মোদীর হিন্দুস্তান ও প্রতিবেশী / এরশাদ মজুমদার
হিন্দুস্তানের বা ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টিকে একটি দক্ষিণপন্থী গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল মনে করা হয়। গুজরাটের দাংগার পর সবাই মোদীকে দায়ী করেছে। শুনেছি তদন্তেও মোদীকে দায়ী করা হয়েছে। গুজরাটের ওই বিভত্স দাংগার পর সারা বিশ্ব মোদিকে গালমন্দ করেছে। আমেরিকার ওবামা সরকার মোদীর আমেরিকা সফর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভারতের এ নির্বাচনে ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের বুদ্ধিজীবীরা মোদীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই বলেছেন, মোদীর দল জিতলে তাঁরা হিন্দুস্তান ছেড়ে চলে যাবেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত সেনতো মোদীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করেছেন। সালমান রূশদীও বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হিব্দুস্তানের ভোটাররা ভাল মানুষদের কথা না শুনে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন। ১৯৩৭ সাল থেকেই কংগ্রেস হিন্দুস্তান শাসন করে আসছে। ইংরেজ সাহেবদের সহযোগিতায় সরকারের সাথে দর কষাকষি করার জন্যে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে । প্রথমে ছিল একটি সমিতি, পরে রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলীম গঠিত হয়েছে ঢাকায়। কিন্তু কেন মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছে তার কারণ ও পিছনের ইতিহাস অবশ্যই জানা দরকার শিক্ষিত সমাজকে। কংগ্রেসের বিশ বছর পরে কেন মুসলীম গঠণ করতে হয়েছিল? মুসলমানরা কখনই কি খন্ডিত ভারত চেয়েছে? মুসলীম লীগ গঠিত হয়েছিল মুসলমান স্বার্থের কথা বলার জন্যে। কারণ কংগ্রেস ভারতের সকল মত পথ ও ধর্মের মানুষের কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছিল। শাসক ইংরেজদের সাথে কথা বলার কংগ্রেস সব সময়েই অন্যদের স্বার্থকে অবজ্ঞা করেছে। শুরুতে মুসলীম লীগ নেতারা কংগ্রেসেই ছিলেন। এমন কি জিন্নাহ সাহেবও কংগ্রেস নেতা ছিলেন। তিনি সব সময় একজন ভারতীয় হিসাবে কথা বলতে চাইতেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা নিজেদের হিন্দুদের নেতা মনে করতেন। তাঁরা বলতেন কংগ্রেসই ভারতবাসীর একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবে বা কার্যত তাঁরা হিন্দু স্বার্থের কথাই বলতেন।
কংগ্রেস সব সময়ই হিন্দুস্তানের এলিট/ ক্ষমতাবান / ব্রাহ্মণদের দল ছিল। সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল এই দলের ভন্ডামী। আর ভন্ডামীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন গান্ধীজী, নেহেরু ও প্যাটেলের নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের পুঁজির মালিকরা। কংগ্রেস বা তথাকথিত ভদ্রলোকদের ভন্ডামী না থাকলে ভারত বিভক্ত হতোনা। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ হিন্দুস্তানে এক সাথে থাকতে পারলে বৃটিশমুক্ত হিন্দুস্তানে থাকতে পারবেনা কেন? কংগ্রেস এবং হিন্দু নেতাদের বড় সাফল্য হলো তারা ভারত বিভাগের সব দোষ চাপিয়ে দিয়েছে মুসলমানদের উপর। তাদের সে সাফল্য আজও জারী রয়েছে। এমন কি আমাদের তরুণ সমাজ ও একশ্রেণীর আরবী নামধারী বাংগালী মুসলমান যাঁরা নিজেদের জ্ঞানী গুণী মনে করেন তাঁরা জেনে শুনে হিন্দুস্তান বিভক্তির জন্যে মুসলমানদের বা বাপ দাদাদের দায়ী করেন। কিছুলোক আছে যাঁরা আরবী নামধারী খাঁটি বাংগালী বলে নিজেদের জাহির করেন তাঁরা বা তাঁদের বাপ দাদারা ৪৭এ হিন্দুস্তান ত্যাগ করে পাকিস্তান মানে পূর্ব বাংলায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা নিজেদের এখন সেক্যুলার বা ধর্মহীন বলে প্রচার করতে সম্মানিত বোধ করেন। এদের কোন বায়া দলিল নেই। এরা সুযোগ মতো নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করেন আবার সুযোগ মতো মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেগে যায়। এঁরা শিকড় বিহীন মানুষ। এঁদের কোন আত্মমর্যাদা নেই।
মোদী সাহেবকে কট্টর দক্ষিণপন্থী ধর্মবাদী নেতা মনে করা হয়। তিনি সারা বিশ্বে একজন হিন্দু নেতা হিসাবে পরিচিত। আমি মনে করি এদিক থেকে মোদী একজন সফল হিন্দু নেতা। কোন ধরণের কনফিউশন বা বিভ্রান্তি নেই। বাংলাদেশে এখন বিভ্রান্তি বা কনফিউশনের রাজনীতি চলছে। আওয়ামী মুসলীম লীগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি এখন ধর্মকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করতে চায়। মানে ইসলামকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করতে চায়। বিশ্বের মোড়ল আমেরিকা ও তার বন্ধুরা ইসলামকে দেখতে পারেনা। মুসলমানদের টেররিষ্ট বা সন্ত্রাসী মনে করে এবং সন্ত্রাস দমনের নামে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ শুরু করেছে। আমেরিকার নেতৃত্বে এই যুদ্ধকে বাংলাদেশ সহ এশিয়ার বহু দেশ সমর্থন জানিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারত ও বাংলাদেশ একই নীতিতে বিশ্বাস করে। ভারতের ৬০ ভাগ মানুষ হিন্দু। বাকি ৪০ ভাগ মানুষ মুসলমান, অচ্যুত বা হরিজন, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, শিখ। হরিজনরা ধর্মীয় ভাবেই অধিকার হারা। হিন্দু ভারতে মুসলমানরা নানা ভাবে নির্যাতিত।
বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও সরকার সেক্যুলারিজমে(ধর্মহীনতা)বিশ্বাস করে ও সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের আধুনিক, প্রগতিশীল,সেক্যুলার পরিচয় দিয়ে আমেরিকা ও ভারতের সমর্থন আদায় করে চলছে। সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলমান দমনের জন্যে জগতে এখন টাকা পয়সার অভাব নেই। এমন কি মুসলমানদের দুই পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনার খাদেম সউদী বাদশাহও সন্ত্রাস দমনের নামে আমেরিকাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করছেন। এমন কি বাদশাহ মিশরের ইসলামিক সরকারকে উত্খাত করার জন্যে জেনারেল সিসিকে অর্থ ও বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে।
ভারতের প্রখ্যাত বিচারপতি হুসবেত সুরেশ বলেছেন সন্ত্রাস দমনের নামে ভারতের রাস্ট্রীয় সন্ত্রাস লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছে।কাশ্মীরিরা স্বাধীনতা চায় তাই তারা সন্ত্রাসী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে যারা লড়াই করেছেন ও জীবন দিয়েছেন তাঁদের পাকিস্তানী দুষ্কৃতিকারী বলতো। ভারতের বহু রাজ্যে এখন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে, আর সবখানের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। আসাম ও মণিপূরীরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে, কিন্তু আমরা তাঁদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করছি। কারণ দিল্লীর সাথে আমাদের সরকার গুলোর বন্ধুত্ব আছে। ফলিস্তিনের ব্যাপারে ভারত সরকার ইজরায়েলকে সমর্থন করছে। এশিয়ায় ভারতই প্রথম ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ ইজরায়েল একটি মুসলীম বিরোধী রাস্ট্র। ইজরায়েল বিগত ৬০ বছরে ফিলিস্তিনের কয়েক লাখ নরনারী ও শিশুকে হত্যা করেছে। লাখ লাখ মানুষকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করেছে। বিচারপতি হুসবেত বুশ এবং আমেরিকাকে বিশ্বের একনম্বর সন্ত্রাসী বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, রাস্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণেই দেশে দেশে মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। কাশ্মীরের কোন নাগরিককেই দিল্লী বিশ্বাস করেছেনা। ফলে কাশ্মীরের সব মুসলমানই আজ সন্ত্রাসী।
দিল্লী আজ নানা দিক থেকে বাংলাদেশকে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ একেবারে অন্ধ ভাবেই সব কিছু দিয়ে যাচ্ছে। দিল্লী বাংলাদেশকে একটি অনুগত রাস্ট্র হিসাবে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের পক্ষেই দলীয় ও রাস্ট্রীয় আনুগত্য প্রকাশ করা সম্ভব। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন ছিল দিল্লীর পক্ষের সরকার স্থাপনের একটি নির্বাচন। একমাত্র দিল্লিই চোখ বন্ধ করে ৫ই জানুয়ারীর অবৈধ নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে সাহায্য করেছে আওয়ামী লীগকে। এ নির্বাচনকে ভারতের কংগ্রেস সরকার ছাড়া আর কেউ সমর্থন করেনি। রাশিয়া এ ক্ষেত্রে ভারতকে খুশী করার জন্যে লেজুড়বৃত্তি করেছে। ৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে রাশিয়া ভারতকে সমর্থন করেছে। যুদ্ধ এড়াবার জন্যে চীন ও আমেরিকা পাকিস্তানকে কূটনৈতিক সমর্থন বা ‘লিপ সার্ভিস’দিয়েছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর ভারত ও রাশিয়া বাংলাদেশকে লুটে পুটে খেয়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে ঐতিহাসিক ভাবেই ভারতের একটা আত্মিক বন্ধন রয়েছে। সে বন্ধনের মূলমন্ত্র হলো দিল্লীর তাবেদারী বা অনুগত বন্ধু থাকা। দাস শব্দটি ব্যবহার করা যেতো,কিন্তু ব্যবহার করিনি শিষ্টাচারের জন্যে।
বাংলাদেশের প্রশ্নে মোদী সরকারের ভুমিকা কি হবে এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভিতর নানা ধরণের যোগ বিয়োগ চলছে। অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগের সাথে মোদীর সম্পর্ক উষ্ণ হবেনা। মোদীও জানেন আওয়ামী লীগ কংগ্রেসেরই বাংলাদেশ শাখার মতো। মোদী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় বলে গেছেন বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কটা দলীয় ভিত্তিতে নয়,দুই দেশের জনগণের স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীও এ কথা বলেছিলেন বংগবন্ধুর পতনের পরে। তিনি খোন্দকার মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে দিল্লী ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার দেখতে চায়। তবে বংগবন্ধুর সরকারের সাথে ইন্দিরা সরকারের সম্পর্ক কখনই উষ্ণ বা মধুর ছিলনা। বংগবন্ধুকে অনুগত সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপতি বানানো ইন্দিরার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। ৭১ সালে মুজিব নগর সরকারের সাথে দিল্লী সরকারের সম্পর্ককেও বংগবন্ধু সহজে গ্রহণ করেননি। ইন্দিরা বা দিল্লীর আপত্তি সত্তেও বংগবন্ধু পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময়েই বাংলাদেশ পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বংগবন্ধুর সময়ে দিল্লী ঢাকা সম্পর্ক কেমন ছিল তা নিয়ে গবেষণার সময় এসে গেছে। তাহলে জানা যাবে বংগবন্ধু হত্যার অজানা রহস্য কি এবং কোথায় লুকিয়ে আছে। শেখ হাসিনা এ কাজটি করবেন না, তাহলে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের জ্ঞানী গুণী মানুষদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে দিল্লীর দক্ষিণ এশিয়া নীতি কি? ঢাকার সরকারকে খেয়াল রাখতে দিল্লী কি চায়। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হিন্দু নেতারা হিন্দু ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এখনও ভারতের সকল নেতাই মনে করেন সংখ্যাতত্বের দিক থেকে হিন্দু নেতরাই স্বাধীন ভারতকে শাসন করবে। প্রশ্ন উঠেছিল অখন্ড ভারতে মুসলমান সহ অন্যান্য ধর্মীয় মাইনরিটির অবস্থা কি হবে। ইংরেজদের ভারত দখলের আগে মুসলমানেরা দীর্ঘ সাতশ’বছর ভারত শাসন করেছে। ইসলাম ধর্মের প্রচারকগন ভারতে আসতে শুরু করেছেন সপ্তম শাতাব্দীর শুরু থেকেই। মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু প্রদেশে এসেছেন ৭১১ সালে। মুসলমানেরা দিল্লীর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছেন ১২০৪ সালের দিকে। একই সময়ে বাংলাদেশ মুসলমানদের শাসনে এসেছে। পিছিয়ে পড়া সমাজে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। ধর্মীয় ভাবেই এখন ভারতের ৩০ কোটি মানুষ অচ্যুত বা অর্ধ মানব। এই অর্ধ মানবদের ঈস্বর নাকি ব্রাহ্মণদের সেবার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। তোমনি একটি সমাজ ব্যবস্থায় মুসলমানরা এসে সাম্যের বাণী শুনালো এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করলো। জনসংখ্যা বা ডেমোগ্রাফী তত্ব সমাজ বা রাষ্ট্রে খুবই গুরুত্পূর্ণ। স্পেনে সাতশ’বছর মুসলমান শাসন ছিল। ক্রুসেডে(ধর্মযুদ্ধ)লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করার ফলে সেখানে এখন মুসলমান নেই চলে। ভারতে মুসলমানরা সাতশ’ বছর শাসন করলেও জনসংখ্যা পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই করেনি। কারণ,তা ইসলামের নীতি নয়। মদিনা রাষ্ট্র যখন গঠিত হয় তখন মুসলমানরা ছিল মাইনরিটি। মেজরিটি নাগরিকরা আল্লাহর রাসুল(সা) হজরত মুহম্মদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন। ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে ইসলামে কখনই জবরদস্তি ছিলনা। মক্কা বিজয়ের দিনই আল্লাহর রাসুল(সা) এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইসলাম বিরোধীরা এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অপপ্রচারণা চালায়। চলমান বাংলাদেশেও এ প্রচারণা এখনও জারী আছে। চলমান সরকারও ধর্মের রাষ্ট্রের ব্যাপারে রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ মনে করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মেজরিটি মানে ৯০ ভাগ মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বদিক থেকেই একটি মাইনরিটি শাসিত একটি দেশ।
অতি আধুনিক, ধর্ম নিরপেক্ষতা(ধর্মহীনতা) ও প্রগতিশীলতার নামাবলী পরা ভারতের শাসকগণ সকলেই মনো জগতে সাম্প্রদায়িক। মোদী সাহেব নিজেও একজন পিছিয়ে পড়া সমাজের লোক এবং কট্টর হিন্দুত্ব বাদে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে তাঁর কোন রাখঢাক নেই। কংগ্রেসকে নির্বাচনে পরাজিত করার মূল কারণ হলো ধর্মের ব্যাপারে মোদী সাহেবের খুল্লাম খুল্লা নীতি। তবে দিল্লীর অদৃশ্য সরকারের চেয়ারে বসে তিনি তাঁর নীতি কতটুকু বাস্তাবায়িত করতে পারবেন সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। ভারতের মূলনীতি হলো ভারতকে একটি পূর্ণাংগ হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমি এ ব্যাপারে ভারতের কোন দোষ দেখিনা। যে দেশের নেতা ও সরকার নিজ ধর্মের ৩০কোটি মানুষকে অর্ধ মানব মনে করে সেই দেশের নেতারা সরকার কেমন করে অন্য ধর্মের মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা দান করবে। ভারতের সংবিধান প্রণেতা ও নেহেরুর বন্ধু ড. অম্বেদকার ছিলেন একজন দলিত। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন অচ্যুতবাদকে পরিহার করার বিধান করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ভারতের ৬৫ বছরের গণতন্ত্রে আজ পর্যন্ত কোন দলিত বা অচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কোন দলিত সচীব বা বিচারপতি হতে পারেননি। এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে ভারত নামমাত্র জনগণের দেশ। এদেশে অচ্যুতদের পূড়িয়ে মারা হয়। এমন দেশে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে পতিত মনে করা হয়। ভারতে এক সময়ে উত্তরের মানুষ দক্ষিণে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো। নেহেরু নিজেও বলেছেন, ভারতবাসী ইতিহাস লিখতে জানতোনা। রামায়ন মহাভারতের মতো কাব্যগ্রন্থকে তারা ধর্মীয় পুস্তকের সম্মান জানায়। মহাপন্ডিত আলবিরুণী বলেছেন, ভারতীয়রা বিজ্ঞানকে যাদু মনে করতো। পাগড়ী ও জুব্বা পরিহিত মুসলমানদের মামদো ভুত মনে করতো ।
দিল্লী তার প্রতিবেশী সকল দেশেই গোলযোগ লাগিয়ে রাখতে চায়। নেপালে গণতন্ত্রের নামে রাজ পরিবারকে হত্যা করিয়েছে। লেনদুপ দর্জিকে বশ করে তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে সিকিম দখল করে নিয়েছে। কাশ্মীরে গণভোট দিবে বলে ওয়াদা করেও তা রক্ষা করেনি। ৬০ বছর ধরে সেখানে রক্ত ঝরছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্ব মানবতা ও গণতন্ত্রের ঠিকাদারগণ টু শব্দটিও করেনা। জোর করে গোয়া দমন দিউ ও হায়দ্রাবাদ দখন করেছে। ৭১ সালে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। ভারত নাকি বাংলাদেশের একমাত্র প্রাণের বন্ধু। বিগত ৪৩ বছরে ভারত বন্ধুত্বের নামে বাংলাদেশকে শোষণ করে চলেছে। আওয়ামী লীগ ও তার ঘরাণার লোকেরা এই শোষনকে ভালবাসা মনে করে।
একেবারেই ভিন্ন ঘরাণার রাজনীতিক মোদীর আগমনে বাংলাদেশের প্রশ্নে দিল্লীর বাংলাদেশ নীতির কোন পরিবর্তন হবে কিনা পাঠক সমাজ আপনারাই ভাবুন। আমিতো মনে করি, বিএনপি বা একই ঘরাণার রাজনীতিকদের মোদীর আগমনে খুশী হওয়ার মতো আমি কিছু দেখছিনা। দিল্লী জানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখলে ভারতের সীমাহীন লাভ হবে। তাহলে কেন তাকে অন্ধ ভাবে সমর্থন করবেনা। তাছাড়া আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটি বিশ্বাস। দল হিসাবে এটা একটি কবিলা বা কৌম। রাজনীতির প্রশ্নে তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে দল বড়,বাংলাদেশের পতাকার চেয়ে দলীয় পতাকা বড়। এই দলের লক্ষ্য একটিই, আর তা হলো যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় থেকে দিল্লী কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com