব করলে এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে  প্রায় এক হাজার বছর মুসলমান শাসন চলেছে। ১২০০ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল নাগাদ লাগাতার প্রায় ৭শ’ বছর মুসলমান চলেছে। এ দীর্ঘ সময়ই ছিল ভারতের স্বর্ণযুগ। ১৮৫৮ সালে শেষ মোগল বাদশাহ বাহাদুর জাফরের কাছ থেকে সারা ভারতের শাসন ভার দখল করে নেয়। বাহাদুর শাহকে বন্দী করে রেঙুনে নির্বাসনে পাঠায়। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ইংরেজরা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে ভারত শাসন করে। এই ১৯০ বছরের মধ্যে প্রায় দেড়শ’ বছর হিন্দু নেতারা ইংরেজ সরকারকে সহযোগিতা করে। ইংরেজ শাসন আমলের শেষের দিকে মুসলমান নেতারা, বিশেষ করে আলিগড় আন্দোলনের নেতা স্যার সৈয়দ ইংরেজী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সাথে সাথে সারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু বিত্তবান উচ্চ শ্রেণীর  মুসলমান নেতা স্যার সৈয়দকে সমর্থন করেন। স্যার সৈয়দ ও অন্যান্য মুসলমান নেতাদের আহ্বানে মুসলমান তরুনরা ইংরেজী শিক্ষায় আগ্রহী হয়। হিন্দুদের ভিতর রাজা রাম মোহনকে নব জাগরনের দূত হিসাবে অভিহিত করা হয়। ইংরেজদের সাথে সহযোগিতা করে সকল সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেয়ার জন্যে অক্ষয় দত্ত, বিদ্যাসাগর , মধুসুদন রাম মোহনের ভাবধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। হিন্দু জাতিকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার জন্যে এরা সকলেই পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন। তাদের মাথায় তখন মুসলমানদের সাথে নিয়ে চলার কোন চিন্তা ভাবনা ছিলনা। কারণ তখন মুসলমানরা একেবারেই পতিত ছিল। ১৮২৩ সালের  ১১ই  ডিসেম্বর  রাজা রাম মোহন হিন্দুদের আধুনিক শিক্ষার ব্যাপারে ভাইসরয় লর্ড আমহার্স্টকে এক চিঠি দেন। পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী  ওই চিঠিকে ‘নবযুগের শংখধ্বনি’ বলে অভিহিত করেছেন। ডিরোজিও রাম মোহনের চিন্তাধারার একজন বড় শিষ্য ছিলেন। তাঁরাই সকলে মিলে হিন্দু কলেজ প্রতিস্ঠা করেন। এই সময়ে ডিরোজিওর শিষ্য ছিলেন  রসিককৃষ্ণ মল্লিক, কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, দিক্ষিণারণঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ,ও রাধানাথ। একই ভাব ধারায় মহারাস্ট্রে কাজ শুরু করেছিলেন  মহাদেব গোবিন্দ রানাড়ে, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং বালগঙাধর তিলক। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে এর আগেই ১৮৩৮ সালে জমিদার রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে জমিদার সভা প্রতিস্ঠিত হয়। তারপর ১৮৪৩ সালে প্রতিস্ঠিত হয় বৃটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি। ১৮৫১ সালে প্রতিস্ঠিত হয় বৃটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন। এ ধরনের আরও বহু সমিতি গঠন করে হিন্দুরা সারা ভারতে। এর ইংরেজদের সরাসরি সমর্থন ছিল। ১৮৮৩ সালে হিন্দুরা সর্ব ভারতীয় সম্মেলনের আয়েজন করে। এর পরেই জাতীয় কংগ্রেস প্রতিস্ঠিত হয় লর্ড হিউমের নেতৃত্বে ১৮৮৫ সালে। ফলে ভারতীয় হিন্দুরা কংগ্রেসের নেতৃত্বে বৃটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে থাকে।

ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে হিন্দু নেতারা সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রতিস্ঠার আন্দোলন বলিয়া মনে করিতেন।তাহারা ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে হিন্দু ধর্মের ভিত্তিতেই পরিচালিত করিতে চাহিয়া ছিলেন। ১৯২১ সালে ইক্যবদ্ধ খেলাফত আন্দোলনের সময় গান্ধীজী  হঠাত্‍ বলে বসলেন, ‘ আমি নিজেকে একজন সনাতনী হিন্দু বলিয়া ঘোষণা করিতেছি। কারণ, ১। বেদ উপনিষদ পুরাণ যাহা কিছু হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিচিত তাহার সকল কিছুতেই আমি বিশ্বাস করি,সুতরাং অবতার আর পূণর্জন্মেও আমার দৃঢ বিশা্বাস আছে। ২। বর্ণাশ্রম ধর্মে আমার বিশ্বাস অতি দৃঢ। সেই বর্ণাশ্রম ধর্ম বর্তমান কালের লৌকিক ধারণা বা স্থুল অর্থ ে নহে, তাহা এক অর্থে আমার মতে সম্পুর্ণ  বেদ ভিত্তিক ৩। গোরক্ষা সম্বন্ধেও আমার বিশ্বাস অতি দৃঢ। আমি মুর্তি পুজায়ও বিশ্বাস করি। ‘সনাতনী হিন্দু, বলিতে কি বুঝায় ? গান্ধীজীর একনিস্ঠ অনুচর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু স্বয়ং এর ব্যাখ্যা দিয়াছেন। তিনি লিখেছেন, সনাতনীরা পশ্চাত্‍গতির দৌড়ের প্রিযোগিতায় হিন্দু মহাসভাকেও বহুদূর পিছনে ফেলিয়া যায়। এই সনাতনীরা এক চরম আকারের ধর্মীয় রহস্যবাদের সহিত বৃটিশ শাসনের প্রতি একাগ্র অনুরক্তি যোজনা করিয়া থাকে। গান্ধীজী হিন্দু বলিতে আমরা বলিতেন আর মুসলমান বলিতে তাহারা বলিতেন। পন্ডিত জওহরলাল অন্তরে ছিলেন বামপন্থী  আর বাইরে ছিলেন দক্ষিণপন্থিদের নেতা। ভারতের বামপন্থী নেতারা গান্ধীজীকে বৃটিশ শাসক , জমিদার ও সামন্তবাদীদের প্রকাশ্য এজেন্ট বলে অভিহিত করেছেন। লেনিনের মতে অহিংস আন্দোলনের মূল দর্শন ছিল জনগনের সংগ্রামী চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। গান্ধীজীর স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল মালিক-শ্রমিক, জমিদার-প্রজা ও বৃটিশদের মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে দাবী আদায় করা। কংগ্রেস বহুকাল গান্ধীজীর পথ অনুসরন করে অবশেষে কঠের ভাষায় দাবী আদায়ের কথা বলতে থাকে।

ভারতের মুসলমান নেতৃবৃন্দ যখন  দেখলেন কংগ্রেসে থেকে এক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলন করা যাবেনা তখনই তারা পৃথক সংগঠন বা প্ল্যাটফরম থেকে কথা বলে দাবী আদায়ের চিন্তা করতে থাকলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠিত হয়। কংগ্রেস মুসলীম লীগকে সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে আখ্যায়িত করে। আর নিজেদের সর্বভারতীয় সার্বজনীন রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রচার করে। কংগ্রেস নেতারা  বৃটিশ সরকারের কাছে কংগ্রেসকে ভারতবাসীর একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রমান করার চেস্টা করতে লাগলেন। মুসলমান নেতারাও বসে থাকলেননা। তারাও জানান দিলেন, কংগ্রেস একটি হিন্দু সংগঠন এবং হিন্দুদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। কংগ্রেস নেতারা  শিখ বৌদ্ধ জৈন ও খৃস্টান জনগনের কথা একেবারেই ভুলে গেলেন। ক্ষুদ্র ধর্ম গোস্ঠি ও জাতিগুলো নিজেদের আলাদা করে প্রতিস্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কট্টর হিন্দু নেতা গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের স্বপ্ন ছিল ইংরেজদের কাছ থেকে তারা একাই ক্ষমতা বুঝে নিবে। প্রথম দিকে মুসলমান নেতারা কংগ্রেস নেতাদের বিশ্বাস করেছিলেন। এমন কি ১৯৩৪ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলীম লীগের সভাপতি হওয়ার পরও জিন্নাহ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চেস্টা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন অখন্ড ভারতে মুসলমানেরা তাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাবে। কিন্তু দু:খের বিষয় কংগ্রেস নেতারা মুসলীম লীগের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায়নি। মুসলমানরা ভারতীয় হলেও তাদের আলাদা স্বত্তা আছে একথা হিন্দু নেতারা কখনই মেনে নিতে চাননি। কংগ্রেসের এই মনোভাবকে শাসক গোস্ঠিও পছন্দ করেনি। এমনি করেই এক সময় পাকিস্তান প্রস্তাব সামনে এসে যায় এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠে খুবই অল্প সময়ে। আজ ভারতীয় নেতারাও অনুভব করছেন, কংগ্রেসের  উদারতা সহনশীলতার অভাবেই ভারত বিভক্ত হয়েছে। ভারতের নতুন প্রজন্ম বুঝতে পেরেছে কংগ্রেসের হীনমন্যতা ও হিন্দুত্ববাদীতাই ভারত বিভক্তির জন্য দায়ী। মুসলমানরা একটি আলাদা জাতি একথা প্রমান করার জন্যেই তারা পাকিস্তান প্রস্তাবকে সামনে নিয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস বিভক্ত ভারতে একটি হিন্দু রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করেই ছাড়লো। কংগ্রেস যদি হিন্দু ভারত না চাইতো তাহলে ভারত ভাগ হতোনা এবং নতুন মুসলীম রাস্ট্র পাকিস্তানও প্রতিস্ঠা হতেনা।

এতক্ষন যা বলেছি তার সবই পুরাণো কথা এবং ইতিহাসের পাতা থেকে নেয়া। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তান সৃস্টির বিষয়টা আজও ভাল করে জানেনা। তাই পুরাণো কথা গুলো নতুন করে মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে বলতে হয়েছে। শিক্ষিত সমাজের ৯০ ভাগই জানেন বা বলেন জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্বের কারণে ভারত ভাগ হয়েছে। হাঁ, জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু কখন এবং কেন? কংগ্রেস যদি হিন্দু রা্স্ট্র ভারত না চাইতো তাহলে পাকিস্তান হতেনা। আগেই  বলেছি  কংগ্রেস যদি হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্ব না করতো তাহলে মুসলীম লীগের জন্মই হতোনা। ভারতের মুসলমানরা এখনও  দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোস্ঠি। সে হিসাবে তারা এখনও অধিকার বঞ্চিত। এমন কি পশ্চিম বংগে অসম্প্রদায়িক বলে কথিত কমিউনিস্ট পার্টি ৩৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মুসলমান জনগোস্ঠির সুবিচার করা হয়নি। ভারতের সকল রাজনৈতিক দলই মোটামুটি হিন্দু ভারতে বিশ্বাসী। ৪৭ সালেও কংগ্রেস মুসলীম মেজরিটি এলাকা পাঞ্জাব এবং বাংলাকে বিভক্ত করে। বাংগালীরা হিন্দু মুসলমান ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ চেয়েছিল। সেটাও কংগ্রেস মানেনি।

৪৭ সালে পাকিস্তান রাস্ট্র  যখন প্রতিস্ঠিত হয় তখন এর রাজধানী নির্ধারন করা হয়  সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে। ঢাকা প্রাদেশিক সরকারের রাজধানীতে পরিণত হয়। প্রাক  ৪৭  সময়ে সারা ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীতে বাংগালী মুসলমানের তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব ছিলনা। ফলে পাকিস্তান প্রতিস্ঠার পর সামরিক বাহিনী ও সিভিল সার্ভিসের উচ্চ পদ গুলিতে চাকুরী লাভ করেন পশ্চিম পাকিস্তানের অফিসারগণ। এমন কি পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ পদ গুলিতেও অবাংগালী অফিসারগণ নিয়োগ লাভ করেন। ভারত বিভক্তির ফলে ভারত থেকে  লাখ লাখ অবাংগালী সরকারী কর্মচারী পূর্ব পাকিস্তানে আসতে শুরু করে। এদের পূণর্বাসনের দায়িত্ব পড়ে প্রদেশিক সরকারের উপর। আজকের মোহাম্মদপুর সে সময়েরই সৃস্টি। রেলের বড় বড় চাকুরী গুলো লাভ করেন অবাংগালী অফিসারেরা। পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে ছিল এক বিরাট চাকুরীদাতা। প্রদেশের জেলাগুলোতে অনেক অবাংগালী ডিসি , ডিএম ও এসপি চাকুরী পান। পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের নাম থখন ছিল ইস্ট বেংগল। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একজন গভর্ণর ও একজন চীফ সেক্রেটারী প্রদেশে থাকতো। পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তান ছিল খুবই অনগ্রসর। মূলত: একটি কৃষি প্রধান প্রদেশ। কল কারখানা যা ছিল তার মালিকরা থাকতেন কোলকাতায়। অধিবাসীদের ৯০ ভাগই ছিলেন  কৃষক। সত্যি কথা বলতে কি প্রদেশটি দীর্ঘকাল ইংরেজ শোষন ও হিন্দু জমিদারদের শোষণের ফলে নি:স্ব হয়ে পড়েছিল। সচিবালয়ে মাটিতে চাটাই বিছিয়ে কর্মচারীরা কাজ করেছেন। মন্ত্রীরা তিন-চার জন মিলে একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। ১৯০৫ সালে গঠিত প্রদেশ ব্যবস্থা যদি টিকে থাকতো তাহলে সদ্য স্বাধীন প্রদেশের এমন দূরবস্থা হতোনা। রেডী প্রশাসনিক কাঠামো পাওয়া যেতো। যা অন্য প্রদেশের ক্ষেত্রে বিদ্ধমান ছিল।

খুব বেশী পিছিয়ে পড়া এই প্রদেশের উন্নতির জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের যে সব জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল তা তারা নিতে পারেননি। হয়ত তাঁরা এর প্রয়োজন বোধ করেননি। হয়ত প্রদেশ সম্পর্কে তাদের সুস্পস্ট কোন ধারনা ছিলনা। বারোশ’ মাইল দূরে অবস্থিত এই প্রদেশের সাথে কেন্দ্রের শক্তিশালী টেলি যোগাযোগ বা বিমান যোগাযোগ ছিলনা। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব হয়ে যেতো। নুরুল আমিন সাহেবের অপ্রকাশিত স্মৃতিকথায় বিষয়টি খুবই স্পস্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে। পুর্ব পাকিস্তানের জন্যে যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন ছিল তা কেন্দ্র কখনই অনুভব করেনি। অথবা তারা পুরো বিষয়টাকে অবহেলা করেছে। প্রাদেশিক মুসলীম লীগের রাজনীতিতে মাওলানা ভাসানীকে অবজ্ঞা করা মোটেই বুদ্ধির পরিচায়ক হয়নি। প্রাদেশিক মুসলীম লীগ নেতাদের খামখেয়ালীপনা ও অদূরদর্শিতার ফলেই মাওলানা ভাসানী মধ্যবিত্ত তরুণ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করেন।দূর্বল মুসলীম লীগ সংগঠনের বিপরীতে আওয়ামী মুসলীম লীগ খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রদেশের সাধারন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ভাষাকে কেন্দ্র করে প্রদেশের সাধারন মানুষের ভিতর এক নতুন জাগরনের সৃস্টি হয়।মুসলীম লীগকে রাজনীতি থেকে বিদায় দেয়ার জন্যে মাওলানা ভাসানী ৫৪ সালের নির্বাচনের জন্যে শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেন। নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হয়। এরপর পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ এই দলটি নির্যাতিত মুসলমানদের বাঁচানোর তাগিদেই  ৪৭ সালে পাকিস্তান নামক  রাস্ট্রটি প্রতিস্ঠা করেছি। হিন্দু প্রাধান্যের সামনে তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্যেই পাকিস্তানের জন্যে জান দিয়েছে। মাত্র কয়েক বছরের মাথায় প্রদেশের মুসলমানেরা নিজেদের বাংগালী ভাবতে শুরু করে। ৭০ এর সাধারন নির্বাচন অনুস্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ধরনের গণভোটের মতো। এই নির্বাচন ছিল বাংগালী অবাংগালীর নির্বাচন। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোস্ঠি তা একেবারেই অনুধাবন করতে পারেনি। তারা আলোচনার দুয়ার বন্ধ করে দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে পাকিস্তান রক্ষা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানকে রক্ষা করা যায়নি। ১৬ই ডিসেম্বর’৭১ এ পাকিস্তানের পরাজয়ের পর পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হয়ে গেল। আমরা এবার ষোলয়ানা বাংগালী হিসাবে স্বাধীন হলাম। ৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিলাম মুসলমান হিসাবে। মাত্র ২৩ বছরে পাকিস্তান খন্ডিত হয়ে গেল। এটাই পাকিস্তানের ডেস্টিনি ছিল। ১৬ ই ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন,‘ হাজার সালকা বদলা লিয়া’। কেন বলেছিলেন তা এক লম্বা ইতিহাস। ইতিহাস সচেতন সব মুসলমানেরই জানার কথা। শুরু হলো বাংগালী মুসলমানের নব যাত্রা। ৭১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর। আমাদের আত্মপরিচয় এখনও নির্ধারিত হয়নি। আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী তাও ঠিক করে বলতে পারিনা। আমরা মুসলমান না বাংগালী? একদল বলেন পাকিস্তানের বিদায়ের সাথে সাথে দ্বিজাতি তত্বের কবর হয়েছে। বাংলাদেশ সৃস্টি হয়েছে বাংগালী তত্ত্বের ভিত্তিতে। এসব হচ্ছে রাজনীতির বাহাস বা বিতর্ক। রাজনীতিকরা বিতর্ক করেন তাদের ভোট এবং রাজনীতির জন্যে। কিন্তু গবেষকরা বলবেন প্রতিস্ঠিত গবেষণার ভিত্তিতে। আওয়ামী লীগ এবং তার দলীয় ও ভক্তরা মনে করেন আমাদের জাতীয়তা এবং ঐতিহ্য হচ্ছে ভাষা ভিত্তিক। যা  কোলকাতা আর দিল্লীর রাজনীতিক আর বুদ্ধিজীবীরা তাদের মাথায় ঢুকিয়েছে। শুধু ভাষাই হতো তাহলেতো ৪৭ সালেই বাংগদেশ অখন্ড এক থাকার কথা ছিল। এক থাকেনি , কারণ কংগ্রেস তা চায়নি। কারণ অখন্ড বংগদেশে মুসলমানেরা ছিল মেজরিটি। এখনও দুই বাংলা মিলে মুসলমানেরা মিলে মুসলমানেরা মেজরিটি। খোদা কখনও বেকুবদের হেফাজত করেন না। যে ভদ্রলোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠার বিরোধীতা করেছেন আর ১৯০৫ সালের  বংগভংগ রদের জন্যে আন্দোলন করেছেন তিনিই এখন আমাদের জাতীয় দর্শন হতে চলেছেন। যিনি বৈদিক ধর্ম ও আদর্শে বিশ্বাস করেন তারই বন্দনায় আমরা পাগল হতে চলেছেন। যিনি জমিদার হিসাবে এক সময়ে এদেশের গরীব কৃষকদের শোষণ করেছেন। তাঁর অত্যাচারের নমুনা কি ছিল তা কাংগাল হরিনাথ আর গগন হরকরার লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেন। এই মহা ভাগ্যবান মহাপুরুষের জন্ম জয়ন্তী উত্‍সব পালনের জন্যে বহুজাতিক কোম্পানীর অর্থের ভান্ডার সব সময় খোলা থাকে। মানবতার কবি নজরুলের এসব আয়োজন কখনই জোটেনা। এর রহস্য কি আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কখনও ভাবার সুযোগ পান না।

বাংলাদেশের অধিবাসীর  ৯০ ভাগ মুসলমান। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে আমাদের ধর্ম ও ধর্মীয় দর্শন  নিবিড়ভাবে জড়িত। ধর্মকে আমেদের জীবন থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। যেমন গান্ধীজী বলেছিলেন,তিনি প্রথমে হিন্দু তারপরে জাতীয়তাবাদী। ধর্মের বিনিময়ে তিনি স্বাধীনতাও চান না। তিনিই হচ্ছেন ভারতের বাপুজী। তিনি তাঁর হিন্দুত্ব বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই ভারত বিভক্তিকে সমর্থন করেছেন। আর আমরা জিন্নাহকে সাম্প্রদায়িক বলে গালআগাল দিই। ভারতের কট্টর হিন্দুবাদীরা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নতুন তত্ত্ব  দিয়েছেন। তাহলো ভারতবাসী সকলেই ভৌগলিক কারণে হিন্দু। মুসলমানদের বলতে হবে, হিন্দু মুসলমান। ভারতের হিন্দু নেতারা এখনও স্বপ্ন দেখেন অখন্ড ভারতের এবং হিন্দু সাম্রাজ্য প্রতিস্ঠার। আমাদের দেশে যারা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেন তারা জ্ঞানপাপী আর হিন্দু সাম্রাজ্যবাদের দালাল। তারা জেনে শুনে আমাদের জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কারন আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রধান উপাদান হচ্ছে আমাদের ধর্ম। এই ধর্মই আমাদের ৪৭ সালে ভারত থেকে আলাদা করেছে। এই ধর্মের কারনেই ১৭৫৭ সালে হিন্দুরা  ক্লাইভকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এই ধর্মের কারনেই হিন্দুরা  ১৫০ বছর ইংরেজ শাসনকে সমর্থন করেছে। ৭১ সালে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি অর্থনৈতিক কারনে। বাংগালী বলে নয়। ৬ দফা ছিল অর্থনেতিক শ্লোগান ও দাবী। ৬ দফায় ধর্মনিরপেক্ষতা বা বাংগালী বলে কোন শ্লোগান ছিলনা। পাকিস্তানী শাসক গোস্ঠি যদি ৬ দফা মেনে নিত তাহলে পাকিস্তান আজ খুব বেশী হলে একটি  কনফেডারেশন হতো। বংগবন্ধুও হয়ত  তাই চেয়েছিলেন। তাই তিনি স্বাধীনতার কোন প্রকাশ্য ঘোষণা দেননি। কিছুলোক এখন তাঁর নামে নানা ধরনের ঘোষণা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। জিন্নাহ ভারত ভাগ করেছেন আর বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন হচ্ছে রামায়ন মহাভারতের মতো একটা মীথ। ভারতের হিন্দুরা এই মহাকাব্য দুটিকে ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা দিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা একটা হচ্ছে ইতিহাস আরেকটা হচ্ছে মীথ। অনেক সময় মীথ ইতিহাসের চেয়ে বহু গুণে শক্তিশালী হয়। ( নয়া দিগন্ত, জুন ৪, ২০১১ )

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


জংগীবাদ ও সন্ত্রাসে গোঁজামিল   /  এরশাদ মজুমদার

রাজধানী ঢাকার অতি নিরাপত্তা বেস্টিত এলাকা গুলশানের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে কয়েকজন মুসলমান নামধারী তরুণ বা যুবক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কিছু বিদেশী ও দেশীকে হত্যা করেছে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত। কিছুদিন আগেও শুনতাম মাদ্রাসা গরীব ছাত্ররা এসব ঘৃণ্য কাজ করতো বলে অভিযোগ ছিল। হয়ত এখনও আছে। মাঝখানে এর ভিতর ঢুকে পড়েছে ধনী পরিবারের ইংরেজী শিক্ষিত ছেলেরা। কিন্তু কেন এমন হলো? এসব ক্ষেত্রে রাস্ট্র একরকম চিন্তা করে আর অন্যরা  অন্য রকম চিন্তা করে। শনিবারের প্রথম আলোতে দেখলাম এ বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। ছেলে মেয়েরা বা তরুণরা কাকে অনুসরণ করবে। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, আমি এক সময় বাবাকে অনুসরণ করেছি, পরে এফ আর খানকে অনুসরণ করেছি। আমি মনে করি নেলসন ম্যান্ডেলা একজন রাজনীতিক যাঁকে অনুসরণ করা যায়। যাঁরা তাঁকে এক নাগাড়ে ২৭ বছর জেলে রেখেছে তিনি তাঁদেরকেই ভাই বলে বুকে টেনে নিয়েছেন। বংগবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার নায়ক ও স্বপ্ন। কিন্তু জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। যা পেরেছেন ম্যান্ডেলা।

তরুণদের অনুপ্রেরণায় দেখলাম জগত বিখ্যাত চে গুয়েভারার নাম। আমেরিকার নজরে চে ছিলেন একজন টেররিস্ট,জংগী,সন্ত্রাসী ও গণতন্ত্রের শত্রু। তাই চে‘কে নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ লুকিয়ে রেখেছিল। বলিভিয়া স্বাধীন হওয়ার পর চে‘র লাশ আবিষ্কার হয়। আমরা স্কুলে থাকতে বিদ্যাসাগর ও হাজী মহসিনের জীবনী পড়তাম। এখন পড়ানো হয়না।  স্কুল কলেজে এখন আল্লাহর রাসুলের(সা) জীবনী পড়ানো হয় না। এক সময় পড়ানো হতো। জগতের একশ’ বিখ্যাত ব্যক্তির মাঝে মুহম্মদকে(সা) প্রথম ও প্রধান ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসুল হিসাবে বিবেচনা না করে শুধু মানুষ হিসাবে বিবেচনা করলেও তিনি সকল শ্রেষ্ঠেরও শ্রেষ্ঠ। রাসুলের জীবনের বহু ঘটনা আছে যা সকল মানুষের অনুসরণীয়। মাওলানা জফরী সাহেব বলেছে, জংগী শব্দটাকে বাংলাদেশে অপবিত্র করে ফেলা হয়েছে। এটি ভাল শব্দ। জং মানে যুদ্ধ। যারা যুদ্ধ করে তারাই জংগী। বাংলাদেশে কিছুলোক ইচ্ছাকৃত ও সুচতুর ভাবে উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী,গুপ্ত হত্যাকারীদের জংগী বলে প্রচার করছে। চট্রগ্রামে সম্মানিত জংগী পরিবার আছে। সাভারে জং পরিবার আছে তাঁরা এখন কেমন আছেন জানিনা। প্রায়ই শুনি পুলিশ জেহাদী  বই পেয়েছে। কিন্তু জানিনা জেহাদী বই কি?

৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানীরা বলতো দুস্কৃতকারী বলা হতো। জনসাধারন বুঝতো এরা কারা। কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধাদের ও দিল্লী সন্ত্রাসী ও জংগী বলে প্রচার করে। ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধাদেরও ইজরায়েলীরা জংগী, টেররিস্ট ও সন্ত্রাসী বলে থাকে। জার্মানীতে হামলার পর সরকার বলেনি আক্রমণকারী জংগী বা সন্ত্রাসী, বলেছেন আক্রমণকারী মানসিক রোগী বা বিকৃত মনের মানুষ। কিন্তু আমাদের দেশে বলা হতো তারা কারা কোন তদন্ত না করেই। আরেকটা বিষয় দেখে আমার ভাল লাগছে যে, ধর্মে অনাগ্রহী (সেক্যুলার) বুদ্ধিজীবী ও সরকার ইসলাম নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করেছে। ইসলাম, কোরাণ, সুন্নাহর  সঠিক ব্যাখ্যার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে। রাজার সাথে যখন আলেমদের বনিবনা হয়না তখনই দরবার ইসলামের ব্যাখ্যার জন্যে আলেম খুঁজতে আরম্ভ করেন।

নির্যাতিত শোষিত নিগৃহীত মানুষের বিদ্রোহ ও সশস্ত্র বিপ্লবের কথা শুনেছি। শুনেছি চীন ও রাশিয়ার বিপ্লবের কথা। ওই বিপ্লবের কারণেই কার্লমার্কস, লেনিন মাও জেদং ও স্টালিন জগত বিখ্যাত হয়েছেন। তখন পৃথিবীর দেশ দেশে চলছিল কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই সব বিপ্লব বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল গণমানুষের শাসন প্রতিস্ঠা করা। সেই বিপ্লবের চেতনা ও কর্মের ঢেউ এসে লেগেছিল আমাদের দেশে ও তার আশে পাশে। আমরা শুনেছি চারু মজুমদার ও নক্সালবাড়ির কথা। আমরা শুনেছি হক-তোয়াহার কথা।দূরদেশে শুনেছি ক্যাস্ট্রো আর চে’গুয়েভারার কথা।যৌবনে আমরাও মোহিত হয়েছিলাম ওই বিপ্লবের কথা শুনে। কারণ আমরা ওই সময়ে ভাবতাম কিভাবে নিপীড়িত মানুষের মুক্তি অর্জন করা যায়। শুনেছি ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মাইনরিটির কাছে মেজরিটির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা দেখেছি চীন ও রাশিয়ায় সাধারন মানুষের বিপ্লব। বিপ্লব হয়েছে সেখানে যেখানে ছিল রাজা বাদশাহ বা ডিক্টেটরদের শাসন। এসব রাজা বাদশাহ বা একনায়করা ছিলেন শোষক। ওই শোষকদের কাছ থেকে মুক্তির একমাত্র খোলা পথ ছিল সশস্ত্র বিপ্লব। আমাদের দেশেও বহু তরুন প্রাণ দিয়েছে গনমানুষের মুক্তির জন্যে। ভারত উপমহাদেশে ১৯২০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিস্ঠিত হলেও কমিউনিস্ট বিপ্লব সাধিত হয়নি। ভারতে এই বিপ্লব কখনই সম্ভব ছিলনা। সাধারন মানুষের ভিতর সনাতন ধর্মের প্রভাব ছিল অকল্পনীয়। যা এখনও জারী আছে। ভারতে প্রায় ৩০ কোটি হরিজন বা অচ্যুত। ধর্মীয়ভাবে এরা এক ধরনের দাস। ভারতের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব অম্বেদকার হরিজনদের মুক্তির জন্যে আন্দোলন করে শেষ পর্যন্ত হিন্দুধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। কমিউনিস্টদের সম্পর্কে মুসলমান জন সাধারনেরও ধারনা ছিল তাঁরা ধর্ম বা খোদায় বিশ্বাস করেনা। ফলে সাধারন মুসলমানদের মাঝে কমিউনিজম তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আরবদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এখন গণবিদ্রোহ শুরু হয়েছে। অনেক দেশে শাসকরা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখানে লড়াই চলছে গণমানুষের অধিকারের জন্যে। এক ধরনের গনতন্ত্রের জন্যে। গনতন্ত্র ছাড়া মানুষের সমাজ বা রাস্ট্র পরিচালনার জন্যে নতুন কোন প্রেসক্রিপশন এখনও পাওয়া যায়নি।

একদলীয় একমতের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থা মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বহুদলীয় বহুমতের সমাজকে মানুষ এখনও ভালবাসে বা পছন্দ করে। এমন কি কমিউনিস্টরাও এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধিতিতে, মানে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। পশ্চিম বাংলায় বামপন্থীরা ৩৫ বছর ধরে রাজ্য সরকার পরিচলনা করছে। নেপালের মাওবাদীরাও নির্বাচেনে অংশ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশেও বামপন্থীরা ক্ষমতার সাধ পাওয়ার জন্যে সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। অভিযোগ রয়েছে মহোজোট সরকারের মন্ত্রী সভায় সিপিবি বা সাবেক মস্কোপন্থী অনেক নেতা রয়েছে।  সোজা কথায় বলা যেতে পারে বামপন্থীরা সশস্ত্র বিপ্লবের পথ ছেড়ে ভোটের পথে এসেছে। এক সময় তারা বলেছেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো বলে ৭০ সালের নির্বাচন বয়কট করেছে। বৃটেন আমেরিকার দলগুলো বহুকাল আগে থেকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর এখন রাশিয়াতেও নির্বাচনী হাওয়া বইছে।

কমিউনিস্ট , বামপন্থী বা কমিউনিজমকে উচ্ছেদ করার সাম্রাজ্যবাদী ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের লেবাসধারী দেশগুলোর প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে বিশ্বের মুসলমানেরা আমেরিকার সাথে মিতালী করেছিল। মুসলমানদের বুঝানো হয়েছিল কমিউনিস্টরা ধর্ম বা খোদা মানেনা। খোদাদ্রোহীদের বিনাশের অভিযানে মুসলমানদের সমর্থন আদায় করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। বামপন্থীরা এখন সাম্রাজ্যবাদের দোসর বা বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ছীন রাশিয়া দুটো দেশই এখন আমেরিকার বন্ধু। চীনও তার দেশের নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দেশটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে থেকেও আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলেছে। এক সময় চীন আমেরিকাকে কাগুজে বাঘ বা পেপার টাইগার বলে গালাগাল করতো। এক সময় কার্ল মার্কস বলেছিলেন ইসলাম একটি রেডিকেল ধর্ম। সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের অনেক মিল। মাওলানা ভাসানীও ইসলামী সমাজতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ইসলাম এখন ইহুদী খৃস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আক্রমনের শিকার।বিশেষ করে পশ্চিমা খৃস্ট বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। ভারতে মুসলমানেরা নির্যাতিত হচ্ছে। পশ্চিমে বোরখা ও নেকাব নিয়ে টানাটানি করছে। বহু পশ্চিমা দেশ নারীদের পর্দার বিরুদ্ধে আইন পাশ করছে। চীনেও মুসলমানেরা অধিকারের জন্যে লড়াই করছে। অথচ এই চীনে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সাতশ’ সালের দিকে। আল্লাহর রাসুল(সা) জীবীত থাকতেই বলেছিলেন জ্ঞান লাভের জন্যে চীন সফরে যাও। ওই সময়ে আমেরিকা নামে কোন দেশ ছিলনা। ইউরোপীয়রা সভ্যতার আলো দেখতে শুরু করেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের পাদপীঠ ছিল এশিয়া। বিশেষ করে চীন ভারত মিশর ও ইরাক। এ অঞ্চলের সভ্যতার বয়স প্রায় আট হাজার বছর। এখন জ্ঞান বিজ্ঞান চলে গেছে পশ্চিমে। তাই ওরা শক্তি ও বিজ্ঞানের জোরে জগতবাসীকে পদানত করতে চায়।

ইসলাম ও মুসলমানদের পুণর্জাগরনের ভয়ে সারা বিশ্ব এখন ভীত। সবার টার্গেট এখন ইসলাম। ইসলামকে নানা ধরনের গালাগাল দেয়া হচ্ছে। আমেরিকা এবং তাঁর বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে বহু মুসলমান দেশও ইসলামকে জংগী ধর্ম বলে অভিহিত করছে। ইসলামী ধর্ম শিক্ষার কেন্দ্র মাদ্রাসা গুলো সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং কেন্দ্র বলে চিহ্নিত করছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে আমেরিকা ও তাঁর বন্ধুরা। এমনি প্রেসক্রিপশন দিয়েছিল বৃটিশরা পরাধীন ভারতের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যে। ওই কারণেই সে সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। যা এখনও জারী আছে। একটা হচ্ছে কওমী, আরেকটা হচ্ছে আলীয়া। বৃটিশ আমলেই সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে দেওবন্দে মাদ্রাসা প্রিস্ঠিত হয়। দেওবন্দীরা ছিলেন স্বাধীনতাকামী ও ইংরাজের সব ব্যবস্থার বিরোধী। সেই সিলসিলায় কওমী মাদ্রাসা গুলো পরিচালিত হচ্ছে। কওমী মাদ্রাসা গুলো সরকারের কোন সাহায্য গ্রহণ করেনা। এসব মাদ্রাসা জনগণের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। আমেরিকার প্রেসক্রিপশন মোতাবেক হাসিনা সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্যে উঠে পড়ে লেঘেছে। আমেরিকানরা এজন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করার কর্মসূচীও নিয়েছে।

ইসলাম ও মুসলমানদের মৌলনাদী ও সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করার জন্যে আমেরিকা ও তার দোসর দেশগুলো এখন নানা যড়যন্ত্রে লিপ্ত। ৯/১১ কার ঘটিয়েছে তা আজও বিশ্ববাসী জানতে পারেনি। অথচ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ইরাকে হামলা চালিয়েছে। আমেরিকা বলেছিল ইরাকের কাছে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু ইরাকে এ ধরনের কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তথকথিত জাতিসংঘের প্রস্তাবের কথা বলে আমেরিকা ও তার বন্ধুরা বিভি্ন্ দেশ আক্রমন করে চলেছে। আফগানিস্তানকে আক্রমন করে পাকিস্তানকে অশান্ত করে তুলেছে। আমেরিকার পরামর্শে পাকিস্তান ইতোমধ্যরই মাদ্রাসা সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশে ১/১১র সরকারও এসেছিল আমেরিকার সমর্থনে ভারত ও ইউরোপীয় দেশগুলোর যড়যন্ত্রের কারনে।ওই সরকারই নারীনীতি তৈরী করে গেছে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকার ১/১১ সরকারেরই ওয়ারিশ। মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের জন্যে আজ থেকে বছর দশেক আগে স্থানীয় বৃটিশ দূতাবাস একটা জরীপ চালিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের সুপারিশ করা। বর্তমান সরকার সেই সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। বিদেশী প্রভুদের অনুরোদ ও সুপারিশে শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিয়েছেন যারা বাংলাদেশকে ইসলাম মুক্ত দেশে পরিণত করার কাজে নিয়োজিত। নুরুল ইসলাম নাহিদতো আওয়ামী লীগের লোকই নন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন প্রভুদের নির্দেশে। তিনি প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিবেদিত।প্রভুরা মনে করেন আগামীদিনের পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র আদর্শ হিসাবে বিকাশ লাভ করবে। তাই ইসলামকে এখনই প্রতিহত না করলে পৃথিবী আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের দখলে থাকবেনা। তাই পশ্চিমা জগতে জজবা উঠেছে, ইসলামের ভিতর জংগীবাদ লুকিয়ে আছে। মুসলমানরা মৌলবাদী তারা জেহাদে বিশ্বাস করে। তারা শ্লোগান তুলেছে শান্তির ইসলাম থেকে জেহাদী ইসলামকে আলাদা করতে হবে। আল ক্বায়েদা নামক সংগঠনের জন্মদাতা হচ্ছে আমেরিকান প্রশাসন। আলক্বায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন আমেরিকানদের এক সময়ের ঘনিস্ট বন্ধু। তালেবানদের অবস্থাও একই ধরনের। আমেরিকা আলক্বায়েদা ও তালেবান যৌথভাবে লড়াই করেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে। সেখানে রাশিয়ার পরাজয় হয়েছে। মুসলমান দেশ গুলোতে আল ক্বায়েদা ও তালেবান সংগঠন জন্ম নিতে পারে এই ভয়েই আমেরিকা তার বন্ধুরা শংকিত। তাই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমেরিকানদের ইসলাম বিরোধী পরিকল্পনার কৌশল বাংলাদেশ সরকারও প্রয়োগ করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার তাই সর্বত্র জংগীবাদ দেখতে পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন খতম করার জন্যে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা জগত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিশ্বাসী নাহিদ মতিয়া মেনন এখন আমেরিকার হয়ে কাজ করছে। তারা হয়ত বলবেন,আমরা আগেও ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলাম এখনও আছি। আগে চীন রাশিয়ার হয়ে কাজ করেছি, এখন ইসলাম খতম করার প্রশ্নে আমেরিকার হয়ে কাজ করছি।

জংগীবাদ ধ্বংসের নামে এখন প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের শহর বন্দর গ্রামে মোল্লা মৌলবী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরবী উর্দু ফারসী লেখা কোন কিছু দেখলেই পুলিশ বা রেব মনে করছে জেহাদী পুস্তক। সুতরাং আর যায় কোথায়? এই অবস্থা আমাদের স্কুল ও কলেজ জীবনে দেখেছি। হাতে সোভিয়েত দেশ বা পিকিং রিভিউ দেখলেই গোয়েন্দারা পিছু নিতো। এখন আরবী বর্ণমালা জাতীয় কিছু দেখলেই হলো। এমনতো হতে পারে যে, যত জেহাদী ধরতে পারবে তত বেশী বিদেশী সাহায্য পাবে। সন্ত্রাস দমনের নামে আরবী শিক্ষিতদের হেনস্থা করা সরকারের আদর্শে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে নাম করে ফেলেছে। রেব এবং পুলিশের টর্চার সেলের কথা বিদেশী কাগজে ছাপা হয়ে গেছে। রেব ও পুলিশ বিদাশী কাগজের অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে আসছে। এমন কি বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের আমেরিকান রিপোর্টও বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করেছে। পররাস্ট্র মন্ত্রী দীপুমনি বলেছেন, আমেরিকার রিপোর্টে কিছু আসে যায়না। জাতিসংঘতো এখনও কিছু বলেনি।

কয়েকদিন আগে এক শুক্রবার মসজিদ গুলোতে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জংগীবাদ ও সন্ত্রাস দমন সম্পর্কে একটি তৈরি করা খোতবা বিতরন করেছে স্থানীয় পুলিশ। খতিব বা ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করা হয়েছে খোতবাটি পাঠ করে মুসল্লীদের শোনাবার জন্যে। ওই সরকারী খোতবায় ফ্যাতনা ফাসাদ সম্পর্কে কোরাণের বেশ কিছু আয়াত উল্লেখ করে জংগীবাদ ও সন্ত্রাস কি তা বোঝাবার চেস্টা করা হয়েছে। একদিকে ধর্মীয় শিক্ষিত মানুষকে সাধারন মানুষের কাছে হেয় করা হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের উপর নির্ভর করে সন্ত্রাস বিরোধী খোতবা প্রচারের চেস্টা করা হচ্ছে। মুসলমান দেশে কোরাণ ও হাদিস নিয়ে শাসকদের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করার জন্যে কোরাণ ও হাদিস নির্দেশ দিয়েছে। কোরাণের ওইসব আয়াতকে অত্যাচারী শাসক ও তাদের তাবেদাররা সহ্য করতে পারেনা। কোন কোন দেশে খোতবায় ওইসব আয়াত পাঠ বা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ রয়েছে। শুনেছি অনেক বড় বড় আলেম ও খতীব বিভিন্ন দেশে জেলে আছেন। বাংলাদেশেও আজ সে রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নারীনীতি , শিক্ষা ব্যবস্থা ও সন্ত্রাস দমন নিয়ে সরকার কোরাণ ও হাদিসের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। সরকারী আলেমরা(যা সব সময়ই থাকে) কোরাণের এক রকম ব্যাখ্যা করছেন। জ্ঞানী গুণী আলেম সমাজ তাঁদের জ্ঞানের ভিত্তিতে কোরাণের ও হাদিসের ব্যাখ্যা করছেন।

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


ফতোয়া নিয়ে বাংলাদেশে ফতোয়াবাজির আর শেষ নেই। বিচারপতি বড় বড় আইনজীবীরাও ফতোয়া নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। যদিও তাদের কারোই ফতোয়া দেয়ার যোগ্যতা বা অধিকার নেই। যেমন নেই সামান্য আরবী শিক্ষিত কোন মোল্লা মৌলবী বা হুজুরের। অশিক্ষিত কিছু লোকের ভুয়া ফতোয়ায় ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নারী প্রাণ হারিয়েছেন বা লান্ছিত হয়েছেন। অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত হুজুরের ফতোয়ার সাথে গ্রামের টাউট বাটপার চেয়ারম্যান মেম্বারও জড়িত। এই বাটপারদের সহযোগিতা না পেলে তথাকথিত হুজুর নৃশংস অবৈধ ফতোয়া দিতে পারেনা। কিন্তু অবৈধ ফতোয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। দেশের প্রচলিত আইনে এসব অবৈধ ফতোয়া দানকারী ও এর সহযোগীদের কঠের শাস্তি দিতে পারে। পুলিশ সাথে সাথে ঘটনা আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করতে পারে।কিন্তু পুলিশ তা করেনা। বরং উল্টো গ্রাম্য মাতবরদের সাথে হাত মিলিয়ে দূর্বলদের বিরুদ্ধে লেগে যায়। এটা হলো চলমান সমাজচিত্র। রাস্ট্র বা আইন এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করেনা।

অশিক্ষিত লোকদের ফতোয়াবাজির সুযোগে কিছু বিচারপতি ও ডাকসাইটে আইনজীবী ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংগ ফতোয়া ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। শুরুতেই বলেছি, যে সকল বড় বড় আইনজীবী ফতোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেগেছেন তাদের কারোই ওই রকম মতামত দেয়ার আইনগত অধিকার নেই। কারণ তারা কোরাণ ইসলাম বা ফতোয়া সম্পর্কে কোন ধরণের জ্ঞান রাখেন না। কারন বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থায় তাদের ইসলাম কোরাণ ও ফতোয়া সম্পর্কে না জানলেও চলে। এমন কি বিচারকদেরও কোরাণের আইন না জানলে চলে। বাংলাদেশে রাস্ট্র পরিচালনার জন্যে  কোন পর্যায়ে কোরাণের জ্ঞান প্রয়োজন হয়না। মা বাপের কবর জেয়ারত করতেও বড় বড় সাহেবদের হুজুরদের দ্বারস্থ হতে হয়। ইদানিং ছেলে মেয়েদের ধর্মের প্রাথমিক জ্ঞানদান করার প্রয়োজনও মা বাপ অনুভব করেন না। অথচ এই দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ মুসলমান। মুসলমানদের জীবনের অনেকাংশ জুড়ে আছে কোরাণিক আইন। যারা বুক ফুলিয়ে বলেন ‘ আমরা ধর্ম পালন করিনা, তাদেরও পারিবারিক জীবনে অনেক ধর্মীয় আচার মানতে হয়। এমন কি সিপিবির ফরহাদ সাহেবকে বলে যেতে হয়েছে,মারা গেলে তাঁকে যেন মুসলমানের রীতিতে দাফন করা হয়। নামাজ রোজা করেন না, নিজেকে স্যেকুলার বলে জাহির করতে গৌরব বোধ করেন  এমন মানুষকেও বহু ইসলামিক আইন মেনে চলতে হয়। যেমন ছেলে মেয়ের বিয়ের সময় কাজী বা ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে হয়। কোর্ট বা সিভিল ম্যারেজে কাবিন মোহর খোরপোষ অধিকার ইত্যাদির বালাই নাই। এমন কি মুসলমান নামধারী ব্যক্তিকেও সামাজিক কারণে ইসলামের অনেক রীতি মানতে হয়।

যেকোন মুসলমান সমাজে ফতোয়ার অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফতোয়া ছাড়া ইসলামিক সমাজ চলতে পারেনা।ফতোয়া হচ্ছে এক ধরনের লিগ্যাল ওপিনিয়ন বা আইনি মতামত বা পরামর্শ। যিনি ইসলামিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তিনিই একমাত্র ফতোয়া দিতে পারেন। এজন্যে তাঁকে ফকী্হ বা খতীব হতে হয়। সাধারন আদালত বা বৃটিশ আইনে পরিচালিত আদালতের মামলার জন্যে সনদধারী উকিলের পরামর্শ নিতে হয়। আমাদের দেশে শরীয়া আদালত নেই। শরীয়া সম্পর্কিত বিষয়ও নিস্পন্ন করেন সাধারন আদালত। সেজন্যেই মাঝে মাঝে জটিলতার সৃস্টি হয়। অনেক বিচারপতি শরীয়া আইন না জেনে ভুল রায় দিয়ে সমাজে বিশৃংখলা সৃস্টি করেছেন। পরে সম্মানিত ফকীহরাই সমস্যার সমাধান করেছেন। বাংলাদেশে বহু উচ্চ জ্ঞান সম্পন্ন ফকীহ আছেন। সম্মানিত ফকীহদের নিয়ে বহু আগেই সরকারের উচিত ছিল শরীয়া কাউন্সিল বা ফকাহ কাউন্সিল গঠন করা। তাহলে এসব জটিলতা দেখা দিতোনা। আমাদের সরকার গুলো এক ধরনের জ্ঞানপাপী স্যেকুলার ও প্রগতিশীলতার দাবীদার ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবান্বিত। ফলে ধর্ম ও ইসলাম নিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃস্টি হয়। যেমন চলমান নারীনীতি নিয়ে সৃস্ট জটিলতা। এখানে সরাকারের এক ঘুয়েমি বা ইগো কাজ করছে। নারীনীতিতে ইসলাম বা কোরাণ বিরোধী কিছু আছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব দেশের আলেম সমাজের। নারীনীতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যে বহু আগেই আলেমদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা উচিত ছিল।

আল্লা্হপাক কালামে পাকের ১৬ নম্বর সুরা আন নাহল এর ৪৩ নম্বর আয়াতে সুস্পস্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ তোমরা না জানলে তোমাদের জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর’। এখানে জ্ঞানী বলতে ফকিহ বা মুফতীদের কথা বলা হয়েছে। ফকিহ বা মুফতীরাই মুসলমান সমাজে ইসলামের আইনী ব্যাখ্যা দিবেন। আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিগণও প্রয়োজনে ফকিহদের পরামর্শ গ্রহন করে থাকেন। কারণ বিচারপতিগণ কোরাণের আইনী ব্যাখ্যা দিবার অধিকার রাখেন না। পরামর্শের জন্যেই আদালত অনেক সময় এমিকাস কিউরি নিয়োগ করে থাকেন। এমিকাস কিউরি হাচ্ছেন আদালতের বন্ধু। বৃটিশ বা অনৈসলামিক আইনের বিশেষজ্ঞরা যেমন এমিকাস কিউরি হিসাবে কাজ করেন তেমনি ফকিহরাও ইসলামী আইনের বিশেষজ্ঞ। ফকি্দের অবহেলা বা ইগনোর করার অধিকার কারো নেই। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, তোমরা একটি আয়াত হলেও মানূষের কাছে পৌঁছে দিও বা জানিয়ে দিও। রাসুলের(সা) কাছে  সাহাবীরা  বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বা ফতোয়া চেয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করতেন। এমন কি সাধারন উম্মী জন সাধারনও আসতেন রাসুলের(সা) কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্যে। তিনি খুবই মনোযোগ দিয়ে তাঁদের কথা শুনতেন এবং দরদ দিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেন। না জানলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নেয়া ফরজ। কারণ আল্লাতায়ালা অজ্ঞানতার অন্ধকারকে পছন্দ করেন না। শুধু জ্ঞানীদের কাছে নয় প্রয়োজনবোধে সূদুর চীন যাওয়ার জন্যেও রাসুল(সা) তাগিদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহপাক নিজেও ফতোয়া দিয়েছেন।সুরা নিসার ১৭৬ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, লোকেরা ওয়ারিশহীন( মা বাবা পুত্র কন্যা) মৃত ব্যক্তির (কালালাহ) ফেলে যাওয়া সম্পদ সম্পর্কে জানতে চায় বা ফতোয়া/সিদ্ধান্ত চায়। আপনি বলে দিন ওই সম্পদ ভাই ও বোনদের মধ্যে বন্টন হবে। সুরা নিসার ১২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, নারী ও এতিম কন্যা শিশুদের ব্যাপারে লোকেরা আপনার সিদ্ধান্ত ( ফতোয়া ) চায়, আপনি বলে দিন এই ব্যাপারে আল্লাহপাকের বিধান এইরূপ। চলমান নিবন্ধে আমরা ফতোয়া নিয়ে আলোচনা করছি। ওয়ারিশয়ানা বা সম্পদ বন্টন নিয়ে আলোনা করছিনা। তাই বন্টন বিষয়ে বিশদ বলা হচ্ছেনা।

বাংলাদেশ একটি মুসলমান প্রধান দেশ। কিন্তু রাস্ট্র এবং সরকার ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত নয়। যদি তা হতো তাহলে শরীয়া আইন বা ফতোয়া নিয়ে এতকথা বলার অবকাশ থাকতোনা। যেহেতু এদেশে ৮৫ ভাগ মানুষ মুসলমান সেহেতু এখানে সরকার ইচ্ছা করলেই কোরাণ ও  হাদিসের বিরুদ্ধে কোন আইন করতে পারবেনা। তবে সরকার জনগণকে ধোকা দেয়ার চেস্টা করতে পারবে। এ ধরনের চেস্টা অথীতের অনেক সরকার চেস্টা করেছে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ফতোয়ার মূল সুত্র হলো কোরাণ হাদিস ইজমা কিয়াস ও ফকিহ বা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত মতামত ও সিদ্ধান্ত। সুতরাং বন্ধ করার কোন অধিকার বাংলাদেশের কোন আদালতের নেই। এমন কি জাতীয় সংসদও তা পারবে না। এমন কি বৃটিশ সাসনের ১৯০ বছরেও ইসলামী আইন বা ফতোয়ার কোন পরিবর্তন হয়নি। খস্টধর্মে বিশ্বাসী ইরেজরা তা করতে চায়নি।

আমাদের দেশে বা পৃথিবীর বহুদেশে আইনের প্রাচীন সূত্র হচ্ছে রোমান শাসকদের আইন। রোমানরা ছিলেন পৌত্যলিক বা প্যাগান। তাদের আইনের কোন ধর্মীয় সূত্র ছিলনা। কিন্তু ইসলামী আইনের মূলসুত্র হচ্ছে আল্লাহপাকের বাণী ও রাসুলের(সা) হাদিস। কোরাণ ও হাদিসের আলোকে ইমাম এবং ফকীহগণ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধানে ফতোয়া দিয়েছেন। সেই ফতোয়া দানের বিধি এখনও জারী আছে। আধুনিক আইন বলতে যা বুঝায় তা হলো পশ্চিমী ধ্যান ধারনায় রচিত ধর্ম নিরপেক্ষ আইন। ইসলামী আইন হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের জীবন যাত্রার আইন। এই আইনের রাস্ট্রীয় কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ইসতিহাদ ইসলামি আইনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী আইনের গবেষনায় ইসতিহাদ একটি নতুন মাত্রার সংযোজন করেছে। ইসলামী আইনের বিশষজ্ঞ ও জ্ঞানীরা ইসতিহাদের মাধ্যমে মানব কল্যাণে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। কারন আল্লাহপাক মানব কল্যান ও মানব জাতির উন্নতির জন্যেই এ জগতে ইসলামকে প্রেরণ করেছেন মহানবী হজরত মোহাম্মদের(সা) মাধ্যমে। ইসলাম কোন স্থবির ধারনা নয়। ইসলামে গবেষণার সকল দুয়ার খোলা। এই কারণেই ইসলাম জগতে সবচেয়ে উদার ও প্রগতিশীল ধর্ম। ইসলামে কোন ধরণের গোঁড়ামী সুযোগ নেই। মুক্তমন নিয়ে ভাবলে দেখা যাবে ইসলামের সাথে বিজ্ঞান দর্শন ও আধুনিক চিন্তাধারার কোন বিবাদ বা দ্বন্ধ নেই। পশ্চিমের তথাকথিত মানুষেরা স্বাভাবিক জীবন বিধির বাইরে চলে গেছে। নারী স্বাধীনতার নামে তারা মা বোন স্ত্রীকে বাজারের পণ্যে পরিণত করেছে। পশ্চিমের নেতারা ইসলামকে ভয় করে। তারা জানে একদিন এ পৃথিবীতে ইসলামই হবে মানব জাতির মুক্তির একমাত্র পথ। তাই তারা শয়তানের দোসরে পরিণত হয়েছে। এবং চারিদিক থেকে ইসলামকে আঘাত করা শুরু করেছে। ৯/১১র টুইন টাওয়ারের ঘটনা ছিল একটি পরিকল্পিত নাশকতা। যার মাধ্যমে শুরু হয় ইসলামের বিরুদ্ধে নব ক্রুশেড। ইতোমধ্যেই পশ্চিমের কোন কোন নেতা মুখ ফসকে মনের কথা বলে ফেলেছেন নতুন ক্রুশেডের কথা। প্রথম ক্রুশেড স্থায়ী হয়েছিল দুশো বছর। তারা নয়া ক্রুশেডকেও দুশো বছর স্থায়ী করতে চায়।

ইসলামই জগতের মানুষকে সর্বপ্রথম আত্মার সার্বভৌমত্বের কথা শুনিয়েছে। ইসলামের মহান ঘোষণা হচ্ছে জগতে মানুষ কারো কাছে মাথা নত করবেনা। মিরাজের মাধ্যমে ইসলাম জানিয়েছে, মানুষ পরম জ্ঞানের মাধ্যমে জগতের সীমানা অতিক্রম করে স্রস্টার কাছে পৌঁছাতে পারে। ইসলামে জ্ঞানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। জ্ঞান চর্চা মানুষের জন্যে ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য বলে ঘোষনা করা হয়েছে। জ্ঞান না থাকলে মানুষ নিজেকেও চিনবেনা আর তার নিজের স্রস্টাকেও চিনবেনা। আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি সক্রেটিস বলেছেন,‘ নো দাইসেল্ফ’। দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন,‘ মান আরাফা নফসা,ফাকাদ আরাফা রাব্বা’। যে মানুষ নিজেকে চিনতে পেরেছে তার কাছেই জ্ঞানের দরজা খুলে গেছে। সৃস্টি নিয়ে গবেষণা করাও মানুষের জন্যে অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ড: সালাম বলেছেন, কোরাণ থেকেই তিনি তাঁর গবেষণার সকল উপাদান ও উপাত্ত পেয়েছেন। সাত আসমান ও সাত সাগর সবই মানুষের গবেষণার বিষয়।সমস্ত সৃস্টি ও মহাজগত আল্লা্হপাক সৃস্টি করেছেন মানুষের খেদমতের জন্যে। মানুষকে অবশ্যই  সৃস্টির রহস্য জানার অধিকার আল্লাহপাক দিয়েছেন। ইসলামের প্রথম ৬শ’ বছর ছিল জ্ঞান চর্চার সোনালী সময়। আল্লার রাসুল(সা) বলেছেন, তোমরা যতদিন পবিত্র মহাগ্রন্থ আলকোরাণ ও আমার সুন্নাহকে বুকে ধারন করবে ততদিন এই জগতের ইমামতি তোমাদের হাতে থাকবে। এরপর মুসলমানরা ইসলাম থেকে সরে গেছে। তারা হয়ে পড়েছে নামে মুসলমান। তারা হয়ে গেছে রোমানদের মতো শান শওকত ওয়ালা বাদশাহ ও শাহেনশাহ। দুনিয়ার বাদশাহী মহান আল্লাহপাকের হাতে। মানুষ তাঁর বান্দা্ ও খলিফা। মুসলমানরা সেকথা ভুলে হয়ে গিয়েছিল রাজা বাদশাহ। তারা কিতাব ও গবেষণাগার ফেলে দিয়ে তলোয়ার হাতে নিয়েছিল। মুসলমানেরা বিষয়টা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মংগল। ক্ষমতা ফেরাউন নমরুদেরও ছিল। তাদের করুণ পরিণতি কালামে পাকে বর্ণিত হয়েছে। আজকের ফেরাউনরাও একদিন জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু জ্ঞানের পায়বন্দী আখেরাত পর্যন্ত জারী থাকবে।

ফতোয়া ইজমা কায়স ইসতিহাদ হচ্ছে জ্ঞানের জগতে প্রবেশের আইন সম্মত দুয়ার। যারা ফতোয়ার বিরুদ্ধে লেগেছে তারা ইসলামের এবং মুসলমানদের মিত্র নয়। তারা মুসলমান নামধারী ইহুদীদের বন্ধু। বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি পশ্চিমা জগতের প্রভাবশালীর গোস্ঠির এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। আমরা তাদের নিয়মিত দেখছি, কিন্তু মুখ খুলে বলতে পারছিনা। তারা রাস্ট্রের সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। এদের মুখোশ খুলে দেয়ার সময় এসেছে। এদের ছোবল থেকে ইসলামকে রক্ষা করার জন্যে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।( ২২ এপ্রিল,২০১১। দৈনিক নয়া দিগন্ত।)

লেখক: কবি সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী ইতোমধ্যেই সরকারের মথা গরম করে দিয়েছে। তাই ১৩ দফায় বর্ণিত নারী বিষয়ক দফা নিয়ে সরকার, সরকারী দল, সরকারী জোট, এনজিও,প্রগতিশীল নারী সমাজ ও তথাকথিত সেক্যুলারিস্টরা(ধর্মহীনরা) ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে দিয়েছেন। নারীনীতি যেমন তাঁরা কেউ পরেননি তেমনি ১৩ দফাও কেউ পড়েননি। চিলে কান নেয়ার গল্পের মতোই। তথকথিত আধুনিক,প্রগতিশীল শিক্ষিত আরবী নামধারী নারীরাতো ইসলামের নিয়ম নীতি, আইন কানুনের ধার ধারেননা। হেফাজতের নেতারা তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চলেছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। হেফাজতের শক্তিশালী লংমার্চ ও মহা সমাবেশ দেখে সরকার সহ সেক্যুলারিস্টদের( ধর্মহীনদের মাথা একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের ধর্মহীন সাধারন সম্পাদক আশরাফ সাহেব( সৈয়দ লিখলামনা, কারণ,সৈয়দ শব্দের সাথে আল্লাহর রাসুলের(সা)) ইতোমধ্যেই আবিষ্কার করেছেন লংমার্চের মাধ্যমে বিএনপি সরকার উত্‍খাতের চেস্টা করেছে। যাহোক, এখন আর রাজনীতির দিকে যেতে চাইনা। ১১ এপ্রিল সকালে দেশের একমাত্র সাহসী সম্পাদক আমার দেশের মাহমুদুর রহমান সাহেবকে গ্রেফতার করে ১৩ দিনের ধোলাইয়ের জন্যে নেয়া হয়েছে। এর আগেও তাঁকে এরকম ধোলাই দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন সম্পাদকও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তিনি নাকি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেছেন। তিনি নাকি সাইবার ক্রাইম করেছেন। আসল ঘটনা হলো আমার দেশ গত কয়েক মাসে জনগণের পক্ষে খুবই শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বশংবদ কাগজ গুলোকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধের শক্তির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান এমনিতেই কয়েক মাস ধরে গৃহবন্দী ছিলেন। এখন তিনি সরকারী দমননীতির হেফাজতে গেলেন। আল্লাহপাক তাঁকে হেফাজত করবেন তাঁর ওয়াদা মোতাবেক। আল্লাহপাক সব সময়েই মজলুমের পক্ষে থাকেন।
নারীনীতি নিয়ে গত বছর অনেক কথা হয়েছে। এখন হেফাজতের আন্দোলনের মাধ্যমে বিষয়টি আবার সামনে এসে গেছে।খসড়া  নীতিটি আমি কয়েকবার পড়েছি এবং এর সারমর্ম বুঝার চেস্টা করেছি। একথা সত্যি যে এই নীতির কোথাও ইসলাম নামক কোন শব্দ নেই। সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীরা সত্য বয়ান করছেন। বিশ্ব নারী সম্মেলনে এ যাবত যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে তারই একটি সারাংশ হচ্ছে এই নারীনীতি। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো বিশ্ব নারী সম্মেলনে এ যাবত গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো সংগ্রহ করে পড়ার জন্যে। পশ্চিমা ধ্যান ধারনা ও দর্শনকে মাথায় রেখে এই নীতি তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশের আমলারা তা হুবহু তরজমা/অনুবাদ করে সরকারের কাছে পেশ করেছেন। বিশ্ব নারী সম্মেলনে আমাদের সরকার বা রাস্ট্রকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা সম্মেলনের ড্রাফটগুলো ভাল করে কখনই পড়েন না। মালয়েশিয়া চীন সহ আরও বহুদেশ এই নারীনীতিকে হুবহু গ্রহন করেনি। কারণ প্রত্যেক দেশ ও জাতির নিজস্ব সমাজ সংস্কৃতি দর্শন ও ঐতিহ্য রয়েছে। পৃথিবীর সব নারীই মানুষ। কিন্তু সব নারীর জীবন দর্শন এক নয়। সব মানুষ এক পিতার সন্তান। কিন্তু দেশ কাল পাত্র ভেদে তাদের অবস্থানও এক নয়। তাই তারা বিভিন্ন জাতি গোত্র সংস্কৃতি ভাষা ও বর্ণে বিভক্ত। ভৌগলিক ভাবেও তারা আলাদা। আমাদের সন্তান বা রক্ত যারা নানা কারণে বিদেশে বড় হচ্ছে বা হয়েছে তাদের সাথেও ইতোমধ্যে আমাদের চিন্তা চেতনা ও ভাবনায় অনেক ফারাক তৈরী হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক ও প্রকৃতির নিয়ম।

মানুষ নারী হোক বা নর হোক তার জন্যে শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা মানে বাংলাদেশের নরনারীরা এখনও ব্যাপক ভাবে অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে আছি। শিক্ষার আলো থাকলে নারীনীতিরও প্রয়োজন হতোনা। গরীব ও অশিক্ষিত নারীর কাছে নারীনীতির কোন গুরুত্ব নেই। তার উপরে রয়েছে অমানবিক দারিদ্র। অশিক্ষা এবং দারিদ্র একটি অভিশাপ এবং এই অবস্থা মানুষকে মানবেতর অবস্থায় নিপতিত করে। মানুষকে হীন অবস্থা থেকে উন্নত অবস্থায় পৌঁছে দেয়ার জন্যে স্বয়ং আল্লাহপাক যুগে যুগে বার বার নবী রাসুল জ্ঞাণী গুনী পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানূসের মুক্তির কথা বলে গেছেন। ইসলাম শিক্ষাকে নরনারীর জন্যে অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ ইসলামধর্মে বিশ্বাসী মুসলমান। তবুও এখানে সীমাহীন দারিদ্র ও অশিক্ষা। কারণ এ দেশের মানুষ সঠিক মুসলমান হিসাবে গড়ে উঠেনি। আমরা এখনও সামাজিক ভাবে শোষণে বিশ্বাস করি। দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার অব্যাহত আছে। আমাদের সমাজে সবল ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা দূর্বল নারী ও নরের উপর নির্যাতন করে। আবার কিছু পুরুষ শারীরিক দূর্বলতার কারণে নারীদের উপর অত্যাচার করে। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ইসলামে মায়ের মর্যাদার কথা বার বার বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত। বলা হয়নি মায়ের পায়ের তলায় ছেলের বেহেশত। এর মানে সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, মায়ের খেদমত করলেই সে আল্লাহর কাছে থেকে পুরুস্কৃত হবে। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, স্ত্রীর সাথে যিনি বিনয়ের সাথে ব্যবহার করেন তিনিই ভদ্রলোক। তিনি বলেছেন, যে পিতা তার কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করবে তার জন্যে এক হজ্বের সওয়াব বা পূণ্য বরাদ্দ করা হয়েছে।  আল্লাহপাকের মর্যাদার পরেই জগতে মায়ের মর্যাদা নির্ধারিত করা হয়েছে।মা বাবার খেদমত করার জন্যে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কোরান এবং ইসলাম সম্পর্কে আমাদের দেশের ইংরেজী শিক্ষিত সবজান্তা মানুষের তেমন কোন জ্ঞান নেই। এ জ্ঞান না থাকলেও এ দেশে রাস্ট্রের এবং সরকারের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে কোন অসুবিধা হয়না। ফলে আদালত বা সচিবালয়ে কোরাণিক আইনের বিরুদ্ধে মত বা সিদ্ধান্ত দিতে কোন বাধা নেই। ফতোয়া সম্পর্কে এখনও আদালত মন্তব্য করতে দ্বিধা করেনা। ফতোয়ার বিরুদ্ধে আদালতে দাঁড়াতে ড: কামালের মতো জ্ঞানী আইনজীবীদের কোন অসুবিধা হয়না। কারণ ,ড.কামালের কোরাণিক আইনের কোন জ্ঞান নাই।

বেশ কিছুদিন আগে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাপানো আহবান মসজিদে মসজিদে বিতরন করা হয়েছে। ওই আহবানের একটি কপি আমার হাতেও এসেছে। অবাক ও বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ওই লিফলেট প্রয়োজনীয় কথাগুলো খোলাসা করে বলা হয়নি বা জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্যে বলা হয়নি। নারীনীতির ২৩.৫ ও ২৫.২ ধারায় বর্ণিত বিষয়টি স্পস্ট নয়।যেহেতু জনমনে বা আলেম সমাজের মনে এ বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে সেহেতু সরকারের উচিত ছিল আলেম সমাজের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে সন্দেহ বা বিভ্রান্তি দূর করা। অবাক লাগছে যে,সরকার তা না করে সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হরতালের দিন কোরাণের অবমাননা হলে আন্দোলনের নেতারা দায়ী থাকবেন। পুলিশ কমিশনার বলেছেন, জন জীবনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্যে সবকিছু কঠের হস্তে দমন করা হবে। তিনি অবশ্য সব সময় এভাবে কথা বলেন। দমনের ভাষাই তাঁর ভাষা। নারীনীতির সহজ সরল ব্যাখ্যা না দিয়ে সরকার আন্দোলন দমনের পথ বেছে নিয়েছে। শুধু উপরে বর্ণিত ধারা নয়, নারীনীতিতে আরও বহু আবছা ও অস্পস্ট ধারা রয়েছে। বর্ণিত দুই ধারায় বলা হয়েছে; ‘‘সম্পদ, কর্ম সংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।’’ ‘‘উপার্জন, উত্তরাধিকার,ঋণ, ভুমি এবং বাজার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।’’

এখন প্রশ্ন হলো, কোন সম্পদ বা কোন বাজার ও ব্যবসা? কার ব্যবসা? পিতার ব্যবসা না স্বামীর ব্যবসা? নারীর নিজের ব্যবসা বা সম্পদে ইসলাম একশ’ভাগ নিরংকুশ অধিকার দিয়েছে। সরকারের উচিত সে অধিকার বাস্তবায়নের জন্যে আইন করা। ইসলাম সম্পদের মালিকানা ও হিস্যা বন্টনের ব্যাপারে সুস্পস্ট ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে কোন অস্পস্টতা নেই। একজন নারী জীবনের শুরুতেই নগদ মোহর পেয়ে থাকেন। স্বামীকে বিয়ের কাবিন নিবন্ধন করার আগেই মোহর শোধ করতে হবে। মিলিত হবার আগে মোহর পরিশোধ না করা আইনত বেআইনী। মোহর আদায়ের জন্যে আমাদের প্রগতিশীল আধুনিক শিক্ষিতা নারীরা কোন আন্দোলন করছেননা। প্রাপ্ত মোহর ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার নারীর। পিতার কাছ থেকে পাওয়া  নগদ স্থাবর অস্থাবর সম্পদের উপর নারীর অধিকার একশ’ ভাগ। এখানে স্বামী বা তার পরিবারের কারো হস্তক্ষেপ বেআইনী। নারী যদি কর্মজীবী হন তা্হলে তাঁর অর্জিত আয় বা মুনাফার উপর স্বামীর কোন অধিকার নেই। কিন্তু স্বামীর সকল সম্পদের উপর নারী বা স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। নারী বা স্ত্রীকে সম্মানজনক ভরণ পোষন ও হাত খরচ দেওয়া স্বামীর আইনগত কর্তব্য। এই কর্তব্য অবহেলা করলে বা লংগন স্বামী আইনের চোখে অপরাধী হবেন। কন্যা বা কনেকে বিয়ে দেয়ার সময় যাবতীয় খরচ বা ব্যয় বহন করবেন পিতা বা পিতার অনুপস্থিতিতে মা অথবা ভাইয়েরা। কিন্তু ভাইয়ের বিয়েতে বিবাহিত বোনের কোন দায়িত্ব নেই। পিতার অনুপস্থিতিতে সংসারের যাবতীয় ব্যয় বহনের দায়িত্ব বড়ছেলে বা বড় ভাইয়ের। কোন বোনের নয়। এমন কি পিতার অমতে স্বেচ্ছায় যদি কোন ছেলে বা মেয়ে বিয়ে করে তাহলেও ইসলামী শরিয়ত বা ফারায়েজ অনুযায়ী ছেলে বা মেয়ে সম্পদের উত্তরাধিকার হারায়না বা বঞ্চিত হয়না।নারীনীতির ২৫.২ ধারায় যা বলা হয়েছে তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আগেই বলেছি বিবাহিত নারীর নিজের সকল প্রকার সম্পদের উপর পূর্ণ কর্তৃত্বের ইসলামী আইনগত অধিকার রয়েছে। এখানে স্বামী পিতা বা ভাইদের কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। নারীনীতির অন্ধ সমর্থকরা এই নীতির গভীরে প্রবেশ করেননি। এই নীতির অস্পস্টতার কারণে কোরাণ ও হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে। ওলামা মাশায়েকগণ যেখানে বা যে ধারায় সন্দেহ প্রকাশ করছেন তা পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে। কিন্তু তা করছেন না। প্রচারিত লিফলেটে সামান্য কিছু ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। লিফলেটের কথা গুলো নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। লিফলেটে আরও বলা হয়েছে নারীনীতি কোন আইন নয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। মুসলমানদের জীবনে কতগুলো আইন আছে যা কোরাণ ও হাদিসের আলেকে পরিচালিত। সংবিধান কোরাণিক আইন ও রাসুলের(সা) ব্যাখ্যার উর্ধে নয়। এমন কি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদও কোরাণিক আইনের বিরুদ্ধে কোন আইন করতে পারেনা।

Convention on Elimination of All forms of Discrimination Against Women(CEDAW-সিডো ) হচ্ছে প্রস্তাবিত নারীনীতির আদর্শ ও উদ্দেশ্য। যা রচিত হয়েছে পশ্চিমী ভাবধারা থেকে। তাই ‘সিডো’র আদর্শ ও সূদুর প্রসারী লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের পারিবারিক আইনগুলোকে ভেংগে ফেলা। সেই চোরাবালিতে পা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নারীনীতির সর্বশেষ ৫২ ধারায় বিদেশী সাহায্য ও সহযোগিতা লাভের আকাংখাও রয়েছে। এতে অবশ্য আমলাদের উপকার হয়। বিদেশী টাকা খরচ করতে আরাম লাগে। নানা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের কথা বলে বিদেশ ভ্রমন করে প্রাণভরে শপিং করা যায়। আমাদের মতো দেশগুলোকে সিডো বাস্বায়নের জন্যে ইতোমধ্যেই ‘জাতিসংঘ-নারী’ নামে একটি সংস্থা খোলা হয়েছে। সেখানে টাকা পয়সা রাখা হয়েছে। নারীনীতির ৫০.৬ ধারায় সুস্পস্ট করে বলা হয়েছে নারীনীতি বাস্তবায়নের জন্যে আন্তর্জাতিক উত্‍স থেকে নতুন ও অতিরিক্ত আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সিডো বাস্তবায়ন না করলে বিদেশী অর্থ পাওয়া যাবেনা।

সিডো’তো  যে সব বিষয়  অন্তর্ভুক্ত  তা  যোলয়ানাই  আমাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিপরীতমুখী। আমাদের এই ঐতিহ্য হাজার বছরের। আমাদের রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও একটা সংবেদনশীল মন। আমাদের পরিবার গুলো কখনই পশ্চিমী পারিবারিক ঐতিহ্যের মতো নয়। আমরা পরিবারকে সম্মান করি এবং সকল অবস্থায় পারিবারিক বন্ধনকে কঠোর ভাবে টিকিয়ে রাখতে চাই। পশ্চিমে সন্তানদের বয়স ১৮ পেরিয়ে গেলে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাবা মা আর দায়িত্ব গ্রহণ করেনা। সে সব দেশে পারিবারিক বন্ধন বহু আগেই ভেংগে গেছে। সেখানে পিতার পরিচয় নেই ৬০/৭০ ভাগ সন্তানের। সেদেশে স্কুল গুলোতে কুমারী মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেখানে পরিবার নামক প্রতিস্ঠানটি ধ্বংস হতে চলেছে। বিয়ে নামক বিষয়টি এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান নিতে চলেছে। লিভ টুগেদার দিনদিন বেড়েই চলেছে। সমকামীতা বেড়ে চলেছে। সমকামীদের বিয়ের আইন পাশ হচ্ছে। এসব দেশের মানুষেরাই সিডো তৈরী করেছে। আমরা না বুঝেই ওসব কনভেনশনে দস্তখত করে এসেছি। প্রস্তাবিত নারীনীতিতে সরকার হয়ত বুঝে অথবা না বুঝে সিডো’র অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকার দেশের আলেম সমাজকে অজ্ঞ ও অশিক্ষিত মনে করেই নারীনীতি পাশ করার চেস্টা করছে। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি সরকার পশ্চিমা নীতি নৈতিকতাহীন প্রপাগান্ডার শিকারে পরিণত হয়েছে। সরকার যদি এ ব্যাপারে কুটিলতার আশ্রয় না নিয়ে সরলতার পরিচয় দিলে সমস্যার সমাধান করা যেতো। সরকার পাকিস্তান আমলের স্বেচ্ছাচারী শাসকদের মতোই ব্যবহার করছে আর আলেমদের গালাগালি করছে। কিছু তথাকথিত নারীনেত্রী ও মুসলমান নামধারী পুরুষ না বুঝে সরকারের গোঁড়ামীকে সমর্থন করে যাচ্ছে। হয়ত অনেকেই নারীনীতি ও সিডো কনভেনশনের লশ্য কি তা পড়েননি। নারী নীতির  ৩৪.৯ ধারায় পরিবার পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘ সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার থাকবে’। এ বিষয়টা আমাদের দেশের ও সমাজের ঐতিহ্য সংস্কৃতি মূল্যবোধ পরিপন্থী। এ যাবত কোন নারী আদালতে গিয়ে বলেনি যে, আমার স্বামী আমাকে জোর করে সন্তান উত্‍পাদনে বাধ্য করেছে। তাহলে নীতিতে একথা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য কি? সিডো থেকে বাক্যটি নারীনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিমে এসব ঘটনা অহরহ হচ্ছে। যখন এই কলাম লিখছি তখনি দেখলাম নিউইয়র্কে ইকোয়াল ম্যারেজের দাবী জোরদার হচ্ছে। ইকোয়াল ম্যারেজ মানে সম বিবাহ। গে অথবা লেসবিয়ান ম্যারেজ। যারা এসবে বিশ্বাস করে তারাই সিডো তৈরী করেছে। আর আমরা না জেনে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশবাসীকে অশিক্ষিত অজ্ঞ মনে করে সরকার এবং তার দলীয় লোকেরা নারীনীতি নিয়ে মিথ্যা কথা বলে চলেছে।

বাংলাদেশে ৯০ ভাগ বিয়ে নিবন্ধিত হয় মুসলিম বিবাহ আইন মোতাবেক। গ্রামে বা গরীব মানুষের ভিতর এখনও বিয়ে নিবন্ধনের বীসয়টা ষোলয়ানা বাস্তবায়ন করা যায়নি। নারী পুরুষের বিয়েকে আইন সিদ্ধ করার জন্যে কাবিন নামা তৈরী হয়। সাধারনত কাবিন নামা সরকারী অনুমোদনক্রমে ছাপানো থাকে। ষিনি বিয়ে নিবন্ধন করেন তাঁকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বা কাজী বলা হয়। সরকারের আইন মন্ত্রণালয় কাজী সাহেবদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কাজী সাহেবের যোগ্যতা মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা। কাবিনের সকল শর্ত  মেনে নিয়েই  পুরুষকে কাবিনে স্বাক্ষর করতে হয়। কাবিনের শর্ত মোতাবেক নারীকে সংসার পরিচালনায় কোন দায়িত্ব নিতে হয়না। সংসারের সকল দায়িত্ব পুরুষের। বিয়ের কাবিনে মোহরের কথা উল্লেখ করতে হয়। এই মোহর নগদে নারীর তাত্‍ক্ষনিক পাওনা। পুরুষকে কাবিন নিবন্ধনের সাথে সাথেই  এই মোহর শোধ করতে হয়। এরপর রয়েছে কন্যাকে যৌতুক বা উপহার দিয়ে সাজিয়ে দেয়া পুরুষের দায়িত্ব। বিবাহিত জীবনে নারীর খোরপোষের দায়িত্ব পুরুষের। সংসারের সকল আর্থিক দায়িত্ব এখনও পুরুষের। সার্বিকভাবে সংসার পরিচালনায় সম অধিকার নিয়ে নারীরা  এখনও কোন বক্তব্য পেশ করেননি। উচ্চ শিক্ষিত নারীরাও ওই কাবিন মোতাবেক বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন।ইসলামী শরীয়া ও আইন মোতাবেক পুরষকেই সংসার পরিচালনা করতে হয়। নারী পুরুষ যারাই  মনে করেন ইসলামের শরীয়া আইন বা সম্পদ বন্টনের আইন তাদের পছন্দ নয় তারাই সিডো ও নারীনীতি প্রণয়ন করেছেন। সত্যি কথা হলো সরকারী নীতি বাস্তবায়িত হলে আগামী ২০/২৫ বছরে বাংলাদেশের সংসার গুলো ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে। পরিবার ব্যবস্থা আর থাকবেনা। অবাধ মেলামেশা মানে লিভিং টুগেদার বেড়ে যাবে।( নয়া দিগন্ত, ১৬ এপ্রিল,২০১১) বৈশাখ ৩, ১৪১৮ বাংলা

লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »