জন মানসিকতা ও আদালতের রায় / এরশাদ মজুমদার
আমি সারা জীবন স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার মানুষ। কিছু বলার জন্যে বা লিখার জন্যে একুশ বছর বয়সে খবরের কাগজের কাজকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। রাস্ট্র ও সমাজের কারণে অনেক কথা মন খুলে বলতে পারিনি। পত্রিকা ও মন খুলে কিছু লিখতে দেয়না। পত্রিকাও সরকারকে ভয় করে। পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে, যা বলা যাচ্ছে তাও বলা যাবেনা। তাই আধা বা সিকি স্বাধীনতা নিয়েই কথা বলতে হয়। আমি নিজেও কাগজ বের করে স্বাধীন ভাবে লিখতে পারিনি। মানুষের নানা রকম বন্ধন। জীবনের বন্ধন, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা,সংসারের বন্ধন, রাষ্ট্রের বন্ধন। তাই মানুষ কখনই তেমন স্বাধীন ছিলনা, এখনও নেই। আল্লাহপাক বলেন, জালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, কিন্তু রাষ্ট্র বলে বিদ্রোহ বা বিপ্লব করলে ফাঁসী হবে। আমার মনে বহুদিনের প্রশ্ন, মানুষ বড় না রাষ্ট্র বড়? আমার মন বলে মানুষ বড়,কিন্তু রাষ্ট্র বলে আমি বড়। তবুও রাষ্ট্র মানুষকে ভয় করে। আর তাই রাষ্ট্র নিজেকে রক্ষা করার জন্যে বিভিন্ন রকম বাহিনী রাখে, অস্ত্র রাখে, আইন রাখে। সংবিধান বলে তুমিই সার্বভৌম। আল্লাহ সার্বভৌম নন। তোমার অধিকার রক্ষা করার জন্যে অনেক আইন করে দিয়েছি। সরকার বলে আমাকে মান্য করো, দেখবে তুমি পূর্ণাংগ স্বাধীন। অদৃশ্যকে না দেখেও কত বেশী ভয় করো। আর আমি দৃশ্যমান মহাশক্তিশালী রাষ্ট্র,আমাকে একটু মান্য করো। তা না হয় আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি। খুব ভাল ভাবে মনে রাখবে তুমি আমার স্রষ্টা হলেও আমি তোমার চেয়ে অনেক বড় ও শক্তিশালী। আর আমার কাজ ও দর্শণ হলো সত্যকে হত্যা করা। সত্য নয় ,বাস্তবতা শিখো। ইতিহাসের পাতা মেলে দেখো আমি কত ভালো ভালো মানুষকে হত্যা করেছি। চলমান বিশ্বে আমেরিকা এখন মহাশক্তিধর দেশ ও রাষ্ট্র। কবি লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন আমেরিকা জগতের এক নম্বর সন্ত্রাসী। তাতে আমেরিকার কিছু আসে যায়না । সন্ত্রাসী আমেরিকার দখলে হাজার হাজার আনবিক বোমা, সম্পদ ও মিথ্যা বলার জন্যে রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট আছে। বিশ্বব্যাপী তার রয়েছে লাখ লাখ তাবেদার। অথচ তার রয়েছে গণতন্ত্রের মুখোশ। বাংলাদেশ এখন আমেরিকার বড় তাবেদার। এদেশ প্রতিনিয়ত গণতন্ত্রের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। আমেরিকা ৬০এর দশকে বিশ্বব্যাপী সামরিক নেতাদের উসকানী দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমেরিকাই কমিউনিষ্ট গেরিলা নেতা চে গুয়েভারাকে হত্যা করে তাঁর লাশ বা কবর লুকিয়ে রেখেছিল। ইসলামিক গেরিলা নেতা লাদেনকে হত্যা করে তার লাশ সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে প্রচার করেছে। ৬০ এর দশকে আমেরিকা কমিউনিষ্ট ধ্বংসের জন্যে ইসলামকে ব্যবহার করেছে। এখন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে গণতন্ত্র ও কমিউনিষ্টদের ব্যবহার করছে। তথাকথিত গণতন্ত্রের উত্থানের পূর্বে জগতে সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন রোম, পারশ্য ও গ্রীক সম্রাটগণ। আজ তারা নেই। আমেরিকা নিশ্চয়ই এ ইতিহাস জানে। আমেরিকাকে মোকাবিলা করার জন্যে এখন চীনের উত্থান হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত শক্তি হলো আমেরিকা, ইউরোপ,ফ্রান্স। আমরা বাধ্য হয়ে বৃটেনকে সমর্থন করেছি। কারণ আমরা ছিলাম পরাধীন। দেশপ্রেমিক হিটলার পরাজিত ও মানবজাতির শত্রু। আজও তাঁর বন্ধুদের বিচারের জন্যে বিজয়ী শক্তি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হাজার বছর পূর্বে বিদেশী আর্যপুত্র রামের কাছে পরাজিত হয়ে ভুমিপুত্র রাবণ রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। রাম রাজা ও অবতারে পরিণত হয়েছেন। তিনি আজ পুজিত।
সত্যের সাথে মিথ্যার লড়াই শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে। শয়তানেরও যাত্রা শুরু হয়েছে একই সময়ে। শয়তানের কাজই হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করে অন্যায় ও মিথ্যার পথে পরিচালিত করা। শয়তানের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকার জন্যে আল্লাহপাক বারবার মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশ সহজে মানুষ মানতে চায়না। এক শ্রেণীর শাসক আছেন মুসলমান হলেও জালেম। নিজদেশের মানুষকে হত্যা করে, অত্যাচার করে ভীত ও বোবা করে রাখতে চায়।
মান জাতির পিতা হজরত আদমের(আ) দুই পুত্র। যিনি খোদা ভক্ত বা সত্যপন্থী তাঁকে হত্যা করেছেন যিনি শক্তিশালী। তাহলে শক্তির সাথে ন্যায় ও সত্যের লড়াই শুরু হয়েছে মানব জাতির জন্মলগ্নে। সে লড়াই আজও চলছে। তবে সত্য ও ন্যায়ের পরাজয় বা মৃত্যু কখনই হবেনা। সত্য হলো চিরঞ্জীব। কেয়ামত পর্যন্ত সত্যের মরণ নেই। তবে সব মানুষ সত্যকে চিনতে ও বুঝতে পারেনা। এথেন্সের সাধু সন্ত সত্যপ্রেমী সক্রেটিস বলেছিলেন, নিজেকে জানো বা চিনো। নো দাইসেল্ফ(Know thyself).আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, ‘মান আরাফা নাফসা, ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা’। নিজেকে জানতে বা চিনতে পারলেই প্রভু বা খোদা/রবকে চিনতে পারবে। যে অন্তরে আলো নেই সে অন্তর নিজেকে চিনতে পারেনা। ফলে খোদাকেও চিনতে পারেনা। জগতের প্রথম শহীদ কবি হাল্লাজ বলেছিলেন,‘ আনা আল হাক্ব’। আমিই সত্য বা (I am the truth)। সিংহাসন ত্যাগী রাজপুত্র গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, তোমরা আমাকে অনুসরণ করো,তাহলেই হবে। ইব্রাহীম বিন আদহাম সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন সত্যের সন্ধানে।
সক্রেটিসকে জীবন দিতে হয়েছিল সত্যকে রক্ষা করার জন্যে। আদালত জালেম রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্যে সক্রেটিসকে হত্যা করেছিলেন। আদালত তাঁকে বলেছিলেন আপনি যদি এথেন্স ত্যাগ করেন তাহলে আমরা আপনাকে মুক্ত করে দেব। জেলার তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন, তিনি রাজী হননি। তিনি বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর মাধ্যমে সত্যের মরণ হবেনা। সুতরাং আমার থাকা না থাকায় সত্যের কিছু আসে যায়না। এইতো মাত্র ক’দিন আগে আড়াই হাজার বছর পর সেই রায়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,ওই রায় সত্য বিরোধী ও ন্যায়ভ্রষ্ট। মনসুর হাল্লাজকে শরিয়ত বরখেলাফের অভিযোগে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়েছিল। বড়ই করুণ ছিল হাল্লাজের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দৃশ্য। শরীরের অংগ গুলো আগে কেটে ফেলা হয়। তারপর গলায় ছুরি চালানো হয়, কারো মতে ফাঁসি দেয়া হয়। এর পরে তেল ঢেলে দেহকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সে খলিফার আজ আর কারো মনে নেই। কিন্তু হাল্লাজের নাম এখন বিশ্ববাসী জানে। ইরাকে হাল্লাজের বিরাট রাজ প্রাসাদের মতো মাজার আছে। ইমামে আজম হজরত আবু হানিফাকে তখনকার খলিফা দীর্ঘ আট বছর জেলে আটক রেখে হত্যা করেছেন।
আপনারা সবাই বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের রাজবন্দীর জবানবন্দী পড়ুন। বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে নজরুলই প্রথম কবি ও সাংবাদিক জেলে গিয়েছিলেন। কবি নজরুল আজও আমাদের কাছে অবহেলিত। কারণ আমরা রাজশক্তির পূজারী। নোবেল বিজয়ী কবি ,জমিদার ও সওদাগর আজও মহা সম্মানিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বংগবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ৬৫ বছর পর সেই বহিষ্কার আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বংগবন্ধুকে বার বার মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী বা সরকার দ্রোহী হিসাবে বহু বছর জেল খেটেছেন। বৃটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যাঁরা স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে রাষ্ট্র বা সরকারদ্রোহী হিসাবে ফাঁসিতে জীবন দিয়েছেন তাঁরা আজ স্বাধীনতার বীর হিসাবে সম্মানিত। সে সময়েও আদালত ছিল, বিচারকও ছিলেন। তখনও আইন ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আইনের নতুন ব্যাখ্যা হয় এবং বিচারকেরা নতুন পরিস্থিতিতে নতুন বিচার করেন যা জনগণ অভিনন্দিত করে।। ইতিহাসেরও পরিবর্তন হয় ও নতুন ব্যাখ্যা হয়। ইংরেজরা বা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলা দখল করেছিল ষড়যন্ত্র করে। সনাতনধর্মীরা তাদের সমর্থন দিয়েছিল। নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে তাঁরা দেশদ্রোহী বানিয়ে হত্যা করে পুতুল নবাবকে ক্ষমতায় বসিয়ে তারা সোনার বাংলাকে দরিদ্র বাংলায় পরিণত করেছে( হান্টার ও দাদাভাই নওরোজীর বই পড়ুন)। সনাতনধর্মীদের সহযোগিতায় ইংরেজরা সারা ভারত দখল করেছিল। জালেম দুর্বৃত্ত ক্লাইভ আত্মহত্যা করে ইতিহাসের কাঠগড়ায় এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। পরবর্তী কালে সনাতনধর্মীরাই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিল, আর ইতিহাস রচিত হয়েছিল মুসলমানদের খলনায়ক বানিয়ে। বাংলাদেশেও বহু আরবী নামধারী শিক্ষিত লোক মুসলীম লীগকে ইংরেজের তাবেদার বানিয়েছে। চলমান ক্ষমতাশীন সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে প্রচার করে। এখন প্রতিদিন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশিত হচ্ছে।
ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই গণমানুষের মুক্তির কথা বলার কারণে রাসুলের(সা) পরম আত্মীয়রা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে বার বার। মহাসত্যকে রক্ষা করার জন্যে তিনি মাতৃভুমি ত্যাগ বা হিজরত করে মদীনা চলে যান। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। আল্লাহপাকের নবী রাসুলরা সবাই মিথ্যাপন্থীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, দেশত্যাগ করেছেন।ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে সত্যের শত্রুরা হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের নাম কেউ জানেনা বা মনে রাখেনা। কিন্তু তিন খলিফাকে জগতবাসী সম্মান করে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির কারণে হজরত আলীর(রা) কবর ৯০ বছর গোপনে ছিল। এখন সেই কবরে লাখ লাখ ভক্ত জিয়ারত করে থাকেন। আর হত্যাকারী বিপক্ষ শক্তির কথা কেউ জানেনা। মাত্র ৪৪ বছর আগে আমাদের মাতৃভুমি স্বাধীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে। এখনও শোষক, জালেম ও অত্যাচারী গণতন্ত্রের লেবাসধারীরা মানুষের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও সিভিল ডিক্টেটর আছেন। জগত বিখ্যাত সিভিল ও মিলিটারী ডিক্টেটরদের কথা আপনারা জানেন। শক্তি ও দমনই হলো আসকদের দর্শণ। জুলুমবাজরাই নিজেদের পক্ষে ইতিহাস রচনা করায়। ইতোমধ্যেই আমাদের ইতিহাস বিকৃত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এখন হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এমন কি ভুয়া সনদ দেখিয়ে অনেকেই সচীব হয়ে গেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে ,কিছু মুক্তিযোদ্ধার দাবীদার লোক মুজিব নগরের প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়না। তাঁরা বলেন মুজিবনগর সরকার কোন মুক্তিযুদ্ধই করেনি। মুক্তিযুদ্ধের উপ অধিনায়ক এ কে খোন্দকার একটা বই লিখে এখন নিন্দিত। অনেকে বলছেন,তিনি মুক্তিযুদ্ধই করেননি। এমন কি মুক্তিযুদ্ধের একজন অধিনায়ক জেনারেল জিয়াকে একদল লোক পাকিস্তানী চর বলে প্রচারনা চালাচ্ছে। মুজিব বাহিনী নামক একটি বাহিনী ছিল যাঁদের সাথে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের কোন সম্পর্ক ছিলনা। এঁরা দিল্লী সরকারের অধীনে ছিলেন। দিল্লীর ভয় ছিল বংগবন্ধু যদি পাকিস্তানের কারাগার থেকে না আসেন তাহলে বামপন্থীরা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধে দেশের কত সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, কতলোক মারা গেছে, কত নারী নির্যাতিত হয়েছেন আজ পর্যন্ত তা কোন সরকারই নির্ণয় করেনি বা নির্ণয় করতে চায়নি। যেদেশে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়না সেদেশের ইতিহাসতো বিকৃত থাকবেই। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়েই বিতর্ক শেষ হয়না। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও এক ধরনের দলদাসরা মনে করেন তাঁরা ছাড়া আর কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। চোখের দেখা মুক্তিযুদ্ধই এখন অচেনা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার হচ্ছে। এখনতো মুক্তিযুদ্ধ তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখন হলো চেতনার যুগ। আর চেতনা মানে আপনি ধর্মমুক্ত থাকবেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবেন, গণজাগরণ মঞ্চ করবেন, ব্লগার হয়ে ইসলাম, রাসুল(সা) ও আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে লিখবেন। আপনি মহাশক্তিশালী লতিফ সিদ্দিকীর মতো ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে ভারতে আশ্রয় নিবেন, যেমন আশ্রয় নিয়েছেন তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের গুন্ডা পান্ডারাও ভারতে আশ্রয় পায়। বহু অপরাধী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা লাভ করেছে। তারা গুন্ডা হলেও দলদাস। তাই তারা ক্ষমা পায়।
আমাদের দেশের আদালত সম্পর্কে জনসাধারন বা ভুক্তভোগীদের মত হলো, আদালত গরীব ও ক্ষমতাহীনদের জন্যে নয়। আদালত মানে বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা। আদালত মানে বছরের পর বছর টাকা ব্যয় করার জায়গা। আদালত মানে কালো টাকার লেনদেন। আদালত মানে হাট বাজারের মতো লোকে গিজগিজ করা। এ আদালতে বহুবার গিয়েছি। কখনও মানহানির মামলায়, কখনও সরকারী কর্মচারীর কর্তব্যকর্মে বাধা দেওয়া,কখনও রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্যে। এমন কি জুমাতুল বিদা’র দিন গ্রেফতার হয়ে আদালতে গিয়েছি। ছুটির দিন আদালত নেই। পরে জানতে পারলাম,একজন বিচারক আসবেন। ইফতারীর কয়েক মিনিট আগে জামিন পেয়েছিলাম।
বেশ কিছুকাল আগে, আদালত নিয়ে লিখেছিলাম যখন খায়রুল হক সাহেব প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে হক সাহেব একজন সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু বিচারপতি হিসাবে সুনাম কামাবার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। যেমন সুনাম ও সম্মান হয়েছিল, বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোর্শেদ, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ও বিচারপতি বদরুল হায়দার সাহেবের। এখন তেমন বিচারপতি আর নেই। পাকিস্তান আমলে কায়ানী সাহেব সুনাম কামিয়েছিলেন। একবার খবরের কাগজের মাধ্যমে জানতে পারলাম, খায়রুল হক সাহেব ইয়া আদলু, ইয়া আদলু বলতে বলতে আদালতে উঠেন। অথচ তিনি যে আদালতে বসেন তা আল্লাহর আদালত নয়। বিচার ব্যবস্থাও আল্লাহ নির্দেশিত পথে নয়। একটি আইনও আল্লাহর নয়। সব আইন হচ্ছে লর্ড ক্লাইভদের।
আদলু আল্লাহপাকের একটি গুণবাচক নাম। মানে তিনি বিচারকও। আল্লাহপাক মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যে অপরাধ করেছো তার হিসাব তোমাদের দেয়া হবে। দেখবে এতে এক জররাও ভুল থাকবেনা। ফেরেশতারা ছাড়াও তোমাদের অংগ প্রত্যংগই সাক্ষী দিবে তোমাদের কৃত কর্মের। তোমার অপরাধের কিতাব দেখেই নিজেই নিজের বিচার করতে পারবে। তোমাদের প্রতি এক বিন্দুও অবিচার করা হবেনা। জগতে বিচার ব্যবস্থা কি রকম হবে আর বিচারক কারা হবেন তার বর্ণনাও আলকোরাণে বর্ণিত আছে। আদল মানে ন্যায় বিচার। আল্লাহপাক বলেন, তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়নতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্কৃষ্ট ( সুরা নিসা ৪:৫৮)।
হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষী স্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায় বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হবে না। যদি তোমরা প্যাঁচালো কথা বলো অথবা পাশ কেটে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহতো তার সম্যক খবর রাখেন(সুরা নিসা ৪:১৩৫)। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেন,বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতী হবেন। আর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামী হবেন। জান্নাতী বিচারক হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি হক(সত্য) জেনে সেই মুতাবিক ফায়সালা করেন।যে ব্যক্তি হক জানা সত্বেও আদেশ দানের ক্ষেত্রে অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনিও জাহান্নামী হবেন। যে ব্যক্তি অজ্ঞতা অবস্থায় বিচার কার্য সম্পাদন করেন তিনিও জাহান্নামী হবেন। নবীজী(সা) আরও বলেন,বিচারক অন্যায় না করা পর্যন্ত আল্লাহপাক তাঁকে সাহায্য করেন। যখন বিচারক জালেম হয়ে যান তখন তাঁকে আল্লাহ সাহায্য করেন না।
আইন কানুন যতই শক্তিশালী হোক না কেন উপযুক্ত বিচারকের উপরই এর ন্যায় কার্যকারিতা নির্ভর করে। নবীজী(সা) হজরত আলীকে(রা) ইয়ামেনের বিচারক নিযুক্ত করলে হজরত আলী(রা) বলেছিলেন,হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন। অথচ আমার বয়স কম। বিচার সম্পর্কে আমার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই। তখন আল্লাহর রাসুল(সা) বললেন, আল্লাহতায়ালা অচিরেই তোমার অন্তরে হিদায়েতের নুর পয়দা করে দিবেন এবং তোমার যবানকে বিচারের বিষয়ে সুদৃঢ় করে দিবেন। হজরত আলী(রা) বলেন, এর পর থেকে কখনো আমি বিচার নিষ্পত্তির ব্যাপারে দ্বিধা সংশয়ে পড়িনি।
প্রিয় পাঠকগণ, আমাদের বিচার ব্যবস্থা ও বিচারক ও বিচারক নিয়োগকারীদের সম্পর্কে একবার ভাবুন। আল্লাহ, রাসুল(সা) ও কোরআনের পথে বা ন্যায়ের পথে আমরা কতটুকু আছি। এখানে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। আমাদের শাসক ও বিচারকরা বলবেন, আমাদের আদালত নয়। আইন ও আদালত তৈরি করেছে দখলদার বৃটিশরা তাদের দখলদারীত্বকে শক্তিশালী করার জন্যে। সে আইন আজও জারী আছে। শাসক আর রাজার হুকুমই আইন। ইংল্যান্ডর রাজা গীর্জায় প্রবেশ করে বহু যাজককে হত্যা করেছেন। আমাদের দেশেও আদালত আক্রান্ত হয়। এসেম্বলীতে স্পীকারকে হত্যা করা হয়। ইংল্যান্ডের রাজাও স্পীকারকে হত্যা করেছেন।
আমরা দাবী করি বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ। কারণ অধিবাসীদের ৯০ ভাগ মুসলমান। এদেশে কোন আইনই কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক নয়। ভারতে খোরপোষের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট কোরাণের নির্দেশ মোতাবেক রায় দিয়েছেন। আর বাংলাদেশে খোরপোষ ও ফতোয়ার মামলায় আদালত কোরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলাদেশে আদালত ও বিচারকগণ সংবিধান মোতাবেক রায় দেন। আর সংবিধান মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করেছে, আল্লাহকে নয়। এদেশের একজন কবি আজানের বিরুদ্ধে কবিতা লেখেন, সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করেন। আখেরাতেই দেখা যাবে কে আল্লাহর পথে আছেন, আর কে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে আছেন। হে মজলুমগণ, তোমরা ধৈর্য ধারন করো। মজলুমের আহাজারিতে খোদার আরশ কেঁপে উঠে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com