অতি আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও ভিন দেশ জোর করে দখল করার যুগে এখনও কোন কোন দেশে মানুষকে মানুষ মনে করা হয়না। কোথাও তারা দাস বা কোথাও আবার হরিজন অচ্যুত হিসাবে পরিচিত। আমাদের দেশ মুসলমানের দেশ বলে দাস ব্যবস্থা ধর্মীয় ভাবে স্বীকৃত নয়। রাস্ট্রও কাগজে কলমে মানুষকে দাস মনে করে না। কিন্তু এখনও অভাব অনটন দারিদ্র ও অশিক্ষার কারনে বহু মানুষ দাসের মতো জীবন যাপন করেন। পাকিস্তানের ২৩ বছর আর বাংলাদেশের ৪০ বছরেও রাস্ট্র গরীব শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিস্ঠা করতে পারেনি। ১৯৭০ সালে এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে অন্ধের মতো ভোট দিয়েছে পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করার জন্যে। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র ও অশিক্ষার কারণে একনও দাসের জীবন যাপন করছে।বাংলাদেশে এই শোষণ তীব্র ভাবে শুরু হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও বৃটিশ শাসনের শুরু থেকে। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লেই জানতে পারবেন এই শোষণের তীব্রতা কত বেশী ছিল। আমাদের সন্তানরা যারা ইতিহাস পড়েনা তারা বিশ্বাস করেনা এক সময় এই দেশটা একটা ধনী দেশ ছিল। বৃটেনের যুবকরা আসতো ঢাকায় চাকুরী করার জন্যে। ১৯০ বছরে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশটি দারিদ্রের শেষ সীমায় নেমে আসে। ইংরেজ আমলে হিন্দু জমিদারদের শোষন ছিল মুসলমানদের উপর অবর্ণনীয়। ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করে শেরে বাংলা বাংলার মুসলমানদের রক্ষা করেন।
পূর্ণাংগ জীবন ধর্ম ইসলাম জগতে এসেছে সকল শোষণের অবসান ঘটানের জন্যে। ইসলাম জগতে এসেছে সকল মানুষকে সম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে। ইসলাম যখন বললো জগতের সকল মানুষ এক। কালো ধলো ধনী দরিদ্র আশরাফ আতরাফ আরব আজমী সমাজের কায়েমী স্বার্থবাদীদের সৃষ্টি। ইসলামের আগমনের সময় আরব যেমন অন্ধকারে ছিল তেমনি ইউরোপ ছিল বর্বর যুগে। সেখানে মানুষের কোন মর্যাদাই ছিলনা। হাতে গোণা কিছু শক্তিশালী মানুষ বাকী সব মানুষকে দাসে পরিণত করে রেখেছিল। শ্রমের মর্যাদা বা শ্রমিকের ন্যায্য মুজুরী বা পারিশ্রমিকের কথা ইউরোপ ভাবতেও পারেনি। তাহলে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শ্রমজীবী মানুষের এই করুন অবস্থা কেন? বর্তমানে বাংলাদেশ পশ্চিমা চিন্তাধারা থেকে উত্সারিত শ্রম আইন দ্বারা পরিচালিত। রাস্ট্রের কোন আইনেই নৈতিকতা নাই। প্রচলিত আইনের অধীনে থেকেই মালিকরা শ্রমিকদের শোষন করে। ১৯০ বছরের বৃটিশ শাসনের ফলে তাদেরই আইন এখনও জগদ্দল পাথরের মতো দেশ ও জনগণের বুকের উপর চেপে বসে আছে। ওই আইনই স্বাধীন বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে জারী রয়েছে। আমাদের রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতারা কখনই ভাবতে পারেনি দেড় হাজার বছরের পুরোণো ইসলাম শ্রমিক কৃষক সহ সকল মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্যে কি ব্যবস্থা রেখেছে। আমরা ১লা মে পালন করি আমেরিকার শিকাগো শহরে গুলি করে শ্রমিক হত্যার স্মরণে ও প্রতিবাদে। পরে ওই দিনটির ওয়ারিশয়ানা নিয়ে নেয় রাশিয়া সহ এক সময়ের সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট দেশগুলো। আমেরিকা এখন এই দিনটি পালন করেনা। ওইদিন আমেরিকার শ্রমিকরা কাজ করে। এই দিনে আমেরিকায় কোন ছুটি নেই। আমরা ছুটি ভোগ করি আর লাল সালু পরে মিছিল করি। বিগত ৬৩ বছরে শ্রমিকদের মুজরী একটাকা থেকে একশ টাকা বা দুই টাকা থেকে দুইশ’ টাকা হয়েছে। নারী শ্রমিকদের অবস্থার এখনও তেমন পরিবর্তন হয়নি। ভাল মুজরীর জন্যে আমরা আমাদের শ্রমিকদের বিদেশ পাঠাচ্ছি এবং তাদের পাঠানো বিদেশী মুদ্রা নিয়ে বাহাদুরী করি। সত্যি কথা বলতে কি দেশটাকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে কৃষক আর শ্রমিকরা। অথচ রাস্ট্র তাদের জন্যে কখনই তেমন কিছু করতে পারেনি। যারা বিদেশে শ্রমিক পাঠায় তারা হয়ে গেল ধনী। আর শ্রমিকদের দারিদ্র কখনই ঘুচলোনা। ২০ বছরে পোষাক শিল্পের মালিকরা আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তাদের সবাই এখন মার্সিডিজ গাড়ি চালায়। পরিবার পরিজন নিয়ে বছরের কয়েক মাস বিদেশে থাকে। তাদের সন্তানেরা বিদেশে লেখাপড়া করে। অপরদিকে দেশের জীবনী শক্তি শ্রমিক ও কৃষকরা মৌলিক সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিগত ২০ বা ২৫ বছরে এ দেশে তিনটি গোষ্ঠি( জমির ব্যবসায়ী, শ্রমিক ব্যবসায়ী ও পোষাক ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সরকার উলংগ ভাবে এদের সমর্থন দিয়েছে। এরা কেউই সঠিক আয়কর ও শুল্ক দেন না। এর কারণ আমাদের জীবনে নৈতিকতার কোন স্থান নেই। না রা্স্ট্রের জীবনে, না সরকারের জীবনে। ফলে সরকারী কর্তা কর্মচারী কারোর জীবনে নৈতিকতা নেই। ঘুষখোর দূর্ণীতিবাজদের এখন কেউ ঘৃণার চোখে দেখেনা। বাপ ছেলের কাছে জানতে চায়না সে অত টাকা কোথায় পায়। স্ত্রী স্বামীর কাছে জানতে চায়না তার অত বেশী টাকার উত্স কি? ছেলে মাস্তানী করে বাবা মা জেনেও চুপ করে থাকে। মেয়ে রাত দুপুরে বাড়ি ফিরে কেন মা বাপ জানতে চায়না। ২০ কামরার বাড়িতে বাসিন্দারা কে কি করছে তা জানার জন্যে পরিবারের কর্তার হাতে কোন সময় নেই। ফলে নিচের তলায় মেয়ে নীহত হলোও উপরতলায় মা বাপ টের পায়না। কলেজের ছাত্র ছেলে রাত দশটায় বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সাথে ডিনার করতে চাইলে মা বাপ বারণ করেনা। হয়তা সারা রাতই ছেলে আর বাড়ি ফিরেনা। সেই যে গেল ছেলে আর কোনদিনও ফিরলোনা। বন্ধুরা হয়ত তাকে মেরে ফেলেছে। জানিনা, শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের মুজরীর কথা বলতে গিয়ে প্রসংগ থেকে দূরে চলে গিয়েছি কিনা। বলছি এ কারণে যে, নৈতিকতার বাইরে অর্জিত যেকোন বিত্ত সংসারে অশান্তি ও অনাচার ডেকে আনে। এরা সম্পদের পাহাড় গড়ে শ্রমিক ঠকিয়ে, সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এসব অনাচার ব্যভিচারের সাথে সরকার জড়িত থাকে। এইতো দেখুন না শেয়ার বাজারের কেলেংকারীর গড ফাদারদের নাম সরকার প্রকাশ করতে চায়না। কারণ, হয়ত গড ফাদারদের সাথে সরকারের বন্ধুত্ব রয়েছে। পবিত্র কালামে পাকে কারুনের ধনী হওয়ার কা্হিনী বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র ইমানদার মুসলমানদের বুঝাবার জন্যে। ধনী থেকে মানুষ গরীব হয়,আবার গরীব থেকে ধনী হয়। বাংলাদেশ এর বড় নজীর । আমরা নিজেরাই এক জীবনে এসব দেখেছি এবং দেখছি। ৭০ সালে যিনি সওদাগরী দোকানে কর্মচারী ছিলেন তিনি এখন ব্যান্কের চেয়ারম্যান। ব্যান্কের সহযোগিতায় গুদামের মাল বিক্রি করে যিনি ধনী হয়েছেন তিনিও এখন ব্যান্কের মালিক। অজানা এক সাপ্তাহিক কাগজের মালিক এখন ব্যান্ক ও বীমা কোম্পানীর মালিক। এরা হচ্ছে পবিত্র কোরাণে বর্ণিত কারুণের কাহিনীর মতো। কারুন একেবারে দরিদ্র থেকে আল্লাহপাকের রহমতে ও নবী মুসার(আ) দোয়ায় ধনী হয়ে নিজের অতীত ভুলে যায়। এমন কি কারুণ তার সম্পদের জাকাত দিতেও ভুলে যায়। আমাদের দেশেও এমন বহু কারুণ আছে।
কারখানা বা কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করার জন্যে অনেক সংগঠন তৈরী হয়েছে। গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলার জন্যে তেমন শক্তিশালী সংগঠন এখনও দেখা যাচ্ছেনা। আমরা প্রায়ই গৃহ শ্রমিকের উপর নির্যাতনের খবর পত্রিকায় দেখতে পাই। এইতো ক’দিন আগে এক মেজর সাহেবের বাসার কাজের মেয়েকে গৃহকত্রী গরম খুন্তি দিয়ে সারা পিঠ ঝলসে দিয়েছে। কথায় লথায় বাড়ির কর্তা বা কত্রী গৃহ শ্রমিদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। এরাতো প্রায় সবাই মুসলমান। এদের মসজিদেও দেখা যায়। তাহলে গৃহকর্মীদের উপর এমন অত্যাচার হচ্ছে কেন? জগতে ইসলাম আসার প্রায় দেড় হাজার পরেও যদি মুসলমান দেশ ও সমাজে শ্রমিকরা নির্যাতিত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে বাংলাদেশ সহ সেসব দেশে ইসলামী বিধান মেনে চলার মতো মুসলমান নেই। ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে। মালিক শ্রমিকের ভিতর মর্যাদার দিক থেকে কেউ ছোট কেউ বড় নয়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে শ্রম নির্ভর করেই সৃস্টি করেছেন। আল্লাহর রাসুল(সা) নিজেও পরিশ্রম করতেন এবং শ্রম বিনিয়োগ করে জীবিকা নর্বাহ করার জন্যে মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, ‘ কয়েক ফিরাত মজুরীর বিনিময়ে আমি মক্কাবাসীর মেষ চরাতাম’। নির্ধারিত মজুরীর বিনিময়ে তিনি এক ইহুদীর কূপ থেকে পানি তুলে দিতেন। আল্লাহর রাসুল(আ) আরও বলেন, ‘ হজরত আদম(আ) ছিলেন একজন কৃষক, হজরত দাউদ (আ) ছিলেন একজন কর্মকার, নুহ নবী ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী, ইদ্রিস নবী ছিলেন একজন দর্জি এবং মুসা নবী ছাগল চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সোজা কথায় বলতে হয় আল্লাহপাক চান সব মানুষই পরিশ্রম করে সত্পথে জীবিকা অর্জন করুক। তাই তিনি শ্রমের মর্যাদাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে। পবিত্র কোরাণের সুরা বালাদে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর করে সৃস্টি করেছি। সুরা জুমআতে বলেছেন, নামাজ আদায়ের পরেই তোমরা কাজের উদ্দেশ্যে ছুটে যাও। আল্লাহর রাসুল(সা) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকরা তোমাদের ভাই। যে হাতে কঠিন পরিশ্রমের দাগ রয়েছে সেই হাত চুম্বনের উপযুক্ত। শ্রমের মাধ্যমে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু। শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই তার পারিশ্রমিক শোধ করো। তোমরা যা খাবে তোমাদের অধীনস্থদেরও তা খেতে দাও। তোমরা যা পরো তাদেরও তা পরতে দাও। শ্রমিকের সামর্থ ও ক্ষমতার বাইরে কোন কাজ আদায় করিওনা। এতে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। যে ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে তার ন্যায্য মজুরী শোধ করেনি কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। ইসলামে শ্রমিক কর্মচারীর উপর যেকোন ধরনের জুলুম নিষিদ্ধ। আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, যারা মানুষের উপর জুলুম করে সেই সব জুলুমবাজ অচিরেই তাদের পরিনতি জানতে পারবে।
পবিত্র আল কোরাণের সুরা কাসাসে আপনারা পড়েছেন, হজরত শোয়ায়েব(আ) হজরত মুসাকে(আ) বলছেন, ‘আমি তোমাকে কস্ট দিতে চাইনা। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।’ হজরত মুসাকে(আ) কাজে নিয়োগের সময় হজরত শোয়ায়েব(আ) একথা গুলো বলেছেন। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম,শ্রমিক বা কর্মচারীর সাথে কি রকম ব্যবহার করতে হবে। মালিক শ্রমিকের সম্পর্কের বিষয়টা এখানে সুস্পস্ট হয়ে গেছে। আল্লাহর নির্দেশ হলো শ্রমিকের সাথে সহৃদয়তার সাথে ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহর রাসুল(সা) ঘোষণা দিয়েছেন, মজুর ও চাকরের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্বের লক্ষ্মণ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা) দীর্ঘ দশ বছর হুজুরে পাকের খেদমত করেছেন, ছায়ার মতো তাঁর পাশ ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্য আল্লাহর রাসুল(সা) কখনই তাঁর(আনাস) কৈফিয়ত তলব করেন নি বা তিরস্কার করেন নি। আল্লাহর রাসুল(সা) আরও বলেছেন, মজুরী পরিশোধে টালবাহানা করা জুলুম। শ্রমিক মালিকের মধ্যে নির্ধারিত চুক্তি সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করবে। তোমাদের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।( সুরা বনি ঈসরাইল) আপরদিকে শ্রমিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে চুক্তি মোতাবেক যিম্মাদারী ও আমানতদারী বিশ্বস্ততার সাথে পালন করা। সুরা কাসাসে আল্লাহপাক বলেন, শ্রমিক হিসাবে সেই ব্যক্তি উত্তম যে স্বাস্থ্যবান ও বিশ্বস্ত। সম্পদের মুনাফায় বা লভ্যাংশে শ্রমিকের হক রয়েছে।
বৃদ্ধ বয়সে ও অসুস্থতার সময় ভাতা লাভ করা শ্রমিকের মীলিক অধিকার। কারণ শ্রমই হলো একজন শ্রমিকের পুঁজি। বৃস্ষ হলে বা অসুস্থ হলে তাঁর বেঁচে থাকার আর কোন পুঁজিই থাকেনা। তাই বৃদ্ধ পংগু অসুস্থ অসহায় বিধবা ও দূর্বল লোকদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব রাস্ট্রের। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেন, কেউ মারা গেলে তাঁর রেখে যাওয়া মালের মালিক হবেন তাঁর ওয়ারিশ গণ। এবং তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব সরকারের। শ্রমিক মালিকের অধিকার নিয়ে আরও অনেক হাদিস রয়েছে। সব এখানে উল্লেখ করা গেলনা। এবার আপনারাই বলুন বিশ্বের কোথাও এই নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা। পশ্চিমের উন্নত দেশের দাবীদাররাতো মানবতা মানবাধিকার নিয়ে কত কথা বলে। তারা কি ইসলামে বর্ণিত শ্রমিক অধিকার ও সম্মান বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? না পারেনি। কারন পশ্চিম বলুন আর পূর্বই বলুন কোথাও শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শ্রমিকরা এখনও নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। মুসলমান দেশ গুলোতে শ্রমিকের অবস্থা খুবই করুণ। এসব দেশে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী ও মানবিক মর্যাদা একেবারেই পায়না। আমাদের বাংলাদেশে মালিকরা শুধু শ্রমিক নির্যাতন করেনা , হত্যাও করে। হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। এসেশের শ্রমিক নেতাদের কাছে লাল ঝান্ডাই প্রিয়। কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রী নেতারা এ দেশের শ্রমিকদের নেতা। যারা এখন ধনীদের পকেটে ঘুমায়। দামী দামী গাড়িতে চলাফেরা করে। তারা অজ্ঞতার কারণে ইসলামের শ্রম আইন সম্পর্কে কিছুই জানেনা। তাঁদের কাছে ইসলাম প্রগতিশীল কোন ব্যবস্থা নয়। ইসলামকে তাঁরা রক্ষণশীল পিছিয়ে পড়া মতবাদ মনে করে। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোও বাংলাদেশে যথাযত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ইসলামের শ্রমনীতি নৈতিকতার ভিত্তিতে রচিত। স্বয়ং আল্লাহপাক এবং তাঁর রাসুল এই শ্রমনীতি রচনা করেছেন। এই নীতিতে প্রথমে শ্রমের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। শ্রমিককে মানুষের মর্যাদা দান করা হয়েছে। বলা হয়েছে মালিক শ্রমিক উভয়েই সকল দিক থেকে সম মর্যাদার অধিকারী। শ্রম ও শ্রমিক না থাকলে শুধু পুঁজি জগতের উন্নতি সাধন করতে পারবেনা। মালিককে বা পুঁজির মালিককে ভাবতে হবে মানুষ হিসাবে উভয়েই ভাই। কেউ কারো উপরে বা নিচে নয়। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন চলতে পারেনা। বাংলাদেশে এখন সর্বত্রই ন্যায়নীতি ও নৈতিকতার অভাব। সরকার মালিক ও শ্রমিক কারোর ভিতরেই নৈতিকতা নেই। তাই অর্থনীতি ও উত্পাদনে এত অশান্তি ও সংঘর্ষ। মনে রাখতে হবে একজন সত্ মানুষের মর্যাদা একজন অসত্ রাজা বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অনেক উপরে। এই নীতিই হচ্ছে ইসলামে শ্রমের নীতি।( নয়া দিগন্ত , ৬ মে ২০১১)
লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক