• Home
  • Who Am I ?

Writing From The Street ( রাস্তা থেকে বলছি )

Just another WordPress.com weblog

Feeds:
Posts
Comments
« পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষটি কে?
কবিতা ও জাহাঙীর ফিরোজ »

বাজেট কেন এবং কাদের জন্যে?

April 6, 2012 by writerershad


বাজেট কেন এবং কাদের জন্যে   /    এরশাদ মজুমদার

 

আমি অর্থনীতিবিদ নই। বাজেট প্রনয়নকারী বিশেষজ্ঞও নই। তবে সাংবাদিক হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে বাজেট নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নে আমার নিজস্ব একটি চিন্তা ও ধারণা আছে। আমাদের চলমান বাজেট ব্যবস্থা কখনই দেশের সকল মানুষের একশ’ভাগ কল্যাণ বা উন্নয়ন সাধন করতে পারবেনা। বাজেট রচনা বা প্রনয়নে যাঁরা মাথা ঘামান বা রাতদিন পরিশ্রম করেন তাঁরা গতানুগতিক ভাবেই তা তৈরী করেন। বৃটিশ আমল বা পাকিস্তানী আমলের সাথে চলমান বাজেট তৈরীর প্রক্রিয়ার কোন বড়  ফারাক নেই। একেবারেই সেকেলে ঘুণেধরা ব্যবস্থা। আমাদের বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি বা ব্যবস্থা না ধনতান্ত্রিক, না সমাজতান্ত্রিক, না ইসলামিক। একটা  জগাখিছুড়ি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী একজন সাবেক আমলা। তিরিশ বা তারও বেশী সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের খেদমত করেছেন আমলা হিসাবে। পাকিস্তান বা বৃটিশ আমলে বহু বাংগালী মুসলমান রাজনীতিক ইচ্ছা করলে বড় আমলা হতে পারতেন। যেমন ধরুন, শেরে বাংলা, হোসেন সোহরাওয়ার্দী, স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন, মৌলবিী তমিজ উদ্দিন, নরুল আমিন। এঁরা সকলেই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু আমলা না হয়ে রাজনীতিতে এসেছেন দেশের সেবা করার জন্যে।

তত্‍কালীন পূর্ববাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশে জমিদারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করা হয়েছে ১৯৫০ সালে মুসলিম লীগ  আমলে। সরকারের এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বড় বড় জমিদার বাবুরা, যারা সমাজে প্রগতিশীল বলে পরিচিত ছিলেন। জিন্নাহ সাহেব একবার বলেছিলেন পাকিস্তানের প্রয়োজন পূর্ববংগের গরীব মুসলমান কৃষকদের মুক্তির জন্যে। এর মানে, পূর্ববংগের মুসলমানরা  এত বেশী শোষিত হয়েছেন যে, তাদের মুক্তির জন্যে পাকিস্তান প্রতিস্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। যদিও পাকিস্তান প্রতিস্ঠার পর পাকিস্তানের শাসক গোস্ঠি ও পূর্ববংগের মুসলিম লীগ নেতারা সে কথা ভুলে গিয়েছিলেন। জমিদারী ব্যবস্থা বাতিল বা উচ্ছেদ করাটা ছিল একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, যার প্রশংশা করেছিল রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। পূর্ববংগের বেশীর ভাগ জমিদারই ছিলেন হিন্দু এবং তাঁরা ছিলেন কোলকাতার অধিবাসী। শুনেছি  ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে জমিদার বাবুরা মুসলিম লীগের ওই বিপ্লবী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এ কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যুক্তফ্রন্ট গঠণের সময় তাতে যোগ দিয়েছিল কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি। জমিদার বাবুদের অনেকেই কংগ্রেস করতেন। মুসলিম লীগ যে এমন একটি বিপ্লবী কাজ করতে পারে তা কংগ্রেসী জমিদার বাবুরা বিশ্বাস করতে পারেননি। এই মুসলিম লীগই মুসলমান প্রজাদের ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যে ঋণ সালিশী বার্ড গঠণ করেছিল। যা শেরে বাংলা বাস্তবায়ন করেছিলেন। বিষয়টি উল্লেখ করলাম আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে। মুসলিম লীগের মতো একটি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলও সাধারন মানুষের মুক্তির জন্যে এমন একটি প্রগতিশীল  রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। বাংলাদেশে এখন মুসলীম লীগ নাই বললেই চলে। তবে আমি নিজেও মনে করি মুসলিম লীগ কখনই গণমানুষের রাজনৈতিক দল ছিলনা। যদিও মুসলিম লীগকে নির্যাতিত মুসলিম জনসাধারন সমর্থন দিয়েছিল সময়ের চাহিদার কারনে।

১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন রোজ গার্ডেনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ বিরোধী বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মাওলানা সাহেব বলতেন, আমরা হলাম জনগণের মুসলিম লীগ, আর শুধু মুসলিম লীগ হলো  খাজা গজার দল। আওয়ামী মুসলীম লীগে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন সাধারন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ। মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিস্ঠা করেছে এই দম্বেই আত্মহারা ছিল। ফলে ৫৪ সালের সাধারন নির্বাচনের আগেই দলটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। মাওলানা ভাসানী  শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দ্দীকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করলেন। যা মুসলিম লীগকে পুর্ববংগের রাজনীতি থেকে বিদায় দিয়েছে। তারপর মুসলিম লীগ এদেশের রাজনীতিতে আর ফিরে আসতে পারেনি। রাজনীতি থেকে শেরওয়ানী, চোস্ত পাজামা আর জিন্নাহ টুপি বিদায় নিলো। আসলো লুংগি, শার্ট, পাজামা, পাঞ্জাবী। রাজনীতি উকিল মোক্তার, জমিদার জোতদার তালুকদারদের চেম্বার ও কাচারী ঘর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল অতি  মধ্যবিত্তের দুয়ারে। এখন রাজনীতি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বাংগালীরা , বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী রাজনীতি না করে থাকতে পারেনা। এখন রিকসাচলক, ফেরিওয়ালা ও সংবিধানের কথা বলে। গ্রাম আধা শহর ও পুরো শহরে মধ্যবিত্তরা চায়ের কাপে রাজনীতির ঝড় তোলে। দুই টাকার কাগজ না পড়লে তাদের ভাতই হজম হয়না।

বাংলাদেশ প্রতিস্ঠিত হয়েছে ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের রাজ প্রতিস্ঠিত হয়েছে। ৭২ সালে ব্যান্কের কোরাণী বা ক্লার্ক ছিলেন এমন ব্যক্তি এখন ব্যান্কের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আমদানী অফিসের কেরাণী এখন পাঁচ হাজার কোটি টাকার শিল্প গ্রুপের মালিক। ৭২ সালে যেখানে এক কাঠা জমির দাম দুই হাজার টাকা ছিল তা একন দুই কোটি টাকা। রাজউক বা ডিআইটি যে জমি পাঁচ হাজার টাকায় বরাদ্দ দিয়েছিল তা এখন একশ’ কোটি টাকা। সরকারী সহযোগিতা বা অনুকম্পা পেয়ে যারা  সরকারী জমি পেয়েছেন তারা রাতারাতি ধনী হয়ে গেছেন। ৮২ সালে একটি ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে তিন কোটি লেগেছে উদ্যোক্তাদের। সেই তিন কোটি টাকা যোগাড় করতে ২৫/২৬ জন উদ্যোক্তার প্রয়োজন হয়েছে। এখন একটি ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে চারশ’ কোটি টাকা লাগবে। অনুমতি পাওয়ার জন্যে  আরও চার পাঁচশ’ কোটি টাকা লাগে বলে শুনেছি। এমন উদ্যোক্তাও আছেন যিনি একাই এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে ব্যান্ক প্রতিস্ঠা করতে চান। অর্থমন্ত্রী বলেছেন রাজনৈতিক কারণে নতুন ব্যান্কের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যাদের ব্যান্কের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তাঁরা তা বিক্রি করে হয়ত পাবেন একশ’কোটি টাকা। রাজউক এতদিন পর বলছে , এখন থেকে আর জমি বরাদ্দ দেয়া হবেনা। এখন  মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হবে। জানিনা রাজউকের এই ওয়াদা কতটুকু সত্য হবে। রাজনৈতিক দল গুলো নিজেদের ভালবাসার মানুষদের ধনী বানাবার এর চাইতে সহজ পথা আর কোথায় পাবে।

রাজধানীর চারিদিকে এখন নদী দখল চলছে। এই দখলি ব্যবসাটা করছে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিপুস্ট শক্তিধর ব্যক্তিরা। গরীব মানুষের জমি দখল করে রাজউক এবং ধনীরা প্লট বানিয়ে বিক্রি করছেন। আপনারা প্রতিদিন খবরের কাগজে ও টিভিতে জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন। নামমাত্র মূল্যে জমি দখল করে সে জমি হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর চারিদিকে এখন শুধু হাউজিংয়ের বিজ্ঞাপন। পত্রিকা ওয়ালারাও বেশ খুশী। যত বেশী রঙিন বিজ্ঞাপন ততবেশী কম স্বাধীনতা। খুবই আনন্দের খবর।একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার প্রথম পাতায় চব্বিশ ইঞ্চির বেশী বিজ্ঞাপন ছাপা হতোনা। পাঠকের অধিকার বলেওতো একটি কথা আছে। এখন পাঠকদের সেই অধীকার নেই। সাংবাদিকরা বলবেন, আমরা শ্রমিক মানুষ, ভাল বেতন পেলেই খুশী। পত্রিকা যদি বেশী বেশী বিজ্ঞাপন না পায় তাহলে আমাদের অস্টম ওয়েজ বোর্ড দিবে কোত্থেকে।আগেই বলেছি রাজনীতি এখন মধ্যবিত্তের দুয়ারে। ধনীরা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভালবেসে চুমা খায়। চাওয়া মাত্রই টাকা দেয়। সরকারে থাকলে  মাসে পাঁচশ’ কোটি, আর বিরোধী দলে থাকলে মাসে পঞ্চাশ কোটি। এবার আপনারাই বলুন বেচারা রাজনৈতিক দলগুলো টাকার এই ভালবাসাকে কিভাবে উপেক্ষা করবে। গ্রামে গণ্জে, হাটে বাজারে চাঁদাবাজির এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন নেতারও মাসে লাখ খানেক টাকা চাঁদা আদায় হয়। যদি কখনও প্রশ্ন করেন, ভাই কেমন আছেন? ভাই উত্তরে বলবেন, বোঝেনইতো দল ক্ষমতায় থাকলে যা হয়। সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করছেন নাকি? সময় কোথায় বলুন? তাহলে? দল চালাতে হলেতো কিছু চাঁদা নিতেই হয়। জন সাধারন ভালবেসেই মাসে মাসে কিছু টাকা দেন। এছাড়া আমাদের ছেলেরাইতো উন্নয়নের কাজ করছে। টেন্ডারগুলো তারাই পায়। বুঝতেইতো পারেন রাজনীতি করতে হলে এসবতো করতে হবে।

রাজধানীর পর্যায়ে চাঁদাবাজির কথা আগেই বলেছি। এছাড়া রাজনীতিতে উপরি পাওনাতো আছেই। সুরন্জিত বাবুর গল্পতো আপনারা জানতেই পেরেছেন। ওনার ছেলেও ছ’মাস চাকুরী করে পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়ে টেলি ব্যবসা জোগাড় করেছেন। তিনি দুদকে জবানবন্দী দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বন্ধুরা তাঁকে টাকা দিয়েছেন। সুরন্জিত বাবুর ছেলের মতো এদেশে আরও বহু ছেলে আছে যাদের বন্ধুরা  সরকারী ব্যবসা পাওয়ার জন্যে এভাবে টাকা দেয়না। কারণ, তাদের বাবা মন্ত্রী নয়। শুনেছি এ জামানায় সংসদ সদস্য হতে নির্বাচনে চার পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। মন্ত্রীত্ব পেতেও নিশ্চয়ই টাকা খরচ করতে হয়। দল যদি নির্বাচন করতে হাজার কোটি টকা খরচ করে সে টাকা দলনেতা কোথায় পাবেন? বাধ্য হয়েই দলনেতাকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ওয়াদা করতে হয় ক্ষমতায় গেলে পুষিয়ে দেবো। পদ্মা সেতুর ঘটনাটা হয়ত তেমনি একটা কিছু। তাই ব্যবসায়ী আবুল সাহেবকে কিছু করা যায়নি। সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনাটা  একটু ভাবুন। তাঁর ওজারতি যেয়েও যায়নি। তিনি এখন উজিরে খামাখা। এর মানে হলো দপ্তর বিহীন মন্ত্রী। উর্দুতে বলে উজিরে খামাখা। মানে কাজ নেই, নিয়মিত সরকারী তহবিল থেকে টাকা পয়সা নিয়ে সংসার চালাবেন।

আমাদের দেশের দূর্ণীতি সম্পর্কে টিআইবি( ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) বহুদিন ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সে প্রতিবেদন আমাদের জন্যে মর্যাদার কিছু নয়। এতে বিশ্ব বাসীর কাছে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। তবে দূর্ণীতির বিষয়টি এখন আর কেউ গায়ে মাখেনা। সরকারী অফিসের পিয়ন থেকে সচিব মন্ত্রী পর্যান্ত সবাই পদ মর্যাদার খাজনা , সেলামী বা সম্মানী আদায় করেন। ছেলেবেলায় চাপরাশী বাড়ির কথা শুনেছি। এটি একটি সরকারী চাকুরী। চাপরাশীর চাকুরী করে ভদ্রলোক আয় রোজগার করে সমাজে সম্মান অর্জন করেছিলেন। এমন কি সারাজীবন উমেদারের চাকুরী করেও সামাজিক মর্যাদা বৃস্ষি করেছেন এমন লোক ছিল। উমেদার হচ্ছে , যিনি চাকুরীর জন্যে আবেদন করেছেন, এখনও পাননি। কিন্তু বিনা বেতনে বা বিনে পয়সায় কাজ করছেন বা শিখছেন। উমেদারকেও লোকে খুশী হয়ে দু’চার পয়সা হাতে গুঁজে দিতো। এতো গেলো সরকারী অফিসের উপরি লেনদেনের কিসসা। আপনারা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন আগামী বাজেটের সাইজ হবে এক লক্ষ আশি হাজার কোটি টাকা। সরকারী কর্মচারীরা যদি মাত্র দশ পার্সেন্ট করে উপরি গ্রহণ করেন তাহলে তার পরিমাণ হবে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে উপরি আদায়ের পরিমাণ বা পার্সেন্টেজ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। আমিতো বলি, দশ পার্সেন্ট  হাত খরচ জাতি দিতেই পারে। ছেলেবেলায় শুনেছি যে বাজার করে সে পান বিড়ির জন্যে দু’চার পয়সা রাখতো। শুনেছি , করাচীতে  বাসা বাড়ির বাংগালী কেয়ারটেকাররা শর্ত দিতো বাজার করার সুযোগ দিতে হবে। বড় বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্ট গুলোতে টিপস দেয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কোন হোটেলে টিপসা বিলের সাথে যোগ করে দেয়া হয়। এক সময় এই টিপসকে বকশিস বলা হতো।

এতক্ষণ ধরে আপনাদের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির পারিপার্শিক অবস্থার কথা বলেছি। আমার মূল আলোচনা হচ্ছে বাজেট নিয়ে। আমাদের সবার জীবনই বাজেট আছে। যারা চাকুরী করেন তাঁরা বেতন এবং উপরি, বাড়তি বা ঘুষ নিয়ে মাসিক বাজেট করেন।বর বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, জমি ডেভেলপাররা সংসার খরচের জন্যে তেমন বাজেত তৈরী করেন না। কারণ তাদের কাছে প্রচুর টাকা থাকে। সে টাকা ব্যান্কের বা  ব্যবসার। এ ব্যাপারে মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন, শি্প বা ব্যবসার অবস্থা খারাপ। খিন্তু মালিকের অবস্থা খুবই ভাল। তারা পাজেরো বা বিএমডব্লিউতে চড়েন। বর বড় ভিলা বানান। কর্মচারীর বেতন ঠিক সময় দেননা। একই ভাবে সরকারও বাত্‍সরিক বাজেট তৈরি করেন রাজস্ব আদায়, বিদেশী ঋণ, দেশী ঋণের উপর নির্ভর করে। ইদানিং বিদেশী ঋণের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। পুরাণো বিদেশী ঋণ অনেক বাকি পড়ে গেছে। নিয়মিত কিস্তি শোধ হচ্ছেনা। চলতি সরকার মনের মাধুরী মিশিয়ে বাণিজ্যিক ব্যান্ক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন। ডিপোজিটের উপর সুদের হার ঠিক নেই জন সাধারণ সরকারী প্রতিস্ঠানে এখন আর সঞ্চয় রাখতে চায়না। এক লক্ষ আশি হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকারের কর্মচারীর বেতন, রক্ষণাবেক্ষন, পেনশন বাবতই খরচ হয় সিংহ ভাগ টাকা। এর মানে হচ্ছে একশ’ টাকার ব্যবসা চালাতে গিয়ে ম্যানেজারের বেতন দিতে হয় দেড়শ’ টাকা। তাহলেই বুঝতে পারেন এ ব্যবসা কতদিন চলবে। সরকারের সাইজও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১/১১র সরকারের দিকে একবার নজর দিন। সরকারের বেতনভুক কর্মচারীরাই সরকার দখল করে দুই বছর দেশবাসীকে হেনস্থা করেছে। এখন তাঁরা দেশত্যাগী হয়েছেন। যাওয়ার সময় গণতন্ত্রের জোব্বা পরিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছেন। মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের কাছ থেকে ২৪০ সিট নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়।বলা যেতে পারে  ১/১১র সরকারের বৈধ ওয়ারিশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র আর দেশ রক্ষার জন্যে এখন আওয়ামী লীগ ও সরকার লড়াই করে যাচ্ছে পুলিশ, বিজিবি আর রেবের মাধ্যমে। তাই আমরা প্রতিদিন টিভিতে পুলিশ আর রেবের বক্তৃতা শুনি।

প্রশ্ন হলো বাজেটের বেনিফিট কাদের কাছে পৌঁছে? কারা বেনিফিসিয়ারী তা ইতোমধ্যে আপনারা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। একজন চৌকিদারও এই বাজেটের বেনিফিট পায়। পায়না শুধু এদেশের কোটি কোটি সাধারন কৃষক ও কৃষি উত্‍পাদক শ্রেণী। এদেশে কৃষকদের কোন শক্তিশালী সংগঠন নেই। কৃষক ছাড়া বাকি সবার দরকষাকষির সংগঠন আছে। দেশে লাখ লাখ মানুষ আছেন যাঁরা কখনও টাকা দেখেননা বা তাঁদের টাকার (কারেন্সী) প্রয়োজন হয়না। তাঁরা শ্রমের বিনিময়ে চাল পান, দুপুরের খাবার পান। ধানের চাতালে যে সব মা বোন কাজ করেন তাঁরা দিনের শেষে মুজুরী হিসাবে চাল পান।বর্গা আর প্রান্তিক চাষীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বড় চাষী বা কৃষক বা জমির মালিকগণ শুধু চাষের উপর নির্ভর করেন না। তাঁদের আরও অনেক ব্যবসা আছে। তাঁদেরই শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা চাকুরী করেন। তাঁদের হাতে নগদ অর্থ থাকে। আমাদের অর্থনীতি এখনও কৃষি এবং কৃষকদের পক্ষে নয়।ফলে সরকারের বা রাজনৈতিক দলগুলোর দর্শন  আদর্শ ও কর্মসূচী কৃষকদের পক্ষে নয়। বহু বছর আগে জিয়া সাহেবের আমলে যখন আজিজুল হক সাহেব কৃষি উপদেস্টা ছিলেন তখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আমি কৃষির পক্ষে না কৃষকের পক্ষে। কমিটি আমাকে জানালেন, সরকার কৃষি / খাদ্য উত্‍পাদন বৃস্ষির জন্যে কাজ করছে। আপনার কাগজ ফসলতো কৃষকদের স্বার্থের জন্যে কাজ করছে। আমরা মনে করি আপনি কৃষকদের উসকানী দিচ্ছেন। এই তথ্য থেকেই আপনারা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশ সরকারের আদর্শ কি এবং কোন পথে। পাকিস্তানের ২৩ বছর আর বাংলাদেশের ৪০ বছর মিলিয়ে ৬৩ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু কৃষকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে দেশের যে উন্নতি ও অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিলতা হয়নি। কৃষকদের সজাগ করার জন্যে কাজ করে অনেকেই সরকারী পুরস্কার পান। কৃষি এখনও দেশের ৬০ ভাগ মানুষের কর্ম সংস্থান করে। এর মানে হলো কোন পথ অবলম্বন করলে দেশের অর্থনীতি স্বাধীন হবে সে পথে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো চলছেনা। আপনারা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন বরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ধানের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। লাভ হবে মিল মালিক ও কৃষিপণ্যে বিনিয়োগকারীদের। শুনা যাচ্ছে কৃষকরা এবার সর্বস্বান্ত হবে। বেশী উত্‍পাদন একটি মহা আনন্দের খবর হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়েছে বেদনার খবর। বেশী ফলন আমাদের কৃষকদের বহুকাল থেকে কস্ট দিচ্ছে শুধুমাত্র সরকারের নীতির ফলে। পৃথিবীর বহুদেশ এ সমস্যার সমাধান করেছে কৃষকদের কল্যাণার্থে। সে সব দেশের অর্থনীতিও বিকশিত হয়েছে কৃষকদের সমর্থনে। জাপান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্বেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও কৃষি ত্যাগ করেনি। নয়া কৃষি নীতির কারণে জাপানের কৃষকরা এখন খুবই সুখে আছে। জাপানের একশ’ ভাগ কৃষকই এখন আধুনিক শিল্প পণ্যের ভোক্তা। কৃষিতে যতবেশী ভর্তুকী ততবেশী শিল্পের বিকাশ। জাপানের এবং ভিয়েতনামের কৃষকগণ এখন সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিক। আমাদের দেশের কৃষকদের কোন সম্মান নেই। কারণ তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী নন। সুতরাং এই বাজেটের সাথে কৃষকদের কোন সম্পর্ক নেই। চলমান সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা কৃষকদের মিত্র নয়। দেশের ষোল বা পনের কোটি মানুষের ভিতর দুই/তিন কোটির সম্পর্ক রয়েছে বাজেটের সাথে। এমনধরণের বাজেট হাজার বছরেও কৃষকের কল্যাণ বয়ে আনবেনা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

Share this:

  • Twitter
  • Facebook

Like this:

Like Loading...

Related

Posted in Articles |

  • Archives

    • May 2018 (1)
    • February 2016 (1)
    • January 2016 (2)
    • December 2015 (2)
    • November 2015 (1)
    • October 2015 (1)
    • September 2015 (1)
    • August 2015 (4)
    • July 2015 (1)
    • June 2015 (4)
    • May 2015 (3)
    • April 2015 (4)
    • March 2015 (5)
    • February 2015 (2)
    • January 2015 (1)
    • December 2014 (10)
    • November 2014 (4)
    • October 2014 (6)
    • September 2014 (6)
    • August 2014 (4)
    • July 2014 (3)
    • June 2014 (5)
    • May 2014 (5)
    • April 2014 (11)
    • March 2014 (21)
    • February 2014 (27)
    • January 2014 (11)
    • December 2013 (1)
    • November 2013 (5)
    • October 2013 (12)
    • September 2013 (10)
    • August 2013 (3)
    • July 2013 (8)
    • June 2013 (5)
    • May 2013 (4)
    • April 2013 (6)
    • March 2013 (7)
    • February 2013 (5)
    • January 2013 (5)
    • December 2012 (4)
    • November 2012 (3)
    • October 2012 (2)
    • September 2012 (4)
    • August 2012 (3)
    • July 2012 (4)
    • June 2012 (5)
    • May 2012 (7)
    • April 2012 (5)
    • March 2012 (5)
    • February 2012 (4)
    • January 2012 (7)
    • December 2011 (8)
    • November 2011 (1)
    • October 2011 (7)
    • September 2011 (4)
    • August 2011 (2)
    • July 2011 (4)
    • June 2011 (8)
    • May 2011 (9)
    • April 2011 (8)
    • March 2011 (5)
    • February 2011 (4)
    • January 2011 (4)
    • December 2010 (7)
    • November 2010 (2)
    • October 2010 (8)
    • September 2010 (5)
    • June 2010 (1)
    • May 2010 (1)
    • February 2010 (2)
    • June 2009 (5)
    • May 2009 (32)
  • Categories

    • Articles (119)
    • উপন্যাস (1)
    • English Articles (1)
    • Political Column (45)
      • Free Thoughts (19)
    • Uncategorized (232)
  • Pages

    • Who Am I ?

Create a free website or blog at WordPress.com.

WPThemes.


Privacy & Cookies: This site uses cookies. By continuing to use this website, you agree to their use.
To find out more, including how to control cookies, see here: Cookie Policy
  • Follow Following
    • Writing From The Street ( রাস্তা থেকে বলছি )
    • Join 1,084 other followers
    • Already have a WordPress.com account? Log in now.
    • Writing From The Street ( রাস্তা থেকে বলছি )
    • Customize
    • Follow Following
    • Sign up
    • Log in
    • Copy shortlink
    • Report this content
    • View post in Reader
    • Manage subscriptions
    • Collapse this bar
%d bloggers like this: