Feeds:
Posts
Comments

Archive for August, 2013


বাংলাদেশের ধর্ম মুক্ত জীবন ও কিশোরী ঐশী / এরশাদ মজুমদার

ভৌগলিক কারণে আমাদের জীবনে মাটির অনেক প্রভাব আছে। আবার মুসলমান হওয়ার কারণেও ধর্ম আমাদের রাস্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে। মানি বা না মানি,অনুশীলন বা চর্চা করি বা না করি ধর্মকে আমরা ইচ্ছা করলেই জীবন থেকে বাদ দিতে পারিনা। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ধর্ম বা ইসলামের উপস্থিতি খুবই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। লাখ লাখ মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে, মসজিদের মিনারে নিয়মিত আজান হয়। আজান শুনে কিছু মানুষ কর্মস্থল ফেলে মসজিদের দিকে দৌড়ে যায়। যাঁরা জামাতে নামাজ পড়েন না তাঁরাও ঘরে বা অফিসে নামাজ পড়েন। যে সকল মুসলমান নিয়মিত রুটিন করে ধর্মচর্চা করেন না তাঁরাও নিজ ধর্মের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মহীন বলে দাবী করেন তাঁরাও ধর্মকে সম্মান করেন। তাঁদের অনেকেই মানে ৯০ ভাগই সরাসরি বা প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন না। আরবী বা মুসলমান নামধারী অনেকেই প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন। এঁরা নিজেদের জ্ঞানী গুণী বা মহা প্রগতিশীল বলে জাহির করেন। তাঁরা নাকি খুবই আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। এদের সংখ্যা খুবই কম। তবে তাঁরা খুবই প্রভাবশালী। সরকারের কল কাঠি তাঁরাই নাড়েন
শুরুতেই চলমান বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার উপর এক বিন্দু আলোকপাত করলাম। ঐশী নামটা খুবই সুন্দর ও বেশ অর্থবহ। এক হাজারে এমন একটি নাম পাওয়া যায়না। নাম দেখে পরিবারের ঐতিহ্যের ইংগিত পাওয়া যায়। ভাইয়ের নামও সুন্দর। একজন ঐশী ,আরেকজন ঐহী। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নাম দুটো নিয়ে। যে মুরুব্বীরা নাম রেখেছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই এমন একটি দিনের কথা ভাবেননি। এক গরীব পরিবারের দুটি মেয়ের নাম জানি আমি। একজনের নাম জান্নাতুন নাঈম, আরেকজনের নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। জানতে চেয়েছিলাম কে নাম রেখেছেন, উত্তর পেলাম নানা। নানা আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। আমাদের সমাজের বহু শিক্ষিত পরিবারে এমন সুব্দর নাম রাখতে পারেনা। বা এ ধরনের নাম পছন্দ করেনা। ইদানিং কিছু কিছু ফার্সী নাম শুনতে পাচ্ছি। অনেকেই না বুঝে ফ্যাশন করে রাখেন। আবার এমন নানও অনেকেই রাখেন যার কোন মানে হয়না। যেমন সীমান্ত খোকন। আবার পার্থ অম্লান। বিশেষ করে মিডিয়াতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা এ ধরনের নাম রাখেন। প্রসংগত আমার এক বন্ধুর গল্প মনে পড়ছে। তাঁর চেলে মেয়েদের নাম বুঝে বুঝা যায়না তারা হিন্দু না মুসলমান। কোন এক অপশানাল বা ঐচ্ছিক ছুটিতে ওরা স্কুলে গেলে শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন ওরা কেন স্কুলে এসেছে, ওদেরতো ছুটি। তখন বন্ধুর সন্তানেরা বলেছিল তারা মুসলমান। অনেকেই খাঁটি বাংলা রাখার কারণে এমন বিভ্রাট তৈরি হয়। আমার পরিচিত এক জন সাংবাদিকের নাম যোশেফ শতাব্দী। আপনারাই বলুন ইনি কে? তাঁর ধর্ম পরিচয় কি?
আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা নাম পরিবর্তন করে নতুন একটা নাম গ্রহণের রেওয়াজ আছে। বেশীর ভা ক্ষেত্রেই তাঁরা হিন্দু নাম করতেন। যেমন আমার বন্ধু কবি আবদুল মান্নানের কবিনাম ছিল সমুদ্র গুপ্ত। আরেক সাংবাদিক বন্ধু সিরাজুল ইসলামের নাম ছিল আজিজ মিসির। আমাদের আশে পারে অনেকেরই এ ধরনের নাম ছিল। ইদানিং এ প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। নাম বদলাতে হয়নি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। শুনেছি, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক ১৯৪৬ সালে কোলকাতায় একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। নাম ছিল ‘দু:খে যাদের জীবন গড়া’। এ ছবির নায়ক ছিলেন ফতেহ লোহানী। আর পরিচালকের নাম চিল ওবায়দুল হক সাহেবের। সে সময়ে নাকি তিনি আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সিনেমাটি তৈরি করেছিলেন। সে সময়ে কোলকাতার সাম্প্রদায়িক অবস্থা ভাল ছিলনা। ফলে হিন্দুরা হলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। কারণ সিনেমাটি মুসলমানের তৈরি। পরে তিনি নাম বদল করে নিজের নাম রেখেছিলেন হিমাদ্রি চৌধুরী ও ফতেহ লোহানীর নাম রেখেছিলেন কিরণ কুমার। তখন মোম্বাইতেও এ অবস্থা বিরাজ করতো। তাই দীলিপ কুমার হয়েছিলেন ইউসুফ খান। কিন্তু রাজকাপুরকে নাম বদলাতে হয়নি। এখন মোম্বাইয়ের মুসলমান নায়কদের নাম বদলাতে হয়না। আমাদের ঢাকায় নাম বদলানের কালচার এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রসংগটা উঠেছে ঐশীর নাম নিয়ে। নামটা সত্যিই ভাল। কিন্তু ভাল নামের জন্যে ভাল পরিবেশ ও শিক্ষা দরকার। ভাল সমাজ ও ভাল দেশ দরকার। শিক্ষা , কর্ম ও পরিস্থিতি পরিবেশের কারণে ভাল নামও মন্দ নামে পরিণত হয়। যেমন আবুল হাকামের নাম আবু জেহেলে পরিণত হয়েছে। বাংগালীরা আবার বুঝতে না পারার কারণে ভাল শব্দকে মন্দ হিসাবে ব্যবহার করে। যেমন অথর্ব। এই শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অথর্ব বেদের রচয়িতা হলেন অথর্ব মুনি। বাংগালীদের কাছে এই শব্দের অর্থ অকেজো। কোন কাজের নয়। আবার মন্দ কাজ বা বেঈমানীর জন্যে মীরজাফরের নাম নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে গেছে। আবার রাবণের ভাই বিভীষণ। রাজ্যলোভে রামের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। তাই বলা হয় ঘরের শত্রু বিভীষণ। জগতের সব ভাষাতেই এমন শব্দ আছে। কিন্তু জ্ঞানী মানুষকে কেউ অথর্ব বলেনা।
কিন্তু ঐশী এমন করলো কেন? আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে গেছে। ঐশী কি এতই বেপরোয়া ছিল যে, স্বাধীন অবাধ জীবন যাপনের জন্যে শেষ পর্যন্ত মা বাবাকে হত্যা করবে? তাও আবার রাত ১১টায় কফির সাথে ৩০টা করে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে। মাকে আগেই ৩০টা ঘুমের বড়ি/ট্যাবলেট মিশানো কফি খাওয়ানো হয়েছে। পরে বাবাকে। মায়ের ঘুম ভাংছেনা দেখে বাবা মাকে কোলে তুলে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাবার মনে একবারও প্রশ্ন জাগেনি এত গভীর ঘুম কেন? এক কাপ/মগ কফির সাথে ৩০টা ট্যাবলেট কি কয়েক মিনিটের মধ্যেই গলে গেলো? মাকে ১১ বার স্ট্যাব বা ছুরির আঘাত করা হয়েছে। মার ঘুম ভাংগেনি। এমন কি নড়ে চড়েওনি। একবার দুইবার করে ১১বার আঘাত করা হয়েছে। মা টু শব্দটিও করেনি। মায়ের ঘুম ভাংগেনি। বিছানায় রক্ত, কাপড় চোপড়ে রক্ত, ঐশীর কাপড়ে রক্ত লাগেনি? তাহলে রক্তমাখা ঐশীর পরণের কাপড়ইবা কোথায় গেলো? একেবারে সোজা হিসাব। ঐশী স্বীকার করলো সে বাবা মাকে খুন করেছে আর অমনি পুলিশ ঐশীর জীবনধারা প্রকাশ করতে লাগলো মিডিয়ার কাছে । বিচারে ঐশীর শাস্তি হয়ে গেলেই কি সমস্যার সমাধান গেলো? না, আমিতো মনে করি সমধান হয়নি। দেশবাসীর মনে আরও হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন একটি নিষ্ঠুর ঘটনার প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
সবাই শুধু বলে চলেছেন,ঐশী বখে যাওয়া মা বাবা খুবই আদরের মেয়ে। সে নেশা করতো,গভীর রাতে বাড়ি ফিরতো, বাবা মার শাসন মানতোনা। নিজের ইচ্ছা মতো চলতো। এমন কি বন্ধু বান্ধব নিয়ে বাসাতেও আড্ডা মারতো। কতদিন ধরে ঐশী এ ধারার জীবন যাপন করছে? মনে রাখতে হবে ঐশীর বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি জানেন অপরাধীকে শাস্তি দিতে হয়। তাহলে তিনি কি মেয়ের চলা ফেরা, আচার ব্যবহারের পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করেননি? খবরের কাগজে এসেছে বাবা মা মেয়েকে শাসন করতে গেছেন বলেই মেয়ে ক্ষ্যাপে গিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। কোথাও কোন সাক্ষী নেই, মেয়ে একাই এ বিশাল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। শক্তিশালী একজন ঘুমন্ত পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে দুটি ঘা দিলো আর তিনি একটু নড়া চড়াও করতেননা। গল্পটা হলো ঘুমের বড়ি খেয়ে তিনি একেবারেই অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। ধারালো ছুরির ঘায়েও তিনি টের পাননি। আমাদের সাংবাদিকরা এখন ‘এম্বেডেড’।শিশুদের যেমন ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতে হয় তেমনি তাদেরও খবর খাইয়ে দিতে হয়। যা খাওয়ানো হয় তাই তাঁরা জনগণকে জানিয়ে দেন। এখনতো রেব ও পুলিশের বিরাট মিডিয়া সেন্টার আছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে এখন থানার এসআইও জাতির উদ্দেশ্যে বাণী পেশ করেন। বিচার হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ধৃত ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয় অপরাধী হিসাবে। আর মিডিয়া বিনা বাক্যে বিনা দ্বিধায় ওসব খবর দেখায় ও ছাপায়।এক সময় এ দেশের মিডিয়া এ রকম ছিলনা।
ঐশীর বিষয়টি গভীর ভাবে ষ্টাডি ও গবেষণা করা দরকার। মনো বিজ্ঞানীরা হয়ত বলবেন,ওই বয়সের ছেলে বা মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে এ রকম করতে পারে। কিন্তু আমি বলবো, দারোগা বা ইন্সপেক্টর সাহেব কেমন মানুষ ছিলেন,তাঁর ছাত্র জীবন বা পুলিশ জীবন কেমন ছিল? এসব পুলিশ বিভাগের জানার কথা। আমরা শুনেছি বা খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে দারোগা সাহেবের পারিবারিক জীবন শান্তিপূর্ণ ছিলনা। তাহলে কি নিয়ে বিরোধ ছিল? অধিক টাকা কামানোর বিরোধ না স্ত্রী উচ্চ পরিবারের মেয়ে তাই বনিবনা হচ্ছিলনা। খবরের কাগজে একথাও ছাপা হয়েছে যে,ঐশীকে হাত খরচের জন্যে মাসে এক লাখ টাকা দেয়া হতো। টাক দেয়া বন্ধ করে দেয়ার পর সে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। মা নাকি বাবার তুলনায় একটু বেশী কড়া ছিলেন। ফলে মায়ের উপর বেশী রাগ ছিল এবং মাকে ১১বার ছুরির আঘাত করা হয়েছে। এসব কিন্তু ঐশী তদন্তকারী পুলিশ সাহেবদের জানিয়েছে। সময় পার হচ্ছে, আর ঐশীও ঘোর কাটিয়ে স্থিতু হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যেই ঐশী আদালতে জানিয়েছে যে,তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে জবানবন্দী আদায় করা হয়েছে। তাই ১৬৪ ধারায় ঐশী যে জবানবন্দী দিয়েছে তা প্রত্যাহার করতে চায়। ঐশী এ ধরণের কিছু একটা করতে পারে তা নিশ্চয়ই পুলিশ সাহেবদের জানার কথা।
ঐশী ছাড়া অন্যদের কথা মিডিয়াতে আমরা তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাটায় ঐশী ছাড়া আর কেউ নাই। সুমি কি বলেছে তাও মিডিয়াতে তেমন কিছু আসছেনা। বাকি যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কথাও তেমন কিছু শুনা বা জানা যাচ্ছেনা। এমন কি ঐহীর কথাও শুনা যাচ্ছেনা। সাগর রুনির সন্তান মেঘের কত সাক্ষাতকার টিভি বা খবরের কাগজে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ঐশীর ব্যাপারে মিডিয়া কিছুটা নির্লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। ঐহী যে খালার বাসায় আছে সেই খালা খালু বিষয়টা নিয়ে কি ভাবছেন তাও জানা দরকার। তাঁরাতো ঐশী এবং তার বাবা মাকে ভাল করেই জানেন। ঐশীর চাচা যিনি ঐশীর জামিনের জন্যে চেষ্টা করছেন তাঁর কোন খোঁজ খবর আমরা জানতে পারছিনা। ঐশীদের পরিবারের সাথে চাচাদের সম্পর্ক কেমন ছিল তাতো পুলিশ সাহেবেরা বের করতে পারেন। আমরা জানতে পেরেছি,ঐশীর বাবা গোয়েন্দা বিভাগে রাজনৈতিক শাখায় কাজ করতেন। যখন খুন হয়েছেন তখন তিনি কোন ফাইলটি নিয়ে কাজ করছিলেন তাতো তাঁর সহকর্মীদের জানার কথা। তিনি কি এমন কোন রাজনৈতিক ফাইল নিয়ে কাজ করছিলেন যা তাঁর জীবনের উপর হুমকি ছিল। সে রাতে তিনি বাসায় ফিরেছেন রাত এগারটার দিকে। অত রাতে কি তিনি নিয়মিত ফিরতেন? না শুধু সেদিনই দেরিতে বাসায় ফিরেছেন। তিনি কি মদ পান করতেন? বাসায় কি মদ পান করতেন? এসব প্রশ্ন এক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। আমাদের ক্রাইম রিপোর্টারেরা এখনও পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেননি।
অপরদিকে মাসে এক লাখ টাকা মেয়ের হাত খরচ দেয়ার মতো কি ইন্সপেক্টর সাহেবের ছিল? নিশ্চয়ই ছিলনা। তাহলে শুরুতেই কে বা কারা এ খবরটি প্রচার করেছে? এখনি বা এ ব্যাপারে মিডিয়া চুপচাপ কেন?
ইতোমধ্যে ঐশীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের সমাজ জীবন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমাদের সংসার গুলোতে সংসার বাঁধন দিন দিন ঢিলা হতে শুরু করেছে। ধর্মীয় চেতনা এখন আর কাজ করেনা। বাবা মা ধর্ম চর্চা করেন না। তাই তাঁরা সন্তানদের এ ব্যাপারে কিছু বলেন না বা বলতে সাহস করেন না। এমন কি সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে বা কি করছে সে খবরও আজকাল রাখেন না। ধনী পরিবারের জীবন হয়ে গেছে ক্লাব ভিত্তিক। মদ পান সবার জন্যে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। বারো তের রুমের বাড়ি গুলোতে চার পাঁচটা করে ড্রয়িংরুম। বেগম সাহেব কোথায় আছেন বা যাচ্ছেন তা সাহেব জানেন না। জানলেও সাহেব চুপ করে থাকেন সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে। বাড়িতে সবার জন্যেই আলাদা আলাদা ড্রয়িংরুম। ব্যক্তি স্বাধীনতার যুগে কেউ কারো প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করেন না। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে,ঝুটি বাঁধে। নানা দাঁড়ির ফ্যাশান করে। দিনে বা রাতে শিশা ক্লাবে যায়। অথবা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে গাড়িতে লং ড্রাইভে যাচ্ছে। মেয়ে অবস্থাও একই রকম। জিন্সের টাইট প্যান্ট পরে,টিশার্ট বা শার্ট পরে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে। রাতের বেলায় রাস্তায় পুলিশ ধরলেই বলে আমি অমুকের মেয়ে বা ছেলে। তখন পুলিশ থ্যান্ক ইউ স্যার বা মেডাম বলে ছেড়ে দেয়।
এর প্রধান কারণ শিক্ষিত বা উচ্ছ শিক্ষিত পরিবার গুলোতে এখন ধর্ম চর্চা নেই। তাঁরা নাকি সবাই সেক্যুলার বা ধর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যাঁরা ধর্মচর্চা করেন তাঁদের মৌলবাদী বা জংগী বলে গালি দেয় বা প্রতিক্রিয়াশীল বলে তাই জানতে ইচ্ছে করে ঐশীর পরিবার ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন অতি আধুনিক পরিবারে পরিণত হয়েছিল কিনা। আমার কেমন যেন বিশ্বাস হয়না ঐশী এমন কাজটি করেছে। যদি করেও থাকে তার জন্যে কে দায়ী? নিজের পরিবার, না সমাজ বা রাস্ট্র ব্যবস্থা? আমাদের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমার মত হচ্ছে ঐশীর ঘটনার গভীর তদন্ত ও বিশ্লেষন হওয়া দরকার।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


রাজনীতিতে অসহনশীলতা গণতান্ত্রিক চর্চা ও বিদেশী সালিশী / এরশাদ মজুমদার

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করে বলেছেন সবার গ্রহনযোগ্য এবং সবার অংশ গ্রহণের মাধ্যমে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। বান কি মুনের ফোনালাপ নিয়ে এখন আমাদের মিডিয়া , বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা কথা বলার এন্তার সুযোগ পেয়েছেন। এবং সে সুযোগের সদ্ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন। আমাদের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের মহাজনেরা জাতির উদ্দেশ্যে সব সময় উপদেশ খয়রাত করে থাকেন। চট জলদি যে কোন বিষয়ে কথা বলার জন্যে টিভি চ্যানেল গুলোর কাছে বেশ কিছু সম্মানিত বিজ্ঞজন রয়েছেন। প্রসংগ এলেই চ্যানেল রিপোর্টারেরা ওই বিজ্ঞজনদের সাথে যোগাযোগ করে ওদের কথা জাতিকে শোনায়। এই বিজ্ঞজনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অনেক কথা বলেছেন। মধ্যরাতে যাঁরা টকশোতে অংশ গ্রহন করেন তাঁদের নিশি কুটুম বলেছেন। বিরোধী দলের নেত্রী এ ব্যাপারে কোন কথা বলেন না। এছাড়া তিনি এমনিতেই কম কথা বলেন।
বান কি মুনের ফোনালাপ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিজ্ঞজনেরা বলেছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে এ ধরণের ফোনালাপে কোন কাজ হবে না। কমনওয়েলথ মহাসচিব স্যার নিনিয়ানও চেষ্টা করেছিলেন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সমঝোতার জন্যে। এর আগে আমার বিভিন্ন লেখায় বলেছি বংগবন্ধু ছিলেন একজন বড় মাপের রাজনীতিক ও জননেতা। জনগণের কল্যাণে যা ভাল বুঝতেন তার জন্যেই লড়াই করতেন। গণতন্ত্র যে শুধুই সমঝোতার পথ একথা তিনি সহজে বুঝতেন না, বা বুঝলেও খুব বিলম্বে বুঝতেন। এছাড়া এমন সব কথা বলতেন যা তিনি কখনও বাস্তবায়ন করতে পারবেননা । জনপ্রিয় কথা বলে তিনি সীমাহীন জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বংশীবাদকের মতো। তাঁর বাঁশীর বাদন বা সূর শুনে লাখো লাখো অবুঝ মানুষ ঝাপিয়ে পড়তো। কিন্তু শেষ ফলাফল ছিল বিবাদ বিসম্বাদ, মারামারি কাটাকাটি। এক সময় তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন তাঁর গুরু ও পিতৃতূল্য মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী। তারপরে চলে গেছেন গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী অন্যান্য নেতারা। তখন শেখ সাহেব দলের একচ্ছত্র নেতা হয়ে গেলেন। তাঁর ইমেজ হয়ে গেল হিমালয়ের মতো। তিনি সবকিছু দেখতেন ও বুঝতেন হিমালয়ের শিখরে বসে। যারা তাঁর আশে পাশে ছিলেন তাঁরা চিন্তা ও মন মানসিকতায় ছিলেন ডোয়ার্প বা বামন। তিনি ছিলে ব্যঘ্র আর বাকিরা ছিলেন ইঁদুর। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁকে পরামর্শ দেয়ার মতো তোফায়েল সাহেব গং ছাড়া তেমন আর কেউ ছিলেন না।
রাজনীতিকে গণ মানুষের দ্বার প্রান্তে পৌছে দিয়েছেন মজলুম মানুষের নেতা মাওলানা ভাসানী ও শেখ সাহেব। মাওলানা সাহেব নিজেই বলেছেন,রাজনীতিতে তিনি সবচেয়ে বেশী সাংগঠনিক ক্ষমতা পেয়েছেন শেখ মুজিবের কাছে। একথা সত্যি যে, আওয়ামী লীগই এ দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল খাজা গজা মার্কা মুসলীম লীগের রাজনীতি থেকে মুক্ত করেছে। মাওলানা সাহেব ক্ষমতার রাজনীতি করতেন না। তাঁর কাজ ছিল সাধারন মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যা তিনি সারা জীবন করেছেন। কিন্তু শেখ সাহেব ক্ষমতার রাজনীতি করতেন। ৫৪ সালে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী মন্ত্রী। সাংগঠনিক ক্ষমতার জন্যেই তাঁকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীত্ব করার মতো মানসিকতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা কোনটাই তাঁর ছিলনা। এ ব্যাপারে তাঁর কোন আগ্রহ বা অনুশীলন ও ছিলনা। তিনি মন্ত্রীত্ব থেকে রাস্তার ক্ষমতাকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। যা বলছি এসব আমার ব্যক্তিগত অনুভুতি ও ব্যাখ্যা। আমি জানি অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে যাঁরা সহনশীল বা ধৈর্যশীল নন তাঁরা হয়ত আমাকে গালাগাল করবেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সমঝোতা বা সর্বোচ্চ সহ অবস্থানের যে রীতিনীতি আছে তা কখনই শেখ সাহেবের রাজনীতিতে ছিলনা। ফলে তিনি রাজনীতির কঠিন ও জটিল মূহুর্ত গুলোকে সামাল দিতে পারতেন না। স্বাধীন বাংলাদেশে শুরুতেই তিনি নিরম্কুশ ও একচ্ছত্র ক্ষমতা পেয়েও তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতি গুলোকে একজন প্রজ্ঞা সম্পন্ন দূরদর্শী গণতান্ত্রিক নেতার মতো সামাল দিতে পারেননি। তিনি হতে পারেননি নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাথির মোহাম্মদ, লী কুয়াং বা জওহারলাল নেহেরুর মতো। উল্টো তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভুত জটিল পরিস্থিতি গুলোকে মোকাবিলার জন্যে রাস্ট্রের অত্যাচারী ক্ষমতাকে ব্যবহার করে হাজার হাজার তরুণকে হত্যা করেছেন বলে তাঁর প্রতিপক্ষরা অভিযোগ করতেন এবং এখনও করেন। তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে সময় অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন।
আমি শেখ সাহেবকে অতি কাছে থেকে দেখেছি। তিনি সব সময়েই অতি আপনজনের মতো ব্যবহার করেছেন আমার সাথে। তাঁর একটি দরদী মনও ছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন দূর্বল শাসক। রাস্ট্র বা সরকার চালাতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত খোয়াল খুশীকে খুব বেশী গুরুত্ব দিতেন। তিনি তাঁর চারিদিকে ভক্ত পরিবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করতেন। ওই তথাকথিত ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন সীমাহীন অসহায়। যেদিন বংগবন্ধু চলে গেলেন সেদিন একদল বংগভবনে গিয়ে মন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে বংগবন্ধুকে ফেরাউন বলেছেন। বাকিরা সবাই পালিয়ে গেছেন। সেদিন রাস্তায় কোন মিছিলও বের হয়নি। লোকে বলে কেউ ইন্নালিল্লাহ ও বলেননি। প্রসংগক্রমেই পেছনের এত কথা বললাম। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সমঝোতা বলে কোন শব্দ নাই। নেতারা সবাই কথা বলেন রাজকীয় ফরমান জারীর মতো। হুমকী ধামকী ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। আমি নিজেই শুনেছি আওয়ামী নেতারা বলেন,এশিয়ায় নাকি আওয়ামী লীগের মতো এত শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। রাস্তার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যে লগিবৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। চট্টগ্রামে নবনির্মিত ষ্টেশন ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। বংগভবনে অক্সিজেন বন্দ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এসবই নাকি আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এখন সংসদে মেজরিটির জোরে সংবিধান পরিবর্তন করে এখন বলছে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করতে হবে।
আবার পেছনের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। এক সময় এই দলটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল ছিল। পূর্ববংগের স্বায়ত্বশাসনের দাবীকেও সমর্থন করেনি। দলের নেতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেব বলেছিলেন পূর্ববাংলাকে ৯৮ ভাগ স্বায়ত্বশাসন দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনিই জিরো প্লাস জিরো থিওরী দিয়েছিলেন। বলেছিলেন,আমেরিকা পৃথিবীতে একমাত্র এক। বাকি সবাই শূণ্য। আমরাও শুণ্য। আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করতে আমরা দশ হতে পারবো। আওয়ামী লীগই দলের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ভাসানীকে ভারতের দালাল বলে গালি দিয়েছে। মাওলানা সাহেবের জনসভায় আক্রমণ করেছে। মাওলানা সাহেবের প্রতিষ্ঠিত কাগজ ইত্তেফাক তাঁকে লুংগি মাওলানা বলে গালি দিতো। এই দলটিই হঠাত্‍ করে একদিন স্বায়ত্বশাসনের একমাত্র দাবীদার হয়ে গেল। এই দলটিই একদিন সমাজতন্ত্রী হয়ে গেল। আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়ার সমর্থক হয়ে গেল। এখন আবার আমেরিকার বন্ধু হবার চেষ্টা করছে। এই দলটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার একমাত্র দাবীদারে পরিণত হয়েছে। তাঁরা ছাড়া আর কেউই নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করেনি। এ ব্যাপারে আর কারো অবদান স্বীকার করতে আওয়ামী লীগ রাজী নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এ ধরনের সাংবিধানিক সংকট এর আগে তাঁরা বহুবার সৃষ্টি করেছেন। বলা নেই ,কওয়া নেই হঠাত্‍ করেই ৭২ সালে বললেন,দেশটি হবে ধর্মহীন বা সেক্যুলার, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নয়, মানুষই হবে সার্বভৌম। যারা এর বিরোধিতা করবে তারা হবেন রাস্ট্রদ্রোহী। যে দলটি পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজির বিকাশের জন্যে চুরি চামারি করতে রাজী ছিল,সেই দলটিই স্বাধীনতার পর হয়ে গেল সমাজতন্ত্রী। পানদোকান থেকে শুরু করে সবকিছুই জাতীয়করণ করে নিলো। ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী কর্মীকে বানিয়ে দিল মিলের প্রশাসক। শুরু হলো সমাজতন্ত্রের নামে লুটপাট। ৭২-৭৫ এ যাঁরা লুটপাট করে পুঁজি তৈরি করেছেন তাঁরাই এখন দেশের ব্যান্ক বীমার মালিক। ৮৩ সালে যাঁরা দশ লাখ টাকা দিয়ে ব্যান্ক করেছেন তাঁরা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাটজনীতিতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একবার যিনি কোন রকমে চাঁদা তুলে এমপি হয়েছেন তিনি এখন হয়ত একশ’ কোটি টাকার মালিক। মাত্র ৪০ বছরে জগতের কোন দেশে এত ধনীর সৃষ্টি হয়নি। এই দেশেই ২০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব। অনেক বিদেশী বলেন, বাংলাদেশে হাওয়ায় টাকা উড়ে। যে দেখে সেই সে টাকা ধরতে পারে।
আওয়ামী রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার হলো সংকট তৈরি করে তার থেকে ফায়দা নেয়া। ২০০৭ সালে সাদা পোষাকে সেনা বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিল আওয়ামী লীগের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কারণে এ কথা আগেই বলেছি। পরে শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন,ওই সেনা সমর্থিত সরকার ছিল আওয়ামী আন্দোলনে ফসল। তিনি একথা বলেছিলেন মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের সকল বেআইনী কাজের বৈধতা দিবে আওয়ামী লীগ। অনেকেই মনে করেন,ভারতীয় গোয়েন্দারা আর কিছু সেনা নেতার কারণেই আওয়ামী লীগ তখন ওই ভয়ংকর পথে পা বাড়িয়েছিল। ২০০৭ সালের সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আজও ওই অর্থনৈতিক ক্ষতির ঘা শুকায়নি। এমন কথাও বাজারে চালু আছে যে, সে সময়ে সরকার পরিচালনা করতো ভারতের হাই কমিশনার পিনাক রণ্জন। ভারতের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ইসলামী চেতনাকে ধ্বংস করে দেয়া। এটা অবশ্য সত্যি যে বাংলাদেশ থেকে ইসলামী চেতনাকে ধুয়ে মুছে বিদায় দিতে পারলে ঢাকায় ভুটানের মতো সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন কি সিকিমের মতোও হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশকে ইসলাম মুক্ত করার ব্যাপারে ভারত,ইজরায়েল ও পশ্চিমা দেশ গুলো একমত। মিশরের কথাই একবার চিন্তা করুন। সেখানে ঘটছে তার মূল লক্ষ্য হলো রাস্ট্র ব্যবস্থা থেকে ইসলামকে বিদায় করে দেয়া। সেদেশেও আমাদের দেশের মতো সেক্যুলার বা ধর্মহীন/ধর্ম বিমুখ শিক্ষিত ক্ষমতাবান মানুষ আছে। মিশরে এবার সেনা বাহিনীর অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে সউদী আর ইজরায়েল সরকার। পেছনে সমর্থন জানিয়েছে আমেরিকা ও তার সেবাদাসেরা। ভারতও গোপনে মিশরের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গুজব রয়েছে বাংলাদেশেও সেনাবাহিনীর অফিসারদের মধ্যে ভারতের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আর ওই গোয়েন্দাদের সমর্থন জুগিয়ে চলেছে ইজরায়েলী গোয়েন্দারা। রাস্ট্র হিসাবে ইজরায়েলকে ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আজও স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ ইজরায়েল মুসলমানদের শত্রু। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হলো ডাবল স্ট্যন্ডার্ড। কূটনীতিতে নাকি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড(মোনাফেকি) একটি খুবই কার্যকরী কৌশল। আওয়ামী লীগ নিজেদের সেক্যুলার(ধর্মহীন) বলে দাবী করে। আবার রাস্ট্র ধর্ম ইসলামকে সংবিধানে জারী রেখেছে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর নাম তুলে দিয়েছে। এটা এক ধরনের বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহী নীতি। পূজাও করবো,নামাজ ও পড়বো। তথাকথিত মুসলমান মোনাফেকদের জন্যেই আল্লাহপাক বিশ্বাসীদের সংবিধান আল কোরআনের সুরা আনকাবুতে বলেছেন,‘মানুষ কি মনে করে, আমরা ইমানদার- এ কথা বললেই তারা পার পেয়ে যাবে, তাদের পরীক্ষা করা ’? ‘শুধু লা ইলাহা ইল্লাহ আল্লাহ মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বললেই মুসলমান হওয়া যাবেনা। ওই কালেমার দায়িত্ব পালন করতে হবে। জগতে বহু মুসলমান আছেন যাঁরা নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, হজ্ব পালন করেন,জাকাত দেন। তাঁরা ভাবেন এসব করলেই একজন খাঁটি মুসলমান হওয়া যায়। না কক্ষনো না। সংবিধানে বলবেন মানুষ সার্বভৌম, বাইরে এসে বলবেন আল্লাহ সার্বভৌম তা চলবেনা। মিশরের সেক্যুলার সেনা বাহিনী ইজরায়েলের সেবাদাস। ইজরায়েল আর মুশরিকদের নির্দেশে নিজ দেশের মুসলমানদের হত্যা করে। মিশরের সেনাবাহিনী চায় সেক্যুলার ইসলাম, যা ভারত আমেরিকা ও ইজরায়েল সমর্থন করে। আমাদের দেশেও হেফাজতের সদস্যদের সরিয়ে দেয়ার জন্যে সরকারকে রাতের অন্ধকারে কয়েক লাখ গোলা বারূদ ব্যবহার করতে হয়েছে।
নির্বাচন কালীন সরকার ব্যবস্থা কি রকম হবে তা একটি চলমান সংকট। এ সংকট তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এ সংকটের কারণে বহু প্রাণ হানি হয়েছে, বহু সম্পদ নষ্ট হয়েছে, অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এর আগেও একই সমস্যা বা সংকটে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। নির্বাচন কালীন সরকার ব্যবস্থা আমাদের চলমান রাজনীতিরই ফসল। এটাই বাস্তবতা। চলমান রাজনীতি যতদিন থাকবে ততদিন এ ব্যবস্থা জারী রাখতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এ দূর্ভোগ জাতি আর পোহাতে চায়না। আমি মনে বাংলাদেশের প্রধান মৌলিক সমস্যা হচ্ছে ৯০ ভাগ মুসলমানের জীবন বিধান, তাদের রাজনীতি সংস্কৃতি আইন ও ইতিহাস রচনা মাপ কাঠি কি হবে? জীবন ব্যবস্থার উপাদানের সূত্র কি হবে? আপনারা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশের আইন আদালত, প্রশাসন সবকিছুই চলে বৃটিশ আইন মোতাবেক। আমাদের রাজনীতিকরা মনে করেন ৯০ ভাগ মুসলমানের জন্য বৃটিশ আইনই শ্রেষ্ঠ। ইসলাম সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকলেই বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি, রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি সহ সবকিছু হওয়া যায়। এ ব্যাপারে ইসলামিক দলগুলো ছাড়া বাকি সব দল একই পথের দিশারী। যদিও বিএনপি বলে থাকে তাঁরা জাতীয়তাবাদী ইসলামী জীবন বিধানে বিশ্বাস করেন। ইতোমধ্যে বিএনপি অনেকবার ক্ষমতা এসে থাকলেও জাতির জীবনে তেমন কোন মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। শহীদ জিয়া বেঁচে থাকলে হয়ত বাংলাদেশ আজ এমন মোনাফেকী অবস্থায় পৌঁছাতো না। তিনি কোরাণে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্থাপন করেছিলেন। বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছিলেন, সমাজতন্ত্রের জায়গায় সামাজিক ন্যায় বিচারের কথা বলেছিলেন।
এমনিতে সব দলই বলে থাকেন,ক্ষমতায় গেলে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করবেনা। এ ওয়াদা রাজনীতিবিদরা ৫৪ সাল থেকে করে আসছেন। সত্যি কথা হচ্ছে বাংলাদেশে আমরা ৯০ ভাগ মুসলমান হলেও বেশী ভাগই আরবী নামদারী নামের মুসলমান। এছাড়া, আমাদের বেশীর ভাগ মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। সাধারন মানুষের অসচেতনতা ও অশিক্ষাই রাজনীতিবিদদের মোনাফেকে পরিণত করেছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


মহানগর বাসী হঠাত্‍ করে রাতারাতি সারা মহানগর জুড়ে বিগত সাড়ে চার বছর ধরে সরকারের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দেখতে পাচ্ছেন। চট জলদি এ নিয়ে নাগরিকরা বেশ কিছু জোক বা কৌতুক তৈরি করেছে। অনেকেই বলেছেন নাগরিক সুখবর দেয়ার জন্যে সরকার ঈদের আগেই কুতকুতি দিতে শুরু করেছেন। আবার অনেকেই বলেছেন,ঈদের ছুটিতে যান বাহন না পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছেন না তাঁরা বিলবোর্ড গুলো পড়ে পড়ে সময় কাটাতে পারবেন। আরেক নাগরিক বলেছেন,বিটিভির খবর কেউ শোনেনা বা দেখেনা তাই প্রাইভেট চ্যানেলে বাধ্যতামূলক সরকারী খবর প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও লোকে সরকারী খবর শোনা বা দেখেনা। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। প্রাইভেট কোম্পানী গুলোর বিলবোর্ড রাতারাতি হাওয়া হয়ে গেছে।

Read Full Post »