নাগরিক চেতনা ও বাংলাদেশ রাস্ট্রের অবস্থান / এরশাদ মজুমদার
বেশ কয়েক যুগ আগে মানে বংগবন্ধুর আমলে একবার গোয়েন্দা বিভাগ আমাকে একটি খবরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ বা জেরা করার জন্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন আমি দৈনিক জনপদের ডেপুটি এডিটর ছিলাম।গাফফার চৌধূরী সাহেব বিদেশে ছিলেন বা থাকতেন। সেই যে গেলেন তিনি আর ফিরে আসেননি। যে খবর নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ বা সরকার কেন এত বিচলিত ছিলেন তা এখন বিস্তারিত বলা যাবেনা।ওই জিজ্ঞাসাবাদের এক সময় আমি বলেছিলাম, দেখুন , আমি এ মাটির সন্তান। এখানেই আমার বাপদাদারা ছিলেন, আমিও আছি। এ মাটি আমার মতো। কিন্তুর রাস্ট্রের ব্যাপারে আমার কোন মতামত নেই। এ রাস্ট্র আমি চালাইনা, এর ব্যবস্থাপনায় আমার কোন মতও নেই।রাস্ট্র ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে এখানে রাজা বাদশাহরা ছিলেন। রাজ্য ব্যবস্থা চালু হওয়ার বহু আগে মানুষ দল বেঁধে কৌম বা কবিলা হিসাবে থাকতো । শক্তিশালী একজন লোক তাদের পরিচালনা করতো বা নেতৃত্ব দিতো। ওই কৌম বা কবিলাকে বাইরের আক্রমন থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল ওই শক্তিশালী ব্যক্তির। এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা পেরিয়ে মানুষ রাজ্য ও রাজা প্রতিস্ঠা করেছে নিজেদের পরিচালনার জন্যে। বেশী শক্তিশালী লোকটা হলো রাজা আর বাকী কৌম নেতারা রাজার পরিষদের সদস্য বা মন্ত্রী হিসাবে কাজ করতো।সবাই মিলে শপথ নিতো রাজাকে রক্ষা করার জন্যে।আর দেশের মানুষ রাজ্য আর রাজার বিষয়ে তেমন কিছুই জানতোনা। জানার আগ্রহ তাদের কখনও ছিলনা। শত বা হাজার বছর পেরিয়ে আমরা বর্তমান রাস্ট্র ব্যবস্থায় এসে পৌঁছেছি। রাজ্যের জায়গায় রাস্ট্র। রাজার জায়গায় রাস্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী। ৭২ বছর বয়সে এসেও আমার একই অবস্থান। রাস্ট্রের কোন কিছুতেই আমার সম্পর্ক নেই , মতামতও নেই। এখন কিছু লোক জনগণের নামে রাস্ট্র চালায়। সংবিধান ও আইন বানায়। নাগরিকরা সেই আইন মানতে বাধ্য। না মানার কোন প্রশ্নই উঠেনা। রাস্ট্র এখন একটা বিশাল শক্তি। রাজা বা বাদশাহদের মতোই সৈন্য, পাইক পেয়াদা ও গোয়েন্দা বাহিনী লালন ও পালন করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাস্ট্রপতিকে রক্ষা করার জন্যে বিশেষ বা্হিনী রাখতে হয় প্রজার খরচে। আরও বহু বাহিনী আছে যাদের কাজ হচ্ছে বাইরের কেউ আক্রমণ করলে দেশ রক্ষা করা। দেশের ভিতরে প্রজা বা নাগরিকদের পাহারা দেওয়াও তাদের সকলের কাজ। কারণ, রাস্ট্রের বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কিনা তাদেরকে দেখতে হয়। সোজা ভাষায় বা কথায় বলতে হয় আমাদের রাস্ট্র ব্যবস্থায় প্রজা বা নাগরিকদের বিশ্বাস বা আস্থায় রাখার নিয়ম নেই। যিনি বা যাঁরা সরকার বা রাস্ট্র চালান তাঁরা তাঁদের অনুগত ছাড়া বাকি সব মানুষের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রাখে।
আজ আমি নাগরিক অধিকার চেতনা নিয়ে কিছু কথা বলার জন্যে কম্পিউটারের সামনে বসেছি। বেশ কিছুকাল হলো আমি হাতে লিখতে পারিনা। ভাগ্য ভালো আমার ছেলেরা আমাকে কম্পিউটারে বাংলা আর ইংরেজী কম্পোজ শিখিয়ে দিয়েছিল। লিখতে পারছি এজন্যে ধন্যবাদ জানাই আমার মালিককে। তিনি এখনও আমাকে লেখার জন্যে সুস্থ রেখেছেন। একটু বেশী হায়াত দিয়েছেন। জানিনা আমাকে দিয়ে তিনি কি কাজ করিয়ে নিবেন। ভাল মন্দ জানিনা, আমি আর মনের কথা লিখছি। ধন্যবাদ নয়াদিগন্তকে,তাঁরা আমার লেখাগুলো প্রকাশ করছেন। আমি নাকি মৌলবাদী হয়ে গেছি। তাই কেউ আমার কথা ছাপাতে চায়না। আসলে আমি কিছুইনা। শুধুই একজন মানুষ। এক সময় আমার বাড়ির লোকেরাই বলতো আমি নাকি নাখোদা বামপন্থী। বন্ধুরাও এখানে সেখানে বলে বেড়ায় আমি নাকি এক সময় বামপন্থী ছিলাম। আর এখন একেবারে মৌলবাদী হয়ে গেছি। আমি আসলে একজন মানবতাবাদী। মানুষের মুক্তি চাই। এক সময় মনে হয়েছে কমিউনিজম মানুষের মুক্তি দেবে। মানুষের মর্যাদা পাবে। কিন্তু দেখলাম কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র মানুষের মুক্তি দিতে পারেনি। বরং দেখলাম কমিউনিজম মানুষকে শ্রমিক মনে করেছে। চীন রাশিয়ায় সাধারন মানুষ আজও সাধারন রয়ে গেছে। তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই হয়নি। শেষ পর্যন্ত গণচীন ধনচীনে পরিণত হয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেংগে গেছে।
যদি পাকিস্তান আমল থেকে হিসাব করি তাহলে ইতোমধ্যে ৬৪ বছর পার হতে চলেছে। পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর ইসলাম আর মুসলমান বলে চিত্কার করেছে নেতারা। তারা ইসলামেরও কোন উপকার করেনি,মুসলমানেরও করেনি। ৪১ বছর ধরে আমরা বাংগালী বাংগালী বলে চিত্কার করে গলা ফাটিয়ে ফেলছি। এতেও কিন্তু সাধারন গরীব বাংগালীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। দেশের জন সংখ্যা বাড়ছে আর দারিদ্র আর নিরক্ষরতা বাড়ছে।চলতি বাজেটের সাইজ হচ্ছে এক লাখ বিরানব্বই হাজার কোটি টাকা। শুনতে খুব ভালো লাগে। সাধারন মানুষ বুঝতেও পারেনা এর মানে কি? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বংগবন্ধু সমাজতন্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন সমাজতন্র মানে দেশের সব সম্পদের মালিক রাস্ট্র। তাই পান দোকান, চা দোকান, ফুটপাতের দোকান ছাড়া বাকি সব কল কারখানা সরকার দখল করে নিয়েছিলো। আওয়ামী লীগের সমাজতন্ত্রী কর্মীরা সব লুটে পুটে খেয়েছে। বায়তুল মোকাররমের অবাংগালীদের দোকান গুলোও তারা দখল করে নিয়েছিল। সে সময় ইত্তেফাকে একটি কলাম ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল, দে মা তবিলদারী লুটে পুটে খাই। যিনি লিখেছিলেন তিনি এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন। এই লুটপাট সম্পর্কে বংগবন্ধু নিজেও বলেছেন, লোকে পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। সাড়ে সাত কোটি কম্বল এসেছিল, কিন্তু আমি আমার ভাগেরটা পাইনি। তেমন একটি দল নিয়ে বংগবন্ধু সমাজতন্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। একেই বলে রাস্ট্রীয় সমাজতন্র। যা উপর থেকে আর নীচে নামেনা। এ ছিল সাধারন মানুষকে শোষণের এক হাতিয়ার। সে সময় সরকারী কর্মচারীরা দল বেঁধে সমাজতন্ত্রী হয়ে গিয়েছিল। যেমন, মশিউর আর ফরাশউদ্দিন। এরা এক সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। এরা ছিলেন বংগবন্ধুর ব্যক্তিগত খাদেম। তখনকার প্ল্যানিং কমিশনে যারা ছিলেন তাঁদের কয়েকজন হয়ত এখনও আছেন। রেহমান সোবহান তাঁদের মধ্যে একজন যাঁরা বংগবন্ধুকে বুদ্ধি দিতেন। এঁরা কেউই আওয়ামী লীগ করতেন না। সিপিডি নামের একটি দোকান খুলে রেহমান সোবহান সাহেব এখনও বিদেশী অর্থে সরকার ও জনগণকে উপদেশ বিতরন করেন। এ ধরণের লোকেরাই বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় যায় এবং দেশবাসীকে উপদেশ খয়রাত করে। ১/১১র সরকার খুবই নিন্দিত। কিন্তু দূর্ণাম আর দায়ভার রয়ে গেল জেনারেল মঈন আর ফখরুদ্দিন সাহেবের উপর । সে সময়ের উপদেস্টারা বেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমাদের সামনে। রাতদিন বক্তৃতা দিচ্ছেন। আমাদের মিডিয়া গুলোও রাতদিন তাঁদের পিছনে ঘুরে বেড়ায়। মনে হচ্ছে, সে সরকারে থেকে তাঁরা আরও বেশী সম্মানিত হয়েছেন। তাঁরা সবাই নিজেকে ‘সাবেক উপদেস্টা’ বলতে আনন্দ বোধ করেন। একেই বলে একই যাত্রায় ভিন্ন ফল। দু’জন বিদেশে নির্বাসনে আছেন। বাকিরা বুক ফুলিয়ে দেশে আছেন এবং রাতদিন পরামর্শ দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বংগবন্ধুর আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে, কয়েক লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। যদিও তখন সরকার বলেছেন ২৯ হাজার লোক মারা গেছে। রাজনৈতিক কারণে রক্ষী বা্হিনী কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছে। অথচ বংগবন্ধু রাজনৈতিক কারণেই এই বাহিনী তৈরি করেছিলেন। সেই রক্ষী বাহিনী তাঁর জন্যে কিছুই করেনি।তখন রক্ষী বা্হিনীর রাজনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন তোফায়েল সাহেব। সফিউল্লাহ সাহেব সেনা বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ব্যর্থতার জন্যে চাকুরী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বরং তিনি এখন পুরস্কৃত। রাস্ট্রটার কথা একবার ভাবুন। এটা যেন নরোম মাটির পুতুল, যখন যাঁর যেমন ইচ্ছা তখন সেভাবেই রাস্ট্রকে ঢেলে সাজাবেন। আসলে উদ্দেশ্য হচ্ছে রাস্ট্রকে সরকারের অনুগত করে রাখা। মানুষের কল্যাণে রাস্ট্র নয়, সরকারের কল্যাণে রাস্ট্র। যাঁরা বা যে দল সরকার গঠন করবেন তাঁদের তখন সেই দলের ভক্ত ও কর্মীদের কল্যাণেই রাস্ট্র পরিচালিত হয়। কিন্তু বলা হয় সবার কল্যাণের জন্যই সরকার কাজ করছে। যদি তাই হতো তাহলে এ দেশের সাধারন মানুষের ভ্যগ্য পরিবর্তনে ৬৩/৬৪ বছর লাগার কথা নয়। এ কথা দিনের আলোর মতো স্পস্ট হয়ে গেছে যে, চলমান রাস্ট্র ব্যবস্থা কখনই সাধারন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবেনা। রাস্ট্র চায় দেশের বেশীর ভাগ মানুষ এখন যেমন আছে তেমনিই থাকুক। ওরা যতদিন দারিদ্র থাকবে, নিরক্ষর থাকবে ততদিনই তাদের ধোকা দেয়া যাবে। ভোট আসলে রাজনীতিবিদরা ওই গরীব মানুষ গুলোর দুয়ারে দুয়ারে যায়। ভোট শেষ হয়ে গেলে নেতারা রাজা বাদশাহ হয়ে যান। তখন তাঁদের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মানুষ থেকে দূরে থাকা তখন কর্তব্য হয়ে পড়ে। তখন তাঁদের চলা ফেরা করতেই রাস্ট্রের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। তখন তাঁদের জন্যে রাস্ট্রের বাজেট তৈরি হয়। নিজ এলাকায় গেলে নেতাদের তখন ডিসি এসপি সাহেবেরা খেদমত করেন। বিনা পয়সায় সরকারি গাড়িতে চলেন আর সরকারি বাড়িতে থাকেন। তাঁদের চলাফেরা, সংসার খরচ, খাওয়া দাওয়া সবই সরকারকে করতে হয়। আপনারা যারা ভোটার একবার তাঁদের ভোট দিয়ে দেখেন, আপনার অবস্থা কি হয়। এই চেহারা হলো গণতান্ত্রিক নেতাদের। তবুও মন্দের ভালো, আমাদের দেশে ভোটের মাধ্যমে নেতা পরিবর্তন করা যায়। যদিও নেতাদের সকলের গোত্র একই, দল ভিন্ন হলোও। আওয়ামী লীগতো ৬০ বছরের একটি পুরাণো পার্টি। তারাতো দাবী এ দেশের ভাল কাজ গুলো তাঁরাই করেছেন। তাঁরা সব সময়েই দাবী করেন, তাঁরাই একমাত্র গণতান্ত্রিক দল। তাঁরাই এক মাত্র মুক্তি যুদ্ধের দল। ইদানিংতো মুক্তি যোদ্ধার দল বলেনা। কারণ মুক্তি যোদ্ধার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকতে হবে।
চলমান সরকারের আমলে চারিকের হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ আর হিন্দুরা ছাড়া মুক্তি যুদ্ধ আর কেউ করেনি। বিটিভিতে এমনও দেখেছি, একজন বলছেন, চার বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কেমন করে করলেন, আমি আমার দাদুকে পানি খাইয়েছি। আরেকজন মুক্তি যুদ্ধের সময় জন্ম গ্রহণ করেননি। তিনিও দাবী করছেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কারণ তাঁর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। এমন মানুষও পাওয়া গেছে যিনি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, তিনি আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। কারণ তিনি আওয়ামী লীগ করেন না বা আওয়ামী চিন্তধারার লোক নন।ভারত আর আওয়ামী লীগের সাথে বৃটিশদের খুব খাতির। বিবিসি মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সমর্থন করেছে। তাই বৃটেনবাসীরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। সারা ভারত বাসী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। যদিও ইংরেজরা ১৯০ বছর আমাদের শোষণ করেছে। লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ইংরেজ আমলে হিন্দু আর ইংরেজরা যৌথভাবে এ দেশের মুসলমানদের শোষণ করেছে। পাকিস্তানের শাসক গোস্ঠি ২৩ বছর পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশকে ন্যায্য পাওনা বা ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। ওই কারণেই তাদের সাথে আমাদের বিরোধ বাধে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানকে বাংলাদেশকে শত্রু মনে করে, কারণ আওয়ামী লীগ ভারতের অনুগত বন্ধু। আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করে রেখেছে। একটি এক্যবদ্ধ জাতি তৈরি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এখন প্রধান বাধা। আওয়ামী লীগ নিজেদের শুধুই বাংগালী মনে করে। মুসলমানিত্ব তাঁদের কাছেই কিছুই নয়। তাঁরা ধর্ম নিরপেক্ষতা আর ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করে। তাঁরা ধর্মহীন সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চায়। এইতো ক’দিন আগেইতো আমাদের স্যেকুলার বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় কাউকে ধর্ম পরিচিতি জিগ্যেস করা যাবেনা। শিক্ষামন্ত্রীর নাম নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁর নামের মানে ইসলামের আলো। তাঁর মা বাপ খুবই সুন্দর নাম রেখেছিলেন। তাঁরা নিশ্চয়ই বিদ্বান ছিলেন। কিন্তু তাঁদের সন্তান যে কালক্রমে একদিন ধর্মহীন হয়ে পড়বেন তা কখনও ভাবতে পারেননি।আমাদের সমাজে এমন আরও জ্ঞানী গুণী আছেন যাঁদের বাপদাদারা ইসলাম ও মুসলমাদের জন্যে জীবনদান করেছেন। এখন তাঁরা বাপদাদাদের মেধা মনন ও জ্ঞানের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন।ইংরেজ ও হিন্দু আমলে নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করার আন্দেলন করে নাকি তাঁরা ভুল করেছেন। মুসলমানদের অধিকার প্রতিস্ঠার আন্দোলন নাকি সাম্প্রদায়িক ছিল।অথচ এই সব জ্ঞানী গুণীরা মানুষের অধিকারের কথা বলে, পত্র পত্রিকায় নিবন্ধ প্রবন্ধ লিখে চলেছেন। তাঁরা আসলে কোন মানুষের কথা বলেন তা দেশের মানুষের কাছে স্পস্ট নয়। তাঁরা অর্থনীতির কথা বলেন, মানবাধিকারের কথা বলেন, নারী অধিকারের কথা বলেন, শুনতে ভাল লাগে এমন কথা বলায় তাঁদের কোন জুড়ি নেই। প্রখ্যাত কবি আহমদ ছফা বলেছিলেন, এদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা, আর এখন তাঁদের কথা শুনলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবেনা। আল্লাহর রাসুল(সা) মাত্র ২৩ বছরে একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সারা বিশ্ব এখন অবাক হয়ে ভাবছে তিনি কেমন করে এমন একটি বিপ্লন সংগঠিত করলেন। কেমন করে তিনি অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোতে নিয়ে এলেন। কেমন করে তিনি তাঁর কথা পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন এমন অল্প সময়ে। এ বিশ্বের সকল জ্ঞানী মানুষই স্বীকার করেছেন মুহম্মদই(সা) মানব জাতির শ্রেস্ঠ সন্তান। তিনিই এ জগতে প্রথম গণ মানুষের রাস্ট্র ও সরকার গঠণ করেছেন। কিন্তু জীবন যাপন করেছেন অতি সাধারন মানুষের মতো। রাস্তায় চলাফেরা করতেন সাধারন পথচারীর মতো। তাঁর ছিলনা কোন প্রসাদ, সিংহাসন, কুরসী বা গদি। তিনি বসতেন মসজিদে নবুবীর এক কোণে সাহাবী পরিবেস্টিত হয়ে চাটাইয়ের উপর বসতেন। বিদেশী মেহমান আসলে তাঁকে চিনতেই পারতোনা।
যখন রোমান সম্রাট ফিলিস্তিন দখলের জন্যে সৈন্য পাঠাবার সময় সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি শুধুই জমি চাই, সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করো। সকল মানুষকে হত্যা করো। আল্লাহ রাসুল(সা) যখন ইয়েমেনে সৈন্য পাঠাচ্ছিলেন তখন বলেছিলেন, তোমরা কোন দেশ জয়ের সৈন্য নও, তোমরা হচ্ছো আদর্শের সৈনিক। আল্লাহ বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাবার জন্যে যাচ্ছো সেখানে। শুধু বাধা পেলেই মোকাবিলা করবে।আক্রান্ত হলেই মোকাবিলা করবে। তবে তোমাদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে নারী শিশু বৃদ্ধ, ফলবান বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত। ইসলামের সৈনিকরাই সারা বিশ্বে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছে। শৃংখলিত মানুষকে মুক্তির বানী শুনিয়েছে। সারা বিশ্বে যখন যখন ফেরাউনদের শাসন চলছিল তখন ইসলাম মানুষের শাসনের কথা বলিস্ঠ কন্ঠে বলেছে। আর আমরা এখন মানুষের মুক্তির জন্যে পশ্চিমাদের কাছে ছুটে চলেছি। চলমান রাস্ট্র ব্যবস্থা, সংবিধান, তথাকথিত গণতন্ত্র, নির্বাচন, ধনবাদী অর্থনীতি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আনতে পারবেনা একথা প্রমানিত হয়ে গেছে।তাহলে আমরা এখন কি করবো এ প্রশ্ন আপনারা অবশ্যই করবেন আমি জানি। আমাকে প্রশ্ন না করে সবাই নিজেদের বিবেক, আত্মা বা রুহকে প্রশ্ন করুন। ভাল করে কান পেতে শুনুন আপনারা রুহ কি বলছে।
আমেরিকার কালো মুসলমানদের নেতা বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, শুক্রবার জুমার দিন এখানে মসজিদে জায়গা হয়না। মুসল্লীরা রাস্তায় নামাজ পড়েন। তহলে এখানকার মুসলমানরা এত নিরক্ষর ও দরিদ্র ? ইসলাম অশিক্ষা, নিরক্ষরতা ও দারিদ্রকে ঘৃণা করে। তাহলে বাংলাদেশের মুসলমানরা কি সত্যিই শুধু নামের মুসলমান? আমারও একই প্রশ্ন, ১৪/১৫ কোটি মুসলমানের এই দেশে এত দারিদ্র কেন? শিক্ষা মুসলমানদের জন্যে ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহপাক কলম ও কালামের কথা বলেছেন কালামে পাকে। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছিলেন তোমরা আমার রেখে যাওয়া দুটি জিনিষকে বুকে ধারণ করবে। তাহলে পৃথিবীর ইমামতি বা নেতৃত্ব তোমাদের কাছে থাকবে। প্রসংগত হজরত আলীর(রা) একটি বাণীর কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, একটি দেশ ও সমাজ নস্ট হয়ে গেছে কেমন করে বুঝবে। সবাই বললেন, বলুন হুজুর আমরা শুবো। তিনি জানালেন, যখন দেখবে, দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে, মুর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞাণীরা পালিয়ে গেছে আর শাসক মিথ্যা কথা বলে। এবার আপনারাই বলুন, বর্ণিত অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজ করছে কিনা। এ জগতে রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রধান দেশ বাংলাদেশ। সরকার যাকে চায় তাকে ধনী বানিয়ে দেয়। এ দেশে সমাজের সকল স্তরে মানুষ মিথ্যা কথা বলে। এ দেশে মানুষের চোখের শরম চলে গেছে। বিশেষ করে সমাজের নেতা ও ধনীদের শরম একেবারেই নেই। এ দেশে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিহিংসা পরায়ন। এখানকার কবি শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা অতি অল্পতেই বেচাকেনা হয়। মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে দূর্ণীতিবাজ ধনীদের কাছে। সেই মিডিয়াতে চাকুরী করেন সাংবাদিক ভাই ও বন্ধুরা। তাঁরা বুক ফুলিয়ে বলেন, আমরা শ্রমিক মানুষ মুজুরীর বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করি। মালিক চোর না ডাকাত তা আমাদের জানার দরকার নেই। অনেকে বলে থাকেন, সাংবাদিকরাতো এই সমাজেরই একজন। সমাজ নস্ট হয়ে গেলে তারা কি করতে পারেন ।
দেশের অর্ধেক মানুষ জানেনা তাদের কি অধিকার। সংবিধানে কত কথাইতো বলা হয়েছে। এর কিছুই ৯৫ ভাগ নাগরিক জানেন না। যাঁরা জানেন তাঁরা মাত্র পাঁচ ভাগ এবং ৯৫ ভাগকে শাসণ ও শোষণ করতে চান।