যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার
এরশাদ, তুমি কি লক্ষ্য করেছো কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বাংলাদেশে দ্বিমত বা ত্রিমত কেমন শক্তিশালী খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে চলেছে। কেন এমন হচ্ছে ভেবে আমি দু:খ ও বেদনায় কাতর হয়ে যাই। যেমন ধরো, বংগবন্ধু আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দিয়েছিলেন কিনা? ২৫শে মার্চ রাতেই বংগবন্ধু পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছেন। তিনি ধানমন্ডীর ৩২ নাম্বার রোডের বাড়িতেই ছিলেন। হয়ত তাঁর কাছে খবর ছিলো পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করবে। অথবা তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে লিখিত ভাবেই অনেকের মতামত জারী রয়েছে।
আমি এর আগে বহুবার বলেছি বংগবন্ধু আমাদের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাঁকে বার বার বিতর্কের মাঝে ফেলে দিচ্ছে। তাঁরা জিয়া সাহেবকে বংগবন্ধুর প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্ধী করে তুলছে। এটা এখন আওয়ামী লীগের মজ্জাগত হয়ে গেছে। কিন্তু কারা এসব করাচ্ছে? শেখ হাসিনা কি ব্যাপারটা বুঝতে পারে? না, আমার মনে হয়না। জিয়া সাহেব ৪শ’টাকার মেজর ছিলেন। সবাইকে সেল্যুট দিতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন পাকিস্তান দালাল হিসাবে। এসব আজেবাজে কথা আওয়ামী লীগ নেতারা কেন বলেন, কে তাদের দিয়ে এসব কথা বলায়? বললে কি লাভ হয়?
ফলে ভিন্নমতের লোকেরা বলছে বংগবন্ধু কখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেকোন ভাবেই হোক পাকিস্তান টিকে থাকুক। তিনি কনফেডারেশন চেয়েছিলেন। তিনি যে অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন তার ভুরি ভুরি প্রমান এখন চারিদিক থেকে আসতে শুরু করেছে। দেশে ফিরে ১০ই জানিয়ারী যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে একটা ইংগিত রয়েছে যে , এখন আর কিছু করার সুযোগ নেই। ভুট্টো সাহেব আপনারা সুখে থাকুন। পাকিস্তান থেকে লন্ডনে পৌঁছে তিনি কি বলেছিলেন তা সিরাজুর রহমানের লেখায় বার বার প্রকাশিত হয়েছে। বংগবন্ধু জীবিত থাকতে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি, কোন ধরণের বিতর্কও তৈরি করেননি। তাঁর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ এই বিতর্ক তুলেছে একেবারেই মিথ্যার উপর ভর করে।
বুঝলে আশি, এর আগে আমি বহুবার লিখেছি, বংগবন্ধুর ঘোষণা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তিনিতো ৭০/৭১ এ এদেশের একমাত্র নেতা। তাঁর কথায় সব চলতো। কারণ তখন তিনিই একমাত্র জন প্রতিনিধি। নেতৃত্ব দেয়ার একমাত্র বৈধ ব্যক্তিত্ব। সে নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।কোন ধরণের ষড়যন্ত্র না হলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। সেজন্যে তিনি এবং তাঁর দলের নেতারা ২৪শে মার্চ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কি আলোচলা করেছেন তা কিন্তু আওয়ামী নেতারা আজও প্রকাশ করেন নি। শেষ পর্যন্ত কি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল? এসব কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনও জানেনা। অনেকেই বলেন, বংগবন্ধু কনফেডারেশন করতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কোন কথাই শুনতে রাজী নয়। বংগবন্ধু জীবিত নেই তাই তারা তাঁর নামে যা ইচ্ছে তাই চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চলমান আওয়ামী নেতৃত্বের ব্যক্তিত্ব না থাকার ফলে তাঁরা সবকিছুতেই দিল্লী নির্ভর হয়ে থাকেন। তাঁরা মনে করেন এবং বিশ্বাসও করেন যে ভারত বিশেষ করে কংগ্রেসের অন্ধ সমর্থন না থাকলে ক্ষমতায় আসা যাবেনা বা থাকা যাবেনা। হয়ত দিল্লীর কোন শক্তি তাঁদের ভয় দেখায় বা ব্ল্যাকমেইল করে। দিল্লীর সাথে থেকে বা অনুগত হয়েও নেপালের রাজ পরিবার বাঁচতে পারেনি।সিকিম তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেনি। লেনদুপ দর্জি আজ একজন বেঈমান হিসাবে চিহ্নিত। শ্রীলংকা বহু বছর ভারতের সাথে সমঝোতা করে চলতে চেয়েছিল। পারেনি, শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকাকে কোমর শক্ত করে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয়েছে। মালদ্বীপকে ভারত সব সময় নানা রকম ভীতির ভিতর রেখেছে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তান আমল থেকে অশান্ত করে রেখেছে ভারত। এই হলো আমাদের প্রতিবেশী ভারতের চেহারা। তেমনি একটি দেশের সাথে চলমান সরকার গাঁটছড়া বেঁধেছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্যে।
তুমি কি শুনেছো আশি, তাজউদ্দিন সাহেবের আমেরিকার বাসিন্দা বড়মেয়ে শারমিন আহমদ তাজউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন যাতে অনেক না জানা ও অজানা কথা প্রকাশ করেছেন। এই বইতেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। বরং ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাবকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বংগবন্ধু বলেছেন, এই ঘোষণা তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগকে শক্তিশালী করবে। ওই বইতেই বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিব বাহিনীর লোকেরা তাজউদ্দিন সাহেবকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শেখ মণির নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠণের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। ওটা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী র’র একটি কৌশল। এর আগে দৈনিক প্রথম আলোর বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা থেকে প্রকাশিত বইতেও বলা হয়েছে বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এ বিষয়ে শারমিন আহমদের ভাষণের একটি ভিডিও এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
যেভাবেই হোক বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন দেশ। এটাই বাস্তব এবং সত্য। ৪৩ বছর পরেও ঘোষণা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের স্বাধীনতাকেই বিতর্কিত করে তুলেছে। তবে স্বাধীনতার পর তাজউদ্দিন সাহেবের এমন অবস্থা হলো কেন? কেন বংগবন্ধুর সাথে তাঁর দূরত্ব তৈরি হলো? যে মানুষটির নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হলো সে মানুষটি কি কারণে বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কাছে অপাংতেয় হয়ে গেলো। এ ব্যাপারে অবশ্য শারমিন আহমদের নিজস্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আছে। সে সব ব্যাখ্যা তিনি তাঁর বইতে দিয়েছেন। এর আগে তাজউদ্দিন সাহেবের ছেলে সোহেল তাজকে নিয়ে সরকার অনেক নাটক করেছেন। সোহেলের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সরকার বহু লুকোচুরি করেছে। শেষ পর্যন্ত সোহেল জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। তাজউদ্দিন সাহেব একজন মেধাবী ছাত্র ও বিদ্বান মানুষ ছিলেন। তাঁরই বুদ্ধি পরামর্শকে বংগবন্ধু খুবই গুরুত্ব দিতেন। বড়ই বেদনার বিষয় এমন মানুষটি বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারলেন না। শারমিন আহমদ অতি বেদনা ও ক্ষোভ থেকেই বইটি রচনা করেছেন। তাঁর পিতা একজন রাজনীতিক ছিলেন। ফলে রাজনীতির অন্দর মহলের অনেক কথা এসেছে। অনেক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ও এসেছে। যে মানুষটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সে মানুষটা এখন পর্দার অন্তরালে। শারমিন বলেছে, বংগবন্ধু কখনই নয় মাসের কথা বা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে চাননি। এতে তাজউদ্দিন সাহেব অবাক হয়েছে। হয়ত বংগবন্ধু শেখ মনির কাছ থেকে সব জানতে পেরেছিলেন।
তবে গবেষকরা বলেন, কেউ চাক বা না চাল ভারত একদিন পাকিস্তানকে ভাংতোই। ৪৭ সালেই ভারতের নেতারা পরিকল্পনা নিয়েছেন পাকিস্তান ভাংগার । ভারতের নেতারা এখনও পাকিস্তানের অস্তিত্ব স্বীকার করেনা। মোক্ষম সময় ছিল ১৯৭১ সাল। শেখ সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এমন কি তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরও পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কি হবে তা বলে যাননি। তাজউদ্দিন সাহেব অনুরোধ করেছিলেন ঘোষণা দিতে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে তাঁর অনুপস্থিতিতে যিনি দলকে বা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
বংগবন্ধু পরবর্তী আওয়ামী লীগ একটি মিথ্যা ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করছে। আমার এক গবেষক বন্ধু বললেন,বাংলাদেশ এখন যারা চালাচ্ছেন তাদের আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, দেখতে পাচ্ছেন তাদের ছায়া। ছায়ারতো কোন স্বাধীনতা থাকে না। কায়া যা চাইবে তাই হবে। অখন্ড বংগদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ ভাগ। মুসলমান ছিল ৫৫ ভাগ। বাকি ১৫ ভাগ ছিল বৌদ্ধ, খৃষ্টান, শিখ ও হরিজন। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ ছিল মুসলমান। এখন ৯০ ভাগ মুসলমান। শিক্ষিত হিন্দুদের বেশীর ভাগ দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে গেছেন। মুসলমানেরা অখন্ড বংগদেশ চেয়েছিল, কিন্তু হিন্দু নেতারা রাজী হননি ধর্মীয় কারণে। অখন্ড বংগদেশে মুসলমানরা ছিলো মেজরিটি। পর পর তিনজন প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন মুসলমান। দিল্লী বা কোলকাতার বাবুরা মুসলমান শাসিত অখন্ড বাংলাদেশ চাননি। ফলে ভারত বিভক্তির সাথে বংগদেশও ভাগ হয়ে গেল। ঢাকায় বসে যারা দিল্লীর পদ্মভূষণ গ্রহন করছেন তাঁরাও ৪৭ সালে দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে এখানে সম্মানিত হয়েছেন, নিজেদের প্রাণ রক্ষা করেছেন। এরাই বলে থাকেন ৪৭ সালের দেশ বিভাগ ভুল ছিল। কেন তাঁরা এ তত্ত্ব পেশ করছেন তা তাঁরা ভাল জানেন। ৪৭এর পর থেকে দিল্লী সরকারের নীতির কোন পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি জানিনা। মুসলমানদের প্রতি তাদের মনোভাবের কোন পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। বেনিয়া বৃটিশদের আগমনের আগে শত শত বছর ধরে ভারতে হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি অবস্থান করেছে। কোথাও সমস্যা হয়নি। বৃটিশ আমলেই সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পায়। এখনও ভারতে প্রতি বছর কয়েকশ’ দাংগা হয়। এ ব্যাপারে শৈলেশ বানার্জির দাংগার ইতিহাস বইটি পড়ার জন্যে অনুরোধ জানাবো। যদিও লেখক নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে কিছুটা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট ছিলেন। তবুও বইটাতে অনেক তথ্য আছে। হিন্দু মুসলমান ছাড়াও দাংগা হয়। তথাকথিত ভারত সেক্যুলার ভারত দাংগা কখনই বন্ধ করতে পারেনি। ৪৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোন দাংগা হয়নি। যা হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে। প্রায়ই দেখবেন, হিন্দু মন্দির বা বৌদ্ধদের টেম্পল আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু ফেসবুকের গুজব নিয়েও নাকি হিন্দু বা বৌদ্ধদের আক্রমণ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই অসাম্প্রদায়িক। মুসলমানদের ভিতর অচ্যুত বিষয়টি নেই। বংগবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লেই বুঝতে পারবেন তাঁর বাল্যকালে গোপালগঞ্জের হিন্দুরা কেন সাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনিতো প্রথমবার জেলে গিয়েছেন হিন্দু বন্ধুর গায়ে হাত তুলে।
৪৯ সালেের জুন মাসে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারী মুসলীম লীগের গণবিরোধী ভুমিকার কারণে। ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগ পরাজিত হলে পরবর্তী পর্যায়ে মুসলীম শব্দ বাদ দিলে কংগ্রেস ও বামপন্থী বেশ কিছু নেতা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে। ৭০ সাল পর্যন্ত আমরা এ দলটিকে আমেরিকার দালাল বলতাম। সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দলটি আমেরিকার সাম্রাজ্য নীতি সমর্থন করতে থাকে। সেটা ৭০ সাল নাগাদ জারী থাকে। ৭২ সালে হঠাত্ করে আওয়ামী লীগ মস্কোর দিকে ঝুকে পড়ে। কালক্রমে আওয়ামী লীগ একটি পুরো ভারতপন্থী দল হয়ে ভারতীয় কংগ্রেসের ছায়াতে পরিণত হয়।
৭৫ সালে বংবন্ধুর পতনের পর থেকেই দলটি দিল্লীর খপ্পরে পড়ে গেছে। বিশেষ করে ৭৫ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত হাসিনা ওয়াজেদ দিল্লীতে অবস্থান করে মহাভারতের আদর্শে দীক্ষা লাভ করেছেন বলে অনেকেই অনুমান করেন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের মিলিটারী সমর্থিত ফখরুদ্দিনের সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের উপস্থিতি প্রকাশ্য হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন প্রমান করেছে ভারত এখন বাংলাদেশের টুটি চেপে ধরেছে। ২০০৭ সালে কাঁধে দাঁত বসিয়েছিল, এখন গলায় । যেমন করে বাঘ বা সিংহ হরিণকে কাবু করে।
শারমিন আহমদের পুরো বইটাই একটা অভিযোগের বই। এতে আক্রমণের প্রধান শিকার বংগবন্ধু। বইতে বলা হয়েছে বংবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কখনই আগ্রহ দেখাননি।
আশি, যে বিষয় নিয়ে তুমি কথা শুরু করেছিলে তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও নেতাদেরকে কে বা কারা অবিরাম ভাবে বিতর্কিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগের চাটুকাররা হাসিনাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। দেশবাসী জানে হাসিনার ক্ষমতা একজন সম্রাটের ক্ষমতা। তিনিই সংবিধান, তিনিই সংসদ, তিনি একাই ১৬ কোটি মানুষ। এ ক্ষমতা তাঁকে দিয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান। বাকশালের মাধ্যমে বংগবন্ধুকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল তা পরবর্তীকালে সকল প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতিরা ব্যবহার করে চলেছেন। এদেশে গণতন্ত্র আর সংসদ মানে একজন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান। একটি গণতান্ত্রিক জবাবদিহি মূলক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে সংবিধানের সংশোধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঐক্যমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্যে অবিলম্বেই একটি জাতীয় কনভেনশন আহবান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সংসদে এক সিট বা আসন বেশী পেলে সেই দলের নেতাই রাজা এ ব্যবস্থাকে রহিত করতে হবে। জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকলেই মৌলিক বিষয়ে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রহিত করতে হবে।
২০০৮ সালে একটি অবৈধ সরকার একটি ফালতু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে। মইনউদ্দিন আর ফখরুদ্দিনের সরকার ছিল একটি অবৈধ সরকার এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। কেন তারা ক্ষমতা দখল করেছিল তা এখন দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার। সেই ধারা এখনও অব্যহত আছে। একটি বিষয় আমি বারবার বহুবার বলেছি যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ইসলাম। কারণ, এদেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলমান। এই ৯০ ভাগের কথামতোই দেশ চলবে। ৯০ ভাগের আশা আকাংখাই প্রতিফলিত হবে দেশের রাজনীতি ,সংস্কৃতি ও দর্শনে। কিন্তু তা হচ্ছেনা। আগেই বলেছি, সংসদে একটি বেশী পেলেই চলমান ব্যবস্থা অনুযায়ী ৫১ই ১০০। ৪৯এর দাম শূণ্য। এটাই হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নমুনা।
চলমান সরকার সকল দিক থেকেই মাইনরিটি মানসিকতার সরকার। তাদের আদর্শ হচ্ছে ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার শ্লোগান দিয়ে দেশের মেজরিটি মানুষকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা রাখা। ভারত সেক্যুলারিজমের নামাবলী পরে মুসলমান ও হরিজনদের শোষণ করে ,অত্যাচার করে। বাংলাদেশের সরকারও একই নীতি অবলম্বন করে চলেছে। তবে বাংলাদেশে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের শোষণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। ধর্মের কথা বললেই মৌলবাদী বলা হচ্ছে।
মিশরে আলসিসি ক্ষমতা দখল করেছে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে। জন্মগত ভাবে সে একজন ইহুদী। ইহুদী মায়ের সন্তান। তাকে সমর্থন করছে সৌদী বাদশাহ, আমেরিকা ও পশ্চিমা জগত। বাদশাহ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন গণতন্ত্রের ভয়ে, পশ্চিমারা সমর্থন দিচ্ছে ইসলামের ভয়ে। আর সিসি মোবারক ও জেনারেল এরশাদের মতো জোর করে গণতন্ত্র চালু করবে। শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতায় বসিয়েছে জেনারেল মইন ও ভারত। ভারতের লক্ষ্য তাবেদার সরকারকে ক্ষমতায় রাখা আর জেনারেল মইনকে ব্যবহার করেছে ভারতের গোয়েন্দারা।
আমাদের ইতিহাস, বায়াদলিল পাল্টে যাবে যদি ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী শক্তি বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে।
লেখক: কবি ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com