Feeds:
Posts
Comments

Archive for April, 2012


বাংলাদেশের মানুষ তিনটি নববর্ষ পালন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা  নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালনের জন্যে নানা ধরণের মিছিল বের করে। অন্যান্য নববর্ষের তূলনায় বাংলা নববর্ষ অনেক বেশী জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়। বলা হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখ ও একুশে ফেব্রুয়ারী হচ্ছে দুটি প্রধানতম সার্বজনীন উত্‍সব। পহেলা মহররমও পালিত হয় হিজরী ক্যালেন্ডার হিসাবে। দেশের সম্প্রদায় কারবালার বেদনাময় ঘটনার কথা স্মরণ করে মিছিল বের করেন। সুন্নী মুসলমানরা ঘরে ঘরে ফিরনী ও রুটি বিতরন করেন। অনেকেই মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করেন। হিজরী সন চালু হয়েছে রাসুলে পাকের(সা) হিজরতের বছরকে স্মরণ করে। পহেলা মহররম ও ১০ই মহররমকে স্মরণ করে সারা দেশেই মসজিদে বিশেষ মহফিল ও মুনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা পহেলা মহররম পালন করে। বাংলাদেশেও সরকারী ছুটি থাকে। কিন্তু সবার উপরে গুরুত্ব লাভ করেছে ইংরেজী সন। ইংরেজরা এ দেশটি শাসন করেছে মাত্র ১৯০ বছর। কিন্তু এর প্রভাব সর্বগ্রাসী। আমাদের জীবনে এবং সরকারী অফিস আদালতে এখনও ইংরেজীর অবস্থান শক্তিশালী ও সবচেয়ে বেশী। এর মানে হচ্ছে কলোনিয়াল বা উপনিবেশিক শাসনের প্রভাব এখনও খুব শক্তিশালী ভাবে বলবত আছে। শত চেস্টা করেও বাংলা তার স্থান করে নিতে পারছেনা। এর কারণ আমাদের সরকার ,রাজনীতিক, আমলা, বুদ্ধিজীবীরা ভালই জানেন। বরং ইংরেজীর প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফেব্রুয়ারী মাস এলেই খবরের কাগজ ও টিভি গুলো এ নিয়ে হেচৈ ও মাতম শুরু করে দেয়। এতে তাদের ব্যবসাও ভাল হয়। অর্থনীতির বিষয়টাকে আমি সব সময় সমর্থন করি।যে কোন জাতি বা দেশের শক্তিশালী অবস্থানের জন্যে শক্তিশালী অর্থনীতির প্রয়োজন। আমাদের সরকারী হিসাব নিকাশ এখনও ইংরেজী সন মোতাবেকই হয়ে থাকে। বাজেটও তৈরি হয় ইংরেজী সনকে অনুসরণ করে। সরকারী ক্যালেন্ডার ডায়েরী ছাপা হয় ইংরেজী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। দেশী বিদেশী বড় বড় কোম্পানি, বিদেশী দূতাবাস গুলোও ইংরাজী সন মোতাবেকই তাদের কার্যাবলী পরিচালনা করে। বর বড় হোটেল গুলো ইংরেজী সনের হিসাবেই অনুস্ঠান কর্মসূচী তৈরি করে। এমন কি তারা খ্রিস্ট মাস পালন করে। ওই সময়ে সব হোটেলে সান্তা ক্লজের ছবি দেখা যায়। সমাজের এক শ্রেণীর তরুণ যুবক ও বৃদ্ধরা থার্টি ফার্স্ট নাইট ও নিউ ইয়ার পালন করে নাচ গান, হৈচৈ ও মাতলামী করে। নামজাদা হোটেল ও ক্লাবগুলোতে মদের ঢল নামে। রাতগুলোকে সামাল দেয়ার জন্যে পুলিশ বিভাগ বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পুলিশের নিরাপত্তা বেস্টনী ভেদ করেও কিছু তরুণ তরুণী ক্লাব বা নিজেদের আড্ডা ছেড়ে রাস্তায় নামে এবং অশ্লীলতাত প্রকাশ ঘটায়। পুলিশ এদের গ্রেফতার করলেও ছেড়ে দেয় প্রভাবশালীদের কারণে।  পহেলা বৈশাখে  এরা খাঁটি বাংগালী সাজে আবার  থার্ট ফার্স্ট নাইটে পশ্চিমাদের অনুসরন করে। এমন ধারার কিছু শিক্ষক, সাংবাদিক ,বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক আছেন যাঁরা গভীর ভাবে পহেলা বেশাখ  ও থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করেন। তাহলে আপনারা বুঝতে পারছেন, আমরা কোন পথে এগিয়ে চলেছি। আমাদের রাজনীতি ও সংস্কৃতি কোন পথে ধাবিত হচ্ছে।

এর আগেও আমি আপনাদের বলেছি, মনোজগতে আমরা এখনও পূর্ণাংগ স্বাধীনতা লাভ করিনি। ফলে, বিদেশী সাংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। তাতে জড়িত হয়েছে আমাদের দেশের  একশ্রেণীর রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, বিদ্ধিজীবি ও এনজিও নেতা। আমাদের দেশের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মালিকদের মৌলিক কোন আদর্শ নেই। এই মিডিয়া মালিকদের সাথে হাত মিলিয়েছে একশ্রেণীর সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকরা নিজেরাই বলেন, আমরা শ্রমজীবী মানুষ। যিনি বা যাঁরা বেশী বেতন বা মুজুরী দিবেন তার জন্যে কাজ করবো। দিন মুজুরের আদর্শের কোন প্রশ্ন উঠেনা। পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের মালিক চোর ডাকাত বা হার্মাদ হলেও কোন আপত্তি নেই। আমাদের দেশে বেশ কিছু পত্রিকা বা চ্যানেল আছে যাদের আদর্শ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এদের বেশীর ভাগই দিল্লী বা পশ্চিমাদের তাবেদারী করেন। ওদেরই হালুয়া রুটি খেয়ে নিজের বিরুদ্ধে কলম ধরে ও সেমিনারে বক্তৃতা করে। শুনেছি, সত্য নাও হতে পারে, দিল্লী বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। যে জাতির সাংস্কৃতিক পরাজয় ঘটে তার স্বাধীনতা আর বেশীদিন টিকেনা। যেমন , সিকিম সংসদে আইন পাশ করেই ভারতের সাথে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশে নামে মুসলমান, কর্মে মোনাফেক এমন বুদ্ধিজীবী রয়েছে রয়েছে কয়েক হাজার। এদের গলা বড়। নিয়মিত খবরের কাগজে কলাম লেখে। এরা বই রাচনা করে প্রভুদের নির্দেশে। এর আগে আমি বহুবার বলেছি আমরা ভাষাগত জাতি নই। আমরা শুধু বাংগালী নই। আর তা নই বলেই আজ আমরা স্বাধীন। শুধু বাংগালী যারা তারা দিল্লীর অধীনতা মেনেই সুখে শান্তিতে আছে।

বর্তমান বাংলা সন চালু করেছেন বাদশাহ আকবর। তিনি এ কাজটি করেছেন বাংলার রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে। প্রখ্যাত জ্যোতিষ বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহ শিরাজী বাদশাহর নির্দেশে হিজরী সনের সাথে মিল রেখে বাংলা সন। তখন দিল্লী সরকারের অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা ছিল হিজরী সন। আর বাংলায় চালু ছিল বঙাব্দ, যা চালু করেছিলেন রাজা শশাংক। রাজা শশাংকের বঙাব্দ আর চলমান বাংলা সন এক নয়। যদিও আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী চলমান সনকে বঙাব্দ বলে চালাতে চান।  যখন ফসলী সন চাল হয় তখনও মাসের নাম বর্তমানের মতোই বৈশাখই ছিল। যদিও বৈশাখ হিন্দু দেবীর নাম। জনসাধারন বা কৃষক সমাজের সুবিধার্থেই শিরাজী সাহেব মানের নাম আগের মতেই রেখে দিয়েছেন। এটা ছিল স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি দিল্লীর সম্মান প্রদর্শন। সেই থেকেই বৈশাখ মাসে জমিদার, নবাব ও তালুকদারেরা খাজনা বা রাজস্ব আদায় করতো। এখনও তহশীল অফিস গুলো বৈশাখ চৈত্র হিসাবে খাজনা আদায় করে। এই সময়ে এখনও গ্রাম বাংলায় ব্যবসায়ীরা হালখাতা পালন করেন। হাল শব্দটি ফার্সী, খাতা শব্দটি আরবী ও ফার্সী। দুটো শব্দ মিলিয়ে হালখাতা হয়েছে। হাল মানে বর্তমান বা কারেন্ট। নাগাদ শব্দটিও ফার্সী। দুটো শব্দ মিলিয়ে হয়েছে হালনাগাদ। পহেলা বৈশাখে জমিদার বাড়িতে পূণ্যা বা রাজস্ব আদায়ের উত্‍সব পালিত হতো। সেদিন প্রজারা দলে দলে এসে তাদের পুরাণো খাজনা পরিশোধ করতো। পূণ্যা শব্দটি এসেছে পূণ্য শব্দ থেকে। এর মানে হলো ওইদিন খাজনা পরিশোধ করলে পূণ্য লাভ হবে। এই শব্দ চালু হওয়ার কারণ ইংরেজ আমলে বেশীর ভাগ জমিদার ছিলেন হিন্দু। তারাই এই শব্দটি চালু করেছেন।তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে,  পহেলা বৈশাখ রাজস্ব সংক্রান্ত একটি একটি দিন।  চৈত্র মাসের শেষ অথবা পহেলা বৈশাখে গ্রাম বাংলার সর্বত্র মেলা হয় বহুকাল থেকে। শহর বা নগরবাসী  এয় মেলাকে তেমন গুরুত্ব দিতোনা। এয় মেলা ব্যবস্থা ও গ্রামের সংস্কৃতিকে শহুরেরা তেমন মর্যাদাও দিতেন না। এখন তারা পহেলা বৈশাখকে মহা গুরুত্ব দেন তাদের প্রভুদের নির্দেশে। শহুরেদের কাছে পহেলা বেশাখের মানে আলাদা ও ভিন্ন । রাজধানী ঢাকা সহ কয়েকটি শহরে পহেলা বৈশাখ একটি সাংস্কৃতিক অনুস্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই অনুস্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্র ও কিছু শিক্ষক। এঁরা পহেলা বৈশাখের উত্‍সবে মংগল প্রদীপ যাত্রা চালু করেছেন। মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা পশু পাখির মুখোশ পরে মিছিল করে। মুখ সহ শরীরের বিভিন্ন অংগে উল্কি আঁকে। এই আনন্দ উত্‍সবে অংশ গ্রহণের জন্যে রাজধানীতে মানুষের ঢল নামে। সাধারন মানুষের সাথে মংগল প্রদীপ মিছিলের কোন সম্পর্ক নেই। তারা জানেনও না কেন এই পশু পাখির মিছিল। কি উদ্যেশ্য এই মিছিলের। এটা নাকি সার্বজনীন উত্‍সব। রাস্তায় যে বিশাল আলপনা আঁকা হয়েছে তার সম্পর্কে প্রখ্যাত শিল্পী কাইউম চৌধুরী ও রফিকুন্নবী বলেছে, এটা বাংগালীদের উত্‍সব। আমরাও এই দেশে বাস করি, যেমন বাস করেন শ্রদ্ধেয় কাইউম চৌধূরী ও রফিকুন্নবী। দশ পনের বছর ধরে হঠাত্‍ করে ঢাকায় এই উত্‍সব চালু হয়েছে। কিন্তু এই মিছিলের পেছনে কোন অদৃশ্য শক্তি আছে তা আজও পরিস্কার হয়নি। কারা এই মিছিলের জন্যে অর্থ জোগান দেন তাও স্পস্ট নয়। আমাদের বাপদাদারা কখনও পহেলা বৈশাখ এমন করে পালন করেননি।কাইউম চৌধুরী ও রফিকুন্নবী সাহেবের বাপদাদারাও এমন ধারার পহেলা বেশাখ পালন করেননি। এমন কি পশ্চিম বাংলার দাদারাও পহেলা বেশাখ নিয়ে এমন মাতামাতি করেন না। পশু পাখির মিছিল নের করেন না। তাহলে বাংলাদেশে এসব হচ্ছে কেন? কারা এসব করাচ্ছে। কিইবা তাদের উদ্দেশ্য? পশ্চিম বাংলার জ্ঞানীজনতো পহেলা বৈশাখ নিয়ে এমন মারামাতি করছেননা। সত্যি কথা বলতে, কোলকাতা এখন আর বাংগালী দাদাদের দখলে নেই। বৃটিশ সাহেবদের রাজধানী কোলকাতা এখন ভিন্ন ভাষীদের দখলে। পশ্চিম বাংলার রাস্ট্র ও সরকারী ভাষা এখন হিন্দী। স্কুল কলেজে হিন্দী পড়া এখন বাধ্যতামূলক।

একটা কথা খুব বেশী করে স্পস্ট হওয়া দরকার। তা হলো এ জগতে শুধু বাংগালী বলে কোন কথা বা শব্দ নেই। যখন সুবাহ বাংলা ছিল তখনও ছিল বাংগালী, বিহারী ও উড়িয়া। শুধু বঙদেশ (অখন্ড) বললেও শুধু বাংগালী নেই। অখন্ড বংগদেশে হিন্দু মুসলমান ও ধর্মাবলম্বীরা ছিলেন। এ কারণেই ১৯০৫ সালে বাংলা মায়ের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসিয়েছেন তাঁরা ৪৭ সালে এসে বাংলা মাকে দ্বিখন্ডিত করলেন। ৪৭ সালে তাঁরা হাসতে হাসতেই বাংলাকে দুই ভাগ করেছেন। মুসলমানেরা চেয়েছিলেন অখন্ড বংগদেশ। কিন্তু হিন্দু দাদারা ও কংগ্রেস নেতারা তা চাননি। এসব হলো ইতিহাসে বিষয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এ ইতিহাস জানতে চায়না। তারা নাকি এসব নিয়ে ভাবেনা। এর মানে তারা নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে তারা ভাবেনা। কেউ কেউ এটাই চান। কারণ যে জাতি নিজের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ভাবেনা বা সজাগ নয় তাদের স্বাধীনতা থাকেনা। বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি  রবীন্দ্রনাথ  কবিগুরু হয়েও শুধু হিন্দু ছিলেন। তাঁর চিন্তা চেতনা ও দর্শনে তিনি তিনি কখনও ধর্মচিন্তা ত্যাগ করেননি। আমি মনে করি তিনি ঠিক কাজটিই করেছেন। নিজ ধর্ম ত্যাগ  করা কোন গৌরবের কাজ নয়। বরং তিনি এবং তাঁর পরিবার হিন্দু ধর্ম সংস্কারের চেস্টা করেছেন।  আমাদের এই বাংলাদেশে তাঁকে অনেকেই দেবতার আসনে বসাবার আপ্রাণ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এইসব লোক প্রকাশ্যে নিজেদের দেবতা বা ধর্মহিন বলে দাবী করেন। কবিগুরু নিজেকে কখনই দেবতা মনে করেননি এবং দেবতূলা মর্যাদাও দাবী করেননি। কবিগুরু একজন মানুষ, তা আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা। মনুষ্য সীমাবদ্ধতার উপরে তিনি কখনই ছিলেননা। আজকের এই নিবন্ধে কবিগুরু জমিদারী ও সওদাগরী জীবন নিয়ে কোন আলোচনা করতে চাইনা। কবি হিসাবেও তিনি নকখনও মহাগুরু, কখনও বিশ্ব মানবতার প্রাণ ও মান। আমি নিজেও তাঁর সংগীতের একজন পরম ভক্ত। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি খখনই বেদ উপনিষদ ও গীতার বাইরে আসতে পারেননি। ঘুরে ফিরেই তিনি হিন্দুত্বের কাছে ফিরে গেছেন। আমাদের কিছু মানুষ কবিগুরুকে ধর্মহীন মানুষ হিসাবে প্রতিস্ঠা করতে উঠে পড়ে লেগে গেছেন।

নাগরিক জীবনের পহেলা বৈশাখ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রাসংগিক কিছু কথা বলেছি। বাংলাদেশের জন জীবন বা গণজীবনে এর কোন প্রভাব নেই। গ্রাব বাংলায় এটি শুধুই একটি আর্থ সামাজিক দিন। এদিন বকেয়া খাজনা বা বকেয়া সওদাগরী পাওনা আদায় হবে। এছাড়া মেলা বসে গ্রামীন দেনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সকল পণ্য বেচাকেনা করার জন্যে। সময়টা কৃষকের জন্য ভাল। ফসল তোলার পর কৃষকের হাতে বেশ কিছু পয়সা আসে। আসল কথা হলো পহেলা বৈশাকের জন্মই হয়েছে অর্থনৈতিক কারণে। মোগলরা বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার অর্থনীতির জন্যে বৈশাখ দিয়ে বছরের যাত্রা কল্যানকর। যা আজও আমাদের নেতারা বুঝতে পারেননি। ফসল ও গ্রামীন অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আমাদের বাজেট শুরু হওয়া দরকার পহেলা বৈশাখ বা  পহেলা এপ্রিল থেকে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও কোন সরকার এই উদ্যোগ নিতে পারেনি। কারণ , আমাদের নেতারা মনো জগতে এখনও  স্বাধীন নন।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে রাজনীতি ও মাতামাতি করা এখন একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে আমি সমর্থন করি। পশু পাখির মুখোশ লাগিয়ে, বা গাঁজা ভাং খেয়ে অশ্লীল নৃত্য দেশের কোন মানুষই সমর্থন করেনা। এসব অশ্লীল বেলেল্লপনা শুরু হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরে। হঠাত্‍ করে কে বা কারা তরুণদের উসকিয়ে এসব করাচ্ছে তার মূলে যাওয়া দরকার। কেনইবা অদৃশ্য শক্তি আমাদের তরুণদের দিয়ে এসব করাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য কি সেটা আজ খুবই জরূরী। ভারতীয়দের ধর্মে নানা ধরণের পশু পাখির প্রভাব রয়েছে। তাঁদের দেবতারা ওইসব পশু পাখি ভর করে ভ্রমণ করেন। এমন কি ইঁদুরও তাঁদের দেবতার সম্মান পান। গ্রামীন মেলাতে মুখোশ বেচাকেনা হয়। তা ব্যবহার করে শিশুরা ক্ষণিকের আনন্দ লাভের জন্যে। কিন্তু রাজধানীতে রাস্ট্রীয় সম্মতি নিয়ে পশু পাখির মিছিল আমাদের সাধারন মানুষ কখনই সমর্থন করেনা। রাজধানীর পহেলা বৈশাখের বর্তমান রূপ এদেশের এর আগে কখনই দেখেনি।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ফ্যাশান কোম্পানী গুলো নানা রকমের পোষাক তৈরি করে। যাতে অনেক সময় পশু পাখির ছাপ থাকে। যা আমাদের তরুণ তরুণীরা খেয়াল করেনা। আমি আগেই বলেছি পহেলা বৈশাখের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু শাড়ি , কামিজ, জামায় যা ছাপা  হচ্ছে তার সাথে আবহমান বাংলার  মানুষের  সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের  কোন মিল নেই। পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যের সাথেও এর কোন মিল বা সাযুজ্য নেই। পহেলা বৈশাখের বিজ্ঞাপনের দিকে  একটু নজর দিন,  দেখতে পাবেন  পশু পাখির ছবি দিয়ে  বহু ধরণের বিজ্ঞাপন  দিয়ে সবাইকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। প্রখ্যাত শিল্পী রফিকুন নবী বলেছেন, মঙল শোভা্যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯৮৫ সালে যশোর থেকে। আপনাদের অবশ্যইো মনে রাখতে যশোর জেলার আশে পাশের  জেলা নিয়ে একটি স্বাধিন বংগভুমি  আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকেই  ওই মংগল শোভাযাত্রা চালু হয়েছে  রাজধানীতে।  এবং এখনও চলছে। এর পেছনে রয়েছে কোন এক অদৃশ্য মহলের রাজনৈতিক অভিলাষ। যা খোলা চেখে আমাদের  তরুণ তরুণীরা দেখতে পায়না। তারা ভাবছে এটা বাংগালীপনা বা বাংগালিয়ানা।  তারা মনে করছে বা তাদের বলে দেয়া হচ্ছে মংগল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। তারা ভুলে যায়, ভাষা এক হলেও দুই বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এক নয়। বাংলাদেশীরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আলাদা ঐতিহ্যের কারণেই বাংলাদেশ নামের ভৌগলিক এলাকাটা আজ স্বাধীন। ভৌগলিক লোকজ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য এক হয়েই আমরা একটি আলাদা জাতিতে পরিণত হয়েছি। আর ওই একই কারণেই পশ্চিম বাংলার বাংগালীরা  দিল্লীর অধীনে তেকেই নিজেদের স্বাধিন মনে করছে। তারা চান বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মিশে যাক। সোজা কথায় বলা যেতে পারে এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবে পদানত ও পরাজিত করতে চায়। আমরা যারা বাংলাদেশের আলাদা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা বলি আমাদের সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন  বলে গালি গালাজ দেয়া হয়। বাংলাদেশী শব্দটা নাকি পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন  সাম্প্রদায়িক গোস্ঠি চালু করেছে। আপনি যখনই ইসলাম বা মুসলমানের কথা বলবেন তখনি আপনাকে গালমন্দ করা হবে। এই গোস্ঠি নিজেদের অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মনে করে। কিন্তু এদের চিন্তাধারা বিকাশ ঘটেছে বেদ উপনিষদ থেকে। এরা মনে করে সনাতনী হিন্দু ঐতিহ্যই বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি। বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশের কোথাও কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। কিন্তু একই সময়ে ভারতে কয়েক হাজার দাংগা হয়েছে। এইতো ক’দিন আগে কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃস্টি হয়েছিল। ভারত নিজেকে স্যেকুলার অসাম্প্রদায়িক দেশ বলে বড় গলায় জাহির করে , বাস্তবে ভারত কখনই অসাম্প্রদায়িক ছিলনা। অসাম্প্রদায়িকতা ভারতের এক খোলস ও চাণক্য নীতি।

তবে একথা সত্যি যে ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশের মানুষ কিছু লোকজ সনাতনী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে লালন করে। যার সাথে  হিন্দু সমাজের মিল রয়েছে। যেমন রয়েছে হিন্দুদের ভিতর বহু মুসলমানী ভাবধারা। এসবই সাংস্কৃতিক মেল বন্ধনের ফলাফল। বাংগালী হয়েও বাংলাদেশের মুসলমানেরা হাজার বছর ধরে নিজেদের আলাদা ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছে। যা আর কোনদিনও বাংগালী হিন্দুর মতো হওয়ার নয়।( নয়া দিগন্ত, ২০ শে এপ্রিল,২০১২ )

লেখক; কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


কবিতা ও জাহাঙীর ফিরোজ  /   এরশাদ মজুমদার

কবিতার সাথে আমার সম্পর্ক সেই বাল্যকাল থেকে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখি। কবিতা হয় কিনা জানিনা। আমি জানি ছাপা হলেই কোন কবিতা  কবিতা হয়ে উঠেনা। যে কবিতার জন্ম হয়নি তা কখন জন্ম নিবে তা কবি নিজেও জানেনা। কবিতার ক্ষেত্রে কবি নেজেই মা  বাবা এবং ধাত্রী। হঠাত  করেই  সময়কে তোয়াক্কা না করে মাঝরাতে কবিতার লাইন উঁকি জুঁকি দেয়। আরামের ঘুম হারাম করে দিয়ে লাফ দিয়ে উঠ। তা না হলে এ কবিতার যে মরণ হবে। সদ্য জন্ম নেয়া কবিতার জন্যে আহা কী মায়া! ক’দিন পরেই মনে হলো এমন ল্যাংড়া খোঁড়া কবিতা জীবনে দেখিনি। ভাল বা মন্দ কবিতা নিয়ে তাই কোন শেষ কথা নেই। কবি যেটি বাতিল করে দিয়েছে, দেখা গেল পাঠক বলছে সেটাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতা নিয়ে এভাবে কথা বলার অধিকার আমার নেই। তবুও বলার তাগিদেই বললাম।

কলম ধরেছি আমার বন্ধু জাহাঙীর ফিরোজ কে নিয়ে কিছু বলার জন্যে। জাফিকে যাঁরা চিনেন তাঁরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন তিনি একজন জাত কবি। তাঁর জীবন কাহিনী শুনলে আপনি বলবেন তাঁর জন্ম হয়েছে শুধু কবি হওয়ার জন্যে। জাফি অবিরাম কবিতা লিখে চলেছেন। তাঁর কবিতা আমি নিয়মিত পড়ি জাতীয় প্রেস ক্লাবের কবিতাপত্রের কল্যাণে। প্রায় দশ বছর ধরে প্রতি মাসে কবিতাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এতে নিয়মিত জাফির কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়াও জাতীয় দৈনিক গুলোর সাহিত্য পাতায় ও বিভিন্ন সাহিত্য ম্যাগাজিনে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। কবি জাহাঙীর ফিরোজের যে ক’টি কবিতার বই বেরিয়েছে তার প্রায় সবকটিই আমি পড়েছি। তবে মোট ক’টা বই বেরিয়েছে তা ঠিক বলতে পারছিনা। এই মূহুর্তে আমার টেবিলে ‘লালনের পাখি উড়ে যায়’ কাব্য গ্রন্থটি আছে। বলা হচ্ছে জাফি ৭০ দশকের অন্যতম প্রধান কবি। কবি ৫৫ সালের ৬ই এপ্রিল এ জগতে এসেছেন। কিন্তু একজন কবির জন্যে এসব তথ্যের কোন প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে বড় তথ্য হলো জাহাঙীর ফিরোজ একজন জাত কবি। কবিতাই তাঁর প্রাণ , কবিতাই তাঁর ধ্যান। জাফি একজন দরাজ দিল মানুষ। কবিতা নিয়ে তাঁর নানা স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে জাফি একা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাঁর কল্যাণ কামনা করি। শেষের আগে জাফির একটি কবিতার অংশ উল্লেখ করলাম।

এক পলকের আলো তুমি

চোখ ধাঁধানো রূপ

তোমার ছোঁয়ায় মুগ্ধ বিবশ

আমি যে নিশ্চুপ।

Read Full Post »


বাজেট কেন এবং কাদের জন্যে   /    এরশাদ মজুমদার

 

আমি অর্থনীতিবিদ নই। বাজেট প্রনয়নকারী বিশেষজ্ঞও নই। তবে সাংবাদিক হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে বাজেট নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নে আমার নিজস্ব একটি চিন্তা ও ধারণা আছে। আমাদের চলমান বাজেট ব্যবস্থা কখনই দেশের সকল মানুষের একশ’ভাগ কল্যাণ বা উন্নয়ন সাধন করতে পারবেনা। বাজেট রচনা বা প্রনয়নে যাঁরা মাথা ঘামান বা রাতদিন পরিশ্রম করেন তাঁরা গতানুগতিক ভাবেই তা তৈরী করেন। বৃটিশ আমল বা পাকিস্তানী আমলের সাথে চলমান বাজেট তৈরীর প্রক্রিয়ার কোন বড়  ফারাক নেই। একেবারেই সেকেলে ঘুণেধরা ব্যবস্থা। আমাদের বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি বা ব্যবস্থা না ধনতান্ত্রিক, না সমাজতান্ত্রিক, না ইসলামিক। একটা  জগাখিছুড়ি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী একজন সাবেক আমলা। তিরিশ বা তারও বেশী সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের খেদমত করেছেন আমলা হিসাবে। পাকিস্তান বা বৃটিশ আমলে বহু বাংগালী মুসলমান রাজনীতিক ইচ্ছা করলে বড় আমলা হতে পারতেন। যেমন ধরুন, শেরে বাংলা, হোসেন সোহরাওয়ার্দী, স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন, মৌলবিী তমিজ উদ্দিন, নরুল আমিন। এঁরা সকলেই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু আমলা না হয়ে রাজনীতিতে এসেছেন দেশের সেবা করার জন্যে।

তত্‍কালীন পূর্ববাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশে জমিদারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা হয়েছে ১৯৫০ সালে মুসলিম লীগ  আমলে। সরকারের এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বড় বড় জমিদার বাবুরা, যারা সমাজে প্রগতিশীল বলে পরিচিত ছিলেন। জিন্নাহ সাহেব একবার বলেছিলেন পাকিস্তানের প্রয়োজন পূর্ববংগের গরীব মুসলমান কৃষকদের মুক্তির জন্যে। এর মানে, পূর্ববংগের মুসলমানরা  এত বেশী শোষিত হয়েছেন যে, তাদের মুক্তির জন্যে পাকিস্তান প্রতিস্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। যদিও পাকিস্তান প্রতিস্ঠার পর পাকিস্তানের শাসক গোস্ঠি ও পূর্ববংগের মুসলিম লীগ নেতারা সে কথা ভুলে গিয়েছিলেন। জমিদারী ব্যবস্থা বাতিল বা উচ্ছেদ করাটা ছিল একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, যার প্রশংশা করেছিল রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। পূর্ববংগের বেশীর ভাগ জমিদারই ছিলেন হিন্দু এবং তাঁরা ছিলেন কোলকাতার অধিবাসী। শুনেছি  ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে জমিদার বাবুরা মুসলিম লীগের ওই বিপ্লবী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এ কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যুক্তফ্রন্ট গঠণের সময় তাতে যোগ দিয়েছিল কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি। জমিদার বাবুদের অনেকেই কংগ্রেস করতেন। মুসলিম লীগ যে এমন একটি বিপ্লবী কাজ করতে পারে তা কংগ্রেসী জমিদার বাবুরা বিশ্বাস করতে পারেননি। এই মুসলিম লীগই মুসলমান প্রজাদের ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যে ঋণ সালিশী বার্ড গঠণ করেছিল। যা শেরে বাংলা বাস্তবায়ন করেছিলেন। বিষয়টি উল্লেখ করলাম আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে। মুসলিম লীগের মতো একটি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলও সাধারন মানুষের মুক্তির জন্যে এমন একটি প্রগতিশীল  রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। বাংলাদেশে এখন মুসলীম লীগ নাই বললেই চলে। তবে আমি নিজেও মনে করি মুসলিম লীগ কখনই গণমানুষের রাজনৈতিক দল ছিলনা। যদিও মুসলিম লীগকে নির্যাতিত মুসলিম জনসাধারন সমর্থন দিয়েছিল সময়ের চাহিদার কারনে।

১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন রোজ গার্ডেনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ বিরোধী বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মাওলানা সাহেব বলতেন, আমরা হলাম জনগণের মুসলিম লীগ, আর শুধু মুসলিম লীগ হলো  খাজা গজার দল। আওয়ামী মুসলীম লীগে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন সাধারন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ। মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিস্ঠা করেছে এই দম্বেই আত্মহারা ছিল। ফলে ৫৪ সালের সাধারন নির্বাচনের আগেই দলটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। মাওলানা ভাসানী  শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দ্দীকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করলেন। যা মুসলিম লীগকে পুর্ববংগের রাজনীতি থেকে বিদায় দিয়েছে। তারপর মুসলিম লীগ এদেশের রাজনীতিতে আর ফিরে আসতে পারেনি। রাজনীতি থেকে শেরওয়ানী, চোস্ত পাজামা আর জিন্নাহ টুপি বিদায় নিলো। আসলো লুংগি, শার্ট, পাজামা, পাঞ্জাবী। রাজনীতি উকিল মোক্তার, জমিদার জোতদার তালুকদারদের চেম্বার ও কাচারী ঘর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল অতি  মধ্যবিত্তের দুয়ারে। এখন রাজনীতি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বাংগালীরা , বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী রাজনীতি না করে থাকতে পারেনা। এখন রিকসাচলক, ফেরিওয়ালা ও সংবিধানের কথা বলে। গ্রাম আধা শহর ও পুরো শহরে মধ্যবিত্তরা চায়ের কাপে রাজনীতির ঝড় তোলে। দুই টাকার কাগজ না পড়লে তাদের ভাতই হজম হয়না।

বাংলাদেশ প্রতিস্ঠিত হয়েছে ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের রাজ প্রতিস্ঠিত হয়েছে। ৭২ সালে ব্যান্কের কোরাণী বা ক্লার্ক ছিলেন এমন ব্যক্তি এখন ব্যান্কের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আমদানী অফিসের কেরাণী এখন পাঁচ হাজার কোটি টাকার শিল্প গ্রুপের মালিক। ৭২ সালে যেখানে এক কাঠা জমির দাম দুই হাজার টাকা ছিল তা একন দুই কোটি টাকা। রাজউক বা ডিআইটি যে জমি পাঁচ হাজার টাকায় বরাদ্দ দিয়েছিল তা এখন একশ’ কোটি টাকা। সরকারী সহযোগিতা বা অনুকম্পা পেয়ে যারা  সরকারী জমি পেয়েছেন তারা রাতারাতি ধনী হয়ে গেছেন। ৮২ সালে একটি ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে তিন কোটি লেগেছে উদ্যোক্তাদের। সেই তিন কোটি টাকা যোগাড় করতে ২৫/২৬ জন উদ্যোক্তার প্রয়োজন হয়েছে। এখন একটি ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে চারশ’ কোটি টাকা লাগবে। অনুমতি পাওয়ার জন্যে  আরও চার পাঁচশ’ কোটি টাকা লাগে বলে শুনেছি। এমন উদ্যোক্তাও আছেন যিনি একাই এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে চান। অর্থমন্ত্রী বলেছেন রাজনৈতিক কারণে নতুন ব্যান্কের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যাদের ব্যান্কের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তাঁরা তা বিক্রি করে হয়ত পাবেন একশ’কোটি টাকা। রাজউক এতদিন পর বলছে , এখন থেকে আর জমি বরাদ্দ দেয়া হবেনা। এখন  মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হবে। জানিনা রাজউকের এই ওয়াদা কতটুকু সত্য হবে। রাজনৈতিক দল গুলো নিজেদের ভালবাসার মানুষদের ধনী বানাবার এর চাইতে সহজ পথা আর কোথায় পাবে।

রাজধানীর চারিদিকে এখন নদী দখল চলছে। এই দখলি ব্যবসাটা করছে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিপুস্ট শক্তিধর ব্যক্তিরা। গরীব মানুষের জমি দখল করে রাজউক এবং ধনীরা প্লট বানিয়ে বিক্রি করছেন। আপনারা প্রতিদিন খবরের কাগজে ও টিভিতে জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন। নামমাত্র মূল্যে জমি দখল করে সে জমি হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর চারিদিকে এখন শুধু হাউজিংয়ের বিজ্ঞাপন। পত্রিকা ওয়ালারাও বেশ খুশী। যত বেশী রঙিন বিজ্ঞাপন ততবেশী কম স্বাধীনতা। খুবই আনন্দের খবর।একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার প্রথম পাতায় চব্বিশ ইঞ্চির বেশী বিজ্ঞাপন ছাপা হতোনা। পাঠকের অধিকার বলেওতো একটি কথা আছে। এখন পাঠকদের সেই অধীকার নেই। সাংবাদিকরা বলবেন, আমরা শ্রমিক মানুষ, ভাল বেতন পেলেই খুশী। পত্রিকা যদি বেশী বেশী বিজ্ঞাপন না পায় তাহলে আমাদের অস্টম ওয়েজ বোর্ড দিবে কোত্থেকে।আগেই বলেছি রাজনীতি এখন মধ্যবিত্তের দুয়ারে। ধনীরা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভালবেসে চুমা খায়। চাওয়া মাত্রই টাকা দেয়। সরকারে থাকলে  মাসে পাঁচশ’ কোটি, আর বিরোধী দলে থাকলে মাসে পঞ্চাশ কোটি। এবার আপনারাই বলুন বেচারা রাজনৈতিক দলগুলো টাকার এই ভালবাসাকে কিভাবে উপেক্ষা করবে। গ্রামে গণ্জে, হাটে বাজারে চাঁদাবাজির এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন নেতারও মাসে লাখ খানেক টাকা চাঁদা আদায় হয়। যদি কখনও প্রশ্ন করেন, ভাই কেমন আছেন? ভাই উত্তরে বলবেন, বোঝেনইতো দল ক্ষমতায় থাকলে যা হয়। সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করছেন নাকি? সময় কোথায় বলুন? তাহলে? দল চালাতে হলেতো কিছু চাঁদা নিতেই হয়। জন সাধারন ভালবেসেই মাসে মাসে কিছু টাকা দেন। এছাড়া আমাদের ছেলেরাইতো উন্নয়নের কাজ করছে। টেন্ডারগুলো তারাই পায়। বুঝতেইতো পারেন রাজনীতি করতে হলে এসবতো করতে হবে।

রাজধানীর পর্যায়ে চাঁদাবাজির কথা আগেই বলেছি। এছাড়া রাজনীতিতে উপরি পাওনাতো আছেই। সুরন্জিত বাবুর গল্পতো আপনারা জানতেই পেরেছেন। ওনার ছেলেও ছ’মাস চাকুরী করে পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়ে টেলি ব্যবসা জোগাড় করেছেন। তিনি দুদকে জবানবন্দী দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বন্ধুরা তাঁকে টাকা দিয়েছেন। সুরন্জিত বাবুর ছেলের মতো এদেশে আরও বহু ছেলে আছে যাদের বন্ধুরা  সরকারী ব্যবসা পাওয়ার জন্যে এভাবে টাকা দেয়না। কারণ, তাদের বাবা মন্ত্রী নয়। শুনেছি এ জামানায় সংসদ সদস্য হতে নির্বাচনে চার পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। মন্ত্রীত্ব পেতেও নিশ্চয়ই টাকা খরচ করতে হয়। দল যদি নির্বাচন করতে হাজার কোটি টকা খরচ করে সে টাকা দলনেতা কোথায় পাবেন? বাধ্য হয়েই দলনেতাকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ওয়াদা করতে হয় ক্ষমতায় গেলে পুষিয়ে দেবো। পদ্মা সেতুর ঘটনাটা হয়ত তেমনি একটা কিছু। তাই ব্যবসায়ী আবুল সাহেবকে কিছু করা যায়নি। সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনাটা  একটু ভাবুন। তাঁর ওজারতি যেয়েও যায়নি। তিনি এখন উজিরে খামাখা। এর মানে হলো দপ্তর বিহীন মন্ত্রী। উর্দুতে বলে উজিরে খামাখা। মানে কাজ নেই, নিয়মিত সরকারী তহবিল থেকে টাকা পয়সা নিয়ে সংসার চালাবেন।

আমাদের দেশের দূর্ণীতি সম্পর্কে টিআইবি( ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) বহুদিন ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সে প্রতিবেদন আমাদের জন্যে মর্যাদার কিছু নয়। এতে বিশ্ব বাসীর কাছে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। তবে দূর্ণীতির বিষয়টি এখন আর কেউ গায়ে মাখেনা। সরকারী অফিসের পিয়ন থেকে সচিব মন্ত্রী পর্যান্ত সবাই পদ মর্যাদার খাজনা , সেলামী বা সম্মানী আদায় করেন। ছেলেবেলায় চাপরাশী বাড়ির কথা শুনেছি। এটি একটি সরকারী চাকুরী। চাপরাশীর চাকুরী করে ভদ্রলোক আয় রোজগার করে সমাজে সম্মান অর্জন করেছিলেন। এমন কি সারাজীবন উমেদারের চাকুরী করেও সামাজিক মর্যাদা বৃস্ষি করেছেন এমন লোক ছিল। উমেদার হচ্ছে , যিনি চাকুরীর জন্যে আবেদন করেছেন, এখনও পাননি। কিন্তু বিনা বেতনে বা বিনে পয়সায় কাজ করছেন বা শিখছেন। উমেদারকেও লোকে খুশী হয়ে দু’চার পয়সা হাতে গুঁজে দিতো। এতো গেলো সরকারী অফিসের উপরি লেনদেনের কিসসা। আপনারা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন আগামী বাজেটের সাইজ হবে এক লক্ষ আশি হাজার কোটি টাকা। সরকারী কর্মচারীরা যদি মাত্র দশ পার্সেন্ট করে উপরি গ্রহণ করেন তাহলে তার পরিমাণ হবে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে উপরি আদায়ের পরিমাণ বা পার্সেন্টেজ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। আমিতো বলি, দশ পার্সেন্ট  হাত খরচ জাতি দিতেই পারে। ছেলেবেলায় শুনেছি যে বাজার করে সে পান বিড়ির জন্যে দু’চার পয়সা রাখতো। শুনেছি , করাচীতে  বাসা বাড়ির বাংগালী কেয়ারটেকাররা শর্ত দিতো বাজার করার সুযোগ দিতে হবে। বড় বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্ট গুলোতে টিপস দেয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কোন হোটেলে টিপসা বিলের সাথে যোগ করে দেয়া হয়। এক সময় এই টিপসকে বকশিস বলা হতো।

এতক্ষণ ধরে আপনাদের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির পারিপার্শিক অবস্থার কথা বলেছি। আমার মূল আলোচনা হচ্ছে বাজেট নিয়ে। আমাদের সবার জীবনই বাজেট আছে। যারা চাকুরী করেন তাঁরা বেতন এবং উপরি, বাড়তি বা ঘুষ নিয়ে মাসিক বাজেট করেন।বর বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, জমি ডেভেলপাররা সংসার খরচের জন্যে তেমন বাজেত তৈরী করেন না। কারণ তাদের কাছে প্রচুর টাকা থাকে। সে টাকা ব্যান্কের বা  ব্যবসার। এ ব্যাপারে মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন, শি্প বা ব্যবসার অবস্থা খারাপ। খিন্তু মালিকের অবস্থা খুবই ভাল। তারা পাজেরো বা বিএমডব্লিউতে চড়েন। বর বড় ভিলা বানান। কর্মচারীর বেতন ঠিক সময় দেননা। একই ভাবে সরকারও বাত্‍সরিক বাজেট তৈরি করেন রাজস্ব আদায়, বিদেশী ঋণ, দেশী ঋণের উপর নির্ভর করে। ইদানিং বিদেশী ঋণের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। পুরাণো বিদেশী ঋণ অনেক বাকি পড়ে গেছে। নিয়মিত কিস্তি শোধ হচ্ছেনা। চলতি সরকার মনের মাধুরী মিশিয়ে বাণিজ্যিক ব্যান্ক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন। ডিপোজিটের উপর সুদের হার ঠিক নেই জন সাধারণ সরকারী প্রতিস্ঠানে এখন আর সঞ্চয় রাখতে চায়না। এক লক্ষ আশি হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকারের কর্মচারীর বেতন, রক্ষণাবেক্ষন, পেনশন বাবতই খরচ হয় সিংহ ভাগ টাকা। এর মানে হচ্ছে একশ’ টাকার ব্যবসা চালাতে গিয়ে ম্যানেজারের বেতন দিতে হয় দেড়শ’ টাকা। তাহলেই বুঝতে পারেন এ ব্যবসা কতদিন চলবে। সরকারের সাইজও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১/১১র সরকারের দিকে একবার নজর দিন। সরকারের বেতনভুক কর্মচারীরাই সরকার দখল করে দুই বছর দেশবাসীকে হেনস্থা করেছে। এখন তাঁরা দেশত্যাগী হয়েছেন। যাওয়ার সময় গণতন্ত্রের জোব্বা পরিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছেন। মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের কাছ থেকে ২৪০ সিট নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়।বলা যেতে পারে  ১/১১র সরকারের বৈধ ওয়ারিশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র আর দেশ রক্ষার জন্যে এখন আওয়ামী লীগ ও সরকার লড়াই করে যাচ্ছে পুলিশ, বিজিবি আর রেবের মাধ্যমে। তাই আমরা প্রতিদিন টিভিতে পুলিশ আর রেবের বক্তৃতা শুনি।

প্রশ্ন হলো বাজেটের বেনিফিট কাদের কাছে পৌঁছে? কারা বেনিফিসিয়ারী তা ইতোমধ্যে আপনারা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। একজন চৌকিদারও এই বাজেটের বেনিফিট পায়। পায়না শুধু এদেশের কোটি কোটি সাধারন কৃষক ও কৃষি উত্‍পাদক শ্রেণী। এদেশে কৃষকদের কোন শক্তিশালী সংগঠন নেই। কৃষক ছাড়া বাকি সবার দরকষাকষির সংগঠন আছে। দেশে লাখ লাখ মানুষ আছেন যাঁরা কখনও টাকা দেখেননা বা তাঁদের টাকার (কারেন্সী) প্রয়োজন হয়না। তাঁরা শ্রমের বিনিময়ে চাল পান, দুপুরের খাবার পান। ধানের চাতালে যে সব মা বোন কাজ করেন তাঁরা দিনের শেষে মুজুরী হিসাবে চাল পান।বর্গা আর প্রান্তিক চাষীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বড় চাষী বা কৃষক বা জমির মালিকগণ শুধু চাষের উপর নির্ভর করেন না। তাঁদের আরও অনেক ব্যবসা আছে। তাঁদেরই শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা চাকুরী করেন। তাঁদের হাতে নগদ অর্থ থাকে। আমাদের অর্থনীতি এখনও কৃষি এবং কৃষকদের পক্ষে নয়।ফলে সরকারের বা রাজনৈতিক দলগুলোর দর্শন  আদর্শ ও কর্মসূচী কৃষকদের পক্ষে নয়। বহু বছর আগে জিয়া সাহেবের আমলে যখন আজিজুল হক সাহেব কৃষি উপদেস্টা ছিলেন তখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আমি কৃষির পক্ষে না কৃষকের পক্ষে। কমিটি আমাকে জানালেন, সরকার কৃষি / খাদ্য উত্‍পাদন বৃস্ষির জন্যে কাজ করছে। আপনার কাগজ ফসলতো কৃষকদের স্বার্থের জন্যে কাজ করছে। আমরা মনে করি আপনি কৃষকদের উসকানী দিচ্ছেন। এই তথ্য থেকেই আপনারা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশ সরকারের আদর্শ কি এবং কোন পথে। পাকিস্তানের ২৩ বছর আর বাংলাদেশের ৪০ বছর মিলিয়ে ৬৩ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু কৃষকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে দেশের যে উন্নতি ও অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিলতা হয়নি। কৃষকদের সজাগ করার জন্যে কাজ করে অনেকেই সরকারী পুরস্কার পান। কৃষি এখনও দেশের ৬০ ভাগ মানুষের কর্ম সংস্থান করে। এর মানে হলো কোন পথ অবলম্বন করলে দেশের অর্থনীতি স্বাধীন হবে সে পথে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো চলছেনা। আপনারা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন বরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ধানের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। লাভ হবে মিল মালিক ও কৃষিপণ্যে বিনিয়োগকারীদের। শুনা যাচ্ছে কৃষকরা এবার সর্বস্বান্ত হবে। বেশী উত্‍পাদন একটি মহা আনন্দের খবর হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়েছে বেদনার খবর। বেশী ফলন আমাদের কৃষকদের বহুকাল থেকে কস্ট দিচ্ছে শুধুমাত্র সরকারের নীতির ফলে। পৃথিবীর বহুদেশ এ সমস্যার সমাধান করেছে কৃষকদের কল্যাণার্থে। সে সব দেশের অর্থনীতিও বিকশিত হয়েছে কৃষকদের সমর্থনে। জাপান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্বেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও কৃষি ত্যাগ করেনি। নয়া কৃষি নীতির কারণে জাপানের কৃষকরা এখন খুবই সুখে আছে। জাপানের একশ’ ভাগ কৃষকই এখন আধুনিক শিল্প পণ্যের ভোক্তা। কৃষিতে যতবেশী ভর্তুকী ততবেশী শিল্পের বিকাশ। জাপানের এবং ভিয়েতনামের কৃষকগণ এখন সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিক। আমাদের দেশের কৃষকদের কোন সম্মান নেই। কারণ তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী নন। সুতরাং এই বাজেটের সাথে কৃষকদের কোন সম্পর্ক নেই। চলমান সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা কৃষকদের মিত্র নয়। দেশের ষোল বা পনের কোটি মানুষের ভিতর দুই/তিন কোটির সম্পর্ক রয়েছে বাজেটের সাথে। এমনধরণের বাজেট হাজার বছরেও কৃষকের কল্যাণ বয়ে আনবেনা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


পৃথিবীর দরিদ্র মানুষটি কে এ বিষয়ে আমার কোন চিন্তা ভাবনা কখনই ছিলনা। আমার মুরুব্বী বিশিস্ট ব্যান্কার মুজিবুল হায়দার চৌধুরী এ চিন্তাটি আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোথাও কোন  তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি।দারিদ্র নিয়ে আমাদের রাজনীতিক, অর্থনীতিক, দার্শনিক আর চিন্তুকদের চিন্তার আর গবেষণার শেষ নেই। দরিদ্র কাকে বলে, দারিদ্র কত প্রকার, কি হলে একজন মানুষকে দরিদ্র বলা যাবে এসব কথা বলা হয়ে গেছে। শত শত বই লেখা হয়ে গেছে। ধনী দেশ গুলো নানা ভাবে দরিদ্র দেশ গুলোকে ঋণ দিচ্ছে, সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর দরিদ্র সংখ্যা কমছেনা। সাতশ’ কোটি মানুষের এ পৃথিবীতে পাঁচশ’ কোটি মানুষ দরিদ্র বা হত দরিদ্র। বিশ্ব ব্যান্কের বদৌলতে আমরা ইতোমধ্যে বহু নতুন শব্দ জানতে ও শিখতে পেরেছি। লেখক সাংবাদিক, গবেষক বুদ্ধিজীবীরা নিয়মিত বা হর হামেশা এসব শব্দ ব্যবহার করছেন। বিগত ৬৩ বছর ধরে আমরা দারিদ্রের কথা শুনে আসছি। দারিদ্র কমাবার জন্যে কোথাও কারো কোন চেস্টার ত্রুটি নেই। কিন্তু দারিদ্র কমেনা। এর রহস্য কি , কে বলতে পারবে? আমাদের প্রিয় পৃথিবীটা কি তাহলে একদিন এমন বিশাল দারিদ্র নিয়েই বিলীন হয়ে যাবে? আমাতো মনে হয়না  এ জীবনে দারিদ্রমুক্ত একটি পৃথিবী দেখে যেতে পারবো ।

পৃথিবীতে এখনও যে সম্পদ আছে তার পূর্ণাংগ ব্যবহার হয়নি। যে টুকে সম্পদ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ৯৯ ভাগ চলে যাচ্ছে  ধনী ও ক্ষমতাবানদের কাছে। ক্ষমতাবান আর ধনী দেশ গুলো এই জন সম্পদ দিয়ে কি করছে? বেশীর ভাগ উদ্বৃত্ত সম্পদ ব্যবহৃত হচ্ছে যুদ্ধে, সাধারন মানুষকে হত্যা করার জন্যে। সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকায় অকুপাই আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলনে বহু মানুস আহত ও নিহত হয়েছে। অকুপাই আন্এালনের নেতাদের দাবী ছিল  পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পদের মালিকানা চলে গেছে এক ভাগ মানুষের কাছে। সেই এক ভাগ মানুষই পৃথিবীটাকে চালাচ্ছে। জগতব্যাপী অশান্তি সৃস্টি করে রেখেছে। তারাই জাতিসংঘকে নিয়ন্ত্রণ করে। জাতিসংঘ তাদেরই কথামতো চলে। জাতিসংঘই যুদ্ধের অনুমতি দেয়। আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলছে অনেক বছর ধরে। এ যুদ্ধের কারণ কি , কেন এই যুদ্ধ চলছে কেউ বলতে পারেনা। যুদ্ধের ফলাফল কি হবে তা আমরা সবাই জানি। ওবামা প্রশাসন এখন তালেবানদের সাথে আলোচনা শুরু করেছে। এইতো ৩০/৪০ বছর আগেও পৃথিবীর অবস্থা এমন ছিলনা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা এবং তার দোসররা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, যখন খুশী যেখানে সেখানে যুদ্ধ বাধিয়ে দিচ্ছে। এক সময় আমেরিকা এবং তার সাঙাতরা কমিউনিজমকে ধ্বংস বা প্রতিহত করার জন্যে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। তখন ইসলাম বা বেকুব মুসলমানরা ছিল তাদের বন্ধু। কমিউনিজম দমনের জন্যে মুসলমানরা অন্ধের মতো  পশ্চিমাদের সমর্থন করেছে। আজ সেই পশ্চিমারাই সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এই যুদ্ধে  বাংলাদেশের  সরকার গুলোও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের একশ্রেণীর বামপন্থী আর বুদ্ধিজীবীরা আমেরিকার এই ভাওতাবাজীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাস দমনের নামে ইসলামকে ধ্বংস করার  এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্যে বিভিন্ন দেশকে আমেরিকা অর্থ সাহায্য দিচ্ছে।

ক’দিন আগে নোবেল বিজয়ী জার্মান কবি  গুন্টার গ্রাস একটি কবিতা লিখে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। মনের যাতনায় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি এই কবিতা লিখেছেন। সারা বিশ্বের বিখ্যাত কাগজ গুলো তাঁর ওই কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করে তোলপাড় সৃস্টি করেছে। আমিও উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সেই কবিতা অনুবাদ করেছি। এই মহান কবি বলেছেন, সত্য কথা না বলে এতদিন চুপ থাকার জন্যে তিনি এখন অনুতপ্ত। তিনি নিজেকে অপরাধী সাব্যস্ত করে নিন্দা করেছেন। গ্রাস তাঁর কবিতায় যে সত্য কথাটি তুলে ধরেছেন তা হলো, ইজরায়েলের কাছে আনবিক বোমা আছে, কিন্তু তা নিয়ে শক্তিধরেরা কোন উচ্চবাচ্য করছেনা। ইরাণ আনবিক বোমা তৈরি করছে এই সন্দেহে ইরাণের বিরুদ্ধে নানা রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গ্রাস এ ব্যাপারে নিজের দেশ জার্মানিরও সমালোচনা করেছেন। বিশ্বের চলমান অশান্তির জন্যে গ্রাস শক্তিধর দেশ গুলোকে দায়ী করেছেন। ক্ষমতার লড়াই ও অন্যকে নিজের প্রভাবে রাখা হাজার বছর আগেও ছিল। বিশ্ব জয় করে সেকান্দর বাদশাহ বা আলেকজান্ডার ‘গ্রেট ’ টাইটেল পেয়েছিলেন। এক সময় বলা হতো বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা। বা জোর যার মুল্লুক তার। সেই সব যুগ বা শতাব্দী পেরিয়ে মানুষ নাকি সভ্য হয়েছে। বিশ্ব সভ্য হয়েছে এই ধারণাটা একেবারেই মিথ্যা। পুরো বিশ্বটাকে নিজেদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্যে আমেরিকা তার পদলেহী দোসররা ভয় ভীতি দেখিয়ে দমন করে রেখেছে। আপনারা নিজেরাই দেখছেন , বাংলাদেশ গরীব ও দূর্বল হওয়ার কারণে শক্তিশালী দেশ গুলো কি রকম ব্যবহার করছে। সত্যি কথা বলতে কি চলমান বিশ্বের অবস্থা দেখে আমার হয়না আমরা সভ্য জগতে বাস করছে।

শত চেস্টা করেও আমরা বিগত ৬৩ বছরে আমরা দেশের মানুষকে দারিদ্রের ভয়াল অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারেননি। কারণ আমাদের রাজনীতিক ও আমলারা সাধারন মানুষের উন্নতির দর্শনে বিশ্বাস করেননা। কৃষক শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি  আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এতে অতি অল্প সময়ে রাজীতিকরা জনপ্রিয় হতে পারেন। আমার রাজনীতিক বন্ধুরা বলে, তুমি আসলে কি তা রাজনীতিতে কোন  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। জনগণ তোমার সম্পর্কে কি ভাবছে বা তোমাকে কি ভাবে দেখছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরে নাও , তুমি দরবেশ নও, তবুও লোকে তোমাকে দরবেশ মনে করে। রাজনীতিতে এটা এক ধরণের ধোকাবাজি। মানে বাইরের খোলসটাই আসল। বাংলাদেশে ষোল কোটি মানুষ, সকল দল মিলে রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত মাত্র কয়েক লাখ মানুষ। বাকি সব মানুষ ভোটার। কেউ নৌকা আর কেউ ধানেরশীষ। কেউ জিয়া আর কেউ শেখ মুজিব। দেশের মানুষকে দারিদ্র মুক্ত করতে এত সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু দারিদ্র আমাদের ছেড়ে যাচ্ছেনা। এর মানে আমাদের রাস্ট্রনীতি ও সরকার ব্যবস্থাপনায় কোথাও গলদ রয়েছে। সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম যদি  সার্বিক ভাবে উন্নতি করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ পারেনা কেন? এ ব্যাপারে ভাবার সময় এসে গেছে। আর দেরী করলে আমরা অন্ধকারে ডুবে যাবো।এ কথা সত্যি যে ইংরেজরা আমাদের ১৯০ বছর শোষণ করেছে। এ দেশের সম্পদ লুন্ঠণ করে লন্ডন নিয়ে গেছে। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লেই বুঝতে পারবেন এ দেশের সাধারন মানুষ , বিশেস করে মুসলমানরা কিভাবে শোষিত হয়েছে। তারপরে পাকিস্তানের ২৩ বছরেও এ দেশের মানুষ শোষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ৪০ বছরেও সাধারন মানুষ সীমা্হীন ভাবে শোষিত হয়েছে। পুঁজির বিকাশের নামে একশ্রেণীর লোককে রাতারাতি  নোংরা ধনীতে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে ব্যান্ক করার সময় মাত্র তিন কোটি টাকা  জোগাড় করতে ২৫/২৬ জন উদ্যোক্তাকে জড়ো করতে হয়েছে। এর ভিতরেও কয়েক জন ভুয়া চেক দিয়ে ডিরেক্টর হয়েছে। তখন প্রশ্ন উঠেছিল আয়কর নিয়ে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হলো যদি আয়করের বিষয় জানতে চাওয়া হয় তাহলে ব্যান্ক হবেনা। আয়করের বিষয়টা পরে দেখা যাবে। এই ভাবেই প্রথম প্রজন্মের ব্যান্কগুলো প্রতিস্ঠিত হয়েছিল। এখন এক হাজার কোটি মুলধন দিয়ে একা ব্যান্ক করতে চান অনেকেই। চলতি সরকারও রাজনৈতিক কারণে কয়েকটি ব্যান্কের অনুমতি দিয়েছেন। সমাজের সুবিধা ভোগীদের সরকার নানা ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। গরীব মানুষের জমি দখন করে কমদামে সুবিধা ভোগীদের মাঝে বিতরন করা। যে জমির দাম খোলা বাজারে এক কোটি টাকা তা সরকার বিক্রি করেন পাঁচ লাখ টাকায়। এর মানে নিজেদের লোককে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দেয়া।

৭০ সালে যে শ্রমিকের মুজুরী ছিল দৈনিক দুই টাকা তার মুজুরী এখন ৩/৪শ’ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ওই একই যে মানুষটার মাসিক বেতন ৩/৪শ’ টাকা ছিল এখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি। ব্যান্কের কোরানী হয়েছে ব্যান্কের চেয়ারম্যান। অবাংগালী ২২ পরিবারের  পোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এখন ২২ হাজার পরিবার আমাদের শোষণ করছে। এই শোষণের সাথে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোও জড়িত। বংগবন্ধু সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন বলেই ছোট ব্যবসা থেকে বড় বড় শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন। বেসরকারী খাতে পুঁজি বিনিয়োগকে তিনি নিরুত্‍সায়িত করেছেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। তাঁর সময়েই দূর্বল খাদ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। দু:খ করে তিনি বলেছিলেন সকলে পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। তাঁ আমলেই সর্বোচ্চ পুঁজি বিনিয়োগের সীমা ছিল দশ লাখ টাকা। দুই বছরের মাথায় সেই সীমা বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা করতে হয়েছিল। রাস্ট্রায়ত্ব সকল কল কারখানায় সীমাহীন লুট পাট করেই একশ্রেণীর মানুষ পুঁজিপতি হয়েছিল। এসব পুঁজিপতির মুলধন এসেছিল লুটপাট থেকে। ৭১ সালের ষোল থেকে আঠার ডিসেম্বর যারা বাংলাদেশ ব্যান্কের ( সে সময়ের স্টেট ব্যান্ক) টাকা লুট করেছিল তারাও আজ বিরাট শিল্পপতি এবং জাতিকে কিভাবে দেশের উন্নতি করতে হবে সে ব্যাপারে সবক দেয়। আমি ধন বা পুঁজি সৃস্টির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু রাস্ট্র বা গরীব মানুষকে শোষণ করে  নোংরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তা কোন সমাজ ব্যবস্থা চাইতে পারেনা। বাংলাদেশের পুঁজিপতিরা এখন কাউকেই তোয়াক্কা করেনা। কোথাও কোন বাধা দেখলে বা আসলে তাকে শক্তি দিয়ে প্রতিহত করে অথবা টাকা দিয়ে বশে আনে। সকল ধনীর সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সখ্যতা আছে। ক্ষমতায় যে দলই আসুক তাতে তাদের কোন অসুবিধা হয়না। ফলে রাস্ট্র ধনীদের দাসে পরিণত হয়। একদিকে আভ্যন্তরীন ধনীদের চাপ, অন্যদিকে বাইরের ক্ষমতাবান রাস্ট্রের চাপ। এইতো দেখুন এক সপ্তা’র মধ্যেই জাপন ভারত ও আমেরিকার নেতারা বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। সবাই বলছে, আমরা কিছু নিতে আসিনি, দিতে এসেছি। হিলারীতো প্রায় সবার সাথেই দেখা করেছেন। এমন গরীব দেশে বড় বড় মেহমানদের আগমন সাধারন মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্নের সৃস্টি করেছে।

পৃথিবীর শক্তিধর দেশ বলে বহুল পরিচিত আমেরিকাতেও মানুষ ফুটপাতে থাকে। তাদের কোন কাজ নেই। তারা হোমলেস বলে পরিচিত। এ রকম লোক আছে কয়েক লাখ। সেই আমেরিকা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস আর যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেন? শুধুমাত্র আমেরিকার ক্ষমতাবানদের রক্ষা করার জন্যে। ওই দেশের কিছু কাগজ ও মিডিয়া আছে যারা প্রতি বছরই ধনীদের তালিকা করে। এসব তালিকায় বিল গেটসের মতো ভাল মানুষের নামও আছে। চলতি বছর বিল ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছেন। প্রথম স্থানে আছেন মেক্সিকোর এক ভদ্রলোকের নাম। কিন্তি  ওই মিডিয়াকে যদি বলা হয় পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষটির নাম বলুন, তারা কি তা পারবেন? না পারবেন না। কারণ দরিদ্রতম মানুষতো একজন বা একশ’জন নন। কয়েকশ’ কোটি লোক দরিদ্রতম। এমন কি পৃথিবীতে দরিদ্রতম দেশের তালিকাও প্রকাশ করা হয়। যার মধ্যে আমাদের প্রিয়তম দেশটিও আছে। এক সময় আমাদের এই দেশটি সুজলা সুফলা ছিল। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ ছিল। সারা বিশ্বের সওদাগরেরা এদেশে এসেছে ব্যবসা করার জন্যে। শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ব্যবসার নাম করে এ দেশটি দখল করে নেয় এবং ১৯০ বছর ধরে লুন্ঠন করে। অখন্ড বাংলার লুন্ঠিত সম্পদ দিয়ে লন্ডনকে গড়ে তোলে। বাংলার সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন দেশে কলোনী গড়ে তোলে। নানা রং ও নানা রূপে বিদেশীরা আবারও আমাদের দেশে আসছে।

আমেরিকা যুদ্ধবাজ হিসাবে এখনও পৃথিবীর এক নম্বর দেশ। কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা পতনের দিকে। শুনেছি শুধু চীনের কাছেই তার তিন ট্রিলিয়ন ডলার দেনা রয়েছে। এক সময় চীন আর আমেরিকার সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে। বেশীদিন আগের কথা নয়, যখন চীন নিষিদ্ধ ছিল আমেরিকানদের জন্যে। বেইজিং রেডিও ও চীনের মিডিয়া আমেরিকাকে বলতো কাগুজে বাঘ। আজ চীনের মাল না হলে আমেরিকার চলেনা। চীনের মতো দেশেও এখনও কোটি লোক দরিদ্র রয়ে গেছে। চীন নিজেও এটা স্বীকার করে। এই চীনকেও এখন অস্ত্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। কারণ আমেরিকা চীনের জন্যে একটি নিশ্চিত হুমকি। আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে তাইওয়ান জাপান ভারত দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ব্যবহার করতে চায়। ভারত রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বকে শীতল করে আমেরিকাকে বুকে টেনে নিচ্ছে। ভারতেও কোটি লোক প্রতিদিন খেতে পায়না। সেইদেশ চীনের সাথে চীনের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভারতও পরিচালিত হয় নোংরা ধনের ইশারায়। রাজনীতিক ও রাস্ট্রকে ভারতের ধনীরা দাসে পরিণত করেছে। সেখানে ৩০ কোটি হরিজনকে( ভগবানের সন্তান ) মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয়না।  ভারতের সোয়াশ’ কোটি লোকের ভিতর একশ’কোটি  লোক দরিদ্র। বাকি লোকের ৯০ ভাগ মধ্যবিত্ত। আর বাকিরা ধনী এবং তাদের খুত পিপাসু। এমনি তরো ভারত প্রতিবেশী সকল দেশকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। শ্রীলংকার মতো শান্ত শিস্ট দেশকেও ভারত অশান্ত করে রেখেছে। পাকিস্তানকেতো জন্মের পর থেকেই ভয় ভীতি দেখিয়ে চাপে রেখেছে। ভারতের ভয়কে মোকাবিলা করার জন্যেই পাকিস্তান আনবিক বোমা তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ দরিদ্র দেশ দুটির কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে মানবিক জীবন দান করার জন্যে রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও ধনীরা কিছুই করেননি। ভারত ইতোমধ্যেই অস্ত্র কেনা বা আমদানীর ব্যাপারে প্রথম স্থান দখল করেছে।

ইউরোপের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সুপ্রাচীন মহা শক্তিধর দেশ গ্রীস দেউলিয়া হয়ে গেছে। কিন্তু সে দেশে বহু ধনী আছেন এখনও যাদের বিত্তের কোন অভাব নেই। আইসল্যান্ড দেশটিও বিক্রি হওয়ার পথে। কেন এ রকম হচ্ছে তা ভাবার জন্যে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের সময় এসে গেছে। আমারতো মবে হচ্ছে বিশ্বনীতি রিফর্ম বা সংস্কার করার সময় এসে গেছে। প্রমানিত হয়ে গেছে, দেশের বেশীর ভাগ মানুষকে ভুখা রেখে পুঁজির বিকাশ বা শুধু যুদ্ধ করলে কোন দেশ টিকবেনা। আমরা এক বিশ্বের শ্লোগান দেবো আর  মানুষ হয়ে মানুষকে শোষন করবো এমন নীতি ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই না। আমেরিকা আর ইউরোপের নেতারা মানব কল্যাণের শ্লোগান দেয়, জাতিসংঘ তাদের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলে, পুঁজিপতিরা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে, কথায় কথায় বিনা কারণে ভিন দেশকে আক্রমনের হুমকি দেয়। অথচ নিজ দেশের কোটি কোটি  ভুখা ও বসতিহীন মানুষের কথা মনে রাখেনা। এই নেতারাই গরীব মানুষকে খাদ্য না দিয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্য সাগরে ফেলে দেয়। মানুষকে ভুখা রেখে খাদ্য সাগরে ফেলে দেওয়া দানবীয় শক্তিরই কাজ। প্রখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্কস দরিদ্র মানুষের মুক্তির জন্যে যে কথা বলেছিলেন তা কমিউনিস্ট নেতারা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। নেতারা নিজেরাই বিলাস বহুল জীবন যাপন করতেন নিরাপত্তার নামে। সকল সম্পদের মালিক রাস্ট্র , এই শ্লোগান দিয়ে সম্পদ সৃস্টির ব্যাপারে মানুষের জন্মগত আকাংখকে পীড়ন করা হয়েছে। ওই চিন্তা ছিল মানুষের প্রকৃতিগত প্রজ্ঞা ও মেধার বিরুদ্ধে। মানুষকে চিরকালের জন্যে বাধ্য করা যায়না। গণচীন সঠিক সময়ে নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। তাই চীন আজ এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি। আমেরিকার সাথে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে রাশিয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা ভুলে গিয়েছিল।

বাজেট নিয়ে লিখতে গিয়ে গত সপ্তাহে আমি বাংলাদেশের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে কিছু কথা বলেছি। আমাদের অর্থনীতি যে ভাবে চলছে তাতে গরীব হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। কাগজে কলমে গরীবের পক্ষে কথা বলা আমরা শুনতে পাচ্ছি বিগত একশ’ বছর ধরে। রাজনীতি আর ভাওতাবাজির জন্যে কথা গুলো ঠিক আছে। যদি পাঁচ বছর সংসদ সদস্য থাকলে একটি লোক ধনী হতে পারে তাহলে গরীব মানুষ গুলোর ভাগ্য একশ’ বছরেও পরিবর্তন হচ্ছেনা কেন। যদি ব্যবসায়ীরা বছরে ২০/৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় রাস্ট্রকে হাতকরে সেখানে গরীবের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে কোন পথে।রাস্ট্র, সরকার, সংসদ, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত মানুষের মগজ ধোলাই করার সময় এসে গেছে। তা না হলে ১৬ কোটি মানুষের ভিতর ১৪ কোটিকে দরিদ্র রেখে দেশের উন্নতি কখনই হবেনা। একই ভাবে বিশ্বের সাতশ’কোটি মানুষের মধ্যে ছয়শ’ কোটি মানুষকে অভুক্ত বা অধিকার হারা রেখে এ বিশ্বের মুক্তি হবেনা। তাই আমি বলছি বিশ্বের ছয়শ’ কোটি মানুষই একাট্টা হয়ে একজন দরিদ্রতম ব্যাক্তি যার বা যাদের সম্পদ রাস্ট্র এবং ধনীরা জোর করে নিয়ে নিজেরা ভোগ করছে আর সন্ত্রাসী কায়দায় দরিদ্রদের সন্ত্রস্ত করে রেখেছে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »


৩০ লাখ ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস  /  এরশাদ মজুমদার

ভৌগলিক মুক্তি দ্বারা মানুষের মুক্তি হয় কিনা আমি জানিনা। রাসুলের(সা) যুগে মক্কার মানুষের মুক্তির ব্যাপারটা  ছিল আত্মিক মুক্তি। সমাজে ছিল নানা অনাচার ও কুসংস্কার। সবলরা দূর্বলদের উপর অত্যাচার করতো। ন্যায় বিচারের কোন বালাই ছিলনা। শক্তিমানরা যা বলতো তাই ছিল আইন ও আদালত। অনাচার অবিচার টিকিয়ে রেখেই সমাজ ও দূর্বল মানুষদের শাসন ও শোষন করা ছিল সবলদের আদর্শ। তখনও সমাজে ধর্ম ছিল। নবী রাসুলরা ও এসেছেন বারবার এবং বলে গেছেন ন্যায় নীতির কথা। বলে গেছেন সত্যের কথা। প্রত্যেক নবী রাসুল ছিলেন একজন বিপ্লবী শিক্ষক। মানুষকে মাথা তুলে দাঁড়াতে আহবান জানিয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্যে লড়াই করেছেন , অনেকেই নিজের জীবন দিয়ে গেছেন সত্য প্রতিস্ঠার জন্যে। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, এমন কোন জনপদ নেই যেখানে তিনি নবী রাসুল পাঠাননি মানুষের মুক্তির জন্যে। সবাই ভাল কথা বলেছে, ভাল উপদেশ দিয়েছেন। নবী রাসুল ও জ্ঞানীজনই ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের মুক্তির দূত। অত্যাচারী শাসক, রাজা মহারাজা , নবাব বাদশাহ ও সম্রাটদের বিরুদ্ধে সকল নবী রাসুলও জ্ঞানীরা লড়াই করেছেন। সব কথার বড় কথা মানুষের মুক্তি। আল্লাহতায়ালা মানুষকে মুক্তি দিয়েই এ জগতে পাঠিয়েছেন। বলেছেন মানুষ শুধু আল্লাহপাকের কাছেই জবাবদিহি করবে ও মাথা অবনত করবে। আর সকল সৃস্টি মানুষের আজ্ঞাবহ থাকবে।

কিন্তু আল্লাহপাকের এই নিয়মে এ জগত বিকশিত হয়নি। এখানে শক্তিমানরা সব সময় আল্লাহর প্রতিদ্বন্ধী হয়েছে ফেরাউন নমরুদ ও সাদ্দাদের মতো। ওরা সকলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এখনও যারা ফেরাউন ও নমরুদের মতো ব্যবহার করছে বা মানুষকে দাস বানাতে চায় তারাও একদিন ইতিহাসের আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এ জগতের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের বিজয় করতন উড়বে। নবী রাসুলদের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু জ্ঞানীরাই অন্যায় অবিচার, শোষন শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের আহবান করতে পারেন। আপনারা জানেন, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা (রা) জেল খেটেছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন এবং জেলেই প্রাণ ত্যাগ করেছেন। সত্যকে অবিরাম লড়াই করতে হবে মিথ্যার বিরুদ্ধে এবং মানুষকে আহবান জানতে হবে বিপ্লবের জন্যে। সত্য এবং মানুষের ইতিহাস সহজে তৈরি হয়না। সত্যকে গলা টিপে হত্যা করতে চায় অসত্য। মানুষের মর্যাদা সহজে প্রতিস্ঠিত হয়না। বেশীর ভাগ কবি শিল্পী, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ শক্তি ও  ক্ষমতার তাবেদার থাকেন। এরা হচ্ছেন নামের কবি সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। এরা মিথ্যার পক্ষে কলম ধরেন ও ধারন করেন। যেমন ধরুন, রাম রাবণের যুদ্ধে রাম ছিলেন বিদেশী আর্য রাজা, আর রাবণ ছিলেন ভুমিপুত্র ও স্বদেশী রাজা। নিজ দেশের জন্যে যুদ্ধ করে তিনি পরাজিত হয়েছেন। কবিরা বা ইতিহাসবিদগণ রাবণকে রাক্ষস বলে অভিহিত করেছেন। এভাবেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে। তাহলে সত্য বা সত্যের ইতিহাস কোথায়। নিজকালে সব সত্যবাদীই নিহত বা নির্যাতিত হয়েছেন। তবুও সত্য এখনো বেঁচে আছে।

আমাদের মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস কোথায়? বই বেরিয়েছে হয়ত কয়েক হাজার। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, গাণ, সিনেমা, টেলিফিল্ম, ডকুমেন্টারী আছে শত শত। বিদেশীরাও বই লিখেছেন অনেক। এতকিছুর পরেও আমাদের ইতিহাস রয়ে গেছে খন্ডিত। যিনি যেমন দেখেছেন তিনি তেমন করে লিখেছেন। ভারতীয়রা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দেখেন তাঁদের দৃস্টিকোন থেকে। ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাখ্যা করেন ভারতের রাজনীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে ৭১ এর  তিন ডিসেম্বর থেকে  যোল ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে। ঢাকার রমনা মাঠে পরাজয়ের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই জেনারেলের মধ্যে। পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন জেনারেল নিয়াজী ও ভারতের পক্ষে ছিলেন জেনারেল অরোরা। পাকিস্তানের আত্ম সমর্পণের দলিল তৈরি হয়েছে জাতিসংঘে। সেখান থেকে সেই গিয়েছে দিল্লীতে। দিল্লী পাঠিয়েছে কোলকাতা। ইন্টান্যাশনাল রেডক্রসের মাধ্যমে সে দলিল এসেছে ঢাকায়। এর আগে নিয়াজী এ দলিল দেখেননি। এ ব্যাপারে নিয়াজীর বই পড়ুন। জেনারেল অরোরা কোন বই লেখেননি। ভারতীয় অন্য জেনারেল, কূটনীতিক ও বিশারদরা অনেক বই  লিখেছেন। পাকিস্তানী জেনারেল, আমলা ও কূটনীতিকরাও বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। কোথাও পূর্ণাংগ ইতিহাস নেই। প্রত্যেকেই নিজের দৃস্টিকোন থেকেই ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন করেছেন। বাংলাদেশ থেকেও হাজার বই বেরিয়েছে। যেখানে ইতিহাসে উপাদান নেই , আছে শুধু নিজের গুণগান ও আবেগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে ত্যাগ করেছেন এ দেশের ছাত্ররা আর সাধারন কৃষক শ্রমিক ও জনতা। আর আমাদের  সেনা অফিসার , জওয়ান, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনী।দেশ স্বাধীন হওয়ার তারা দেশে ফিরে এসেছেন এবং নিজ নিজ কাজে ফিরে গেছেন। যারা চাকুরী করতেন তাঁরা নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। সিভিল সার্ভিসে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও ডবল প্রমোশন ও নানা রকমের সুবিধা পেয়েছেন। কিছুই পাননি কৃষক শ্রমিক ও সাধারন মানুষ যাঁরা মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশী সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন বা গ্রহণ করেছেন।

২৫শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আক্রমণ বা ক্রেকডাউন কেন হয়েছিল তা আজও পরিষ্কার করে কেউ বলেননি বা লিখেননি। বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পহেলা মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই অসহযোগ ২৫শে মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। প্রশ্ন হলো , বংগবন্ধু জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার ঠীমের সাথে যে আলোচনা চালিয়েছিলেন ,সেই আলোচনার ফলাফল কি ছিল তা আমরা আজও জানিনা। বংগবন্ধু কি বুঝতে পারেননি আলোচনার নামে জেনারেল ইয়াহিয়া তাঁর সাথে বেঈমানী করতে যাচ্ছে। ২৫শে মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বংগবন্ধু কি সংবাদের জন্যে অপেক্ষা করেছিলেন? নিশ্চয়ই তিনি কোন ধরনের একটা সুসংবাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি আগের দিন মানে ২৪শে মার্চ একটা সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। যা চুক্তি আকারে ২৫শে মার্চ তাঁর কাছে আসার কথা ছিল। সমঝোতা বা চুক্তির খবর না এসে তাঁর কাছে আসলো সামরিক অভিযান বা আক্রমনের খবর। সত্যিকার অর্থে সারা দেশের মানুষ জানতোনা পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা  নিজদেশের মেজরিটি মানুষের বিরুদ্ধে এমন একটি আত্মঘাতী সামরিক অভিযান চালাবে। তখন কি সমঝোতার সব পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ? আলোচনায় কি সমঝোতা হয়েছিল বা  হয়নি তা একমাত্র জানেন ড. কামাল হোসেন। কিন্তু আজও তিনি এ ব্যাপারে কেন মুখ খোলেননি তা দেশবাসী জানেননা।

ডেইলী স্টার ও প্রথম আলোর মালিক লতিফুর রহমানের মালিকাধীন প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা কর্তৃক প্রকাশিত বই ‘ মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন’ বইয়ের বিবরণ অনুযায়ী বংগবন্ধু স্বাধীনতার কোন ঘোষণা , নির্দেশ বা বিবৃতি দেননি। এ ব্যাপারে মঈদুল হাসান বলেছেন, ‘এই সময়ে, মানে ২৫শে মার্চ সন্ধ্যেবেলা তাজউদ্দিন আহমদ সহ আরও কিছু নেতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে , অর্থাত্‍ শেখ মুজিবের বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দিন আহমদ একটি টেপ রেকর্ডার এবং ছোট্ট একটা খসড়া ঘোষণা শেখ সাহেবকে দিয়ে সেটা তাঁকে পড়তে বলেন।এরপর তাজউদ্দিন সাহেব বললেন, ‘মুজিব ভাই , এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কেননা কালকে কী হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ কিছু জানতে পারবেনা কী তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোনো না কোনো জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাব। বংগবন্ধু তখন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা আমার  বিরুদ্ধে  একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্যে পাকিস্তানীরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ তাজউদ্দিন সাহেব তখন অত্যন্ত ক্ষুব্দ হয়ে সংগে সংগে রাত ন’টার দিকে ৩২ নম্বরের বাড়ি ছেড়ে চলে যান। ক্ষুব্দ তাজউদ্দিন সাহেবকে বেরিয়ে যেতে দেখে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোমিন সাহেব বলেছিলেন, তুমি রেগে চলে যাচ্ছো কেন? সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে তাজউদ্দিন সাহেব বললেন , ‘বংগবন্ধু এইটুকু ঝুঁকি নিতেও রাজি নন। অথচ আমাদের উপর আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।’ তাজউদ্দিন সাহেব পরে আক্ষেপ করে সবাইকে বলেছিলেন, অনেক বুঝাবার পরেও বংগবন্ধু কোন ধরনের ঘোষণা দিতে রাজি হননি।

৭১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের নেতারা স্বীকৃরিদানের প্রশ্নে ভারত সরকারকে খুব বেশী পীড়াপীড়ি শুরু করলে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। দিল্লী সরকার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমান চাইলেন।  মুজিব নগর সরকার কোন প্রকার প্রমান দেখাতে পারেনি। ভারত জানতে চেয়েছিল বংগবন্ধু কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা? চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানালেন, বংগবন্ধু তাঁকে কিছু বলেননি বা জানাননি। বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী একে খোন্দকার নিজেও স্বীকার করেছেন যে, তিনি মেজর জিয়ার ঘোষণা শুনেছেন।‘ আমি নিজে জানি ,যুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময়েও মেজর জিয়ার ঘোষনাটি দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে সকলের মনে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে,হ্যাঁ, এইবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামলো। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বুদ্ধিজীবী মঈদুল হাসান বলেছেন, অন্যের কথা কি বলবো, মেজর জিয়ার বেতার ঘোষণা শুনে  আমি নিজেও মনে করেছি যে, সত্যি তাহলে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এটা আমার মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করে এবং আমি উত্‍সাহ বোধ করি। আমার আশে পাশের যাদের চিনতাম তাঁরাও জিয়ার ঘোষণায় উত্‍সাহ বোধ করেন।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এস আর মির্জা বলেছেন,  বংগবন্ধুর পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের হান্নান সাহেব যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আমি শুনিনি। ২৫শে মার্চের পর আমি সব সময় রেডিও সংগে রাখতাম। বেশীর ভাগ সময় রেডিও খোলা থাকতো। ২৭শে বিকেলে আমি পরিস্কার শুনতে পেয়েছি, বংগবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা শুনে আমি একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে, হ্যাঁ, এখন মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। জিয়ার ঘোষণার মাধ্যমেই দেশবাসী জানতে পারে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই ঘোষণা নিয়ে কোন আলোচনা বা বিতর্ক আমি শুনিনি।শেখ মুজিব যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এ নিয়ে কেউ কোন কথা উথ্থাপন করেনি বা বিতর্কও হয়নি। এমন কি জিয়ার আমলেও কোন কথা উঠেনি।বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এই প্রপাগান্ডা বা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ৯১ সাল থেকে। ষ্বাধীনতার ঘোষণাকে বিতর্কিত করার জন্যেই আওয়ামী লীগ খুব শক্তিশালী ভাবেই তাদের প্রপাগান্ডা করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী বিশিস্ট বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ তাঁর লিখিত বইতে বলেছেন, বংবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়া পর্যন্ত তিনি ৩২ নম্বরের বাড়িতেই ছিলেন। তিনি কোন নিরাপদ আশ্রয়ে যাননি তা তাজউদ্দিন, ব্যারিস্টার আমীর ও ড. কামালের কথা থেকে স্পস্ট হয়েছে। বংগবন্ধু নিজেও বলেছেন, তিনি রাস্ট্রদ্রোহী হতে চান না।

আমার ধারণা বংগবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন তিনি থাকুন বা না  থাকুন পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে এবং বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাস্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। তাই তিনি তাজউদ্দিন সাহেবের অনুরোধেও স্বাধীনতার ঘোষণায় দস্তখত করেননি বা রেকর্ড করার জন্যে তা পাঠ করেননি। শোষ পর্যন্তও বংগবন্ধু তাঁর এই অবস্থান বজায় রেখেছিলেন বলে শুনেছি। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার যে মামলা এনেছিল তা প্রমান করতে পারেনি। এই বিষয়টা ড. কামাল ও একে ব্রোহী সাহেব জানেন বলে অনেকেই দাবী করেছেন। আমি মনে করি, ৭০ সালের সাধারন নির্বাচনের পরে বংগবন্ধু এদেশের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ৭১ সালে দেশের সাধারন মানুষ , বাংগালী সেনাবাহিনী, বিডিআর পুলিশ ও আনসার বাহিনী বংগবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মনে করেই মুজিব নগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। বংগবন্ধু ঘোষণা দিয়েছেন কিনা কেউ প্রশ্ন তোলেনি। মেজর জিয়া তাঁর ঘোষণায় বংগবন্ধুকেই নেতা ও রাস্ট্রপতি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যেকোন কারণেই হোক শেখ হাসিনা এবং তাঁর অনুসারীরা বিষয়টাকে বিতর্কিত করে তুলেছেন। হয়ত কোন মহল থেকে শেখ হাসিনাকে এই অসত্য প্রচারণার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছে।

একই ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নাটক নভেল ও উপন্যাসে পরিণত করেছে কিছু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও লেখক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের চেস্টা করেছেন শর্মিলা বসু। ইনি অবিভক্ত বাংলার অবিসম্বাদিত নেতা সুভাস বসুর বংশধর। শর্মিলা বসু তাঁর ‘ডেড রেকনিং’ বইটি লেখার জন্যে পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিস্ট মহল গুলোর সাথে কথা বলেছেন, তথ্য সংগ্রহ করেছেন ও অনেকের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তাঁর বইতে  পহেলা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বাংগালীরা অবাংগালীদের সাথে কি ধরনের ব্যবহার করেছে তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। আমি নিজেও দেখেছি বাংগালীরা কিভাবে অবাংগালীদের বাড়িঘর ,দোকানপাট দখল করেছে বা লুট করেছে। শর্মিলা বসু লিখেছেন এ সময়ে বহু অবাংগালী নিহত হয়েছেন। ৩০ লাখ সংখ্যাটি কোন ভাবেই কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে সংখ্যাটি একটি মীথে পরিণত হয়েছে। যেমন আমরা এ ধরণের ক্ষেত্রে বলে থাকি, ‘ লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখ কয়েক হাজার। স্বাধীনতা যুদ্ধের  বিরাট  জানমালের ক্ষতির পরিমাণ বুঝাবার জন্যে ৩০ লাখ শহীদ ও ২/৩ লাখ নারীর ইজ্জত লুন্ঠনের সংখ্যা হিসাবে যথাযথ বলে মনে করি। আবেগ প্রকাশের জন্যেও এই অংক সঠিক বলা যেতে পারে। কিন্তু ঐতিহাসিকরা মনে করেন তাঁদের জন্যে এ ধরণের সংখ্যার উল্লেখ বা বর্ণনা যথাযথ নয়। তাঁরা চান দলিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলেও ৩০ লাখ অংক বা সংখ্যাটি সমর্থিত হয়নি। ৩০ লাখ সংখ্যাটি কে বা কারা প্রথম বলেছেন বা উল্লেখ করেছে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ৩০ লাখ সংখ্যা নিয়ে এর আগে ড. মোমিন চৌধুরী তারঁ  বইতে বিশদ আলোচনা করেছেন। তিনি আরও দুটি বইয়ের উল্লেখ ও করেছেন। তবে শর্মিলা বসুর বইটি দেশে বিদেশে বিশদ ভাবে আলোচিত হচ্ছে। যদিও বাংদেশীদের অনেকেই বইটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হতে চললেও আমরা এখনও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কিছু লেখা বা বলার ক্ষেত্রে আবেগ মুক্ত হতে পারিনি। এ বিষয়ে আমরা মুক্ত আলোচনাও করতে চাইনা। কিন্তু এ অবস্থাতো আরও ৪০ বা ৫০ বছর পরে থাকবেনা। তখনকার প্রজন্ম বা জেনারেশনের কাছে কোন আবেগ থাকবেনা। ইতিহাস রচনার জন্যে তখন তাদেরকে কারো চেহারা দেখে লিখতে হবেনা। এখনতো আমরা বহু সত্যকথা বলতে পারছিনা। ভাবতে হয় বা চিন্তা করতে হয় সত্য বললে কে খুশী হয় আর কে অখুশী হয়। এমনওতো হতে পারে সত্য বললে বা লিখলে জানমালের উপর হামলা হতে পারে। সমকাল সত্য লেখকদের সাথে ওরকমই ব্যবহার করে থাকে। আমাদের কেউ মানে বাংলাদেশীরা কেউই  পহেলা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অবাংগালীরা কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আজও লিখিনি। আবার ১৬ই ডিসেম্বরের পর অবাংগালীদের অবস্থা কি হয়েছিল তাও কিন্তু লিখিনি। ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানীদের আশকারা পেয়ে বা সামরিক জান্তার উসকানিতে বাংগালীরা সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছে একথা কেউই অস্বীকার করছেনা। পুরো ৭০ – ৭১ সালের ঘটনাবলীরতো আমি নিজেও একজন সাক্ষী। রাজধানী ঢাকায় বাংগালীরা কি করেছে আর অবাংগালীরা কি করেছে তাতো আমি দেখেছি। ৭০-৭১ সালে বা ৭২ সালের প্রথম দিকে বাংগালীরা যদি ৯০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থেকে তাহলে অবাংগালীরা ১০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পলাশীর ষড়যন্ত্র মূলক যুদ্ধে নবাব হেরে যাওয়ার পর ইংরেজরা এবং তাদের এদেশীয় দোসররা নানা কল্প কাহিনী সাজিয়ে নবাবকে খলনায়ক বা ভিলেন বানাতে চেস্টা করেছে। বহু কবি লেখক ও তথাকথিত ইতিহাসবিদ নবাবের বিরুদ্ধে বহু বই রচনা করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ইতিহাসে আজ নবাব হলেন হিরো আর ক্লাইভ হলেন ভিলেন। কারণ সত্য ইতিহাস প্রমানিত হয়েছে ও প্রতিস্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ভিলেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তাদেরই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা, নিহতের সংখ্যা, মুজিব ইয়াহিয়ার আলোচনার ফলাফল নিয়ে আমরা আর কত কাল লুকোচুরি খেলবো।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Read Full Post »