Feeds:
Posts
Comments

Archive for July, 2014


মানব জমিন রইলো পতিত / এরশাদ মজুমদার

মানুষ কি এবং কেন? কিভাবে তার সৃষ্টি, কেনইবা তার প্রয়োজন এসব নিয়ে মানুষ ভাবে কিনা এ ব্যাপারে প্রশ্ন আছে। মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা জানার জন্যে বিজ্ঞান মনষ্করা অবিরাম গবেষণা ও ধ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে আল্লাহ, খোদা, গড, ঈশ্বর ভগবান, ইলোহা বা ইয়াহু আছে কিনা তা নিয়েও বৈজ্ঞানিকেরা ব্যস্ত আছেন। জগতে যত ধর্ম আছে সব ধর্মই মানুষের জীবন নীতি নিয়েই তৈরি হয়েছে। কেউ বলেন এই জীবন নীতি জগতে এসেছে ঐশী বাণীর মাধ্যমে। আবার অনেকেই বলেন, ধর্মীয় নিয়ম নীতি বা সামাজিক নিয়ম নীতি মানুষ নিজেই তৈরি করেছে সময়ের প্রয়োজনে। যেভাবেই হোকনা কেন মানুষের জন্যেই জগতে নিয়ম কানুন তৈরি হয়েছে। কিছু আইন মানুষের তৈরি আর কিছু আইন রয়েছে মানুষের জন্যে আল্লাহপাক তৈরি করেছেন। ক্ষমতাবানরা, রাস্ট্র বা সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে পাকা পোক্ত করার জন্যেও মেজরিটির জোরে আইন তৈরি করে। যেমন আমেরিকা কথায় কথায় ভিনদেশ আক্রমণ করার জন্যে আইন পাশ করে। আর আমেরিকাকে সমর্থন করে কিছু তাবেদার দেশ।
দৃশ্য বা অদৃশ্য সকল সৃষ্টিই সৃষ্টির অমোঘ নিয়মেই সৃষ্টি হয়েছে বলে বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন। আবার যারা ধর্ম ও ঈশৃ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন তাঁরা মনে করেন বা দৃঢভাবে বিশ্বাস করেন সব কিছুই করেছেন আল্লাহ ,ঈশ্বর বা গড। আল্লাহই মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষের জন্যে নিয়ম কানুন পাঠিয়েছেন। জগতের নব্বই ভাগ মানুষ মনে করেন সৃষ্টির র্সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন। তিনিই সকল সৃষ্টির পরিচালক। তিনিই ন্যায় নীতির ধারক বাহক। মানুষকে ন্যায় নীতি তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যুগে শিক্ষক, গুরু, নবী রাসুল,ইমাম বা নেতা পাঠিয়ে। তাঁরাই আমাদের ভাল মন্দের জ্ঞান দান করেছেন। তাঁরাই বলেছেন,মন্দকাজ করলে পরজগতে শাস্তি পাবে,ভাল কাজ বা ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠা করলে পুরষ্কৃত হবে।
খোদা বা আল্লাহ, ভগবান ও গড প্রদত্ত আইন বা ন্যায় নীতির ভিত্তিতেই জগতের বিভিন্ন দেশে ,রাস্ট্রে ও সমাজে আইন ও সংবিধান তৈরি হয়েছে। তবে মানুষের নৈতিক অবনতির কারণে ন্যায় নীতি প্রতিদিন পদদলিত হচ্ছে। শক্তিই এখন একমাত্র আইন বা ন্যায় নীতি। সবল দূর্বলকে ধ্বংস করবে এটাই নীতি। স্রষ্টা মানব রচিত এই আইনের বিরোধী। সকল ঐশী কিতাবই অত্যাচারিত, নিষ্পেষিতের পক্ষে।
মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্যেই কিতাবে নমরুদ, ফেরাউন,সাদ্দাদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। শাসক অত্যাচারী হলে তার পরিণতি কি জগতবাসীকে জানাবার জন্যেই ওই কাহিনীর কথা বলা হয়েছে। একই ভাবে বহুজাতির ধ্বংসের কথাও কিতাবে এসেছে। এখনও ধ্বংস হচ্ছে। ইতিহাসের বড় বড় রাজা, মহারাজা ও সম্রাটেরা এখন কই? চলমান শতাব্দীর একনায়কেরাই বা কই?

লালন কবি শুধু বাংলাদেশের নন। তিনি আধ্যাত্ববাদ বা মারিফাতের একজন গুরু। তিনিই বলেছেন, ‘মানব জমিন রইলো পতিত’। এর মানে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেনি। আমি বিগত দুই যুগ ধরে বলে আসছি বায়াদলিলের কথা। লোকে পড়ে আর শোনে, কিন্তু অন্তরে ধারণ করেনা। লোকে মুখে মুখে বলে বাংলাদেশে ১৫ কোটি মুসলমান আছে। আর আমি বলি আরবী নামধারী কিছু মানুষ। নাম আরবী হলেও একজন মানুষ মুসলমান নাও হতে পারে। আরবদেশ গুলোতে বহু অমুসলমান আছেন যাদের নাম আরবী। আবার বহু মানুষ আছেন যারা আল্লাহ, রাসুল(সা),কোরআন মানেন। কিন্তু তাঁদের অন্তরে এই মানাটাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করেন না। শুনেছি, আমেরিকান মুসলীম ধর্ম যাজক লুই ফারাহ খান বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, শুক্রবারে মসজিদে লোক উপচে পড়ে। মসজিদে জায়গা হয়না বিধায় লোকে রাস্তায় নামাজ পড়ে। বাংলাদেশকে লোকে মসজিদের দেশ বলে। আর রাজধানী ঢাকাকে মসজিদের নগরী বলে। প্রতিদিন নতুন নতুন মসজিদ স্থাপিত হচ্ছে। অথচ এদেশের মানুষ সীমাহীন ভাবে গরীব ও নিরক্ষর। ইসলাম দারিদ্র ও অশিক্ষাকে ঘৃণা করে। দারিদ্র মানুষকে কুফরির দিকে টেনে নেয়। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় দারিদ্র আর অশিক্ষা থাকতে পারেনা। তবুও এমন সীমাহীন দারিদ্র প্রমান করে বাংলাদেশের সমাজ, দেশ ও রাস্ট্র আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে চলেনা। মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, মুসলমানী জোশে রাতারাতি মসজিদ বানিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু পুরাণা পাপী মন বছরেও নামাজী হতে পারেননি। মূল উর্দু হচ্ছে, ‘ মসজিদতো বানা দি শব ভর মে ঈমাঁ কে হারারত ওয়ালো নে,মন আপনা পুরাণা পাপী থা বরছো মে নামাজী বন না সেকা ।’ আমিও ইকবালের সাথে একমত। মুসলমানেরা শতাব্দী ব্যাপী নামের মুসলমানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাপী মুসলমান শাসকগণ কোরআনের অনেক আয়াতের চর্চা বন্ধ করে রেখেছেন। কারণ ওইসব আয়াত বা বাণীতে আল্লাহপাক জালেমের বর্ণনা দিয়েছেন। জালেমদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। আমি এর আগেও লিখেছি জুলুমাত মানে অন্ধকার। মানে অশিক্ষা, জ্ঞানহীনতা, আলোহীনতা। আর শাসকগণ মনে করেন আল্লাহপাক যখন জালেমের কথা বলেন তখন শাসকদের বিরুদ্ধেই বলা হয়। আর আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলা মানেই হলো সমাজ রাষ্ট্র দেশ ও ব্যক্তি জালেম হয়ে গেছে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমরা যখন বলি ‘রাব্বানা জোলামনা আনফুছানা’ তখন অবশ্যই মনে করতে হবে আমরা স্বীয় আত্মার উপর জুলুম করে জালেম হয়ে গেছি। এর মানে হলো আমরা আমাদের আত্মার মালিক নই। তাই এর উপর জুলুম করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আত্মার মালিক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহপাক। আল্লাহপাকের নিষিদ্ধ পথে চলা মানেই শয়তানের পথে চলা। শয়তানের পথে চলা মানেই হচ্ছে অন্ধকারে চলা। যা আল্লাহপাক কখনই চান না। তাই আমরা হুকুম না মেনে ভুল পথে চলে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করি। আল্লাহপাক খাস দিলে তওবা করাটাকে খুব পছন্দ করেন। মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম(আ) তওবা করেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করে মুক্তি লাভ করেছিলেন। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, মানুষ বড়ই দূর্বলচিত্তের এবং ভুল প্রবণ। তাই মানুষ অতি সহজেই শয়তানের প্রলোভন ও প্ররোচনায় পড়ে যায়।
‘মানব জমিন রইলো পতিত’ মানেই হলো এ জমিন যখন জ্ঞান বা আলো বা ন্যায় দ্বারা কর্ষিত না হয় তখন মানব জমিনে ক্ষরা নেমে আসে। মাটির জমিনে পানি না হলে ফসল উত্‍পাদিত হয়না। যে ফসল পশু ও মানুষ খায়। পতিত জমিনে কোন ফসলই উত্‍পাদিত হয়না। একই ভাবে মানব জমিন পতিত পড়ে থাকলে ওই জমিনে শয়তানের আবাদ হয়। আর তেমন মানব জমিনে সকল প্রকার অন্ধকার নেমে আসে। অন্তরচক্ষু ছাড়া খোলা চোখে দেখলে মন হবে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। অগ্রগতিকে মানুষ বা চলমান সভ্যতাকে দেখে বিজ্ঞান সম্পদের আলোকে বিচারে। এ বিশ্বে যে জাতি বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও সম্পদের এগিয়ে গেছে তারাই বিশ্বকে অবনত ও পরাজিত করে রেখেছে। চলমান বিশ্বে মানুষ আর মানুষ নেই। মানুষ দানবে পরিণত হয়েছে। দানবীয় শক্তিকেই মানুষ নামের প্রাণীরা এখন পূজা করে। তাই এখন আমেরিকা সবচেয়ে বেশী পূজনীয়। বাংলাদেশের মতো দেশ গুলোর কাছে আমেরিকা এখন প্রধান প্রভু। শাসক গোষ্ঠি আমেরিকাকে পূজা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বিশ্ব এখন ক্ষমতা বা শক্তির দ্বন্ধে লিপ্ত। সে হিসাবে বিশ্ব এখন না ভাগে বিভক্ত। যে দেশে দেশ প্রেমিক নেতা আছে সে দেশের উন্নতি হচ্ছে।
আমরা শোষিত হচ্ছি এই কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি। পাকিস্তান শোষণ করেছে ২৩ বছর, তার আগে বৃটিশরা শোষণ করেছে ১৯০ বছর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী অখন্ড বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কোলকাতা বন্দর দিয়ে। আর তাদের সমর্থন করেছে নবাব বিরোধী বা বাংলার স্বাধীবতা বিরোধী একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবী। এখন বৃটিশ আমাদের মুরুব্বী ও বন্ধু । পাকিস্তান এখন আমাদের প্রধান শত্রু। ৭১ সালে আমরা ভারতের দেয়া জয়বাংলা শ্লোগাণ দিয়ে ভারতের অধীনে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনতা লাভের ৪৪তম বছর চলছে। এখনও এ দেশের মানুষ শোষিত নির্যাতিত। এখনও অশিক্ষা থেকে দেশবাসী মুক্তি লাভ করেনি। কোটি কোটি মানুষ বেকার। অসুস্থতায় প্রয়োজনীয় চিকিত্‍সা পায়না। গরীবেরা প্রতিদিন আরও গরীব হচ্ছে আর ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। আমরা যদি খাঁটি মুসলমান হতাম তাহলেও অশিক্ষা ও দারিদ্র থাকতোনা। শুধু বাংগালী হলেও দেশপ্রেম থাকলে বাংলাদেশের বর্তমান করুণ দশা হতোনা। যা মহাথির বা লী কুয়াঙ পেরেছে আমরা তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা তা পারিনি। এ দেশে রাজনীতি এখন একটি বড় ব্যবসা। দূর্ণীতি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নাগরিকরা প্রাণ দিচ্ছে। সীমান্তে প্রতিবেশী মুরুব্বী দেশ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেন,যারা মরছে তাদের পরিচয় সীমান্ত লংঘনকারী।
ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিন নারী শিশুরা ইজরায়েলী হামলায় নিহত হচ্ছে। আমেরিকা ও তার বন্ধুরা বলছে ইজরায়েলের অধিকার আছে আত্মরক্ষার। অপরদিকে হামাসের হাতে কোন অস্ত্র নেই। তথাকথিত এ যুদ্ধ কেন? ইজরায়েল কি চায়? কোথায় পায় তারা এমন সাহস? এখন ন্যায় কোথায়? মানবতা কোথায়? জাতিসংঘ বলে আমরা সদস্য দেশ গুলোর মতামতের ভিত্তিতে চলি। এর মানে শক্তিশালী দেশগুলো এ গণহত্যাকে সমর্থন করে। এমন কি ওআইসি মহাসচিব বলেছেন, সউদী আরবের কারণেই ওআইসি গাজায় ইজরায়েলী হামলার প্রতিবাদ করতে পারবেনা। বাদশাহর ভয় ইসলামের মজলুমেরা যদি একদিন বাদশাহী উত্‍খাতের আন্দোলনে নেমে পড়ে তাহলে বাদশাহীর কি হবে। আমি লজ্জিত যে রাসুলের(সা) দেশে এমন বাদশাহী আছে যা রাসুলের(সা) আদর্শকে সমর্থন করেনা। শুনেছি,বাদশাহ কোরআনের অনেক আয়াত ক্বাবার মসজিদে বা মসজিদে নবুবীতে পাঠ নিষিদ্দ করে দিয়েছেন। কারণ, ওই সব আয়াতে জালেমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে ন্যায় সংগত অধিকার বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সকল নবী রাসুলগণ সমকালের জালেম শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন গণ মানুষের মুক্তির জন্যে।সউদী আরব কোন ইসলামী রাস্ট্র নয়। এখানে বাদশাহী শাসন চলছে। বাদশাহীকে ইসলাম সমর্থন করেনা। যেমন করে বাংলাদেশ কোন ইসলামী রাস্ট্র নয়। এখানে কোরাণ সুন্নাহর কোন আইনকে রাস্ট্র মানেনা। এদেশের সংবিধান আল্লাহর সার্বভোমত্বকে মানেনা। বাংলাদেশের সংবিধান মানুষের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। সংবিধান বলে ইনসান হয় আকবর বা মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের সংবিধান কোরআন ও সুন্নাহর ধারে কাছেও নেই। এদেশে আল্লাহ সার্বভৌম বললে আদালতে মামলা হয়। রাস্ট্র মনে করে ধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। রাস্ট্রের নীতি হলো সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতা। সেক্যুলারিজমের মানে ধর্ম নিরপেক্ষ বলে জনগণকে ধোকা দিচ্ছে রাস্ট্র ও এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
এখন বিশ্বব্যাপী ন্যায় ও স্বাধীনতার লড়াইকে সন্ত্রাসী আন্দোলন হিসাবে আখ্যায়িত করছে শক্তিধর দেশ গুলো। কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সময় যেমন বেশ কিছু হটকারী ঘটনা ঘটেছে তেমনি ইসলামী আন্দোলনেও রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনেও তেমনি হটকারী সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন তেমন কোন হটকারী আন্দোলন নয়। বরং ইজরায়েল একটি ধর্মবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তাকে নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও পশ্চিমাদেশ গুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চলমান বিশ্বে তথাকথিত মানবতাবাদী, আধুনিক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিমান দেশগুলো ন্যায় অন্যায় নির্ধারন করছে। কথা না শুনলেই দমনই হচ্ছে এদের নীতি। কথা শুনলে ভিক্ষা পাবে। আমার তাবেদারী করলে সম্মানিত হবে এ নীতিতেই আধুনিক বিশ্ব ও জাতিসংঘ চলছে।
গাজায় নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে ইজরায়েল। কোন মানুষের হৃদয় এ হত্যাকান্ডকে সমর্থন করতে পারেনা। খোদ ইজায়েলেই এর জন্যে প্রতিবাদ হচ্ছে। পৃথিবীতে এমন একটি দেশ নেই যেখানে মানুষ প্রতিবাদ করছেনা। কিন্তু শাসকরা তা শুনতে পাচ্ছেনা। কেন শুনতে পাচ্ছেনা বা শুনতে চাইছেনা তা গভীর ভাবে অনুধাবন করা দরকার। ভারত কেন কাশ্মীরীদের দাবী মানছেনা? ভারত কেন প্রতিবেশী দেশ গুলোকে দমিয়ে রাখতে চায়? শেখ হাসিনা কেন ভারতের অনুগত থাকতে চায়? চীন কেন কেন মানুষের ধর্মীয় অধিকারকে দমিয়ে রাখতে চায়? কেন উইঘুর মুসলমানদের হত্যা করছে? কেন রোজাদার মুসলমানকে জোর করে ধরে মুখের ভিতর খাবার ঢুকিয়ে দিচ্ছে? এসব প্রশ্নের জবাব কোথায় আছে? বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ইনু সাহেব বলেন মুসলমান হলেই রোজা রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাংবাদিকদের গালাগাল করছেন। টকশোতে যারা অংশ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের নিশিকুটুম্ব বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই লেখাটির মূল বিষয় হলো মানুষ। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, মানুষের চেহারা হলে বা মানুষের মতো দেখালেই কেউ মানুষ হয়না। মানুষ কি ও কেন তা আল্লাহপাক বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর প্রেরিত গ্রন্থ গুলোতে। মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শয়তান থেকে হুঁশিয়ার বা সাবধান থাকার জন্যে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বেদনাহত হৃদয়ে বলছি ,কোথাও আল্লাহপাক বর্ণিত মানুষ দেখতে পাচ্ছিনা। পৃথিবীতে নাকি এখন ৭শ’কোটি মানুষরূপী লোক আছে।আমেরিকার শাসকগোষ্ঠি হচ্ছে হচ্ছে অসুর, কিন্তু দেবতা সেজে আছে। তারাই সত্যিকারের মানুষকে অসুর বলে গালাগাল দেয়। আমেরিকার জ্বালায় সারা পৃথিবী এখন অশান্ত হয়ে পড়েছে। কি কারণে আমেরিকা ও তার মিত্ররা পৃথিবীর সবখানে গোলযোগ বাধিয়ে রেখেছে? তার দানবীয় ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যে। আমেরিকার ফেরাউনী শাসনকে বাংলাদেশের ফেরাউনরাও সমর্থন করে। এদের সমর্থকরা রাসুল(সা) ও মুসলমানদের কটাক্ষ করে কার্টুন আঁকে,কুকুরের ছবি এঁকে মাথায় টুপি পরায়। আগেও বলেছি মানব জমিন আবাদ হচ্ছেনা বাংলাদেশে। ফলে এখানে শয়তানের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। জানিনা কখন আল্লাহপাক এদেশকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করবেন। মানুষের আইনই মানুষকে দাসে পরিণত করেছে। সংবিধানে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন শাসক যদি ফেরাউন বা নমরুদ হয় তাহলে সংবিধান কি করবে? শাসকের যদি খোদাভীতি না থেকে তাহলেতো সে শয়তান ও জালেম।
এইতো ক’দিন আগেই বিজেপি নেতারা ভারতের সংসদে বলেছেন ভারতের সকল নাগরিকই হিন্দু। ভারতে থাকতে হলে হিন্দু হতে হবে। আমরাতো হিন্দু শব্দ দ্বারা বুঝি হিন্দু ধর্ম। একজন রাজনীতিক কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন আমি ভেবে পাইনা। উদ্দেশ্য ভারতের সমাজিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করা। হিন্দু ছাড়া বাকি ধর্মের লোকদের অধিকারকে অস্বীকার করা। হিন্দুস্তান, ভারত বা ইন্ডিয়া একটি দেশের নাম, একটি ভৌগলিক এলাকার নাম। এখানে বহু বর্ণের ও বহু ধর্মের মানুষ বাস করে। তাহলে সবাই কেমন করে হিন্দু ধর্মের নামে পরিচিত হবেন? বাংলাদেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ভোগলিক কারণে আমরা সবাই বাংলাদেশী, কারণ আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। নাগরিকদের ৯০ ভাগই হচ্ছেন মুসলমান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে সবাইকে বাংগালী বানাতে চায়। এর উদ্দেশ্য ধর্মী পরিচয়টাকে গৌণ করে দেয়া। ভারত ও চায় বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ধর্মীয় পরিচয় ভুলে গিয়ে বাংগালী হয়ে যাক। রাজনীতিকদের এসব রাজনৈতিক ভন্ডামীর কারণেই জগতে আজ অশান্তি চলছে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর দোষ দেয়া হচ্ছে ধর্মকে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


আমার শিক্ষক মুসা ভাই / এরশাদ মজুমদার
কথার কথা নয় বা সামাজিকতা নয়। মুসা ভাই সত্যিই আমার সাংবাদিকতার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে আমি পাকিস্তান অবজারে নবীশ ইকনমিক রিপোর্টার হিসাবে যোগ দেই। তখন মুসা ভাই লন্ডনে ছিলেন সাংবাদিকতায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহনের জন্যে। বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব জামাল জাহেদী সাহেব। জাহেদী সাহেব প্রখ্যাত সিভিল সার্ভেন্ট মীজানুর রহমান সাহেবের ছেলে। মিজান সাহেব এক সময় ফেণীর মহকুমা হাকিম বা এসডিও ছিলেন।মিজান সাহেবের নামে ফেণীতে মিজান ময়দান নামে একটি ঈদগাহ আছে এখনও। মিজান সাহেবই ফেণীতে কামাল আতাতুর্ক হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
মুসা সাহেব লন্ডন থেকে ফিরে এলে জাহেদী সাহেব এডিটোরিয়ালে চলে যান। পরে তিনি করাচীর ডন পত্রিকায় যোগ দিয়েছিলেন। আমি তখনও শিক্ষানবীশ। অবজারভারের অর্থনৈতিক বা বাণিজ্য পাতার দায়িত্বে ছিলেন শামসুল হুদা সাহেব। ইনি ছিলেন অমায়িক মানুষ। একই সময়ে তিনি তুলারাম কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। হুদা সাহেবের আদর যত্নেই আমি কাজ শিখেছি। সে সময়ে অবজারভারে নামজাদা সাংবাদিকরা কাজ করতেন। বিদ্যাবুদ্ধিতে সবাই ছিলেন চৌকস। আমি ছিলাম সবচেয়ে কম পড়ালেখা জানা। সেজন্যে সব সময়ে আমি সব সময় ভীত থাকতাম। সে ভয় আমার আজও যায়নি। কিছু লিখলেই মনে হয় তেমন ভাল হয়নি। আমার কপি গুলো দেখে দিতেন বেবী ভাই। তাঁর পুরো নাম সৈয়দ মাহবুব আলম চৌধুরী। এ রকম মিষ্টি মানুষ আমাদের সমাজে এখন খুবই কম। প্রাসংগিক নাম গুলো উল্লেখ করলাম তখনকার সময়কে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্যে।
মুসা ভাইয়ের মতো ডাকসাইটে নিউজ এডিটর সারা পাকিস্তানে আর কেউ ছিলেন না। তাঁর হাতে যাঁরা পড়েছেন কাজ শিখতে তাঁরা বাধ্য। না হয় কাজ ছেড়ে চলে যেতে হতো। আগেই বলেছি আমি নবীশ ইকনমিক রিপোর্টার হিসাবে কাজ করতাম। তখন বাংলা কাগজে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা হতোনা বললেই চলে। মর্ণিং নিউজে আরশাদ সাহেব অর্থনৈতিক পাতার দায়িত্বে ছিলেন।আর আজাদ ছিলেন রিপোর্টার। দুজনই খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমি তাঁদের অনেক জুনিয়র। কিন্তু কাজ করতে হতো তাঁদের সাথে। মর্ণিং নিউজের অর্থনৈতিক রিপোর্টিং ছিল সরকার ঘেঁষা। ফলে ইকনমিক ডিসপ্যারিটি তারা কোন কথা বলতোনা। অবজারভার ছিল পূর্ব পশ্চিমের ইকনমিক ডিসপ্যারিটির মুখপাত্র। বাংলা কাগজ গুলো এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল। বিলেত থেকে ফিরে এসে মুসা ভাই অবজারভারের ম্যাকআপ ও ফটো এডিটিংয়ে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসলেন। কাগজের চেহারা বদলে গেল। এর আগে অন্যান্য কাগজের বার্তা সম্পাদকেরা ওই ট্রেনিং এসেছিলেন। মুসা ভাই ছাড়া আর কেউ ট্রেনিং কাজে লাগাননি বা লাগাতে পারেননি। মুসা ভাই ছিলেন খুবই ইনোভেটিভ ও ক্রিয়েটিভ। ফলে পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি সাংবাদিক হিসাবে এ দেশের অনেক পরিবর্তনে তাঁর অবদান রয়েছে।
গাড়িতে বাংলা নাম্বার প্লেট চালু করিয়েছিলেন তিনি। যতদূর শুনেছি, ঘটনাটা এ রকম। জগত বীক্যাত সাঁতারু ব্রজেন দাস মুসা ভাইয়ের বন্ধু। সাঁতারু ব্রজেন দাসকে প্রমোট বা উত্‍সাহিত করেছেন মুসা ভাই। ইংলিশ চ্যানেল ক্রস করে দেশে ফিরার সময় ব্রজেন দাস একটি নতুন সিংগার গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। ঢাকার রাস্তায় সম্ভবত এটাই ছিল প্রথম সিংগার গাড়ি। মুসা ভাই ঘটনাটা অর্গেনাইজ করেছিলেন। বাংলায় নাম্বার প্লেট লাগিয়ে ব্রজেন দাস রাস্তায় নেমেছেন। তখনও বাংলায় নাম্বার প্লেট লাগানোর আইন চালু হয়নি। একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঠিক করা হয়েছিল ব্রজেন দাসের গাড়িকে তিনি আটকাবেন বাংলা নাম্বার প্লেট লাগাবার অপরাধে। আমার বাল্যবন্ধু মোয়াজ্জেম হোসেন বুলুকে বলা হয়েছিল ছবি তোলার জন্যে। স্থান কাল পাত্র সবই ঠিক। যথারীতি ঘটনা ঘটলো। পরেরদিন ছবি সহ খবরটি ছাপা হয়েছিল। সরকার সেদিনই প্রেসনোট দিয়ে জানালো যে, বাংলায় নাম্বার প্লেট লাগানো যাবে। একই ভাবে সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের আন্দোলনও তিনি চালু করেছিলেন।
তাসখন্দে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর খবরটি অবজারভার ছাড়া সারা পাকিস্তানের অন্য কোন কাগজ ছাপতে পারেনি। মুসা ভাইয়ের অভ্যাস ছিল কাগজ ছাপা শুরু হওয়ার খবর না জেনে শুতে যেতেন না। প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার হাল হকিকত পাঠকদের জানাবার জন্যে একটি সিরিজ চালু করেছিলেন। সে সিরিজের নাম ছিল ‘মিষ্টার অবজারভার ভিজিটস ইউর এরিয়া’। এর ফলে অবজারভারের সার্কুলেশন বেড়ে গিয়েছিল। কাগজের জনপ্রিয়তাও বেড়ে গিয়েছিল।
খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে পত্রিকার মালিক হামিদুল হক চৌধুরী ও সম্পাদক আবদুস সালাম বার্তা সম্পাদক হিসাবে হিসাবে মুসা ভাইকে যোলয়ানা স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। বার্তা বিভাগে সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও মুসা সাহেবের কথাই শেষ কথা ছিল। মন্ত্রী বা সরকারী নেতাদের খবর বা ছবি ছাপা বা না ছাপার ব্যাপারে মুসা ভাইয়ের সিদ্ধান্তই ফাইনাল ছিল। বার্তা বিভাগে যাঁরা কাজ করতেন তাঁরা সবাই একটু বাম রাজনীতি ও চিন্তার ঘরানার লোক ছিলেন। মুসা ভাই নিজেও বাম ঘরাণার লোক ছিলেন। বংগবন্ধুর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেই তিনি ৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন। বংগবন্ধু চারজন সিনিয়ার সাংবাদিককে খুবই ভালবাসতেন। এনরা হলেন, মুসা ভাই, ফয়েজ ভাই, মুকুল ভাই(এম আর আখতার মুকুল) ও গাফফার ভাই। ৬০ সাল থেকেই এঁরা বংগবন্ধুকে সমর্থন করতে ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার জন্যে তখন বংগবন্ধুই একমাত্র নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ হওয়ার পর চারজনই বংগবন্ধুর আনুকুল্য লাভ করেছেন।
মুসা ভাই সাংবাদিক হিসাবে সারা জীবন গণ মানুষের স্বার্থের পক্ষে ছিলেন। গণ বিরোধী কোন খবর তিনি প্রকাশ করতেন না। তিনি সময় প্রতিবাদী চরিত্রের মানুষ ছিলেন। এ কারণেই আমি সব সময় মুসা ভাইয়ের ভক্ত ছিলাম। মুসা ভাইয়ের লেখা ‘আমার মুজিব ভাই’ বইতি পড়ে আমি সমালোচনা করে একটি কলাম তৈরি করেছিলাম। যা নয়া দিগন্তে ছাপা হয়েছিল। প্রকাশিত হওয়ার পর আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম মুসা ভাইয়ের সামনে পড়লে আমার কি অবস্থা হবে। একদিন ক্লাবে তাঁর সাথে দেখা হয়ে গেলে আমি পালবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি ডাক দিলেন এবং বললেন,‘মন্দার তোঁয়ার লেখা পড়েছি’। আর কিছু বললেন না। তাঁর লেখার সমালোচনা করলে তিনি হাসতে হাসতে বলতেন,‘হড়স কা’। তিনি সব সময় আমার মুরুব্বী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সাপ্তাহিক নিউ নেশনের উপদেষ্টা হওয়ার পর আমাকে ডাক দিয়ে জানতে চাইলেন ,আমি নিউ নেশনে কাজ করবো কিনা। আমি না করতে পারিনি।
একদিন প্রেসক্লাবে দেখা হলে বললেন, মন্দার তুঁই সব সেমিনারেই আঁর কথা এত বেশী কিল্লে ক? আমি বললাম আমি আপনার কথা ভুলতে পারিনা। মুসা ভাই স্কুলে জীবনে ফেণীতে তাঁর ছোট মামা আবদুল অদুদ সাহেবের বাসায় থেকে পড়ালেখা করেছেন। অদুদ সাহেব ছিলেন একজন নামজাদা আইনজীবী। আমার বাল্যবন্ধু মোয়াজ্জেম হোসেন বুলুর বাবা। তিনি এশিয়ার দার্শনিক সম্পাদক আবদুস সালাম সাহেবের ছোট ভাই। মুসা ভাই স্কুল জীবনেই রাজনীতির সাথে জড়িত হন। তিনি ফেণীর প্রখ্যাত রাজনীতি্বিদ খাজা আহমদ সাহেবের সাথে কাজ করতেন।
এ দেশের ক্রীড়া জগতেও মুসা ভাইয়ের বড় অবদান রয়েছে। তিনি ব্রাদার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। শুনেছি তিনি স্পোর্স রিপোর্টার হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। অবজারভারে যোগ দেয়ার পর আমি মাঝে মাঝে সালাম সাহেবের নাসিরুদ্দিন লেনের বাড়িতে বুলুর সাথে থাকতাম।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ডিসপ্যারিটি বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রধাম মুখপত্র ছিল অবজারভার। সোজা ভাষায় বলতে গেলে মুসা ভাই বার্তা সম্পাদক হিসাবে ডিসপ্যারিটি বিষয়ক রিপোর্ট গুলোকে প্রায়ই লীড ষ্টােরি করতেন। বংগবন্ধু অবজারভারের রিপোর্টকে তাঁর জনসভার ভাষণের প্রধান উপাত্ত মনে করতেন। অবজারভারের নীতিই ছিল পূর্ব পশ্চিমের ডিসপ্যারিটিকে জনগণের সামনে তুলে ধরা। এ কারণেই অবজারভার ছিল সারা পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় কাগজ।
লেখক:কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

Read Full Post »


বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ও জয় সাহেবের জয়বাংলা শ্লোগাণ / এরশাদ মজুমদার

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে যে ধরণের ভাষা ও অংগ ভংগী চালু হয়েছে তা নিয়ে আগামী দিনের গবেষকরা কি ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করবেন তা এখন থেকেই কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তবে রাজা বাদশাহ ও শাসকদের জীবিত কালে যে ইতিহাস বা সাহিত্য রচিত হয় তার ৮০/৯০ ভাগই তোষামোদী। যেমন ধরুণ, রামায়ন মহাভারতের কাহিনী। তখনকার দিনে কবি সাহিত্যিকরা সাধারন মানুষের কথা তেমন বলতেন না। রাজা বাদশাহ বা শাসকদের কাহিনীই ছিল দেশের কাহিনী। রাম একজন বিদেশী রাজা। তিনি ভুমিপুত্র বা স্বাদেশী রাজাকে পরাজিত করে এদেশ দখল করেছেন। কবিরা রামকে দেবতা বানিয়ে মহাকা্ব্য রচনা করেছেন। রাবণ বা মহিষাশূরকে বানিয়েছেন রাক্ষস বা গণশত্রু। তাই বিজয়ী দূর্গাকে বানানো হয়েছে দেবী। মহিষাশূরের স্থান হয়েছে দেবীর পদতলে।
বাংলাদেশের চলমান সময়ে শক্তিধর নেতাদের জীবনী বা তাঁদের কর্ম নিয়ে লিখতে গেছে তোষামোদী করা ছাড়া কোন উপায় নেই। কিছু মানুষ আছে জন্মগত ভাবেই তোষামোদী করে ভাগ্যের পরিবর্তন করে। রামায়ন মহাভারতও তেমনি দুটি মহাকাব্য। যা এখন ব্রাহ্মণদের কল্যাণে ধর্মগ্রন্থের রূপ ও মর্যাদা লাভ করেছে। তাই বলা হয় সমকাল নিয়ে তখনি ইতিহাস রচনা করা যায়না। তোষামোদরা যে সব বা ইতিহাস রচনা করেন তা হয়ত আগামী দিনে কেউ এগিয়ে এসে বলবে ইতিহাসকে পূণর্মূল্যায়ন বা পূণর্নির্মান করতে হবে। ইতিহাসকে শোধরানোও যেতে পারে।
অখন্ড ভারতের ইতিহাসে দুই মহানায়ক হচ্ছেন নবাব সিরাজ উদ দৌলা ও বাহাদুর শাহ জাফর। ষড়যন্ত্রের পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজকে হারিয়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী অখন্ড বাংলাদেশ দখল করে শুধুমাত্র তাদের ব্যবসায়ী স্বার্থ রক্ষা করার জন্যে। শুল্কমুক্ত অবাধ ব্যবসা করার জন্যেই কোম্পানী নবাবের কিছু পারিষদ , বড় ব্যবসায়ী ও ব্যান্কারকে হাত করে নবাবকে যুদ্ধে পরাজিত করে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন। শুরু হলো ভারতের পরাজয়ের দিন। ১৮৫৮ সালে তারা দিল্লী দখল করে। এই একশ’বছর ইংরেজ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে দেশ প্রেমিক মুসলমানেরা। হিন্দুরা রাজা মহারাজা ও প্রভাবশালীরা মনে করতেন বিদেশী মুসলমানদের সরিয়ে বিদেশী খৃষ্টানরা ক্ষমতা দখল করেছে। এতে হিন্দুদের কিছুই করার নেই। হিন্দুদের এই মনোভাবের জন্যে ইংরেজরা ১৯০ বছর ভারতকে শোষণ করেছে। এদেশ থেকে বিদায় নেবার সময় হিন্দু নেতাদের সহযোগিতায় ভারতকে দ্বিখন্ডিত করে যায়। কিন্তু অখন্ড ভারতকে খন্ডিত করার দায়টা চাপিয়ে দেয় মুসলমানদের উপর।
হিন্দু ও ইংরেজ ঐতিহাসিক গণ দলিল দস্তাবেজ দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছে মুসলমানদের কারণে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেংগে তৃতীয় খন্ড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোগলরা দিল্লীর মসনদে বসার পর ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করে এক ভারতে পরিণত করে। এর আগে ভারত ছিল বহু রাজ্যে বিভক্ত একটি দেশ। ইংরেজরা দখল করার সময়েও ভারত আবার বহু রাজ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবীও মনে করেন ভারত বিভক্তির জন্যে মুসলমানরাই দায়ী। এসব বুদ্ধিজীবী ও ঐতিহাসিকদের অনেকেই মনে করেন পাকিস্তান সৃষ্টি ভুল ছিল। যা দিল্লীও মনে করে। তাই দিল্লী ৪৭ সালেই পরিকল্পনা গ্রহন করে পাকিস্তান ধ্বংস করার জন্যে। দিল্লীর এই পরিকল্পনার প্রথমিক বাস্তবায়ন হয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারবে ভারত আগামী দিনে আর কত ভাগ হবে। এখন ভারতের বহু রাজ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি পীচ টিভিতে বিচারপতি হোসবেত সুরেশ বলেছেন, দিল্লীর ভুল নীতিই বিভিন্ন জাতির মুক্তি আন্দোলনকে জোরদার করেছে। তিনি বলেছেন, মানবাধিকার ও মুক্তি আন্দোলনকে সন্ত্রাসী আন্দোলন আখ্যা দিয়ে কঠোর ভাবে দমনের নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছে ভারত সরকার।
আমার বদ অভ্যাস হলো কোন বিষয়ে লিখতে বা বলতে গেলে পেছনের কথা বেশী বলি। আমার মনে হয় পেছনের কথা বললে বিষয়টা বুঝতে পাঠকের সুবিধা হয়। আজকের বিষয়টা হলো জিন্দাবাদ আর জয় বাংলা শ্লোগান নিয়ে। আমরা জয় বাংলা শ্লোগানটা প্রথম শুনি ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান হিসাবে। ছাত্রলীগের কোন একটি অংশ এই শ্লোগানটি চালু করেছিল। বলা হয় এই শ্লোগানটি এসেছে দিল্লী থেকে। ৭ই মার্চের ভাষণের শেষে বংগবন্ধু জয় বাংলা ,জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ জয় পাকিস্তান মুছে দিয়েছে। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নেতারা জিয়ো সিন্ধ শ্লোগান দিয়েছিলেন। ১৯৩৭/৩৮ সালের দিকে হিন্দু নেতারা জয় হিন্দ শ্লোগান দিলে মুসলমানেরা সে শ্লোগান গ্রহণ করেনি। বরং নতুন শ্লোগান ‘জয় হিন্দ,লুংগি খুলে ধুতি পিন্দ’ দিয়েছিল। এখানে লুংগি ছিল বাংলার সাধারন মুসলমানের পোষাকের প্রতীক। বিষয়টা কিন্তু অখন্ড ভারতের ছিলনা। ভারতের সর্বত্র সবাই ধুতি পরেনা। নেহেরুজী কখনই ধুতি পরেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদী সাহেবও নিয়মিত ধুতি পরেন না। ধুতি কখনই ভারতের জাতীয় পোষাক ছিলনা। পশ্চিম বাংলায়ও এখন সবাই ধুতি পরেনা।
সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের নামের ওয়াজেদ শব্দটি তাঁর পিতার নামের একটি শব্দ। এটা বাংলা শব্দ নয়। সত্যি কথা হলো মুসলমানদের নামের মূল সুত্র হলো আল কোরআন। প্রত্যেকটা নামের একটা অর্থ আছে। নামের বাংলা আরবী নিয়ে সংসদে একবার কথা উঠেছিল। তখন মালেক উকিল সাহেব ছিলেন স্পিকার। যতদূর মনে পড়ে একজন সংসদ সদস্য বলেছিলেন বাংলা করলে মালেক সাহেবের নাম হবে ‘ভগবান দাস উকিল’। এখানেও উকিল শব্দটা বাংলা নয়। বাংলা ভাষায় এখন তেমন বাংলা শব্দ নেই। সবই বিদেশী শব্দ যা কালক্রমে বাংলা হয়ে গেছে। গ্রামে গঞ্জে, শহরে বন্দরে, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই বিদেশী শব্দ গুলো ব্যবহার করেন। কেউ কখনও প্রশ্ন করেননি কোনটা বাংলা আর কোনটা বাংলা নয়। জয় সাহেব ভুলে গেছেন যে আওয়ামী লীগ শব্দ দুটো বাংলা নয়। তাঁর মায়ের নামের একটি শব্দও বাংলা নয়। তিনি হয়ত ভুলে গেছেন আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে মুসলীম শব্দ নিয়ে। জন্ম লগ্নে আওয়ামী লীগের আদর্শ উদ্দেশ্য কি ছিল তা তিনি চট করে বলতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সেদিনের ইতিহাসটাও বদলে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাবভাব দেখলে মনে হয় বংগবন্ধুই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। ৭১ সালেই এই দলের জন্ম হয়েছে।
১৫৬২ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল নাগাদ ভারতের মুসলীম ফ্রিডম ফাইটারদের নিয়ে একটি বই লিখেছেন জি আল্লানা। তাতে মোজাদ্দেদ আলফেসানী সহ একুশ জন বিখ্যাত মানুষের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এরা সকলেই ছিলেন সর্ব ভারতীয় মুসলমান নেতা। বাংলার মুসলমান নেতাদের তালিকায় রয়েছেন, নবাব সলিমুল্লা সহ কুড়িজন নেতা। এনরা সকলেই ছিলেন আমাদের ঐতিহ্য। সকলেই ভারতের স্বাধীনতার জন্যেই লড়াই করেছেন। সেখানে কোথাও বংগবন্ধুর নাম নেই। ৪৭ সালে তিনি ছিলেন ছাত্র। এমন কি ছাত্রনেতা হিসাবেো তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন না। আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রতিষ্ঠা কালে তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক। পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার রাজীতিতে তাঁর উত্থান শুরু হয়েছে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমে। ছয় দফা ছিল মূলত: এক ধরণের কনফেডারেশনের প্রস্তাব। পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা বিষয়টা অনুধাবন করতে না পেরে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। ফলে পাকিস্তান ভেংগে গেল, ভারতের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে আর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে বৈষম্য অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান টিকবেনা একথা পাকিস্তানের জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়েছে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বংগবন্ধুর ভাষণ পড়লেও আপনারা জানতে পারবেন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকারের জন্যে খুবই কঠোর ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন। অনেক সময় ছাত্র ও উগ্রবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠিকে সন্তুষ্ট করার জন্যে তিনি জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছেন। ২৫শে মার্চের পরেও পাকিস্তানের কারাগারে থেকে তিনি অখন্ড পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।
আজ জয় সাহেব ইতিহাস ভাল করে না জেনেই বলে ফেলেছেন জয় বাংলা যারা বলেনা তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। জিন্দাবাদ শব্দটা নাকি পাকিস্তানী শব্দ। ভারতের মানুষও জিন্দাবাদ বলে। জয় সাহেবের কথা শুনে সব কিছু বাংলা করতে বাংলা ভাষা আর থাকবেনা। বাংলা একটি জীবন্ত বহমান ভাষা। তাই প্রতি নিয়তই এই ভাষা বিকশিত হচ্ছে। সুপ্রাচীন কালে ভারতের রাস্ট্র ও ধর্মীয় ভাষা ছিল সংস্কৃতি। বিজেপির অতি ভক্ত কিছু মানুষ সংস্কৃতিকে জীবিত করার জন্যে চেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। জনগণ গ্রহন করছেনা। একই ভাবে এক সময়ের বিখ্যাত ভাষা হিব্রু বা এ্যাসিরিয় ভাষা এখন মৃত। ইজরায়েল সে ভাষাকে জীবন দানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কি উর্দুর কাঁধে চড়ে হিন্দীকে সর্ব ভারতীয় ভাষা হিসাবে জীবন দানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু হিন্দীর নিজস্ব কোন লিপি বা স্ক্রিফট না থাকায় দেবনাগরী লিপি দিয়ে কাজ চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের ব্রাহ্মণ শাসক গণ। কিন্তু তারা উর্দু নির্ভরতা ত্যাগ করতে পারেন নি। কথা ছিল ভারতের লিংগুয়া ফ্রাংকা হবে উর্দু। কিন্তু প্যাটেল বললো উর্দু করা যাবেনা। কারণ উর্দু ভাষার লিপি হচ্ছে আরবী লিপির মতো ও নির্ভরশীল। বাংলাদেশেও আমরা পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে গিয়ে আরবী ফার্সী ও উর্দু ভাষা ত্যাগ করতে চলেছি।
পোষাক, খাদ্য, বাসস্থান, সাহিত্য, সংগীত,আদব হচ্ছে একটা জাতির ঐতিহ্য ও ইতিহাসের উপাদান। বাংগালী হিন্দুরা কচ্ছপ বা কাঁকড়া খান, কিন্তু বাংগালী মুসলমানেরা খায়না। আমরা গরুর মাংস বা গোশত খাই হিন্দুরা খায়না। জিন্নাহ সাহেবের কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল হিন্দু আর মুসলমানের ভিতর ফারাক কোথায়? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, হিন্দুরা গরু পুজা করে, আর মুসলমানেরা খায়। হিন্দুরা মুর্তি পূজা করে আর মুসলমানেরা মুর্তি পূজার বিরোধিতা করে। বাংগালী হিন্দু মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলে সিঁতিতে সিঁদুর দেয়, মুসলমান মেয়েরা দেয়না। আবার হিন্দু মুসলমান নারীরা ঘোমটা দেয়। বাংগালী মুসলমান ও হিন্দুর ভাষা এক হলেও সংস্কৃতি এক নয়। এমন ভারতের সকল হিন্দুর ভাষা, সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান এক নয়। একই ভাবে পৃথিবীর সকল মুসলমানের ভাষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পোষাক,খাদ্য এক নয়।
সজীব ওয়াজেদ সাহেবের জয়বাংলা শ্লোগানটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের শ্লোগান নয়, সে কথা আগেই বলেছি। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে মাত্র পাঁচ ভাগ ভোট পেয়ে জোর করে দেশ চালাচ্ছে। সেই সরকারের একজন মুখপাত্র জয় সাহেব যদি বলেন জয়বাংলা বাংলাদেশের মানুষের একটি ঐক্যবদ্ধ শ্লোগান তা কেউ মানবেনা। জয় বাবু বা সাহেব এখন একজন আমেরিকান সাহেব। তিনি যদি মাঝে মাঝে নানার দেশে এসে জাতির উদ্দেশ্যে এমন বয়ান দিলে কে মানবে? তাঁর নানাজীতো সারা জীবনই জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়েছেন। যখন বাংলাদেশের ১০০ ভাগ মুসলমান আল্লাহু আকবর বলেন তখন জয় সাহেবেরা বলেন আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহু আকবর বিশ্ব মুসলমানের জিকির। প্রতি দমে বা শ্বাসে আল্লাহু আকবর বলতে হয়। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী আজানের সময় কয়েকশ’ কোটি বার মসজিদের মিনারে আজানের মাধ্যমে আল্লাহু আকবর শোনা যায়। কোন মুসলমানই অনুবাদ করে আল্লাহয় আকবর বলেনা। একই ভাবে জয় সাহেবেরা আল্লাহকে সার্বভৌম বলে স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন মানুষ বা জনগণ সার্বভৌম। বাংলাদেশের সংবিধান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেনা। কেউ যদি আল্লাহ সার্বভৌম বলে তাহলে তাকে রাস্ট্রদ্রোহী বলা হবে।
আওয়ামী লীগ রাস্ট্র আর ধর্মকে আলাদা করে দেখে। তাঁরা বলেন রাস্ট্র সেক্যুলার( ধর্মহীন বা ধর্মমুক্ত) থাকবে। আওয়ামী লীগের শ্লোগান হচ্ছে রাস্ট্র সবার , ধর্ম যার। শ্লোগানটা খুবই আকর্যণীয়। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। মাত্র ১০ ভাগ লোকের কথা শোনার জন্যে ৯০ ভাগ মুসলমানকে রাস্ট্রীয় ক্ষেত্রে বা বিষয়ে ধর্মহীন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি মাইনরিটি চিন্তাধারার রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ মনে করে রাস্ট্রীয় ব্যাপারে মুসলমান বা ইসলামের কিছুই করার নেই। ইসলাম থাকবে মসজিদে, ঘরে, মাদ্রাসা মক্তবে। সংসদে বা সরকারী অফিসে ইসলাম প্রবেশ করতে পারবেনা। কারণ ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার।
চলমান বাংলাদেশে এখন আপনি বাইবেল, গীতা, তৌরাত, জবুর নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা বা বৈঠক করতে পারবেন। কিন্তু কোরআন বা ইসলাম নিয়ে কোন ধরণের আলোচনা করতে পারবেন না। করলে , আপনাকে জেহাদী বলে আদালতে চালান দিবে। আওয়ামী লীগ কখনই বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার প্রতিনিধিত্ব করেনা। এই দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা ধরণের অন্যায্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী বিতর্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা বাংলাদেশী কি বাংগালী তা আজও ঠিক হয়নি। আমরা কি ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র না জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র তারও কোন সুরাহা হয়নি। যেমন আমরা মুসলমান বলেই অখন্ড ভারত থেকে আলাদা হয়েছি। একই ভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি। একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। বাংলা বলে এখন কোন রাষ্ট্র বা দেশ নেই। আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। পৃথিবীর সব বাংগালীর স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম ভৌগলিক এলাকায় যাঁরা বাস করেন তারাই একটি রাষ্ট্র গঠণ করে নিজেদের আলাদা জাতিসত্তা গঠণ করেছেন। তাই আমাদের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশী। এই ভৌগলিক এলাকার বাইরে কোন বাংলাদেশী নেই। ভারতীয় পশ্চিম বাংলা রাজ্য বা প্রদেশের হিন্দুরা ভারতীয় হিন্দু, বাংলাদেশী হিন্দু নয়। ভাষা এক হলেও জাতি এক নয়। তাই বলছি, জয়বাংলা শ্লোগাণটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী একটি শ্লোগাণ। তবে এটা আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক শ্লোগাণ হতে পারে। তাহলেও জয় সাহেব বা বাবুকে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন তিনি এই শ্লোগাণকে বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগাণে পরিণত করতে চান।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »