মানব জমিন রইলো পতিত / এরশাদ মজুমদার
মানুষ কি এবং কেন? কিভাবে তার সৃষ্টি, কেনইবা তার প্রয়োজন এসব নিয়ে মানুষ ভাবে কিনা এ ব্যাপারে প্রশ্ন আছে। মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা জানার জন্যে বিজ্ঞান মনষ্করা অবিরাম গবেষণা ও ধ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে আল্লাহ, খোদা, গড, ঈশ্বর ভগবান, ইলোহা বা ইয়াহু আছে কিনা তা নিয়েও বৈজ্ঞানিকেরা ব্যস্ত আছেন। জগতে যত ধর্ম আছে সব ধর্মই মানুষের জীবন নীতি নিয়েই তৈরি হয়েছে। কেউ বলেন এই জীবন নীতি জগতে এসেছে ঐশী বাণীর মাধ্যমে। আবার অনেকেই বলেন, ধর্মীয় নিয়ম নীতি বা সামাজিক নিয়ম নীতি মানুষ নিজেই তৈরি করেছে সময়ের প্রয়োজনে। যেভাবেই হোকনা কেন মানুষের জন্যেই জগতে নিয়ম কানুন তৈরি হয়েছে। কিছু আইন মানুষের তৈরি আর কিছু আইন রয়েছে মানুষের জন্যে আল্লাহপাক তৈরি করেছেন। ক্ষমতাবানরা, রাস্ট্র বা সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে পাকা পোক্ত করার জন্যেও মেজরিটির জোরে আইন তৈরি করে। যেমন আমেরিকা কথায় কথায় ভিনদেশ আক্রমণ করার জন্যে আইন পাশ করে। আর আমেরিকাকে সমর্থন করে কিছু তাবেদার দেশ।
দৃশ্য বা অদৃশ্য সকল সৃষ্টিই সৃষ্টির অমোঘ নিয়মেই সৃষ্টি হয়েছে বলে বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন। আবার যারা ধর্ম ও ঈশৃ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন তাঁরা মনে করেন বা দৃঢভাবে বিশ্বাস করেন সব কিছুই করেছেন আল্লাহ ,ঈশ্বর বা গড। আল্লাহই মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষের জন্যে নিয়ম কানুন পাঠিয়েছেন। জগতের নব্বই ভাগ মানুষ মনে করেন সৃষ্টির র্সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন। তিনিই সকল সৃষ্টির পরিচালক। তিনিই ন্যায় নীতির ধারক বাহক। মানুষকে ন্যায় নীতি তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যুগে শিক্ষক, গুরু, নবী রাসুল,ইমাম বা নেতা পাঠিয়ে। তাঁরাই আমাদের ভাল মন্দের জ্ঞান দান করেছেন। তাঁরাই বলেছেন,মন্দকাজ করলে পরজগতে শাস্তি পাবে,ভাল কাজ বা ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠা করলে পুরষ্কৃত হবে।
খোদা বা আল্লাহ, ভগবান ও গড প্রদত্ত আইন বা ন্যায় নীতির ভিত্তিতেই জগতের বিভিন্ন দেশে ,রাস্ট্রে ও সমাজে আইন ও সংবিধান তৈরি হয়েছে। তবে মানুষের নৈতিক অবনতির কারণে ন্যায় নীতি প্রতিদিন পদদলিত হচ্ছে। শক্তিই এখন একমাত্র আইন বা ন্যায় নীতি। সবল দূর্বলকে ধ্বংস করবে এটাই নীতি। স্রষ্টা মানব রচিত এই আইনের বিরোধী। সকল ঐশী কিতাবই অত্যাচারিত, নিষ্পেষিতের পক্ষে।
মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্যেই কিতাবে নমরুদ, ফেরাউন,সাদ্দাদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। শাসক অত্যাচারী হলে তার পরিণতি কি জগতবাসীকে জানাবার জন্যেই ওই কাহিনীর কথা বলা হয়েছে। একই ভাবে বহুজাতির ধ্বংসের কথাও কিতাবে এসেছে। এখনও ধ্বংস হচ্ছে। ইতিহাসের বড় বড় রাজা, মহারাজা ও সম্রাটেরা এখন কই? চলমান শতাব্দীর একনায়কেরাই বা কই?
লালন কবি শুধু বাংলাদেশের নন। তিনি আধ্যাত্ববাদ বা মারিফাতের একজন গুরু। তিনিই বলেছেন, ‘মানব জমিন রইলো পতিত’। এর মানে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেনি। আমি বিগত দুই যুগ ধরে বলে আসছি বায়াদলিলের কথা। লোকে পড়ে আর শোনে, কিন্তু অন্তরে ধারণ করেনা। লোকে মুখে মুখে বলে বাংলাদেশে ১৫ কোটি মুসলমান আছে। আর আমি বলি আরবী নামধারী কিছু মানুষ। নাম আরবী হলেও একজন মানুষ মুসলমান নাও হতে পারে। আরবদেশ গুলোতে বহু অমুসলমান আছেন যাদের নাম আরবী। আবার বহু মানুষ আছেন যারা আল্লাহ, রাসুল(সা),কোরআন মানেন। কিন্তু তাঁদের অন্তরে এই মানাটাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করেন না। শুনেছি, আমেরিকান মুসলীম ধর্ম যাজক লুই ফারাহ খান বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, শুক্রবারে মসজিদে লোক উপচে পড়ে। মসজিদে জায়গা হয়না বিধায় লোকে রাস্তায় নামাজ পড়ে। বাংলাদেশকে লোকে মসজিদের দেশ বলে। আর রাজধানী ঢাকাকে মসজিদের নগরী বলে। প্রতিদিন নতুন নতুন মসজিদ স্থাপিত হচ্ছে। অথচ এদেশের মানুষ সীমাহীন ভাবে গরীব ও নিরক্ষর। ইসলাম দারিদ্র ও অশিক্ষাকে ঘৃণা করে। দারিদ্র মানুষকে কুফরির দিকে টেনে নেয়। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় দারিদ্র আর অশিক্ষা থাকতে পারেনা। তবুও এমন সীমাহীন দারিদ্র প্রমান করে বাংলাদেশের সমাজ, দেশ ও রাস্ট্র আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে চলেনা। মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, মুসলমানী জোশে রাতারাতি মসজিদ বানিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু পুরাণা পাপী মন বছরেও নামাজী হতে পারেননি। মূল উর্দু হচ্ছে, ‘ মসজিদতো বানা দি শব ভর মে ঈমাঁ কে হারারত ওয়ালো নে,মন আপনা পুরাণা পাপী থা বরছো মে নামাজী বন না সেকা ।’ আমিও ইকবালের সাথে একমত। মুসলমানেরা শতাব্দী ব্যাপী নামের মুসলমানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাপী মুসলমান শাসকগণ কোরআনের অনেক আয়াতের চর্চা বন্ধ করে রেখেছেন। কারণ ওইসব আয়াত বা বাণীতে আল্লাহপাক জালেমের বর্ণনা দিয়েছেন। জালেমদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। আমি এর আগেও লিখেছি জুলুমাত মানে অন্ধকার। মানে অশিক্ষা, জ্ঞানহীনতা, আলোহীনতা। আর শাসকগণ মনে করেন আল্লাহপাক যখন জালেমের কথা বলেন তখন শাসকদের বিরুদ্ধেই বলা হয়। আর আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলা মানেই হলো সমাজ রাষ্ট্র দেশ ও ব্যক্তি জালেম হয়ে গেছে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমরা যখন বলি ‘রাব্বানা জোলামনা আনফুছানা’ তখন অবশ্যই মনে করতে হবে আমরা স্বীয় আত্মার উপর জুলুম করে জালেম হয়ে গেছি। এর মানে হলো আমরা আমাদের আত্মার মালিক নই। তাই এর উপর জুলুম করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আত্মার মালিক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহপাক। আল্লাহপাকের নিষিদ্ধ পথে চলা মানেই শয়তানের পথে চলা। শয়তানের পথে চলা মানেই হচ্ছে অন্ধকারে চলা। যা আল্লাহপাক কখনই চান না। তাই আমরা হুকুম না মেনে ভুল পথে চলে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করি। আল্লাহপাক খাস দিলে তওবা করাটাকে খুব পছন্দ করেন। মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম(আ) তওবা করেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করে মুক্তি লাভ করেছিলেন। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, মানুষ বড়ই দূর্বলচিত্তের এবং ভুল প্রবণ। তাই মানুষ অতি সহজেই শয়তানের প্রলোভন ও প্ররোচনায় পড়ে যায়।
‘মানব জমিন রইলো পতিত’ মানেই হলো এ জমিন যখন জ্ঞান বা আলো বা ন্যায় দ্বারা কর্ষিত না হয় তখন মানব জমিনে ক্ষরা নেমে আসে। মাটির জমিনে পানি না হলে ফসল উত্পাদিত হয়না। যে ফসল পশু ও মানুষ খায়। পতিত জমিনে কোন ফসলই উত্পাদিত হয়না। একই ভাবে মানব জমিন পতিত পড়ে থাকলে ওই জমিনে শয়তানের আবাদ হয়। আর তেমন মানব জমিনে সকল প্রকার অন্ধকার নেমে আসে। অন্তরচক্ষু ছাড়া খোলা চোখে দেখলে মন হবে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। অগ্রগতিকে মানুষ বা চলমান সভ্যতাকে দেখে বিজ্ঞান সম্পদের আলোকে বিচারে। এ বিশ্বে যে জাতি বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও সম্পদের এগিয়ে গেছে তারাই বিশ্বকে অবনত ও পরাজিত করে রেখেছে। চলমান বিশ্বে মানুষ আর মানুষ নেই। মানুষ দানবে পরিণত হয়েছে। দানবীয় শক্তিকেই মানুষ নামের প্রাণীরা এখন পূজা করে। তাই এখন আমেরিকা সবচেয়ে বেশী পূজনীয়। বাংলাদেশের মতো দেশ গুলোর কাছে আমেরিকা এখন প্রধান প্রভু। শাসক গোষ্ঠি আমেরিকাকে পূজা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বিশ্ব এখন ক্ষমতা বা শক্তির দ্বন্ধে লিপ্ত। সে হিসাবে বিশ্ব এখন না ভাগে বিভক্ত। যে দেশে দেশ প্রেমিক নেতা আছে সে দেশের উন্নতি হচ্ছে।
আমরা শোষিত হচ্ছি এই কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি। পাকিস্তান শোষণ করেছে ২৩ বছর, তার আগে বৃটিশরা শোষণ করেছে ১৯০ বছর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী অখন্ড বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কোলকাতা বন্দর দিয়ে। আর তাদের সমর্থন করেছে নবাব বিরোধী বা বাংলার স্বাধীবতা বিরোধী একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবী। এখন বৃটিশ আমাদের মুরুব্বী ও বন্ধু । পাকিস্তান এখন আমাদের প্রধান শত্রু। ৭১ সালে আমরা ভারতের দেয়া জয়বাংলা শ্লোগাণ দিয়ে ভারতের অধীনে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনতা লাভের ৪৪তম বছর চলছে। এখনও এ দেশের মানুষ শোষিত নির্যাতিত। এখনও অশিক্ষা থেকে দেশবাসী মুক্তি লাভ করেনি। কোটি কোটি মানুষ বেকার। অসুস্থতায় প্রয়োজনীয় চিকিত্সা পায়না। গরীবেরা প্রতিদিন আরও গরীব হচ্ছে আর ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। আমরা যদি খাঁটি মুসলমান হতাম তাহলেও অশিক্ষা ও দারিদ্র থাকতোনা। শুধু বাংগালী হলেও দেশপ্রেম থাকলে বাংলাদেশের বর্তমান করুণ দশা হতোনা। যা মহাথির বা লী কুয়াঙ পেরেছে আমরা তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা তা পারিনি। এ দেশে রাজনীতি এখন একটি বড় ব্যবসা। দূর্ণীতি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নাগরিকরা প্রাণ দিচ্ছে। সীমান্তে প্রতিবেশী মুরুব্বী দেশ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেন,যারা মরছে তাদের পরিচয় সীমান্ত লংঘনকারী।
ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিন নারী শিশুরা ইজরায়েলী হামলায় নিহত হচ্ছে। আমেরিকা ও তার বন্ধুরা বলছে ইজরায়েলের অধিকার আছে আত্মরক্ষার। অপরদিকে হামাসের হাতে কোন অস্ত্র নেই। তথাকথিত এ যুদ্ধ কেন? ইজরায়েল কি চায়? কোথায় পায় তারা এমন সাহস? এখন ন্যায় কোথায়? মানবতা কোথায়? জাতিসংঘ বলে আমরা সদস্য দেশ গুলোর মতামতের ভিত্তিতে চলি। এর মানে শক্তিশালী দেশগুলো এ গণহত্যাকে সমর্থন করে। এমন কি ওআইসি মহাসচিব বলেছেন, সউদী আরবের কারণেই ওআইসি গাজায় ইজরায়েলী হামলার প্রতিবাদ করতে পারবেনা। বাদশাহর ভয় ইসলামের মজলুমেরা যদি একদিন বাদশাহী উত্খাতের আন্দোলনে নেমে পড়ে তাহলে বাদশাহীর কি হবে। আমি লজ্জিত যে রাসুলের(সা) দেশে এমন বাদশাহী আছে যা রাসুলের(সা) আদর্শকে সমর্থন করেনা। শুনেছি,বাদশাহ কোরআনের অনেক আয়াত ক্বাবার মসজিদে বা মসজিদে নবুবীতে পাঠ নিষিদ্দ করে দিয়েছেন। কারণ, ওই সব আয়াতে জালেমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে ন্যায় সংগত অধিকার বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সকল নবী রাসুলগণ সমকালের জালেম শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন গণ মানুষের মুক্তির জন্যে।সউদী আরব কোন ইসলামী রাস্ট্র নয়। এখানে বাদশাহী শাসন চলছে। বাদশাহীকে ইসলাম সমর্থন করেনা। যেমন করে বাংলাদেশ কোন ইসলামী রাস্ট্র নয়। এখানে কোরাণ সুন্নাহর কোন আইনকে রাস্ট্র মানেনা। এদেশের সংবিধান আল্লাহর সার্বভোমত্বকে মানেনা। বাংলাদেশের সংবিধান মানুষের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। সংবিধান বলে ইনসান হয় আকবর বা মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের সংবিধান কোরআন ও সুন্নাহর ধারে কাছেও নেই। এদেশে আল্লাহ সার্বভৌম বললে আদালতে মামলা হয়। রাস্ট্র মনে করে ধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। রাস্ট্রের নীতি হলো সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতা। সেক্যুলারিজমের মানে ধর্ম নিরপেক্ষ বলে জনগণকে ধোকা দিচ্ছে রাস্ট্র ও এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
এখন বিশ্বব্যাপী ন্যায় ও স্বাধীনতার লড়াইকে সন্ত্রাসী আন্দোলন হিসাবে আখ্যায়িত করছে শক্তিধর দেশ গুলো। কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সময় যেমন বেশ কিছু হটকারী ঘটনা ঘটেছে তেমনি ইসলামী আন্দোলনেও রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনেও তেমনি হটকারী সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন তেমন কোন হটকারী আন্দোলন নয়। বরং ইজরায়েল একটি ধর্মবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তাকে নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও পশ্চিমাদেশ গুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চলমান বিশ্বে তথাকথিত মানবতাবাদী, আধুনিক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিমান দেশগুলো ন্যায় অন্যায় নির্ধারন করছে। কথা না শুনলেই দমনই হচ্ছে এদের নীতি। কথা শুনলে ভিক্ষা পাবে। আমার তাবেদারী করলে সম্মানিত হবে এ নীতিতেই আধুনিক বিশ্ব ও জাতিসংঘ চলছে।
গাজায় নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে ইজরায়েল। কোন মানুষের হৃদয় এ হত্যাকান্ডকে সমর্থন করতে পারেনা। খোদ ইজায়েলেই এর জন্যে প্রতিবাদ হচ্ছে। পৃথিবীতে এমন একটি দেশ নেই যেখানে মানুষ প্রতিবাদ করছেনা। কিন্তু শাসকরা তা শুনতে পাচ্ছেনা। কেন শুনতে পাচ্ছেনা বা শুনতে চাইছেনা তা গভীর ভাবে অনুধাবন করা দরকার। ভারত কেন কাশ্মীরীদের দাবী মানছেনা? ভারত কেন প্রতিবেশী দেশ গুলোকে দমিয়ে রাখতে চায়? শেখ হাসিনা কেন ভারতের অনুগত থাকতে চায়? চীন কেন কেন মানুষের ধর্মীয় অধিকারকে দমিয়ে রাখতে চায়? কেন উইঘুর মুসলমানদের হত্যা করছে? কেন রোজাদার মুসলমানকে জোর করে ধরে মুখের ভিতর খাবার ঢুকিয়ে দিচ্ছে? এসব প্রশ্নের জবাব কোথায় আছে? বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ইনু সাহেব বলেন মুসলমান হলেই রোজা রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাংবাদিকদের গালাগাল করছেন। টকশোতে যারা অংশ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের নিশিকুটুম্ব বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই লেখাটির মূল বিষয় হলো মানুষ। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, মানুষের চেহারা হলে বা মানুষের মতো দেখালেই কেউ মানুষ হয়না। মানুষ কি ও কেন তা আল্লাহপাক বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর প্রেরিত গ্রন্থ গুলোতে। মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শয়তান থেকে হুঁশিয়ার বা সাবধান থাকার জন্যে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বেদনাহত হৃদয়ে বলছি ,কোথাও আল্লাহপাক বর্ণিত মানুষ দেখতে পাচ্ছিনা। পৃথিবীতে নাকি এখন ৭শ’কোটি মানুষরূপী লোক আছে।আমেরিকার শাসকগোষ্ঠি হচ্ছে হচ্ছে অসুর, কিন্তু দেবতা সেজে আছে। তারাই সত্যিকারের মানুষকে অসুর বলে গালাগাল দেয়। আমেরিকার জ্বালায় সারা পৃথিবী এখন অশান্ত হয়ে পড়েছে। কি কারণে আমেরিকা ও তার মিত্ররা পৃথিবীর সবখানে গোলযোগ বাধিয়ে রেখেছে? তার দানবীয় ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যে। আমেরিকার ফেরাউনী শাসনকে বাংলাদেশের ফেরাউনরাও সমর্থন করে। এদের সমর্থকরা রাসুল(সা) ও মুসলমানদের কটাক্ষ করে কার্টুন আঁকে,কুকুরের ছবি এঁকে মাথায় টুপি পরায়। আগেও বলেছি মানব জমিন আবাদ হচ্ছেনা বাংলাদেশে। ফলে এখানে শয়তানের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। জানিনা কখন আল্লাহপাক এদেশকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করবেন। মানুষের আইনই মানুষকে দাসে পরিণত করেছে। সংবিধানে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন শাসক যদি ফেরাউন বা নমরুদ হয় তাহলে সংবিধান কি করবে? শাসকের যদি খোদাভীতি না থেকে তাহলেতো সে শয়তান ও জালেম।
এইতো ক’দিন আগেই বিজেপি নেতারা ভারতের সংসদে বলেছেন ভারতের সকল নাগরিকই হিন্দু। ভারতে থাকতে হলে হিন্দু হতে হবে। আমরাতো হিন্দু শব্দ দ্বারা বুঝি হিন্দু ধর্ম। একজন রাজনীতিক কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন আমি ভেবে পাইনা। উদ্দেশ্য ভারতের সমাজিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করা। হিন্দু ছাড়া বাকি ধর্মের লোকদের অধিকারকে অস্বীকার করা। হিন্দুস্তান, ভারত বা ইন্ডিয়া একটি দেশের নাম, একটি ভৌগলিক এলাকার নাম। এখানে বহু বর্ণের ও বহু ধর্মের মানুষ বাস করে। তাহলে সবাই কেমন করে হিন্দু ধর্মের নামে পরিচিত হবেন? বাংলাদেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ভোগলিক কারণে আমরা সবাই বাংলাদেশী, কারণ আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। নাগরিকদের ৯০ ভাগই হচ্ছেন মুসলমান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে সবাইকে বাংগালী বানাতে চায়। এর উদ্দেশ্য ধর্মী পরিচয়টাকে গৌণ করে দেয়া। ভারত ও চায় বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ধর্মীয় পরিচয় ভুলে গিয়ে বাংগালী হয়ে যাক। রাজনীতিকদের এসব রাজনৈতিক ভন্ডামীর কারণেই জগতে আজ অশান্তি চলছে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর দোষ দেয়া হচ্ছে ধর্মকে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com