Feeds:
Posts
Comments

Archive for November, 2012


মাওলানা ভাসানী ও আজকের বাংলাদেশ / এরশাদ মজুমদার

উনিশ’শ তেশটটি সালের দিকে আমি সংবাদে কাজ করি। অবজারভার ছেড়ে সংবাদে এসেছি রাজনৈতিক কারণে।তখন আমি যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তার সাথে সংবাদের সাথে মিল ছিল। আমি মাওলানা সাহেবের অনুসারী ও ভক্ত ছিলাম। কথা উঠেছিল আমি মাওলানা সাহেবের ব্যক্তিগত সচিব হবো। আমার বাবা তখন ক্যানসারের রুগী। একথা শুনে মাওলানা সাহেব রাজী হলেন না। শেষ পর্যন্ত আমি সংবাদ ছেড়ে ফেণী চলে গেলাম কৃষক রাজনীতি করার জন্যে চৌষট্টি সালের শেষের দিকে। মাওলানা সাহেবের পরামর্শেই আমি সাপ্তাহিক ফসল সম্পাদনার কাজ শুরু করি।

একটা সময় আমার মনে হয়েছিল রাজনীতি আমার জন্যে নয়। রাজনীতি নাকি কৌশলের বিষয়। অন্তরে যা আছে মুখে বলা যাবেনা। যা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। উনসত্তুর সালে ঢাকায় ফিরে আসার আগে আমি পশ্চিম পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলাম।

 

উনিশ’শো উনসত্তুর সালে সরকারী আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম পাকিস্তান সফরে। আমার সাথে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের আরও কয়েকজন সাংবাদিক। সম্ভবত মুলতানের একজন সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মাওলানা ভাসানী আর শেখ মুজিবের মধ্যে ফারাক কি? তখন আমার বয়স উনত্রিশ। পুরো ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম মাওলানা সাহেবের একজন ভক্ত। মাওলানা সাহেবের কাছেই আমি প্রথম হজরত আবু জর গিফারী (রা) নাম শুনতে পাই। মাওলানা সাহেব হজরত গিফারীর একজন অনুসারী ছিলেন। কথা উঠলেই মাওলানা সাহেব হজরত গিফারীর ( রা ) নাম বলতেন। রাজধানীতে আবু জর গিফারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাওলানা সাহেবের পরামর্শ ও সমর্থনে। প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান আজরফ সাহেব ওই কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়েছিলেন। মাওলানা সাহেব ইসলামের বিপ্লবী চেতনার অনুসারী ছিলেন।
মুলতানের ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম, মাওলানা সাহেবের সংসদ বা পার্লামেন্ট হচ্ছে ধানক্ষেত আর কল কারখানা। এই সংসদের সদস্যরা হচ্ছেন কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতা। আর শেখ সাহেবের লক্ষ্য হচ্ছে বুর্জোয়া তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতা হওয়া। যে গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করবে পাকিস্তানের ধনী বাইশ পরিবার। সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল,তাহলে মাওলানা সাহেব কমিউনিস্ট পার্টি করেন না কেন? আমার উত্তর ছিল মাওলানা সাহেব ইসলামী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তিনি খোদা, খোদার কালাম আল কোরাণ ও বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত আল্লাহপাকের রাসুল হজরত মোহাম্মদকে সা: বিশ্বাস করেন। ১৯৬৪ সালে গণচীন থেকে ফিরে এসে মাওলানা সাহেব ইসলামী সমাজতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁর দল ন্যাপের কমিউনিস্ট সদস্যরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। গণচীন থেকে মাওলানা সাহেব সরাসরি চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে নেমেছিলেন। তখন আমি তাঁর একটি বড় সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। যা সংবাদে ছাপা হয়েছিল। আমি ৬২ থেকে ৬৪ সালের শেষ নাগাদ সংবাদে চাকুরী করেছি। ওই সময়েই বাম রাজনীতির ধারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সংবাদ বা রাশিয়া মাওলানা সাহেবের চীন সফরকে ভাল চোখে দেখেনি। ফলে বাম রাজনৈতিক দল গুলো চীনপন্থী ও রুশপন্থী হিসাবে পরিচিত হতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধকে ভারত রাশিয়া সমর্থন করেছে। ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বংগবন্ধুর সরকারের উপর ভারত রাশিয়ার প্রভাব সীমাহীন ভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশে রুশপন্থী দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক কবিদের দাপট বা প্রভাব বংগবন্ধুকে সরকার পরিচালনায় বিব্রত করে তোলে। এক পর্যায়ে বংবন্ধু বলতে বাধ্য হয়েছিলেন বি টীম হিসাবে না থাকে সাইন বোর্ড তুলে চলে আসুন। এক সময় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমরা বংগবন্ধু টাইটেল প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরী, মেনন, ইনু নাহিদ সবাই তখন বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন। এখন তাঁরা সবাই বংগবন্ধুর কন্যা হাসিনার পতাকার ছায়ায় একত্রিত হয়েছেন।
ভারতের অনুরোধ উপেক্ষা করে বংগবন্ধু চুয়াত্তর সালে পাকিস্তানের লাহোর গিয়েছিলেন ওআইসির সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্যে। বংগবন্ধু নিজেই বলতেন, ‘আমি বাংগালী, আমি মুসলমান।’ বাংগালী হওয়ার জন্যে তিনি কখনই ইসলাম ত্যাগে রাজি হননি। দশই জানুয়ারী দেশে ফিরে এসে বংগবন্ধু দেখলেন, সরকারের কোন স্বাধীনতা নেই, সব ব্যাপারেই ভারত নাক গলায়। লাহোর যাওয়ার আগে বংগবন্ধুকে খুবই বিচলিত দেখেছি। বংগবন্ধুকে লাহোর নেয়ার জন্যে আলজিরিয়ার বিশেষ বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছে। ওআইসির দুই জন নেতা ইয়াসির আরাফাত ও বেন বেল্লা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বংগবন্ধুকে সাথে নিয়ে যাবার জন্যে। বংগবন্ধুর আমলেই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করেছে। কিন্তু তাঁর কন্যা হলে হয়ত যেতেন না। যেমন শেখ হাসিনা মুসলীম দেশ গুলোর জোট ডি৮ সম্মেলনে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি কাদের খুশী করার জন্যে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা দেশের মানুষ ভাল করেই জানে। ৬২ সালে মাওলানা সাহেব চীন গিয়েছিলেন সরকারের অনুরোধে। জেনারেল আইউব মাওলানা সাহেবের কাছে ওয়াদা করেছিলেন চীনের সাথে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। ওই সময়েই পূর্ব পাকিস্তানের সকল বামপন্থি নেতা মুক্তি লাভ করেন। যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে বা পলাতক ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে জারি করা হুলিয়া তুলে নেয়া হলো। ৫৮ সাল থেকে ৬২ সাল নাগাদ মাওলানা সাহেব ধানমন্ডীর একটি বাড়িতে নজরবন্দী ছিলেন। মাওলানা সাহেবের উদ্যোগেই চীনের সাথে পাকিস্তানের সু সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বাংলাদেশ হওয়ার পরেও অব্যাহত থাকে। বংগবন্ধুর আমলে সম্পর্কটা একটু শীতল ছিল ভারত ও রাশিয়ার চাপের কারণে। জিয়া সাহেবের আমল থেকে এ সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে। ৭১ সালে গণচীন পাকিস্তানের অখন্ডতাকে সমর্থন করেছিল এবং বিবৃতি দিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে। ৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর চীন ও সউদী আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনের বক্তব্য ছিল যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশী সৈন্য থাকবে ততদিন বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ নয়।
৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের উপর ভারতের প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্যে বংগবন্ধু মাওলানা সাহেবের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মাওলানা সাহেব ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানলেন। তাঁর সাপ্তাহিক পত্রিকা হক কথার মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেন। মাওলানা সাহেব ছিলেন শেখ সাহেবের পিতৃতূল্য ব্যক্তিত্ব। ৭৪ সালে শেখ সাহেব যখন সন্তোষ যখন তখন প্রখ্যাত চিত্র সাংবাদিক রশীদ তালুকদার একটি এতিহাসিক ছবি তুলেছিলেন,যা ছিল পিতাপুত্রের সম্পর্কের ছবি। ছবিটি ছিল একটি আবেগঘন মূহুর্তের। শেখ সাহেব মাওলানা সাহেবের বুকের ভিতর মাথা লুকিয়ে রেখেছিলেন। মাওলানা সাহেব মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। ঠিক ওই সময়ে খবর আসে শেখ সাহেবের পিতা অসুস্থ। মাওলানা সাহেব বললেন, তুমি এখনই হেলিকপ্টারে করে তোমার বাবাকে দেখতে যাও। অন্য সব প্রোগ্রাম বাতিল করো। শেখ সাহেব তখনি গোপালগঞ্জ রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন। কোলকাতায় শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সাগরেদ থাকলেও পাকিস্তান সৃষ্টির পর মাওলানা সাহেবের নেতৃত্বেই রাজনীতি শুরু করেন। ৪৯ সালে মাওলানা সাহেবের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে শেখ সাহেব নতুন দলের যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। আসলে শেখ সাহেবই ছিলেন প্রধান সংগঠক। ৫৪ সালের নির্বাচনের জন্যে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে আওয়ামী মুসলীম লীগ ছিল প্রধান দল। তার সাথে শেরে বাংলার কৃষক প্রজা পার্টি সহ আরও বহু ইসলামিক ছোটখাট দল ছিল। শেখ সাহেব সাধারন মানুষের জন্যে রাজনীতি করতেন এটা ঠিক। কিন্তু টার্গেট ছিল ক্ষমতায় যাওয়া এবং তার মাধ্যমেই জনগণের খেদমত করা। মাওলানা সাহেব ছিলেন তার উল্টো। তাঁর কাছে লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল শুধুই জনগণের খেদমত করা এবং জনগণকে অধিকার সচেতন করে তোলা। আসামে থাকতেও তিনি আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। স্যার সাদুল্লাহ ছিলেন তাঁরই দলের প্রধানমন্ত্রী। আগেই বলেছি মাওলানা ছিলেন হজরত আবু জর গিফারীর(রা) একজন অনুসারী। নিজ জীবনে গিফারী সাহেবের আদর্শ বাস্তবায়নের চেস্টা করেছেন সারা জীবন। তিনি বিশ্বাস করতেন সত্যিকারের ইসলাম বাস্তবায়িত হলে সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের কোন প্রয়োজন নেই। এখন পৃথিবীতে কোথাও সত্যিকারের ইসলাম নেই। ইসলাম এখন আচার সর্বস্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশেও ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও এখানে ইসলাম কায়েম করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে সরকার এবং এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ইচ্ছা হলো নামাজ রোজা করো। অর্থ থাকলে হজ্ব পালন করো আর জাকাত দাও। রাস্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে কোন কথা বলোনা। খুব বেশী যদি চাও তাহলে সুফী দরবেশ হয়ে যাও। রাজনীতি আর সরকার নিয়ে মাথা ঘামিওনা। এটা রাজনীতিবিদদের কাজ। যাদের কোন ধর্ম থাকবেনা বা আদর্শ থাকবেনা। মাওলানা ভাসানী ও শেখ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ এখন ধর্মকে মসজিদ মাদ্রাসা আর বাড়ির ড্রয়িং রুম ও বৈঠক খানায় আটকিয়ে রাখতে চায়। দুদি তৃতীয়াংশেরও বেশী সিট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা এখন বামপন্থীদের চাপের পড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরে তিনি ইসলামী দল গ্রুপ গুলোকে সন্ত্রাসী হিসাবে গালাগালি করে চলেছেন। ইসলামকে পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারত সন্ত্রাসী ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করে ইসলাম ও মুসলমানদের দমনের কাজে নেমেছে। শেখ হাসিনার সরকার পশ্চিমাদের এ নীতি সমর্থন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যদিও শেখ হাসিনা কথায় কথায় বলেন,তিনি নিয়মিত ছয় ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন। ভোটের আগে হিজাব পরে ভোটারদের কাছে যান। তিনিই শ্লোগান তুলেছেন,ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এর মানে হচ্ছে, এদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি বলে রাস্ট্রের কাছে বিশেষ কোন মর্যাদা পাবেনা। বাংলাদেশকে ভারত কিভাবে এবং কোন চোখে তা জানতে হলে ‘ইন্ডিয়া ডক্ট্রিন’ বইটি পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্দ চলাকালে মুজিব নগর সরকার ইন্দিরা গান্ধীর চাপে পড়ে যে সাত দফা গোপন চুক্তি করেছিল তাও পাঠকদের জানা দরকার। ভারত দীর্ঘদিন থেকে ওই সাত দফা বাস্তবায়নের চেষ্ট করে যাচ্ছে। সময় যতই লাগুক ভারতের লক্ষ্য সে সাত দফা বাস্তবায়ন করা। এজন্যে ভারত সিকিমের লেনদুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনাকে একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু মনে করে। শেখ হাসিনা জানেন তাঁর পিতাকে কারা হত্যা করেছে। তাই তিনি সব সময় ভয়ে থাকেন। একই শক্তি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। নিজেকে ভারতের মহা বিশ্বস্ত বন্ধু প্রমান করার জন্যে বিগত ৬/৭ মাসে কয়েকশ’ মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়েছেন।
মাওলানা সাহেবকে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, গবেষক কেউই মাওলানা সাহেবকে মুল্যায়ন করতে পারেননি। দেশের ইসলামপন্থীরা তাঁকে কমিউনিস্ট মনে করতেন। তাই তাঁকে তাঁরা ইসলামের বাইরে মনে করতেন। বিদেশীরা বলতেন,‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ বা ‘মাও অব ইস্ট ইনডিজগাইজ অব এ প্রিস্ট’। অন্যদিকে তিনি হক্কুল এবাদ নামে সংগঠণও করেছেন। তিনি বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে বিশ্ববাসীকে বলে এসেছেন, আমার ধর্ম শান্তির ধর্ম, আমার রাজনীতি শান্তি, আমি শান্তির মাঝেই বাস করি এবং শান্তিই আমার অভিবাদন। তিনি মাও সে তুংকে বলেছিলেন,আপনাদের সমাজতন্ত্রে খোদাকে জায়গা করে দিন আমি আপনাদের সাথে আছি।
ষাটের দশকে মাওলানা সাহেব সারা ইসলামিক নেতাদের আহবান করেছিলেন,কমিউনিস্ট বিরোধী অন্দোলনে সাম্রজ্যবাদী শক্তির নেতা আমেরিকাকে সমর্থন না করার জন্যে। তিনি বলেছিলেন আমেরিকা কখনই ইসলামের বন্ধু হতে পারেনা। আমেরিকা এবং পশ্চিমা নেতারা ইহুদীদের বন্ধু। এমন কি ভারতও ইহুদীদের পরম বন্ধু। সে সময় ইসলামিক নেতারা মাওলানা সাহেবকে কমিউনিস্ট বলে গালাগাল করেছেন। মাওলানা সাহেবকে আমি অতি ঘনিস্ট ভাবে চিনি। এক সময় আমি তাঁর একান্ত সচিব হতে চেয়েছিলাম। তিনি বললেন,শুনেছি তোমার বাবা অসুস্থ। তুমি বাপের বড় ছেলে। এ সময়ে তুমি তোমার মা বাবার খেদমত করো। তখন আমি মহানবীর(সা) জীবনী তেমন ভাল করে পড়িনি। এখন জানি। এক সাহাবী জেহাদে যাওয়ার জন্যে নবীজীর কাছে আবেদন জানালে তিনি প্রশ্ন করলেন,ঘরে তোমার আর কে কে আছেন। উত্তরে সাহাবী বলেছিলেন বৃদ্ধ মা বাবা।নবীজী(সা) বললেন যাও,ঘরে গিয়া মা বাবার খেদমত করো। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের মাওলানা সাহেব সম্পর্কে তেমন জ্ঞান ছিলনা বা এখনও নেই। এমন কি আমাদের আলেম সমাজ ও পশ্চিমা জগতের ও তেমন সঠিক ধারনা বা তথ্য জানা ছিলনা তাঁর সম্পর্কে। ফলে সকলেই তাঁকে বামপন্থী বা কমিউনিষ্ট বলে আখ্যায়িত করতো। মাওলানা সাহেব আসলেই মনে প্রাণে একজন রেডিকেল ইসলামিস্ট ছিলেন। কার্ল মার্কস এবং এম এন রায় ইসলামকে রেডিকেল ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের চর্চা বা অনুশীলনে যে ইসলাম বিরাজ করছে তা আসলে শোষণমুখি ইসলাম। যাঁরা মনে করেন তাঁরা ইসলামের জন্যে কাজ করছেন তাঁরাও চলমান বিশ্বের মুসলমান আর ইসলামের ভিতর ফারাক করতে পারেন না। লাখ লাখ মসজিদ আছে, প্রতিদিন লাখ লাখ মুসলমান সেজদা দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ক’জন ইসলামিস্ট আছেন। বর্তমান বিশ্বে একটি ইসলামী রাস্ট্রও নেই। কোন ইসলামী সমাজ নেই। মাওলানা ভাসানী একটি শোষন মুক্ত ইসলামী সমাজ চেয়েছিলেন। তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। মুসলমানদের দেশ গুলো এখন ডিক্টেটর বা বাদশাহরা শাসন করছেন। যা একেবারেই রাসুলের(সা) ইসলাম নয়।
নিরহংকার নির্লোভ এই মানুষটি সারাটা জীবন সাধারন মানুষের সাথে ছিলেন। মজলুম জননেতা বললে সবার চোখে মাওলানা সাহেবের চেহারা ভেসে উঠে। যখন তাঁর দল আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় তখনও তিনি কাগমারীতে কুড়ে ঘরে থাকতেন। খুবই নামী দামী বা সরকারী উচ্চ পর্যায়ের মেহমান গেলে বসাবার জন্যে মাত্র একখানা চেয়ার ছিল। ঢাকায় আসলে ভক্তদের বাসায় থাকতেন। এক সময় ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের বাসায় বা চা বাগানের মালিক সাইদুল হাসান সাহেবের বাসায়ও থাকতেন। ৭১ সালে পাক বাহিনী হাসান সাহেবকে হত্যা করে। ঢাকায় মাওলানা সাহেবের কোন বাড়ি ছিলনা। বড় বড় কোম্পানী ও ভক্তরা চেস্টা করেও ঢাকায় বাড়ি করার ব্যাপারে মাওলানা সাহেবকে রাজী করাতে পারেননি। পাঠক সমাজ হয়ত ভুলে গেছেন জনপ্রিয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতাও হচ্ছেন মাওলানা ভাসানী। তাঁর ভক্তরাই চাঁদা দিয়ে কাগজটি বের করেছেন। এখন কিন্তু এই কাগজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সাহেব। মাওলানা সাহেব কখনও ক্ষমতায় ছিলেন না। তবুও তিনি এ দেশের বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। সন্তোষের বিশ্ব বিদ্যালয় তাঁর একটি বড় প্রমান। এমন কি আসামের একটি জায়গার নাম হচ্ছে ভাসানীর চর। ওই এলাকাটা মাওলানা সাহেবই আবাদ করেছিলেন। সন্তোষের তত্‍কালীন জমিদার ইংরেজদের সহযোগিতায় মাওলানা সাহেবকে বৃটিশ শাসিত পূর্ববাংলা থেকে বহিস্কার করেছিলেন। এর পরেই মাওলানা সাহেব আসাম চলে যান। সেখানেই রাজনীতি শুরু করেন। এক সময় আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। খোদ জিন্নাহ সাহেব মাওলানা সাহেবের সাংগঠনিক ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এই প্রথম শ্রেণীর মুসলীম লীগ নেতা পূর্ব পাকিস্তানে এসে দলে কোন স্থান পেলেন না। বরং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান মাওলানা সাহেবকে ‘হিন্দুস্তান কি লেলায়া হুয়া কুত্তা’ বলে গালাগাল দিয়েছেন। এক সময় লিয়াকত আলী সাহেব ‘শের কুচাল দেংগা’ বলেও ধমক দিয়েছেন। মাওলানা সাহেবের ইউরোপ সফর নিয়ে সময় সুযোগ মতো অন্য কোন সময় লিখার আশা রাখি। সে এক বড় ইতিহাস। এর আগে অনেকবার লিখেছি মুসলীম লীগের নেতাদের গণবিরোধী ভুমিকার কারণেই মাওলানা সাহেব নতুন দল আওয়ামী মুসলীম গঠণে বাধ্য হন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করলো তখন তিনি আর দলে থাকতে পারলেন না। সরকারের বিদেশ নীতির প্রশ্নে দ্বিমত হওয়ার কারণে তিনি দল ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। সে সময়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেব থিওরী দিলেন ‘জিরো প্লাস জিরো’। মানে পাকিস্তান একা জিরো। তাই আমেরিকার সাথে থাকতে হবে। মাওলানা সাহেব সব সময়েই আমেরিকার সাথে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে ছিলেন। সেই সময়েই পাকিস্তান সেন্টো সিয়াটোর সামরিক জোটে যোগদান করে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে মাওলানা সাহেব ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠণ করেছিলেন।
ভারত এবং রাশিয়ার পরামর্শে শেখ সাহেব যখন এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর জন্যে বাকশাল গঠণ করেছিলেন মাওলানা তাকে সমর্থন করেননি। তখন আমাদের সাংবাদিক নেতা ও বন্ধুরা দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। আগস্ট মাসের শুরুতে আমি সন্তোষে মাওলানা সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম জানতে কি করবো। তিনি আমাকে বলেছিলেন, কয়েকদিন অপেক্ষা করো। দেখো কি হয়। তখন বুঝতে পারিনি মাওলানা সাহেব কি ইংগিত করেছিলেন। বাকশাল গঠণের পর শেখ সাহেব নাকি মনসুর আলী সাহেবকে পাঠিয়েছিলেন মাওলানা সাহেবের কাছে দোয়ার জন্যে। শুনেছি, মাওলানা সাহেব নাকি বলেছিলেন, দেখো মনসুর দোয়াতো করবোই,মুজিবর আমার প্রাণের মানুষ। মনসুর,তুমি কি হাড়গিলা পাখি চেনো? হুজুর পাখির নাম শুনেছি। তোমাদের জন্যে হাড়গিলা পাখি হলো মণী সিং। শকুন খাইয়া যা থাকে সেই হাড়গোড় খায় হাড়গিলা পাখি। মুজিবরকে হাড়গিলা পাখি ধরেছে। আর ছাড়বেনা। শুনেছি ১৪ই আগস্ট রাতে নাকি মাওলানা সাহেব ঘুমাতে পারেননি। পুত্রবত্‍ শেখ সাহেবের চিন্তায় তিনি অস্থির ছিলেন। ভারত রাশিয়া এবং আমেরিকা নাকি ১৪ই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলো। কিন্তু কেউ শেখ সাহেবকে তা জানায়নি। তিনি তখন একেবারেই বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিলেন। এমন কি পরবর্তী পর্যায়ে বংগবন্ধুর হত্যা রহস্য তদন্তের জন্যে আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকার কোন কমিশন গঠণ করেনি। এমন কি শেখ হাসিনাও সাথে সাথে দেশে ফিরে আসেননি। তিনি তখন দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। দিল্লী সরকার তাঁকে দেশে ফিরতে নিরুত্‍সাহিত করতো। জিয়া সাহেব অনেক দেন দরবার করে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসার জন্যে উত্‍সাহিত করেছেন।
বাংলাদেশ এখন খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে নিপতিত। ভারত চায় এদেশে কখনই যেন জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পরে। তাই ভারত এবার মরণ কামড় দিয়ে বাংলাদেশকে ধরেছে। যে কোন ভাবেই হোক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০২১ সাল নাগাদ শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে ভারতের লক্ষ্য অর্জিত হবে। ভারতের ৭১ সালের গোপন চুক্তিও বাস্তবায়িত হবে। ক’দিন এ ব্যাপারে রাহুল গান্ধী একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


আমরা খবরের কাগজ এবং টিভিতে দেখলাম জামাতের মিছিলের ভিতর থেকে এক লোক পুলিশের কাছে থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। বলা হচ্ছে লোকটা জামাতের। কারণ সে জামাতের মিছিলের ভিতরএই ছিল। এটা একটি সাদামাটা খবর। এখন লোকটা কোথায়? সে কী ধরা পড়েছে? না খালাস হয়ে গেছে। পুলিশের গায়ে হাত তোলা মানে রাস্ট্র ও সরকারের গায়ে হাত তোলা। ওই লোকটা একটা রাস্ট্রদ্রোহী। তার বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। কে এই পাষন্ড যে রাস্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীর গায়ে হাত তোলে। দেশবাসী লোকটাকে দেখতে চায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও দাবী করি ওই পাষন্ডের দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। পুলিশের আহত সেই ভদ্রলোকই বা কোথায় গেলেন? তিনি কি হাসপাতালে আছেন? কই তাঁকে দেখতেতো কেউ গেলেন না। আমরাতো সব সময়ই দেখি সরকারী দল বা পুলিশের কেউ আহত হলে মন্ত্রী শান্ত্রীরা হাসপাতালে তাঁকে বা তাঁদের দেখতে যান। হতে পারে হয়ত সবই হয়েছে আমি জানতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি।
পুলিশ নিয়মিত অষুধের ডোজের মতো রাস্তায় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এটা আমরা নিয়মিত টিভি ও পত্রিকার সংবাদে দেখতে পাই। যেন একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। পুলিশ শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের পিটায়না, রিকশাওয়ালা, পথযাত্রী সহ আরো অনেককেই পিটায়। মাঝে বিচারপতিদেরও হেনস্থা করে। সাংবাদিকদের পিটানোটাতো পুলিশের নিয়মিত ডিউটিতে পরিণত হয়েছে। এক সময় চৌকিদার ছিল সরকার বা রাস্ট্রের প্রতীক। চৌকিদারের গায়ে হাত দিলেই রাস্ট্রদ্রোহিতা। সংগে সংগেই চৌকিদারের রশি কোমরে লেগে যাবে। সে সময়ে বৃটিশ রাজের প্রতীক চৌকিদারকে দেখলেই সাধারন মানুষ ভয় পেতো। গ্রামে গেলে এখনও অনেক চৌকিদার দফাদার বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। নামী দামী দারোগা বাড়িও আছে। এখন দেশের মানুষ নিত্যদিন পুলিশ দারোগা, সরকারী গোয়েন্দা, রেবের ভয়ে অসহায় থাকে। তার উপর রয়েছে আয়কর বিভাগ, পানি বিদ্যুত গ্যাস খাজনা অফিস ও সিটি কর্পোরেশনের জ্বালাতন। এসব সরকারী বা আধা সরকারী অফিসের লোকেরা কিছু বাড়তি টকা না পেলে ন্যায্য কাজটা করে দেয়না।
পুলিশ আর জামাতের মারামারির দৃশ্য এখন প্রতিদিন টিভি ও খবরের কাগজে দেখা যায়। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরাও পুলিশকে পিটাচ্ছে। পুলিশমন্ত্রী মখা আলমগীর বলেছেন, ছাত্রলীগ যুবলীগ ও পুলিশ দল বেঁধে জামাত আর শিবিরকে প্রতিহত করবে। যুবলীগ নেতারা বলছেন,ওটা আমাদের কাজ নয়,পুলিশের কাজ। মখা আলমগীর একজন সাবেক আমলা। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর ডক্টরাল থিচিচ ডেডিকেট করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। এক সময় তিনি ছিলেন জিয়া সাহেবের ভক্ত। মাওলানা সাহেবের ভক্ত ছিলেন এমন বহু আমলা পরে বংগবন্ধু ও এরশাদের ভক্ত হয়ে গেছেন। মখা আলমগীর নাম করেছেন জনতার মঞ্চ করে। কি কারণে তিনি বেগম জিয়ার উপর গোস্বা হয়েছিলেন তা অবশ্য আমরা জানিনা। যা হোক তিনি এখন পুলিশের মন্ত্রী। বৃটিশরাতো পুলিশ তৈরি করেছিল পরাধীন ভারতবাসীকে পিটাবার জন্যে, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলাবার জন্যে। পুলিশের বৃটিশ তৈরি আইন এখনও বলবত আছে। একজন পুলিশ সিপা্ী যে কোন সময় রাস্তায় যে কোন নাগরিককে পিটাতে পারে,হাতে হ্যান্ড কাফ লাগাতে পারে। এতে আিনের কোন বরখেলাফ হবেনা। ববৃটিশদের তৈরি ওই পুলিশ আইন দিয়ে পাকিস্তান চলেছে, এখন বাংলাদেশও চলছে। আমাদের মহা গণতান্ত্রিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ওই আইন বদলাতে চায়না। তাতে নাকি সরকার বা রাস্ট্র চলেনা। রাস্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান যাকে জনগণের হাত রক্ষা করার জন্যে সেনা বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রেব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ লাগে। এই যন্ত্র আজ পুলিশ মন্ত্রীকে সালাম দিচ্ছে,পাহারা দিচ্ছে আবার কাল লাঠি পেটা করছে। আজ যাকে দেশপ্রেমিক বলছে কাল তাকে রাস্ট্রদ্রোহী বলছে। বংগবন্ধু বৃটিশ পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, পাকিস্তানী পুলিশের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি রাস্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে জেলে দিয়েছেন, অত্যাচার করেছেন, হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করেছেন। ক্ষমতায় আসার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র আর ভাল লাগেনি। একদলীয় রাজনীতি চালু করেছিলেন। নিজের অনুগত রক্ষীবাহিনী চালু করেছিলেন। তিনি সবকিছুই করেছিলেন রাস্ট্র বা সরকারকে রক্ষা করার জন্যে। সব সরকারই এ কাজটা করে থাকে। এর মানে হচ্ছে রাস্ট্র বা সরকার জনগণের চেয়ে অনেক বেশী বড় ও দেশপ্রেমিক। সরকারকে রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজনে লাখ লাখ নাগরিককেও হত্যা করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বলে থাকেন আইন আদালত মেনে দেশ স্বাধীন করিনি, প্রয়োজনে আইন আদালত না মেনেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো। প্রসংগটা হচ্ছে পুলিশকে রাস্তায় কিছু লোক পিটাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখতে টিভি দর্শকরা অভ্যস্ত নন। সবাই সময় দেখেন পুলিশ পাবলিককে পিটাচ্ছে। এই পিটানোটাকেই স্বাভাবিক মনে করা হয়। হঠাত্‍ দেখা গেলো পুলিশকে পিটাচ্ছে। এর আগে প্রকাশ্য রাস্তায় টিভি ক্যামেরার সামনে পাবলিক পুলিশকে পিটায়নি। তবে বংগবন্ধুর আমলে কিছুলোক থানা লুট করেছে, পুলিশের অস্ত্র লুট করেছে,পুলিশকেও হ্ত্যা করেছে। সে সময় ব্যান্কও লুট হয়েছে। ৭১ সালেও নানা ধরণের লুট হয়েছে। বংগবন্ধুর আমলে জাসদ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল। থানা আক্রমন করেছে। পুলিশ মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমন করেছে, ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছে। এক সময় জাসদ নিষিদ্ধ হতে চলেছিল। জাসদের হাজার কর্মীকে রক্ষী বাহিনী হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে আর নেতাদের গ্রেফতার করেছে।
৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। জিয়া সাহেব ক্ষমতা গ্রহন করে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এই উপ মহাদেশের কোন দেশেই ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধ নয়। ৭২ এর আগে পাকিস্তান আমলে ধর্ম বিরোধী রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি গুলো নিষিদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নতুন কোন ঘটনা নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশ গুলোতে ইসলামিক রাজনৈতিক দল গুলো যুগের পর যুগ ধরে নিষিদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক গণ বিক্ষোভের ফলে বহুদেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এমন কি অনেক দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। যারা ধর্মীয় দল গুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন তাঁরাও মুসলমান নেতা। কিন্তু ইসলামিক শক্তিকে ভয় পেতেন। এক সময় পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশ গুলোতে কমিউনিস্ট পার্টি গুলো নিষিদ্ধ ছিল। আবার বহু কমিউনিস্ট দেশে কমিউনিজমের পতন হয়েছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও পুরাণো ঘুণে ধরা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলোর নেতা সোভিয়েত রাশিয়া এখন আর নেই। সেখানে এখন অনেক গুলো দেশের সৃষ্টি হয়েছে। গণচীনেও খোলা বাজার ও মুক্ত অর্থনীতি চালু হতে চলেছে। রাজনীতির ইতিহাসে কোন কিছুই স্থবির হয়ে থাকেনা। মুসলীম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলীম লীগ। তারপরে শুধুই আওয়ামী লীগ। নামের অর্ধেক উর্দু আর বাকি অর্ধেক ইমরেজী। মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢাকর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ আর আওয়ামী মুসলীম লীগ ও শুধু আওয়ামী প্রতিষ্ঠা করেছেন মাওলানা ভাসানী। শুধু আওয়ামী লীগ দ্বারা চলছেনা বলে বংগবন্ধু একদলীয় রাজনীতির জন্যে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাকশাল ত্যাগ করে জিয়ার আমলে আবার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশালের সমাজতান্ত্রিক নীতি ত্যাগ করে ধনতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করেন। সাথে আমেরিকার সাথেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্ত৬মান আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মনে হয় খুবই বিভ্রান্তির মাঝে দিনাতিপাত করছে। যে বংগবন্ধুর মাঝে ছিলনা। বংগবন্ধু খুবই সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,তিনি বাংগালী এবং মুসলমান। আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্যে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিস্থিতি সম্পুর্ণ। তিনি সিপিবি সহ অন্যান্য বাম চিন্তাধারার জনবিচ্ছিন্ন কিছু লোক ও গোষ্ঠির চক্করে পড়ে গেছেন। সরকারে এখন ওদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেশী। তিনি বুঝতে পারছেন না তিনি কোন পথে চলছেন। ফলে তিনি দিন দিন মুসলমান বিরোধী কাজকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর ১০ ভাগ মানুষ হয়ত জামাতকে সমর্থন করে বা ভোট দেয়। জামাত ইসলামের রক্ষকও নয় সোল এজেন্টও নয়। জামাত বিরোধী বহু ইসলামী দল বাংলাদেশে আছে। তারাও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেনা। কারণ তারা আওয়ামী লীগকে ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী রাজনৈতিক দল মনে করে। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা দিনরাত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ও কলম ধরে চলেছেন।
এখনতো বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিরোধী একটা জজবা চলছে। সেই জজবার নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। ইসলামকে জংগী ধর্ম বানাবার জন্যে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী টাকা খরচ করছে। আমেরিকার এই ইসলাম বিরোধী যুদ্ধের আওতায় বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকা লাদেন তৈরি করেছে সহযোগী হিসাবে পরে তাঁকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা জামাতের সাথে লেনদেন করেছেন। গোলাম আজম সাহেবকে মুরুব্বী বলে সম্মান করেছেন। এখন সেই মুরুব্বীকে আইনের আওতায় হত্যা করার জন্যে দিনরাত জিকির করছেন। শেখ হাসিনা হয়ত মনে করছেন, জামাত নেতাদের ফাঁসি দিলেই দলটি দূর্বল হয়ে যাবে,অথবা এই দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। আসলে আদর্শবাদী দল কি কখনও মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায়? যায়না, ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত আছে। সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রায় শত বছর ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদ গুলোতে তালা লাগানো ছিল। এখন সেখানে ধর্মচর্চা আবার শুরু হয়েছে। ভারতে এখনও বহু মসজিদে তালা ঝুলছে। এসব মসজিদে সরকার তালা লাগায়নি। মসজিদ এলাকায় মুসলমান নেই। তাই নামাজ পড়ার লোক নেই। এক সময় ছিল। স্পেনে বহু মসজিদ শরাবখানা হয়ে গেছে। এক সময় মুসলমানেরা স্পেন শাসন করেছে সাত শত বছর ধরে। মুসলমান হত্যা কর্মসূচীর কারণে সেখানে এখন মুসলমান নেই। ভারতেও প্রায় এক হাজার বছর মুসলমানদের রাজনৈতিক উপস্থিতি ছিল। এখন নেই। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একমাত্র ধর্ম ইসলাম যার বিস্তৃতি ঘটছে অবিরাম ভাবে। হয়ত এ কারণেই আমেরিকা এবং এর বন্ধুরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্যে এখনই অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দুই তিনশ’ হলেও আমেরিকা ও তার বন্ধুদের কোন আপত্তি নেই। যদি তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তার করতে চায়। ইসলামকে তারা পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে মানতে রাজী নয়। আওয়ামি লীগ ও ইসলামকে পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে মানতে রাজী নয়। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ইসলাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে চায়না। জামাতের জন্ম হয়েছে ৭২ বছর আগে। এখন পর্যন্ত উপ মহাদেশের কোন দেশ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। জনগণই জামাতকে এখনও রাজনৈতিক ক্ষমতা হিসাবে গ্রহণ করেনি। সাধারন মানুষ তামাশা করেই বলে জামাত আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, না থাকলে রাজাকার। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করলেও চলবে।
ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামাত রাজনৈতিক দল হিসাবে আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আরও বহু ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে, তারা তেমন শক্তিশালী নয়। সংসদে তাদের কোন প্রতিনিধি নেই। বাম ডান ও মধ্যপন্থী গ্রুপেও বহু রাজনৈতিক দল আছে যাদের সংসদে কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। তাদের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে খবরের কাগজের পাতায় দেখা যায়। ইনু মিনু বড়ুয়াদের কোন সিট নেই। তারা এবার বহু বছর পরে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁদের সারাজীবন কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে চারটি রাজনৈতিক দল আছে যাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। যাদের লাখ লাখ ভোটার আছে। তন্মধ্যে জামাত একটি। শুনেছি জামাতের ৯০ লাখ ভোটার আছে। জামাত ৭০ সাল থেকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে আসছে। ৭১ সালে মুসলীম লীগ সহ ধর্মীয় দলগুলো অখন্ড পাকিস্তানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেছে। ৪৭ সালেও বহু মুসলমান রাজনৈতিক দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু পরে তাঁরা পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং পাকিস্তানে এসে রাজনীতি করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখ লাখ মুসলমান হিন্দু প্রাণ দিয়েছে বৃটিশদের হাতে। সেই বৃটিশ এখন ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধু। ১৯০ বছর বৃটিশরা এদেশকে লুণ্ঠন করেছে। লোখ লাখ মুক্তিকামী দেশ প্রেমিককে হত্যা করেছে। ভারতের সম্পদেই বৃটেন ধনী হয়েছে।১৯০ বছরের শোষণ শাসন লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৃটেন আজও কারো কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং এখন আমরা বৃটেনের কাছ থেকে সাহায্যের জন্যে তাদের দুয়ারে ধর্ণা দেই। বৃটেন স্যার বা ওবিই দিলে খুশীতে নাচতে থাকি। এখনও অনেকের জন্ম বৃত্তান্তে দেখি তিনি বা তাঁরা অমুক খান বাহাদুর, নবাব বা জমিদারের নাতি বা পুতি। এসব গৌরব আমাদের মগজে স্থায়ী হয়ে গেছে। অনেকেই আনন্দের সাথে বলে থাকেন কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধানতম সমস্যা দেশ বা রাস্ট্রের চেয়ে দলকে এবং দলীয় সরকারকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। ৭৪ সালেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেছেন বংগবন্ধুর আমন্ত্রনে। বংগবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক সহতাপন করতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশের চিরস্থায়ী শত্রয় হতে পারেনা। আমেরিকা ৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন দিলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কোন রাস্ট্রই চিরস্থায়ী ভাবে অন্য কোন রাস্ট্রের সাথে বৈরিতা পোষন করতে পারেন।
জামাত আর পুলিশের ভিতর মারামারিটা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। হঠাত্‍ করে জামাত পুলিশকে পিটাচ্ছে কেন? আগেই বলেছি, যে ছেলেটা পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশকে পিটাচ্ছে সেই ছেলেটা এখন কোথায়? আমাদের মিডিয়া ওই ছেলেটার কোন হদিস দেশবাসীকে দিতে পারেনি। ছেলেটা কি জীবিত আছে? পুলিশটাই বা কোথায়? তিনি কি কোন হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন আছেন? ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এখন প্রতিদিন জামাত ও শিবির কর্মীদের আতক করছে, রিমান্ডে নিচ্ছে। সারা দেশে এখন জামাত ও শিবির পাকড়াও করো কর্মসূচীতে ইতোমধ্যেই কয়েক ঝাজার কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। জামাত নামে বা জামাত বলে পরিচিত কর্মীদের মিছিল অব্যাহত রয়েছে, পুলিশও নিয়মিত মার খাচ্ছে আর কর্মীদের আতক করছে।
জামাত পুলিশ লাঠালাঠি বা মারামারির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্পস্ট হতে শুরু করেছে।সংসদে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবী তুলেছে আওয়ামী সদস্যরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। দেশের মানুষ মনে করছে জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্যেই রাস্তায় জামাত-পুলিশ লাঠালাঠির নাটক সাজানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জামাত নিষিদ্ধ হলে জামাতের রাজনীতি কি বন্ধ হয়ে যাবে? ইসলামে বিশ্বাসী তরুনরা যদি নতুন নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে তাহলে সরকার কি করবেন? আরব বসন্ত যারাই শুরু করুন না কেন এর বেনিফিট সুবিধা পেয়েছে ইসলামী দলগুলো। যারা জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানাচ্ছেন তাঁরা কিন্তু শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মিত্র নয়। জামাত নিষিদ্ধ হলেও বামপন্থী বা তথাকথিত স্যেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীরা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে নানা কথা ও মত কাগজে ও সেমিনারে আলোচিত হচ্ছে। অভ্যাস মোতাবেক আওয়ামী লীগ নেতারা খুব বেশী কথা বলছেন। খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন তাঁর ভারত সফর খুবই ফলপ্রসু হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীরা বলে যাচ্ছেন , এ সফরের কোন মূল্য নেই। আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হলে আওয়ামী লীগ নেতারা সফরকে সফল বলতেন। ভারত সরকার বেগম জিয়াকে একজন বড় মাপের নেতা মনে করেই খাস মেহমান হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারত সফরে গিয়েছেন। ভারতের সকল শ্রেণীর নেতাই বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেছেন এবং কুশল বিনিময় করে দুই দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছেন। উভয় পক্ষই মন খুলে কথা বলেছেন এবং সমস্যা গুলো চিহ্নিত করার চেস্টা করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বিষয়টা কোন ব্যক্তি বা দলের নয়। বিষয়টা হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ভারত চাইবে ষোলয়ানা তার স্বার্থ রক্ষা ও আদায় করতে। ৪৭ সাল থেকেই আমরা দেখে আসছি ভারত নিজেদের স্বার্থ ষোলয়ানা রক্ষা করতে গিয়ে কিভাবে অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করেছে।৪৭ সালের ভারত ভাগকে মেনে নিতে পারেননি ভারতীয় নেতারা। তাঁরা চেয়েছিলেন ভারত একটি অখন্ড দেশ থাকবে এবং সেটা তাঁরা শাসন করবেন।স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মুসলমানদের স্বার্থ কিভাবে রক্ষা পাবে। মুসলমানদের স্বার্থের বিষয়টাকে ভারতের হিন্দু নেতারা তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। তাঁরা শুধু গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের নিয়ম হলো যাঁরা মেজরিটি তাঁরা দেশ, রাস্ট্র বা সরকার চালাবেন। এ পদ্ধতিতে ভারতের মুসলমানরা কোটি বছর ধরে মাইনরিটি থাকবেন। এ ব্যবস্থা মুসলমান নেতারা মেনে নিতে রাজি হননি। তাঁরা চেয়েছিলেন ভারত একটি কনফেডারেশন হোক। সকল জাতি গোষ্ঠিই নিজেদের অধিকার বুঝে নিক।কিন্তু কংগ্রেস নেতারা কিছুতেই তা মানতে রাজি হলেননা।ফলে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী উঠলো।ভারতের নেতারা এখনও মনে করেন ভারত একটি হিন্দু রাস্ট্র,শুধু হিন্দুরাই এদেশে থাকবে। তাঁরা মনে ভারতের সকল অধিবাসীই হিন্দু নামে পরিচিত হবে। হিন্দুত্বই হবে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ভারতের অনেক গবেষক মনে করেন আদি ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।আর আদি ভারতবর্ষ হলো কম্পুচিয়া থেকে আফগানিস্তান(কম্বোজ)। চাণক্য নীতিই হবে ভারতের মূলনীতি।বিজেপি সদস্য ভগবান গিদওয়ানী তাঁর গবেষণা পুস্তক ‘রিটার্ণ অব দি এরিয়ানস’এ লিখেছেন আর্যদের আদি বাসস্থান ভারত।এখন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে আর্যরা বিশ্ব বিজয়ে বেরিয়েছিলেন। আধুনিক ইরাণী ও জার্মানরা ভারতীয় আর্যদেরই বংশধর। এটা ছিল ভগবান গিদওয়ানীর ত্বত্ত। এর সাথে ইতিহাসে কোন সম্পর্ক নেই। ৭১১ সাল থেকে ভারতে আংশিক ভাবে মুসলমান শাসনের যাত্রা শুরু হয়। ১২শ’ সালের দিকে শুরু হয় দিল্লীতে মুসলমান শাসন। ১৭৫৭ সালে বেঈমানী ও ষড়যন্ত্রের ফলাফল হচ্ছে পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতন হয়।ইংরেজ বণিকেরা বংগদেশ দখল করে নেয়।এভাবেই ইংরেজরা হিন্দুদের সহযোগিতায় সারা ভারত দখল করে নেয় ১৯৫৮ সাল নাগাদ।
শুধুমাত্র নতুন প্রজন্ম বা জেনারেশন বা সচেতন নন এমন মানুষদের জন্যেই বার বার ইতিহাসের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ হঠাত্‍ করে রাতারাতি মুসলীম মেজরিটির দেশে পরিণত হয়নি। এতে হাজার বছর সময় লেগেছে।বিদেশ থেকে বহু মুসলমান সুফী সাধক ও ধর্ম প্রচারক এসেছেন এদেশে সাধারন মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে। যাঁরা বিদেশ থেকে এসে এদেশে বসতি স্থাপন করেছেন তাঁদের কথা বাদ দিলে বাকি জনগোষ্ঠি ছিলেন শূদ্র,অচ্যুত বা হরিজন।এদের কারোরই কোন মানবিক অধিকার ছিলনা। মনু সংহিতায় এদের অর্ধ মানব বলা হয়েছে। ব্রহ্মা নাকি এই অচ্যুতজনকে সৃষ্টি করেছেন বর্ণবাদী ভারতীয় সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ক্ষমতাবান মানুষদের সেবা করার জন্যে।ফলে এ অঞ্চলের নির্যাতিত হাজার হাজার মানুষ নিজ অচ্যুতের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। যদি কেউ কোথাও জবরদস্তি করতো তাহলে আজকের ভারতে হিন্দু ধর্ম খুঁজে পাওয়া যেতনা। যেমনটি হয়েছে স্পেনে। সেখানে যুগের যুগ ধরে ক্রুসেড চলেছে মুসলমান নিধনের জন্যে। ১৪৯২ সালের পহেলা এপ্রিল মুসলমানদের বলা হলো মসজিদে আশ্রয় নিলে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। মুসলমানদের মসজিদে একত্রিত করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। সেজন্যে পহেলা এপ্রিলকে বোকা বানানোর দিন হিসাবে খৃস্টানরা পালন করে। এইতো কিছুদিন আগেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এইদিনটি আমরা পালন করেছি। কত বোকা হলে একটি জাতি বা সমাজ এ রকম আত্মঘাতি কাজ করতে পারে। এখন আমরা পশ্চিমা এবং হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির অনেক কিছুই পালন করি কোন খোঁজ খবর না নিয়ে।
মহাজ্ঞানী মহামতি আলবেরুনী তাঁর ‘ভারত তত্ব’বইতে বলেছেন,ভারতীয়দের জাতীয় চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট হলো নির্বুদ্ধিতা। নির্বুদ্ধিতা এমন একটি রোগ যার কোন চিকিত্‍সা বা ঔষধ নেই।ভারতীয়রা বিশ্বাস করে পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র তাদের দেশই শ্রেষ্ঠ।মানব জাতির মধ্যে একমাত্র তারাই সর্বোত্তম,তাদের রাজাই জগতের শ্রেষ্ঠ রাজা,তাদের ধর্মই জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, তাদের জ্ঞানই জগতের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। মুর্খের মতো নিজেদের বড় ঘোষণা করে বা জাহির করে ওরা পরম তৃপ্তি পায়। জ্ঞান বিতরেনে কার্পন্য করা ওদের স্বভাব।ভারতীয় হিন্দুদের কাছে তাদের বিশ্বাসই সবচেয়ে বড়। তাঁরা জ্ঞান বিজ্ঞান আর সাক্ষ্য প্রমানে বিশ্বাস করেনা। আলবিরুণী এসব কথা লিখে রেখে গেছেন ১০৫০ বছর আগে। ভারতবর্ষ সম্পর্কে এটাই প্রথম বিদেশীদের রচিত পুস্তক। দার্শনিক সক্রেটিসের সময় গ্রীস বা ইউনানের অবসহতাও ভারতীয়দের মতো ছিল। সেখানকার শাসকরা জনসাধারনকে শিক্ষিত করে তোলায় বিশ্বাস করতোনা। ফলে গ্রীসের সাধারন মানুষ সক্রেটিসকে চিনতে পারেনি। শাসক গোষ্ঠিও সাধারন মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যে সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সক্রেটিস গ্রহ নক্ষত্রকে ভগবান বলতে নারাজ ছিলেন। তিনি অন্ধভাবে মুর্তিপুজার বিরোধিতা করেছিলেন। তাই সক্রেটিসের বিচার হয়েছিল এবং বিচারকরা সবাই জনসাধারনের পক্ষেই ছিলেন। বিচারের রায় ছিল সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ড। ভারতে তেমন জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়নি। যদি হতো তাহলে তাকেও মৃত্যু বরণ করতে হতো। জ্ঞান অর্জন ভারতের সাধারন মানুষের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল ধর্মীয় ভাবেই।ভারতের ৩০ কোটি অচ্যুত বা হরিজন এখনও জ্ঞানার্জন বা চর্চা থেকে বঞ্চিত। ভারতীয় সংবিধানে অচ্যুতদের কোন ধরণের অধিকারই স্বীকৃত নয়। এই অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়েই নেহেরুজীর সাথে সংবিধান রচয়িতা বাবা অম্বেদকারের মতদ্বৈততা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত বাবা অম্বেদদকার হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।আসলে নেহেরুজী ছিলেন একজন মহারাজনীতিবিদ। তিনি জানতেন ও বুঝতেন চলমান ভারতীয় সমাজের বিরুদ্ধে গেলে তাঁর রাজনীতির কি হতে পারে। তাই তিনি বাবা অম্বেদকারের কথায় কান দেননি। অম্বেদকার হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করলে নেহেরুজীর কিছুই আসে যায়না। সত্যি কথা বলতে কি,নেহেরূজী তেমন ধর্ম কর্ম করতেন না ব্যক্তিগত জীবনে। জন সাধারন যেটুকুতে খুশী সেটুকু ধর্মই তিনি করতেন।বাপুজী মানে গান্ধীজী শূদ্র বা অচ্যুতদের আদর করে হরিজন নাম দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে হরিজনরা ভগবানের লোক। ভগবানই তাদের দেখাশুনা করবেন। অপরদিকে ব্রহ্মা স্বীয় মস্তক থেকে ব্রাহ্মণ সমাজের সৃষ্টি করেছেন। আর ব্রাহ্মণের পদযুগল থেকে অচ্যুতদের সৃষ্টি করেছেন। বাপুজী ঠিকই বলেছেন। ওরা সত্যিই হরিজন। আমাদের দেশেও অনেকেই মানত করে গরূ ছাগল ছেড়ে দেয়া হয়। সাধারন মানুষ ওইসব গরু ছাগলকে খোদার ছাগল বা গরু বলে থাকে। মানে যার কোন মালিকানা থাকেনা সেই খোদার।তেমনি হরিজনরাও ভগবানের সন্তান। রাস্ট্র আর রাজনীতি আজও হরিজনদের মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।হাজার হাজার বছর ধরে এই বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্থা চলে আসছে। আধুনিক রাস্ট্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হরিজনদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি।
নবীন প্রবীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠক সমাজকে একটু ধারণা দেয়ার জন্যেই এতক্ষন এত কথা বলেছি। ভারতের রাজনীতি সমাজনীতি ও কূটনীতি বুঝতে হলে ভারতকে গভীর ভাবে জানতে হবে। আমাদের দেশের রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিকরা এ বিষয়টাকে কখনই তেমন গুরুত্ব দেননি। আজও ভারত চাণক্যের রণনীতি ও কূটনীতিকে অনুসরন করে চেলেছে।বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তাঁরা চাণক্যপুরী বলেন। মৌর্য রাজনীতির প্রধান পুরুষ ও চরিত্র হচ্ছে চলমান আধুনিক ভারতের দর্শন ও আদর্শ। বাংলাদেশের পররাস্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা সরকারের নীতি কি তা আমরা আজও ভাল করে জানিনা।আওয়ামী লীগ সরকার ৭২ সাল থেকেই ভারতকেই পরম ও চরম বন্ধু হিসাবে মেনে আসছে। বিগত ৪০ বছরে বিশ্ব রাজনীতিতে বহু পরিবর্তন এসেছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেংগে গেছে। অনেক গুলো নতুন রাস্ট্রের জন্ম হয়েছে। এক সময় আমেরিকা সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম ও সমাজবাদকে প্রতিহত করার জন্যে জগতব্যাপী যুদ্ধ করে বেড়িয়েছে। আর সোভিয়েত রাশিয়া জোর করে কমিউনিজম রফতানী করার জন্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এ যুদ্ধে আমেরিকার জয় হয়েছে। রাশিয়া এখন আর বৃহত্‍ শক্তি নয়। অপরদিকে গণচীন তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে। সে দেশে নতুন নেতা হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিলেন দেং শিয়াও পিং। চীনারা এখন স্যুট পরে, কোকা কোলা পান করে, রাতে হোটেলে পশ্চিমা ধাঁচের নাচ গাণ করে। আমেরিকা চীনের সবচেয়ে বড় বিজনেস পার্টনার। চীনের জিনিষ না হলে আমেরিকার চলেনা। এখন আমেরিকা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকা লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করেছে। আমেরিকার এই মুসলমান বিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশও শরীক হয়েছে। চলমান বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলমান ও ইসলাম বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে এত পরিবর্তন চলছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ভারতের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেনা।ভারতকে সমর্থন করার জন্যে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী আর মিডিয়ার অভাব নেই। ভারতের তাবেদারী করাকে অনেকেই পেশা ও আদর্শ হিসাবে নিয়েছেন।
বিগত ৪০ বছরে ভারত বাংলাদেশের কাছে যত ওয়াদা করেছে তার একটিও রক্ষা করেনি। ভারত সবচেয়ে বড় বেঈমানী করেছে বংগবন্ধুর সাথে। ওয়াদা মতো বংগবন্ধু বেরুবাড়ি ভারতকে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু ভারত আজও নানা টাল বাহানায় তিনবিঘা হস্তান্তর করেনি।সীমান্তে বাংলাদেশের বহু জমি দখল করে রেখেছে। কথায় কথায় সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। জোর করে ফসল কেটে নিচ্ছে। আইনী ও বেআইনী ভাবে ভারত বাংলাদেশে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার মাল বিক্রি করছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কোটি টাকার মালও নেয়না। বাণিজ্যের ব্যাপারে দিল্লীর সাথে চুক্তি থাকলেও নানা বাহানায় বাংলাদেশী পণ্য সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেনা।ভারতীয় চ্যানেল গুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অধিকার পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ভারতে প্রবেশ করতে পারেনা। শহরুখ খান এসে একরাতে ১০ কোটি টাকা কামিয়ে চলে যায়। ভারতীয় বই বাংলাদেশে অবাধে বিক্রি হয়, কিন্তু বাংলাদেশের বই সহজে ভারতে বিক্রি হয়না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদ মারা গেলে ভারতীয় কাগজে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। অথচ সুনীল মারা গেলে বাংলাদেশে কান্নার রোল পড়ে যায়। সুনীল বাবু নিজেই আমাকে বলেছেন, ‘দেখো এরশাদ, বাংলাদেশের লোকেরা আমায় পুজা করলে আমি কি করতে পারি’। সত্যিইতো, এতে সুনীলের দোষ কোথায়? আমাদের বড় বড় বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন,আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির সদর দফতর এখনও কোলকাতায়। ইংরেজদের আনুকুল্য পেয়ে কোলকাতা গ্রাম থেকে শহরে পরিণত হয়েছে, তারপর রাজধানী হয়েছে। ১৬০৮ সালে ঢাকা যখন রাজধানী ছিল তখন কোলকাতা ছিল একটি অতি সাধারন গ্রাম। ১৯৮৫ সালে আমি যখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পালনের জন্যে সেমিনারের আয়োজন করি তখন আমার এক মুরুব্বী বললেন,ঢাকাতো বাংগালীদের শহর নয়,এটা বিদেশী মুসলমানদের শহর।আমার এই মুরুব্বীকে বন্ধুরা অনেকেই মসকরা করে ওয়াহেদন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতো। মানুষ হিসাবে তিনি উচ্চমানের ছিলেন। কিন্তু চিন্তার জগতটা আলোকিত ছিলনা। চিন্তার জগতের বৈকল্যের কারণে আমরা আজও ঠিক করে উঠতে পারিনি আমাদের পরিচয় বাংগালী হবে না বাংলাদেশী হবে। এ নিয়ে দেশে এখন তুমুল রাজনীতি।ভারতীয় রাজ্য পশ্চিম বাংলার ডাক সাইটে রাজনীতিক শ্রদ্ধেয় জ্যোতি বাবু একবার আমাকে বলেছিলেন,‘তোমরাতো ঠিক করতে পারছোনা,বাংগালী হবে না মুসলমান হবে। এখনও তোমরা বলতে পারোনা তোমাদের পরিচয় বাংগালী না বাংলাদেশী’। আমি কোন উত্তর দিইনি,চুপ করে ছিলাম। আরেকজন বিখ্যাত ভারতীয় রাজনীতিক বলেছিলেন, ৭১ সালে তোমরা বাংগালী হওয়ার জন্যে যুদ্ধ করেছো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে,তাই আমরা তোমাদের সমর্থন দিয়েছি,সাহায্য করেছি। এখন বলছো, মুসলমান হতে চাও।এ প্রসংগে আমি বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কাছে ফিরে যেতে চাই। তিনি কেন পাকিস্তান চেয়েছিলেন তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে তাঁর আত্মজীবনীতে। সত্যি কথা বলতে কি তখনকার সকল মুসলমান নেতাই পাকিস্তান চেয়েছিলেন নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির জন্যে। ইংরেজ এবং হিন্দু জমিদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যৌথভাবে শোষণ করেছে মুসলমানদের। জিন্নাহ সাহেব নিজেই বলেছিলেন,পূর্ববাংলার নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত মুসলমানদের জন্যে পাকিস্তান বা স্বাধীনতা অপরিহার্য।একথা কখনই ভুলে যাওয়া যাবেনা যে,কতিপয় বেঈমান মুসলমান ও হিন্দু জমিদার ও বণিকের ষড়যন্ত্রের ফলেই ইংরেজরা অখন্ড বংগদেশ দখল করেছে। বাংলা ছিল সম্পদে ভরা। তাই বাংলায় লুন্ঠণ হয়েছে সবচেয়ে বেশী। এই লুন্ঠণের ফলেই বাংলা বিরাণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে। উইলিয়াম হান্টারের বইটি এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।এ কারণেই এক সময়ে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলমানদের রক্ষা করার জন্যে ঋণ সালিশী বোর্ড গঠণ করেছিলেন।
এ কথা মহাসত্য যে, পাকিস্তানী নেতাদের অদূরদর্শিতা ও গণবিরোধী ভুমিকার কারণেই পাকিস্তান টিকেনি এবং বাংগালী মুসলমানেরা আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয়েছে। যে বংগবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে জীবন বিপন্ন করে লড়াই করেছেন তিনিই বাংগালী মুসলমানের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। ভারতের অনুরোধকে উপেক্ষা করে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এতে ভারত তাঁর উপর খুবই নাখোশ ছিল। ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্তু লারমার দলকে ট্রেনিং দিয়েছে। শ্রীলংকার তামিলদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র লড়াইতে সমর্থন দিয়েছে।নেপালের রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে গোলযোগ বাঁধিয়ে রেখেছে। সিকিম দখল করে নিয়েছে। ভুটানকে করদ রাজ্যে পরিণত করেছে।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সব সময় মারমুখি হয়ে থাকে।চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ বাঁধিয়ে রেখেছে।
সুতরাং বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর এই অঞ্চলের ভূ রাজনীতিতে তেমন পরিণত আসবে বলে আমার মনে হয়না।ভারত বাংলাদেশে বন্ধু সরকার চায়। ভারত তার সুদীর্ঘ কালের বন্ধু রাশিয়াকে ত্যাগ করে আমেরিকাকে বন্ধু বানিয়েছে। আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহারের চেস্টা করছে। আওয়ামী লীগ ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। সমঝোতা হয়েছে ৭১ সালে,যখন বাংলাদেশের তথা আওয়ামী নেতাদের ভারতের নির্দেশ মানা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। বংগবন্ধু ভারতে যাননি ইচ্ছা করেই। আর যাননি বলেই তিনি মুজিব নগর সরকারের সই করা সকল চুক্তি মানতে রাজী হননি। হতে পারে ভারত বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিতানো যাবেনা। তাই ভারত হয়ত নিজেদের কল্যাণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মিত্র খুঁজছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়া বহুদিন ধরে খালেদা জিয়া ও তাঁর দলকে ভারত বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে আসছে। ভারত বাংলাদেশের কাছে থেকে সব সময় তার স্বার্থ আদায় করতে চাইবে। এতে আমি কোন অন্যায় দেখিনা। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশ বন্ধুত্বের দ্বারা নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে কিনা। শক্তভাবে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গেলেই মিডিয়া গুলো মিডিয়া গুলো বলতে শুরু করবে বাংলাদেশ ভারত বিরোধী হয়ে গেছে। ভারতের সমালোচক লেখক কবি সাংবাদিকদের ভারত মৌলবাদী আখ্যায়িত করে, ভারত সফরের জন্যে ভিসা দেয়না। ভিসা পাওয়ার জন্যে আমরা অনেক সময় ভারতপন্থী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতা গ্রহন করে থাকি। স্যেকুলারিজমের নামে বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক অন্ধ ভাবে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে। ভারত কখনই স্যেকুলার দেশ বা রাস্ট্র ছিলনা। হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই। হাবভাব দেখে মনে হয় মুসলমান বা ইসলামিস্টরা কখনই স্যেকুলার হতে পারেনা।
আওয়ামী লীগ ও তার নেতারা খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে সতীনের দৃষ্টিতে দেখছে। হাবভাব হলো আমরাতো ভারতের জন্যে ৪০ বছর ধরেই কাজ করছি।এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর কোথায় পাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে, ভারত বিএনপির সাথে বন্ধুত্ব করলো আওয়ামী লীগের সাথে বেঈমানী করবে। দুয়েক জন বলেই ফেলেছেন,খালেদা জিয়া মুখে বললেও অন্তরে কখনই ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চায়না।

Read Full Post »