গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমার একটি লেখা ক’দিন আগেই ছাপা হয়েছে নয়া দিগন্তে। এর বেশ কিছু প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি ইতোমধ্যে। আমি এখন নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র পুরাণো হয়ে গেছে। ফলে এর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র যারা চালু করেছেন তারা নিজেরাও এখন এর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত ও শংকিত। যোলয়ানা বা একশ’ভাগ গণতন্ত্র এখন কোথাও আছে বলে মনে হয়না। তাহলে কি মাজুর এই গণতন্ত্রকে নতুন করে সাজানো যাবে? ২০১১ সালের মানুষের মেধা জ্ঞান ও মননশীলতা মোতাবেক গণতন্ত্র সেভাবে নিজেকে সাজাতে পারেনি। মাঝখানে কিছুদিন সমাজতন্ত্র ও একদলীয় শাসন পৃথিবীকে কিছু দেবার চেস্টা করেছিল। কিন্তু একশ’ বছরের মাথায় ও ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সত্যিকথা বলতে কি মানুষ একদলীয় শাসনে হাঁপিয়ে উঠেছিল। দেখা গেল একদলীয় একমতের শাসন মানুষের সৃস্টিনীতির বিরুদ্ধে। মানুষ এমন এক প্রাণী যা জগতে স্বাধীন থাকতে চায় এবং স্বাধীনভাবে নিজের মত ও বিশ্বাসকে প্রকাশ করতে চায়। এ ব্যাপারে মানুষ পরাধীন থাকতে চায়না। তাই স্বাধীন মানুষের সাথে স্বাধীন চিন্তার বিরোধ বাধে রাজা মহারাজা বাদশাহ রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে। রাস্ট্র ব্যবস্থার সাথেও স্বাধীন মানুষের চিন্তা চেতনার বিরোধ বাধে।
এমন কি স্বাধীনতা শব্দটার সাথেও মানুষের মৃত্যু জড়িয়ে আছে। কারণ ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার সাথে সমাজ বা রাস্ট্রের সমন্বয় বা সমঝোতা সব সময় নাও হতে পারে। যখন রাস্ট্র মানুষের স্বাধীনতার চেয়ে নিজের স্বাধীনতাকে বড় মনে করে তখনই সংঘাত বাধে। মানুষের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেই রাস্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম হতে চায়। নিজের নাগরিককে দমন করার রাস্ট্র নানা ধরনের আইন রাখে। এমন এক সময় আসে যখন রাস্ট্র নিজের নাগরিককেই শত্রু ভাবতে শুরু করে। তখন নাগরিকরা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নিজদের পরাধীন ভাবতে শুরু করে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সে রাস্ট্রের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। আর বাইরের শত্রু তার সুযোগ নেয়। যেমন ঘটেছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। পাকিস্তানের শাসকগণ কখনই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনের কথা জানতে বা শুনতে চায়নি। ফলে ২৩ বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী মুসলমানরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। ভারত নিজের স্বার্থেই সেই সুযোগ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমেই ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। জাতিসংঘের ১৯৩তম সদস্য দক্ষিণ সুদানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। খৃস্টান আর মুসলমানরা একসাথে থাকতে পারেনি বলেই সেখানে জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা দেশগুলো জড়িত হয়ে গৃহযুদ্ধের সুচনা করে। দীর্ঘ ৫০ বছর এই গৃহযুদ্ধ চলে। কাশ্মীরের মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্যে প্রাণ দিচ্ছে ৬০ বছর ধরে। এখানে পশ্চিমা গণতন্ত্রী ও মানবতাবাদীরা কিছু বলেনা। ফিলিস্তিনেও একই অবস্থা চলছে। ওই এলাকায় জবরদস্তি এক ধর্মীয় রাস্ট্র ইজরায়েল বানানো হয়েছে এবং বিপুল অস্ত্র দিয়ে তাকে শক্তিশালী করা হয়েছে আরবদেশ গুলোতে অশান্তি সৃস্টি করার জন্যে। পশ্চিমা গণতন্ত্রের মালিক মুরুব্বীরা যারা গরীব,সাহায্যের জন্যে সব সময় হাত পেতে থাকে তাদেরকে নানা ধরনের সবক শিক্ষা দেয়। ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বে ও ওসব সনক নিতে হয়। তাদের মতো করে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে, তাদের মতো করে মানবতা বোধের শিক্ষা নিয়ে হবে, সম অধিকারের নামে নারীদের বাজারের পণ্যে পরিণত করতে হবে, নারীদের স্বাধীনতার নামে সমকামিতা বা ইকোয়াল সেক্সের অধিকার দিতে হবে। এসব না করলে সাহায্য পাওয়া যাবেনা। সভ্য বলে পরিগণিত হবেনা। এর মানে হচ্ছে আমরা যদি সাহায্য গ্রহন না করি তাহলে আমাদের উপর ওসব চাপিয়ে দিতে পারবেনা। আরব দেশগুলোতে পশ্চিমারা ডিক্টেটর বা রাজা বাদশাহদের সমর্থন করে। সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা না হলেও চলবে। মায়ানমারে গণতন্ত্র নেই, হাজার চাপ সৃস্টি করেও পশ্চিমারা মায়ানমারকে বাগে আনতে পারেনি। উত্তর কোরিয়াকে অনেকদিন ধরে নানান হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। চীনকে কিছু বললেই চীন সোজা ভাষায় বলে দেয়, তেমরা ওসব বিষয়ে কোন কথা বলো। এসব আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয়। তাছেড়া তোমাদের গণতন্ত্র ও মানবতার ধারনা আমাদের সাথে মিলবেনা। এটা সত্যি যে, চীন নিজেদের মতো করেই উন্নতির শিখরে পৌঁছার চেস্টা করছে। মালয়েশিয়াও নিজেদের মতো দেশের সকল মানুষের উন্নতির চেস্টা করছে। এমন দিন বেশী দূরে নয় বলে মনে হচ্ছে, যেদিন বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষ পশ্চিমা পুরাণো পঁচা বাসি গণতন্ত্রকে আর চর্চা করবেনা।
পঁচা এই গণতন্ত্র ও ঘুণেধরা পুঁজিবাদী মানুষখেকো ব্যবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে কার্ল মার্কস, মাও জে দং লেনিন এ জগতে এসেছিলেন। জগতের মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। বেশ কয়েক যুগ ধরে জগতকে আলোড়িত করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, আমরা নির্যাতিত নিরী্ কৃষক শ্রমিক সর্বহারাকে মুক্তি দিতে এসেছি। আর এজন্যেই দেশে দেশে মানুষ বিপ্লন বিদ্রোহ করেছে। কোটি কোটি মানুষ জীবনদান করেছে। ওই বিপ্লবের ডাক আমাদের দেশেও এসেছিল। আমরাও মোহিত হয়েছিলাম। আমাদের ছাত্র জীবন ওই নেশাতেই কেটেছে। আমরাও মাও জে দং আর লেনিনের পদ্ধতিতে বিপ্লব করতে চেয়েছিলাম। কাস্তে হাতুড়ীর ছবি আমাদের শহর বন্দরের দেয়াল আর স্কুল কলেজ ভরে উঠেছিল। আমাদের হাতে ছিল মাও জে দং আর লেনিন এর লাল বই। আমাদের বেশীর ভাগ হিন্দু শিক্ষক আর কিছু মুসলমান শিক্ষক বিপ্লবের শিক্ষা দিতেন। এমনি এক পরিবেশে আমাদের কৈশোর ও যৌবন কেটেছে। আমাদের মুরুব্বীরা মুসলীম লীগের উপর নাখোশ হয়ে ৪৯ সালে ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিস্ঠা করলেন। যাঁরা ৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলীম লীগকে পরাজিত করে প্রদেশের ক্ষমতা দখল করে। পরে দলটির নতুন নামকরণ হয় শুধু আওয়ামী লীগ। বলা হলো এটা খাজা গজা, জমিদার নবাব, খান সাহেব বা খান বাহাদুরদের দল নয়। একেবারেই সাধারন মানুষের দল। দেখা গেল কথাটা সত্যি নয়। দলটির নেতারা শেরওয়ানী আর জিন্নাহ টুপি ছেড়ে পাজামা পাঞ্জাবী আর কোট প্যান্ট পরেছেন। আজকের আওয়ামী লীগ তাঁদেরও উত্তরসূরী নয়।কারণ, দলটি নিজের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে সাহস করে আসল কথা বলতে চায়না। দলের প্রতিস্ঠাতা মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের কথা বলতে সাহস করেনা। দলটি এখন দিন দিন ধর্মহীন হওয়ার পথে ছুটে চলেছে। ধর্মহীনতার আড়ালে কিছু মহা সুবিধাবাদী এই দলের কর্তৃত্ব দখলের চেস্টা করছে।
৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে শেখ সাহেব গনতন্ত্র ফেলে দিয়ে সমাজতন্র চালু করতে চেয়েছিলেন। আসলে শেখ সাহেব কখনই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু নানামুখী চাপের ফলে তিনি একদলীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তাঁর দলও কখনই সমাজতন্ত্র প্রতিস্ঠার জন্যে প্রস্তুত ছিলনা। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশে যখন সমাজতন্ত্র কায়েমের চেস্টা করছিলেন তখন পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের পতন ঘন্টা বেজে গেছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভাংতে শুরু করেছে। সেখানে মানুষ একদলীয় নির্দয় শাসন বাতি করে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার লড়াই শুরু করেছে। এখন সমাজতন্ত্র বা কমিনিজম নাম মাত্র কয়েকটি দেশে আছে। সবখানেই পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। চীনে একদলীয় শাসন আছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ প্রবেশ চালু হয়েছে। ব্যক্তি সম্পদ মালিকানার স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। রাশিয়াতেও ব্যক্তি পুঁজির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সোজা কথায় বলা যেতে পারে পুরাণো বস্তাপঁচা পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। যা আমেরিকা ও তার মিত্ররা চায় এবং কোথাও কোথাও চাপিয়ে দিতে চায়। এক সময় বলা হতো পুঁজিবাদী প্রথম বিশ্ব, সমাজতান্ত্রিক দ্বিতীয় বিশ্ব ও গরীব তৃতীয় বিশ্ব। আমরা বিগত ৬৪ বছর ধরেই তৃতীয় বিশ্বে আছি। বিশ্ব আবার দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগ ধনী, আরেকভাগ ধনী। তবুও বিশ্বটা ইউনিপোলার বা এক কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এই এক কেন্দ্রিক বিশ্বের একমাত্র মাতবর আমেরিকা। শান্তি মানবতা গণতন্ত্রের নামে আমেরিকা বিশ্বটাকে অশান্ত করে ফেলেছে।
তৃতীয় মত ও পথের বিকাশ উদ্বোধনের এখনি আসল সময় বলে আমি মনে করি। দেড় হাজার বছর আগে এই মত ও পথের দিশা দিয়েছেন মানবতার নেতা হজরত মোহাম্মদ(সা)। তিনিই বলেছেন, মানুষই প্রথম ও প্রধান। মানুষের জন্যেই সবকিছুর সৃস্টি। মানুষ না হলে জগত বৃথা। মানুষ না হলে সৃস্টির লক্ষ্যই বৃথা। মানুষের কল্যাণের জন্যই জগতের অন্য সব সৃস্টি নিয়োজিত। সেই মানুষকে যারা পদানত অপমানিত লাঞ্চিত করতে চায় তারা মানবতার শত্রু, আল্লাহ বা সৃস্টিকর্তার শত্রু। সোজা কথায় বুঝতে হবে মানুষের শত্রুই আল্লাহর শত্রু। তাই মানবতা ও আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জেহাদ করা বা বিপ্লব করা অবশ্য কর্তব্য। হজরত আদম(আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী, শিক্ষক , দার্শনিক , রাস্ট্রনায়ক , সেনাপতি মোহাম্মদ(সা) পর্যন্ত সকল নবী রাসুল অলি আল্লাহ মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। মানুষের মান ইজ্জতকে অস্বীকার করেছে, ভুলুণ্ঠিত করেছে নমরুদ ফেরাউন সাদ্দাদ হামান কারুন আবু লাহাব আবু জেহেল। চলমান সময়ে আমেরিকা বৃটেন ফ্রান্স ও তাদের মিত্ররা। তেমনি রয়েছে আরব বিশ্বের বাদশাহ ও ডিক্টেটরগণ। আল্লাহর এই দুনিয়াতে ৭শ’ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কিছু দেশ ও মানুষ তাবত সম্পদ দখল করে রেখেছে। এসব দখলদারদের রাস্ট্র ও তার নেতারা লালন পালন করে । এ বিশ্বের শত শত কোটি মানুষ আজ নিরক্ষর দরিদ্র। তবু বলা হচ্ছে আধুনিক ও অতি আধুনিক বিশ্ব। এই আধুনিক বিশ্বের প্রবক্তারা মা বোন কণ্যা ও স্ত্রীকে পতিতালয়ে রেখে সভ্যতার জয়গাণ গায়। তথাকথিত আধুনিক ও মানবিক বিশ্বের ফেরাউন নমরুদ আমেরিকা ও তার দোসররা প্রতিদিন সারাবিশ্বে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে। এই মূহুর্তের আমেরিকায় লাখ লাখ লোক ফুটপাতে শুয়ে আছে, এদের কোন চাকুরী নেই। প্রতি ঘন্টায় শত শত কুমারী মেয়ে মা হচ্ছে। এটাই নাকি আমেরিকার স্বাধীনতা মানবতা ও গণতন্ত্রের নমুনা। নিউইয়র্কে এখন আনন্দ উত্সব চলছে সমকামী বিয়ের আইন পাশ হওয়ায়।আমেরিকার পতন ও পৃথিবীর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা দিয়ে মানুষ আর মানুষের মতো বাঁচতে পারবেনা। তাই মানুষের সার্বিক মুক্তিও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বড় বড় দার্শনিক ও চিন্তাবিদরা নিশ্চয়ই নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কোন পথে হবে তা নিয়ে ভাবছেন। যদি তারা কোন কারণে বন্ধ্যা হয়ে থাকেন তাহলেও মানুষের মুক্তি ও পৃথিবীর পরিবর্তন দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কোথায় এখন আদ সামুদ তুব্বা জাতি। আর কোথায় রামান পারস্য গ্রীক আর্যরা। কেউ কোথাও নেই। এখন যত জালিম হার্মাদ জাতি ও নেতা মাতৃ পৃথিবীর বুকের উপর বসে আছে তারাও একদিন থাকবেনা। জগতে এখনও বহু মানুষ আছে যারা কোন ধর্ম বা খোদায় বিশ্বাস করেনা। আবার কিছু মানুষ আছে যারা খোদা বা আল্লা্হতে বিশ্বাস করে, কিন্তু আল্লাহর আইনে বিশ্বাস করেনা। কিছু মানুষ আছে যারা ধর্ম বা খোদাকে ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে। তারা মনে করে ধর্ম আর খোদা সমাজ সমিতি বা রাস্ট্রের বিষয় নয়। এই জগতে বিভিন্ন ধর্মের নামে বিভক্ত কোটি কোটি মানুষ আছে যারা নিজ নিজ ধর্মকেও ষোলয়ানা মানেনা বা বিশ্বাস করেনা। হাজরত ঈসা নবীর তথাকথিত বিশ্বাসীরা দিন দিন ধর্মহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বুক ফুলিয়ে বড় গলায় বলে, আমার কোন ধর্ম নেই। এরা সংসার ধর্ম বা বিয়েতে বিশ্বাস করেনা। এরা নারী পুরুষ একসাথে থাকে, সন্তান জন্ম দেয়, আবার ফেলে চলে যায়। এখন শুরু হয়েছে সমকামী সংসার। নারী নারীকে বিয়ে করবে। পুরুষ পুরুষকে বিয়ে করবে। সোজা কথায় বলা যায়, মানব জাতির মহত্তম প্রতিস্ঠান বিয়ে ও সংসারকে ভেংগে চুরমার করা। এতে কোথাও কোথাও রাস্ট্রও সায় দিচ্ছে। এর সবকিছুই হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে।
যেখানে মানব জাতির মৌলিক নৈতিকতা গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেখানে গণতন্ত্র নির্বাচন নিয়ে কি কথা বলবো। আমেরিকা, যে দেশটি এখন গণতন্ত্র মানবতা অধিকার ইত্যাদির মুরুব্বী ও নেতা সেজে বসে আছে, সেই দেশটি আরও তাবেদার ও সাঙপাঙ নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলমানরা নাকি গণতন্ত্র ও মানবতা বিরোধী। মুসলমানরা নাকি টেররিস্ট বা সন্ত্রাসী। ইসলাম ও মুসলীম বিদ্বেষী পশ্চিমা মহাজোটের সাথে রয়েছে আরব বিশ্বের বহু মুসলমান দেশ। এমন কি দুই পবিত্র স্থানের খাদেম বলে পরিচিত সউদী বাদশাহ এই জোটের একজন মহা সমর্থক। ১৪/১৫ কোটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের চলমান সরকারও সন্ত্রাস দমনের নামে খোদাদ্রোহী মহাজোটকে সমর্থন দিয়ে নানা ধরনের অর্থ সাহায্য নিয়ে দেশের আলেম সমাজের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের চলমান সরকার মনে করে ধার্মিক সকল মুসলমানই সন্ত্রাসী। আরবী পাঠ্যপুস্তক হাতে বহু ছাত্রকে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ ধরে নিয়ে টর্চার করছে। এইতো ক’দিন আগেইতো নারীনীতি নিয়ে সরকার আলেম সমাজের উপর চড়াও হয়েছে। যে নারীনীতি তৈরী করে দিয়েছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমারা। যা বেশীর ভাগ মুসলমান দেশ গ্রহন করেনি।
আওয়ামী লীগ সরকার নিজেকে প্রভুদের কাছে ধর্মহীন বা তথাকথিত সেকুলার প্রমান করার জন্যে সংবিধান থেখে আল্লাহর উপর বিশ্বাস কথাটা তুলে দিয়েছে। দেশের মানুষ যখন এর প্রতিবাদ করা শুরু করেছে তখন আবার আলেম সমাজের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন।শেখ হাসিনার সমর্থকরা প্রায়ই সাফাই গান,তাদের নেত্রী নিয়মিত নামাজ রোজা করেন। আমার প্রশ্ন হলো একজন মুসলমান কিভাবে সেকুলার হন। তারা কিভাবে বলেন রাস্ট্র ধর্মহীন থাকবে। কিন্তু মুসলমানদের রাস্ট্র কখনই ধত্মহীন হতে পারেনা। মুসলমানদের রাস্ট্র সরকার ও দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা ইসলামের সাথে জড়িত। ইসলামে রাস্ট্রকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবেনা। আমি মনে করি, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ ব্যর্থ হওয়ার পর ইসলামী রাস্ট্র কায়েম বা প্রতিস্ঠা করার সময় এসে গেছে। ইসলামী রাস্ট্র ব্যবস্থায় সকল মানুষের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত। মদিনার রাস্ট্র এর প্রধান উদাহরণ। সে রাস্ট্রে মুসলমানরা ছিল মাইনরিটি। মেজরিটি মানুষ বা নাগরিক ছিল খৃস্টান ও ইহুদী। সকলের নাগরিক অধিকারই ছিল স্বীকৃত । তারা শুধু আল্লাহর রাসুলের(সা) নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল। সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতো। আইন সকলের জন্যে সমান ছিল। চলমান বিশ্বের ধারনা হচ্ছে, ইসলাম বা ইসলামী ব্যবস্থা শুধু মুসলমানদের জন্যে। এই ধারনা একশ’ভাগই ভুল। সত্যি কথা হচ্ছে, ইসলাম জগতের সকল নির্যাতিত অপমানিত নিগৃহীত শোষিত মানুষের মুক্তির সনদ। ইসলাম বলেছে, মানুষে মানুষে কোন ফারাক বা ব্যবধান নেই। সকল মানুষই এক পিতা মাতার(আদম- হাওয়া) সন্তান।( নয়া দিগন্ত, ২২শে জুলাই, ২০১১ )
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
www.humannewspaper.wordpress.com