সকালবেলা ৫৭
লিখিত ভাবেই বিজ্ঞজনেরা বলতে শুরু করেছেন ভারত ভাগ ঠিক ছিল কি ছিলনা। বাংলাদেশের বেশ কিছু জ্ঞানী মানুষ যাদের মা বাপ বা দাদারা ৪৭ সালে ভারত ছেড়ে পাকিস্তান এসেছেন। তরুণ প্রজন্মের বেশ কিছু বন্ধু ওই মোহাজেরদের অনুসারী। এরা মনে করেন ভারত ভাগ ভুল ছিল।
আমার ভারত ত্যাগী বন্ধুরা ৪৭ সালে কেন পাকিস্তান এসেছিলেন? সে বিষয়টা তাদের স্পষ্ট করা দরকার। কি এমন পরিস্থিতি ছিল যে তাদের বা তাদের বাপ দাদাদের ভারত ত্যাগ করতে হয়েছিল। যাঁরা স্কুলের ছাত্র হিসাবে এসেছিলেন তাঁরা এখানে মোহাজের হিসাবে সরকারের নানা ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে সম্মানের সাথে শিক্ষকতা করছেন। ইতোমধ্যে বেশ নাম ধাম কামিয়েছেন। জাতিকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন। ভারত থেকে পদ্মভূষণ সম্মাননা আনছেন। বাংলাদেশর একুশে , স্বাধীনতা ও একাডেমী পদক আর তাদের ভাল লাগছেনা । কিছু জ্ঞান পাপী আছেন,যাঁরা নিজেদের অবস্থান কখনই খোলাসা করে বলেন না। এরা একেবারেই সুবিধাবাদী। ৭১এ কোলকাতা বা অন্য জায়গায় গিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ছিলেন। কেউ কেউ ভারত সরকার বা মুজিব নগর সরকারের ভাতা নিয়েছেন। ১৬ই ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে ফিরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা আদায় করেছেন। এদের এখন বাড়ি গাড়ি ধন সম্পদ আছে। সাথে আছে নানা ধরনের পদক। সুযোগ পেলে এরা এখনও ভারতে পালিয়ে যায়। আবার সুযোগ পেলে বীর হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসে নানা বাহানা তৈরি করে।
৪৭ এর আগে ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কেন ছিল তার উপর বহু বই আছে। তরয়ণ সমাজ সে গুলো পড়েনা। মা বাপের কাছ থেকেও জানতে চায়না। মা বাপকে সাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ মনে করে। আজকের যে বাংলাদেশ তরুণরা দেখছে তা যে তাদের বাপ দাদারা প্রতিষ্ঠা করেছে তা এখন আর স্বীকার করতে চায়না। তরুণদের ভিতর আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি,তা হলো মুসলমানদের কথা বললেই সাম্প্রদায়িক বলে গালাগাল দেয়া হয়। মানে নিজের স্বার্থের কথা বললেই সাম্প্রদায়িক। এমন কি ইতিহাসের সত্য উপাদান উল্লেখ করলেও সাম্প্রদায়িক বলা হয়। তাহলে আমাদের নতুনরা কাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে?
পশ্চিম বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা ৩০ ভাগের মতো। কিন্তু সরকারী চাকুরীতে মুসলমানদের অবস্থান এক ভাগেরও নীচে। সারা ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ২০ ভাগের মতো । কিন্তু সরকারী চাকুরীতে মুসলমানদের অবস্থান নাই বললেই চলে। বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা ১০ ভাগের ও কম। চাকুরীতে তাদের অবস্থান ২০ ভাগের বেশী। বাংলাদেশে ৫ লাখের মতো ভারতীয় চাকুরী করে। এরা বছরে তিন বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশী অর্থ ভারতে পাঠায়।
যদি ৪৭ সালের ভারত ভাগ ভুল হয়ে থাকে তাহলেতো স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকেনা। ৭১ সালেতো আমাদের ভারত ভুক্ত হয় যাওয়ার কথা। কিন্তি ভারত চক্ষু লজ্জায় এ কাজটি করেনি বা বিশ্ব মতামতের কথা ভেবে এ পথে এগোয়নি। বাংলাদশ নাম মাত্র স্বাধীন থাকাতে ভারতের লাভ সীমাহীন। বিগত ৪৩ বছরে ভারত বাংলাদেশ থেকে যে সুযোগ সুবিধা বা মুনাফা পেয়েছে তা ২৩ বছরে পায়নি। আমিতো মনে করি ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা চাইলেও ভারত বাংলাদেশকে তার মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করবেনা। তাতে তার ঝামেলা বাড়বে। ভারতের সীমাহীন শোষণের পরেও স্বাধীন বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হয়েছে তা ভারতভুক্ত পশ্চিম বাংলার তা হয়নি।
সিকিমকে ভারতপন্থীরাই সংসদে আইন পাশ করিয়ে ভারতভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের ভারতপন্থীরা কোন পথে যেতে চান তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
You must be logged in to post a comment.