বাণিজ্যিক ব্যান্কগুলোকে একশ’কোটি টাকার কৃষিঋণ চালু করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমি তখন দেশের একমাত্র কৃষি সাপ্তিহিক ফসল এর প্রধান সম্পাদক। রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে কাগজটি প্রকাশিত হতো। তার আগে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফেণী থেকে প্রকাশিত হতো। ফসল ঢাকায় আসে ৭২ সালে। ৭৫ সালের ১৬ই জুন এক দলীয় শাসনের নির্দেশে অন্যান্য কাগজের সাথে সরকার এই কাগজটিও বন্ধ হয়ে যায়। ৭৬ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে আবার প্রকাশিত হয়।
একশ’কোটি টাকার কৃষিঋণ চালু হলে ফসল ওই কর্মসুচীকে যোল আনা সমর্থন দিতে থাকি। যদিও সে সময়ে অনেকেই বলেছিলেন, একশ’কোট টাকার কর্মসুচী বাস্তবায়ন হবেনা। দৈনিক কাগজগুলোতে নেতিবাচক খবর ছাপাতে শুরু করলো। জিয়া সাহেব ও কৃষি উপদেস্টা আজিজুল হক সাহেবের অনুরোধে আমি ব্যান্ক গুলোর ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে কৃষিঋণ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধকরন বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। বাণিজ্যিক ব্যান্কগুলো ফসল এর গ্রাহক হতে শুরু করলো। এছাড়া পাট সমিতি গুলোও নিয়মিত তাদের খবর ফসল এ প্রকাশের জন্যে পাঠাতে শুরু করেছিল কৃষি উপদেস্ট আজিজুল হক সাহেবের নির্দেশে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কাগজ ডাক যোগে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। এ সময়ে জিয়া সাহেবের যুগান্তকারী কর্মসূচী সেচের জন্যে খাল কাটা সারাদেশে বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেই খাল কাটা কর্মসূচী পতিত সামরিক শাসক এরশাদ এসে বন্ধ করে দেয়। এমন কি পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেও খালকাটা কর্মসূচী চালু করেনি। ফসলকে আরও কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা পরীক্ষা করে দেখার জন্যে জিয়া সাহেব কৃষি উপদেস্টাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।আলোচনা করার জন্যে কৃষি মন্ত্রনালয় আমাকে একটি সভায় ডেকেছিলো। একজন যুগ্ম সচিব সভাপতিত্ব করেছেন। আমি সহ চারজন ওই কমিটির সদস্য ছিলাম। সভায় চা কফি কেক খাওয়া হলো। কিন্তু কাজ হয়নি।কারন যুগ্ম সচিব সাহেব আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ফসল কৃষির কাগজ না কৃষকের কাগজ। প্রশ্নটা শুনে আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলা। আমি বললাম, প্রশ্নটি খুবই শক্ত। একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হয়। যুগ্ম সচিব বললেন, যদি কাগজটি কৃষক অধিকারের জন্যে কাজ করে তাহলে সহযোগিতা করা যাবেনা। কারন সরকার কৃষির উন্নয়নের জন্যে কাজ করছে। অধিক উত্পাদনের জন্যে কাজ করছে।ওই কমিটির একটি সভাই অনুস্ঠিত হয়েছিল। আমি পরে কৃষি উপদেস্টা আজিজুল হক সাহেবের সাথে দেখা করে কমিটির বিষয়ে তাকে অবগত করি। আমি তাঁকে জানালাম আমার কোন আর্থিক অনুদান দরকার নেই। বিভিন্ন সরকারী প্রতিস্ঠান ফসল এর গ্রাহক হয়েছে। আরও কিছু সংগঠন হলে ভাল হয়। তিনি আমাকে জানালেন, জিয়া সাহেব চায় ফসলকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে। এজন্যে আপনাকে আর্থিক সহ্যোগিতা করা দরকার। আমি বললাম সরাসরি আর্থিক অনুদানের প্রয়োজন নেই। কাগজের গ্রাহক বাড়লেই চলবে।
এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় আসার পর ফসল এর গ্রাহক ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। তখন বিভিন্ন সরকারী প্রতিস্ঠানের কাছে ফসল এর প্রায় তিন লক্ষ টাকা পাওনা ছিল। আমার এক বন্ধু কূটনীতিক মহিউদ্দিন সাহেব কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব থাকা কালে আমি এ ব্যাপারে তদবীর করেছিল। আমার বন্ধু টাকাটা পরিশোধের ব্যবস্থা করেছিলে। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয় ছেড়ে যাওয়ার পর ওই টাকাটা আর পরিশোধ হয়নমি। বরং পরিশোধের উদ্যোগ যারা নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
বিএনপি প্রথমবার ক্ষমতায় থাকা কালে কৃষি মন্ত্রী ছিলেন বন্ধুবর মান্নান ভুঁইয়া। বিষয়টা নিয়ে আমি তাঁর সাথেও কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন, তিনি এলপিআরে আছেন। যেকোন সময় তার গদী চলে যেতে পারে। এসব হলো প্রসংগ তথ্য।মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব। সে সময় কথা উঠেছিল চাল রফতানী করার। সম্ভবত চাল রফতানী হয়েছিল। তখনও কিছুলোক বলেছিল চাল রফতানী করলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যাবেনা। জিয়া সাহেব বলেছিলেন, সাহায্য না লাগলে আমরা সাহা্য্য নেবো কেন। জিয়া সাহেব বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ হওয়া কোন কঠিন কাজ নয়। চাই শুধু অদম্য ইচ্ছা।
কৃষক ও গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও জাগরণ সৃস্টির জন্যে জিয়া সাহেব মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটেছেন। তাঁর সাথে হেঁটেছেন সাংবাদিক ও সরকারী কর্তা ব্যক্তিরা। তখন জিয়া সাহেব গ্রামের বিভি্ন্ বাড়িতে গিয়েছেন। কৃষক ও কিষানীদের কথা বলেছেন। বাড়ির চারিদিকে ফল ফলারি ও শব্জীর চাষ করার জন্যে সবাইকে অনুরোধ করেন। তখন সরকার এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীও গ্রহন করেছিলো। জিয়া সাহেবই রাস্তার দুই পাশে ফলের গাছ লাগাবার জন্যে গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সোজা কথায় বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে জিয়া সাহেবই এ দেশের প্রথম নেতা যিনি দেশবাসীর মনে আস্থা সৃস্টি করেছিলেন। দেশের মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ একদিন বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। একটি উন্নত সম্মানিত দেশ হওয়ার সকল উপকরন এ দেশে রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্বের। বাংলাদেশের শত্রুরা তাই উঠে পড়ে লেগেছিল কিভাবে জিয়া সাহেবকে চিরদিনের জন্যে বিদায় করা যায়। কারণ ওই শত্ররা চায়না বাংলাদেশ একট সম্মানিত উন্নত দেশ পরিণত হোক।