Feeds:
Posts
Comments

Archive for October, 2014


জন মানসিকতা ও আদালতের রায় / এরশাদ মজুমদার

আমি সারা জীবন স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার মানুষ। কিছু বলার জন্যে বা লিখার জন্যে একুশ বছর বয়সে খবরের কাগজের কাজকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। রাস্ট্র ও সমাজের কারণে অনেক কথা মন খুলে বলতে পারিনি। পত্রিকা ও মন খুলে কিছু লিখতে দেয়না। পত্রিকাও সরকারকে ভয় করে। পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে, যা বলা যাচ্ছে তাও বলা যাবেনা। তাই আধা বা সিকি স্বাধীনতা নিয়েই কথা বলতে হয়। আমি নিজেও কাগজ বের করে স্বাধীন ভাবে লিখতে পারিনি। মানুষের নানা রকম বন্ধন। জীবনের বন্ধন, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা,সংসারের বন্ধন, রাষ্ট্রের বন্ধন। তাই মানুষ কখনই তেমন স্বাধীন ছিলনা, এখনও নেই। আল্লাহপাক বলেন, জালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, কিন্তু রাষ্ট্র বলে বিদ্রোহ বা বিপ্লব করলে ফাঁসী হবে। আমার মনে বহুদিনের প্রশ্ন, মানুষ বড় না রাষ্ট্র বড়? আমার মন বলে মানুষ বড়,কিন্তু রাষ্ট্র বলে আমি বড়। তবুও রাষ্ট্র মানুষকে ভয় করে। আর তাই রাষ্ট্র নিজেকে রক্ষা করার জন্যে বিভিন্ন রকম বাহিনী রাখে, অস্ত্র রাখে, আইন রাখে। সংবিধান বলে তুমিই সার্বভৌম। আল্লাহ সার্বভৌম নন। তোমার অধিকার রক্ষা করার জন্যে অনেক আইন করে দিয়েছি। সরকার বলে আমাকে মান্য করো, দেখবে তুমি পূর্ণাংগ স্বাধীন। অদৃশ্যকে না দেখেও কত বেশী ভয় করো। আর আমি দৃশ্যমান মহাশক্তিশালী রাষ্ট্র,আমাকে একটু মান্য করো। তা না হয় আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি। খুব ভাল ভাবে মনে রাখবে তুমি আমার স্রষ্টা হলেও আমি তোমার চেয়ে অনেক বড় ও শক্তিশালী। আর আমার কাজ ও দর্শণ হলো সত্যকে হত্যা করা। সত্য নয় ,বাস্তবতা শিখো। ইতিহাসের পাতা মেলে দেখো আমি কত ভালো ভালো মানুষকে হত্যা করেছি। চলমান বিশ্বে আমেরিকা এখন মহাশক্তিধর দেশ ও রাষ্ট্র। কবি লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন আমেরিকা জগতের এক নম্বর সন্ত্রাসী। তাতে আমেরিকার কিছু আসে যায়না । সন্ত্রাসী আমেরিকার দখলে হাজার হাজার আনবিক বোমা, সম্পদ ও মিথ্যা বলার জন্যে রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট আছে। বিশ্বব্যাপী তার রয়েছে লাখ লাখ তাবেদার। অথচ তার রয়েছে গণতন্ত্রের মুখোশ। বাংলাদেশ এখন আমেরিকার বড় তাবেদার। এদেশ প্রতিনিয়ত গণতন্ত্রের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। আমেরিকা ৬০এর দশকে বিশ্বব্যাপী সামরিক নেতাদের উসকানী দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমেরিকাই কমিউনিষ্ট গেরিলা নেতা চে গুয়েভারাকে হত্যা করে তাঁর লাশ বা কবর লুকিয়ে রেখেছিল। ইসলামিক গেরিলা নেতা লাদেনকে হত্যা করে তার লাশ সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে প্রচার করেছে। ৬০ এর দশকে আমেরিকা কমিউনিষ্ট ধ্বংসের জন্যে ইসলামকে ব্যবহার করেছে। এখন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে গণতন্ত্র ও কমিউনিষ্টদের ব্যবহার করছে। তথাকথিত গণতন্ত্রের উত্থানের পূর্বে জগতে সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন রোম, পারশ্য ও গ্রীক সম্রাটগণ। আজ তারা নেই। আমেরিকা নিশ্চয়ই এ ইতিহাস জানে। আমেরিকাকে মোকাবিলা করার জন্যে এখন চীনের উত্থান হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত শক্তি হলো আমেরিকা, ইউরোপ,ফ্রান্স। আমরা বাধ্য হয়ে বৃটেনকে সমর্থন করেছি। কারণ আমরা ছিলাম পরাধীন। দেশপ্রেমিক হিটলার পরাজিত ও মানবজাতির শত্রু। আজও তাঁর বন্ধুদের বিচারের জন্যে বিজয়ী শক্তি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হাজার বছর পূর্বে বিদেশী আর্যপুত্র রামের কাছে পরাজিত হয়ে ভুমিপুত্র রাবণ রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। রাম রাজা ও অবতারে পরিণত হয়েছেন। তিনি আজ পুজিত।
সত্যের সাথে মিথ্যার লড়াই শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে। শয়তানেরও যাত্রা শুরু হয়েছে একই সময়ে। শয়তানের কাজই হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করে অন্যায় ও মিথ্যার পথে পরিচালিত করা। শয়তানের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকার জন্যে আল্লাহপাক বারবার মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশ সহজে মানুষ মানতে চায়না। এক শ্রেণীর শাসক আছেন মুসলমান হলেও জালেম। নিজদেশের মানুষকে হত্যা করে, অত্যাচার করে ভীত ও বোবা করে রাখতে চায়।
মান জাতির পিতা হজরত আদমের(আ) দুই পুত্র। যিনি খোদা ভক্ত বা সত্যপন্থী তাঁকে হত্যা করেছেন যিনি শক্তিশালী। তাহলে শক্তির সাথে ন্যায় ও সত্যের লড়াই শুরু হয়েছে মানব জাতির জন্মলগ্নে। সে লড়াই আজও চলছে। তবে সত্য ও ন্যায়ের পরাজয় বা মৃত্যু কখনই হবেনা। সত্য হলো চিরঞ্জীব। কেয়ামত পর্যন্ত সত্যের মরণ নেই। তবে সব মানুষ সত্যকে চিনতে ও বুঝতে পারেনা। এথেন্সের সাধু সন্ত সত্যপ্রেমী সক্রেটিস বলেছিলেন, নিজেকে জানো বা চিনো। নো দাইসেল্ফ(Know thyself).আল্লাহর রাসুল(সা) বলেছেন, ‘মান আরাফা নাফসা, ফাক্বাদ আরাফা রাব্বা’। নিজেকে জানতে বা চিনতে পারলেই প্রভু বা খোদা/রবকে চিনতে পারবে। যে অন্তরে আলো নেই সে অন্তর নিজেকে চিনতে পারেনা। ফলে খোদাকেও চিনতে পারেনা। জগতের প্রথম শহীদ কবি হাল্লাজ বলেছিলেন,‘ আনা আল হাক্ব’। আমিই সত্য বা (I am the truth)। সিংহাসন ত্যাগী রাজপুত্র গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, তোমরা আমাকে অনুসরণ করো,তাহলেই হবে। ইব্রাহীম বিন আদহাম সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন সত্যের সন্ধানে।
সক্রেটিসকে জীবন দিতে হয়েছিল সত্যকে রক্ষা করার জন্যে। আদালত জালেম রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্যে সক্রেটিসকে হত্যা করেছিলেন। আদালত তাঁকে বলেছিলেন আপনি যদি এথেন্স ত্যাগ করেন তাহলে আমরা আপনাকে মুক্ত করে দেব। জেলার তাঁকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন, তিনি রাজী হননি। তিনি বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর মাধ্যমে সত্যের মরণ হবেনা। সুতরাং আমার থাকা না থাকায় সত্যের কিছু আসে যায়না। এইতো মাত্র ক’দিন আগে আড়াই হাজার বছর পর সেই রায়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,ওই রায় সত্য বিরোধী ও ন্যায়ভ্রষ্ট। মনসুর হাল্লাজকে শরিয়ত বরখেলাফের অভিযোগে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়েছিল। বড়ই করুণ ছিল হাল্লাজের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দৃশ্য। শরীরের অংগ গুলো আগে কেটে ফেলা হয়। তারপর গলায় ছুরি চালানো হয়, কারো মতে ফাঁসি দেয়া হয়। এর পরে তেল ঢেলে দেহকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সে খলিফার আজ আর কারো মনে নেই। কিন্তু হাল্লাজের নাম এখন বিশ্ববাসী জানে। ইরাকে হাল্লাজের বিরাট রাজ প্রাসাদের মতো মাজার আছে। ইমামে আজম হজরত আবু হানিফাকে তখনকার খলিফা দীর্ঘ আট বছর জেলে আটক রেখে হত্যা করেছেন।
আপনারা সবাই বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের রাজবন্দীর জবানবন্দী পড়ুন। বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে নজরুলই প্রথম কবি ও সাংবাদিক জেলে গিয়েছিলেন। কবি নজরুল আজও আমাদের কাছে অবহেলিত। কারণ আমরা রাজশক্তির পূজারী। নোবেল বিজয়ী কবি ,জমিদার ও সওদাগর আজও মহা সম্মানিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বংগবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ৬৫ বছর পর সেই বহিষ্কার আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বংগবন্ধুকে বার বার মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী বা সরকার দ্রোহী হিসাবে বহু বছর জেল খেটেছেন। বৃটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যাঁরা স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে রাষ্ট্র বা সরকারদ্রোহী হিসাবে ফাঁসিতে জীবন দিয়েছেন তাঁরা আজ স্বাধীনতার বীর হিসাবে সম্মানিত। সে সময়েও আদালত ছিল, বিচারকও ছিলেন। তখনও আইন ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আইনের নতুন ব্যাখ্যা হয় এবং বিচারকেরা নতুন পরিস্থিতিতে নতুন বিচার করেন যা জনগণ অভিনন্দিত করে।। ইতিহাসেরও পরিবর্তন হয় ও নতুন ব্যাখ্যা হয়। ইংরেজরা বা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলা দখল করেছিল ষড়যন্ত্র করে। সনাতনধর্মীরা তাদের সমর্থন দিয়েছিল। নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে তাঁরা দেশদ্রোহী বানিয়ে হত্যা করে পুতুল নবাবকে ক্ষমতায় বসিয়ে তারা সোনার বাংলাকে দরিদ্র বাংলায় পরিণত করেছে( হান্টার ও দাদাভাই নওরোজীর বই পড়ুন)। সনাতনধর্মীদের সহযোগিতায় ইংরেজরা সারা ভারত দখল করেছিল। জালেম দুর্বৃত্ত ক্লাইভ আত্মহত্যা করে ইতিহাসের কাঠগড়ায় এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। পরবর্তী কালে সনাতনধর্মীরাই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিল, আর ইতিহাস রচিত হয়েছিল মুসলমানদের খলনায়ক বানিয়ে। বাংলাদেশেও বহু আরবী নামধারী শিক্ষিত লোক মুসলীম লীগকে ইংরেজের তাবেদার বানিয়েছে। চলমান ক্ষমতাশীন সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে প্রচার করে। এখন প্রতিদিন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশিত হচ্ছে।

ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই গণমানুষের মুক্তির কথা বলার কারণে রাসুলের(সা) পরম আত্মীয়রা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে বার বার। মহাসত্যকে রক্ষা করার জন্যে তিনি মাতৃভুমি ত্যাগ বা হিজরত করে মদীনা চলে যান। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। আল্লাহপাকের নবী রাসুলরা সবাই মিথ্যাপন্থীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, দেশত্যাগ করেছেন।ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে সত্যের শত্রুরা হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের নাম কেউ জানেনা বা মনে রাখেনা। কিন্তু তিন খলিফাকে জগতবাসী সম্মান করে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির কারণে হজরত আলীর(রা) কবর ৯০ বছর গোপনে ছিল। এখন সেই কবরে লাখ লাখ ভক্ত জিয়ারত করে থাকেন। আর হত্যাকারী বিপক্ষ শক্তির কথা কেউ জানেনা। মাত্র ৪৪ বছর আগে আমাদের মাতৃভুমি স্বাধীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে। এখনও শোষক, জালেম ও অত্যাচারী গণতন্ত্রের লেবাসধারীরা মানুষের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও সিভিল ডিক্টেটর আছেন। জগত বিখ্যাত সিভিল ও মিলিটারী ডিক্টেটরদের কথা আপনারা জানেন। শক্তি ও দমনই হলো আসকদের দর্শণ। জুলুমবাজরাই নিজেদের পক্ষে ইতিহাস রচনা করায়। ইতোমধ্যেই আমাদের ইতিহাস বিকৃত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এখন হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এমন কি ভুয়া সনদ দেখিয়ে অনেকেই সচীব হয়ে গেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে ,কিছু মুক্তিযোদ্ধার দাবীদার লোক মুজিব নগরের প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়না। তাঁরা বলেন মুজিবনগর সরকার কোন মুক্তিযুদ্ধই করেনি। মুক্তিযুদ্ধের উপ অধিনায়ক এ কে খোন্দকার একটা বই লিখে এখন নিন্দিত। অনেকে বলছেন,তিনি মুক্তিযুদ্ধই করেননি। এমন কি মুক্তিযুদ্ধের একজন অধিনায়ক জেনারেল জিয়াকে একদল লোক পাকিস্তানী চর বলে প্রচারনা চালাচ্ছে। মুজিব বাহিনী নামক একটি বাহিনী ছিল যাঁদের সাথে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের কোন সম্পর্ক ছিলনা। এঁরা দিল্লী সরকারের অধীনে ছিলেন। দিল্লীর ভয় ছিল বংগবন্ধু যদি পাকিস্তানের কারাগার থেকে না আসেন তাহলে বামপন্থীরা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধে দেশের কত সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, কতলোক মারা গেছে, কত নারী নির্যাতিত হয়েছেন আজ পর্যন্ত তা কোন সরকারই নির্ণয় করেনি বা নির্ণয় করতে চায়নি। যেদেশে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়না সেদেশের ইতিহাসতো বিকৃত থাকবেই। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়েই বিতর্ক শেষ হয়না। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও এক ধরনের দলদাসরা মনে করেন তাঁরা ছাড়া আর কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। চোখের দেখা মুক্তিযুদ্ধই এখন অচেনা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার হচ্ছে। এখনতো মুক্তিযুদ্ধ তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখন হলো চেতনার যুগ। আর চেতনা মানে আপনি ধর্মমুক্ত থাকবেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবেন, গণজাগরণ মঞ্চ করবেন, ব্লগার হয়ে ইসলাম, রাসুল(সা) ও আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে লিখবেন। আপনি মহাশক্তিশালী লতিফ সিদ্দিকীর মতো ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে ভারতে আশ্রয় নিবেন, যেমন আশ্রয় নিয়েছেন তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের গুন্ডা পান্ডারাও ভারতে আশ্রয় পায়। বহু অপরাধী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা লাভ করেছে। তারা গুন্ডা হলেও দলদাস। তাই তারা ক্ষমা পায়।
আমাদের দেশের আদালত সম্পর্কে জনসাধারন বা ভুক্তভোগীদের মত হলো, আদালত গরীব ও ক্ষমতাহীনদের জন্যে নয়। আদালত মানে বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা। আদালত মানে বছরের পর বছর টাকা ব্যয় করার জায়গা। আদালত মানে কালো টাকার লেনদেন। আদালত মানে হাট বাজারের মতো লোকে গিজগিজ করা। এ আদালতে বহুবার গিয়েছি। কখনও মানহানির মামলায়, কখনও সরকারী কর্মচারীর কর্তব্যকর্মে বাধা দেওয়া,কখনও রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্যে। এমন কি জুমাতুল বিদা’র দিন গ্রেফতার হয়ে আদালতে গিয়েছি। ছুটির দিন আদালত নেই। পরে জানতে পারলাম,একজন বিচারক আসবেন। ইফতারীর কয়েক মিনিট আগে জামিন পেয়েছিলাম।
বেশ কিছুকাল আগে, আদালত নিয়ে লিখেছিলাম যখন খায়রুল হক সাহেব প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে হক সাহেব একজন সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু বিচারপতি হিসাবে সুনাম কামাবার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। যেমন সুনাম ও সম্মান হয়েছিল, বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোর্শেদ, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ও বিচারপতি বদরুল হায়দার সাহেবের। এখন তেমন বিচারপতি আর নেই। পাকিস্তান আমলে কায়ানী সাহেব সুনাম কামিয়েছিলেন। একবার খবরের কাগজের মাধ্যমে জানতে পারলাম, খায়রুল হক সাহেব ইয়া আদলু, ইয়া আদলু বলতে বলতে আদালতে উঠেন। অথচ তিনি যে আদালতে বসেন তা আল্লাহর আদালত নয়। বিচার ব্যবস্থাও আল্লাহ নির্দেশিত পথে নয়। একটি আইনও আল্লাহর নয়। সব আইন হচ্ছে লর্ড ক্লাইভদের।
আদলু আল্লাহপাকের একটি গুণবাচক নাম। মানে তিনি বিচারকও। আল্লাহপাক মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যে অপরাধ করেছো তার হিসাব তোমাদের দেয়া হবে। দেখবে এতে এক জররাও ভুল থাকবেনা। ফেরেশতারা ছাড়াও তোমাদের অংগ প্রত্যংগই সাক্ষী দিবে তোমাদের কৃত কর্মের। তোমার অপরাধের কিতাব দেখেই নিজেই নিজের বিচার করতে পারবে। তোমাদের প্রতি এক বিন্দুও অবিচার করা হবেনা। জগতে বিচার ব্যবস্থা কি রকম হবে আর বিচারক কারা হবেন তার বর্ণনাও আলকোরাণে বর্ণিত আছে। আদল মানে ন্যায় বিচার। আল্লাহপাক বলেন, তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়নতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্‍কৃষ্ট ( সুরা নিসা ৪:৫৮)।
হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষী স্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায় বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হবে না। যদি তোমরা প্যাঁচালো কথা বলো অথবা পাশ কেটে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহতো তার সম্যক খবর রাখেন(সুরা নিসা ৪:১৩৫)। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেন,বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতী হবেন। আর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামী হবেন। জান্নাতী বিচারক হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি হক(সত্য) জেনে সেই মুতাবিক ফায়সালা করেন।যে ব্যক্তি হক জানা সত্বেও আদেশ দানের ক্ষেত্রে অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনিও জাহান্নামী হবেন। যে ব্যক্তি অজ্ঞতা অবস্থায় বিচার কার্য সম্পাদন করেন তিনিও জাহান্নামী হবেন। নবীজী(সা) আরও বলেন,বিচারক অন্যায় না করা পর্যন্ত আল্লাহপাক তাঁকে সাহায্য করেন। যখন বিচারক জালেম হয়ে যান তখন তাঁকে আল্লাহ সাহায্য করেন না।
আইন কানুন যতই শক্তিশালী হোক না কেন উপযুক্ত বিচারকের উপরই এর ন্যায় কার্যকারিতা নির্ভর করে। নবীজী(সা) হজরত আলীকে(রা) ইয়ামেনের বিচারক নিযুক্ত করলে হজরত আলী(রা) বলেছিলেন,হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন। অথচ আমার বয়স কম। বিচার সম্পর্কে আমার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই। তখন আল্লাহর রাসুল(সা) বললেন, আল্লাহতায়ালা অচিরেই তোমার অন্তরে হিদায়েতের নুর পয়দা করে দিবেন এবং তোমার যবানকে বিচারের বিষয়ে সুদৃঢ় করে দিবেন। হজরত আলী(রা) বলেন, এর পর থেকে কখনো আমি বিচার নিষ্পত্তির ব্যাপারে দ্বিধা সংশয়ে পড়িনি।
প্রিয় পাঠকগণ, আমাদের বিচার ব্যবস্থা ও বিচারক ও বিচারক নিয়োগকারীদের সম্পর্কে একবার ভাবুন। আল্লাহ, রাসুল(সা) ও কোরআনের পথে বা ন্যায়ের পথে আমরা কতটুকু আছি। এখানে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। আমাদের শাসক ও বিচারকরা বলবেন, আমাদের আদালত নয়। আইন ও আদালত তৈরি করেছে দখলদার বৃটিশরা তাদের দখলদারীত্বকে শক্তিশালী করার জন্যে। সে আইন আজও জারী আছে। শাসক আর রাজার হুকুমই আইন। ইংল্যান্ডর রাজা গীর্জায় প্রবেশ করে বহু যাজককে হত্যা করেছেন। আমাদের দেশেও আদালত আক্রান্ত হয়। এসেম্বলীতে স্পীকারকে হত্যা করা হয়। ইংল্যান্ডের রাজাও স্পীকারকে হত্যা করেছেন।
আমরা দাবী করি বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ। কারণ অধিবাসীদের ৯০ ভাগ মুসলমান। এদেশে কোন আইনই কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক নয়। ভারতে খোরপোষের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট কোরাণের নির্দেশ মোতাবেক রায় দিয়েছেন। আর বাংলাদেশে খোরপোষ ও ফতোয়ার মামলায় আদালত কোরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলাদেশে আদালত ও বিচারকগণ সংবিধান মোতাবেক রায় দেন। আর সংবিধান মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করেছে, আল্লাহকে নয়। এদেশের একজন কবি আজানের বিরুদ্ধে কবিতা লেখেন, সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করেন। আখেরাতেই দেখা যাবে কে আল্লাহর পথে আছেন, আর কে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে আছেন। হে মজলুমগণ, তোমরা ধৈর্য ধারন করো। মজলুমের আহাজারিতে খোদার আরশ কেঁপে উঠে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

Read Full Post »

সকালবেলা ৯৩


সকালবেলা ৯৩

আগামী মার্চের ৮ আরিখে আমি ৭৫ বছরে পড়বো। ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে আমি জগতে এসেছি। তার আগে কয়েক মাস আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম। তারও আগে আমি ছিলাম রূহের জগতে । সেটা ছিল নুরের জগত। তারপর মায়ের অন্ধকার গর্ভে। আর এখন আলোহীন এ জগতে। কখন ফিরে যাবো এ ভাবনায় বিভোর আমি।
শুধু ভাবি এখানে আমার কি কাজ? বড়ই একাকী। A lone walker on a busy street.চারিদিকে এক বিকট চিত্‍কার। আর আমি শব্দহীনতায় নির্জনে বাঁচি। আমি এক গৃহহিন গৃহী। ঘর আছে, তবু ঘর নেই। জন আছে তবু জন নেই। আমার যখন ১১ বছর তখন আমার মা জগতের মায়া ছেড়ে চলে যান। ২৮ বছরে বাবা চলে যান। আমার জন্যে রেখে যান ৫ ভাই ৪ বোন। সবার ছোট ছিল নুর আহমদ। মা যখন মারা যান তখন নুরু ছিল এক দেড় বছরের। সেই নুরুই আমাকে পেছনে ফেলে চলে গেল ১৯৯৬ সালে। তার একমাত্র ছেলে নিয়াজ, বুয়েটের শ্রেষ্ঠতম ছাত্র নিয়াজ আহমদ সেও চলে গেল ২০০০ সালের এপ্রিলে।
আমি এখন একা হলেই ভাবি এখন এখানে আমার কি কাজ? এ লম্বা জীবনে মানে কি? আমার নবীজী ইমামুল মোরসালীন জগতের রহমত দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন ৬৩ বছর বয়সে আদিষ্ট সকল কাজ শেষ করে। আর আমি ৭৫ হতে চলেছি। ২০০৮ সালে হজ্ব করতে গেলে কোন এক মধ্যরাতে কে যেন আমায় ডেকে বললো ‘সীমা অতিক্রম কর’। আকাশ থেকে একটি সাদা কাপড় নেমে এসেছিল। আমি তা ধরতে পারিনি। সাদা কাপড় আবার কখন নেমে আসবে তার আশায় বসে আছি।
আমি কখনই তেমন করে দারিদ্র দেখিনি। সব সময় মনে হতো এখন যা নেই তা একটু পরেই হয়ে যাবে। যা আজ নেই তা কাল হয়ে যাবে। কোন কিছু করার জন্যে আমি কখনই হণ্যে হয়ে চেষ্টা করিনি। তবু হয়ে যেতো। বাপের বড়ছেলে তাই আদর পেয়েছি সীমাহীন। পরের ভাই বোনেরা তেমন আদর পায়নি বলেই মনে হয়েছে। ছাত্র ভাল ছিলাম, কিন্তু পড়ালেখা করতাম না। তবুই শিক্ষকরা আমায় খুবই ভালবাসতেন।
আমি প্রাইমারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি ১৯৪৬ সালে ফেণী মডেল স্কুলে। তখন এটাকে বারিক মিয়া সাহেবের স্কুল বলা হতো। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী ছিলেন। ফেণী শহরের হাজারী পাড়ার মুন্সীবাড়ি ছিল তাঁর বাড়ি। পুরো পরিবারটিই ছিল শিক্ষিত পরিবার। গোবিন্দপুরের কাজী আবদুল গফুর ছিলেন স্কুলের মূল প্রাণ। তিনিই স্কুল চালাতেন। খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। গোবিন্দপুরের বৈদ্য বাড়ি ছিল আমার বড়ফুফু আছিয়া খাতুনের শ্বশুর বাড়ি। আমার ফুফার নাম ছিল মাওলানা ইউসুফ আলী।
আমার বড় জেঠার নাম ইউসুফ আলী মজুমদার। দাদার নাম ইয়াকুব আলী মজুমদার। পিজার নাম (দাদার বাপের নাম) মনসুর আলী। দাদার দাদার নাম আতাউল্লাহ মজুমদার। দাদার গ্রামের বাড়ি ছিল বন্দুয়া ইউনিয়নের পেঁচিবাড়িয়া গ্রামের ননু মন্দার(আমজাদ আলী মজুমদার বাড়ি।

Read Full Post »


আল্লাহপাকই মানব জাতির জন্যে দিন ক্ষণ মাস বছর ও রাতদিন তৈরি করেছেন। মানুষকে দিন রাত্রির জ্ঞান দান করেছেন। এই জ্ঞান দ্বারাই মানুষ দিনক্ষণ গণনা শিখেছে। ইতিহাস রচনা করা শিখেছে। মুসলমান জ্ঞাণী গুণী ও ইতিহাসবিদগণ মানব জাতিকে ইতিহাস বিজ্ঞানের জ্ঞান দান করেছেন। ভারতে ইতিহাস বিজ্ঞানের জ্ঞান ও চর্চা নিয়ে এসেছেন মুসলমানেরা। বিশেষ করে মোঘল যুগে বিজ্ঞান সম্মত ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছে। স্বয়ং জওহারলাল নেহেরু এ কথা বলেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ উদ্বোধন করার সময় প্রিন্স চার্লস বলেছিলেন, মুসলমানেরাই বৃটেন সহ ইউরোপে জ্ঞানের আলো নিয়ে গেছে। দিন বা তারিখের নিজস্ব কোন গুণ নেই। ঘটনা প্রবাহ দিন বা রাত্রিকে স্মরণীয় করে রাখে। তাই এসব দিন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। পবিত্র কোরআন নাজিলের দিনক্ষণ স্মরণীয় হয়ে আছে কোরআনের কারণে।
আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করি। কারণ তাঁরা নিজেদের জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। এক সময় মুসলমানদের মুক্তির জন্যে মুসলীম লীগ সংগ্রাম করেছে। তাই ইতিহাসে মুসলীম লীগ স্থান করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখার কারণে ইতিহাসে দলটি দৃঢ অবস্থান করে নিয়েছে। তাই বংগবন্ধুর জন্মও মৃত্যু দিবস পালন করা হয়। একই ভাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বা পাঠ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজেকে অমর করে করে রেখেছেন। একই ভাবে জিন্নাহ সাহেব ও গান্ধীজী ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ইতিহাসে নিন্দিত ব্যক্তিও আছেন, যেমন জেনারেল মীরজাফর আলী খান ও ক্লাইভ। লর্ড ক্লাইভ নবাবের কোষাগার লুন্ঠন করে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন। কারবালার যুদ্ধের কারণে খলিফা ইয়াজিদ একজন মহানিন্দিত ব্যক্তি হিসাবে স্থান পেয়েছে।
ইতিহাসের এইদিনে ১৯৪০ সালে হিটলার ও মুসোলিনী ফ্লোরেন্সে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এই দুজনই ছিলেন জগত বিখ্যাত স্বেচ্ছাচারী শাসক। ১৯৪৮ সালের এইদিনে ইজরাইল তার রাষ্ট্রীয় পতাকা ডিজাইন অনুমোদন দেয়। এই তারিখেই ১৯৪৯ সালে ইহুদীবাদী নেতা নেতানিয়াহুর জন্ম হয়েছে। ১৯৪৫ সালের এইদিনে ফরাসী দেশের নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেছেন।
ইতিহাসের কারণেই আমরা অতীতের কথা জানতে পারি। তবে আমরা যে ইতিহাস জানি তা হলো বিজয়ীর ইতিহাস। রাজার ধর্মই জনগণের ধর্মে পরিণত হয়েছে। রাজারাই কবি শিল্পী সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদদের রাজার পক্ষে ইতিহাস রচনা করতে বাধ্য করে থাকে। যেমন মোঘল সম্রাট আওরংজেব নাকি হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন বলে একশ্রেণীর ঐতিহাসিক লিখে গেছেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন দরবেশ সম্রাট। সেলাই করে আর হাতে লিখে কোরআনের কপি করতেন এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি সারা ভারতে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্যে টাকা বরাদ্দ করেছেন। অপরদিকে বাদশাহ আকবর দ্বীনে ইলাহী চালু করে সনাতনধর্মীদের কাছে প্রিয় হয়েছে আর মুসলমানদের কাছে নিন্দিত হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে আবু জেহেল ও আবু লাহাব দুজন মহানিন্দিত ব্যক্তি।
অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, ইতিহাস কখনই নিরপেক্ষ হয়না। ত্যাগী ইতিহাসবিদ, কবি শিল্পী, সাহিত্যিকরা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিদেশে অবস্থান করে সত্য ইতিহাস তৈরি করে রেখে যান আগামী দিনের সত্যান্বেষীদের জন্যে। আবার অনেকেই বলেন, সমকালে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করা যায়না। যেমন, নবাব সিরাজ উদ দৌলার ইতিহাস। বেশ কয়েকজন সনাতনধর্মী ইতিহাসবিদ ও ইংরেজ সিরাজকে কলংকিত করে ইতিহাস রচনা করেছেন। অনেক কবি সাহিত্যিকও নবাবের বিরুদ্ধে কবিতা ও সাহিত্য রচনা করেছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস চাপা পড়েনি। মুসলমান খলিফাদের(কার্যত: বাদশাহ) আমলে বহু ইসলামিক পন্ডিত, আলেম ও স্কলারদের নির্যাতন সহ্য করে শহীদ হতে হয়েছে। এমন কি প্রতিপক্ষের আক্রোশ থেকে রক্ষা করার জন্যে জ্ঞানের দুয়ার হজরত আলীর(রা) কবর বা মকবরাকে ৯০ বছর লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। আপনারা আসাদুল্লাহ হজরত আলীর(রা) ভাষন গ্রন্থ নাহজুল বালাগা পড়তে পারেন তাঁর জ্ঞানের গভীরতা জানার জন্যে। আমাদের মানে হানাফী মজহাবের ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার জীবনী পড়ুন। তখনকার মুসলমান খলিফা তাঁকে নির্যাতন হত্যা করেছেন। ইতিহাসের প্রথম মরমী কবি মনসুর হাল্লাজকেও হত্যা করেছেন তখনকার খলিফা। যদিও খলিফার মা হাল্লাজের পক্ষ হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। বলা হয় শুধুমাত্র শরিয়ত রক্ষা করার জন্যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে ইংল্যান্ডের রাজা অনেক ধর্মযাজককে হত্যা করেছেন। একই কারণে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকেও হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে কোটি কোটি মানুষকে জগতের ক্ষমতাবানরা। মানবজাতির ইতিহাস এভাবেই কলংকিত হয়ে আছে।
যে ভারত মুসলমান শাসকগণ শাসন করেছেন এক হাজার বছরের মতো, সেই ভারতকে মুসলমান নেতারা কখনই খন্ডিত করতে চায়নি। চেয়েছেন গান্ধীজী, গোখলে,প্যাটেল ও নেহেরুজী। আর তাঁদের সহযোগিতা করেছেন ইংরেজ শাসকগণ। মুসলমান নেতারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তান নাম একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবী করেছেন। কংগ্রেস নেতারা যদি একটু সহনশীল হতেন তাহলে ভারত বিভক্ত হতোনা। কিন্তু বিভক্ত ভারতের জন্যে দায়ী করা হলো মুসলমানদের। এমন কি বাংলাদেশে এখনও মুসলমান স্বার্থ বিরোধী কিছু আরবী নামধারী রাজনীতিক ও দলদাস বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা ভারত ও বংগদেশ বিভক্তির জন্যে মুসলমানদের দায়ী করে থাকেন। বাংলাদেশে মুসলমান মেজরিটি বাস্তবতায় যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁরা মনে করেন বাংলাদেশ বাংগালীদের দেশ। এদেশে ধর্মীয় মেজরিটির স্বার্থ রক্ষাকে তাঁরা সাম্প্রদায়িকতা মনে করেন। এর মানে তাঁরা ৯০ ভাগ মুসলমান আর ১০ ভাগ ভিন্নধর্মীকে এক মনে করেন। তাঁরা বলেন, বাংগালিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ফলে তাঁদের কাছে বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ নয়। ভারতের দর্শনই তাঁদের দর্শন। ভারত বাংলাদেশকে শুধুমাত্র বাংগালীর দেশ হিসাবে দেখতে চায়। এর মানে মেজরিটি হিসাবে মুসলমানদের কোন গুরুত্ব থাকবেনা। আমাদের বাপদাদারা মুসলমানদের এগিয়ে নেয়ার জন্যে রাজনীতি করেছেন আর এখন তাঁদের নাতিপুতিরা ধর্মমুক্ত বা ধর্ম বিরোধী অবস্থানে থাকতে পছন্দ করেন। মেজরিটি মানুষের স্বার্থ ত্যাগ করে মাইনরিটির স্বার্থ রক্ষার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। চলমান সরকার রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত রাখার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সংবিধানকে আল্লাহ মুক্ত করেছেন। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলকে(সা) গালি দিলে সরকারের তেমন শক্তিশালী কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সমালোচনা বা ব্যংগ করলে শাস্তি হয়। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে ব্লগ লিখে রাজীব নামের এক যুবক নিহত হলে সরকারের মন্ত্রী বলেছেন,দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রথম শহীদ। মন্ত্রীর কাছে শহীদ মানে হলো রাজনৈতিক গুন্ডা পান্ডা ও দলদাস হলেই শহীদ হবে। ইসলামে শহীদ মানে ধর্ম রক্ষায়,আল্লাহ নির্ধারিত পথে চলতে গিয়ে জীবন দান করলে শহীদ হওয়া যায়। রাজনীতিতে ধর্মদ্রোহীদেরও মর্যাদা থাকতে পারেন। জগতে ৭শ কোটি মানুষ থাকলে তার ৯৯ ভাগ মানুষই ধর্মে বিশ্বাস করেন। হয়ত অনেকেই পূর্ণাংগ চর্চা করেন না। কিন্তু খোদা বা তাঁর নবী রাসুলদের অমান্য বা অস্বীকার করেন না। তবে মোনাফেক থাকতে পারেন। আমি সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশে ইংরেজী শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বেশীর ভাগই সুবিধাবাদী। তাঁদের আদর্শ দর্শন হলো যেভাবেই হোক ভোট আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়া। ফলে বাংলাদেশ একটি আদর্শবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বংগবন্ধুর প্রথম জীবনে রাজনীতি শুরু করেছিলেন একজন মুসলমান হিসাবে। সনাতনধর্মীদের অত্যাচার তিনি এবং তাঁর পরিবার প্রত্যক্ষ করেছেন। রমাপদের মিথ্যা মামলায় তিনি জীবনে প্রথম জেলে যান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি দেখলেন, সাধারন মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছেনা তখন তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম গঠন করেন। জীবনে শেষদিন পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রাম করে গেছেন। ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আদব কায়দা, চলন বলন, ইতিহাস আজ খোলাখুলি ভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ ধর্মমুক্ত রাষ্ট্রের পক্ষে, অপর ভাগ ধর্মযুক্ত রাষ্ট্র ও রাজনীতির পক্ষে। এক ভাগ সংবিধানকে ধর্ম ও আল্লাহমুক্ত রাখতে চায় যারা নিজেকে শুধুই বাংগালী মনে করে। এঁরা মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত, রাষ্ট্র সবার। আরেক ভাগ নিজেদের বাংগালী মুসলমান করেন। তাঁরা ভৌগলিক ও ধর্মীয় কারণে নিজেদের বাংলাদেশী মনে করেন। ধর্মীয় কারণে নয়,শোষিত ও নির্যাতিত মাইনরিটির(মুসলমান) স্বার্থ রক্ষার জন্যে পাকিস্তান সৃষ্টি ।আর ৭১ সালে অর্থনৈতিক শোষণের কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দৃশ্যত মনে হয় ভারত খন্ডিত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। এখানে ইসলাম বা মুসলমানের কোন বিষয় ছিলনা। ইসলাম বা মুসলমানিত্ব কাউকে বা দূর্বলকে শোষণের অধিকার দেয়না। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করে যখন ক্ষমতাবানরা মানুষের অধিকার হরণ করে ও অত্যাচার করে তখন জনসাধারন কি করে? ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনও শোষণ ও অত্যাচার অব্যাহত আছে। কখনও ধর্মের নামে, আর কখনও গণতন্ত্র রক্ষার নামে। ক্ষমতাসীন জোট বা দল নিজেদের ভাষা ভিত্তিক জাতি ও নাগরিক মনে করেন। এঁরা আরবী নামের নাগরিক। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা ধর্মীয় মেজরিটির রাজনীতিতে এঁরা বিশ্বাস করেন না। ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস না করলেই আপনি জেহাদী, সন্ত্রাসী,মৌলবাদী, গোঁড়া বলে চিহ্ণিত হবেন আর সরকার(বৈধ বা অবৈধ)যাই হোক, রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার নামে আপনার উপর অত্যাচার চালাবে। আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করবে। ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা ও অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তবুও ইসলাম আজ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত। মুসলমানেরাই টেররিষ্ট। ধর্মমুক্তরা রাজনীতির কারণে আল্লাহু আকবর না বলে আল্লাহ সর্বশক্তিমান বলে থাকেন। এঁরা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস না করে মানুষের সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন। যাঁদের কোরআন ও রাসুলে(সা) বিশ্বাস তেমন দৃঢ় নয় তাঁরাই আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না। এসব মৌলিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য না থাকায় রাজনৈতিক দ্বন্ধ দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাশীন সরকার ও নেতারা ব্যক্তিগত জীবনে ও পারিবারিক জীবনে ধর্ম চর্চা করেন বলে বহুল প্রচারিত, কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তাঁরা ধর্মমুক্ত। ক্ষমতাশীনরা তাঁদের রাজনৈতিক দর্শনকে স্থায়ী রূপ দান করার জন্যেই ক্ষমতায় থাকতে চান। তাও আবার গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে। তাঁদের এই দর্শনকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দিল্লী সরকার। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বিজেপি তাঁদের রাষ্ট্রীয় দর্শনের কারণেই ক্ষমতাশীনদের জোর করে, ব্ল্যাকমেইল করে ক্ষমতায় রাখতে চায়। ক্ষমতাশীনরা ওদের সেবাদাসের ভুমিকা পালন করছে।
ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ১৯৯৬ সালে কেয়াটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করেছে, বিমান অফিস ধ্বংস করেছে , চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশনে আগুন দিয়েছে,নির্বাচনের দিন কারফিউ ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আজ সাধু হয়ে গেছে। সেই একই গ্রুপ বা দল ও গোষ্ঠি ২০০৬ সালে খুন খারাবী করে অন্যায় ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরে ধর্মমুক্ত রাজনীতির নেতা ও গুরুদের আহ্বানে তাঁর দলীয় কর্মীরা সকাল ১১টায় লগী বৈঠা নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক কর্মীদের সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অনেক কর্মীকে হত্যা করে ও বহু মানুষকে জখম করে পংগু করে দেয়। তার বিচার আজও হয়নি। কেন হয়নি বা হচ্ছেনা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। সারা বিশ্ব এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃশ্য টিভির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ দল বা মতকে হত্যা করার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ২৮শে অক্টোবর। ধর্মহীন আরবী নামধারী আর সনাতনীরা মনে করেন শক্তিই আসল ক্ষমতার উত্‍স। শক্তি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মেজরিটিকে দমন করে রাখা যায়। ষড়যন্ত্রের কারণেই ক্লাইভ নবাবের ৫০ হাজার সৈন্যকে পরাজিত করতে পেরেছিলেন। কারণ, ক্লাইভ অখন্ড জাতিকে হিন্দু মুসলমানে বিভক্ত করতে পেরেছিল।
ক্ষমতাশীন দল বা জোটের সৃষ্ট সেই নৈরাজ্যকর অবস্থার অদৃশ্য ও পিছনের শক্তিরা পরে ভারতের সহযোগিতায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করে। আজ তারা পরবাসী। তখন দিল্লীর খাস প্রতিনিধি পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয় দেখাশুনা করতেন। জেনারেল মইন তখন নানা ধরণের নাটক করে শেষ পর্য্ন্ত ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবার জন্যে। যেমন লর্ড ক্লাইভ দৃশ্যত কিছু বেঈমান মুসলমান ও সনাতন ধর্মীদের হাত করে পলাশীর যুদ্ধের নাটক বানিয়েছিল। সেই নাটকে জেনারেল মীরজাফর আলী খানকে গদিতে বসানো হয়। লর্ড ক্লাইভ কোম্পানীর সদর দফতরের অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক খেলা খেলেছিল। ফলে ক্লাইভের শাস্তি হয়েছিল। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জেনারেল মঈন দিল্লীর পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিলেন। জেনারেল মঈনকে স্থানীয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন দিল্লীর অনুগত ও সেবাদাস কিছু দল ও গোষ্ঠি। ভারতের সেবাদাস জেনারেল মঈনের মূল লক্ষ্য ছিল জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করা ভারতের অনুগত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষমতায় বাসানো। সে সময়ে মঈন নিজেই তাঁর অবৈধ অধিকৃত ক্ষমতা বলে নিজেকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে দিল্লীতে লাল গালিচার সম্বর্ধনা ও ৬টি ঘোড়া উপহার পেয়েছিলেন। জেনারেল আইউবও নিজেকে ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট ঘোণা করেছিলেন। ৮২ সালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতায় এসে জেনারেল এরশাদ বলেছিলেন তিনি দিল্লীর সাথে কথা বলেই ক্ষমতা দখল করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বলেছিলো তাঁরা অসন্তুষ্ট নন। ভারতের কাগজ লিখেছিল ‘বন্দুকের নলে প্রজাপতি’। ২০০৮ সালে দিল্লীর সেবাদাসরা ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মইনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
আবার ভারতের পরামর্শেই সেবাদাসরা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোটার বিহীন নির্বাচন করেন। সে সময়ে সরকারী হিসাব মোতাবেক ৮০ ভাগ ভোটার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্মমুক্ত দল ও জোট এখন ক্ষমতায় আছে সেই ভাটার বিহীন নির্বাচনের জোরে। আমাদের মহা পবিত্র ধর্মমুক্ত সংবিধান বিনা ভোট নির্বাচিত হওয়ার সে তাঁদের সে অধিকার দিয়েছে। ভোট লাগবেনা, শুধু গণতন্ত্রের নামাবলী থাকলেই চলবে। যে কোন উপায়েই হোক,প্রধানমন্ত্রীর পদটা পেলেইতো সাংবিধানিক ভাবেই একজন মোঘল/ রোমান / পারস্য বা রাশিয়ার জার সম্রাট। ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের নামে রাষ্ট্র কয়েকশ’নাগরিককে হত্যা করেছে। এখন বলা হচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষা করার জন্যেই তা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মমুক্ত/ধর্মহীন দল ও জোট নেতারা হলেন বৈদিক যুগের আর্যঋষিদের মতো। তাঁরাই ভুমিপুত্র দেশপ্রেমিকদের রাক্ষস বানিয়েছেন। তাঁদের বিপক্ষ শক্তিকে শুদ্র বা অর্ধ মানবে পরিণত করেছে। আর্য ক্ষত্রিয় নেতা রাজা দশরথের পুত্র রামকে রাজা ও দেবতায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশে এখন সেই রাজনীতির ধারা চালু হয়েছে।
লেখক:কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

Read Full Post »


শহীদ মিনার ও জাতির সামনে নতুন কিছু পশ্ন / এরশাদ মজুমদার

প্রশ্ন উঠেছে শহীদ মিনারে( পাকিস্তানী অবাংলা শব্দ)। একুশে ফেব্রুয়ারী(৮ই ফাল্গুন) শহীদ দিবস। হয়ত তখন বাংলা শব্দ চট করে মনে পড়েনি। হয়ত ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজী শিক্ষিতদের কাছে বাংলার তেমন প্রচলন ছিলনা। ভাষার দাবীতে মিছিল করতে গিয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের সম্মানে বা স্মরণে এই স্তম্ভ বা সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। শহীদ শব্দের বাংলা জানলে জানাবেন। স্বর্গীয় বা ওঁ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে শহীদ শব্দের পরিবর্তে। শহীদ শব্দটি এতদিনে সার্বজনীন হয়ে গিয়েছিল। আসলে ব্যবহার করতে করতে এমন হয়ে যায় পশ্চিম বাংলাও ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ এর বিকল্প কোন শব্দ বাংলায় এখনও পাওয়া যাচ্ছেনা।
মরহুম পিয়াস করিমের লাশ নিয়ে সরকারের তাবেদাররা যা করেছেন তাতে জাতি বুঝতে পারলো যে, ওঁসৌধটি (শহীদ মিনার) এখন শুধু একটি গোত্রের দখলে । যাঁরা রবীন্দ্র সংগীত ভালবাসেন ও যাঁদের জানাজা না হলেও চলে, যাঁরা খাঁটি বাংগালী ও কম মুসলমান তাঁরাই শুধু ওঁসৌধে যাবেন।। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, কিন্তু চেতনা আছে, যাঁদের ভুয়া সনদ আছে বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেন নিজেদের স্বার্থের জন্যে তারাই এই সৌধের সেবক( খাদেম নয়)সেজে সৌধের দখলদার হয়ে গেছেন। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজনের শবদেহ, মৃতদেহ বা লাশ ওঁসৌধে নেয়া হয়েছে সার্বজনীন শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে। রবীন্দ্র সংগীত বাজতে থাকবে। লাইন ধরে আপনারা মৃতের চেহারা দেখবেন, ফুল দিবেন, কালো কাপড় পরবেন, চেহারায় বেদনার ভাব রাখবেন, টিভি সাক্ষাত্‍কার দিবেন। দেখেছি কেউ কেউ জানাজাও করেন আবার রবীন্দ্র সংগীতও বাজান। অনেকেই জানাজা না করে দেহ দান করেন মানবজাতির কল্যাণে। চলমান সরকারের চরিত্র বা কার্যাদি ৯০ ভাগ মুসলমানের পক্ষে নয় বলেই ও্ঁবাদীরা এমন ঔদ্ধত্ব দেখাতে পারছেন।( কবিগুরুর মরদেহ কিন্তু কিন্তু দাহ করা হয়েছে)। জগতের প্রথম শহীদ ও রহস্য ও মরমীবাদের কবি মনসুর হাল্লাজকে সরকার হত্যা করে তাঁর লাশ জ্বালিয়ে দিয়েছিল, যেন কোন মাজার, মকবরা বা স্মৃতি সৌধ গড়ে উঠতে না পারে। আজ হাল্লাজের মাজারে লাখ লাখ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন ও দোয়া দরুদ পড়ছেন। সে সময়ের সরকারের কথা কেউ জানেনা। সকল যুগেই সরকারের কাজ হলো ভাল মানুষ হত্যা করা আর মানুষের কাজ হলো সেই ভাল মানুষকে স্মরণ করা ,শ্রদ্ধা জানানো।
জগতের সব দেশে বা সব যুগে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেকে ধর্মহীন ভাবতে ভালবাসেন। তরুণরা এদের জ্ঞানী বা ব্যতিক্রম ধর্মী মানুষ মনে করে।ধর্মমুক্ত মানুষদের ভিতরও কিছু মানুষ ভাল থাকতে পারেন। তাঁরা হয়ত মানুষের কল্যাণেই কাজ করেন। এদের অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। সবাই ধর্ম বা আল্লাহকে মানবেন এমন কোন কথা নেই। সাধারন ভাবে ধর্ম অধর্ম নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখতে পারেন। কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসীদের মনে আঘাত দিতে পারেন না। জগতের কোন আইন কোন ব্যক্তিকে এ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এমন কি সরকার বা সংবিধান কারো ধর্মীয় চেতনায় আঘাত দিতে পারেনা। বাংলাদেশেতো প্রশ্নই উঠেনা।
কিছু মানুষ আছে যাঁরা ভুলে যায় বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। সুতরাং যাঁরা শহীদ মিনারে (ওঁসৌধ) যান তাঁদের ৯০ ভাগও মুসলমান। হয়ত কেউ কেউ শুধু আরবী নামধারী নাগরিকও থাকতে পারেন ।শহীদ মিনারও বানিয়েছেন মুসলমানেরা বা মুসলমান নামে পরিচিতরা। বাংলাদেশে ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা এক ভাগ বা এক শতাংশও নয়। সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমাদের আচার ব্যবহার, পোষাক আশাক, ভাষা, জীবন চর্চা পশ্চিম বাংলা বা সনাতন ধর্মীদের মতো নয়।
ভৌগলিক বা ভাষার কারণে আমরা বাংগালী। ভৌগলিক কারণে আমাদের জীবন চর্চায় কিছু সনাতনী/পুরাণ বিষয়ক আচার থাকতে পারে। কবিগুরু নিজেও বলে গেছেন সনাতনীরা মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশী রক্ষণশীল। মুসলমানেরা সবার সাথে একত্রে খেতে পারে ও থাকতে পারে যা সনাতনীরা পারেননা। মনে রাখতে হবে ভৌগলিক কারণে আমরা কম মুসলমান আর বেশী বাংগালী নই। মুসলমান হিসাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশকে অখন্ড রাখার জন্যে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সনাতনীরা এবং তাঁদের নেতারা ৪৭ সালে বাংলাদেশকে খন্ড করেছে। আজ যে স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে স্বাধীনতার বড়াই করছি তাও আমরা পেয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষ ও বাপদাদাদের কাছে থেকে। বাংলাদেশে কিছু আরবী নামধারী মানুষ আছেন যাঁরা প্রাচীন জীবনাচারকেই আধুনিক বলে চালাতে চায়। যেমন আরবী নামধারী বুদ্ধিজীবীও আছেন যাঁরা বলেন, পূজা হচ্ছে বাংগালীদের সংস্কৃতি বা কালচার। ৪৭এর আগে কোরবানী দেয়ার জন্যে মুসলমান প্রজাদের রাজার অনুমতি নিতে হতো। মুসলমানদের দাঁড়ি রাখার জন্যে কর দিতে হতো। তাঁরাই জাতিকে বিভক্ত করে রাখতে চায়। যা ভারতের গোয়েন্দা বিভাগও চায়। এদের প্রপাগান্ডার ফলেই আমাদের তরুণরা বিভ্রান্ত ও নিজেদের মুসলমান না বলে স্যেকুলার/ধর্মমুক্ত/ধর্মহীন বলে প্রচার করে। এঁরাই গণজাগরণ মঞ্চ চালু করেছে। এরাই মুসলমানদের বা নিজেদের বাপদাদাদের মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী বলে গালাগাল করে। এঁরাই পূর্ব পুরুষের সম্পদ নিয়ে মারামারি ও মামলা মোকদ্দমা করে। সম্পদের ব্যাপারে মুসলমানের ওয়ারিশানা মানে, কিন্তু বাপদাদার জীবনাচার মানতে চায়না। এরা খন্ডিত ইতিহাসে বিশ্বাসী।
মাত্র ৪৩ বছরেই জাতি হিসাবে আমরা বিভক্ত হয়ে গেছি বলে জ্ঞানী লোকেরা বলাবলি শুরু করেছেন। এ বিভক্তি কিসের জন্যে? এর রহস্য কি? কারা জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ক’দিন আগে সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর টকশোতে ক’জন সাংবাদিককে দেখলাম। আমি যতদূর বুঝেছি বা জেনেছি ,এঁরা সবাই সবাই সেক্যুলার বা ধর্মমুক্ত মানুষ। ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয় মনে করেন। ‘ ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ শ্লোগানে বিশ্বাস করেন। এখানে মেজরিটি বা মাইনরিটির বিষয় নেই। বিষয়টি নিয়ে আমাদের রাজনীতিতে বিভ্রান্তি আছে। কেউ পরিষ্কার করে কথাটি বলতে পারেন না। টকশোর অতিথি বা অংশগ্রহণকারীরা কম বেশী সবাই আওয়ামী( জনতা) রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। এখানে আওয়ামী বললে লোকে দল মনে করে। টকশোতে সবাই ক্ষমতাশীন বা ক্ষমতাবান দলকে ধোলাই করেছেন। জানিনা কেন তাঁদের এমন পরিবর্তন হয়েছে? কিছু সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা বলেন, আমরা ধর্মমুক্ত, প্রগতিশীল, আধুনিক,সমাজতন্ত্রী। আওয়ামী রাজনীতির সাথে আমাদের মিলে যায়। জাতীয়তাবাদীরা মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল,সাম্প্রদায়িক। মুক্তিযুদ্ধ করলেও চেতনা নেই। টকশোতে অংশগ্রহণকারীরা সবাই সমঝোতার কথা বলেছেন। সমঝোতা নাকি গণতন্ত্রের প্রাণ। সবাই অনেকক্ষণ সমঝোতার গুণগাণ করেছেন। আওয়ামীদের আমি পাকিস্তান আমল থেকে চিনি। তাঁরা বিশ্বাস করেন ‘মাইরের মধ্যে ভিটামিন আছে’। কিছু শিক্ষিত লোক আছেন যাঁরা বিশ্বাস করেন বউ না পিটালে বউ ঠিক থাকেনা। পাকিস্তান আমলে জানতাম বংগবন্ধু সহ আওয়ামীরা আমেরিকাপন্থী ছিলেন। আওয়ামী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেব জিরো + জিরো থিওরী দিয়েছিলেন। এর মানে ছিল আমেরিকা ১০০ আর পাকিস্তান শূণ্য। তার সাথে থাকলে আমরাও ১০০ হতে পারবো। আরও বলেছিলেন পূর্বপাকিস্তানকে ৯৮ ভাগ স্বায়ত্ব শাসন দেয়া হয়ে গেছে। শেখ সাহেব সহ আওয়ামীরা অন্ধ ভাবে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে সমর্থন করেছিলেন। এখন শুনি তাঁরা সবাই সমাজতন্ত্রী ও প্রগতিশীল হয়ে গেছেন। একই সাথে রাশিয়া চীন ও আমেরিকার বন্ধুত্ব কামনা করছেন। আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন ভারতপন্থী হলেই প্রগতিশীল হওয়া যায়। মোদীজীর মতো সাম্প্রদায়িক নেতাকেও এখন বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা সমর্থন দিতে শুরু করেছেন। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভাল হয়ে গেছেন। হয়ত মোদীজীর সাথে বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের একটা মিল আছে। তা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের ঘৃণা করা। মোদীজী নাকি অখন্ড ভারতের স্বপ্ন দেখেন। আমিতো মনে করি ভারতের সকল দল ও নেতা অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করেন। এ বিশ্বাস নাকি প্রগতিশীলতা। যাঁরা দ্বিজাতি তত্বে বিশ্বাস করেন না তাঁরাতো অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করেন। পাকিস্তান ভেংগে যাওয়ার ফলে এখন নাকি দ্বিজাতি তত্ব আর নেই। এখনতো আমি দেখছি বহু জাতি ত্বত্ত। তাহলে কি ভারতেরও আরও খন্ডিত হওয়া দরকার? এসব নিয়ে আমাদের প্রগতিশীল ধর্মমুক্ত বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা ভাবেন কিনা জানিনা।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করছেন তাতো সংবিধান মোতাবেক। সংবিধান তাঁকে সে ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি শুধু সংবিধানকে অনুসরণ করছেন। কারণ, তিনি সংবিধানের বাইরে যেতে পারেন না। আমাদের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে রাজা বাদশার ক্ষমতা দিয়েছে। তাই তিনি রাজাবাদশাহর মতো ক্ষমতা ভোগ করছেন ও প্রয়োগ করছেন। তিনি সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক বাদশাহ বা মহারাণী। তাঁর পিতাও অদৃশ্য জগতের ইংগিতে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তিনিও গণতান্ত্রিক বাদশাহ ছিলেন। দেশে যে আইন গুলো চালু আছে বা জারী আছে তা অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারী। এ আইন অনেকদিন থেকেই চলছে। সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সদস্য থাকলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায়। বেগম হাসিনা সে ক্ষমতার প্রয়োগ করছেন মনের আনন্দে। যাঁদের ভাল লাগছেনা তাঁরাতো সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেননি বা করতে চাননি। শিক্ষিত লোকেরা বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উত্‍স। এই জনতা আজও জানেনা সংবিধান জিনিষটা কি? এটা কার জন্যে, কি জন্যে? অথচ তথাকথিত এই গণতন্ত্রে সবকিছুই জনগণের নামেই হয়। তাঁদেরই ভোটে বা নির্বাচনের মাধ্যমে ( এমন কি ৫ই জানুয়ারীর মত) এদেশে বাদশাহ বা বেগম হওয়া যায়। তাঁদের থাকে একদল মোসাহেব। তাঁরা সারাবেলা সাহেব বা বেগমের গুণ গাণ করবেন। আর আছে লাখো লাখো দলদাস, এরা না বুঝে সারা জীবন শ্লোগাণ দিবে। কিছু বুদ্ধিজীবী ও থাকেন যাঁরা টকশোতে খিস্তি খিউর করবেন।
শহীদ মিনার(ও্ঁসৌধ) নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। জাতিকে বিভক্ত করার জন্যে সকল ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সম্পন্ন করে ফেলেছে। তাঁদের সাথে থাকলেই আপনি দেশ প্রেমিক, প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। প্রধানমন্ত্রী নিজে কোন মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি ছিলেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নিরাপত্তা প্রাপ্ত একজন বিশেষ মেহমান। আপনি যদি আওয়ামী আদর্শে বিশ্বাস না করেন তাহলে আপনাকে নানা ভাবে অপমান করা হবে। আপনার নামে মিথ্যা গল্প বানাবে। শ্রদ্ধেয় মুসা সাহেব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন । তবুই তাঁকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মান দেখানো হয়নি। কারণ শেষ জীবনে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি সারা জীবন পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছেন।মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্যে জাতিসংঘের চাকুরী ছেড়ে কোলকাতা গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের জন্যে কিছুই করেন নি এমন লোককেও সরকার সম্মান দেখায়। কারণ সেই সব লোকের নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে আর সাথে আছে দলদাস মনোবৃত্তি। অথবা ধর্মমুক্ত জীবন যাপন করেন। শহীদ মিনার নিয়ে যে নোংরা রাজনীতি শুরু হয়েছে তা এ জাতির ও রাষ্ট্রের মূলে আঘাত হানবে এবং স্বাধীনতার ভিত দূর্বল হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ব্যারিষ্টার রফিক, আকবর আলী খান, জেনারেল ইব্রাহীম ও বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত সাহেব বিবৃতি দিয়ে ঘটনার জন্যে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থিউরীর রচয়িতা শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী সাহেব অছিয়ত করে গিয়েছিলেন তাঁর লাশ বা মরদেহ যেন শহীদ মিনারে বা ওঁসৌধে না নেয়া হয়। কবীর চৌধুরী সাহেবের উত্থান হয়েছে ছোটলাট সাহেব মোনেম খাঁ সাহেবের আমলে। তাঁর ভাই মুনীর চৌধুরী ৭১ সালে স্বর্গ লাভ করায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর বাজার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল । কিন্তু কেন তিনি তাঁর লাশ শহীদ মিনার বা ওঁসৌধে নিতে নিষেধ করেছিলেন তা তাঁর পরিবার প্রকাশ করেননি। আমিতো মনে করি যিনি সত্যিকারের মুসলমান তাঁর লাশ /মাইয়্যত শহীদ মিনার বা ওঁসৌধে নেয়ার কোন প্রয়োজন নই। এটা একটি বিদাত, নিয়ম বা সংস্কৃতি চালু করা হচ্ছে। মনে পড়ছেনা, কোন এক বুদ্ধিজীবীর লাশ নাকি পোড়ানো হয়েছে। তিনি নাকি পোড়াবার জন্যে অনুরোধ করে গিয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হল পিয়াস করিম ও পরিবার সম্পর্কে নিজের মত প্রকাশ করে বলেছেন মরহুম পিয়াশ করিম একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর বাবা মরহুম এডভোকেট এম এ করিমও মুক্তিযুদ্ধকে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছেন। স্বর্গীয় ধীরেন দত্তের মৃত্যু সম্পর্কে যে গল্প কিছু লোক বানিয়েছেন তা একেবারেই মিথ্যা। যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক আনিস সাহেবকে ষড়যন্ত্রকারী বলেছেন। আনিসুল হক সাহেবের বাবা সিরাজুল হক সাহেব আওয়ামী লীগের এমপি ও শেখ সাহেবের বন্ধু ছিলেন। আওয়ামী ঘরাণার বুদ্ধিজীবী দলদাসরা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনানায়ক একে খোন্দকার ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন। জেনারেল সফিউল্লাহ সাহেব ক’দিন আগে বলেছেন, খোন্দকার সাহেব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। জেনারেল সফিউল্লাহ ছিলেন মীরজাফর আলী খানের মতো। তিনি ৭৫এর ১৫ আগষ্ট ভোরে বংগবন্ধুকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্যে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তিনি জিয়া সাহেব, এরশাদ সাহেবের চাকুরীও করেছেন। আমি শুনেছি, স্বাধীনতার পর ৭২ সালে ভিন্নমত পোষণকারী অনেকেই জাসদ বা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন। এ ধরণের লোকেরাই এখন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন শহীদ মিনারে কে যেতে পারবে আর কে পারবেনা। ৭২ থেকে ৭৪ সাল নাগাদ শহীদ মিনারকে কারা অপবিত্র করেছে তা সচেতন নাগরিকরা এখনও ভুলে যাননি। শহীদ মিনারে মেয়েদের ইজ্জত কারা লুণ্ঠন করেছে। কারা ওই সময় শহীদ মিনার থেকে মেয়েদের অপহরণ করেছিল?
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

Read Full Post »


বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্ম,সাম্প্রদায়িকতা ও পিয়াস করিমের লাশ / এরশাদ মজুমদার।

আমরা যে গণতন্ত্র চর্চা করি তা এসেছে বৃটেন থাকে। শোষক ও অত্যাচারী বৃটিশ আমাদের অনেক ভাল মন্দ জিনিষ, নিয়ম কানুন, বিদ্যা, আদব কায়দা দিয়ে গেছে। তন্মধ্যে তথাকথিত গণতন্ত্র একটি। এটা নাকি জনগণের সরকার ব্যবস্থাপনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এর চেয়ে ভাল কিছু এখনও নাকি আবিষ্কার হয়নি। অনেকেই বলবেন সুপ্রাচীন কালে গ্রীক দেশে এক ধরণের গণতন্ত্র ছিল। আমি মনে করি জগতে জনগণের প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠণ করেছিলেন জগতের আলো হজরত মুহম্মদ(সা)। সেখানে মজলিসে শুরা ছিল। মানে আলোচনা সভা/মজলিস বা কাউন্সিল। পশ্চিমা বিশ্বে এখন ঘুণেধরা তথাকথিত গণতন্ত্রের জয় জয়কার চলছে। হুবহু পশ্চিমা গণতন্ত্র অনুসরণ করেনা এমন দেশও আছে। গণচীন তার মধ্যে একটি। এখানে এক দলীয় গণতন্ত্র জারী রয়েছে। জনগণের কথা বলার অধিকার কম। দলের কথাই প্রধান। চীন সেদেশের মুসলমান সহ ভিন্নমতের মানুষদের উপর অত্যাচার চালায়। আমেরিকা সারা বিশ্বকে সন্ত্রাসে পরিণত করেছে। ৬০ এর দশকের দিকে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে আমেরিকা কমিউনিষ্ট দমনের নামে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। দেশপ্রেমিক হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। কমিউনিজম দমনের জন্যে মুসলমানদের ব্যবহার করেছে। রাশিয়া কমিউনিজম রফতানীর নামে বিভিন্ন দেশে রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অবস্থাটা ছিল আমেরিকা কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র চায়না, আর রাশিয়া পশ্চিমা গণতন্ত্র চায়না। এ লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে সফরে এসে মহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, পশ্চিমা গণতন্ত্র এশিয়ার দেশ গুলোতে অচল। হু বহু পশ্চিমা গণতন্ত্রকে অনুসরণ করা যাবেনা। মালয়েশিয়া একটি বহু জাতিক বহু ধর্মের দেশ। সেখানে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে। সিংগাপুরের উন্নতি হয়েছে প্রচলিত আইনকে কঠোর ভাবে প্রয়োগের কারণে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই আইন তৈরি হচ্ছে আর ভাংগা হচ্ছে। সরকারী দলের জন্যে এক রকম আইন আর বিরোধী দলের জন্যে আরেক রকম। গরীব ও ক্ষমতাহীনদের জন্যে কোন আইন নেই। সামান্য ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ দেখলেই বুঝা যায়। পুলিশ নিজেই ট্রাফিক আইন মানেনা। প্রয়োজনে উল্টো দিকে চলতে থাকে। মন্ত্রীরাতো নিয়মিত ট্রাফিক আইন ভংগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ বা সুপারিশে আসামীদের ক্ষমা করে দেন। বিরোধী দলকে শাস্তি দেয়ার জন্যে হাজার হাজার মামলা। ভোটার না থাকলেও নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা যায়। যিনি ক্ষমতায় থাকবেন তাঁর জন্যে রাষ্ট্রের সকল শক্তি আছে। থিওরী হলো সরকারী দল বা সরকারের অনুগত ছাড়া আর কেউ দেশপ্রেমিক নেই।
আমরা ঐতিহ্য সূত্রে বৃটিশ দেয়া গণতন্ত্র পেয়েছি। এক সময়ে ছিল শিক্ষিত লোকেরা ভোটার ছিলেন। তারপরে হলো যারা চৌকিদারী ট্যাক্স দেন শুধু তারাই ভোটার হবেন। অনেক পরে এলো সার্বজনীন ভোটাধিকার। এর মানে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে। আমি ৫৪ সাল থেকে নির্বাচন দেখে আসছি। ভোটার না হয়েও ৫৪র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কর্মী হিসাবে কাজ করেছি। যুক্তফ্রন্ট ছিল মুসলীম লীগ বিরোধী সর্বদলীয় নির্বাচনী জোট। মাত্র সাত বছরের মধ্যেই মুসলীম লীগ একেবারেই অপ্রিয় ও ধীকৃত হয়ে গেল। এমন কি চীফ মিনিষ্টাসর নুরুল আমিন সাহেবও নির্বাচনে হেরে গেলেন। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই ৯২ক ধারা জারী করে নির্বাচিত সরকারকে নির্বাসনে পাঠানো হলো। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিদায় নিলো। জেনারেলরা দেশ শাসন করতে লাগলো। আমেরিকা সামরিক নেতাদের সমর্থন দিয়ে যেতে লাগলো। কারণ, আমেরিকা পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারেনা। সেই শাসনের মাধ্যমেই ৭০ সালে একটি নির্বাচন হলো। কিন্তু পাকিস্তান টিকলোনা। ভারত ও রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো। ৭০ এর নির্বাচনে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গঠিত হলো। জনমতের চাপে ৭৩ এ একটি সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ৫৪,৭০ ও ৭৩ এর নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃতি ও গতি একই রকম ছিল। ৫৪ সালে ছিল মুসলীম লীগকে কবর দাও। ৭০এ ছিল বাংগালীদের জয়যুক্ত করো। ৭৩ এ কি শ্লোগান ছিল? মুক্ত নির্বাচন হলে বিরোধী দল বেশ কিছু সিট পেতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বংগবন্ধুর সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু আমলা ও ভারত বুদ্ধি দিলো মুক্ত নির্বাচনে বামপন্থীরা বেশী এগিয়ে যেতে পারে। ফলে মুক্ত নির্বাচন হলোনা। সংসদে বিরোধী দলের ৬/৭ টি সীট ছিল মাত্র। নির্বাচন নিয়ে বিশদ আলোচনা করা এই কলামের উদ্দেশ্য নয়।
আধুনিক গণতন্ত্রের একটি নমুনা হাজির করছি। আমার এক মামা পৌর নির্বাচনে প্রায়ই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হতেন। শুনেছি, তিনি প্রতিপক্ষকে নমিনেশন প্রত্যাহারের জন্যে বাধ্য করতেন। ফলে তিনিই জনপ্রিয় নেতা হিসাবে নির্বাচিত হতেন। আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কিনেই সংসদ সদস্য হওয়া যেতো। শুনেছি, ৩৭ সালে অখন্ড বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের প্রার্থীরা পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকার বেশী খরচ করেননি। তখনও কোটি কোটি ভোটার গরীব ছিলেন। তখন তাদের দৈনিক আয় ৫০ পয়সার বেশী ছিলনা। কিন্তু গরীবরা ভোট বিক্রি করেন নি। ৫৪র নির্বাচনে একজন প্রার্থী তিন চার হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। ৭০ এর নির্বাচনে ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এখন কত টাকা লাগে তা আপনারা খুবই ভাল জানেন। প্রসংগত, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কথা উল্লেখ করতে চাই। শুনেছি,তিনি অতি সাধারন জীবন যাপন করেন। তাঁর স্ত্রী নাকি এখনও বাসের জন্যে রাস্তায় কিউ/লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মানিক বাবু একেবারে পিছিয়ে পড়ে থাকা রাজ্য ত্রিপুরার গরিবী চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। গ্রাম গুলোকে শহর বানিয়ে দিয়েছেন। ক’দিন আগে অমিতাভ বচ্চনের কৌন বনেগা ক্রোরপতি অনুষ্ঠানে ভারতের গরীব মুখ্যমন্ত্রী কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সঠিক উত্তর এসেছিল মানিক সরকার। তিনি এখনও চপ্পল পায়ে চলাফেরা করেন। চায়ের দোকানে বসে লোকজনের সাথে চা পান করেন। বাংলাদেশে এমন একটি চিত্র কল্পনা করুনতো দেখি। এখানে ছাত্রনেতারাই গাড়ি বাড়ি করেন পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব বলেছিলেন,লেখাপড়া না করে মন্ত্রী এমপি হও যায় তাহলে ছাত্ররা পড়বে কেন। লোকে বলে একবার কেউ যদি এমপি হয় তারপর সারা জীবন সে বা তিনি বসে বসে খেতে পারবেন। যে মন্ত্রী বা নেতা উপনেতা যতবেশী খিস্তি খিউর করতে পারবেন তিনি বা তাঁরা নাকি বার বার নমিনেশন পান বা নেতাগিরি করতে পারেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে আমি তেমন মুক্ত কোন নির্বাচন দেখিনি। বংগবন্ধু নিজেই এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন।কেন করেছিলেন তা হয়ত আপনারা ভাল জানেন। তিনি হয়ত মনে করতেন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা হলে তিনি জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবেন। বেশ কিছু বামপন্থী নেতা কর্মীরা সেই এক দলীয় ব্যবস্থাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এমন কি মহা গণতন্ত্রের দেশ ভারত ও সমর্থন করেছিল। এর পরে বাংলাদেশ কেমন আছে, কেমন চলছে তা আপনারা খুব ভাল জানেন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর বাংলাদেশের নির্বাচনের সুনাম এখন জগতব্যাপী। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বহাল তবিয়তে সংসদে বসে আইন বানাচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রথম আলোতে কবি সোহরাব হাসনের একটি উপসম্পাদকীয়তে গণতন্ত্র,ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। শুরুতেই সোহরাব উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক জাহিদুল আহসানের সাহসী লেখার কথা। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নাকি আওয়ামী লীগ সহ সবদল মিলে লতিফ সিদ্দিকীর নিন্দা করেছে। কারণ সিদ্দিকী সাহেব ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে নাকি এমন ঐক্য হয়না। এতে জাহিদুল আহসান সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়েছেন। বাংলাদেশে সনাতন ধর্মী সহ সংখ্যালঘুর সংখ্যা দশ ভাগের বেশী নয় নয়। যদি ধরে নিই বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি। তাহলে সংখ্যালঘুর সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখের মতো। জাহিদ আহসান বলতে পারেন সংখ্যালঘুর সংখ্যা আরও অনেক বেশী। ভারতে সংখ্যালঘুর সংখ্যা ২০/২৫ কোটির মতো হবে। অনেকে বলেন ভারতে ৩০ কোটি মুসলমান আছেন সেখানে বছরে কয়েকশ’ দাংগা হয়।(শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দাংগার ইতিহাস পড়ুন)। ভারত বা অখন্ড বাংলাদেশ খন্ড হয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে। প্রশ্ন হলো এ রাজনীতির লালন পালন করছে কারা? কেন করছে? বাংলাদেশে মাইনরিটির উপর যে অত্যাচার হয় তাও রাজনৈতিক। নিশ্চয়ই এতে ফায়দা হয়। এখানে যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হন তারা সবাই গরীব ও শক্তিহীন। শক্তিমানরাই তাদের উপর অত্যাচার করেন। সনাতন ধর্মের মন্দিরে আক্রমণ করা হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলাদেশের মুখে চুনকালি মাখাবার জন্যে। তবে সরকারী দলিলে দেখা যায় মাইনরিটি বা সনাতনধর্মীরা সরকারী চাকুরীতে রয়েছে বিশ শতাংশের মতো। ভারতে এই সংখ্যা হলো এক শতাংশের মতো। রাজনীতি ও সরকার গুলো যতদিন অসাম্প্রদায়িক না হবে ততদিন এ অবস্থার অবসান হবেনা।
অধ্যাপক পিয়াস করিমের কথাই ধরুন, তিনি সেমিনার ও টকশোতে সরকারের সমালোচনা করতেন। হয়ত তিনি সরকারী চিন্তার বিপরীত চিন্তার লোক ছিলেন। অধ্যাপক হিসাবে তিনি ছাত্রপ্রিয় ছিলেন। তিনি একটি উন্নত পরি্বারের সন্তান। তাঁর স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তাঁর লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার ব্যাপারে সরকারী দলের সমর্থক কিছু সুবিধাভোগী বিতর্ক তুলেছেন । এতে নেপথ্যে ভুমিকা পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সাথে রয়েছেন সনাতনপন্থী এদেশের মেজরিটি মানুষের ধর্ম বিরোধী কিছুলোক। তাই তারা নানা অজুহাতে একজন সম্মানিত মানুষের লাশের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা দেখাতে সাহস করেছে। এরা সাম্প্রদায়িক, যে কোন অজুহাতে মেজরিটি মানুষের মনে আঘাত দিতে সাহস করে। পিয়াস করিমের মরহুম পিতা নাকি ‘রাজাকার’ ছিলেন। সেজন্যে সন্তানকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সরকারী দলের বা জোটের বহু নেতা ও উপনেতার বাপদাদারা রাজাকার, ডানপন্থি, পাকিস্তানপন্থী, ধর্মপন্থী ছিলেন। তাঁদের সন্তানেরা লাশ দাফন করতে চাননা, জানাজা করতে চাননা, রবীন্দ্র সংগীত গাইতে চান। এমনও শুনতে পাচ্ছি লাশ শ্মশানে নেয়ার জন্যে নাকি অছিয়ত করেন। এসব প্রাণীর জন্যে সরকার ধর্মহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। ধর্মমুক্ত কাজী বা ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের ব্যবস্থা করেছেন। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার পক্ষপাতী নই। এটা অতি সম্প্রতি চালু করা বুদ্ধিজীবীদের শবযাত্রার ব্যবস্থা চালু করেছেন। ধর্মমুক্ত বুদ্ধিজীবীদের জানাজাও বলতে পারেন।সরকার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা করার দরকার এখন থেকে শহীদ মিনারে(ধর্মহীন/ধর্মমুক্ত মন্দির) শুধুমাত্র সরকারী দল, তাদের অনুগত ও ধর্মহীনদের বেশীর ভাগই বুদ্ধিজীবী) জন্যে খোলা থাকবে।
বাংলাদেশের চলমান সরকার সনাতন ধর্ম বান্ধব বলে দেশবাসী জানে। তবুও ছোট খাট সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে কেন? কিছু হলেইতো সরকার দাবী করে বিরোধী দল এসব করছে। পাকিস্তান আমলেও এসব কথা বলা হতো। বৃটিশ আমলে নাকি শাসক গোষ্ঠির ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি নাকি এজন্যে দায়ী ছিল। তাহলে এখনও কেন ভারতে দাংগা হচ্ছে। পাকিস্তানে শিয়া সুন্নী ও কাদিয়ানী দাংগা এখনও হয়। ভারতে সনাতনধর্মীরা শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে দাংগা করে। এখনতো ভারতে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আছে। আমরাতো জানি ভারত সেক্যুলার( non religious, earthly/worldly,do not believe in after world) রাষ্ট্র। তাহলে এত দাংগা হয় কেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজীতো দাংগার আসামী।
রাজনীতিতে সমঝোতা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, আলোচনা, দেশের স্বার্থে সকল দলের একমত হওয়া ভদ্র সমাজের কাজ। আমাদের রাজনীতিতে সে সমাজ চিন্তা এখনও গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশের অবস্থা দেখে আমি এখন রাষ্ট্রের রূপ নিয়ে গবেষণা করার জন্যে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানাবো। এদেশে রাষ্ট্র নাগরিক বা মানুষের চেয়ে বড়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাকি জার সম্রাটদের চাইতেও ক্ষমতাবান। কারণ, সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে সে ক্ষমতা দিয়েছে। তাই তিনি সে ক্ষমতা ভোগ করছেন। সে ক্ষমতা বলেই প্রধানমন্ত্রী ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন করেছেন। সে ক্ষমতা বলেই তিনি ভোটার বিহীন নির্বাচন করে সরকার গঠণ করে দেশ চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সকল শক্তিই এখন তাঁর হাতের মুঠোয়। গণতন্ত্রও এখন তাঁর হাতে। তাই সমঝোতার কি প্রয়োজন? তিনি কি সংবিধানের বাইরে কিছু করছেন? এ ধরণের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সমঝোতার কোন প্রয়োজন হয়না।
ভারত নিজের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ ও চলমান ধর্মমুক্ত সরকারকে সমর্থন করে। এটা ভারতের নীতি। তাদের এ নীতির কারণেই ভারত ও অখন্ড বংগ ভাগ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ ভারত বিরোধী। কিন্তু দল দাসত্বের কারণে তাঁরা অনেক সময় নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারেনা। বাংলাদেশে যদি সামরিক সরকারও থাকে তাহলে ভারতের কি আসে যায়। তারা চায় অনুগত স্বার্থ রক্ষায় অযোগ্য সরকার। তা না হলে এখানে ক্যু ঘটাবে। জেনারেল মঈন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি ছিলেন ভারতের অন্ধ সেবাদাস। তিনি এবং ভারত মিলে ২০০৮ সালের নির্বাচন করেছেন। লক্ষ্য, যে কোন প্রকারেই হোক বংগবন্ধুর কন্যাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পেছনে ছিল ভারতের গোয়েন্দা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ভারতপ্রেমী বা পন্থীদের আমি অনুরোধ জানাবো দয়া করে বুকে হাত দিয়ে বলুন, বিগত ৪৪ বছরে ভারত বাংলাদেশকে কি দিয়েছে আর কি নিয়েছে। দেখুন পাল্লা কোনদিকে ভারী।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

Read Full Post »

সকালবেলা ৯১


সকালবেলা ৯১

আমার বিবির সংসারে কলি নামের একটি মেয়ে আছে/নাই। বেশীদিন হয়নি সে এসেছে এ সংসারে গৃহকর্মী হিসাবে। মেয়েটির মুল নাম জান্নাতুন নাঈম। ওর বড়বেনের নাম জান্নাতুন ফিরদৌস। মায়ের নাম আনওয়ারা বেগম। মেয়ে দুটির নাম শুনে মনে হলো ওর নিকট আত্মীয়ের ভিতর কেউ আরবী শিক্ষিত। তা না হলে এত সুন্দর নাম আমাদের মতো তথাকথিত ইংরেজী শিক্ষিতরাও রাখতে পারেনা।
তাই আমি জানতে চেয়েছিলাম কে নাম রেখেছে? কলি বললো ওর নানা। তিনি আরবী শিক্ষিত খোন্দকার। এলাকার লোকজনকে তাবিজ তুমার পানি পড়া দেন। বিনিময়ে টাকা পয়সা গ্রহণ করেন না।
কলির বাবার নাম কামালদুদ্দিন। আনওয়ারা বেগমকে ত্যাগ( তালাক নয়) করে চলে গেছেন ১০/১২ বছর আগে। এরপর থেকে আনওয়ারা বেগম থাকেন বাপের বাড়িতে একজন আশ্রিত হিসাবে। মেয়ে দুটো ৬/৭ বছর হতেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আনওয়ারাও নানা ধরণের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
আমার বিবির সংসারে আসার পর কলি বেশ বড়সড় হয়েছে। যখন এসেছে তখন দেখতে ৬/৭ বছর মনে হয়েছে পুষ্টির অভাবে।
অভাব অনটনে বড় হওয়ার কারণে কলির নানা বিষয়ে আগ্রহ। টিভি দেখে দেখে নানা ধরণের জিনিষ কিনতে চায়। কিন্তু সে জানেনা বা বুঝেনা বা বুঝতে চায়না সে গরীব, ভাল কোন জিনিষের অযোগ্য। বুঝলে খুব ভাল হতো। মোবাইলে কথা বলতে খুবই আগ্রহী। সুযোগ পেলেই অন্যের ফোন দিয়ে লুকিয়ে কথা বলে। যা আমার বেগম সাহেবা বা বিবিজান একেবারেই পছন্দ করেননা। কাজের ব্যাপরেও আমার বিবির মতে আগ্রহ কম। আরেকটা দোষ সে মুখে মুখে কথা বলে। যা তার মনিবের একেবারেই পছন্দ নয়। তিনি মুখে মুখে কথা বলার ঘোর বিরোধী। সারাদিন কথা বলেনা এমন কাজের মেয়ে তাঁর খুব পছন্দ। বিবিজানের মা এক জমিদার কন্যা। তিনি ও হয়ত কাজের মেয়েদের ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলেন। তবে তিনি খুব দয়ালু ছিলেন। আমার বিবিরও তেমন দয়া আছে। তবে যারা কথা বলেনা তাদের প্রতি তাঁর দয়া বেশী।
কলির সমস্যা সে কথা না বলে থাকতে পারেনা
আমার বিবির চিন্তা চেতনায় আমি ব্রাত্যজন। সাধারন পরিবারের ছেলে। তাঁর খানদান খুবই উঁচু দরের। হয়ত হবে। আমি সংসারী নই, তাই এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাইনা। বরং আমার খুব ভাল লাগে। সংসারে পরাধীনতা খুবই পছন্দ। ঘরে থাকলে আমি কোন কথা বলিনা। বই পড়ি, গজল, সুফী সংগীত শুনি। কম্পিউটারে আমার ৩/৪ ঘন্টা সময় কাটে। যৌবনে মাসে এক/দুইবার চিত্‍কার করতাম। এখন তেমন করিনা। হয়ত বছরে দুয়েকবার। পরাধীন থাকার ফলে মাঝে প্রণীদের মতো ঘেউ ঘেউ করি। আবার শান্ত হয়ে যাই ৬/৭ মাসের জন্যে।
হাজী মহসিনের একটি গল্প আমার খুবই প্রিয়। একবার এক চোর হাজী মহসিনের বাড়িতে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে যায়। কিন্তু হাজী সাহেব বললেন, কেঁদোনা। জানতে চাইলেন, তুমি কি চুরি করতে এসেছিলে। চোরটি কিছুই বলেনা। শুধু কাঁদতে থাকে। হাজী সাহেব বললেন, তুমি প্রতিদিন এসো , যা লাগে নিয়ে যেও। তখন চোর বললো, না চুরি করতে আসিনি। মাঝরাতে লুকিয়ে আপনাকে দেখতে এসেছি। দিনের বেলা লোকজন দেখা করতে দেয়না। তুমি আমার এখানে থাকবে? তাহলে সারাক্ষণ আমাকে দেখতে পারে। ওই লোকটা বাকি জীবন হাজী মহসিনের কাছেই ছিলো।
আমাদের রাসুল(সা) বলেছেন, তোমরা তোমাদের অধস্তনদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থেকো। আখেরাতে ওরাই তোমাদের জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে তিনি গৃহকর্মীদের কথা বলেছেন। আমরাতো ঘটা করে নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কপালে নামাজের দাগ ফেলি। কথায় কথায় ধর্মের কথা বলি। পরকে উপদেশ দেই। কিন্তু ক’জন রাসুলের(সা) এ উপদেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। গৃহকর্মীর কারণেই আমরা জাহান্নামে যাবো।
আদবে রাসুল(সা) বইটি পড়ার জন্যে সবাইকে অনুরোধ করছি। হে আল্লাহর গোলাম ও রাসুলের(সা) উম্মতগণ, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা করো। আল্লাপাকের প্রধানতম গূণ হচ্ছে দয়া। তোমার দয়াবান হও।

Read Full Post »