যে দেশের স্বপ্ন দেখেছি / এরশাদ মজুমদার
দেখো এরশাদ, আমার স্বপ্নের কথা তোমাকে বহুবার বলেছি। আমার স্বপ্নটা হলো দেশের মানুষকে নিয়ে। আমি একটা সুখী মানুষের দেশ দেখতে চাই। স্কুল জীবন থেকেই আমি এ স্বপ্ন দেখে আসছি। আমি একটা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার কোন অভাব ছিলনা এবং এখনও নেই । পাকিস্তান টিকে থাকলে আমার ব্যক্তিগত কোন অসুবিধা ছিলনা। তবুও আমি মুক্তিযুদ্ধে কেন গিয়েছিলাম? ভেবেছিলাম, পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেলে আমার দেশের সাধারন মানুষ এক কথায় যাদর গরিব বলা হয় তারা সুখে থাকবে। রাস্ট্র বা দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ পরাধীন বা অধিকার হারা থাকতে পারে। আমার সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। যে ধারায় বা নীতি পদ্ধতিতে দেশ বা রাস্ট্র চলছে তাতে এ জীবনে বাংলাদেশের মানুষকে সুখী দেখতে পাবোনা। তুমিতো নামজাদা ইকনমিক রিপোর্টার ছিলে। পূর্ব পশ্চিমের সামগ্রিক বৈষম্য বা ডিসপ্যারিটি নিয়ে কম লেখোনি। অবজারভার আর পুর্বদেশের ইকনমিক রিপোর্ট পড়েই বংগবন্ধু বক্তৃতা দিতেন। হাটে মাঠে মানুষকে সে তথ্য পরিবেশন করতেন। ইউনিভার্সিটিতে থাকতে পুর্বদেশে তোমার রিপোর্ট নিয়মিত পড়তাম। সচেতন ছাত্রদের সে রিপোর্ট দেখাতাম। পাকিস্তানের সাথে থেকে আমরা অধিকার হারা ছিলাম বলেইতো আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি, স্বাধীনতা এনেছি। কিন্তু কই, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হতে চলেছে। দেশে এখন কোটি কোটি লোক বেকার, সবার ঘরে শিক্ষা প্রবেশ করেনি, সবাই চিকিত্সা পায়না, সবার আশ্রয় নাই। ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার লোক লুটপাট করে ধনী হয়ে গেছে। তারা এখন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইতো সেদিন ভিয়েতনাম আমেরিকার কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছে। তার আগে দুই যুগ আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আজ তারা বাংলাদেশের চেয়েও ধনী । সেখানে আদর্শবান ত্যাগী নেতা আছেন। তাদের প্রধানতম আদর্শ দেশের মানুষের কল্যাণ। আজ আমেরিকা তাদের প্রধান বন্ধু। আশে পাশের সব দেশ এগিয়ে গেছে। আমিতো এমন বাংলাদেশ চাইনি। পাকিস্তান আমলে অবাংগালীরা শোষণ করতো, আর এখন ভারতীয় অবাংগালী আর দেশীয় বাংগালীরা শোষণ করছে। মাত্র ৪৪ বছরে কেমন করে একটা বিজনেস গ্রুপ ৪৪ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়? কিছুলোকতো রাজনীতিকদের সহযোগিতায় ব্যান্কে আমানত রাখা জনগণের টাকা সরাসরি মেরে দিয়েছে।
আশি, তুমিতো অর্থনীতির কথা বলছো। আমি দেখছি বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও ভাষার অবস্থা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু দেশটি দশ ভাগ লোকের চিন্তধারা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তারা বলছে সবকিছুতেই বাংগালীয়ানা আনতে হবে। যদি প্রশ্ন করো কি ভাবে বাংগালীয়ানা আনতে হবে? তখন আমতা আমতা করতে থাকে। তারা বলে, পহেলা বৈশাখ, ভাষা দিবস, বসন্ত উত্সব, হোলি বা দোল খেলা, বাংলা মদ, পান্তা, ইলিশ, শুটকী খাওয়া বাংগালীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। যারা এই সব করে তারা কারা? তারাতো কয়েক হাজার ছাত্র বা রাজধানীর কিছু লোক। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি কি এসব করে? করবেনা কেন? আস্তে আস্তে সবই করবে। বাংগালী হওয়ার জন্যেইতো পাকিস্তান থেকে বেরিয়েছি। তারা বলে ধর্ম একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর সাথে সমাজ বা রাস্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই।
তখন আমার মনে পড়ে গেল ভারতের এক মন্ত্রীর কথা। তিনি নাকি বাংলাদেশের হিতাকাংখী। এক সময় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, তোমরা ৭১ সালে যুদ্ধ করেছো বাংগালী হওয়ার জন্যে, এখন মুসলমান হতে চাও কেন? তোমরা মুসলমান হিসাবেতো পাকিস্তানের সাথেই ছিলে। যদি মুসলমান থাকতে চাও তাহলে আলাদা হওয়ার কি দরকার ছিল। আমি বললাম, আমিতো মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, তখন এমন কোন কথা শুনিনি। কেন? তোমাদের শ্লোগানতো ছিল ‘জয় বাংলা’।
দেখুন দাদা, ৪৭ সালে আপনারা স্বাধীন অখন্ড বাংলাদেশ চাননি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সাথে গিয়েছি। বাংলার প্রতি আপনাদের যদি দরদ থাকতো তাহলে ৪৭এ ভাগ করতেন না। ১৯০৫ সালে আপনারা বংগভংগ রোধ করার করার জন্যে কি না করেছেন। এমন কি দাংগাও করেছেন। এখন আবার বলছেন ৪৭এর ভারত বিভাগ ভুল ছিল। আপনাদের কবিতায়, সাহিত্যে , নবেল নাটকে এখন আর পশ্চিম বাংলা বলেন না। বলেন বাংলাদেশ। আপনারা ভারতীয় বাংগালী। এই বাংগালীরা অবাংগালী দিল্লী দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। কই, আপনারাতো অখন্ড বাংলাদেশের দাবীকে সামনে নিয়ে আসছেন না। বরং, উল্টো বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ভিতর বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। আপনাদের লক্ষ্য কি?
আমরা চাই তোমরা ষোলয়ানা বাংগালী হিসাবে বিকশিত হও। দেখুন দাদা, আমরা বাংগালীও , আবার মুসলমানও। শুধু বাংগালী নই। দুটোই আমাদের আইডেন্টিটি। ভৌগলিক কারণে আমরা বাংগালী, আর ধর্মীয় কারণে আমরা মুসলমান। আমাদের বিশ্ব পরিচয় বাংলাদেশী। আর আপনাদের পরিচয় ভারতীয়। পাসপোর্টে লেখা থাকে বাংলাদেশী। আপনার পাসপোর্টে লেখা থাকে ইন্ডিয়ান। হিন্দু বা মুসলমান কিছুই লেখা থাকেনা। আমিতো শুনেছি তুমি বাম চিন্তাধারার লোক ছিলে। ঠিকই শুনেছেন। ইসলাম একটি বাম চিন্তাধারার ধর্মীয় বিশ্বাস। মাওলানা ভাসানী ছিলেন আমার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরু। আমি গণমানুষের মুক্তিতে বিশ্বাস করি, রাস্ট্র বা দেশের মুক্তি নয়। মানুষের মুক্তির জন্যে দেশের মুক্তি প্রথম ধাপ। বাংলাদশের জমিন মুক্তিলাভ করেছে, কিন্তু মানুষের মুক্তি আসেনি, মানূষ রাস্ট্রের দাস হয়ে গেছে। সংবিধান বলে মানুষ নাকি সার্বভৌম। আমি দেখি মানুষ রাস্ট্রের দাস। দাদা, আপনাদের দেশের বামপন্থীরা মন্দিরে যায়, আবার কমিউনিস্ট ও থাকে। হিন্দু কমিউনিস্টদের কথা জানতে হলে কমরেড মুজাফফর সাহেবের জীবনী পড়ুন। মুসলমান কমিউনিস্টরা মসজিদে গেলেই আপনাদের আপত্তি। আপনারা বলেন, ভারত সেক্যুলার দেশ। অথচ , ভারতে সারা বছর সাম্প্রদায়িক দাংগা লেগে থাকে। বাংলাদেশে কোন দাংগা হয়না। যা হয় তা রাজনীতি। দাংগা রাজনীতির একটা অংশ।বহুকাল ধরে চলে আসছে।
ভারতের ওই মন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, দেখো এরশাদ, আমরা তোমাদের স্বাধীন করেছি বিনা স্বার্থে নয়। এতে নিশ্চয়ই ভারতের স্বার্থ আছে। ভারতের সহযোগিতা না পেলে তোমরা কোন দিনও স্বাধীন হতে পারতেনা। কাশ্মীর আর ভারতের পুর্বাঞ্চলের অবস্থা দেখছোনা? আর তোমরা নয় মাসেই স্বাধীন হয়ে গেলে? এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েছো, জাতিসংঘের সদস্য হয়েছো, জাতীয় পতাকা উড়াচ্ছো, জাতীয় সংগীত গাইছো। এসব কার অবদান? এখন ভারতের অবদান ভুলে গেলে চলবে কেন? ভারতের স্বার্থের প্রতি বুড়ো আংগুল দেখালেতো চলবেনা। ভুলে গেলে চলবেনা ভারত একটি শক্তিশালী দেশ। তোমরা তার প্রতিবেশী। আমাদের অনুরোধ অবহেলা করে চীন আমেরিকার কথা শুনবে আর পাকিস্তানের সাথে আবার গাঁটছড়া বাঁধবে তা কখনও হবেনা। পতাকা, জাতীয় সংগীত, ভৌগলিক এলাকা থাকলেই কোন দেশ সার্বভৌম হয়না। তোমাদের দেশের কিছু নেতা বা দল বাস্তবতা মানতে চায় না। আমাদের অমান্য করলে কোন দলই এদেশে রাজনীতি করতে পারবেনা। তুমি কি ভুলে গেছো শেখ মুজিব ভারতের অনুরোধকে অবহেলা করে ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। তার ফল তিনি ভোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ বহু বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এখন বার বার ক্ষমতায় আসতে শুরু করেছে। ভারতের কথা না শুনে জিয়া সাহেবকেও মর্মান্তিক ভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। ১/১১ এর সরকার ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার রাজনীতিকে তচনচ করে দিয়েছে। অথচ সেই সেনাপতিকে খালেদা জিয়াই নিয়োগ দিয়েছিলেন নিজের আত্মীয় বলে। ফল কি হয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। নামমাত্র নির্বাচন করেও ক্ষমতায় থাকা যায় তা এখন বাংলাদশের মানুষ দেখছে। সবাই বিরুদ্ধে থেকেও শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসাটাকে কেউ রোধ করতে পারেনি। ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা।
সাথে আমার এক সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধুও ছিলেন মন্ত্রীর সামনে। তিনি হঠাত্ ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলে ফেললেন, কিছু সাংবাদিক আছে দেশের স্বার্থে রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে চায়না। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে বিশ্বের কোন ছোট দেশই সার্বভৌম নয়। ভারতের মন্ত্রী বললেন, দেখো এরশাদ , তোমার লেখা কলাম আমাদের লোকেরা নিয়মিত পড়ে। তোমার কথা আমার পছন্দ। এসব হলো নীতি আর আদর্শে কথা। বাস্তবতা নয়। বাংলাদেশ কখনই স্বাধীন পররাস্ট্র বা সামরিক নীতি অনুসরণ করতে পারবেনা। বিশ্ব ভু রাজনীতি কারণে এটা সম্ভব নয়।
ক’দিন আগে আমার এক সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধু প্রেসক্লাবে দেখা হতেই বললেন, আপনাদের বিএনপির খবর কি? আমি বেশ কিছুক্ষণ বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। উত্তরে বললাম, খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। আমাদের বিএনপি! এইদল ক্ষমতায় এলে আপনি চাকুরী পান, আর দল হলো আমার। আমিতো জীবনেও কোন সরকারের চাকুরী বা তাবেদারী করিনি। উত্তরে বন্ধু বললেন, আরে না আমি ঠাট্টা করলাম। সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন? তবুও বললাম আপনারাইতো জেনারেল মইনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন স্টাফের সাথে ক’দিন আগে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, দেখুন আমি চাকুরী করি। কোন রাজনৈতিক দল করিনা। আমি জানতে চাইলাম, আপনিতো বিএনপির মঞ্চেও ভাষন দেন। তিনি উত্তর দিলেন, মেহমান হিসাবে উপস্থিত থাকি।এ ধরণের বহু লোক বিএনপি চেয়ার পারসনের চারিদিকে বেষ্টিত থাকেন।
আওয়ামী লীগে আমার বহু বন্ধু আছে। তারা বলেন, এটা বংগবন্ধুর দল তাই এ দলে আছি। ছত্রলীগে ছিলাম এখন আওয়ামী লীগে আছি। এটা একটা ধারাবাহিকতা। আওয়ামী রাজনীতির গভীরে কখনও যাইনি। এর আদর্শ বা দর্শন কি তা নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। ভাবার প্রয়োজনও করিনি। যখন বলি দেশের ৯৯ ভাগ হিন্দু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে কেন? উত্তরে তারা বলেন, তারা হয়ত মনে করে আওয়ামী লীগ ভারতপন্থী। হিন্দুদের সাথে ভারতের কি সম্পর্ক? পাকিস্তান আমলে না হয় ভারতপন্থী ছিল, এখন কেন? এদেশেতো তারা কম সুবিধা পায়না। সংখ্যার দিক থেকে আট ভাগ সুবিধা পাওয়ার কথা। তারা বিশ ভাগ সুবিধা ভোগ করছে। ভারতের মুসলমানেরা পঁচিশ ভাগ হয়েও মাত্র এক ভাগ সুবিধা পায়। এ বিষয়টা কি আপনারা কখনও চিন্তা করেছেন। ওভাবে চিন্তা করলে আমরা দলে থাকতে পারবোনা। আমাদের জ্ঞান গম্যি সাধনা সবই হলো আওয়ামী বিরোধী রাজনীতি ও দর্শনকে বিনাশ করা। আমরা মনে করি আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আমরাই দেশ চালাবো। আমরাই একমাত্র দেশ প্রেমিক দল। আমরাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল, বাকিরা সবাই স্বাধীনতা বিরোধি। এটাই আমাদের ধ্যান ধারণা। এর বাইরে আমরা চিন্তা করিনা। আমাদের নেতা নেত্রী যে ভাষায় কথা বলেন আমরা সে ভাষাতেই কথা বলি।আমাদের নেত্রী দূরদর্শী, তিনি জানেন ভারতের সাথে দ্বিমত করে ক্ষমতায় থাকা যাবেনা। তিনি মনে এটা ভারতের পক্ষে থাকা নয়, বরং সমঝোতার মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নেয়া। তিনি জানেন তা না হলে নেপালের অবস্থা হবে, যেমন হয়েছে বংগবন্ধুর অবস্থা। অমন জনপ্রিয় নেতা এ দেশে আর জন্ম গ্রহন করবেনা।
দেখো আশি, আমি দেশের পক্ষে কথা বলি বলে আমাকে বিএনপি বা জামাতপন্থি বলা হয়। আমি নাকি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি নই। এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেই চলবেনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও থাকতে হবে। তারা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের দালাল বলে। খালেদা জিয়াকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে। লন্ডনে তারেক জিয়া কি বলেছে তা নিয়ে এখন আওয়ামী নেতাদের ঘুম নাই। রাতদিন খিস্তি খেউর করে চলেছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে রাজনীতি থেকে সভ্যতা ভব্যতা চির বিদায় নিতে চলেছে।
এতো গেলো রাজনীতি ও সংস্কৃতির অবস্থা। ক’দিন আগে ‘বাংগালীর ধর্মচিন্তা’ নামক একটি বইয়ের আলোচনা বৈঠকে গিয়েছিলাম। বইয়ের প্রকাশক সাইদ বারী আমার খুবই প্রিয় মানুষ। বইটি সম্পাদনা করেছেন ডক্টর আবদুল হাই। তিনিও বিনীত ভদ্রলোক। আলোচনায় অনেক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। আমি শিক্ষক ও জ্ঞানীদের ঢংয়ে কথা বলতে পারিনা। আমার সে রকম প্রশিক্ষণ নেই। বইটির ভুমিকা আমার ভাল লেগেছে। আলোচকদের বক্তব্যও ভাল ছিল। বইটিতে যে সব লেখা সংকলিত হয়েছে তার বেশীর ভাগেরই ধর্মহীনতার দিকে ঝোঁক রয়েছে। সংকলক বা সম্পাদক বলেছেন, ধর্মের পক্ষে তেমন ভাল লেখা পাননি। আমি মনে করি ধর্ম না মানা বা ধর্মহীন থাকা কোন অপরাদ নয়। এটা একেবারেই ব্যক্তগত ব্যপার। কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলাটা ন্যায়সংগত বলে আমি মনে করিনা। ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে ধর্মচর্চা করা পক্ষে থেকে বা বিপক্ষে থেকে। একজন ধার্মিকেরও উচিত্ হবেনা অধার্মিকের বিরুদ্ধে কথা বলা। যারা ধর্ম মানেন না তাদের সংখ্যা জগতে অতি নগন্য। আবার এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে গালমন্দ করাও উচিত্ নয়। সকল ধর্মই এক আল্লাহ/খোদা/ ইশ্বর/ভগবান/ গড/ ইলাহাতে বিশ্বাস করেন। ইশ্বর নিরাকার একথাও সবাই স্বীকার করেন। তিনি সকল অবস্থায় সর্বত্র বিরাজমান। শুধু ধর্ম সম্পাদনর সময় বিভিন্ন জন ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন , যতমত তত পথ। কিন্তু লক্ষ্য এক। সবাই স্বীকার করেন মানুষই স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। বইয়ের নামকরণ নিয়ে সবাই আপত্তি করেছেন। ভারতীয় বাংলায় বাংগালী বলতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীকেই বুঝায়। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের অফিসিয়াল স্বীকৃতি হলো বাংলাদেশী। এখানে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। বাকি ১০ ভাগ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও অন্যান্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ভৌগলিক ও ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় আচারের প্রভাব রয়েছে। শুধু বাংগালী বলা হলেও ভারতীয় বাংগালীর সাথে চিন্তা চেতনায় বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সম্প্রতি সেক্যুলারিজম শব্দটা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার একটা প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের অর্থ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কুচেষ্টা চলছে। এটা এক ধরনের ভন্ডামী। সেক্যুলার সব্দের অর্থ ধর্মহীনতা। যিনি বা যারা ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষায় বিশ্বাস করেন না। পরকালেও বিশ্বাস করেন না। জগতই তাদের কাছে প্রধান। এ কথাটি তারা প্রকাশ্যে সরাসরি বলতে চান না। আরেক গ্রুপ বেরিয়েছে যারা ধর্মীয় ইসলাম আর রাজনৈতিক ইসলাম এক নয়। এরাও ইসলাম বিরোধী একটা গ্রুপ। আরও এক গ্রুপ আছে যারা বলেন, ধর্ম ব্যক্তিগত ও ঘরের ব্যপার। একে বাইরে আনা যাবেনা। এমন কি মসজিদও রাখা যাবেনা। এমন কি শুক্রবারের জুম্মার নামাজও পড়া যাবেনা। যদি পড়া হয় তাহলে খোত্বা কি হবে তা ঠিক করে দিবে সরকার
ভারতও চায় বাংলাদেশ একটি পূর্ণাংগ ধর্মহীন রাস্ট্রে পরিণত হোক। রাস্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকবেনা। ধর্ম হবে একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য,সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন রাখার একটা চেষ্টা চলছে।
লেখক: ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com