সকালবেলা ৯১
আমার বিবির সংসারে কলি নামের একটি মেয়ে আছে/নাই। বেশীদিন হয়নি সে এসেছে এ সংসারে গৃহকর্মী হিসাবে। মেয়েটির মুল নাম জান্নাতুন নাঈম। ওর বড়বেনের নাম জান্নাতুন ফিরদৌস। মায়ের নাম আনওয়ারা বেগম। মেয়ে দুটির নাম শুনে মনে হলো ওর নিকট আত্মীয়ের ভিতর কেউ আরবী শিক্ষিত। তা না হলে এত সুন্দর নাম আমাদের মতো তথাকথিত ইংরেজী শিক্ষিতরাও রাখতে পারেনা।
তাই আমি জানতে চেয়েছিলাম কে নাম রেখেছে? কলি বললো ওর নানা। তিনি আরবী শিক্ষিত খোন্দকার। এলাকার লোকজনকে তাবিজ তুমার পানি পড়া দেন। বিনিময়ে টাকা পয়সা গ্রহণ করেন না।
কলির বাবার নাম কামালদুদ্দিন। আনওয়ারা বেগমকে ত্যাগ( তালাক নয়) করে চলে গেছেন ১০/১২ বছর আগে। এরপর থেকে আনওয়ারা বেগম থাকেন বাপের বাড়িতে একজন আশ্রিত হিসাবে। মেয়ে দুটো ৬/৭ বছর হতেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আনওয়ারাও নানা ধরণের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
আমার বিবির সংসারে আসার পর কলি বেশ বড়সড় হয়েছে। যখন এসেছে তখন দেখতে ৬/৭ বছর মনে হয়েছে পুষ্টির অভাবে।
অভাব অনটনে বড় হওয়ার কারণে কলির নানা বিষয়ে আগ্রহ। টিভি দেখে দেখে নানা ধরণের জিনিষ কিনতে চায়। কিন্তু সে জানেনা বা বুঝেনা বা বুঝতে চায়না সে গরীব, ভাল কোন জিনিষের অযোগ্য। বুঝলে খুব ভাল হতো। মোবাইলে কথা বলতে খুবই আগ্রহী। সুযোগ পেলেই অন্যের ফোন দিয়ে লুকিয়ে কথা বলে। যা আমার বেগম সাহেবা বা বিবিজান একেবারেই পছন্দ করেননা। কাজের ব্যাপরেও আমার বিবির মতে আগ্রহ কম। আরেকটা দোষ সে মুখে মুখে কথা বলে। যা তার মনিবের একেবারেই পছন্দ নয়। তিনি মুখে মুখে কথা বলার ঘোর বিরোধী। সারাদিন কথা বলেনা এমন কাজের মেয়ে তাঁর খুব পছন্দ। বিবিজানের মা এক জমিদার কন্যা। তিনি ও হয়ত কাজের মেয়েদের ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলেন। তবে তিনি খুব দয়ালু ছিলেন। আমার বিবিরও তেমন দয়া আছে। তবে যারা কথা বলেনা তাদের প্রতি তাঁর দয়া বেশী।
কলির সমস্যা সে কথা না বলে থাকতে পারেনা
আমার বিবির চিন্তা চেতনায় আমি ব্রাত্যজন। সাধারন পরিবারের ছেলে। তাঁর খানদান খুবই উঁচু দরের। হয়ত হবে। আমি সংসারী নই, তাই এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাইনা। বরং আমার খুব ভাল লাগে। সংসারে পরাধীনতা খুবই পছন্দ। ঘরে থাকলে আমি কোন কথা বলিনা। বই পড়ি, গজল, সুফী সংগীত শুনি। কম্পিউটারে আমার ৩/৪ ঘন্টা সময় কাটে। যৌবনে মাসে এক/দুইবার চিত্কার করতাম। এখন তেমন করিনা। হয়ত বছরে দুয়েকবার। পরাধীন থাকার ফলে মাঝে প্রণীদের মতো ঘেউ ঘেউ করি। আবার শান্ত হয়ে যাই ৬/৭ মাসের জন্যে।
হাজী মহসিনের একটি গল্প আমার খুবই প্রিয়। একবার এক চোর হাজী মহসিনের বাড়িতে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে যায়। কিন্তু হাজী সাহেব বললেন, কেঁদোনা। জানতে চাইলেন, তুমি কি চুরি করতে এসেছিলে। চোরটি কিছুই বলেনা। শুধু কাঁদতে থাকে। হাজী সাহেব বললেন, তুমি প্রতিদিন এসো , যা লাগে নিয়ে যেও। তখন চোর বললো, না চুরি করতে আসিনি। মাঝরাতে লুকিয়ে আপনাকে দেখতে এসেছি। দিনের বেলা লোকজন দেখা করতে দেয়না। তুমি আমার এখানে থাকবে? তাহলে সারাক্ষণ আমাকে দেখতে পারে। ওই লোকটা বাকি জীবন হাজী মহসিনের কাছেই ছিলো।
আমাদের রাসুল(সা) বলেছেন, তোমরা তোমাদের অধস্তনদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থেকো। আখেরাতে ওরাই তোমাদের জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে তিনি গৃহকর্মীদের কথা বলেছেন। আমরাতো ঘটা করে নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কপালে নামাজের দাগ ফেলি। কথায় কথায় ধর্মের কথা বলি। পরকে উপদেশ দেই। কিন্তু ক’জন রাসুলের(সা) এ উপদেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। গৃহকর্মীর কারণেই আমরা জাহান্নামে যাবো।
আদবে রাসুল(সা) বইটি পড়ার জন্যে সবাইকে অনুরোধ করছি। হে আল্লাহর গোলাম ও রাসুলের(সা) উম্মতগণ, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা করো। আল্লাপাকের প্রধানতম গূণ হচ্ছে দয়া। তোমার দয়াবান হও।