বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু / এরশাদ মজুমদার
সংখ্যালঘু বিষয়টি জানতে হলে অখন্ড ভারতের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হবে। কেন ভারত ভাগ হলো? ইংরেজদের আগমনের পুর্বে ভারত ছিল বিভিন্ন রাজা মহারাজাদের শাসিত। এসব রাজা মহারাজারা প্রায়ই স্বাধীন ছিলেন। ভারতে মুসলমানরা আসতে শুরু করেন সপ্তম শতাব্দী থেকে। এদের বেশীর ভাগই ছিলেন সওদাগর ও ধর্ম প্রচারক। মুসলমান রাজনৈতিক ক্ষমতা খন্ডিত ভারতে পা রাখে ৭১১ সালে মুহম্মদ বিন কাশেমের মাধ্যমে। তখনও অখন্ড ভারত বলে কোথাও কিছু ছিলনা। ভারত বলেও কোন শব্দ ছিলনা। বিদেশীরা বিশেষ করে আরব বণিকরা এদেশকে হিন্দুস্তান বলতো। বর্তমান হিন্দু ধর্ম বলেও তেমন কোন ধর্ম হিন্দুস্তানে ছিলনা। বেদ বা উপনিষদে নিরাকার ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে আর জীবন যাপনের জন্যে কিছু নিয়ম কানুনের কথা বলা হয়েছে। এখনও ভারতের দক্ষিণে যে ধর্ম পালিত হয় তা উত্তরে হয়না। দক্ষিণের রাজা ছিলেন রাবণ। তাকে ভাই বিভীষনের সাথে ষড়যন্ত্র করে উত্তরের আর্য রাজা রাম পরিজিত করেন। রাবণের পরে বিভীষণই দক্ষিণকে শাসণ করেন। অখন্ড বাংলায় দুর্গার পুজা হয়,কিন্তু বাংলার বাইরে তা হয়না। কোথাও গণপতির পুজা হয়, আবার কোথাও শিবের পুজাও হয়। অতি সংক্ষেপে ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসের কথা বললাম।
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে মুসলমানদের আগমনের পর। নেহেরুজী নিজেই লিখে গেছেন যে, ভারতীয়রা ইতিহাস লিখতে জানতোনা। মুসলমানরাই ভারতীয়দের ইতিহাস বিজ্ঞান লিখতে শিখিয়েছেন।ভারত সম্পর্কে বহির্বিশ্ব জানতে পারে এক হাজার বছর আগে আরবী ভাষায় লিখিত আলবিরুণীর ভারতত্ব পড়ে। এটাই প্রথম আকরগ্রন্থ। ভারতীয়রা ভারতকেই বিশ্ব বলে জানতো। রাজারা নিজ শাসিত এলাকাকেই দেশ মনে করতো। এক রাজার সাথে অন্য রাজার তেমন কোন সম্পর্ক ছিলনা। ১২শ’সালের পর ভারতে মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরো ভারতকে একটি দেশ বা ভৌগলিক ইউনিট হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন মোগল শাসকগণ। বাবরের মাধ্যমে ১৫২৬ ভারতে সালে দিল্লীর ক্ষমতা দখল করেন মোগলরা। এ সময় থেকেই ভারত অখন্ড ভৌগলিক এলাকায় পরিণত হতে থাকে। মোগলরাই ভারতে ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা করে। কেন্দ্রীয় সরকার মানে মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করেই রাজা মহারাজারা নিজ নিজ এলাকা শাসণ করতেন। মোগল আমলেই মহারাজাদের সাথে বিভিন্ন রাজ্যে নবাবীর পত্তন হয়। রাজ্য রাজা ও নবাবদের কাজ ছিল কেন্দ্রের আনুগত্য স্বীকার করে নির্ধারিত কর দেয়া। ভারতের রাজ্যগুলো এখনও সেই ভাবেই চলছে তথাকথিত গণতন্ত্রের লেবাস পরে। কেন্দ্রের কথা না শুনলেই রাজ্য সরকার বাতিল করে দিয়ে কেন্দ্রের শাসন চালু করা হয়। প্রত্যেক রাজ্যেই একজন গভর্ণর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে থাকেন। মোগল আমলে মহারাজা বা নবাবদের নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল। তাদের নিজস্ব মুদ্রা ছিল। এখন গণতান্রিক যুগে সেই সুযোগ নেই। ভারতের বহু রাজ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে কয়েক যুগ ধরে। কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী দিয়ে রাজ্যের স্বাধীনতা আন্দোলন গুলোকে দমণ করছেন।
ইতিহাসের এ বিষয় গুলো আপনারা অনেকেই কমবেশী জানেন। হিন্দু মুসলমানের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা খুবই বেশী এবং দৃশ্যমান হয়েছে ইংরেজ আমলে। এবং আজও চলছে এবং বছরে ছোট খাট হাজার দাংগা হয়। তথাকথিত প্রগতিশীল ভারত আজও দাংগা দমাতে পারেনি। তারা শুধু মুসলমানদের সাথে দাংগা করেনা। সকল জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাথেই দাংগা করে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদীজীকে লোকে দাংগার গুরু মনে করেন। ভারতে মুসলমান রাজনৈতিক উপস্থিতির এক হাজার বছরেও দাংগা বা সাম্প্রদায়িকতার তেমন কোন ইতিহাস নেই। দাংগা ও সাম্প্রদায়িকতা শুরু হয়েছে ইংরেজদের ডিভাইড এ্যান্ড রুল পলিসির কারণে। ইংরেজরা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মুসলমান শাসক ও সম্প্রদায়কে আস্থায় নেয়নি কখনও। বরং তারা মুসলমানদের শত্রু মনে করতো। সরকারী চাকুরী,এজেন্সী ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ পেত হিন্দুরা।বৌদ্ধদের ভারত থেকে বিতাড়িত করেছে হিন্দু শাসকগণ। এখন খৃষ্টানদের হিন্দু বানাবার চেষ্টা চলছে। হিন্দুরা শিখদের উপরও অত্যাচার চালায়। ৩০ কোটি অচ্যুতদের ধর্মীয়ভাবেই মানুষ মনে করা হয়না।
ভারতের কূটনৈতিক পড়ার নাম চাণক্যপুরী। চাণক্য মৌর্য আমলের রাজনীতি বিষয়ক একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। রাজনীতিবিদদের শিয়ালের মতো ধুর্ত হতে হবে। ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে চাণক্যের নীতি। আর আমরা ভারতের প্রতিবেশী। ভারত বৃহত্ দেশ, বাংলাদেশের চেয়ে তার শক্তি বেশী। এক্ষেত্রে ভারত শিয়াল আর মুরগের গল্পের অনুসরণ করে। মোরগ যদি ভেবে থাকে শিয়ালের সাথে বন্ধুত্ব করবো তাহলেই সর্বনাশ। তবুও মোরগকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে কিভাবে? সিংগাপুর, তায়ওয়ান কেমন করে ভাল ভাবে বেঁচে আছে এখনও। ভারতবাসীর ৫০ ভাগ হচ্ছে সনাতনধর্মী বা হিন্দু। ২৫ ভাগ অচ্যুত বা হরিজন। আদমশুমারী, নির্বাচন ও গণনার জন্যে তাদের হিন্দু বলে প্রচার করা হয়। হিন্দু ধর্ম মতে অচ্যুতরা অর্ধ মানব। ভারতীয় সংবিধানে তাদের মানুষ হিসাবে স্বীকার করা হলেও সমাজ তা মানেনা। ২০ ভাগ মুসলমান আর ৫ ভাগ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। রাজনীতি মুসলমানদের ভুমিকা অন্যান্যদের বেশী এবং শোষিতও বেশী। মুসলমান বা সংখ্যলঘুদের শেষণ করাই ভারতের দর্শণ। প্রতিবেশী সকল দেশকেই ভারত একশ’ভাগ নিজের প্রভাবে রাখতে চায়। আগেই বলেছি, এ অঞ্চলে ভারত শিয়ালের ভুমিকা পালন করে। মোরগ উড়তে জানে বলেই শিয়ালের কাছ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে সনাতন ধর্মী হিন্দুদের কথাই মনে করা হয়। এরপরে রয়েছেন বৌদ্ধ ও ঈসায়ী(খৃষ্টান) ধর্মাবলম্বীরা। সংখ্যার দিক আরও কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠি আছে। হিন্দুরা ছাড়া বাকি ধর্মাবলম্বীরা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবে চুপচাপ থাকেন। যদিও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ রয়েছে নামে, কাজে এটা শুধুই হিন্দুদের সংগঠণ। চলমান ধর্মমুক্ত সরকার হিন্দু সম্প্রদায়কে খুশী রাখার জন্যে অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্টদের অধিকারকে অবজ্ঞা করেছেন। অপরদিকে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ হওয়া সত্বেও সরকারী চাকুরীতে তারা এক ভাগও নেই। বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীদের সংখ্যা পাঁচ ভাগ হওয়া সত্বেও সরকারী চাকুরীতে তাঁদের অবস্থান ১৮ ভাগের মতো। সনাতন ধর্মীরা তাঁদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে একশ’ভাগ সজাগ। তার উপরে রয়েছে সরকারী আনুকল্য ও সেবা। হঠাত্ দেখা যাচ্ছে তাঁরা নিজেদের অধিকার নিয়ে নানা কথা বলছেন। সনাতন ধর্মীদের নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেছে। ৪৭ সাল থেকে কত হিন্দু ভারতে চলে গেছে। কেন চলে গেছে? অনেকেই দাবী করেছেন হিন্দু কমিশন গঠণ করার জন্যে। রাণা দাশগুপ্ত দাবী করেছেন পৃথক নির্বাচনের জন্যে। তিনি প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেব মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন হিন্দু বাড়ি দখল করেছেন। যাঁর বাড়ি তিনি দাবী করেছেন ন্যায্য মূল্যে বাড়ি বিক্রি করেছেন।
এ কথা আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ৪৭ সালে যে ভারত ছিল তা বিভক্ত হয়েছে কংগ্রেস নেতাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। কিন্তু দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনও করা হচ্ছে মুসলমানদের উপর। দীর্ঘ শ্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মুসলমানেরা কখনই ভারত বিভক্ত করে আলাদা মুসলমানের দেশের দাবী উঠেনি। আলাদা স্বাধীন দেশ পাকিস্তানের দাবী উঠেছে ১৯৪০ সালে বাধ্য হয়ে। কংগ্রেসের প্রধান নেতারা যদি অখন্ড ভারত প্রেমী হতেন তা হলে মুসলমানদের সাথে অবশ্যই সমঝোতায় আসতে পারতেন। তাঁরা চেয়েছিলেন পুরো ভারত তাঁরাই শাসন করবেন। লেবাননে মুসলমান ও খৃষ্টানদের ভিতর সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ চলছে। ৪৭ সালে বাংগালী মুসলমানেরা অখন্ড বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংগালী হিন্দুরা তা চাননি। কারণ অখন্ড বাংলাদেশে মুসলমানেরা মেজরিটি ছিল। এ ছিল বাংগালী হিন্দু নেতাদের একেবারেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। হিন্দুত্বের প্রশ্নে দেশ কখনই বড় ছিলনা। মুসলমানেরা অখন্ড ভারত শাসন করেছেন কয়েক’শ বছর ধরে। এ সময়ে প্রদেশ ও কেন্দ্রে বড় বড় পদ গুলোতে হিন্দুরা ছিলেন। সেনাবাহিনীতে বহু হিন্দু জেনারেল ছিলেন। তখন অখন্ড ভারত থাকতে কোন অসুবিধা হয়নি। দখলদার ইংরেজদের শাসণকে ভারতে দীর্ঘায়িত করেছে হিন্দুরা। তাঁরাই ভারতকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রথম এক’শ বছর ইংরেজরা হিন্দুদের সহযোগিতায় ভারত থেকে নিশ্চিন্ন করার চেষ্টা করেছে। ভারত দখলের প্রথম এক’শ বছর মুসলমানেরাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এই এক’শ বছরে হিন্দুরা মুসলমানদের সকল সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। এসব কথা শুনতে অনেকেরই খারাপ লাগবে। মনে হবে সাম্প্রদায়িক কথা। কিন্তু এসব সত্যি এবং গোপন ইতিহাস। ইংরেজদের দখলের পর থেকেই মিথ্যা ইতিহাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এখনও মিথ্যা ইতিহাস রচনার কাজ চলছে। মিথ্যা ইতিহাস কখনই চিরকাল টিকে থাকেনা। এখন ভারতের বহু জ্ঞাণী গুণী ভারত বিভক্তির আসল ইতিহাস লিখতে শুরু করেছেন।যদিও আওয়ামী লীগের তথাকথিত বাংগালী শাসনের নামে কিছু বুদ্ধিজীবী ভারত বিভক্তির জন্যে মুসলমানদের দায়ী করেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ অধিবাসী বা নাগরিক মুসলমানদের তথাকথিত সেক্যুলারিজমের(ধর্মহীনতার) নামে মেজরিটির উপর মাইনরিটির শাসন চাপিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমাদের জাতিস্বত্তা বিতর্কিত হয়ে রয়েছে। দিল্লী ঢাকা ও বাংগালী হিন্দুরা মনে করেন বাংলাদেশ বাংগালীদের দেশ। এটা হচ্ছে একটা মহা চক্রান্ত। বাংগালীর নাম করে ৯০ ভাগ নাগরিকের উপর হিন্দু সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ক’দিন আগে প্রগতিশীল চিন্তার প্রধান ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আমরা উর্দুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি আর এখন আমাদের ঘরে ঘরে শিশুরা হিন্দী বলছে। হিন্দী সংস্কৃতি অবাধ প্রবেশের জন্যে সরকার সকল দুয়ার খুলে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ খুবই সচেতনার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এ ব্যাপারে অজ্ঞ। বিএনপির কোন সাংস্কৃতিক দর্শণ নেই। বিএনপির আমলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ছিল সবচাইতে অবহেলিত। এর জন্যে বাজেটও ছিল একেবারেই নগণ্য। মরহুম সাইফুর রহমান নাকি বলেছিলেন, আমি হারমোনিয়াম কেনার জন্যে কোন টাকা দিতে পারবোনা। শুনতে পাচ্ছি বিএনপি একটি থিন্ক ট্যান্ক গঠণ করতে যাচ্ছে। এই ট্যান্কে কারা থাকবেন তা আমি আন্দাজ করতে করি। আমাদের প্রেসক্লাবে এক ধরনের জাতীয়তাবাদী আছেন যাঁরা আওয়ামী লীগের গ করেথাকলেও তাঁদের জাতীয়তাবাদী লেবেল নষ্ট হয়না। সেদিন কাগজে বেরিয়েছে, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকরা আবারও বিভক্ত হয়েছে। প্রেসক্লাবের প্রশ্নে তাঁরা একবার বিভক্ত হয়েছেন। এখন ইউনিয়নও ভেংগে গেছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে শওকত মাহমুদের মতো জেলে পাঠাবার হুমকী দিচ্ছেন। এসব জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক খালেদা জিয়ার নাকি অতি আপনজন। তিনি ক্ষমতায় থাকতে এরা সকলেই হালুয়া মাখন খেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, খালেদা জিয়া আবার কখন ক্ষমতায় আসবেন তার কোন ঠিক নেই। তাই তাঁরা আর অপেক্ষা করতে রাজী নেই।
হিন্দুরা বা কংগ্রেস নেতারা কখনই মুসলমানদের অধিকারকে স্বীকার করেননি। ইংরেজ আমলে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ছিলেন। হিন্দুরা সব সময় মুসলমানদের পরাজিত ও নির্যাতিত দেখতে চান। তাই তাঁরা মুসলমানদের আলাদা দেশ মানেননি। ৪৭ সাল থেকেই হিন্দুরা পূর্ববাংলা বা চলমান বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যেতে শুরু করেছেন। ভারতকেই তাঁরা নিজেদের দেশ মনে করেন। থাকেন বাংলাদেশে। সম্পদ তৈরি করেন ভারতে। আশা করেছিলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হিন্দুরা আর ভারতে যাবেন না। না,আমার আশা পূরণ হয়নি। তাঁরা স্বেচ্ছায় ভারতে চলে যান, অভিযোগ করেন সাম্প্রদায়িকতার। ৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি। তবুও হিন্দুরা সব সময় দাংগার অভিযোগ করে চলেছেন। জমি জমা, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে মুসলমানে মুসলমানে সারা বছর খিটমিট ও মারামারি লেগে থাকে। এটাকে কেউই সাম্প্রদায়িকতা বলেন না। হিন্দুদের সাথে ঝগড়া ফাসাদ হলেই তাকে তখনই সাম্প্রদায়িকতা ধুয়া তোলা হয়। ভারতে সত্যিকার অর্থেই বছরে কয়েকশ’ দাংগা হয়। ভারতে এখন দাংগাবাজ সরকার ক্ষমতায় আছে। তাঁরা দাবী তুলেছেন মুসলমানদের হিন্দু হওয়ার দাবী তুলেছেন। এক সময় তাঁরা কাবা ঘরের উপর তাঁদের অধিকারের দাবী তুলেছিলেন। তাঁদের মতে কাবা ঘরে এক সময় ৩৬০টি মুর্তি ছিল। তাই খাবা ঘরের উপর হিন্দুদের হিস্যা আছে। আওয়ামী সরকার হিন্দুদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাঁদের অধিকারের রক্ষক। তারপরেও হিন্দুরা দাবী করেন তাঁরা বেশী নির্যাতিত।
হিন্দুদের স্বপ্ন হচ্ছে অখন্ড হিন্দু ভারত। নেহেরুজী নিজেই এ স্বপ্নের কথা বলে গেছেন। ফলে হিন্দুরা ভৌগলিক কারণে যেখানেই থাকুননা কেন ভারতকেই তাঁরা নিজেদের দেশ মনে করেন। ফলে তাঁরা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করেন না। আমি জানি, আমার কথা গুলো তথাকথিত প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িকদের পছন্দ হবেনা। আমরা যতই খাঁটি বাংগালীত্বের শ্লোগাণ দিইনা কেন হিন্দুরা কখনই নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বাংগালী বা বাংলাদেশী ভাবতে পারেন না। আওয়ামী লীগ শুধু হিন্দুদের সন্তুষ্ট করার বা রাখার জন্যে বাংগালী জাতীয়তাবাদের শ্লোগাণ তুলেছে। বাংলাদেশী শব্দের সাথে নাকি মুসলমানিত্বের গন্ধ আছে। একই ভাবে বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর,জিন্দাবাদ সহ আরও বহু শব্দ আওয়ামী লীগ পরিহার করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেবের বিরুদ্ধেই সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণেই হিন্দরা ও আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা বার বার অভিযোগ তুলে দিল্লী ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com