Feeds:
Posts
Comments

Archive for the ‘Free Thoughts’ Category


মানুষ ব্যবসার প্রাচীন ইতিহাস ও চলমান বিশ্বের শ্রম বাজার

মানুষের ব্যবসা সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। বলা যেতে পারে পাঁচ বছরেরও পুরানো ইতিহাস। এখন সময় ছিল দাস শ্রমিকের ব্যবসা। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে দাস প্রথা প্রায়ই উঠে গেছে বলা যায়। আমেরিকার মত দেশে দেড়শ’ দুশো বছর আগেও দাস ব্যবস্থা ছিল। দাস ব্যবস্থা তুলে দিতে গিয়ে আব্রাহাম লিন্কনকে জীবন দিতে হয়েছে। আমেরিকাতে কালোধলোর ঝগড়া এখনও লেগে আছে। সভ্যদেশ বা জাতির দাবীদার পশ্চিমীরাই দাস ব্যবসা দ্বারা সবচেয়ে বেশী পুঁজি তৈরী করেছে। আমাদের দেশেও এক সময় মানুষ বেচাকেনা হতো। নিবন্ধন মহাপরিদর্শকের অফিসে আমি মানুষ বেচাকেনার  একটি দলিল দেখেছি। আপনারা গেলেও দেখতে পাবেন। এটা হলো ক্রীতদাস ব্যবস্থা। এখন আর এই ব্যবস্থা নেই। ভারতের কোন কোন এলাকায় এখনও মানুষ বেচাকেনা হয় বলে শুনা যায়। পৃথিবী থেকে মানুষ বেচাকেনা আর দাস ব্যবসার অবসানের জন্যে মানব জাতিকে হাজার হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রকাশ্যে দাস মুক্তির কথা ঘোষণা করেছে পবিত্র কালাম আল কোরাণ। আল্লাহর রাসুল(সা) দাস মুক্তির জন্যে নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহন করেছিলেন। দাস ব্যবসার উত্‍পত্তি হয়েছে মূলত: মানুষের দারিদ্র থেকে। সমাজে যে মানুষ দরিদ্র বা দূর্বল ছিল তাকেই দাস বানানো হয়েছে। কখনও কখনও পরাজিত মানুষকেও দাস বানানো হয়েছে। এর কারণ ছিল বিনামূল্যে শ্রম আদায় করা। পৃথিবীর কয়েদখানা গুলোতে নাকি এখনও বিনা পারিশ্রমিকে কাজ আদায় করে নেয়া হয়। সবচেয়ে বেদনাদায়ক দু:খের খবর হলো গনতন্ত্রের দাবীদার ও স্বঘোষিত বিশ্বনেতা আমেরিকা বিভিন্ন দেশে গোপন কয়েদখানা খুলে বসে আছে। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকার অপছন্দের লোকদের ধরে এনে আটক রাখা হয় এবং জোর করে বিনামূল্যে শ্রম আদায় করা হয়। এসব বিষয়ে বিশ্ব বিবেক এখনও তেমন জাগ্রত বা সোচ্চার নয়।

এখন বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার উন্মুক্ত। ধনী ও উন্নত দেশগুলো গরীব দেশ গুলো থেকে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে। এসব দেশের শ্রমিকরা খুবই সস্তা। আমাদের বাংলাদেশ তেমনি একটি গরীব দেশ। তাই সারা পৃথিবীতে আমরা শ্রমিক পাঠিয়ে থাকি। সেই শ্রমিকেরা হাড়ভাংগা খাটুনী খেটে দেশে বিদেশী মুদ্রা পাঠায়। সেই মুদ্রা সরকার দেশের উন্নয়নে কাজে লাগায়। শুনেছি, এখন আমাদের প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক বিদেশে কাজ করছে। এরা বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠায়। আরও বেশ কিছু অবৈধ শ্রমিক বিদেশ আছে যারা বৈধ হওয়ার জন্যে আপ্রাণ চেস্টা করছে। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকার একটি আলাদা মন্ত্রণালয় খুলেছেন। এখন সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন প্রধান মন্ত্রীর বেয়াই সাহেব। শ্রম মন্ত্রণালয় ও অধীদপ্তর নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিন খবরের কাগজে এ বিষয়ে নানা খবর ছাপা হয়। এমন কি বায়রা কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন ‘বাংলার জনশক্তি’ পড়লেও আপনি জানতে পারবেন দেশের শ্রমশক্তির রফতানী সম্পর্কিত নানা খবর।

দাস ব্যবসা এখন সরাসরি কোথাও নেই। তবে কম পারিশ্রমিক দিয়ে ঠকাবার ব্যবস্থা এখনও দেশের ভিতরে ও বাইরে জারী আছে। পুঁজির মালিক মনে করেন কম বেতন বা মজুরী দিলে তারা একটু বেশী পরিমানে লাভ করতে পারেন। আমাদের দেশে পোষাক শিল্প সেভাবেই গড়ে উঠেছে। তবে পোষাক শিল্পের মালিকরাও অনেক লড়াই করেছেন এই শল্পের অগ্রগতির জন্যে। সরকারও প্রচুর সহযোগিতা দিয়েছেন। শুনা যায় প্রায় ৩০ লাখ নারী এই শিল্পে শ্রম বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগের জন্যে তেমন সম্মানজনক মজুরী বা রিটার্ণ পাননি। এখন তাঁরা সজাগ হতে শুরু করেছেন। দু:খের বিষয় এই শিল্পে প্রচুর ভাংচুর ও আগুন লাগাবার অসত্‍ কাজ বার বার চলছে। অনেকেই মনে করেন এই অরাজকতার পিছনে বিদেশী হাত রয়েছে। বিদেশীদের সাথে হাত মিলিয়েছে বামপন্থী বলে পরিচিত এক শ্রেণীর অদৃশ নেতা ও নেত্রী। তবে এত অসুবিধার মাঝেও এই শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে আরও বহু লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠেছে। তাতে আরও অনেক শ্রমিকের কর্ম সংস্থান হয়েছে।

৭০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে যেয়ে দেশের জন্যে ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠালেও তাদের দু:খের একেবারেই অবসান হয়নি। এতে সরকার এবং এক শ্রেণীর এজেন্ট বা শ্রমশক্তি রফতানি কারক দায়ী। আজ পর্যন্ত একজন এজেন্টেরও তেমন কোন শাস্তি হয়নি। কিন্তু শ্রমিরা হয়েছে সর্বস্বান্ত। বিদেশ যায় গ্রামের কৃষকের সন্তানেরা জমি জমা বিক্রি করে। ভুয়া এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশে গিয়েও অনেকে দারুন ভাবে ঠকেছে। অনেকেই এখন বিদেশের জেলে আছেন। সরকার এই ব্যাপারে তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেননি। সম্প্রতি রেমিট্যান্স কমতে শুরু করেছে বলে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুনা যায়, এই ব্যাপারে সরকারের কূটনৈতিক দরকষাকষি তেমন শক্তশালী হয়নি। কোথাও কোথাও সরকারের বিদেশনীতি অনেকেই দায়ী করেছেন। বহুদেশ আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক না নিয়ে ভারত পাকিস্তান শ্রীলংকা থেকে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ভুল নীতির ফলে অনেক দেশ নানা ধরনের কারণ দেখিয়ে আমাদের শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।

সরকার নানা নীতি গ্রহন করেছেন, কিন্তু সেসব বাস্তবায়নে তেমন জোর পদক্ষেপ নেই। মন্ত্রী মহোদয়রা নানা কথা বলেন। মনে হয় ওসব কথার কথা। ভাবটা যেন গরীবের ছেলে বিদেশ গিয়েছে তাতে আমি বা আমাদের কি? অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যান্কের গভর্ণর সাহেবও রাজনীতিকদের কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনিও ইদানিং অনেক কথা বলেন যার কোন বাস্তবায়ন নাই। কিছু কিছু কাজ আছে যা গভর্ণর সাহেব নিজেই করতে পারেন। যেমন রেমিট্যান্সের টাকাটা যেন প্রেরকের স্ত্রী-সন্তান বা মা-বাপ খুব দ্রুত পান। তাদের যেন কোন কস্ট না হয়। সংগঠিত পোষাক শিল্পের মালিকরা সরকারের উপর যে পরিমান প্রবাব বা চাপ সৃস্টি করতে পারেন তা প্রবাসী শ্রমিক ও কর্মজীবীরা করতে পারেন না। তাদের তেমন কোন সংগঠনও নেই। শ্রমশক্তি রফতানীকারক সমিতি নিজেদের স্বার্থের জন্যে যেভাবে দরকষাকষি করতে পারেন সেভাবে প্রবাসীরা করতে পারেন না। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের সাথে কথা বলে দেখুন তারা মন্ত্রণালয় সম্পর্কে কি বলেন। একশ’ভাগ প্রবাসীই বলবেন তারা সরকারী অবহেলায় দিন যাপন করছেন।

এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী খাতকে যে পরিমান গুরুত্ব সরকারের দেয়া উচিত ছিল তা সরকার দেননি। ফলে এখন জনশক্তি রফতানী কমছে। রেমিট্যান্সও কমছে। ১৯৭৬ সালে  ৬০৮৭ জন শ্রমিককে বিদেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশ প্রথম জনশক্তি বাজারে প্রবেশ করে। আশা ছিল একদিন বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধান জনশক্তি রফতানীকারক দেশ হিসাবে নিজের অবস্থান দৃঢ করবে। কিন্তু দেশবাসীর সে আশা পূরণ হয়নি। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিবিড় দেখাশুনা করার জন্যে সরকার কোন ব্যবস্থা করেনি। বিদেশে দূতাবাস গুলোতে বিশেষ সেল খোলার দরকার ছিল। সরকারী অফিসাররা সেখানে বন্ধু বা হিতৈষী হিসাবে ব্যবহার না করে প্রভুর মতো ব্যবহার করে। বিদেশে পোস্টিং পাওয়ার জন্যে সরকারী নেতাদের আত্মীয় স্বজনরাই বেশী গুরুত্ব বা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। ফলে তারা সেবার কাজ না করে নিজেদের আখে গুছাতেই ব্যস্ত থাকেন।

জিডিপিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল। পোষাক শিল্পের চেয়ে অনেক বেশী বললে অনেকেই অবাক হবেন। জনশক্তি রফতানী খাতে পুরোটাই দেশের আয়। যারা বিদেশে যান তারা বিদেশেই খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান জোগাড় করেন। তাদের জন্যে সরকারের কিছুই করতে হয়না। একজন লোকের সারা বছরের খাদা বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য কোন কিছুরই যোগান দিতে হয়না সরকারকে। উপরন্তু একজন প্রবাসী শ্রমিক দেশের জন্যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। সরকার সত্যিকার অর্থা তাদের জন্য নীতি তৈরী করা ছাড়া তেমন কিছু করছেননা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যান্কে প্রত্যেক প্রবাসীর শেয়ার থাকা দরকার। প্রবাসীদের পরিবার পরিজনের জন্যে বিশেষ স্কুল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করা দরকার। শুধু নামের জন্যে কোন প্রতিস্ঠান ষ্থাপন করে লাভ নেই। বায়রা ইন্সুরেন্স প্রবাসী শ্রমিকদের কি কাজে লাগছে তা দেশবাসী জানেনা।

Read Full Post »


বস্তি বলতে আমরা ইংরেজী স্লাম মনে করি। মানে বাস্তুহারা গৃহহীন মানুষেরা যেখানে বাস করেন। বস্তি শব্দটি এসেছে বসত শব্দ থেকে। উর্দুতে বা হিন্দীতে বস্তি মানে বসত বাড়ি। বাংলাতেও বসত বাড়ি বলে। তহশীল অফিসেও জমি জমার রেকর্ডে জমির বর্ণনা দেয়া হয় বসত বাড়ি ভিটে বাড়ি পুকুর কৃষিজমি অনাবাদী জমি ও সরকারি খাস জমি। সম্প্রতি জমি জমা বা বসত বাড়ি নানা কথা চলছে। একদিকে আবাসন মন্ত্রণালয় রিহ্যাব সদস্য ভুমি উন্নয়নকারী ও ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাতাদের নিয়ে প্রতিদিন কথা বলছেন। জনগণের উপকারের জন্যে নানা ধরণের আইন বানাচ্ছেন। রিহ্যাব সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিস্ঠান আছে যারা ভুমি উন্নয়ন করে চড়াদামে বিক্রি করে। ভুমি উন্নয়নকারীদের নানাকথা চলছে। দামী দামী আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়েই সবার চোখের সামনে তারা জমি বিক্রি করছেন। দামী দামী তারকারা পয়সা নিয়ে বিজ্ঞাপনের মডেল হচ্ছেন।

সম্প্রতি বাড়ি নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি হয়েছে। একটি বাড়ি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল কম কথা বলেনি। এই বাড়িটি ছিল সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। চলমান সরকার মনে করেন বাড়িটা খালেদা জিয়াকে দেয়া শুদ্ধ হয়নি। তাই লীজ বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও সরকার কম কথা বলেনি। ওই বাড়িতে কি ছিল তা নিয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে অনেক খিস্তি খেউর করেছেন। তারপরেই শুরু হয়েছে কার বাড়িতে কি আছে তা নিয়ে নানা কথা। এমন কি বংবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িটি তিনি কেমন করে বানিয়েছেন, তাঁর কোন টিআইএন ছিল কিনা। কার বাপদাদার কি ছিল তা নিয়েও কথা উঠেছে। আমাদের প্রধান মন্ত্রী বিরোধী দলের কোন কথায় কান দেননা। এখন তিনি ক্ষমতায় আছেন তাই এতে তাঁর কিছু আসে যায়না। জানিনা, দেশবাসীকে আর কি কি শুনতে হবে।

১/১১র মইনউদ্দিন- ফখরুদ্দিনের আদর্শ উদ্দেশ্য ছিল তা আজও দেশবাসীর কাছে পরিস্কার নয়। তবে যে ক্ষতি দেশের হয়েছে তা একেবারেই পরিস্কার। প্রথম দিকে মনে হয়েছে ওই সেনা সমর্থিত সরকার দেশের দুটি বৃহত্‍ দলকে ধ্বংশ করতে চেয়েছিল। অনেকে বলেন দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বহিস্কার করতে চেয়েছিল তথাকথিত সেই কেয়ারটেকার সরকার। তখন নয়া দিগন্তে বেশ কটি কলাম লিখে আমি বলেছিলাম ওই দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেয়া সম্ভব হবেনা। কারণ দেশের সাধারন মানুষ ও ভোটাররা দুই ভাগে বিভক্ত। বড় দুটি দলের সমর্থকের সংখ্যাও কোটি কোটি। শুনেছি ১/১১ সরকার দুটি দলের মার্কা নৌকা ও ধানের শীষকেও বাতিল করতে চেয়েছিল। সম্প্রতি বিশ্ব কাঁপানো উইকিলিক্স প্রকাশ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে নির্বাচন চেয়েছে। কিন্তু দুই নেত্রীকে অবশ্যই নির্বাচনে আনতে হবে। খালেদা জিয়া নাকি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চাননি। শেষ পর্যন্ত তিনি নানা ধরনের ভয় ভীতির মাঝেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। না করলে নাকি দেশে সামরিক শাসন জারী হতো। তাই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত থাকা স্বত্তেও তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন। ফলে ১/১১র সরকার তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি যা করতে চেয়েছিল এখন সে কাজটি করছে। খালেদা জিয়াকে বাস্তুহারা করা হয়েছে। তাঁর দুই ছেলেকে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, দেশবাসী তাঁর গুলশানের বাড়িটিও নিয়ে নিতে পারে। সাভারে জিয়া সাহেবের যে জমি ছিল তাও নাকি সরকারী দলের লোকেরা দখল করে নিয়ে গেছে।

শুরু করেছিলাম রাজধানীতে বসবাসকারী সাধারন মানুষের বসতবাড়ি জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে কিছু কথার জন্যে। খালেদা জিয়ার বাড়িটা নিয়ে নাকি বিডিয়ার  জওয়ানদের বিদ্রোহে নিহত অফিসারদের পরিবারের জন্যে ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। তাতে নাকি অনেক পরিবারের বত ব্যবস্থা হবে। তবে রাস্ট্রের দায়িত্ব ছিল এবং রয়েছে সব মানুষের জন্যে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করা। জাতি সংঘেরও তেমন ওয়াদা রয়েছে। সরকার তা পারেনি। কখন পারবে তার কোন নিশ্চয়তা বা ওয়াদা নেই। স্ল্যাম দেখিয়ে নাকি বেশ কিছু এনজিও কর্মী ও নেতা দুটো পয়সা কামিয়ে নিচ্ছেন। বিদেশী সাহেবরাও বস্তিতে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে নিজ দেশে নিয়ে দেখাচ্ছেন। শুনেছি রাজধানীতে ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তি ফুটপাত রেল স্টেশন বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে রাত কাটান। মানে  ৭০ লাখের বেশী মানুষ গৃহহীন। এদের প্রতিদিন প্রধান মন্ত্রী মন্ত্রী সংসদ সদস্য ও আমলারা দেখতে পান। রাজনীতির মিছিলে নাকি এদের বেশ দাম। মিছিলে গেলে একশ’ বা দুশো’টাকা পায়। গুলি কেয়ে মরলে শহীদ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো এদের শহীদ বানিয়ে শোক দিবস পালন করে। রাজধানীতে রাজনীতির জন্যে রিকসা, ঠেলা গাড়ি ও ভিক্ষুকের তাই খুব প্রয়োজন।

বসতি সমস্যা সমাধানে সরকার কি করছেন? আমরা তা সুস্পস্ট ভাবে দেখতে ও জানতে পারছিনা। রাজধানীতে বা সারা দেশে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও হাউজিং সেটেলমেন্ট বিভাগ সরকারী জমি বিতরন করছেন। কৃষক বা সাধারন মানুষের জমি সস্তায় হুকুম দখল করে কিছু বেশী দামে বা বাজার থেকে অনেক কম দামে সুবিধাভোগী সমাজের কাছে বিক্রী করছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক) রীতিমত জমির ব্যবসায়ী হিসাবে নামজাদা প্রতিস্ঠানে পরিণত হয়েছে। নিয়মিতই জমি দখল করছে এবং প্লট বানিয়ে বিক্রী করছে। যা অন্যান্য সাধারন জমির ব্যবসায়ীরাও করছে। রেগুলেটরী বা আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নকারী প্রতিস্ঠান হিসাবে তেমন কোন সাফল্য রাজউক এখনও দেখাতে পারেনি। বার বার দাবী উঠেছে রাজউক যেন আর জমির ব্যবসা না করে। কিন্তু সেদিকে নজর দেয়ার সরকারের সময় নেই। এতে জনমনে ধারনা হয়েছে রাজউকের জমির ব্যবসার সাথে সরকার এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। রাজউক হচ্ছে থানার দারোগার মতো। নিজেই অভিযোগ এনে যেকোন নাগরিককে পাকড়াও করে আদালতে চালান দেয় এবং নিজেই সাক্ষী দেয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে আইন করে বলা রাজধানীতে আর জমি বরাদ্দ দেয়া হবেনা। রাজউক ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করবে। বেসরকারী ভুমি উন্নয়নকারীরাও শুধু ফ্ল্যাট তৈরি করবে।

এবার রিহ্যাব সদস্যদের নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। এখন নাকি রিহ্যাবের সদস্য সংখ্যা ৮শ’র উপরে। তন্মধ্যে বিজ্ঞাপনের কারনে শ’খানেক কোম্পানীর নাম জানা যায়। রিহ্যাব ডাইরেক্টরিতে সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। রিহ্যাব কিছু বুলেটিনও প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু একজন গ্রাহক হিসাবে যদি কোম্পানী গুলো সম্পর্কে জানতে চান সঠিক তেমন কোন তথ্য কোথাও পাবেননা।বেশীর ভাগ ক্রেতাকেই না জেনেই ফ্ল্যাট বুকিং দিতে হয়। তারপর কখন ফ্ল্যাট পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শুধু জাঁদরেল ক্রেতাই হুমকি ধামকি দিয়ে নিজের যোলআনা বুঝে নিতে পারেন। ক্ষমতাবান লোকেরাতো প্রভাব খাটিয়ে বিনে পয়সায় ফ্ল্যাট বা জমি পেতে পারেন। ক্ষমতাহীন মধ্যবিত্তদের যত কস্ট। জমির মালিক ডেভেলপারকে জমি দেয়ার আগে মিস্টি মধুর স্বর্গীয় ব্যবহার পেয়ে থাকেন। চুক্তি করে জমি ডেভেলপ করার জন্যে দেয়ার পর কি ঘটতে পারে তা কল্পনাও করতে পারবেননা। শুনেছি উত্তরায় এক রিহ্যাব সদস্য ফ্ল্যাট বানিয়ে জমির মালিককে কিছুই দেননি। দুই হাজার সালে জমি দিয়ে তিনি এখনও ডেভেলপারের পিছনে ঘুরছেন। সাত মসজিদ রোডে এক বিঘা জমির উপর বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করার জন্যে ডেভেলপার চুক্তি করেছেন ২০০৩ সালে। আজও সেই ভবন তৈরি হয়নি। সেখানে এখন সাউথ ইস্ট ব্যান্কের সাইন বোর্ড ঝুলছে। ইতোমধ্যে জমির মালিক মারা গেছেন। রিহ্যাব কখনই এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। সরকার নানা ধরনের কঠোর আইন তৈরি করছেন। গ্রাহক বা ভোক্তার কিছু আইন গত অধিকার হয়ত এতে বাড়বে। কিন্তু জমি বা ফ্ল্যাট কিনে কে মামলা মকদ্দমায় যেতে চায়। কোম্পানীরতো দামী আইনজীবী আছে। গ্রাহকের কে আছে? এ ধরনের মামলা  কতদিন চলে তা সবাই জানেন। এতে ডেভেলপারই উপকৃত হয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধানে রিহ্যাব শুধু সমঝোতার চেস্টা করতে পারে। কিন্তু তারা তাদের সদস্যদের স্বার্থই প্রধানত দেখে থাকেন। রিহ্যাবের বর্তমান ইমেজ খুবই নেগেটিভ বা নেতিবাচক। রিহ্যাবের নিজস্ব কোন রিসার্চ সেল বা গবেষনাগার নেই। বহুদিন ধরে এ ব্যাপারে তাদের অনুরোধ করেও ফল পাওয়া যায়নি। জনশক্তি রফতানীকারকদের এক সময় আদম ব্যাপারী বলা হতো। তখন এত আইন কানুন ছিলনা। এখন এ ব্যাপারে সরকার ও জনগন সজাগ। তবুও গরীব মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তেমনি রিহ্যাবও একটি শক্তিশালী হাউজিং সংগঠন। বিগত বছর গুলোতে রিহ্যাবের সদস্যরা প্রায় এক লাখের মতো ফ্ল্যাট নির্মান ও সরবরাহ করেছে। কয়েক হাজার প্লট ডেভেলপ করে বিক্রি করেছে। প্রায়। যে পরিমান কাজ হয়েছে সেই পরিমান পজিটিভ ইমেজ তৈরি হয়নি। কারন তাদের কাজের পেছনে সুখ বা আনন্দের চেয়ে বেদনা বেশী। বহু মানুষের চোখের পানি জড়িত তাদের ধনী হিসাবে বিকশিত হওয়ার পেছনে।

চাল ডাল তেল নুনের দাম বাড়লে চারিদিকে চিত্‍কার শুরু হয়ে যায়। কারন না খেলে মানুষ মরে যাবে। সেজন্যে জোর করে হলেও সরকার দাম কম রাখার চেস্টা করে। পোষাক শিল্প ও পুরাণো গরম কাপড় আমদানীর কারনে মানুষ সস্তায় কাপড় পরতে পারছে। কিন্তু চিকিত্‍সা ও বসতির তেমন কোন ব্যবস্থা রাস্ট্র করতে পারেনি। সারা দেশে কয়েক কোট মানুষ গৃহহীন। এ নিয়ে প্রচুর কথা হয়। লেখালেখি ও সেমিনার হয়।বসতি সব মানুষের মৌলিক অধিকার। বিষয়টা সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করা হয়। বস্তির কথা শুরুতেই বলেছি। সব মানুষকে বসত দেয়া খুবই কঠিন কাজ। তবে অসম্ভব নয়। কিন্তু সরকার বা উপরতলার মানুষেরা বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। বিগত বছর গুলোতে সরকার রাজধানীতে জমি বা প্লট বরাদ্দ না দিয়ে যদি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতো তাহলে কয়েক লাখ বেশী লোকের বসতের ব্যবস্থা হতো। কিন্তু সরকারের নীতি হলো কিছু সুবিধাভোগী মানুষকে জমি বা প্লট দেয়া। রাজনীতিক, সামরিক বেসামরিক আমলা, ধনীদের সবার জমি আছে রাজউক এলাকা গুলোতে। সরকারী দাম দশ লাখ হলে বাজারে দাম এক কোটি টাকা। এর মানে হলো সরকার রাতারাতি কিছু সুবিধাভোগীকে রাতারাতি ধনী করে দিলেন। এ নিয়ম আর কতদিন চলবে কে জানে। রাজধানীতে এখন ৩০ লাখ টাকায় কোন ফ্ল্যাট পাওয়া যায়না। বসতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যান্কগুলো দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেয়না। স্বল্পমেয়াদী ঋণে গ্রাহক টাকা শোধ করতে পারেনা। ৩০ বছর মেয়াদী ঋণ চালু করার জন্য বলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। খালেদা জিয়ার বসত ভিটা টানাটানি করে ইতোমধ্যেই সরকার নানা ঘটনা তৈরি করেছেন। আইন আর নিয়মনীতির কথা বলে ওই বাড়ির দলিল বাতিল করা হয়েছে। খতিয়ে দেখলে রাজধানীতে বহু বাড়ি পাওয়া যাবে যা বরাদ্দে ষোলয়ানা নিয়মনীতি মানা হয়নি।

Read Full Post »


নোবেল বিজয়ী ড: ইউনুস ও গ্রামীন ব্যান্কের হাল হকিকত।

গ্রামীণ ব্যান্ক ও ড: ইউনুসকে নিয়ে এখন দেশে তোলপাড় চলছে। সরকার ও সরকারী দল ড: ইউনুসের উপর ক্ষেপে গেছেন। স্বয়ং প্রধান মন্ত্রী ইউনুসকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যা অশোভন পর্যায়ে পড়ে বলে আমার মনে হয়। ইতোমধ্যে পররাস্ট্র মন্ত্রী দিপুমনি, দলের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও ছাত্রলীগের নেতারাও ইউনুসের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলে ফেলেছেন। দেশের সুধীজন বলেছেন, অভিযোগের তদন্তের আগে এসব কথা বলা উচিত হয়নি। ইউনুস নিজেই সরকারী তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সুযোগ পেয়ে মিডিয়া ও নানাজন নানা কথা বলতে শুরু করেছেন।যাক শেষ পর্যন্ত সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ড: ইউনুস এখন একজন বিশ্ব নাগরিক। দরিদ্র গ্রামীন নারীদের ভিতর বিনা বন্ধকে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরন করে বিশ্বব্যাপী নাম করেছেন। এজন্যে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। সে সময়ে দেশের মানুষ আনন্দে আত্মহারা ছিলেন। তখন সরকার বেসরকার সবাই দলবেধে ইউনুস সাহেবকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমাদের  দেশে  জ্ঞানী অজ্ঞানী সব মানুষই

হুজুগে নাচতে থাকেন। বিখ্যাত এক প্রবাদ আছে, চিলে কান নিয়েছে তাই সবাই চিলের পিছনে দৌড়াতে থাকে। কানওয়ালা কখনও নিজের কানে হাত দিয়ে দেখেনা। এখন নরওয়ের টিভিতে অনুসন্ধান মুলক রিপোর্ট প্রচারিত হওয়ার পর আমরা আবার খোঁজ খবর না নিয়েই নাচতে শুরু করেছি। হঠাত্‍ করে নরওয়ে টিভি এ কাজটা করলো কেন তা আমরা ভাবিনি। নরওয়ে সরকারের সাথে হঠাত্‍ করে ইউনুস সাহেবের বিরাধ বাধলো কেন। শুধু গ্রামীন ব্যান্ক নয় গ্রামীন ফোন নিয়েও ফিল্ম তৈরী করে প্রচার করা হয়েছে। ওইসব বিশষ রিপোর্টে বলা হয়েছে  ইউনুস সাহেব নোবেল প্রাইজ নেয়ার সময় যে বক্তৃতা দিয়েছেন তাতে নাকি তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি নাকি বলেছেন গ্রামীন ফোন গ্রামের সাড়া তিন লাখ দরিদ্র মহিলাকে মোবাইল ফোনের সিম দিয়েছেন। নরওয়ের রিপোর্টার বাংলাদেশে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছেন কোথাও কোন গ্রামের দরিদ্র মহিলাকে সিম দেয়া হয়নি। ওই রিপোর্টার আরও বলেছেন, গ্রামীন ক্ষুদ্র ঋণের কারণে ঋণ গ্রহীতাদের দারিদ্র দূর হয়নি। তারা গ্রামের বহু মহিলার সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন। ডকুমেন্টারী ওই ফিল্মের রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী অন্যান্য মিডিয়াতেও প্রচারিত হয়েছে। তার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ মিডিয়া গ্রামী ব্যান্ক ও ড: ইউনুস বিষয়ে মাঝে মধ্যে টুকটাক কিছু বললেও সিরিয়াসলি কখনই কিছু বলেনি। ড: ইউনুস নিজেও বাংলাদেশের মিডিয়াকে কখনই নিজের আস্থায় নিতে নিতে চাননি বা নিতে চাননি। ফলে দেশী মিডিয়া গ্রামীন ব্যান্ক সম্পর্কে সব সময়ই আলো আঁধারীতে ছিল এবং আছে। বেশীর ভাগ মানুষই জানেনা এই ব্যান্কটি সরকারি না বেসরকারি। এটি কি এনজিও? এটি সমবায় সংস্থা? এটি ব্যাক্তি মালিকানা সংস্থা?

সবাই জানে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক থাকা কালে ড: ইউনুস জোবরা গ্রামে তাঁ ক্ষুদ্রঋণ আইডিয়াটি চালু করেন সম্ভবত জনতা ব্যান্কের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে।কিন্তু যে পরিবার ঋণ নিয়েছিল তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। পরে তিনি তাঁর এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে দেখা করেন। জিয়া সাহেব ড: ইউনুসকে উত্‍সাহিত করার জন্যে বাংলাদেশ ব্যান্ককে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যান্ক ড: ইউনুসের আইডিয়াকে একটি প্রকল্প হিসাবে গ্রহণ করে তাঁকেই প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়। আমি যতদূর জানি, এটাই ছিল গ্রামীন ব্যান্ক প্রকল্পের যাত্রা শুরু।তখন ড: ইউনুস কিছুদিন বাংলাদেশ ব্যান্কেও অফিস করেছেন। গ্রামীন ব্যান্কের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে গেলে প্রতিস্ঠানটির ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন গুলো পাওয়া যায়না। শূধু বলা হয়েছে ১৯৭৬ সালে ড: ইউনুস ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পটি চালু করেন। ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলে  সরকার গ্রামীণ ব্যান্ককে একটি পূর্ণাংগ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে  একটি আইন পাশ করে। এটা মূলত একটি সরকারী প্রতিস্ঠান। শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যান্ককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে  আসছে। সাইফুর রহমান সাহেবের আমলে ৩০০ কোটি টাকা ঋণও দেয়া হয়েছিল।শুনেছি এক সময় সরকার এই ব্যান্কের যোলআনা মালিক ছিল। পরে আস্তে আস্তে কেমন করে যেন সরকারের মালিকানা থেকে চলে যায়। এই ব্যাপারে সরকারের গাফেলতিও কম নয়। এখন নাকি সরকার মাত্র দশ ভাগ শেয়ারের মালিক।

নোবেল পুরস্কার লাভের পর আমি লিখেছিলাম এই প্রাইজ পাওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশ সরকার ও ড: ইউনুসের। কিন্তু পেল গ্রামীণ ব্যান্ক ও ড: ইউনুস। কারণ সরকারই এই ব্যান্কের প্রতিস্ঠাতা। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যান্কের গভর্ণর ড: সালেহ উদ্দিনও বলেছিলেন এই ব্যান্কের প্রতিস্ঠাতা সরকার। কি কারণে যেন ড: ইউনুস শুরু থেকেই এই ব্যান্কের প্রতিস্ঠার ইতিহাসকে গোপন করার চেস্টা করেছেন। আমি একটি চিঠি লিখে বিষয়টি সম্পর্কে নোবেল পীচ কমিটিকে জানিয়েছিলাম। আমার চিঠির একটি অংশ তখন নিউএজ বা ডেইলী স্টার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সেই সময়ে বিদেশী কোন কোন কাগজে বলা হয়েছিল ড: ইউনুস গ্রামীণ ব্যান্কের মাধ্যমে একটি মুসলিম প্রধান দেশে সুদকে জনপ্রিয় করেছেন। কথাটি মহাসত্য। বাংলাদেশের গ্রামে গন্জে গরীব মানুষ জানতে ও বুঝতে পেরেছে সুদ এবং গ্রামী ব্যান্ক কি জিনিস। গ্রামের লাখ লাখ মানুষ গ্রামীণ ব্যান্কের ফাঁদে পড়ে সর্বহারা ও গ্রামছাড়া হয়েছে। ঠিক এ সময়ে শেরে বাংলার ঋণ সালিসী বোর্ডের কথা মনে পড়েছে। তখন সুদী মহাজনের জালে আটকা পড়ে লাখ লাখ গরীব মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। তখন বেশীর ভাগ সুদী মহাজন ছিল হিন্দু ধণীরা। তারপর এদেশে আসে কাবুলীরা। শেরে বাংলা ঋণ সালিসী বোর্ড করে গরীব মানুষদের রক্ষা করেছিলেন। এনজিওদের কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যারা সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের বাঁচাবার জন্যে সরকার এখনও ঋণ সালিসী বোর্ড গঠণ করেননি। ও রকম কিছু করার কোন আলামত দেখছিনা। বিগত ৩০ বছরে ক্ষুদ্রঋণের ফলে আমাদের গরীব গ্রামের মানুষের কি উপকার হয়েছে তা দেশবাসী এখনও জানেনা। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব একবার বলেছিলেন ৩০ বছরে গ্রামী ব্যান্ক ৬০ লাখ গরীব মানুষের মাঝে ঋণ বিতরন করেছে। দারিদ্র বিমোচনের টি এই হারে চললে তিনশ’ বছরেও বাংলাদেশের গ্রামী দারিদ্র যাবেনা। সরকারও ইউনুস সাহেবের নীতি অনুসরন করতে পারবেনা।

সুদী ব্যবসা দ্বারা গরীবের দারিদ্র যায়না। রাস্ট্রীয় নীতি ছাড়া পৃথিবীর কোথাও দারিদ্র দূর হয়নি। শুধু রাস্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতদিনে সে তার জনগণকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিতে চায়। সূদ যে গরীবকে আরও গরীব করে দিতে পারে তা আলকোণ সুস্পস্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। তাই আলকোরাণ সূদকে হারাম করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহর রাসুল বিদায় হজ্বের ভাষণে মহাজনদের সকল সূদ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার মাধ্যমে তত্‍কালীন মক্কা এবং আশে পাশের মানুষ মুক্তিলাভ করেছিলো। আমরা সত্যিই বড়ই হতভাগ্য। আলকোরাণ ও রাসুলের(সা) ঘোষণার প্রায় দেড় হাজার বছর পরেও আমরা সামাজিক ও রাস্ট্রীয় ভাবে সূদী ব্যবসায় জড়িয়ে আছি। শুধু তাই নয় , এই হারামকে রাস্ট্র প্রশংশিত করেছে। ড: ইউনুস বলেছেন, তিনি ব্যবসা করেন। গ্রামীন ব্যান্ক কোন দাতব্য ব্যবসা নয়। গ্রামীন ব্যান্ক বিনা সিকিউরিটিতে গরীবদের ঋণ দেয়। গ্রামীণ ব্যান্কের ঋণ নিয়ে কতজন গরীব গরীবানা ত্যাগ করতে পেরেছেন তা কোনদিন সরকার বা সমাজ চায়নি। গ্রামীণ ব্যান্ক ৩০/৩৬ পারসেন্ট সুদ গ্রহণ করে এটা জানার পরও সরকার কখনও কিছু বলেনি। কারণ আজও অজানা। সুদের ব্যবসা করে ড: ইউনুস শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর আমরা নেচেছি গেয়েছি। এখন দলবেঁধে তাকে গালিগালাজ করছি। আবার কেউ কেউ বলছেন, ইউনুসের নামের সাথে বাংলাদেশের মর্যাদা জড়িত। মানে তাঁকে আর গালগাল করা ঠিক হবেনা।

নোবেল পুরস্কার নিয়ে ইতোমধ্যে তোলপাড় সৃস্টি করেছে গণচীন। চীনের ভিন্ন মতাবলম্বী গণতন্ত্রী বলে পরিচিত জিউ বাওকে নোবেল পুরস্কার দেয়ায় চীন ক্ষুব্দ হয়েছে। চীন সরকার তাদের মনোভাব নোবেল কমিটিকে জানিয়েছে। চীনকে সমর্থন করে বিশ্বের বহুদেশ পুরস্কার বিতরণী অনুস্ঠানে বহু দেশ ও সংগঠণ অংশ গ্রহণ করেনি। ফলে নোবেল পুরস্কার বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার একটি রাজনৈতিক পুরস্কারে পরিণত হয়ে পড়েছে। সরকার বা রাস্ট্রের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে এর আগেও ইরাণের শিরিণ এবাদি এবং মায়ানমারের আং সাং সুচিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। যুদ্ধরত ফিলিস্তিন ও ইজরায়েলের নেতা আরাফাত ও শ্যারনকে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে।  নোবেল শান্তি পুরস্কার সম্পর্কে লোকে নানা ধরনের তামাশা করে। বলে, আপনি আপনার মায়ের বিরুদ্ধে বদনাম করুন আপনাকে পশ্চিমারা নোবেল দিয়ে দিতে পারে। সবচেয়ে মূল্যবান ইস্যু হলো এখন ইসলাম। আপনি ইসলামের বিরুদ্ধে বলুন আপনাকে নোবেল দিয়ে দিবে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: আহমদ শাফি নোবেল নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যা বিডিনিউজ প্রকাশ করেছে। আমি ড: শাফির সাথে একমত। শান্তি পুরস্কার প্রদানের শক্তিশালী মাপকাঠি হলো এখন রাজনীতি। ড: শাফি বলেছেন বিশ্বের সব পুরস্কারের ক্ষেত্রেই নানা ধরনের রাজনীতি হয়ে থাকে। এশিয়ার নেবেল বলে বহুল প্রচারিত ম্যগ সাই সাই এওয়ার্ড ও তেমনি একটি পুরস্কার। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন মানুষ এ পুরস্কার পেয়েছেন। এদের মাত্র কয়েকজনকে পাঠক হয়ত চিনেন। বাকীরা অপরিচিত। কিন্তু পুরস্কার দাতারা তাদের চিনেন। সম্প্রতি আমাদের দেশের একজন নামজাদা এনজিও ব্যবসায়ী স্যার উপাধি পেয়েছেন বৃটেনের রাণীর কাছে থেকে। তাঁর পুর্ব পুরুষও নাকি ইংরেজদের কাছ থেকে খান বাহাদুর টাইটেল পেয়েছিলেন। আর শুনে একেবারেই আমরা গদগদ। এই ইংরেজরাই ১৯০ বছরে এদেশে কোটি কোটি লোককে হত্যা করেছে। এই দেশটাকে পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশে পরিণত করেছে। চীনারা একটি সম্মানিত জাতি বলেই পশ্চিমাদের ফাঁদে পা ফেলেনা। জাপানীরা এখনও চীনের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুল পাচ্ছেনা পূর্ব পুরুষের অপরাধের জন্যে।

আমাদের দেশে নানা ধরণের সরকারী পুরস্কার আছে। সব পুরস্কারই এখন রাজনৈতিক পুরস্কারে পরিণত হয়েছে। সরাকরের যাকে পছন্দ তাকেই রাস্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হয়। কেন দেয়া হয় তার কোন কারণ নেই। কবি শিল্পী বুদ্ধিজীবীদেরও রাজনৈতিক ভাগ আছে। একদল হলো আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, আরেক দল বিএনপি বুদ্ধিজীবী। এ নিয়ে নাকি প্রচুর তদবির করতে হয়। শুনেছি, গল্প কিনা জানিনা, আমাদের এক বন্ধু মন্ত্রীকে বলেছিলেন তাকে একুশে পুরস্কার না দিলে সে সচিবালয়ের ন’তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে। সেবার সে একুশে পদক পেয়েছিলো। সরকারকে ধন্যবাদ তাকে পুরস্কার দেয়ার জন্যে। তাই সে এখনও বেঁচে আছে।( ershadmz40@yahoo.com )

Read Full Post »


শহীদ জিয়ার ভাংগা সুটকেস ছেঁড়া গেঞ্জী ও অন্যান্য

‘তোমরা তাদের উপাস্যকে গালি দিওনা। ওরা রেগে গিয়ে তোমার আল্লাহকে গালি দিবে।’ এটা আমার মালিক আল্লাহপাকের কথা। আওয়ামী লীগকে কখনই গালি দিবেন না বা মন্দ বলবেন না। তাহলে ওরা যে ভাষায় কথা বলবে তার উত্তর দেয়ার জন্যে আপনার কাছে কোন শব্দ থাকবেনা। আমাদের ছাত্র জীবনে বহু ছাত্রলীগ নেতা আমার বন্ধু ছিল। এক সাথে আড্ডা দিয়েছি। নানা বিষয়ে মত বিনিময় করেছি।কখনও রাগারাগি বা হাতাহাতি হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কিমিটির অনেকের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা সবাই ছিলেন পরশীলিত ও পরিমিতি বোধ সম্পন্ন। অনেকের প্রচুর লেখাপড়া ও জ্ঞান ছিল। এদের কেউই দলের প্রথম কাতারে আসতে পারেনি। শেষাবধি অনেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।আমার শহর ফেণীতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন খাজা সাহেব। আমি তাঁকে ফেণীর রাজা বলতাম। নোয়াখালী জেলার সব আওয়ামী লীগ নেতা তাঁকে সম্মান করতেন। বংগবন্ধুকেও দেখেছি তাঁকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে। তালেব আলী সাহেবকে আমরাই রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলাম।কয়েকবার জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন। সময় ও মূল্যবোধের পরিবর্তনে তিনি নমিনেশন পান না। এখনও জীবিত আছেন, কিন্তু রাজনীতিতে নেই। এখন নাকি ও রকম সত্‍ মানুষের  রাজনীতিতে প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশের নেতিবাচক রাজনীতির কথা বলে ও লিখে শেষ করা যাবেনা। সর্বত্রই চলছে বিরাট হতাশা। যাদের কাছে টাকা আছে শুধু তারাই রাজনীতি করবে।যাদের অস্ত্র আছে তারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। ধনীরা টাকা দিয়ে তাদের  বেতনভুক তাবেদারদের  নির্বাচনে জয়ী করে সংসদে নিয়ে আসবে। দুয়েকজন ভাল মানুষ নির্বাচিত হলেও তাদের কোন পাত্তা নেই। বর্তমান কেবিনেটে সিনিয়র অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের কোন স্থান হয়নি। হয়ত নির্বাচনের আগেই বিষয়টা নির্ধারিত হয়েছিল। তাই এখন অনেক নতুন মুখ এসে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ভাল করেই জানেন ওই অজানা অচেনা মন্ত্রীদের কি দাম এবং তারা কোথা থেকে এসেছেন। কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী আছেন যাদের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন বিরোধীদলের বিরুদ্ধে খেউর খিস্তি করার জন্যে। নিকট অতীতের মুখ খিস্তির করার কথা না হয় উল্লেখ করলামনা।

কিন্তু ক’দিন আগে খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ব্যাপারে দেশবাসী একটা মেগা সিরিয়ালের নাটক দেখেছেন। সবচে বেশী নাটকীয়তা করেছেন আইএসপিআর কর্তৃপক্ষ। বহুদিন পর আমরা আইএসপিআর এর কার্যকলাপ দেখতে পেলাম। একেবারেই রাজনৈতিক ভূমিকায়। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার বিরুদ্ধে। একদিনের ভিতরই পরিচালক সাহেবকে কয়েকবার দেখা গিয়েছে।এর আগে আইএসপিআরকে এ ধরনের ভুমিকায় দেখা যায়নি। তত্‍কালীন পূর্ব পাকিস্তানকে আক্রমন করার পর ২৫শে মার্চ গভীর রাতে অবজারভার হাউজে আইএসপিআর এর দুই কর্তাকে দেখেছি মিথা্ নাটকে অভিনয় করতে। একজন ছিলেন ব্রিগেডিয়ার কাশেম ও অপরজন ছিলেন মেজর সালেক। আপনারা অনেকেই মেজর সালেককে চিনেন। ৭১ সালের পাকিস্তানী আক্রমন সম্পর্কে একটা বইও আছে। ১৬ ই ডিসেম্বরের পর ওই দুজন আইএসপিআর অফিসারকে আর দেখিনি। কিন্তু আমাদের এই  দুই অফিসারের সাথে  কখনও দেখা হলে  হয়ত বলবেন, দেখুন কি করবো সরকারী চাকুরী করি। কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করতে হয়। দু:খের বিযয় হলো আইএসপিআর এর চলমান ভুমিকায় এর ইমেজ দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৪/৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা খুন হওয়ার পরও আইএসপিআর কোন কথাই বলেনি। কেন চুপ ছিল তার কোন ব্যাখ্যাও দেশবাসী পায়নি।

ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটার বিষয়টা কি রাজনৈতিক, না  প্রতিহিংসা না জমির মালিকানা বা টাইটেল সমস্যা ? এ বিষয়টা পরিস্কার হওয়া দরকার। হঠাত্‍ মন্ত্রী পরিষদ এই লীজ বাতিলের কাজে হাত দিলেন কেন? সরকারী জমি লীজ দেওয়ার পর বাতিলের নিয়ম কি? সেই নিয়ম কি সরকার অনুসরণ করেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? সরকার না আইএসপিআর? কোন অবস্থাতে খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটা সেনা বাহিনী বা সরকার খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন তা আমরা দেখেছি এবং ভুলে যাইনি। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া শহীদ হওয়ার পর দেশের সাধারন মানুষের ভিতর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল যারা দেখেছেন তাদের সবার মনে ও চোখে সেই দৃশ্য এখনও জীবন্ত। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা হয়ত সেই দৃশ্য ভুলে থাকতে চান। কারন একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে তাঁর জানাজায় ২০ লাখ শরীক হবে কেউ তা কখনও ভাবেনি। না দেখলে বুঝা যেতনা এই মানুষটা এত জনপ্রিয় ছিল। ঠিক তেমনি একটি সময়ে জাতীয় সংসদ ও সরকার জিয়া পরিবারকে সাহায্য করার জন্যে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটা দান করেন। আওয়ামী লীগ সহ সংসদের সকল দলের সদস্যদের সমর্থন লাভ করে সরকার ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ওই প্রস্তাব। ওই প্রস্তাব আসার কারণ ছিল তখন ঢাকায় শহীদ জিয়ার পরিবারের থাকার জন্যে  কোন বাড়ি ছিলনা এবং ভরন পোষনের জন্যে কোন আয়ও ছিলনা। তাছাড়া ওই বাড়িটা বাংলাদেশের ন্যাশনাল হেরিটেজের একটা অংশ। শহীদ জিয়া ডেপুটি আর্মি চীফ হিসাবে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। আর্মি চীফ এবং প্রেসিডেন্ট হিসাবে পুরো সময়টা তিনি ওই বাড়িতেই ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে বেগম জিয়া প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী হিসাবে এই বাড়িতেই অবস্থান করেছেন। লীজ দলিলে কি ভুল ছিল আর কি ভুল ছিলনা তা বড় কথা নয়। বিষয়টা হলো কি উদ্দেশ্যে কেন ওই বাড়ি জিয়া পরিবারকে দেয়া হয়েছিল।

শহীদ জিয়ার ভাংগা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জীর কথা জিয়া পরিবারের কেউ প্রচার করেনি। আওয়ামী লীগই এর প্রধান প্রচারক। জিয়া সাহেব শহীদ হওয়ার পর টিভিতে এক প্রোগ্রামে মরহুম ফজলে লোহানীই প্রথম বিষয়টি জন সাধারনের কাছে উথাপন করেছিলেন। সেই থেকে আওয়ামী লীগ এর প্রধান প্রচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রায়ই সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ ভাংগা স্যুটকেশ ও ছেঁড়া গেঞ্জীর কথা প্রচার করে। এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কেন আওয়ামী লীগ এ কাজটা করে। বিষয়টা হয়ত মনস্তাত্বিকও হতে পারে। আওয়ামী লীগ হয়ত মনে করে ভাংগা স্যুটকেশ আর ছেঁড়া গেঞ্জী তাদেরই হওয়া উচিত ছিল। কারন বংগবন্ধু ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনিই সাধারন মানুষের জন্যে রাজনীতি করতেন।তারঁ তেমন কোন অর্থ-বিত্ত ছিলনা। আমরা শুনেছি, বংগবন্ধুর ঘনিস্ঠ বন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের হারুণ পরিবার ও বাংলাদেশের ইস্পাহানী পরিবার। তারাই তাঁর খোঁজ খবর রাখতেন। সুখ দু:খের ভাগীদার ও সমব্যাথী ছিলেন। তিনি এক সময় টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ইস্পাহানীদের সুপারিশে। কিছুদিন আলফা ইন্স্যুরেন্সের উপদেস্টাও ছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্ট সরকারের দুর্ণীতি দমন মন্ত্রীও ছিলেন। সে সময়ে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছিল। যা প্রমানিত হয়নি এবং জনসাধারনও তেমন বিশ্বাস করেনি। ওই সময়েই বংগবন্ধু তাঁর ধানমন্ডীর বাড়িটি তৈরী করেছিলেন। বংগবন্ধু যাঁর শিষ্য ছিলেন সেই  মানুষটি  ছিলেন নির্যাতিত গণমানুষের নেতা মাওলানা ভাসানী। তাঁর ঢাকায় কোন বাড়ি ছিলনা। তিনি থাকতেন সন্তোষে।চলতেন জন সাধারনের পয়সায়। তাই হয়ত আওয়ামী লীগের কল্পনায় ছিল বংগবন্ধু শহীদ হওয়ার পর  তাঁর বাড়িতেই ভাংগা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জী পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়নি। কারণ আল্লাহপাকের ইচ্ছা ছিল অন্য রকম। কি কি জিনিষ পাওয়া গেছে তার তালিকা  পাঠক সমাজের নিশ্চয়ই মনে আছে।এসব কথা আমি আমার স্মৃতি থেকে বলছি। স্মৃতি কোন লাইব্রেরী নয়।আমার ভুলও হতে পারে। এ জগত ছেড়ে চলে যাবার পর জিয়া সাহেবের বাড়িতে কি পাওয়া গেছে তাও দেশবাসী জানেন। সে সময়ে দেশবাসীর ইমোশন ও সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিচারপতি সাত্তার সাহেবের সরকার জিয়া সাহেবের পরিবারকে ওই দুটি বাড়ি দান করেছিলেন। বড়ই পরিতাপের বিষয় আজ আওয়ামী সরকার সবকিছু ভুলে গিয়ে খালেদা জিয়াকে ঐতিহাসিক সেই বাড়ি উচ্ছেদ করেছে। এতে আওয়ামী লীগের হীনমন্যতারই প্রকাশ পেয়েছে।

আওয়ামী নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর যেসব কথা বলেছেন তাতে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সুস্পস্ট হয়ে উঠেছে। তারা প্রায় সবাই বলেছেন খালেদাকে উচ্ছেদের মাধ্যমে তারা ক্যান্টনমেন্টকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মুক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে খালেদা জিয়া ওই বাড়িতে বসে কার সাথে যড়যন্ত্র করতেন এবং সেটা কি ধরনের যড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ কি মনে করে বা ইংগিত করছে সেনাবাহিনী যড়যন্ত্রের সাথে জড়িত? অথবা আওয়ামী লীগ গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছে সেনাবাহিনীর সাথে খালেদা জিয়ার কোন ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে? বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের হৃদ্যতা কখনও ছিলনা। বংগবন্ধুর আমলেই সেনাবাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক ছিলনা রক্ষীবাহিনীর কারনে। জন সাধারনের ভিতর এ রকম একটা ধারনা রয়েছে। যেকোন কারনেই হোক বংগবন্ধুর কাছে রক্ষীবাহিনীর গুরুত্ব অনেক বেশী ছিল। চলমান আওয়ামী নেতৃত্ব মনে করে সেনা বাহিনী খালেদা জিয়াকে অধিক সম্মান করে। সেজন্যে তারা সব সময় বলে আসছেন বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। এর সাথে জনগনের কোন সম্পর্ক নেই। আওয়ামী নেতারা ইতোমধ্যেই বলেছেন ভাংগা স্যুটকেসের গল্পের মতো আরেকটি গল্প তৈরী করেছেন। সেটা হলো তাঁকে জোর করে মইনুল হোসেন রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এবং খালেদা জিয়ার কান্নাকাটিও ছিল এক ধরনের নাটক। কিন্তু যেদিন খালেদা জিয়াকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেদিন আইনমন্ত্রী বলেছেন সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পর মন্ত্রীরা বলেছেন আদালত যদি তাঁর পক্ষে দেন তাহলে তিনি বাড়ি ফেরত পাবেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে তাড়াহুড়া করে কেন উচ্ছেদ করা হলো।

উচ্ছেদ নাটকে গত কয়েকদিনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রধান বিচারপতির সরকারী বাস ভবনের দেয়ালের ভিতরে নাকি দুটি ককটেল বা জর্দার কৌটো ফুটেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন কোথায় তা নগরবাসী প্রায় সবাই জানেন। ওই বাড়ির চারিদিকেই সারাদিন জমজমাট পুলিশ পাহারা থাকে। চারিদিকেই ট্রাফিক পুলিশ থাকে। যারা কথিত ককটেল দেয়ালের ভিতর ফেলে তারা পালালো কি ভাবে? কর্তব্যরত পুলিশ ককটেল ফুটার আওয়াজ পাওয়ার সাথে কি করলেন? পুরো বিষয়টা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এখনও কোন কথা বলেননি। তিনি কি তখন বাসায় ছিলেন? আওয়াজ পেয়ে তাঁর বাসার সদস্যরা কি করলেন? আওয়াজ পাওয়ার সাথে সাথে তাঁরা কি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছেন? অথচ  সরকারী বক্তব্য অনুযায়ী পুরো বিষয়টাও ঘটেছে নাকি খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ আর ২৯ শে নবেম্বর  বাড়ির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানীকে কেন্দ্র করে। এখন ককটেল ফুটানো কেন্দ্র করে নানাকথার সৃস্টি হচ্ছে। বলা যায় ককটেল রাজনীতি। সরকার এবং আওয়ামী নেতাদের ধন্যবাদ দিতে হয় নতুন নতুন ইস্যু দিয়ে বিরোধী দলকে ব্যস্ত রাখার জন্যে।এখন চলছে বাড়ি নিয়ে রাজনীতি আর তার সাথে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ককটেল। বিএনপির মহাসচিব জানতে চেয়েছেন সুধা সদনে কি আছে তা জানার অধিকার জনগণের আছে। এমন কি সেই বাড়িটার মালিক কে এবং মালিক কি ভাবে ওই বাড়িটা পেয়েছেন এসব প্রশ্নও আসতে শুরু করেছে।(ershadmz40@yahoo.com) নয়া দিগন্ত , ডিসেম্বর ২, ২০১০

Read Full Post »


আইনের দৃস্টিতে একদিন লগি বৈঠাও কি অস্ত্র হিসাবে গন্য হবে?

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেগম হাসিনা ওয়াজেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাজনীতিতে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। সমকালের বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলেই তাঁর নাম আসবেই।এখন দেখছি ভাষার ইতিহাসেও তাঁর নাম নথিভুক্ত হবে। যেমন ঘেরাও বন্দ হরতাল মিছিল শব্দগুলো এখন ইংরেজী অভিধানেও পাওয়া যায়। আইউব বিরোধী আন্দোলনের মাওলানা ভাসানী ঘেরাও শব্দটিকে জনপ্রিয় করেছেন। লগি বৈঠা শব্দ দুটি আমরা এতদিন নৌকার সরন্জাম হিসাবে জেনে এসেছি। এখন শব্দ দুটি রাজনৈতিক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। আমাদের দেশের আইনে লাঠিকে অস্ত্র হিসাবে গন্য করা হয়। কারন লাঠি ব্যবহার করে যে কোন কাউকে আঘাত করা যায়। এমন কি হত্যাও করা যায়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে বেগম হাসিনা ওয়াজেদই প্রথম লগি বৈঠা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হয়ত মনে করেছেন লগি বৈঠাকে আইন এখনও অস্ত্র মনে করেনা। তাই তিনি তাঁর কর্মীদের ২৮শে অক্টোবর লগি বৈঠা ব্যবহার করতে বলেছিলেন।এটা দিয়ে যে মানুষ হত্যা করা যায় একথা নিশ্চয়ই ভাবতে পারেননি। ২৮শে অক্টোবরও পুলিশও লগি বৈঠাকে অস্ত্র মনে করেনি বলে নিষিদ্ধ করেনি। নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুকে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পরও লগি বৈঠাকে অস্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত বলবেন লগি বৈঠাতো নৌকারই অংশ। নৌকা রাস্তায় বা পানিতে চালাতে গেলেতো লগি বৈঠা লাগবে। আওয়ামী কর্মীরাও হয়ত ভাবছে লগি বৈঠা যেহেতু কোন অস্ত্র নয় তাহলে এটা ব্যবহার করতে আপত্তি কোথায়? তাছাড়া নেত্রীতো বলেই দিয়েছেন লগি বৈঠা ব্যবহার করতে।

২৮শে অক্টোবর পল্টনে যে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটেছে তার ভিডিও দেখলে এখনও যেকোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। এই ভিডিও চিত্র যখন সারা পৃথিবীর টিভি দেখিয়েছে তখন আমাদের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ববাসীর একটা ধারনা তৈরী হয়েছে। ফিলিস্তিনীদের উপর ইজরাইলীদের অত্যাচার, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকার অত্যাচার, কাশ্মীরে ভারতের অত্যাচারকেও ম্লান করে দিয়েছে। আমরা আবু গারীব ও গুয়ান্তানামো কারাগারের অত্যাচারের ভিডিও চিত্র দেখেছি। ওসব ছিল তথাকথিত সভ্যতার মোড়কে লুকানো গোপন অত্যাচার। পল্টনের অত্যাচার ছিল দিনে দুপুরে হা্জার হাজার মানুষের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা। মৃতদেহের উপর উল্লাসে নৃত্য করা। সবকিছুই হয়েছে সরকারের সামনে। কিন্তু সরকার তখন কিছুই বলেনি। আজও বলছেনা। তবুও আমরা শুনি  ন্যায় বিচার, আইন আদালত শব্দ গুলো। ১/১১র সরকার এর বিচার করেনি, এমন কি কোন উদ্যোগও নেয়নি। কারন তারাতো সেই ঘটনার সুযোগ নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। সেই সময়ে আমরা আরও শুনেছি বংগভবনে আলো বাতাস পানি সব বন্ধ করে দেয়া হবে। এসব নাকি গনতান্ত্রিক ভাষা। তখনি আওয়ামী নেত্রী বলেছিলেন ১/১১র সরকার আমাদের আন্দোলনের সরকার। কোন আন্দোলন? লগি বৈঠার আন্দোলন। বর্তমানে বাংলা একাডেমীর অভিধানে লগি বৈঠার যে অর্থ আছে তাতে নতুন মানে সংযোজিত হবে। এমন কি গুগুল বা উইকিপিডিয়াতে বেগম হাসিনা ওয়াজেদের জীবনীতেও এই ইতিহাস সন্নিবেশিত হতে পারে।

রাজনীতি ও ধর্মের কারণে হানাহানি ও দাংগার ইতিহাস বহু পুরাণো। আমাদের এ অঞ্চলে ভারত ও পাকিস্তানে নানা ধরনের দাংগা লেগেই আছে। পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নী- কাদিয়ানী দাংগা প্রায়ই লেগে থাকে। প্রগতিশীল ও স্যেকুলার নামে বহুল প্রচারিত ভারতে প্রতি বছর দাংগা হয়। কখনও হিন্দু মুসলমানে,কখনও শিবসেনা ও অন্যরা আবার কখনও হরিজন ও অন্যরা। বাংলাদেশে তেমন দাংগা নাই বললেই চলে। শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দাংগার ইতিহাস বইতে লিখেছেন সমাজ ও সরকারের ভেদনীতির ফলে ভারতে প্রতি বছর ১৫০ থেকে ৫০০ দাংগা হয়।ভারতে দাংগা কোন বিষয় নয়। এদেশে নানা অজুহাতে শিবসেনা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দাংগা লাগাবার ফিকিরে থাকে। গুজরাতের দাংগার কথা স্মরণ করুন। সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন মোদী দাংগা বাধিয়েছে এটা এখন সবাই জানে। ১৪৯২ সালের ক্রুসেড যুদ্ধের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের কথা মনে আছে। মুসলমান নিধনের জন্যে রাস্ট্রই উদ্যোগ নিয়েছিল। এই যুদ্ধ চলেছে প্রায় ২শ’ বছর।

শুরু করেছিলাম রাজনীতিতে লগি বৈঠার ব্যবহার ও প্রচলন নিয়ে। ‘ অল ক্রেডিট গোজ টু আওয়ার প্রাইম মিনিস্টার’। তিনি এর আবিস্কারক ও প্রচলনকারী। গাঁধীজীর অহিংস আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। দু:খের বিষয় হলো গাঁধীজীর ভক্তরা অহিংস থাকতে পারেনি। তাঁর চোখের সামনেই ভক্তরা দাংগা করেছেন, মানুষ হত্যা করেছে। তাঁরই ভক্তরা তাঁকে হত্যা করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভক্তরা লগি বৈঠার শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারেননি। তারা লগি আর বৈঠাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে। আপনাদের একটু পেছনের দিকে তাকাতে বলবো। ১৯৫৪ সালে  প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মহাজোট গঠণ করেছিলেন মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। সেই জোটের নাম ছিল যুক্তফ্রন্ট। মার্কা ছিল নৌকা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কারনে যুক্তফ্রন্ট বেশীদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারেনি। ওই সময়েই পরিষদের স্পীকার শাহেদ আলি সাহেবকে  ফোল্ডিংয়ে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কারা এ কাজ করেছেন তা অনেকেই জানেন। শরিক দলগুলোকে কোন পাত্তা না দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রদেশে ও কেন্দ্রে সরকার গঠণ করে। সেই সময়েই পূর্ব পাকিস্তানে ৯২ক ধারা জারী করে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে আইউব খান সামরিক শাসন জারী করে সারা পাকিস্তানের রাজনীতিকদের গ্রেফতার করে। এর আগে ১৯৫৭ সালে রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলনে দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানীর সাথে দেশের বিদেশনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্ধীর মতবিরোধ দেখা দিলে মাওলানা সাহেব আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাপ গঠণ করেন। পাকিস্তানের বিদেশনীতির প্রশ্নেই সোহরাওয়ার্দী সাহেব জিরো+জিরো থিওরী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তানকে থাকতেই হবে। অন্যের সাথে বন্ধুত্ব মানে জিরো+জিরো। মাওলানা সাহেব এ নীতির বিরোধিতা করেছে। রূপমহল সিনেমার সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকার লেজুড়ে পরিণত হয়। সেই থেকে আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। নতুন দল গঠণ করে মাওলানা সাহেব পল্টনে জনসভা ডাকলে আওয়ামী লীগ লাঠি নিয়ে সে সভা ভেংগে দিয়েছিল। তকন লগি বৈঠা ছিলনা। ছিল শুধু কাঠের চেলি। শুধু একবার ভাবুন, যে মানুষটা মাত্র ক’দিন আগেও দলের সভাপতি ছিলেন তারই সভা ভাংগার জন্যে কর্মীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। ৬৯ এর গণ আন্দোলন করে এই মাওলানা ভাসানী শেখ সাহেবকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত করেছিলেন। মাওলানা সাহেবই আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা। তিনি এদেশের রাজনীতিকে গন মানুষের নিয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিস্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক সাহেব। এখন আওয়ামী লীগ তাঁকে চিনে কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। সম্ভবত ৭০ সালে পল্টনে মওদুদী সভা ভেংগে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ শুধু লাঠি বা কাঠের চেলি দিয়ে।

মোনায়েম খাঁর আমলে চাত্র রাজনীতিতে এনএসএফ নামক একটি ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়। এই ছাত্র সংগঠনের কাজ ছিল সরকার বিরোধী সকল ছাত্র সংগঠনকে ঠেংগানো। এই এনএসএফই ছাত্র রাজনীতিতে মারা মারির জন্যে হকি স্টিক সাইকেন চেইন সাপ ইত্যাদি আমদানী করে। আইউব আর মোনায়েম খাঁর বিদায়ের পর এনএসএফও ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে। ৭০ সাল পর্যন্ত এই দেশের রাজনীতিতে লাঠি কাঠের চেলি ব্যবহৃত হয়েছে। ৭০ এর শেষের দিকে মলোটভ ককটেলের নাম শুনা গেছে।  রাজনীতিতে পঁচা ডিম আর জুতার ব্যবহার বৃটিশ আমলেই চালু হয়েছে। শুনেছি শেরে বাংলা বলেছিলেন রাজনীতিতে ফুলের মালা আর জুতার মালা দুটোই থাকে। আওয়ামী মুসলীম গঠনের পর মাওলানা সাহেব যখন সারা দেশ সফর করছিলেন তখন সরকারী দল মুসলীম লীগ ও তার পান্ডারা সভা ভাংগার জন্যে লাঠি জুতা ব্যবহার করতো। শুনেছি মাওলানা সাহেব সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম জনসাভা করেছিলেন আরমানীটোলা মাঠে। সরকারী গুন্ডা ও পুলিশের ভয়ে প্রথম দিকে মানূষ সরাসরি মাঠে আসেনি। মাঠের চারিদিকে দাঁড়িয়ে দেখছিলো শেষ পর্যন্ত কি হয়। তখনকার বিখ্যাত পঞ্চায়েত নেতা কাদের সর্দার সাহেব নাকি মাওলানা সাহেবকে সমর্থন দিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।ফলে মুসলিম লীগের গুন্ডারা কিছু করতে সাহস করেনি। রাজনীতিতে জুতার ব্যবহার ইদানিং বেশ দেখা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃস্টি করেছিল বুশকে লক্ষ্য করে ইরাকী সাংবাদিকের জুতা নিক্ষেপ। এর পরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জুতা প্রতিবাদের ভাষায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুতা পঁচা ডিম লাঠি ব্যবহার করা লোকে ভুলে গেছে। এখন পিস্তল রাইফেল ভোজালি বোমা গ্রেনেড ছুরির ব্যবহার নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি ছাড়াও চুরি ডাকাতি জমি দখল ও প্রেমিকাকে ঘায়েল করার জন্যে অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। এসিড নিক্ষেপও চলছে। শুনেছি মাঝে সাঝে একে৪৭ নামক ভয়ংকর অস্ত্রও  দেখা যাচ্ছে। ৭২ সালেই বংগবন্ধুর আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাতজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই যে শুরু হয়েছে তা আজও থামেনি। থামার কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছিনা। এখন মিছিলে নানা ধরনের অস্ত্র দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা অস্ত্র নিয়ে ঘুরাফিরা করছে। এমনি একটি সময়ে আওয়ামী নেত্রী লগি বৈঠাকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান করেছেন। এখন সারা দেশে যে কোন দলের কর্মীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। অবশ্য আওয়ামী নেত্রী বলতে পারেন লগি বৈঠায় একমাত্র আওয়ামী লীগের অধিকার রয়েছে। পুলিশও বলতে পারে লগি বৈঠা আর কেউ ব্যবহার করতে পারবেনা।

২৮শে অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রতি যুবলীগ নেতা আজম এমপি ওই দিনের সফল অপারেশনের জন্যে তাঁর কর্মী বা্হিনীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছে সেদিন যুবলীগকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল জামাতের কর্মীরা। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনাকে সফল ভাবে প্রতিহত করে যুবলীগকে রক্ষা করেছে। এখন বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেছে কেন সরকার সেইদিনের হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য আগ্রহী হয়নি। এমন কি ধোয়া তুলসীপাতা মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারও কোন উদ্যোগ নেয়নি।

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে কেউ ভাবেনা

ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী রায় বলেছেন, কাশ্মীর কখনই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলনা। একথা বলার জন্যে ভারত সরকার তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু করার জন্যে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। অরুন্ধতী রায় বলেছেন, তিনি কোন মিথ্যা বলেননি। তিনি বলেছেন বিষয়টা অনেক পুরোণো। কাশ্মীরী নেতা গিলানী বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ৯০টি মামলা হয়েছে। আরেকটি মামলা হলে ৯১টি হবে। এতে তিনি বিচলিত নন। বাদশাহ জাহাংগীর কাশ্মীর সফরে যেয়ে বলেছিলেন, জগতে কোথাও স্বর্গ থাকলে তা এখানেই এখানেই। সেই কাশ্মীর এখন নরকে পরিণত হয়েছে। বিগত ৬০ বছর ধরে সেখানে চলছে রাস্ট্রীয় নিধনযজ্ঞ। কে বাঁচাবে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে।

আজ কাশ্মীরের এ অবস্থা কেন আমাদের অনেকেই জানেনা। পাকিস্তান আমলে আমরা রাস্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবেই ছিলাম কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগণের সাথে। এখন শুধু জনগনই কাশ্মীরের জনগনকে সমর্থন করে। রাস্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকা এখনও পরিস্কার নয়। যদি কখনও কোন কাশ্মীরী নেতা আমাদের এখানে আসে বা আশ্রয় নেয় তাহলে তার ভাগ্যে কি আছে তা আমরা জানিনা। ভারতের পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী নেতারা এখানে এসে কি ধরনের ভাগ্য বরন করেছে আমরা সবাই তা জানি। বাংলাদেশের সরকার গুলোর নানা ধরনের নীতি আছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের আমরা সমর্থন করি। সাহায্য সহানুভুতি দেখাই। ঢাকায় ফিলিস্তিনী রাস্ট্রদূতের অফিস রয়েছে।কিন্তু কাশ্মীরের ব্যাপারে  বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের নীতিকে সমর্থন করে। কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থায় বিশ্বনেতা আমেরিকাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলমান অবস্থাকে দেখার জন্যে সেখানে গিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধুতী রায়।তখনি তিনি বলেছেন , কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়।

আজ আমরা বা বিশ্ববাসী  যে ভারতকে দেখতে পাচ্ছি তা কখনও এ রকম ছিলনা।মহাভারতে বর্ণিত কম্বোজকে এখনকার কাশ্মীর বলে অভিহিত করেছেন ঐতিহাসিকরা। প্রাক মোগল যুগে  ভারত ছিল বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত। ছোট ছোট কয়েকশ’ রাজ্য  ছিল। রাজা মহারাজারা এসব রাজ্যের মালিক ছিলেন। রামায়ন মহাভারত মহাকাব্য পড়লেও দেখা যাবে ঐ যুগেও বহু রাজা মহারাজা ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল বহু রাজার যুদ্ধ।মোঘলরাই ভারতকে একটি দেশে পরিণত করেছে। কাশ্মীর আজকের ভারতের অংশে পরিণত হয়েছে ৪৮ সালে মহারাজা হরি সিংয়ের বেঈমানীর কারণে। অমৃতস্বর ট্রিটির মাধ্যমে ১৮৮৪ সালে ডোগরা মহরাজা রণজিত সিং কাশ্মীরের দখল গ্রহণ করে। ডোগরা মহারাজারা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর দখলে রাখে। সর্বশেষ মহারাজা হরিসিং লর্ড মাউন্টবেটনের উসকানীতে ও অর্থের বিনিময়ে  কাশ্মীরী জগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে  ভারতের সাথে থাকার জন্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই থেকেই কাশ্মীর ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। হরিসিংয়ের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং কাশ্মীরের একাংশ দখল করে নেয়। যা এখন আজাদ কাশ্মীর বলে পরিচিত। পাকিস্তানের প্রবেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ভারত জাতিসংঘে অভিযোগ উত্থাপন করে ১৯৪৮ সালে। ভারতের অভিযোগের ভিত্তিতে জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী ও এপ্রিলে দুটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। ৩৯ নম্বর প্রস্তাব হলো সীজ ফায়ার এবং অবস্থানের কোন পরিবর্তন না করা। ৪১ নম্বর প্রস্তাবে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। ভারত প্রস্তাব দুটো মেনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে কাশ্মীর তিন ভাগে বিভক্ত। গিলগিট ও বাল্টিস্তান আজাদ কাশ্মীর নামে পাকিস্তানের সাথে রয়েছে। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ ভারতের দখলে। আকশাই চীন ও ট্রান্স কারাকোরাম চীনের দখলে। বৃহত্‍কাশ্মীরের সকল অংশেই মুসলীম জনসংখ্যার হিস্যা হচ্ছে ৯০ভাগ। হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনের অবসান হলে ১৩৪৯ সালে শাহ মীর এখানে সোয়াতি বংশের রাজত্বির সুচনা করেন। সোয়াতিরা ছিলেন পাঠান। ১৫২৬ সালে কাশ্মীর মোঘল অধিকারে আসে এবং ১৭৫১ সাল পর্যন্ত মোঘল শাসনেই ছিল। পরে পাঠান দুররানীরা কাশ্মীর দখলে নেয় এবং সেই দখল ১৮২০ সাল পর্যন্ত ছিল। মহারাজা গুলাব সিং পরে তা সাড়ে সাত লাখ টাকায় ইংরেজদের কাছ থেকে কিনে নেয়। হরি সিংয়ের বেঈমানীর ফলে কাশ্মীর ভারতের দখলে চলে যায়। কিন্তু যেসব দেশীয় রাজা মহরাজা বা নবাব নিজাম স্বাধীন রাজ্য হিসাবে থাকতে চেয়েছিল তা তারা পারেনি। যদিও ভারত স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছিল নিজেদের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিবে। ভারত সে সুযোগ দেয়নি। ১৯৪৮ সালেই সেনা বাহিনী পাঠিয়ে হায়দ্রাবাদ গোয়া দমন দিউ আন্দামান দখল করে নেয়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে বিগত ৫০ বছর ধরে। ১৫ আগস্ট  ভারতের স্বাধীনতা দিবসে  ওসব রাজ্যে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়েনা।

বুকার প্রাইজ প্রাপ্ত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধুতী রায় যে কথা বলে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা মোকাবিলা করতে চলেছেন তা এখন ভারতের মুক্তচিন্তার সব মানুষের কথা। কাশ্মীরকে দখলে রাখার জন্যে লাখ লাখ সেন্য মোতায়েন করতে হয়েছে। জনগনের বাজেটের একটা বড় অংশ বিনা কারনে কাশ্মীরে ব্যয় করতে হচ্ছে। কাশ্মীরের কারনেই পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছেনা। অপরদিকে সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারতের সাথে চীন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে তিক্ততা চলছে। চারটি দেশের শান্তিকামী মানুষ এই অবস্থা আর দেখতে চায়না। বিগত ৬০ বছরেও ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জনগনের দারিদ্র দূর করতে পারেনি। কোটি কোটি মানুষ শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। সবচেয়ে করুন অবস্থা হচ্ছে ভারতের। ২৫ কোটি হরিজন বা অচ্যুতকে মানুষের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি ধর্মের কারণে। সেই ভারত নিজেকে স্যেকুলার প্রগতিশীল গনতন্ত্রী মনে করে। সেই ভারত আনবিক বোমা তৈরী করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভয় দেখাবার জন্যে।

এরশাদ মজুমদার কবি ও সাংবাদিক( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »

বায়া দলিল ৭


জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে এখনও মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ৭১এর যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটিতে বিচার মাধ্যমেই এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সাজেদা চৌধুরী বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের সব মানুষই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।তাহলে বিচার চায়না কারা? সৈয়দ আশরাফও চট্টগ্রমার জনসভায় একই কথা বলেছেন। অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতারাও প্রতিদিন একই কথা বলে চলেছেন। বিচার নিয়ে সরকারী নেতা ও মন্ত্রীদের এতকথা বলার কি প্রয়োজন বুঝতে পারছিনা। সরকার আদালত বসিয়েছেন, উকিল মোক্তার নিয়োগ করেছেন। প্রয়োজনীয় টাকা পয়সার ব্যবস্থা করেছেন। চারিদকে লোক পাঠিয়ে সাক্ষী সাবুদ জোগাড় করছেন। তারপরেও কথা বলে মাঠ গরম করছেন তা স্পস্ট নয়। বিচারের জন্যে জনমতের প্রয়োজন কেন তাও বুঝতে পারছিনা। জানিনা, সরকার হয়ত ভাবছে বিরোধী দল বিচারের বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহ করে বিচারটা ভন্ডুল করে দিতে পারে। যেমন ১৯৬৯ সালে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাখ্যান করেছে জনগন।জনরোষের মুখে বিচারপতি পালিয়ে গেছেন।

সরকারী দলের ব্যবহারের ফলে ‘বাংলার মাটি’ শব্দ দুটো শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে। এমন ব্যবহারে ভাল শব্দও মন্ড হয়ে যায়। যেমন মাস্তান। এটি একটি খুবই ভাল শব্দ। মানে আল্লাহর প্রেমে যে আত্মহারা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর মানে কি সবাই জানে। বাংলা ভাষায় অথর্ব শব্দের অর্থ অকেজো। শব্দটার মুল অর্থ হলো জ্ঞানী। বেদ রচয়িতা একজন মুনি বা ঋষির নাম অথর্ব মুনি। তিনিই রচনা করেছেন অথর্ব বেদ।যেমন আলেম শব্দের অর্থ বিদ্বান বা জ্ঞানী। আমাদের সমাজে  আলেম শব্দের মানে হচ্ছে আরবী জানা একজন সাধারন  মানুষ। যার দাঁড়ি আছে, যিনি লম্বা কুর্তা ও টুপি বা পাগড়ী পরেন। শিক্ষিত মানুষ বলতে আমরা বুঝি স্যুটকোট পরা একজন মানুষ। যিনি ইংরেজী জানেন। ধর্ম দর্শন ও জুরিসপ্রুডেন্সের একজন জ্ঞানী মানুষও যদি টুপি বা পাগড়ী পরেন তাহলে আমাদের সমাজ মনে করে তিনি শিক্ষিত মানুষ নন। এক সময়ে শিক্ষিত মানুষের নামে আগে শ্রীমান শ্রীমতি শ্রীযুক্ত মৌলবী  জনাব ব্যবহার করা হতো সম্মানার্থে। এখন আর শব্দ গুলো ব্যবহার হয়না। এই হলো বাংলাদেশের চলমান সমাজচিত্র। তাই বললাম, বাংলার মাটি শব্দটাকে দয়া করে পঁচিয়ে দিবেন না। মনে হতে পারে অতি ব্যবহারে শব্দটা নিন্দা সূচক হয়ে যেতে পারে।

সরকার বা সরকারী দল প্রতিনিয়তই বলে চলেছেন ইতিহাস বিকৃতির কথা। কারন আওয়ামী লীগের মন মানসিকতায় বিকৃতি শব্দটা পাকাপোক্ত ভাবে বসবাস রাতে শুরু করেছে। যেখানে যা দেখছেন সবই যেন বিকৃত। এমন কি আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাসটাও যেন বিকৃত হয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যে দলটির জন্ম হয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসাবে তার প্রেক্ষিতও বর্তমান আওয়ামী নেতারা সহজে স্বীকার করতে চান না। এমন কি মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়ার পরও বংগবন্ধু এ দলের নেতা ছিলেননা। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে আওয়ামী লীগ মনে করে তাদের বিজয়। সে নির্বাচনে ফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নৌকা। মুসলিম লীগের প্রতীক ছিল হ্যারিকেন বা লন্ঠন। ওয়ারিশানা সূত্রে আওয়ামী লীগ এখনও সেই প্রতীক ব্যবহার করছে। আওয়ামী মুসলিম লীগের বায়া দলিল হচ্ছে ১৯০৬ সালে প্রতিস্ঠিত মুসলিম লীগ। যেই মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন জিন্নাহ শেরে বাংলা ভাসানী সোহরাওয়ার্দী। এই মুসলিম লীগই অখন্ড বাংলাদেশকে শাসন করেছে ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত।কারন অখন্ড বাংলায় মুসলমানরা ছিল মেজরিটি। বাংলার তিনজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিম উদ্দিন, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। এই তিনজন পরে সারা পাকিস্তানের নেতাও ছিলেন।এসব ইতিহাস আওয়ামী লীগ স্বীকার করে কিনা জানিনা। সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে লর্ড ক্লাইভ যড়যন্ত্র করে বাংলাদেশ দখল করে নেয়ার পর থেকে। সেই যুদ্ধ চলে ১৯০ বছর ধরে। অখন্ড ভারতের জনগনের কথা বলার জন্যে ১৮৮৫ সালে প্রতিস্ঠিত হয় ভারতীয় কংগ্রেস। এটাই ছিল হিন্দু মুসলমানের মিলিত সংগ্রামের এক মাত্র প্ল্যাটফরম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  হিন্দু নেতারা কংগ্রেসকে শুধু হিন্দুদের প্ল্যাটফরমে পরিণত করে। ফলে বাধ্য হয়ে মুসলমানরা ১৯০৬ সালে এই ঢাকায় বসে মুসলিম লীগ প্রতিস্ঠা করেন মুসলমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে। ওই কারনেই জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্বের জন্ম দেন। আজকের বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত স্যেকুলার রাজনীতিবিদরা বলছেন জিন্নাহর ওই তত্ব ছিল সাম্প্রদায়িক ও মিথ্যা তত্ব। আওয়ামী লীগও তাই মনে করে। ১৯০৫ সালে পুর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে যখন একটি প্রদেশ গঠন করা হলো তখন কংগ্রেস নেতারা ওই প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করে ওর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রদেশ গঠণ বাতিল হয়ে যায়। ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পাশ হলে কংগ্রেস নেতারা তার বিরোধিতা করেছেন।পুর্ববাংলার জনগনকে চাষাভুষা বলে গালাগাল দিয়েছে। সবইতো হলো ইতিহাসের কথা। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয় না হলে আজকের নেতারা অনেকেই পড়ালেখা করতে পারতেন না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েই কথা শুরু করেছিলাম। সেখানেই ফিরে আসি। ৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানী সেনা বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান(বাংলাদেশ) আক্রমন করে তখন এ দেশবাসী ভাবতে পারেনি পাকিস্তানের সেনা বাহিনী এমন একটি অন্যায় যুদ্ধ তাদের উপর চাপিয়ে দিবে। দেশবাসী ছিল একেবারেই নিরস্ত্র। তখন আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল বাংগালী সৈনিক ইপিআর পুলিশ ও আনসার বাহিনী। পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমনের মুখে প্রথমেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংগালী জওয়ানরাই। তখনও কোন নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি।ঠিক এমনি একটি মূহুর্তে কালুরঘাট বেতার থেকে নাম না জানা মেজর জিয়ার নাম শুনা গেল। তিনি বংগবন্ধুর নামেই স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন। চট্টগ্রামের কিছু আওয়ামী লীগ নেতাও মেজর জিয়ার সাথে ছিলেন। মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। ৭১ সালের যুদ্ধের ভারতীয় দলিল দস্তাবেজে মেজর জিয়ার নামই রয়েছে। আজ আওয়ামী নেতারা বলছেন জিয়া মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন পাকিস্তানী চর। এবার বলুন ইতিহাস বিকৃতির নায়ক কারা?

এরশাদ মজুমদার( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »

বায়া দলিল ৬


দূর্গা পুজার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত

বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাংলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উত্‍সব হলো শারদীয় দুর্গোত্‍সব। এক সময় দেবী দুর্গা ছিলেন গৃহদেবী। মোগল আমলে ১৬০৬ সালের দিকে বাদশা্দের উত্‍সাহে প্রথম সার্বজনীন দুর্গোত্‍সব চালু হয় রাজশাহীর তা্হেরপুরের রাজা কংশ নারায়নের উদ্যোগে। একই সাথে নদীয়ার জমিদার ভবানন্দ মজুমদারও সার্বজনীন দূর্গাপুজার আয়োজন করেন। এর আগে বাংলায় দূর্গাপুজা পালিত হতো চৈত্র মাস বা মার্চ-এপ্রিল মাসে। পরে শারদীয় দূর্গাপুজা শুরু হয় শরত্‍কাল বা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ১৭৫৭ সালের জুন মাসে পলাশীর ষড়্যন্ত্র মুলক যুদ্ধে জয়লাভের পর লর্ড ক্লাইভ একটা বিজয় উত্‍সব করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কিভাবে কেমন করে কোথায় করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেননা। এমন সময় শোভা বাজারের রাজা নবকৃষ্ণ জানালেন তিনি বৃহত্‍ আকারে দূর্গোত্‍সব করতে আগ্রহী যেখানে যুদ্ধ বিজয়ী ইংরেজ নেতারাও অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। শোভা বাজারের ওই দূর্গোত্‍সবই ছিল পলাশী যুদ্ধের বিজয় উত্‍সব।নবাব সিরাজ উদ দৌলা ছিলেন ইংরেজ ও হিন্দু মিলিত শক্তির কাছে একজন অসুর। পলাশীর মাঠে লর্ড ক্লাইভ ছিলেন দুর্গতনাশিনী দেবী দূর্গার প্রতীক। পলাশীর পর মিলিত হিন্দু শক্তি লর্ড ক্লাইভকে সমর্থন দিয়েছিলো।

 এসব হলো ইতিহাসে কথা। এর বাইরেও কথা আছে। তাহলো গণমানুষের বিশ্বাস। ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন সুপ্রাচীন কালে ভারত অসুরের অত্যাচারে জনজীবন অতিস্ঠ হয়ে উঠেছিল। অত্যাচারিত নির্যাতিত মানুষ অসুরের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যে দেবতাদের কাছে প্রর্থনা করে। সকল দেবতা নিজেদের শক্তি দান করেন দেবী দূর্গাকে। তাই তিনি হলেন দশভুজা। অসুর বধ করে তিনি হলেন মহিষাসুর মর্দিনী। সর্ব ভারতীয় দেবতা অবতার রাজা দশরথের প্রথম সন্তান অসুর রাজ রাবনকে বধ করে সর্ব ভারতে শান্তি স্থাপন করেন।

 গবেষকদের মতে রামায়নের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত হলো রাম একজন আর্যপুত্র। তিনি একজন বিদেশী রাজা রাজ্য জয়ে ভারতে আগমন করেন। বা তার পূর্ব পুরুষ ভারতে আগমন করেন। আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারত জয়ের পর দাক্ষিনাত্যের দিকে রওয়ানা দিলে রাম স্থানীয় রাজা রাবনের প্রতিরোধের মুখে পড়েন।রাম স্থানীয় কিছু শক্তির সাথে জোট বেধে রাবন রাজ্য আক্রমন করেন এবং দাক্ষিনাত্যকে অসুর মুক্ত করেন। ভারতের দক্ষিনে এবং শ্রীকংকায় এখনও রাবন পুজা হয়। প্রাচীন বাংলার রাজা মহেশকে আর্যদেবী বা আর্য বীর নারী দেবীদূর্গা সকল রাজন্যবর্গের সহযোগিতা নিয়ে পরাজিত করেন। প্রকৃত অর্থে মহেশ ছিলেন একজন দ্রাবিড় রাজা। তিনি স্বাদেশকে বিদেশী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধ করে পরাজিত হন। তাই বিজয়ী শক্তি তাঁকে অসুর বলে আখ্যায়িত করেছে। ভারতের উত্তরাঞ্চল দখল করে আর্যরা এই জনপদের নাম দিয়েছে আর্যাবর্ত। মহেনজোদারো ও হরপ্পা প্রমান করে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা আর্যদের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। আর্যরা ছিল যাযাবর পশু শিকারী আর ভারতীয়রা ছিল গৃহী এবং উন্নত কৃষি কাজে পারদর্শী। আর্যরাই ভারতের প্রাচীন সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে।

ভারতে ইংরেজ শাসনকে হিন্দুরা বহুকাল আশীর্বাদ হিসাবে মেনে নিয়েছিল। দাদাভাই নওরোজী তাঁর ‘পোভার্ট ইন ইন্ডিয়া’ বইতে ইংরেজ শোষনের বিশদ বিবরন দিয়েছেন। তিনি সুস্পস্ট ভাষায় বলেছেন, মুসলমানরা এদেশকে নিজেদের মাতৃভুমি মনে করতো। তারা কখনই এদেশকে শোষন বা লুন্ঠন করেনি। হান্টার সাহেব বলেছেন, ইংরেজ শোষনের ফলে সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হয়েছিল। আর্যদের অনুদার সাহিত্য সংস্কৃতি ও মৌলবাদী ধর্মীয় অনুশাসন থেকে আধুনিক ভারত আজও মুক্ত হতে পারেনি। রামায়ন মহাভারতের যুদ্ধ ও শঠ রাজনীতি থেকে আদুনিক ভারত এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাই সেখানে সাম্প্রদায়িক দাংগা লেগে আছে। অচ্যুত দলিত আর হরিজনদের উপর হাজার বছর ধরে অমানবিক অত্যাচার অবিচার চলছে। এখনও হরিজনদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। হাজারো চেস্টা করেও আধুনিক ভারতের প্রগতিশীল নেতারা মুক্ত হতে পারেনি।

সারা পৃথিবী যখন সব মানুষের শিক্ষার অধিকার প্রতিস্ঠার জন্যে লড়াই ভারতের ধর্ম তখনও হরিজনদের শিক্ষার অধিকার মেনে নেয়নি। এসবই হচ্ছে ধর্মের তথাকথিত অনুশাসনের কারনে। ভারতের শাসনতন্ত্রের প্রণেতা বিখ্যাত জনদরদী নেতা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন একজন হরিজন হিসাবে। বিগত ৬০ বছরে কোন হরিজন বা দলিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ভারত ছাড়া বিশ্বের কোথাও মহাকাব্য বা মিথকে ধর্ম হিসাবে গণ্য করা হয়না। বারতের নেতারা আজও ঠিক করতে পারেননি রামায়ন মহাভারত মহাকাব্য না ধর্মগ্রন্থ। বাবরী মসজিদের রায় আবারও প্রমান করেছে ভারতের বিচারপতিরাও কাব্য মিথকে কল্পনাকে বাস্তব বলেই মনে করেন। অথচ এই দেশটাই একটা শক্তিধর রাস্ট্র হিসাবে বিকশিত হতে চায়। এদেশের বিশকোটি এখনও প্রতিদিন খেতে পায়না।সেদিকে ভারতের খেয়াল নেই।তারা ব্যস্ত আছেন আনবিক বোমা তৈরীর কাজে। এই ভারতই বিগত ৬০ বছর ধরে স্বদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে অসুর বানিয়ে বধযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দেবতারূপী তথাকথিত নেতারা কখনও কিছু বলেননি।

পাকিস্তানীরাও এক সময় ইসলাম ও মুসলমানিত্বের নামে বাংলাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। শেষ পর্যান্ত ৭১ সালে বাংলাদেশকে আক্রমন লাখ লাখ নিরী্হ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্ব শান্তির নেতা ও উকিল আধুনিক বিশ্বের দেবতা অসুর বধের নামে ইরাক আক্রমন করে সাদ্দামকে হত্যা করেছে। এখনও সেইদেশে দেশপ্রেমিক মানুষকে হত্যা করে চলেছে। আল কায়েদা ও লাদেনকে খুঁজে বের করার নামে আফগানিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রতীকী হলেও দেবী দূর্গা মর্তে এসেছিলেন অসুরদের হত্যা করে মানুষকে রক্ষা করার জন্যে। দু:খের বিষয় হলো পলাশীর যুদ্ধের পর কোলকাতার রাজা মহারাজারা লর্ড ক্লাইভকে মুক্তিদাতা ও দেবী দুর্গার সাথে তুলনা করে  সম্বর্ধনা দিয়েছে।( প্রকাশিত আমার দেশ ২৩ অক্টোবর,২০১০)

এরশাদ মজুমদার, কবি ও সাংবাদিক( ershadmz40@yahoo.com)

Read Full Post »


তারেক জিয়ার মামলার রায় ও চলমান রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার

বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি তারেক জিয়া  অনেক বছর বাধ্য হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। এটা কোন স্বেচ্ছা নির্বাসন নয়। তিনি বাধ্য হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশে এলেই আইনি কায়দায় জেল জুলুম। এসব হলো তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা।

 

বিদেশে টাকা পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তারেক জিয়া বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার তারেক জিয়াকে চিরদিনের জন্যে পংগু করার চেষ্টা করেছিল।এর একটা সুদূর প্রসারী লক্ষ্য ছিল। দেশবাসী ভাবতে শুরু করেছিল যে তারেক জিয়া আগামী দিনে বিএনপির নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারবেন। যদিও আওয়ামী লীগ সহ ওই ঘরাণার অনেকেই তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমনটাকে ভাল চোখে দেখেনি।আমার নিজের কাছে বিষয়টা তখন তেমন ভাল লাগেনি। ভাবটা এমন যে ,কি দরকার ছিল। কিন্তু পরে  মনে হয়েছে রাজনীতিতে অাসার বয়স তারেক জিয়ার হয়েছে। নিদেনপক্ষে প্রশিক্ষনের জন্যে হলেও ওই সময়ে তাঁর রাজনীতিতে আসা সঠিক হয়েছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা পেছনে পড়ে গেছেন। এখন যদিও সজীব ওয়াজেদ রাজনীতিতে নিজেকে কিছুটা জড়িয়েছেন। যদিও দেশবাসী মনে করে সজীব রাজনীতি থাকবেন না। তিনি একজন বিদেশী নাগরিক। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন,তাঁর পুত্রবধু একজন খৃষ্টান। মানে জগতের শেষনবী মুহম্মদকে (সা)ও শেষ কিতাব আলকোরাণে বিশ্বাস করেন না। এই খৃষ্টনরাই স্পেনে ক্রুসেড শুরু করে লাখ লাক মুসলমানকে হত্যা করেছিল। মুসলমানদের মসজিদে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে উদ্বৃতি দিয়ে আমি বলছিনা যে সজীব ওয়াজেদের বউ এসবের জন্যে দায়ী। তবে তিনি এসব ঘটনার কখনও নিন্দাও করেননি।
বাংলাদেশকে রাজনীতি ও অর্থনীতি শূণ্য করাই ছিল ভারত সমর্থিত ১/১১র সরকারের লক্ষ্য।
দুই প্রধান দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্যে ১।১১র সরকার আপ্রাণ চেস্টা করেছেন। ১/১১ ঘটানোর জন্যে তার আগে ২৮ অক্টোবর ঘটানো হয়েছে। ওই ঘটনার বীভত্‍স দৃশ্য টিভির বদৌলতে বিশ্ববাসী দেখেছে। শুধু দেখেনি ১/১১র সরকার। দুর্ণীতি দমনের নামে মঈন ইউ আহমদের সরকার সারা দেশে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছে। গ্রামে গঞ্জে হাট বাজার চুরমার করে গ্রামীন অর্থনীতির কোমর ভেংগে দিয়েছে। যারা ওই সময়ে সারাদেশে জেলায় উপজেলায় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তারা মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করেছেন ভয় ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু মইনুদ্দিনের সরকার নতুন নেতৃত্বের কথা বলে বহুলোককে নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অনেককে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছেন। বিএনপির সাধারন সম্পাদক মান্নান ভুঁইয়াকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী বানাবার স্বপ্ন দেখিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বেচারা মান্নান ভুঁইয়া মারা গেলেন। তাঁর সাথে তখন যারা সাপ লুডু খেলেছিলেন তারা সবাই ভোল পাল্টিয়ে আগের যায়গায় ফিরে গেছেন। তাদেরকে এখন আমাদের আশে পাশেই দেখতে পাই। তখন যারা টিভিতে টকশো করার জন্যে তালিকাভুক্ত ছিলেন তারাও ভোল পাল্টয়ে বেশ ভাল তবিয়তে আছেন। তখনকার মিডিয়া যারা ১/১১র সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন তারাও আছেন দেশের মানুষের খেদমত করার জন্যে। আইউব ইয়াহিয়ার সময়েও বেশ কিছু মিডিয়া লীডারকে দেখেছি যারা জনগনের বিরুদ্ধে কথা বলতো। যদিও মইনুদ্দিনের সরকার শুরুতে দুই নেত্রীকে আটক করেছিলেন, শেষ অবধি দেখা গেল তাঁরা দিল্লী সরকারের পক্ষে থেকে দিল্লীর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছেন। অদ্ভুত এক নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁরা খালেদা জিয়াকে পরাজিত করে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। হয়ত গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাবে তাই তাদের কাউকেই দেশে রাখা হলোনা। শেখ হাসিনাও খুব হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তাঁর আন্দোলনের ফসল ১/১১র সরকার। ক্ষমতায় আসলে তাদের বৈধতা দিবেন। ক্ষমতায় এসে হাসিনা বিএনপিকে ধ্বংস করার খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার মামলা দিতে থাকেন। ১/১১র সরকারের দায়ের করা সকল মামলা জারী রেখেছেন। সেসব মামলা এখনও চলছে।

ওই সময়ে সবচেয়ে বেশী সাহসী মতামত প্রকাশ করেছিলেন ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান। দুজনের মধ্যে মাহমুদুর রহমান এখন জেলে আছেন কারন তিনি সত্যকথা বলতেন। আমাদের দেশে আইন সত্যের পক্ষে নয়, তথ্যের পক্ষে। আদালত তথ্য নিয়ে কাজ করে, সত্য নিয়ে নয়। ১/১১র সরকার কতৃক প্রতিস্ঠিত ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার মাহমুদুর রহমানকে সহ্য করতে পারেননি। তাই নানা রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন।মাহমুদ একজন প্রখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। ইতোমধ্যেই তিনি নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের রাজনীতিতে তাঁর মতো একজন মেধাবী মানুষের অতীব প্রয়োজন। এরাই বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিতে পারবে। এ কারনেই পরিকল্পিত উপায়ে মাহমুদের উপর হামলা চলছে। এইতো ক’দিন আগে ফরহাদ মজাহারকে গ্রেফতার করার একটা জিকির তুলেছিল সরকার ও হালুা রুটির বরকন্দাজ তথাকথিত কিছু মিডিয়া নেতা ও কর্মী।বাংলাদেশের মিডিয়া জগত এমনিতেই সম্প্রসারনবাদী শক্তির তাবেদারের জীবন যাপন করছে। মিডিয়াতেও সিইওরা ঢুকে পড়েছে। শুনা যায় এদের মুজুরী নাকি লাখ লাখ টাকা। এরা আবার শ্রমিক নেতাও। এরাই ফরহাদ মজাহারের মতো একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হেনস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

১/১১র সরকার সবচে বেশী হামলা চালিয়েছে খালেদা জিয়া তার পরিবার আত্মীয় স্বজন ও বিএনপির উপর। তার কারন নির্বাচনের পর স্পস্ট হয়ে গেছে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারাও সমান ভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া তার দুই সন্তান ও দলের উপর। এই সরকারের সীমাহীন আক্রোশ হলো জিয়া এবং তার পরিবারের উপর। জিয়ার নাম মুছে ফেলার জন্যে চলছে নানা আয়োজন। আওয়ামী নেতারা বলে চলেছেন, জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তিনি পাকিস্তানের চর ছিলেন। একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এর জন্ম সেনা ছাউনীতে। আওয়ামী লীগ কেন যে সেনা ছাউনীকে ভয় পায় জানিনা। অথচ আমাদের সেনা অফিসার ও সৈনিকরাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রাণপণ করে যুদ্ধ করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে এদেশের কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা। আওয়ামী লীগ তৈরী করেছে প্রপাগান্ডা মেশিন।

এসব হলো প্রাসংগিক কথা। মূল কথা হলো আমাদের দেশের রাজনীতিতে আগামী দিনের নেতৃত্ব এখন কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক মহান মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাস্ট্রপতি শহীদ জিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড়ছেলে তারেক জিয়া রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারক ঐতিহ্য নিয়েই। এটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়। তারেক জিয়ার এখন যা বয়স তা ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য রাহুল গান্ধীর মতোই। রাজনীতিতে না হলেও সামাজিক ভাবে তারেকের পরিবারেরও শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। পিতার দিক থেকে তারেক বগুড়ার আধ্যাত্বিক ঐতিহ্যের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশের বহু ঐতিহ্যবাহী পরিবার তাদের আত্মীয়। মায়ের দিক থেকে তারেকের শিকড় রয়েছে ফেণী জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর মজুমদার বাড়িতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এ এফ রহমান ওই বাড়ির সন্তান। এই উপমহাদেশের চা শিল্পের সাথে জড়িত বহু বিখ্যাত পরিবার এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে যুক্ত। অবিভক্ত বাংলার শেরে বাংলার মন্ত্রীসভার সদস্য নবাব বাহাদুর মোশাররফ হোসেনও এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। আপনাদের পরিচিত রাজনীতিক মির্জা গোলাম হাফিজ,কাজী জাফর, কর্ণেল জাফর, আহমদুল কবীর, শহীদ সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান,লায়লা রহমান কবীর এই বৃহত্‍ পরিবার গোস্ঠির অন্তর্ভুক্ত।ভাগ্যের অদৃশ্য নদী জিয়া পরিবারকে প্লাবনের মতো ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে রাজনীতির মঞ্চে। ৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ ভাগ্য জিয়াউর রহমানকে টেনে নিয়ে গেছে কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে। তিনিই পাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ঘোষণার পেছনে নানা জনের নানা কথা আছে। আমি এখন এখানে সেসব বিষয় নিয়ে কিছু বলবোনা। সময় সুযোগ হলে আরেক নিবন্ধে সেসব কথা লিখবো। সেই জিয়ার গলার আওয়াজ দেশবাসী আবার শুনতে পেলো ৭ নবেম্বর,১৯৭৫। প্রথমবার ছিলেন মেজর, দ্বিতীয়বার ছিলেন মেজর জেনারেল, আর শহীদ হওয়ার সময় ছিলেন দেশের রা্স্ট্রপতি। মা খালেদা জিয়া পারিবারিক ভাবে বিশাল ঐতিহ্যের অধিকারী হলেও সংসার জীবন শুরু করেছেন একজন সেনা অফিসারের স্ত্রী হিসাবে। জীবন যাপন চলেছে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ভিতর। তিনি কখনও ভাবেননি একদিন তাকে এদেশের বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বের হাল ধরতে হবে। এসবই হচ্ছে ভাগ্যের অদৃশ্য রশির টান। কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি রাজনীতির বিশাল রাজপথে নেমেছেন এবং খ্যাতি লাভ করেছেন একজন আপোষহীন নেত্রী হিসাবে। সেই থেকে তিনি রাজপথেই আছেন।

ভারতীয় কংগ্রেসের বর্তমান সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও সেভাবে রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি একজন বিদেশী নারী।বৈবাহিক সূত্রে ভারতে এসেছেন। তাঁর স্বামী রাজীব গান্ধী একজন পেশাদার পাইলট ছিলেন। মা ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর তিনি দল ও দেশের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। রাজিব গান্ধী নিহত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধী রাজনীতিতে আসেন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের হাল ধরেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিস্ঠ আসন পাওয়ার পর সোনিয়ারই প্রধান হওয়ার কথা ছিল। বিজেপি তাকে বিদেশী বলে সমালোচনা করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংয়ের নাম প্রস্তাব করেন। এখন সোনিয়া কংগ্রেস সভানেত্রী আর তার ছেলে রাহুল গান্ধী  সহ সভাপতি। এ নিয়ে ভারতে কোন সমালোচনা নেই। রাহুল ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ভারতের আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিহিত হচ্ছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের হাওয়া অন্য রকম বইছে। মিডিয়া এবং বিএনপি বিরোধী শক্তি তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। সুতরাং তার চরিত্র হনন করতে হবে। ১/১১র সরকারই শুরু করেছিল চরিত্র হননের অভিযান। সেই অভিযান এখনও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই তারেককে দুর্ণীতিবাজ আখ্যায়িত করে বক্তৃতা দিচ্ছেন। পুরো আওয়ামী লীগই এখন তারেকের ইমেজ ধ্বংস করার স্থায়ী কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। কেয়ারটেকার সরকারের সামরিক নেতা মইনুদ্দিন বলেছিলেন, তারেক বিদ্যুত খাতের বিশ হাজার কোটি মেরে দিয়েছে। কোন অভিযোগই এখনও প্রমানিত হয়নি। সরকারের নির্দেশে দুদক তারেকের বিরুদ্ধে এখনও দুর্ণীতির মামলা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বিএনপি আওয়ামী লীগ আর সরকারের এই প্রপাগান্ডার সঠিক জবাব দিতে পারছেনা।কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সন্তান জয়ের দুর্ণীতির খবর ছেপে দৈনিক আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান  জেলে গেছেন। তার উপর সরকারের আক্রোশ এখনও কমেনি। তারেককে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেয়ার সরকারী উদ্যোগ একেবারেই অমুলক নয়। তারেক নিশ্চিত ভাবেই আগামী দিনের দিনের একজন নেতা জেনেই সরকার ও আওয়ামী লীগ তাকে সরিয়ে দিতে চায়। অপরদিকে শেখ হাসিনার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দিবে এখনও ঠিক হয়নি। জয় ওয়াজেদ আসবে আসবে করেও এখনও তার আসা হয়ে উঠছেনা। কেন যে সে আসতে পারছেনা তাও স্পস্ট নয়। আসেতো আবার ফিরে যায়। মাকে ক্ষমতায় রেখে সব রকম সরকারী প্রটোকল নিয়ে রাজনীতি করা খুবই সহজ। তারেক কিন্তু রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল থেকে। তাঁর জন্যে কোন প্রটোকলের দরকার হয়নি।

রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতিদের সন্তানদের দুর্ণীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এ অভিযোগ বিশ্বব্যাপী। ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান রাজীব ও সন্জয়ের বিরুদ্ধে  দুর্ণীতির বহু অভিযোগ এসেছিল। রাজীবের বিরুদ্ধে বফোর্স কেলেংকারীর খবর বহুদিন মিডিয়াতে এসেছে। পশ্চিম বাংলার অবিসম্বাদিত নেতা জ্যোতি বাবুর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। জ্যোতি বাবুর ছেলে একজন প্রতিস্ঠিত ব্যবসায়ী। কোলকাতার পার্ক হোটেলের মালিক জ্যোতি বাবুর বেয়াই। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশাইর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ ছিল। পাকিস্তানের দিকে তাকালেও দেখতে পাবেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীরের বিরুদ্ধে সুইস ব্যান্কে টাকা রাখার তদন্ত এখনও চলছে। সেই বেনজীর দু’বার পাকিস্তানের প্রধান হয়েছে। এখন বেনজীরের ছেলে বিলাওয়াল রাজনীতিতে আসছে। পিপিপির আগামীদিনের নেতৃত্বে তার নাম ঘোষিত হয়েছে।নেওয়াজ শরীফ সওদী আরবে বেশ কয়েক বছর স্বপরিবারে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। জেনারেল মোশাররফ এই দু’জনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল নির্বাসনে থেকে তিনি দেশে ফিরে এখন জেলে আছেন। জেনারেল এরশাদের আমলে বৃটেন থেকে এটিপি বিমান কেনার ব্যাপারে থ্যাচারের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছিল। মায়ের প্রভাব খাটিয়ে সে মধ্যপ্রাচ্যেও ব্যবসা করার চেস্টা করেছে বলেও বৃটিশ মিডিয়া অভিযোগ করেছে।রাজনীতিতে এসব নোংরামী থাকবেই।

তারেক আসলে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ও মিডিয়ার বিরাট শিকার। এর পিছনে দেশী বিদেশী যড়যন্ত্রও থাকতে পারে। বিএনপি আসলেই বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষের দল। এই দলের মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের আকাংখার প্রতিফলন দেখতে চায়। তারেক এখন তরুন ও যুব সমাজের নেতা। একটা বড় স্বপ্ন নিয়ে সে রাজনীতির মাঠে এসেছে। খুব পরিকল্পিতভাবেই সামনের দিকে যাচ্ছিল। সারাদেশ সফর করে তৃণমূলে বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ফলে দেশী ও বিদেশী বাংলাদেশের শত্রুরা শংকিত হয়ে পড়েছিল। ১/১১র সরকার বিদেশীদের পরামর্শেই তারেককে চিরদিনের জন্যে পংগু করে দিতে চেয়েছিল।আল্লাহতায়ালা রক্ষা করেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তবে তারেকের ভুলগুলোকেই তার শত্রুরা কাজে লাগিয়েছে। এবং এখনও লাগাচ্ছে। রাজনীতিতে ইমেজ বা ভাবমুর্তি রক্ষা করা একটা বড় কাজ। শত্রু কোন দিক থেকে আক্রমন করতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অল্প বয়সেই তারেকের অনেক মোসাহেব ও তোষামোদকারী জুটে গিয়েছিল। শহীদ জিয়ার সততা ও ইমেজ ছিল বিএনপির প্রধানতম মুলধন। সেই মুলধন কিছুটা হলেও কলংকিত হয়েছে তোষামোদকারীদের ভুল পরামর্শ কর্মের কারনে। আশা করছি< তারেক এখন তার ভুল গুলো বুঝতে শুরু করেছে। রাজনীতিতে নির্বাসিত জীবন নতুন কিছু নয়। বেনজীর ভুট্টো বহু বছর নির্বাসিত থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।ইরান বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী বহু বছর নির্বাসনে ছিলে। বিদেশে থেকেই বিপ্লবের কাজ চালিয়ে গেছে। ইসলামী বিপ্লবের এই মহান নেতার দেশে আগমনের মাধ্যমেই রেজা শাহ পাহলবীর পতন হয়েছিল। তারেকের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দেশের মানুষের জন্যে রাজনীতি করলে তারেককে আরও অনেক বেশী কস্ট স্বীকারের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে তারেক এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার বড়ছেলে। দেখা যাক বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যায়? ভারত সরাসরিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। হাই কমিশনার পংকজ শরণ বলেছেন বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ আছে। তাই তারা আমেরিকার সাথে যৌথভাবে চলমান সংকট কাটাবার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমিতো মনে করি ভারতের পরামর্শে শখ হাসিনা এ সংকট তৈরি করেছেন। ১/১১র সরকারকেও ক্ষমতায় বসিয়েছিল ভারত। ঠিক পাঁচ বছর আবার সেই পুরাণো সংকট দেখা দিয়েছে। ২০০৬ সালে সংকট তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এবারের সংকটও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাই ভারত প্রকাশ্যে মোড়লীপনা শুরু করে দিয়েছে। তারেক এখনও নির্বাসনে আছেন। একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। দেখা যাক, ভারত শেষ কি চাল দেয়? ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে ১৫৪ জন লোক বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও সে সংসদ এখনও বহাল আছে। যে নির্বাচনে দেশের মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ  নির্বাচনে ভোট দিয়েছে বলে বলা হয়। কিন্তু ভারত অন্ধ ভাবে সে নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ ভারতের স্বার্থ আছে। কি স্বার্থ তা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে শেখ হাসিনা একটা স্বচ্ছ অবাধ দিতে চান না কেন? কেউ হয়ত তাঁকে বুঝিয়েছে  বিএনপিকে যদি নির্বাচনের বাইরে রাখা যায় তাহলে কালক্রমে দলটি আর টিকে থাকবেনা।

এরশাদ মজুমদার, কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


সংবাদপত্রের সাথে রাস্ট্রের বনিবনা কোন যুগেই ভাল ছিলনা। যেসব দেশ বা রাস্ট্র নিজেদের খুব গনতান্ত্রিক মনে করে সেসব দেশেও সরকারের সাথে সংবাদপত্রের মনকষাকষি চলতে থাকে বা চলছে। যদিও পশ্চিমারা যারা নিজেদের অতি ভদ্রলোক বলে মনে  করে তারাও সংবাদপত্রের একশ’ভাগ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। ওসব দেশেও সরকার বা কায়েমী স্বার্থবাদীরা সুযোগ পেলেই সংবাদপত্রের গলা টিপে ধরতে চায়। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের উপর দলন বা নির্যাতন চলছে। অনেক স্বৈরশাসক আছে যারা কথা বলার উপরেও সেন্সরশীপ জারি করে। জেনারেল আইউব তত্‍কালীন পূর্বপাকিস্তানের অনেক নেতার উপর এই সেন্সরশীপ জারি করেছিল। সংবাদপত্রের উপর আইউব সরকারের হামলা ছিল প্রায় প্রতিদিন।  পূর্বপাকিস্তানে সরকার সমালোচক পত্রিকা ছিল তিনটি। পাকিস্তান অবজারভার, সংবাদ ও ইত্তেফাক। এই তিন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবদুস সালাম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও জহুর হোসেন চৌধুরী। ৬৯ এর পর স্বৈরশাসকের বিরোধিতার কাতারে এসে সামিল হয়েছিল দৈনিক আজাদ ও দৈনিক পূর্বদেশ। এসব পত্রিকার মালিক সম্পদক ও কর্মরত সাংবাদিকরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্বপাকিস্তানের জনগনের স্বার্থের জন্যে কাজ করতেন। তখন সাংবাদিকদের ভিতর এত বিভাজন ছিলনা। এখন মালিক সম্পাদক সাংবাদিক সবার নিজস্ব এজেন্ডা আছে। কোথাও সাংবাদিক নির্যাতিত হলে একদল প্রতিবাদ করে আর অন্যদল চুপ করে থাকে।

আমার দেশ এর উপর হামলা হলে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পরেও সাংবাদিকরা দ্বিধা বিভক্ত ছিলেন। বিশ্বের বহু সংগঠন মাহমুদুর রহমানের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। এর চাইতে লজ্জার আর কি হতে পারে। এমন কি রিপোর্টার অলিউল্লাহ নোমানের শাস্তির ব্যাপারেও সাংবাদিকরা মুখ খোলেনি। যদি সাংবাদিক নেতাদের কাছে জানতে চান, তাহলে তারা বলবেন বিএনপির আমলেও এমন অনেক অত্যাচার হয়েছে। তখন আপনারা বিএনপি সাংবাদিকরাতো কোন কথা বলেননি। সারাদেশেই সাংবাদিকরা বিভক্ত। মাহমুদুর রহমান আর নোমানের ব্যাপরে বিচারকদের দৃস্টিভংগী ও পর্যবেক্ষন সম্পর্কে দেশে বিদেশে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে বিচারক ও রায়ের সমালোচনা করা যাবে কিনা? অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন আদালত সমালোচনার উর্ধে। কিন্তু বিচার ও রায়? তার পক্ষে বিপক্ষেতো আলোচনা হতে পারে। সারা পৃথিবীতে তাই হচ্ছে। বিচারকতো আমাদের মতো মানুষ। তাঁরাতো ভুল করতে পারেন বা ভুল রায় দিতে পারেন। বিচারকতো ঘুষ খেতে পারেন। নিম্ন আদালতে দূর্ণীতি আছে একথা প্রায়ই শোনা যায়। ভারতের সাবেক আটজন প্রধান বিচারপতি ঘুষ নিয়েছেন বলে কাগজে বেরিয়েছে। বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত বিচারকের রায় উভয়পক্ষের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তাহলে কি  বিচারকরা বলবেন, আদালতের অবমাননা হচ্ছে?

আমাদের দেশে যে প্রকাশনা আইন রয়েছে তা মুলত তৈরি হয়েছে বৃটিশ আমলে। চোখ বন্ধ করে কোন চিন্তা না করেই আপনি অনায়াসেই বুঝতে পারবেন সে আইন কেন তৈরি করা হয়েছিল এবং কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। সেই আইনটার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। শুধু আমাদের এখানে নয় এই অঞ্চলের সব দেশেই গনবিরোধী এই আইনটি বলবত্‍ রয়েছে। কোন সরকারই এই আইনের পুরো পরিবর্তন করতে চায়না। সব সরকারই স্বাধীন মতামত প্রকাশকারী প্রকাশনাকে গলা টিপে ধরতে চায়। তাই আইনটা হাতে রাখতে চায়। একবার মনে করুন কি কারন দেখিয়ে আমার দেশ বন্ধ করা হয়েছিল।প্রকাশক নাই অভিযোগ করে কাগজ বন্ধ করা হয়েছিল। আবার মধ্য রাতে পুলিশ জোর করে ঢুকেছে। পরে বলা হোল মাহমুদুর রহমান পুলিশের গায়ে হাত তুলেছেন।বৃটেন বা আমেরিকায় প্রকাশনা আইনটা অনেক বেশী গনতান্ত্রিক ও উদার। মনে হয় সারা ইউরোপে আইনটা অনেক বেশী জনগনের কাছে। আমাদের দেশে এখনও সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার জন্যে সরকার বিজ্ঞাপনকে ব্যবহার করে থাকে। পত্রিকার সারকুলেশন কত তা নির্ধারন করে সরকারী সরকারী অডিট ব্যুরো অব সার্কুলেশন। যদিও দাবী করা হয়েছিল সাধারন কোম্পানীর অডিটের নিয়মেই সংবাদপত্রের সার্কুলেশন অডিট করার জন্যে। কিন্তু সরকার নিজের স্বার্থেই এই দাবী মানেনি। আইনটা দেখলেই মনে হবে পত্রিকা প্রকাশনার ব্যাপারে ডেপুটি কমিশনারই ফাইনাল অথরিটি। কিন্তু একবার দরখাস্ত করে দেখুন। তখন দেখবেন অদৃশ্য কত অথরিটি আছে আর কত ঘাটে কত খরচ করতে হয়। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এত বাধা বপত্তি কেন? কারন রাস্ট্র মনে করে নিজেকে বাঁচাতে গেলে অন্যের মতামতকে হত্যা করতে হবে। আমার বন্ধুরা বলেন, রাস্ট্র না বলে সরকার বলুন। কিন্তু আমি তাতে নারাজ। এই রাস্ট্র পাওয়ার জন্যেইতো আমরা ৭১এ যুদ্ধ করেছি। রাস্ট্র আছে বলেই সরকার আছে। সরকার আসে আর যায়। নানা দল  দেশ জনগনের নামে পরিচালনা করে। কিন্তু জনগনের মতামত শুনবে কে? যহোক এটা একটা লম্বা আলোচনার বিষয়।

প্রসংগত, সাম্প্রতিক কালের জঘন্যতম ডিক্টেটর পর্তুগালের সালাজার। এই ভদ্রলোক জনগন আর গনতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সালাজার তার দেশের জনগনের মত প্রকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। এমন কি পর্তুগালে বিদেশী কাগজ পড়া ও বিদেশী রেডিও শোনা বন্ধ করেছিল।ভিন্নমতকে সালাজার কখনও সহ্য করতোনা। বেশ কয়েক যুগ আগে একটি বই পড়েছিলাম। নাম ‘সালাজারের জেলে ১৯ মাস’। এই বইটি সেদেশ থেকে পালিয়ে এসে এক ভদ্রলোক লিখেছিলেন। বইটি ছিল সালাজারের অত্যাচারের করুন কাহিনী। আমাদের দেশেও রিমান্ডের নামে দিনের পর দিন এ ধরনের অত্যাচার চলে। আদালত নিষেধ করলেও অত্যাচার থামেনা। শুনেছি ৭১এ পাকিস্তানী সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ওই রকম অত্যাচার করেছে। তার আগে বৃটিশ আমলে স্বাধীনতাকামীদের উপর বৃটিশরাও এ ধরনের অত্যাচার চালিয়েছে। তখন অত্যাচার করেছে বৃটিশ আর পাকিস্তানীরা। এখন করছে আমাদের ভাই বেরাদর ও ছেলেরা। কারন অত্যাচারের আইনটি তৈরি করেছে বৃটিশরা।আইনটি স্বাধিন পরাধীন সকল সরকারের কাজে প্রয়োজনে লাগছে। প্রয়োজন হলো বিপক্ষ মতকে টুটি চেপে ধরা। রাস্ট্র যদি শোষনের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে বা রাস্ট্রের আদর্শ যদি শোষন আর অত্যাচার হয় তাহলে এমন সরকার চাই যারা রাস্ট্রকে ওই গনবিরোধী আদর্শ থেকে মুক্তি দিবে। আমরা সে ধরনের সরকার আজও পাইনি।

বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মাপের জননেতা ছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভ করে এদেশের জনগনের অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন। তারই নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেন বা না দেন। অবাক এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সেই বংগবন্ধু শেষ পর্যন্ত বহু দলীয় গনতন্ত্রকে  কবর দিয়ে পরিনত হলেন এক সিভিল ডিক্টেটরে।তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে  সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করলেন। সকল কাগজ বন্ধ করে দিলেন। সরকারী কর্মচারীদের তার দলের সদস্য হতে বাধ্য করলেন। তিনি এসব কেন করলেন? হয়ত তাঁর মনে হয়েছে দেশের উন্নতি সাধন করতে হলে অন্য সকল মত প্রকাশের পথ বন্ধ করতে হবে। এমন কি এক সময় বাংলার বাণী’র সম্পাদক শেখ মনি বলেছিলেন, মুজিবের বিরুদ্ধে কথা বললে জিহ্ব কেটে ফেলা হবে। মুজিবের এই বাংলাদেশে শুধু মুজিবের শাসন চলবে, আইনের শাসন নয়। পৃথিবীর সকল ডিক্টেটরই বলে থাকে দেশের উন্নতির জন্যেই ভিন্নমত প্রকাশের সকল মত বন্ধ করতে হবে। মুজিব গবেষকরা মনে করেন ভারত ও রাশিয়ান ব্লকের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর চাপে পড়ে বংবন্ধু ওই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বংগবন্ধু মারা যাওয়ার পর ভারত কিন্তু মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এক সাথে কাজ করার অংগীকার করেছিল।বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে বহুদলীয় গনতন্ত্রে ফিরিয়ে আনে এবং কাগজ প্রকাশনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।

এখন আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। অবজারভার ও সংবাদে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করে রাজনীতি করার জন্যে আমি ৬৪ সালের একদম শেষদিকে ফেণী চলে যাই। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিই একটি সাপ্তাহিক কাগজ প্রকাশের। প্রথমে কাগজের নাম দিয়েছিলাম স্বদেশ। প্রকাশনার রেজিস্ট্রার অফিস ওই গ্রহণ করলোনা। তারপর নাম দিলাম ফসল। ভাবলাম সাধারন পাঠকরা যেন সহজে পত্রিকার নাম উচ্চারন করতে পারে। স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার জানালেন আমার নামে পত্রিকার ডিক্লারেশন পাওয়া যাবেনা। তখন আমি মাওলানা ভাসানীর ন্যাপকে সমর্থন করতাম। বাধ্য হয়ে আমি আমার এক চাচাতো ভাইয়ের নামে ডিক্লারেশন নিলাম। কিন্তু তার পারিবারিক টাইটেল বা পদবী মজুমদার শব্দটি বাদ দিয়েছিলাম। ফেণীতে থাকাকালীন সময়ে আমি অনেক গুলো মামলার মোকাবিলা করেছি। প্রায় সব মামলায় প্রথমে গ্রেফতার হই। সেই সময়ের  দুটো মামলার কথা এখানে উল্লেখ করবো। প্রথম মামলাটি ছিল কর্তব্যরত সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে বাধা দান করা। তখন ফেণী মহকুমা মেডিকেল অফিসার ছিলেন জনাব আবুল কাশেম। ডাক্তার সাহেব সামাজিক ভাবে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। সমাজের উপরতলার প্রায় সবলোকই তাঁকে পছন্দ করতেন। বিনিময়ে তিনি তাদের বিনে পয়সায় চিকিত্‍সা করতেন। তিনি উপরতলার সবার বাসায় আসা যাওয়া করতেন। আর এই সুযোগ নিয়ে ডাক্তার সাহেব সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার করতেন। আমি সাপ্তাহিক ফসলে তার দূর্ণীতি ও অত্যাচারের কাহিনী ছাপতে শুরু করি। এক সময় ডাক্তার সাহেব আমার বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলা করেন। সে মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। ফেণীর একজন উকিলও আমার পক্ষে মামলা চালাতে রাজী হননি। নোয়াখালীর বিখ্যাত উকিল রায় সাহেব নগেন সুর আমার মামলা নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দূর্ণীতির অভিযোগে ডাক্তার সাহেবের চাকুরী চলে গিয়েছিল। শুনেছি, প্রায় ১৯ বছর পর জেনারেল এরশাদের আমলে ডাক্তার সাহেবের ছেলে মন্ত্রী হওয়ার পর ডাক্তার সাহেব নাকি চাকুরী ফিরে পেয়েছিলেন এবং ১৯ বছরের পুরো বেতন আদায় করে অবসরে যান।

দ্বিতীয় মামলাটি ছিল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠি নিয়ে। চিঠিটি ছিল এক পেশকারের ঘুষ খাওয়া নিয়ে। ভদ্রলোক ছিলেন মহকুমা হাকিমের প্রধান পেশকার। সমাজে তার খুব প্রভাব ছিল। তিনি পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। আর সংগে সংগে গ্রেফতারী পরওয়ানা। এই মামলাতেও আমি ফেণীতে কোন উকিল পাইনি। সব উকিলই ছিলেন পেশকার সাহেবের পক্ষে। পরে সমঝোতা হলে পেশকার সাহেব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।১৯৭৪ সালে আমি জনপদে ছিলাম। তখনকার দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। প্রথমটি হলো। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে যাচ্ছে। চীনের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসেন বাণিজ্য নিয়ে আলাপ করার জন্যে। খোন্দকার মোশতাক ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী। বিষয়টা ছিল খুবই গোপনীয়। জনপদ এই খবরটি প্রকাশ করে। খবরটি সংগ্রহ করেছিলাম আমি। লিখেছিলেন গীতিকার কেজি মোস্তফা সাহেব।তিনি তখন জনপদের কূটনৈতিক সংবাদদাতা। পরেরদিন সরকারী গোয়েন্দা জনপদ অফিসে এসে হাজির। খবরটি কে লিখেছেন তা জানার জন্যে তারা রিপোর্টের মুল কপিটি সীজ করে নিয়ে যান। আমি দেখলাম কেজি ভাই ফেঁসে যাচ্ছেন। গোয়েন্দাদের জানালাম খবরটি আমিই রিপোর্ট করেছি। হাতের লেখাটি শুধু কেজি সাহেবের। আমার উপর হুকুম জারী হলো আমি যেন রাজধানীর বাইরে কোথাও না যাই।প্রতিদিন সকালে গোয়েন্দা অফিসে হাজিরা দিতাম। তাদের প্রশ্ন ছিল খবরটি আমি কোথায় পেয়েছি। সরকারের ধারনা ছিল আমি খবরটি ফাঁস করে দিয়ে  ভারতীয় স্বার্থে কাজ করেছি। জনপদের মালিক ছিলেন তত্‍কালীন শিল্পমন্ত্রী কামারুজ্জামান সাহেব। খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। তিনিই আমাকে বংগবন্ধুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর আমি ক্ষমা চেয়ে রেহাই পাই।

পরের ঘটনাটি ছিল মাওলানা ভাসানীর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে। বায়তুল মোকাররমের এলাকা থেকে মাওলানা সাহেবকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সরকার বলছে মাওলানা সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়নি। অথচ মাওলানা সাহেবের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। পরে জানা গেল মাওলানা সাহেব সন্তোষে গৃহবন্দী। কিন্তু কেউ তাঁর সাথে দেখা করতে পারছেনা। পুলিশ বেস্টনীর কারনে সবাই সন্তোষ গিয়ে ফিরে আসছে। ফয়েজ ভাই বললেন, এরশাদ তুমি হুজুরের সাথে দেখা করে এসে একটি রিপোর্ট করো। যদি পারো কন্টিনেন্টালে খাওয়াবো। তখন হুজুরের মুরিদরাই শুধু তাঁর সাথে দেখা করতে পারতেন। আমি আর সৈয়দ জাফর দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। দুজনেই মুরিদ সেজে দেখা করতে গেলাম। মাথায় টুপি,পরনে ছিল মনে হয় লম্বা কুর্তা। অনেক গুলো পুলিশ পোস্ট অতিক্রম করে আমরা মাওলানা সাহেবের দেখা পেয়েছিলাম।হুজুর আমাদের চিনতে পেরেছিলেন। তিনি আমাদের অনেক কথাই বললেন। ফিরে এসে সৈয়দ জাফর হুজুরের ইন্টারভিউ লিখেছিল।আমি লিখেছিলাম কিভাবে দেখা করেছিলাম। আর যায় কোথায়? পরেরদিন আমার চাকুরীটা চলে গেল।

শুরুতেই বলেছি সরকার ও রাস্ট্রের সাথে সংবাদপত্র মত প্রকাশের বনিবনা কখনই হয়না। সবচেয়ে বড় গনতান্ত্রিক সরকারও চায়না জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলুক বা মত প্রকাশ করুক।( প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর, আমার দেশ )

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »

Older Posts »