বাংলাদেশের ধর্ম মুক্ত জীবন ও কিশোরী ঐশী / এরশাদ মজুমদার
ভৌগলিক কারণে আমাদের জীবনে মাটির অনেক প্রভাব আছে। আবার মুসলমান হওয়ার কারণেও ধর্ম আমাদের রাস্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে। মানি বা না মানি,অনুশীলন বা চর্চা করি বা না করি ধর্মকে আমরা ইচ্ছা করলেই জীবন থেকে বাদ দিতে পারিনা। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ধর্ম বা ইসলামের উপস্থিতি খুবই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। লাখ লাখ মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে, মসজিদের মিনারে নিয়মিত আজান হয়। আজান শুনে কিছু মানুষ কর্মস্থল ফেলে মসজিদের দিকে দৌড়ে যায়। যাঁরা জামাতে নামাজ পড়েন না তাঁরাও ঘরে বা অফিসে নামাজ পড়েন। যে সকল মুসলমান নিয়মিত রুটিন করে ধর্মচর্চা করেন না তাঁরাও নিজ ধর্মের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মহীন বলে দাবী করেন তাঁরাও ধর্মকে সম্মান করেন। তাঁদের অনেকেই মানে ৯০ ভাগই সরাসরি বা প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন না। আরবী বা মুসলমান নামধারী অনেকেই প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন। এঁরা নিজেদের জ্ঞানী গুণী বা মহা প্রগতিশীল বলে জাহির করেন। তাঁরা নাকি খুবই আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। এদের সংখ্যা খুবই কম। তবে তাঁরা খুবই প্রভাবশালী। সরকারের কল কাঠি তাঁরাই নাড়েন
শুরুতেই চলমান বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার উপর এক বিন্দু আলোকপাত করলাম। ঐশী নামটা খুবই সুন্দর ও বেশ অর্থবহ। এক হাজারে এমন একটি নাম পাওয়া যায়না। নাম দেখে পরিবারের ঐতিহ্যের ইংগিত পাওয়া যায়। ভাইয়ের নামও সুন্দর। একজন ঐশী ,আরেকজন ঐহী। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নাম দুটো নিয়ে। যে মুরুব্বীরা নাম রেখেছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই এমন একটি দিনের কথা ভাবেননি। এক গরীব পরিবারের দুটি মেয়ের নাম জানি আমি। একজনের নাম জান্নাতুন নাঈম, আরেকজনের নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। জানতে চেয়েছিলাম কে নাম রেখেছেন, উত্তর পেলাম নানা। নানা আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। আমাদের সমাজের বহু শিক্ষিত পরিবারে এমন সুব্দর নাম রাখতে পারেনা। বা এ ধরনের নাম পছন্দ করেনা। ইদানিং কিছু কিছু ফার্সী নাম শুনতে পাচ্ছি। অনেকেই না বুঝে ফ্যাশন করে রাখেন। আবার এমন নানও অনেকেই রাখেন যার কোন মানে হয়না। যেমন সীমান্ত খোকন। আবার পার্থ অম্লান। বিশেষ করে মিডিয়াতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা এ ধরনের নাম রাখেন। প্রসংগত আমার এক বন্ধুর গল্প মনে পড়ছে। তাঁর চেলে মেয়েদের নাম বুঝে বুঝা যায়না তারা হিন্দু না মুসলমান। কোন এক অপশানাল বা ঐচ্ছিক ছুটিতে ওরা স্কুলে গেলে শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন ওরা কেন স্কুলে এসেছে, ওদেরতো ছুটি। তখন বন্ধুর সন্তানেরা বলেছিল তারা মুসলমান। অনেকেই খাঁটি বাংলা রাখার কারণে এমন বিভ্রাট তৈরি হয়। আমার পরিচিত এক জন সাংবাদিকের নাম যোশেফ শতাব্দী। আপনারাই বলুন ইনি কে? তাঁর ধর্ম পরিচয় কি?
আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা নাম পরিবর্তন করে নতুন একটা নাম গ্রহণের রেওয়াজ আছে। বেশীর ভা ক্ষেত্রেই তাঁরা হিন্দু নাম করতেন। যেমন আমার বন্ধু কবি আবদুল মান্নানের কবিনাম ছিল সমুদ্র গুপ্ত। আরেক সাংবাদিক বন্ধু সিরাজুল ইসলামের নাম ছিল আজিজ মিসির। আমাদের আশে পারে অনেকেরই এ ধরনের নাম ছিল। ইদানিং এ প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। নাম বদলাতে হয়নি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। শুনেছি, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক ১৯৪৬ সালে কোলকাতায় একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। নাম ছিল ‘দু:খে যাদের জীবন গড়া’। এ ছবির নায়ক ছিলেন ফতেহ লোহানী। আর পরিচালকের নাম চিল ওবায়দুল হক সাহেবের। সে সময়ে নাকি তিনি আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সিনেমাটি তৈরি করেছিলেন। সে সময়ে কোলকাতার সাম্প্রদায়িক অবস্থা ভাল ছিলনা। ফলে হিন্দুরা হলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। কারণ সিনেমাটি মুসলমানের তৈরি। পরে তিনি নাম বদল করে নিজের নাম রেখেছিলেন হিমাদ্রি চৌধুরী ও ফতেহ লোহানীর নাম রেখেছিলেন কিরণ কুমার। তখন মোম্বাইতেও এ অবস্থা বিরাজ করতো। তাই দীলিপ কুমার হয়েছিলেন ইউসুফ খান। কিন্তু রাজকাপুরকে নাম বদলাতে হয়নি। এখন মোম্বাইয়ের মুসলমান নায়কদের নাম বদলাতে হয়না। আমাদের ঢাকায় নাম বদলানের কালচার এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রসংগটা উঠেছে ঐশীর নাম নিয়ে। নামটা সত্যিই ভাল। কিন্তু ভাল নামের জন্যে ভাল পরিবেশ ও শিক্ষা দরকার। ভাল সমাজ ও ভাল দেশ দরকার। শিক্ষা , কর্ম ও পরিস্থিতি পরিবেশের কারণে ভাল নামও মন্দ নামে পরিণত হয়। যেমন আবুল হাকামের নাম আবু জেহেলে পরিণত হয়েছে। বাংগালীরা আবার বুঝতে না পারার কারণে ভাল শব্দকে মন্দ হিসাবে ব্যবহার করে। যেমন অথর্ব। এই শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অথর্ব বেদের রচয়িতা হলেন অথর্ব মুনি। বাংগালীদের কাছে এই শব্দের অর্থ অকেজো। কোন কাজের নয়। আবার মন্দ কাজ বা বেঈমানীর জন্যে মীরজাফরের নাম নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে গেছে। আবার রাবণের ভাই বিভীষণ। রাজ্যলোভে রামের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। তাই বলা হয় ঘরের শত্রু বিভীষণ। জগতের সব ভাষাতেই এমন শব্দ আছে। কিন্তু জ্ঞানী মানুষকে কেউ অথর্ব বলেনা।
কিন্তু ঐশী এমন করলো কেন? আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে গেছে। ঐশী কি এতই বেপরোয়া ছিল যে, স্বাধীন অবাধ জীবন যাপনের জন্যে শেষ পর্যন্ত মা বাবাকে হত্যা করবে? তাও আবার রাত ১১টায় কফির সাথে ৩০টা করে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে। মাকে আগেই ৩০টা ঘুমের বড়ি/ট্যাবলেট মিশানো কফি খাওয়ানো হয়েছে। পরে বাবাকে। মায়ের ঘুম ভাংছেনা দেখে বাবা মাকে কোলে তুলে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাবার মনে একবারও প্রশ্ন জাগেনি এত গভীর ঘুম কেন? এক কাপ/মগ কফির সাথে ৩০টা ট্যাবলেট কি কয়েক মিনিটের মধ্যেই গলে গেলো? মাকে ১১ বার স্ট্যাব বা ছুরির আঘাত করা হয়েছে। মার ঘুম ভাংগেনি। এমন কি নড়ে চড়েওনি। একবার দুইবার করে ১১বার আঘাত করা হয়েছে। মা টু শব্দটিও করেনি। মায়ের ঘুম ভাংগেনি। বিছানায় রক্ত, কাপড় চোপড়ে রক্ত, ঐশীর কাপড়ে রক্ত লাগেনি? তাহলে রক্তমাখা ঐশীর পরণের কাপড়ইবা কোথায় গেলো? একেবারে সোজা হিসাব। ঐশী স্বীকার করলো সে বাবা মাকে খুন করেছে আর অমনি পুলিশ ঐশীর জীবনধারা প্রকাশ করতে লাগলো মিডিয়ার কাছে । বিচারে ঐশীর শাস্তি হয়ে গেলেই কি সমস্যার সমাধান গেলো? না, আমিতো মনে করি সমধান হয়নি। দেশবাসীর মনে আরও হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন একটি নিষ্ঠুর ঘটনার প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
সবাই শুধু বলে চলেছেন,ঐশী বখে যাওয়া মা বাবা খুবই আদরের মেয়ে। সে নেশা করতো,গভীর রাতে বাড়ি ফিরতো, বাবা মার শাসন মানতোনা। নিজের ইচ্ছা মতো চলতো। এমন কি বন্ধু বান্ধব নিয়ে বাসাতেও আড্ডা মারতো। কতদিন ধরে ঐশী এ ধারার জীবন যাপন করছে? মনে রাখতে হবে ঐশীর বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি জানেন অপরাধীকে শাস্তি দিতে হয়। তাহলে তিনি কি মেয়ের চলা ফেরা, আচার ব্যবহারের পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করেননি? খবরের কাগজে এসেছে বাবা মা মেয়েকে শাসন করতে গেছেন বলেই মেয়ে ক্ষ্যাপে গিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। কোথাও কোন সাক্ষী নেই, মেয়ে একাই এ বিশাল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। শক্তিশালী একজন ঘুমন্ত পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে দুটি ঘা দিলো আর তিনি একটু নড়া চড়াও করতেননা। গল্পটা হলো ঘুমের বড়ি খেয়ে তিনি একেবারেই অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। ধারালো ছুরির ঘায়েও তিনি টের পাননি। আমাদের সাংবাদিকরা এখন ‘এম্বেডেড’।শিশুদের যেমন ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতে হয় তেমনি তাদেরও খবর খাইয়ে দিতে হয়। যা খাওয়ানো হয় তাই তাঁরা জনগণকে জানিয়ে দেন। এখনতো রেব ও পুলিশের বিরাট মিডিয়া সেন্টার আছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে এখন থানার এসআইও জাতির উদ্দেশ্যে বাণী পেশ করেন। বিচার হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ধৃত ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয় অপরাধী হিসাবে। আর মিডিয়া বিনা বাক্যে বিনা দ্বিধায় ওসব খবর দেখায় ও ছাপায়।এক সময় এ দেশের মিডিয়া এ রকম ছিলনা।
ঐশীর বিষয়টি গভীর ভাবে ষ্টাডি ও গবেষণা করা দরকার। মনো বিজ্ঞানীরা হয়ত বলবেন,ওই বয়সের ছেলে বা মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে এ রকম করতে পারে। কিন্তু আমি বলবো, দারোগা বা ইন্সপেক্টর সাহেব কেমন মানুষ ছিলেন,তাঁর ছাত্র জীবন বা পুলিশ জীবন কেমন ছিল? এসব পুলিশ বিভাগের জানার কথা। আমরা শুনেছি বা খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে দারোগা সাহেবের পারিবারিক জীবন শান্তিপূর্ণ ছিলনা। তাহলে কি নিয়ে বিরোধ ছিল? অধিক টাকা কামানোর বিরোধ না স্ত্রী উচ্চ পরিবারের মেয়ে তাই বনিবনা হচ্ছিলনা। খবরের কাগজে একথাও ছাপা হয়েছে যে,ঐশীকে হাত খরচের জন্যে মাসে এক লাখ টাকা দেয়া হতো। টাক দেয়া বন্ধ করে দেয়ার পর সে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। মা নাকি বাবার তুলনায় একটু বেশী কড়া ছিলেন। ফলে মায়ের উপর বেশী রাগ ছিল এবং মাকে ১১বার ছুরির আঘাত করা হয়েছে। এসব কিন্তু ঐশী তদন্তকারী পুলিশ সাহেবদের জানিয়েছে। সময় পার হচ্ছে, আর ঐশীও ঘোর কাটিয়ে স্থিতু হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যেই ঐশী আদালতে জানিয়েছে যে,তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে জবানবন্দী আদায় করা হয়েছে। তাই ১৬৪ ধারায় ঐশী যে জবানবন্দী দিয়েছে তা প্রত্যাহার করতে চায়। ঐশী এ ধরণের কিছু একটা করতে পারে তা নিশ্চয়ই পুলিশ সাহেবদের জানার কথা।
ঐশী ছাড়া অন্যদের কথা মিডিয়াতে আমরা তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাটায় ঐশী ছাড়া আর কেউ নাই। সুমি কি বলেছে তাও মিডিয়াতে তেমন কিছু আসছেনা। বাকি যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কথাও তেমন কিছু শুনা বা জানা যাচ্ছেনা। এমন কি ঐহীর কথাও শুনা যাচ্ছেনা। সাগর রুনির সন্তান মেঘের কত সাক্ষাতকার টিভি বা খবরের কাগজে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ঐশীর ব্যাপারে মিডিয়া কিছুটা নির্লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। ঐহী যে খালার বাসায় আছে সেই খালা খালু বিষয়টা নিয়ে কি ভাবছেন তাও জানা দরকার। তাঁরাতো ঐশী এবং তার বাবা মাকে ভাল করেই জানেন। ঐশীর চাচা যিনি ঐশীর জামিনের জন্যে চেষ্টা করছেন তাঁর কোন খোঁজ খবর আমরা জানতে পারছিনা। ঐশীদের পরিবারের সাথে চাচাদের সম্পর্ক কেমন ছিল তাতো পুলিশ সাহেবেরা বের করতে পারেন। আমরা জানতে পেরেছি,ঐশীর বাবা গোয়েন্দা বিভাগে রাজনৈতিক শাখায় কাজ করতেন। যখন খুন হয়েছেন তখন তিনি কোন ফাইলটি নিয়ে কাজ করছিলেন তাতো তাঁর সহকর্মীদের জানার কথা। তিনি কি এমন কোন রাজনৈতিক ফাইল নিয়ে কাজ করছিলেন যা তাঁর জীবনের উপর হুমকি ছিল। সে রাতে তিনি বাসায় ফিরেছেন রাত এগারটার দিকে। অত রাতে কি তিনি নিয়মিত ফিরতেন? না শুধু সেদিনই দেরিতে বাসায় ফিরেছেন। তিনি কি মদ পান করতেন? বাসায় কি মদ পান করতেন? এসব প্রশ্ন এক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। আমাদের ক্রাইম রিপোর্টারেরা এখনও পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেননি।
অপরদিকে মাসে এক লাখ টাকা মেয়ের হাত খরচ দেয়ার মতো কি ইন্সপেক্টর সাহেবের ছিল? নিশ্চয়ই ছিলনা। তাহলে শুরুতেই কে বা কারা এ খবরটি প্রচার করেছে? এখনি বা এ ব্যাপারে মিডিয়া চুপচাপ কেন?
ইতোমধ্যে ঐশীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের সমাজ জীবন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমাদের সংসার গুলোতে সংসার বাঁধন দিন দিন ঢিলা হতে শুরু করেছে। ধর্মীয় চেতনা এখন আর কাজ করেনা। বাবা মা ধর্ম চর্চা করেন না। তাই তাঁরা সন্তানদের এ ব্যাপারে কিছু বলেন না বা বলতে সাহস করেন না। এমন কি সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে বা কি করছে সে খবরও আজকাল রাখেন না। ধনী পরিবারের জীবন হয়ে গেছে ক্লাব ভিত্তিক। মদ পান সবার জন্যে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। বারো তের রুমের বাড়ি গুলোতে চার পাঁচটা করে ড্রয়িংরুম। বেগম সাহেব কোথায় আছেন বা যাচ্ছেন তা সাহেব জানেন না। জানলেও সাহেব চুপ করে থাকেন সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে। বাড়িতে সবার জন্যেই আলাদা আলাদা ড্রয়িংরুম। ব্যক্তি স্বাধীনতার যুগে কেউ কারো প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করেন না। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে,ঝুটি বাঁধে। নানা দাঁড়ির ফ্যাশান করে। দিনে বা রাতে শিশা ক্লাবে যায়। অথবা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে গাড়িতে লং ড্রাইভে যাচ্ছে। মেয়ে অবস্থাও একই রকম। জিন্সের টাইট প্যান্ট পরে,টিশার্ট বা শার্ট পরে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে। রাতের বেলায় রাস্তায় পুলিশ ধরলেই বলে আমি অমুকের মেয়ে বা ছেলে। তখন পুলিশ থ্যান্ক ইউ স্যার বা মেডাম বলে ছেড়ে দেয়।
এর প্রধান কারণ শিক্ষিত বা উচ্ছ শিক্ষিত পরিবার গুলোতে এখন ধর্ম চর্চা নেই। তাঁরা নাকি সবাই সেক্যুলার বা ধর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যাঁরা ধর্মচর্চা করেন তাঁদের মৌলবাদী বা জংগী বলে গালি দেয় বা প্রতিক্রিয়াশীল বলে তাই জানতে ইচ্ছে করে ঐশীর পরিবার ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন অতি আধুনিক পরিবারে পরিণত হয়েছিল কিনা। আমার কেমন যেন বিশ্বাস হয়না ঐশী এমন কাজটি করেছে। যদি করেও থাকে তার জন্যে কে দায়ী? নিজের পরিবার, না সমাজ বা রাস্ট্র ব্যবস্থা? আমাদের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমার মত হচ্ছে ঐশীর ঘটনার গভীর তদন্ত ও বিশ্লেষন হওয়া দরকার।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com