Feeds:
Posts
Comments

Archive for July, 2013


ধর্মহীন রাজনীতিই জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধান বাধা / এরশাদ মজুমদার

যখনি জাতীয় ঐক্যের কথা ভাবি তখনি মনে পড়ে বিশ্বের প্রথম গণমানুষের রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মোহাম্মদ(সা) ও কালো আফ্রিকার নির্যাতিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কথা। এমন একটি ব্যক্তিত্ব সমকালীন বিশ্বে জন্ম গ্রহণ করেনি। জাতীয় ঐক্যের এমন উদাহরণ সমকালে কোথাও নেই। সাদাদের কারাগারে ২৬ বছর বন্দী থেকে মুক্তি লাভের পর প্রথমে বলেছিলেন,সাদা এবং কালোরা দক্ষিণ আফ্রিকারই সন্তান। আজ থেকে কোন ভেদাভেদ নেই। সকলেই এক মায়ের সন্তান। যাঁরা তাঁর উপর অত্যাচার করেছে তাঁদের নিয়েই সরকার গঠণ করলেন। অপর দিকে দেড় হাজার বছর আগে এ বিশ্বজগতে প্রথম গণমানুষের রাস্ট্র ও সরকার গঠন করেছিলেন নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের নেতা ও রাসুল(সা) মুহম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তিনিও উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন কালো ধলো, ধনী গরীব, আরব আজমী,আশরাফ আতরাফ, কৌলিণ্য সবকিছুই রহিত করা হলো। সবাই এক আদমের সন্তান। একই রক্ত বইছে বনি আদমের শরীরে। সত্য একটাই মানুষ জগতে কোন শক্তির কাছে মাথা নোয়াবেনা। মানুষের একমাত্র মালিক তার স্রষ্টা। হে মানবজাতির জন্যে মনোনীত একমাত্র নবী ও রাসুল(সা) আপনার জন্যে কোট কোটি সালাম ও দরূদ। হজরত বেলালের বংশধর হাবশীনেতা ম্যান্ডেলা তোমাকেও হাজার সালাম। খোদার কাছে আকুল আবেদন,আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের জন্যে এমন একজন নেতা ও পিতা পাঠিয়ে দাও। যে নেতা ও পিতা এ দেশটাকে সোনার দেশে পরিণত করবে। আমাদের দেশট হচ্ছে বিপুল সম্ভাবনার দেশ। এখানকার মানুষ গুলোও খুবই ভাল । বেশ কয়েক বছর আগে সিংগাপুরের একটি সংস্থা জরীপ চালিয়ে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ সুখী। সাধারন মানুষের তেমন কোন বড় চাহিদা নেই। তারা কাজ চায় আর দুই বেলা খেতে চায়। দেশের মানুষ গুলো ভাল করে জানেনা রাস্ট্র কি জিনিষ এবং মানুষ বা নাগরিক হিসাবে তাদের কি অধিকার। ভোট আসলে দল বেঁধে ভোট দিতে যায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মাস্তানদের চাপে পড়ে। আর অবুজ নিরক্ষর উম্মি মানুষ গুলোই নাকি দেশের মালিক। এত বড় প্রতারনা একমাত্র তথাকথিত গণতন্ত্রেই সম্ভব। ৪৭ সাল থেকে হিসাব করলে ৬৫ বছর পার হতে চললো এ দেশের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার গুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কারণ , তারা জানেনা তাদের অধিকার কি। অনেকেই দুই চার পাঁচশ’ হাজার টাকার অনেকেই ভোট বিক্রি করে দেয়। ওরা বলে আমরা গরীব নিরক্ষর মানুষ,নির্বাচনের পরেতো আর ক্ষমতাবান,শক্তিবান নেতাদের পাবোনা। তাই নগদ যা পাই সেটাই ভালো। যারা ভোট কিনে বা ভোট চুরি বা জালিয়াতি করে সংসদ সদস্য হন তারাই জনগণের কল্যাণের জন্যে আইন বানান। দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক এই জনগণকেই সুযোগ পেলে সবাই পাছায় লাথি মারে।
সম্প্রতি টিভিতে এক আলোচনায় সরকার দলীয় এমপি মইনউদ্দিন খান বাদল বলেছেন,ঠিক করার সময় এসে গেছে রাস্ট্র কিভাবে চলবে। এই চলাটা ঠিক হতে পারে নির্বাচন বা সংঘাতের মাধ্যমে। বাদল সাহেব একজন জাসদ নেতা। যখন ডানপন্থি মৌলবাদী বলে কথিত বা পরিচিত দলগুলো নিষিদ্ধ ছিলো তখন নবগঠিত জাসদ বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করেছে। এখন জাসদ বহু গ্রুপ বা দলে বিভক্ত। ইনু সাহেব মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এবং তাঁ সতীর্থরা এক সময় গণ বাহিনী গঠণ করে সেনা বাহিনীতে সৈনিকদের মাঝে নিজেদের আদর্শ বিতরন করেছিলেন। এখন তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে এসেছেন। সে সময়ে রক্ষী বাহিনীর হাতে বহু জাসদ কর্মী নিহত হয়েছেন। ইনু সাহেবরাও ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছিলেন।স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে তাঁদের অনেক কর্মী নিহত হয়েছেন। সে সময়ে যাঁরা বংগবন্ধুর সরকারের বিরোধীতা করেছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই অদৃশ্য শক্তির ইংগিতে এখন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন নাকি তাঁদের সবার রাজনীতি ও আদর্শ এক হয়ে গেছে। বরিশালের মহিউদ্দিন সাহেব আওয়ামী লীগে যোগদান করেও সারা জীবন ন্যাপের মহিউদ্দিন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। আরও অতীতে তিনি মুসলীম লীগ ছিলেন। বংগবন্ধু,শাহ আজিজ, আতাউর রহমান সাহেব ও মুসলীম লীগার ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন,হিন্দুদের লাঠিপেটা করেছেন। এঁরা সকলেই তখন মুসলীম জাতিয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন। পরে বাংগালী জাতীয়তাবাদে দীক্ষা নিয়েছেন। বাদল সাহেব সহ বেশীর ভাগ গণতন্ত্রমনা স্যেকুলার(ধর্মহীন) মানুষ গুলো চান দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মানে মুসলমান নিজেদের ধর্মীয় অধিকার ত্যাগ করে ১০ ভাগ সংখ্যালঘুর সমান হয়ে যাক। এমন কি দামী দামী সম্পাদক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, কবি,বুদ্ধিজীবীরাও চান বাংলাদেশকে একটি ধর্মমুক্ত রাস্ট্রে পরিণত হোক। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি, বর্তমান আওয়ামী লীগের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তথকথিত বামেরা চেপে বসেছে। এঁরা ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বলেছিলেন বংগবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবেন। এঁরাই জনগণের দেয়া বংগবন্ধু টাইটেলটি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এঁরা বংগবন্ধুর মাথায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভুত ঢুকিয়েছিল। বাদল সাহেব, মেনন সাহেব আর ইনু সাহেবরা এখন শেখ হাসিনার কাঁধে উঠে বসেছেন। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার রাজনীতিকে শেষ না করে কাঁধ থেকে নামবেনা। আর এই তথাকথিত বামদের উত্‍সাহ যোগাচ্ছে ভারত ও আমেরিকা। আমেরিকার কথা বললাম এ কারণে যে, বামেরা ইসলামের বিরোধিতা করে। আমেরিকা ও এখন ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই আমেরিকাই এক সময় বিশ্ব ব্যাপী বামদের শেষ করার জন্যে ইসলামিস্টদের ব্যবহার করেছে। আজ আবার দিক পরিবর্তন করে ইসলামের বিরুদ্ধে বামদের ব্যবহার করছে। ভারতের কাছে আদর্শ কোন বিষয় নয়। ভারত চায় বাংলাদেশে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকুক যা দিল্লীর অনুগত থাকবে এবং ইসলামকে রাস্ট্রীয় জীবন থেকে বিদায় করে দিবে। আওয়ামী লীগ ও তার বন্ধুরা চায় ধর্মমুক্ত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তাঁরা জানেন,ধর্মের গুরুত্ বাড়লে আওয়ামী লীগ বা ভারতপন্থি বা স্যেকুলাররা(ধর্মহীনরা) কখনই ক্ষমতায় আসতে পারবেনা।
এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি জামাত হেফাজত থেকে হুঁশিয়ার থাকার জন্যে। এসব সংগঠন নাকি জংগীবাদে বিশ্বাস করে। এসব কথা বলে তিনি ভারত, আমেরিকা ও তার দোসরদের সন্তুষ্ট করতে চান। বাদল সাহেবেরা মনে করেন,আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে বা নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ একটি ধর্মাশ্রয়ী রাস্ট্রে পরিণত হবে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরাণার সবাই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ধর্মকে ষোলয়ানা বাদ দিয়ে যে টুকু থাকে সে টুকু। আর এ চেতনাই
হচ্ছে আমাদের দেশ ,সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ,সংস্কৃতি ও ইতাহাসকে ইসলাম বা মুসলমান মুক্ত করা। ধর্মে বিশ্বাস না করা বা ধর্মহীন(সেক্যুলার) থাকা যে কোন নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার। আমাদের সংবিধান বলেনি যে ,কেউ ধর্মে বিশ্বাস না করলে নাগরিক হতে পারবেনা বা ভোট দিতে পারবেনা। এমন কি ধর্ম না জানলে বা বিশ্বাস না করলে সচিব,বিচারপতি, সেনাপতি ,রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে কোন বাধা নেই। আমাদের দেশের বড় বড়,নামী দামী নাগরিকদের অনেকেই ধর্ম চর্চা করেননা।
রাস্ট্রীয় ইসলাম করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। সেটা এখনও বহাল আছে রাজনৈতিক কারণে। অপরদিকে সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকতে পারবেনা। আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয়না। এসব হচ্ছে গোঁজামিল বা রাজনৈতিক শয়তানী। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো যাঁরা ধর্ম মানেন না বা ধর্ম চর্চা করেন না তাঁরা সে কথা রাজনীতির কারণেই বলতে চাননা। কারণ,ভোটারদের ৯০ ভাগই মুসলমান এবং ধর্ম চর্চা করেন। এ সময় একশ্রেণীর মুসলীম লীগার ছিলেন,যাঁরা জনসভার সময় বলতেন,‘মিটিংকা কাপড়া লে আও’। আর এখন এক শ্রেণীর নেতা আছেন যাঁরা নামাজের সময় হলে বলেন,আজান দেন,নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু নিজেরা অনেক সময় নামাজ পড়তেন না। আমাদের রাজনীতি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা এক ধরণের মোনাফেকি বহুকাল যাবত চলে আসছে। অপরদিকে যাঁরা ধর্মহীন তাঁরাও সময় সুযোগে কোরআন কিতাব, হাদিস ফেকা নিয়ে কথা বলেন। মানে অপব্যাখ্যা করেন। নামীদারী বহু মুসলমান আছেন যাঁরা সব যুগেই কোরআন ও ইসলামকে নিজেদের সুবিধা মত ব্যাখ্যা করেছেন। আওয়ামী লীগে বহু ধার্মিক মানুষ আছেন যাঁরা নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। এঁরা কিন্তু দলের ভিতর মাইনরিটি। ধলের একমাত্র নীতি নির্ধারক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি নাকি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ধার্মিক এবং নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। মাঝে মাঝে পোষাকে আসাকেও জানান দেন যে, তিনি ধার্মিক। তাঁর দলের লোকেরাও মাঝে মাঝে জানান দেন যে তিনি নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। কিন্তু তাঁরা সকলেই ধর্মকে ব্যক্তিগত গোপণীয় বিষয় মনে করেন। ভারত,আমেরিকা ও তার বন্ধুরাও মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। ঘরে বসে এর চর্চা করতে হবে। এমন কি মসজিদ মাদ্রাসা, মক্তবের ও প্রয়োজন নেই। তাই আজান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ,ধর্ম দেখাবার বিষয় নয়।
সম্প্রতি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর বলেছেন, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করতে দেয়া হবেনা এবং প্রতিহত করা হবে। মখা সাহেব একজন সাবেক আমলা। জিয়া সাহেবের আমলে তাঁর বিশ্বাস ভাজন হয়ে ভাগ্যের চাকার গতি বাড়িয়েছেন। তারপর জাতীয়তাবাদী সরকারের পতনের জন্যে জনতার মঞ্চ করে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করেন। সাথে সাথে নিজেও ক্ষমতার অন্দর মহলে প্রবেশ করেন। ভদ্রলোক ধর্ম ব্যবসা বলতে কি বুঝান তা দেশবাসী ভাল করে জানেন না। মখা সাহেবরা ধর্মের বিরোধিতা করলে সেটা ধর্ম ব্যবসা হয়না, শুধু ধর্মের পক্ষে বললেই ব্যবসা হয়ে যায়। আসলে সকল দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেন। রাজনীতির ময়দানে ধর্মের বিরোধিতাও ধর্ম ব্যবসা। মিশরে সেনা বাহিনীর ক্ষমতা দখল নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাস্ট্রদূত মাহবুব হাসান ক’দিন আগে মিশর পরিস্থিতি নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন,মিশরের সেনা বাহিনী খুবই আধুনিক ও সেক্যুলার(ধর্মহীন)। ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেনা বাহিনী। এদের যুদ্ধাস্ত্রও খুবই আধুনিক। তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীকে উত্‍খাত করাকে সমর্থন করেছেন। নির্বাচিত হলেও মুরসী নাকি অতিমাত্রায় ইসলামিস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। পরোক্ষভাবে তিনি ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধকরনকেও সমর্থন করেন। আমাদের দেশের আমলাদের মনোভাব বুঝার জন্যেই মাহবুব হাসানের কথা উল্লেখ করলাম। আমাদের রাজনীতি ও প্রশাসনে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা মুসলমানও থাকবেন,আবার ইসলামেরও বিরোধিতা করবেন।
দেশের বড় বড় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হেরেও শেখ হাসিনার হুঁশ হয়নি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ গুলো জেনেও শেখ হাসিনা দল এবং নিজেকে শোধরাবার কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তিনি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে একটি ধর্মহীন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। সারা পৃথিবীতে এখন ক্ষমতাবানরা মুসলমান দেশ গুলোর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। মুসলমানরা নাকি জংগী, সন্ত্রাসী, অগণতান্ত্রিক। বড় দু:খ ও বেদনার বিষয় হলো বহু মুসলমান নেতা ও শাসক পশ্চিমাদের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এদের মধ্যে সউদী আরবের বাদশাহ এক নম্বর। তিনি গণতন্ত্র বা ইসলাম কোনটাতেই বিশ্বাস করেননা। ক’দিন আগে জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মিতা হক বলেছেন,যাঁরা মাথায় ঘোমটা দেন তাঁরা বাংগালী নন। আমি ধরে নিয়েছি তিনি আবেগের কারণে ও রকম একটি কথা বলেছেন। আইউব খানও বলেছিলেন,বাংগালী মেয়েরা পেটিকোট বা সায়া সেমিজ পরেনা। এমন কি তারা কাঁচুলী বা বক্ষবন্ধনী পরেননা। জেনারেল আইউবের কথাটি আংশিক সত্য ছিল। বাংলাদেশের গরীব কিষানীরা সায়া বা সেমিজ পরতেন না। মিতা হক বা তাঁর মতো আরও যাঁরা আছেন তাঁরা হয়ত জানেনা ঘোমটা হিন্দু মুসলমান বাংগালী নারীদের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য। বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। সিঁথি দেখে বুঝা যায় তিনি বিবাহিত নারী। এ ছিল এক যুগের কথা। এখন বাংগালী/বাংলাদেশী/ভারতীয় ও পাকিস্তানীরা নারীরা সালোয়ার কামিজ ওড়না পরেন। বেশ কিছু কম বয়সী বা তরুণীরা জিন্সের প্যান্ট,টি শার্ট পরে। এর সংখ্যা খুবই কম। তথকথিত কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী বা নেতা মাঝে মধ্যে এসব আজে বাজে কথা বলে থাকেন। এক সময়ে তসলীমা নাসরিন নামের এক মহিলা নারী অধিকার ও যৌন জীবন নিয়ে অনেক কথা বলে বিতর্ক তৈরি করে ছিলেন। শুনেছি ক’দিন আগে তিনি বলেছেন,তাঁর যৌবন ফুরিয়ে গেছে,তাই কেউ কাছে আসেনা।
এখন জাতির সম্মুখে একটি মাত্র প্রশ্ন। আর তাহলো বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মুসলমানের জীবনে ইসলাম
থাকবে কি থাকবেনা। আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশকে রাস্ট্রীয় ভাবে একটি ধর্মমুক্ত রাস্ট্রে পরিণত করা। আর তাঁদের এই বিশ্বাসই নাকি মুক্তিযুদ্ধে চেতনা আর প্রগতিশীলতা। তাঁদের শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এর মানে ধর্ম ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপার। তাহলে আওয়ামী লীগ বা ওই ঘরাণার লোকেরা কিভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতির কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করছে। অপরদিকে বিএনপি সহ জাতীয়তাবাদী ইসলামী দলগুলো চায় বাংলাদেশ একটি আধুনিক উদার মুসলীম রাস্ট্রে পরিণত হোক। বাদল সাহেব তাঁর আলোচনায় ইংগিত দিয়েছেন যে, বিএনপি এবং তার সহযোগী দলগুলো ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ধর্ম বা ইসলামই নাকি আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধানতম বাধা। ইসলাম নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। যাঁরা একটু চিন্তা করেন তাঁদের বুঝতে একেবারেই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাহলো বাংলাদেশকে ধর্মহীন তথকথিত নামধারী মুসলমানদের দেশে পরিণত করা। যাঁরা মুসলমান থাকবে কিন্তু ইসলাম চর্চাকে জীবন থেকে বিদায় দিবে। বাদল সাহেবদের রাজনীতির প্রধানতম লক্ষ্য হচ্ছে কালক্রমে ইসলামকে রাস্ট্র, সমাজ ও জীবন থেকে বিতাড়িত করা। বাদল সাহেবেরা তাঁদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারেন,যেমন মিশরের সেক্যুলারিস্টরা(ধর্মহীনরা) আমেরিকা, ইজরায়েল ও পশ্চিমা শক্তির তাবেদার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে এবং সেদেশের ধর্মপ্রিয় মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


মিশরে গণতন্ত্রের অবস্থা ও বাংলাদেশের রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার

বাংলাদেশের চলমান সরকার ও রাজনীতির সাথে মিশরের চলমান ঘটনা প্রবাহের অনেক মিল অমিল আছে। তাই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলার বা লিখার আগ্রহ জন্মেছে মনে। তারই প্রকাশ এই লেখা। বাংলাদেশ একটি মুসলীম প্রধান দেশ, মিশরও তাই। মিশরের জনগণ বেশীর ভাগই সুন্নী,বাংলাদেশও তাই। মিশরেও নানা ধর্মের মাইনরিটি আছে। মিশর একটি সুপ্রাচীন সভ্যতার দেশ। ইতিহাস ও মানবতত্ববিদগণ বলছেন,মানবজাতির যাত্রা শুরু হয়েছে মিশর বা ইরাক থেকে। মানবজাতির জীবন বিধান বা সিলেবাস আল কোরআনে অত্র ভৌগলিক এলাকার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও ইঞ্জিল ,তৌরাত ও জবুরেও এসব এলাকার ইতিহাস ও জীবন প্রণালী বিশদ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্যে যাঁরা নিয়মিত কোরআন পড়েন তাঁরা মানব জাতির ইতিহাসের অনেক উপাদান এখান থেকেই সংগ্রহ করেন। মিশরীয়রাও এক সময় প্যাগান বা মুর্তি পূজক ছিলেন। আমরা মানে বাংলাদেশের মানুষও এক সময় মুর্তি পূজক ছিল। ইসলামের আগমনের পর এখানে মুর্তি পূজার কিছুটা অবসান হয়েছে। অখন্ড ভারতে এখনও প্রায় ৮০ কোটি মানুষ মুর্তি পূজা করেন। বাকি ৭০ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধর্ম পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছেন মুসলমান,বৌদ্ধ,খৃষ্টান, জৈন,শিখ সহ আরও অনেক ছোটখাট ধর্মীয় গোষ্ঠি।
আল কোরআনে বর্ণিত মহা জালেম ফিরাউনের কথা আমরা সকলেই জানি। এমন কি যাঁরা কোরআন পড়েননি বা পড়তে পারেননি তাঁরাও ফিরাউনের কথা জানেন একজন জালেম হিসাবে। জালেম আর মজলুম শব্দটি সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর মাধ্যমে। আমি নিজেই শব্দ দুটি শিখেছি মাওলানা সাহেবের কাছে থেকে। পরিণত বয়সে এসে জালেম শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার পেয়েছি আল কোরআনে। এমন কি আমরা ব্যক্তিগত ভাবেও জালেম হয়ে যাই নিজেদের জীবন প্রণালী,আচার ব্যবহারের কারণে। যেমন আমরা তওবা করি একথা বলে,‘রাব্বানা জোলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতার হামনা লানা কুনান্না মিনাল খাছেরিন’।এর মানে হচ্ছে,হে প্রভু বা হে খোদা আমি স্বীয় আত্মার জুলুম করেছি, আমাকে তুমি ক্ষমা দাও। শুরুতে অনেকদিন বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা কি? আমি কেমন করে নিজের উপর বা নিজের আত্মার উপর জুলুম করলাম। আবার নিজের উপর জুলুম করে ক্ষমা চাইছি খোদার কাছে। একদিন বুঝতে পারলাম,নিজের আত্মা বা রূহের উপর অত্যাচার বা জুলুম করার অধিকার আমার নাই। কারণ,ওই আত্মা বা রূহের মালিক আমি নই। এর মালিক এর স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহ মালিক। তিনি নিজেই আমাকে জীবন দান করেছেন ওই রূহের মাধ্যমে। আল্লাহপাক যেদিন তাঁর নির্দেশ ওই রুহকে প্রত্যাহার করে নেন তখনি আমাদের দেহটা মাটির কাছে ফিরে যায়। কারণ,দেহটা মাটিরই তৈরি। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,কি বুঝতে বা জানতে পারলেন? এই দেহ বা এই রুহের মালিক আপনি নন। রুহবিহীন দেহের মালিক মাটি আর পবিত্রতম সৃষ্টি রুহের মালিক আল্লাহপাক নিজেই। আপনি আমি সকলেই শুধু এ বিষয়টা যদি বুঝতে পারতাম তাহলে এত উথাল পাতাল করতামনা। এত অহংকার করতামনা। ক্ষমতার এত দম্ভ করতামনা। কালামে পাকে বার বার জালেম জুলুম আর মজলুমের কথা বলা হয়েছে। জুলুমাতের(অন্ধকার ,অজ্ঞানতা,অন্যায় অবিচার অত্যাচার,বেআইনী) প্রতিনিধি শয়তানের কথা বলে মানজাতিকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। এত হুঁশিয়ারী সত্ত্বেও মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয় বেশী। আল্লাহপাক ও তাঁর নবী রাসুলদের বাণী, নির্দেশ ও হুকুম অমান্য করে আলোর(জ্ঞান, সঠিকপথ, নুর) দিকে না এসে অন্ধকারের দিকে ছুটে চলেছি। বার বার বলা হয়েছে আলোর পথে আসো,অন্ধকার তোমাকে বিপদগ্রস্ত করবে।
মিশরে এখন যা ঘটছে তা নিশ্চয়ই স্বার্থবাদী ছাড়া আর কেউ সমর্থন করবেনা। যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা একটি ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বহু বছরের স্বেচ্ছাচারী একনায়কতন্ত্রকে অতিক্রম করে সেদেশের মানুষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার গঠণে সহায়তা করেছে। ভাগ্যক্রমে বা কারো কারো মতে ওই সরকারটি ইসলামিক। তাই মিশরের সেনাবাহিনীর নেতারা নির্বাচিত মুরসী সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্‍খাত করেছে শক্তি বলে। এখন চলছে মুরসী সমর্থক বা ইসলামিস্টদের হত্যা করার অভিযান। মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে সে দেশের মানুষকে বহু রক্ত দিতে হয়েছে। মুবারককে ৩০ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল সে দেশের সেনা নেতারা। বছর যেতে না যেতেই নির্বাচিত সরকারকে উত্‍খাত করেছে সেনা নেতারা। প্রদেশ গুলোতে জেনারেলদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে গভর্ণর হিসাবে। এখন কথা উঠেছে ইসলামিক রাজনৈতিক দল ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে দেয়া যায় কিনা। এই দলতো বহু যুগ নিষিদ্ধ ছিল। এমন নিষিদ্ধ দলটিই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে ৬০ বছর পর। বিশ্বের তথকথিত গণতন্ত্রের বাপ ও নেতা আমেরিকা ও তার সহোদর সহচরেরা নির্বাচিত নেতা মুরসীর সরকার উত্‍খাতকে সমর্থন করেছে। যদিও আমেরিকা এখন মুখ লুকাচ্ছে। বিগত ৮০/৯০ বছর ধরে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী সামরিক ক্যুর উসকানি দিয়ে আসছে। নির্বাচিত সরকারকে উত্‍খাত করেছে। কমিউনিজম ধ্বংসের নামে সারা বিশ্বে প্রতি বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং শান্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আমেরিকা এখন ইসলাম ধ্বংসের অভিযানে নেমেছে। কোথাও আলকায়দা ধ্বংসের নামে অভিযান চালাচ্ছে,কোথাও তালেবান খুঁজে বের করছে। গাদ্দাফি আর সাদ্দামকে উত্‍খাতের নামে দেশ দুটোতে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটছে। গাদ্দাফি এবং সাদ্দাম কেউই ইসলামিক ছিলেননা। তাঁদেরকে যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় রেখেছে আমেরিকা ও তার দোসররা। অন্যদিকে সউদী আরব অগণতান্ত্রিক সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সউদী বাদশা্ মিশরের গণহত্যাকে সমর্থন দিয়েছেন। কারন সউদী বাদশাহ গনতন্ত্র বা ইসলাম কোনটাই চাননা। বাদশাহ পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন বা ইসলামকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেন। মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত আসলেও সেই বসন্তকে বরফে ঢেকে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আমেরিকা। মধ্যাপ্রচ্যের শাসকরা গণতন্ত্র ও গণ জাগরণকে ভয় পাচ্ছেন। এরা কেউই গণতান্ত্রিকও নয় ইসলামিকও নয়। এরা সবাই রাজা বাদশাহ বা প্রেসিডেন্ট শব্দের আবরণে কুত্‍সিত ডিক্টেটর বা স্বেচ্ছাচারী একনায়ক। এরা সবাই জনগণের সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে করে ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে। মুরসী নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে সরকার গঠণ করেছিলেন। কিন্তু ভুলে গেছেন বা অনুমান করতে পারেননি সেদেশের সেনা নেতারা ও তথাকথিত ধর্মহীন মুসলমান নেতা, মুসলীম বিরোধী প্রতপক্ষ কি ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাঁর উচিত ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে একশ’ ভাগ সজাগ থাকা। শত্রু যত সংখ্যায় যত ছোটই হোকনা কেন তাঁরা ষড়যন্ত্রকারী। বেশ কয়েক যুগ ধরেই মিশরে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ চালিয়েছে তথাকথিত গণতন্ত্রের লেবাস পরে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের মদতদাতা হলো আমেরিকা, পশ্চিমা শক্তি ও মিশরের ভিতের বর্ণচোরা মুসলমানেরা।
আমাদের বাংলাদেশেও ইসলাম উত্‍খাতের রাজনীতি চলছে। তথাকথিত গণতন্ত্রের সংখ্যাতত্বের জোরে সরকার সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর নামে মুছে দিয়েছে। এখন আমাদের সংবিধান মোতাবেক আল্লাহ সার্বভৌম নন, সার্বভৌম হচ্ছে। যাঁরা আল্লাহ সার্বভৌম বলবেন বা স্বীকার করবেন তাঁরা নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। এ বিষয় নিয়ে এখন আদালতে এখন যুক্তি তর্ক চলছে। দামী দামী আইনজীবীরা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আল্লাহু আকবর বলেনা, বলে আল্লাহ সর্বশক্তিমান, যখন বিশ্বের সব মুসলমান আল্লাহু আকবর বলেন। আওয়ামী লীগ বিসমিল্লা্হীর রাহমানীর রাহীম বলেনা, বলে পরম করুণাময়ের নামে শুরু করছি। বিসমিল্লাহ নাকি বিএনপির শ্লোগান(নাউজুবিল্লাহ)। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে আওয়ামী লীগ বলে ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার , কিন্তু রাষ্ট্র সবার। বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসতে এই আশংকায় ২০০৮ সালে সেনা নেতারা ও অসাংবিধানিক সরকার আওয়ামী লীগকে দুদি তৃতীয়াংশ সীট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে। সেই মেজরিটির জোরে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। লক্ষ্য হলো যেমন করেই হোক ইসলামকে দমন করতে হলে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসাতে হবে। এই কারণে,বিদেশী প্রভুদের খুশী করার জন্যে সরকার ৬ই মে রাতে সকল আলো নিভিয়ে দিয়ে শাপলা চত্বরে হেফাজতের লাখ লাখ নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে দশ হাজার পুলিশ,রেব, বিজিবি দিয়ে। এই হামলার ফলে একজন মানুষও নাকি নিহত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,হেফাজতের লোকেরা নাকি গায়ে রং মেখে মরার ভান করে ওখানে শুয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, হেফাজতের লোকেরা বা তাদের সমর্থকেরা বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরীফে আগুন দিয়েছে, দোকান পাট লুট করেছে। মিশরেও নাকি সেনাবাহিনী বোমা মেরে মসজিদ উড়িয়ে দিয়েছে,হাজার লোককে হত্যা করেছে চলমান আন্দোলন দমনের জন্যে।

বাংলাদেশেও সকল ধর্মের মানুষ আছে বহু কাল ধরে। এক সময়ে একই পুকুরে গোসল বা স্নান করতো বিপরীত ধর্মের মানুষ। প্রতিবেশী হিসাবে বাস করেছে। একই স্কুল কলেজে লেখাপড়া করেছে। ইসলাম ধর্মে বর্ণবাদ বা শ্রেণীবাদ কখনই ছিলনা,আজও নেই। তবে অর্থনৈতিক কারণে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়েছে রাস্ট্র বা সমাজপতিদের কারণে যা ইসলাম সমর্থন করেনা। আল কোরআন বা ইসলাম সমাজের আশরাফ আতরাফ তৈরি করেনি। এটা ক্ষমতাবান বা সমাজপতিদের সৃষ্টি। ইসলামই বলেছে,অভুক্ত মানুষের নামাজ হয়না। বলা হয়েছে আগে খাও পরে নামাজ পড়। রাসুল(সা) বলেছেন, প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে যে খায় সে মুসলমান নয়। কিন্তু আমরা যারা নামের মুসলমান তারা এসব মানিনা। আমাদের সমাজে বা দেশে আজ যে বৈষম্য বিরাজ করছে তাকে ইসলাম কখনই সমর্থন করেনা। বাংলাদেশ মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের দেশ হলেও এখানকার রাজনীতি পশ্চিমা ধাঁচে চলে। পশ্চিমা গণতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতিকে সেরা সরকার ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখানে পুঁজিবাদ, সমাজবাদ বা ইসলামিক অর্থনীতি কোনটাই চলেনা। যা চলছে তাকে জনকল্যাণমূলক অর্থনীতিও বলা যায়না। বাংলাদেশে প্রগতিশীল রাজনীতি ও সমাজবাদী অর্থনীতির প্রবক্তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। আওয়ামী লীগ কখনই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করতোনা। আজও করেনা। তবুও প্রগতিশীলরা অদৃশ্য কোন কারণে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত। ভারত একটি বৃহত্‍ পুঁজির দেশ। এদেশে বিশ্বমানের পুঁজিপতি যেমন আছে তেমনি না খেয়ে থাকার লোকের সংখ্যাও কম নয়।ভারতের প্রগতিশীল ও সমাজবাদীরা কিন্তু বর্ণবাদে বিশ্বাস করেন। প্রায় ৪০ কোটি অচ্যুত বা শূদ্রকে ভারত সরকার বা সমাজ কখনই মানুষ মনে করে না। সেই ভারত তার অতি নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশে সব সময় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় বা বসাতে চায়। আওয়ামী লীগের চেহারা মুসলমানের, কথাবার্তায় ও তাঁরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে। কিন্তু কর্ম,চেতনা ও ভাবনায় ইসলাম মুক্ত থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ ধর্ম বা ইসলামকে সমাজ রাস্ট্র সরকার শিক্ষা সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে দূরে রাখতে চায়। আধুনিক বা প্রগতিশীল হওয়ার জন্যে বা প্রগতিশীল ও ধর্মহীনদের খুশী করার তাঁরা ১৯৫৫ সালেই দলের নাম থেকে মুসলীম শব্দটা ফেলে দিয়েছে। মুসলীম শব্দটি নাকি অপ্রগতিশীল,পশ্চাদপথ। সেই থেকেই আওয়ামী লীগের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসে আছে তথাকথিত মুসলমান নামধারী প্রগতিশীল আর ভারত ও ভারতপন্থীরা। ছাত্র জীবন থেকে আমরা দেখে আসছি,আওয়ামী লীগের পর ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। এর কারণ, গণতন্ত্র চর্চা বা অনুশীলনে আওয়ামী লীগের তেমন অভ্যাস গড়ে উঠেনি। গণতন্ত্র যে মহা ধৈর্য,পরমত সহিষ্ণুতার কাজ আওয়ামী লীগ কোনদিনই বিশ্বাস করেনি। ফলে সাধারন মানুষকে ঠকিয়ে,সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করে দল পরিচালনা করে এসেছে। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিশাল বিজয়ের পরেও পূর্বপাকিস্তানে ৯২ক ধারা বা কেন্দ্রীয় শাসন জারী হয়েছে,নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জেলে গিয়েছেন। সেই পথ ধরে ১৯৫৮ সালে সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারী হয়। এর আগে প্রাদেশিক পরিষদে স্পিকারকে হত্যা করা হয়। তবে একথাও সত্য যে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও আমলারা গণতন্ত্র বা জন প্রতিনিধিদের কখনই সম্মান করেনি। পাকিস্তান সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠার পর মুসলীম লীগ নেতারা দেশটাকে তাঁদের জমিদারী মনে করেছিলেন এবং মনো জগতে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগকে এদেশ থেকে চিরতরে বিদায় নিতে হয়েছে।
স্বাধীনতার পর পরেই বংগবন্ধু কিছুদিন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চর্চা করেছিলেন। রাস্ট্রীয় নীতি ছিল সমাজতন্ত্র। এক পর্যায়ে তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্যে সকল দল ও মতকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে মনে করতেন বা তাঁকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যে, এক দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করলে দেশের মানুষের উন্নতি হবে আর দেশ উন্নতি লাভ করবে। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো তিনি কখনই সমাজতন্ত্রী ছিলেন না,তারঁ আদর্শও সমাজতন্ত্র ছিলনা। তাঁর দল আওয়ামী লীগও কখনও সমাজতান্ত্রিক দল ছিলনা। আওয়ামী লীগে এখনও কিছু নেতা আছেন যাঁরা এক দলীয় ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এক দলীয় ব্যবস্থার পক্ষে গুণআণ করেছেন। তিনি মনে করেন, বহু দলীয় ব্যবস্থার কারণে রাজনীতিতে এতো হানাহানি ও মারামারি। আওয়ামী লীগের মনোজগত থেকে এক দলীয় শাসনের ভুত এখনও যায়নি। বিগত সাড়ে চার বছর গণতান্ত্রিক রীতি নীতি ও মনোভাবকে সম্পুর্ণ পরিহার করে সংসদীয় আসনের সংখ্যার জোরে দেশ চালিয়েছে। বিরোধী দলের উপর সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের চলতি আমলে সরকারী নির্যাতনে যত লোক মারা গিয়েছে বিগত ২০ বছরে এত লোক মারা যায়নি। আওয়ামী লীগ মনে করে সরকার ও রাস্ট্র রক্ষার নামে সকল হত্যা ন্যায় সংগত। বংগবন্ধুর মতো ও রকম একজন বিশাল নেতাও দেশের বা জনগণের স্বার্থের নামে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, ৭৩ সালের নির্বাচনে জয়ের একশ’ভাগ সম্ভাবনা থাকা সত্তেও বংগবন্ধু বেশ কিছু সীট জোর করে দখল করে নিয়েছিলেন। তাঁকে তাঁর দলের কিছু নেতা ও আমলারা বুঝিয়েছিলেন যে এ সময়ে বিরোধী শিবির ২০ সীটও পায় তাহলে লোকে মনে করবে বংগবন্ধুর জনপ্রিয়তা কমে গেছে। তিনি আসলে মিথ্যা আশ্বাস ও পরামর্শের কারণে নিজের জনপ্রিয়তার নেশায় বিভোর ছিলেন। আর শাসক হিসাবে শেখ সাহেব ৫৫ সালেই ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দূর্ণীতি দমন মন্ত্রী। বলেছিলেন,তিন পয়সার পোস্ট কার্ড লিখলেই তিনি দূর্ণীতির খবর পেয়ে যাবেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধেই দূর্ণীতির অভিযোগ এসেছিল। এদেশবাসী জানে যে,আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক নেগোশিয়েশনে সব সময় ব্যর্থ হয়েছে। সর্বোচ্চতম সহনশীলতার মাধ্যমে সহ অবস্থানের নাম হলো গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ৬৪ বছরের জীবনে সহনশীল সহ অবস্থানের পরিচয় দিতে পারেনি।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


রণি নাটকের কুশীলবদের বাস্তব অভিনয় / এরশাদ মজুমদার

আধেক শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে সাংবাদিকতা করছি বা খবরের কাগজে লেখালেখি করছি। ১৯৬১ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান অবজারভারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে নিয়েছি। সে সময়ে অবজারের নিউজ এডিটর ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবিএম মুসা আর সম্পাদক ছিলেন এশিয়ার অন্যতম সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবদুস সালাম। তখন পূর্বপাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশের নামজাদা ডাকসাইটে সাংবাদিকরা অবজারভারে কাজ করতেন। আমাদের বলা হতো সংবাদপত্র হচ্ছে পাবলিক কোর্ট। চট করে কোন ভেরিফিকেশন ছাড়া কোন খবর প্রকাশ করোনা। অবজারভার পত্রিকার মালিক হামিদুল হক চৌধুরী সাহেব বলতেন,দশটি খবর মিস করো কিন্তু একটিও ভুল খবর ছেপোনা। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই অবজারভারের ইমেজ গড়ে উঠেছিল। ফলে সে সময়ে অবজার ছিল সারা পাকিস্তানের সম্মানিত কাগজ। সালাম সাহেবকে দেখতে দেশ বিদেশ থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা আসতেন। আমার দৃষ্টিতে সালাম সাহেব ছিলেন এশিয়ার বিখ্যাত দার্শনিক সম্পাদক। নীতিগত ভাবে তিনি ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেট। তারপরেও রাস্ট্র তাঁকে সহ্য করতে পারেনি। তিনি কয়েকবার জেলে গিয়েছেন ও চাকুরী হারিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হওয়ার পর তিনি চাকুরী হারিয়ে মহা আর্থিক অনটনে দিন যাপন করেছেন।
প্রাক স্বাধীনতা কালে আমাদের সাংবাদিকতার মূল বিষয় ছিল পূর্ব ও পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও নানা খাতের বৈষম্য নিয়ে। ফলে তখন সাংবাদিকতায় একটা আদর্শগত বিষয় ছিল। সেই আদর্শগত দিক থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য যে, প্রাক ৪৭ যুগেই পশ্চিম বাংলা বা কোলকাতা পূর্বাঞ্চলকে শেষন করেছে। পূর্ববাংলার সম্পদ দিয়েই কোলকাতা মহনগর গড়ে উঠেছিল। কোম্পানী বা ইংরেজ আমলে কোলকাতা ছিল সারা ভারতের রাজধানী ছিল। পরে রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরিত হয়। ইংরেজ আমলে পূর্বাংলা ইংরেজ-হিন্দু যৌথ শোষনের কবলে পড়েছিল। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানেরা আশা করেছিল পাকিস্তান হওয়ার ওই শোষন বন্ধ হবে। কিন্তু হয়নি। একজন অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসাবে ৭০ সাল নাগাদ আমার প্রধান কাজ ছিল দুই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য সম্পর্কে জন সাধারনের কাছে তুলে ধরা। বাংলাদেশ হওয়ার পর দেশের উজ্বল ভবিষ্যত নিয়ে লেখালেখি করেছি। দেশের আর্থিক ভিত মজবুত করার জন্যে লিখেছি। বিগত ৪২ বছরে দেশের অগ্রগতি যে টুকু হয়েছে তার ৮০ ভাগ চলে গেছে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী ও সুবিধা ভোগী মানুষের কাছে। নিজেদের অশ্লীল শোষণকে লুকিয়ে রাখার জন্যেই নব্য ধনীরা মিডিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারাই আজ তাদের অবৈধ অর্থ দিয়ে রেডিও,টেলিভিশন ও পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছে। এখন বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে বলার জন্যে তেমন কোন মিডিয়া নেই। জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্যে তেমন আদর্শবাদী সাংবাদিকও নেই। আবার রাজনৈতিক ভাবে সাংবাদিক দুই শিবিরে বিভক্ত। এক শিবির আওয়ামী লীগের সমর্থক,আরেক শিবির বিএনপি ভক্ত। সাংবাদিকদের কাছে এখন বেতন ভাতা মুজুরীই মূখ্য বিষয়। এছাড়া সংবাদ বা খবরের চেহারাও দুই রকম হয়ে গেছে। একই খবর একশ’ভাগ বিপরীত মুখী হয়ে প্রকাশিত হয়। চলমান সময়ে দেশের ৮০ ভাগ মিডিয়া আওয়ামী পন্থী। বিএনপি ক্ষমতায় বার বার এলেও শক্তিশালী মিডিয়া জগত গড়ে তুলতে পারেনি। কিছু কিছু মিডিয়া এত শক্তিশালী হয়ে গেছে যে, সেগুলো এখন নিজেরাই রাস্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। তারা এখন সরকার বসানো বা নামানোর ক্ষমতা রাখে। কিছু কাগজ আছে একেবারে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এদের আনুগত্য হচ্ছে দিল্লীর প্রতি। এরা নাকি অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রণির উত্থান ও পতন এখন মিডিয়ার জন্যে সবচাইতে গরম খবর। কাগজ, রেডিও ও টিভি এখন রণিকে নিয়ে মহাব্যস্ত। বেশ কিছুদিন ধরে রণি টকশোতে অংশ নিয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের মানুষ এখন রণিকে ভাল করে চিনে। গত কয়েকদিনে রণি লীড হেডিংয়ে পরিণত হয়েছে। রণিকে নিয়ে সবাই কথা বলছে। রণি নিজেও কথা বলে খুবই সুন্দর করে গুছিয়ে। চেহারাও খুব মার্জিত ও বিনীত। নানা বিষয়ে রণি খবরের কাগজে কলাম লিখে চলেছে। এক সময়ে তিনি নাকি খবরের কাগজেও কাজ করেছেন। গোলাম মাওলা রণি বেশ কিছুদিন ধরে সালমান এফ রহমান ওরফে দরবেশ সাহেব ও শেয়ার বাজারের লুটপাট নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। দরবেশ সাহেব হলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বিষয়ক বেসরকারী উপদেষ্টা। তিনি আওয়ামী লীগের একজন বড় মাপের পৃষ্ঠপোষক। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর ভাই মরহুম শেখ কামালের ক্লাশমেট বা বন্ধু ছিলেন। শেখ কামালের অনুরোধেই তিনি আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে শোনা যায়। দরবেশ সাহেব পারিবারিক দিক থেকে একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য। তাঁর সম্মানিত পিতা মরহুম ফজলুর রহমান জিন্নাহ সাহেবের সাথে রাজনীতি করতেন এবং পাকিস্তানের প্রথম কেবিনেটের মন্ত্রী ছিলেন বলে শুনেছি। তাঁর মরহুমা আম্মাজান খুবই খানদানী অবাংগালী মুসলীম পরিবারের উচ্চ শিক্ষিতা নারী ছিলেন। দরবেশ সাহেব সেই সুত্রেই ভাল বাংলা বলতে পারেন না। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে তাঁর পিতা ফজলুর রহমান সাহেব একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি নাকি আরবী হরফে বাংলার প্রচলন চেয়েছিলেন। ব্যবসায়ী সালমান ব্যক্তিগত জীবনে পারিবারিক ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। বৈশ্য মেধা দিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নতুন পরিবেশ ও নতুন রাজনীতিতে তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য বেনিয়াবৃত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। হয়ত তিনি পিতার বিতর্কিত অতীতকে সামনে আনার সুযোগ দিতে চাননা, তাই বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানে নিজেকে স্থিত করেছেন। এই অবস্থানই তাঁকে বণিকবৃত্তিতে বেপরোয়া করে তুলেছে। তাই তিনি সব সময়ই আলোচনার তুংগে। বাণিজ্য জগতে লুন্ঠণের খবর আসলেই তাঁর নাম আসে। তিনি খুবই সফলতার সাথে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করেন। এক সময় ট্রান্সকম গ্রুপের কাগজ গুলো সালমানের এবং বেক্সিমকো গ্রুপের চামড়া তুলে নিতো। হয়ত রাজনৈতিক কারণে তাঁরাও এখন তেমন কিছু বলেননা। এসব দেখেই সালমান সাহেব মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি তেমন সাফল্য পাননি। তাঁর ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিও তেমন বাজার পায়নি। তবে গত কয়েকদিনে এই চ্যানেলটি আলোচনায় সামনে এসে গেছে রণির কারণে। সালমান বা দরবেশ সাহেব শেয়ার বাজারে যে সাফল্য ও যোগ্যতা দেখাতে পেরেছেন তা আর কোন ক্ষেত্রে দেখাতে পারেননি। শেয়ার বাজারের খেলার পারদর্শী খেলোয়াড় সালমানকে মারাদোনা বলা হয়। হাত দিয়ে গোল করলেও মারাদোনা বলেন,ওটা ঈশ্বরের হাত। জগতবাসীও তা গ্রহণ করে নিয়েছে। সালমানের খেলাকেও সরকার ও রাস্ট্র মেনে নিয়েছে। শেয়ার বাজারের মারিফতের কারণেই সালমান দরবেশ টাইটেল পেয়েছেন ওই বাজারের সকল প্লেয়ারের কাছে। এখন ব্যবসা বাণিজ্যের দরবেশ বললেই সবাই বুঝতে পারে এই দরবেশ কে? সালমানের কোন মিডিয়াই সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। এর মানে হচ্ছে তিনি তাঁর মিডিয়া ব্যবসার ব্যাপারে সিরিয়াস নন বা উদাসীন। বড় বাণিজ্য জমিদারগণ প্রায় সকলেই কাগজ ও টিভি চ্যানেল চালু করেছেন। এর মাধ্যমেই সরকারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর কিছু না হলেও এক দেড়শ’ সাংবাদিককে চাকুরী দেওয়া যায়। এরপরে টাকা কামাবার মেশিন বসিয়ে ফেলুন। দেশের সাংবাদিক জগত আপনার বন্ধু হয়ে যাবে।
এখন বাণিজ্যিক জমিদারেরা সকলেই টিভি চ্যানেলের মালিক হতে চান। এর মাজেজা কি টিভি চ্যানেল জগতের রুই কাতলারাই জানেন। সালমান সাহেবেরও তেমনি একটি চ্যানেল আছে। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই চ্যানেলটি চলে। গোলাম মাওলা রণি নাটকে সালমান সাহেবের চ্যানেল বিরাট দেশ প্রেমিকের ভুমিকা পালন করেছে এবং করে চলেছে। আগেই বলেছি, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রণি আর দরবেশ সাহেব একই রাজনীতি ও দলের অনুসারী ও গ্রাহক। কি যেন কারণে রণি সাহেব শেয়ার বাজার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দরবেশ সাহেবের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছেন বলে মিডিয়া ও সমাজের উপরতলার মহাজনরা বলাবলি করছেন। এ্ছাড়াও রণির নাকি একটা অনলাইন সংবাদপত্র আছে। এখন রণিকে নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে বিপক্ষে বাতচিত চলছে। বেশীর ভাগ ফেসবুক লেখকরা রণির পক্ষে কলম ধরেছেন। সবাই বলছে রণি কিছুদিন ধরে দলের নেতাদেরও কিছু মৃদু সমালোচনা করেছেন। রণি কথা বলেন খুব শান্ত ভাবে। যা আওয়ামী কালচারে নেই। এই দলের নেতারা গলা উঁচিয়ে কথা বলেন। মনে হয় বিনা কারণে উত্তেজিত হয়ে আছেন। শুনেছি অনেকেই বংগবন্ধুর গলা নকল করতে গিয়ে এমন অবস্থার কবলে পড়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা(শ্রমিক নেতা),মানে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী পন্থী ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা জনাব ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই রণিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম আদালত এ কাজটি করেছেন। অপরদিকে তথ্যমন্ত্রী ও কমনীয় মনোরম চেহারার মালিক ইঞ্জিনিয়ার হাসানুল হক ইনু সাহেব বলেছেন,সরকার সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা সহ্য করবেন না। তাই বিজ্ঞ আদালত জামিন দিলেও সরকার সে জামিন বাতিল করিয়ে রণিকে গ্রেফতার করিয়েছেন।রণি দুই সাংবাদিকের গায়ে হাত বা পা তুলেছেন বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সাগর রুনির হত্যার ব্যাপারে সরকার কিছুই করতে পারেনি। এখনও তদন্ত চলছে। আদালত নির্দেশ দিলেও সরকার কিছু করে নাই। বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন সাগর রুনি হত্যার সাথে সরকার জড়িত। ওই দুই সাংবাদিক নাকি বড় কোন দুর্ণীতির বিষয় ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন। রণির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কেন গোস্বা করেছেন তা দেশবাসী ভাল করে জানেনা। আওয়ামী মহলে জোর প্রচারনা চলছে সরকার নিজ দলীয় সংসদ সদস্যকেও গ্রেফতার করতে দ্বিধাবোধ করেনা। সৈয়দ আশরাফ সাহেব(যিনি নামে সৈয়দ হলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি হিন্দু ও নন, মুসলমানও নন) বলেছেন,অপরাধী সাব্যস্ত হলে রণিকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো রাস্তার সাধারন মানুষও বুঝে রণি নাটকটি কেন মঞ্চস্থ করা হয়েছে। শুধু সাংবাদিকদের খুশী করার জন্যে সরকার এ পথে পা বাড়িয়েছে? নাকি সালমান সাহেবকে ঘাঁটানোর অপরাধে রনীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। শুধু সাংবাদিকরা খুশী হলেই আগামী নির্বাচনের ফলাফল নিজের পক্ষে আনা যাবে? ২০০৮ সালের নির্বাচনেতো জেনারেল মইনের জয় হয়েছে। ফল ভোগ করছে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা। সে ধরনের একটি নির্বাচন কি ২০১৩/১৪ সালে সম্ভব?
এবার সাংবাদিকদের স্বাধীনতা মানে লেখার বা দেখাবার সীমা বা ক্ষমতা কতটুকু। সাংবাদিকরা কি ইচ্ছা করলে সবকিছু লিখতে বা বলতে পারে? এ উত্তর দেয়ার মালিক সাংবাদিক নেতাদের। আমিতো জানি সাংবাদিকরা শ্রমিক। জীবনের লক্ষ্য বেশী বেশী করে শ্রমের দাম আদায় করা। এ লক্ষ্য থাকা সত্বেও সাংবাদিকরা বিভক্ত রাজনৈতিক কারণে। দুটি সাংবাদিক ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নে অনেক নেতা। বাংলাদেশে এখন সাংবাদিকের তেমন স্বাধীনতা নেই। স্বাধীনতা আছে পত্রিকা মালিক ও সরকারের। মালিকের চাহিদা পুরণ করাই সাংবাদিকদের কাজ। আর মালিকের কাজ সরকারকে তুষ্ট করা। রাজনৈতিক কারণে বড় বড় সাম্পাদকদের অনেকেই এখন সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের এ অবস্থান পরিবর্তন যোগ্য। তাও আবার নির্ভর করে রাজনৈতিক অবস্তার উপরে। পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল দেখে অনেক সম্পাদকই দিক পরিবর্তনের পথে রোয়ানা দিয়েছেন বলে শোনা যায়। অপরদিকে যে সকল সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারের হালুয়া মাখন থেকে বঞ্চিত বা সরকার পক্ষ নয় বলে বহুল প্রচারিত তাঁরাও নড়ে চড়ে বসতে শুরু করেছেন। সময় ও দিনক্ষণ আসলে অনেকেই নির্যাতনের গল্প নিয়ে খাস দরবারে পৌঁছে যাবার রিহার্সাল দিতে শুরু করেছেন
১৯৬০ সাল থেকে ৭০ সাল নাগাদ তত্‍কালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ বাংলার সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে একটি কাজ ছিল তা হলো পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব বাংলাকে শোষণের কথা জন সাধারণের কাছে তুলে ধরা। বাংলাদেশ হওয়ার পরে সে ঐক্য আর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ, জন সাধারণের স্বার্থের চেয়ে তখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল বংগবন্ধুর স্বার্থ দেখা। ভাব খানা এমন যে ,ওই সময়ে জনস্বার্থ বলে কিছুই ছিলনা। ছোট খাট কাগজ গুলো অবশ্য সরকারের সমালোচনা করতো। ফলে অনেক কাগজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,বংগবন্ধু নিহত হওয়ার পর তাঁর পক্ষে কথা বলা বা লিখার জন্যে কোন লোক ছিলনা। এমন কি আওয়ামী লীগের অনেকেই মোশতাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকেই তাঁকে ফেরাউন বলে গালি দিয়েছিলেন। আমার কথা গুলোর সাথে সাংবাদিক বন্ধুদের দ্বিমত থাকতে পারে। আশা করি তাঁরা আমার ভিন্ন মতকে সম্মান করবেন।
রণির হেনস্থার পর অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নাগরিক বা নামী দামী ব্যক্তিত্বের প্রাইভেট লাইফে প্রবেশ করার ব্যাপারে সাংবাদিকদের অধিকার বা সীমা কতটুকু। শুনেছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সাথে দেখা করার জন্যে এক সাংবাদিক তাঁর হোটেল কামরায় করাঘাত করেছিলেন ভোরবেলা। তখন তিনি প্রতিদিনের অভ্যাস মতো ক্ষুর দিয়ে শেভ করছিলেন। দরজায় করাগার শুনে তিনি নাকি ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষুর নিয়ে সাংবাদিককে তাড়া করেছিলেন। সে ছবি নাকি বিদেশের কাগজে ছাপা হয়েছিল। ভারতের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী কৃষ্ণ মেননের বেলায়ও নাকি এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সাংবাদিকদের মারধর করার এমন বহু গল্প বিদেশে চালু আছে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রণিকে নিয়ে বেশ গল্প চালু হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের গায়ে পা তুলেছেন, তিনি একজন মহা সন্ত্রাসী,এলাকার তাঁর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর এলাকায় নাকি মিষ্টি বিতরন হয়েছে। রাজধানীতে তাঁর পক্ষে বিপক্ষে মানব বন্ধন হচ্ছে। এলাকায়ও হচ্ছে। অবাক ব্যাপার হলো সালমান সাহেবের নিজের টিভি ও বন্ধুদের টিভি রণির পক্ষের কোন খবর প্রচার করছেনা। যেমন করে শাহবাগেও সকল মিডিয়া খবর গোপন বা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রাতদিন খবর প্রচার করেছিল। পাঁচশ’লোকের জমায়েতকে দেখিয়েছে পাঁচ হাজার বা পঞ্চাশ হাজার বলে। সে সময়ে শাহবাগকে অমন করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করার জন্যে মিডিয়াকে নিশ্চয়ই কেউ উত্‍সাহিত করেছিল। পরিতাপের বিষয় হলো ,রণি নাটকটাও তেমনি ফ্লপ হয়ে যাবে। সরকার বা আওয়ামী লীগের কোন উপকারে আসবেনা। কারণ সময়। রণি মহা মাস্তান বা সন্ত্রাসী হলেও সময় তাঁর পক্ষে বয়ে চলেছে এখন।

Read Full Post »


আল্লামা শফী সাহেবের একটি বয়ান নিয়ে এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী,আওয়ামী লীগ এবং একই পথের পথিক আরও কিছু বুদ্ধিজীবী বলে বহুল পরিচিত মানুষ কথার খৈ ফুটাতে শুরু করেছেন। কথা বলার ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হারাতে পারে এমন নারী বা পুরুষ বাংলাদেশে এখনও জন্ম নেয়নি। বহু বভর আগে আমাদের এক সাংবাদিক বন্ধু মুজাফফর প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর ভাষার বিষয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,এটাই তাঁর কালচার ও পারিবারিক ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতারা গোপনে বলে থাকেন,নেত্রী যদি কম কথা বলতেন তাহলে দলের কিছু ভোট বাড়তো। তখন যদি আপনি বলেন ২০০৮ সালেতো আপনারা কল্পনার বাইরে ভোট পেয়েছেন। তখন আওয়ামী নেতারা বলেন,ওটাতো একটা বিশেষ সময়ের নির্বাচন।
শুরুতেই বলতে চাই,আপনি যদি একজন ধর্মহীন জাগতিক(সেক্যুলার) নর বা নারী হন তাহলে ইসলামের ধর্ম বিধান বা নিয়ম কানুন আপনার জন্যে প্রযোজ্য নয়। তখন আপনি একজন মুক্ত মানুষ। আপনার আখেরাতও নেই,শেষ বিচারদিনও নেই। জগতই আপনার শেষ ঠিকানা। আর যদি বলেন,আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনার পরলোক আছে, আছে স্বর্গ নরক। সকল ধর্মেই পরলোক আছে ,আছে বিচার। বাংলাদেশে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কিন্তু তাঁদের চোটপাট বেশী। কারণ ,আমাদের সমাজে একশ্রেণীর জ্ঞানী গুণী ও বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা নিজেদের মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষ বলে দাবী করেন। নিজেদের নানা কৌশলে ধর্ম থেকে দূরে রাখতে চান। তাঁরা মনে করেন ধর্ম মানলে আর প্রগতিশীল থাকা যায়না, সমাজে ইজ্জত থাকেনা। লোকে মোল্লা বলে গালি দেবে। ক্লাবে গেলে বন্ধুরা হুজুর বা হাজী সাহেব বলে ডাকবে।
বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সরকার নিজেদের সেক্যুলার(ধর্মহীন) বলে দাবী করেন ও প্রচার করেন। তাঁরা বলেন সেক্যুলারিজমের সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। আমার ধারনা,তাঁরা যখন নিজেদের সেক্যুলার বলেন তা না বুঝেই বলেন। অথবা বুঝেও এ কাজটি করেন অদৃশ্য প্রভুর নির্দেশে। এইতো মাত্র ক’দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহনজী বলেছেন,তাঁরা বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার দেখতে চান। সোজা কথা হলো ভারত বাংলাদেশে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ, আওয়ামী লীগকে দিয়ে ভারতের লক্ষ্য আদর্শ ও স্বার্থ রক্ষা করা যায়। অপরদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে মেজরিটি মানুষের ধর্ম ইসলামকে রাস্ট্রীয় জীবন থেকে নির্বাসনে পাঠানো যাবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পশ্চিমা দেশ গুলোর সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশী। বিশেষ করে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এখানে একজন অদৃশ্য বাদশাহ। সব ব্যাপারেই তিনি কলকাঠি নাড়েন। বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও কথায় কথায় বাদশাহর দরবারে ধর্ণা দেন। হাবভাব দেখে মনে বাদশাহ ঠিক থাকলে সব ঠিক। শোনা যায়, আমেরিকা ও ভারতের পরামর্শে সরকার হেফাজতের উপর হামলা চালিয়েছে পাঁচই মে গভীর রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে। কিন্তু এতে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোন উপকারই হয়নি। উল্টো হেফাজত রাজনীতিতে একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ,সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও পশিচমারা রাজনীতিতে ধর্ম বা পারলৌকিক কোন বিষয় দেখতে চায়না বলে ঢোল পিটাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে সিটি নির্বাচনে বিরোধী দল ধর্মকে ব্যবহার করে জিতে গেছে। তাই নির্বাচন কমিশন বলছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করতে দেয়া হবেনা। পারলৌকিক বিষয়টা নাকি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। শেষ বিচারের কথা শুনলেই ভোটাররা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে দেয়। দেশের বেশীর ভাগ ভোটারই গ্রামে থাকেন এবং ধর্মপ্রাণ। ধর্মের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান তাঁরা মেনে নিতে চাননা। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও মাঝে মাঝে হিজাব পরে নির্বাচনী প্রচারনা চালান। তাঁর নেতা কর্মীরা প্রচার করেন,শেখ হাসিনা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন। অবাক এবং বিস্ময়ের বিষয় হলো ধর্মকে সবখানে ব্যবহার করতে পারবেন,শুধু নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবেন না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করেও এরশাদ সাহেব পার পাননি। তিনি রাস্ট্রধর্ম ইসলাম করেছেন, শুক্রবারকে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু লোকে তাঁকে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করেনা। তাই ভোট দেয়না। আওয়ামী লীগ সেক্যুলারপন্থী নেতা ও মিত্রদের খুশী রাখতে গিয়ে দুই নৌকায় পা রেখেছে। রাস্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে বহাল রেখেছে। শুধু আল্লার নাম বা বিসমিল্লাহ ত্যাগ করেছে। ধর্মকে নিয়ে শেখ হাসিনা সত্যিই খুব বেকায়দায় পড়েছেন।
চলমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বুঝাবার জন্যেই পিছনের কিছু কথা বললাম। আল্লামা শফী সাহেব বাংলাদেশের একজন বড় মাপের ধর্মীয় গুরু। তাঁর রয়েছে হাজার হাজার ভক্ত। সম্প্রতি তাঁর পুরাণো একটি বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর দলের লোকেরা নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলেছেন। সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের জানা দরকার যে আল্লামা শফি কোরআন ও হাদীসের বাইরে কোন কথা বলতে পারেন না। ধর্মীয় গুরু হিসাবে সেটাই তাঁর সীমানা। আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে আল্লামা শফী ইসলামের দৃষ্টিতে নারী অধিকার কি এবং এর সীমা পরিসীমা কি তা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী জানেন। আমাদের দেশেতো ইসলাম ষম্পর্কে কিছু না জানলেও রাস্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী,প্রধান বিচারপতি,প্রধান সেনাপতি ও প্রধান সচীব হতে কোন বাধা নেই। কোরআনের না থাকলেই ধর্মমন্ত্রী ও ধর্ম সচীব হওয়া যায়। জেনারেল মইনের কেয়ারটেকার সরকারের আমলে একজন ধর্মমন্ত্রী হয়েছিলেন যাঁর ধর্মজ্ঞান ছিল শূণ্য। বরং তিনি নানা ধরনের ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতেন। তাহলে তাঁকে কেন ধর্মমন্ত্রী করা হলো? কারণ,আমাদের দেশের নেতা নেত্রী ও বড় বড় আমলাদের বেশীর ভাগেরই ধর্মের প্রতি সম্মানবোধ নেই। এ ধরনের লোকেরাই এখন আল্লামা শফী সাহেবকে হেনস্থা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। ইতোমধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্যে মানবন্ধন করছে নারী জাতি। কিছু পুরুষও তাদের সাথে হাত মিলিয়ে মানব বন্ধন করছেন। এদের বেশীর ভাগই ধর্ম সম্পরকে অজ্ঞ ও অনাগ্রহী। এরা সুন্দরী ময়না পাখির মতো। যা শিখিয়ে দেয়া হয় তাই বলতে থাকে। আমাদের দেশে বেশ কিছু নারী আছেন যাঁরা সামাজিক কারণে সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। এদের কোন ধরণের ধর্ম জ্ঞান নেই। এদের অনেকেই আইন ব্যবসা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বড় বড় কোম্পানীর মালিক বা সিনিয়ার লেবেলে চাকুরী করেন। সময় সুযোগ বুঝে এরা সেমিনারে ,গোলটেবিল বৈঠকে মতামত প্রকাশ করেন। আপনারা যে কেউ সিটি কর্পোরেশনের বিবাহ সালিশ আদলতে গিয়ে খোজ নিলে দেখবেন রাজধানীতে ৮০ ভাগ তালাক নোটিশ দিচ্ছেন শিক্ষিত মেয়েরা। নারী অধিকারের নামে আদালতে ৯০ ভাগ মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখবো মনে আমি একবার ড.কামালের ব্লাষ্ট অফিসে গিয়েছিলাম। হিজাব পরা এক মহিলা আমাকে জানালেন,এটা একটা ক্রান্তিকাল বা ট্রানজিশানাল পিরিয়ড। হঠাত্‍ অধিকার পেয়ে মেয়েরা সংসার ভাংছে। সময়ই সব ঠিক করে দিবে। হয়ত চলমান সময়ে কিছু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিছু পরিবার ভেংগে যাচ্ছে। পরে ভদ্র মহিলা আমাকে জানালেন,তাঁরা গরীব মেয়েদের পারিবারিক আইন সহায়তা দিচ্ছেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নিয়ে তাঁরা কাজ করেন না। সিটি কর্পোরেশনে যাঁরা ডিভোর্স বা তালাক নোটিশ দিচ্ছেন তাঁদের সকলেই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শিক্ষিত নারী। বিয়ের ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ৬০ ভাগ বিয়ে ভেংগে যাচ্ছে। এদের বিয়ে হয় মুসলীম বিবাহ আইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে। কাবিনের ১০০ ভাগ শর্তই মানতে হয় ছেলেকে। ছেলেকেই সব শর্ত পূরণের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। মেয়েরা কোন ওয়াদা করেনা। এমন কি তালাকের অধিকারও বর কন্যাকে দান করে। বর্তমান কাবিননামায় মেয়েদের তালাকের কোন প্রবিশন নেই। মেয়েরা সকল ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে বরকে কনের বাড়িতে তুলে নিয়ে যাবে এমন আইন বা বিধি এখনও চালু হয়নি। মুসলীম বিবা্হ ব্যবস্থায় কন্যাকে মোহর দেয়ার বিধি রয়েছে এবং সে মোহর বাসর রাতের আগেই নগদ পরিশোধ করতে হয়। শিক্ষিত অশিক্ষিত কোন মেয়েই এ মোহর আদায় করেনা বা বরপক্ষ দিতে চায়না। মোহর পরিশোধ না করলে নৈতিকতার দিক থেকে বিবাহ শুদ্ধ নয়। শিক্ষিত মেয়েরা তালাকের সময় মোহর আদায় করে। অশিক্ষিতদের কাবিনও থাকেনা। অশিক্ষিত গরীব মেয়েরা পুরুষ কর্তৃক অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে কথায় কথায় তালাকের উঠে। কিন্তু শিক্ষিত সমাজে ছেলেরা নারী কর্তৃক নির্যাতিত। কিন্তু লজ্জায় বা সামাজিক অবস্থান বা পারিবারিক মর্যাদার কথা ভেবে ছেলেরা এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনা। আমি বেশ কিছু নামীদামী পরিবারকে চিনি যাঁদের মেয়েরা তিন চারবার তালাক দিচ্ছে আর বিয়ে করছে। এরা এখন আর পরিবার বা বিয়ে বন্ধনকে মানতে চায়না। উচ্চ শিক্ষিত বেশ কিছু মেয়ে উচ্চ মোহর নিয়ে ধনী পরিবারে বিয়ে করে। তালাক দিয়ে মোহর আদায় করে ধনী হয়েছে।বাংলাদেশের নারী জগতে এখন দুটি অবস্থ দৃশ্যমান। গরীব অশিক্ষিত নারীরা সীমাহীন নির্যাতনের শিকার। এমন সমাজের নেতারাও নারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে। আমরা নিয়মিত খবর পাই স্বামীরা তাঁদের উপর অত্যাচার করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ির লোকজন দলবেঁধে কন্যার উপর নানা বাহানায় অত্যাচার করে। বহুক্ষেত্রে হত্যা করা হয়। শিক্ষা ছাড়া সমাজের এ অবস্থার পরিবর্তন হবেনা।
গৃহকর্মীদের অবস্থাও খুবই করুণ। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর নারীরাই শিশুকন্যা ও নারী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চালায়। এসব খবরও প্রতিদিন আসছে। তবে খবরের কাগজে ছাপা হয় ২০ ভাগ খবর। শিশু কন্যা ও নারী শ্রমিকরা গৃহকর্তা দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ইদানিং বেশকিছু খবর এসেছে স্কুলের পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে। অনেক শিক্ষক অশ্লীল দৃশ্যগুলো ভিডিও করে মেয়েদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।গরীব অসহায় নারীদের উপর নানা ভাবে নানা জায়গায় নির্যাতন এদেশের সরকার রাস্ট্রের ব্যর্থতা। যাঁরা নিজেদের সুশীল সমাজের সদস্য মনে করেন তাঁদের ও ব্যর্থতা। বহুযুগ ধরে নারীদের উপর এ অত্যাচার নির্যাতন চলে আসছে।
অপরদিকে জাগরিত , আলোকিত বলে পরিচিত কিছু নারী আছেন যাঁরা সমাজের উপরের স্তরে বাস করেন।তথাকথিত প্রগতিশীল বলে নিজেদের জাহির করেন এমন নারীরা সম অধিকারের নামে বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও চিরায়ত ঐতিহ্যে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন। এরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করেন,কিন্তু কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত নারী অধিকার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ইদানিংতো উচ্চ মর্যাদার এক শ্রেণীর নারী পুরুষ ইসলমের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে। কথাবার্তা শুনে মনে হয় তাঁরা সকলেই ইসলামিক স্কলার। ইসলামের নামে ইসলাম বিরোধী নানা ধরণের কথাবার্তা বলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী ঘরাণার বুদ্ধিজীবিরা সবার আগে ও প্রথম কাতারে রয়েছেন। এরা সকলেই দলবেঁধে কোরআন হাদীসের অপব্যাখ্যা করে চলেছেন। এক সময় ইহুদীরা নিজের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করে যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যাখ্যা করতো। রাসুল(সা) এর যুগেও কিছু মোনাফেক ছিল যাঁরা মুসলমানদের কাছে বলতো আমরা খাঁটি মুসলমান। আবার মোনাফেকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলতো,আমরা মুসলমানদের ঠকাবার জন্যেই ওদের কাছে যাই। আমাদের দেশে মোনাফেকরা সর্বত্রই প্রথম কাতারে। কিন্তু ওদের কিছু বলতে পারবেননা। ধেই ধেই করে তেড়ে আসবে আপনাকে পিটাবার জন্যে। পবিত্র কালামে পাকে মহান আল্লাহতায়ালা নারীদের মর্যাদা, জগতে তাঁদের অধিকার, সংসারে তাঁদের ভুমিকা, তাদের পোষাক আশাক পর্দা পুশিদা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের কন্যারা বা বোনেরা, স্ত্রী বা মায়েরা যাঁরা অতি আধুনিক, অতি উচ্ছ শিক্ষিত বা ক্ষমতাবান বা ধনবান নিজেদের কঠিন মুসলমান ভাবলেও কোরআন সম্পর্কে তাঁদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই। তাঁরা বুক ফুলিয়ে চলেন, তরুণীরা টিশার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরেন, অফিসে ডালতে অনেকেই কোট প্যান্ট পরেন, শাড়ী পরে অনেকেই নাভি দেখান আর স্লিভলেস বুক পিট খোলা ব্লাউজ পরেন। তাঁরাই আবার নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন। অনেকেই ক্লাবেও যান পার্টিতে। গভীর রাতে বাড়ি ফিরেন। অনেকেই বলবেন এমন নামীদামী জাগরিত নারীর সংখ্যা খুবই কম। আমিও তাঁদের সাথে একমত। কিন্তু তাঁরা নেত্রী ও প্রভাবশালী।
এঁরাই আল্লামা শফী সাহেবের বিরুদ্ধে আজে বাজে বলছেন। নারী অধিকার সম্পর্কে তাঁরা যা বলেন বা বলে চলেছেন তা ১০০ ভাগই কোরআন সুন্নাহ বিরোধী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর সুযোগ্য পুত্র জয় নাসার বা খৃষ্টান বিয়ে করেছেন,ইহুদী বিয়ে করেননি। এতে নাকি ধর্মে কোন অসুবিধা নেই। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি মদীনা সনদ মোতাবেক দেশ চালাবেন। আসলে তিনি এসব না জেনেই বলে থাকেন। খৃষ্টানরা কিন্তু আমাদের রাসুলকে(সা) মানেনা স্বীকারও করেনা। আল কোরআনের আগমনের সাথে সাথে অতীতের কিতাব ও শরীয়ত স্থগিত হয়ে গেছে। একজন মুসলমানের সাথে একজন অমুসলমানের সাথে বিয়ে হতে পারেনা। সৈয়দ আশরাফ সাহেবতো স্বীকারই করেছেন তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন। শুনেছি তিনি নিজেও বিয়ে করেছেন একজন অমুসলমান নারীকে বিয়ে করেন। তাই অনুরোধ করবো ক্ষমতার জোরে এমন কথা বলবেননা যা আপনাদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।
লেখক: কবিও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


হেফাজত ও শাহবাগ রাজনীতির নতুন অংক / এরশাদ মজুমদার

বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরে হেফাজত একটা শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। আমার যতদূর মনে পড়ে আমরা প্রথম হেফাজতের নাম শুনেছি ফতোয়া বিষয়ক আদালতের রায়ের পরে। ওই রায়ের সমালোচনা করে তখন আমিও একটি কলাম লিখেছিলাম। ফতোয়া ইসলামিক আইনের একটি শাখা। বিচারপতি রাব্বানী সাহেব ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হোক। তখনি প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ফতোয়া বিষয়ে অনেক বইও প্রকাশিত হয়েছিল। তখন হেফাজতই ওই ফতোয়া বিষয়ক রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। এখন হেফাজত নামটি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। সরকার এবং আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ঘরে ঘরে পরিচিত করাবার কাজটি করেছে। প্রথম দিকে হেফাজতকে নিজেদের দলে টানার জন্যে বা সরকারের কাজে লাগাবার জন্যে আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা তদবীর করেছে। হেফাজতকে দুইবার রাজধানীতে গণ জমায়েত করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। প্রথমবার ছিল ৬ই এপ্রিল,আর দ্বিতীয়বার ছিল ৫ই মে। হেফাজত একমাস সময় নিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সমাবেশ করেছে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করেছে কেন্দ্রের নির্দেশে।
ক’দিন আগে মানব জমিনে প্রকাশ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকার আগামী নির্বাচনে হেফাজতকে ৫০টি সিট দিতে চেয়েছে। কিন্তু হেফাজত নেতাদের কথা হলো তাঁরা কোন রাজনৈতিক দল নয়, রাজনীতিতেই জড়িত হতে চাননা। হেফাজত নেতারা অবশ্য বার বার বলেছেন যে, তাঁরা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চান না বা কাউকে যমতা থেকে নামাতে চান না। তাঁরা ইসলামিক বিধান বা শরিয়া মোতাবেক সংবিধানের সংশোধনের পরিবর্তন চান। সেই সুবাদেই তাঁরা ১৩ দফা দিয়েছেন। সেই ১৩ দফায় রাজনীতির কোন কথা নেই।
পর্দার অন্তরালে সরকার হেফাজতের সাথে সমঝোতা বা হেফাজতকে বাগে আনতে না পেরে দেশী বিদেশী বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেই সরকার ৫ই মে গভীর রাতে সকল আলো নিভিয়ে দিয়ে হেফজতকে আক্রমন করে কয়েক হাজার পুলিশ,রেব ও আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে। সরকার বা তাঁর বিদেশী বন্ধুরা গভীর রাতের এই অপারেশনের নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট’। আঘাত হানার কায়দাটা ছিল অনেকটা ২৫শে মার্চের রাতের অপরেশনের মতো। ২৫শে মার্চ রাতে বংগবন্ধুকে আটক করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয় ও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ৫ই মে রাতেও একই কায়দা বা একই পদ্ধতি অনুসরন করেছে বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সরকার হোফাজতকে উচ্ছেদ করার জন্যে। সকালবেলা নগরবাসী দেখলো শাপলা চত্বরে যে কিছু হয়েছে তার কোন নিশানা নেই। মনে হয়েছে গত রাতে ওখানে কিছুই হয়নি। সরকারী বাহিনীর আক্রমণের মূল কেন্দ্র ছিল শাপলা চত্বর। আর হেফাজতের নেতাদের আটক করা হয় লালবাগে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে সারা ঢাকা নগরে। ২৬ ও ২৭শে মার্চ সকালে দেখা গেছে বহু বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বহু মানুষের লাশ পড়ে আছে। হল গুলোতেও ছাত্র শিক্ষকদের লাশ পাওয়া গেছে। পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালীদের মুসলমান জেনেও দমনের জন্যে আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু শাপলা চত্বরের ঘটনাটা আজও জনসাধারনের কাছে অজানা রয়ে গেছে। সরকার বলছে ওখানে কিছুই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,হেফাজতের লোকেরা গায়ে রং মেখে মরার ভান করেছে । পুলিশ কমিশনার বলেছেন,সে রাতে কোন লোক মারা যায়নি। শেখ সেলিম বলেছেন,সে রাতে একজন লোকও মারা যায়নি। কেউ মারা গেছে তা প্রমান করতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। সুরঞ্জিত সেন বলেছেন, হুজুরেরা মার খেয়ে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলতে বলতে পালিয়ে গেছেন। সুরঞ্জিত বাবু হয়ত সুবহানাল্লাহর অর্থ জানেন না বলেই অমন মশকরা করেছেন। এরপরে আওয়ামী লীগের হানিফ সাহেব, আশরাফ সাহেব, মখা সাহেব, কামরুল সাহেব ,দিপুমনি সহ আরও অনেকে ৫ই মে’র অপারেশন নিয়ে মজার মজার কথা বলেছেন। কিন্তু দেশবাসী তা একবিন্দুও বিশ্বাস করেননি। বার বার বলার পরেও সরকার একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। সে রাতে কি হয়েছে স্থানীয় ও বিদেশী মিডিয়ার বদৌলতে দেশবাসী অনেক কিছুই দেখেছে ও জানতে পেরেছে। অপারেশনকে সরাসরি দেখাবার অপরাধে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি রাত সাড়ে তিনটার দিকে হঠাত্‍ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার বিরোধি শক্ত অবস্থান নেয়ায় এর আগে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এর সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। জগতের কোন সম্পাদককে আটক করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়নি। কাগজ বন্ধ করা ও সম্পাদকদের হেনস্থা করা আওয়ামী লীগের পুরাণো অভ্যাস। বংগবন্ধুও চারটি ছাড়া সব কাগজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা দৈনিক বাংলা ও বিচিত্রা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠণ হেফাজতকে দমন করলে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা সরকার বা আওয়ামী লীগ ভাল করে আগে থেকে বিশ্লেষন বা অনুধাবন করেনি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। একই ভাবে সরকার না বুঝে কয়েক মাস ধরে শাহবাগীদের পিজি ও বারডেমের চৌমোহনায় মঞ্চ বানিয়ে দিয়ে নানা ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবান্বিত করার কাজে ব্যবহার করেছে। লক্ষ্য অর্জনের পর বা সমালোচনা দেখে সরকার পুলিশ দিয়ে তথাকথিত ‘সরকার জাগরণ’মঞ্চ গুড়িয়ে দিয়েছে। জাগরণ নেতাদের কিছুদিনের জন্যে হলেও গা ঢাকা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এখন আবার ওই মঞ্চ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে আগের মতো জৌলুষ নেই। তবুও তারা শাহবাগের চৌমোহানীতে মিলিত হচ্ছে। খবর বেরিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা নাকি শাহবাগীদের তাড়িয়ে দিয়েছে। এরশাদ সাহেব সেজন্যে ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। পরে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রনেতা এরশাদ সাহেবকে এজন্যে গালাগাল দিয়েছেন। শাহবাগীদের নিয়ে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী নানা কথা হয়েছে। ওদের অনেকেই নাস্তিক বলে গালাগাল দিয়েছে। পরে দেশবাসী ভাবতে শুরু করেছে ওই মজমা আসলেই নাস্তিকদেরই। ওখানে নাকি ছেলে মেয়েরা দলবেঁধে রাত্রি যাপন করতো সে নিয়ে ও মজাদার গল্প বেরিয়েছে। সরকার ওদের পুলিশ দিয়ে প্রটেকশন দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সভা করার জন্যে সুযোগ করে দিয়েছে। ইমরান সরকার সহ কয়েকজন শাহবাগী নেতাকে জামাই আদরে খেদমত করেছে। ওরা নাকি নিরাপত্তার কারণে রূপসী বাংলায় রাত্রি যাপন করতো। সে সময়ে নাকি ওই মঞ্চের জন্যে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো খাজানা খুলে দিয়েছিল। বিশেষ করে স্কয়ার ও প্রাণ গ্রুপ এ ব্যাপারে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে। শুনেছি স্কয়ার পরিবারে সর্বধর্মের অনুশীলন করা হয়। তাঁরা মহান আকবর বাদশাহর ভক্ত। বাদশাহ আকবরের অন্দর মহলে বেগম সাহেবারা যে যার ধর্ম পালনের সুযোগ পেতেন। অন্দর মহলে দেবদেবীর পুজামন্ডপও থাকতো। প্রাণ গ্রুপের বড় সাহেব নাকি কাদিয়ানী মন্ত্রে বিশ্বাসী। আদর্শগত ভাবে শাহবাগীরাও নাকি সেক্যুলার ধর্মে বিশ্বাস করেন। এটাও একটা পুরাণো ধর্ম। হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ খৃষ্টান সবাই নাকি সেক্যুলার হতে পারে। অনেকেই হয়ত না বুঝে সেক্যুলার হতে ভালবাসেন। সমাজে দামী দামী লোকেরা সেক্যুলার। এমন কি আমাদের প্রধানমন্ত্রী বংগবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেন। তিনি এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা সবাই মনোরম ধর্ম সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেন। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ(ধর্মীয়নেতা)আশরাফ সাহেব নাকি কোন ধর্মেই বিশ্বাস করেন না। তিনি শুধুই একজন সেক্যুলারিষ্ট।
সেক্যুলারিজম সম্পর্কে আমি এর আগেও বহুবার লিখেছি। বাংলাদেশে এই ইংরেজী শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ। কিন্তু তবুও বিষয়টা খোলসা হয়নি। এর মানে কি যিনি কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না? ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা মানে তিনি কোন ধর্মে নেই। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বলেন,তাঁরা ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয় মনে করেন। তাই রাস্ট্র বা সমাজ ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবে। শ্লোগান হলো, ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার। এ থিউরী দ্বারা ধর্মীয় মেজরিটি বা সংখ্যাগরিষ্টের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়েছে। এর মানে রাস্ট্রের কাছে ৯০ আর এক এর মূল্য সমান। এসব কথা যারা বলেন তাঁরা হচ্ছেন জ্ঞানপাপী ভন্ড। এরা রাজনীতি ও সমাজনীতিতে এদের কোন অবদান নেই। এরা শুধু কথায় আছে, কাজে নাই।এদের বেশীর ভাগই আওয়ামী লীগের মাথায় প্রবেশ করেছে। এর বাইরে যারা আছে তারা ভারতের ব্রিফিং নিয়ে চলে। দামী লোক হয়ে সমাজের মথায় বসে থাকে। শুধুমাত্র প্রয়োজনে খবরের কাগজে বিবৃতি দিয়ে হুক্কা হুয়া করে। এদের কারণেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইমেজে ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি মন্ত্রী হয়ে বসে আসেন যাদের কোন ভোট নাই। এদের দল আছে,কিন্তু দলে লোক নাই। এরা বিবৃতিজীবী। খবরের কাগজ ছাড়া এদের কোথাও দেখা যায়না। খবরের কাগজওয়ালারা এদের একটু বেশী গুরুত্ব দেয়। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী বলতেন,খবরের কাগজের দরকার নাই। হাটে বাজারে নিউজপ্রিন্টের লীফলেট বিতরন করো,দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগাও। মাইকের বদলে চুংগা ফুকিয়ে তোমার কথা প্রচার করো। জনগণের কথা সঠিক ভাবে বলতে পারলে ও তোমার কথা শুনবেই। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ছিল চুংগা আর লীফলেটের নির্বাচন। এখন আর সেদিন নাই। এখন রাজনীতিতে অঢেল টাকার খেলা। ৫৪ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হতে খরচ হয়েছিল তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এখন নাকি খরচ হয় তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা। একবার কেউ এমপি হলে বাকি জীবনের জন্যে তিনি ধনী হয়ে যান। আইনি পথেই তিনি একটা জমির প্লট ও শুল্কমুক্ত গাড়ি পান। এতেই তাঁর দুই তিন কোটি টাকা আয় হয়ে যায়। রাজনীতির চেহারা এখন একেবারেই বদলে গেছে।
গণ জাগরণ মঞ্চ যা সরকার জাগরণের জন্যে আত্ম প্রকাশ করেছিল এখন তা সরকারের বা আওয়ামী লীগের বোঝায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই বলেন, এই মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দিল্লীর নির্দেশেই। দিল্লীর কাগজে সে রকম ইংগিতই পাওয়া যায়। দিল্লীর রাস্ট্রপতি প্রণব বাবু ওই মঞ্চের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন তাঁর মন ওই মঞ্চে পড়ে থাকে। তিনি আদালতকে বলেছিলেন রায় দেয়ার সময় মঞ্চ ও জন রায়ের কথা মনে রাখার জন্যে। এ ছাড়াও তিনি নাস্তিক একটা ছেলে,যে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে কুত্‍সা রটনা করেছে সে নিহত হওয়ার তাকে শহীদের মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন। আরও যারা এ ধরণের অপরাধ করেছে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। একটি ছেলে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বলার অপরাধে আদালত সাত বছর জেল দিয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ জানতে পেরেছে এ সরকারের আমলে আল্লাহ ও নবী রাসুলদের বিরুদ্ধে বললে কোন শাস্তি হয়না। ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী নিজে, তাঁর দল ও মিত্ররা কোমর বেঁধে ইসলামিক স্কলার আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে নানা ধরণের কুত্‍সা রটনা করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে নানা ধরণের অশ্লীল কথা বের হচ্ছে।
সিটি নির্বাচন গুলোতে হেরে তিনি সংযত হবেন এটা দেশবাসীর আশা ছিল। কিন্তু না, তিনি এখন আরও ক্ষ্যাপে গিয়ে ভোটারদের গালাগাল দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন ভোটাররা অসত্‍ লোকদের ভোট দিচ্ছে। তিনি বলেছেন,আমরা চোর ধরেছি বলে লোকজন আমাদের চোর বলছে। তিনি বলেছেন, ঈদের পরে বিদ্যুর সরবারহ বন্ধ করে দিয়ে জনগণকে শাস্তি দিবেন। কারণ তিনি বিদ্যুত উত্‍পাদন বাড়াবার পরেও দেশবাসী তাঁকে বা তাঁর দলকে ভোট দিচ্ছেনা। এতে তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন মনে। লোকজন বলছেন,সরকার জনগণের টাকা দিয়ে বিদ্যুত উত্‍পাদন বাড়িয়েছেন। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ সরকার বদলাতে পারে, দল বদলাতে পারে। এটা তাদের অধিকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের শাস্তি দেয়ার কথা বলতে পারেন কি? নির্বাচনে কেন হেরেছে সরকারী দল সে বিশ্লেষণ প্রধানমন্ত্রী করেছেন বলে মনে হয়না। মূল কারণের দিকে নজর না দিয়ে তিনি অন্যদিকে নজর দিয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উন্নয়নের জোয়ারের জন্যে ঢোল বাজাবেন। এজন্যে তাঁর পক্ষে ‘আপ খোরাকী বিনা বেতনে’ কাজ করার জন্যে বহু ত্যাগী মানুষ আছেন। এখনতো ঢোল বাজাবার প্রধান হাতিয়ার হলো টিভি ও খবরের কাগজ। এসব অস্ত্র বা যন্ত্র তাঁর পক্ষে আছে। তাঁর পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটনী দুইটনী ওজনের বুদ্ধিজীবীরা আছেন। তাঁরা গোত্রীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করেন। আগেই বলেছি,২০০৮ সালে যাঁরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন তাঁরা তাঁকে মানে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় বসাবেন এমনটা বিশ্বাস করা উচিত্‍ হবেনা। বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত সব সময় উতলা থাকে। এবার হয়ত ভারতও নিজের দেশের স্বার্থে মত বদলাতে পারে। সে দেশের কাগজপত্র দেখে তাই মনে হচ্ছে। গণ জাগরণ বা হেফাজত সরকারের জন্যে বুমেরাং হয়ে গেছে। সরকারের সবচেয়ে বেশী নির্বাচনী ক্ষতি করেছে গণ জাগরণ মঞ্চ। লোকে মনে করে এটা নাস্তিকদের মঞ্চ। সে মঞ্চের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সরকার। এর মানে সরকার নাস্তিকদের পক্ষে। সুতরাং এই দল ও সরকার মুসলমানদের ভোট পেতে পারেনা। তার উপরে রয়েছে হেফাজতের সাথে সরকারের ব্যবহার। হেফাজত এখন বাংলাদেশে ইসলামের প্রতীক হয়ে গেছে। সেই সংগঠণের উপরে সরকার হামলা চালিয়েছে রাতের অন্ধকারে। দেশবাসী ও বিদেশীদের ধারণা সে রাতে শাপলা চত্বরে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার এ অভিযোগ থেকে নিজে মুক্ত করতে পারেনি। বরং সরকারী লোকেরা চিত্‍কার করে বলছে সে রাতে কিছুই হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ দুটো বিষয়ই হবে প্রধান আলোচনার বিষয়।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


Amazing Statistical Data in AlQuran By Dr.Tariq Al Swaidan
_________________________________________________________________

Very interesting findings of Dr. Tariq Al Swaidan might grasp your
attention:

Dr.Tariq Al Swaidan discovered some verses in the Holy Qur’an that
mention one thing is equal to another, i.e. men are equal to women.
Although this makes sense grammatically, the astonishing fact is
that
the number of times the word man appears in the Holy Qur’an is 24
and
number of times the word woman appears is also 24, therefore not only
is
this phrase correct in the grammatical sense but also true
mathematically, i.e. 24 = 24.

Upon further analysis of various verses, he discovered that this is
consistent throughout the whole Holy Qur’an where it says one thing
is
like another. See below for astonishing result of the words
mentioned
number of times in Arabic Holy Qur’an

Dunia (one name for life) 115 .

Aakhirat (one name for the life after this world) 115

Malaika (Angels) 88 . Shayteen (Satan) 88

Life 145 …. Death 145

Benefit 50 . Corrupt 50

People 50 .. Messengers 50

Eblees (king of devils) 11 . Seek refuge from Eblees 11

Museebah (calamity) 75 . Thanks 75

Spending (Sadaqah) 73 . Satisfaction 73

People who are mislead 17 . Dead people 17

Muslimeen 41 . Jihad 41

Gold 8 . Easy life 8

Magic 60 . Fitnah (dissuasion, misleading) 60

Zakat (Taxes Muslims pay to the poor) 32 .

Barakah (Increasing or blessings of wealth) 32

Mind 49 . Noor 49

Tongue 25 . Sermon 25

Desite 8 . Fear 8

Speaking publicly 18 . Publicising 18

Hardship 114 …. Patience 114

Muhammed 4 . Sharee’ah ( Muhammed’s teachings) 4

Man 24 . Woman 24

And amazingly enough have a look how many times the following words
appear:

Salat 5 , Month 12, Day 365 ,

Sea 32, Land 13

Sea + land = 32 + 13 = 45

Sea = 32/45*100 = 71.111111111%

Land = 13/45*100 = 28.88888889%

Sea + land = 100% – AMAZING!!!

Modern science has only recently proven that the water covers
71.111% of the earth, while the land covers 28.889%. Is this a
coincidence? Question is that Who taught Prophet Muhammed (PBUH) all
this? None other than ALMIGHTY ALLAH taught him & Also Known as
ILME-GAYAB…

Aayah 87 of Suraa (Chapter) Al-Anbia para 17 :

LA ILAHA ILA ANTA SUBHANAKA INI KUNTU MINA ZALIMEEN.

I request u to send this email to everyone u know and let them know
this
too….

Read Full Post »


কালো টাকার পিতা মাতা ও জন্মের ইতিহাস / এরশাদ মজুমদার

কালো টাকা, কালো বাজার, কালো অর্থনীতির কথা শুনে আসছি কয়েক যুগ ধরে। বেআইনী বা কালো বাজারে অর্জিত টাকাকে কালো টাকা বলা হয়। বেআইনী বাজার বা জগত হচ্ছে যে বাজার আইনগত ভাবে স্বীকৃত নয়। চুরি ডাকাতি, ছিনতাই,চাঁদাবাজি,ঘুষ ইত্যাদি এক রকম পদ্ধতি যার মাধ্যমে কালো টাকা অর্জিত হয়। বাংলাদেশের মতো দেশ গুলোতে ঘুষ বিরাট একটা বাণিজ্য। সরকারী চাকুরীতে প্রায় ৯৯ ভাগ লোক ঘুষ খায়। পুলিশের ঘুষ খাওয়াটা বহুল প্রচারিত। বোধ হয় বৃটিশ আমল থেকেই। ধীরে ধীরে ঘুষ খাওয়াটা সকল সরকারী অফিসে ছড়িয়ে পড়ে। এখন ঘুষ খাওয়াটা তেমন লজ্জা বা শরমের বিষয় নয়। অর্থের লোভে মানুষ ওজনে কম দেয়,খাদ্যে ভেজাল মিশায়,ইমারত নির্মানে ভেজাল দেয়, নিজের বাড়ি বানাতেও ভেজাল দেয় এবং পরে সে ঘর ভেংগে নিজেরাই মারা যায়। নিজের খাদ্যে ভেজাল দিয়ে নিজেই খেয়ে মারা যায়। জাল নোট ছাপিয়ে পরে নিজেই সেই জাল নোটের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়। সরকারের বড় বড় কাজে বড় দুর্ণীতি হয়। শতকোটি টাকার কালো টাকা জন্ম নেয়। যাঁরা বড় মানুষ মানে মন্ত্রী সচিব ধনী প্রভাবশালী রাজনীতিক তাঁরা সবাই অঘোষিত বা অপ্রদর্শিত টাকা বিদেশে রাখেন। তাঁদের দুদক বা এনবিআর পাকড়াও করতে পারেনা। এমন কি ইদানিং সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী,আইনজীবী,ডাক্তার, কবিরাজ,শিক্ষক সকল পেশাজীবীর কাছেই কিছু কিছু অপ্রদর্শিত টাকার জন্ম নেয়। সাংবাদিক,কবি,লেখক ও বুদ্ধিজীবীর কাছে হয়ত কালো টাকার পরিমান হয়ত একেবারেই নগণ্য। কিন্তু কমবেশী আছে। দেশে বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই টিআইন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশান নাম্বার নেই। কারণ,এটা করতে ঝামেলা। সরকারের কোন ফি নেই,তবুও এক/দুই হাজার টাকা হাত খরচ লাগে।
বাজেটের সাইজ ৪২ বছরে বাড়তে বাড়তে এখন দুই লাখ ৩০ হাজার কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সে হারে আয় কর বাড়েনি। ধনী, উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা আয়কর দিতে চান না। যদিও কিছু দেন তাও লুকোচুরি। উকিলকে বেশী করে ফি দেন অথবা আয়কর বিভাগের লোকদের ঘুষ দিয়ে আয়কর কমিয়ে দেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে মানে শুল্ক বা করের ক্ষেত্রে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। একেবারেই পুকুর চুরি। আমাদের দেশের ধনীরা রাস্ট্রকে গরীব করে নিজেরা ধনী হয়েছে। রাস্ট্র গরীব থাকাতে দেশের সাধারন মানুষও গরীব রয়ে গেছে। আর এই সুযোগে ধনীরা রাস্ট্রের মালিক হয়ে বসে আছেন। রাজনীতিতে তাঁদের প্রচন্ড দাপট, সংসদে দাপট, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় দাপট। তাঁরা এখন হাসপাতাল,বিশ্ববিদ্যালয়,ব্যান্ক বীমার মালিক। তাঁদের পুঁজির উত্‍স কি? উত্‍স হচ্ছে রাস্ট্রীয় কোষাগারকে লুট করা। আমি সারাজীবন পুঁজির বিকাশের পক্ষে লিখেছি। বাংগালী ব্যবসায়ীদের কাছে তেমন পুঁজি নেই,তাঁরা কেমন করে শিল্প কারখানা করবে? ফলে পাকিস্তান আমলেই মানে ৬০ সালের পর থেকেই বাংগালী ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুযোগ দেয়া শুরু হলো। সে সময়ে অনেক বাংগালী অতি অল্প পুঁজিতে ২৫০ লুমের জুটমিল স্থাপন করেছেন। এক কোটি ৬০ লাখ টাকার মিল করেছেন ২০/২৫ লাখটাকা দিয়ে। সে সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইষ্টার্ণ মার্কেন্টাইল ব্যান্ক ও ইষ্টার্ণ ব্যান্কিং কর্পোরেশন। যা এখন পুবালী ও উত্তরা ব্যান্ক নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ হওয়ার পর প্রথম বেসরকারী ব্যান্ক ন্যাশনাল ব্যান্ক স্থাপিত হয় ১৯৮৩ সালে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ব্যান্কার মুজিবুল হায়দার চৌধুরী। এর আগে তথাকথিত সমাজতন্ত্রের নামে লুটপাটের অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে। সেই সুযোগেও বেশ কিছু লোক সরকারী সম্পদ লুট করে ধনী হয়ে গেছেন। প্রথম বেসরকারী ব্যান্ক ন্যাশনাল ব্যান্ক প্রতিষ্ঠার সময় উদ্যোক্তাদের কাছে তেমন বড় কোন পুঁজি ছিলনা। তিন কোটি টাকা যোগাড় করতে অনেক চেষ্টা তদবির করতে হয়েছে। যতদূর মনে পড়ে ন্যাশনাল প্রথম বোর্ডের পরিচালক ছিলেন ২৬জন। অনেকেই দশ লাখ টাকা দিয়ে পরিচালক হয়েছেন। অনেকে ভুয়া চেক দিয়ে পরিচালক হয়েছেন। তখন কেন্দ্রীয় ব্যান্কও তেমন নিয়ম কানুন জানতোনা।তিন কোটি টাকা জমা দিতে হবে এই ছিল নির্দেশ। কিন্তু কিভাবে? নগদ, পেঅর্ডার,ড্রাফট এসব কিছুই নির্দেশে বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে অমুকদিন বেলা তিনটার ভিতর আবেদনপত্র আর তিনকোটি টাকা জমা দিতে হবে। ফলে অনেকেই চেক দিয়েছেন,কিন্তু একাউন্টে টাকা ছিলনা। হায়দার চৌধুরী সাহেবের লক্ষ্য ছিল মধ্যবিত্তদের দিয়ে ব্যান্ক প্রতিষ্ঠা করা।
এসব হচ্ছে প্রাসংগিক কথা বা পেছনের কথা। বিষয়টা হচ্ছে অপ্রদর্শিত টাকা দিয়ে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা। অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবনায় এ সুযোগ রেখেছিলেন। পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী,অর্থনীতিবিদ ও মিডিয়ার বন্ধুরা অপ্রদর্শিত অর্থকে কালো টাকা বলে নাম ধরে ডাকেন। এটা নাকি খুব খারাপ জিনিষ। শুরুতেই বলেছি, অপ্রদর্শিত অর্ত বা কালো টাকা প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে জন্ম নিচ্ছে। এটা বন্ধ করার তেমন কোন শক্তিশালী উদ্যোগ কোন সরকারই গ্রহন করেননি। বাজেট আসলেই এ নিয়ে সব মহলে গরম গরম কথার ফুলঝুরি শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা কালো টাকা নিয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার। সারা বছর তাঁরা ঘুষ, দুর্ণীতি, আমদানী রফতানীতে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং,সীমান্তের চোরা চালানী নিয়ে একটি কথাও বলেননা। অথচ এসব পথে ২৪ ঘন্টা কালো টাকার জন্ম হচ্ছে। শুনেছি , কালো টাকা সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ হয় চলচ্চিত্র শিল্পে। পুলিশ, আয়কর ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে নাকি কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তাঁদের অনেকেই নাকি সড়ক পরিবহনে এই টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। পাকিস্তান আমল থেকে শুনে আসছি পুলিশ সার্জেন্টরাই এই খাতে বেশী বিনিয়োগ করেন। নামে বেনামে এদেরই সম্পদ বেশী। এসব টাকা ও সম্পদের হিসাব নিতে গেলে ব্যান্কে ডিপোজিট কমে যাবে। আমি বার বার লিখেছি, বিবাহ বন্ধনের বাইরে নারী-পুরুষের সন্তান জন্ম নিলে তাকে হত্যা করা যায়না। পশ্চিমে এটা বৈধ। স্বীকার করলে বা মেনে নিলে সমাজ বা আইন কোন বাধা দেয়না। আমাদের দেশে এটা অবৈধ, অসামাজিক ও বেআইনী। তাই এসব সন্তানদের হত্যা করা হয়।
অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা অবৈধ ও বেআইনী। কিন্তু একে হত্যা করা যায়না। এর ক্ষমতা অনেক বেশী। কালো টাকার মালিকরা শক্তিধর ও প্রভাবশালী। নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব সীমা্হীন। কালো টাকার মালিকরা সংসদে সদস্য হন, রেডিও, টিভি ও পত্রিকার মালিক হন, এমন কি কালো টাকা দিয়ে মাদ্রাসা মক্তব, মসজিদ ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে অনেকেই দানবীর সাজেন। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ শুদ্ধ বা কর পরিশোধীত টাকার চেয়ে বেশী। আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবেনা। কিন্তু শেয়ার বাজার বা শিল্প কারখানায় কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ করা যাবে। অর্থমন্ত্রী চেম্বার ও শেয়ার বাজারের নেতাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। শুনা যায়, শেয়ার বাজারে লুটপাট করে যারা সাধারন মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা হজম করে ফেলেছেন তারাই পরামর্শ দিয়েছেন অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার জন্যে।
সরকার বহুবার স্বীকার করেছেন যে, জিডিপি ও সম্পাদ সৃষ্টির ব্যাপারে আবাসন শিল্পের অবদান ১৫ পারসেন্ট। এর সাথে জড়িত আছে শত শত লিংকেজ কারখানা শিল্প। আবাসনে সরাসরি কাজ করেন ৩০ লাখের মতো নির্মান শ্রমিক। লিংকেজ শিল্প সহ হিসাব করলে দেখা যাবে আরও ৩০ লাখ শ্রমি এর সাথে জড়িত। সরকার যেখানে আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারছেনা তখন আবাসন শিল্পোক্তারা জনগণের আবাসন চাহিদা পূরণ করছেন। ক’দিন আগে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের নতুন লোগো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেব সাধারন মানুষের জন্যে আবাসন নির্মানের আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর এ আবেদন খুবই ন্যায়সংগত। তাঁর আবেদনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি। তবে একাজটি সরকারের সহযোগিতা ১০০ ভাগ প্রয়োজন। সারাদেশে জমির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশে জমির দাম হংকংয়ের চেয়ে বেশী। বেশী দামে জমি কিনে বা জমি শেয়ার করে ফ্ল্যাটের দাম সাধারন মানুষ ও মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে আনা একেবারেই অসম্ভব। সুতরাং ইনু সাহেব যে কথা বলেছেন তা হলো তাঁর মনের কথা। তা বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের সহযোগিতা ১০০ ভাগ লাগবে। সরকার এখন সস্তায় জমি বরাদ্দ দিচ্ছেন। আমি মনে করি জমি নয়,ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিন। বেসরকারী ডেভেলপারদের জমি বরাদ্দ দিন এবং ফ্ল্যাটের দাম ২০ বছরের কিস্তি নির্ধারন করে ফ্ল্যাটের মূল্য আদায় করুন। এ না হলে রাজধানীতে মধ্যবিত্তরা বসবাস করতে পারবেনা।
কালো বা অপ্রদর্শিত টাকা প্রসংগে আমি বিখ্যাত চীনা নেতা দেঙ শিয়াও পিঙয়ের একটি কোটেশন উল্লেখ করতে চাই। তিনি সমালোচকদের জবাবে বলেছিলেন,বিড়াল কালো কি সাদা তা গুরুত্বপূর্ন নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিড়াল ইঁদুর মারতে পারে কিনা। আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট সাইজের কালো টাকা আছে। তাকে কাজে লাগাতে হবে। কালো টাকা গুলো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের বাইরে চলে গিয়ে বিদেশের অর্থনীতির খেদমত করছে। কালো টাকাকে দেশের ভিতর রাখতে না পারা বা উত্‍পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। একবার বলে দেখুন না পদ্মা সেতুতে কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। কোন প্রশ্ন করা হবেনা। আরও বলুন, বিনিয়াগকৃত অর্থের জন্যে সুদ দেয়া হবে। অথবা পদ্মাসেতুকে পাবলিক কোম্পানীতে রূপান্তরিত করে শেয়ার বাজারে শেয়ার বিক্রি করুন। বিদেশীদের কাছেও শেয়ার বিক্রি করুন।
মধ্যবিত্তের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্যে ৯শ’ থেকে ১২শ’ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত টাকা সুযোগ করে দিন। মধ্যবিত্তের কাছে তেমন কালো বা অপ্রদর্শিত টাকা নেই। যে টাকা তাদের হাতে আছে তা নানা কারণে আয়করের আওতায় আসেনি। অনেক সাদাসিদে মানুষ আছেন তাঁরা আয়কর বিভাগের লোকদের ভয় পায়। প্রবাদ আছে বিড়ালকে ভাংগা ডুলা বা খলই দেখাবেন না। তাই সামান্য কিছু টাকার জন্যে আয়কর ওয়ালাদের ডাকলে সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে। শুধু মাত্র রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের দুর্ণীতির কারণে বহু আয়করের আওতায় আসতে চায়না। যেখানে একটি বিনে পয়সার টিআইএন করতেই দুই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় সেখানে খাতায় একবার নাম উঠলেই সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে। শুরুতেই বলেছি ,কালো টাকার জন্ম হয় সরকারী নিয়ম নীতির কারণে। বিশাল দুর্ণীতির জগত তৈরি হয়েছে সরকারী আইনের কারণে। দুর্ণীতি রোধ হলেই কালো টাকার জন্মপথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আবারে বলছি ,কালো টাকা জনকল্যাণে ব্যবহার করুন। একটি সুন্দর মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশে সাহায্য করুন। যাঁরা এর বিরোধিতা করেন তাঁরা ভন্ড ও জ্ঞানপাপী।
লেখক: কবি ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »


নির্বাচনে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বিষয় / এরশাদ মজুমদার

প্রশ্ন উঠেছে ধর্মকে জাতীয় জীবনে বিশেষ করে নির্বাচনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামনে আনা যা্বে কিনা বা আলোচনা করা যাবে কিনা। চলমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বলছে রাজনীতি বা নির্বাচনে ধর্ম নিয়ে কথা বলা যাবেনা। কেন বা এর কারন কি? উত্তর,ধর্ম খুবই একটা স্পর্শ কাতর বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের ব্যাপারে খুবই ভাবপ্রবন বা কাতর। তাই নির্বাচনে ধর্মকে আলোচনার বিষয় করা যাবেনা। মস্কোপন্থী কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা সেলিম সাহেব বলেছেন,ধর্ম পারলৌকিক বিষয়,ইহলৌকিক বিষয়ে এর ব্যবহার করা যাবেনা। তাঁর কথা ধর্ম রাজনীতির বিষয় হতে পারেনা। আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতা তোফায়েল সাহেব বলেছেন, গাজীপুর নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে,যা সংবিধান পরিপন্থী। বাংলাদেশের সংবিধান ধর্ম নিরপেক্ষ। ইংরেজী শব্দ সেক্যুলার(Secular)অনুবাদ করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ। যা ভুল অনুবাদ। সেক্যুলারের অর্থ হচ্ছে জাগতিক বা ইহলৌকিক। মানে যিনি বা যারা পরলোক বা পারলৌকিক বিষয়ে বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশের নাগরিকরা সবাই নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাস করেন।পরলোকেও বিশ্বাস করেন। তাঁদেরও স্বর্গ নরক আছে। কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসে
বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা ইহলোক পরলোক, রাজনীতি,রাস্ট্রনীতি ,সমাজনীতি সহ সবকিছুকেই সমন্বিত করে একস্থানে উপস্থাপিত করেছে। মদীনার রাস্ট্রই জগতে গণমানুষের প্রথম রাস্ট্র। যখন সারা বিশ্ব সম্রাট,রাজা বাদশাহদের দাপটে কম্পিত তখনই আল্লাহর রাসুল মুহম্মদ(সা) মদীনায় গণমানুষের রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই জগতের প্রথম রাস্ট্র যেখানে ধনী গরীব ও সর্বহারাদের অধিকারকে সংরক্ষন ও সমন্বিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ রাস্ট্রে আশরাফ(অভিজাত) আতরাফ(সাধারন), ধনী গরীব এর কোন মানদন্ড থাকবেনা। সুনাগরিকের একমাত্র মানদন্ড আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। যেমন হজরত বেলাল(রা) ছিলেন একজন সর্বহারা এবং মদীনা রাস্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ সম্মানিত ব্যক্তি। বেহেশতে যাওয়ার জন্যে সুসংবাদ প্রাপ্ত প্রথম দশ জনের মধ্যে প্রথম দিকের একজন। ইসলামে রাস্ট্র কিরূপ হবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা আল কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এইতো মাত্র কয়েকদিন আগেই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মদীনা রাস্ট্র নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি না জেনে বা না বুঝে বলে ফেলেছেন,রাস্ট্র মদীনা সনদ অনুযায়ী চলবে। তাঁকে কে বা করা বুঝিয়েছে, মদীনা সনদ সেক্যুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ। তাই তিনি বলে ফেলেছেন মদীনা সনদের কথা। মদীনা রাস্ট্র সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। কিন্তু এর সংবিধান বা সনদ ছিল আল কোরআন ও রাসুলের(সা) হাদীস। এ সনদ সনদ শুরুই হয়েছে ,বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। জাতিয় কোন ইস্যুতে মতভেদ দেখা দিলে ফায়সালার মালিক ছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সা)। মদীনার অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও এই সনদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।নির্বাচনের ম্যানিফোষ্টোতে ধর্মের উপস্থিতি সব সময় ছিল। ৫৪ সালে ইসলামী দলগুলোকে নিয়েই যুক্তফ্রন্ট করা হয়েছিল। ২১ দফার একটি দফা ছিল কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা হবেনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ও দফাটি রেখেছে। এর মানে ধর্ম সব সময় উপস্থিত আছে। অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম তুলে দিয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কথা বলছে। সংবিধানে সেক্যুলার বা ধর্মহীনতার কথা লেখা থাকাতে এখন রাজনীতিতে আল্লাহর কথা বলা যাবেনা। সংবিধানে আছে জনগণই সার্বভৌম, আর ইসলাম বলে আল্লাহ সার্বভৌম। এবার আপনারাই বলুন একজন মুসলমান কোনদিকে যাবেন। আমি যদি বলি আল্লাহ সার্বভোম,তখনি আওয়ামী লীগ ও তার বন্ধুরা তেড়ে আসবেন এবং বলবেন আমি সংবিধান মানিনা। কোরআন বলছে মানুষ আল্লাহর দাস,আর বাংলাদেশের সংবিধান বলছে না, বাংলাদেশের মানুষের উপর আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নেই(নাআউজুবিল্লাহ )। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু শিক্ষিত মানুষ এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। তাই তাঁরা এ বিষয়ে ভাবেন না। যাঁরা সেক্যুলার বা ইহলোকিক তাঁদের বিষয়টা আলাদা। তাঁরা বলেন,ধর্ম মানি, আল্লাহ মানি, কিন্তু পরলোকে বিশ্বাস করিনা। জগতই মানুষের শেষ ঠিকানা। রাসুলের(সা) জামানায়ও এমন ধারা লোক ছিল। এরা আসলে মোনাফেক,অবিশ্বাসী কাফেরের চেয়েও এরা খারাপ। এরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। এরা মানুষকে ধোকা দেয়। এরা নির্বাচন আসলে মাথায় টুপি দেয়। জামাতে নামাজ পড়ার ভান করে। নারী রাজনীতিকরা হিজাব পরেন,পুরো হাতার জামা পরেন। এর কারণ তাঁরা জানেন,ভোট পেতে হলে তাঁদের এ ভান্ডামী করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকতো বলেই দিয়েছেন, তিনি হিন্দু মুসলমান কিছুই নন। তাঁর স্ত্রীও মুসলমান নন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় খৃষ্টান বিয়ে করেছেন। তাঁর বোনঝি মানে শেখ রেহানার কন্যা অমুসলমান বিয়ে করেছেন। এসব ব্যাপারতে দেশবাসীর কিছু বলার আছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু রাজনীতিতে এসব নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।

পাকিস্তানের বাংগালীরা স্বাধীনতা চেয়েছে কেন? এর উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। পাকিস্তানের ভৌগলিক সীমারেখায় আমাদের পরিচয় ছিল পাকিস্তানী বাংগালী বা বাংগালী মুসলমান। পাকিস্তানের সাথে আমাদের বিরোধ কি নিয়ে ছিল? এর উত্তরও এক রকম নয়। আমার কাছে এর উত্তর শোষন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা মানে বাংগালী মুসলমানেরা বৃটিশ আমলেও সীমাহীন শোষণের স্বীকার হয়েছিল। যে কারণে , আরব,পর্তুগীজ,ডাচ,ফরাসী ও ইংরেজ বণিকরা এদেশে এসেছিল তার প্রধান কারণ ছিল এদেশের সম্পদ। অখন্ড বংগদেশে ৪৭ সালে লোক সংখ্যা ছিল সাত কোটির মতো। এখন প্রায় ২৫ কোটি। শোষিত পূর্ববংগ বা পরে পূর্ব পাকিস্তানে ৪৭ সালে লোক সংখ্যা ছিল সাড়ে চার কোটি। ৭১ সালে ছিল সাড়ে সাত কোটি। ৪২ বছর পর এখন লোক সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি।প্রশ্ন হলো ৭১ সালে কেন আমরা একটা আলাদা স্বাধীন দেশ গঠণ করলাম? মুসলমান হিসাবে পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ বা লড়াই ছিলনা। আমরা মানে বাংগালী মুসলমানেরা ছিলাম মেজরিটি। আমরাই পাকিস্তান বানিয়েছি। কিন্তু পরে দেখা গেল পাকিস্তানটা একটা সীমাহীন বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল বা সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী মুসলমানদের শেষন অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি সমঝোতার পথ পরিহার করে শক্তি প্রয়োগের পথ অবলম্বন করে। সেই বল প্রয়োগের বিরুদ্ধেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানীরা বল প্রয়োগ না করলে কি হতো? এ ব্যাপারেও নানা জনের নানা মত আছে। আমি মনে করি সমঝোতাই হচ্ছে গণতন্ত্রের পথ। পাকিস্তানীরা গায়ের জোরে সে পথ পরিহার করেছে। এর প্রধান উস্কানীদাতা ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো।
আমরা এখন স্বাধীন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৪২ বছর পার হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমরা মুসলমান না শুধুই বাংগালী। বিরাট প্রশ্ন। এ নিয়ে দিনরাত সেমিনার আলাপ আলোচনা চলছে। এক দল বলছে আমরা শুধুই বাংগালী। ধর্মীয় দ্বিজাতি তত্বের কবর দিয়েছি আমরা ৭১ সালে। সুতরাং বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রধান পরিচয় বাংগালীত্ব বা বাংগালীয়ানা। এখানে ধর্মের কোন স্থান নেই। শুধু ভাষার কারণেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের লড়াই ছিল ভাষা নিয়ে। তাই আমরা ৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়ে গেছি। এ ব্যাপারে আমার বিশ্বাস ও মত একেবারেই ভিন্ন। আমি মনে করি পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের দ্বিমত বা লড়াইয়ের মুল কারণ ছিল রা্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্য ও শোষণ। বংগবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফার মূলমন্ত্রই ছিল সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা। ৭১ সালের ২৪শে মার্চের রাত পর্যন্ত তিনি ও তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা ছয় দফা নিয়েই আলোচনা করেছেন। ছয় দফা ছিল মূলত: একটি কনফেডারেশনের প্রস্তাব। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকরা তা গ্রহন করতেও ব্যর্থ হয়। আলোচনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেছেন ভুট্টো ও পাকিস্তানের কিছু আমলা ও জেনারেল। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চেস্টাতো ছিল। সে সময় ধর্ম, ইসলাম বা মুসলমানিত্ব নিয়ে বিরোধ ছিলনা বা এ নিয়ে কোন দ্বিমত বা বিরোধ ছিলনা।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানীরা যদি সামরিক আক্রমণ না করতো তাহলে কি হতো? যদি আলোনা অব্যাহত থাকতো তাহলে কি হতো? বংগবন্ধু শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনা বাহিনীর একাংশ ও ভুট্টো পাকিস্তানের অস্তিত্বের সাথে বেঈমানী ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা ভারতের লক্ষ্য বাস্তাবায়নের জন্যে কাজ করেছে। পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংগালী মুসলমানদের সশস্ত্র প্রতিরাধ ছিল অতীব ন্যায় সংগত। একটি কথা আমাদের সকলকেই অবশ্যই মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠির সাথে মুসলমান বা বাংগালী হিসাবে বা অস্তিত্ব নিয়ে কোন বিরোধ ছিলনা। আগেই বলেছি , বিরোধটা ছিল সীমাহীন বৈষম্য। রাজনৈতি ও ভৌগলিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে জগতের যে কোন মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধিনতা বা মুক্তি অপরিহার্য। এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টা পাকিস্তানী শাসকরা বুঝবার চেস্টা কখনই করেনি। শুধু রাজনৈতিক বা ভৌগলিক স্বাধীনতা মানুষকে পূর্ণাংগ স্বাধীনতা দিতে পারেনা। আগেই বলেছি বৃটিশ শাসনামলে সবচেয়ে বেশী শেষিত ও অত্যাচারিত হয়েছে বাংলার মুসলমানেরা। ইংরেজ শাসক ও হিন্দু জমিদারেরাও মুসলমানদের নি:স্ব করে দিয়েছে। তাই তারাই বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্যে। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে ৪৭ সালের পর পরই। প্রথমেই বিরোধ বাঁধে ভাষা নিয়ে। তারপরে আস্তে আস্তে অন্যান্য দাবী যোগ হতে থাকে। এক নম্বর দাবীতে পরিণত হয় অর্থনৈতিক বৈষম্য। পাকিস্তানী শাসকরা এ দাবী পুরণে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগের ভরাডুবির পর এই অঞ্চলে দলটি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। পূর্বপাকিস্তানে মুসলীম লীগ নেতাদের কোন দূরদর্শিতাও ছিলনা। ফলে ২৩ বছরের মাথায় পাকিস্তান আর টিকে থাকতে পারেনি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। এই বাংলাদেশের মূল জনতা হচ্ছে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক। যাদের ৯৭ ভাই হচ্ছে মুসলমান। ৪২ বছরে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে কয়েক হাজার মানুষ দেশের সম্পদ লুট করে নিজেরা ধনী হয়েছে। পাকিস্তান আমলের ২২ পারিবারের জায়গায় এখন ২২ হাজার পরিবার সীমাহীন সম্পদের মালিকে পরিণত হয়েছে। দরিদ্র দিন মুজুর, কৃষিশ্রমিক বা সাধারন শ্রমিকরা এখন দুই টাকার জায়গায় দিনে দুইশ’টাকা কামায়। শিক্ষা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তাদের চিকিত্‍সাও হয়না। এ ব্যর্থতার ষোলয়ানা দায়ভার হলো রাজনীতিকদের। টিআইবি বলছে দেশের রাজনীতিকরা সবচেয়ে বেশী দূর্ণীতিবাজ। একজন সাধারন রাজনৈতিক কর্মী যিনি একবার সংসদ সদস্য হতে পেরেছেন তিনিই ধনী বা বিত্তবান হয়ে গেছেন। রাজনীতিকদের কাছে কেউ হিসাব ও চাইতে পারেনা। এর মানে রাজনীতিকরা সবকিছুর উর্ধে।
শুরুতেই বলেছি, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো রাজনীতি বা নির্বাচনে ধর্মের প্রভাব। আমি মনে করি বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কাছে ধর্ম একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা ধর্ম মানে বলেই সমাজে নীতি নৈতিকতা এখনও জারী আছে। মানুষ বিশ্বাস করে অন্যায় অবিচার করলে পরলোকে কঠিন বিচার হবে। তাই আর্থিক ভাবে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষেরা সহজে কোন অপরাধ করেনা। বাংলাদেশে সমাজের উচ্চবর্গের মানুষেরা সবচেয়ে বেশী অপরাধ করে। পুর্ব পাকিস্তানে পুঁজির বিকাশের কথা বলে পাকিস্তান আমলে রেহমান সোবহান সাহেবরা অনেক লড়াই করেছেন বাংগালী উঠতি পুঁজিপতিদের পক্ষে। বাংলাদেশ হওয়ার পরে রেহমান সোবহান সাহেবরাই বংগবন্ধুকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছিলেন। একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে বাংলাদেশে কখনই কোন রাজনৈতিক দল ছিলনা। ফলে ৭২-৭৫ সাল নাগাদ সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের নামে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে। কারখানার ম্যানেজার হয় গেছে কারখানার মালিক। যে সমস্যা সে সময় সৃষ্টি হয়েছিল তা আজও বিরাজমান। সে সময়ের রাষ্ট্রীয় লোকসান আজও রাষ্ট্রকে বহন করতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের মাথা থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বা অর্থনীতির ভুত নামেনি। সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো কিছু বামপন্থি দৈত্য আওয়ামী লীগে ঢুকে বসে আছে। এরাই নাকি শেখ হাসিনাকে চালাচ্ছে। ওদের চালাচ্ছে নাকি ভারত। বাংলাদেশের ধর্মীয় অবস্থানের ব্যাপারে ভারত আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশ গুলোর অবস্থান একই রেখায়। তারা চায় বাংলাদেশে ইসলাম গৃহধর্ম হিসাবে থাকুক। সমাজে বা রাস্ট্রে এর কোন ভুমিকা থাকতে পারবেনা। আমেরিকা ও ভারতের এবং তাদের মিত্রদের এই ব্রিফিং বহন করছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। মিশরের কথা আমরা ভুলতে পারিনা। শুধুমাত্র ইসলামের কারণে মুরসির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী। পর্দার পেছন থেকে সমর্থন দিয়েছে আমেরিকা,সউদী আরব ও ইউএই। আমেরিকা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, এবং বিদেশে সরকার গুলোকে নিজের মতো করে পেতে চায়। ভারতও বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায়, কিন্তু তা হতে হবে তাদের পছন্দমতো দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে। ১/১১র সরকারটাও তারাই বসিয়েছিল।২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল তারাই নির্ধারন করেছিল। এ ব্যাপারে আমি ভারতকে দোষ দিইনা। ভারত তার রাস্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যেই করে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতির অবস্থান জাতীয় স্বার্থে তেমন শক্তিশালী নয়। রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলেও এখানে ধর্ম বা ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থানটা তৈরি করেছে আওয়ামী রাজনীতি। না চাইলেও আওয়ামী লীগের অবস্থান আজ ইসলামের বিরুদ্ধে। দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে আওয়ামী লীগ ইসলামের পক্ষে নয়। গাজীপুরের নির্বাচনে হেরে তারা এখন আল্লামা শফীর চরিত্র হনেনের কাজে নেমেছেন। আল্লামা শফী এদের একজন প্রধান ধর্মীয় নেতা। তিনি বার বার বলেছেন, রাজনীতি বা ক্ষমতা তাঁর লক্ষ্য নয়। তিনি সংবিধানে ইসলামের বাস্তবায়ন দেখতে চান। তাই ১৩ দফা দিয়েছেন। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। আওয়ামী লীগ এখন মহা বিভ্রান্তিতে পড়েছে। বুঝতে পারছেনা কোন পথে যাবে। ধর্ম ও হেফাজত তাদের জন্যে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com

Read Full Post »