মো্ল্লা কারা এবং কেন? এই বিষয়টা আমাদের শিক্ষিত সমাজে এখনও স্পস্ট নয়। তবে মুসলীম বিশ্ব সহ বহুদেশে ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষিতদের মোল্লা বলে মসকরা হয়। অনেকেই বলেন, দেশে মোল্লাতন্ত্র কায়েম হতে চলেছে। মানে হলো ধর্মীয় শিক্ষিত আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন জ্ঞাত নন বা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা বা রাস্ট্র সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নেই তাঁদের যেকোন উদ্যোগকে তথকথিত আধুনিক ইংরেজী শিক্ষিত লোকেরা মোল্লাতন্ত্র বলে থাকেন। এমন কি আধুনিক ইরানের বর্তমান সরকার ব্যবস্থাকে পশ্চিমারা এবং তাদের বেশ কিছু তাবেদার মোল্লাতন্ত্র বলে মসকরা করে। অথচ এইসব আধুনিক ইংরেজী শিক্ষিতরা জানেনা ইরানের আয়াতুল্লাহরা কত শিক্ষিত ও জ্ঞানী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মোল্লাদের অবদান অন্যদের চেয়ে অনেক বেশী। ইংরেজী শিক্ষিতরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেছেন ১৮৫৮ সালের পরে। ১৭৫৭ সাল থেকে আলেম সমাজই ইংরেজ শাসনের বিরোধীতা করেছেন। তখন ইংরেজী শিক্ষিতদের কোন অস্তিত্বই ছিলনা। কংগ্রেসের প্রতিস্ঠাতা ছিলেন ইংরেজ সাহেব লর্ড হিউম। মুসলীম লীগের প্রতিস্ঠাতা ছিলেন কিছু মুসলমান ব্যারিস্টার ও নবাব। মুসলীম লীগ কখনই গণমানুষের দল ছিলনা। যদিও নিপীড়িত মুসলমানরা মুসলীম লীগকে সমর্থন দিয়েছে। একই ভাবে কংগ্রেসও কখনও ভারতের গণমানুষের দল ছিলনা। তবুও ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্যে হিন্দু জনসাধারন কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছে। এক চেটিয়া হিন্দু শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্যই মুসলমানরা মুসলীম লীগকে সমর্থন দিয়েছে।
৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিস্ঠার পর সাত বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগের চির বিদায় হয়েছে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে। তিনিই প্রতিস্ঠা করেছিলেন আওয়ামী মুসলীম লীগ। তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিয়ে হাজার হাজার উকিল মোক্তার আক্তার কবিরাজ সমবেত হয়েছিলেন আওয়ামী মুসলীম লীগের পতাকাতলে। তিনিই গঠণ করেছিলেন যুক্তফ্রন্ট। যাতে শরীক হয়েছিল আরও বহু ইসলামী দল ও ইসলামী নেতা। সবার লক্ষ্য ছিল খাজা গজা, নবাব জমিদারদের দল মুসলীম লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা। ৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের কিছুদিন পর আওয়ামী মুসলীম লীগ সেকুলার হওয়ার জন্যে মুসলীম শব্দটি ত্যাগ করে শুধু আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। এরপর এই দলে আস্তে আস্তে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির লোকজন গোপনে ঢুকে পড়ে। মাওলানা ভাসানীই ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন চীনে গিয়ে গণচীনের অবিসম্বাদিত নেতা মাও জে দং এর দেখা করার পর। দেশে এসেও তিনি ইসলামী সমাজতন্ত্র কায়েমের আহবান জানিয়েছিলেন।
হজরত আবু জ’র গিফারী( রা ) ছিলেন মাওলানা ভাসানীর আদর্শ। আমি নিজেও মাওলানা সাহেবের মুখে প্রথম হাজরত আবু জ’র গিফারীর(রা) নাম শুনি। হজরত গিফারী ছিলেন রাসুলে করীমের(সা) একজন অতি ঘনিস্ট সাহাবী। তিনিই ব্যক্তি সম্পদের সীমা নির্ধারনের কথা বলেছিলেন। হাজরত গিফারীর ইসলামী অর্থনীতির আদর্শের কারণেই তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। মারজান নামক মরুভুমিতে নির্বাসিত জীবনেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্তিকালের সময় তাঁর শিয়রের কাছে পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কেউ ছিলনা। অজানা অচেনা পথিক ও পথচারীরাই তাঁর দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। মাওলানা ভাসানীও বলতেন, রাস্ট্রের সকল সম্পদের মালিক । কিন্তু মাওলানা সাহেবকে কেউ বুঝতে পারেনি। ইসলামিক দলগুলো তাঁকে সমর্থন করতোনা। বরং বহু ক্ষেত্রে তাঁরা মাওলানা সাহেবের বিরোধিতা করেছে। আমেরিকা ও তার বন্ধুরা মনে করতো তিনি কমিউনিস্ট। মাওলানা সাহেব সারা জীবনই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছেন। পশ্চিমা মিডিয়া গুলো সারাজীবন তাঁকে গালআগাল করেছে। তাঁকে ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ বলে প্রচার করেছে। আবার কেউ বলেছে ‘মাও অব ইস্ট ইন ডিজগাইজ অব এ্যা প্রিস্ট’। মাওলানা সাহেব দেওবন্দের ছাত্র ছিলেন। দেওবন্দীরা ছিলেন ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামের অগ্র সৈনিক। তিনি ছিলেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলীর একজন অনুসারী। আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা হয়েও তিনি শুধুমাত্র আদর্শের কারণে এই দল ত্যাগ করেছিলেন। মাওলানা সাহেব মনে করতেন, ইসলামই হচ্ছে মানব মুক্তির একমাত্র পথ ও মত। তিনি মনে করতেন, ইসলামী রাস্ট্রই মানবতার মুক্তি দিতে পারে। তিনিই প্রথম ডাক দিয়েছিলেন ইসলামী সমাজতন্ত্রের। তিনি জানতেন ও বুঝতেন ইসলাম সত্যিই একটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শ। এই আদর্শে ব্যক্তিগত পুঁজির বিকাশের একটা সীমা আছে।পাকিস্তানকে আমেরিকার খপ্পর থেকে বের করার জন্যে তিনি চীনের সাথে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন। তখন ভারতের সাথে রাশিয়ার গভীর সম্পর্ক ছিল।
মাওলানা সাহেব ছিলেন তীতুমীর , দুদুমিয়া , হাজী শরিয়ত উল্লাহর উত্তরসূরী ছিলেন। সেকুলার না হয়েও তিনি ছিলেন গণ মানুষের নেতা। তাঁর সাম্রাজ্যবাজ বিরোধি ভূমিকার জন্যে তাঁরই প্রতিস্ঠিত কাগজ ইত্তেফাকের সম্পাদক তাঁকে লুংগী মাওলানা বলে গালাগাল দিয়েছে। দেওবন্দ মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতিপক্ষ হিসাবে বৃটিশ সরকার কলিকাতা আলীয়া মাদ্রসা প্রতিস্ঠা করে। দেওবন্দ চলতো সরকারী কোন সাহা্য্য ছাড়াই। দেওবন্দেরই অনুসারী মাদ্রাসা হচ্ছে বর্তমানের কওমী মাদ্রাসা। কওমী মাদ্রাসাগুলো সরকারী সাহায্য গ্রহন করেনি। কওমী এখনও সরকারী সু নজরে নেই। কওমী মাদ্রাসা গুলোর উপর সরকার নিয়মিত নানা ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলা বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলেও ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সেকুলার নেতারা ও ৯০ ভাগ মিডিয়া ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের মোল্লা , জংগী , মোল্লা ও জেহাদী বলে গালাগাল দেয়। ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র গুলোকে জংগীদের কেন্দ্র বলে অভিহিত করে নির্যাতন করার জন্যে সরকারকে আমেরিকানরা সরকারকে নানা ধরনের সাহায্য দিয়ে চলেছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন বা যুদ্ধে সহযোগিতার জন্যেই সরকারকে পশ্চিমারা সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সেকুলার রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরাও দিনরাত ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতে দিতে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছেন। তাঁরা মনে দেশের দুর্গতির জন্যে ইসলামী শিক্ষাই দায়ী।
ইসলামী শিক্ষিতদের গালাগাল করা আমাদের দেশে একটা ফ্যাশানে পরিনত হয়ে পড়েছে। পাঠকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ইসলাম রাস্ট্র বা দেশ নয়। যদিও দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। ১৯০ বছর ইংরেজ শাসনের ফলে সমাজের সকল স্তর থেকে ধর্ম ও নৈতিকতা বা মরালিটি নির্বাসিত হয়েছে। ইংরেজ শানের মুল মন্ত্রই ছিল আদর্শ বা নৈতিকতা নয়, শক্তি দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া মুসলমানদের কাছে থেকে ক্ষমতা গ্রহণের ফলে মুসলমানদের তারা কখনই পছন্দ করতোনা। সে সময় হিন্দুরা ইংরেজদের সমর্থন করতো। হিন্দুদের সমর্থন নিয়েই তারা ভারত শাসন করেছে। সত্যিকথা বলতে কি আমরা এখনও ইংরেজ শাসনের কুফল ভোগ করছি। এখনও আমরা ইংরেজদের নিয়ম কানুন, কালচার বা সংস্কৃতি, ইতিহাস, ন্যায়নীতি অনুসরন করি। আমাদের স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আদালত সবখানেই এখনও ইংরেজ শাসনের ছাপ রয়েছে। ৯০ ভাগ মুলমানের দেশ বাংলাদেশে সরকার আদালত অফিস স্কুল কলেজ চালাতে ইসলাম জানতে হয়না। আমাদের আদালতে ইসলাম না জানলেও বিচার করা যায় এবং কোরাণ সুন্নাহর বিরুদ্ধে রায় দেয়া যায়। ইসলামী ফারায়েজ ব্যবস্থা না জানলেও জমিজমা বন্টনের ব্যাপারে একজন হিন্দু দায়িত্বে থাকতে পারে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতে হলে কোন ধর্ম না জানলেও চলবে। আমাদের সংবিধানে ধর্ম আল্লাহ রাসুল কোরাণ হাদিস না থাকলেও চলে। কারণ এসব নাকি ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাস্ট্র থাকবে তথাকথিত নিরপেক্ষ বা ধর্মহীন। যারা রাস্ট্র চালাবেন তারাও থাকবেন ধর্মহীন বা সেকুলার। তাই চলতি সময়ে সংবিধান ও ধর্ম নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। সরকারী আচরন দেখে ব্যথিত হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। নেতারা ৯০ ভাগ মুসলমানের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বলেন, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ। আমাদের রাস্ট্রের কোন ধর্ম নেই। সবকিছু দেখেশুনে মনে এদেশে ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম জানা এক ধরনের অপরাধ। ইসলাম যারা জানে তাদের ধরো আর জংগী বানিয়ে অত্যাচার করো আর জেলভর্তি করো। এতে খৃস্টান ও হিন্দু প্রভুরা খুশী হবে। ইসলাম খতমের জন্যে আরও বেশী বেশী অর্থ সাহায্য আসবে। আমাদের দেশের হাজার হাজার এনজিও মানুষকে ধর্মহীন করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। এনজিও নেতারা এজন্যে নানা ধরনের এওয়ার্ড পান। এমন কি কেউ কেউ স্যার টইটেলও পান। এই সব এনজিও চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় ইতোমধ্যে ১২ হাজার মানুষকে খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চল নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো একটি খৃস্ট রাস্ট্র প্রতিস্ঠা করা। আর তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইসলামকে দুর্বল করে দেয়া। ইসলাম নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা। আমার মতে দুর্ভাগ্য হলো, চলতি সময়ে বাংলাদেশ সরকার তথাকথিত সেকুলারিস্টদের পাল্লায় পড়েছে। সেকুলারিস্টদের তেমন কোন দল নেই। তাই তারা ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে নৌকায় চড়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এখন দিনরাত ঘেনর ঘেনর করে চলেছে। যো কোন কারণেই হোক বর্তমান সরকারে সেকুলারিস্টদের পাল্লা ভারী। তাই তারা এখন খুবই দামী। এরাই ইসলাম বিরোধী এবং মেজরিটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের দেশের মিডিয়া, প্রিন্ট হোক বা ইলেক্ট্রনিক হোক সবাই বুঝে না বুঝে সেকুলারিজমের মোল্লাগিরির দায়িত্ব নিয়েছে। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কবলে পড়ে তারা এসব করছেন।
আধুনিক তুরস্কের প্রতিস্ঠাতা বলে বহুল প্রচারিত মোস্তফা কামাল পাশা মোল্লা উচ্ছেদের অভিযানে নেমে শত শত আলেমকে হত্যা করেছিলেন। মোস্তফা কামালের ভুতেরা এখনও তুরস্ককে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তুরস্ক ধীরে ধীরে ওই অবস্থা কাটিয়ে উঠার চেস্টা করে চলেছে। বাংলাদেশের অবস্থা তুরস্কের মতো অত খারাপ এখনও হয়নি। তবে অভিযান চলছে। কখনও তালেবান, কখনও জংগী, কখনও বা আলকায়েদা নামে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এক সময় কমিউনিস্টদের যেমন করা হয়েছিল। এখনতো বিশ্বব্যাপী খৃস্টান, কমিউনিস্ট, ইহুদী ও হিন্দু সবাই মিলে ইসলাম, জংগী ও মোল্লাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। আর এই ইসলাম বিরোধী অভিযানে আরব জগতের বাদশাহ ও একনায়করা সামিল হয়েছেন। কারণ সবাই ইসলামের মানবতাবাদকে ভয় করে। চীন কোরিয়া ও মায়ানমার পশ্চিমাদের কথা শোনেনা। কিন্তু তাদের কিছু করতে পারেনা। যত দোষ নন্দঘোষ। জগতে যত খারাপ কাজ সবই করছে ইসলাম ও মুসলমানরা। মোল্লাতন্ত্র বলতে আমাদের শিক্ষিত(?) সেকুলারিস্টরা মনে করেন রক্ষণশীল পিছিয়ে পড়া ধর্মীয় শিক্ষিতদের শাসন ব্যবস্থা। ইরাণের চলমান শাসন ব্যবস্থাকেও বাংলাদেশের প্রগতিবাদীরা সমর্থন করেনা। পশ্চিমারা দলবদ্ধ হয়ে ইরানের বিরোধিতা করছে। ইরাণের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অবরোধ জারী করেছে।কারণ, ইরাণ ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের চেস্টা করছে। পশ্চিমারা মালয়েশিয়ার মোহাথিরেরও বিরোধিতা করেছে।
তবে আমি একথাও স্বীকার করবো যে, জোব্বা ও টুপি পরা, লম্বা দাঁডিওয়ালা স্বল্প আরবী শিক্ষিত কিছু অবুঝ মানুষ ইসলাম ও মুসলমানদের যারপর নাই ক্ষতি করেছেন। এই স্বল্প শিক্ষিতরা ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনা। কিন্তু নিজ নিজ এলাকায় গুরু সেজে বসে আছেন। এরাই এলাকার ক্ষমতাধর দুস্ট লোকদের সাথে নিয়ে ধর্মের নামে সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার চালায়। এ ধরণের অত্যাচারের ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। এরা ইসলামের নামে ভুল ফতোয়া দেয় এবং ভুল বিচার করে। যদিও এ ধরনের কোন বিচার করার জন্যে তাদের কোন অধিকার নেই। এরাই দোররা বা পাথর মেরে মেয়েদের হত্যা করে আর সামাজিক ভাবে অপমানিত করে। এইসব অশিক্ষিত মোল্লাদের শিকার হলো এলাকার গরীব ও অধিকার হারা মুসলমানগণ। একই ভাবে কিছু শিক্ষিত কোট প্যান্ট টাই স্যুটপরা মানুষ যারা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানেন না তাঁরাও সমাজে নানা ধরনের বিভ্রান্তি সৃস্টি করে চলেছেন। একথা সত্যি যে বাংলাদেশে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের ৮০ ভাগের ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। এরাই রাস্ট্র সমাজের নেতা। আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থায় ইসলাম না জানলেও রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি, সচীব, ভাইস চ্যান্সেলর হওয়া যায়। কিন্তু ইসলামিক স্কলাররা রাস্ট্রের কোন উচ্ছ পদ পাননা। ইদানিং বেশ কিছু মাদ্রাসা শিক্ষিত যুবক বিসিএস প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী চাকুরীতে সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানেও নানা ধরনের বাধা আসছে। এসব আরী শিক্ষিতরা জংগী কিনা তা গোয়েন্দা বিভাগ পরীক্ষা করে দেখছে। বিসিএস পরীক্ষায় ইসলামিক জ্ঞান থাকা কোন জরুরী বিষয় নয়। অথচ প্রার্থীদের ৯০ ভাগই মুসলমান।
ইংরেজ আমলেই ইংরেজী শিক্ষিতরা সরকারী পদ পদবী দখল করেছে। সেই দখলদারিত্ব এখনও চলছে। ইংরেজদের আদালত, ইংরেজদের প্রশাসন, ইংরেজদের আচার আচরন ও খাদ্য। এখনও ইংরেজী গৃহ শিক্ষকের বেতন আরবী হুজুরের দশগুন বেশী। আমরা হচ্ছি সেই জেনারেশন বা প্রজন্ম যারা পিতার ধর্ম, পিতার শিক্ষাকে অবহেলা করি। এদেশে বহু আলেম উলামার সন্তানেরা সচীব বিচারপতি হয়েছেন, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অনেক আলেমের ছেলে কমিউনিস্ট হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই দেশ পরিচালনা করেন। অথচ মোল্লা বা ধর্মগুরুদের বাদ দিয়ে তথাকথিত সমাজ গুরুরা চলতে পারেন না। তথকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা মনে করেন খৃস্টান পাদ্রী আর হিন্দু ব্রাহ্মণদের মতো আরবী শিক্ষিত হুজুরদের জায়গা গৃহকোনে, মসজিদ মাদ্রাসায়, গোরস্তানে, মিলাদ মাহফিলে, কবর জিয়ারতে। এগুলো আমাদের সমাজপতিরা পেয়েছেন খৃস্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ থেকে। কিন্তু ইসলামে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। সমাজনেতা বা রাস্ট্রনেতা হতে গেলে ইসলামী জ্ঞান অপরিহার্য। এখনতো বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। ইসলাম জানাটা অপরাধের পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক গুরু, ইহুদীবাদ ব্রাহ্মণ্যবাদকে তুস্ট করার জন্যই সরকার ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। শুধু এখন নয় অতীতেও এমনটা হয়েছে। শুধু মুসলমানিত্বের নাম করে ৪৭ সালে পাকিস্তান বানিয়েও মুসলমানদের কোন কল্যাণ হয়নি। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও বাংগালী বা মুসলমানদের তেমন কোন উপকার হয়নি। পাকিস্তানী শোষকদের হাত থেকে বাংগালী শোষকদের হাতে পড়েছে। ৭১ থেকে ২০১১ সাল নাগাদ এই ৪০ বছরে পাকিস্তানী ২২ ধনী পরিবারের জায়গায় ২২ হাজার পরিবারের সৃস্টি হয়েছে। এই পরিবার গুলোই এখন স্কুল কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয় আর সকল প্রকার মিডিয়ার মালিক। এইস মিডিয়া ধনীদের পুঁজি রক্ষার কাজে নিয়োজিত। বাংলাদেশই একমাত্র জায়গা যেখানে সরকারি সহযোগিতা নিয়ে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। শুধু রাজনীতি করেই এদেশে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। এইসব দুর্ণীতির সাথে আরবী শিক্ষিতদের কোন সম্পর্ক নেই। মাঝে মাঝে আবুল বারাকাত সাহেব বলে থাকেন বাংলাদেশে মৌলবাদী অর্থনীতির বিশাল বিকাশ ঘটেছে। বারাকাত সাহেবরা ইসলামী অর্থনীতির সাথে জড়িত সংগঠন গুলোকে লক্ষ্য করেই এসব কথা বলেন। মৌলবাদ শব্দটার জন্ম হয়েছে পশ্চিমে। ইংল্যান্ডের খৃস্টানরা যারা প্রটেস্ট্যান্ট নামে পরিচিত তারা ক্যাথলিকদের মৌলবাদী বলে গালাগাল দিতো। সেই শব্দটা বারাকাত সাহেব এবং তাঁর বন্ধুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। ইহুদী যারা লম্বা জামা গায়ে দেন, লম্বা দাড়ি রাখেন, হালাল খান তাদের বারাকাত সাহেবরা মৌলবাদী বলেননা। অতীতেও দেখেছি জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি যাঁরা ইসলামের পক্ষে কথা বলেছেন তাঁরা সমাজে কদর পাননি। কারণ মুসলমান নামধারী ১০ ভাগ লোক ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কখনও সত্যিকারের ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিস্ঠিত হবেনা। শুধু লম্বা কুর্তা, লম্বা দাড়ি, ইসলাম সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করেও দেশে ইসলামী সমাজ কায়েম করা যাবেনা। মহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মুসলমানদের ইসলামী শিক্ষার সাথে সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে শিক্ষিত হতে হবে। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন এখন যে অবস্থায় তাতে শত বছরেও সমাজের পরিবর্তন হবেনা। যেমন পাকিস্তান বাংলাদেশ মিলিয়ে ৬৫ বছরেও হয়নি। কারণ, শাসক মুসলমানদের শাসন ব্যবস্থায় কখনই ন্যায়নীতি স্থান পায়নি। শাসকরা নিজেরদের মুসলমান দাবী করলেও কখনই ইসলামের পক্ষে ছিলেননা। ওআইসির সব দেশইতো মুসলমান দেশ। কিন্তু ক’টা দেশে ইসলাম আছে? বরং তারা ইসলাম বিরোধী। পশ্চিম বাংলার মমতাও বিসমিল্লাহ বলেন। মুসলমানদের সালাম দেন। মাদ্রাসা সংস্কারের কথা বলছেন। এসন তিনি করছেন তাঁর মুসলমান ভোটারদের খুশী করার জন্যে।( ১৯শে আগস্ট, নয়াদিগন্ত)
লেখক: কবি ও সাংবাদিক