Feeds:
Posts
Comments

Archive for September, 2013

আদুরী


মিষ্টি সকালে ফুরফুরে মন নিয়ে
কাগজে চোখ রাখি
শুরুতেই চোখ পড়ে তোমার
ধর্ষিত লাঞ্চিত অপমানিত নিহত
সত্বা ও দেহের প্রতি
আর নিজেকে প্রশ্ন করি
কেন এমন হলো
আমার সোনার বাংলা
এমন কি হবার কথা ছিল?
না, এমন হবার কথা ছিলনা
বাবা বলেছিলেন
তোরা দল বেঁধে
আমার সাথে থাক
আমি তোদের
গোলাভরা ধান দেবো
শালিক ধানের চিড়ে দেবো
বিন্নী ধানের কৈ দেবো
পুকুর ভরা মাছ দেবো
ওই আকাশের চাঁদ দেবো
আমরা আমাদের
বাবাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
আসলে তিনি ঘুম পাড়ানি
গাণ গেয়েছিলেন
হাজার এক রজনীর গল্প বলেছিলেন
বাবা হওয়ার জন্যে
বাবা থাকার জন্যে।
জানিনা কতটুকু স্বাধীন হয়েছি
কতটুকু হলে স্বাধীনতা বলে
আজ আমার মায়ের আব্রু নেই
বউটা নিখোঁজ বহুদিন
মেয়েটা ধর্ষিত ও নিহত
ছেলেটাকে গ্রাম ছাড়া করেছে
অদৃশ্য শয়তানের হাত।
এই যে দেখছো তোমরা আদুরীকে
সেই আমার বোন
আমার মেয়ে
এসেছিল রাজার রাজধানীতে
দুটো ভাতের লাগি
আজ সে ভাগাড়ে
শরীরে গরম খুন্তির সেঁক
গতরে ৫০ এর মন্বন্তরের দাগ।
ওই দেখো
ওই গারদের ভিতর ঐশীকে
ওর সবই ছিল
ছিলনা শুধু হায়া আর শরম
সীমাহীন সুখ তাকে
টেনে নিয়ে গেছে ওই গারদে
বেশী বেশী সুখ লালসা তাকে
অসুখে অন্ধকারে
ঠেলে দিয়েছে।
কে দায়ী
কে দায়ী
কে দায়ী।
চারিদিকে চিত্‍কার করা প্রতিধ্বনি
কোথাও কোন উত্তর নেই
রাস্ট্র
সমাজ
পরিবার
আইন
সবাই জবাবহীন
উত্তরহীন বোবা কালা।
ওই দূর আকাশে আমার খোদা
বলছে আমায়
তোমরা কি ভুলে গেছো
আদ সামুদ সদোম নগরীর কথা
ভুলে গেছো কি ধ্বংস হওয়া
শত জনপদের কথা
ভুলে গেছো কি
ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাদের কথা।
আদুরী আর ঐশী
রাণা প্লাজার
জুলেখা শরীফা আমিনাতো
তোমাদেরই কর্মফল
আমিতো এক পলকেই
ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারি
তোমার এই জনপদকে
দিইনি
দেখছি, শয়তান তোমাদের
কতদূর নিয়ে যায়
তোমরা আর কত রসাতলে যাবে।
আর আমি বলছি
হে খোদা
আদুরী আর ঐশীকে ক্ষমা করে দাও
বিনিময়ে তোমার এরশাদকে
আগুনে জ্বালিয়ে দাও।

Read Full Post »


বাংলাদেশের নাটকে সাম্প্রদায়িকতা / এরশাদ মজুমদার

সাম্প্রদায়িকতা নানা রূপ, নানা ঢং,নানা রং দেখে আসছি বিগত ৬০ বছর ধরে। ১৯৫০ সালে সরাসরি সাম্প্রদায়িক দাংগা দেখেছি আমার শহরে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। মাসের নাম মনে নেই। তবে সেদিন সোমবার বা বৃহষ্পতিবার ছিল। সবাই বলতো হাটবার। তখন বুঝিনি কেন দাংগা হয়েছে। যতদূর মনে পড়ছে আমাদের স্কুল বন্ধ ছিল বা ফাইনাল পরীক্ষা হবে হবে করছে। আমার পাড়াটা ছিল হিন্দূ পাড়া। নাম উকিলপাড়া। ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডের দুই পাশে বসতি। ৯০ ভাগ বাসিন্দাই ছিলেন হিন্দূ উকিল আর শিক্ষক। আমার দাদাজান এখানে বসত করেছিলেন গ্রাম থেকে এসে। উকিল বাবুদের বাড়িকে বাসা বলতো আর আমাদের বসতকে বাড়ি বলতো। হয়ত আমরা আদি বাসিন্দা বলে। বিশাল বাড়ি। দাদাজান সম্ভবত ১৮৭০ সালে এ বাড়ি করেছেন। ১৯১১ সালে নাকি এর সম্প্রসারণ হয়েছে।মানে আমার বাবারা আরও কিছু জমি কিনে বাড়িটা বড় করেন। তখন হিন্দু মুসলমান এক পুকুরে স্নান বা গোসল করতো। পুকুরে নেমে সূর্য পূজা করতে আমি দেখেছি।
মৌলবাদ ও রাজনীতি নিয়ে আমার প্রিয় মানুষ হায়দার আকবে খান রণো ধারাবাহিক কলাম লিখছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে। রণো খুবই ভাল একজন মানুষ । ৫০ বছর ধরে আমি তাঁকে চিনি। এক সময় আমরা একই রাজনৈতিক চিন্তা ও দর্শনের অনুসারী ছিলাম। জানিনা কি কারণে আমার পরিবর্তন হয়ে গেছে। রণো ছিলেন চীনপন্থী। এখন রণো রুশপন্থী সিপিবিতে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে রণোর বহুদিনের রাজনৈতিক সাথী মেনন আওয়ামী ঘরাণার রাজনীতি করছে। এমন কি এমপি হওয়ার জন্যে নৌকা মার্কায় নাম লিখিয়েছে। বামপন্থীরা প্রায় সবাই নৌকার ছইয়ের নীচে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু কি কারণে যেন সিপিবি যায়নি। মেননরা এক সময় চীনপন্থী ছিলেন এবং শেখ সাহেবের কঠোর সমালোচক ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সব মেরুকরণ হয়েছে যে কে কোন দিকে যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন হিসাব মিলানো কঠিন হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক দল করবার উদ্যোগ নিলে যাদু মিয়া সাহেব নিজের পার্টির ব্যানার ফেলে দিয়ে সকলে মিলে বিএনপি গঠণ করেন। এখনও বিএনপির প্রধান শক্তি সাবেক ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। বিএনপিকে অনেকে অধুনিক মুসলীম লীগ বলে থাকেন। নেতারা বলেন,আমরা ইসলামী চেতনাবোধ সম্পন্ন জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিএনপি বলে আমরা বাংলাদেশী। আর আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরাণার লোকেরা বলেন, আমরা ধর্মমুক্ত বাংগালী জাতিয়তাবাদে বিশ্বাস করিন। আওয়ামী ঘরাণার লোকেরা বলেন, ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার।
পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ ও ১৯৬৪ সালে দাংগা হয়েছে। দুটি দাংগাই হয়েছে ভারতের দাংগার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। ৬৪ সালের ঢাকার দাংগা আমি দেখেছি। আমি বুদ্ধি হবার পর থেকে দাংগা বিরোধী মানুষ। এটা একটা মর্মান্তিক বিষয়। দাংগায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরীব ও মধ্যবিত্তরা। ধনী এবং প্রভাবশালী হিন্দু মুসলমানতো ভাই ভাই। দাংগা লাগে কেন এবং কারা লাগায় তা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। পূর্বপাকিস্তান আমলে বেশ কয়েকটি মিলে বাংগালী বিহারী দাংগা হয়েছে। আবার কোথাও নোয়াখালী বনাম অন্যদের দাংগা হয়েছে।
দাংগার একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক আছে। রাজনীতিকরা রাজনৈতিক সুবিধা পান আর ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক সুবিধা পান। যেমন আমাদের ফেণীর উকিল পাড়ায় এখন কোন হিন্দু উকিল শিক্ষক বা ব্যবসায়ী নেই। সব বাড়িঘর গুলোর মালিক হয়ে গেছে মুসলমানেরা। কেউ অল্পদামে কিনে নিয়েছে বা জোর করে দখল করেছে। ঢাকার নবাবপুরের দিকে তাকান। ৪৭ সালের আগে বেশীর ভাগ দোকানের মালিক ছিলেন হিন্দুরা,পরে বাংগালী মুসলমান বা বিহারী মুসলমানেরা মালিক হয়েছেন। যে ক’জন হিন্দু ব্যবসায়ী ছিলেন তারাও চলে গেছেন ৫০ বা ৬৪ সালের দাংগার পর। ৭১ এর শুরুতে মানে ১লা মার্চ থেকে বাংগালীরা অবাংগালীদের দোকানপাট লুট করেছে বা দখল করেছে। ওই সময়েই অবাংগালীরা পাকিস্তান চলে যেতে শুরু করে। আবার ২৫শে মার্চের পর অবাংগালীরা প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। এভাবের শুধু মার্চ মাসেই সারাদেশে দাংগায় কয়েকশ’মানুষ মারা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে লাখ লাখ হিন্দু দেশ ত্যাগ করে চলে যায় সর্বস্ব ফেলে দিয়ে। ওদের চলে যাওয়ার পরপরই গ্রামের অসত্‍ মুসলমানেরা তাদের ফেলে যাওয়া সম্পদ লুট করে। উল্লেখ্য যে ৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময়েও বহু হিন্দু দেশ ত্যাগ করে চলে যায়। সে সময়েও বাংগালী মুসলমানেরা বাংগালী হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে। এর সবকিছুইতো রাজনীতি।
৪৭ সালে যে সব বাংগালী মুসলমান পশ্চিম বাংলা ছেড়ে চলে এসেছেন তাদের ভিতর যারা শিক্ষিত ছিলেন তারা সকলেই উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। অনেকেই বাড়িঘর বিনিময় করে দেশ ত্যাগ করেছেন। সেসব মুসলমানের ছেলেরা এখন সেক্যুলার(ধর্মহীন) হয়ে মুসলমানদের শুধুই বাংগালী বানাবার আন্দোলন শুরু করেছেন। এদের কথা হলো মুসলমানিত্ব বা ইসলামকে ঘরের ভিতর রাখো।শুধু বাংগালী হলো অসাম্প্রদায়িক শব্দ। এরা হিন্দুদের সব ধর্মীয় আচারকে বাংগালী সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করে। এরা কোরবানী বন্ধ করার জন্যে যৌথ বিবৃতি দেয়। এরা জ্ঞানপাপী। এরা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর মুসলমানিত্বের প্রয়োজন নেই রাস্ট্রের। ধর্ম বিষয়টা ব্যক্তিগত হয়ে গেছে। ৭১ সালে আমরা এ ধরনের কোন কথা শুনিনি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলামের আর কোন প্রয়োজন থাকবেনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দ্বিজাতি তত্ব ভুল প্রমানিত হবে। পাকিস্তানীদের সাথে আমরা যুদ্ধ করেছি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে। এ দুটি বিষয়ই ছিল দ্বন্ধের প্রধান কারণ। সে সময়ের জাতীয় পরিষদের প্রসিডিংস পড়লে জানা যাবে কি নিয়ে বিরোধ চরমে উঠেছিল। প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, পার্লামেন্টেরিয়ান ও সাংবাদিক মাহবুবুল হক জাতীয় পরিষেদেই বলেছিলেন সকল ক্ষেত্রে চলমান বৈষম্য অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান টিকবেনা(মাহবুবুল হকের আমার জীবন ও সময়)। বংগবন্ধুর ৬দফাও ছিল অর্থনৈতিক প্রস্তাব। ওই প্রস্তাব গৃহিত হলে পাকিস্তান কনফেডারেশন হয়েও টিকতে পারতো। কিন্তু পাকিস্তানের সে সময়ের সেনাবাহিনী ছিল কান্ডজ্ঞানহীন।
আমার আজকে বিষয় হচ্ছে দাংগা। শুরুতেই বলেছি দাংগা রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক কারণে হয়ে থাকে। এবং এর সাথে সরকারী দল অথবা সরকার জড়িত থাকে। তবে আনন্দের খবর হচ্ছে বাংলাদেশ হওয়ার পর সাম্প্রদায়িক মনোভাব একেবারে নেই বললেই চলে। তবে ভারতীয় কিছু মিডিয়া বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাংগা বাঁধিয়ে ফায়দা লুটার জন্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু হিন্দু সাংবাদিক আছেন গোপনে বা ভারতীয় কাগজে ভুয়া দাংগার খবর প্রচার করে থাকেন। এমন কি ভারতীয় স্থানীয় হাই কমিশন ওই ভুয়া খবরের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। বাংলাদেশে বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও সংগঠন আছে যারা প্রায়ই সাম্প্রদায়িক দাংগার উসকানী দিয়ে নানা ধরণের সুযোগ নিতে চান। আরও সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণরা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেনা। ভারতে দাংগা লাগলে এখন এখানে কেউ দাংগা বাধাতে পারেনা। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সাম্প্রদায়িক সাহিত্য সংস্কৃতির অবসান হয়েছে। সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমীতে দাংগা বিষয়ক নাটক মঞ্চস্থ হওয়ায় আমি অবাক ও বিস্মিত হয়েছি। ওই নাটক গুলোতে দাংগার জন্যে মুসলমানদেরই বেশী দায়ী করা হয়েছে। মুসলমানদের টুপি দাডিওয়ালা জংগী দেখিয়ে অপমান করা হয়েছে। শুনেছি কোলকাতা থেকেও নাট্যদল এসেছিল। এইতো কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন নাটকে ও ধরণের চরিত্র না দেখাবার জন্যে যা কোনভাবেই বাস্তব নয়। আমি মনে করি, এসব নাট্যকর্মী মনোজগতে সাম্প্রদায়িক। এরা মনে করেন হিন্দুদের পক্ষে থাকলেই প্রগতিশীল বা আধুনিক হওয়া যায় বা ভারত থেকে নিয়মিত দাওয়াত পাওয়া যাবে।
গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে তেমন কোন দাংগা হয়নি। রামু বা দেশের অন্যান্য জায়গায় দাংগা নামের যা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে স্বার্থান্বেষী মহল করেছে। সরকার বা বিরোধি দলের বাক্য বিবাদ থেকেই তা বুঝা যায়। ভারতে এখনও প্রতিদিন কোথাও না দাংগা লেগে আছে। কোথাও মুসলমানের বিরুদ্ধে দাংগা, আবার কোথাও অচ্যুত বা হরিজনদের বিরুদ্ধে দাংগা। ধর্মীয় ভাবেই ভারতের ৩০ কোটি অচ্যুত অর্ধমানব। তাদের অগুনে পুড়িয়ে মারার রীতি আছে।আধুনিক ভারত বা তার সংবিধান অচ্যুতদের কোন স্বীকৃতি দিতে পারেনি। ভারতের সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ড.অম্বেদকার এ কারণে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। গুজরাটের দাংগার হোতা ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুনতে পাচ্ছি তিনি নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন। মহারাস্ট্রীয় নেতা বাল থেকারেতো মোম্বাই থেকে ভিন প্রদেশের মানুষকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রকাশ্য ভাবেই বলেছিলেন ভারতে থাকতে গেলে মুসলমানদের হিন্দু হতে হবে। বাংলাদেশে এমন অবস্থা কখনই ছিলনা,এমন অবস্থা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিহারে যখন বিরাট দাংগা চলছিলো তখন প্রতিক্রিয়া হিসাবে নোয়াখালীতে কয়েকটি এলাকায় দাংগার অবস্থা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু গান্ধীজী বিহারে না গিয়ে চলে গেলেন নোয়াখালিতে মিডিয়াতে নোয়াখালির দাংগাকে বড় করে দেখাবার জন্যে। আজ কেউ দাংগার ইতিহাস লিখতে গেলে বা কোন রেফারেন্স উল্লেখ করতে গেলেই নোয়াখালির দাংগার কথা বলা হয়। কাহিনীটা কোলকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট বা সিরাজ উদ দৌলার অন্ধকূপ হত্যা কাহিনীর মতো। দাংগাবাজ সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী ও ঐতিহাসিকরা জিন্নাহ সাহেবকে সাম্প্রদায়িক নেতা বানিয়ে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক কালে ভারত থেকে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে যাতে বলা হচ্ছে জিন্না ষা্েব কখনই সাম্প্রদায়িক ছিলেন। ‘দাংগার ইতিহাস’ নামে শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটি পড়ার জন্যে সবাইকে অনুরোধ জানাবো। শ্রী শৈলেশ বলেছেন প্রতি বছর সর্বনম্ন ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার দাংগা হয়। মুসলমান বিরোধি দাংগা ছাড়াও সেখানে হিন্দু-শিখ, হিন্দু হরিজন ও হিন্দু খৃষ্টান দাংগা লেগেই থাকে। আমাদের তরুণ সমাজ এখন বিভ্রান্ত। ইসলাম বিরোধিতাকে তারা প্রগতিশীলতা মনে করে থাকে। তাদের মনে তথাকথিত সেক্যুলারিজমের নামে ধর্মহীনতা প্রচার করা হচ্ছে। তারা মনে করে ধর্মকর্ম করেও সেক্যুলার হওয়া যায়। এই মানসিকতা থেকেই সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমীতে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধি নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই তরুণদের কেউই দাংগার কারণ ও ইতিহাস জানেনা। কোন এক অদৃশ্য শক্তি বাংলাদেশের তরুণদের ধর্মহীন বা ধর্ম বিদ্বেষী করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মকে ধর্মমুক্ত করা। যদি এই লক্ষ্য হাসিল করা যায় তাহলে এদেশের সার্বভৌমত্বের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশ একটি পতাকা সর্বস্ব দেশ ও জাতিতে পরিণত হবে। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল উপাদান গুলো ইতোমধ্যেই দূর্বল হয়ে পড়েছে। জাতি হিসাবে ইতোমধ্যেই আমরা মনো জগতে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা জানিনা আমরা কারা? আমাদের পরিচয় কি? আমরা বাংগালী না বাংলাদেশী? তারপরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ, স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ। একদল চায় ধর্মমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে,আরেকদল চায় ধর্মসহ বাংলাদেশ গড়তে। একদল হিন্দু ধর্মের আচার আচরনকে বাংগালীর সংস্কৃতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আরেকদল এর বিরোধিতা করে। পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে,ইসলামের কথা বললেই মৌলবাদী জংগী ইত্যাদি বলে গালাগাল করা হয়। ধর্মীয় শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেও হেফাজতের নেতাদের সাথে বৈঠক করার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,টিভি নাটকে দাঁড়ি টুপিওয়ালাদের হেয় করা হয়। শুনেছি প্রখ্যাত নট হাসান ইমাম( যিনি এবং যাঁর পরিবার ৪৭ সালে ভারত থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ) নাকি কোন এক নির্বাচনের আগে কুকুরের মাথায় টুপি ও গালে দাঁড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। আবার তাঁর পক্ষ নির্বাচিত হলে দেশে ফিরে আসেন।
আমাদের কবিতা,সাহিত্য,উপন্যাস,নাটক সিনেমায় যদি অবিরাম ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য পেশ করা হয় তাহলে কি একদিন ইসলাম থাকবে? আমি বলবো ইসলাম থাকবেনা,কিন্তু মুসলমান থাকবে। কারণ,তারা কখনই আরবী নাম ত্যাগ করবেনা। আমাদের তরুণ সমাজকে বলবো বাপদাদার ইতিহাস ভুলে যেওনা। যদি নিজের বায়া দলিল হারিয়ে ফেল হাজার বছর কাঁদলেও সে দলিল ফিরে পাবেনা। স্পেনে গিয়ে দেখ,ওখানে অনেকের নাম আরবী,শুনে মনে হবে তারা মুসলমান। না ওরা খৃষ্টান। খায়দায় পোষাক পরে মুসলমানের মতো। আলাপ করে জানলাম ওদের পূর্ব পুরুষ মুসলমান ছিল। ক্রুসেডের দুশো বছরে ওরা ওদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। ওখানে মসজিদ হয়ে গেছে শরাবখানা। দেখলেও বুঝা যায় এখানে এক সময় মুসলমানদের আবাদ ছিল। শুরুতেই বলেছি ,বাংলাদেশের মানুষ দাংগা চায়না। রাজনীতিকরা চাইলে দাংগা হয়। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকরাই দাংগার বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছিল। যারা দাংগা বিষয়ক নাটক মঞ্চস্থ করেছেন তাঁরা বিষয়টার গভীরে যাননি। তরুণদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে জগতে ধর্ম থাকবে,ধার্মিক মানুষ থাকবে,ধর্মের আচার অনুষ্ঠান থাকবে। ধর্মের অপব্যবহার থাকবে স্বার্থান্বেষীদের কারণে। একমাত্র জ্ঞানই,এবং সত্য জ্ঞানই মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে বের করে আনতে পারে। যারা ধর্ম চান না বা মানেন না তাদের ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু যারা ধর্ম মানেন,তাদের অবশ্যই নিজ নিজ ধর্মের জ্ঞান থাকতে হবে। বিশেষ করে আমি তরুণদের বলবো নিজের ধর্মকে ভাল করে জান। ইসলাম জ্ঞানকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শুধু জ্ঞান লাভ করো। জ্ঞানহীন ব্যক্তির মুসলমান হওয়াও কঠিন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


মনে রাখার বিষয় নয়
মনে রাখার কথা ভেবে
কেউ মাকে ভালবাসেনা
ভালবাসার স্বাধীনতা
খোদাকে ভালবাসা।
খোদাই অন্তরে ভালবাসা ঢেলে দেন
বায়েজিদ ওয়ায়েজ
মাকে ভালবেসেইতো
খোদার ভালবাসা পেয়েছিলো
পেয়েছিল মুহম্মদের ভালবাসা।
আমি শের আলি
ভালবেসেছি আমার দেশকে
মায়ের চেয়েও অনেক বড়
দেশমাতৃকাকে
তোমাদের মনে রাখার কথা
ভেবে নয়
কখখোনা না
কখনো এমন ভেবে
দেশকে ভালবাসিনি
দেশকে ভালবাসলে কেমন জ্বালা হয়
যে ভালবাসে
সেই জানে
এ ভালবাসাই প্রেমিককে
জীবন দিতে শেখায়।
মনসুর হানিফা শুখাতুর
সত্যকে ভালবেসে
তোমাদের জন্যে রক্ত দিয়েছে
ভালবাসার ফল হলো রক্ত
আমি শের আলি
রক্ত দিয়েছি
আমার মায়ের শ্যামল ছায়ায়
মাথা রেখে
ঘুমাবো বলে।
আমি খোদাকে বলেছি
মনসুরের মতো
সত্যের জন্যে তুমিতে রক্ত ভালবাসো
এ দেশের স্বাধীনতার জন্যে
আমার রক্ত প্রস্তুত
তুমি গ্রহন করো
আর বিনিময়ে
তোমার দরবারে
আমার নাম লিখে রাখো।

১৮৭২ সালে আন্দামানের কারগারে বন্দী শের আলি আফ্রিদী বড়লাট লর্ড মেয়েকে হত্যা করেছে। শের আলি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে আগেই আন্দামানের কারাগারে ছিল। লর্ড মেয়েই একমাত্র ভাইসরয় একজন স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জীবন দিয়েছিলেন। আমি শের আলির স্মরণে আমি এ কবিতাটি লিখেছি।

Read Full Post »

www.facebook/ershad mazumder


www.facebook/ershad mazumder

Read Full Post »


জিন্নাহর হারাণো ভাষণ ও প্রথম আলো / এরশাদ মজুমদার

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের একটি ভাষণের নাকি রেকর্ড করা ভাষণ পাকিস্তানের কাছে ছিলনা। তাই পাকিস্তান অনেক দেন দরবার করে আকাশবাণীর মহাফেজখানা(আর্কাইভ) থেকে ওই ভাষণ সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর খোলা চোখ কলামে নিউইয়র্কের হাসান ফেরদৌস সাহেব একটি কলাম লিখেছেন।যা ২১শে সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট জিন্নাহ সাহেব পাকিস্তানের গণ পরিষদে ভাষণটি দিয়েছিলেন। স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে ১৪ই আগস্ট। একই ঘোষণা স্বাধীন সার্বভৌম ভারতের জন্যে ১৫ই আগষ্ট। বৃটিশ সরকারের ওই ঘোষনার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের দুইটি নতুন স্বাধীন রাস্ট্রের জন্ম হয়েছে। হাসান সাহেব সন্দেহ করেছেন পাকিস্তানীরা সম্ভবত ওই ভাষণ নষ্ট করে ফেলেছেন।সন্দেহের কারণ হয়ত ফেরদৌস সাহেব মনে করেন পাকিস্তানীরা তাঁর ধরণার সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেনা। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে। মানে ভারতে মুসলমানেরা একটি জাতি,সম্প্রদায় বা গোষ্ঠি নয়। ভারতের হিন্দুরাও ধর্মীয়ভাবে আলাদা একটি জাতি। যদিও ভারতের বড় বড় জ্ঞানী গুণীরা বলেছেন,হিন্দুত্ব কোন ধর্ম নয়। এটা ভারতের আচার অনুষ্ঠান বা সংস্কৃতি। ভারতবাসী মানে হিন্দুদের আচার অনুষ্ঠানের মূল উত্‍স হলো বেদ উপনিষদ ও গীতা। এসব চলে আসছে পাঁচ হাজার বছর ধরে। আর মুসলমানদের জীবনবোধ ও জীবন চর্চার মূল উত্‍স হলো আলকোরআন। একই ভৌগলিক এলাকায় বাস করেও দুটি জীবনধারা পাশাপাশি বয়ে গেছে বা চলছে হাজার বছর ধরে। হিন্দু জীবনধারায় বর্ণবাদ রয়েছে। মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় ভাবে কোন ধরনের বর্ণবাদ নেই। বংগবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনী যাঁরা পাঠ করেছেন তাঁরা জানতে পেরেছে তিনি স্কুল জীবনে কি ধরণের বর্ণবাদ বা অস্পৃশ্যতা দেখেছেন। হিন্দু বাড়িতে মুসলমানেরা প্রবেশ করতে পারতোনা। কিন্তু হিন্দুরা অবলীলাক্রমে মুসলমান বাড়িতে থাকতে ও খেতে পারতো। ভারতের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড.অম্বেদকার শেষ জীবনে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বর্ণবাদ ব্যবস্থার কারণে।প্রাচীন ভারতের আইন প্রণেতা মহাজ্ঞানী মনু তাঁর রচিত সংহিতায় বর্ণবাদের বিশেষ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি শূদ্রদের(নিম্নবর্ণ) বলেছেন অর্ধমানব। এখনও ভারতে প্রতিবছরই নানা অপরাধের কারণে সমাজপতিরা শূদ্রদের পুড়িয়ে মারে। ভারতীয় সভ্যতায় মানে হিন্দু সভ্যতায় গরুকে ‘গোমাতা’ বলা হয় এবং গরুকে পূজা করা হয়। মুসলমানেরা গরু কোরবাণী করে এবং খায়।
ভারত কেন বিভক্ত হলো এ নিয়ে হাজার বই রচিত হয়েছে। একই ভাবে জিন্নাহ এবং পাকিস্তানকে নিয়েও বহু বই রচিত হয়েছে। বহু মানুষ জিন্নাহকে বা গান্ধীজীকে পছন্দ করেনা। গান্ধীজীকে যাঁরা হত্যা করেছেন তাঁরা বলেছেন,গান্ধী একজন ভন্ড। গান্ধীজীর পরম ভক্ত কে কে বিড়লা বলেছেন,`Birlas used to spend millions to keep bapuji poor’.মানে বাপুজীকে গরীব রাখার জন্যে বিড়লারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতো।
৪৭ সালের ১১ই আগষ্টের ভাষণের শুরুতে জিন্নাহ কেন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে বা কেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে তার প্রেক্ষিত বর্ণনা করেছেন। তখন তিনি বলেছে এটা অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য ছিল। জিন্নাতো রাজনীতির শুরুতে অখন্ড ভারতের প্রবক্তা ছিলেন। তাঁকেতো হিন্দু মুসলীম ঐক্যের দূত বলা হয়েছে। ১৮৮৫ সালে যে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা কালক্রমে হিন্দুদের সংগঠণে পরিণত হয়েছিল। হিন্দু মুসলমান ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে কথার পরিবর্তে তা হয়ে শুধু হিন্দুদের প্রতিষ্ঠান হিসাবে। ফলে বাধ্য হয়ে ভারতের মুসলমানেরা ১৯০৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় এক সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করে। শুরুতে জিন্নাহ কিন্তু মুসলীম লীগের সাথে জড়িত হননি। এক পর্যায়ে তিনি কংগ্রেসের উপর বিরক্ত হয়ে মুসলীমে যোগদান করেন। জিন্নাহ কখনই গোঁড়া ছিলেন না। তিনি ভারতের স্বার্থে উদার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা ছিলেন সাম্প্রদায়িক এবং নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে অন্য কারো স্বার্থে চিন্তা করার ক্ষমতা ছিলনা। একটা কথা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে ইংরেজরা পুরো দখলে নিয়েছিল হিন্দুদের হাত করে। দিল্লী পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের একশ’ বছর সময় লেগেছিল। এই পুরো একশ’বছরই মুসলমানেরা ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করেছে।
ভারত বিভক্তির পেছনের ইতিহাস যাঁরা জানেন না তাঁরা মনে করেন জিন্না্ বা মুসলমান নেতাদের সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় চিন্তাধারার কারণে এমনটি হয়েছে। আসলে ভারত বিভক্তির প্রধান কারণ হচ্ছে কংগ্রেস নেতাদের একগুঁয়েমী ও ভারতে মুসলমানদের উপস্থিতিকে অস্বীকার করা। যদি ভারতকে আদলে একটি সত্যিকারের ফেডারেল রাস্ট্র গঠনের বিষয়টা কংগ্রেস মেনে নিতো তাহলে হয়ত ভারত ভাগ হতোনা। এখন মানে চলমান সময়ে ভারতের নেতারা বুঝতে পেরেছেন ৪৭ সালে কংগ্রেস ভুল করেছে। জিন্নাহ কখনই ধর্ম ভিত্তিক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। তখনকার কংগ্রেস নেতাদের মনোভাবের কারণে কংগ্রেস একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠণে পরিণত হয়েছিল। মুসলমানরা ভারতে একটি আলাদা জাতি একথা ভাবতে হিন্দু নেতারাই মুলত: দায়ী। কিন্তু এ বিষয়টা পরবর্তী পর্যায়ে মানে ৪৭ সালের পরে তথাকথিত কিছু মুসলমান বুদ্ধিজীবী,যাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবী করে তাঁরা পাকিস্তান সৃষ্টিকে অবাস্তব ও সাম্প্রদায়িক বলে প্রচার করতে শুরু করে। এমন কি ভারত থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বা সুবিধা পাওয়ার আশায় পাকিস্তানে চলে এসেছেন এমন কিছু শিক্ষিত লোকও পাকিস্তানের বিরোধিতা করতে শুরু করে।
প্রসংগত সেক্যুলার(Secular) শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। বহুকাল ধরে আমাদের সমাজে এই ইংরেজী শব্দটার ভুল অনুবাদ বা ব্যাখ্যা দিয়ে আসা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সেক্যুলার মানে ধর্ম নিরপেক্ষ। মানে যাঁরা ধর্মের ব্যাপারে কোন পক্ষ গ্রহন করেন না। কিন্তু এ অনুবাদ বা ব্যাখ্যা ভুল। কারণ ,সেক্যুলার মানে ধর্মহীন। যিনি যাঁরা ধর্ম মানেন না,যাঁরা শুধু ইহ জগতে বিশ্বাস করেন। কিন্তু জগতের সকল ধর্মের লোকেরাই পরকাল,পরলোকে বিশ্বাস করেন। শুধুমাত্র অবিশ্বাসী ধর্মহীন লোকেরাই জাগতিক বিষয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। বাংলাদেশে বহু শিক্ষিত লোক নিজেদের সেক্যুলার বলে প্রচার করেন এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যে নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসী বলে দাবী করেন। এঁদের অনেকেই মনে করেন সেক্যুলার হলেই প্রগতিশীল হওয়া যায়। এরাই ধর্ম বিশ্বাসীদের ফান্ডামেন্টালিস্ট(Fundamentalist) বা মৌলবাদী বলে গাল দেয়। শব্দটার জন্ম হয়েছে বৃটেনে যখন খৃষ্টধর্মে বিভাজন দেখা দেয়। একদল আরেক দলকে মৌলবাদী বলে গালাগাল দিতে শুরু করে। এখন খৃষ্টধর্মে দুটি প্রধান বিভাজন রয়েছে। একটি ক্যথলিক আর অপরটি প্রটেষ্ট্যান্ট। ক্যথলিক গীর্জার সদর দফতর হলো ইটালির ভ্যাটিকানে আর প্রটেষ্ট্যান্টদের সদর দফতর ইংল্যান্ডে। বৃটেনের রাজ পরিবারই এর প্রধান।
এখন মৌলবাদ শব্দটি মুসলমানদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমারাতো করেই কিছু প্রগতিশীল আরবী নামধারী মানুষও মুসলমানদের মৌলবাদী বলে গাল দেয়। আরবী নামধারী তথাকথিত মুসলমানরা নিজেদের মানবধর্মী,প্রগতিশীল,নন পারফর্মিং বা নন প্রাক্টিসিং মুসলমান বলে দাবী করেন। এরা কেউই মুসলমান নয়। এরা মোনাফেক বা বিশ্বাসঘাতক। এদের ব্যাপারে কোরআন শরীফে সুস্পষ্ট বক্তব্য ও ঘোষণা রয়েছে। এরা রাসুলের(সা) জামানায়ও ছিল ,এখনও আছে। প্রথম আলো প্রগতিশীল,সেক্যুলার,মানবতাবাদীদের কাগজ। তাই সুযোগ পেলেই আকারে ইংগীতে ইসলাম, মুসলমান ও মুসলমান রাস্ট্রকে আঘাত করে। উপমহাদেশে পাকিস্তানের সৃষ্টিকে সেক্যুলার(ধর্মহীন) চিন্তাধারার লোকেরা মানতে পারেনি। তাই পাকিস্তানকে ধর্মীয় রাস্ট্র বলে গালাগাল দেয়। এরা মুসলীম লীগের সৃষ্টিকেই মানতে পারেনা।
জিন্নাহ সাহেবের ১১ই আগষ্টের ভাষণ সকল মহাফেজখানা বা আর্কাইভসে মূল্যবান দলিল হিসাবে আছে। কোন পাঠাগার বা লাইব্রেরীতে যেতে হবেনা। ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। আগেই বলেছি ওই ভাষণে জিন্নাহ সাহেব কেন পাকিস্তান বা মুসলমানদের জন্যে আলাদা রাস্ট্রের প্রয়োজন হয়েছিল তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। অখন্ড হিন্দু ভারতে(যদিও কাগজে কলমে হিন্দু রাস্ট্র বলা হয়না) মাইনরিটি বা সংখ্যালগু হিসাবে মুসলমানদের কি অবস্থা হবে তার কথাও তিনি বলেছেন। এখনও ভারতে প্রতি বছর ছোট খাট এক হাজার দাংগা হয়। ভারত কথায় কথায় মানবতা,আধুনিকতা,প্রগতিশীলতা,বিজ্ঞানমনস্কতা বললেও কার্যত এটা একটা বর্ণবাদী হিন্দু রাস্ট্র। হাসান ফেরদৌস নিশ্চয়ই এমন একটি রাষ্ট্র চান যেখানে ধর্ম থাকবেনা। এক সময় চীন রাশিয়া সহ বহু দেশে ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। ৭০/৮০ বছর পরে এখন আবার মসজিদ গীর্জা ও সাইনাগগের দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে। কারণ ধর্মচর্চা করা মানুষের মৌলিক অধিকার। কমিউনিষ্ট রাষ্ট্র গুলো এই অধিকারকে অস্বীকার করেছিল। আমাদের বাংলাদেশেও রাস্ট্রের উপর তথাকথিত সেক্যুলার প্রগতিশীলদের প্রভাব প্রতিপত্তি খুবই বেশী। এরা গোপনে বা প্রকাশ্যে রাস্ট্রের সব জায়গা দখল করে রেখেছে। জিন্নাহ সাহেব কিন্তু কখনও একথা বলেননি যে পাকিস্তান একটি সেক্যুলার রাস্ট্র হবে। তিনি বলেছেন,পাকিস্তানে সবাই পাকিস্তানী হবে। কেউ বাংগালী,সিন্ধী,বালুচ, পাঞ্জাবী বা হিন্দু মুসলমান থাকবেনা। সবার রাস্ট্রীয় পরিচয় হবে পাকিস্তানী। ভারতে যেমন সবাই ভারতীয়। ভারতেও বহু ভাষা,বহু ধর্ম, বহু গোত্র বা জাতি রয়েছে। কিন্তু সবার রাষ্ট্রীয় পরিচয় ভারতীয় বা ইন্ডিয়ান। বাংলাদেশেও বহু ধর্মের,বহু গোত্র বা উপজাতি রয়েছে। কিন্তু সবার পরিচয় বাংলাদেশী। সবার পাসপোর্টে লেখা থাকে বাংলাদেশী। কিন্তু সেক্যুলার প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের বাংলাদেশী বলতে নারাজ। তাঁরা নাকি শুধুই বাংগালী। তাঁরা বাংলাদেশী শব্দের ভিতর যেন কিসের গন্ধ পান। একজন বুদ্ধিজীবী বলেই ফেলেছেন, বাংলাদেশী বললে নাকি বাংলাদেশী গরু,ছাগল,গাছপালা,মাছ ইত্যাদি মনে হয়। এ কারণেই নাকি বলতে হবে বাংলাদেশী মানুষ। শুধু বাংলাদেশী বললে নাকি গরু ছাগল মনে হতে পারে।
জিন্নাহ সাহেব ৪৮ সালের জুলাই মাসে ষ্টেষ্টব্যান্ক অব পাকিস্তান এর উদ্বোধন করতে গিয়ে যে ভাষণ তাতে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যান্কিং ব্যবস্থার উপর গবেষণার গুরুত্ দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন পশ্চিমা ধনবাদী অর্থনীতির পচন শুরু হয়ে গেছে। তাই ইসলামী অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার সময় এসে গেছে। এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ। সুতরাং জিন্নাহ সাহেবের ১১ই আগষ্টের ভাষণ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। ভারত যেমন হিন্দুর দেশ তেমনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ। মুসলমানেরা বাংলাদেশে মেজরিটি হলেও সাংবিধানিক ভাবে এখানে সবধর্মের মানুষের সমান অধিকার। এদেশে কোথাও কোন ধরণের পৃথক নির্বাচন হয়না। পাকিস্তান বা ভারতেও হয়না। এর মানে নাগরিক হিসাবে সবার সমান অধিকার। মদীনা রাস্ট্রেও সকল সমান অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু কেউ দাবী করেনি যে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাস্ট্র করা হোক। বাংলাদেশে কোথাও ইসলামী আইন নেই। এদেশে কোরআন সুন্নাহ না জানলেও রাস্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, প্রধান সেনাপতি হওয়া যায়। এমন কি ধর্ম না মানলেও সবকিছু হওয়া যায়।
বাংলাদেশ না বাংগালীর রাস্ট্র,না মুসলমানের রাস্ট্র। ধর্মমুক্ত আদি অকৃত্রিম বাংগালী রাস্ট্র বানাবার কোন চেষ্টা কেউ করেননি। ইসলামী রাস্ট্র বানাবার চেষ্টাও কেউ করেনি। পূর্ণাংগ সেক্যুলার রাস্ট্র বানাবার চেষ্টাও করেনি। ৫৪ সাল থেকেই বলা হচ্ছে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবেনা। এদেশে সংবিধানে লেখা থাকে রাস্ট্র ধর্ম ইসলাম। শুক্রবারে ছুটি থাকে। আবার সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর নাম তুলে দেয়া হয়। হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখন দেশে বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহী চলছে। আকবর শব্দ ব্যবহার করাও অনেকে পছন্দ করেন না। তাঁরা বলেন‘ আল্লাহ সর্বশক্তিমান’। এদেশে সংবিধানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করা হয়না। বলা হয় জনগণই সার্বভৌম। জনগণকে সার্বভৌম না মানলে বলা হয় বাংলাদেশ রাস্ট্রে অবিশ্বাসী।
লেখক: কবি ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


বিভেদের রাজনীতি ও চলমান সরকার / এরশাদ মজুমদার

সত্যের কথা বলে বা প্রচার করে নির্যাতিত বা নিহত হননি এমন মহাপুরুষ জগতে খুব কম আছেন। রাজা রাজনীতি রাস্ট্র সমাজপতি কেউই সত্যকে বাঁচাতে বা বাঁচতে দিতে চাননা। রাজা রাজ্যের জন্যে সত্যকে হত্যা করেন। রাস্ট্রও সত্যের ভয়ে সত্যকে কারাগারে রাখে বা সহ্য করতে না পারলে হত্যা করে। রাস্ট্র নিজেকে সত্যের হাত থেকে রক্ষা করতে চায়। রাজাও নিজের স্বার্থে সত্যকে করেছেন অতীতে এবং এখনও করছেন। আমার নিজের ব্যাখ্যা হলো সত্য আর রাজনীতি, রাজা ও রাষ্ট্র একসাথে চলতে পারেনা।
প্রশ্ন হচ্ছে যারা রাজ্য চালান বা রাষ্ট্র চালান তারা কারা? উত্তর হচ্ছে তারা একদল মানুষ যারা জনগণের সেবা বা কল্যাণের কথা বলে রাজ্য বা রাস্ট্র ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতায় আরোহনের পর রাস্ট্র বা রাজ্য নামক প্রতিষ্ঠানের প্রহরী হয়ে যায়। তখন তাদের প্রধানতম কাজ হয়ে যায় রাজ্য বা রাস্ট্রকে জনগণের হাত থেকে রক্ষা করা। এজন্যে জনগণের নামে তারা সংবিধান ও আইন প্রণয়ন করে। যারা আইন প্রণয়ন করেন তারাও রাস্ট্র নামক মহাকল্যাণকামী ফ্রাংকেস্টাইনের দাসে পরিণত হয়। তখন তারা আর জনগণকে দেখতে পাননা। দেখতে পান শুধু রাস্ট্রকে এবং যারা রাস্ট্র পরিচালনা করেন তাদেরকে। জনগণের কিছু অংশকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বা নানা ধরণের সুবিধা দিয়ে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করে। কালক্রমে এক ধরনের ক্ষমতালোভী শ্রেণীর জন্ম হয়। এই শ্রেণীই নানা দল ও মত হয়ে ক্ষমতায় আসে আর ক্ষমতা থেকে বাইরে যায়। এদের সাথে যোগ দেয় ব্যবসায়ী বুদ্ধিজীবী ও প্রশাসনিক যন্ত্র। এইতো আওয়ামী লীগের নাসিম সাহেব বলেছেন, সরকারী কর্মচারীরা সরকারের কথা না শুনলে বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। এর মানে আওয়ামী লীগ আর সরকারের ভিতর এখন আর কোন ফারাক নেই। ১৯৯৬ সালে আজকের স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ও তখনকার আমলা মখা আলমগীর ও সাংগপাংরা বলেছিলেন, সরকারী কর্মচারীরা কারো ভৃত্য নয়। এমন কি তারা সরকারেরও কর্মচারী নয়। তারা রাস্ট্রের সেবক। তাই কোন সরকারের কথা শুনতে তারা বাধ্য নন। তখন মহাবিখ্যাত সুশীলনেতা আকবর আলি খান ও জনতার মঞ্চকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ১৯জন সচিবকে নিয়ে তিনি রাস্ট্রপতির সাথে দেখা করেছিলেন। নাসিম সাহেবের বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ সুশীল সমাজ এখনও করেননি।
কথা বলছি সত্যের অবস্থান নিয়ে। বেশ কিছু বছর আগে নামজাদা সাংবাদিক মরহুম ফয়েজ আহমদ ‘সত্যবাবু মারা গেছেন’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। বইটা খুবই নাম করেছিল। বইটা ফয়েজ ভাই লিখেছিলেন বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে। সত্যি কথা বলতে কি সত্য সব সময়েই সরকার ও রাস্ট্রের জন্যে বিপদজনক। রাস্ট্র কখনই সত্য নির্ভর নয়। রাস্ট্র বা সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে সত্যকে সহ্য না করা। আধুনিক বিশ্বে সকল সরকারই সত্যকে গোপন রাখতে চায়। এমন কি আধুনিক রাস্ট্র ব্যবস্থার কাঠামো নিজেকে রক্ষার জন্যে কখনও কখনও রাস্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রীকেও হত্যা করে থাকে। চলমান সময়ে আমরা উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা এ্যাসাঞ্জ ও সিআইয়ের কর্মচারী স্নোডেনের অবস্হা দেখতে পাচ্ছি। সত্য প্রকাশ করার অপরাধেই দুজনই পলাতক। দুজনকেই নিজদেশের সরকার খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওরা নাকি রাস্ট্রের গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দিয়েছে। গোপন বিষয় ফাঁস করার অপরাধে রাস্ট্র বহু মানুষকে হত্যা করে। এইতো ক’দিন আগে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর স্যুটে গিয়ে একান্তে বলেছেন বহুল পরিচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহা। একই আদর্শ ও মতের প্রিয়জন হিসাবে হয়ত অনেক না বলা কথা বলেছেন মুন্নীর কাছে। মুন্নী নাকি সে সব না বলা কথা জানিয়ে গোপনে রেকর্ড করে ফেলেছেন। এটা নাকি সাংবাদিকতার ইথিকসে পড়েনা। তাই সরকারী কর্মচারীরা মুন্নীর গোপন ভিডিও ক্যামেরা বা ক্যাসেটা জব্দ করেছে। একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক নাকি মুন্নীকে ধরিয়ে দিয়েছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী কি এমন কথা বলেছিলেন যা প্রকাশ করা যাবেনা। আমার প্রশ্ন হলো,মুন্নীকে সাংবাদিক জেনেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে প্রকাশ যোগ্য নয় এমন কথা বলবেন কেন? এখন মুন্নীকে দেশে বিদেশে অনেকেই বলতে পারে যে আপনি ওই কথাগুলো নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করেন আমরা ছাপবো।সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে মুন্নী এমন কাজ করতেও পারেন। আমরা রিপোর্টার হিসাবে ৩০/৪০ বছর আগে যা বলতে পারিনি তা এখন অনেক সময় কলামে লিখছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সবাই ভাবতে শুরু করলাম,এখন সরকারের কি সমালোচনা করবো। দেশ আমাদের ,নেতাও আমাদের। সবইতো আমাদের। শোষক নেই শোষণ নেই শোষিতও নেই। সদ্য স্বাধীন দেশ, সবাই মিলে দেশ গড়ে তুলবো। সাধারন মানুষ রাস্ট্র বা সরকারী ব্যবস্থার খুটিনাটি বুঝতে পারেনা। তারা ভেবেছে পাকিস্তান নাই,সবকিছুই এখন আমাদের,বাংগালীদের। স্বাধীন দেশের মানুষের সহজ সরল এই আকাংখার সাথে রাস্ট্র আর সরকারের চিন্তা মিল খায়নি। ৭০ সালের নির্বাচনের আগে বংগবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণায় যা বলেছিলেন বা ওয়াদা করেছিলেন তা সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশে চটজলদি করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিলনা। কিন্তু সাধারন মানুষ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তা বুঝতে নারাজ ছিল। সর্বত্র আওয়াজ উঠে গেল নাই নাই। কবি রফিক আজাদ লিখলেন, ‘ভাত দে হারামজাদা,না হয় মানচিত্র খাব। মানে ভুখা মানুষের কাছে মানচিত্রের তেমন দাম নেই। অমর্ত সেন বলেছেন চাল গম ছিল কিন্তু বিলি বন্টণ ব্যবস্থা ঠিক ছিলনা। তিনি বললেন, শুধু গুদামে প্রচুর খাদ্য থাকলেই চলবেনা,তা সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। তখন বংগবন্ধুর অতি আপন আমেরিকাপন্থী কাগজ জাল পরাণো ভুখা বাসন্তীর ছবি ছেপেছে। সময় সুযোগ বুঝে অতি আপনজনেরা কেউই বংগবন্ধু সাথে ছিলনা। শুনেছি,তিনি নিহত হলে কেউই নাকি ইন্নালিল্লাহ বলেনি। অনেক আপনজন তাঁকে ফেরাউন বলে আখ্যায়িত করেছে।
আমার আজকের কলামের মূল বিষয় হলো সকল যুগেই সত্যকে নিহত হতে হবে। বংগবন্ধুর আমলে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হাজার মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যাদের এখন মানবতাবিরোধী বলে যাদের বিচার হচ্ছে তারা যদি বলে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদেরও বিচার হতে হবে তখন আমরা কোন সত্যকে গ্রহণ করবো। যে নামেই হোক বা যে অভিযোগেই হোক নিহত হচ্ছে দ্বিখন্ডিত জাতির সন্তানেরা। ১৬ কোটি মানুষের ভিতর হাজার মানুষ আছে যারা চুরি চামারি, মাস্তানী ,ছিনতাইকারী,ক্ষমতার জোরে সম্পদ লুন্ঠণকারি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত রয়েছে। এজন্যে দেশে আইন আদালত আছে,পুলিশ আছে। এমন কোন আইন এখনও তৈরি হয়নি যে চোর ডাকাতেরা ভোটার হতে পারবেনা, জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেনা, পাসপোর্ট পাবেনা। এমন কি চোর খুনী হিসাবে প্রমানিত হওয়ার পরেও তারা ভোটার এবং নাগরিক। রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ এখন বিভক্ত। রাজনৈতিক ভাষায় বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি আর বিপক্ষ শক্তি। উভয় পক্ষ সামাজিক জীবনে আত্মীয়তা করে। সেখানে কোন রাজনীতি নেই। এমন কি জামাতের নেতাদের সন্তানদের সাথে আওয়ামী নেতাদের সন্তানদের বিয়েশাদী হচ্ছে। অনেকে পাকিস্তানী খানদানী পরিবারের সাথেও ইদানিং আত্মীয়তা করছেন। এমন কি সাধারন মানুষ বলাবলি করে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেবও একজন রাজাকার। এমন কি বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির দামী দামী মানুষেরা ধর্মের বাইরে গিয়ে মুর্তি পুজারীকেও বিয়ে করেন। এখনতো ধর্মহীন বিয়ের জন্যে কাজীর অফিস খোলা হয়েছে। বিয়ে নিবন্ধনের জন্যে ধর্মীয় পরিচয় দিতে হবেনা। শুধু ফি দিলেই হবে। কাজী যে কোন ধর্মের হতে পারবেন।
বংবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি যারা দলমত নির্বিশেষে জাতির উন্নয়নের জন্যে কাজ করে যাবে। না তা হয়নি। ৪২ বছরে জাতি এখন ষোলয়ানা বিভক্ত। নয় কোটি ভোটের ভিতর পাঁচ কোটি একদিকে আর চার কোটি আরেক দিকে। ১৪ দলীয় জোট চার কোটি ভোটের জোট। বহুধা বিভক্ত ১৮ দলীয় জোটের ভোট আছে পাঁচ কোটি। ১৪ দলীয় জোট নিজেদের সেক্যুলার(ধর্মহীন) বলে পরিচয় দেয়। ইসলামকে গৃহধর্ম হিসাবে রক্ষা করতে চায়। এই জোটের শ্লোগাণ হলো ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এর মানে হলো ধর্মীয় ভাবে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ
মুসলমান বা ইসলামপন্থী হলেও তাদের অধিকার ১০ ভাগের মতোই। ভোটের মাঠে সবার একটি করে ভোট। কিন্তু রাস্ট্রের চিন্তা চেতনায় মুসলমানদের ইসলামী চেতনা থাকতে পারবেনা। সেক্যুলার শব্দটির ভুত এখন শিক্ষিত মুসলমানদের মাথায় বসবাস করতে শুরু করেছে। এদের কথা হলো,আমরা মুসলমান আছিতো। নবী মানি,কিতাব মানি ও আল্লাহ মানি। কিন্তু এ নিয়ে কিছু করতে চাইনা। এমন কি এরা পরকালেও বিশ্বাস করেনা। এরা ভারত ও পশ্চিমাদের আস্থাভাজন
আরবী নামধারী মুসলমান। বিশেষ করে ভারত এদের খুব ভালবাসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ না করে রেডিও টিভি ও পত্রিকায় কাজ করেও এরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। এরা জিয়াউর রহমানকেও পাকিস্তানের এজেন্ট বলতে দ্বিধা করেনা। এখন আমাদের ইতিহাস বিভক্ত, সংস্কৃতি বিভক্ত আর পুরো জাতি বিভক্ত। কারণ, ভারত বাংলাদেশে একটি জাতিকে দেখতে চায়। তাতে তাদের অনেক সুবিধা। বিভক্ত জাতিকে প্রক্সিতে শাসন করতে সুবিধা। ভারত আশে পাশের সবদেশেই তাবেদার সরকার চায়। আমি বলবো,ভারত নিজদেশের স্বার্থেই এ কাজটি করে। দিল্লী সঠিক কাজটিই করছে। আর বাংলাদেশের বেশ কিছু মানুষ দিল্লীর এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে। জেলারেল মইনের আমলে আমরা দেখেছি দিল্লী কত খোলামেলা ভাবে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। শুনেছি আমাদের সচীবদের পোস্টিংয়ের ব্যাপারেও ভারতীয় হাই কমিশন হস্তক্ষেপ করেছে। এক সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন,তাঁরা বাংলাদেশে বন্ধু সরকার চান। এর মানে বাংলাদেশে যারা দেশ চালাবেন তাদের ভারতের সাথে বাধ্যতামূলক ভাবেই বন্ধুত্ব রাখতে হবে। কূটনীতিতে সকল দেশই পরষ্পরের বন্ধু যদি কোন কারণে পরিবেশ পরিস্থিতির অবনতি না হয়।কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের বন্ধুত্ব মানে একতরফা। বাংলাদেশ একতরফা ভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে। বিগত ৪২ বছর ধরে আমরা তাই দেখে আসছি। বাংলাদেশে ভারতের বেশ কিছু বন্ধু আছেন যাঁরা ভারতের সাথে অধীনতামূলক মিত্রতা চান। যে কোন অবস্থায় ভারতকে খুশী রাখতে চান। আমার প্রশ্ন,ভারতের সাথে প্রতিবেশী কার বন্ধুত্ব আছে?
নেপাল ভুটান পাকিস্তান চীন শ্রীলংকা মালদ্বীপ কার ভারতের সুসম্পর্ক আছে? না কারো সাথে নেই। কারণ,ভারত সম পর্যায়ের সম মর্যাদার বন্ধুত্ চায়না। ভারত চায় অধীনতামূলক মিত্রতা। কারণ, ভারত নিজেকে বাঘ মনে করে আর প্রতিবেশীকে বিড়াল মনে করে। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন ‘হাজার সাল কা বদলা লিয়া’। তিনি কেন এ কথা বলেছিলেন তা আমাদের তরুণ সমাজকে বুঝতে হবে। ৭১১ সালে মুহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু জয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের ভারত অভিযান শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে জেনারেল নিয়াজীর পরাজয় ও জেনারেল মানেকশ’র বিজয়ের মাধ্যমে এক হাজার বছরের প্রতিশোধ নিয়েছেন ইন্দিরাজী। এসব হচ্ছে ইতিহাসের কথা। যে ইতিহাস আমাদের তরুণ সমাজ জানেনা বা জানতে চায়না। একজন মুসলমান হিসাবে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলা নাকি সাম্প্রদায়িকতা। বাপদাদার বায়া দলিলের কথা বললেই নাকি সাম্প্রদায়িকতা হয়ে যায়। এখন নাকি সবাই বাংগালী এবং এই শব্দের ভিতরেই ধর্মীয় পরিচয় বিলীন হয়ে গেছে বা বিলীন করে দিতে হবে।
বাংলাদেশে এখন সত্যের দাফন কার্য অবিরত চলছে। রাস্ট্র না হয় নিজের স্বার্থেই মিথ্যা বলে এবং অবিরত মিথ্যাকে হত্যা করে। কিন্তু জ্ঞানী গুণী, কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক বুদ্ধিজীবী সহ ভাল মানুষ বলে বহুল প্রচারিত নামীদামী লোকেরা কি করছেন। মহামতি সক্রেটিস একজনই তখনকার গ্রীকের সন্ত্রাসী সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সত্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে।ইমামে আজম হজরত আবু হানিফাকে প্রাণ দিতে হয়েছে সত্যকে রক্ষা করতে গিয়ে। কবি ও সুফীবাদের প্রথম শহীদ মনসুর হাল্লাজকে প্রাণ দিতে হয়েছে। মনসুর নাকি নিজেকে খোদা দাবী করেছিলেন। এমন মিথ্যা অভিযোগেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। মনসুর বলেছিলেন,‘আমি হচ্ছি সে যাকে আমি ভালবাসি। এবং যাকে আমি ভালবাসি সে হচ্ছে আমি’। এ কথাগুলে তখন শাসক ও আলেম সমাজ বুঝতে পরেননি। অথবা বুঝেও নিজেদের হীন স্বার্থে মনসুরকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে তাঁর দেহকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছি। যুগে যুগে রাস্ট্র সরকার,রাজা মহারাজা ও বাদশাহরা সত্যকে হত্যা করে নিজেদের বা রাস্ট্রকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। সে সব রাস্ট্রও নেই ,রাজারাও নেই। শুধু বেঁচে আছে সত্য। সত্যের মরণ নেই। তাই যুগে যুগে সে ফিরে আসে এবং নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে সকল শব্দ আকাশে নিক্ষেপ করে। হে,আল্লার বান্দাহ ও রাসুলের উম্মতগণ কোথাও ফাঁসী বা হত্যার খবর পেয়ে তোমরা বিচলিত হয়োনা। রাজ্য রাস্ট্রনীতি, বিচার আইন আদালতই শেষ কথা নয়।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসন বা স্বাধিকার আন্দোলন করতে করতে একদিন স্বাধীনতার যুদ্ধই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে গেলে পাকিস্তানের সামরিক নেতারা ৭১ সালে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে হয়ত রক্তক্ষয়ী নয় মাসের যুদ্ধ এড়ানো যেতো।

Read Full Post »


আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মান ও রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার

ক’দিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম বিশ্বের সাতশ’উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর বাংলাদেশের নাম নেই এর মানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলি এখন আর বিশ্বমানে নেই। এমন কি এশিয়ার তিনশ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২৪৩। ৭৫টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে চীন রয়েছে সবার শীর্ষে। এ তালিকায় রয়েছে শ্রীলংকার একটি,পাকিস্তানের সাতটি,মালয়েশিয়ার ১৮টি,ভারত,থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার রয়েছে ১১টি করে। তাইওয়ানের রয়েছে ২৯টি । বিশ্বের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি পেয়েছে আমেরিকার এমআইটি। এর পরে রয়েছে হার্ভার্ড। বিশ্বের সেরা ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য রয়েছে বৃটেনের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়। এশিয়ার এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম পেয়েছে হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। এই কলামটি যখন আপনারা পড়বেন তখন মনের অবস্থা কি হবে তা নিয়ে আমিও চিন্তিত। কেন এমন হলো দয়া করে সবাই একবার ভাবুন। এখন এই নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। না ভাবলে একদিন দেখবেন আপনার ছেলে মেয়ে ভাই বেনেরা আর উচ্চ শিক্ষার জন্যে বিদেশে যেতে পারছেনা। সবাই বলবে তোমাদের লেখাপড়ার কোন মান নেই তাই কোন দামও নেই। তখন ভাববেন আপনার বিনিয়োগ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
এক সময়তো শুনেছি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। অনেক লড়াই করে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বা মুরুব্বীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কোলকাতার বুদ্ধি বাজারের সওদাগরেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলতেন পূর্ববংগ চাষাবুসার দেশ এখানে স্কুল কলেজ হলে চাষবাস করবে কারা। পূর্ববংগের উন্নতির জন্যে ১৯০৫ সালে আলাদা প্রদেশ গঠিত হলে কোলকাতার বাবুরা প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করে সন্ত্রাসী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সীমাহীন দাংগা হাংগামার পর ১৯১১ সালে পূর্বাংলাকে প্রদেশ করার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।এরপরে এ অঞ্চলের মুসলমান নেতারা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেনদরবার শুরু করেন। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অবদান ছিল নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সাহেব ও নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সাহেবের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নেতারা এসব ইতিহাস নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে ইতিহাস বা তথ্য প্রকাশ করেছেন তাতে অনেক সত্য প্রতিফলিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত তুলে ধরা হয়নি। হয়ত হীনমন্যতার কারণে অথবা অজ্ঞতার কারণে এমনটি হয়েছে।ফলে আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত তুলে ধরি তখন অনেকেই প্রশ্ন করেন অমন তথ্য আমরা কোথায় পেয়েছি। অতি প্রগতিশীলরা আমাদের সাম্প্রদায়িক বলে গালমন্দ করেন। এসব প্রগতিশীলরা বেশীর ভাগই গ্রামের বাসিন্দা ও সাধার কৃষকের সন্তান। পিতার পরিচয় দিতেও এরা অসম্মানবোধ করে ও লজ্জিত হয়। এসব প্রগতিশীল অতি আধুনিক ভদ্রলোকদের কোন বায়াদলিল নেই। অনেকেই আবার এদের মূল বা শিকড়হীন ও আপস্টার্ট বলে আখ্যায়িত করে। মানে তারা অহংকারের কারণে নিজদের শিকড়কে মুছে দিয়ে পরিচয় দিতে চায়। আমাদের চলমান সমাজে এ ধরনের লোকেরা ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী। এরাই দেশ সমাজ জাতিকে বিভ্রান্তির পথে পরিচালিত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূলত: প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পূর্ববংগের সাধারন মানুষের সন্তাদের জন্যে,যারা আর্থিক কারণে কোলকাতা গিয়ে পড়ালেখা করতে পারবেনা। জানিনা, আমার ভুলও হতে পারে। সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই ভারতের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমি একথা হলফ করে বলতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় একজন হিন্দু নেতা বা জমিদারের কোন অবদান ছিলনা। বরং তাঁদের অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। অনেকেই এটাকে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলে ঠাট্টা মশকরা করেছেন। এমন কি পরম শ্রদ্ধেয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও এর বিরোধিতা করেছেন। তিনি পূর্ববংগের জমিদার ছিলেন,এখান থেকে খাজনা আদায় করে শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজ জমিদারী এলাকায় একটি প্রথমিক বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেননি। কাংগাল হরিনাথের জীবনী পড়ুন,জানতে পারবেন কবিগুরু জমিদার হিসাবে কেমন মানুষ ছিলেন। প্রশান্ত পাল বা প্রভাত কুমার লিখলে কোন দোষ হয়না। কিন্তু আমরা তাঁদের গবেষণা থেকে উদ্বৃতি দিলে বাংলাদেশের রবীন্দ্র পূজারীরা মারমুখো হয়ে উঠেন। যখন বলি, কোম্পানী আমলের দুই কবি পরিবারের উত্থান ও পতনের ইতিহাস পড়ুন,তখন ভক্তরা বলেন খামাখা ওসব পড়ে কি লাভ। ভারতীয়রা সবাই জানে, কবিগুরু ভারতের রাস্ট্র ভাষা হিসাবে হিন্দীকে সমর্থন করেছিলেন। পাঠকদের সুবিধার্থেই আমি পেছনের কথাগুলো বার বার উল্লেখ করি। কারণ এসব তথ্য বা ইতিহাস আমাদের শিকড় বা ঐতিহ্যের মূল অংশ। এসব আমাদের তরুণ সমাজকে অবশ্যই জানতে হবে।
আমাদের তরুণরা ভুল তথ্য ও ইতিহাস জেনে ভুল জাতিতে পরিণত হচ্ছে। দৃশ্য ও অদৃশ্য বহু জ্ঞানী গুণী আছেন যাঁরা দিনরাত ভুল বা নকল ইতিহাস তৈরি করছেন এবং তরুণদের শিক্ষা দিচ্ছেন। আমাদের তরুণরা এখন বাপদাদার নাম বলতে শরম পায়। দাদা পীরদাদারা নামাজ রোজা করতেন,ইসলামী শিক্ষার কথা বলতেন,হালাল জীবন ও আয় রোজগারের কথা বলতেন। বলতেন সারা জীবন ন্যায়ের পথে থাকবে,সত্‍ জীবন যাপন করবে,সত্‍ উপায়ে আয় করবে। এখন এসব কথা বলার মতো মা বাবা বা দাদা নেই। তেমন মুরুব্বী বা শিক্ষকও নেই। দুই একজন থাকলেও তাঁদের কথা কেউ শোনেনা, তাঁরা সমাজে,দেশ ও দশের কাছে অপাংতেয়। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখনও পূর্ববংগের ৯০ ভাগ মানুষের ক্ষমতা ছিলনা ছেলে মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর। যাঁরা নিজেদের ইতিহাস জানার জন্যে উইলিয়াম হান্টারের বই পড়েছেন তাঁরা জানেন কিভাবে বাংলার মুসলমানদের উপর ইংরেজ ও হিন্দু জমিদারেরা অত্যাচার করেছে। মুসলমানদের জীবিকার পথ কিভাবে বন্দ করেছে। আমাদের অতি আধুনিক জ্ঞানপাপীরা এসব কথাকে সাম্প্রদায়িকতা বলে নিন্দা করে। কিছু প্রগতিশীল মানুষ মুসলমান জাতিকেই সাম্প্রদায়িক বলে থাকেন।
এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এক সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অবস্থা হলো কেন? একটা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দুর্গতি কেমন করে হলো? কোথায় উত্তর পাবেন? কেইবা এর উত্তর দিবে? আবার পেছনের দিকে ফিরে যাচ্ছি। ছোটলাট বা গভর্ণর মোনেম খান সাহেবের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরি চাক্কু,সাপ,সাইকেলের চেইন ও হকি স্টিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক কোন ছাত্র সংগঠন ছিলনা। দল হিসাবে মুসলীগ লীগ ও তেমন কোন গণ্যমান্য রাজনৈতিক দল ছিলনা। আধমরা মুসলীম লীগকে ঘা মেরে জীবিত করতে চেষ্টা করেছিলেন আইউব খান সাহেব। মোনেম খান সাহেব মুসলীম লীগকে রাজনৈতিক ভাবে পূণর্বাসনের জন্যে ছাত্র সংগঠণ ন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট ফেডারেশন(এনএসএফ)এর জন্ম দেয়া হয়। বহু ভাল ভাল ছাত্র এতে যোগ দেয়। সাথে সাথে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করার জন্যে ছাত্র নামধারী কিছু গুন্ডাকেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করাণো হয়। সরকারের সমর্থন নিয়ে ওই ছাত্র নামধারী গুন্ডারা উপরে বর্ণিত অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে শুরু করে। এর আগে কখনই এ ধরণের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু সরকারের সমর্থন নিয়েও এনএসএফ ভয় ভীতি ছাড়া তেমন আর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এনএসএফকে হলে হলে মোকাবিলা করার জন্যে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের মারদাংগা ছেলেরাও লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে নামতে লাগলো। এ কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আইউব খান,ইয়াহিয়া খান ও মোনেম খানের এত রাগ ছিল। সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। ২৫শে মার্চের রাতে সামরিক অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।অন্য একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাহলো,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তথাকথিত সেক্যুলার চিন্তা চেতনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত করা। ধর্মের বাইরে থেকে মুক্ত চিন্তা ও আলোচনা করা। এ ব্যাপারে হিন্দু শিক্ষকরা ছিলেন অগ্রগামী। তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন কিছু মুসলমান শিক্ষক। এদের অনুসারী ছিল শত শত ছাত্র ও ছাত্রনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একটি পূর্ণাংগ তথাকথিত সেক্যুলার বা ধর্মহীনতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্বিদ্যালয় এলাকায় এখন কেউ ধর্মের কথা বলতে পারেনা। চলমান সরকার ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সোজা কথা ্লো জীবন থেকে নৈতিকতাকে একেবারেই পরিহার করতে হবে। ধর্মমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। যারা ধর্মের বা ইসলামের কথা বলবে তারা জংগী,সন্ত্রাসী। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো ইসলামের ব্যাখ্যা দিচ্ছে এখন আমেরিকা ও তার তাবেদারেরা। বাংলাদেশের ধর্মহীন বা সেক্যুলার শব্দের আবরনে ঢাকা কিছু ক্ষমতাবান লোক ইসলামের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে। এরাই মানে এদের পুর্বসূরীরা অতীতে বহু ইসলামপন্থী নেতাকে হত্যা করেছে। চলমান মিশরের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমেরিকা ইজরায়েল ও সউদী বাদশাহর উসকানীতে নির্বাচিত সরকারকে উত্‍খাত করেছে মিশরের তথাকথিত সেক্যুলার সেনা বাহিনী। সে সরকারের একমাত্র অপরাধ ছিল তাঁরা ইসলামপন্থী। শুধু এ কারণেই গত কয়েক মাসে সে দেশের নামজাদা তিরিশ জন স্কলারকে হত্যা করেছে মিশরের সেনাবাহিনী। আমাদের দেশেও ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এসেছিল সাদা পোষাকে সেক্যুলার সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। তারাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে নিজেরা এখন নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। আর আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র দিল্লীর সমর্থন নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ চায় এদেশে ধর্মীয় বা ইসলাম ভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল থাকতে পারবেনা। যদি কোন ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল থাকতে চায় তাহলে তাদের দিল্লীর সমর্থন লাগবে। পাঠকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কেন সরকার কওমী মাদ্রাসা গুলোকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আনতে চান? আমাদের দেশে ইংরেজী শিক্ষা আসার আগে ধর্মীয় শিক্ষার বহু প্রতিষ্ঠান ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হতো। ইংরেজরা যখন দেখলো ওইসব মাদ্রাসা থেকে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠছে তখন তারা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলো। শুরু হলো দুই ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। একটা দেওবন্দী বা কওমী,অপরটি আলীয়া যা সরকার নিয়ন্ত্রিত। আমেরিকা ,তার তাবেদার ও বাংলাদেশের চলমান সরকারও মনে করে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা জেহাদী শিক্ষা লাভ করছে। যেমন করে এক সময় কমিউনিষ্টদের দমন করা হয়েছে একইভাবে এখন ইসলামপন্থী কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিহত করতে হবে। এ ব্যাপারে আমেরিকার পরামর্শে সউদী বাদশাহ অর্থায়ন করতে রাজী হয়েছে। সোজা কথা ইসলামের বিপ্লবী রূপকে বিকশিত হতে দেয়া যাবেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে, পূর্বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমান কৃষক বা সাধারন মানুষের সন্তানদের জন্যে আমাদের মুরুব্বীরা প্রতিষ্টা করেছেন সে কথা দেশবাসী বিশেষ করে ছাত্রদের ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অনেকটাই ছাত্ররা ভুলে গেছে। বরং প্রতিষ্ঠাতাদের নাম বলতেও এখন আমরা অনেকেই লজ্জা পাই বা দ্বিধাবোধ করি। কারণ,তাঁরা মুসলমান নেতা। এখন নাকি ভাবতে হবে আমরা শুধুই বাংগালী। ইসলাম বা মুসলমান নিয়ে ভাবলে নাকি কোমন সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ আসে। তাই ওভাবে ভাবা যাবেনা।
বাংলাদেশ হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠিসোটা,হকিষ্টিক,সাইকেলের চেইনের পরিবর্তে ছাত্রদের হাতে উঠে এসেছে দা’ কুড়াল, চাক্কু,ছুরি,তলোয়ার, পিস্তল ও ভারী অস্ত্র। এখন কথায় গোলাগুলি। বন্ধুকে বন্ধুর হত্যা বা প্রাণে মারা। অনেকেই বলেন,যেসব দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেসব দেশেই নাকি এমন অবস্থা হয়েছে। কই ভিয়েতনামেতো হয়নি। সেখানে ছাত্ররা নিয়মিত লেখাপড়া করছে। বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। ভিয়েতনাম ফ্রান্স ও আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এখন দেশের স্বার্থে সবার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। চল্লিশ বছরে ভিয়েতনামের অগ্রগতি বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। খুব দ্রুত গতিতে ভিয়েতনাম উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নেতার অভাব নেই,রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনেরও অভাব নেই। ছাত্র ছাড়া রাজনীতি চলেনা। উন্নতি না করে দেশ গরীব থাকলে নেতাদের জন্যে ভাল। লোকজন ফুটপাতে,বস্তিতে থাকলে নেতাদের খুবই উপকার হয়। কারণ মিছিল, সমাবেশ,হরতাল, আগুন লাগানো,বোমাবাজি করা,বাসে আগুন লাগানের জন্যে ছাত্র ও বস্তির নাগরিক দরকার। লেখাপড়ায় উন্নতি হলে ছাত্ররা আর হয়ত রাজনীতি করবেনা। তখন নেতারা রাজনীতি করার জন্যে মানুষ পাবেন কোথায়? আমারদের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে মেয়েরা সবাই বিদেশে লেখাপড়া করেছেন। এখন কালোকোট গায়ে রাজনীতিতে নামবেন। বৈবাহিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন রাজনীতি করছেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব রাস্ট্রপতি থাকতে একবার বলেছিলেন, ছাত্রাদের পড়ালেখা করার প্রয়োজন নেই। পড়ালেখা না করলেই তারা মন্ত্রী এমপি হতে পারবে ও সরকারের বড় বড় পদে চাকুরী করতে পারবে। যারা লেখাপড়া করবে তারা বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে সহকারী সচিব হবে। লেখাপড়া না জানা বা ফেল করা বন্ধুর পিএস হবে।
ছাত্ররা রাজনীতি করেই ছাত্র বয়সেই গাড়িবাড়ির মালিক হয়। ব্যবসা করে দ্রুত ব্যান্ক বীমার মালিক হয়ে যায়। চোখের সামনে মাস্তান সন্ত্রাসী বন্ধু ব্যান্কের মালিক হয় আর যে পড়ালেখা করে এমবিএ হয়েছে সে বন্ধুর ব্যান্কে চাকুরী নেয়। পড়ালেখা না করা ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে চেয়ারম্যান হয় আর মেধাবী বন্ধুকে ভিসি বা শিক্ষক বানায়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পোষাকশিল্পের বালিকা কর্মীর মতো ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে।পত্রিকা,রেডিও,টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকা দিন দিন বাড়ছে। তাই ইংরেজী না জানা লোকটি ইংরেজী কাগজের সম্পাদক হচ্ছে। বাংলাদেশে আবার একটা সুবিধা আছে,সেটা হলো যিনি যত বড় ইউনিয়ন নেতা তিনি তত বড় সাংবাদিক। এখানেও সাংবাদিকদের জানার আগ্রহের চেয়ে ইউনিয়ন নেতা হওয়ার আগ্রহ বেশী। রাস্ট্রের কাছে বা সরকারের কাছে ইউনিয়ন নেতাদের গুরুত্ব বেশী। তাই ইউনিয়নও আজ দুই ভাগে বিভক্ত। ছাত্র বাড়ছে, শ্রমিক বাড়ছে, সাংবাদিক বাড়ছে, সবকিছুই বাড়ছে, কারণ সংখ্যাই এখন বাংলাদেশের নিয়তি। উন্নত বিদ্যা বা উচ্চমান নয়। তাই বিশ্বের দরবারে আমাদের শিক্ষার কোন দাম নেই।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


বিষয়টি নিয়ে এর আগেও নানা আংগিক ও প্রেযিতে বহুবার লিখেছি। বিষয়টি এমন যে এ নিয়ে বার হাজার বার লিখলেও আবারও লিখতে হবে। প্রথমেই বলতে চাই আমাদের মাতৃভুমি বাংলাদেশ একটি অতি প্রাচীন ভৌগলিক এলাকা বা দেশ । এর নাম সব সময় বাংলাদেশ ছিলনা। দেশের সীমানাও সব সময় এ রকম ছিলনা। মোঘল আমলে সুবেহ বাংলা বলতে বাংলা বিহার উড়িষ্যা নিয়ে একটি প্রদেশ ছিল। এই সুবেহ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন নবাব সিরাজ উদ দৌলা। ১৭৫৭ সালে ক্লাইভের নেতৃত্বে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পলাশীর ময়দানে এক প্রহসন ও ষড়যন্ত্র মূলক যুদ্ধে নবাবকে পরাজিত করে বাংলা দখল করে নেয় । ১৭৬৫ সালের দিকে কোম্পানী পুরো সুবাহ দখল করে নেয়। এ সময় কোম্পানীকে সমর্থন দিয়েছিল পুরো হিন্দু প্রভাবশালী সমাজ ও কিছু বেঈমান মুসলমান।দেশ দখল ও রাজনীতিতে এ ধরণের ষড়যন্ত্র সুপ্রাচীন কাল থেকে জারী রয়েছে। এখনও আছে। রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের নানা রৌপ আছে। ইংরেজ শাসন জারী হওয়ার আগে আমাদের দেশে মৌলবাদী বা সেক্যুলার বলে কোন বিষয় ছিলনা। কিন্তু ধর্ম আর রাজনীতির মুখোমুখি দাঁড়ানো ও সুপ্রাচীন। রাজা যাজকের দ্বন্ধ চলছেতো চলছেই।
বাংলাদেশে এখন এই দ্বন্ধ বেশ চরমর উঠেছে। প্রতিদিন এ নিয়ে কথা হচ্ছে। চলমান সরকার বা আওয়ামী লীগ অদৃশ্য কাকে যেন সন্তষ্ট করার জন্যে ধর্ম ও ধার্মিক মানুষের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এত শক্ত করে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। এখন দেশের অতি সাধারন মানুষও মনে করে আওয়ামী লীগ ধর্ম বিরোধী একটা রাজনৈতিক দল। হয়ত কার্যত আওয়ামী লীগ তা নয়। তবে একথা ঠিক যে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য আচার আচরন ধর্মের পক্ষে নয়। আওয়ামী লীগের শ্লোগান হচ্ছে ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। শ্লোগানটি খুবই আকর্ষনীয়। মানে ধর্মের সাথে রাস্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। রাস্ট্র ধর্মহীন থাকবে,যার সুগার কোটেড শব্দ হলো সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ। দেশের ১০ ভাগ ভিন্ন ধর্মের মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দেশের মানুষ জানে এবং বিশ্বাস করে হিন্দু ভোটাররা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যান্ক। যে কোন কারণেই হোক হিন্দুরা বুঝে অথবা না বুঝে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।

Read Full Post »


চিন্তার স্বাধীনতা ও আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ / এরশাদ মজুমদার

আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের প্রায়ই বলি, কোন দিকে থাকবেন তা আগে ভাগেই ঠিক করে নিন। সময় সুযোগ বুঝে দল বদল বা মত বদল চলবেনা। যেমন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না,রামের পক্ষে থাকবেন না রাবণের পক্ষে থাকবেন। রাবণ ভুমিপুত্র ও স্বদেশের রাজা। রাম ভিনদেশী আক্রমণকারী ও বিজয়ী। রাবণ পরাজিত তাই অসুরে পরিণত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে একমাত্র মধুসুদনই রাবণের গুণগাণ করেছেন। সেই সুদুর প্রাচীন কাল থেকেই কবি সাহিত্যিক,ইতিহাসবিদেরা বিজয়ী রামের গুণগাণ করে কাব্য ও ইতিহাস তৈরি করেছেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত রামকে দেবতা বানিয়ে ফেলেছেন। সে যুগে শ্লোগাণ ছিল বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। আরও পরে ইংরেজীতে বলা হলো মাইট ইজ রাইট। সোজা কথা হলো শক্তির পূজা করো। সেই রাম রাবণের যুগ পেরিয়ে মানব সভ্যতা অনেক দূর এগোলেও শক্তির ব্যবহার বা বল প্রয়োগ করে নিজের মত প্রতিষ্ঠিা করা বা নিজের স্বার্থ হাসিল করার যুগ শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আমাদের মতো দেশে তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে বা সংখ্যার কারণে কেউ যদি ৫১ পায় তাহলে ৪৯ কে দাস বানিয়ে ফেলে। ফলে এ দেশে গণতন্ত্রকে পোলিও রোগে পংগু করে ফেলেছে।
শক্তির নব নব রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন মানুষ হত্যা করার জন্যে নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার ও তৈরি হচ্ছে। শুধু মানুষ নয় সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্যেও শক্তিশালী দেশগুলো উঠে পড়ে লেগেছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শাক্তিশালী দেশ আমেরিকা। এদেশে জ্ঞানী গুণীর অভাব নেই। জোরালো ভাষায় কথার বলার জন্যে সাহসী কবি লেখকেরও অভাব নেই। কর্পোরেট বিশ্বের আওতার বাইরে থেকে কথা বলার জন্যে তৃতীয় মতামতের মঞ্চও তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমেরিকান রাজনীতির চলমান আদর্শ হলো পরদেশ লুণ্ঠণ করো আর নিজের দেশকে সমৃদ্ধিশালী করো। ইরাকের যাদুঘর থেকে ছয় সাত হাজার বছরের জাতীয় ঐতিহ্যের মূল্যবান সম্পদ আমেরিকান সৈন্যরা নিয়ে গেছে। ধন সম্পদের কথা বাদ দিলাম। শুনা যায়, ১৬ই ডিসেম্বরের পর ভারতীয় সৈন্যরা যে ক’দিন আমাদের দেশে ছিল সে ক’দিনে নাকি অনেক কিছু লুট করে নিয়ে গেছে। সৈন্যরা নাকি কোনদেশ দখল করলে ওরকম করে থাকে। ইরাক যুদ্ধের সময়েই আমরা প্রথম ‘এম্বেডেড’সাংবাদিকের কথা শুনেছি। এসব সাংবাদিককে নাকি আক্রমণের ছ’মাস আগে থেকেই ট্রেনিং দেয়া হয়েছে সরকারী নিরাপত্তার ছাতার নীচে থেকে কিভাবে সাহসী সাংবাদিকতা করতে হয়। একেবারে ট্যান্কের ভিতর বসে যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করা। এটাও আমেরিকার সরকারী সাংবাদিকতার দেশপ্রেমের নমুনা। এই আমেরিকাই দেশপ্রেম,গণতন্ত্র ও মানবতার কথা বলে থাকে। এই আমেরিকাই মিশরের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মিশরের নির্বাচিত সরকার উত্‍খাত করেছে। বিশ্লেষকরা বলেন, মিশর দেশটি সে দেশের জনগণের হলেও সেনাবাহিনীকে রক্ষা ও পরিচালনা করে আমেরিকা ও ইজরায়েল। সন্প্রতি এই দলে যোগ দিয়েছে সউদী বাদশাহ। সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরই বাদশাহ নামদার সেনাবা্হিনীকে ১২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে দেশ চালাবার জন্যে।
বাংলাদেশের মানুষতো বাদশাহ নামদারের নাম শুনলে ভক্তিতে গদগদ হয়ে যায়। কারণ তিনিতো দুই মহাপবিত্র স্থানের খাদেম। বিশ্বের মুসলমান নেতারা সেখানে গেলেই বাদশাহ হুজুরের মেহমান হন এবং অনেক তোহফা ও ইনাম পান। তাই আমাদের মতো তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশেও বাদশাহ হুজুরের সমালোচনা কঠোরভাবে মানা। আজ থেকে ৭০/৮০ বছর আগে বৃটিশরা তুর্কি খলিফার বিরুদ্ধে তাদের তাবেদার এই মরু বাদশাহীর প্রতিষ্ঠা করে। সেই থেকে এই বাদশাহী বৃটেন ও আমেরিকার তাবেদারী করে যাচ্ছে। এই বাদশাহীর লক্ষ্য ইসলাম বা মুসলমান নয়। স্রেফ নিজেদের বাদশাহী রক্ষা করা। এই বাদশাহী প্রতিষ্ঠার জন্যে মুহম্মদ বিন আবদুল ওহাব নামক( বৃটিশ গোয়েন্দা বলে অভিযোগ রয়েছে) এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছে বৃটিশরা। মুহম্মদ বিন আবদুল ওহাব ছিলেন বাদশাহ সউদের শ্বশুর। তুর্কি খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্যে উসকানী দিয়েছে। মুহম্মদ বিন আবদুল ওহাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলো ‘কনফেশন অব এ্যা বৃটিশ স্পাই’ পড়তে হবে। মুহম্মদই ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা। শুনেছি, বাংলাদেশেও বহু জ্ঞানী গুণী ওহাবী মতবাদে বিশ্বাস করেন।
মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানী আছেন যাঁরা ধর্ম নিয়ে নিয়মিত নানা বক্তব্য পেশ করে থাকেন, এসব সম্মানিতজনকে অনেক সময় সুশীল সমাজ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। মনে হয় ইংরেজী সিভিল সোসাইটি শব্দ দুটোকে বাংলায় অনুবাদ করে সুশীল সমাজ করা হয়েছে। যেমন মিলিটারী রুল ও সিভিল রুলের বাংলা করা হয়েছে সামরিক শাসন আর বেসামরিক শাসন। সেক্যুলার শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ। এই অনুবাদের দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যিনি ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ। মানে একজন মানুষ যিনি কোন ধর্মের পক্ষে নন। ইংরেজী অভিধানে সেক্যুলারের ব্যাখ্যা করা হয়েছে যিনি ইহলৌকিক,পরলোকে বিশ্বাস করেন না। যিনি ধর্মীয় শিক্ষার বিরোধিতা করেন। শব্দটির উত্‍পত্তি হয়েছে ইংল্যান্ডে রাজা ও চার্চের ক্ষমতা ও অধিকার বিরোধের সময়। একই ভাবে ওই সময়েই ফান্ডামেন্টালিজম ও ফান্ডামেন্টালিষ্ট শব্দেরও জন্ম হয়েছে। সেই থেকে খৃষ্টধর্মে দুটি প্রধান শাখার সৃষ্টি হয়েছে। একটি চার্চ অব ইংল্যান্ড ও অপরটি ভেটিকান সিটির ক্যাথলিক গীর্জা। যা ইটালীর রোম শহরে অবস্থিত। ভেটিকান সিটি একটি রাস্ট্র। এর প্রধান হলেন পোপ। ক্যাথলিক জগতের ধর্মীয় প্রধান। আর চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান হচ্ছেন বৃটেনের রাজা বা তাঁর প্রতিনিধি এবং তাঁদের ধর্মীয় শাখা হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্ট। ক্যথলিকদের ফান্ডামেন্টালিষ্ট বা মৌলবাদী বলা হয়।
প্রাচীন কালে জগতের রাজা বাদশাহ বা সম্রাট সম্রাজ্ঞীরা দেশ পরিচালনা করতেন মিলিটারী ল’ বা সামরিক আইনে। তখনও সিভিল বা জনআইন তৈরি হয়নি। সেসব যুগের বহু আইন বা প্রথা এখনও রয়ে গেছে। যেমন সর্বোচ্চ সামরিক ক্ষমতার অধিকারী সাংবিধানিক ভাবে এখনও রাজা বা রাস্ট্র প্রধানরা। শুধু রাজা মহারাজা, বাদশাহ সম্রাটের জায়গায় রাস্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী শব্দটি পড়তে হয়। কারণ তিনি আধুনিক রাস্ট্র নামক সাম্রাজ্যের পতি বা স্বামী। মোগল সম্রাটদের বলা হতো জিল্লে ইলাহী, মানে আল্লাহর ছায়া। প্রাচীন গ্রীকের শাসকরাও তাই বলতেন। ফেরাউনরা নিজেরাই নিজেদের খোদা বলে দাবী করে জনগণের সেজদা আদায় করতেন। হজরত মুসা কালামুল্লাহর সাথে ফেরাউনের প্রধান বিরোধ ছিল খোদায়ী দাবী নিয়ে। মুসা(আ) বলতেন জগতের একমাত্র মালিক ও খোদা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সেজদার মালিক । মানুষ একমাত্র আল্লাহর দাস।
আমাদের আধুনিক বলে কথিত সমাজেও এই বিরোধ অব্যাহত আছে। মুক্তচিন্তার তথাকথিত জ্ঞানীরা প্রচার করেন রাস্ট্রের মালিক জনগণ এবং এর সার্বভোমত্বও জনগণের হাতে। আগে বলা হতো সার্ভৌমত্বের মালিক ফেরাউন,নমরুদ, সাদ্দাদ, বাদশাহ ও সম্রাট। ফেরাউন, নমরুদ ও সাদ্দাদের খোদায়ী দাবীর পর বলা হয়েছে বাদশাহরা সার্বভৌম এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষে থেকে দেশ পরিচালনা করেন। এখন বলা হচ্ছে জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। আল্লাহপাক নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন ‘মানুষ আমার দাস ও খলিফা। আমারই দেয়া বিধান মোতাবেক তারা দেশ ও সমাজ পরিচালনা করবে। পবিত্র আলকোরআনে রাস্ট্র পরিচালনার সকল নিয়ম নীতি সুষ্পস্ট ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জগতের প্রথম জনগণের রাস্ট্র হচ্ছে মদীনার রাস্ট্র। যে রাস্ট্র প্রধান ছিলেন স্বয়ং আল্লার রাসুল(সা)। তিনি আলকোরআনের বিধান মোতাবেক রাস্ট্র পরিচালনা করতেন। পরবর্তী কালে খলিফারা আল্লাহর আইন ও রাসুলের(সা) হাদিস মোতাবেক দেশ পরিচালনা করেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে রাসুলের(সা) হাদিসও আমাদের জন্যে আইন। রাসুল(সা) আলকোরআনের সুরা আন নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন,‘ হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে মেনে চল, রাসুলকে(সা) মেনে চল এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা ক্ষমতার অধিকারী তাঁদের মেনে চল। কোন বিষয়ে মতভেদ হলে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) সিদ্ধান্ত মেনে নাও যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করো;সেটাই ভাল, পরিণামে উত্তম।’ এখানে ক্ষমতার অধিকারী বলতে ইসলামী রাস্ট্রের ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তিগণের কথা বুঝানো হয়েছে।আরবীতে বলা হয়েছে ‘উলিল আমরি মিনকুম’। যেখানে ইসলামী রাস্ট্র নেই সেখানে উলিল আমরি’বলতে ইসলামিক স্কলার ও ফকী্দের কথা বলা হয়েছে, সরকারী আলেম উলামা নয়।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম মেজরিটি বা সংখ্যা গরিষ্টের দেশ। এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই নিরক্ষর বা শিক্ষা বঞ্চিত। যদিও ইসলাম বিদ্যার্জনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইসলাম মনে করে শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। ইসলাম দারিদ্রকে অভিশাপ বলেছে। বলা হয়েছে আগে খাও পরে সালাত আদায় করো। প্রতিবেশীকে অভুক্ত বা ক্ষুধার্ত রেখে খেওনা। বলা হয়েছে দেশপ্রেম ঈমানের অংগ। রাত জেগে দেশের সীমান্ত পাহারা দেওয়া সালাত বা নামাজের চেয়ে উত্তম। আবেদের এবাদতের চেয়ে জ্ঞানীর ঘুম উত্তম। বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত মুসলমানের ৮০ জনই কোরআন জানেন না। কারণ আমাদের এ রাস্ট্রে কোরআন না জানা কোন অপরাধ নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে কোরআন না জানা মানুষের কদর বেশী। তাঁরা সম্মানিত। বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের সদস্য হিসাবে সমাজের শিখরে বসে থাকেন। জাতিকে উদেশ খয়রাত করেন। এরাই নাকি মুক্ত মনের মানুষ। এদের মন খোলা,যে কোন বিষয়ে কথা বলতে পারেন ও মতামত দিতে পারেন। এমন বিষয়েও কথা বলে যে বিষয়ে তাঁদের কোন জ্ঞানই নেই। ইদানিং দেখবেন এসব মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীরা ইসলাম সম্পর্কেও কথা বলছেন বা ফতোয়া দিচ্ছেন। বেশ কিছুদিন আগে রাব্বানী সাহেব নামের এক বিচারপতি ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। অথচ ফতোয়ার বিষয়ে তাঁর কোন জ্ঞান বা ধারণা ছিলনা। পরে দেশবাসীর প্রতিবাদের মুখে ওই রায় বাতিল হয়েছিল। আরেক বিচারপতি তালাক প্রাপ্তা নারীর আজীবন খোরপোষের রায় দিয়েছিলেন। আজীবন খোরপোষের পক্ষে মামলা লড়েছিলেন বড় বড় মুক্তমনা,ধর্মমুক্ত আইনজীবীরা। আওয়ামী লীগের মাথায় বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর না বলার ভুত ঢুকিয়েছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহেব। কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হয়ে তিনি তাঁর নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহয় আকবরকে অনুবাদ করে বলার রেওয়াজ চালু করেন। আওয়ামী লীগ এখন বিসমিল্লাহ বা আল্লাহু আকবরকে অনুবাদ করে বলে। তাছাড়া জিয়া সাহেব নাকি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহূ আকবর বলতেন। এ ধরনের গোমরাহী আওয়ামী লীগকে পেয়ে বসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একজন সেক্যুলার মানুষ। তাই তিনি সংবিধান থেকে আল্লাহ শব্দটি তুলে দিয়েছেন যাতে তিনি সেক্যুলার প্রমানিত হন ও হিন্দুদের আস্থা অব্যাহত রাখতে পারেন।
আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ধর্মকে মিশাতে চায়না বা ধর্মবিহীন রাজনীতি করতে চায় এটা সুষ্পস্ট করে খোলাসা ভাবে দেশের মানুষকে জানালে অসুবিধা কোথায়? ধর্মহীন রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। হয়ত পৃথিবীর অন্যদেশেও আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে দ্বিমুখী বা মোনাফেকীর পথ বেছে নিয়েছে। পথটা হচ্ছে দুধও খাবো শরাবও খাব, নামাজও পড়বো আবার ধর্মহীনদের সাথে গোপন বা প্রকাশ্য সম্পর্ক রাখবো। সংবিধানে আল্লাহর নাম থাকবেনা,কিন্তু রাস্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকবে। আওয়ামী লীগে বহু দার্মিক মানুষ আছেন। সত্যিকার ভাবেই তাঁরা ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং ধর্মচর্চা করেন। তাঁর দলের কেন্দ্রীয় নীতি ও নেতৃত্বের সাথে জড়িত নন। দলের সভাপতিও নিয়মিত ধর্ম পালন করেন এ বিশ্বাস আমার আছে। তিনি মনে করেন,ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখলে যদি কিছু ভোট পাওয়া যায় অসুবিধা কোথায়। এটাকে নাকি রাজনীতি বলা হয়।
আল্লাহপাক পবিত্র কালাম আলকোরআনের সুরা বাকারার ৮ থেকে ১৮ আয়াতে বলেছেন,‘ কোন কোন মানুষ বলে ,আমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান এনেছি;আসলে তারা ইমানদার নয়। তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোকা দিতে চায়।কিন্তু তারা বুঝেনা। তাদের অন্তরে রোগ আছে ; আল্লাহ তাদের রোগ আরও বৃদ্ধি করেন,কার তারা মিথ্যাচারী। যখন তাদের বলা হয় ,তোমরা দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করোনা,তারা বলে ,আমরাই শান্তি স্থাপন করেছি। শুনে রাখ,তারাই সন্ত্রাসী;কিন্তু তারা বুঝে না। তারা মুমিনদের কাছে এলে বলে আমরা ইমানদার আর শয়তানদের কাছে গেলে বলে আমরাতো তোমাদের সাথেই ,তাদেরকে ঠাট্টা করেছি মাত্র। তারা বধির , বোবা ও অন্ধ; তারা ফিরে আসবেনা। আলকোরআনের ১৬টি সুরায় এ ধরনের মানুষকে মোনাফেক বলা হয়েছে।
আমাদের চলমান রাজনীতিতে দ্বিচারিতা বা মোনাফেকি নাকি প্রধান হাতিয়ার। এসব রাজনীতিক নিজেরাই বলেন ,এটা কৌশল,মোনাফেকি নয়।
শুধু আওয়ামী লীগ কেন,আমাদের রাজনীতিতে সবদলই এ ব্যাপারে দ্বিচারিতার পথ অবলম্বন করে থাকেন। এইতো দেখুন না, মিশরের নির্বাচিত মুরসি সরকারের পতনের জন্যে সউদী বাদশাহ ইজরায়েলের সাথে হাত মিলিয়েছেন। তিনিতো মুসলমান ও ইসলামের দুই মহা পবিত্র স্হানের খাদেম। সারা বিশ্বের মুসলমানেরা তাঁকে সম্মান করে। ধর্মহীনতা বা ধর্ম নিয়ে দ্বিচারিতা এখন বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে ধর্মহীন রাজনীতির কথা বলছে। তারা বলছে ধর্ম ধর্ম যার ,রাস্ট্র সবার। কথাটা শুনতে খুব ভাল লাগে। রাস্ট্র নীতি যদি ধর্মমুক্ত হয় তাহলে এদেশে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে নাগরিদের ৯০ ভাগ মুসলমান। সেক্যুলারিজম, ধর্মহীনতা ও তথাকথিত মুক্তচিন্তা হচ্ছে এক শ্রেণীর আরবী নামধারী মোনাফেক মুসলমানের কাজ। এদের সমাজে অনেক কদর ও দাম। এরাই দেশ চালায় । এরা কথায় কথায় ইসলামিক স্কলাদের গালাগাল দেয়। বিশেষ করে ক্ষমতাবানরা তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে না পারলে তখন অপমান করে। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম একশ’ বছর প্রাণ দিয়েছে এদেশের আলেম সমাজ। ন্যায়নীতির উপর কঠোর অবস্থানের জন্যে বিগত এক হাজার বছরে বহু ইসলামিক স্কলার প্রাণ দিয়েছেন। যেমন, ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা। খলিফার সাথে দ্বিমত হওয়ায় তাঁর মৃত্যুদন্ড হয়। সুফী কবি মনসুর হাল্লাজকেও খলিফা নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছেন। কারণ ,সে জামানার আলেম সমাজ কবি মনসুর হাল্লাজকে বুঝতে পারেননি। পরবর্তী পর্যায়ে আলেম সমাজ তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। আলেম সমাজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও কাফের ফতোয়া দিয়েছিলেন। আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার দামী মানুষরা বিভ্রান্ত নির্বোধ অথবা জ্ঞানপাপী। আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »