বেশ কিছুদিন হলো আমি রাজধানীর ফাইভ স্টার হাসপাতাল নিয়ে দুই কিস্তিতে কিছু কথা বলেছিলাম। আমাদের রাস্ট্রীয় চিকিত্সা ব্যবস্থা নিয়ে বহু প্রবন্ধ নিবন্ধ তৈরি হয়েছে এবং পত্র পত্রিকায় তা ছাপা হয়েছে। দেশের সাধারন মানুষের পক্ষে চিকিত্সা পাও য়া খুবই কঠিন। পাবলিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মানে সরকারী কলেজ ও হাসপাতাল গুলোতে চিকিত্সা ব্যয় এখনও বেশ কম। কিন্তু চিকিত্সার মান খুবই নিম্নমানের। জেলা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোর অবস্থা খুবই করুণ। শুনেছি সেখানে বিদ্যুতের অভাবে মাঝে মাঝে হারিকেন ব্য মোমবাতির আলোতে চিকিত্সা করতে হয়। এমন এমন আলোতে অপরেশনও চলে। এসব আসলে বাংলাদেশেই সম্ভব।বড় বড় অনেক গুলো হাসপাতাল হয়েছে। যেখানে ডাক্তার দেখাতে ফি নেয়া হয় ৮শ’ থেকে হাজার টাকা। ডাক্তারের সাথে দেখা বা এপয়েন্টমেন্ট করতে ১৫ দিন থেকে এক মাস আগে।আপনি যদি সরাসরি ফোন বা ইমেইলে এপয়েন্টমেন্ট করে থাকেন তাহলে নির্ধারিত তারিখে আপনি যখন গেলেন তখন ডাক্তার সাহেবের সহকারী বলবেন, আমার খাতায় নাম নেই। স্যার আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। আপনি বসুন, আমি স্যারের সাথে কথা বলে নিই। কথা বলতেই হয়ত এক ঘন্টা পার হয়ে গেল। আমার ডাক্তার হলেন, বরেন চক্রবর্তী ও খালেদ মহসিন। বরেন বসেন ল্যাব এইডে, আর মহসিন বসেন স্কয়ারে। এপয়েন্টমেন্টের পরেও সহকারী আপনাকে এক ঘন্টা বসিয়ে রাখবেন। এক সময় আমি বা আমার স্ত্রী বি চৌধুরী সাহেব ও নুরুল ইসলামকে দেখাতাম। নুরুল ইসলাম সাহেবের ওখানে তাঁর সহকারী ব্যবহার ভাল ছিলনা। নুরুল ইসলামের কখনই হাসিমুখ ছিলনা। মনে হতো তিনি নিজেই অসুস্থ। কিন্তু তিনি খুবই ভাল ডাক্তার। বি চৌধুরী সাহেব ছিলেন একেবারেই উল্টো। তিনি সদা হাস্য। রুগীরা তাঁর কথায় অর্ধেক ভাল হয়ে যেতেন। দুই জায়গাতেই সহকারীদের ম্যানেজ করতে হতো। সহকারীদের হাত করে নিতে হতো আতিকুল হক সাহেব ও নুরুল ইসলাম সাহেবের ওখানে। একবার আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম বি চৌধুরী সাহেবের চেম্বারে। তিনি আমার স্ত্রীকে দেখলেন এবং বললেন কোন রোগ নেই, একদম ভালো আছেন। তবুও দুয়েকটি অসুধ দিলাম, না দিলে বলবেন ডাক্তার ভাল নয়। ফি’জ নিলেন, কিন্তু আমার স্ত্রী চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলে আমাকে ডেকে টাকাটা ফেরত দিয়ে বললেন, টাকা না নিলে রুগীরা মনে করেন ভাল করে দেখা হয়নি। এটা এক ধরণের মনস্তাত্বিক ব্যাপার। বি চৌধুরী সা্েবের বাবার সাথেও আমার পরিচয় ছিল। তিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন। খুবই সামাজিক মানুষ ছিলেন। করাচীতে পূর্ব পাকিস্তান সমিতির সদস্যরা তাঁর প্রচুর সাহায্য সহানুভুতি পেয়েছেন।
আমাদের এই রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলা হয় বর্তমানে এই রাজধানীতে প্রায় দেড় কোটি লোক বাস করে। গ্রাম ছেড়ে মানুষ নগরে আসছে জীবিকার অন্বেষণে। এর মানে হচ্ছে গ্রামের আয় দিয়ে সংসাে চলেনা। তাই সবাই শহরের দিকে ছুটে চলেছে। প্রতি বছর নাকি ৪/৫ লোক গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসছে। যারা ছিন্নমূল হয়ে রাজধানীতে আসছে তাদের আশ্রয় জোটে বস্তিতে। তাই রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আরও কয়েক লাখ লোক ফুটপাত, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদর ঘাটে রাত কাটায়। লোকে বলে বস্তি গুলোতেই বেআইনী অসামাজিক কাজ সংঘটিত হয়। এরাই রাজনৈতিক দলের মিছিলে অংশ নেয়। সেদিক থেকে বিচার করলে রাজনীতিতে এদের বেশ কদর আছে। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনা বাহিনী প্রথমেই বস্তি আক্রমন করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওরা ভেবেছিল ওখান থেকেই প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে।পাকিস্তানের ২৩ বছর সহ বাংলাদেশের ৪১ বছর সহ ৬৪ বছর পার হতে চলেছে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কোন উন্নতি হয়নি। যাদের থাকার জায়গা নেই, শিক্ষা নেই , তাদের আবার স্বাস্থ্য রক্ষা লাগে বলে রাস্ট্র মনে করেনা। তাদের কোন খোঁজ খবর রাস্ট্র রাখেনা। কাগজে কলমে রাস্ট্র বহু কথা বলে। ওসব হচ্ছে কথার কথা। ধোকা বাজির কথা। রাজনীতির কথা। আসল কথা নয়। ৪৭ সালে এখানে লোক সংখ্যা ছিল চার কোটির মতো। ৭১ সালে ছিল সাড়ে সাত কোটি। আর এখন নাকি প্রায় ১৬ কোটির মতো। এর মধ্যে ১০ কোটি লোক গরীব। বাকি ৬ কোটির মধ্যে মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত। এক কোটি লোক ধনী। এরাই রাস্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। রাস্ট্র আর ধনীরা মাসতুতো ভাই।