Feeds:
Posts
Comments

Archive for June, 2013


কেন লিখি আর কেন লিখিনা / এরশাদ মজুমদার

কেন লিখি আর কেন লিখিনা ? এ প্রশ্নের কি তেমন কোন শক্তিশালী বা জোরালো জবাব আছে? হয় আছে, কিন্তু আমি জানিনা। আমি বরং উল্টো প্রশ্ন করবো কে লিখছেন, কেন লিখছেন আর কি লিখছেন? লেখাপড়া করতে হলে লিখতে শিখতে হবে। যে ভাষায়ই হোক,সে ভাষার হরফ বা অক্ষর জানতে হবে এবং চিনতে হবে। অ আ চিনতে হবে এবং লিখতে জানতে হবে। তাহলেইতো আম জাম লিখতে পারা যাবে। আমাদের দেশে বেশীর ভাগ মানুষ এখনও সাক্ষর নন। মানে নিজের নাম লিখতে জানেন না। আর কিছু মানুষ আছেন তাঁরা লিখতে পড়তে পারেন ও কিছু হিসাব নিকাশ করতে পারেন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ হবে কিনা জানিনা। রাজনৈতিক কারণে সকল সরকারই দাবী করেন দেশের ৬০ ভাগ মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। তবে শুনেছি শিক্ষিত বেকার রয়েছেন দেড় কোটিরও বেশী। নারী শিক্ষা বাড়তে শুরু করেছিল,তাও এখন স্থবির হয়ে গেছে। দেশের বেশীর ভাগ মানুষই দরিদ্র আর নিরক্ষর। দারিদ্রের কারণে লেখাপড়া করতে পারেনা। পাকিস্তানের ২৩ বছর সহ ধরলে স্বাধীন ও আধা স্বাধীন অবস্থার ৬৫ বছর পার হতে চলেছে।পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল গরীব মুসলমানদের উন্নতির জন্যে। ইংরেজ বা বৃটিশ আমলে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশী শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছে। তন্মধ্যে বাংগালী মুসলমানেরা সবচাইতে বেশী বেশী শোষিত হয়েছে। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লেই জানা যায় বাংলায় বৃটিশরা কি পরিমান শোষণ করেছে। দাদাভাই নওরোজীর বই পড়লেও জানা যায় ভারত কি পরিমাণ শোষিত হয়েছে বৃটিশ আমলে। তাই ভারতকে ভেংগে দু’টি রাস্ট্র করতে হয়েছে। যদি কেউ প্রশ্ন করেন অখন্ড ভারত রক্ষা করা যেতো কিনা? আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলবো অখন্ড ভারত রক্ষা করা যেতে যদি কংগ্রেস ও হিন্দু নেতারা আরেকটু উদার ও সহনশীল হতেন। বৃটিশদের নেতৃত্বে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। আর মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। তবুও সকল মুসলমান নেতা মুসলীম লীগের ছায়াতলে আসেনি। জিন্নাহ নিজেই মুসলীম লীগে এসেছেন অনেক পরে যখন দেখলেন,কংগ্রেসে থেকে মুসলমানদের দাবী আদায় করা যাবেনা। ১৯০৬ সাল থেকেই মুসলমানরা নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে আলাদা প্ল্যাটফরম থেকে কথা বলতে শুরু করে।
যাক এসবতো প্রাসংগিক কথা। শুরু করেছি লেখালেখির বিষয়ে কথা বলার জন্যে। তখনি এসেছে শিক্ষা ও দারিদ্রের প্রসংগ। দারিদ্র থাকলে শিক্ষা পাওয়া যাবেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় প্রশ্ন উঠেছিল পূর্ববংগের মুসলমান চাষাভুষার সন্তানদের লেখাপড়ার প্রয়োজন আছে কিনা। ওরা যদি লেখাপড়া করে তাহলে চাষবাস করবে কারা। অখন্ড বংগের মধ্যে পূর্ববংগ ছিল কৃষি প্রধান মুসলমানের এলাকা। এ অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও ছিল হিন্দু জমিদার ও ব্রাহ্মণ দ্বারা শোষিত ও অত্যাচারিত। ফলে এক সময় তাঁরা দলে দলে ইসলাম গ্রহন করে মুসলমান হয়ে যান। এ অঞ্চলের মানুষদের প্রতি বর্ণ হিন্দুদের আক্রোশ সব সময়েই ছিল। প্রশ্ন হলো,মুসলমান হয়েও কি তাঁরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন কি? আমার উত্তর না। ধর্মীয় ভাবে কিছুটা সামাজিক মুক্তি লাভ করলেও আর্থিক মুক্তি লাভ করতে পারেননি। আগেই বলেছি ইংরেজ আমলে তাঁরা এক ধরণের দাসে পরিণত হয়েছিল। ফলে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী। ইংরেজকে তাড়াবার যুদ্ধে নেমেছিলেন। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল নাগাদ এই ১৯০ বছরে স্বাধীনতার জন্যে যে দেড় কোটি মানুষ জীবন দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে সোয়া কোটিই ছিলেন মুসলমান। এবং তাঁরা ছিলেন অতি সাধারন মুসলমান। একই ভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁরা ছিলেন কৃষক শ্রমিক,ছাত্র যুবক, পুলিশ,আনসার,ইপিআর ,সৈনিক ও কিছু সেনা অফিসার। শহীদ রাজনীতিক বা তাঁদের সন্তানের সংখ্যা পাঁচ হাজারও নয়। প্রমানিত হলো যে,যে কোন দেশের স্বাধীনতা ও সমাজ বিপ্লবে সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রাখে অতি সাধারন পরিবারের সন্তানেরা। সামাজিক বিপ্লব ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রেও গরীব ও নির্যাতিতরা সবচেয়ে বেশী এগিয়ে এসেছে। তাঁরাই সবচেয়ে বেশী সত্যের জন্যে জীবন দিয়েছেন। চলমান সময়েও রাজনৈতিক পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখে সাধারন মানুষ।
যে কথা বলে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে কথা কি আজও বাস্তবায়িত হয়ছে? এখনতো পাকিস্তান নেই, বৃটিশরা নেই,এমন কি জমিদারেরাও নেই। তাহলে কে আমাদের শোষণ করছে? ৪২ বছরে কারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বা লুট করে নিজেদের সম্পদের রাজা বাদশাহ বানিয়েছে। কেন এমন হয়েছে? অনেক বিশ্লেষন,অনেক শাস্ত্রকথা আসতে পারে। বংগবন্ধুর আমলে জ্ঞানী শাস্ত্রজ্ঞরাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য বা মন্ত্রী ছিলেন। বংগবন্ধুরতো ইচ্ছা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করা। কিন্তু করতে পারেন নি। তিনি ছিলেন ভাবাবেগে আপ্লুত এক স্বাপ্নিক মানুষ। দেশ পরিচালনা আবেগ দিয়ে হয়না তা তিনি জানতেন না। ফলে অতি নিকটজনই তাঁর সারল্যকে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থে ব্যবহার করেছে। সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্যে তাঁর দলও ছিলনা, কর্মীও ছিলনা। তাছাড়া তিনি জীবনেও কখনও সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। সোনার বাংলা গঠণে প্রথম হোঁচটই খেয়েছে বাংলাদেশ তাঁরই আমলে। ৪৪ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দেশের বিরাট জনগোষ্ঠি এখনও শিক্ষা চিকিত্‍সা সহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। যে হারে এদেশে কিছু মানুষ নোংরা ধনীতে পরিণত হয়েছে সে হারে দারিদ্র কমেনি। আমরা চাইনা দেশে অতি ধনী অতি গরীব থাকুক। এরকম একটি বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। আলাদীনের চেরাগের মতো আমাদের সংবিধানে অনেক কথা আছে। ওসব কথার কথা। বাস্তবায়নের জন্যে নয়। ওসব কিতাবে আছে,কেউ মানেনা। আলকোরআনেও বহু মূল্যবান কথা আছে। মুসলমানেরা সব মানেনা। মানলেতো সবাই ভাল মানুষ হতো। কোরআনে আছে ওজনে কম দিওনা। বাংলাদেশের মুসলমানেরা এসব কথা শোনেনা। কোরআনে বলেছে মদ আর সুদ খেওনা। এখানে সরকার সুদ খায় আর মদের ব্যবসা করে। ভাল কথা বইতে থাকলে বা জানলেই হবেনা। ভাল কথা বাস্তবায়নের জন্যে ভাল মানুষ লাগবে। মালয়েশিয়ায় মহাথির, সিংগাপুরে লী কুয়াং ছিল বলে তাঁরা পেরেছেন। আমাদের তেমন কেউ নেই। আমরা অপেক্ষায় আছি এবং থাকবো শুধুমাত্র একজন ভাল মানুষের সন্ধানে।
শুরুতেই বলেছি কেন লিখি আর কেন লিখিনা। আমিতো লিখছি স্কুল জীবন থেকেই। প্রথম লেখা ছাপা হয়েছে ১৯৫১ সালে স্থানীয় কাগজে। তারপর থেকেই লিখে যাচ্ছি। পেশাদার লিখক বা সাংবাদিক হিসাবে যাত্রা শুরু করেছি ১৯৬১ সালে ইংরেজী কাগজ পাকিস্তান অবজারভারের মাধ্যমে। তারপর থেকেই লিখে যাচ্ছি। এখন আর রিপোর্ট বা সম্পাদকীয় লিখিনা। লিখি কবিতা আর উপন্যাস। খবরের কাগজে কলাম লিখি। কলাম লেখার ব্যাপারেও সীমাবদ্ধতা আছে। পত্রিকার পলিসি এবং সরকারের সহ্য ক্ষমতার ব্যপার রয়েছে। আমিতো আইউব খানের আমল থেকে দেখে আসছি। সরকারের সহ্য ক্ষমতা থাকলেও পত্রিকার মালিকের ক্ষমতা থাকেনা। তাই ইচ্ছা করলেও সবকথা বলা যায়না বা লেখা যায়না। কবিতা, গল্প উপন্যাসে কিছুটা স্বাধনতা বেশী থাকে। কবিতা হচ্ছে সভ্য সমাজের আয়না। যে জাতি যত উন্নত তার কবিতা ততই উন্নত মানের। নবী মোহাম্মদ(সা) বলেছেন,কবিরা হচ্ছে আল্লাহর ছাত্র। কবিরাও সমাজকে জাগরিত করার জন্যে কাজ করেন। তবে এখানে ও সমাজ ও সরকারের ভয় থাকে। ভৌগলিক কারণেও স্বাধীনতার হেরফের হয়। এইতো দেখুন, হঠাত্‍ করে অচেনা এক সেলফোন থেকে কল পেলাম। বহুদিন যোগাযোগ নেই বলে নাম্বারটা সেভ করা নেই। সেলফোনে কন্ঠ ভেসে আসলো-আমি অমুক বলছি। কেন যেন চট করে চিনে ফেললাম। বয়সের কারণে অনেক নাম মনে থাকেনা। অন্য মনস্কতার কারণেও অনেকের অতিচেনা গলা শুনে নাম মনে পড়েনা। অমুক বললো,সে নতুন কাগজ দৈনিক বর্তমানে যোগ দিয়েছে। নতুন কাগজের উদ্বোধনী সংখ্যার জন্যে একটা লেখা দিতে হবে হবে। সময় মাত্র দুদিন। আমি সাধারণত; না বলিনা। তাই বলে দিলাম নতুন লেখা পাঠাবো। সাথে বললাম,যেখানে সেখানে ছাপলে লেখা পাঠাবোনা। লেখা ছাপিয়ে বেইজ্বতি করোনা। তুমিতো জানো আমি পয়সার জন্যে লিখিনা। যা বিশ্বাস করি তাই লিখি। আরও বললাম লেখা ইমেইলে পাঠাতে পারবোতো ? আমার কাছে তোমাদের ইমেইল এড্রেস নেই। জানতে চাইলাম,আমার লেখা চাওয়ার ব্যাপারে উপরের অনুমতি আছে কিনা? অমুক বললো,অনুমতি আছে। সম্পাদক সাহেব আমার বন্ধু মানুষ। ব্যস্ত থাকার কারণে হয়ত আমাকে ফোন করতে পারেননি।। কিছু ক্ষণ পরেও অমুক ইমেইল ঠিকানাটা মেইল করে দিলো। এটা এই লেখার জন্মকথা।
সংবাদপত্রের লেখালেখিকে বলা হয় ‘লিটারেচার ইন এ্যা হারি’। মানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লেখা। তাই সংবাদপত্রের লেখা শুদ্ধ হয়ে উঠতে পারেনা। কিন্তু কি লিখবেন আর কি লিখবেন না তার একটি সীমাবদ্ধতা আছে। সেটা তৈরি হয় পত্রিকার প্রকাশনা নীতি সরকারের আইনের কারণে। জগতের সকল দেশেই নীতি নৈতিকতার ব্যাপার আছে। ইদানিং পশ্চিমা দেশ গুলোতে থার্ড মিডিয়া নামে শক্তিশালী মিডিয়ার জন্ম হয়েছে। থার্ড মিডিয়া কর্পোরেট হাউজ ও ব্যান্ক গুলোর আওতার বাইরে। এ গুলো চলে জনগণের চাঁদা বা দানের উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশেও অনলাইন পত্রিকা বা ম্যাগাজিন প্রকাশের সেষ্টা চলছে। সাথে সাথে এ গুলোকে নিয়ন্ত্রনের জন্যে সরকারী নজরদারীও বাড়ছে। এটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক সহনশীলতার অভাবে।মাঝে মাঝে শোনা যায় সরকার ইউটিউব বা ফেসবুক বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমাদের দেশের সংবাদপত্র , টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পত্রিকা গুলোর ১০০ ভাগই ব্যক্তি মালিকানায়। তাঁদের নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে। শোনা যায় অনেকেই আত্মরক্ষার জন্যে মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেছেন। এখন বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ গুলোর কাগজ ও টিভি চ্যানেল আছে। ঠিক এমনি এক সময়ে মিজান সাহেব মিডিয়া জগতে প্রবেশ করছেন। তিনি আমার কয়েকজন প্রিয় মানুষের বন্ধু বলে শুনেছি। নির্মাণ জগতে স্কাইস্ক্রেপার তৈরি করে নাম করেছেন। ইতোমধ্যে ব্যান্কের প্রতিষ্ঠাতাও হয়েছেন। তাঁর অর্থ সরবরাহের ঘাটতি হবেনা। এটা খুবই আশার কথা। কিন্তু পত্রিকা শুধু টাকা দিয়ে হয়না। যে কোন বিনিয়োগের জন্যে শুধু পুঁজিই শেষ কথা নয়। সত্যিকার মেধা ও যোগ্যতার সংমিশ্রণ করতে হয়। বিশেষ করে মিডিয়াতে যোগ্যতা ও মেধা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রুপার্ট মার্ডক মেধা আর যোগ্যতার সাথে সঠিক পুঁজির মিশাল দিয়েই মিডিয়া মোঘল হয়েছেন। বিল গেটস,স্টিভ জবস,ওয়ারেন বাফেট, ভারতের লক্ষ্মী মিত্তাল , রিলায়েন্স ও আদিত্য বিরলা মেধার সাথে পুঁজির সঠিক প্রয়োগ করেছেন। এরমধ্যে বিল গেটস ও স্টিভ জবস শুধু মেধা দিয়েই জগতকে আলোকিত করেছেন। বাংলাদেশে লতিফুর রহমান শামীমের ডেইলী ষ্টার ও প্রথম আলো সংবাদপত্র জগতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। এক সময় যা হামিদুল হল চৌধুরী সাহেব করেছিলেন।
বেশ কয়েক বছর আগে আমার শিল্পপতি বন্ধু একটি বাংলা দৈনিকের বিষয় নিয়ে আমার সাথে আলাপ করেছিলেন। কয়েকদিন কথা বলার পর বুঝতে পারলাম তিনি পত্রিকার ব্যাপারে সিরিয়াস না। টাকা আছে তাই পত্রিকা বের করা। শুরু থেকেই তাঁর ম্যানেজমেন্ট সমস্যা ছিল। তাই সেখানে আমার যোগদান আর হয়নি। কাগজটাও বিকশিত হয়নি। আমি সারা জীবন নিজের মন ও মননের বিরুদ্ধে পত্রিকায় কাজ করিনি। ১৯৭৩ সালে সালে যখন জনপদ প্রকাশিত হয় আমি ছিলাম চীফ রিপোর্টার। গাফফার ভাই ছিলেন সম্পাদক। তখন মালিকদের প্রতিনিধি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কার কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন জানলে ভাল হয়। কেননা, ভুলে আমাদের দাতাদের বিরুদ্ধেও রিপোর্ট হয়ে যেতে পারে। ভদ্রলোক মুচকি হাসলেন, বললেন সময়মতো তোমাকে জানাবো।
শেষের দিকে এসে আমি সংবাদপত্র জগতের তিনজন প্রবাদ পুরুষকে স্মরণ করছি। এঁরা হলেন সালাম সাহেব, মানিক মিয়া সাহেব ও জহুর হোসেন চৌধুরী সাহেব। এঁরা তিনজনই ছিলেন বাঘা সাংবাদিক। সারা পাকিস্তানে তাঁদের নাম ডাক ছিল। এর মধ্যে শুধু মানিক মিয়া সাহেব ছিলেন মালিক। বাকি দুজন ছিলেন চাকুরীজীবী। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের জন্যে এঁদের লড়াইয়ের কথা এদেশ কোনদিনও ভুলবেনা বলে আমি মনে করি। এখন লেখাটি প্রকাশের জন্যে ফেণীর সময়ে পাঠালাম। সম্পাদক শাহাদাত আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে আমার ফেণীর অভিভাবক। শাহাদাত অনুরোধ করেছে তার কাগজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর জন্যে লেখা পাঠাবার জন্যে। এখন চট করে কিছু লিখতে পারিনা। তবুও লেখার চাপ আছে। মনের বিরুদ্ধেই লিখি। শরীর কুলোয়না,তবুও।
সর্বশেষে আলকোরআন থেকে কিছু উল্লেখ করে লেখাটি শেষ করলাম। কালামে পাকে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘তোমরা অনুমান ভিত্তিক কোন সংবাদ পরিবেশন করোনা। অনুমান হচ্ছে মিথ্যার কাছাকাছি’।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.com

Read Full Post »


সাংবাদিকতার জীবনে সংসদের ভাষা ও সদস্যদের আচার আচরন নিয়ে বহু গল্প শুনেছি। কখনও কখনও নিজে উপস্থিত থেকেও শুনেছি লিখেছি। শুনেছি,বেংগল এসেম্বলীতে বিরোধী দলের নেতা স্পীকার বা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন,‘মাননীয় স্পীকার আমি কি সংসদের নেতাকে গাধা বলে সম্বোধন করতে পারি’? উত্তর এলো, না আপনি পারেন না। পরেরদিন কোলকাতার কাগজে ছাপা হলো খবরটি।
আরেকবার,স্যার খাজা নাজিমউদ্দিন যখন সংসদ নেতা তখন স্পীকার সাহেব জানতে চাইলেন,আলহাজ্ব আর হাজীর ভিতর পার্থক্য কি? নাজিমউদ্দিন সাহেব ছিলেন আলহাজ্ব আর চট্টগ্রামের নুর আহমদ চৌধুরী সাহেব ছিলেন হাজী। শেরেবাংলা ফ্লোর নিয়ে অনুমতি চাইলেন প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার জন্যে। স্পীকার অনুমতি দিলেন এবং শেরেবাংলা বললেন,মাননীয় স্পীকার সরকারী টাকায় হজ্ব করলে আলহাজ্ব হয় আর নিজের টাকায় হজ্ব করলে হাজী হয়। সংসদে হাসির রোল পড়ে গেল।
সম্ভবত ইন্দিরা গান্ধীর সময়। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন চলছে। দিল্লী পার্লামেন্টের এক বিরোধী দলীয় সদস্য গরুর গাড়িতে করে সংসদে গেলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি প্ল্যাকার্ড।লেখা ছিল,‘সেভ ফুয়েল’। পরেরদিন সারা ভারতের কাগজে প্রথম পাতায় ওটাই ছিল প্রথম ছবি।
আরেকবার দিল্লী পার্লামেন্টের এক সদস্য একটি পোলো শার্ট পরে সংসদে গেলেন। ওই শার্টে ছাপা ছিল,‘আই এ্যাম এ্যা কেজিবি এ্যাজেন্ট’। আরেক সদস্য স্পীকারের কাছে জানতে চাইলেন,পোলো শার্ট পরে সংসদে আসা যাবে কিনা? আর ওই সদস্য ছাপা লেখার বিষয়েও স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তখনও সংসদের সদস্যদের ড্রেসকোড বলে নির্দিষ্ট তেমন কিছু ছিলনা। যে সদস্য পোলো শার্ট পরে সংসদে গিয়েছিলেন তিনি দাঁড়িয়ে কিছু বলার জন্যে স্পীকারের অনুমতি চাইলেন। স্পীকার সাহেব অনুমতি দিলেন এবং ওই সদস্য ইংরেজীতে বললেন,মাননীয় স্পীকার,আমি ভারতে একমাত্র কেজিবি এ্যাজেন্ট। তাই এই পোলো শার্ট পরে এসেছি। আমার প্রশ্ন হলো,ভারতে কতজন সিআইএ এ্যাজেন্ট আছেন? ভারতের হোম মিনিষ্টার উত্তর দিয়েছিলেন। তখনই কাগজে ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশে ক’জন সিআইএ এ্যাজেন্ট আছেন। আমি আজ এখানে সেই নামগুলো উল্লেখ করলাম না।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময়ে সংসদের নেতা ছিলেন শা্হ আজিজ সাহেব। তিনি একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। ইংরেজী বাংলা ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। জ্ঞানও তেমনি। সে সময়ে সংসদে আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা ছিলেন। যতদূর মনে পড়ে আসাদ উজ জামান সাহেব বিরোধি দলের নেতা ছিলেন। এই সংসদে সবুর খান সাহেবও ছিলেন। সংসদে সবুর খান ইংরেজীতে তাঁর বক্তব্য পেশ করার সময় কিছু তরুণ সংসদ সদস্য বাংলা বাংলা বলে চীত্‍কার করতে থাকেন। পরে সবুর সাহেব যখন বাংলায় বলতে শুরু করলেন তখন দেখা গেলো অমন সুন্দর পরিশীলিত বাংলা আর কোন সদস্য কোনদিন বলতে পারেননি। শাহ আজিজ সাহেব একবার কৌতুক করে বললেন,আমার বন্ধু মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগে গিয়েও ন্যাপের মহিউদ্দিন বলে পরিচিত। তিনি একজন বামপন্থী নেতা। তবে এক সময় আমরা দুজনই মুসলীম লীগ করেছি। তিনি এখন বামপন্থী,কিন্তু হাজার হাজার বিঘা জমির মালিক। আর আমি ডানপন্থী ধনবাদী সমাজে বিশ্বাস করেও আমার কোথাও একবিঘা জমিও নাই।
আমরা শুনেছি, বংগবন্ধু সেশে ফিরে এসে দায়িত্ব গ্রহন করে জানতে পারলেন,তাঁর রাজনৈতিক বন্ধু ও মুরুব্বীদের অনেকেই জেলে আছেন,তখন তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সবার খোঁজ খবর নিলেন। প্রত্যেককেই নানাভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। খুব কম সময়ে সবাইকে জেল থেকে ছাড়াবার ব্যস্থা করেন। এখন সে সব দিন আর নেই। এখন রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ হচ্ছে শত্রু। ফলে যিনি বা যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন তাঁরা ছাড়া বাকিরা দেশের শত্রু। তাঁদের উপর চলবে অবিচার অত্যাচার।
সংসদে মানে পুরাণো বেংগল এসেম্বলী ও পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নেতাদের পারিবারিক ও চরিত্রগত বিষয় নিয়ে অনেক রসালো আলোচনা হতো। তবে সকল সদস্যই ভাষা ওশালীনতার বিষয়ে ছিলেন খুবই সাবধান। আফটার অল সংসদ সদস্যরাতো সবাই একের অপরের বন্ধু। এখন সে যুগ বাসি হয়ে গেছে। জুলফিকার আলী ভুট্টো খুবই তরুণ বয়সে পাকিস্তান বয়সে পাকিস্তানের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। পোষাক আসাক, চেহারা সুরতে ও বিদ্যায় সবচেয়ে বেশী স্মার্ট মন্ত্রী ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্যও ছিল খুবই ঈর্ষণীয়। শুনেছি তাঁর পিতা স্যার শাহনাজ ভুট্টো ছিলেন কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী। স্যার শাহনাজ ছিলেন নেহেরু পরিবারের খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু। সে কারণে ইন্দিরা আর জুলফিকে নিয়ে নানা গল্প মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তান পার্লামেন্টেও প্রশ্ন উঠেছিল জুলফি কার ছেলে/ স্যার শাহনাজ না জওহার লাল নেহেরুর। বৃটিশ রাজ পরিবার নিয়ে নানা কথা আছে। এমন কি বইও প্রকাশিত হয়েছে। বংবন্ধুর পারিবারিক পরিচয় নিয়েও অনেক মুখরোচক গল্প আছে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কোন এক অচেনা অজানা লোক বই লিখেছিল। ওইসব গল্প এখনও মানুষের মুখে মুখে আছে। আসলে ওসব শুধুই গল্প। নেতা নেত্রীদের নিয়ে নানা ধরণের গল্প ফাঁদতে সাধারন মানুষ পছন্দ করে।সম্প্রতি গান্ধীজীর জীবনে নারীর প্রভাব নিয়ে বিদেশ থেকেই বই বেরিয়েছে। আরেকটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে গান্ধীজী ছিলেন সমকামী। অথচ গান্ধীজী ভারতীয়দের জাতির পিতা। তাঁকে সবাই বাপুজী বলে সম্মান করে। ফিল্ড মার্শাল আইউব খানকে নারী কেলেংকারীর খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। অখন্ড বাংলার ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নারী ঘটিত ব্যাপার নিয়ে অনেক গল্প আছে। আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক নারীর প্রভাব ছিল বলে রবি জীবনীকারেরা বলেন। বাংলাদেশের সংসদে শাহ আজিজ সাহেব পাবনার মুসলীম লীগ নেতা মতিন সাহেবকে সুফি মতিন বলে সম্বাধন করতেন। লোকে তাঁকে ‘চোরা মতিন’বলে মসকরা করতো। তাই শাহ সাহেব তাঁকে সুফি বলতেন।
বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের সংসদে বেশ কয়েকজন নারী সদস্য গরম গরম ভাষন দিচ্ছেন। ওইসব ভাষণের ভাষার শালীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে ওইসব শব্ ব্যবহার করা যাবে কিনা। ফেণীর মেয়ে রানী বলেছেন,‘তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা লই ‘চুদুর বুদুর’ চইলতো ন’। প্রশ্ন উঠেছে চুদুর বুদুর শব্দটি শালীন কি অশালীন। কাল বিলম্ব না করে কোলকাতার আনন্দবাজার বলে দিয়েছে, শব্দটি অশালীন নয়। এমন কি গালিও নয়। এই শব্দের মানে হচ্ছে ‘বাড়াবাড়ি’।এই সংসদেই ইত্তেফাকের মানিক মিয়া সাহেবের ‘পাইন মারা গিয়াছে’শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। মানিক মিয়া সাহেব তাঁর মুসাফির কলামে শব্দট ব্যবহার করেছিলেন। এটি বরিশালের ভাষায় একটি গালি। নোয়াখালির ভাষায় ‘পোন’। আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে এসব অনেক শব্দই পাওয়া যায়।
ক’দিন আগে কবি হেলাল হাফিজের ‘কবিতা একাত্তর’বইয়ের একটি কবিতার দুই লাইন একজন মহিলা সংসদ সদস্য ব্যবহার করেছেন। কবিতাটির শিরোনাম ‘যার যেখানে যায়গা’।কবির পৈত্রিক বাড়ি নেত্রকোনা। কবিটি ছিল লোকজ ভাষায়। এ কবিতায় ‘চুতমারানি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তবে সংসদ সদস্য ঠিক যায়গায় কবিতাটি ব্যবহার করেননি। তবে আমাদের সংসদে এখন যে সব কথা বা তথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে তা একেবারেই সত্য বা তথ্য নির্ভর নয়। সংসদে ব্যবহৃত বিষয়, তথ্য উপাত্ত নিয়ে আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গবেষণা করতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা হতাশ হবে। সংসদে সদস্যরা যখন বক্তব্য পেশ করেন তা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমান ভিত্তিক। পবিত্র কালামে পাকে বলা হয়েছে,‘তোমরা অনুমান ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করোনা,অনুমান মিথ্যার কাছাকাছি। আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের রাজনীতি শুরু হয়েছে মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলীম লীগের মাধ্যমে। এর নেতারা বেশীর ভাগই ছিলেন উকিল মোক্তার ডাক্তার। সাথে ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্ররা। বলা হতো মুসলীম লীগ ছিল খাজা গজাদের পার্টি। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ছিল সম্মিলিত মধ্যবিত্তের বিজয় মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে। সেই থেকে বাংলাদেশ বা তত্‍কালীন পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগ আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এক সময়ে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলেন আদর্শগত বিরোধের কারণে। মাওলানা সাহেব ছিলেন নির্যাতিত গণ মানুষের নেতা। কালক্রমে আওয়ামী লীগ উঠতি মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের দলে পরিণত হলো। বাংগালী ছোট খাট উঠতি পুঁজির মালিকেরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে শুরু করে। মূলত: এটা ৬০ সালের দিকে। ফলে এক সময় আওয়ামী লীগ বাংগালীদের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাংগালী অবাংগালীর নির্বাচন। সে সময়ে আমরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছি। এমনিতেই পূর্ব বাংলা ছিল গরীব মুসলমানদের এলাকা। বেশীর ভাগ মানুষই কৃষক। এখানে জমিদার নবাব তেমন কেউ ছিলেন না। ইংরেজদের দখলদারিত্বের পর মুসলমানদের সকল দিক থেকেই পতন শুরু হয়। বংগবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন,‘বৃটিশরাজ মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল,কি করে রাতারাতি মুসলমানদের সর্বস্বান্ত করে হিন্দুদের সাহায্য করেছিল, মুসলমানরা ব্যবসা বাণিজ্য,জমিদারী,সিপাহির চাকুরী থেকে কিভাবে বিতাড়িত হলো–মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের দ্বারা পূরণ করতে শুরু করেছিল ইংরেজরা কেণ? মুসলমানরা কিছুদিন পূর্বেও দেশ শাসন করেছে,তাই ইংরেজকে গ্রহণ করতে পারে নাই। ষুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করতো। তিতুমীরের জেহাদ,হাজী শরিয়তউল্লাহ ফারায়েজি আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করেই আমি পাকিস্তান আন্দোলনের ইতিহাস বলতাম’। বংবন্ধু আরেক জায়গায় বলেছেন,‘হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারেও বাংলার মুসলমানেরা অতিষ্ঠ উঠেছিল। আর হিন্দুরা ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজদের তোষামোদ করে অনেকটা উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তিনি নিজেই বলেছেন,আর্থিক অনটনের কারণে তাঁর বাবা তেমন বেশী লেখাপড়া করতে পারেননি। যদিও এক সময়ে তাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল ছিল। তাঁর বাবা শেখ লুত্‍ফর রহমান এন্ট্রান্স পাশ করে অনেক কস্টে সেরেশ্তাদারের চাকুরী পেয়েছিলেন। সে সময়ে মুসলমানদের জন্যে এ ধরণের চাকুরীই ছিল। তাও আবার অনেক চেষ্টা তদবীর করে পেতে হতো।
ইংরেজ আমলে মুসলমান সমাজের অবস্থা বুঝাবার জন্যেই বংগবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে কিছু কথা উল্লেখ করলাম। প্রসংগত জিয়া সাহেব ও বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও কিছু কথা বলবো। কারণ বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে এই দুই পরিবার খুবই আলোচিত। বিশেষ করে আওয়ামী ঘরাণার লোকেরা জিয়া পরিবার নিয়ে নানা কটুক্তি ও অশালীন বক্তব্যের সাথে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে থাকেন। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের অজান্তে পারিবারিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় দিয়ে থাকেন। ক’দিন আগে সংসদে অপু উকিল নামের একজন সদস্যা খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছেন তদ্ধারা ওই মহিলা নিজের পরিবারের রুচির পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে বলেন,‘তোমরা উহাদের(মুর্তিপুজক) দেবদেবীকে গালি দিওনা,তাহলে তারাও রেগে গিয়ে তোমাদের আল্লাহকে গালি দিবে’। বাংলা ভাষায় প্রবাদ আছে,ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। আবার জ্ঞানীরা বলেন,গালি বা মন্দ কথা যিনি বা যাঁরা বলেন তা তাঁদের কাছেই থেকে যায়। আমরা বাল্যকালে স্কুলে মারামারি করে বাড়ি ফিরলে মা আবার পিটুনি দিতেন। বলতেন, ওই মন্দ ছেলের সাথে তুই মিশতে গেলি কেন? এর মানে তুইও মন্দ। অপু উকিল নাকি কোন পেশাদার উকিল নন। উকিল শব্দটি তাঁর পদবী। তাঁর স্বামী দেবতা হচ্ছেন অসিম কুমার উকিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে লড়াকু ভুমিকা পালন করে নাম করেছিলেন। তিনিও উকিল নন। তাঁর বাপদাদারা কেউ উকিল নন। উকিল শব্দটি আরবী ফার্সী থেকে উর্দু ও বাংলায় এসেছে। বাংলায় উচ্চারণ উকিল হলেও মূল উচ্চারণ ভকিল। শব্দটি ভ দিয়ে লিখতে হয়। অসীমরা ব্রাহ্মণ আর অপুরা ঘোষ। বর্ণ বৈষম্যের কারণে অপুর সাথে অসিমের বিয়েকে তাঁর পরিবার মেনে নেয়নি।অপুরা গোয়ালা। অসিমের বাবার নাম সুকুমার উকিল। কিশোরগঞ্জের খড়মপাড়ায় বাড়ি করেছিলেন চাকুরীর সুবাদে। তিনি ম্যালেরিয়া ইরাডিকেশনের কেরানী ছিলেন ১৯৬০ সালের দিকে ।অসিম পরে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় এসে বাড়ি করেন। মুল গ্রাম সন্ধিকোনায়। সেখানে এখন কেউ নেই। কিন্তু ওই গ্রামে বা কেন্দুয়ায় উকিল বাড়ি বলে কোন বাড়ি নেই। অপু ঘোষের(উকিল) সংসদের মিথ্যা বক্তব্যের কারণে অসিমের পরিবার নিয়ে কথা উঠেছে। অপু সংসদে একশ’ভাগ মিথ্যা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সিদ্দিক সালেক একজন মেজর ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের আইএসপিআর এর দায়িত্ব ছিলেন ৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে। পরে ৭৮ সালে তিনি উইটনেস তো সারেন্ডার বইটি প্রকাশ করেন। এই বইটি বহয়ল প্রচারিত। ওই বইয়ের কোথাও খালেদা জিয়ার পরিবারের কথা নেই। এতবড় একটি মিথ্যা ও অশালীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য কেন দিলেন? শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার পরিবারকে হেয় করার জন্যে? না তাঁকে কেউ এটা শিখিয়ে দিয়েছেন? অথবা বন্ধু হয়ে কেউ হয়ত তাঁকে ছোট করার জন্যে এ হীন কাজটি করিয়েছেন।
আমি খালেদা জিয়ার পরিবার নিয়ে প্রাসংগিক ভাবেই কিছু কথা না বলে পারছিনা। খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দর মজুমদারের বাড়ি ফেণী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর মজুমদার বাড়ির সন্তান।পিতার নাম ছালামত আলী মজুমদার। তিনি ছিলেন খন্ডল পরগণার জমিদার বক্স মাহমুদের মেয়ের জামাই। ইস্কান্দর মজুমদার সাহেবেরা ছিলেন আট ভাই। তিনি জলপাইগুড়ি গিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্যে। তাঁর আত্মীয়রা ছিলেন চা বাগানের মালিক। শ্রীপুর মজুমদার বাড়ির আবদুর রহমান সাহেবই হলেন স্যার এ এফ রহমান সাহেবের বাবা। আবদুর রহমান সাহেব হলেন নবাব মোশাররফ হোসেন সাহেবের ভায়েরা ভাই। এঁরা দুজনেই বিয়ে করেছেন খান বাহাদুর রহীম বক্স দাহেবের দুই কন্যা মেহেরুন্নেসা ও ফজিলতুন্নেসাকে। নবাব সাহেবের বিবির নাম ফজিলতুন্নেসা আর স্যার এ এফ রহমান সাহেবের মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা। সংবাদের আহমদুল কবির সাহেব, কাজী জাফর সাহেব,কর্ণেল জাফর ইমাম, ফরিদা হাসানেরা খালেদা জিয়ার আত্মীয় পৈতৃক দিক থেকে। খালেদা জিয়ার নানা জনাব তৈয়ব রহীম ছিলেন একজন সাবরেজিস্ট্রার। তিনি ছিলেন দিনাজপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। খালেদা জিয়ার কোন মামা ছিলনা। তাঁর মায়েরা দুইবোন। একজন তাঁর মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তিনি জীবিত নেই। অপর বোন মানে খালেদা জিয়ার ছোট খালা তরুতুন্নেছা এখন দিনাজ পুরেই থাকেন। তাঁর স্বামী আবদুল ওয়াহেদ ছিলেন একজন অধ্যাপক।
স্বামী জিয়াউর রহমান সাহেব ছিলেন পারিবারিক দিক থেকে জলপাইগুড়ির বিখ্যাত টি প্লান্টার আবুল কাসেম সাহেবের আত্মীয়।আবুল কাসেম সাহেব ছিলেন জিয়া সাহেবের নানা। জিয়া সাহেব মির্জা গোলাম হাফিজদেরও আত্মীয়।
এমনি একটি পরিবার সম্পর্কে অপু উকিলের অমন বক্তব্য আওয়ামী লীগেরও অনেকের মনে কষ্ট দিয়েছে। অপু অসিমের কারণে নমিনেশন পেয়ে আজ সংসদের সদস্য। আর খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দল দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তিন কোটির উপরে রয়েছে এই দলের ভোটার। সংসদে ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলা যাবেনা,তা নয়। কিন্তু সেটা হতে হবে সত্যের উপর ভিত্তি করে খুবই মার্জিত ও শালীন ভাষায়। অপু একেবারেই মিথ্যা একটা বানোয়াট কাহিনী সংসদে পেশ করেছেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com
স্বামী জিয়াউর রহমানের সূত্রে তিনি

Read Full Post »


পলাশী যুদ্ধের প্রেক্ষিত ও আজকের বাংলাদেশ / এরশাদ মজুমদার

১৭৫৭ সালের জুন মাসে তখনকার সুবেহ বাংলায় যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা পরিবেশ ছিল তার সাথে বর্তমানের তুলনা করলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তেমন কোন পরিবর্তন দেখতে পাইনা। আমি বলবো তখনকার কারণগুলো এখনও বিরাজ করছে। এখনও বাংলাদেশ নানা ভাবে শোষিত হচ্ছে বিদেশী শক্তি দ্বারা। পলাশী যুদ্ধের মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক। বাংলা ছিল তখনকার ভু ভারতের সবচেয়ে বেশী সম্পদশালী এলাকা। ফলে , বিদেশী বণিকদের নজর ছিল এই এলাকার উপর। আরবরা বণিকরা এদেশে আসতে শুরু করেছে সপ্তম শতাব্দীর দিকে। বণিকদের সাথে আসতেন নতুন শান্তিও সাম্যবাদের ধর্ম প্রচারের জন্যে ইসলামিক জ্ঞানী গুণীরা। একদল বণিক এসেছেন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। অপরদিকে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে এসেছেন জেনারেল মুহম্মদ বিন কাশিম ৭১১ সালে আরব সাগর দিয়ে। জেনারেল কাশিমের বিজয়ই ছিল ভারতে মুসলমানদের প্রথম বিজয়। এই বিজয়ের সন তারিখকে মনে রেখেই ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’। এখনও সেই বদলার হাওয়া বইছে। আমরা একটী স্বাধীন দেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়েছি। কিন্তু একটি পূর্ণাংগ স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র পাইনি। এটা কিন্তু জন আকাংখা। এখন যা ঘটছে তা হচ্ছে পাকিস্তানের শোষণের হাত থেকে আমরা ভারতীয় শোষণের লীলাভুমিতে পরিণত হয়েছি। বিগত ৪৪ বছরে সীমান্তে যা ঘটেছে পাকিস্তানের ২৩ বছরে তা ঘটেনি। আমাদের দেশে এমন কোন স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি যা ভারতের আগ্রাসনকে মোকাবিলা করতে পারে।
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুনের কারণেই বৃটিশ বণিক কোম্পানী বাংলা দখল করে কালক্রমে পুরো ভারত দখল করে। মুসলমানরা ছাড়া বাকি ভারতীয়রা ইংরেজদের অবিরাম সহযোগিতা করে যায় ১৮৫৮ সাল নাগাদ। উইলিয়াম হান্টার তাঁর বইতে লিখেছেন এ সময়ে বাংলা এবং বাংলার মুসলমানেরা সবচেয়ে বেশী শোষিত হয়েছে। বাংলার মুসলানেরাই সবচেয়ে বেশী প্রাণ দিয়েছে। ইংরেজদের সাম্প্রদায়িক দ্বিমুখি নীতির কারণেই অখন্ড ভারত খন্ডিত হয়েছে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। আর ভারত বিভক্তির সকল দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের উপর। তেমন ধারণা আজও বিরাজ করছে তথাকথিত শিক্ষিত কিছু কিছু বাংগালী মুসলমান নামধারী বুদ্ধিজীবীর মনে। অথবা তারা ভুল ইতিহাস চর্চা করে লাভবান হচ্ছেন অথবা বদ নিয়ত ও উদ্দেশ্যে অন্যদের সেবা করে যাচ্ছেন। অখন্ড হিন্দুস্তানে মুসলমানেরা সংখ্যালঘু। কিন্তু অখন্ড বাংলায় মুসলমানেরা ছিল সংখ্যাগুরু। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৬ সাল নাগাদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলার নেতৃত্ব ছিল বাংলার মুসলমানদের হাতে। এ কারণেই হিন্দু নেতারা অখন্ড বাংলা চায়নি। ফলে মুসলামানেরা পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয় ১৯৪৭ সালে পূর্ববংগ হিসাবে। আজকের বাংলাদেশে সংখ্যাতত্বের দিক থেকে মুসলমানেরা নি:শব্দ মেজরিটি বা সংখ্যাগুরু। ১৬কোটি লোকের ভিতর সাড়ে ১৪ কোটি মুসলমান। সরকার যারা চালান তারা আরবী নামধারী মুসলমান, মনোজগতে মুসলমান স্বার্থ ও ইসলাম বিরোধী। ভারত এ ধরনের সরকারের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি অনেকবার লিখেছি। ভারত নিজেও নিজের সাধারন মানুষকে অশিক্ষিত দরিদ্র রেখে হিন্দুত্ব বা রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভারত কখনই গণমানুষের রাস্ট্রে পরিণত হতে পারেনি।
পলাশি নিয়ে আমি তিন যুগ ধরে পড়ছি ও লিখছি। পলাশীকে নিয়ে দেশে বিদেশে বহু বই প্রকাশিত হয়েছে ,এখনও হচ্ছে। আগামীতেও হবে। কারণ যুদ্ধ নামের এই ষড়যন্ত্র,বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্ব ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যদি তার দেশীয় দোসরদের সাথে ষড়যন্ত্র করে সুবে বাংলা দখল না করতো তাহলে বৃটেন বিশ্ব সাম্রাজ্যে পরিণত হতে পারতোনা। বাংলা তথা ভারতের সম্পদ লুট না করতো তাহলে সে সারা বিশ্বের দেশে দেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারতোনা। ২৫৭ বছর পরেও আমরা পলাশীর যুদ্ধ ও নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে নিয়ে ভাবছি ও লিখছি। সিরাজই ইতিহাসের একমাত্র শাসক যিনি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নায়কে পরিণত হয়েছেন। আর বিজয়ী ব্যক্তি লর্ড ক্লাইভ খল নায়কে পরিণত হয়েছেন। দেশীয় যে সকল ব্যক্তি বা গ্রুপ ক্লাইভকে সমর্থন করেছিল তারাও আজ নিন্দিত। নিজের দেশের বিচারেই ক্লাইভ শাস্তি পেয়েছে। তাঁর লর্ডশীপ কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অপমানিত হয়ে ক্লাইভ আত্মহত্যা করেছিলেন। অপরদিকে পরাজিত নবাব আজও সম্মানিত ও প্রশংসিত। বিদেশী ঐতিহাসিকরাই বলেছেন, পলাশী যুদ্ধের একমাত্র নায়ক ও বীর হচ্ছেন নবাব সিরাজ উদ দৌলা। কারণ, তিনি নিজ দেশের স্বার্থেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ঐতিহাসিকরা বলছেন,সিরাজ যদি সমঝোতা করতেন তাহলে নবাব থাকতেন এবং সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারতেন।
ইংরেজরাতো সুবে বাংলা(বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা) দখল করতে চায়নি। তারা চেয়েছিল বিনা শুল্কে বাংলার বন্দরে ও দেশের ভিতরে অবাধ ব্যবসা। তাই তারা নবাবের পারিষদদের ঘুষ দিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে হাত করেছিল। তরুণ নবাব চেয়েছিলেন ইংরেজদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে। যারা নবাবের বদান্যতায় ধনী হয়েছিলেন তারা আরও বেশী বেশী সম্পদ ও অর্থের লোভে ইংরেজের সাথে হাত মিলিয়েছে। সমকালের সত্‍ বিদেশী ঐতিহাসিকরা বলেছেন, পলাশীর যুদ্ধ সত্যিকার অর্থে কোন যুদ্ধ ছিলনা, এটা ছিল একটা গভীর ষড়যন্ত্র। প্রায় বিনা যুদ্ধেই নবাবের পতন হয়েছে। বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ একটি বিখ্যাত যুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ যুদ্ধের ফলেই ইংরেজরা বাংলা দখল করে কালক্রমে ভারত দখল করে নিয়েছে। দাদাভাই নওরোজী তাঁর পো্‌ভার্টি ইন ইন্ডিয়া বইতে লিখেছেন,ইংরেজরা ভারতের অর্থ সম্পদ লুট করেই গ্রেট বৃটেনকে ক্ষমতাবান রাস্ট্রে পরিণত করেছে। ইংল্যান্ডের রাজা রাণীরা সম্রাটের মুকুট পরেছেন।
যে সময়ে ইংরেজরা বাংলা দখল তখন বাংলা ছিল ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা একটি বসুন্ধরা,। দেশী বিদেশী সকল ঐতিহাসিকরাই বলেছেন,প্রাক-পলাশী আমলে বাংলার অর্থনীতির বুনিয়াদ ছিল খুবই মজবুত। শুধু এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নয়,ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত ব্যবসায়ী ও সওদাগর বাংলায় আসতে শুরু করে। ১৭৫৬-৫৭ সালে একজন ইউরোপীয় পর্যটক বাংলাকে দেখে লিখেছিলেন, বাংলার অন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যের পরিমাণ এত বেড়ে গিয়েছিল যে, এখানে পারসিক,আবিসিনিয়ান,আরব, চীনা, তুর্কি ,ইহুদী,আর্মানি ব্যবসায়ীরা দলে দলে এখানে আসতে থাকে। ফার্সিভাষী ঐতিহাসিকরা বাংলার নামকরন করেছিলেন,‘জান্নাতুল বিলাদ’ বা সুবাহ গুলোর স্বর্গ। সব মোগল ফরমানেই বাংলাকে ‘জান্নাতুল হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফরাসী পর্যটক বার্ণিয়ের বলেছিলেন, ‘বাংলা এতই সম্পদশালী ছিল যে, এখানে একটি প্রবাদ চালু ছিল-বাংলায় প্রবেশের দরজা অসংখ্য কিন্তু বের হবার দরজা একটিও নেই’। ঐতিহাসিক ও পর্যটক আলেকজান্ডার ডো লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দাঁড়িপাল্লা বাংলার অনুকুলেই ভারী ছিল এবং বাংলা একমাত্র পাত্র ছিল যেখানে সোনাদানা এসে শুধু জমতো,তার কিছুই বের হতোনা’। ১৭৩৫ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নথিপত্রে বলা হয়েছে,সারা ভারতবে্ষের মধ্যে বাংলাই হচ্ছে একমাত্র সস্তা গন্ডার প্রাচুর্যে ভরা দেশ। নবাব আলিবর্দির শাসনের সময়(১৭৪০-৫৬)ছিল বাংলার গৌরবোজ্জ্বল যুগ। ইংরেজরা মূলত একটি একটি লুটেরা জাতি। শক্তি দিয়ে পর সম্পদ লুণ্ঠণ করাই ছিল তাদের পেশা। এক সময় তারা নাকি সমুদ্র ডাকাত ছিল। ফলে বাংলার সম্পদ তাদের প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করেছে। ওই সময়ে বাংলায় আরও অনেক বিদেশী কোম্পানী ব্যবসা করতো। একমাত্র ইংরেজরাই অন্যদেশের ব্যবসায়ীদের দাংগা হাংগামা করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলার গৌরব ও উন্নতির কথা তখন আরব ,ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৭৫৬ সালের এপ্রিলে সিরাজ যখন নবাব হন তখন সুবে বাংলার শৌর্য বির্য ছিল তুংগে। সিরাজ নবাব হওয়ার আগেই আলিবর্দি খাঁর আত্মীয় স্বজন ও অমাত্যবর্গের ভিতর নবাবী লাভ নিয়ে নানা ধরণের গ্রুপিং চলছিলো। এই গ্রুপিংকে উসকে দেয়ার জন্যে সবচেয়ে বেশী ভুমিকা পালন করেছে ইংরেজরা। সিরাজ নবাব হবেন এটা ইংরেজরা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা ধরণের কুত্‍সা রটনা করা শুরু করে তারা। কুত্‍সা রটনার কাজে তারা পারিষদ ও বিদেশীদের কাজে লাগায়। এ ব্যাপারে তারা সবচেয়ে আনুকুল্য পেয়েছে মেহেরুন নিসা ওরফে ঘসেটি বেগমের কাছ থেকে। ঘসেটি বেগম চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে শওকত জংকে নবাব করতে । শওকতের গৃহশিক্ষক গোলাম হোসেন এ কারণেই সিরাজের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী দুর্ণাম রটিয়েছে। হিন্দু মুসলমান ও ইংরেজদের রচিত ইতিহাস গুলো বেশীর ভাগই রচিত হয়েছে পলাশীর পরে। ফলে এসব ইতিহাস ছিল ইংরেজদের অনুপ্রাণিত ও তাবেদার ঐতিহাসিকদের লেখা। যারা সিরাজকে একজন অমানুষ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে নথিপত্র ঘেঁটে যেসব তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে প্রমানিত হয়েছে যে সিরাজ ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনচেতা তরুণ নবাব। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কাছে দেশের চাওয়াকে বিসর্জন দেননি। ফলে ইংরেজ মানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারী ও তাদের দোসরদের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজের তিনটি নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল এবং তা ছিল একজন দেশপ্রেমিকের কাছে ন্যায় সংগত।
১। ফোর্ট উইলিয়াম কেল্লার সংস্কার ও এটাকে দুর্ভেদ্য ও সুসংহত করার প্রচেষ্টা
২। দস্তকের বা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতিপত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করা
৩। নবাবের অপরাধী ও শাস্তিপ্রাপ্ত প্রজা ও কর্মচারীদের কোলকাতায় বেআইনী আশ্রয় দেয়া।
অভিযোগ গুলোর প্রত্যেকটিই দলিল দস্তাবেজ দ্বারা প্রমানিত। কোম্পানীর পরিচালক গণ কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কথা জানতেন এবং লুটপাটের মানসিকতার কারণে তারা কর্মচারীদের সংযত হওয়ার কোন নির্দেশ দেয়নি। বরং উসকে দিয়ে বলেছে যেন তেন প্রকারে দুর্গকে দুর্ভেদ্য করে তুলতে হবে। বেআইনী ব্যবসা বাড়িয়ে যেতে হবে। নবাব বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজরা তাদের সামরিক ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। যদিও তারা বলেছে যে, অন্য ইউরোপীয়দের আক্রমণ থেকে সম্পদ রক্ষা করার জন্যেই তারা দুর্গ দুর্ভেদ্য করে তুলছে। কিন্তু নবাব তাদের এ যুক্তি গ্রহন করেননি।
১৭১৭ সালে কোম্পানী দিল্লীর দরবার থেকে যে দস্তক বা অনুমতি পত্র নিয়েছিল তা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু আমদানী রফতানীর জন্যে। বিনা শুল্কে আভ্যন্তরীন বাজারে খুচরা বা পাইকারী বাণিজ্যের কোন ধরণের অনুমতি ওই দস্তকে ছিলনা। এমন কি কোম্পানীর নামে দেয়া দস্তক কোম্পানীর কর্চারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসার ক্ষেত্রেও জবরদস্তি ব্যবহার করে শুল্ক রেয়াত নিতো। এর ফলে নবাবের শুল্ক আয় কমে যেতে লাগলো। কোম্পানীর কর্মচারীরা বহুক্ষেত্রে নবাবের রাজস্ব কর্মচারীদের মারধর করতো। দিল্লীর দস্তক বাংলার নবাবের সম্মতি সাপেক্ষে। ইংরেজরা মানে কোম্পানী কর্চারীরা নবাবকের নির্দেশকে উপেক্ষা করেই শুল্কহীন ব্যবসা করতে শুরু করে। অনেক সময় নবাব তাদের ধরে এনে শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু এরা ছিল বেহায়া। অনেক সময় কোম্পানী কর্মচারীরা অন্য কোম্পানীর কোম্পানীর কর্মচারীদের কাছে দস্তক বিক্রি করতো। এ ব্যাপারে নবাব কাগজে কলমে প্রমাণ দিলে কোম্পানীর অফিসারেরা মুচলেকা ও জরিমানা দিয়ে ছাড়া পায়।
ঢাকাস্থ নবাবের কর্মচারী রাজবল্লভ তহবিল তসরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে বিচার চলাকালে রাজবল্লভের অপরাধি ছেলে কৃষ্ণদাসকে ইংরেজরা আশ্রয় দেয়। নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে কোম্পানীর কর্মচারীরা তা অস্বীকার করে। ইংরেজরা রাজবল্লভকে ঘষেটি বেগমের দলে ভিড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেবার চেস্টা চালাচ্ছিলো। ইংরেজ নাবিক ডেভিড রেনি লিখেছেন,নবাবের সবগুলো অভিযোগই ছিল একশ’ভাগ সত্যি।
১৭৫৬ সালের ২৮শে মে’র চিঠিতে নবাব সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে,‘ ইংরেজরা আমার রাজ্যে থাকতে চাইলে তাদের দুর্গগুলো ভেংগে ফেলতে হবে,পরিখা ভরাট করে দিতে হবে এবং জাফর খানের(মুর্শিদ কুলি খাঁ)আমলের শর্তবালী বহাল রেখে ব্যবসা বাণিজ্য করতে হবে। তা না হলে আমার রাজ্য থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে।তারা যেন মনে রাখে আমিই এ রাজ্যের নবাব’। এর পরে, ১লা জুন ,১৭৫৬ সালে নবাব আবার চিঠি লেখেন,ইংরেজরা যদি তাদের উপরোক্ত আচরণ গুলো সংশোধন করবে কথা দেয় ,তাহলে আমি তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেবো এবং আমার রাজ্যে তাদের থাকতে দেবো’। নবাব মাদ্রাজের ইংরেজ গভর্ণর পিগটকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন,সুবাহ বাংলায় ইংরেজদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া বা এখান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়া মোটেই আমার অভিপ্রায় নয়।
ডাচ কোম্পানীর নথীপত্র থেকে প্রমানিত হয়েছে যে, নবাবের সাথে বিরোধ বা সংঘর্ষের জন্যে মুলত: ইংরেজরাই দায়ী। তারা নবাবের দূতকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। নবাবের আসামীকে আশ্রয় দিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ইংরেজরা নবাবের বিরুদ্ধে ডাচদের সমর্থন চেয়েছিল,কিন্তু ডাচরা রাজী হয়নি।
১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দিল্লী সরকার মানে ইন্দিরা গান্ধী মুজিব নগর সরকারকে দিয়ে একটি সাত দফা চুক্তি সই করে নিয়েছিলেন। ওই চুক্তির আলোকেই তিনি রাশিয়ার সাথে চুক্তি করে পাকিস্তান আক্রমণ করেছিলেন। আমরা বলি , আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর ভারত বলে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’। এ যুদ্ধের প্রধান নিয়ামক ও প্রভাবক শক্তি ছিল ভারত এবং বেনিফিসিয়ারী ও ভারত। আর আমরা ভারতের অনুগত বন্ধু রাস্ট্রে পরিণত হয়েছি।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


সেদিন মানে চার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর ফলাফল নিয়ে কথা বলার জন্যে টকশোতে একত্রিত হয়েছিলেন আমাদের বন্ধু রিয়াজ সাহেব , সারোয়ার সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অবাক হয়ে নির্বাচন পরবর্তী বিশ্লেষন শুনছিলাম মনযোগ সহকারে। আনোয়ার সাহেব বললেন নির্বাচনে ধর্ম প্রবল ভাবে প্রভাব ফেলেছে, বা ধর্মের ব্যবহার হয়েছে। অধ্যাপক সাহেব আরেকটি কথা বললেন,তাহলো নির্বাচনে ভোট প্রকৌশল হতে পারে। ব্যাখ্যা করে বললেন,সরকারই জনগণের রায়কে পাল্টিয়ে বিরোধী দলকে জিতিয়ে দিয়েছে। তিনি বললেন,এটা কোন তথ্য বা খবর নয়, আমার ধারণা। সম্পাদক দুইজন আনোয়ার সাহেবের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন। তাঁরা দুইজনেই বলেছেন,সিটি নির্বাচন সরকারের জন্যে আগাম সতর্ক বার্তা। যদিও তেমন সময় নেই সরকারের হাতে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন মানেই নগর ব্যবস্থাপনার নির্বাচন। এখানে বেশীর ভাগ মানুষই সজাগ বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত। নাগর গুলোতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করছেন। এর আগে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন। ১৫ই জুনের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সরকারের ও ১৪ দলীয় মহাজোটের ভরাডুবি হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীই ৩০/৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছেন। এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখন মহাজোটের শরীকদের ভিতরই চলছে নানা হিসাব নিকাশ। ১৪ দলীয় বুদ্ধিজীবীরা গবেষনা শুরু করেছেন। একতো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নব্য আওয়ামী লিগারদের উপর সবচেয়ে বেশী ভরসা করেন। নব্য আওয়ামী লীগারদের সাথে আবার দিল্লীর খবুই প্রেম প্রীতির সম্পর্ক। দিল্লী চায় আরও বেশী বেশী করে দিল্লী ভক্তদের দলে নেয়া হোক। তবে দিল্লী ভক্তরা দলে এখন খুবই ক্ষুদ্র গোষ্ঠি। কিন্তু তাদের প্রভাব খুব বেশী। বর্তমান কেবিনেটে তারাও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত। ভিতরের খবর তারাই সবার আগে দিল্লীতে পাঠিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে হয়ত আগামী বছর গুলোতে আওয়ামী লীগে দিল্লীপন্থীরা মেজরিটি হয়ে যাবে। তখন দিল্লীর সকল ইচ্ছাই পূর্ণ হবে। দিল্লী বাংলাদেশে ভারতের পতাকা উড়াতে চায়না। ওটা উড়াতে গেলে অনেক ঝামেলা। তার চেয়ে শান্তিপূর্ণ পথে লক্ষ্য হাসিল করা অনেক বুদ্ধিমানের কাজ। তাই দিল্লী সিকিমের পথে যাচ্ছেনা।
চার সিটি কর্পোরেশনের ফলাফল বিশ্লেষন করে হাসিনা নাকি সিদ্ধান্তে এসেছেন মতিয়া ও লেনিনকে ঢাকা মহানগরীর দুই কর্পোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্যে মনোনয়ন দিবেন। এই দুইজন নেতা আওয়ামী লীগে নবাগত। কিন্তু অতি পুরাণো অতি বিশ্বস্ত বন্ধু। অপরদিকে অভিযোগ বা অনুযোগ উঠেছে দলের মুরুব্বী বা প্রাচীনরা,মানে যারা বংগবন্ধুর সাথে কাজ করেছেন তারাই নাকি নবাগতদের শাস্তি বা শিক্ষা দেয়ার জন্যে নানা ধরনের প্রাসাদ রাজনীতি করেছেন। প্রাচীন বা বংগবন্ধুর ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাপারে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা এখনও মুখ খোলেননি। পত্র পত্রিকায় তেমন লেখালেখি শুরু হয়নি।

Read Full Post »


বাত্‍সরিক সরকারী হিসাবের খাতায় কৃষি ব্যবস্থা / এরশাদ মজুমদার

দুই লক্ষ বাইশ হাজার কোটি টাকার আয় আর ব্যয়ের হিসাব দিয়ে ইংরেজী ২০১৩-১৪র আগাম বাজেট পেশ করেছেন বিদায়ী সরকার অর্থমন্ত্রী জনাব মুহিত।। জ্ঞানী গুণীরা বলেছেন এবং এখনও বলছেন ,এটা নির্বাচনী বাজেট। অর্থমন্ত্রী বলছে, এটা উচ্চাভিলাষী,নির্বাচনী। কিন্তু এতে অসুবিধা কোথায়? উচ্চাভিলাষী হওয়াতো মন্দ কিছু নয়। ভোটারের মন জয় করার জন্যে হলোও ক্ষতি কি? আমরা একটি বাজেট দিয়েছি আমাদের মেধা মোতাবেক। এখন জ্ঞানী গুণীরা এর ভাল মন্দ বিশ্লেষন করছেন। এটাইতো স্বাভাবিক। বাজেট যখন ঘোষনা করা হয় তখন এ নিয়ে কথা বলেন শহুরে দলবদ্ধ কিছুলোক। যেমন,সকল চেম্বার, সমিতি, বড় বড় শিল্প গ্রুপ, রফতানী গ্রুপ বাজেট ঘোষিত হওয়ার আগেই সরকারের সাথে দর কষাকষির বৈঠক বা আলোচনা সভায় বসেন। এছাড়া সরকারও এসব সংঘবদ্ধ দলগুলোর কাছে সুপারিশ আহবান করে। আর সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে কাকে সুবিধা দেয়া হবে বা কাকে সুযোগ দেয়া হবে। বাজেটে কোন কোন জিনিষের দাম বাড়লে বা কমলে সরকারের আয় বাড়বে তা ভেবেই সরকার বাজেট তৈরি করে। সরকারের মূল লক্ষ্য অধিক হারে রাজস্ব আয় বাড়ানো। বাজেটের সাইজ দেখে নামী দামী জনেরা বলেছেন,এ বাজেটের সাথে বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই। মানে এ বাজেট বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা সরকারের নেই।
দীর্ঘ সময় ধরে বাজেট নিয়ে লেখালেখির কারণে আমার একটা ধারণা হয়েছে যে বাজেটের সাথে অতি সাধারন মানুষের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যেই কাগজে দেখলাম,অতি সাধারন জনেরা বলেছেন,আমরা বাজেট টাজেট বুঝিনা। দুই বেলা দুই মুঠ খেতে পারলেই খুশী। বাজেটতো আর গরীবের জন্যে নয়। কথাটা মহা সত্যি। বাংলাদেশের বাজেটের সাথে দেশের কোটি সাধারন মানুষের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। থাকলেও সেটা তারা বুঝতে পারেন না। এদের হিসাব হলো হাড় ভাংগা খাটুনী খেটে সন্ধ্যায় বাড়ি বা বস্তিতে ফিরার সময় প্রয়োজনীয় চাল ডাল নিতে পারবে কিনা। কাজের বা শ্রমের বিনিময়ে চাল ডাল পেলেও তারা খুশী।আগেই বলেছি শিক্ষিতজনেরা সংঘবদ্ধ বা দলবদ্ধ। তারা মাইনরিটি,কিন্তু সরকারের উপর প্রভাব বা প্রেসার বিস্তার করতে সিদ্ধহস্ত। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন এই গোষ্ঠির চাপের কথা। রাজনীতি করতে হলে এদের কথা শুনতে হয়। এর বিপরীতে কৃষি উত্‍পাদনের যারা জড়িত তাদের কোন সংগঠন নেই। তারা দলবদ্ধও নন। সরকারকে কথা শোনাবার জন্যে তাদের হাতে কোন হাতিয়ার নেই। কৃষিতে কি হবে সেকথাটাও বলে দেয় দলবদ্ধরা। সার, পানি, ডিজেল, কলের লাংগল ইত্যাদির দাম বা শুল্ক কি হবে সে কথাটাও বলে দেয় ব্যবসায়ীদের সমিতি।
প্রসংগত বলছি, আমি এক সময় ফসল নামে একটি কৃষি সাপ্তাহিক প্রকাশ করেছিলাম। এটা ছিল জেনারেল আইউবের সময়। সংবাদের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আমি আমার জিলা ফেণী চলে গিয়েছিলাম নিজে কৃষক আন্দোলনের জন্যে নিবেদন করার জন্যে। মাওলানা ভাসানী সাহেবের কৃষক সমিতিই ছিল আমার সংগঠন। আমি সারা জিলায় কৃষকদের সভায় বক্তৃতা দিতাম আর ফসল প্রকাশ করতাম । তখনও বিয়ে করিনি। বাবা ছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত। ১৯৬৫ সালের কথা বলছি। তখন আমার বয়স ২৫। ১৯৬৯ সাল নাগাদ আমি ফেণীতে ছিলাম কৃষক আন্দোলনের সাথে। তারপর দেখলাম বাম রাজনীতিকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। একদল চীনের পক্ষে আরেকদল মস্কোর পক্ষে। আমি আবার ঢাকায় এসে পূর্বদেশে যোগ দিলাম। তখন সবাই আমাকে বামপন্থী বা কমিউনিষ্ট বলে গালাগাল দিতো। আমি আসলে কখনই অবিশ্বাসী মানুষ ছিলাম না। সরকারী খাতাতেও আমার নাম ছিল সরকার বিরোধী হিসাবে। আমি হজরত ওমর(রা) ও হজরত আবু জর গিফারীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলাম। মাওলানা ভাসানীও ছিলেন হজরত আবু জর গিফারীর একজন ভক্ত। হজরত গিফারীকে রাসুলের(সা) বিপ্লবী সাহাবী বলা হতো। তিনি ব্যক্তি মালিকানার সম্পদে বিশ্বাস করতেন না। তিনি শেষ জীবনে নির্বাসনে ছিলেন এবং সেখানেই একাকী নি:স্ব অবস্থায় মারা গেছেন।
জিয়া সাহেবের আমলে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিক ব্যান্কের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ চালু করেছিলাম। এ ধরণের কাজ বাণিজ্যিক ব্যান্ক গুলো কখনই করেনি। বাণিজ্যিক ব্যান্কের কৃষি ঋণ ব্যবস্থা দেখার জন্যে আমি ভারতে গিয়েছিলাম ব্যান্কার সালেহীন সাহেব ও একেএন আহমদ সাহেবের উত্‍সাহে। কৃষি ব্যান্কগুলো এ ব্যাপারে কখনই আগ্রহী ছিলনা। সে সময়ে আমি বিভিন্ন ব্যান্কের অফিসারদের এ কাজে উত্‍সাহ দেয়ার জন্যে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতাম। জিয়া সাহেবই শস্যবীমা চালু করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে এসব কর্মসূচী আর চালু ছিলনা। এরশাদ সাহেবের এসব দিকে তেমন আগ্রহ ছিলনা। তিনি বিদেশ থেকে ঋণ করে কর্মচারীর বেতন দিতেন। তাঁর আমলে মুদ্রাস্ফীতিও বেশী ছিল। কৃষিখাতের দিকে জিয়া সাহেবের বেশী নজর ছিল। তিনি সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্যে খালকাটা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। মখা আলমগীর সাহেব সে সময়ে জিয়া সাহেবের বড় মাপের মোসাহেব ছিলেন। লোকে বলে তিনি নাকি খালকাটার উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছেন। জিয়া সাহেব কৃষিখাতের দিকে যে নজর দিয়েছিলেন তা পরবর্তী পর্যায়ে পরিহার করা হয়েছে। জিয়া সাহেবই ফল শাক সব্জী ও গাছ লাগানের জন্যে সবাইকে উত্‍সাহিত করেছিলেন। বাংলাদেশ এখনও কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করে। ৭০ সালে বাংলাদেশে খাদ্য উত্‍পাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০ লাখ টন। এখন তা তিন কোটি টনের উপরে।অপরদিকে লোক সংখ্যা বেড়ে সাড়ে সাত কোটি থেকে ১৬ কোটি হয়ে গেছে। কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এতে সরকারের কৃতিত্ব ২০ ভাগ আর কৃষকদের কৃতিত্ব ৮০ ভাগ। ৪২ বছরে বাংলাদেশে এক টাকার মানুষ হাজার কোটি টাকার মানুষ হয়েছে রাস্ট্রীয় কোষাগার লুট করে। তারাই কালো টাকার মালিক। তারাই ব্যান্ক বীমা,বিশ্ববিদ্যালয় ,হাসপাতালের মালিক। তারাই রাজনীতি ও মিডিয়াতে অর্থায়ন করে। তারাই সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের রত্নসভায় আদর করে স্থান দেয়। কিন্তু, বিলিয়ন ডলার মূল্যের খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য উত্‍পাদন করে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করছে তারা অন্ধকারেই পড়ে আছে। তারা চিকিত্‍সা পায়না, তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া পায়না, তাদের হালের বলদ দিন দিন শুকিয়ে একদিন মরে যায়। কখন যে তাদের দুয়ারে চিকিত্‍সা ও শিক্ষা পৌঁছাবে একমাত্র আল্লাহতায়ালাই জানেন।
কৃষকদের সবাই শোষন করে। এমন কি রাস্ট্রও তাদের শোষন করে। শুরুতেই বলেছি,বাংলাদেশে কৃষকদের কোন সংগঠন নেই। তাই তারা কখনই তাদের কথা সরকার বা রাস্ট্রকে বুঝাতে পারেনা। শহুরে সংগঠিত মানুষের চাপের কারণে সরকার কৃষকদের কথা শুনতে পায়না। প্রসংগত আমি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। জিয়া সাহেবের আমলে আমার সম্পাদিত ফসল কাগজকে সহযোগিতা করার জন্যে জিয়া সাহেব কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিলেন। তখন আজিজুল হক সাহেব ছিলেন কৃষি উপদেষ্টা আর সচিব ছিলেন প্রখ্যাত কবি ওবায়দুল্লাহ খান। কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে আলোনা করার জন্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি সভার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের তিনজন সিনিয়ার অফিসার আলোচনা করতে বসেছিলেন। একজন অফিসার জানতে চাইলেন,ফসল কৃষকের কাগজ না কৃষির কাগজ। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি উত্তর দিবো। এমন সময় একজন অফিসার বললেন, দেখুন, সরকার কৃষির উন্নয়নে নিবেদিত অধিক খাদ্য উত্‍পাদনের লক্ষ্যে। শুনেছি, আপনার কাগজ নাকি বামপন্থী আন্দোলনে বিশ্বাস করে। আপনি কৃষক বিদ্রোহে বিশ্বাস করেন। আমি বললাম, দেখুন, আমিতো সাহায্যের জন্যে কোন দরখাস্ত করিনি। জিয়া সাহেব ও আজিজুল হক সাহেব আমাকে সহযোগিতা করতে চান। কারণ, আমি জিয়া সাহেবের কৃষি আন্দোলনকে সমর্থন করি। বিনিময়ে আমি কিন্তু কোন প্রকার সাহায্য বা সহ্যোগিতা চাইনি। আমি আপনাদের উচ্চ মার্গের কথা বুঝতে পারিনি। আপনারা কৃষকের উন্নতি চান না, কৃষির উন্নতি চান। আর আমি মনে করি কৃষক ভাল থাকলে কৃষিরও উন্নতি হবে। কৃষকের উন্নতি ছাড়া কৃষির উন্নতি হবেনা।
ঠিক একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল আমি যখন এডাবের(এগ্রিকালচারেল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সীজ অব বাংলাদেশ) একটি ম্যাগাজিনের দায়িত্ব নেয়ার কথা উঠলো। সেখানেও আমাকে জিগ্যাসা করা হলো, আমি কৃষির উন্নতি চাই না কৃষকের উন্নতি চাই। আমি কোন উত্তর দিইনি। চাকুরীটা করিনি। এরও বেশ আগে মনে হয় ৭২ বা ৭৩ সালে রেডিওতে অর্থনীতির উপর কিছু প্রতিবেদন তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন কামাল লোহানী ভাই। তিনি তখন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক ছিলেন। আমার প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে তা প্রমাণ করা। মনে আছে, আমি পাঁচ ছয়টি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। প্রতিটি প্রতিবেদনের জন্যে সম্মানী পঁচিশ টাকা। আমার লক্ষ্য টাকা ছিলনা। আনন্দে লিখতাম। সে বিলগুলো আমি নিইনি। হঠাত্‍ করে লোহানী ভাইকে না জানিয়ে লেখা বন্ধ করে দিলাম। কারণ, একবার আমি লিখেছিলাম কৃষক ভাই। একজন বললেন, রেডিওতে কৃষক বলা যাবেনা। বলতে হবে চাষা। কথা গুলো উল্লেখ করলাম পাটকদের বুঝাবার জন্যে আমাদের সমাজে কৃষকদের কিভাবে দেখা হয়।শিক্ষিত সমাজ বা রাস্ট্রের কাছে কৃষক শ্রমিকরা কখনই মর্যাদাবান ছিলেন না। গল্প শুনেছিলাম, এসএম হলোর কোন এক ছাত্রের কাছে তার কৃষক বাবা এসেছিলেন দেখা করার জন্যে। পোষাক আশাক কি রকম ছিল আপনারা নিজেরাই বুঝে নিন। ছাত্রটি বন্ধুদের কাছে কৃষক পিতার পরিচয় দিয়েছিল সারভেন্ট বা চাকর হিসাবে। গল্পটি হয়ত সত্যি নয়। তবে শিক্ষিত মানসিকতার পরিচয় বহন করে গল্পটি। এসব কথা বললাম বুঝাবার জন্যে আমাদের সমাজ রাস্ট্র কৃষক ও কৃষিকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন।
জাপান গিয়েছিলাম আন্তর্জাতিক কৃষি সাংবাদিক ফেডারেশনের দাওয়াতে। জাপানের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৫ ভাগ। জাপান মুলত একটি শিল্প প্রধান দেশ। এর জাতীয় আয়ের বেশীর ভাগই আসে শিল্প থেকে। তবুও সে দেশের মানুষ ও সরকার কৃষির ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। ধান উত্‍পাদন না করার জন্যে পশ্চিমা দেশ গুলো জাপানের উপরে বহুবার চাপ প্রয়োগ করেছে। কিন্তু জাপান সরকার রাজী হয়নি। জাপানের জনগণ মনে করে ধান উত্‍পাদন তাদের সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংগ। সে দেশে ধানের দেবতাও আছে। তাই জাপান সরকার নয়া কৃষি আন্দোলন শুরু করেছে। বিশেষ করে শহরমুখী শিক্ষিত তরুণ সমাজকে আগ্রহী করে তোলার জন্যেই সরকার নয়া কৃষি আন্দোলন শুরু করেছেন। কৃষি পণ্য ক্রেতা সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। ২৫ একর থেকে ১০০ একরের খামার তৈরি করা হয়েছে। এসব খামরে আছে সকল প্রকার কৃষি ষন্ত্রপাতি। খামারের ভিতরেই আছে চালের কল। সেখান থেকে চাহিদাপত্র মোতাবেক চাল চলে যায় ভোক্তা সমিতি গুলোতে। জাপান পশ্চিমাদের চাপকে উপেক্ষা করেই নয়া কৃষি আন্দোলনকে জোরদার করে এগিয়ে নিচ্ছে। আমাকে তারা রাইস ব্রাদার বলে সম্মান দেখিয়েছে। টিভিতে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কথা বলার জন্যে।
অত্যন্ত বেদনা ও দু:খের বিষয় হলো অবহেলা অনাদরে বাংলাদেশের কৃষি দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে। অধিকাংশ রবি শস্য এখন আর উত্‍পাদিত হয়না। এখন সময় কেরোসিন ছাড়া কৃষকের ঘরে সবই ছিল। বিদেশ থেকে কোন ধরণের ভোজ্যতেল আমদানী না করেই বাংলাদেশ চলতো। এখন ৯০ ভাগ ভোজ্যতেলই বিদেশ থেকে আমদানী হয়। কারো মনে প্রশ্নও জাগেনা আমাদের সরিষার তেল কোথায় গেলো। চোখের সামনেই পাট বিলুপ্ত হতে চলেছে। ভারতের পাটকল গুলো শক্তিশালী হচ্ছে আর আমাদের পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চায়ের উত্‍পাদন ও দিন দিন কমে যাচ্ছে। জাতীয় বাজেট তৈরির সময় তাই কৃষির তেমন গুরুত্ব থাকেনা। এ খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমে যাচ্ছে। মিডিয়া,রাজনীতি সবখানেই শোনা যায় জাতির প্রাণ নাকি পোষাক শিল্প। কারণ কৃষক কন্যারা এখন দলে দলে শহরে চলে আসছে দিন একশ’/দুইশ’টাকা বেতনে চাকুরি করার জন্যে। কারণ গ্রামে কুটির শিল্প মরে গেছে। জিন্দা রাখার চেষ্টা করলেও বাজারে দাম নেই। ব্র্যাক আডং খুলে গ্রামের কৃষক কন্যাকে শোষণ করে স্যার উপাধি পায়। সরকার সে কাজটি করতে পারেনা। কুটির শিল্প কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু বছর আগে। কিন্তু কুটির শিল্পের উন্নতি অগ্রগতির জন্যে কর্পোরেশন কিছুই করেনি। যা ব্র্যাক পারে তা বিসিক করতে পারেনা। কারণ সরকার গুলোর রাজনীতি ও অর্থনীতি কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন বিরোধী। গলা ফাটিয়ে সরকার, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী,মিডিয়া বলছে মানুষের আয় বেড়েছে। কৃষকের আয় মোটেই বাড়েনি। যখনি কৃষি পণ্যের উত্‍পাদন বাড়ে তখনি তার দাম পড়ে যায়। প্রায় প্রতি বছরই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ভদ্রলোকেরা মনে করেন কৃষি কাজ করতে কৃষক ও তার পরিবার বাধ্য। কম দামে চাল খাওয়া নাগরিকদের শখ। শুধু চাল নয় কৃষিজাত সকল পণ্যই শহুরে নাগরিকরা কম দামে পেতে চান বা খেতে চান। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে কৃষক শোষন। এই শোষণের প্রধান নায়ক হলো রাস্ট্র। বিশ্বব্যান্কের নয়া থিওরী পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি। যেমন ধরুন,জাপানে কলার দাম এক ডলার,তাহলে বাংলাদেশেও আপনি এক ডলার খাচ্ছেন। যেমন মাথাপিছু আয়ের থিওরী। সলিমের আয় বছরে এক লাখ টাকা,আর কলিমের আয় বছরে দশ হাজার টাকা। তাহলে দুই জনের মাথা পিছু আয় বছরে ৫৫ হাজার টাকা। যেমন সরকার উন্নয়ন খাতে ব্যয় করবেন ৭০ হাজার কোটি টাকা। গ্রামে বা পল্লী উন্নয়নের জন্যে গিয়ে পৌঁছালো এক হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা নগরবাসীর জন্যে খরচ হলো। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধির হার শহরে ও গ্রামে এক নয়। গ্রামে ব্যয় হয় শতকরা একভাগ আর সহরে শতকার ৬ ভাগ। ব্যান্ক ডিপোজিটের দিকে তাকালে দেখবেন,মোট ডিপোজিটের শতকরা ১০ ভাগ বিনিয়োগ করা হয় গ্রামে আর ৯০ ভাগ শহরে। ফলে কৃষকের ছেলে মেয়েরা শহরে আসে শহুরে লোকদের ফায় ফরমায়েশ খাটার জন্যে। চলমান বাজেট পদ্ধতিতে গ্রামীন দারিদ্র কখনই কমবেনা। একদিন হয়ত বাংলাদেশে আর কৃষক থাকবেনা, কৃষিও থাকবেনা।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য ষন্ধানী
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »