ব্লগার ধর্ম ও রাষ্ট্রের অবস্থান / এরশাদ মজুমদার
এমন এক সময় এই কলামটি লিখছি যে সময়ে ক্ষমতাসীন জোট অন্তর কলহে জড়িয়ে পড়েছে। জোটকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহবান জানিয়েছেন দলের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। তিনি আরও বলেছেন দলের প্রধান শেখ হাসিনার নিরাপত্তা হুমকির মুখে। তাঁর মতে বিএনপি নাকি খুনীর দল। খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে হত্যার চেস্টা করছেন। ক্ষমতায় থেকেও তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এ সময়ে জোট ভেংগে যায় এমন বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক হবেনা। বিতর্ক হচ্ছে, বংগবন্ধু হত্যার সাথে জাসদের জড়িত থাকার অভিযোগ। মেনন বলেছেন, সব জেনেই জোট তৈরি হয়েছে। এখন এসব কথা বলে লাভ নেই। লেখক মহিউদ্দিন সাহেব বই ও কলাম জাসদের রাজনীতি ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথম আলোতে কদিন আগে জাসদের ঘরে ফিরা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন। ইনু ও মেনন সাহেব নিজেদের কোমরের জোরে ভোটে দাঁড়িয়ে জামানত রক্ষা করতে পারেননি। ফলে নৌকায় চড়ে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করছেন। ইনু সাহেবের মনে সব সময় অতীতের নানা কথা উঁকি মারে। তাই তিনি শেখ হাসিনার চেয়ে দশ ভাগ এগিয়ে খালেদার বিরুদ্ধে আজে বাজে কথা বলেন। আওয়ামী রাজনীতিতে নাকি এ ধরনের ভাষা নাকি খুব জনপ্রিয়।
এমনিতেই আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল চরমে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই দলীয় খুনাখুনির খবর কাগজে ছাপা হচ্ছে। তার সাথে যোগ হয়েছে রেব ও পুলিশের বন্দুক যুদ্ধ। সে নিয়ে চলছে বাক বিতন্ডা। ছাত্রলীগ বলছে তারা মন্ত্রীদের চোখ রাঙানিকে ভয় পায়না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছাত্রলীগের উপরতলার নেতারা মুজিব নগর সরকারকে পাত্তা দিতেন না। তাঁরা দিল্লীর কথা অনুযায়ী চলতেন। একে খোন্দকার সাহেবের বইতে এসব নিয়ে কিছু আলোকপাত করা হয়েছে। এজন্যে খোন্দকার সাহেবকে বেশ অপমানিত হতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের তিন বাহিনী প্রধান আজ অপমানিত। জিয়া সাহেবকে পাকিস্তানের দালাল বলা হয়। খোন্দকারের অবস্থা ভাল নয়। সফিউল্লাহ সাহেবেরও একই অবস্থা। সেদিন এক বন্ধু বললেন,ভারতের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশে কেউই ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। অনেকেই বলেন ইসলামিক সম্মেলনে গিয়ে বংগবন্ধুকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে মর্মান্তিক ভাবে। জেনারেল জিয়াকেও নাকি একই কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে। বিষয়টি শেখ হাসিনা গভীর ভাবে অনুধাবন করেছেন। তাই তাঁর রাজনীতি এখন একশ’ভাগ দিল্লী ভিত্তিক বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। দিল্লী এবার জন জরীপে ধর্ম বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমান ভোটারদের নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ চলছে। মুসলমানরা ভারতীয় রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিজেপি একটি ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দল। সারা ভারতে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা আছে বলেই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সেক্যুলারিজমের(ধর্মহীন) রাজনীতি করেন। এতে তিনি মাইনরিটিদের অবারিত ভাবে তোষণ ও পোষণ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে হিন্দুনেতারা অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সাংসদ ও শক্তিশালী লোকেরা হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছেন। রাণা দাশগুপ্ত ইতোমধ্যেই দাবী তুলেছেন পৃথক নির্বাচনের। আমি দাশগুপ্তের দাবীকে সমর্থন করি।
চলমান রাজনীতিতে ব্লগাররা খুবই আলোচিত একটি বিষয়। সরকারের সাথে ব্লগারদের হয়ত এক ধরণের আদর্শিক সমঝোতা থাকতে পারে। ব্লগারদের ব্যাপারে সরকারের একটা দুর্বলতা আছে বলে মনে করা হয়।সম্প্রতি নিহত নীলাদ্রী চক্রবর্তী নামের একজন ব্লগার নিহত হওয়ার পর বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের নাম শিরোনামে উঠে এসেছে। তাঁর নামের সাথে ব্লগার শব্দটি যোগ না হলে তিনি শুধুই একজন নাম না জানা সাধারন ব্যক্তি। বাংলাদেশের একজন অজানা ব্যক্তির মৃত্যুতে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল বান কি মুন বিবৃতি দিয়েছে। আমেরিকা ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য বিবৃতি দিয়েছেন। মৃত ব্যক্তির গুণ হলো তিনি একজন ব্লগার। তিনি তাঁর ব্লগের মাধ্যমে ইসলাম, আল্লাহ, রাসুল(সা) ও মসজিদের বিরুদ্ধে লিখতেন। তাঁর ব্লগের নাম ইস্টিশন। অপরদিকে বাংলাদেশের ইসলামিক স্কলার মারা গেলেও জাতিসংঘের কোন প্রতিক্রিয়া থাকেনা।
নীলাদ্রির মৃত্যুতে মনে হয় সরকারের টনক নড়েছে। তাই, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসন মেশিনের লোকজন বলতে শুরু করেছেন ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলা ও লেখা যাবেনা। এ কথা সরকার এক বছর আগেও বলেনি। এবার বলছেন কেন? যারা ব্লগারদের হত্যা করছে তারা কারা? তারা কি কোন ধর্মীয় গ্রুপের লোক? চলমান সরকার নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মমুক্ত মনে করেন। সংবিধানকেও ধর্মমুক্ত রাখা হয়েছে। শুধু নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা মাথায় টুপি পরেন বা ঘোমটা দেন। কারণ, ভোটারদের ৯০ ভাগ মুসলমান। নির্বাচিত হওয়ার পরেই নির্বাচিত নেতারা নিজেদের সেক্যুলার বলে দাবী করেন। তখনি তাঁরা ইসলাম, মাদ্রাসা ও আলেম সমাজকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতে থাকেন। এদেশে বহু ইসলামিক স্কলার আছেন যাঁরা কোরআন ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন। সরকার নিজেকে স্কলারদের কাছে থেকে দূরে রাখতে চান। সরকার নিজেদের অনুগত তথাগত আলেমদের দিয়ে পছন্দমতো ফতোয়া জারী করেন। ধর্মের সাথে রাজা খলিফা বা রাষ্ট্রের বৈরীতা অনেক পুরাণো। চোর যেমন ধর্মের কথা শুনেনা, তেমনি রাষ্ট্রও ধর্মকে নিজের অধীনে রেখে ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে চায়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে মোনাফেকি বহু পুরাতন। আওয়ামী লীগ তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিজেকে ধর্মমুক্ত দল হিসাবে উপস্থাপিত করতে চায়। আবার সাধারন ভোটারদের কাছে নিজেকে মুসলমান হিসাবে পরিচিত করতে চায়। অপরদিকে বিএনপিকে মৌলবাদী দল হিসাবে প্রচার করতে চায়। পশ্চিমারা মুক্তমনা ধর্ম বিরোধীদের পছন্দ করে। আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তমনাদের পক্ষের শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গণজাগরণ মঞ্চ বা শাহবাগীদের সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আদালতের রায়কে প্রভাবিত করার জন্যে গণজাগরণ মঞ্চ খুবই কার্যকর ভুমিকা পালন করেছে জনসাধারন মনে করে।
জগতে সব মানুষ আল্লাহর নির্দেশ ও কিতাব মতো চলবে এমন কথা নেই। বেশ কিছু মানুষ শয়তানের অনুগামী হয়ে গেছে। কেউ যদি আল্লাহ ও রাসুলের(সা) নির্দেশ অমান্য করে তারা তা করবে নিজেদের দায়িত্বে। সুপথ আর কুপথ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাঁর কিতাবে স্পস্ট করে বলে দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কারো ধর্মকে হেয় বা নিন্দা করতে পারবেনা। জগতের সকল দেশ ও রাষ্ট্র এ নীতি লিখিত ভাবে মানে। সংবিধানে অনেক কথাই আছে যা বাস্তবে সরকার গুলো তা মানেনা। ধর্মের নিন্দা করা আমাদের সংবিধান অনুমোদন দেয়না। বাংলাদেশে ইসলাম হচ্ছে রাস্ট্রীয় ধর্ম। ব্লগাররা বেশ কিছু বছর ধরে ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুল(সা) সম্পর্কে আজেবাজে কথা লিখে যাচ্ছে। সরকার কখনই এ ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ফলে ব্লগাররা উত্সাহিত বোধ করেছে। আমাদের দেশে বহু ব্লগার আছেন,তাঁরা ধর্মের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দেননা। তথাকথিত মুক্তমনা,বিজ্ঞানমনস্ক লেখকগণ বিনা কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। এসব ব্লগারের ইসলাম বা কোন ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। কোরআন নিজেই নির্দেশ দিয়েছে, তোমরা কখনই ওদের দেবদেবীদের গালাগাল করোনা। ওরা যব্দ হয়ে তোমার আল্লাহকে গালাগাল দিতে থাকবে।আল্লাহর কিতাব ও ধর্ম বিশ্বাস করেই গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করার ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। যারা জবরদস্তি করতে চায় তারা ধর্মহীন বা মুসলমান নন। ইসলাম কি ও কেন তা অবিরাম গবেষণা ও প্রচারের দায়িত্ব ইসলামী পন্ডিত ও স্কলারদের। বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে তেমন কোন শক্তিশালী গবেষণা নেই। বাংলাদেশ একটি মুসলীম প্রধান দেশ। তবুও ইসলাম নিয়ে তেমন কোন গবেষণা নেই। কারণ সরকার নিজেকে ধর্মহীন বা ধর্মমুক্ত মনে করে। কয়েকদিন আগে একজন আওয়ামী নেতা হানিফ বলেছেন, বংগবন্ধু রাসুলের(সা) কাছ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা শিখেছেন। রাজনীতিতে ফালতু কথা বলার রেওয়াজ আমাদের দেশে আছে। হানিফ সাহেব হয়ত কথার কথা হিসাবে এমন মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগের ধর্ম বিশ্বাস হচ্ছে সেক্যুলারিজম বা ধর্মহীনতা বা ধর্মমুক্ততা। সেক্যুলারিজম নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের কোন ধারণা নেই। জেনারেল মইনের সরকারের আমলে একজন সাংবাদিক ধর্মমন্ত্রী ছিলেন, যিনি ধর্মের কিছুই জানতেন না। কারণ ধর্মমন্ত্রী হতে হলে ধর্ম জানতে হয়না বাংলাদেশে। ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যে বহু সরকারী আলেম আছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি মদিনা সনদ মেনে চলবেন। তখনও আমি লিখেছিলাম প্রধানমন্ত্রী মদিনা সনদ কি তা ভাল করে জানেন না। তাঁর সরলতাকে ব্যবহার করে কেউ হয়ত তাঁকে ভুল বুঝিয়েছেন। তখন দেখেছি বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী মদিনা সনদ নিয়ে নানা কথা বলেছেন। আমাদের দেশে বহু তথাকথিত সেক্যুলার শিক্ষিত আছেন যাঁরা ইসলাম, কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তবুও তাঁরা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন এবং আরবী শিক্ষিত আলেমদের গালাগাল করেন। বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত বেশ কয়েক জন মানুষ আছেন যাঁদের কোন বিদ্যা বা জ্ঞান নেই। তাঁরা নাকি স্বশিক্ষিত। এরাই হয়ত বংগবন্ধুর কন্যাকে ভুল পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আশি বছর পুর্তি হয়েছে এমন একজন বুদ্ধিজীবী( তিনি অভিনয় করেন বলেই বুদ্ধিজীবী) যাঁর বাপ দাদারা ৪৭ ভারত ত্যাগ করেছেন মুসলমান হিসাবে। পাকিস্তানের ২৩ বছরে হালুয়া রুটি খেয়েছেন। ৭১ এ ছিলেন ভারতে ছিলেন। এ ভদ্রলোক এক সময়ে ব্যাংকের কেরাণী ছিলেন। এখন একেবারেই জাতীয় ব্যক্তিত্ব। এঁরা কথায় কথায় ভারতে পালিয়ে যান। নিজেদের মুসলমান মনে করেন না। এখন শুধুই ১০০ভাগ বাংগালী। ধর্ম পরিচয়ে লজ্জিত বোধ করেন। তবে আরবী নামটি ত্যাগ করতে চান না। সময় সুযোগে কাজে লাগতে পারেন। এদের বেশীর ভাগই বাংলাদেশে থেকে ভারতের কল্যাণে কাজ করেন। এঁরা ভারত থেকে নানা বিষয়ে সনদ এনে ঢাকায় ফুলের মালা গ্রহণ করেন। এঁরা বাংলাদেশে ভারতীয় দর্শণ প্রচার করেন। দেশের মানুষ মনে করেন এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী প্রধানমন্ত্রীর অদৃশ্য উপদেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীকে হাজার বছর ক্ষমতায় রাখার জন্যে দিল্লী দরবারের পায়রবি করে। প্রধানমন্ত্রীও তাঁদের কাজে লাগাতে চান।
ক’দিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিল্লী গিয়েছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব বাবুর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর মৃত্যুতে শোক জানাবের জন্যে। প্রধানমন্ত্রী নাকি ব্যক্তি জীবনে প্রণব বাবুকে কাকাবাবু হিসাবে ডাকতেন। সে হিসাবে শুভ্রাদেবী তাঁর কাকিমা। শুনেছি, এরশাদ সাহেব শ্রীমতি গান্ধীকে মা বলে ডাকতেন। এসব ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের কারণে ভারত আমাদের দেশ থেকে বিগত ৪৪ বছরে বহু সুবিধা নিয়েছে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছি সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা। শত আলোচনার পরেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বর্তমান সরকার ভারতকে বাংলাদেশের সকল দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই শোকাবহ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত যদি বেশী বেশী দেয় তাহলে বাংলাদেশ আর অন্যকোন দেশের দিকে তাকাবেনা।
উত্তরে মোদীজী বলেছেন, শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয় আমরা সকল ক্ষেত্রেই এক হয়ে কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যেই ভারতের হিন্দী ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে। সনাতন সকল পূজা নাকি বাংগালী মুসলমানদের সামাজিক সংস্কৃতি বলে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা প্রচার শুরু করেছেন। ব্লগাররা, যারা নিজেদের মুক্তমনা ধর্মদ্রোহী হিসাবে প্রচার করছেন আর আগেই বলেছি সরকার ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের ব্যাপারে উদার মনোভাব নিয়েছিলেনন। জগতের কোন মুসলমানই খোদা, আলকোরাণ ও রাসুলের(সা) সমালোচনা নিন্দা সহ্য করবেনা। সেক্যুলারিজমের নামে সরকার নীরব থাকতে পারেনা। ১৯৩০ বা ৩২এর দিকে রংগিলা রাসুল বই প্রকাশ করে কোলকাতার এক প্রকাশক নিহত হয়েছেন।সরকার যদি এ ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নিতেন তাহলে তাহলে চলমান অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হতোনা। সরকার আজও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি।
বাংলাদেশে সরকার নিজেকে ধর্মমুক্ত বা ধর্ম নিরপেক্ষ বলে কথায় কথায় প্রচার করে থাকেন। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এখানে যাঁরা নিজেদের মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিয়ে বাঁচতে চান তাঁদের জন্যে পরিস্থিতি একটু জটিল। দেশের নাগরিকদের ৯০ ভাগ মুসলমান হলেও দেশ চলে ধর্মহীন
সংবিধান মোতাবেক।শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। মুসলমানদের জন্যে আইনের কিতাব হচ্ছে দ্বীন( আইন, নিয়মনীতি) ইসলাম। তাহলে আপনারা বুঝতে পারছেন এদেশের মুসলমানকে দুটি আইন মানতে হয়। একটি কোরআনের আইন ও অপরটি সংবিধানের আইন। জগতে আমরা যে ভুগোলে বাস করি সেখানে সেই দেশের আইন মানতে বাধ্য। দেশের আইন যদি কোরআন বা ঈমান বিরোধী হয় তবু ও মানতে হবে। জগত হচ্ছে দেহের জগত, আর এই দেহের উপর জগতের সরকারের আইনী অধিকার আছে। অতীতের সকল রাজা বাদশাহ আইনের কথা বলে মানুষের উপর অত্যাচার করতো। ফেরাউনতো নিজেকে খোদা বলে ঘোষণা দিয়েছিলো। সে বলেছিল জীবন ও মরণের মালিক সে নিজেই। সেই ফেরাউনকে আল্লাহতায়ালা দলবল সহ ধ্বংশ করে দিয়েছেন। এখন জগতের সরকার গুলো কথায় কথায় নানা বাহানায় মানুষ হত্যা করে। এর মানে সরকারগুলো মনে করে মানুষের প্রাণ রাখা না রাখা সরকারের ইচ্ছা। দেহের ভিতর যে রূহ আছে আমানত হিসাবে তার মালিক আল্লাহপাক স্বয়ং। আমরাতো রুহের খবর রাখিনা। রূহের উপর জগতের কোন সরকার বা শাসকের রূ্হের উপর কোন ক্ষমতা নেই। রূহ চলে গেলে রাজা বাদশাহ, প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট, ধনী গরীব সবাইকে মাটির নীচে যেতে হবে। যারা জগতে মানুষের জন্যে ভাল কাজ করেছেন তাঁদেরকে মানুষ স্মরণ করবে আর আল্লাহতায়ালাও তাঁদের ক্ষমা করবেন।
আমিতো বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে বাধ্য হয়ে এদেশের সংবিধান মানতে হবে। সংবিধান তৈরি করেন ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা। তাঁরা নিজেদের ধ্যান ধারনা মোতাবেক সংবিধান তৈরি করেন। চলমান সরকার ওয়াদা করেছিলেন ৭২এর সংবিধান চালু করবেন। ওই সংবিধান নাকি সেক্যুলার বা ধর্মমুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ নিজেদের সেক্যুলার বলে দাবী করলেও ভোটের কারণে অন্তরের কথা মন খুলে বলতে পারেন না। আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবীরা ধর্ম বিরোধী। তাঁরা ভারত ও পশ্চিমা দেশ গুলোকে খুশী রাখতে নিজেদের ধর্মমুক্ত প্রচার করতে চান। ইসলামের কথা জোর দিয়ে বলতে চাইলেই জংগীবাদ ও সন্ত্রাসের কথা উঠে। সংবিধান, আদালত, প্রশাসন ও বাহিনী এখন কোন কথা বলা যাবেনা। এতে নাকি চলমান আইন ভংগ হয়। ইতোমধ্যেই দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দাবী উঠেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল কোন ধরণের সংস্কারের পক্ষে নন। তাঁরা মনে চলমান সংবিধান, যা নির্বাচনী সংস্কারের জন্যে মোটেও যথেষ্ট নয়। সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এখন রাজা বাদশাহদর মতো ফেরাউনী ক্ষমতার অধিকারী । আমি এর আগে গণতন্ত্রের নানা রূপ নিয়ে কলাম লিখেছি। স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার দ্বারা মানুষকে দমন করে দেশ পরিচালনা করাও এক ধরণের গণতন্ত্র। রাজা বাদশাহদের দেশেও এক ধরণের গণতন্ত্র আছে, যাকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশগুলো সমর্থন জানায়। যেমন সউদী আরব। এদেশের বাদশাহকে আমেরিকা ও ইউরোপ সমর্থন করে।
চারজন তথাকথিত ব্লগার বা ধর্মবিরোধীকে জংগী নামের অভিযুক্তরা হত্যা করেছে। এদেরকে ইসলামপন্থী চিহ্নিত করে ইসলামকে অপমানিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে কিছু বিপথগামী ধর্মপন্থী যুবকের কারণে ইসলামকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মবিরোধী ব্লগারদের শুরু থেকে আসকারা দেয়া হয়েছে। কারণ ভারত ও পশ্চিমারা ধর্মবিরাধী ব্লগারদের জাতিসংঘ ভালবাসে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
You must be logged in to post a comment.