Feeds:
Posts
Comments

রহস্য


দয়াবান হও হে মানুষ
দয়া ছাড়া আর কিছুই থাকবেনা
প্রেমময় হও
প্রেম ছাড়া সবই মুছে যাবে
হে মানুষ তুমি কি জানো
প্রেমের কারণেই তোমার সৃষ্টি
তুমি কি নিজেকে চিনতে পারো
তুমি আসলেই কে?
যদি জানতে তাহলে তুমি
সৃষ্টির রহস্য সাগরে ডুব দিতে
তুমিতো জানো না
তোমার রহস্য কি?


কাবুলীওয়ালা অর্থনীতি  /  এরশাদ মজুমদার

অনেকদিন পর কাবুলীওয়ালাদের কথা মনে পড়লো। রবীন্দ্রনাথের কাবুলীওয়ালা গল্পে আবদুর রহমান ছিল একজন মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ। মিনি বা খুকুর জন্যে আবদুর রহমানের  স্নেহ মমতা গল্পটিকে কালজয়ী করে তুলেছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পুর্বে তত্‍কালীন পুর্ব পাকিস্তানে কয়েক হাজার কাবুলী টাকার ব্যবসা করতো। মাসিক সুদে টাকা লগ্নি বা ধার দিতো। মাস শেষে বাড়ি বাড়ি বা দোকানে গিয়ে সুদ আদায় করতো। কাবুলীওয়ালারা তেমন বিত্তবান ছিলনা। সামান্য পুঁজি নিয়ে টাকার ব্যবসা করতো। কাবুলীওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়াটা সমাজ ভাল চোখে দেখতো না। কাবুলীওয়ালাদের আগমনের পূর্বে হিন্দু মহাজনরা স্বর্ণ বন্দক রেখে টাকা ধার দিতো সুদের ভিত্তিতে। শুনেছি এ ব্যবস্থা নাকি এখনও জারী আছে। এ মহাজনদের পোদ্দার বলা হয়। জমি বন্ধক রেখে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা এক সময় ব্যাপক ছিল। হয়ত এখনও আছে। তবে বড় বড় আড়ত বা পাইকারী বাজার গুলোতে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় সুদের ভিত্তিতে। শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা বলেন ইনফরমাল লেন্ডিং মার্কেট। এখানে প্রতি লাখে মাসে তিন চার হাজার টাকা মুনাফা দেয়া হয়।বহু শিক্ষিত ভদ্রলোক এ বাজারে টাকা খাটান সংসার চালাবার জন্যে। এ বাজারে বিশ্বাসই হলো সিকিউরিটি। সরকারী অনুমোদন নিয়ে শ’খানেক টাকা লগ্নি প্রতিষ্ঠান বাজারে রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যান্ক। আর বাংলাদেশ ব্যান্ককে নিয়ন্ত্রণ করে সরকার ।

রাজনৈতিক কারণে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশে  সাংবিধানিক ভাবেই শাসকগণ   রাজা বা রাণীর ক্ষমতা ভোগ করেন। কিন্তু বলা হয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সংসদের কিছু বেশী সদস্যের অন্ধ সমর্থনে রাজা বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এসব হচ্ছে গণতন্ত্রের লেবাস বা মুখোশ। ফলে ইচ্ছা না থাকলেও  জার সম্রাট বা মোঘল বাদশাহদের মতো ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পান এদেশের প্রধানমন্ত্রীরা। দেশে এত গুলো ব্যান্ক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে সে কারণে। একবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন রাজনৈতিক কারণে কিছু ব্যান্কের অনুমতি দিতে হয়েছে। এমন কি ব্যক্তির নামে বা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেও এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারণ সে ব্যক্তি রাজনীতি করেন। এমন কি সারা জীবন আমলা হয়ে জনগণের হালুয়া রুটি খেয়েছেন। অবসরে যাওয়ার পর রাজনৈতিক দলে ঢুকে পড়েছেন। উদ্দেশ্য আজীবন মানুষের হক দখল করে ভোগ করা। এ হালুয়া রুটি বন্টনের এমাত্র অধিকারী হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটি। ১৯৮৩ সালে একটি ব্যান্ক প্রতিষ্ঠা করতে লাগতো তিন কোটি টাকা। যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা এখন অনেকেই হাজার কোটি টাকার মালিক। এখন একটি ব্যান্ক প্রতিষ্ঠা করতে লাগে চারশ’কোটি টাকা। ৮৩ সালে একজন উদ্যোক্তাকে পাঁচ দশ লাখ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন তাঁরা একাই চারশ’ কোটি টাকা দিয়ে ব্যান্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। রাজনৈতিক অনুগ্রহ ভোগী ব্যক্তি যে কোন ধরনের লাভ জনক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি সংগ্রহ করেন এবং তা বেচে দিয়ে রাতারাতি ধনী হয়ে যান। একথা সবাই জানেন, এত ব্যান্ক বীমার দেশের কোন প্রয়োজন নেই,তবুও অনুমতি দেয়া হচ্ছে  রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করার জন্যে। ফলে ব্যান্কিং জগতে ব্যাপক দুর্ণীতি ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্কের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে এবং মেরে দিচ্ছে। এসব লুটেরাদের খুব কমই বিচারের সন্মুখীন হতে হয়।

এবারতো কেন্দ্রীয় ব্যান্ক মানে বাংলাদেশ ব্যান্কই লুট হয়ে গেলো ডিজিটাল জ্ঞানের মাধ্যমে। লুট নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল উপদেষ্টা জয় সাহেব। তিনি আমেরিকায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ ও পরামর্শ দেন। তিনি বলেছেন, আইসিটিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে ডিজিটাল এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের কুনজরে পড়ে গেছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যান্ক লুট হয়ে গেছে। সেই টাকা দিয়ে ফিলিপিনের ক্যাসিনোতে জুয়ার উত্‍সব চলছে। ফিলিপিনের জুয়ার বাজারে আমারদের এনবিআর কোন হামলা করতে পারেনা। যদি পারতো তাহলে এখনি দুদক,এনবিআর রেব হামলে পড়তো।

বাংলাদেশ ব্যান্কের  কেলেংকারী পীড়িত বিদায়ী গভর্ণর আতিউর রহমান সাহেব একজন জনপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজের পোশাকের একটি ব্রান্ড তৈরি করেছেন। দেখলেই মনে হয় তিনি জনগণের লোক। গভর্ণর হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পরেই তিনি জীবন বৃত্তান্ত প্রকাশ করে দেশবাসীকে জানান দিয়েছেন তিনি তাঁদেরই লোক,অতি সাধারন। এখন তিনি হত দরিদ্র কৃষকের প্রতিনিধি হিসাবে গভর্ণরের পদে আসীন আছেন। বাহবা বা হাততালি পাওয়ার জন্যে তিনি হুকুম দিয়েছেন মাত্র দশ টাকা দিয়ে ব্যান্ক গুলোতে কৃষকরা একাউন্ট খুলতে পারবেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কত কৃষক দশ টাকার হিসাব খুলেছেন তা দেশবাসী জানেন না। অথবা কত কৃষক ব্যান্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন বা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গরু বিক্রি করেছেন তার খবর আমরা জানিনা। এতদিন শুনেছি প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা হাজার হাজার ওয়াদা করেন যা কখনই বাস্তবায়িত হয়না। এটা নাকি রাজনীতিতে রেওয়াজ। জনগণতো রাজধানীতে এসে মন্ত্রী সচীব বা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন। মন্ত্রী সাহেবেরাই জনসভা করে জনতার সাথে দেখা করেন যেখানে প্রচুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।একশ’গজ দূরে নিরাপত্তা বেস্টনীর বাইরে থেকে মন্ত্রীদের অমিয় বাণী শোনেন নির্যাতিত গরীব জনতা। পুলিশ ছাড়াও জনগণকে পোষ মানিয়ে রাখেন স্থানীয় দলীয় ক্যাডারগণ। আতিউর রহমানের আগে অনেক গভর্ণর ছিলেন যাঁরা দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই আতিউর সাহেবের মতো জনপ্রিয়তার কাংগাল ছিলেন না। ক’দিন আগে আপনারা সাবেক গভর্ণর নাজির আহমদের ইন্তিকালের খবর পেয়েছেন। ইনি ছিলেন একজন সর্বশ্রেষ্ঠ কেন্দ্রীয় ব্যাংকার। আমার মতে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যান্কের শ্রেষ্ঠ গভর্ণর। কখনই সস্তা জনপ্রিয়তাকে গুরুত্ব দেননি। অন্যান্য গভর্ণরগণও জনপ্রিয়তাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কারণ বাংলাদেশ ব্যান্ক রাজনীতি বা জনপ্রিয়তার কোন জায়গা নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অতি প্রিয় মানুষ আতিউর রহমান। সে আতিউর সাহেবই শেষ পর্যন্ত ব্যান্ক লুটের কেলেংকারী মাথায় নিয়ে বিদায় নিলেন। জয় সাহেবের উচিত হবে এখন দেশে এসে  টাকা লুটের কারিগরী ত্রুটি আবিষ্কার করা। এর আগে বৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী  বাণিজ্যিক ব্যান্ক থেকে লুট হওয়া টাকা নিয়ে বলেছিলেন হাজার কোটি কোন টাকাই নয়। আসলে বাংলাদেশ ব্যান্কের রিজার্ভের ডলার এসেছে শ্রমিকদের ঘামের বিনিময়ে। দেশের ভিতর পোষাক শ্রমিক ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরাই রিজার্ভ বাড়িয়েছে। আর তা নিয়ে প্রধান মন্ত্রী নিজের জন্যে হাততালি কুড়াতেন। আতিউরের পতনের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বীর হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আতিউর প্রধানমন্ত্রীর খাস বা পেয়ারা মানুষ ছিলেন। ফলে তিনি কখনই অর্থমন্ত্রীকে পাত্তা দিতেন না। টাকা লুটের কথা তিনি নাকি দেড় মাসে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে চুপ ছিলেন। অপরদিকে বৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। নতুন গভর্ণর এলেন। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় মানুষ। এই ভদ্রলোকেরও কেন্দ্রীয় বা দেশের অর্থনীতি বিষয়ে তেমন কোন আন্দাজ নেই। তবুও তিনি হয়েছেন। হয়ত এমনও হতে পারে তিনি অতি ধৈর্য ও দক্ষতার সাথে গোপন কথা গোপন রাখার চেষ্টা করবেন।

ব্যান্কের এমন অবস্থায় গভর্ণর সাহেব চলে গেলেন  দিল্লীতে সেমিনারে কথা বলতে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আতিউর কথা বলতে ভালবাসেন। তাই সুযোগ পেলেই বিদেশে চলে যেতেন। আর সুযোগ পেলেই বিদেশীদের অনুরোধ করতেন তাঁকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে। ইতোমধ্যেই তিনি নাকি এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গভর্ণর হিসাবে খ্যাতি পেয়েছেন। অর্থমন্ত্রী প্রথম আলোতে সাক্ষাতকার দিয়ে আতিউরকে নিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছেন। সুযোগ পেয়ে কালো বিড়াল গল্পের নায়ক সুরঞ্জিত বাবু একচোট নিয়েছেন। তিনি বলেছেন অর্থমন্ত্রী টাকা লুটের কেলেংকারী থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারেন না। তাঁরও দায়িত্ব আছে। সত্যিকার অর্থেই অর্থমন্ত্রী হয়ত রাজকোষের ব্যাপারে কোন খবর রাখতেন না বা আতিউর সাহেব তাঁকে জানাতেন না। কেন্দ্রীয় ব্যান্ক একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এ কথা কেউ কখনও শুনেছেন বলে আমি জানিনা। এ ব্যাপারে অতীতে আমি লেখালেখি করেছি। আমার কলিগ বা সহকর্মীরা এ ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামান না। বাংলাদেশ ব্যান্ক বছরে  তিন হাজার কোটি টাকা লাভ করে বা কমিশন খেয়ে সষাগারে জমা সরকারী ভান্ডারে জমা দেয়। এতেই প্রধানমন্ত্রী খুবই খুশী থাকেন। প্রশ্ন হলো এমন মুনাফা বা কমিশন খাওয়ার প্রয়োজ আছে কিনা ? আমিতো মনে করি দরকার নেই। ভারতের রিজার্ভ ব্যান্ক বা পাকিস্তানের স্টেট ব্যান্ক বা পৃথিবীর কোন রিজার্ভ ব্যান্ক এভাবে কোন মুনাফা করেনা । সাধারন বাণিজ্যিক ব্যান্ক গুলো ও কাবুলীওয়ালদের মতো সুদ ও কমিশন খায়। কাবুলীওয়ালারা মাসিক এক বা দুই টাকা সুদ নিতো। কিন্তু কখনই গরীবের বা মধ্যবিত্তের বাড়ীঘর ক্রোক বা দখল করতো না। জমিদারী আমলে বাড়ি ঘর, গরু ছাগল, হাড়ি পাতিল ক্রােক করার  আইন ছিল। প্রজাদের পক্ষে কোন আইন ছিলনা। এজন্যেই শেরেবাংলা প্রজাদের জন্যে ঋণ সালিশী বোর্ড গঠণ করে তাদের রক্ষা করেছিলেন। এর আগে আল্লাহর রাসুল(সা) গরীবদের সকল সুদ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহপাক সুদকে হারাম (নিষিদ্ধ) ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশে আল্লাহর এই বিধি নিষেধ মানা হয়না। এদেশে একশ’ থেকে দেড়শ’ পারসেন্ট  সুদ নেয়া হয়। সম্প্রতি জানতে পারলাম, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে আগে সুদ আদায় করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একজন মানুষও এদেশে গৃহহীন থাকবেনা। আমরা এসব কথাকে রাজনৈতিক বাণী বলেই ধরে নেই। এসব হলো কথার কথা। রাজধানী ঢাকা নগরেই ৫০/৬০ লাখ মানুষ ফুটপাতে, রেল ষ্টেশন ও লঞ্চ ঘাটে থাকে। সারা রাজধানী ঘুরে দেখুন বস্তির অভাব নেই। এমন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন মানুষই গৃহহীন থাকবেনা। কই তিনিতো সাথে সাথেই বলতে পারতেন গৃহ ঋণের সুদের হার কখনই শতকরা পাঁচভাগের বেশী হবেনা। সারা বছর গৃহ ঋণ চলবে। তাহলেতো রাজধানীতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগরিকেরা বাড়ি তৈরি করতে পারতো। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে গৃহ ঋণের সুদ করা হয়েছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। সে সময়ে রাজধানীতে অনেক বাড়ি হয়েছিল।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তিলাভের জন্যেই ৭১এ বাংলাদেশের সাধারন মানুষ ও সেনাবাহিনী অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। পাকিস্তানতো তেইশ বছর শোষণ করেছে। তার আগে জমিদারেরা শোষণ করেছে। জানার জন্যে উইলিয়াম হান্টারের বই পড়ুন। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও বাংলাদেশ দারিদ্র মুক্ত হয়নি। আট কোটি মানুষের খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা ও চিকিত্‍সার ব্যবস্থা নেই। যে সকল রাজনীতিবিদ রিকশায় চলতেন তাঁরা এখন নিদেন পক্ষে পাজেরোতে চলেন। প্রধান রাজনৈতিক দল গুলোর নেতাদের প্রকাশ্য কোন আয় নেই। তাঁরা সকলেই মার্সিডিজে চলেন। সাথে সাথে দলদাস ও তাবেদার গণ শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। অপরদিকে গৃহহীন ও গরীব মানুষের সংখ্যা বেড়াই চলেছে। গরীবের শিক্ষিত ছেলে চাকুরী পায়না । চাকুরী হয় দলীয় ভিত্তিতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি জানেন, বাণিজ্যিক ব্যান্ক থেকে দশ লাখ টাকা গৃহ ঋণ নিলে শোধ করতে হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। বর্তমান ব্যাবস্থায় আগে সুদ আদায় করা হয়,পরে আসল আদায় করা হয়। যেমন ধরুন, দশ হাজার টাকার কিস্তিতে নয় হাজার টাকা সুদ আদায় করা হয়। ফলে ঋণ গ্রহীতা সারা জীবনেও ব্যান্ক ঋণ শোধ করতে পারেন না।  বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যান্ক যখন মুনাফার পেছনে দিনাতিপাত করে সেখানে বাণিজ্যিক ব্যান্ক গুলোর রাজনৈতিক মালিকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিলেও কিছু আসে যায়না।  লোকে বলে একটা ব্যান্কের মালিকানা হাতে থাকলেই একটা জমিদারী হাতে এসে যায়। এরপর শুধু প্রজাদের (গ্রাহকদের) শোষন করা।

লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

ershadmz@gmail.com

 


রাজনীতিতে বিএনপি ভাবনা    /    এরশাদ মজুমদার

রাজনীতিতে এখন বিএনপি ভাবনা বেড়ে গেছে। জেনারেল এরশাদ কদিন আগে বলেছেন, বিএনপি নেতারা তাঁর পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের মুখর নেতারা ২৪ঘন্টাই বিএনপির নিন্দায় মুখর। বিএনপিকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে তাঁদের চিন্তার শেষ নাই। বিএনপির চিন্তায় প্রধানমন্ত্রীর ঘুম নেই। মনে হয় বিএনপি না থাকলে বাংলাদেশ জান্নাত বা স্বর্গ হয়ে যেতো। জেনারেল মইনের সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছেন। মইনের সরকারের লক্ষ্যই ছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা। মইন সরকারের রেশ এখনও চলছে। বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার মামলা রুজু করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষ জানে এসব রাজনৈতিক মামলা।

প্রথম আলোতে আবুল মোমেনের লেখাটি  পড়ে এ লেখাটি লিখতে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি। লেখাটি প্রথম আলোতে ছাপা হলে ভাল হতো। তাহলে প্রথম আলোর পাঠকজন আমার ভাবনাটা জানতে পারতেন। কিন্তু আমার সেই ভাগ্য নেই। আমার লেখা প্রথম আলো প্রকাশ করেনা। একবার শ্রদ্ধেয় মুসা ভাইয়ের একটি লেখার উত্তরে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। আবুল মোমেনকে আমি চিনি মনে হচ্ছে। এক সময় আমরা হয়ত এক সাথে কাজ করেছি। আবুল মঞ্জুর আমার বন্ধু। আবুল মোমেনের বাবা পন্ডিত আবুল ফজল সাহেব জিয়া সাহেবের উপদেষ্টা ছিলেন। এদেশের অনেক নামী দামী ও জ্ঞানী গুণী জিয়া সাহেবের উপদেষ্টা ছিলেন।

আবুল মোমেনের লেখাটি আমার ভাল লেগেছে। এক সময়ে আমরা অনেকেই এ সাথে কাজ করেছি। চিন্তাধারাও প্রায় এক রকম ছিল। এখন আর সেদিন নাই। চিন্তার জগতে সবাই আলাদা হয়ে গিয়েছেন। বামপন্থীরা, মানে সমাজতন্ত্রী বা কমিউনিষ্টরা ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগের সাথে জড়িয়ে গেছেন। এ আওয়ামী লীগকে বামপন্থী বন্ধুরা ডানপন্থী ও সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলে গালাগাল করতেন। আমরা নিজেরাও আওয়ামী লীগকে আমেরিকার দালাল মনে করতাম। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও বংগবন্ধু ছিলেন রাজনীতিতে শক্ত ভাবে সমাজতন্ত্র বিরোধী শক্তি। আওয়ামী মুসলীম লীগ  ছিল মুসলীম লীগের বিকল্প। মুলধারার মুসলীম লীগাররা ছিলেন জসন সাধারন থেকে একটু দূরে। মাওলানা ভাসানী ছিলেন নির্যাতিত সাধারন মানুষের অতি কাছে। ফলে তাঁর দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র সাড়ে চার বছরের মধ্যেই মুসলীম লীগকে পরাজিত করে প্রদেশের সরকারী ক্ষমতায় আসীন হয়। দলে মাওলানা সাহেব ছাড়া সবাই ছিলেন আমেরিকাপন্থী। এক সময়ে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রেও সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ছিল। ৫৭ সাল নাগাদ মাওলানা সাহেব আওয়ামী লীগের সাথে টিকে থাকতে পেরেছিলেন। তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্বে পুরো দলটাই আমেরিকার তাবেদার হয়ে গিয়েছিল। এক সময় বংগবন্ধু একক ভাবেই দলের নেতা হয়ে গেলেন। দলের অন্যান্য শিক্ষিত নরোমপন্থী নেতারা কোনঠাসা হয়ে দল ত্যাগ করলেন। শেখ সাহেব নিজের মতো করেই দল চালাতে লাগলেন। ডা: বৈদ্য লিখেছেন শেখ সাহেবকে গোপনে সনাতনধর্মীরা সমর্থন দেয়ার ওয়াদা করে। সেই ভিত্তিতেই পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে চলতে লাগলো সনাতনধর্মীদের নিয়ন্ত্রণ এবং সে নিয়ন্ত্রণ স্বাধীন বাংলাদেশেও অব্যাহত আছে। সনাতনধর্মীরা চান রাজনীতিতে ইসলাম বা মুসলমান মুক্ত মতবাদ। তাঁদের এই মতবাদের কারণেই ৪৭ সালে অখন্ড বাংলাদেশ খন্ডিত হয়েছে। বৈদ্যবাবু স্বাধীন বাংলাদেশেও থাকেননি। কারণ,শেখ সাহেব নাকি বৈদ্যবাবুর মতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তবে তিনি ওয়াদা করেছেন তিনি পুরো বাংগালীদের দেশ( ইসলাম মুক্ত) প্রতিষ্ঠা করে আবার এদেশে ফিরে আসবেন।

৭০ এর নির্বাচনে শেখ সাহেবের একক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের প্রধান দল হিসাবে বিকশিত হলো। এ সময়ে তেমন কোন বিরোধী দল ছিলনা। অনেক দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। আর নির্বাচনটি হয়েছিল বাংগালী বনাম অবাংগালী মানসিকতার ভিত্তিতে। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু  পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও ভুট্টো নির্বাচিত প্রধান দলের নেতা শেখ সাহেবকে ক্ষমতা না দিয়ে পাকিস্তান ভাংগার উদ্যোগ নিয়ে ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর সামরিক অভিযান চালায়। ফলে পাকিস্তান ভেংগে যায় ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের পেছনের কথা পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিলাম। বংগবন্ধু কোন মানসিকতার মানুষ ছিলেন তা তাঁর আত্ম জীবনী পড়লেই আপনারা জানতে পারবেন। তিনি কেন পাকিস্তান চেয়েছিলেন তাও সে বইতে আছে। তিনি একজন খাঁটি বাংগালী মুসলমান ছিলেন।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় আরবী নামধারী বাংগালী নাগরিক আনিসুসজ্জামান সাহেবের একটি লেখা পড়লাম প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায়। তিনি চলমান সংকট নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তাঁর সংকট হলো তিনি বাংগালী বা বাংলাদেশী তা ঠিক করতে পারছেন না। তিনি ইসলাম মুক্ত একটি বাংলাদেশ চান। তাঁর ভাষায় তিনি বলেছেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বাংলাদেশ। তাঁর লেখায় তিনি বলেছেন,ধর্মের নামে সংবিধান লংঘন ও দেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টাকে প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন। আনিস সাহেবের বাপদাদারা ধর্মীয় কারণেই ৪৭ সালে ভারতীয় বাংলাদেশ ত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। কেন এসেছিলেন তার কোন ব্যাখ্যা তিনি কখনই দেননি। এক সময় তিনি বামচিন্তা ধারার লোক ছিলেন বলে বহুল প্রচারিত। এখন তিনি আওয়ামী ঘরণার লোক বলে প্রচারিত।  তাঁর ঘরাণার লোকেরা নিজেদের বাংলাদেশী বলতে চাননা। তাঁরা নিজেদের বাংগালী বলতে ভালবাসেন। অথচ বংগবন্ধু বলেছিলেন ‘ আমি বাংগালী ,আমি মুসলমান। আমি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমান দেশের নেতা। এ কারণেই তিনি ৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তিনিই ইসলামিক একাডেমীকে ইসলামী ফাউন্ডেশনে পরিণত করে অবিভক্ত বাংলার মুসলীগ লীগের সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামা আবুল হাসেমকে( বদরুদ্দিন ওমরের বাবা) মহা পরিচালক করেছিলেন। আগেই বলেছি,ডা: বৈদ্য বলেছেন, বংগবন্ধু ইসলামিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। শ্রদ্ধেয় আনিস সাহেবের লেখাটি বেশ বড় তাই এখানে পুরো আলোচনা করা সম্ভব নয়। কদিন আগে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত সেন বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক শব্দটাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে। সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন গণতন্ত্র শব্দের অর্থ বদলে যাবে। যেমন বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের নাট্যমঞ্চ আছে। নিয়মিত গণতন্ত্রের নাটক মঞ্চস্থ হয়। মানবাধিকার পোষাক আছে, কিন্তু ভিতরে মানুষ নেই। এদেশে রাষ্ট্র মানুষের প্রভু। এ সকল বিষয়ে এদেশের বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিকরা একমত হতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা হননি। বরং দলদাস হয়ে গেছেন।

আবুল মোমেনরা আওয়ামী লীগকে একটি প্রগতিশীল আধুনিক রাজনৈতিক দল মনে করেন। যা আমি মোটেই মনে করিনা। দুটি দলই আমার কাছে এক রকম। দুটি দলই বুর্জোয়া শ্রেণী দ্বারা পরিচালিত। দুই দলেরই ভোটার বা সমর্থকের সংখ্যা কাছাকাছি। একদল ভারতপন্থী বলে পরিচিত,আরেক দল ইসলামপন্থী বলে পরিচিত। দুই দলই আমেরিকা বা পশ্চিমের আনুকুল্য প্রার্থনা করে। একদল ও দলনেত্রীর প্রধানতম কাজ ও বক্তব্য হলো তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষকে গালমন্দ করা। আরেকজন প্রায়ই নিরব থাকেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় বিরোধী  দলেরই জিতার সম্ভাবনা থাকে। এখন বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়না। ফলে যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দল রাস্ট্রের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বাচনে জিতে দলীয় ক্ষমতাকে অব্যাহত রাখতে চায়। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ নির্বাচন পদ্ধতি। বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব সিনেমা হলের মামলায় সংবিধান নিয়ে নানা মত বা রায় দিয়েছেন। যা দেশকে বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ যাবত যত জীবনের হানি হয়েছে তার কারণ খায়রুল হক সাহেবের রায়।  এতদিন পরে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন,অবসরে যাওয়ার পর কোন বিচারপতি রায় লিখতে পারেন না। এটা সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে ইকতেদার আহমদ আসিফ নজরুল সাহেবের দুটি নিবন্ধ  নয়া দিগন্ত ও প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে। আপনারা দুটি নিবন্ধই পড়তে পারেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় আর বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ ব্যাপারে দেশে কোন রাজনৈতিক এক্যমত নেই। এ বিষয়ে মোমেনরা তেমন কিছু বলেন না। বৈদ্যবাবু আর তথাকথিত আরবী নামধারী কিছু প্রগতিশীল মনে করেন  আওয়ামী লীগেরই ক্ষমতা থাকা দরকার। তাহলে দেশ প্রগতিশীল হবে। আমিতো মনে করি দুটি দলই এক চরিত্রের।  দুটি দলই ধনবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে। দুটি দলই সংসদীয় রাজনীতিতে আস্থাবান। শেখ সাহেব, জিয়া ও এরশাদ সাহেব প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে দেশ চালিয়েছেন। এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগ সংসদীয় ব্যবস্থার দাবী তুললো। ফলে দুই দলের সমঝোতায় সংসদীয় ব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে চলে যায়। তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এজন্যেই বলা হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মোগল সম্রাট বা রাশিয়ার জার সম্রাটের ক্ষমতা ভোগ করেন। ফলে রাষ্ট্রপতি বা সংদের হাতে কোন ক্ষমতা থাকেনা। জাতীয় সংকটে প্রেসিডেন্ট বা সংসদ কিছুই করতে পারেন না। নির্বাচন কালীন সময়ে সরকার ব্যবস্থা কি রকম হওয়া উচিত তা নিয়ে মোমেনরা কথা বলেন না। তাঁদের দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল আর বিএনপি অপ্রগতিশীল ধর্মপন্থী। আওয়ামী লীগের আদর্শ হলো গণতন্ত্রের সাথে শক্তির ব্যবহার। ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে। আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে লাঠি ও লগি বৈঠা ব্যবহার করে। সংসদে নাকি চেয়ার মারামারি আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ভাসানীকে লাঠি দ্বারা বিদায় করেছে। আমরা ছাত্রকাল থেকে দেখে এসেছি আওয়ামী লীগ শক্তি প্রয়োগ করেই প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে এসেছে। সামন্তবাদী মনোভাব থেকেই শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি এসেছে। মোমেনের বিশ্লেষণটি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টি ভংগীর ফল। আমি তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়েই আমার মতটি জানালাম। মোমেনের দৃষ্টিতে বিএনপি ধর্মপন্থী। ধর্মবাদী দলগুলোর সাথে তার ঐক্য বা জোট আছে। মোমেন আরেকটি কথা বলেছেন, তা হলো বিএনপির অনেক ভোট আছে, কিন্তু নেতৃত্ব ঠক নেই বা চলমান নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপি টিকবেনা। এমন কথা আওয়ামী লীগ নেতা ও একই ঘরাণার বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন। কিছু বুদ্ধিজীবী সব সময়ে সরকারের তাবেদারী করে থাকেন। জেনারেল আইউবের সরকারের কাছে থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এমন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কম ছিলনা। আদমজী দাউদের পুরুস্কার নিয়েছেন তেমন বুদ্ধিজীবী হয়ত এখনও জীবিত আছেন। কিন্তু একটি দেশে স্বাধীন ভাবে দলমুক্ত মতামত প্রকাশ করার জন্যে কোন লোক থাকবেনা তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন রাষ্ট্রীয় পদক গুলো দলীয় পদকে পরিণত হয়েছে। যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের ভক্তরা পুরুস্কার পাওয়াটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। স্বাধীন চিন্তার গূণীজনরা কোথায় পালিয়ে আছেন কে জানে।

এখন প্রশ্ন হলো, সব রাজনৈতিক দলই কি আওয়ামী লীগের মতো হবে? ভিন্ন মত ও পথের রাজনৈতিক দল কি থাকবেনা? ভোটের বিবেচনায় বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের মত ও চিন্তার বাইরে বা বিপরীতে দলটি গড়ে উঠেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্যে কল্যাণকর। একবার ভাবুন, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দল বিকশিত না হলে দেশের রাজনীতির হাল কি হতো? যাঁরা আওয়ামী চিন্তার বাইরের চিন্তাকে পছন্দ করেন না তাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না এটা অনায়াসে বলা যায়। পাকিস্তান আমলে সামরিক ও বেসামরিক কায়েমীবাদী একটি গোষ্ঠীর চক্রান্তে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারেনি। ফলে পাকিস্তান ভেংগে গেছে। বাংলাদেশে তেমন কোন অবস্থা নেই। তবে ক্ষমতাবান যদি রাস্ট্র শক্তিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন তাহলে দেশের এক্যশক্তি দূর্বল হয়ে যাবে। গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা বিপদগ্রস্থ হবে। সুযোগ গ্রহণ করবে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি। সকল দল ও মতের অংশ গ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠিত হওয়া দেশের জন্যে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে দেশে বিদেশে কেউই গ্রহণ করেনি এটা আওয়ামী লীগ ভাল করেই জানে। এখন দেশে নতুন কথা শোনা যাচ্ছে। গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নের বেশী প্রয়োজন। এমন কথা জেনারেল আইউবও বলেছিলেন। তিনি উন্নয়নের দশক পালন করেছিলেন। সরকারে থাকলে এ ধরণের প্রোপাগান্ডা চালানো খুবই সহজ। প্রোপাগান্ডার মেশিন হিসাবে মিডিয়ার লোকেরা ব্যবহৃত হয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে এখন দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আর এই একই সময়ে দেশের মানুষ কাজের আশায় সীমান্ত ও সাগর পাড়ি দিয়ে জীবন হারাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বলছেন, তারা দেশের শত্রু, দেশের ইমেজ নষ্ট করার জন্যে নাটক করছে। বিগত সাত বছরে কয়েক কোটি মানুষ বেকার জীবন যাপন করছে। দুর্ণীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘুষ বৃদ্ধির কারণে সরকারী কর্মচারীরা সুখে আছেন। শিশু হত্যা ও ধর্ষণ বেড়েছে সীমাহীন ভাবে। এসব ব্যাপারে দলদাস বুদ্ধিজীবীদের চোখ বন্ধ। তাঁরা সরকারের গুণ জ্ঞানে অন্ধ।

লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

ershadmz@gmail.com


১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ খন্ডিত হয়েছে নির্যাতিত মুসলমানদের হিস্যা হিসাবে।পুর্ব বাংলার নাম হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সাল নাগাদ বাংগালী মুসলমানেরা অবাংগালী পাকিস্তানীদের সাথে যোগ দিল। কিন্তু সে সম্পর্ক বেশীদিন টিকলোনা। খুবই বেদনাদায়ক ভাবে পাকিস্তান ভেংগে গেল। পূর্ব পাকিস্তান ভৌগলিক ভাবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলো। ইতোমধ্যেই আমরা স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার করে এসেছি। ভৌগলিক ঐক্য দৃশ্যমান হলেও ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে আমরা বিকশিত হতে পারিনি।


আমি অনেক দিন ধরে লিখছিনা। বলা যায়না লিখতে পারছিনা। কম্পিউটারে বসি কিন্তু লেখা হয়না। চিন্তার জগতে কোন গোলযোগ দেখা দিয়েছে তাও বুঝতে পারছিনা। মুক্তিযুদ্ধের সংখ্যা বিবাদ বা দ্বিমত আজও মিটেনি। বংগবন্ধু তিরিশ লাখ বলেছেন। আমরা তাঁর সংখ্যাকে সালাম জানাই। তিনিতো সংখ্যা নিরুপনের জন্যে একটিও করেছিলেন একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা। তবে সংখ্যা নির্ধারনের ব্যাপারে সকল সরকারই ব্যর্থ হয়েছেন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তাই আমি এমন মানসিক অবস্থায়ও বিষয়টি লিখার চেষ্টা করলাম। যারা দ্বিমত পোষণ করবেন তাঁদেরকেও আমি সম্মান করি।

ভারতের সহযোগিতায় আমরা নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে  বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি। আপনারাই বলুন স্বাধীনতা বড় না স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্ষতি বড়? স্বাধীনতা লাভ করেছি বলেই আজ আমাদের পতাকা আছে, জাতীয় সংগীত আছে। আমরা জাতিসংঘের সদস্য। ফিলিস্তিন কাশ্মীর ৬০ বছর ধরে যুদ্ধ করেও মুক্তি লাভ করতে পারেনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন লাভ করায় আমরা মাত্র নয় মাসেই পাকিস্তানকে পরাজিত করতে পেরেছি।

এক সময় অখন্ড ভারতের হিন্দু শাসন থেকে মুক্তি লাভের জন্যে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ জীবন ও সম্পদ ত্যাগ করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু সে পাকিস্তান টিকেনি পূর্ব পাকিস্তানকে (বাংলাদেশ) শোষনের ফলে। কোন ধরনের সমঝোতা পাকিস্তানী সামরিক শাসকগণ মানতে চায়নি। পাকিস্তানী শাসকগণ মুসলমান বলতে শুধু নিজেদেরকেই মনে করতো। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বকরেছে বাংগালী মুসলমানেরা। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগণ বাংগালী মুসলমানদের সে মর্যাদা দেয়নি। বরং সকল ক্ষেত্রেই তারা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের শোষন করেছে সীমাহীন।

এখন কিছু বুদ্ধিজীবী বলে বেড়াচ্ছেন ৪৭এর দেশ বিভাগ ভুল ছিল। অথবা বাংগালী মুসলমানদের পশ্চিম পাকিস্তানের যোগ দেয়া ভুল ছিল। এর মানে হলো ভারতের হিন্দু শাসনের অধীনে থাকা উচিত্‍ ছিল। বাংগালী মুসলমানেরা অখন্ড বাংলাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু বাংগালী হিন্দু নেতারা স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ চায়নি। তারা জানতেন অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানরা মেজরিটি। তাই তাঁরা অবাংগালী হিন্দু নেতাদের অধীনে থাকতে রাজী হয়ে গেলেন। ফলে অখন্ড স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলনা। আপনারা একবার ভাবুন, পূর্ব বাংলা যদি ভারতের অধীনে থেকে যেত তাহলে কি ৭১ সাল ঘটতো? না, একেবারেইনা। ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও স্বাধীন হতে পারেনি কাশ্মীরের মুসলমানেরা। যাঁরা বলেন,পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা ভুল ছিল তারা অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করেন। তাঁরা ইসলামাবাদ বা ঢাকার অধীনে থাকতে চাননা। এদের অনেকেই কিন্তু মোহাজের হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের হালুয়া রুটি খেয়েছেন। পশ্চিম বাংলা বা ভারতের মুসলমানরা কেমন আছেন তথ্য  সহকারে জানুন। এ ইতিহাসটি জানার জন্যে  দয়া করে বাংলা ভাগের ইতিহাস পড়ুন।

সম্প্রতি বিবাদ শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে। দ্বিমত আগেও ছিল। দ্বিমত ছিল বলেই বংগবন্ধু কমিটি গঠণ করেছিলে। বংগবন্ধু বলেছিলেন তিন মিলিয়ন মানুষ শহীদ হয়েছে। এই সংখ্যাটি ছিল আবেগের।  আমরাও তা গ্রহণ করেছি আবেগের কারণে। যেমন, কবি বলেছেন- লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারে,শুমার করিয়া দেখ কয়েক হাজার।

আধুনিক সংবাদপত্রেও এ ধরনের অংক বা সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে থাকে। যেমন জনসভার জনসংখ্যা কখনই হিসাবের ব্যাপার নয়। কারণ, জনসভার সংখ্যা বলা যায়না।এটা কখনই অংকের হিসাবের ব্যাপার নয়। কোন একটি দূর্ঘটনায় কত লোক মারা গেছে তাত্‍ক্ষণিক বলা যায়না। সরকার  সব সময় সংখ্যা কম দেখায়,খবরের কাগজ বেশী করে দেখায়। জানিনা, সরকার এবং মিডিয়ার মধ্যে এই ফারাক কেন। শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নয়, ৪৭এর দাংগায় কত মানুষ শহীদ বা নিহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব আজও নির্ণিত হয়নি। বাংলাদেশ থেকে কত মাইনরিটি ভারতে চলে যায়,বা কত টাকা ভারতে পাচার হয় তা নিয়েও আন্দাজে পরিসংখ্যান তৈরি হয়। দীর্ঘকাল খবরের কাগজে কাজ করার ফলে এ বিষয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।
শুনেছি, ২৯শে জানুয়ারী ৭২ সালে বংগবন্ধু নির্দেশে সাবেক ডিআইজি রহীম সাহেবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠণ করা হয়েছিল শহীদদের সংখ্যা নির্ণয় করার জন্যে। সে কমিটির রিপোর্ট আজও  প্রকাশিত হয়নি। সেই কমিটিতে সরকারী অফিসার ছাড়াও বেশ ক’জন রাজনীতিক ছিলেন। অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। কেন সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানেন। কত শহীদ পরিবার সরকারের ভাতা পায় তার অংকতো সরকারের কাছেই আছে। তখন শহীদ পরিবারকে মাসে দুই হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হলে ৭২হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছিল। তন্মধ্য ৫০ হাজার পরিবারকে ভাতা দেয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব স্ট্রেটেজিক স্টাডিজের ১৯৯৩ সালের অক্টোবরের জার্ণালে বলা হয়েছে ৭১ সালের ৮ মাস তিন দিনের যুদ্ধে ৫০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। ১৯৯৩ সালের ১৫ই জানুয়ারী সংসদে বিষয়টি কর্ণেল আকবর উত্থাপন করলে আবদুস সমাদ আজাদ বলেন,বংগবন্ধু তিন মিলিয়ন বলার পর আর কেউ কিছু বলেনি। ২৬শে সেপ্টম্বর ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে  মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ শহীদ হয়েছেন তা গণনার কোন পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। এছাড়া বিএনপি সরকারও গণনার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায়নি। গার্ডিয়ান পত্রিকার ৮ই জুন ২০১১ সালে বিবিসির বাংলা বিভাগের প্রধান মরহুম সেরাজুর রহমান বলেছেন, শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন কালে ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারী হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে ক্ল্যারিজ হোটেলে যাওয়ার সাংবাদিক সাথে আলাপ কালে বলেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে তিন মিলিয়ন লোক মারা গেছে। আসলে তিনি তিন লাখ বলেছিলেন। অনুবাদকরা তিন মিলিয়ন বলে প্রচার করেছিলেন।  পরে ভারতের পালাম বিমান বন্দরে তিনি ইংরেজীতে বলেছিলেন তিন মিলিয়ন।

ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের অব্যবহিত পরে মুজিবনগর সরকার প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেব বলেছিলেন ১০ লক্ষ মানুষ নহত হয়েছে।(দৈনিক বাংলা ৪ জানুয়ারী,১৯৭২)। তিন লাখ, দশ লাখ বা ৩০ লাখ সংখ্যা গুলো আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা না পেলে বা বিজয় না হলে এসব সংখ্যার কোন দাম নেই। বংগবন্ধু আমাদের মুরুব্বী,তিনি একটা আবেগের কারণেই ওই তিন মিলিয়ন কথাটি বলেছেন। আমরা তাঁর প্রতি সম্মান দেখাবের জন্যে সংখ্যাটিকে সম্মান করি।যাঁরা গবেষক তাঁরা আবেগের উপর নির্ভর করেন না। তাঁরা সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। যেমন ধরুন,অযোধ্যার রাম মন্দির ইতিহাস ও আইনগত ভাবে প্রমানিত হয়েছে সেখানে কোন রাম মন্দির ছিলনা। রাম নামে কোন ব্যক্তি ছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা স্বীকার করেন না। কিন্তু তাতে কি আসে যায়। হিন্দুরা রামকে দেবতা ও রাজা মনে করেন। রামায়ন ও মহাভারত ভারতীয় সভ্যতার দুটি মহাকাব্য। সারা জগতে বিখ্যাত। মীর মোশাররফ হোসেন সাহেব বাংলার মুসলমানদের বিষাদ সিন্ধু নামের একটি উপন্যাস উপহার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবের সাথে এর তেমন কোন সংযোগ নেই। এখনও গ্রামে গ্রামে বিষাদসিন্ধু পাঠ করা হয়। তিন মিলিয়ন বা তিরিশ লাখ শহীদ কথাটি এখন কবিতার লাইনের মতো হয়ে গেছে। কেমন যেনো মনে হয় তিরিশ লাখ না বললে কবিতাটি পূর্ণতা লাভ করবেনা। তাই বলছি কাব্য আর রাজনৈতিক ভাষণের জন্যে তিরিশ লাখ তোলা থাক।

সংখ্যা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও তার বন্ধুরা জংগী ভাষণ ও মিছিল করার ব্যাপারে  আমি কোন আপত্তি দেখিনা। কারণ মিছিল ও ভাষণ কোন ইতিহাস নয়। এসব করা হয় রাজনীতিতে সুবিধা লাভ করার জন্যে। যদি তাঁরা এমন একটি গুরুত্পূর্ণ বিষয়ে সিরিয়াস বা আগ্রহী হতেন তাহলে এ ব্যাপারে একটি দলিল তৈরি করতে পারতেন। প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ,যাঁরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের মা বাপ বলে মনে করেন তাঁরা কেন কোন ধরণের দলিল তৈরি করেননি বা করছেন না।সরকার ইচ্ছা করলেই বংগবন্ধুর ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে রহীম কমিটির রিপোর্টর্টাকে পূর্ণতা দিয়ে প্রকাশ করতে পারতেন। বংগবন্ধু নিজে ৩মিলিয়ন শহীদের কথা বললেও তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে দলিল তৈরির জন্যে একটি কমিটি করেছিলেন। তাঁর সদিচ্ছাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কমিটি কেন কাজটি সমাধা করে যেতে পারলোনা তাও অনুসন্ধান করা যেতে। এ ব্যাপারে চলমান সরকার একটা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পারে। ৪৫ বছরেও বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কাজ না করায় বিদেশীরা তাঁদের মতো করেই গবেষণা করে সংখ্যা নির্ধারন করছে। আর আওয়ামী লীগ ও ভারতপন্থী জ্ঞানী গুণীরা গবেষকের বিরুদ্ধে হুক্কা হুয়া ডাক তুলে চিত্‍কার করতে থাকেন। সরকারতো একটা দলিল তৈরি করে বলতে পারতেন সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার বাইরে অন্য কোন সংখ্যা বলা বা প্রচার করা যাবেনা। জাতির দূর্ভাগ্য আমরা এমন মূল্যবান কাজটি করতে পারিনি। পাকিস্তানে হামুদুর রহমান কমিশন একটি দলিল তৈরি করেছেন। হতে পারে সেই দলিল পাকিস্তানীদের পক্ষে গেছে। আমরাতো সরকারী ভাবে ওই কমিশনের রিপোর্টকে আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। বিশ্ববাসীকে ইতিহাস রচনার প্রক্রিয়া শিখিয়েছে। আমরা বাংগালী বলে মুসলমান ঐতিহাসিকদের অনুসরণ করতে পারিনি। ১৯০৫ সালের বংগভংগের ইতিহাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা আসল ইতিহাস অনুসরন না করে ভুয়া ইতিহাসকে অনুসরন করি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ব্যাপারেও আমরা ভারতের গোয়েন্দা ও সামরিক তথ্যের উপর নির্ভর করি। কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবস পালিত হয় ভারতীয় দৃষ্টিকোন থেকে। বাংলাদেশ থেকে যে প্রতিনিধি দল সেখানে যান তাঁরা মেহমান হিসাবে বিনীত থাকেন ও মেজবানের গুণ জ্ঞান করেন।তাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ বলেন। সেভাবেই তাঁরা ইতিহাস তৈরি করছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন চিন্তার জগতে একেবারেই দ্বিধা বিভক্ত। এদিক থেকে ভারত সরকার, ভারতীয় গোয়েন্দা ও বুদ্ধিজীবীরা সফল হয়েছেন। অনেকেই মনে করেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তৈরি করবেন ভারতীয় বন্ধুরা।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে জগতব্যাপী বিভ্রান্তি আছে। বাংগালীরা তিন মিলিয়ন নিয়েই সন্তুষ্ট। তিন মিলিয়নকে তাঁরা একটি ধর্মীয় সংখ্যা মনে করেন। যদিও বংগবন্ধু তিন মিলিয়ন বলেও সংখ্যা নির্ণয় করার জন্যে কমিটি করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শর্মিলা বসু বলেছেন, ‘‘ একাত্তরের যুদ্ধের উপর গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম দুই লাখ থেকে চার লাখ ধর্ষিতার যে সংখ্যা বাংলাদেশ প্রচলিত আছে তার কোন ভিত্তি নেই। সংখ্যার একটি অনুমান থাকতে পারে । তবে অনুমানেরও একটি ভিত্তি লাগে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যাপারে তেমন কোন পরিসংখ্যন নেই। শর্মিলা আরও বলেছেন,বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দূর্বলতম দিক হচ্ছে হত্যাকান্ড, নিহত ও ধর্ষণের সংখ্যার অবিশ্বাস্যতা। একই সংগে ৭১ ও ৭২ এ উর্দুভাষী ও পাকিস্তানের অখন্ডতায় বাংগালীদের মারা যাওয়ার সংখ্যা লিপিবদ্ধ না করা। হোকনা তারা  স্বাধীনতার শত্রু। এটাকে ঐতিহাসিকদের উদাসীনতা বলা হবে , না ইচ্ছাকৃত ভাবে ইতিহাস বিকৃতি বলা হবে তা নির্ধারন করা কঠিন। তবে সত্য কথা বলার সাহস এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেদিন দিন লয় হচ্ছে তা নিমিষেই বলা যায়। সত্য বলার পিছনে মূলত তিন ধরণের ভয় কাজ করে, প্রথমত দশ জনের মধ্যে নয় জন সত্যবাদীকে মিথ্যুক বলে প্রতিপন্ন করবে, দ্বিতীয়ত সত্যবাদী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন সম্ভাবনাপ্রায় শতভাগ। তৃতীয়ত সত্যবাদিতার জন্যে সত্যবাদীকে অপদস্থ হতে হবে।

১৯৭৪ সালে দৈনিক জনপদ সম্পাদক গাফফার চৌধুরী‘সাহস করে সত্য বলতে হবে’ বলেই লন্ডনে পাড়ি জমান।তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে কত মানুষ শহীদ হয়েছে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। আসলে বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কত নেতা বা কর্মী শহীদ হয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কোন নেতার আপন জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হননি(মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র-পঞ্চম মুদ্রণ পৃষ্ঠা ২৩)।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা বলতে আমরা সাধারন ভাবে মনে করি পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও তাদের সমর্থকদের দ্বারা নিহতরা বাংগালীরা। কন্তু বাংগালী দ্বারা নিহত ভিন্ন ভাষীদের তালিকা করা হয়নি। ভারতে শরণার্থী শিবিরে অবহেলায় নিহতের সংখ্যাও আমরা জানিনা। আমাদের সেনাবাহিণী, পুলিশ, ইপিআর আনসার কতজন শহীদ হয়েছেন তাও আমরা জানিনা।

অপরদিকে ভারতীয় সৈন্য নিহত বা শহীদ হওয়ার সংখ্যা ও আমরা জানিনা পাকিস্তানী সৈন্য কত বা অফিসার কত নিহত হয়েছে তাও প্রকাশিত হওয়া দরকার। যদি কোন বিজয়ী বলে পরাজিতের কোন ইতিহাস হয়না। ইতিহাস সব সময়েই বিজয়ীর। বিজয়ীর লিখিত বা বলা ইতিহাসই সত্য। কিন্তু তা মেনে নিলেও  সংখ্যা বিবাদ ও দ্বিমত থেকেই যাবে। আমরা বলবো,আমাদের প্রাণের নেতা বলেছেন,তিরিশ লাখ মানুষ মারা গেছে। আমি বলবো বিজয়ীর সংখ্যা হলো আনন্দ, শুধুই আনন্দ। বিদেশী গবেষক,শিক্ষকও সত্য অনুসন্ধানীদের সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করতে। আমাদের মা বাপ ভাইবোন মারা যাওয়ার দু:খ তারা কি বুঝবে?

লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

ershadmz@gmail.com

 


জাতীয় প্রেসক্লাবের কবিতাপত্র একটি কবিতা আন্দোলন। এ আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০০২ সালে। আজ এর ১৩ বছর পার হতে চললো। আগামী কাল কবিতাপত্রের ১৪ বছরের যাত্রা শুরু করবে। ইতোমধ্যেই কবিতাপত্রের কবিরা জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন। অনেকেই আগে থেকেই দেশের কবিতা জগতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। আমাদের কবিতা আন্দোলন সারা দেশেই পরিচিতি লাভ করেছে। আপনারা সকলেই কবিতাপত্রের সম্পাদক কেজি মোস্তফাকে ভাল করেই চিনেন। তিনি দেশ বরেণ্য একজন কবি ও গীতিকার। ১৩ বছর ধরে তিনি অকাতর পরিশ্রম করে কবিতাপত্রের সম্পাদনা করে আসছেন। এজন্যে তিনি কখনই কোন ওজর আপত্তি করেন। কবিতাপত্র পরিষদ ও ক্লাবের কবিগণ এজন্যে কেজি ভাইয়ের কাছে ঋণী।
বিগত বছর গুলোতে আমরা কবিতাপত্রের বর্ষপূর্তি উত্‍সব ধুমধাম করে পালন করেছি। এবার সে রকম কিছু করতে পারছিনা বলে নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগছে। আর্থিক কারণে আমরা ধুমধাম করার উদ্দ্যোগ নিতে পারিনি। এর আগে জাতীয় পর্যায়ের বহু প্রতিষ্ঠান আমার উত্‍সবের স্পন্সর হিসাবে এগিয়ে এসেছেন। এবার স্পন্সরশীপের ব্যাপারে কারো সাথে আলোচনা করার মতো সুযোগ পাইনি। কবিতাপত্রের মাসিক অনুষ্ঠানে অনেক অতিথি নিয়মিত অংশ গ্রহণ করেন। এতে আমরা আনন্দিত। অতিথিদের আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করছি, আগামীতে অতিথিরা আরও ব্যাপক হারে অংশ গ্রহণ করবেন।
কবিতাপত্রের জন্ম লগ্ন থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাব আমাদের সাহাযা ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। কবিতাপত্র পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাব কতৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের কবিতা আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক। জয় হোক, কবিতার জয় হোক।

এরশাদ মজুমদার
সভাপতি, কবিতাপত্র পরিষদ, জাতীয় প্রেসক্লাব
৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৫


একজন সংখ্যালঘুর আত্মকথন / এরশাদ মজুমদার

ডাক্তার কালিদাস বৈদ্যের কথা এদেশের রাজনৈতিক সচেতন বেশীর ভাগ নাগরিকেরাই জানার কথা। পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন । যার টাইটেল হলো ‘বাংগালীর মুক্তি যুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব’। বইটি সম্পর্কে সাংবাদিক পবিত্র ঘোষ একটি ভুমিকা লিখেছেন,তাতে তিনি বলেছেন ৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় কালিদাস বৈদ্য কোলকাতায় ছাত্র ছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি পূর্ব  পাকিস্তান ফিরে যান পাকিস্তান ভাংগার শপথ নিয়ে। বৈদ্যবাবুর আশা ছিল পাকিস্তান মুক্ত পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশ ইসলাম মুক্ত হয়ে শুধু বাংগালীর দেশ হবে। বাংগালী বলতে বৈদ্যবাবু ইসলাম  বা ধর্ম মুক্ত বাংগালীদের মনে করেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি পাকিস্তানের  সামরিক জান্তা ও ভুট্টোর কারণে পাকিস্তান ভেংগে গেছে। বংবন্ধু শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে গেছেন একটি সমঝোতা  চেয়েছিলেন। পাকিস্তানী জেনারেলরা বংগবন্ধুর সরলতার সাথে বেঈমানী করে পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করে বাংগালীদের হত্যার অভিযান চালায়।
বৈদ্যবাবু তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন যে,গ্রামে প্রচার আছে ‘শেখ সাহেবের পূর্ব পুরুষ নম: সামাজচ্যুত হয়ে মুসলমান হয়ে যায়।
ওই বইতে বলা হয়েছে,কোলকাতার মহানিধন দাংগায় শেখ মুজিব নিজ হাতে ছোরা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন এবং দাংগায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। দাংগায় হিন্দু খুন করার শিক্ষা শেখ মুজিব তাঁর গ্রাম থেকেই পেয়েছিলেন। বৈদ্যবাবু লিখেছেন, আমি যুবলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হয়েই কাজ শুরু করি।কিন্তু শেখ মুজিব সব রকম ভাবেই যুব লীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের বিরোধিতা করেন। কারণ তিনি ছিলেন ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে শিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ। বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হিন্দু সমাজের বৃহত্তর স্বার্থেই হিন্দুরা মুজিবকে সমর্থনদিলেও  মুজিবের প্রতি বিশ্বাস কোনদিনই ছিলনা। কারণ মুজিব ছিল নামাজ রোজাকারী একজন মুসলমান।তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের ডেকে এনে লম্পট  মুসলমান নবাবকে সরিয়ে  হিন্দুরা নিজে নবাব হতে সাহস করেনি। কারণ, হিন্দুরা পরের চরণে নিজেদের অর্পণ না করতে পারলে তাদের ঘুম হয়না। ১৮৫৮ সালেও তারা একজন মুসলমান সম্রাটকে নেতা স্বীকার করে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু নিজেরা নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নেয়ার সাহস দেখাতে পারেনি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যানুপাতে ৩৬ জন হিন্দুর নমিনেশন পাওয়ার কথা থাকলেও শেখ মুজিব মাত্র একজন হিন্দুকে নমিনেশন দিয়েছিলেন। এক সময় তথাকথিত প্রগতিশীল হিন্দু নেতারা  যুক্ত নির্বাচন চেয়েছিলেন। এখন মনে হয় তাঁরা পৃথক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামী লীগকেই তাঁদের নিজেদের দল মনে করেন। ন্যায় অন্যায় সকল কাজেই তাঁরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। আমার ধারনা ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশের হিন্দুরা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। তাঁদের হয়ত ধারনা ছিল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলে তাঁদের নিজেদের ও দিল্লীর স্বার্থ রক্ষা হবে। আসলে এখানে দিল্লীর স্বার্থ রক্ষা করাই হলো প্রধান।

শুনেছি , ভারতের পশ্চিম বংগে ( যদিও পুর্ববংগ নামে কোন রাজ্য বা প্রদেশ আর এখন নেই) ৮০ জনেরও  বেশী মুসলমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন দল থেকে। তবে বেশীর ভাগ সংসদ সদস্য তৃণমূল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।  ছয়জন মুসলমান নাকি মন্ত্রীও হয়েছেন। পশ্চিম বংগে ৪০ ভাগ মুসলমান নাগরিক রয়েছেন বলে মনে করা হয়। যদিও সরকারী হিসাবে তা স্বীকার করা হয়না। বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ১০ ভাগ বলে হিন্দুরা দাবী করেন। ডাক্তার বৈদ্যের মতে ৭০ সালেই ৩৬ জন হিন্দুর নমিনেশন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বংগবন্ধু তা দেননি। দিল্লীও হয়ত চায় বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাক কেয়ামত পর্যন্ত। পৃথক নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাবে। দিল্লী বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে রাজনীতি করতে ভালবাসে। বাংলাদেশে কিছু হলেই ভারতীয় হাই কমিশনের কর্তাদের দৌড় ঝাপ শুরু হয়ে যায়। দেখে শুনে মনে হয়, বাংলাদেশের হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষা করাই দিল্লীর কাজ। সেদিক থেকে ঢাকা অনেক ভাল কথায় কথায়  ভারতের মুসলমান রক্ষা করার জন্যে দৌড়ে দিল্লী যায়না বা যেতে সাহস করেনা। ভারতের সাধারন মুসলমানরা ঢাকার সহানুভুতি আশাও করেনা। কারণ ঢাকার সরকার মুসলমানদের স্বার্থের কথা ভাবেনা। কারণ এখানকার সরকার ধর্মমুক্ত।

এর আগেও আমি লিখেছি, বাংলাদেশের হিন্দুরা এখন মেজরিটির অধিকার ভোগ করে থাকেন। সর্বত্রই তাঁদের অবস্থান তিরিশ থেকে চল্লিশ ভাগের মতো। সেদিন শুনলাম শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন উচ্চ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদে অবস্থান করছেন  হিন্দুরা। ধর্মমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্যে শুরু থেকেই নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবকে মন্ত্রী করা হয়েছে। কারণ, তিনি একজন মৌলবাদী ধর্মমুক্ত মানুষ। তিনি নিজের বিশ্বস্ত লোকজনকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়েছেন। আসলে এটাই ছিল বৈদ্যবাবু ও তাঁর বন্ধুদের স্বপ্ন, যা এখন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। ধর্মমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু বা ভারতের আদর্শ বা লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে একথা বৈদ্যবাবু ও তাঁর সমর্থকেরা ভাল করেই জানেন। আমি কিন্তু বৈদ্যবাবু  ,তাঁর বন্ধু ও দিল্লীর এই নীতিকে সমর্থন করি। কারণ, কেউ যদি নিজ এবং তাঁর গোত্রের,গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা করেন তাতে দোষের কিছু নেই। কারণ নিজ স্বার্থ রক্ষা মানুষের অধিকার। সংবিধানও তা সমর্থন করে। প্রশ্ন হলো দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন কিনা? না পারলে তা কার ব্যর্থতা? পলাশীতে নবাবের সৈন্য,রসদ, শক্তি  ইংরেজের চেয়ে বহু গুণ বেশী ছিল। কিন্তু জয় হয়েছিল ইংরেজের। সুতরাং জয়লাভের জন্যে মেজরিটি আর মাইনরিটির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বুদ্ধি ও কৌশল। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন ছিল বুদ্ধি ও কৌশলের খেলা। যে খেলায় দিল্লী ও মীরজাফরের সমর্থন ছিল। ফলে দিল্লীর জয় হয়েছিল। হেরে গিয়েছে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ।

তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যা তত্বটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংখ্যা দ্বারাই নির্ধারিত হয় মানুষের মর্যাদা। সংখ্যাই নির্ধারণ করবে সরকার কে চালাবে । এর আগেও লিখেছি  ভোটের গণতন্ত্রে একজন মাজুর ভিক্ষুক আর রাস্ট্রপতির মর্যাদা এক। কারণ, মাজুরের এক ভোট আর রাস্ট্রপতিরও এক ভোট। ভোটের সময় আপনি নিশ্চয়ই দেখেন একজন ক্ষমতাবান  ভোট প্রার্থী মাজুরের হাত ধরে বলছেন আমার জন্যে দোয়া করবেন। আমি এবার ভোটে দাঁড়িয়েছি। নির্বাচনের সময় এটা হলো দৃশ্যমান চিত্র। অদৃশ্যমান চিত্র হলো,প্রার্থীর উক্তি হলো ‘আরে ব্যাটা আমি তোর ভোটের ধার ধারি নাকি? আমিতো জিতবোই। আমাদের দেশের গণতন্ত্র জগতের শ্রেষ্ঠ গণতন্ত্র। আমাদের নেত্রী সাগরকন্যা, জগতকন্যা,গণতন্ত্রকন্যা। ভোট হলেও আমরা জিতি , না হলেও জিতি। আমরাইতো গণতন্ত্রেকে বাঁচিয়ে রাখি, গণতন্ত্র খাই,গণতন্ত্রে ঘুমাই। জগতে কোন দেশের মানুষই গণতন্ত্রকে এত ভালবাসেনা। ডেইলী স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাহেব ও প্রথম আলো আশা করছেন বাংলাদেশেও মায়ানমারের মতো একটি সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। প্রথম আলোর সোহরাব হোসেন একটি সুষ্ট নির্বাচনের জন্যে প্রার্থণা করেছেন। মায়ানমারে ৫০ বছর ধরে সেনা শাসন চলছে। ২৫ বছর পর একটি সেনা  প্রভাব ও পক্ষপাত মুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে যার মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতি ফলন ঘটেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিত মায়ানমারের চেয়ে অনেক খারাপ। কেন খারাপ তা আর বিস্তারিত আর বললামনা। সংখ্যাতত্বের গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নত কোন প্রক্রিয়া বিশ্ব আবিষ্কার করতে পারেনি। গণতন্ত্রেরও নাকি বিভিন্ন রূপ আছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সাথে রাষ্ট্র শক্তি জড়িত। যিনি বা যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন তাঁরা শক্তির মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকেন। বাংলাদেশে এখন জনশক্তি এত বেশী দমিত হয়েছে যে এই শক্তি নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারে সেনাশক্তি যুগ যুগ ধরে ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশ ও রাষ্ট্রকে নিজেদের দখলে রেখেছে।  বাংলাদেশে শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র। বৈদ্যবাবুর বইটি বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছেন কিনা জানিনা।

বৈদ্যবাবু লিখেছেন, বেশীর ভাগ মুসলমান বুদ্ধিতে তীক্ষ্ণ,ব্যবহারে উগ্রও হিংস্ত্রতায় অগ্রগামী। তুলনায় হিন্দুরা নরমপন্থী, রক্ষণশীল,ও বিবর্তনবাদী। তাদের সাহসও কম। সেজন্যেই তারা বার বার মুসলমানদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে। তার ফলে মুসলমানেরা বাইরে থেকে এসে ভারত জয় করে ৮শ’ বছর রাজত্ব করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ও তারা মানে বাংগালী মুসলমানেরা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। তারা ভারত সরকার ও হিন্দুদের ধোকা দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে নিল। তাদের কোন ঝুঁকি নিতে হয়নি। ঝুঁকি নিয়েছে ভারত সরকার আর হিন্দুরা। খুব কম রক্তই সেদিন মুসলমানদের দিতে হয়েছে। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলো আর পুর্ববংগ পেলো তথাকথিত স্বাধীনতা। ভারত বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে  ১৭ হাজার সৈন্যের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। এত সাহায্য করার পরও মুজিব ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেনি।

বৈদ্যবাবুর মতে, মুজিব( আমরা সম্মান করে বংগবন্ধু বলি) ছিলেন ইসলামিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী।বাংগালী জাতীয়তাবাদকে হত্যা করার জন্যে ইসলামিক জাতীয়তাবাদকে তিনি শুরু থেকেই নজর দিতে থাকেন। বৈদ্যবাবু স্বীকার করেছেন যে, গোয়েন্দা মারফত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী জানতে পেরেছেন মুজিবকে হত্যা করার পরিকল্পনা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে নাকি বংগবন্ধুকে হুঁশিয়ারও করেছিলেন। বৈদ্যবাবু স্বীকার করেছেন,গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মুজিবকে উত্‍খাত করার জন্যে এমএনএ হোস্টেলে তাঁরা আলোচনা শুরু করেছিলেন। বৈদ্যবাবু মনে করেন, যে সেনাবাহিনী ৩০ লাখ বাংগালীকে হত্যা করেছে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে সেই ইসলাম প্রেমিক সেনাবাহিনীকে সব জেনেও তিনি তাদের বিচার করেননি। অথচ সেই সেনারা গণ বিপ্লবের আগেই মুজিবকে হত্যা করে। বংগবন্ধু নাকি কোন এক সময় তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন বিপদে পড়লে তোরা কখনই ভারতের কাছে সাহায্য চাইবিনা। ভারতকে কখনই বিশ্বাস করবিনা। সুযোগ পেলেই ভারত বাংলাদেশকে গ্রাস করে নেবে। আমি অনেক কষ্টে ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়েছি। তারা আবার আসার সুযোগ পেলে আর ফিরে যাবেনা। তাদের সাথে উপরে ভালো ব্যবহার করবি। ধোকা দিয়ে কাজ আদায় করার সুযোগ ছাড়বিনা।

শুনেছি, ৪৭ সালে কংগ্রেস নেতারা বলেছিলেন,পাকিস্তান বেশী টিকবেনা। তাঁদের কথা বা বাণী সত্য প্রমানিত হয়েছে। ৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হয়ে গেছে। বৈদ্যবাবুরা ৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান ভাংগার জন্যে জন্যে কাজ করে আসছেন। মুসলমানদের একটি স্বাধীন দেশ থাকবে এটা ভারতীয় মোল্লা হিন্দুরা কখনই চাননি। পাকিস্তান ভাংগার পর বৈদ্যবাবু আশা করেছিলেন,বাংলাদেশ আর শুধু মুসলমানের দেশ থাকবেনা। এটা ধর্মমুক্ত বাংগালীদের দেশ হবে যারা ইসলামকে গৃহধর্মে পরিণত করবে। মানে কোথাও কোন মাদ্রাসা মক্তব ও মসজিদ থাকবেনা। রাষ্ট্র ধর্মমুক্ত থাকবে। বংগবন্ধুর দেশ পরিচালনায় ইসলামকে বাদ না দেওয়ায় বৈদ্যবাবু আবার কোলকাতায় ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈদ্যবাবুরা কি ভুমিকা পালন করেছেন তার কিছু ইশারা একে খোন্দকার সাহেবের বইতে পাওয়া যায়। ভারতের দার্শনিক ও ইতিহাস গবেষকগণ অখন্ড ভারতের স্বপ্ন দেখেন। তাঁরা অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তার সাথে আমাদের দেশের বেশ কিছু নামী দামী মানুষ অখন্ড ভারতের আশায় গবেষণা করে যাচ্ছেন। একজন রাজনীতিক একদিন হাসতে বললেন, অখন্ড ভারত হলে অসুবিধা কোথায়? আমার এলাকা থেকে আমি দিল্লীর সংসদ সদস্য হবো। ৭১ সালে বৈদ্যবাবুরা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করেননি। তাঁরা সরাসরি দিল্লীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এ ব্যাপারে দিল্লীর দ্বিমুখী নীতি ছিল। প্রকাশ্যে লোক দেখানোর জন্যে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে সমর্থন দিতো। গোপনে বা সত্যিকার ভাবে সমর্থন করতো বৈদ্যবাবুদের কোটারীকে আর তাঁদের অনুগত মুসলমানের পোলারা। আক্ষেপ করে বৈদ্যবাবু লিখেছেন, ভারতে জন্ম নিয়ে প্রথমে ছিলাম ভারতবাসী, পরে পাকিস্তানী হই। তথাকথিত বাংলাদেশ স্বাধীন করেও বাংগালী হতে পারিনি, হয়েছি বাংলাদেশী। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েও তারা আর দেশে ফিরতে পারেনি। একদিন তারা অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে আসবে। বৈদ্যবাবু জীবিত আছেন কিনা, তবে তাঁর অনুসারীরা আছেন এখানে অথবা ভারতে। যাঁরা বাংলাদেশকে তাঁদের দেশ হিসাবে দেখতে চান।

১৯৭২ সালের ৩রা জুন বৈদ্যবাবু তথাকথিত শরণার্থী কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিলেন যাতে তিনি হিন্দুদের সুযোগ সুবিধার জন্যে বেশ কিছু দাবী উত্থাপন করেছিলেন। তাঁর প্রথম দাবী ছিল যতদিন পর্যন্ত হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষিত না হবে ততদিন যেন ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করে। তিনি দাবী করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেন মুক্ত বাণিজ্য, অবাধ চলাফেরা, উদার সাংস্কৃতিক লেনদেনের জন্যে একটি চুক্তির প্রয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে হিন্দুদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার জন্যেও তিনি দাবী করেছিলেন দিল্লীর কাছে। তাঁর আরও দাবী ছিল ১৯৭০ সালের আগে নানা ধরণের অত্যাচারের কারণে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা যেন সকল ধরণের অধিকার সহ বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেন।

লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

ershadmz@gmail.com

 


ব্যবসার রাজনীতি ও রাজনীতির ব্যবসা / এরশাদ মজুমদার

অনেকদিন পর আমাদের রাস্ট্রপতির মুখে একটি মূল্যবান কথা শুনলাম। ‘কোটেবল কোটস’ বলা যেতে পারে। হঠাত্‍ করে কেন তিনি এমন মূল্যাবান কথা বললেন তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছেনা। আমাদের সংবিধান মোতাবেক তিনি রাস্ট্রপতি হলেও তাঁর তেমন কোন ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া আমাদের রাস্ট্রপতিরা স্বাধীন ভাবে তেমন কোন কাজ করতে পারেননা। এটা জেনে শুনেই সবাই রাস্ট্রপতি হন। এই পদ ও পদবী একটি সাংবিধানিক অলংকার। আমরা দেখতে পাই সংসদ তাঁকে নির্বাচিত করেন, আসলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মনোনীত করেন। দলের বাইরে যাওয়ার কোন ক্ষমতা সাংসদদের নেই। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব বলেছিলেন, রাস্ট্রপতিদের কবর জেয়ারত আর মিলাদে যাওয়া ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই। তিনি আরও একটি ‘কোটেবল কোটস’ বলেছিলেন, তা হলো,ছাত্রদের এখন পড়ালেখার দরকার নেই, কারণ রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্ররা এমপি মন্ত্রী হতে পারে। তাহলে তারা পড়ালেখা করবে কেন? মেধাবী ছাত্ররাতো চাকুরী করবে। সচীব ও বিচারপতি হবেন। ধনী বা বিত্তবান হতেতো পড়ালেখা লাগেনা। মেধাবীরা মেধাহীনদের চাকুরী করবেন। আবদুল হামিদ সাহেব একজন আইনজীবী। তিনি বহু বছর ধরে রাজনীতি করছেন। সংসদের স্পীকার হিসাবও তিনি নাম করেছিলেন। যদিও স্পীকারও মনোনীত করেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কাগজে কলমে দেখানো হয় সংসদীয় দল স্পীকার নির্বাচিত করে। হামিদ সাহেব বলেছেন, তিনি এখন বন্দী জীবন যাপন করেন। তিনি ইচ্ছা করলেই তাঁর এলাকার জনগণের সাথে দেখা করতে পারেননা। তিনি বলেছেন রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। অক্টোবরের ১৪ তারিখে ইংরাজী পত্রিকা ডেইলী স্টার এক বিশ্লেষন ধর্মী প্রতিবেদনে বলেছে, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মাত্র চার পারসেন্ট ব্যবসায়ী প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছে। ২০০৮ সালের জেনারেল মইনের বিতর্কিত নির্বাচনে শতকরা ৬৩ ভাগ ব্যবসায়ী সংসদে নির্বাচিত হয়েছে। আসলে এখন রাজনীতি ও সংসদ নিয়ন্ত্রন করেন ব্যবসায়ীরা। আসলে রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের উত্থান শুরু হয়েছে জেনারেল আইউবের আমলে। তবে তখনও ব্যবসায়ীরা পুরো সংসদ দখলে নিতে পারেনি। সে সময়ে ব্যবসায়ীরা সরাসরি রাজনীতিতে আসতেন না। তাঁরা টাকা দিয়ে সাংসদদের কিনে নিজেদের লক্ষ্য হাসিল করতেন। একবার শিল্পপতি বাওয়ানী আমাকে বলেছিলেন,আমরা চাই কাজ। তাই আমাদের স্বার্থের পক্ষে কাজ আদায় করে নিতাম সাংসদদের দিয়ে। এখন ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সংসদে উপস্থিত থেকে নিজেদের লক্ষ্য হাসিল করছেন।
সাহাবুদ্দিন সাহেব ছিলেন একজন বিচারপতি। তিনি আইন সংবিধান ভালই জানেন ও বুঝেন। কিন্তু রাস্ট্রপতি হিসাবে তিনি সংবিধানের বাইরে যেতে পারেননা। আমাদের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে রাজা বাদশাহর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারকে দেশে বিদেশে অনেকেই কর্তৃত্ববাদী সরকার বলে থাকেন। আসলে চলমান সংবিধানই প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে কর্তৃত্ববাদী বানিয়েছে। প্রত্যেক সরকারই সুযোগ পেলেই সংবিধানকে নিজের মতো করে সাজাবার চেস্টা করেছেন। ৭২এর সংবিধানও তৈরি করা হয়েছে এক দলীয় সাংসদরা। তখন অবশ্য সাংসদদের বেশীর ভাগই ছিলেন রাজনীতিক এবং শিক্ষিত। তবুও সংবিধান ছিল বংগবন্ধু প্রভাবিত। তখন বংগবন্ধুর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তাঁর কথা ও ভাবনার বাইরে অন্য কোন ভাবনা ছিলনা। তাই তিনি চোখের পলকেই এক দলীয় সংবিধান তৈরি করতে পেরেছিলেন। অথচ তিনি সারাজীবন লড়াই করেছেন বহু দলীয় গণতন্ত্রের জন্যে। বামপন্থী ধারার কিছু লোকের কুমন্ত্রণায় তিনি এক দলীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তখন তিনিই ছিলেন রাস্ট্র ও দেশ। বংগবন্ধুর ভাগিনা শেখ মনি লিখেছিলেন, আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই । শেখ মনিই পল্টনের বক্তৃতায় বলেছিলেন, বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। তাবেদারদের রাস্তার শ্লোগাণ ছিল‘ এক নেতা এক দেশ, বংগবন্ধু বাংলাদেশ। চতুর্থ সংশোধনীতে বংগবন্ধুকে রাস্ট্রপতি হিসাবে যে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল তা পরবর্তী শাসকরা ব্যবহার করে চলেছেন। সংসদীয় সরকার চালু হওয়ার পরেও সেই ক্ষমতা ভোগ করছেন প্রধানমন্ত্রীরা।আগামীতেও প্রধানমন্ত্রীরা রাজকীয় ক্ষমতা ভোগ করবেন একথা নির্ভয়ে বলা যায়। কারণ, নিজের ক্ষমতা কমিয়ে বা ক্ষমতার সমন্বয় সাধন করার ইচ্ছা কে করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের আমুল পরিবর্তন দরকার এ চিন্তা আমার মতো কয়েকজন নাগরিকের হয়ত আছে। কিন্তু আমি বা আমরা ক’জন কি করতে পারি। সংবিধান ও নাগরিক অধিকার নিয়ে এখন আর ভাবার মতো কেউ নেই। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্যে যতটুকু ভাবেন তার চেয়ে হাজার গুণ বেশী ভাবেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে। তিনি তাঁর সকল ভাষণে খালেদার কথা না বলে পারেন। আইউব খান আইন করে বিরোধী দলের রাজনীতিকদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। সে ধরনের কোন আইন করার কথা প্রধানমন্ত্রী ভাবতে পারেন। নেহেরুজী,লী কুয়াং, মহাথির, পার্ক চুং হি সহ আরও অনেকে যদি ২০/৩০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারেন তিনি পারবেন কেন। এ বিষয়েও তিনি ভাবতে পারেন। আরও ভাবতে পারেন দেশের দ্রুত উন্নতি ও কল্যাণের জন্যে একশ’ভাগ গণতন্ত্রের কি প্রয়োজন? আইউব খান বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও সে রকম নতুন কিছু একটা ভাবতে পারেন। তাহলে বিরোধী দলের উত্‍পাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। শোনা যায় বিরোধী দলের কর্মী ও নেতাদের বিরুদ্ধে কয়েক লাখ মামলা আছে। হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা জেলে আছেন। এতো ঝক্কি ঝামেলার কি প্রয়োজন? কোন আদালতই মামলা সত্য মিথ্যা কি তা নিয়ে ভাবেন না। তাঁরা পুলিশ বা রেব কি অভিযোগ আনলো তার ভিত্তিতে বিচার করেন। আবারও সংবিধান ও আইনের কথা এসে গেল।
এর আগেও আমি চলমান আইন ও সংবিধান নিয়ে আমি লিখেছি। এ বিষয় নিয়ে দেশের আইন বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা ভাবেন না। বাংলাদেশে এখন মানুষের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার এর চেয়ে রাস্ট্র, সংবিধান ও সরকার কোটি কোটি গুণ বড়। নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার জন্যে কাগজে কলমে হয়ত কোন আইন থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা তেমন দেখা যায়না। ল্যাংড়া খোঁড়া, মাজুর ও বকলাংগ,দেখতে মানুষের মতো হলেই নাগরিক ও ভোটার হওয়া যায়। রাস্ট্রপতির এক ভোট আবার বিকলাংগ মাজুরেরও এক ভোট। সুতরাং মানুষ ও নাগরিক হিসাবে আইনের দৃষ্টিতে তাঁরা সমান। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা প্রভু ও দাস। শুধু দাসের চেয়ে ক্রীতদাস অনেক ভাল। ক্রীতদাসের মালিক তাঁর ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করেন। শুধু দাসের সে অধিকার নেই। বাংলাদেশে অশিক্ষা ও নিরক্ষতার কারণে দাসেরা জানেনা তাদের অধিকার কি? দাসদের উপর অত্যাচার শুরু হয় তহশীল অফিস থেকে। কারণ, প্রজা বা নাগরিক তাঁর জমিজমা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা। আমরা ছাত্র বয়সে তহশীল অফসের বিরুদ্ধে বহু আন্দোলন করেছি। কিন্তু আইনের কোন পরিবর্তন হয়না। সাধারন মানুষের কথা ভেবে কোন আইন তৈরি করা হয়না। তবুও আজ সকালে খুব সুন্দর আশাপ্রদ একটি খবর দেখলাম প্রথম আলোতে। রাজশাহীর পবা উপজেলার সহকারী কমিশনার ল্যান্ড শহাদাত হোসেন তাঁর অফিসে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সেখানে সেবাপ্রার্থীরা এখন আর দিনের পর দিন ওই অফিসে ধর্ণা দেয়না। আশে পাশে কোথাও দালাল নেই। বিভাগীয় কমিশনার সারা বিভাগে শাহাদাত হোসেনের মডেল চালু করার চেস্টা শুরু করেছেন। সরকার ইচ্ছা করলে এই মডেল সারা দেশ চালু করতে পারেন। আইন হয়ত আগে থেকেই আছে। শাহাদার হোসেন নতুন কোন আইন বানাননি। এখানে মানুষটই প্রধান। চলমান ব্যবস্থায় এসি ল্যান্ড পদটি খুবই মুনাফা জনক। অনেকেই মুনাফার জন্যে ওই পদে চাকুরী গ্রহণ করেন। শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশের ঘুনেধরা প্রশাসনের মধ্যে একটি আলোর রেখা। চলমান রাজনীতি,সংবিধান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা ভেবেই রাস্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন তিনি একজন বন্দী। নিশ্চয়ই তিনি আক্ষেপ ও বেদনা থেকেই বন্দীত্ব জীবনের কথা বলেছেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সাবেক রাস্ট্রপতি বি চৌধুরীকে কোন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তাঁর পদত্যাগ নিয়ে এখনও নানা গুজব রয়েছে। তাঁর তখনকার দল বিএনপি থেকে খোলসা করে আজও কিছু বলা হয়নি কিন্তু চৌধুরী সাহেব গোস্বা ও অভিমান করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ত্যাগ করেননি। তিনি বিকল্পধারা নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে চলেছেন। আওয়ামী মহল ধারাণা করেছিল বি চৌধুরী সাহেব ভারত সমর্থক হয়ে ইসলাম মুক্ত তথাকথিত বাংগালী জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়বেন। না, আদর্শগত কারণে তিনি তা করেননি। তিনি একজন নামজাদা ডাক্তার ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য। আচার ব্যবহারেও তিনি একজন মিস্টি মানুষ। খালেদা জিয়া ও বিএনপির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যকোন রাজনৈতিক দলে যাননি।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দলদাসদের রাজনীতি। দল বিবেক বর্জিত কাজ করলেও কারো কিছু বলার নেই। সবকিছুই ঠিক করেন দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। দলনেত্রী কি ভাবছেন তাই ভাববে দল ও দলের কর্মীরা। বাংলাদেশে এখন দল বা সরকারে কোন গনতন্ত্র নেই। দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী চিন্তাই দল সরকার ও রাস্ট্রের চিন্তা। ফলে,একদলীয় গনতন্ত্র ও শাসন নয় দেশে চলছে এখন এক ব্যক্তির ও চিন্তা , শাসন ও গণতন্ত্র। ক্যাবিনেট ও সংসদ হলো এক ব্যক্তির সহায়ক। বাংলাদেশ এখন প্রায় সকল ধরনের মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর তাবেদার। বিপরীত চিন্তা করলেই প্রকাশনা ও প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। আমরা সবাই মোটামুটি জানি ট্রান্সকমের প্রকাশনা গুলো আদর্শ ও দর্শনের দিক থেকে চলমান সরকারের কাছাকাছি। তবুও তাদের প্রকাশনাকে প্রধানমন্ত্রী বা সরকার ভিন্ন চোখে দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার আলোকে আলোকিত একজন শিক্ষিত ধনী ভক্ত যাঁকে আমি খুবই পছন্দ করি। তিনি অতীব দরদ দিয়ে আমাকে বললেন,শুধু আপনার লেখা পড়ার জন্যেই আমরা নয়াদিগন্ত পড়ি খুব মনে কস্ট নিয়ে। এটাতো রাজাকারদের কাগজ। আপনি অন্য কাগজে লিখুন,আমি ফোন করে বলে দেবো। দুটি পত্রিকার নাম উল্লেখ করে বললেন এ কাগজ দুটোতে লিখুন। ধনী শিক্ষিত মানুষটি আমার খুবই প্রিয়ভাজন। মনের বৈকল্য ও সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি আমাকে ওই প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে আমি মনে কষ্ট পাইনি। কারণ, বন্ধুটি হয়ত একদেশ দর্শী। তাঁর অন্তরের জানালা গুলো হয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে জগত বিখ্যাত জ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ আলবিরুণী ভারতত্ব নামে এক হাজার বছর আগে আরবীতে একটি বই রচনা করেন। এই বইটি অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.হাবিবুল্লাহ। তাঁর সেই বই থেকে উল্লেখ করছি।‘ মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় তার দুইটি প্রত্যংগ থেকে,যার একটি জিহ্বা ও অপরটি হৃদয়। তিনি আরও বলেছেন,মানুষ মানুষ হয় দুইটি দিরহামের জোরে। আলবিরুণীর সাগরেদরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, উস্তাদ, আপনি ধনীদের কাছে যান? উত্তরে তিনি বলেছেন, বোকারা, আমি খাদ্য সংগ্রেহের জন্যে ধনীদের কাছে যাই। জ্ঞানের প্রয়োজন নেই বলে তাঁরা আমার কাছে আসেনা। এক হাজার বছরের আগের কথাটি আজও জারী আছে। ধনীরা ধন দিয়ে সবকিছু হাসিল করে নিচ্ছে। সব সরকারই শিক্ষা, চিকিত্‍সাকে বাণিজ্যকরন করেছে। ধনীরা হাসপাতাল বসিয়েছে। ডাক্তারদের সাথে এক মাসেও এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়না। ডাক্তারের ফি দশ মিনিটের জন্যে বারোশ’টাকা। দ্বিতীয় বার দেখাতে হলে এক সপ্তাহের ভিতর দেখালে কোন ফিস লাগেনা। এক সপ্তাহ পরে গেলে আবার বারোশ’ টাকা। একই ভাবে বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখাও বড় ধরণের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ধনীরা এখন বিদ্যার মালিক। আলবিরুনী বলেন,ধনের মালিক হলেই সমাজে সম্মানিত মানুষে পরিণত হয়। ফলে বিদ্যার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে ধনের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে সংখ্যা বছর বছর বাড়তে থাকলেও তাদের লক্ষ্য মানুষ বা জ্ঞানী হওয়া নয়। আমাদের বিদ্যা ব্যবস্থায় মানুষ তৈরি না করে তৈরি করছে এক ধরণের মানুষের চেহারায় এক ধরণের প্রাণী। আলকোরাণের ছত্রে ছত্রে মানুষ কি এবং কেন তার বিশদ বিবরণ আছে। আমাদের দেশে আরবী নামধারী কিছু কিছু তথাকথিত মানুষ রূপী মানুষ আছে। এরা সমাজের উচ্চ স্তরে বাস করেন এবং সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ধরণের মানুষেরাই এখন দেশ রাস্ট্র আইনকে নিজেদের বগলে নিয়ে গেছেন।
বিদেশী শাসন মানে ইংরেজ শাসন আমলে ইংরেজরা একশ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ তৈরি করেছে যারা স্বাধীনতার চেয়ে পরাধীনতাকে পছন্দ করেন। কারণ এই মনোভাব তাঁদেরকে সমাজে সম্মানিত করেছে। ইংরেজদের সেই শিক্ষার প্রভাব এখনও শক্তিশালী ভাবে বিরাজমান ও ক্রিয়াশীল। বংগবন্ধু আন্তরিক ভাবেই বিশ্বাস করেছিলেন ভৌগলিক স্বাধীনতা এলেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে। তাঁর এ ভাবনা ভুল প্রমানিত হয়েছে। তিনি সোনার মানুষের কল্পনা করেছিলেন। সেই সোনার মানুষ এই বাংলাদেশে নাই এবং আসল সত্যিকারের মানুষ তৈরি হতে কত সময় লাগবে জানিনা। আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের মুক্তির জন্যে তেমন মানুষ তৈরি করার জন্যে। বিশ্বের সকল দেশেই ভাল ত্যাগী মানুষকে প্রত্যাখান করেছে। কিছু দেশ রাস্ট্র বা সমাজ ভালমানুষকে গ্রহণ করেছে। বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশ একটি দূর্ণীতি প্রবণ দেশ বা রাস্ট্র। এদেশে গরীব ও পড়ালেখাহীন মানুষেরা সবচেয়ে বেশী শোষিত ও নির্যাতিত। গরীব সাধারন মানুষের কাছে রাস্ট্রের কোন গুরুত্ব নেই। রাস্ট্র যে কল্যাণকামী একটি প্রতিষ্ঠান তা গরীব সাধারন মানুষ করেনা। মধ্যবিত্ত মানুষ ঘুষ দিয়ে নিজেদের কাজগুলো করিয়ে নেয়। সরকারী সকল দফতরে ঘুষ একটি প্রধান পদ্ধতি যা দফতর গুলোকে চালু রেখেছে।
মাননীয় রাস্ট্রপতি, আপনি এমন একটি রাস্ট্র ব্যবস্থার অধীনে আছেন যেখানে রাস্ট্রপতি হিসাবে হা হুতাশ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় আমাদের মহা পবিত্র সংবিধান দেয়নি। ভারতের রাস্ট্রপতি জ্ঞাণী জৈলসিং বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী চাইলে তিনি রাস্তায় ঝাড়ু দিবেন। রাস্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুগত ও আস্থাভাজন থাকতে হয়। এরশাদ সাহেবের আমলে এক বামপন্থী শ্রমিকনেতা ও মন্ত্রী ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার আগে তিনি বলেছিলেন,এরশাদের গদীতে লাথি মারি। তবুও মাননীয় হামিদ সাহেবকে অভিনন্দন জানাই তাঁর অনুভুতির জন্যে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com


রাজনীতিতে অসত্য ভাষণ ও কৌশল / এরশাদ মজুমদার

এর আগেও আমি এ বিষয়ে লেখালেখি করেছি। রাজনীতি শব্দটির অনুবাদ বা ব্যাখ্যা পরিবর্তন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের নাম হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। প্রজা শব্দটি কখনই জনগণকে বুঝায়না। এখানে দেশের জনগণকে প্রজা নামেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। সংবিধানে জনগণকে প্রজা হিসাবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। যে রাষ্ট্র জনগণ প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের তারা প্রজা। প্রজা মানে সাবজেক্ট বা টেনান্ট। নিয়মিত খাজনা দিয়ে রাষ্ট্র নামক সাম্রজ্যের আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি এই সাম্রাজ্যের সম্রাট। তবে এর একটা তথাকথিত গণতান্ত্রিক চেহারা বা মুখোশ আছে। প্রজাদের মুখোশ হচ্ছে নাগরিক। নাগরিক বা প্রজাদের উপর অত্যাচার করার জন্যে সকল প্রকার আইন তৈরি করা হয়েছে। এক সময়ে কে যেন বলেছিলেন সংসদ হচ্ছে শুয়ারের খোয়াড়। তিনি গরু ছাগলের খোয়াড়ও বলতে পারতেন। তাঁর দেশে হয়ত শুয়ারের জন্ম বেশী হয়। তাই তিনি শুয়ার শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আমাদের দেশে হলে তিনি গরু ছাগল বলতেন। আমাদের দেশে যাঁরা সংসদ সদস্য হন তাঁদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই হাত তুলে আইন তৈরি করেন। নতুন আইন বা সংশোধনীতে কি আছে তা তাঁরা জানেন না। জানলেও কিছু আসে যায়না, কারণ দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের মুখোশ আছে, গণতন্ত্র নেই। আছে গণতন্ত্রের কংকাল।
আমাদের দেশের পরিচালক রাজনীতিবিদরা যে ভাষায় কথা বলেন তাকে কখনই রাজনীতি বা রাজনীতিকদের ভাষা বলা যায়না। সংসদের ভাষা এখন মেঠো ভাষায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে চলতি এক দলীয় সংসদে সংসদ সদস্যরা যেমন খুশী তেমন কথা বলেন। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে বাংগালীদের অভিধান থেকে শালীনতা ও সত্য শব্দ গুলো একদিন বিদায় নিবে। কিছুদিন আগে সংসদে বিরোধী দলের এক সাংসদ চুদুর বুদুর শব্দটি ব্যবহার করে ঝড় তুলেছেন। এমন শব্দ সংসদে ব্যবহার করা যাবে কিনা প্রশ্ন উঠেছিল। কোলকাতার এক সাংবাদিক বলেছিলেন ব্যবহার করা যাবে। কারণ , শব্দটি অভিধানে আছে। তারপরে বাংলাদেশের সরকার দলীয় সাংসদরা শান্ত হন।
মন্ত্রীরা পথে ঘাটে আর তথাকথিত সেমিনার ও গোলটেবিলে যা বলেন তা কোন সভ্য সমাজের ভাষা হতে পারেনা। ধরুন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনারে ভাষণ দেন বিদ্যুতমন্ত্রী। তিনি খালেদা বিষয়ক ভাষণে অভিজ্ঞ। তাই তিনি উচ্চ কণ্ঠে খালেদাকে কিছু গালি গালাজ করে ভাষণ শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়েও ভাষণ দেন তিনি ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়, আর খালেদা দেশের ক্ষতি চান। সম্প্রতি বিলেতের গার্ডিয়ান পত্রিকা প্রধানমন্ত্রীর এক সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কতৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আনা হলে তিনি তা তিনি একেবারেই অস্বীকার করেন। যদিও দেশে মন্ত্রীরা প্রচার করেন গণতন্ত্র পরে উন্নয়ন আগে। যদিও ৬০এর দশকে ফিল্ডমার্শাল আইউব খানও এ কথা বলেছিলেন। শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী নাকি ইতোমধ্যে অনেক গুলো ডক্টরেট পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি নিয়মিত জাতিসংঘের পুরুষ্কার পাচ্ছেন। দেশবাসী জেনেছেন, তিনি নাকি ধরত্রীকন্যা হয়ে গেছেন। জানা গেছে, একই পুরুষ্কার ইউনিলিভার সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। দেশে এমন প্রপাগান্ডা চলছে তাতে মনে হচ্ছে বিশ্বে এ পুরুষ্কার আর কেউ পায়নি। রাজনীতিতে প্রপগান্ডার মূল্য কি তা আপনারাও অনুধাবন করুন। একই পুরুষ্কার নাকি বাংলাদেশের এক ভদ্রলোক পেয়েছেন। কিন্তু প্রপাগান্ডা নেই বলে কেউ জানতে পারেনি। ইউনিলিভারও এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। জগতের প্রায় সকল ভাল কাজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই করে থাকেন। আর মন্দ কাজগুলো করেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যেই আওয়ামী মাইক গুলো বলতে শুরু করেছে ইতালীয় নাগরিক হত্যার সাথে বিএনপি বা খালেদা জিয়া জড়িত। প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রচার করে থাকেন তিনি ক্ষমতা থাকলে জংগী বা সন্ত্রাসীদের কোন উত্থান হয়না।শুধুমাত্র খালেদা জিয়া বা বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জংগীবাদের উত্থান হয়। এখন জগতবাসী দেখছে কোন সময়ে কেমন করে জংগীবাদ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। চলমান বিশ্বে জংগী বলতে মুসলমান বা ইসলামকেই মনে করা হয়। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এসব মুসলমান সব রাজনৈতিক দলেই আছে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, জংগী বললেই, বিএনপিকেই মনে করা হয়। জংগীবাদের এ প্রপাগান্ডা এখন বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদে কোন হিন্দু বা মুসলমান জড়িয়ে পড়লে আওয়ামী মাইক গুলো চিত্‍কার করে বলতে শুরু করে সাম্প্রদায়িকতা শুরু হয়ে গেছে। এখন লোকে বলতে শুরু করেছে আওয়ামী ক্ষমতায় এলেই হিন্দুদের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়। এমন কি এবার প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেবের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রদায়িকতা এই উপমহাদেশে একটি ছোয়াঁছে রোগ। মহামারী আকারে এ রোগ দেখা দেয়। রাজনীতিকরাই এসব দেশে এ মহামারী লালন পালন করেন। ভারত সাম্প্রদায়িকতা মাতৃভুমি। এদেশে সরকারই সাম্প্রদায়িকতার উসকানী দেয়।
প্রতিদিনই সরকারী বা দলীয় ব্যবসায়ীদের মিডিয়া খালেদার বিরুদ্ধে নানা ধরণের হাবিজাবি প্রচার করেন। প্রায় সকলমন্ত্রীই খালেদা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মন্ত্রী ইনু সাহেব খালেদা জিয়াকে খুনী বলে তাঁর বিচার দাবী করেছেন। তাঁকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। মন্ত্রী বা নেতাদের সুবিধা হল খালেদা জিয়া এসব ফালতু কথার জবাব দেন না। কারণ, ফালতু কথার কোন জবাব হয়না।
দুজন বিদেশী হত্যার ব্যাপারে হঠাত্‍ পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। কে বা কারা হত্যা করেছে তা এখনও অজানা রয়ে গেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। এখনও কিছু জানা যায়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশী হত্যার সাথে জামাত বিএনপি খালেদা জড়িত। নৌকা মার্কা সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জানিয়েছেন এ তথ্য। এটাকেই বলা হয় রাজনীতি। দেশের মানুষ জানেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ঘাড়েই দোষ চাপাবেন। রাজনীতিতে অসত্য ভাষণ কয়েক যুগ আগেই চালু হয়েছে আমাদের দেশে। রাজনৈতিক দল,নেতা ও কর্মীদের সারাদিন অসত্য ভাষণ দিয়ে যান।
বাংলাদেশে রাজনীতিতে চলমান অসুস্থতা বা অস্থিরতার প্রধান কারণ ৫ই জানুয়ারীর জনবিচ্ছিন্ন নির্বাচন। যে নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোটার ভোটে অংশ গ্রহণ করেছেন। । যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছেন ২০ শতাংশ। এই বিতর্কিত নির্বাচনেই চলমান সরকার ক্ষমতাসীন। ভারত ছাড়া বিশ্বের কোন দেশই এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী খুশী আছেন। তিনি বলেছেন,আমি নির্বাচন দিয়েছি,কেউ অংশ গ্রহণ না করতে আমি কি করবো? তবুও দেশবাসী আমাকে যে ভোট দিয়েছেন তাতেই আমি খুশী। আমাদের এ প্রধানমন্ত্রী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্যে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করে বহু ধন সম্পদ বিনাশ করেছেন। সেই প্রধানমন্ত্রী আবার নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্যে আন্দোলন করেছিলেন। পরে আদালত বলেছিলেন,আরও দুই বারের জন্যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তা মানেননি। তিনি বিতর্কিত সংসদের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করেন। তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছেন এবং একদলীয় শাসনের কাছাকাছি অবস্থান করছেন।
চলমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর দল দেশে সত্যিকার অর্থে কোন বিরোধী দল চান না। তিনি বিএনপির উচ্ছেদ চান। তিনি এমন বিরোধী দল চান যারা তাঁর অনুগত থাকবে। তিনি অবিশ্বস্ত জেনারেল এরশাদকে হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর বিবি রওশন এরশাদকে দিয়ে নির্বাচন করিয়ে তাঁকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছেন। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন দেশে ও বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিছুই মনে করেন না। তাঁর সরকার সম্পর্কে বিদেশে কেউ কিছু বললেই তিনি মন্দ কথায় তার উত্তর দেন। তিনি যা বলেন তাঁর পারিষদ বলেন তার শত গুণ। এসব দেখে সবাই ভাবছে রাজনীতি কাকে বলে এবং তা কত প্রকার ও কত রংয়ের। এখন দেশে যে অশান্ত পরিবেশ চলছে তার জন্যে দায়ী প্রধানমন্ত্রীর দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল ও খুনাখুনি। সমাজে এখন সেই নেতা যাঁকে জনগণ ভয় পায়। এখন দলের কর্মীরা আগে মাস্তান হয় তারপর নেতা, সাংসদ ও মন্ত্রী হন। এরদ্বারা হয়ত দল লাভবান হচ্ছে,কিন্তু দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ এখন রাজনীতিকদের কাছে এক ধরণের কর্পোরেট হাউজ। দেশকে ব্যবহার করে বিগত ৪৪ বছরে রাজনীতিক, আমলা ও মাস্তানরা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৭১ সালে পাকিস্তানী শোষণ থেকে মুক্তিলাভের জন্যে বাংলার মানুষ লড়াই করেছেন। তখন লড়াই ছিল পূর্ব ও পশ্চিমে। এখন লড়াই কার বিরুদ্ধে? আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তাঁরাই দেশ স্বাধীন করেছেন,সুতরাং এদেশ পরিচালনা বা শাসনের একমাত্র অধিকার তাঁদেরই। দেশের মানুষ তাঁদের অনুগত নাগরিক হিসাবে থাকবেন।
শুনেছি, মিডিয়া ইন্দিরা গান্ধী ও থেচারকে লৌহমানবী টাইটেল দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা কঠোর হস্তে দেশকে দমন করতেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের চেয়ে অনেক বেশী শক্ত ও কঠোর হাতে দেশ ও দেশের গদী নিজের হাতে রেখেছেন। তাঁর কেবিনেটে তিনিই নাকি একমাত্র পুরুষ। আমিতো মনে করি তিনি এ যুগের দশভুজা। ইন্দিরা গান্ধী বা থেচার এত ডক্টরেট বা বিশ্ব পুরুস্কার পাননি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন। গণতন্ত্র রক্ষায় ডায়ালগের গুরুত্ব বিবেচনা করে নোবেল কমিটি তিউনিশিয়ার চারটি সংগঠণের একটি জোটকে শান্তির জন্যে নোবেল পুরুস্কার দিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করার কথা বলে ৫ই জানুয়ারীর ভোট বিহীন নির্বাচন করেছেন। এ কারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নোবেল পাওয়া উচিত বলে ভক্তরা মনে করেন।
বিদেশী হত্যা ও খালেদা জিয়া বিষয়ক রচনা বলার জন্যে( লেখা নয় ) মন্ত্রীসভার সদস্যদের ভিতর তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। হয়ত প্রতিযোগিতার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে মন্ত্রীদের মর্যাদা। এরপর হয়ত শুরু হবে রাজনীতির ভাষা বিষয়ক রচনা বলার প্রতিযোগিতা। এ ব্যাপারে বলন-কথন ভিডিও পরীক্ষা করবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। রাজনীতির ভাষা বিষয়ক অভিধান রচন বা বচনের জন্যে একটি কমিটি হয়ত গঠণ করা হবে। যা শুনে বা জেনে জাতিসংঘ সারা বিশ্বে সে অভিধান প্রচার করবেন।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com


বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু / এরশাদ মজুমদার

সংখ্যালঘু বিষয়টি জানতে হলে অখন্ড ভারতের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হবে। কেন ভারত ভাগ হলো? ইংরেজদের আগমনের পুর্বে ভারত ছিল বিভিন্ন রাজা মহারাজাদের শাসিত। এসব রাজা মহারাজারা প্রায়ই স্বাধীন ছিলেন। ভারতে মুসলমানরা আসতে শুরু করেন সপ্তম শতাব্দী থেকে। এদের বেশীর ভাগই ছিলেন সওদাগর ও ধর্ম প্রচারক। মুসলমান রাজনৈতিক ক্ষমতা খন্ডিত ভারতে পা রাখে ৭১১ সালে মুহম্মদ বিন কাশেমের মাধ্যমে। তখনও অখন্ড ভারত বলে কোথাও কিছু ছিলনা। ভারত বলেও কোন শব্দ ছিলনা। বিদেশীরা বিশেষ করে আরব বণিকরা এদেশকে হিন্দুস্তান বলতো। বর্তমান হিন্দু ধর্ম বলেও তেমন কোন ধর্ম হিন্দুস্তানে ছিলনা। বেদ বা উপনিষদে নিরাকার ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে আর জীবন যাপনের জন্যে কিছু নিয়ম কানুনের কথা বলা হয়েছে। এখনও ভারতের দক্ষিণে যে ধর্ম পালিত হয় তা উত্তরে হয়না। দক্ষিণের রাজা ছিলেন রাবণ। তাকে ভাই বিভীষনের সাথে ষড়যন্ত্র করে উত্তরের আর্য রাজা রাম পরিজিত করেন। রাবণের পরে বিভীষণই দক্ষিণকে শাসণ করেন। অখন্ড বাংলায় দুর্গার পুজা হয়,কিন্তু বাংলার বাইরে তা হয়না। কোথাও গণপতির পুজা হয়, আবার কোথাও শিবের পুজাও হয়। অতি সংক্ষেপে ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসের কথা বললাম।
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে মুসলমানদের আগমনের পর। নেহেরুজী নিজেই লিখে গেছেন যে, ভারতীয়রা ইতিহাস লিখতে জানতোনা। মুসলমানরাই ভারতীয়দের ইতিহাস বিজ্ঞান লিখতে শিখিয়েছেন।ভারত সম্পর্কে বহির্বিশ্ব জানতে পারে এক হাজার বছর আগে আরবী ভাষায় লিখিত আলবিরুণীর ভারতত্ব পড়ে। এটাই প্রথম আকরগ্রন্থ। ভারতীয়রা ভারতকেই বিশ্ব বলে জানতো। রাজারা নিজ শাসিত এলাকাকেই দেশ মনে করতো। এক রাজার সাথে অন্য রাজার তেমন কোন সম্পর্ক ছিলনা। ১২শ’সালের পর ভারতে মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরো ভারতকে একটি দেশ বা ভৌগলিক ইউনিট হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন মোগল শাসকগণ। বাবরের মাধ্যমে ১৫২৬ ভারতে সালে দিল্লীর ক্ষমতা দখল করেন মোগলরা। এ সময় থেকেই ভারত অখন্ড ভৌগলিক এলাকায় পরিণত হতে থাকে। মোগলরাই ভারতে ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা করে। কেন্দ্রীয় সরকার মানে মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করেই রাজা মহারাজারা নিজ নিজ এলাকা শাসণ করতেন। মোগল আমলেই মহারাজাদের সাথে বিভিন্ন রাজ্যে নবাবীর পত্তন হয়। রাজ্য রাজা ও নবাবদের কাজ ছিল কেন্দ্রের আনুগত্য স্বীকার করে নির্ধারিত কর দেয়া। ভারতের রাজ্যগুলো এখনও সেই ভাবেই চলছে তথাকথিত গণতন্ত্রের লেবাস পরে। কেন্দ্রের কথা না শুনলেই রাজ্য সরকার বাতিল করে দিয়ে কেন্দ্রের শাসন চালু করা হয়। প্রত্যেক রাজ্যেই একজন গভর্ণর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে থাকেন। মোগল আমলে মহারাজা বা নবাবদের নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল। তাদের নিজস্ব মুদ্রা ছিল। এখন গণতান্রিক যুগে সেই সুযোগ নেই। ভারতের বহু রাজ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে কয়েক যুগ ধরে। কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী দিয়ে রাজ্যের স্বাধীনতা আন্দোলন গুলোকে দমণ করছেন।
ইতিহাসের এ বিষয় গুলো আপনারা অনেকেই কমবেশী জানেন। হিন্দু মুসলমানের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা খুবই বেশী এবং দৃশ্যমান হয়েছে ইংরেজ আমলে। এবং আজও চলছে এবং বছরে ছোট খাট হাজার দাংগা হয়। তথাকথিত প্রগতিশীল ভারত আজও দাংগা দমাতে পারেনি। তারা শুধু মুসলমানদের সাথে দাংগা করেনা। সকল জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাথেই দাংগা করে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদীজীকে লোকে দাংগার গুরু মনে করেন। ভারতে মুসলমান রাজনৈতিক উপস্থিতির এক হাজার বছরেও দাংগা বা সাম্প্রদায়িকতার তেমন কোন ইতিহাস নেই। দাংগা ও সাম্প্রদায়িকতা শুরু হয়েছে ইংরেজদের ডিভাইড এ্যান্ড রুল পলিসির কারণে। ইংরেজরা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মুসলমান শাসক ও সম্প্রদায়কে আস্থায় নেয়নি কখনও। বরং তারা মুসলমানদের শত্রু মনে করতো। সরকারী চাকুরী,এজেন্সী ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ পেত হিন্দুরা।বৌদ্ধদের ভারত থেকে বিতাড়িত করেছে হিন্দু শাসকগণ। এখন খৃষ্টানদের হিন্দু বানাবার চেষ্টা চলছে। হিন্দুরা শিখদের উপরও অত্যাচার চালায়। ৩০ কোটি অচ্যুতদের ধর্মীয়ভাবেই মানুষ মনে করা হয়না।
ভারতের কূটনৈতিক পড়ার নাম চাণক্যপুরী। চাণক্য মৌর্য আমলের রাজনীতি বিষয়ক একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। রাজনীতিবিদদের শিয়ালের মতো ধুর্ত হতে হবে। ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে চাণক্যের নীতি। আর আমরা ভারতের প্রতিবেশী। ভারত বৃহত্‍ দেশ, বাংলাদেশের চেয়ে তার শক্তি বেশী। এক্ষেত্রে ভারত শিয়াল আর মুরগের গল্পের অনুসরণ করে। মোরগ যদি ভেবে থাকে শিয়ালের সাথে বন্ধুত্ব করবো তাহলেই সর্বনাশ। তবুও মোরগকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে কিভাবে? সিংগাপুর, তায়ওয়ান কেমন করে ভাল ভাবে বেঁচে আছে এখনও। ভারতবাসীর ৫০ ভাগ হচ্ছে সনাতনধর্মী বা হিন্দু। ২৫ ভাগ অচ্যুত বা হরিজন। আদমশুমারী, নির্বাচন ও গণনার জন্যে তাদের হিন্দু বলে প্রচার করা হয়। হিন্দু ধর্ম মতে অচ্যুতরা অর্ধ মানব। ভারতীয় সংবিধানে তাদের মানুষ হিসাবে স্বীকার করা হলেও সমাজ তা মানেনা। ২০ ভাগ মুসলমান আর ৫ ভাগ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। রাজনীতি মুসলমানদের ভুমিকা অন্যান্যদের বেশী এবং শোষিতও বেশী। মুসলমান বা সংখ্যলঘুদের শেষণ করাই ভারতের দর্শণ। প্রতিবেশী সকল দেশকেই ভারত একশ’ভাগ নিজের প্রভাবে রাখতে চায়। আগেই বলেছি, এ অঞ্চলে ভারত শিয়ালের ভুমিকা পালন করে। মোরগ উড়তে জানে বলেই শিয়ালের কাছ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে সনাতন ধর্মী হিন্দুদের কথাই মনে করা হয়। এরপরে রয়েছেন বৌদ্ধ ও ঈসায়ী(খৃষ্টান) ধর্মাবলম্বীরা। সংখ্যার দিক আরও কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠি আছে। হিন্দুরা ছাড়া বাকি ধর্মাবলম্বীরা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবে চুপচাপ থাকেন। যদিও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ রয়েছে নামে, কাজে এটা শুধুই হিন্দুদের সংগঠণ। চলমান ধর্মমুক্ত সরকার হিন্দু সম্প্রদায়কে খুশী রাখার জন্যে অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্টদের অধিকারকে অবজ্ঞা করেছেন। অপরদিকে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ হওয়া সত্বেও সরকারী চাকুরীতে তারা এক ভাগও নেই। বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীদের সংখ্যা পাঁচ ভাগ হওয়া সত্বেও সরকারী চাকুরীতে তাঁদের অবস্থান ১৮ ভাগের মতো। সনাতন ধর্মীরা তাঁদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে একশ’ভাগ সজাগ। তার উপরে রয়েছে সরকারী আনুকল্য ও সেবা। হঠাত্‍ দেখা যাচ্ছে তাঁরা নিজেদের অধিকার নিয়ে নানা কথা বলছেন। সনাতন ধর্মীদের নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেছে। ৪৭ সাল থেকে কত হিন্দু ভারতে চলে গেছে। কেন চলে গেছে? অনেকেই দাবী করেছেন হিন্দু কমিশন গঠণ করার জন্যে। রাণা দাশগুপ্ত দাবী করেছেন পৃথক নির্বাচনের জন্যে। তিনি প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেব মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন হিন্দু বাড়ি দখল করেছেন। যাঁর বাড়ি তিনি দাবী করেছেন ন্যায্য মূল্যে বাড়ি বিক্রি করেছেন।
এ কথা আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ৪৭ সালে যে ভারত ছিল তা বিভক্ত হয়েছে কংগ্রেস নেতাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। কিন্তু দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনও করা হচ্ছে মুসলমানদের উপর। দীর্ঘ শ্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মুসলমানেরা কখনই ভারত বিভক্ত করে আলাদা মুসলমানের দেশের দাবী উঠেনি। আলাদা স্বাধীন দেশ পাকিস্তানের দাবী উঠেছে ১৯৪০ সালে বাধ্য হয়ে। কংগ্রেসের প্রধান নেতারা যদি অখন্ড ভারত প্রেমী হতেন তা হলে মুসলমানদের সাথে অবশ্যই সমঝোতায় আসতে পারতেন। তাঁরা চেয়েছিলেন পুরো ভারত তাঁরাই শাসন করবেন। লেবাননে মুসলমান ও খৃষ্টানদের ভিতর সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ চলছে। ৪৭ সালে বাংগালী মুসলমানেরা অখন্ড বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংগালী হিন্দুরা তা চাননি। কারণ অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি ছিল। এ ছিল বাংগালী হিন্দু নেতাদের একেবারেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। হিন্দুত্বের প্রশ্নে দেশ কখনই বড় ছিলনা। মুসলমানেরা অখন্ড ভারত শাসন করেছেন কয়েক’শ বছর ধরে। এ সময়ে প্রদেশ ও কেন্দ্রে বড় বড় পদ গুলোতে হিন্দুরা ছিলেন। সেনাবাহিনীতে বহু হিন্দু জেনারেল ছিলেন। তখন অখন্ড ভারত থাকতে কোন অসুবিধা হয়নি। দখলদার ইংরেজদের শাসণকে ভারতে দীর্ঘায়িত করেছে হিন্দুরা। তাঁরাই ভারতকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রথম এক’শ বছর ইংরেজরা হিন্দুদের সহযোগিতায় ভারত থেকে নিশ্চিন্ন করার চেষ্টা করেছে। ভারত দখলের প্রথম এক’শ বছর মুসলমানেরাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এই এক’শ বছরে হিন্দুরা মুসলমানদের সকল সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। এসব কথা শুনতে অনেকেরই খারাপ লাগবে। মনে হবে সাম্প্রদায়িক কথা। কিন্তু এসব সত্যি এবং গোপন ইতিহাস। ইংরেজদের দখলের পর থেকেই মিথ্যা ইতিহাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এখনও মিথ্যা ইতিহাস রচনার কাজ চলছে। মিথ্যা ইতিহাস কখনই চিরকাল টিকে থাকেনা। এখন ভারতের বহু জ্ঞাণী গুণী ভারত বিভক্তির আসল ইতিহাস লিখতে শুরু করেছেন।যদিও আওয়ামী লীগের তথাকথিত বাংগালী শাসনের নামে কিছু বুদ্ধিজীবী ভারত বিভক্তির জন্যে মুসলমানদের দায়ী করেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ অধিবাসী বা নাগরিক মুসলমানদের তথাকথিত সেক্যুলারিজমের(ধর্মহীনতার) নামে মেজরিটির উপর মাইনরিটির শাসন চাপিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমাদের জাতিস্বত্তা বিতর্কিত হয়ে রয়েছে। দিল্লী ঢাকা ও বাংগালী হিন্দুরা মনে করেন বাংলাদেশ বাংগালীদের দেশ। এটা হচ্ছে একটা মহা চক্রান্ত। বাংগালীর নাম করে ৯০ ভাগ নাগরিকের উপর হিন্দু সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ক’দিন আগে প্রগতিশীল চিন্তার প্রধান ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আমরা উর্দুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি আর এখন আমাদের ঘরে ঘরে শিশুরা হিন্দী বলছে। হিন্দী সংস্কৃতি অবাধ প্রবেশের জন্যে সরকার সকল দুয়ার খুলে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ খুবই সচেতনার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এ ব্যাপারে অজ্ঞ। বিএনপির কোন সাংস্কৃতিক দর্শণ নেই। বিএনপির আমলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ছিল সবচাইতে অবহেলিত। এর জন্যে বাজেটও ছিল একেবারেই নগণ্য। মরহুম সাইফুর রহমান নাকি বলেছিলেন, আমি হারমোনিয়াম কেনার জন্যে কোন টাকা দিতে পারবোনা। শুনতে পাচ্ছি বিএনপি একটি থিন্ক ট্যান্ক গঠণ করতে যাচ্ছে। এই ট্যান্কে কারা থাকবেন তা আমি আন্দাজ করতে করি। আমাদের প্রেসক্লাবে এক ধরনের জাতীয়তাবাদী আছেন যাঁরা আওয়ামী লীগের গ করেথাকলেও তাঁদের জাতীয়তাবাদী লেবেল নষ্ট হয়না। সেদিন কাগজে বেরিয়েছে, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকরা আবারও বিভক্ত হয়েছে। প্রেসক্লাবের প্রশ্নে তাঁরা একবার বিভক্ত হয়েছেন। এখন ইউনিয়নও ভেংগে গেছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে শওকত মাহমুদের মতো জেলে পাঠাবার হুমকী দিচ্ছেন। এসব জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক খালেদা জিয়ার নাকি অতি আপনজন। তিনি ক্ষমতায় থাকতে এরা সকলেই হালুয়া মাখন খেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, খালেদা জিয়া আবার কখন ক্ষমতায় আসবেন তার কোন ঠিক নেই। তাই তাঁরা আর অপেক্ষা করতে রাজী নেই।
হিন্দুরা বা কংগ্রেস নেতারা কখনই মুসলমানদের অধিকারকে স্বীকার করেননি। ইংরেজ আমলে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ছিলেন। হিন্দুরা সব সময় মুসলমানদের পরাজিত ও নির্যাতিত দেখতে চান। তাই তাঁরা মুসলমানদের আলাদা দেশ মানেননি। ৪৭ সাল থেকেই হিন্দুরা পূর্ববাংলা বা চলমান বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যেতে শুরু করেছেন। ভারতকেই তাঁরা নিজেদের দেশ মনে করেন। থাকেন বাংলাদেশে। সম্পদ তৈরি করেন ভারতে। আশা করেছিলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হিন্দুরা আর ভারতে যাবেন না। না,আমার আশা পূরণ হয়নি। তাঁরা স্বেচ্ছায় ভারতে চলে যান, অভিযোগ করেন সাম্প্রদায়িকতার। ৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। তবুও হিন্দুরা সব সময় দাংগার অভিযোগ করে চলেছেন। জমি জমা, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে মুসলমানে মুসলমানে সারা বছর খিটমিট ও মারামারি লেগে থাকে। এটাকে কেউই সাম্প্রদায়িকতা বলেন না। হিন্দুদের সাথে ঝগড়া ফাসাদ হলেই তাকে তখনই সাম্প্রদায়িকতা ধুয়া তোলা হয়। ভারতে সত্যিকার অর্থেই বছরে কয়েকশ’ দাংগা হয়। ভারতে এখন দাংগাবাজ সরকার ক্ষমতায় আছে। তাঁরা দাবী তুলেছেন মুসলমানদের হিন্দু হওয়ার দাবী তুলেছেন। এক সময় তাঁরা কাবা ঘরের উপর তাঁদের অধিকারের দাবী তুলেছিলেন। তাঁদের মতে কাবা ঘরে এক সময় ৩৬০টি মুর্তি ছিল। তাই খাবা ঘরের উপর হিন্দুদের হিস্যা আছে। আওয়ামী সরকার হিন্দুদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাঁদের অধিকারের রক্ষক। তারপরেও হিন্দুরা দাবী করেন তাঁরা বেশী নির্যাতিত।
হিন্দুদের স্বপ্ন হচ্ছে অখন্ড হিন্দু ভারত। নেহেরুজী নিজেই এ স্বপ্নের কথা বলে গেছেন। ফলে হিন্দুরা ভৌগলিক কারণে যেখানেই থাকুননা কেন ভারতকেই তাঁরা নিজেদের দেশ মনে করেন। ফলে তাঁরা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করেন না। আমি জানি, আমার কথা গুলো তথাকথিত প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িকদের পছন্দ হবেনা। আমরা যতই খাঁটি বাংগালীত্বের শ্লোগাণ দিইনা কেন হিন্দুরা কখনই নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বাংগালী বা বাংলাদেশী ভাবতে পারেন না। আওয়ামী লীগ শুধু হিন্দুদের সন্তুষ্ট করার বা রাখার জন্যে বাংগালী জাতীয়তাবাদের শ্লোগাণ তুলেছে। বাংলাদেশী শব্দের সাথে নাকি মুসলমানিত্বের গন্ধ আছে। একই ভাবে বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর,জিন্দাবাদ সহ আরও বহু শব্দ আওয়ামী লীগ পরিহার করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেবের বিরুদ্ধেই সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণেই হিন্দরা ও আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা বার বার অভিযোগ তুলে দিল্লী ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com