Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2010


আইনের দৃস্টিতে একদিন লগি বৈঠাও কি অস্ত্র হিসাবে গন্য হবে?

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেগম হাসিনা ওয়াজেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাজনীতিতে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। সমকালের বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলেই তাঁর নাম আসবেই।এখন দেখছি ভাষার ইতিহাসেও তাঁর নাম নথিভুক্ত হবে। যেমন ঘেরাও বন্দ হরতাল মিছিল শব্দগুলো এখন ইংরেজী অভিধানেও পাওয়া যায়। আইউব বিরোধী আন্দোলনের মাওলানা ভাসানী ঘেরাও শব্দটিকে জনপ্রিয় করেছেন। লগি বৈঠা শব্দ দুটি আমরা এতদিন নৌকার সরন্জাম হিসাবে জেনে এসেছি। এখন শব্দ দুটি রাজনৈতিক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। আমাদের দেশের আইনে লাঠিকে অস্ত্র হিসাবে গন্য করা হয়। কারন লাঠি ব্যবহার করে যে কোন কাউকে আঘাত করা যায়। এমন কি হত্যাও করা যায়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে বেগম হাসিনা ওয়াজেদই প্রথম লগি বৈঠা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হয়ত মনে করেছেন লগি বৈঠাকে আইন এখনও অস্ত্র মনে করেনা। তাই তিনি তাঁর কর্মীদের ২৮শে অক্টোবর লগি বৈঠা ব্যবহার করতে বলেছিলেন।এটা দিয়ে যে মানুষ হত্যা করা যায় একথা নিশ্চয়ই ভাবতে পারেননি। ২৮শে অক্টোবরও পুলিশও লগি বৈঠাকে অস্ত্র মনে করেনি বলে নিষিদ্ধ করেনি। নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুকে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পরও লগি বৈঠাকে অস্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত বলবেন লগি বৈঠাতো নৌকারই অংশ। নৌকা রাস্তায় বা পানিতে চালাতে গেলেতো লগি বৈঠা লাগবে। আওয়ামী কর্মীরাও হয়ত ভাবছে লগি বৈঠা যেহেতু কোন অস্ত্র নয় তাহলে এটা ব্যবহার করতে আপত্তি কোথায়? তাছাড়া নেত্রীতো বলেই দিয়েছেন লগি বৈঠা ব্যবহার করতে।

২৮শে অক্টোবর পল্টনে যে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটেছে তার ভিডিও দেখলে এখনও যেকোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। এই ভিডিও চিত্র যখন সারা পৃথিবীর টিভি দেখিয়েছে তখন আমাদের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ববাসীর একটা ধারনা তৈরী হয়েছে। ফিলিস্তিনীদের উপর ইজরাইলীদের অত্যাচার, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকার অত্যাচার, কাশ্মীরে ভারতের অত্যাচারকেও ম্লান করে দিয়েছে। আমরা আবু গারীব ও গুয়ান্তানামো কারাগারের অত্যাচারের ভিডিও চিত্র দেখেছি। ওসব ছিল তথাকথিত সভ্যতার মোড়কে লুকানো গোপন অত্যাচার। পল্টনের অত্যাচার ছিল দিনে দুপুরে হা্জার হাজার মানুষের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা। মৃতদেহের উপর উল্লাসে নৃত্য করা। সবকিছুই হয়েছে সরকারের সামনে। কিন্তু সরকার তখন কিছুই বলেনি। আজও বলছেনা। তবুও আমরা শুনি  ন্যায় বিচার, আইন আদালত শব্দ গুলো। ১/১১র সরকার এর বিচার করেনি, এমন কি কোন উদ্যোগও নেয়নি। কারন তারাতো সেই ঘটনার সুযোগ নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। সেই সময়ে আমরা আরও শুনেছি বংগভবনে আলো বাতাস পানি সব বন্ধ করে দেয়া হবে। এসব নাকি গনতান্ত্রিক ভাষা। তখনি আওয়ামী নেত্রী বলেছিলেন ১/১১র সরকার আমাদের আন্দোলনের সরকার। কোন আন্দোলন? লগি বৈঠার আন্দোলন। বর্তমানে বাংলা একাডেমীর অভিধানে লগি বৈঠার যে অর্থ আছে তাতে নতুন মানে সংযোজিত হবে। এমন কি গুগুল বা উইকিপিডিয়াতে বেগম হাসিনা ওয়াজেদের জীবনীতেও এই ইতিহাস সন্নিবেশিত হতে পারে।

রাজনীতি ও ধর্মের কারণে হানাহানি ও দাংগার ইতিহাস বহু পুরাণো। আমাদের এ অঞ্চলে ভারত ও পাকিস্তানে নানা ধরনের দাংগা লেগেই আছে। পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নী- কাদিয়ানী দাংগা প্রায়ই লেগে থাকে। প্রগতিশীল ও স্যেকুলার নামে বহুল প্রচারিত ভারতে প্রতি বছর দাংগা হয়। কখনও হিন্দু মুসলমানে,কখনও শিবসেনা ও অন্যরা আবার কখনও হরিজন ও অন্যরা। বাংলাদেশে তেমন দাংগা নাই বললেই চলে। শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দাংগার ইতিহাস বইতে লিখেছেন সমাজ ও সরকারের ভেদনীতির ফলে ভারতে প্রতি বছর ১৫০ থেকে ৫০০ দাংগা হয়।ভারতে দাংগা কোন বিষয় নয়। এদেশে নানা অজুহাতে শিবসেনা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দাংগা লাগাবার ফিকিরে থাকে। গুজরাতের দাংগার কথা স্মরণ করুন। সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন মোদী দাংগা বাধিয়েছে এটা এখন সবাই জানে। ১৪৯২ সালের ক্রুসেড যুদ্ধের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের কথা মনে আছে। মুসলমান নিধনের জন্যে রাস্ট্রই উদ্যোগ নিয়েছিল। এই যুদ্ধ চলেছে প্রায় ২শ’ বছর।

শুরু করেছিলাম রাজনীতিতে লগি বৈঠার ব্যবহার ও প্রচলন নিয়ে। ‘ অল ক্রেডিট গোজ টু আওয়ার প্রাইম মিনিস্টার’। তিনি এর আবিস্কারক ও প্রচলনকারী। গাঁধীজীর অহিংস আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। দু:খের বিষয় হলো গাঁধীজীর ভক্তরা অহিংস থাকতে পারেনি। তাঁর চোখের সামনেই ভক্তরা দাংগা করেছেন, মানুষ হত্যা করেছে। তাঁরই ভক্তরা তাঁকে হত্যা করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভক্তরা লগি বৈঠার শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারেননি। তারা লগি আর বৈঠাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে। আপনাদের একটু পেছনের দিকে তাকাতে বলবো। ১৯৫৪ সালে  প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মহাজোট গঠণ করেছিলেন মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। সেই জোটের নাম ছিল যুক্তফ্রন্ট। মার্কা ছিল নৌকা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কারনে যুক্তফ্রন্ট বেশীদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারেনি। ওই সময়েই পরিষদের স্পীকার শাহেদ আলি সাহেবকে  ফোল্ডিংয়ে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কারা এ কাজ করেছেন তা অনেকেই জানেন। শরিক দলগুলোকে কোন পাত্তা না দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রদেশে ও কেন্দ্রে সরকার গঠণ করে। সেই সময়েই পূর্ব পাকিস্তানে ৯২ক ধারা জারী করে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে আইউব খান সামরিক শাসন জারী করে সারা পাকিস্তানের রাজনীতিকদের গ্রেফতার করে। এর আগে ১৯৫৭ সালে রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলনে দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানীর সাথে দেশের বিদেশনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্ধীর মতবিরোধ দেখা দিলে মাওলানা সাহেব আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাপ গঠণ করেন। পাকিস্তানের বিদেশনীতির প্রশ্নেই সোহরাওয়ার্দী সাহেব জিরো+জিরো থিওরী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তানকে থাকতেই হবে। অন্যের সাথে বন্ধুত্ব মানে জিরো+জিরো। মাওলানা সাহেব এ নীতির বিরোধিতা করেছে। রূপমহল সিনেমার সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকার লেজুড়ে পরিণত হয়। সেই থেকে আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। নতুন দল গঠণ করে মাওলানা সাহেব পল্টনে জনসভা ডাকলে আওয়ামী লীগ লাঠি নিয়ে সে সভা ভেংগে দিয়েছিল। তকন লগি বৈঠা ছিলনা। ছিল শুধু কাঠের চেলি। শুধু একবার ভাবুন, যে মানুষটা মাত্র ক’দিন আগেও দলের সভাপতি ছিলেন তারই সভা ভাংগার জন্যে কর্মীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। ৬৯ এর গণ আন্দোলন করে এই মাওলানা ভাসানী শেখ সাহেবকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত করেছিলেন। মাওলানা সাহেবই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা। তিনি এদেশের রাজনীতিকে গন মানুষের নিয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক সাহেব। এখন আওয়ামী লীগ তাঁকে চিনে কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। সম্ভবত ৭০ সালে পল্টনে মওদুদী সভা ভেংগে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ শুধু লাঠি বা কাঠের চেলি দিয়ে।

মোনায়েম খাঁর আমলে চাত্র রাজনীতিতে এনএসএফ নামক একটি ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়। এই ছাত্র সংগঠনের কাজ ছিল সরকার বিরোধী সকল ছাত্র সংগঠনকে ঠেংগানো। এই এনএসএফই ছাত্র রাজনীতিতে মারা মারির জন্যে হকি স্টিক সাইকেন চেইন সাপ ইত্যাদি আমদানী করে। আইউব আর মোনায়েম খাঁর বিদায়ের পর এনএসএফও ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে। ৭০ সাল পর্যন্ত এই দেশের রাজনীতিতে লাঠি কাঠের চেলি ব্যবহৃত হয়েছে। ৭০ এর শেষের দিকে মলোটভ ককটেলের নাম শুনা গেছে।  রাজনীতিতে পঁচা ডিম আর জুতার ব্যবহার বৃটিশ আমলেই চালু হয়েছে। শুনেছি শেরে বাংলা বলেছিলেন রাজনীতিতে ফুলের মালা আর জুতার মালা দুটোই থাকে। আওয়ামী মুসলীম গঠনের পর মাওলানা সাহেব যখন সারা দেশ সফর করছিলেন তখন সরকারী দল মুসলীম লীগ ও তার পান্ডারা সভা ভাংগার জন্যে লাঠি জুতা ব্যবহার করতো। শুনেছি মাওলানা সাহেব সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম জনসাভা করেছিলেন আরমানীটোলা মাঠে। সরকারী গুন্ডা ও পুলিশের ভয়ে প্রথম দিকে মানূষ সরাসরি মাঠে আসেনি। মাঠের চারিদিকে দাঁড়িয়ে দেখছিলো শেষ পর্যন্ত কি হয়। তখনকার বিখ্যাত পঞ্চায়েত নেতা কাদের সর্দার সাহেব নাকি মাওলানা সাহেবকে সমর্থন দিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।ফলে মুসলিম লীগের গুন্ডারা কিছু করতে সাহস করেনি। রাজনীতিতে জুতার ব্যবহার ইদানিং বেশ দেখা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃস্টি করেছিল বুশকে লক্ষ্য করে ইরাকী সাংবাদিকের জুতা নিক্ষেপ। এর পরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জুতা প্রতিবাদের ভাষায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুতা পঁচা ডিম লাঠি ব্যবহার করা লোকে ভুলে গেছে। এখন পিস্তল রাইফেল ভোজালি বোমা গ্রেনেড ছুরির ব্যবহার নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি ছাড়াও চুরি ডাকাতি জমি দখল ও প্রেমিকাকে ঘায়েল করার জন্যে অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। এসিড নিক্ষেপও চলছে। শুনেছি মাঝে সাঝে একে৪৭ নামক ভয়ংকর অস্ত্রও  দেখা যাচ্ছে। ৭২ সালেই বংগবন্ধুর আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাতজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই যে শুরু হয়েছে তা আজও থামেনি। থামার কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছিনা। এখন মিছিলে নানা ধরনের অস্ত্র দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা অস্ত্র নিয়ে ঘুরাফিরা করছে। এমনি একটি সময়ে আওয়ামী নেত্রী লগি বৈঠাকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান করেছেন। এখন সারা দেশে যে কোন দলের কর্মীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। অবশ্য আওয়ামী নেত্রী বলতে পারেন লগি বৈঠায় একমাত্র আওয়ামী লীগের অধিকার রয়েছে। পুলিশও বলতে পারে লগি বৈঠা আর কেউ ব্যবহার করতে পারবেনা।

২৮শে অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রতি যুবলীগ নেতা আজম এমপি ওই দিনের সফল অপারেশনের জন্যে তাঁর কর্মী বা্হিনীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছে সেদিন যুবলীগকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল জামাতের কর্মীরা। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনাকে সফল ভাবে প্রতিহত করে যুবলীগকে রক্ষা করেছে। এখন বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেছে কেন সরকার সেইদিনের হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য আগ্রহী হয়নি। এমন কি ধোয়া তুলসীপাতা মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারও কোন উদ্যোগ নেয়নি।

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে কেউ ভাবেনা

ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী রায় বলেছেন, কাশ্মীর কখনই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলনা। একথা বলার জন্যে ভারত সরকার তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু করার জন্যে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। অরুন্ধতী রায় বলেছেন, তিনি কোন মিথ্যা বলেননি। তিনি বলেছেন বিষয়টা অনেক পুরোণো। কাশ্মীরী নেতা গিলানী বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ৯০টি মামলা হয়েছে। আরেকটি মামলা হলে ৯১টি হবে। এতে তিনি বিচলিত নন। বাদশাহ জাহাংগীর কাশ্মীর সফরে যেয়ে বলেছিলেন, জগতে কোথাও স্বর্গ থাকলে তা এখানেই এখানেই। সেই কাশ্মীর এখন নরকে পরিণত হয়েছে। বিগত ৬০ বছর ধরে সেখানে চলছে রাস্ট্রীয় নিধনযজ্ঞ। কে বাঁচাবে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে।

আজ কাশ্মীরের এ অবস্থা কেন আমাদের অনেকেই জানেনা। পাকিস্তান আমলে আমরা রাস্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবেই ছিলাম কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগণের সাথে। এখন শুধু জনগনই কাশ্মীরের জনগনকে সমর্থন করে। রাস্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকা এখনও পরিস্কার নয়। যদি কখনও কোন কাশ্মীরী নেতা আমাদের এখানে আসে বা আশ্রয় নেয় তাহলে তার ভাগ্যে কি আছে তা আমরা জানিনা। ভারতের পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী নেতারা এখানে এসে কি ধরনের ভাগ্য বরন করেছে আমরা সবাই তা জানি। বাংলাদেশের সরকার গুলোর নানা ধরনের নীতি আছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের আমরা সমর্থন করি। সাহায্য সহানুভুতি দেখাই। ঢাকায় ফিলিস্তিনী রাস্ট্রদূতের অফিস রয়েছে।কিন্তু কাশ্মীরের ব্যাপারে  বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের নীতিকে সমর্থন করে। কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থায় বিশ্বনেতা আমেরিকাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলমান অবস্থাকে দেখার জন্যে সেখানে গিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধুতী রায়।তখনি তিনি বলেছেন , কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়।

আজ আমরা বা বিশ্ববাসী  যে ভারতকে দেখতে পাচ্ছি তা কখনও এ রকম ছিলনা।মহাভারতে বর্ণিত কম্বোজকে এখনকার কাশ্মীর বলে অভিহিত করেছেন ঐতিহাসিকরা। প্রাক মোগল যুগে  ভারত ছিল বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত। ছোট ছোট কয়েকশ’ রাজ্য  ছিল। রাজা মহারাজারা এসব রাজ্যের মালিক ছিলেন। রামায়ন মহাভারত মহাকাব্য পড়লেও দেখা যাবে ঐ যুগেও বহু রাজা মহারাজা ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল বহু রাজার যুদ্ধ।মোঘলরাই ভারতকে একটি দেশে পরিণত করেছে। কাশ্মীর আজকের ভারতের অংশে পরিণত হয়েছে ৪৮ সালে মহারাজা হরি সিংয়ের বেঈমানীর কারণে। অমৃতস্বর ট্রিটির মাধ্যমে ১৮৮৪ সালে ডোগরা মহরাজা রণজিত সিং কাশ্মীরের দখল গ্রহণ করে। ডোগরা মহারাজারা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর দখলে রাখে। সর্বশেষ মহারাজা হরিসিং লর্ড মাউন্টবেটনের উসকানীতে ও অর্থের বিনিময়ে  কাশ্মীরী জগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে  ভারতের সাথে থাকার জন্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই থেকেই কাশ্মীর ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। হরিসিংয়ের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং কাশ্মীরের একাংশ দখল করে নেয়। যা এখন আজাদ কাশ্মীর বলে পরিচিত। পাকিস্তানের প্রবেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ভারত জাতিসংঘে অভিযোগ উত্থাপন করে ১৯৪৮ সালে। ভারতের অভিযোগের ভিত্তিতে জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী ও এপ্রিলে দুটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। ৩৯ নম্বর প্রস্তাব হলো সীজ ফায়ার এবং অবস্থানের কোন পরিবর্তন না করা। ৪১ নম্বর প্রস্তাবে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। ভারত প্রস্তাব দুটো মেনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে কাশ্মীর তিন ভাগে বিভক্ত। গিলগিট ও বাল্টিস্তান আজাদ কাশ্মীর নামে পাকিস্তানের সাথে রয়েছে। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ ভারতের দখলে। আকশাই চীন ও ট্রান্স কারাকোরাম চীনের দখলে। বৃহত্‍কাশ্মীরের সকল অংশেই মুসলীম জনসংখ্যার হিস্যা হচ্ছে ৯০ভাগ। হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনের অবসান হলে ১৩৪৯ সালে শাহ মীর এখানে সোয়াতি বংশের রাজত্বির সুচনা করেন। সোয়াতিরা ছিলেন পাঠান। ১৫২৬ সালে কাশ্মীর মোঘল অধিকারে আসে এবং ১৭৫১ সাল পর্যন্ত মোঘল শাসনেই ছিল। পরে পাঠান দুররানীরা কাশ্মীর দখলে নেয় এবং সেই দখল ১৮২০ সাল পর্যন্ত ছিল। মহারাজা গুলাব সিং পরে তা সাড়ে সাত লাখ টাকায় ইংরেজদের কাছ থেকে কিনে নেয়। হরি সিংয়ের বেঈমানীর ফলে কাশ্মীর ভারতের দখলে চলে যায়। কিন্তু যেসব দেশীয় রাজা মহরাজা বা নবাব নিজাম স্বাধীন রাজ্য হিসাবে থাকতে চেয়েছিল তা তারা পারেনি। যদিও ভারত স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছিল নিজেদের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিবে। ভারত সে সুযোগ দেয়নি। ১৯৪৮ সালেই সেনা বাহিনী পাঠিয়ে হায়দ্রাবাদ গোয়া দমন দিউ আন্দামান দখল করে নেয়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে বিগত ৫০ বছর ধরে। ১৫ আগস্ট  ভারতের স্বাধীনতা দিবসে  ওসব রাজ্যে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়েনা।

বুকার প্রাইজ প্রাপ্ত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধুতী রায় যে কথা বলে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা মোকাবিলা করতে চলেছেন তা এখন ভারতের মুক্তচিন্তার সব মানুষের কথা। কাশ্মীরকে দখলে রাখার জন্যে লাখ লাখ সেন্য মোতায়েন করতে হয়েছে। জনগনের বাজেটের একটা বড় অংশ বিনা কারনে কাশ্মীরে ব্যয় করতে হচ্ছে। কাশ্মীরের কারনেই পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছেনা। অপরদিকে সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারতের সাথে চীন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে তিক্ততা চলছে। চারটি দেশের শান্তিকামী মানুষ এই অবস্থা আর দেখতে চায়না। বিগত ৬০ বছরেও ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জনগনের দারিদ্র দূর করতে পারেনি। কোটি কোটি মানুষ শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। সবচেয়ে করুন অবস্থা হচ্ছে ভারতের। ২৫ কোটি হরিজন বা অচ্যুতকে মানুষের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি ধর্মের কারণে। সেই ভারত নিজেকে স্যেকুলার প্রগতিশীল গনতন্ত্রী মনে করে। সেই ভারত আনবিক বোমা তৈরী করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভয় দেখাবার জন্যে।

এরশাদ মজুমদার কবি ও সাংবাদিক( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »

বায়া দলিল ৭


জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে এখনও মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ৭১এর যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটিতে বিচার মাধ্যমেই এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সাজেদা চৌধুরী বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের সব মানুষই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।তাহলে বিচার চায়না কারা? সৈয়দ আশরাফও চট্টগ্রমার জনসভায় একই কথা বলেছেন। অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতারাও প্রতিদিন একই কথা বলে চলেছেন। বিচার নিয়ে সরকারী নেতা ও মন্ত্রীদের এতকথা বলার কি প্রয়োজন বুঝতে পারছিনা। সরকার আদালত বসিয়েছেন, উকিল মোক্তার নিয়োগ করেছেন। প্রয়োজনীয় টাকা পয়সার ব্যবস্থা করেছেন। চারিদকে লোক পাঠিয়ে সাক্ষী সাবুদ জোগাড় করছেন। তারপরেও কথা বলে মাঠ গরম করছেন তা স্পস্ট নয়। বিচারের জন্যে জনমতের প্রয়োজন কেন তাও বুঝতে পারছিনা। জানিনা, সরকার হয়ত ভাবছে বিরোধী দল বিচারের বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহ করে বিচারটা ভন্ডুল করে দিতে পারে। যেমন ১৯৬৯ সালে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাখ্যান করেছে জনগন।জনরোষের মুখে বিচারপতি পালিয়ে গেছেন।

সরকারী দলের ব্যবহারের ফলে ‘বাংলার মাটি’ শব্দ দুটো শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে। এমন ব্যবহারে ভাল শব্দও মন্ড হয়ে যায়। যেমন মাস্তান। এটি একটি খুবই ভাল শব্দ। মানে আল্লাহর প্রেমে যে আত্মহারা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর মানে কি সবাই জানে। বাংলা ভাষায় অথর্ব শব্দের অর্থ অকেজো। শব্দটার মুল অর্থ হলো জ্ঞানী। বেদ রচয়িতা একজন মুনি বা ঋষির নাম অথর্ব মুনি। তিনিই রচনা করেছেন অথর্ব বেদ।যেমন আলেম শব্দের অর্থ বিদ্বান বা জ্ঞানী। আমাদের সমাজে  আলেম শব্দের মানে হচ্ছে আরবী জানা একজন সাধারন  মানুষ। যার দাঁড়ি আছে, যিনি লম্বা কুর্তা ও টুপি বা পাগড়ী পরেন। শিক্ষিত মানুষ বলতে আমরা বুঝি স্যুটকোট পরা একজন মানুষ। যিনি ইংরেজী জানেন। ধর্ম দর্শন ও জুরিসপ্রুডেন্সের একজন জ্ঞানী মানুষও যদি টুপি বা পাগড়ী পরেন তাহলে আমাদের সমাজ মনে করে তিনি শিক্ষিত মানুষ নন। এক সময়ে শিক্ষিত মানুষের নামে আগে শ্রীমান শ্রীমতি শ্রীযুক্ত মৌলবী  জনাব ব্যবহার করা হতো সম্মানার্থে। এখন আর শব্দ গুলো ব্যবহার হয়না। এই হলো বাংলাদেশের চলমান সমাজচিত্র। তাই বললাম, বাংলার মাটি শব্দটাকে দয়া করে পঁচিয়ে দিবেন না। মনে হতে পারে অতি ব্যবহারে শব্দটা নিন্দা সূচক হয়ে যেতে পারে।

সরকার বা সরকারী দল প্রতিনিয়তই বলে চলেছেন ইতিহাস বিকৃতির কথা। কারন আওয়ামী লীগের মন মানসিকতায় বিকৃতি শব্দটা পাকাপোক্ত ভাবে বসবাস রাতে শুরু করেছে। যেখানে যা দেখছেন সবই যেন বিকৃত। এমন কি আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাসটাও যেন বিকৃত হয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যে দলটির জন্ম হয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসাবে তার প্রেক্ষিতও বর্তমান আওয়ামী নেতারা সহজে স্বীকার করতে চান না। এমন কি মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়ার পরও বংগবন্ধু এ দলের নেতা ছিলেননা। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে আওয়ামী লীগ মনে করে তাদের বিজয়। সে নির্বাচনে ফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নৌকা। মুসলিম লীগের প্রতীক ছিল হ্যারিকেন বা লন্ঠন। ওয়ারিশানা সূত্রে আওয়ামী লীগ এখনও সেই প্রতীক ব্যবহার করছে। আওয়ামী মুসলিম লীগের বায়া দলিল হচ্ছে ১৯০৬ সালে প্রতিস্ঠিত মুসলিম লীগ। যেই মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন জিন্নাহ শেরে বাংলা ভাসানী সোহরাওয়ার্দী। এই মুসলিম লীগই অখন্ড বাংলাদেশকে শাসন করেছে ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত।কারন অখন্ড বাংলায় মুসলমানরা ছিল মেজরিটি। বাংলার তিনজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিম উদ্দিন, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। এই তিনজন পরে সারা পাকিস্তানের নেতাও ছিলেন।এসব ইতিহাস আওয়ামী লীগ স্বীকার করে কিনা জানিনা। সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে লর্ড ক্লাইভ যড়যন্ত্র করে বাংলাদেশ দখল করে নেয়ার পর থেকে। সেই যুদ্ধ চলে ১৯০ বছর ধরে। অখন্ড ভারতের জনগনের কথা বলার জন্যে ১৮৮৫ সালে প্রতিস্ঠিত হয় ভারতীয় কংগ্রেস। এটাই ছিল হিন্দু মুসলমানের মিলিত সংগ্রামের এক মাত্র প্ল্যাটফরম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  হিন্দু নেতারা কংগ্রেসকে শুধু হিন্দুদের প্ল্যাটফরমে পরিণত করে। ফলে বাধ্য হয়ে মুসলমানরা ১৯০৬ সালে এই ঢাকায় বসে মুসলিম লীগ প্রতিস্ঠা করেন মুসলমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে। ওই কারনেই জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্বের জন্ম দেন। আজকের বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত স্যেকুলার রাজনীতিবিদরা বলছেন জিন্নাহর ওই তত্ব ছিল সাম্প্রদায়িক ও মিথ্যা তত্ব। আওয়ামী লীগও তাই মনে করে। ১৯০৫ সালে পুর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে যখন একটি প্রদেশ গঠন করা হলো তখন কংগ্রেস নেতারা ওই প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করে ওর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রদেশ গঠণ বাতিল হয়ে যায়। ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পাশ হলে কংগ্রেস নেতারা তার বিরোধিতা করেছেন।পুর্ববাংলার জনগনকে চাষাভুষা বলে গালাগাল দিয়েছে। সবইতো হলো ইতিহাসের কথা। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয় না হলে আজকের নেতারা অনেকেই পড়ালেখা করতে পারতেন না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েই কথা শুরু করেছিলাম। সেখানেই ফিরে আসি। ৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানী সেনা বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান(বাংলাদেশ) আক্রমন করে তখন এ দেশবাসী ভাবতে পারেনি পাকিস্তানের সেনা বাহিনী এমন একটি অন্যায় যুদ্ধ তাদের উপর চাপিয়ে দিবে। দেশবাসী ছিল একেবারেই নিরস্ত্র। তখন আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল বাংগালী সৈনিক ইপিআর পুলিশ ও আনসার বাহিনী। পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমনের মুখে প্রথমেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংগালী জওয়ানরাই। তখনও কোন নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি।ঠিক এমনি একটি মূহুর্তে কালুরঘাট বেতার থেকে নাম না জানা মেজর জিয়ার নাম শুনা গেল। তিনি বংগবন্ধুর নামেই স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন। চট্টগ্রামের কিছু আওয়ামী লীগ নেতাও মেজর জিয়ার সাথে ছিলেন। মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। ৭১ সালের যুদ্ধের ভারতীয় দলিল দস্তাবেজে মেজর জিয়ার নামই রয়েছে। আজ আওয়ামী নেতারা বলছেন জিয়া মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন পাকিস্তানী চর। এবার বলুন ইতিহাস বিকৃতির নায়ক কারা?

এরশাদ মজুমদার( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »

বায়া দলিল ৬


দূর্গা পুজার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত

বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাংলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উত্‍সব হলো শারদীয় দুর্গোত্‍সব। এক সময় দেবী দুর্গা ছিলেন গৃহদেবী। মোগল আমলে ১৬০৬ সালের দিকে বাদশা্দের উত্‍সাহে প্রথম সার্বজনীন দুর্গোত্‍সব চালু হয় রাজশাহীর তা্হেরপুরের রাজা কংশ নারায়নের উদ্যোগে। একই সাথে নদীয়ার জমিদার ভবানন্দ মজুমদারও সার্বজনীন দূর্গাপুজার আয়োজন করেন। এর আগে বাংলায় দূর্গাপুজা পালিত হতো চৈত্র মাস বা মার্চ-এপ্রিল মাসে। পরে শারদীয় দূর্গাপুজা শুরু হয় শরত্‍কাল বা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ১৭৫৭ সালের জুন মাসে পলাশীর ষড়্যন্ত্র মুলক যুদ্ধে জয়লাভের পর লর্ড ক্লাইভ একটা বিজয় উত্‍সব করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কিভাবে কেমন করে কোথায় করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেননা। এমন সময় শোভা বাজারের রাজা নবকৃষ্ণ জানালেন তিনি বৃহত্‍ আকারে দূর্গোত্‍সব করতে আগ্রহী যেখানে যুদ্ধ বিজয়ী ইংরেজ নেতারাও অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। শোভা বাজারের ওই দূর্গোত্‍সবই ছিল পলাশী যুদ্ধের বিজয় উত্‍সব।নবাব সিরাজ উদ দৌলা ছিলেন ইংরেজ ও হিন্দু মিলিত শক্তির কাছে একজন অসুর। পলাশীর মাঠে লর্ড ক্লাইভ ছিলেন দুর্গতনাশিনী দেবী দূর্গার প্রতীক। পলাশীর পর মিলিত হিন্দু শক্তি লর্ড ক্লাইভকে সমর্থন দিয়েছিলো।

 এসব হলো ইতিহাসে কথা। এর বাইরেও কথা আছে। তাহলো গণমানুষের বিশ্বাস। ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন সুপ্রাচীন কালে ভারত অসুরের অত্যাচারে জনজীবন অতিস্ঠ হয়ে উঠেছিল। অত্যাচারিত নির্যাতিত মানুষ অসুরের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যে দেবতাদের কাছে প্রর্থনা করে। সকল দেবতা নিজেদের শক্তি দান করেন দেবী দূর্গাকে। তাই তিনি হলেন দশভুজা। অসুর বধ করে তিনি হলেন মহিষাসুর মর্দিনী। সর্ব ভারতীয় দেবতা অবতার রাজা দশরথের প্রথম সন্তান অসুর রাজ রাবনকে বধ করে সর্ব ভারতে শান্তি স্থাপন করেন।

 গবেষকদের মতে রামায়নের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত হলো রাম একজন আর্যপুত্র। তিনি একজন বিদেশী রাজা রাজ্য জয়ে ভারতে আগমন করেন। বা তার পূর্ব পুরুষ ভারতে আগমন করেন। আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারত জয়ের পর দাক্ষিনাত্যের দিকে রওয়ানা দিলে রাম স্থানীয় রাজা রাবনের প্রতিরোধের মুখে পড়েন।রাম স্থানীয় কিছু শক্তির সাথে জোট বেধে রাবন রাজ্য আক্রমন করেন এবং দাক্ষিনাত্যকে অসুর মুক্ত করেন। ভারতের দক্ষিনে এবং শ্রীকংকায় এখনও রাবন পুজা হয়। প্রাচীন বাংলার রাজা মহেশকে আর্যদেবী বা আর্য বীর নারী দেবীদূর্গা সকল রাজন্যবর্গের সহযোগিতা নিয়ে পরাজিত করেন। প্রকৃত অর্থে মহেশ ছিলেন একজন দ্রাবিড় রাজা। তিনি স্বাদেশকে বিদেশী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধ করে পরাজিত হন। তাই বিজয়ী শক্তি তাঁকে অসুর বলে আখ্যায়িত করেছে। ভারতের উত্তরাঞ্চল দখল করে আর্যরা এই জনপদের নাম দিয়েছে আর্যাবর্ত। মহেনজোদারো ও হরপ্পা প্রমান করে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা আর্যদের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। আর্যরা ছিল যাযাবর পশু শিকারী আর ভারতীয়রা ছিল গৃহী এবং উন্নত কৃষি কাজে পারদর্শী। আর্যরাই ভারতের প্রাচীন সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে।

ভারতে ইংরেজ শাসনকে হিন্দুরা বহুকাল আশীর্বাদ হিসাবে মেনে নিয়েছিল। দাদাভাই নওরোজী তাঁর ‘পোভার্ট ইন ইন্ডিয়া’ বইতে ইংরেজ শোষনের বিশদ বিবরন দিয়েছেন। তিনি সুস্পস্ট ভাষায় বলেছেন, মুসলমানরা এদেশকে নিজেদের মাতৃভুমি মনে করতো। তারা কখনই এদেশকে শোষন বা লুন্ঠন করেনি। হান্টার সাহেব বলেছেন, ইংরেজ শোষনের ফলে সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হয়েছিল। আর্যদের অনুদার সাহিত্য সংস্কৃতি ও মৌলবাদী ধর্মীয় অনুশাসন থেকে আধুনিক ভারত আজও মুক্ত হতে পারেনি। রামায়ন মহাভারতের যুদ্ধ ও শঠ রাজনীতি থেকে আদুনিক ভারত এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাই সেখানে সাম্প্রদায়িক দাংগা লেগে আছে। অচ্যুত দলিত আর হরিজনদের উপর হাজার বছর ধরে অমানবিক অত্যাচার অবিচার চলছে। এখনও হরিজনদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। হাজারো চেস্টা করেও আধুনিক ভারতের প্রগতিশীল নেতারা মুক্ত হতে পারেনি।

সারা পৃথিবী যখন সব মানুষের শিক্ষার অধিকার প্রতিস্ঠার জন্যে লড়াই ভারতের ধর্ম তখনও হরিজনদের শিক্ষার অধিকার মেনে নেয়নি। এসবই হচ্ছে ধর্মের তথাকথিত অনুশাসনের কারনে। ভারতের শাসনতন্ত্রের প্রণেতা বিখ্যাত জনদরদী নেতা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন একজন হরিজন হিসাবে। বিগত ৬০ বছরে কোন হরিজন বা দলিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ভারত ছাড়া বিশ্বের কোথাও মহাকাব্য বা মিথকে ধর্ম হিসাবে গণ্য করা হয়না। বারতের নেতারা আজও ঠিক করতে পারেননি রামায়ন মহাভারত মহাকাব্য না ধর্মগ্রন্থ। বাবরী মসজিদের রায় আবারও প্রমান করেছে ভারতের বিচারপতিরাও কাব্য মিথকে কল্পনাকে বাস্তব বলেই মনে করেন। অথচ এই দেশটাই একটা শক্তিধর রাস্ট্র হিসাবে বিকশিত হতে চায়। এদেশের বিশকোটি এখনও প্রতিদিন খেতে পায়না।সেদিকে ভারতের খেয়াল নেই।তারা ব্যস্ত আছেন আনবিক বোমা তৈরীর কাজে। এই ভারতই বিগত ৬০ বছর ধরে স্বদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে অসুর বানিয়ে বধযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দেবতারূপী তথাকথিত নেতারা কখনও কিছু বলেননি।

পাকিস্তানীরাও এক সময় ইসলাম ও মুসলমানিত্বের নামে বাংলাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। শেষ পর্যান্ত ৭১ সালে বাংলাদেশকে আক্রমন লাখ লাখ নিরী্হ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্ব শান্তির নেতা ও উকিল আধুনিক বিশ্বের দেবতা অসুর বধের নামে ইরাক আক্রমন করে সাদ্দামকে হত্যা করেছে। এখনও সেইদেশে দেশপ্রেমিক মানুষকে হত্যা করে চলেছে। আল কায়েদা ও লাদেনকে খুঁজে বের করার নামে আফগানিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রতীকী হলেও দেবী দূর্গা মর্তে এসেছিলেন অসুরদের হত্যা করে মানুষকে রক্ষা করার জন্যে। দু:খের বিষয় হলো পলাশীর যুদ্ধের পর কোলকাতার রাজা মহারাজারা লর্ড ক্লাইভকে মুক্তিদাতা ও দেবী দুর্গার সাথে তুলনা করে  সম্বর্ধনা দিয়েছে।( প্রকাশিত আমার দেশ ২৩ অক্টোবর,২০১০)

এরশাদ মজুমদার, কবি ও সাংবাদিক( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »


 

মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনি কোন পথে চলবেন

সেনা সমর্থিত কেয়ার টেকার সরকারের নির্বাচনে ২৬৩ সিট পাওয়া সরকার কেমন যেন উতলা হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি যার কোন প্রয়োজন নেই। অসহিষ্ণু বা ধৈর্যহারা হওয়ার জন্যে সরকারের বিরুদ্ধে এখনও বিরোধীদল তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাহলে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীরা এমন আবোল তাবোল বলতে শুরু করেছেন কেন? পাবনার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বসেই বলে ফেললেন, এক হাতে তালি বাজেনা। এর মানে হলো পাবনার সরকারী কর্মচারীরা আওয়ামী সোনার ছেলেদের সাথে লাগতে গেলেন কেন? সরকারী কর্মচারীরা সদয় ব্যবহার করলেতো সোনার ছেলেরা অমন ব্যবহার করতোনা। নাটোরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির আভ্যন্তরীন কোনদলের ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু নিহত হয়েছে। নিজেরা বাবুকে হত্যা করে এখন আওয়ামী সোনার ছেলেদের উপর দোষ চাপাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় মনে হচ্ছে ওই হত্যা মামলায় আর কোন তদন্তের প্রয়োজন নেই। কারন প্রধানমন্ত্রী তদন্তের দিক নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। আপনারা বুঝতেই পারছেন এখন তদন্ত কর্মকর্তারা কোন পথে এগুবেন। কুমিল্লার ঘটনার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন ওই ঘটনা ছিল বিএনপির সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত। খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্ট বাড়ির মামলায় প্রধানমন্ত্রী আগাম বলেছেন, মামলার রায় সরকারের পক্ষে যাবে। এবং রায় তাই হয়েছে। আমাদের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে আদালত রায় দিয়েছিলেন ‘রং হেডেড’। কিন্তু তিনি ওসবের তোয়াক্কা করেন না। তিনি কথা বলা থামাতে পারেন না। মনে হয় তিনি একটি টকিং মেশিন। তাঁর দল বা সমর্থকরা আদালতের উপর হামলা চালিয়েছে। সে বিচার কিন্তু আদালত করেননি। তাঁর দল আদালত চত্বরে বস্তি বসিয়েছিলো। সে ব্যাপারেও আদালত কিছু করেননি। তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা বংগবন্ধু একবার বলেছিলেন, তিনি অপরাধী ধরলে আদালত ছেড়ে দেয়। তাঁর ফুফাতো ভাই বলেছিলেন, আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই। জানিনা বংগবন্ধু কন্যা হয়ত ভাবেন কিনা জনগনের রায় পেয়ে গেলে আর অন্য রায় মানার প্রয়োজন কি। একথা ঠিক যে জনগনের ভোট নির্বাচিত দেশ বিদেশে বহু জনপ্রিয় নেতা এক সময়ে স্বৈরাচার হিসাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নিজ দলের প্রতি অন্ধ না হয়ে দেশের কথা ভাবুন, দেশের জন্যে কাজ করুন।নিজেকে ভুল ভ্রান্তির উর্ধে মনে করবেন না। নিজের হৃদয়কে প্রশ্ন করুন আপনি কি সঠিক পথে চলছেন?

মাহমুদুর রহমানের আরেকটি আদালত অবমাননার মামলার রায় দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি হাদিস কোরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তাঁরা আল্লাহকে হাজির নাজির জেনেই রায় দিয়ে থাকেন। মিডিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যতবেশী স্বাধীনতা চাইবেন ততবেশী দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, বিচারকরাও মানুষ, একশ’টা কাজ করলে বিশ বাইশটা কাজে ভুল হতে পারে। কোন কাজ না করলে কোন ভুল হবেনা। প্রধান বিচারপতি বলেছেন তিনি ‘ইয়া হাদিউ ইয়া হাদিউ( হে সত্যপথ প্রদর্শনকারী হে সত্যপথ প্রদর্শনকারী) বলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠেন।এর মানে তিনি আরবী ভাষায় মহান আল্লাহ পাকের নাম বলতে বলতে আদালতে যান। আল্লাহপাকের আরেক নাম হচ্ছে ইয়া আদলু। মানে হে বিচারক। ওই পবিত্র শব্দ থেকেই আদালত শব্দটি এসেছে। আমাদের প্রধান বিচারপতি দুনিয়ার আদলতের একজন আদলু। এই আদালতে বসেই তিনি একজন হাকিম( আদেশদানকারী) ও একজন হাকাম( মহাজ্ঞানী)। প্রধান বিচারপতির কথা শুনে আমি খুবই আবেগ আপ্লুত হয়েছি। তাঁর প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন নিবেদিত মুসলমান। কর্ম জীবনেও তিনি তাঁর বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখার চেস্টা করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি যে আদালতে বসে বিচার করেন বা মহান আল্লাহপাককে স্মরন করেন সেটা কি আল্লাহর আদালত? তিনি কি হলফ করে বলতে পারবেন তাঁর আদালতের সাথে আল্লাহপাক ও আল্লা্পাকের আইনের কোন সম্পর্ক আছে? তিনি যে শপথ গ্রহণ করেন তাও আল্লাহপাক বা পবিত্র কোরাণের নামে নয়। তিনি শপথ গ্রহণ করেন সংবিধানের নামে। তিনি যে পোষাক পরেন পরেন তার সাথেও আল্লাহর কোন সম্পর্ক নাই। তাঁর মাথার উইগটা এসেছে খৃস্টান ধর্মযাজকের মাথার পোষাক হিসাবে। তাঁর পরনের কালো পোষাকটাও এসেছে বৃটেন থেকে শোকের পোষাক হিসাবে। তিনি যে আইন চর্চা করেন তার বেশীর ভাগই এসেছে আল্লাহর আইন বিরোধী শক্তির কাছ থেকে।১৯০ বছর ইংরেজ শাসন আমলের আগেও এদেশে শাসন ব্যবস্থা ছিল। সুলতানী ও মোঘল আমলে আদালত ছিল কাজীর আদালত। আইনের সূত্র ছিল আল্লাহপাকের আইন। তখনকার বিখ্যাত রায়গুলো এখনও দিল্লীর মহাফেজখানায় আছে। কাজী বা সম্মানিত বিচারকদের পোষাক কি ছিল তার বিবরনও আছে।আমি নিশ্চিত যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতিও জানেন তিনি যে আদালতে বসে বিচার করেন তার সাথে আল্লাহর আইনের কোন সম্পর্ক নাই।

আমাদের আদালত গুলোতে এর আগে বহু রায় হয়েছে যা আল্লাহর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন বিচারপতি রাব্বানী সাহেব রায় দিয়েছিলেন আজীবন খোরপোষ দিতে হবে। যা কোনভাবেই কোরাণ অনুমোদন করেনা। তাহলে বিচারপতি রাব্বানী সাহেব কিভাবে ওই রায় দিলেন? তিনি এখনও বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন এবং জাতি  ও সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফতোয়া নিষিদ্ধ করে যে রায় দিয়েছিলেন তা দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারন মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। সে নিয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।সম্প্রতি পর্দা সম্পর্কে বিচারপতিরা যে রায় দিয়েছেন তাও মুসলমানদের বিশ্বাস ও আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। পর্দা মুসলমান নারীদের ইচ্ছা বা স্বাধীনতার বিষয় নয়। মুসলমান নারীদের জন্য পর্দা বাধ্যতামুলক। অথচ বিচারক রায় দিয়ে দিলেন এটা ঐচ্ছিক। এজন্যে কাউকে বাধ্য করা যাবেনা।

ভারতের শহরবানুর মামলা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।সেখানেও নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল তালাকের ক্ষেত্রে আজীবন খোরপোষ দিতে হবে। পরে সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করে। বিষয়টি পার্লামেন্টে নিয়ে আইন পাশ করতে হয়েছে যে, মুসলিম পারিবারিক ও নিকাহ আইনকে আমলে নিয়ে আদালত গুলোকে রায় দিতে হবে।আমাদের দেশে আদালত কেমন করে কোরাণী আইনের বিরুদ্ধে রায় দেন তা দেশের সাধারন মানুষের কাছে বোধগম্য নয়।কেমন করে এদেশের আদালতে কোরাণ সংশোধনের মামলা হতে পারে তাও আমাদের বোধগম্য নয়।

প্রিয় প্রধান বিচারপতি সাহেব, আপনি বলেছেন ৪০ বছর আইনের পেশায় থেকে এখন তাঁর মনে হচ্ছে বিচারপতি না হলেই ভাল ছিল। আপনার এই অনুভুতির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই অন্তর থেকে। এতে বুঝা যায় যে, আপনি ন্যায় বিচারের ব্যাপারে চিন্তিত আছেন। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনার নামের সাথে সত্য এবং কল্যাণ জড়িত আছে। অভিযোগ আছে দু’জন সিনিয়ার ডিংগিয়ে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছে। এবং আপনি তা জেনেই প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। জানিনা, এর আগেও হয়ত সিনিয়ারিটির খেলাফ করা হয়েছে।ক্ষমা চেয়েই সূদুর অতীতের কিছু ঘটনা এখানে পাঠকের জন্যে উল্লেখ করতে চাই। হানাফী মজহাবের প্রতিস্ঠাতা ফেকা শ্রাস্ত্রের মহাজ্ঞানী ইমামে আযম হজরত আবু হানিফাকে তত্‍কালীন খলিফা প্রধান বিচারপতি হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।হজরত আবু হানিফা বিনয়ের সাথে সে অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এতে খলিফা ক্ষুব্দ হয়ে ইমামে আযমকে গ্রেফতার করার হুকুম দেন। ইমামে আযম আট বছর জেলে থাকে জেলখানতেই ইন্তেকাল করেন।ঘটনার বিস্তারিত বিবরনে আজ আর গেলামনা।

আমাদের সমকালের কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই। এই ধরুন বিচারপতি বি এ সিদ্দিকীর কথা। তিনি বিখ্যাত হয়েছেন শুধু একটা ঘটনার জন্যে। সেটা হলো জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্ণর হিসাবে শপথ না করিয়ে। বিষয়টা কিন্তু কোন জ্ঞান বা আইনের নয়। জাতির প্রয়োজনে সময়মত পদক্ষেপ গ্রহন করার সাহস। বিএ সিদ্দিকী খুবই নামকরা পরিবারের একজন সন্তান।  বিপদের কথা তিনি  জেনেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজ তাই আমাদের কাছে তিনি  স্মরণীয় হয়ে আছেন। নির্যাতিত সাধারন মানুষের পক্ষে রায় দিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে বিচারপতি মোর্শেদ। বিচারপতি কায়ানীর কথাও আমরা ভুলিনি। তিনিও স্বৈরাচার আইউব খানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর লিখিত ‘নট দি হোল ট্রুথ’ এখনও স্মরণীয় হয়ে আছে।দেশে বিদেশে আরও অনেক বিচারপতি আছেন যারা মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতিহাসে নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন। প্রিয় প্রধান বিচারপতি, আপনারা কি নিজেদের সুনাম ও আদালতের ইমেজ রক্ষা করতে পারছেন? জনগনকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে এবং আস্থা রাখতে হবে বিচারক এবং আদালত নিরপেক্ষ এবং সুবিচার করেন। ভারতের সাবেক ১৬ জন প্রধান বিচারপতির মধ্যে আটজনই দুর্ণীতি পরায়ন ছিলেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেসব পত্রিকার বিরুদ্ধে এখনও কোন মামলা হয়নি। কারন জনগন জানে সেদেশের বিচারকরা ঘুষ খেয়ে রায় দেন। এ প্রসংগে আমি কালামে পাকের কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে সবিনয়ে বলতে চাই জুলুমের বিপরীত শব্দ হচ্ছে আদল। আদলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে জুলুম থেকে রক্ষা করা। খলিফা  বাদশাহ রাজা মহারাজা প্রেসিডেন্ট প্রধান মন্ত্রী বা শাসকরা দেশ বা রাজ্য চালাতে গিয়ে মানুষের উপর অবিচার করতে পারেন। সেই অবিচার বা জুলুম থেকে মানুষকে রক্ষা করাই আদালতের কাজ। আল্লাহর রাসুল(সা:) বলেছেন, বিচারক তিন ধরনের হয়।এক ধরনের বিচারক জান্নাতে যাবে। অপর দুই ধরনের বিচারক জাহান্নামে যেতে বাধ্য হবে। জান্নাতে যাবে সেই বিচারক, যে প্রকৃত সত্য অনুধাবন ও হৃদয়ংগম করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী বিচার করেছে। আর যে বিচারক সত্যকে জেনে বুঝেও রায় দানে জুলুম করেছে, সে জাহান্নামে যাবে। মুর্খ বিচারক যে না না জেনে বুঝে লোকদের উপর রায় চাপিয়ে দিয়েছে সেও জাহান্নামে যাবে। এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক(র:) বলেছেন, চার ধরনের বিচারক আছে। তন্মধ্যে তিন ধরনের বিচারককে জাহান্নামে যেতে হবে। শুধু এক ধরনের বিচারক জান্নাতে যাবেন। যে বিচারক সজ্ঞানে অবিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।যে ব্যক্তি না জেনে বিচার করে সেও জাহান্নামে যাবে আর যে বিচারক না জেনে সুবিচার করবে সেও জাহান্নামে যাবে। আল্লাহর রাসুল(সা:) হজরত আলীকে(রা:) ইয়েমেনের বিচারপতি নিয়োগ কালে হজরত আলী(রা:) বলেছিলেন, আমার বয়স কম, বিচারকার্যে কোন অভিজ্ঞতাও নেই।তখন আল্লাহর রাসুল(সা:) নির্দেশ দিয়েছিলেন, আল্লাহপাক তোমার হৃদয়ে হেদায়েত দান করবেন। উভয় পক্ষকে পূর্ণাংগ না শুনে বিচার করবেনা রায়ও দিবেনা।

এবার সুদুর অতীতের কিছু বিচার ও রায়ের কথা উল্লেখ করছি। যেমন ধরুন, বিখ্যাত সুফী সাধক ও কবি মনসুর হাল্লাজের কথা। তত্‍কালীন শরিয়া আদালত কেন তাঁকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন? কারন সেই আদালত তখন তাঁর কথা বুঝতে পারেনি। আজ আলেম সমাজ মনে করেন সে সময়ের রায়টি ভুল ছিল। সে সময় খলিফার কারনে শরিয়া আদালত হয়ত সঠিক রায় দিতে পারেননি। ইমামে আযম হজরত আবু হানিফার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। খলিফাই এই মহাজ্ঞানীকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। সেই কারাগারেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে।

মাননীয় প্রধান বিচারপতির উক্তি ইয়া হাদিউ ইয়া হাদিউ উচ্চারন শুনার পর আমার মনে একথা গুলো এসেছে। আমি মনে করি তিনি আমাদের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের কাজে হাত দিয়ে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

এরশাদ মজুমদার, কবি ও সাংবাদিক ( ershadmz40@yahoo.com)

নয়া দিগন্ত,৩১শে অক্টোবর,২০১০

Read Full Post »


তারেক জিয়ার মামলার রায় ও চলমান রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার

বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি তারেক জিয়া  অনেক বছর বাধ্য হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। এটা কোন স্বেচ্ছা নির্বাসন নয়। তিনি বাধ্য হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশে এলেই আইনি কায়দায় জেল জুলুম। এসব হলো তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা।

 

বিদেশে টাকা পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তারেক জিয়া বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার তারেক জিয়াকে চিরদিনের জন্যে পংগু করার চেষ্টা করেছিল।এর একটা সুদূর প্রসারী লক্ষ্য ছিল। দেশবাসী ভাবতে শুরু করেছিল যে তারেক জিয়া আগামী দিনে বিএনপির নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারবেন। যদিও আওয়ামী লীগ সহ ওই ঘরাণার অনেকেই তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমনটাকে ভাল চোখে দেখেনি।আমার নিজের কাছে বিষয়টা তখন তেমন ভাল লাগেনি। ভাবটা এমন যে ,কি দরকার ছিল। কিন্তু পরে  মনে হয়েছে রাজনীতিতে অাসার বয়স তারেক জিয়ার হয়েছে। নিদেনপক্ষে প্রশিক্ষনের জন্যে হলেও ওই সময়ে তাঁর রাজনীতিতে আসা সঠিক হয়েছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা পেছনে পড়ে গেছেন। এখন যদিও সজীব ওয়াজেদ রাজনীতিতে নিজেকে কিছুটা জড়িয়েছেন। যদিও দেশবাসী মনে করে সজীব রাজনীতি থাকবেন না। তিনি একজন বিদেশী নাগরিক। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন,তাঁর পুত্রবধু একজন খৃষ্টান। মানে জগতের শেষনবী মুহম্মদকে (সা)ও শেষ কিতাব আলকোরাণে বিশ্বাস করেন না। এই খৃষ্টনরাই স্পেনে ক্রুসেড শুরু করে লাখ লাক মুসলমানকে হত্যা করেছিল। মুসলমানদের মসজিদে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে উদ্বৃতি দিয়ে আমি বলছিনা যে সজীব ওয়াজেদের বউ এসবের জন্যে দায়ী। তবে তিনি এসব ঘটনার কখনও নিন্দাও করেননি।
বাংলাদেশকে রাজনীতি ও অর্থনীতি শূণ্য করাই ছিল ভারত সমর্থিত ১/১১র সরকারের লক্ষ্য।
দুই প্রধান দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্যে ১।১১র সরকার আপ্রাণ চেস্টা করেছেন। ১/১১ ঘটানোর জন্যে তার আগে ২৮ অক্টোবর ঘটানো হয়েছে। ওই ঘটনার বীভত্‍স দৃশ্য টিভির বদৌলতে বিশ্ববাসী দেখেছে। শুধু দেখেনি ১/১১র সরকার। দুর্ণীতি দমনের নামে মঈন ইউ আহমদের সরকার সারা দেশে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছে। গ্রামে গঞ্জে হাট বাজার চুরমার করে গ্রামীন অর্থনীতির কোমর ভেংগে দিয়েছে। যারা ওই সময়ে সারাদেশে জেলায় উপজেলায় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তারা মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করেছেন ভয় ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু মইনুদ্দিনের সরকার নতুন নেতৃত্বের কথা বলে বহুলোককে নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অনেককে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছেন। বিএনপির সাধারন সম্পাদক মান্নান ভুঁইয়াকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী বানাবার স্বপ্ন দেখিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বেচারা মান্নান ভুঁইয়া মারা গেলেন। তাঁর সাথে তখন যারা সাপ লুডু খেলেছিলেন তারা সবাই ভোল পাল্টিয়ে আগের যায়গায় ফিরে গেছেন। তাদেরকে এখন আমাদের আশে পাশেই দেখতে পাই। তখন যারা টিভিতে টকশো করার জন্যে তালিকাভুক্ত ছিলেন তারাও ভোল পাল্টয়ে বেশ ভাল তবিয়তে আছেন। তখনকার মিডিয়া যারা ১/১১র সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন তারাও আছেন দেশের মানুষের খেদমত করার জন্যে। আইউব ইয়াহিয়ার সময়েও বেশ কিছু মিডিয়া লীডারকে দেখেছি যারা জনগনের বিরুদ্ধে কথা বলতো। যদিও মইনুদ্দিনের সরকার শুরুতে দুই নেত্রীকে আটক করেছিলেন, শেষ অবধি দেখা গেল তাঁরা দিল্লী সরকারের পক্ষে থেকে দিল্লীর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছেন। অদ্ভুত এক নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁরা খালেদা জিয়াকে পরাজিত করে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। হয়ত গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাবে তাই তাদের কাউকেই দেশে রাখা হলোনা। শেখ হাসিনাও খুব হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তাঁর আন্দোলনের ফসল ১/১১র সরকার। ক্ষমতায় আসলে তাদের বৈধতা দিবেন। ক্ষমতায় এসে হাসিনা বিএনপিকে ধ্বংস করার খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার মামলা দিতে থাকেন। ১/১১র সরকারের দায়ের করা সকল মামলা জারী রেখেছেন। সেসব মামলা এখনও চলছে।

ওই সময়ে সবচেয়ে বেশী সাহসী মতামত প্রকাশ করেছিলেন ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান। দুজনের মধ্যে মাহমুদুর রহমান এখন জেলে আছেন কারন তিনি সত্যকথা বলতেন। আমাদের দেশে আইন সত্যের পক্ষে নয়, তথ্যের পক্ষে। আদালত তথ্য নিয়ে কাজ করে, সত্য নিয়ে নয়। ১/১১র সরকার কতৃক প্রতিস্ঠিত ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার মাহমুদুর রহমানকে সহ্য করতে পারেননি। তাই নানা রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন।মাহমুদ একজন প্রখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। ইতোমধ্যেই তিনি নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের রাজনীতিতে তাঁর মতো একজন মেধাবী মানুষের অতীব প্রয়োজন। এরাই বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিতে পারবে। এ কারনেই পরিকল্পিত উপায়ে মাহমুদের উপর হামলা চলছে। এইতো ক’দিন আগে ফরহাদ মজাহারকে গ্রেফতার করার একটা জিকির তুলেছিল সরকার ও হালুা রুটির বরকন্দাজ তথাকথিত কিছু মিডিয়া নেতা ও কর্মী।বাংলাদেশের মিডিয়া জগত এমনিতেই সম্প্রসারনবাদী শক্তির তাবেদারের জীবন যাপন করছে। মিডিয়াতেও সিইওরা ঢুকে পড়েছে। শুনা যায় এদের মুজুরী নাকি লাখ লাখ টাকা। এরা আবার শ্রমিক নেতাও। এরাই ফরহাদ মজাহারের মতো একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হেনস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

১/১১র সরকার সবচে বেশী হামলা চালিয়েছে খালেদা জিয়া তার পরিবার আত্মীয় স্বজন ও বিএনপির উপর। তার কারন নির্বাচনের পর স্পস্ট হয়ে গেছে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারাও সমান ভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া তার দুই সন্তান ও দলের উপর। এই সরকারের সীমাহীন আক্রোশ হলো জিয়া এবং তার পরিবারের উপর। জিয়ার নাম মুছে ফেলার জন্যে চলছে নানা আয়োজন। আওয়ামী নেতারা বলে চলেছেন, জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তিনি পাকিস্তানের চর ছিলেন। একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এর জন্ম সেনা ছাউনীতে। আওয়ামী লীগ কেন যে সেনা ছাউনীকে ভয় পায় জানিনা। অথচ আমাদের সেনা অফিসার ও সৈনিকরাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রাণপণ করে যুদ্ধ করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে এদেশের কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা। আওয়ামী লীগ তৈরী করেছে প্রপাগান্ডা মেশিন।

এসব হলো প্রাসংগিক কথা। মূল কথা হলো আমাদের দেশের রাজনীতিতে আগামী দিনের নেতৃত্ব এখন কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক মহান মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাস্ট্রপতি শহীদ জিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড়ছেলে তারেক জিয়া রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারক ঐতিহ্য নিয়েই। এটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়। তারেক জিয়ার এখন যা বয়স তা ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য রাহুল গান্ধীর মতোই। রাজনীতিতে না হলেও সামাজিক ভাবে তারেকের পরিবারেরও শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। পিতার দিক থেকে তারেক বগুড়ার আধ্যাত্বিক ঐতিহ্যের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশের বহু ঐতিহ্যবাহী পরিবার তাদের আত্মীয়। মায়ের দিক থেকে তারেকের শিকড় রয়েছে ফেণী জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর মজুমদার বাড়িতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এ এফ রহমান ওই বাড়ির সন্তান। এই উপমহাদেশের চা শিল্পের সাথে জড়িত বহু বিখ্যাত পরিবার এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে যুক্ত। অবিভক্ত বাংলার শেরে বাংলার মন্ত্রীসভার সদস্য নবাব বাহাদুর মোশাররফ হোসেনও এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। আপনাদের পরিচিত রাজনীতিক মির্জা গোলাম হাফিজ,কাজী জাফর, কর্ণেল জাফর, আহমদুল কবীর, শহীদ সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান,লায়লা রহমান কবীর এই বৃহত্‍ পরিবার গোস্ঠির অন্তর্ভুক্ত।ভাগ্যের অদৃশ্য নদী জিয়া পরিবারকে প্লাবনের মতো ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে রাজনীতির মঞ্চে। ৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ ভাগ্য জিয়াউর রহমানকে টেনে নিয়ে গেছে কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে। তিনিই পাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ঘোষণার পেছনে নানা জনের নানা কথা আছে। আমি এখন এখানে সেসব বিষয় নিয়ে কিছু বলবোনা। সময় সুযোগ হলে আরেক নিবন্ধে সেসব কথা লিখবো। সেই জিয়ার গলার আওয়াজ দেশবাসী আবার শুনতে পেলো ৭ নবেম্বর,১৯৭৫। প্রথমবার ছিলেন মেজর, দ্বিতীয়বার ছিলেন মেজর জেনারেল, আর শহীদ হওয়ার সময় ছিলেন দেশের রা্স্ট্রপতি। মা খালেদা জিয়া পারিবারিক ভাবে বিশাল ঐতিহ্যের অধিকারী হলেও সংসার জীবন শুরু করেছেন একজন সেনা অফিসারের স্ত্রী হিসাবে। জীবন যাপন চলেছে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ভিতর। তিনি কখনও ভাবেননি একদিন তাকে এদেশের বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বের হাল ধরতে হবে। এসবই হচ্ছে ভাগ্যের অদৃশ্য রশির টান। কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি রাজনীতির বিশাল রাজপথে নেমেছেন এবং খ্যাতি লাভ করেছেন একজন আপোষহীন নেত্রী হিসাবে। সেই থেকে তিনি রাজপথেই আছেন।

ভারতীয় কংগ্রেসের বর্তমান সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও সেভাবে রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি একজন বিদেশী নারী।বৈবাহিক সূত্রে ভারতে এসেছেন। তাঁর স্বামী রাজীব গান্ধী একজন পেশাদার পাইলট ছিলেন। মা ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর তিনি দল ও দেশের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। রাজিব গান্ধী নিহত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধী রাজনীতিতে আসেন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের হাল ধরেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিস্ঠ আসন পাওয়ার পর সোনিয়ারই প্রধান হওয়ার কথা ছিল। বিজেপি তাকে বিদেশী বলে সমালোচনা করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংয়ের নাম প্রস্তাব করেন। এখন সোনিয়া কংগ্রেস সভানেত্রী আর তার ছেলে রাহুল গান্ধী  সহ সভাপতি। এ নিয়ে ভারতে কোন সমালোচনা নেই। রাহুল ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ভারতের আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিহিত হচ্ছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের হাওয়া অন্য রকম বইছে। মিডিয়া এবং বিএনপি বিরোধী শক্তি তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। সুতরাং তার চরিত্র হনন করতে হবে। ১/১১র সরকারই শুরু করেছিল চরিত্র হননের অভিযান। সেই অভিযান এখনও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই তারেককে দুর্ণীতিবাজ আখ্যায়িত করে বক্তৃতা দিচ্ছেন। পুরো আওয়ামী লীগই এখন তারেকের ইমেজ ধ্বংস করার স্থায়ী কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। কেয়ারটেকার সরকারের সামরিক নেতা মইনুদ্দিন বলেছিলেন, তারেক বিদ্যুত খাতের বিশ হাজার কোটি মেরে দিয়েছে। কোন অভিযোগই এখনও প্রমানিত হয়নি। সরকারের নির্দেশে দুদক তারেকের বিরুদ্ধে এখনও দুর্ণীতির মামলা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বিএনপি আওয়ামী লীগ আর সরকারের এই প্রপাগান্ডার সঠিক জবাব দিতে পারছেনা।কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সন্তান জয়ের দুর্ণীতির খবর ছেপে দৈনিক আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান  জেলে গেছেন। তার উপর সরকারের আক্রোশ এখনও কমেনি। তারেককে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেয়ার সরকারী উদ্যোগ একেবারেই অমুলক নয়। তারেক নিশ্চিত ভাবেই আগামী দিনের দিনের একজন নেতা জেনেই সরকার ও আওয়ামী লীগ তাকে সরিয়ে দিতে চায়। অপরদিকে শেখ হাসিনার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দিবে এখনও ঠিক হয়নি। জয় ওয়াজেদ আসবে আসবে করেও এখনও তার আসা হয়ে উঠছেনা। কেন যে সে আসতে পারছেনা তাও স্পস্ট নয়। আসেতো আবার ফিরে যায়। মাকে ক্ষমতায় রেখে সব রকম সরকারী প্রটোকল নিয়ে রাজনীতি করা খুবই সহজ। তারেক কিন্তু রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল থেকে। তাঁর জন্যে কোন প্রটোকলের দরকার হয়নি।

রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতিদের সন্তানদের দুর্ণীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এ অভিযোগ বিশ্বব্যাপী। ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান রাজীব ও সন্জয়ের বিরুদ্ধে  দুর্ণীতির বহু অভিযোগ এসেছিল। রাজীবের বিরুদ্ধে বফোর্স কেলেংকারীর খবর বহুদিন মিডিয়াতে এসেছে। পশ্চিম বাংলার অবিসম্বাদিত নেতা জ্যোতি বাবুর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। জ্যোতি বাবুর ছেলে একজন প্রতিস্ঠিত ব্যবসায়ী। কোলকাতার পার্ক হোটেলের মালিক জ্যোতি বাবুর বেয়াই। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশাইর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ ছিল। পাকিস্তানের দিকে তাকালেও দেখতে পাবেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীরের বিরুদ্ধে সুইস ব্যান্কে টাকা রাখার তদন্ত এখনও চলছে। সেই বেনজীর দু’বার পাকিস্তানের প্রধান হয়েছে। এখন বেনজীরের ছেলে বিলাওয়াল রাজনীতিতে আসছে। পিপিপির আগামীদিনের নেতৃত্বে তার নাম ঘোষিত হয়েছে।নেওয়াজ শরীফ সওদী আরবে বেশ কয়েক বছর স্বপরিবারে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। জেনারেল মোশাররফ এই দু’জনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল নির্বাসনে থেকে তিনি দেশে ফিরে এখন জেলে আছেন। জেনারেল এরশাদের আমলে বৃটেন থেকে এটিপি বিমান কেনার ব্যাপারে থ্যাচারের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছিল। মায়ের প্রভাব খাটিয়ে সে মধ্যপ্রাচ্যেও ব্যবসা করার চেস্টা করেছে বলেও বৃটিশ মিডিয়া অভিযোগ করেছে।রাজনীতিতে এসব নোংরামী থাকবেই।

তারেক আসলে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ও মিডিয়ার বিরাট শিকার। এর পিছনে দেশী বিদেশী যড়যন্ত্রও থাকতে পারে। বিএনপি আসলেই বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষের দল। এই দলের মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের আকাংখার প্রতিফলন দেখতে চায়। তারেক এখন তরুন ও যুব সমাজের নেতা। একটা বড় স্বপ্ন নিয়ে সে রাজনীতির মাঠে এসেছে। খুব পরিকল্পিতভাবেই সামনের দিকে যাচ্ছিল। সারাদেশ সফর করে তৃণমূলে বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ফলে দেশী ও বিদেশী বাংলাদেশের শত্রুরা শংকিত হয়ে পড়েছিল। ১/১১র সরকার বিদেশীদের পরামর্শেই তারেককে চিরদিনের জন্যে পংগু করে দিতে চেয়েছিল।আল্লাহতায়ালা রক্ষা করেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তবে তারেকের ভুলগুলোকেই তার শত্রুরা কাজে লাগিয়েছে। এবং এখনও লাগাচ্ছে। রাজনীতিতে ইমেজ বা ভাবমুর্তি রক্ষা করা একটা বড় কাজ। শত্রু কোন দিক থেকে আক্রমন করতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অল্প বয়সেই তারেকের অনেক মোসাহেব ও তোষামোদকারী জুটে গিয়েছিল। শহীদ জিয়ার সততা ও ইমেজ ছিল বিএনপির প্রধানতম মুলধন। সেই মুলধন কিছুটা হলেও কলংকিত হয়েছে তোষামোদকারীদের ভুল পরামর্শ কর্মের কারনে। আশা করছি< তারেক এখন তার ভুল গুলো বুঝতে শুরু করেছে। রাজনীতিতে নির্বাসিত জীবন নতুন কিছু নয়। বেনজীর ভুট্টো বহু বছর নির্বাসিত থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।ইরান বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী বহু বছর নির্বাসনে ছিলে। বিদেশে থেকেই বিপ্লবের কাজ চালিয়ে গেছে। ইসলামী বিপ্লবের এই মহান নেতার দেশে আগমনের মাধ্যমেই রেজা শাহ পাহলবীর পতন হয়েছিল। তারেকের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দেশের মানুষের জন্যে রাজনীতি করলে তারেককে আরও অনেক বেশী কস্ট স্বীকারের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে তারেক এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার বড়ছেলে। দেখা যাক বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যায়? ভারত সরাসরিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। হাই কমিশনার পংকজ শরণ বলেছেন বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ আছে। তাই তারা আমেরিকার সাথে যৌথভাবে চলমান সংকট কাটাবার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমিতো মনে করি ভারতের পরামর্শে শখ হাসিনা এ সংকট তৈরি করেছেন। ১/১১র সরকারকেও ক্ষমতায় বসিয়েছিল ভারত। ঠিক পাঁচ বছর আবার সেই পুরাণো সংকট দেখা দিয়েছে। ২০০৬ সালে সংকট তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এবারের সংকটও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাই ভারত প্রকাশ্যে মোড়লীপনা শুরু করে দিয়েছে। তারেক এখনও নির্বাসনে আছেন। একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। দেখা যাক, ভারত শেষ কি চাল দেয়? ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে ১৫৪ জন লোক বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও সে সংসদ এখনও বহাল আছে। যে নির্বাচনে দেশের মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ  নির্বাচনে ভোট দিয়েছে বলে বলা হয়। কিন্তু ভারত অন্ধ ভাবে সে নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ ভারতের স্বার্থ আছে। কি স্বার্থ তা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে শেখ হাসিনা একটা স্বচ্ছ অবাধ দিতে চান না কেন? কেউ হয়ত তাঁকে বুঝিয়েছে  বিএনপিকে যদি নির্বাচনের বাইরে রাখা যায় তাহলে কালক্রমে দলটি আর টিকে থাকবেনা।

এরশাদ মজুমদার, কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


সংবাদপত্রের সাথে রাস্ট্রের বনিবনা কোন যুগেই ভাল ছিলনা। যেসব দেশ বা রাস্ট্র নিজেদের খুব গনতান্ত্রিক মনে করে সেসব দেশেও সরকারের সাথে সংবাদপত্রের মনকষাকষি চলতে থাকে বা চলছে। যদিও পশ্চিমারা যারা নিজেদের অতি ভদ্রলোক বলে মনে  করে তারাও সংবাদপত্রের একশ’ভাগ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। ওসব দেশেও সরকার বা কায়েমী স্বার্থবাদীরা সুযোগ পেলেই সংবাদপত্রের গলা টিপে ধরতে চায়। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের উপর দলন বা নির্যাতন চলছে। অনেক স্বৈরশাসক আছে যারা কথা বলার উপরেও সেন্সরশীপ জারি করে। জেনারেল আইউব তত্‍কালীন পূর্বপাকিস্তানের অনেক নেতার উপর এই সেন্সরশীপ জারি করেছিল। সংবাদপত্রের উপর আইউব সরকারের হামলা ছিল প্রায় প্রতিদিন।  পূর্বপাকিস্তানে সরকার সমালোচক পত্রিকা ছিল তিনটি। পাকিস্তান অবজারভার, সংবাদ ও ইত্তেফাক। এই তিন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবদুস সালাম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও জহুর হোসেন চৌধুরী। ৬৯ এর পর স্বৈরশাসকের বিরোধিতার কাতারে এসে সামিল হয়েছিল দৈনিক আজাদ ও দৈনিক পূর্বদেশ। এসব পত্রিকার মালিক সম্পদক ও কর্মরত সাংবাদিকরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্বপাকিস্তানের জনগনের স্বার্থের জন্যে কাজ করতেন। তখন সাংবাদিকদের ভিতর এত বিভাজন ছিলনা। এখন মালিক সম্পাদক সাংবাদিক সবার নিজস্ব এজেন্ডা আছে। কোথাও সাংবাদিক নির্যাতিত হলে একদল প্রতিবাদ করে আর অন্যদল চুপ করে থাকে।

আমার দেশ এর উপর হামলা হলে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পরেও সাংবাদিকরা দ্বিধা বিভক্ত ছিলেন। বিশ্বের বহু সংগঠন মাহমুদুর রহমানের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। এর চাইতে লজ্জার আর কি হতে পারে। এমন কি রিপোর্টার অলিউল্লাহ নোমানের শাস্তির ব্যাপারেও সাংবাদিকরা মুখ খোলেনি। যদি সাংবাদিক নেতাদের কাছে জানতে চান, তাহলে তারা বলবেন বিএনপির আমলেও এমন অনেক অত্যাচার হয়েছে। তখন আপনারা বিএনপি সাংবাদিকরাতো কোন কথা বলেননি। সারাদেশেই সাংবাদিকরা বিভক্ত। মাহমুদুর রহমান আর নোমানের ব্যাপরে বিচারকদের দৃস্টিভংগী ও পর্যবেক্ষন সম্পর্কে দেশে বিদেশে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে বিচারক ও রায়ের সমালোচনা করা যাবে কিনা? অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন আদালত সমালোচনার উর্ধে। কিন্তু বিচার ও রায়? তার পক্ষে বিপক্ষেতো আলোচনা হতে পারে। সারা পৃথিবীতে তাই হচ্ছে। বিচারকতো আমাদের মতো মানুষ। তাঁরাতো ভুল করতে পারেন বা ভুল রায় দিতে পারেন। বিচারকতো ঘুষ খেতে পারেন। নিম্ন আদালতে দূর্ণীতি আছে একথা প্রায়ই শোনা যায়। ভারতের সাবেক আটজন প্রধান বিচারপতি ঘুষ নিয়েছেন বলে কাগজে বেরিয়েছে। বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত বিচারকের রায় উভয়পক্ষের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তাহলে কি  বিচারকরা বলবেন, আদালতের অবমাননা হচ্ছে?

আমাদের দেশে যে প্রকাশনা আইন রয়েছে তা মুলত তৈরি হয়েছে বৃটিশ আমলে। চোখ বন্ধ করে কোন চিন্তা না করেই আপনি অনায়াসেই বুঝতে পারবেন সে আইন কেন তৈরি করা হয়েছিল এবং কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। সেই আইনটার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। শুধু আমাদের এখানে নয় এই অঞ্চলের সব দেশেই গনবিরোধী এই আইনটি বলবত্‍ রয়েছে। কোন সরকারই এই আইনের পুরো পরিবর্তন করতে চায়না। সব সরকারই স্বাধীন মতামত প্রকাশকারী প্রকাশনাকে গলা টিপে ধরতে চায়। তাই আইনটা হাতে রাখতে চায়। একবার মনে করুন কি কারন দেখিয়ে আমার দেশ বন্ধ করা হয়েছিল।প্রকাশক নাই অভিযোগ করে কাগজ বন্ধ করা হয়েছিল। আবার মধ্য রাতে পুলিশ জোর করে ঢুকেছে। পরে বলা হোল মাহমুদুর রহমান পুলিশের গায়ে হাত তুলেছেন।বৃটেন বা আমেরিকায় প্রকাশনা আইনটা অনেক বেশী গনতান্ত্রিক ও উদার। মনে হয় সারা ইউরোপে আইনটা অনেক বেশী জনগনের কাছে। আমাদের দেশে এখনও সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার জন্যে সরকার বিজ্ঞাপনকে ব্যবহার করে থাকে। পত্রিকার সারকুলেশন কত তা নির্ধারন করে সরকারী সরকারী অডিট ব্যুরো অব সার্কুলেশন। যদিও দাবী করা হয়েছিল সাধারন কোম্পানীর অডিটের নিয়মেই সংবাদপত্রের সার্কুলেশন অডিট করার জন্যে। কিন্তু সরকার নিজের স্বার্থেই এই দাবী মানেনি। আইনটা দেখলেই মনে হবে পত্রিকা প্রকাশনার ব্যাপারে ডেপুটি কমিশনারই ফাইনাল অথরিটি। কিন্তু একবার দরখাস্ত করে দেখুন। তখন দেখবেন অদৃশ্য কত অথরিটি আছে আর কত ঘাটে কত খরচ করতে হয়। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এত বাধা বপত্তি কেন? কারন রাস্ট্র মনে করে নিজেকে বাঁচাতে গেলে অন্যের মতামতকে হত্যা করতে হবে। আমার বন্ধুরা বলেন, রাস্ট্র না বলে সরকার বলুন। কিন্তু আমি তাতে নারাজ। এই রাস্ট্র পাওয়ার জন্যেইতো আমরা ৭১এ যুদ্ধ করেছি। রাস্ট্র আছে বলেই সরকার আছে। সরকার আসে আর যায়। নানা দল  দেশ জনগনের নামে পরিচালনা করে। কিন্তু জনগনের মতামত শুনবে কে? যহোক এটা একটা লম্বা আলোচনার বিষয়।

প্রসংগত, সাম্প্রতিক কালের জঘন্যতম ডিক্টেটর পর্তুগালের সালাজার। এই ভদ্রলোক জনগন আর গনতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সালাজার তার দেশের জনগনের মত প্রকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। এমন কি পর্তুগালে বিদেশী কাগজ পড়া ও বিদেশী রেডিও শোনা বন্ধ করেছিল।ভিন্নমতকে সালাজার কখনও সহ্য করতোনা। বেশ কয়েক যুগ আগে একটি বই পড়েছিলাম। নাম ‘সালাজারের জেলে ১৯ মাস’। এই বইটি সেদেশ থেকে পালিয়ে এসে এক ভদ্রলোক লিখেছিলেন। বইটি ছিল সালাজারের অত্যাচারের করুন কাহিনী। আমাদের দেশেও রিমান্ডের নামে দিনের পর দিন এ ধরনের অত্যাচার চলে। আদালত নিষেধ করলেও অত্যাচার থামেনা। শুনেছি ৭১এ পাকিস্তানী সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ওই রকম অত্যাচার করেছে। তার আগে বৃটিশ আমলে স্বাধীনতাকামীদের উপর বৃটিশরাও এ ধরনের অত্যাচার চালিয়েছে। তখন অত্যাচার করেছে বৃটিশ আর পাকিস্তানীরা। এখন করছে আমাদের ভাই বেরাদর ও ছেলেরা। কারন অত্যাচারের আইনটি তৈরি করেছে বৃটিশরা।আইনটি স্বাধিন পরাধীন সকল সরকারের কাজে প্রয়োজনে লাগছে। প্রয়োজন হলো বিপক্ষ মতকে টুটি চেপে ধরা। রাস্ট্র যদি শোষনের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে বা রাস্ট্রের আদর্শ যদি শোষন আর অত্যাচার হয় তাহলে এমন সরকার চাই যারা রাস্ট্রকে ওই গনবিরোধী আদর্শ থেকে মুক্তি দিবে। আমরা সে ধরনের সরকার আজও পাইনি।

বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মাপের জননেতা ছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভ করে এদেশের জনগনের অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন। তারই নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেন বা না দেন। অবাক এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সেই বংগবন্ধু শেষ পর্যন্ত বহু দলীয় গনতন্ত্রকে  কবর দিয়ে পরিনত হলেন এক সিভিল ডিক্টেটরে।তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে  সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করলেন। সকল কাগজ বন্ধ করে দিলেন। সরকারী কর্মচারীদের তার দলের সদস্য হতে বাধ্য করলেন। তিনি এসব কেন করলেন? হয়ত তাঁর মনে হয়েছে দেশের উন্নতি সাধন করতে হলে অন্য সকল মত প্রকাশের পথ বন্ধ করতে হবে। এমন কি এক সময় বাংলার বাণী’র সম্পাদক শেখ মনি বলেছিলেন, মুজিবের বিরুদ্ধে কথা বললে জিহ্ব কেটে ফেলা হবে। মুজিবের এই বাংলাদেশে শুধু মুজিবের শাসন চলবে, আইনের শাসন নয়। পৃথিবীর সকল ডিক্টেটরই বলে থাকে দেশের উন্নতির জন্যেই ভিন্নমত প্রকাশের সকল মত বন্ধ করতে হবে। মুজিব গবেষকরা মনে করেন ভারত ও রাশিয়ান ব্লকের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর চাপে পড়ে বংবন্ধু ওই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বংগবন্ধু মারা যাওয়ার পর ভারত কিন্তু মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এক সাথে কাজ করার অংগীকার করেছিল।বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে বহুদলীয় গনতন্ত্রে ফিরিয়ে আনে এবং কাগজ প্রকাশনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।

এখন আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। অবজারভার ও সংবাদে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করে রাজনীতি করার জন্যে আমি ৬৪ সালের একদম শেষদিকে ফেণী চলে যাই। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিই একটি সাপ্তাহিক কাগজ প্রকাশের। প্রথমে কাগজের নাম দিয়েছিলাম স্বদেশ। প্রকাশনার রেজিস্ট্রার অফিস ওই গ্রহণ করলোনা। তারপর নাম দিলাম ফসল। ভাবলাম সাধারন পাঠকরা যেন সহজে পত্রিকার নাম উচ্চারন করতে পারে। স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার জানালেন আমার নামে পত্রিকার ডিক্লারেশন পাওয়া যাবেনা। তখন আমি মাওলানা ভাসানীর ন্যাপকে সমর্থন করতাম। বাধ্য হয়ে আমি আমার এক চাচাতো ভাইয়ের নামে ডিক্লারেশন নিলাম। কিন্তু তার পারিবারিক টাইটেল বা পদবী মজুমদার শব্দটি বাদ দিয়েছিলাম। ফেণীতে থাকাকালীন সময়ে আমি অনেক গুলো মামলার মোকাবিলা করেছি। প্রায় সব মামলায় প্রথমে গ্রেফতার হই। সেই সময়ের  দুটো মামলার কথা এখানে উল্লেখ করবো। প্রথম মামলাটি ছিল কর্তব্যরত সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে বাধা দান করা। তখন ফেণী মহকুমা মেডিকেল অফিসার ছিলেন জনাব আবুল কাশেম। ডাক্তার সাহেব সামাজিক ভাবে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। সমাজের উপরতলার প্রায় সবলোকই তাঁকে পছন্দ করতেন। বিনিময়ে তিনি তাদের বিনে পয়সায় চিকিত্‍সা করতেন। তিনি উপরতলার সবার বাসায় আসা যাওয়া করতেন। আর এই সুযোগ নিয়ে ডাক্তার সাহেব সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার করতেন। আমি সাপ্তাহিক ফসলে তার দূর্ণীতি ও অত্যাচারের কাহিনী ছাপতে শুরু করি। এক সময় ডাক্তার সাহেব আমার বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলা করেন। সে মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। ফেণীর একজন উকিলও আমার পক্ষে মামলা চালাতে রাজী হননি। নোয়াখালীর বিখ্যাত উকিল রায় সাহেব নগেন সুর আমার মামলা নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দূর্ণীতির অভিযোগে ডাক্তার সাহেবের চাকুরী চলে গিয়েছিল। শুনেছি, প্রায় ১৯ বছর পর জেনারেল এরশাদের আমলে ডাক্তার সাহেবের ছেলে মন্ত্রী হওয়ার পর ডাক্তার সাহেব নাকি চাকুরী ফিরে পেয়েছিলেন এবং ১৯ বছরের পুরো বেতন আদায় করে অবসরে যান।

দ্বিতীয় মামলাটি ছিল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠি নিয়ে। চিঠিটি ছিল এক পেশকারের ঘুষ খাওয়া নিয়ে। ভদ্রলোক ছিলেন মহকুমা হাকিমের প্রধান পেশকার। সমাজে তার খুব প্রভাব ছিল। তিনি পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। আর সংগে সংগে গ্রেফতারী পরওয়ানা। এই মামলাতেও আমি ফেণীতে কোন উকিল পাইনি। সব উকিলই ছিলেন পেশকার সাহেবের পক্ষে। পরে সমঝোতা হলে পেশকার সাহেব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।১৯৭৪ সালে আমি জনপদে ছিলাম। তখনকার দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। প্রথমটি হলো। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে যাচ্ছে। চীনের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসেন বাণিজ্য নিয়ে আলাপ করার জন্যে। খোন্দকার মোশতাক ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী। বিষয়টা ছিল খুবই গোপনীয়। জনপদ এই খবরটি প্রকাশ করে। খবরটি সংগ্রহ করেছিলাম আমি। লিখেছিলেন গীতিকার কেজি মোস্তফা সাহেব।তিনি তখন জনপদের কূটনৈতিক সংবাদদাতা। পরেরদিন সরকারী গোয়েন্দা জনপদ অফিসে এসে হাজির। খবরটি কে লিখেছেন তা জানার জন্যে তারা রিপোর্টের মুল কপিটি সীজ করে নিয়ে যান। আমি দেখলাম কেজি ভাই ফেঁসে যাচ্ছেন। গোয়েন্দাদের জানালাম খবরটি আমিই রিপোর্ট করেছি। হাতের লেখাটি শুধু কেজি সাহেবের। আমার উপর হুকুম জারী হলো আমি যেন রাজধানীর বাইরে কোথাও না যাই।প্রতিদিন সকালে গোয়েন্দা অফিসে হাজিরা দিতাম। তাদের প্রশ্ন ছিল খবরটি আমি কোথায় পেয়েছি। সরকারের ধারনা ছিল আমি খবরটি ফাঁস করে দিয়ে  ভারতীয় স্বার্থে কাজ করেছি। জনপদের মালিক ছিলেন তত্‍কালীন শিল্পমন্ত্রী কামারুজ্জামান সাহেব। খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। তিনিই আমাকে বংগবন্ধুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর আমি ক্ষমা চেয়ে রেহাই পাই।

পরের ঘটনাটি ছিল মাওলানা ভাসানীর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে। বায়তুল মোকাররমের এলাকা থেকে মাওলানা সাহেবকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সরকার বলছে মাওলানা সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়নি। অথচ মাওলানা সাহেবের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। পরে জানা গেল মাওলানা সাহেব সন্তোষে গৃহবন্দী। কিন্তু কেউ তাঁর সাথে দেখা করতে পারছেনা। পুলিশ বেস্টনীর কারনে সবাই সন্তোষ গিয়ে ফিরে আসছে। ফয়েজ ভাই বললেন, এরশাদ তুমি হুজুরের সাথে দেখা করে এসে একটি রিপোর্ট করো। যদি পারো কন্টিনেন্টালে খাওয়াবো। তখন হুজুরের মুরিদরাই শুধু তাঁর সাথে দেখা করতে পারতেন। আমি আর সৈয়দ জাফর দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। দুজনেই মুরিদ সেজে দেখা করতে গেলাম। মাথায় টুপি,পরনে ছিল মনে হয় লম্বা কুর্তা। অনেক গুলো পুলিশ পোস্ট অতিক্রম করে আমরা মাওলানা সাহেবের দেখা পেয়েছিলাম।হুজুর আমাদের চিনতে পেরেছিলেন। তিনি আমাদের অনেক কথাই বললেন। ফিরে এসে সৈয়দ জাফর হুজুরের ইন্টারভিউ লিখেছিল।আমি লিখেছিলাম কিভাবে দেখা করেছিলাম। আর যায় কোথায়? পরেরদিন আমার চাকুরীটা চলে গেল।

শুরুতেই বলেছি সরকার ও রাস্ট্রের সাথে সংবাদপত্র মত প্রকাশের বনিবনা কখনই হয়না। সবচেয়ে বড় গনতান্ত্রিক সরকারও চায়না জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলুক বা মত প্রকাশ করুক।( প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর, আমার দেশ )

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


বাবরী মসজিদ মামলার রায় সম্পর্কে ইতোমধ্যে আপনারা জানতে পেরেছেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত সহ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় এর প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে তাও জানতে পেরেছেন। আমি পাকিস্তান আর বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ার তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু বলতে চাই। ভারতের নামী দামী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা বলেছেন, এটা একটা আপোষকামী রায়। এই রায়ে আইন কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এই রায়ে দলিল বা বায়া দলিলের কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অযোধ্যার ওই ৬৪ একর জমি মোঘল আমলেই মসজিদের নামে ওয়াকফ করা হয়েছে। মসজিদের জমির বিবরন সরকারী মহাফেজ এখনো আছে। প্রত্নতত্ববিদেরা বলেছেন ওই জমিতে রাম মন্দির ছিল এমন কোন প্রমান মিলেনি। সাম্প্রদায়িক কট্টরপন্থী জংগী হিন্দুরা কোন দলিল দস্তাবেজ আদালতে হাজির করতে পারেনি। তাহলে তাদের কাছে আছে কি? আছে, নিশ্চয়ই আছে।  তারা হলো ধর্মীয়ভাবে ভারতের সংখ্যাগুরু বা মেজরিটি। তাদের শক্তি সংখ্যালগু বা মাইনরিটির চেয়ে অনেক বেশী। এর মানে হলো আদালত রায় দিয়েছে সংখ্যার বিবেচনা করে। আমাদের দেশেও এখন এ ধরনের রায় হতে শুরু করেছে। জানিনা, আদালত কোনদিন বলে বসবে প্রকাশ্যে আজান দেয়া যাবেনা। প্রকাশ্যে গরু জবাই করা যাবেনা। কারন রাস্ট্র এখন ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেকুলার। অথচ সংবিধানে রাস্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম স্বীকৃত থাকবে। একেই সেকুলার রাজনীতি। সেকুলার ভারতে প্রতি মাসেই দাংগা হয়। শত শত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।ভারতে কট্টরপন্থী জংগী হিন্দু সংখ্যাও কম নয়। নরেন্দ্র মোদীর মতো আরও বহু দাংগাবাজ জংগী নেতা ভারতে আছে। এই মোদীই গুজরাতে দাংগা লাগিয়ে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে। সেই মোদী এখনও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাংলাদেশে কখনই দাংগা হয়না। বাবরী মসজিদের রায়ের মাধ্যমে বেরিয়ে এলো রায় এবং বিচারকদের সমালোচনা করা যাবে। এতে আদালত অবমাননার কোন প্রশ্নই আসেনা। বাংলাদেশে রায় এবং বিচারক দেবতার আসন গ্রহণ করে বসে আছেন। তারা মানুষ নন এবং তাদের রায় মানুষের রায় নয়।

মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে চট্টগ্রামেও একটি মামলা হয়েছিল। মসজিদটি হলো চট্টগ্রামের বিখ্যাত শাহী মসজিদ। এই মসজিদটি প্রতিস্ঠিত হয়েছে মোঘল আমলে। বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ ভাবে অবগত আছেন সাবেক সচিব ওমর ফারুক সাহেব। সাংবাদিক হিসাবে আমি বিষয়টি শুনেছি। শাহী মসজিদের বেশ কিছু ওয়াকফ সম্পত্তি বৃটিশ আমলে সরকারী নীতির কারনে বেহাত হয়ে যায়। বিষয়টা নিয়ে মসজিদ কমিটি ও মোতোয়াল্লীরা মামলা চালিয়ে আসছিলেন। ওই মামলা চলাকালে আমার কাছে এসেছিলেন এক বুড্ডিস্ট ভদ্রলোক। সম্ভবত আমার বন্ধু ডিপি বড়ুয়ার রেফারেন্সে এসেছিলেন। মাইনরিটি বলে ভদ্রলোকের প্রতি আমি একটু সহানুভুতিশীল হয়ে পড়ি। তখন চট্টগ্রামের ডিসি ছিলেন সম্ভবত ওমর ফারক সাহেব। পরে তিনি বোধ হয় চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারও হয়েছিলেন। মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তিতে বেআইনী দলিলের মাধ্যমে যারা ভোগ দখল করেছিল তাদের বলা হয়েছিল,জমির বদলে জমি পাবে সাথে ক্ষতিপূরনও পাবে। কিন্তু কয়েকজন তাতে রাজী হয়নি। ফলে তাদের মামলা চলেছে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত। মসজিদের মূল দলিল ছিল ফারসী ভাষায় লিখিত তখনকার দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে। শেষ পর্যন্ত মূল বায়া দলিলই আদালত গ্রহণ করেছে। একবার ভাবুন এটা যদি সেকুলার ভারত হতো তাহলে কি হতো?  মেজরিটি মানুষের ভোটে যেমন সরকার নির্বাচিত হয় তোমনি সরকারকেও মেজরিটি মানুষের কথা ভাবতে হয়। তা না হলে সমাজে অশান্তি সৃস্টি হয়। বাংলাদেশে এখন সরকার, সরকারী জোট ও আদালত যা করছেন তাতে মেজরিট বা সংখ্যাগুরু মানুষের মনে কস্ট লাগার ক্ষুব্দ হওয়ার যথেস্ট কারন দেখা দিয়েছে। আদালত ইতোমধ্যে অনেক গুলো রায় দিয়েছেন যেগুলো দলিল ভিত্তিক নয়। যেমন পর্দা বিষয়ক আদালতের রায়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরাণের আইন বলবত রয়েছে। আদালত ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজমের কথা বলে কোরাণের সেই আইন রহিত করতে পারেন না। যেমন আদালত বলতে পারেন না ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য করা যাবেনা। কারো যদি ধর্ম থাকে তাহলে তাকে তা মানতে হবে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোন শরীয়া কোর্ট নেই। যার ফালে কোরাণী আইন সংক্রান্ত বিষয়ে ফায়সালার জন্যে নির্ভর করতে হয় এমন বিচারকের উপর যার কোরাণ বা কোরানী আইন সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। বেশ ক’বছর আগে হাইকোর্টে তালাক খোরপোষ ও ফতোয়া নিয়ে বিচারক যে রায় দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে সারাদেশ আন্দোলন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় বাতিল করে কোরাণের আইন প্রতিস্ঠা করেন। আমাদের জীবনে বেশীর ভাগ কোরানী আইন বলবত রয়েছে। জমি জমা ও ওয়ারিশানার ক্ষেত্রেও কোরানী আইন বলবত। এসব আইন রদবদল করার এখতিয়ার কোন সরকার বা আদালতের নাই। শুধু বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর কোন দেশেই নাই।    দেখুন না নিউইয়র্কের গ্রাউন্ড জিরোতে মুসলমানরা একটি ইসলামিক সেন্টার তৈরীর উদ্যোগ নেওয়াতে কট্টরপন্থী খৃস্টানরা নানা ধরনের বিপত্তি তৈরী করছে। কিন্তু আমেরিকার বেশী ভাগ মানুষ ওই সেন্টার তৈরীর পক্ষে। এমন কি নিউইয়র্কের লোকাল সরকারও ইসলামিক সেন্টার স্থাপনের পক্ষে। কারন প্রাস্তাবিত সেন্টারের জমির মালিক মুসলমানরা। সুতরাং নিজেদের জমিতে নিজেদের পছন্দমতো বাড়ি তৈরী করা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাদের সেই মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।

প্রসংগত বাংলাদেশের আয়মা সন্পত্তির বিষয়টা উল্লেখ করতে চাই। মোঘল আমলে সুবেহ বাংলায় শিক্ষা ব্যয় বহনের জন্যে সরকার প্রায় পাঁচ লক্ষ একর বরাদ্দ করেছিল। সেসব জমি বৃটিশ আমলে হিন্দু জমিদারদের ভিতর বিতরন করে সরকার খাজনা আদায় করতো। ভারতেও একই অবস্থা হয়েছে। এখন সেসব সম্পত্তির কথা বাংলাদেশ সরকার জানে কি? না জানেনা। কারন সরকার গুলো ইতিহাস এতিহ্যের ব্যাপারে সজাগ নয়। চলমান সরকার অর্পিত বা দেশত্যাগী হিন্দুদের সম্পত্তি ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু যেসব মুসলমান ভারত ত্যাগের কালে বাপ দাদার যে সম্পত্তি ফেলে এসেছে সে গুলোর কি হবে। এমন রেকর্ডও পাওয়া যাবে যে এক জমি পাঁচ জনের কাছে বিক্রি করে বন্ধুরা দেশত্যাগ করে চলে গেছেন।আমার লেখা পড়ে অনেকেই বলবেন, এসবতো কমিউনাল বা সাম্প্রদায়িক কথা। আপাত দৃস্টিতে এ রকম মনে হতে পারে বা ধারনা তৈরী হতে পারে। কিন্তু সত্যটা কি? সত্য হচ্ছে ৪৭ সাল বা ৭১ সালের কারণে আমাদের ইতিহাসে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেছে। ৪৭ এ অনেক বেদনাদায়ক দাংগা হয়েছে। যা ভারতে এখনও হচ্ছে। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময়  অনেক হিন্দু বাড়ি লুট হয়েছে। শহর গুলোতে বিহারীরা লুট করেছে। কিন্তু গ্রামে মুসলমানেরাই হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে। ৭১এ ভারতে গিয়ে অনেকেই ফিরে আসেননি। যারা ফিরে এসেছেন তারা সবাই তাদের সম্পদ ফিরে পাননি।

গত কিছুদিন ধরে হঠাত্‍ নতুন করে একটা বিষয় সামনে এসেছে আলোচনার জন্যে। সেটা হলো ৭১ এ যুদ্ধ কার সাথে কার হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের দলিল দস্তাবেজ বলছে যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। রমনার মাঠে আত্মসমর্পনের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। সেখানে বাংলাদেশকে রাখা হয়নি। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য ও ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাদীকে ছেড়ে দিয়েছে ভারত।কিন্তু মহাসত্য হচ্ছে ওই যুদ্ধে ভারতকে সব রকম সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। পাকিস্তানের পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে প্রতিস্ঠিত হয়েছে। ভারতের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে পরাজিত করা এবং সুদুর অতীতের সকল অপমানের প্রতিশোধ গ্রহন করা। তাই ভরতের প্রয়াত প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের পার্লামেন্টে বলেছিলেন,‘ হাজার সালকা বদলা লিয়া’। কিসের বদলা, কেন বদলা সেটা পাঠক সমাজ নিজেরা বুঝে নেয়ার চেস্টা করুন। সেই ইতিহাস অনেক লম্বা। সুযোগ হলে আরেকদিন এ বিষয়ে কথা যাবে। স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছে সেই বিষয়টাও এই হতভাগ্য জাতি ঠিক করতে পারেনি। এই তর্ক চলছেতো চলছেই।

প্রসংগত আজ আপনাদের বলবো ১৮৫৮ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ভাল করে পড়ুন। কে বা কারা ওই স্বাধীনতা যুদ্ধকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছে। ইংরাজ দখলদাররা যখন ওই স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিদ্রোহ বলছে তখন আমরাও কি তাই বলবো? তাহলে ইংরেজ ও তাদের তাবেদারদের লিখিত ইতিহাসকে সত্য বলে মেনে নেবো? ১৭৫৭ সালে পলাশীতে ইংরেজদের দোসরদের যড়যন্ত্রের ফলে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পরাজয় হয়। কিন্তু দালাল ঐতিহাসিকরা লিখলেন নবাব দুশ্চরিত্র ছিলেন। নবাবকে কারা হত্যা করেছিল? কারাই বা নবাবের লাশ দাফন ছাড়া মুর্শিবাদের রাস্তায় ফেলে রেখেছিল কেনইবা ইংরেজরা ৮০ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে একটা ভুয়া মামলা এনে বিচারের প্রহসন করেছিল। সেই প্রহসনের বিচারে মানবতাবাদী মরমী কবি বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে ইয়াগুনে নির্বাসনে পাঠানো হয়।১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোর ৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিকেল ৪টায় তাঁকে বৃটিশ সৈন্যদের পাহারায় নির্জনে দাফন করা হয়। আজ ইংরেজদের কারো কথা আমাদের মনে পড়েনা। কিন্তু স্বাধীন ভারতের শেষ সম্রাট কবি বাহাদুর জাফরের কথা মনে পড়ে। কবি লিখেছিলেন:

দীর্ঘ জীবন চেয়েছিলাম পেয়েছি মাত্র চারদিন

দু’দিন কাটলো আশায় আর দু’দিন কাটলো প্রতীক্ষায়।

জীবন শেষ হলো সন্ধ্যা হলো

কবরের কোনায় পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।

কত হতভাগ্য জাফর

দাফনের জন্যে

দু’গজ জমিও পেলনা স্বদেশে স্বজনের মাঝে।

পরম আবেগ থেকে আমার প্রিয় মাতৃভুমির কথা ভেবেই এসব কথা লিখছি। আমি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করি এই দেশটিকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা করা কোন কঠিন কাজ নয়। আমাদের ভাগ্য বড়ই খারাপ। আমাদের আজ প্রয়োজন একজন ত্যাগী দেশ প্রেমিক নেতা। কিন্তু কখন আসবে সে নেতা বা পথ নির্দেশক জানিনা। এখনতো একদল শকুন দেশটাকে মরা গরুর মতো খাবলে খাচ্ছে। শুক তাড়াবার জন্যে কোন ওয়ারিশ আছে বলে মনে হয়না। এ ব্যাপারে আমি সবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক প্রধান উপদেস্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান সম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতি আপনাদের দৃস্টি আকর্ষন করছি। তিনি বলেছেন, দেশটা বাজিকরদের হাতে পড়ে গেছে। হাবিবুর রহমান সাহেব আওয়ামী ঘরানার মানুষ। বিবেকের দংশনে তিনি আর চুপ থাকতে পারলেন না। ঠিক এমনি একটি ভাষন দিয়েছিলেন  বিশিস্ট শিক্ষাবিদ ড: মাযাহারুল হক ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির বার্ষিক সভায়। সেই ভাষনও সারা দেশে আলোড়ন সৃস্টি করেছিল

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »