ধর্মহীন রাজনীতিই জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধান বাধা / এরশাদ মজুমদার
যখনি জাতীয় ঐক্যের কথা ভাবি তখনি মনে পড়ে বিশ্বের প্রথম গণমানুষের রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মোহাম্মদ(সা) ও কালো আফ্রিকার নির্যাতিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কথা। এমন একটি ব্যক্তিত্ব সমকালীন বিশ্বে জন্ম গ্রহণ করেনি। জাতীয় ঐক্যের এমন উদাহরণ সমকালে কোথাও নেই। সাদাদের কারাগারে ২৬ বছর বন্দী থেকে মুক্তি লাভের পর প্রথমে বলেছিলেন,সাদা এবং কালোরা দক্ষিণ আফ্রিকারই সন্তান। আজ থেকে কোন ভেদাভেদ নেই। সকলেই এক মায়ের সন্তান। যাঁরা তাঁর উপর অত্যাচার করেছে তাঁদের নিয়েই সরকার গঠণ করলেন। অপর দিকে দেড় হাজার বছর আগে এ বিশ্বজগতে প্রথম গণমানুষের রাস্ট্র ও সরকার গঠন করেছিলেন নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের নেতা ও রাসুল(সা) মুহম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তিনিও উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন কালো ধলো, ধনী গরীব, আরব আজমী,আশরাফ আতরাফ, কৌলিণ্য সবকিছুই রহিত করা হলো। সবাই এক আদমের সন্তান। একই রক্ত বইছে বনি আদমের শরীরে। সত্য একটাই মানুষ জগতে কোন শক্তির কাছে মাথা নোয়াবেনা। মানুষের একমাত্র মালিক তার স্রষ্টা। হে মানবজাতির জন্যে মনোনীত একমাত্র নবী ও রাসুল(সা) আপনার জন্যে কোট কোটি সালাম ও দরূদ। হজরত বেলালের বংশধর হাবশীনেতা ম্যান্ডেলা তোমাকেও হাজার সালাম। খোদার কাছে আকুল আবেদন,আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের জন্যে এমন একজন নেতা ও পিতা পাঠিয়ে দাও। যে নেতা ও পিতা এ দেশটাকে সোনার দেশে পরিণত করবে। আমাদের দেশট হচ্ছে বিপুল সম্ভাবনার দেশ। এখানকার মানুষ গুলোও খুবই ভাল । বেশ কয়েক বছর আগে সিংগাপুরের একটি সংস্থা জরীপ চালিয়ে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ সুখী। সাধারন মানুষের তেমন কোন বড় চাহিদা নেই। তারা কাজ চায় আর দুই বেলা খেতে চায়। দেশের মানুষ গুলো ভাল করে জানেনা রাস্ট্র কি জিনিষ এবং মানুষ বা নাগরিক হিসাবে তাদের কি অধিকার। ভোট আসলে দল বেঁধে ভোট দিতে যায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মাস্তানদের চাপে পড়ে। আর অবুজ নিরক্ষর উম্মি মানুষ গুলোই নাকি দেশের মালিক। এত বড় প্রতারনা একমাত্র তথাকথিত গণতন্ত্রেই সম্ভব। ৪৭ সাল থেকে হিসাব করলে ৬৫ বছর পার হতে চললো এ দেশের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার গুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কারণ , তারা জানেনা তাদের অধিকার কি। অনেকেই দুই চার পাঁচশ’ হাজার টাকার অনেকেই ভোট বিক্রি করে দেয়। ওরা বলে আমরা গরীব নিরক্ষর মানুষ,নির্বাচনের পরেতো আর ক্ষমতাবান,শক্তিবান নেতাদের পাবোনা। তাই নগদ যা পাই সেটাই ভালো। যারা ভোট কিনে বা ভোট চুরি বা জালিয়াতি করে সংসদ সদস্য হন তারাই জনগণের কল্যাণের জন্যে আইন বানান। দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক এই জনগণকেই সুযোগ পেলে সবাই পাছায় লাথি মারে।
সম্প্রতি টিভিতে এক আলোচনায় সরকার দলীয় এমপি মইনউদ্দিন খান বাদল বলেছেন,ঠিক করার সময় এসে গেছে রাস্ট্র কিভাবে চলবে। এই চলাটা ঠিক হতে পারে নির্বাচন বা সংঘাতের মাধ্যমে। বাদল সাহেব একজন জাসদ নেতা। যখন ডানপন্থি মৌলবাদী বলে কথিত বা পরিচিত দলগুলো নিষিদ্ধ ছিলো তখন নবগঠিত জাসদ বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করেছে। এখন জাসদ বহু গ্রুপ বা দলে বিভক্ত। ইনু সাহেব মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এবং তাঁ সতীর্থরা এক সময় গণ বাহিনী গঠণ করে সেনা বাহিনীতে সৈনিকদের মাঝে নিজেদের আদর্শ বিতরন করেছিলেন। এখন তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে এসেছেন। সে সময়ে রক্ষী বাহিনীর হাতে বহু জাসদ কর্মী নিহত হয়েছেন। ইনু সাহেবরাও ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছিলেন।স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে তাঁদের অনেক কর্মী নিহত হয়েছেন। সে সময়ে যাঁরা বংগবন্ধুর সরকারের বিরোধীতা করেছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই অদৃশ্য শক্তির ইংগিতে এখন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন নাকি তাঁদের সবার রাজনীতি ও আদর্শ এক হয়ে গেছে। বরিশালের মহিউদ্দিন সাহেব আওয়ামী লীগে যোগদান করেও সারা জীবন ন্যাপের মহিউদ্দিন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। আরও অতীতে তিনি মুসলীম লীগ ছিলেন। বংগবন্ধু,শাহ আজিজ, আতাউর রহমান সাহেব ও মুসলীম লীগার ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন,হিন্দুদের লাঠিপেটা করেছেন। এঁরা সকলেই তখন মুসলীম জাতিয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন। পরে বাংগালী জাতীয়তাবাদে দীক্ষা নিয়েছেন। বাদল সাহেব সহ বেশীর ভাগ গণতন্ত্রমনা স্যেকুলার(ধর্মহীন) মানুষ গুলো চান দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মানে মুসলমান নিজেদের ধর্মীয় অধিকার ত্যাগ করে ১০ ভাগ সংখ্যালঘুর সমান হয়ে যাক। এমন কি দামী দামী সম্পাদক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, কবি,বুদ্ধিজীবীরাও চান বাংলাদেশকে একটি ধর্মমুক্ত রাস্ট্রে পরিণত হোক। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি, বর্তমান আওয়ামী লীগের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তথকথিত বামেরা চেপে বসেছে। এঁরা ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বলেছিলেন বংগবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবেন। এঁরাই জনগণের দেয়া বংগবন্ধু টাইটেলটি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এঁরা বংগবন্ধুর মাথায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভুত ঢুকিয়েছিল। বাদল সাহেব, মেনন সাহেব আর ইনু সাহেবরা এখন শেখ হাসিনার কাঁধে উঠে বসেছেন। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার রাজনীতিকে শেষ না করে কাঁধ থেকে নামবেনা। আর এই তথাকথিত বামদের উত্সাহ যোগাচ্ছে ভারত ও আমেরিকা। আমেরিকার কথা বললাম এ কারণে যে, বামেরা ইসলামের বিরোধিতা করে। আমেরিকা ও এখন ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই আমেরিকাই এক সময় বিশ্ব ব্যাপী বামদের শেষ করার জন্যে ইসলামিস্টদের ব্যবহার করেছে। আজ আবার দিক পরিবর্তন করে ইসলামের বিরুদ্ধে বামদের ব্যবহার করছে। ভারতের কাছে আদর্শ কোন বিষয় নয়। ভারত চায় বাংলাদেশে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকুক যা দিল্লীর অনুগত থাকবে এবং ইসলামকে রাস্ট্রীয় জীবন থেকে বিদায় করে দিবে। আওয়ামী লীগ ও তার বন্ধুরা চায় ধর্মমুক্ত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তাঁরা জানেন,ধর্মের গুরুত্ বাড়লে আওয়ামী লীগ বা ভারতপন্থি বা স্যেকুলাররা(ধর্মহীনরা) কখনই ক্ষমতায় আসতে পারবেনা।
এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি জামাত হেফাজত থেকে হুঁশিয়ার থাকার জন্যে। এসব সংগঠন নাকি জংগীবাদে বিশ্বাস করে। এসব কথা বলে তিনি ভারত, আমেরিকা ও তার দোসরদের সন্তুষ্ট করতে চান। বাদল সাহেবেরা মনে করেন,আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে বা নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ একটি ধর্মাশ্রয়ী রাস্ট্রে পরিণত হবে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরাণার সবাই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ধর্মকে ষোলয়ানা বাদ দিয়ে যে টুকু থাকে সে টুকু। আর এ চেতনাই
হচ্ছে আমাদের দেশ ,সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ,সংস্কৃতি ও ইতাহাসকে ইসলাম বা মুসলমান মুক্ত করা। ধর্মে বিশ্বাস না করা বা ধর্মহীন(সেক্যুলার) থাকা যে কোন নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার। আমাদের সংবিধান বলেনি যে ,কেউ ধর্মে বিশ্বাস না করলে নাগরিক হতে পারবেনা বা ভোট দিতে পারবেনা। এমন কি ধর্ম না জানলে বা বিশ্বাস না করলে সচিব,বিচারপতি, সেনাপতি ,রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে কোন বাধা নেই। আমাদের দেশের বড় বড়,নামী দামী নাগরিকদের অনেকেই ধর্ম চর্চা করেননা।
রাস্ট্রীয় ইসলাম করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। সেটা এখনও বহাল আছে রাজনৈতিক কারণে। অপরদিকে সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকতে পারবেনা। আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয়না। এসব হচ্ছে গোঁজামিল বা রাজনৈতিক শয়তানী। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো যাঁরা ধর্ম মানেন না বা ধর্ম চর্চা করেন না তাঁরা সে কথা রাজনীতির কারণেই বলতে চাননা। কারণ,ভোটারদের ৯০ ভাগই মুসলমান এবং ধর্ম চর্চা করেন। এ সময় একশ্রেণীর মুসলীম লীগার ছিলেন,যাঁরা জনসভার সময় বলতেন,‘মিটিংকা কাপড়া লে আও’। আর এখন এক শ্রেণীর নেতা আছেন যাঁরা নামাজের সময় হলে বলেন,আজান দেন,নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু নিজেরা অনেক সময় নামাজ পড়তেন না। আমাদের রাজনীতি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা এক ধরণের মোনাফেকি বহুকাল যাবত চলে আসছে। অপরদিকে যাঁরা ধর্মহীন তাঁরাও সময় সুযোগে কোরআন কিতাব, হাদিস ফেকা নিয়ে কথা বলেন। মানে অপব্যাখ্যা করেন। নামীদারী বহু মুসলমান আছেন যাঁরা সব যুগেই কোরআন ও ইসলামকে নিজেদের সুবিধা মত ব্যাখ্যা করেছেন। আওয়ামী লীগে বহু ধার্মিক মানুষ আছেন যাঁরা নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। এঁরা কিন্তু দলের ভিতর মাইনরিটি। ধলের একমাত্র নীতি নির্ধারক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি নাকি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ধার্মিক এবং নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। মাঝে মাঝে পোষাকে আসাকেও জানান দেন যে, তিনি ধার্মিক। তাঁর দলের লোকেরাও মাঝে মাঝে জানান দেন যে তিনি নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। কিন্তু তাঁরা সকলেই ধর্মকে ব্যক্তিগত গোপণীয় বিষয় মনে করেন। ভারত,আমেরিকা ও তার বন্ধুরাও মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। ঘরে বসে এর চর্চা করতে হবে। এমন কি মসজিদ মাদ্রাসা, মক্তবের ও প্রয়োজন নেই। তাই আজান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ,ধর্ম দেখাবার বিষয় নয়।
সম্প্রতি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর বলেছেন, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করতে দেয়া হবেনা এবং প্রতিহত করা হবে। মখা সাহেব একজন সাবেক আমলা। জিয়া সাহেবের আমলে তাঁর বিশ্বাস ভাজন হয়ে ভাগ্যের চাকার গতি বাড়িয়েছেন। তারপর জাতীয়তাবাদী সরকারের পতনের জন্যে জনতার মঞ্চ করে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করেন। সাথে সাথে নিজেও ক্ষমতার অন্দর মহলে প্রবেশ করেন। ভদ্রলোক ধর্ম ব্যবসা বলতে কি বুঝান তা দেশবাসী ভাল করে জানেন না। মখা সাহেবরা ধর্মের বিরোধিতা করলে সেটা ধর্ম ব্যবসা হয়না, শুধু ধর্মের পক্ষে বললেই ব্যবসা হয়ে যায়। আসলে সকল দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেন। রাজনীতির ময়দানে ধর্মের বিরোধিতাও ধর্ম ব্যবসা। মিশরে সেনা বাহিনীর ক্ষমতা দখল নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাস্ট্রদূত মাহবুব হাসান ক’দিন আগে মিশর পরিস্থিতি নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন,মিশরের সেনা বাহিনী খুবই আধুনিক ও সেক্যুলার(ধর্মহীন)। ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেনা বাহিনী। এদের যুদ্ধাস্ত্রও খুবই আধুনিক। তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীকে উত্খাত করাকে সমর্থন করেছেন। নির্বাচিত হলেও মুরসী নাকি অতিমাত্রায় ইসলামিস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। পরোক্ষভাবে তিনি ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধকরনকেও সমর্থন করেন। আমাদের দেশের আমলাদের মনোভাব বুঝার জন্যেই মাহবুব হাসানের কথা উল্লেখ করলাম। আমাদের রাজনীতি ও প্রশাসনে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা মুসলমানও থাকবেন,আবার ইসলামেরও বিরোধিতা করবেন।
দেশের বড় বড় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হেরেও শেখ হাসিনার হুঁশ হয়নি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ গুলো জেনেও শেখ হাসিনা দল এবং নিজেকে শোধরাবার কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তিনি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে একটি ধর্মহীন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। সারা পৃথিবীতে এখন ক্ষমতাবানরা মুসলমান দেশ গুলোর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। মুসলমানরা নাকি জংগী, সন্ত্রাসী, অগণতান্ত্রিক। বড় দু:খ ও বেদনার বিষয় হলো বহু মুসলমান নেতা ও শাসক পশ্চিমাদের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এদের মধ্যে সউদী আরবের বাদশাহ এক নম্বর। তিনি গণতন্ত্র বা ইসলাম কোনটাতেই বিশ্বাস করেননা। ক’দিন আগে জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মিতা হক বলেছেন,যাঁরা মাথায় ঘোমটা দেন তাঁরা বাংগালী নন। আমি ধরে নিয়েছি তিনি আবেগের কারণে ও রকম একটি কথা বলেছেন। আইউব খানও বলেছিলেন,বাংগালী মেয়েরা পেটিকোট বা সায়া সেমিজ পরেনা। এমন কি তারা কাঁচুলী বা বক্ষবন্ধনী পরেননা। জেনারেল আইউবের কথাটি আংশিক সত্য ছিল। বাংলাদেশের গরীব কিষানীরা সায়া বা সেমিজ পরতেন না। মিতা হক বা তাঁর মতো আরও যাঁরা আছেন তাঁরা হয়ত জানেনা ঘোমটা হিন্দু মুসলমান বাংগালী নারীদের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য। বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। সিঁথি দেখে বুঝা যায় তিনি বিবাহিত নারী। এ ছিল এক যুগের কথা। এখন বাংগালী/বাংলাদেশী/ভারতীয় ও পাকিস্তানীরা নারীরা সালোয়ার কামিজ ওড়না পরেন। বেশ কিছু কম বয়সী বা তরুণীরা জিন্সের প্যান্ট,টি শার্ট পরে। এর সংখ্যা খুবই কম। তথকথিত কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী বা নেতা মাঝে মধ্যে এসব আজে বাজে কথা বলে থাকেন। এক সময়ে তসলীমা নাসরিন নামের এক মহিলা নারী অধিকার ও যৌন জীবন নিয়ে অনেক কথা বলে বিতর্ক তৈরি করে ছিলেন। শুনেছি ক’দিন আগে তিনি বলেছেন,তাঁর যৌবন ফুরিয়ে গেছে,তাই কেউ কাছে আসেনা।
এখন জাতির সম্মুখে একটি মাত্র প্রশ্ন। আর তাহলো বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মুসলমানের জীবনে ইসলাম
থাকবে কি থাকবেনা। আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশকে রাস্ট্রীয় ভাবে একটি ধর্মমুক্ত রাস্ট্রে পরিণত করা। আর তাঁদের এই বিশ্বাসই নাকি মুক্তিযুদ্ধে চেতনা আর প্রগতিশীলতা। তাঁদের শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এর মানে ধর্ম ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপার। তাহলে আওয়ামী লীগ বা ওই ঘরাণার লোকেরা কিভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতির কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করছে। অপরদিকে বিএনপি সহ জাতীয়তাবাদী ইসলামী দলগুলো চায় বাংলাদেশ একটি আধুনিক উদার মুসলীম রাস্ট্রে পরিণত হোক। বাদল সাহেব তাঁর আলোচনায় ইংগিত দিয়েছেন যে, বিএনপি এবং তার সহযোগী দলগুলো ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ধর্ম বা ইসলামই নাকি আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধানতম বাধা। ইসলাম নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। যাঁরা একটু চিন্তা করেন তাঁদের বুঝতে একেবারেই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাহলো বাংলাদেশকে ধর্মহীন তথকথিত নামধারী মুসলমানদের দেশে পরিণত করা। যাঁরা মুসলমান থাকবে কিন্তু ইসলাম চর্চাকে জীবন থেকে বিদায় দিবে। বাদল সাহেবদের রাজনীতির প্রধানতম লক্ষ্য হচ্ছে কালক্রমে ইসলামকে রাস্ট্র, সমাজ ও জীবন থেকে বিতাড়িত করা। বাদল সাহেবেরা তাঁদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারেন,যেমন মিশরের সেক্যুলারিস্টরা(ধর্মহীনরা) আমেরিকা, ইজরায়েল ও পশ্চিমা শক্তির তাবেদার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে এবং সেদেশের ধর্মপ্রিয় মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com