আল্লাহপাকই মানব জাতির জন্যে দিন ক্ষণ মাস বছর ও রাতদিন তৈরি করেছেন। মানুষকে দিন রাত্রির জ্ঞান দান করেছেন। এই জ্ঞান দ্বারাই মানুষ দিনক্ষণ গণনা শিখেছে। ইতিহাস রচনা করা শিখেছে। মুসলমান জ্ঞাণী গুণী ও ইতিহাসবিদগণ মানব জাতিকে ইতিহাস বিজ্ঞানের জ্ঞান দান করেছেন। ভারতে ইতিহাস বিজ্ঞানের জ্ঞান ও চর্চা নিয়ে এসেছেন মুসলমানেরা। বিশেষ করে মোঘল যুগে বিজ্ঞান সম্মত ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছে। স্বয়ং জওহারলাল নেহেরু এ কথা বলেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ উদ্বোধন করার সময় প্রিন্স চার্লস বলেছিলেন, মুসলমানেরাই বৃটেন সহ ইউরোপে জ্ঞানের আলো নিয়ে গেছে। দিন বা তারিখের নিজস্ব কোন গুণ নেই। ঘটনা প্রবাহ দিন বা রাত্রিকে স্মরণীয় করে রাখে। তাই এসব দিন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। পবিত্র কোরআন নাজিলের দিনক্ষণ স্মরণীয় হয়ে আছে কোরআনের কারণে।
আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করি। কারণ তাঁরা নিজেদের জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। এক সময় মুসলমানদের মুক্তির জন্যে মুসলীম লীগ সংগ্রাম করেছে। তাই ইতিহাসে মুসলীম লীগ স্থান করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখার কারণে ইতিহাসে দলটি দৃঢ অবস্থান করে নিয়েছে। তাই বংগবন্ধুর জন্মও মৃত্যু দিবস পালন করা হয়। একই ভাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বা পাঠ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজেকে অমর করে করে রেখেছেন। একই ভাবে জিন্নাহ সাহেব ও গান্ধীজী ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ইতিহাসে নিন্দিত ব্যক্তিও আছেন, যেমন জেনারেল মীরজাফর আলী খান ও ক্লাইভ। লর্ড ক্লাইভ নবাবের কোষাগার লুন্ঠন করে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন। কারবালার যুদ্ধের কারণে খলিফা ইয়াজিদ একজন মহানিন্দিত ব্যক্তি হিসাবে স্থান পেয়েছে।
ইতিহাসের এইদিনে ১৯৪০ সালে হিটলার ও মুসোলিনী ফ্লোরেন্সে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এই দুজনই ছিলেন জগত বিখ্যাত স্বেচ্ছাচারী শাসক। ১৯৪৮ সালের এইদিনে ইজরাইল তার রাষ্ট্রীয় পতাকা ডিজাইন অনুমোদন দেয়। এই তারিখেই ১৯৪৯ সালে ইহুদীবাদী নেতা নেতানিয়াহুর জন্ম হয়েছে। ১৯৪৫ সালের এইদিনে ফরাসী দেশের নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেছেন।
ইতিহাসের কারণেই আমরা অতীতের কথা জানতে পারি। তবে আমরা যে ইতিহাস জানি তা হলো বিজয়ীর ইতিহাস। রাজার ধর্মই জনগণের ধর্মে পরিণত হয়েছে। রাজারাই কবি শিল্পী সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদদের রাজার পক্ষে ইতিহাস রচনা করতে বাধ্য করে থাকে। যেমন মোঘল সম্রাট আওরংজেব নাকি হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন বলে একশ্রেণীর ঐতিহাসিক লিখে গেছেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন দরবেশ সম্রাট। সেলাই করে আর হাতে লিখে কোরআনের কপি করতেন এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি সারা ভারতে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্যে টাকা বরাদ্দ করেছেন। অপরদিকে বাদশাহ আকবর দ্বীনে ইলাহী চালু করে সনাতনধর্মীদের কাছে প্রিয় হয়েছে আর মুসলমানদের কাছে নিন্দিত হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে আবু জেহেল ও আবু লাহাব দুজন মহানিন্দিত ব্যক্তি।
অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, ইতিহাস কখনই নিরপেক্ষ হয়না। ত্যাগী ইতিহাসবিদ, কবি শিল্পী, সাহিত্যিকরা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিদেশে অবস্থান করে সত্য ইতিহাস তৈরি করে রেখে যান আগামী দিনের সত্যান্বেষীদের জন্যে। আবার অনেকেই বলেন, সমকালে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করা যায়না। যেমন, নবাব সিরাজ উদ দৌলার ইতিহাস। বেশ কয়েকজন সনাতনধর্মী ইতিহাসবিদ ও ইংরেজ সিরাজকে কলংকিত করে ইতিহাস রচনা করেছেন। অনেক কবি সাহিত্যিকও নবাবের বিরুদ্ধে কবিতা ও সাহিত্য রচনা করেছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস চাপা পড়েনি। মুসলমান খলিফাদের(কার্যত: বাদশাহ) আমলে বহু ইসলামিক পন্ডিত, আলেম ও স্কলারদের নির্যাতন সহ্য করে শহীদ হতে হয়েছে। এমন কি প্রতিপক্ষের আক্রোশ থেকে রক্ষা করার জন্যে জ্ঞানের দুয়ার হজরত আলীর(রা) কবর বা মকবরাকে ৯০ বছর লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। আপনারা আসাদুল্লাহ হজরত আলীর(রা) ভাষন গ্রন্থ নাহজুল বালাগা পড়তে পারেন তাঁর জ্ঞানের গভীরতা জানার জন্যে। আমাদের মানে হানাফী মজহাবের ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার জীবনী পড়ুন। তখনকার মুসলমান খলিফা তাঁকে নির্যাতন হত্যা করেছেন। ইতিহাসের প্রথম মরমী কবি মনসুর হাল্লাজকেও হত্যা করেছেন তখনকার খলিফা। যদিও খলিফার মা হাল্লাজের পক্ষ হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। বলা হয় শুধুমাত্র শরিয়ত রক্ষা করার জন্যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে ইংল্যান্ডের রাজা অনেক ধর্মযাজককে হত্যা করেছেন। একই কারণে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকেও হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে কোটি কোটি মানুষকে জগতের ক্ষমতাবানরা। মানবজাতির ইতিহাস এভাবেই কলংকিত হয়ে আছে।
যে ভারত মুসলমান শাসকগণ শাসন করেছেন এক হাজার বছরের মতো, সেই ভারতকে মুসলমান নেতারা কখনই খন্ডিত করতে চায়নি। চেয়েছেন গান্ধীজী, গোখলে,প্যাটেল ও নেহেরুজী। আর তাঁদের সহযোগিতা করেছেন ইংরেজ শাসকগণ। মুসলমান নেতারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তান নাম একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবী করেছেন। কংগ্রেস নেতারা যদি একটু সহনশীল হতেন তাহলে ভারত বিভক্ত হতোনা। কিন্তু বিভক্ত ভারতের জন্যে দায়ী করা হলো মুসলমানদের। এমন কি বাংলাদেশে এখনও মুসলমান স্বার্থ বিরোধী কিছু আরবী নামধারী রাজনীতিক ও দলদাস বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা ভারত ও বংগদেশ বিভক্তির জন্যে মুসলমানদের দায়ী করে থাকেন। বাংলাদেশে মুসলমান মেজরিটি বাস্তবতায় যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁরা মনে করেন বাংলাদেশ বাংগালীদের দেশ। এদেশে ধর্মীয় মেজরিটির স্বার্থ রক্ষাকে তাঁরা সাম্প্রদায়িকতা মনে করেন। এর মানে তাঁরা ৯০ ভাগ মুসলমান আর ১০ ভাগ ভিন্নধর্মীকে এক মনে করেন। তাঁরা বলেন, বাংগালিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ফলে তাঁদের কাছে বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ নয়। ভারতের দর্শনই তাঁদের দর্শন। ভারত বাংলাদেশকে শুধুমাত্র বাংগালীর দেশ হিসাবে দেখতে চায়। এর মানে মেজরিটি হিসাবে মুসলমানদের কোন গুরুত্ব থাকবেনা। আমাদের বাপদাদারা মুসলমানদের এগিয়ে নেয়ার জন্যে রাজনীতি করেছেন আর এখন তাঁদের নাতিপুতিরা ধর্মমুক্ত বা ধর্ম বিরোধী অবস্থানে থাকতে পছন্দ করেন। মেজরিটি মানুষের স্বার্থ ত্যাগ করে মাইনরিটির স্বার্থ রক্ষার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। চলমান সরকার রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত রাখার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সংবিধানকে আল্লাহ মুক্ত করেছেন। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলকে(সা) গালি দিলে সরকারের তেমন শক্তিশালী কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সমালোচনা বা ব্যংগ করলে শাস্তি হয়। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের(সা) বিরুদ্ধে ব্লগ লিখে রাজীব নামের এক যুবক নিহত হলে সরকারের মন্ত্রী বলেছেন,দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রথম শহীদ। মন্ত্রীর কাছে শহীদ মানে হলো রাজনৈতিক গুন্ডা পান্ডা ও দলদাস হলেই শহীদ হবে। ইসলামে শহীদ মানে ধর্ম রক্ষায়,আল্লাহ নির্ধারিত পথে চলতে গিয়ে জীবন দান করলে শহীদ হওয়া যায়। রাজনীতিতে ধর্মদ্রোহীদেরও মর্যাদা থাকতে পারেন। জগতে ৭শ কোটি মানুষ থাকলে তার ৯৯ ভাগ মানুষই ধর্মে বিশ্বাস করেন। হয়ত অনেকেই পূর্ণাংগ চর্চা করেন না। কিন্তু খোদা বা তাঁর নবী রাসুলদের অমান্য বা অস্বীকার করেন না। তবে মোনাফেক থাকতে পারেন। আমি সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশে ইংরেজী শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বেশীর ভাগই সুবিধাবাদী। তাঁদের আদর্শ দর্শন হলো যেভাবেই হোক ভোট আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়া। ফলে বাংলাদেশ একটি আদর্শবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বংগবন্ধুর প্রথম জীবনে রাজনীতি শুরু করেছিলেন একজন মুসলমান হিসাবে। সনাতনধর্মীদের অত্যাচার তিনি এবং তাঁর পরিবার প্রত্যক্ষ করেছেন। রমাপদের মিথ্যা মামলায় তিনি জীবনে প্রথম জেলে যান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি দেখলেন, সাধারন মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছেনা তখন তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম গঠন করেন। জীবনে শেষদিন পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রাম করে গেছেন। ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আদব কায়দা, চলন বলন, ইতিহাস আজ খোলাখুলি ভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ ধর্মমুক্ত রাষ্ট্রের পক্ষে, অপর ভাগ ধর্মযুক্ত রাষ্ট্র ও রাজনীতির পক্ষে। এক ভাগ সংবিধানকে ধর্ম ও আল্লাহমুক্ত রাখতে চায় যারা নিজেকে শুধুই বাংগালী মনে করে। এঁরা মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত, রাষ্ট্র সবার। আরেক ভাগ নিজেদের বাংগালী মুসলমান করেন। তাঁরা ভৌগলিক ও ধর্মীয় কারণে নিজেদের বাংলাদেশী মনে করেন। ধর্মীয় কারণে নয়,শোষিত ও নির্যাতিত মাইনরিটির(মুসলমান) স্বার্থ রক্ষার জন্যে পাকিস্তান সৃষ্টি ।আর ৭১ সালে অর্থনৈতিক শোষণের কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দৃশ্যত মনে হয় ভারত খন্ডিত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। এখানে ইসলাম বা মুসলমানের কোন বিষয় ছিলনা। ইসলাম বা মুসলমানিত্ব কাউকে বা দূর্বলকে শোষণের অধিকার দেয়না। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করে যখন ক্ষমতাবানরা মানুষের অধিকার হরণ করে ও অত্যাচার করে তখন জনসাধারন কি করে? ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনও শোষণ ও অত্যাচার অব্যাহত আছে। কখনও ধর্মের নামে, আর কখনও গণতন্ত্র রক্ষার নামে। ক্ষমতাসীন জোট বা দল নিজেদের ভাষা ভিত্তিক জাতি ও নাগরিক মনে করেন। এঁরা আরবী নামের নাগরিক। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা ধর্মীয় মেজরিটির রাজনীতিতে এঁরা বিশ্বাস করেন না। ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস না করলেই আপনি জেহাদী, সন্ত্রাসী,মৌলবাদী, গোঁড়া বলে চিহ্ণিত হবেন আর সরকার(বৈধ বা অবৈধ)যাই হোক, রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার নামে আপনার উপর অত্যাচার চালাবে। আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করবে। ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা ও অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তবুও ইসলাম আজ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত। মুসলমানেরাই টেররিষ্ট। ধর্মমুক্তরা রাজনীতির কারণে আল্লাহু আকবর না বলে আল্লাহ সর্বশক্তিমান বলে থাকেন। এঁরা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস না করে মানুষের সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন। যাঁদের কোরআন ও রাসুলে(সা) বিশ্বাস তেমন দৃঢ় নয় তাঁরাই আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না। এসব মৌলিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য না থাকায় রাজনৈতিক দ্বন্ধ দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাশীন সরকার ও নেতারা ব্যক্তিগত জীবনে ও পারিবারিক জীবনে ধর্ম চর্চা করেন বলে বহুল প্রচারিত, কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তাঁরা ধর্মমুক্ত। ক্ষমতাশীনরা তাঁদের রাজনৈতিক দর্শনকে স্থায়ী রূপ দান করার জন্যেই ক্ষমতায় থাকতে চান। তাও আবার গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে। তাঁদের এই দর্শনকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দিল্লী সরকার। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বিজেপি তাঁদের রাষ্ট্রীয় দর্শনের কারণেই ক্ষমতাশীনদের জোর করে, ব্ল্যাকমেইল করে ক্ষমতায় রাখতে চায়। ক্ষমতাশীনরা ওদের সেবাদাসের ভুমিকা পালন করছে।
ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ১৯৯৬ সালে কেয়াটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করেছে, বিমান অফিস ধ্বংস করেছে , চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশনে আগুন দিয়েছে,নির্বাচনের দিন কারফিউ ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আজ সাধু হয়ে গেছে। সেই একই গ্রুপ বা দল ও গোষ্ঠি ২০০৬ সালে খুন খারাবী করে অন্যায় ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরে ধর্মমুক্ত রাজনীতির নেতা ও গুরুদের আহ্বানে তাঁর দলীয় কর্মীরা সকাল ১১টায় লগী বৈঠা নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক কর্মীদের সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অনেক কর্মীকে হত্যা করে ও বহু মানুষকে জখম করে পংগু করে দেয়। তার বিচার আজও হয়নি। কেন হয়নি বা হচ্ছেনা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। সারা বিশ্ব এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃশ্য টিভির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ দল বা মতকে হত্যা করার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ২৮শে অক্টোবর। ধর্মহীন আরবী নামধারী আর সনাতনীরা মনে করেন শক্তিই আসল ক্ষমতার উত্স। শক্তি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মেজরিটিকে দমন করে রাখা যায়। ষড়যন্ত্রের কারণেই ক্লাইভ নবাবের ৫০ হাজার সৈন্যকে পরাজিত করতে পেরেছিলেন। কারণ, ক্লাইভ অখন্ড জাতিকে হিন্দু মুসলমানে বিভক্ত করতে পেরেছিল।
ক্ষমতাশীন দল বা জোটের সৃষ্ট সেই নৈরাজ্যকর অবস্থার অদৃশ্য ও পিছনের শক্তিরা পরে ভারতের সহযোগিতায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করে। আজ তারা পরবাসী। তখন দিল্লীর খাস প্রতিনিধি পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয় দেখাশুনা করতেন। জেনারেল মইন তখন নানা ধরণের নাটক করে শেষ পর্য্ন্ত ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবার জন্যে। যেমন লর্ড ক্লাইভ দৃশ্যত কিছু বেঈমান মুসলমান ও সনাতন ধর্মীদের হাত করে পলাশীর যুদ্ধের নাটক বানিয়েছিল। সেই নাটকে জেনারেল মীরজাফর আলী খানকে গদিতে বসানো হয়। লর্ড ক্লাইভ কোম্পানীর সদর দফতরের অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক খেলা খেলেছিল। ফলে ক্লাইভের শাস্তি হয়েছিল। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জেনারেল মঈন দিল্লীর পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিলেন। জেনারেল মঈনকে স্থানীয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন দিল্লীর অনুগত ও সেবাদাস কিছু দল ও গোষ্ঠি। ভারতের সেবাদাস জেনারেল মঈনের মূল লক্ষ্য ছিল জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করা ভারতের অনুগত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষমতায় বাসানো। সে সময়ে মঈন নিজেই তাঁর অবৈধ অধিকৃত ক্ষমতা বলে নিজেকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে দিল্লীতে লাল গালিচার সম্বর্ধনা ও ৬টি ঘোড়া উপহার পেয়েছিলেন। জেনারেল আইউবও নিজেকে ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট ঘোণা করেছিলেন। ৮২ সালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতায় এসে জেনারেল এরশাদ বলেছিলেন তিনি দিল্লীর সাথে কথা বলেই ক্ষমতা দখল করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বলেছিলো তাঁরা অসন্তুষ্ট নন। ভারতের কাগজ লিখেছিল ‘বন্দুকের নলে প্রজাপতি’। ২০০৮ সালে দিল্লীর সেবাদাসরা ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মইনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
আবার ভারতের পরামর্শেই সেবাদাসরা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোটার বিহীন নির্বাচন করেন। সে সময়ে সরকারী হিসাব মোতাবেক ৮০ ভাগ ভোটার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্মমুক্ত দল ও জোট এখন ক্ষমতায় আছে সেই ভাটার বিহীন নির্বাচনের জোরে। আমাদের মহা পবিত্র ধর্মমুক্ত সংবিধান বিনা ভোট নির্বাচিত হওয়ার সে তাঁদের সে অধিকার দিয়েছে। ভোট লাগবেনা, শুধু গণতন্ত্রের নামাবলী থাকলেই চলবে। যে কোন উপায়েই হোক,প্রধানমন্ত্রীর পদটা পেলেইতো সাংবিধানিক ভাবেই একজন মোঘল/ রোমান / পারস্য বা রাশিয়ার জার সম্রাট। ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের নামে রাষ্ট্র কয়েকশ’নাগরিককে হত্যা করেছে। এখন বলা হচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষা করার জন্যেই তা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মমুক্ত/ধর্মহীন দল ও জোট নেতারা হলেন বৈদিক যুগের আর্যঋষিদের মতো। তাঁরাই ভুমিপুত্র দেশপ্রেমিকদের রাক্ষস বানিয়েছেন। তাঁদের বিপক্ষ শক্তিকে শুদ্র বা অর্ধ মানবে পরিণত করেছে। আর্য ক্ষত্রিয় নেতা রাজা দশরথের পুত্র রামকে রাজা ও দেবতায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশে এখন সেই রাজনীতির ধারা চালু হয়েছে।
লেখক:কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com