শাহবাগের রাজনীতি ও তরুণ সমাজ / এরশাদ মজুমদার
শাহবাগ ঢাকার নবাবদের জায়গা ছিল এক সময়। ঢাকার প্রথম থ্রীস্টার হোটেল ছিল হোটেল শাহবাগ। এখানেই সরকারী বে সরকারী বড় বড় অনুষ্ঠান গুলো হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলীম লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। পিজির সামনে রাস্তার পাশে যেখানে পুবালী ব্যান্ক আছে তা ছিল মুসলীম লীগের অফিস। পেছনে ছিল হোটেল শাহবাগ। হোটেলকে বংগবন্ধু পিজি হাসপাতালে রূপান্তরিত করেন। যা এখন বংগবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। যে জায়গায় সারা ভারতের মুসলীগের জন্ম হয়েছে সেখানেই তরুণ সমাজ গণ জাগরণের ডাক দিয়েছে। এটা খুবই আনন্দের খবর। বাপদাদারা এখানে মিলিত হয়েছিল নিজেদের দাবী দাওয়া আদায়ের কৌশল নির্ধারনের জন্যে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন মুসলীম লীগ গঠণের প্রয়োজন হয়েছিল। ভারতবাসীর দাবী দাওয়া আদায়ের জন্যে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসইতো যথেষ্ট ছিল। কংগ্রেসের হিন্দু নেতারা যদি একটু উদার হতেন তাহলে মুসলমানদের জন্যে আরেকটি রাজনৈতিক দল মুসলীম লীগ গঠণের কোন প্রয়োজনই ছিলনা। প্রায় ২১ বছর কংগ্রেসের ভিতর থেকে মুসলমানেরা চেষ্টা করেছিল নিজেদের দাবী দাওয়া তুলে ধরার জন্যে। কংগ্রেস নেতারা বলতেন,আমরা সবাই ভারতবাসী। ভারতবর্ষ বহু জাতির দেশ। মুসলমানরা আলাদা কিছু নয়। কিন্তু মুসলমান নেতারা তা মানতে রাজী হননি। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব শুরুতে কংগ্রেসে থেকেই দাবী দাওয়া নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসেই ছিলেন। পরে তাঁর ভুল ভাংলে তিনি মুসলীম লীগে যোগ দেন। অখন্ড ভারতে মুসলমানরা ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠি। ১২০০ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত মুসলমান রাজা বাদশাহ নবাবরাই দিল্লীকে রাজধানী করে ভারত শাসন করেছেন। এ সময়ে ফার্সীই ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভাষা। ১৭৫৭ সালে হিন্দুদের সহযোগিতায় ইংরেজরা বংগদেশ দখল করে নেয়। ১৮৫৮ সালে দিল্লী দখল করে সারা ভারত তাদের কব্জায় নেয়। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত একশ’বছর ভারতে আলেম সমাজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ফলে ইংরেজ শাসন আমলে মুসলমানরা তাদের শত্রু থেকে যায়। মুসলীম গঠণের পেছনে এটাই ইতিহাস।
১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠিত হয় মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের নেতৃত্বে। মুসলীম লীগের গণতান্ত্রিক নেতা কর্মীদের নিয়ে নতুন দল গঠিত হয়েছিল পুরাণো ঢাকার রোজ গার্ডেনে। মাওলানা সাহেব ছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি। কেন নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করতে হয়েছিল তা বংগবন্ধুর আত্মজীবনীতে সুস্পষ্টভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন। মাওলানা সাহেব জনসভায় বলতেন,ওতা হচ্ছে খাজা গজার সরকারী মুসলীম লীগ আর এটা হচ্ছে জনগণের মুসলীম লীগ। সে সময়ে মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন ছিল। ঢাকায় জনসভা করতে হয়েছিল ঢাকার সর্দারদের সমর্থন নিয়ে। বংগবন্ধু ছিলেন আওয়ামী মুসলীম লীগ বা শুধু আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান সংগঠক। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর আওয়ামী মুসলীম লীগ দল থেকে মুসলীম শব্দটি বাদ দেয়। কিন্তু নীতি ও আদর্শের দিক থেকে এটি ছিল বাংগালী মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক দল। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষিত উকিল মোক্তার,ডাক্তার কবিরাজ, ব্যবসায়ীরা মুসলীম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে লাগলেন।
১৯৫৫ সালে আতাউর রহমান খান সাহেবের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠণ করে আর ১৯৫৬ সালে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্বে কেন্দ্রে মানে সারা পাকিস্তানের সরকার গঠণ করে। মাওলানা সাহেব তখন দলের সভাপতি। কিন্তু দলের বিদেশ বিষয়ক নীতির প্রশ্নে মাওলানা সাহেবের সাথে সরকারের দ্বিমত হওয়ায় তিনি দল ত্যাগ করেন এবং ন্যাপ বা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। বিদেশনীতির প্রশ্নে আমেরিকার সমর্থক হয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ‘জিরো প্লাস জিরো’ থিওরী দিলেন। বললেন,আমেরিকা হলো এক,তার বন্ধুত্ব হলে আমাদের মূল্য বাড়বে। তা না হলে আমরা জিরো থেকে যাবো। শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নীতিকে সমর্থন দিলেন। আওয়ামী লীগ ৭১ সাল নাগাদ আমেরিকার সমর্থক ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল। সকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতো।
৭২ সালে আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ রাতারাতি সমাজতন্ত্রের কথা বলতে শুরু করেছে এবং আমেরিকার সমর্থকদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে। প্রতিপক্ষকে লাঠিসোটা দিয়ে পিটানো আওয়ামী লীগের অভ্যাস। এমন কি বংগবন্ধুর ওস্তাদ মাওলানা ভাসানী সভা ভাংগতেও আওয়ামী লীগ কুণ্ঠাবোধ করেনি। জুলিও কুরি পুরষ্কার পেয়ে তিনি বলতে লাগলেন,তিনিই বিপ্লব করবেন। তিনিই সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনই সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ছিলনা।
রাশিয়া ভারত ও রাশিয়ার জোটভুক্ত দেশগুলোর উসকানীতে শেখ সাহেব হঠাত্ করে রাতারাতি গেজেট জারী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে দিলেন। সরকারী টিভি আর পত্রিকা ছাড়া বাকি সব পত্রিকা ও রাজনৈতিক নিষিদ্ধ করে দিলেন। এভাবেই নাকি সমাজতন্ত্র চালু করতে হয়। আমি হলফ করে বলতে পারি বংগবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন। তিনি খুবই ইমোশনাল বা আবেগী মানুষ ছিলেন। মার্চের জাতকরা নাকি জীবনের সবকিছু হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করেন, মাথা দিয়ে নয়। তাঁর আবেগকে কাজে লাগিয়েছে তাঁর শত্রুরা। তাঁর শত্রুরাই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খোন্দকার মোশতাককে ক্ষমতায় বসায়। খোন্দকার সাহেব সামরিক শাসন জারী করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়েই তাঁর মন্ত্রীসভা গঠণ করেন। তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মাত্র ৯০ দিন ক্ষমতায় ছিলেন এবং প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেবের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেন। খোন্দকার সাহেব জেনারেল জিয়াকে সেনা বাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে জেনারেল জিয়া দেশ পরিচালনার জন্যে সার্বিক ক্ষমতার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দেশবাসী জিয়া সাহেবের নাম প্রথম শুনেন ১৯৭১ সালের ২৬/২৭শে মার্চ। এর আগে তাঁর কেউ জানতোনা এবং কেউ শোনেওনি। তিনিই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে উদাত্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথমে বলেছিলেন, বিপ্লবী সরকারের প্রধান হিসাবে আমি মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতাদের তৈরি আরেকটি ঘোষণাপত্রও জিয়া সাহেব পাঠ করেছিলেন দ্বিতীয়বার। দ্বিতীয় ঘোষণায় জিয়া সাহেব বলেন,বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। জিয়া সাহেবের এই ঘোষণা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং দিশেহারা দেশবাসী উজ্জীবিত ও সংঘবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বংগবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন কিন্তু কোন ঘোষণা না দিয়েই তিনি ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে সারেন্ডার করেন। তাঁর সাথে ছিলেন ড.কামাল হোসেন। কামাল হোসেনের শ্বশুরবাড়ি করাচীতে। ওই নয় মাস তিনি করাচীতে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। এটা ইতিহাসের অংশ। বংগবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এটা হলো মিথ বিশ্বাস ও বদ্ধমূল ধারণা। ড.ওয়াজেদও তাঁর বইতে এ কথা বলেছেন কিন্তু কার কথা কে শোনে। আওয়ামী লীগের একটা সুবিধা হলো, একবার নেতা নেত্রী কোন কথা বললে সবাই সে কথা বলতে শুরু করে। হিটলারের দলের ও এ অভ্যাস ছিল। সত্য মিথ্যা বিচার না করাই হচ্ছে দলের আদর্শ। বিশ্বজিত হত্যাতো আপনারা চোখের সামনেই দেখেছেন। দলের নেতা নেত্রী সোজা সাফটা বলে দিলেন যারা হত্যা করেছে প্রকাশ্যে তারা কেউই ভাত্রলীগের সদস্য নয়। কলেজের, ভার্সিটির,স্কুলের শিক্ষকদের নিয়মিত পিটাচ্ছে। দলের আদর্শ এ ব্যাপারে ষোলয়ানা ঠিক আছে। আদর্শ হলো বেমালুম অস্বীকার করা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাথে প্রিযোগিতা করতে পারে তেমন একটি দলও বাংলাদেশে নেই।প্রথম আলোর প্রকাশনী প্রথমা প্রকাশিত এক বইতে তাজউদ্দীন সাহেব বলেছেন,বংবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালীন সময়ে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলার আর্জিতে বংগবন্ধু সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ ঘোষণা করেন নি। বিবিসির আর্কাইভসে রয়েছে মেজর জিয়ার ঘোষণার রেকর্ড। ভারতের দলিল দস্তাবেজেও রয়েছে জিয়ার ঘোষণা। আমি মনে করি বংগবন্ধুর ঘোষণা দেয়া এবং না দেয়াতে কিছু আসে যায়না। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। জীবদ্দশায় বংগবন্ধুকে নিয়ে ঘোষণার বিতর্ক কখনই হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এই বিতর্ক চালু করেছে দিল্লীর পরামর্শে। জিয়া সাহেব হচ্ছেন একজন ভাগ্যবান সৈনিক,যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছিলেন। ভাগ্যই জিয়াউর রহমানকে বার বার টেনে মঞ্চে নিয়ে এসেছে। ১৯৭৫ সালের ৭ই নবেম্বর বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করে তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছেন। এবং একদিন বাংলাদেশের রাস্ট্রপতি হয়েছেন। আমিতো মনে করি সবকিছুই হয়েছে আল্লাহর হুকুমে।
মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সত্য কথা, ইতিহাসের কথা জনসাধারনের কাছে তুলে ধরার ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা ১০০ ভাগ। বিএনপিতে রয়েছে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপি একথাটা জোর গলায় বলতে পারেনি। এ ব্যাপারে কোথায় যেন দলের দূর্বলতা আছে। কেন যেন মনে হয়,বিএনপি এ সত্য কথাটা বলতে লজ্জা পায়। মুক্তিযুদ্ধকে দলের প্রধান আদর্শ হিসাবে প্রচার করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। জিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন এবং এই মর্মে ঘোষণা দিয়েছে। একথাটা আজ দেশের ভুলতে বসেছে। কারণ বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের এবং দলের প্রতিষ্ঠাতার গৌরব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও জিয়া সাহেব যে আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এ কথাটিও বলতে বিএনপি ভুলে গেছে। বিএনপির মহান সম্পদ হলো মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী। তিনি জিয়াউর রহমানকে বিপদের দিনে সমর্থন করেছেন ও দোয়া করেছেন। নতুন প্রজন্মকে জিয়ার নাম ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস রচনার জন্যেই শাহবাগ রচিত হয়েছে। শাহবাগের ব্যাপারে বিএনপি ডিফেন্সিভ আত্মরক্ষা মূলক ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি নিজের অবস্থান ব্যাখা করে বিবৃতি দিয়েছে। এটা খুবই দু:খের এবং বেদনা দায়ক। জিয়া সাহেব আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার জন্যে জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয়ের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। বংগবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেছিলেন আর জিয়া সাহেব সকল মত ও পথের লোকজন নিয়ে দল গঠন করেছিলেন বিভেদ দূর করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্যে। কিন্তু আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধ। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী তাঁর দলের প্রতীক ধানের শীষ জিয়াউর রহমানকে দিয়ে গেছেন। বিএনপির প্রধান শক্তি এখনও মাওলানা সাহেবের দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ)। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি মুসলীম লীগ মার্কা একটি দলে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে এই দলের অতীতও নেই,ভবিষ্যতও নেই।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের তরুণরা সুস্পষ্ট করে পেছনের এই ইতিহাসটা জানেনা। তাই উল্লেখ করলাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক বহু বই রচিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওইসব রচিত হয়েছে ভাড়াটিয়া লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে। আমি কোন ইতিহাসবিদ নই। বুদ্ধিজীবীও নই। একজন সজাগ ছাত্র হিসাবে পাকিস্তান আমল থেকে কাছাকাছি থেকে দেশের রাজনীতি দেখে এসেছি। ৬১ সাল থেকে সাংবাদিক হিসাবে রাজনীতি দেখছি। মাওলানা ভাসানী ও বংগবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। দুজনকেই আমি গভীর ভাবে ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি। বংগবন্ধুকে নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা একমাত্র শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হীনমন্যতার কারণে। বংগবন্ধুকে সবার চেয়ে বড় এবং একমাত্র বড় দেখাতে গিয়ে শেখ হাসিনা তাঁকে বার বার ছোট করে চলেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনে করে বংগবন্ধু শুধু তাঁদেরই নেতা। বংগবন্ধুর জীবদ্দশায় শেখ মনি তাঁকে বিতর্কিত করেছে। মনিতো একবার লিখেই দিলো আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই। বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বললে জ্বিব ছিঁড়ে ফেলা হবে। এর ফলেই দেশের মানুষ মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে।আগেই বলেছি, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তিনি চালু করতে চাননি। এ ব্যবস্থা তাঁর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। একই রকম পরিস্থিতি এখন দেডখা দিয়েছে। সকল প্রকার বামপন্থী,সেক্যুলারিস্ট, ধর্মীহীন ও ধর্ম বিরোধীরা শেখ হাসিনার উপর ভর করেছে। টোপ দিয়েছে, আমাদের কথা শোনো, আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে। শাহবাগে সহজ সরল অবুঝ তরুণদের মগজে প্রবেশ করেছে বামপন্থী ধর্মহিন ও ধর্ম বিরোধীরা।
তরুণদের বুঝাতে হবে তোমরা জাতীয়তাবাদী আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এখন তথাকথিত আবেগের সময় নয়, এখন দেশগড়ার সময়। নেশন বিল্ডিং ব্রিগেড গঠন করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে হবে। হতে হবে সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশ। ১৯৬০ সালে সিংগাপুর ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরীব দেশ ছিল। তাদের তরুণরাই দেশকে অধুনিক রাস্ট্রে পরিণত করেছে।
ব্লগিং করে দেশ গড়া যাবেনা। কথা বলা যাবে, শ্লোগান দেয়া যাবে। ব্লগে রাসুল(সা) ও আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে যেসব অশ্লীল প্রচারণা দেখেছি তা বাংলাদেশের সকল মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। ব্লগারদের মা বাপ, শিক্ষক ও মুরুব্বীরা নিশ্চয়ই ব্লগের এসব বিষয় জানেন না। কে বা কারা তাঁদের সন্তানদের নবী রাসুল ও আল্লাহর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে তা পিতা মাতাকে অবশ্যই জানতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবী তুলেছে তরুণরা অত্যন্ত সরলভাবে। তাদের সরলতা ও দেশপ্রেমকে লাখো কোটিবার সালাম। সারাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু বিচার আন্দোলনের গভীরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে তা জাতিকে এবং জাতির তরুণ সমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে। তরুণরাতো আমার আপনার সকলের সন্তান। তারা বাংলাদেশেরই সন্তান। তাদেরকেই রক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে। দেশী বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রকেই নস্যাত করতে হবে।
লেখক: কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz40@yahoo.com