Feeds:
Posts
Comments

Archive for August, 2012


 

অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা  ও অর্থনীতি প্রতিদিন   /     এরশাদ মজুমদার

বাহাত্তুর সালে বাংলাদেশের বাজেট ছিল হয়ত পাঁচশ’ কোটি টাকা। এখন এক লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। ৭২ সালের শুরুতে  বাংলাদেশী টাকায় এক ডলারের দাম ছিল পাঁচ টাকার মতো । তাজউদ্দিন সাহেব চট করে মূল্যামান নির্ধারন করলেন এগার টাকা। সম্ভবত ভারতীয় মুদ্রার সাথে মিল রাখার জন্যে। পাকিস্তান আমলে কোলকাতায় একশ’ টাকার নোট দিলে খোলা বাজারে একশ’ টাকার বেশী পাওয়া যেতো। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও প্রথম দুয়েক মাস বোধ হয় ওই রকমই ছিল। এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। বাংলাদেশী একশ’ টাকা দিলে খোলা বাজারে ভারতীয় পঞ্চাশ টাকা পাওয়া যেতে পারে। ব্যান্কের মাধ্যমে হয়ত আরও একটু কম পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ এখন ভারতের এক ধরণের বাজার। আইনি ও বেআইনি ভাবে ভারত বাংলাদেশে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার মাল বিক্রি করে। সমস্যা দেখা দেয় বাংলাদেশ কিছু বেচতে গেলেই। দিল্লী বলে আমরাতো বাংলাদেশের জন্যে আমাদের দুয়ার খেলা রেখেছি। সীমান্তে ভারতীয় চৌকিদার বলে, দুয়ার খোলা আছে সত্যি, কিন্তু আপনি কে? আপনি কি বাংলাদেশী? না অন্য কোন দেশী। মালগুলো কোন দেশের? ভিন দেশী মাল  বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দিচ্ছেননাতো? যেমন ধরুন, বংগবন্ধু সরল বিশ্বাসে সংগে সংগে বেরুবাড়ি দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভারত তার ওয়াদা রযা করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক দেশ, সংসদের অনুমতি লাগে, আদালতের অনুমতি লাগে। এসব পেতেতো সময় লাগে। তাই আজও বাংলাদেশ তার হক আদায় করতে পারেনি। এিতো ক’দিন আগে মনমোহনজী কতগুলো ওয়াদা করে গেছেন, যা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যাক, এসবতো গেলো ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক ও ব্যবসা বাণিজ্যের কথা।

আমি ১৯৬১ সালে নবীশ অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসাবে পাকিস্তান অবজারভারে সাংবাদিকতা শুরু করি। তখন সেখানে অনেক জ্ঞানী গুণী কাজ করতেন। তাঁদের তূলনায় আমি ছিলাম অজ্ঞ। তাই আমি সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। তবে আমি সবার কাছ থেকে অফুরন্ত সহযোগিতা পেয়েছি। আমার বার্তা সম্পাদক ছিলেন এবিএম মুসা। তিনি ছিলেন একজন পাকা শিক্ষক। যাঁরা তাঁর সাথে কাজ করেছেন তাঁরাই জানেন তিনি কত বড় একজন শিক্ষক। তাঁর সাথে পরে আমি জনপদ ও নিউনেশনে কাজ করেছি। তখন অবজারভার ও মর্ণিং নিউজেই অর্থনৈতিক রিপোর্টিংয়ের গুরুত্ব ছিল। বাংলা কাগজে এর তেমন গুরুত্ব ছিলনা। সে সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্য অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে অবজারভারের ভুমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মাওলানা ভাসানী ও বংগবন্ধুর রাজনীতির মূল উপাদান ছিল অবজারভারে প্রকাশিত সংবাদ। এ ব্যাপারে চৌধুরী সমর্থন ছিল একশ’ভাগ। উভয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য সম্পর্কে তিনি খুবই ওয়াকিবহাল ছিলেন। ১৯৬৯ সালে পূর্বদেশ দৈনিক হলে অবজারভার গ্রুপ আরও শক্তিশালী হলো বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জন্যে। তখন আমি পূর্বদেশে ছিলাম। পূর্বদেশের মূল চরিত্র গড়ে উঠলো অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট প্রকাশ করা।

অবজারভারে আমি যখন নবীশ হিসাবে কাজ করছি তকনকার একটি হাসির গল্প না বলে পারছিনা। অবজারভারের বাণিজ্য পাতায় তকন নিয়মিত প্রায় প্রতিদিনই বাজার দর ছাপা হতো। একবার ডিমের হালি(মানে চারটি) চল্লিশ পয়সার জায়গায় চল্লিশ টাকা ছাপা হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজেই এ ভুল করেছিলাম। দশমিক ফোটা ৪০ এর আগে না দিয়ে পরে দিয়েছিলাম। তখন মাত্র দশমিক বা ডেসিমেলের ব্যবহার শুরু হয়েছে। আগে দিলে হয় ৪০ পয়সা, আর পরে দিলে হয় ৪০ টাকা। সকাল বেলাতেই চৌধুরী সাহেব কাগজ পড়ে সম্ভবত কাগজের সম্পাদক সালাম সাহেবকে ফোন করেছিলেন। অবজারভারে তখন এ ধরনের ভুল সহ্য করা হতোনা। আর যায় কোথায়? সম্পাদক সাহেব অফিসে এসেই জানতে চাইলেন এ ভুল কে করেছে। অফিসে হেচৈ পড়ে গেছে। আমি অফিসে জানতে পারলাম সম্পাদক সাহেব আমাকে খুঁজছেন। আমি তাঁর কাছে না যেয়ে আমার বন্ধু বুলুর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সেও তখন নবীশ ফটোগ্রাফার। বুলু অফিসে আসার আগেই আমার এক টাকা জরিমানার নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়ে গেছে। বুলু বললো, আরে কিছু হবেনা। এখন ঠান্ডা মাথায় চা খা। লাতু ভাইসাবের কাছ থেকে খবর নিয়ে ভিতরে যাবো। যদি মুড ভালো থাকে এখনি যাবো। না হয় পরে যাবো। লাতু ভাই সাব বললেন, মুড ভালো আছে। আমরা দুজনই এক সাথে সালাম সাহেবের কামরায় ঢুকলাম। বুলুকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। পরিবারের একমাত্র বড় ছেলে। বুলুর সাথে ঢুকে আমি সালাম দিলাম। সালাম সাহেব সাধারনত বাংলা বললে নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলতেন। তিনি আমাকে জিগ্যেস করলেন, তুঁই কন? মানে তুমি কে? বুলুই উত্তর দিলো, এসু। অবজারভারের বিজনেস পাতায় কাজ করে। একথা শোনার সাথে সাথে ক্ষ্যাপে গেলেন। আমার চাকুরী নট। তিনি ক্ষ্যাপে গেলে ব্যাক বেঞ্চার বলে গালি দিতেন। বুলু বললো , জেইয়া হেতেতো হেই কথা কইবেললে আইছে। একথা বলেই বুলু আমাকে বললো, তুই জেইয়ারে লেখি দেখা কেমনে ৪০ পয়সা লেখতে হয়। সুযোগ পেয়েই আমি নিউজপ্রিন্টের একটা শীট হাতে নিয়ে দশবার ৪০ পয়সা লিখলাম। তিনি দেখে খুব খুশী। একটু হাসলেন। বললেন, তুঁইতো হার দেখছি। ঠিক আছে, ভবিষ্যতে এইচ্ছা ভুল আর করিওনা। অন য। বুলু বললো, আমনেতো হেতেরে জরিমানা করি দিছেন। কিছু হইতো ন, আঁই জীবন বাবুরে কই দিমু। আমনে না কইলে জীবন বাবু হেতের বেতন তুন জরিমানা কাঢি নিবো। আচ্ছা ঠিক আছে। সালাম সাহেবকে আমি বলতাম দার্শনিক সম্পাদক। এ ধরনের সম্পাদক এখন আর দেখা যায়না। সম্পাদকরা একন মালিকের তাবেদারী করে নিজের স্বার্থের জন্যে। সালাম সাহেব, মানিক মিয়া সাহেব বা জহুর সাহেব ছিলেন তখন পূর্ব পাকিস্তানের সবচাইতে সম্মানিত , শক্তিশালী ও সাহসী  সম্পাদক। এরা সবাই জ্ঞানীও ছিলেন। আইউব বিরোধি গণ আন্দোলনে এই তিনজনের অবদান জাতি কখনও ভুলতে পারবেনা।

আমি যখন অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা শুরু করি তখন সবাই আমাকে ডাল চাল , তেল নুনের সাংবাদিক বলে ঠাট্টা করতো। একন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। এখন শুধু অর্থনীতির জন্যেই ইমরেজী ও বাংলায় দৈনিক কাগজ রয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক সাংবাদিকের সংখ্যাও দুদি তিনশ’র কম নয়। অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের নিজস্ব সংগঠন বা ফোরাম রয়েছে।  এই ফোরাম নিয়মিত সেমিনার সিম্পোজিয়াম  অর্গেনাইজ করে থাকে। এতে দেশের নামী দামী লোকেরা ভাষন দেন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারী লোকেরা এসে ভাষণ দিয়ে  সরকারের সাফল্যের সাফাই গান। একবার প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ বিষয়ক উপদেস্টা হিসাবে পরিচিত এক ভদ্রলোক কানেক্টিভিটি নিয়ে কথা বললেন। তিনি বললেন, ভারতকে  ট্রানজিট, করিডোর, সীমান্ত সুযোগ দিলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে এবং জিডিপি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকবে। এসব উপদেস্টা দেশের বাকি মানুষকে বোকা ও বুদ্ধু ভাবেন। তাই শরমের বালাই না করেই ভারতের পক্ষে উলংগ হয়েই ওকালতি করেন। পরে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ওই উপদেস্টা সাহেবের পরিচয়। কেউ বলতে পারলেন না। পরে আমি নিজেই খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম ভদ্রলোক বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিদেশী নাগরিক। বিদেশীদের হয়ে যেখানে যখন প্রয়োজন সেখানে কাজ করেন। তিনি নাকি একজন ভারত বিশেষজ্ঞ। তাই প্রধানমন্ত্রী অদৃশ্য  কারো অনুরোধে তাঁকে ডেকে এনে বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। তাঁর কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি আবার বিদেশ চলে যাবেন। তখন হয়ত আরেক দেশের হয়ে আফগানিস্তান, সোমালিয়া বা সুদানে কাজ করবেন। আরও কয়েকজন সাবেক উপদেস্টা আছেন যারা জেনারেল মইনের সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং সরকারকে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। ১/১১র সেই সরকার দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে। বিগত ৪০ বছরেও এমন ক্ষতি হয়নি। সেই সব উপদেষ্টারা এখন আবার জনগণকে উপদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের বাদ দিয়ে কোন সেমিনার হয়না। আমাদের মিডিয়ারও তাদের বাদ দিয়ে চলেনা। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ডান্ডা সাংবাদিকরাতো সুযোগ পেলেই ওই উপদেষ্টাদের কাছে ছুটে গিয়ে ডান্ডাটা তাদের মুখের উপর ধরে। আর লোক গুলো বেহায়া বেশরমের মতো কথা বলতে থাকে। তারা ছেড়া দেশে যেন আর তেমন জ্ঞানী গুণী নেই। জেনারেল মইন আর ফখরুদ্দিন নির্বাসনে জীবন যাপন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে জাতির নাকি অনেক অভিযোগ। আর উপদেষ্টারা ধোয়া তুলসী পাতা। এমন আজব কারবার আর কোথাও দেখিনি। এ ব্যাপারে কেউ কখনও কথা বলতেও শুনিনি।

ইআরএফের (ইকনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম) সদস্য সংখ্যা এখন হয়ত দুশো। বেশীর ভাগই অর্থনীতি বা বাণিজ্যের ছাত্র নয়। দেখতে দেখতে বা লিখতে লিখতে শিখেছেন। এখন পাকা অর্থনৈতিক রিপোর্টার। একই রিপোর্টার জ্বালানী, আইন , রাজনীতি ও কুটনীতি বিষয়ে এক্সপার্ট। ইারএফে এ ধরণের সদস্য সংখ্যা বেশী। এতা অবশ্য রিপোর্টারের দোষ নয়। পত্রিকার মালিক বা সম্পাদক সাহেবই তাদের সেভাবে কাজ করতে আদেশ করেন। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।  আমার ধারনা বা চিন্তা ভুলও হতে পারে। আমার মনে হয় বেশীর ভাগ রিপোর্টারেরই অর্থনৈতিক সাংবাদিকতায় মৌলিক কোন শিক্ষা বা ট্রেনিং নেই। আমাদের সময়ে রাজনীতির খবরই ছিল সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম পাতায় অর্থনীতির খবর স্থান পেতো। কিন্তু অবজারভার আর পুর্বদেশ ছিল ব্যতিক্রম। এি দুটো কাগজেই পুর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টাদেরও সেভাবেই গড়ে তোলা হতো। তখন অর্থনৈতিক সংবাদের হেড কোয়ার্টার ছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সেখানেই আমদানী রফতানীর অফিস, কাস্টমস অফিস, পোর্ট অথরিটি, বেশীর ভাগ আমদানী রফতানীকরাকের অফিস ছিল চট্টগ্রামে। বড় বড় বিদেশী কোম্পানীর অফিসও ছিল চট্টগ্রামে। বেশীর ভাগ ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং আর ইন্ডেন্টিং অফিসও ছিল এই বন্দর নগরীতে। চা অকশানের অফিস তখনও এখানে ছিল, এখনও আছে। টি বোর্ডের অফিসও এখানে। পাটের সদর দপ্তর ছিল নারায়নগঞ্জে। এখন পাট চা চামড়ার তেমন গুরুত্ব নেই বলে খবরের গুরুত্বই নেই।

১৯৬৩ থেকে ৬৪ সালের শেষ অবধি আমি চট্টগ্রামে ছিলাম সংবাদের প্রতিনিধি হিসাবে। সে সময় সেখানে কাজ করতেন পাকিস্তান টাইমসের প্রতিনিধি হয়ে আতিকুল আলম,যিনি এখন অর্থনীতি প্রতিদিন এর প্রধান সম্পাদক। আরও যারা ছিলেন তাঁরা হলেন  অবজারভারের ফজলুর রহমান, ইত্তেফাকের মঈনুল আলম, মর্ণিং নিউজের আবদুর রহমান ও এপিপির নুরুল ইসলাম । এ সময়ে ফজলুর রহমান ছিলেন সারা পাকিস্তানের ডাক সাইটে অর্থনৈতিক সংবাদদাতা। সর্বত্রই তিনি ছিলেন সম্মানিত। তিনি ছিলেন চিরকুমার। তাঁর সততা ছিল সর্বজনবিদিত। আমি ছিলাম ফজলুর রহমানের সাগরেদ। চট্টগ্রামের সাথে আমার সে সম্পর্ক আজও আছে। চট্টগ্রামে না গেলে আমার অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা অসম্পূর্ণ থেকে যেতে। তখন সারা পাকিস্তানে দুদতি চেম্বারই বিখ্যাত ছিল। একটি করাচী চেম্বার, অপরটি চট্টগ্রাম চেম্বার। চট্টগ্রামের প্রথম চেম্বারটি ইউরোপিয়ান চেম্বার হিসাবে পরিচিত ছিল। বেশীর ভাগ বিদেশী ও স্থানীয় কিছু এলিট ব্যবসায়ী এর মেম্বারশীপ পেয়েছিল। পরে ইউরোপিয়ান চেম্বার  উঠে  যায় এবং বর্তমান চেম্বার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে ফজলুর রহমানের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশী। আমি আজও মনে করি প্রত্যেক অর্থনৈতিক সাংবাদিকের কিছুদিন চট্টগ্রামে কাজ করা উচিত। শিপিং একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ব্যবসা। এর হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এখনও শিপিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের অর্থনৈতিক সাংবাদিকরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেনা। তাদের শিখাবার জন্যে পত্রিকা গুলোর কোন উদ্যোগ নেই। আমাদের শেয়ার মার্কেট নিয়ে নানা কেলেংকারী। এ কেলেংকারী সারা পৃথিবীতেই চলছে। এতা বিশ্বব্যাপী খুবই জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারেও আমাদের রিপোর্টারদের তেমন কোন জ্ঞান নেই। আমি আজ পর্যন্ত একটি ভাল ব্যালেন্স শীট রিভিউ দেখিনি। যদি কোন অর্থনৈতিক রিপোর্টারের কাছে জানতে চাই অমুক কোম্পানীর ডিরেক্টর কারা, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর পেয়েছি জানিনা। ওই কোম্পানীর প্রডাক্ট কি, উত্তর হলো জানিনা। এসব জানার নাকি দরকার হয়না। শুধু শেয়ারের দাম উঠানামা করছে কিনা জানলেই হলো।

প্রকাশিতব্য নতুন দৈনিক অর্থনীতি প্রতিদিন আমরা এখনও দেখিনি। শুধু চিনি আমার খুবই প্রিয় মানুষ ফজলুল বারীকে। তার মাধ্যমেই কাগজের নাম শুনেছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রিয় অনেক মানুষ এ কাগজে যোগ দিয়েছেন। অনেকেরই অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। কাজ করতে করতে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। মালিকদেরও আমরা তেমন চিনিনা। শুনেছি তাঁরা সবাই ব্যবসায়ী এবং স্টক মার্কেটের নামজাদা প্লেয়ার। শুনেছি তাঁরা অনেক আগেই ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এসেছেন। বাংলাদেশে এখন ব্যবসায়ীরা মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করেন এবং এর মাধ্যমে সরকারের সাথে সমঝোতা তৈরি করেন। সুযোগ পেলে সরকারকে কামড়ান, সরকারও সুযোগ পেলে কামড়াতে ছাড়েন না। বড় বড় গ্রুপের যে কাগজ গুলো আছে তারা এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে দিনরাত ঘেউ ঘেউ করে চলেছে। সাংবাদিকরা বলেন, আমরা পেশাজীবী। কাজ করি মুজুরী নিই। মালিকের পলিসি নিয়ে মাথা ঘামাইনা। মালিক চোর বাটপার হলে আমাদের কি আসে যায়। এ ব্যাপারটা সরকার দেখবে। পুলিশ দেখবে, দুদক দেখবে আর রাজস্ব বোর্ড দেখবে। মালিক কোত্থেকে টাকা এনে আমাদের দিচ্ছে তা আমরা দেখবো কেন? আমরা নিয়মিত ভাল মোটা অংকের টাকা পেলেই খুশী। বন্ধুদের মুখেই শুনি, এখন কিছু সাংবাদিক ব্রান্ড হয়ে গেছেন। তাঁদের দাম এখন মিলিয়নে। যে কোম্পানী বেশী বিজ্ঞাপন দিবে সে যদি হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় পত্রিকার কিছু আসে যায়না। পাকিস্তান আমলে আইউব বিরোধী আন্দোলন করেছে যে সব পত্রিকার মালিক কেউই ব্যবসায়ী ছিলেন না।

আমার এ কথা গুলো শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয় সারা বিশ্বের মিডিয়ার অবস্থা এখন এ রকম। কর্পোরেট সাংবাদিকতার বিকাশ খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এম্বেডেড সাংবাদিকতারও বিকাশ ঘটছে। সারা বিশ্বের কর্পোরেট হাউজ গুলো বিশ্ববাসীকে কি ভাবে শোষণ করছে এবং মিডিয়া গুলো তাদের কিভাবে সমর্থন করছে তা সুযোগ পেলে আগামীতে কখনও লিখার চেস্টা করবো।

লেখক: একজন প্রবীণ অর্থনৈতিক সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর আহবান  /    এরশাদ মজুমদার

 

অন্য ধর্মের মানুষ যাতে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃস্ট হন বা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন সে জন্যে মহানবীর দেখানো পথে জীবন গড়ার আহবান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক অনুস্ঠানে ডিজিটাল কোরাণের  ওয়েবসাইট উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী  এই  আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা চাই সকলেই ইসলাম সম্পর্কে জানুক। অন্যেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক, সে প্রচেস্টা আমাদের সকলেরই  থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, তিনি নবী করীমের(সা) দেখানো পথে কাজ করে যেতে চান। আমরা ভাল করে জানি যে বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ধর্ম চর্চা করেন।  বেশ কয়েক বছর আগে আমরা তাঁকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখেছি। সাম্প্রতিক কালে তাঁকে ওই পোষাকে আর দেখিনি। আছর বা মাগরিবের আজান পড়েছে এমন সময়ও তাঁকে অনুস্ঠানে বক্তৃতা দেখেছি। তাঁর ভক্ত ও শ্রোতা কাউকে নামাজ আদায় করার জন্যে উঠে যেতে দেখিনি। এর মানে কিন্তু এই নয় যে তিনি মুসলমান নন বা ধর্ম কর্ম করেন না।

এইতো ক’দিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে সর্বধর্মের প্রার্থনা  কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয়েছে। মুসলমানরাও ওই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন। শুনেছি, এই কর্মসূচীর পেছনে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের উত্‍সা্হ রয়েছে। থাকতেই পারে, থাকটা কোন অন্যায় বা গর্হিত কাজ নয়। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে পাকিস্তানের মতো কাদিয়ানী বিরোধী কোন কর্মকান্ড নেই। ভারতের সাম্প্রদায়িক দাংগা বা মুসলমান নিধনের খবর শুনে কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। আমি সত্যিই খুবই আনন্দিত যে, বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি নেই। কোন ধরণের উসকানীতেও এখানে কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া হয়না। বরং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বা মাইনরিটিরা খুবই শান্তিতে আছেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ভিতর দশ ভাগ নাগরিক মাইনরিটি। এর মধ্যে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের সংখ্যা হবে এক কোটির মতো। বাকি ৬০ লাখের ভিতর রয়েছেন খৃস্টান, বৌদ্ধ, প্রকৃতি পূজারী ও অচ্যুত। কিন্তু সরকারী চাকুরীতে মাইনরিটিদের অংশ গ্রহন খুবই মজবুত। ভারতে মুসলমান, খৃস্টান, বৌদ্ধ ও অচ্যুতদের সংখ্যা ৬০ কোটির মতো। কিন্তু সরকারী চাকুরীতে তাদের সংখ্যা এক ভাগেরও কম। পশ্চিম বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা ৪০ ভাগের মতো। সরকারী চাকুরীতে মুসলমানের সংখ্যা এক ভাগেরও কম। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অনুসরণীয়। ভারতের নেতারা কোনদিনও অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে মহান বলে পরিচিত ভারতে বছরে ছোট খাট এক হাজার দাংগা ঘটে থাকে। বাবরী মসজিদ ভাংগার বিভত্‍স দৃশ্য বিশ্বের মুসলমানরা দেখেছে। আর এি ঘটনা ঘটিয়েছে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা। ভারতের তথকথিত স্যেকুলার সরকার গুলো কখনই মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার গুলো রক্ষা করতে পারেননি। ইসলাম বা সত্যিকারের মুসলমানেরা কখনই ভিন্ন ধর্মের মানুষকে শুধু মাত্র ধর্মের কারণে হত্যার উসকানী দিতে পারেনা। মুসলমানেরা উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেশী অমুসলমানকে হত্যা করতে পারেনা। যে কোন ধরণের উসকানীর মুখে ধৈর্য ধারণ করাই একজন মুসলমানের ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য। এর বাইরে যারা থাকে তারা আসলেই মুসলমান নয়। ইসলামকে তলোয়ারের ধর্ম বলে অপপ্রচার করেছে এবং এখনও করছে কায়েমী স্বার্থবাদীরা মানুষের বিপ্লবকে রুখে দেয়ার জন্যে। এমন কি আলেম ওলামা নামধারী এক শ্রেণীর মানুষও ইসলামের বিপ্লবী রূপকে জনগণের সামনে তুলে ধরাকে পরিহার করে চলেছেন। এখনও এি সিলসিলাহ জারী রয়েছে।

বিশ্ব বিখ্যাত কমিউনিস্ট দার্শনিক কার্লমার্কস বলেছেন, ‘ইসলাম ইজ এ্যা রেডিকেল রিলিজিয়ন‘। প্রখ্যাত হিউমেনিস্ট চিন্তাবিদ এম এন রয় বলেছেন,‘ইতিহাসের অপরিহার্য সৃস্টি ইসলাম। মানব সভ্যতার অগ্রগতির সহায়ক। এর আদর্শেই গড়ে উঠল নতুন সমাজ সম্বন্ধের বাণী নিয়ে, যার ফলে মানব মনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটল‘।  শুধু আমরা পারিনি ইসলামের এই মর্মবাণীকে সকল মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশে ইসলামের পন্ডিত ও আলেম সমাজ এ গুরুত্পূর্ণ দায়িত্ব পালনে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা যারা তথকথিত শিক্ষিত বলে দাবী করি তারা ইসলামকে পরিহার করে চলেছি। কারণ ইংরেজরা  আলেম সমাজের বিরুদ্ধেই সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আলেম সমাজই শুরু থেকেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। অন্যায় অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ইসলামের দাবী। নামাজ রোজার মতোই  অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ। ইসলাম জগতে এসেছে সকল প্রকার জুলুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোধনার জন্যে। আমরা যে ইসলাম পালন করি তা আচার সর্বস্ব, দেহবাদী, ভোগবাদী। ইসলামের রূহ বহু আগেই আমাদের কাছ থেকে বহুদূরে সরে গেছে। সারা বিশ্বে এখন নতুন ইসলামের উত্থান ঘটেছে। একটা হচ্ছে সরকারী ও দরবারী ইসলাম, আরেকটা হচ্ছে মুমিন মুসলমানের ইসলাম। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে মুসলমান দেশ মানে ইসলামী দেশ নয়। মুসলমান শাসক মানে ইসলামী শাসক নয়।

আমাদের দেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুলমান ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে। কিন্তু রাস্ট্র, আদালত, গঠনতন্ত্র, আইন সংসদ কিছুই ইসলামী নয়। আমাদের গণতন্ত্র হচ্ছে পশ্চিমের গণতন্ত্র।  মুসলমান দেখলেই শুধু পশ্চিমাদের ধর্মের কথা মনে পড়ে। নিজেরা তেমন ধর্ম কর্ম করেনা। তারা মনে ধর্ম আর রাস্ট্র আলাদা। রাজনীতিতে ধর্মের কোন স্থান নেই। এসব চিন্তা থেকেই স্যেকুলার শব্দটির জন্ম হয়েছে। স্যেকুলার মানে পার্থিব , যা শুধু জগত নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। রাস্ট্র বা সরকার আর সরকারী সকল যন্ত্র ধর্ম নিয়ে কখনই ভাববেনা। পশ্চিমের পুঁজিবাদী শোষনমুখি সমাজ কখনই নৈতিকতা নিয়ে ভাবেনা। যেহেতু রাস্ট্র পরকাল, শেষ বিচার নিয়ে ভাবেনা সেহেতু নৈতিকতার বালাই নেই। শুনেছি , সে সব দেশে ৯০ ভাগ মেয়ে স্কুলে থাকতেই মা হয়ে যায়। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা আমাদের এ অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমাদের মেয়েরা এখনও সে রকম হয়নি। পশ্চিমে মা বাবারা বিয়ে হতে না হতেই তালাকের দিকে চলে যায়। ছেলে মেয়েরা লিভ টুগেদার এ বিশ্বাস করে। এর মধ্যে সন্তান হয়ে যায়। আবার সেই সন্তান ত্যাগ করে তারা চলে যায়। পশ্চিমারা আজ ধনী ও শক্তিশালী। পুরো পৃথিবীটাকে নিজেদের প্রভাব ও দখলে রাখতে চায়। সে ভাবেই পৃথিবীর অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। আর আমরা পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বিগত ৬৪ বছর ধরেই পশ্চিমাদের সাহায্য ছাড়া চলতে পারিনা। আমাদের প্রতিটি শিশুই জন্ম গ্রহণ করে দশ বিশ হাজার টাকার খণের বোঝা নিয়ে। বিপরীতে তাদের কোন এ্যাসেট বা সম্পদ থাকেনা। আমাদের সন্তানেরা নিরক্ষর হয়ে জন্ম নেয় আর নিরক্ষর থেকেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। অথচ, ইসলামই একমাত্র ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা যা ঘোষণা দিয়েছে বিদ্যা অর্জন বাধ্যতামুলক, অবশ্য কর্তব্য ও ফরজ। দারিদ্রকে আল্লাহর রাসুল(সা) অভিশাপ বলে ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, দারিদ্র মানুষের ঈমান নস্ট করে দেয়। এর মানে হচ্ছে , বাংলাদেশের মানুষ ষোলয়ানা ইসলামের ভিতর নেই। এখানে রাস্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি হতে গেলে ইসলাম না জানলেও চলবে। পাকিস্তান আমলেও ইসলামকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ পাকিস্তানের নাম ইসলামী প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশেও ইসলামকে রাজনীতিতে প্রবল ভাবে ব্যবহার করা হয়। এমন কি স্যেকুলার বা ধর্মহীন রাজনীতিকরাও নির্ব্যাচনের সময় টুপি পরেন, নামাজে অংশ  নেন। এ হচ্ছে এক ধরণের মোনাফেকী। আমরা শুনেছি , প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত নামাজ রোজা করেন এবং মুসলমানী জীবন যাপন করেন। হাঁ তা নিশ্চয়ই করেন। তাঁর বাপদাদারাতো ইসলাম প্রচারের জন্যেই এ দেশে এসেছিলেন। তাঁর মহান পিতা মুসলমানদের অধিকারের জন্যে লড়াই করেছেন। স্কুল জীবনে হিন্দুরাই তাঁকে জেলে পাঠিয়েছে।মজলুম মুসলমানের অধিকার রক্ষার জন্যেই তিনি এবং তাঁর নেতা মাওলানা ভাসানী আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করেছিলেন। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান হওয়ার পর খাজা গজা আর নবাবরা সাধারন মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। এর ফলেই আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম হয়। মূলত, পাকিস্তান ভাঙার বীজ রোপন করেছে জনবিচ্ছিন্ন মুসলীম লীগ ও কায়েমী স্বার্থবাদীরা। ৭১ এর ঘটনাও পাকিস্তানের সেনা নেতা ও এক শ্রেণীর রাজনীতিকরা ঘটিয়েছে। তারাই আলোচনার নাম করে বংবন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে বংগবন্ধু  শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত চেস্টা করে গেছেন। কিন্তি বিশ্বাসঘাতকরা তাঁর সরলতাকে অপব্যবহার করে ২৫শে মার্চ রাতে অতর্কিতে নিরীহ মুসলমান বাংগালীদের উপর হামলা চালায়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিবার কখনই পাকিস্তান চায়নি। এই পরিবার ছিল নেহেরু পরিবারের ঘনিষ্ট বন্ধু। জুলফিকার পাকিস্তান এসেছে ৪৭এর অনেক পরে। এছাড়াও জুলফিকার ছিল ইন্দিরার ভাতৃপ্রতিম। লোকে  বলে তাঁদের ভিতর নাকি রক্তের বন্ধন রয়েছে। পাকিস্তান ভাংগার ব্যাপারে এই দুইজন একটি জোট। তাঁদের সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া ও রাশিয়ান জোট। পরবর্তী ঘটনা আমরা সবাই জানি। স্বাধিন বাংলাদেশের স্থপতি, রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেননি। কারণ ততদিনে বাংলাদেশ ভারতের খপ্পরে পড়ে গেছে সকল দিক থেকে। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে তিনি যে ঘোষনা দিয়েছিলেন তা আর রক্ষা করতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, আমি বাংগালী, আমি মুসলমান। এর পর তিনি পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। ভারত এবং রাশিয়া তাঁর এ ভুমিকা বা দর্শন পছন্দ করেননি।

দিল্লীর দর্শন হচ্ছে, বাংলাদেশ বাংগালীদের দেশ হবে। মুসলমানদের দেশ নয়। দিল্লী যেমন পাকিস্তান চায়নি, তেমনি মুসলমান বাংলাদেশ চায়না। যে আওয়ামী লীগ বংগবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও বিশ্বাস ছিল তা তিনি পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে পাননি। তিনি নির্যাতিত মজলুম বাংগালী মুসলমানের মুক্তি চেয়েছিলেন। এজন্যেই তাঁর ছ’দফা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানীরা তা মানেনি। বড় বেশী আসা বুকে নিয়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানের কারাগার থেকে। জীবদ্দশায় তিনি বাংগালী মুসলমানের দেশ দেখে যেতে পারেননি। ভারত এবং তার বন্ধুদের প্রভাব বলয় থেকে বাংলাদেশ আর বেরুতে পারেনি। বংগবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সিট পেয়ে এবার ষোলয়ানা ভারত মুখি হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় কাগজ সহ বিভিন্ন মিডিয়ার খবর দেখলেই এতা স্পস্ট যে শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত আগামী বারের জন্যে আবারও ক্ষমতায় রাখতে চায়। ভারতেরই পরামর্শে আদালত সংবিধান নিয়ে তেমনি এক রায় দিয়েছেন এবং সরকার তড়িঘড়ি করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এখন নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মাঠ তপ্ত হয়ে উঠছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিশ্চয়ই ভারতের খুব লাভ আছে। এবার ক্ষমতায় এসে হাসিনা ভারত যা যা চেয়েছে সবই দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। ভারত কখনই বাংলাদেশকে কিছু দিবেনা। ভারতের নেতারা যদি উদার হতো তাহলে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হতোনা। শুধুমাত্র ভারতীয় নেতাদের ক্ষুদ্রমনের জন্যে ভারত দ্বিখন্ডিত হয়েছে ৪৭ সালে। ভারত কখনই ভারতে মুসলমানদের অস্তিত্ব মেনে নেইনি। ভারতে এখন ২৫ থেকে ৩০ কোটি মুসলমান। কিন্তু সরকারী চাকুরী, বেসরকারী চাকুরী, মিডিয়া, শিক্ষা কোথাও মুসলমানদের উপস্থিতি ৩/৪ ভাগের বেশী নয়। আর বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ১০ ভাগের উপরে। মিডিয়াতে তাদের উপস্থিতি খুবই দৃশ্যমান। অপরদিকে সন্তু লারমা ভারত ও পশ্চিমা দেশের সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রায় দখল করে ফেলেছে। একদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা পূর্ব তিমুরের মতো হয়ে যাবে। হাসিনা সরকার ইতোমধ্যেই সন্তু লারমার চাপের মুখে অর্ধেক অবনত হয়ে গেছে। সন্তু লারমাতো কথায় কথায় অস্ত্রের হুমকি দিচ্ছে। সন্তু লারমা চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও বাংলাদেশের সাথে আছে সেনা বাহিনীর কারণে।

এমনি এক সময়ে ও পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে ইসলামের দিকে আহবান জানিয়েছেন। বর্তমান সরকারের বন্ধু ভারত নিশ্চয়ই এই আহবান দেখে অবাক হয়েছে। কারণ , স্যেকুলার বা ধর্মমুক্ত বাংগালী সরকার  হঠাত্‍ ইসলাম বা মুসলমানিত্বের কথা বলছে কেন। না, দেশী বিদেশী উপদেস্টারাই পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচনের আগে ইসলামের কথা বলতে। দেশের মানুষ জানে চলমান সরকার চোখ বন্ধ করে  সংখ্যালঘুদের ভোট পায়। বলা হয় সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যান্ক। আমরা জানি নবী করিম(সা) এর বংশধরদের কস্ট দিয়েছে, হত্যা করেছে মুসলমান নামধারী এক শ্রেণীর মানুষ। আদর্শগত কারণে নবীজীকে কস্ট দিয়েছে, হত্যা করতে চেস্টা করেছে তাঁরই অতি আপনজন। কারবালার শঠতাপূর্ণ যুদ্ধও হয়েছে মুসলমানদের ভিতরেই। এখনও বিভিন্ন দেশে মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ চলছে। আরব দেশ গুলোতে মুসলমানেরা গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করছে। মুসলমান নামধারী ডিক্টেটরেরা যুগের পর যুগ দেশ দখল করে রেখে জনগণকে অধিকার হারা করেছে। প্রত্যাকটা ডিক্টেটরই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করেছে এবং এখনও করে চলেছে। সে সব দেশের সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশেও জেনারেল এরশাদ ও জেনারেল মইন জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশকে তচনচ করে দিয়েছে। এই দুই জেনারেলই ভারতের সাথে আলাপ করে ক্ষমতা দখল করেছিল।  জেনারেল এরশাদ এখনও ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু। আগামী নির্বাচনেও সে ভারতের পক্ষ হয়ে কাজ করবে। সম্প্রতি এরশাদের ভারত সফর নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া অনেক গোপন কথা প্রকাশ করেছে। এরশাদ একদিনের জন্য হলেও আবার এ দেশের রাস্ট্রপতি হতে চায়। হাসিনা তাকে রাস্ট্রপতি করবার আশা দিয়ে জোটে ভিড়িয়েছিল। এবার ভারত আবার সেই ওয়াদা করেছে। ভারত থেকে  এসেই এরশাদ বলতে শুরু করেছে সে তিনশ’ সিটে একলা নির্বাচন করবে। এসব হচ্ছে এরশাদের ভেলকীবাজী। দেশের তাকে বিশ্বাস করেনা। তাই বিদেশীরাও বলে হি ইজ আনপ্রিডিক্টেবল।

দেশের ইসলামী দলগুলোর প্রায় ৯০ ভাগ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। জামাত আর ইসলামী দলগুলোর কন্ট্রাডিকশনকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিতার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী নাশকতার অভিযোগ এনে নানা ধরনের মামলা রুজু করেছে। এমন কি বিএনপির উপরের লেভেলের সব নেতার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এসব পুরাণো খেলা। বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানীরা বহু মামলা দিয়েছে। তিনি বহু বছর জেল খেটেছেন। কিন্তু দেশের মানুষ সেসব মামলা মেনে নেয়নি। বংগবন্ধুর কন্যা বিরুধী দলের সাথে এমন ব্যবহার করবেন তা কেউ আশা করেনা। অনেকে আবার বলেন, বংগবন্ধু নিজেই স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতায় বসে বিরুধী দলকে নিশ্চিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তাঁর আমলে কয়েক হাজার বিরুধী রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছে। যাক এসবতো হলো রাজনীতির কথা। আজ আমার বিষয় হলো বাংলাদেশে ইসলাম ও চলমান আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের মানুষ জানে এ সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ, মানে রাস্ট্রের আওতার বাইরে রাখতে চায়। নিজেদের  শুধুমাত্র বাংগালী মনে করে। মুসলমানের গৌরব ও ঐতিহ্যের সাথে নিজেদের একীভুত করতে চায়না। কারণ ভারত এতা চায়না। সেই সরকার যদি হঠাত্‍ করে ইসলামের দিকে জনগণকে আহবান করে অবশ্যই নানা প্রশ্ন মনে জেগে উঠে। শুরুতেই আমি বলেছি যে প্রধানমন্ত্রী নিজে নিয়মিত ধর্মকর্ম করেন একথা তাঁর বহুবার বলেছে। কিন্তু তাঁর দলের আদর্শতো ইসলাম বা মুসলমানিত্ব নয়। তাঁর দলের সকল কার্যক্রম ইসলামের বিরুদ্ধেই পরিচালিত। আমি একথা বলছিনা যে, তাঁর দল এ রকম একটা অবস্থান নিতে পারেননা। একশ’বার পারেন। এতা তাঁর দলের রাজনৈতিক অধিকার। তাঁর দলের বুদ্ধিজীবীরাতো আদাজল খেয়েই ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা আদালতে ইসলামের বিরুদ্ধে রায় দেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে পবিত্র কোরাণের ব্যাখ্যা দেন।এরাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্যে সরকারী ছুটি পালন করা হয়। আগস্ট মাসের এক তারিখ থেকেই আওয়ামী সংগঠন গুলি শোক দিবস পালনের জন্য নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। অবস্থা দেখে বংগবন্ধু শুধুই আওয়ামী ঘরাণার লোকদের নিজস্ব নেতা। এমন অবস্থা কেন সৃস্টি হলো তা ভাবলে আমার মন দু:খ ও বেদনায় কাতর হয়ে পড়ে। কেউ বা সবাই মানুক বা না মানুক আমি মনে করি বংগবন্ধু এ দেশের একজন মহান নেতা। তিনি জীবিত থাকতে চারিদিকে এতো বিতর্ক ও দ্বিমত ছিলনা। তাঁর রাজনীতি ও শাসন আমলের আমি একজন বড় সমালোচক বা ক্রিটিক। তাঁর সাথে আমার খুবই সুসম্পর্ক ছিল। তিনি সত্যিই একজন পিতৃতূল্য মুরুব্বী মানুষ ছিলেন। অপরিসীম আবেগ ও ভালবাসা ছিল তাঁর হৃদয়ে। তিনি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হতেন, বুদ্ধি বা মাথা দিয়ে নয়। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই বুঝা যাবে তিনি স্কুল জীবনেই কেমন আবেগী মানুষ ছিলেন। সারা জীবন সাধারন মানুষের জন্যে লড়াই করেছেন। যে কোন কাজেই তিনি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। হাতে পয়সা নেই তবুও মনের জোরে কাজ এগিয়ে নিতেন।আমার জীবনে তাঁর অনেক স্মৃতি আছে। সময় সুযোগ মতো একদিন সেই স্মৃতির কথা বলবো। তাঁর স্মৃতিকথা পড়লেই জানা যাবে তিনি তাঁর সময়ের সিনিয়র নেতাদের মুরুব্বী মানতেন এবং সম্মান করতেন। এখন তাঁর ভক্তরা তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে ,কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদব কায়দার চর্চা করেনা।বংগবন্ধু মনে প্রাণে ষোলয়ানা মুসলমান ছিলেন। তাঁর স্মৃতিকথা পড়লেই তা সবার কাছে স্পস্ট হয়ে যাবে। বাল্যকালেই তিনি মুসলিম সেবা সমিতির সম্পাদক ছিলেন। সমিতিটি করেছিলেন তাঁর শিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ। এই সমিতি বাড়ি বাড়ি মুস্টি চাল সংগ্রহ করতো।এই চাল বিক্রি করে গরীব মুসলমান ছাত্রদের পড়ার খরচ চালানো হতো। বংগবন্ধু নিজেই লিখেছেন, যারা মুস্টি চাল দিতোনা তাদের বাড়িতে রাতের বেলা দল বেঁধে ইট মারতেন। এ ধরনের কাজের জন্যে তাঁর বাবা তাঁকে শাস্তি দিতেন।

আত্মজীবনীর এক জায়গায় বংগবন্ধু লিখেছেন, ‘ আমি ভীষণ একগুঁয়ে ছিলাম।আমার দলের ছেলেদের কেউ কিছু বললে আর রক্ষা ছিলনা।মারপিট করতাম।আমার আব্বা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বংগবন্ধু সরাসরি রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। নানা কারণে তিনি একটু বয়স পর্যন্ত স্কুলে পড়েছেন। এ সময়ে শেরে বাংলা বংগদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি শ্রমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে নিয়ে গোপাল গঞ্জে আসার কর্মসূচী নিয়েছিলেন। এ উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। টরুণ শেখ মুজিব স্বেচ্ছা সেবক বাহিনীর দায়িত্ব পেলেন। হিন্দু ছাত্ররা কংগ্রেসের নির্দেশে স্বেচ্ছা সেবক বাহিনীতে থাকলোনা। হিন্দুরা এবং কংগ্রেস নেতারা এই সফরের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে গোপালগঞ্জে আশি ভাগ ব্যবসায়ী চিলেন হিন্দু। বাধ্য হয়েই তরুণ শেখ মুজিব শুধু মুসলমান ছাত্রদের নিয়ে স্বেচ্ছ সেবক বাহিনী গঠণ করলেন। এই সময়েই শেখ সাহেবের সাথে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পরিচয় হয়। তিনি তরুণ শেখ মুজিবকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করলেন। বললেন, তোমাদের এখানে মুসলীম লীগ করা হয় নাই।আমি বললেম কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এমন কি মুসলীম ছাত্রলীগও নেই। সোহরাওয়ার্দী সাহেব আর কিছি না বলে শেখ মুজিবের নাম ঠিকানা নোট করে নিলেন। কিছুদিন পরে শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলেন। চিঠিতে তিনি ধন্যবাদ জানালেন এবং বললেন কোলকাতায় গেলে যেন তাঁর সাথে দেখা করি। এ ভাবেই শেখ সাহেবের সাথে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সম্পর্ক তৈরি হয়। গোপালগঞ্জ শহরে হিন্দু মুসলমানের ভিতর খিটমিট লেগেই থাকতো। এমনি এক ঘটনায় শেখ সাহেব ১৮ বছর বয়সে প্রথম মারপিটের আসামী হয়ে জেলে যান।হিন্দু এসডিও বা মহকুমা হাকিম থাকার কারণে জামিন হয়নি। ৪১ সালে ২১ বছর বয়সে শেখ সাহেব ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরীক্ষার সময় খুবই অসুস্থ ছিলেন। তাই পরিক্ষার ফলাফল তেমন ভাল হয়নি। ৪২ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে নেমে যান। স্মৃতিকথায় এক জায়গায় শেখ সাহেব উল্লেখ করেছেন যে,প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ওয়াসেক সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবকে সমর্থন করেন। অন্য এক জায়গায় শেখ সাহেব লিখেছেন, এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজে আমি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করি। অফিসিয়াল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাকে জিতিয়ে আনেন। ১৯৪৩ সালে শেখ সাহেব প্রথমবারের মতো প্রাদেশিক মুসলীম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সেবারই আবুল হাসেম সাহেব মুসলীম লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব আবুল হাসেম সাহেবকে সমর্থন করেছিলেন।খাজা নাজিমুদ্দিন সাহেব সমর্থন করেছিলেন খুলনার আবুল কাশেম সাহেবকে। এ সময় থেকেই মুসলীম লীগ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান হওয়ার পরেও এই বিভক্তিতে আর জোড়া লাগেনি। ওই বিভক্ত মুসলীম লীগই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী মুসলীম লীগে পরিণত হয়। আওয়ামী মুসলীম লীগের নেতৃত্বেই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলার তিনজন সেরা নেতা যুক্তফ্রন্টের হাল ধরেন। এই তিনজন হলেন শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ফলে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুসলীম লীগের কবর হয়ে যায়। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো মুসলীম লীগ নেতরা জনগণের মনোভাব অনুধাবন করতে পারেননি। মুসলীম লীগের মাঠ কর্মীরাই জেলায় জেলায় আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করেছিল।হাজার হাজার মুসলীম লীগ কর্মী কোলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পার্টির কাছে কোন পাত্তা পেলেননা। কেন্দ্রীয় মুসলীম লীগ কর্মী ও সংগঠণ বিহীন মুসলীম লীগ নেতাদের সমর্থন করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে ৫৪র নির্বাচিত সরকারকে কেন্দ্রের মুসলীম লীগ সরকার বাতিল করে দিল।৯২ক ধারা জারী করে কেন্দ্রের শাসন জারী করলো কেন্দ্রীয় সরকার। শুরু হলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।

বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মনে প্রাণে, চিন্তা চেতনায় ছিলেন বাংগালী মুসলমানের একজন নিবেদিত নেতা। তাঁর স্মৃতিকথার এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, সিপাহী বিদ্রোহ এবং ওহাবী আন্দোলনের ইতিহাস আমার জানা ছিল। কেমন করে ব্রিটিশ রাজ মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, কি করে রাতারাতি মুসলমানদের সর্বস্বান্ত করে হিন্দুদের সাহায্য করেছিল, মুসলমানরা ব্যবসা বাণিজ্য, জমিদারি, সিপাহীর চাকরি থেকে কিভাবে বিতাড়িত হল- মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের দ্বারা পূরণ করতে শুরু করেছিল ইংরেজরা কেন? মুসলমানরা কিছুদিন পূর্বেও দেশ আসন করেছে, তাই তারা ইংরেজকে গ্রহণ করতে পারে নাই। সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত। ওহাবি আন্দোলন কি করে শুরু করেছিল হাজার হাজার বাংগালী মুজাহিদরা? বাংলাদেশ থেকে সমস্ত ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে সীমান্ত প্রদেশে যেয়ে জেহাদে শরিক হয়েছিল। তিতিমীরের জেহাদ, হাজী শরিয়তুল্লাহর ফারায়েজি আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করেই আমি পাকিস্তান আন্দোলনের ইতিহাস বলতাম। ভীষণভাবে হিন্দু বেনিয়া ও জমিদারদের আক্রমন করতাম। এর কারণও যথেস্ট ছিল। একসাথে লেখাপড়া করতাম, একসাথে বল খেলতাম, একসাথে বেড়াতাম, বন্ধুত্ব ছিল হিন্দুদের অনেকের সাথে। কিন্তু আমি যখন কোনো হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম, আমাকে অনেক সময়তাদের ঘরের মধ্যে নিতে সাহস করত না আমার সহপাঠিরা।

একদিনের একটা ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছিল, আজও সেটা ভুলি নাই। আমার এক বন্ধু ছিল ননী কুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিল, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাত এবং গোপনে আমার সাথে খেত। ও ওর কাকার বাসায় থাকত। একদিন ওদের বাড়িতে যাই।ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে বসায়। ওর কাকীমাও আমাকে খুব ভালবাসত। আমি চলে আসার কিছু সময় পরে ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম ননী কি হয়েছে? ননী আমাকে বললো , তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পর কাকীমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে  আনার জন্যে এবং সমস্ত ঘর আবার পরিস্কার করেছে পানি দিয়ে ও আমাকেও ঘর ধুতে বাধ্য করেছে। আমি যাবনা, তুই আসিস। এই ধরনের ব্যবহারের জন্য জাত ক্রোধ সৃষ্টি বাঙালি মুসলমান যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে। শহরে এসেই এই ব্যবহার দেখেছি। হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারেও বাংলার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাই মুসলমানরা ইংরেজদের সাথে অসহযোগ করেছিল। তাদের ভাষা শিখবেনা , তাদের চাকরি নেবেনা, এই সকল করেই মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছিল।আর হিন্দুরা ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজকে তোষামোদ করে অনেকটা উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছিল।পরে হিন্দুরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল।

জাতীয় শোক দিবস প্রসংগে কথা বলতে গিয়ে বংগবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে বেশ কিছু কথা উল্লেখ করলাম। এর মাধ্যমে তাঁর ভক্ত ও পাঠক সমাজ বুঝতে পারবেন কি প্রেক্ষিত ও পটভূমিতে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। ৩৮ সাল থেকে শুরু করে ৪৭ সাল নাগাদ তিনি পাকিস্তান ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করেছেন। ৪৭ এর পরেও তিনি মুলীম লীগের বিরোধিতা করতে চাননি। মুসলীম লীগ নেতারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলীম লীগ নেতা ও কর্মীদের ৮০ ভাগই ছিলেন মধ্যবিত্ত সমাজের। দেশের সাধারন মানুষের সাথে তাঁদের সুসম্পর্ক ছিল। মুসলীম লীগের কোটারী ভাংতে না পেরেই তাঁরা আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম দিয়েছিলেন। ৪৯ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেখ সাহেব তিন বার জেলে গেলেন। তাঁর আত্মজীবনীতে তাই তিনি দু:খ করে লিখেছেন, যে পাকিস্তানের জন্যে জান বাজি রেখে লড়াই করেছেন সেই পাকিস্তানেই তাঁকে বার জেলে যেতে হচ্ছে।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান সাহেবতো বলেই বসলেন যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের মাথা গুড়িয়ে দিবেন। আবার বললেন, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুত্তা।

জাতীয় শোক দিবসে দেখছি, বংগবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে সরকারও জাতীয় শোক দিবস পালন করছে।আোয়ামী লীগ তাঁকে জাতীয় নেতার মর্যাদা থেকে নামিয়ে একটা দডীয় নেতায় পরিণত করেছে। এমন ভাগ্য তাঁর হওয়ার কথা ছিলনা। তিনিতো সারা জীবন সাধারন মানুষের জন্যে রাজনীতি করেছেন। পাকিস্তান আমলের দীর্ঘ ২৩ বছরই তিনি নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। বাংদেশ হওয়ার পর তিনি আর বেশীদিন বাঁচেননি।তাঁর মৃত্যুও ছিল বড়ই মর্মান্তিক। তাঁর লাশ নিজ বাসভবনের সিঁড়িতেই পড়েছিল। সাদামাটা সাধারন ভাবে তাঁর দাফন হয়েছে। তাঁরই সহকর্মী ও বন্ধু খোন্দকার মোশতাক তখন ক্ষমতায়। কিন্তূ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন এমনই ছিল যে, তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দাফন করা হয়নি। এ সময় তাঁর কর্মী ও ভক্তদের একাংশ  ক্ষমতায় ছিল। বেশীর ভাগ নেতা কর্মীরা পালিয়ে গেছে। বন্ধুরা সবাই তখন তাঁর নিন্দা করতে লেগে গেল। এমন কি বিদেশে অবস্থানরত তাঁর কন্যারাও ভয়ে দেশে ফিরেননি। আশ্রয় নিলেন ভারতে, যা ভারত চেয়েছিল। এত বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বা বাকশাল মনে হলো হাওয়ায় উড়ে গেছে। ভক্তদের কেউ একটি মিছিলও বের করেনি। আওয়ামী লীগের মতো একটি পার্টির কাছ থেকে যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কেন যে আওয়ামী লীগ ও শেখ সাহেবের ভক্তরা সামান্যতম প্রতিবাদ করতে পারেনি তা আজও স্পস্ট নয়।জীবিত কালে সবাই তাঁকে গায়ে পড়ে বাপ বাপ করে জিহবা ক্ষয় করে ফেলেছিল। এমন কি বংগবন্ধুর কন্যারাও কেউ দেশে ফিরে আসেননি। হয়ত অনেকেই বলবেন, আসলে হয়ত তাঁদেরও মেরে ফেলতো। তেমন কিছু ঘটলে বংগবন্ধুর কন্যা কিভাবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হতেন। এ যুক্তিও একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়। একজন নামজাদা নেতা মোশতাক সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে দেশের বাইরে গিয়ে বলেছেন, দেশ ফোরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ধরনের আরও বহু ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বংগবন্ধুর কয়েকজন ভক্ত অবশ্য জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। দুয়েক জন প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ভারত সরকার ওইসব ভক্তদের তেমন জোরালো কোন সমর্থন দেয়নি। দিল্লী থেকে বলা হলো, ভারত সরকার ঢাকার সাথে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।

বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে দেখা যাবে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন মুসলমানদের মুক্তির জন্যে। তিনি বিশ্বাস করতেন পাকিস্তান না হলে মুসলমানদের মুক্তি আসবেনা। মূলত: কোলকাতাতেই তাঁর রাজনীতির হাতেখডি। সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে খুব বেশী মানতেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই চলতেন। ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর সিনিয়র ও নেতা ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী, শাহ আজিজ, নুরুদ্দিন, মাহমুদ নুরুল হুদা, ওয়াসেক ও আনোয়ার সাহেব। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পরে আবুল হাসেম সাহেবকে নেতা মানতেন। হাসেম সাহেব তখন বেংগল মুসলীম লীগের সাধারন সম্পাদক। কোলকাতা ছেড়ে ঢাকায় এসেও শেখ সাহেব ১৫০ মুগলটুলীতে মুসলীম লীগের অফিসে উঠেছিলেন। সেখানেই থাকতেন। ঢাকায় এসে তিনি নেতা হিসাবে পেলেন মাওলানা ভাসানীকে। ভাসানী সাহেব ছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি।কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে এসে দলীয় কোটারী ও ষড়যন্ত্রের কারণে দলের ভিতর কোথাও তাঁর স্থান হলোনা ।তিনি ছিলে মহা সংগঠক ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে তাঁর সাথে কাজ করতে এগিয়ে এলেন শেখ সাহেব। মাওলানা সাহেব নিজেও বলেছিলেন, শেখ মুজিব ছিলেন দলের সেক্রেটারী হিসাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ। এভাবেই একদিন ১৯৪৯ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে গঠিত হলো আওয়ামী মুসলীম লীগ। মাওলানা সাহেব সভাপতি, সামশুল হক সাহেব সাধারন সম্পাদক আর শেখ সাহেব ও খোন্দকার মোশতাক যুগ্ম সচিব। মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে নতুন দল সংগঠিত হতে লাগলো। ৫৪ সালের নির্বা্চনের আগে শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে নিয়ে গঠিত হলো যুক্তফ্রন্ট। সময়ের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় শেখ সাহেব কখনই ইসলাম বা মুসলমানিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে ১০ই জানুয়ারী তিনি বলেছিলেন, আমি বাংগালী , আমি মুসলমান। তিনিই পাকিস্তান আমলের ইসলামিক একাডেমীকে উচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমতা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন করেছিলেন। শেখ সাহেবের এক সময়ের রাজনীতির গুরু আবুল হাশিম সাহেবকে করেছিলেন পারিচালক।৭০ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ওয়াদা ছিল কোরাণ ও বিরোধী কোন আইন করা হবেনা। ভারতের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি ৭৪ সালে পাকিস্তান গিয়েছিলেন ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে। তখনও তিনি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশের নেতা। সোজা কথায় বলতে গেলে বলতে হবে তিনি কখনই নিজেকে বাংগালী ভাবেননি। পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ও তিনি জানতেন বাংগালী মুসলমানেরা ভারতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত। স্বাধীনতা বা মুক্তি তাদের জন্যে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। হিন্দু রাজা মহারাজা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বেঈমানির কারণেই ইংরেজরা বাংলা দখল করতে পেরেছিল। মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের দৃস্টিভংগী কেমন ছিল তা বংগবন্ধুর জীবনী পড়লেই বুঝা যায়।

এই মানুষটাই বামপন্থী নেতাদের খপ্পরে পড়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে ভিন্নমত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সরকারী কাগজ ছাড়া সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ তিনি সারাজীবন গণতন্ত্র ও নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্যে লড়াই করেছেন। তিনি হঠাত্‍ করেই সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। যদিও তিনি সারাজীবন সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের বিরোধিতা করেছেন। অথচ তিনি বুঝতে পারেননি আওয়ামী লীগের দ্বারা সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব নয়। তখন তাঁর মাথায় চেপে বসেছিল রাশিয়া আর ভারত। তাঁর আমলেই জাসদের হাজার হাজার কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর আমলেই রাজনৈতিক সশস্ত্র রক্ষী বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। তিনি নিজেই বলেছিলেন, লোকে পায় সোনার খনি, তিনি পেয়েছেন চোরের খনি। তিনি নিজেই বলেছেন, তাঁর ভাগের রিলিফের কম্বলটিও চুরি হয়ে গেছে। তাঁর তথাকথিত সমাজবাদী নীতির কারণে ৭৪ সালে দূর্ভিক্ষে কয়েক লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায়।ভারত ইচ্ছা করলে সে সময় জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশকে কিছু ছাল দিতে পারতো। কিন্তু না, ভারত তা করেনি। কারণ  বংগবন্ধুর সাথে ভারতের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিলনা।এমন কি রাশিয়াও বাংলাদেশকে চাল বা গম দিয়ে সাহায্য করেনি।

আজ আওয়ামী লীগ আবারও তথকথিত বামপন্থীদের খপ্পরে পড়ে ইসলামের বিরোধিতা করে ষোলয়ানা বাংগালী হওয়ার অবিরাম চেস্ট চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জানে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান ও ধর্মভীরু। আর এই দেশেই সন্ত্রাস দমনের নামে পশ্চিমাদের নীতি অবলম্বন করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।চলমান কেবিনেটে বা মন্ত্রীসভায় বামপন্থি বহুনেতা স্থান পেয়েছে। যারা জীবনে কোনদিন ৫০০ ভোট পায়নি তাঁরাই এখন বর বড় কথা বলতে শুরু করেছে।শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান আওয়ামী লীগ বংগবন্ধুর আদর্শ থেকে বহুদূরে সরে গিয়েছে।আওয়ামী লীগের চলমান রাজনীতির কারণেই আজ জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে খন্ডিত ভাবে। আওয়ামী ঘরাণার লোক ছাড়া কেউ দিবস পালন করছেনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এই দিবসটি সরকারী ভাবে পালিত হয়। এমন অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। কারণ বংগবন্ধু একজন জাতীয় নেতা। আওয়ামী লীগ বা সরকার যদি এ দেশের সকল জাতীয়নেতার জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করতো তাহলে আজ এমন অবস্থা দেখা দিতোনা।

জিয়া সাহেবের মৃত্যুর পর ঢাকায় তাঁর জানাজায় ২০ লাখ লোক অংশ গ্রহণ করেছে। কারণ তিনি বাংগালী মুসলমানদের নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানই ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা দেশে বিদেশে কোটি কোটি লোক শুনেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ইতিহাসের এই অধ্যায়টিকে মুছে দেবার আপ্রাণ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কি আওয়ামী নেতারা জোর গলায় বলে বেড়াচ্ছেন, জিয়া সাহেব ছিলেন পাকিস্তানের চর। জাতীয় ইস্যু গুলোতে আওয়ামী লীগের খন্ডিত নীতির কারণেই বংগবন্ধুর মতো একজন মহান নেতা খন্ডিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। আমি মনে করি, বিষয়টি খুবই বেদনার।

Read Full Post »