ধর্মহীন বা ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্র কি ও কেমন তা আমি আজও দেখিনি। সেই স্কুল জীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির দীক্ষা পেয়েছি আমার শিক্ষকদের কাছে। যাঁদের বেশীর ভাগই ছিলেন হিন্দু। তখন স্কুল কলেজে হিন্দু শিক্ষকরাই বেশী ছিলেন। তাছাড়া যে পাড়ায় বাল্যকাল অতিক্রম করেছি তাও ছিল হিন্দু পাড়া। পাড়ার নাম ছিল উকিলপাড়া। স্কুল শেষে বিকেল বেলা যে পাঠাগারে যেতাম তার নাম ছিল রবীন্দ্র পাঠাগার। বলা হতো এটি একটি প্রগতিশীল পাঠাগার। আমাদের বাড়ীর সিনিয়াররাও ওই পাঠাগারের সদস্য ছিলেন। তখন আমি প্রগতিশীলতা কি তেমন বুঝতামনা। কলেজে গিয়েও প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম।
স্কুলে পড়ার সময়েই হাতে এসেছিল ছোটদের অর্থনীতি বইটি। চারিদিকে দারিদ্র দেখে মনটা খুবই খারাপ হতো। কিন্তু কি করবো বা কি করলে গরীব মানুষ গুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে তা জানতামনা। তারপর জানলাম, সমাজতন্ত্র কায়েম হলেই মানুষের দারিদ্র দূর হবে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার নেশায় প্রচলিত ধারার চাকুরীতে না যেয়ে এক সময় খবরের কাগজে চাকুরী নিলাম। সময়টা ছিল ১৯৬১ সালের অক্টোবর। কাগজটি ছিল পাকিস্তান অবজারভার। কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলাম বা জানতে পারলাম অবজারভার বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক আদর্শের কাগজ। ৬২ সালের শেষদিকে বা ৬৩ সালের শুরুতে শ্রদ্ধেয় জহুর ভাইয়ের অনুরোধে সংবাদে যোগ দিলাম। শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেব ছিলেন তখন বার্তা বিভাগের দায়িত্বে নির্বাহী সম্পাদক। সংবাদ এক সময় মুসলীম লীগের কাগজ ছিল। ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হওয়ার পর মুসলীম লীগ আর কাগজটি চালায়নি। আমার ব্যক্তিগত চিন্তা চেতনার কারণে সরকারী গোয়েন্দারা সব সময় পিছনে লেগে থাকতো। সংবাদে যোগ দেয়ার পর গোয়েন্দা ঝামেলা আরও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। আমি মূলত: মানবতাবাদী চিন্তাধারার মানুষ। আমার মনে হয়েছিল মাও জে দং ও লেনিনরাই মানবতার জন্যে করেছে। তাদের আদর্শই মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে। আওয়ামী লীগকে আমি আমরা কখনই সমর্থন করিনি। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক। শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে থিওরী দিলেন ‘জিরো প্লাস জিরো’। মানে,আমেরিকা ছাড়া অন্যদের সাথে বন্ধুত্বের কোন দাম নেই। আমেরিকা হচ্ছে এক,আর পাকিস্তান হচ্ছে শূণ্য। দুয়ে মিলে দশ। আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদীর নীতির সমর্থন করতো। তখন মানিক মিয়া সাহেবের কাগজ দৈনিক ইত্তেফাক আমেরিকাকে অন্ধভাবে সমর্থন করতো। আজও তাই করে। ৫৭ সালের দিকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ভাসানীর সাথে নিজদলের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দ্বিমত দেখা দেয়। তখন অল্প কয়েকজন নেতা ও কর্মী ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা সবাই সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পররাষ্ট্রনীতির সমর্থন করেন। এমন কি মাওলানা সাহেবের অতি প্রিয় কর্মী বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মাওলানা সাহেবকে ত্যাগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে মাওলানা সাহেব নতুন দল প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হন। এভাবেই ন্যাপের জন্ম হয়। মাওলানা সাহেব সারা পাকিস্তানের বাম চিন্তা চেতনার নেতাকর্মীদের নিয়ে ন্যাপের যাত্রা শুরু করেন। পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলার বাম নেতারাও মাওলানা সাহেবকে সমর্থন দেয়। ৬২ সালে মাওলানা সাহেবের উদ্যোগেই জেনারেল আইউব পূর্ব পাকিস্তানের বাম নেতাদের মুক্তি দেন। বংগবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমেরিকা পন্থী একটি রাজনৈতিক দল ছিল। হঠাত্ করেই ৭২ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাশিয়া ও ভারত সমর্থক বাম রাজনৈতিক দল গুলোর নেতা সেজে গেল। বংগবন্ধু নিজেই বলতে লাগলেন, তিনি নিজেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করবেন। ভারত ও রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে বংগবন্ধু ডান চিন্তাধারার রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাস্ট্রের নীতি ঘোষণা করলেন। রাতারাতি বাম দল গুলো নিজেদের নীতি ত্যাগ করে বংগবন্ধুকে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক নেতা হিসাবে গ্রহন করলেন। বংগবন্ধু তাঁদের সাইন বোর্ড ফেলে দিয়ে তাঁর সাথে যোগ দিতে বললেন।
এই লেখাটি তৈরি করার জন্যে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি কালের কন্ঠে সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় যতীন সরকারের লেখাটি পড়ে। একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্রের স্বপ্ন থেকেই যতীনদা লেখাটি লিখেছেন। যেমন আমার স্বপ্ন একটি মানবতাবাদী কল্যাণমুখি রাষ্ট্রের। বাল্যকাল থেকেই দেখে আসছি এই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন নিয়েই লেখালেখি করছি ৫০ বছর ধরে। পশ্চিমে মানে ইউরোপ বা আমেরিকায় কিছু কল্যাণধর্মী রাস্ট্র গড়ে উঠেছে। কোন রাষ্ট্রই সেখানে ধর্মহীন বা ধর্ম নিরপেক্ষ নয়। বৃটেনের রাস্ট্রধর্ম প্রটেস্ট্যান্ট খৃষ্টবাদ। সেখানে রাজা বা রাজপুরুষরাই ধর্ম যাজক। বৃটেনের রাজাদের অত্যাচারে ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক খৃষ্টবাদ পালিয়ে ইটালীর ভ্যাটিকানে আশ্রয় নিয়েছে। নিরো যখন বাঁশী বাজায় রোম তখন আগুনে পোড়ে। ইতিহাস হলো সম্রাট নিরো ছিলেন প্যাগান। প্রটেস্ট্যান্ট খৃষ্ট যাজকরা রোম গিয়েছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্যে। নিরো যাজকদের বস্তিতে আগুন লাগিয়ে আনন্দে বাঁশী বাজাচ্ছিলেন বা সংগীত শুনছিলেন। একই ভাবে স্পেনের রাজা পরাজিত মুসলমানদের বলেছিলেন,তোমরা যদি মসজিদে আশ্রয় গ্রহন করো তাহলে প্রাণে বাঁচবে। মুসলমানরা রাজা ফার্ডিনান্ডকে বিশ্বাস করে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক ফার্ডনান্ড মুসলমানদের আগুন লাগিয়ে তাদের সবাইকে হত্যা করে। সেদিন ছিল এপ্রিল মাসের পহেলা তারিখ। ফার্ডিনান্ড বা খৃষ্টানরা ওই দিনটিকে নাম দিয়েছিল এপ্রিলফুল। আমরাও বহুদিন এইদিনটি পালন করেছি অজ্ঞতার কারণে।
ইতিহাস চুরি বা সত্যকে নির্বাসিত করে কাব্য রচনা করা বা ইতিহাস রচনা করা নতুন কিছু নয়। রামায়ন মহাভারত কোন ইতিহাস গ্রন্থ নয়। দুটিই মহাকাব্য মিথ্যা কাহিনীর উপর রচিত। বিজয়ীর গুণগাঁথা। সমকালীন কবিরা বিজয়ী রাজার কাহিনী রচনা করতে গিয়ে পরাজিত রাজাকে অসুর বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহীষাসুর বা রাবণ ছিলেন ভুমিপুত্র বা স্বদেশী রাজা। বিদেশী রাজা রাম ও তাঁর স্থানীয় বেঈমানদের ষড়যন্ত্রের ফলে রাবণ ও মহীষাসুরের পরাজয় হয়। তাই রাবণ ও মহীষাসুরের চেহারা কাল্পনিক অসুরের মতো। একই ভাবে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পরাজয়ের কাহিনী রাচিত হয়েছে হিন্দু ও খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের দ্বারা। তাঁদের চোখে সিরাজ ছিলেন লম্পট। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে আঁতাত করেছিল হিন্দু রাজা ও বণিকরা। হিন্দুদের সহযোগিতায়ই ধীরে ধীরে সারা ভারত দখল করে নিয়েছিল। ফলে ইমরেজরা এইদেশটি দখল করে রেখেছিল ১৯০ বছর আর হত্যা করেছে এদেশের লাখ লাখ দেশ প্রেমিককে। ১৭৫৭ সালের পরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ভারতের মুসলমান আলেম সমাজ ও ধর্মীয় নেতারা। প্রথম একশ’বছর মানে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। আপনারা সবাই জানেন শ্রদ্ধেয় ক্ষুদিরামের ফাঁসীর খবর। তিনি বড়লাটকে হত্যা করার চেষ্টা করে ধরা পড়েন এবং ফাঁসীতে জীবনদান করেন। কিন্তু আমরা ক’জন জানি বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী আন্দামানে বন্দী শের আলী খানের কথা। শের আলী খান বড়লাট লর্ড মেয়োকে হত্যা করে ফাঁসীতে জীবনদান করেছেন। এই ইতিহাসটি আন্দামানের সীমানা পেরিয়ে জাগ্রত বাংগালীর কাছে আসেনি। কারণ, শের আলী খান ছিলেন একজন পাঠান স্বাধীনতা যোদ্ধা।
সম্প্রতি আমার হাতে একটি বই এসেছে যার নাম ‘দি থেফট অব হিষ্ট্রি’। লিখেছেন জ্যাক গুডি। গুডি পশ্চিমা জগতে একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক। এর আগে তিনি লিখেছেন ‘দি ইষ্ট ইন দি ওয়েষ্ট’। এই বইটিরই বর্ধিত গবেষণা হচ্ছে ‘দি থেফট হিষ্ট্রি’। প্রফেসর গুডির গবেষণা হচ্ছে শক্তিশালীরাই ইতিহাসে নির্মাতা, নিয়ামক ও প্রভাবক। আমরা সোজা ভাষায় বলি ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর ইতিহাস। পশ্চিম কিভাবে পূর্বের অর্জন ও বিজয়কে চুরি করেছে তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন প্রফেসর গুডি। আমেরিকান আর অস্ট্রেলিয়ানরা এক সময় চোর ডাকাত ছিল। তাদের নির্বাসনের জায়গা ছিল আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া। বৃটেন এক সময় সারা পৃথিবীকে দাবডিয়ে বেড়িয়েছে। আমেরিকা এখন সারা বিশ্বের একক নেতা। তার এক সময়ের প্রভু বৃটেন এখন অনুগত মিত্রে পরিণত হয়েছে। বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার এখন আমেরিকার গণ সংযোগ প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছে। আমেরিকা এখন তার অতীত ইতিহাসকে নতুন ভাবে নির্মান করার চেস্টা করছে। সত্যি কথা বলতে কি আমেরিকার কোন ইতিহাস নেই। আমাদের মানে ভারত বা বাংলাদেশের ইতিহাস হচ্ছে কয়েক হাজার বছরের পুরাণো। এক সময় পৃথিবীর মানুষ বাংলাদেশে আসতো ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে। এখন বাংলাদেশের মানুষ যায় বিদেশে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী বেশী লুণ্ঠিত হয়েছে ইংরেজদের দ্বারা। এ বিষয়ে জানার জন্যে হান্টারের বই পড়ুন।
শ্রদ্ধেয় যতিনদার লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে তাঁর সব রাগ ধর্মের উপর। ওই সুযোগে তিনি পাকিস্তানের জন্ম নিয়েও কথা বলেছে। ইংরেজরা এ দেশে এসেছিল বণিক হিসাবে আর সাথে নিয়ে এসেছিল হজরত ইসা নবীর(আ) ধর্মগ্রন্থ। এক সময়ে তারা ষড়যন্ত্র করে রাস্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা দখল করে। ইংরেজের ক্ষমতা দখল ছিল হিন্দুদের জন্যে এক বিরাট আশীর্বাদ। আর বাংলা তথা ভারতীয় মুসলমানদের জন্যে ছিল পরাজয়। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন মনে হয়েছিল মুসলমানরাই ইংরেজদের কোলাবোরেটর ছিল। কারণ, আসল ইতিহাস হিন্দু আর ইংরেজ গবেষকরা চুরি করেছিলেন। মোগল বা তারও বহু আগে বাংলাদেশ বা ভারতে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা। এটা চালু করেছে ইংরেজরা। তাদের নীতি ছিল ‘ডিভাইদ এ্যান্ড রুল’। এ পদ্ধতিতেই তারা ১৯০ বছর ভারত দখল করে রেখেছিল। ভারতে দাংগার ইতিহাস পড়ুন। যতীনদার দৃষ্টিতে পাকিস্তান খুবই একটা খারাপ দেশ বা রাস্ট্র। এদেশটার জন্মই নাকি ভুল ছিল। বাংলাদেশের জন্মের মাধ্যমে সে ভুল নাকি শুদ্ধ হয়েছে। যতীনদা বলতে চেয়েছেন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা ধর্মমুক্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির আর প্রয়োজন নেই। তিনি সেক্যুলার রাজনীতি চান। সেক্যুলার আর ফান্ডামেন্টালিস্ট শব্দ দুটো এসেছে বৃটেন থেকে। সেখানে রাজা আর গীর্জার ক্ষমতার দ্বন্ধ থেকেই শব্দ দুটোর উত্পত্তি হয়েছে। মুসলমানদের খেলাফতের জামানায় এই দ্বন্ধ ছিল। রাসুল(সা)এর জামানায় নবুয়ত,খেলাফত আর ইমামত একসাথেই ছিল। মদিনার রাস্ট্র ছিল বিশ্বের প্রথম জনগণতান্ত্রিক বা পিপলস রাস্ট্র। এই রাস্ট্রে বাস করতো ধর্মভিত্তিক সকল জাতি। মদিনা সনদেই সকল জাতি গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। মদিনার রেফারেন্স উল্লেখ করায় যতীনদা আমাকে মৌলবাদী বলবেন হয়ত। ইউরোপের সেক্যুলারিজম মানে ভন্ডামী। শুরুতেই বলেছি ধর্মনিরপেক্ষতা জগতের কোথাও নেই। এক কালের ধর্মহীন রাস্ট্র রাশিয়ায় সকল ধর্মই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মসজিদ মন্দির বা গীর্জা বন্ধ ছিল। এটা ছিল রাষ্ট্রের জবরদস্তি। চীনেও একই অবস্থা ছিল। বাংলাদেশে যতীনদাদের মতে সেক্যুলারিজম মানে রাস্ট্র ধর্মমুক্ত থাকবে। এ চিন্তা গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার বিপরীত। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। নব্বই ভাগ ভোটারও মুসলমান। এখানে জাতীয় মসজিদের পরিচালক সরকার। এখানে রাস্ট্রপ্রধান নামাজ আদায় করেন ইমামের পেছনে কাতারে দাঁড়িয়ে। সাথে রাস্ট্রপতির কর্মচারীরাও এক কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত বা নামাজ আদায় করেন।
পাকিস্তানের জন্ম ইতিহাস যতীনদা জানলেও গোপন করেছেন। ১৮৮৫ সালে ইমরেজ সাহেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেস ছিল মূলত: একটি হিন্দু সমিতি। পরে একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। মুসলমান নেতারা শুরুতে কংগ্রেসেই ছিলেন। এমন কি স্বয়ং জিন্নাহ কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। তিনি হিন্দু মুসলমান ঐক্য ও সম্প্রীতির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গান্ধীজী কংগ্রেসকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলে পরিণত করেছিলেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কারণে কংগ্রেস কখনই সার্বজনীন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে পারেনি। কংগ্রেস নেতাদের ব্যবহারের প্রিক্রিয়া হিসাবে এক সময় মুসলীম লীগের জন্ম হয়। শুরুতে মুসলীম লীগ ইংরেজ শাসক ও কংগ্রেসের সাথে নিজেদের স্বার্থ অধিকার নিয়ে দর কষাকষিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আসলে কংগ্রেস নেতারা একটি হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। অখন্ড ভারতে মুসলমানদের অবস্থান কি হবে ব্যাখ্যা করতে হিন্দু নেতারা ব্যর্থ হন। এই কারণেই মুসলমান রাস্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সমুখে আসে। তখন যদি ভারতকে কনফেডারেশন করার প্রস্তাব দেয়া হতো তাহলে হয়ত পাকিস্তান সৃষ্টি হতোনা।